এটাও একটি মাদানী ফুল যে, আমাদের নবী (ﷺ) অক্ষম ও অসহায় নন। নিজের পরওয়ারদিগার এর রহমতে উভয় জাহানের ভান্ডার সমূহের মালিক ও মুখতার (ক্ষমতাধর)।এ মাদানী ঘটনা থেকে এ শিক্ষাও অর্জিত হল যে,রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম,রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ও সাহাবায়ে কিরাম عليم الر رضون খুবই ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করেছেন, ক্ষুধার্ত থেকেও নিজেদের পবিত্র পেটে পাথর বেঁধে নেকীর দাওয়াত চতুর্দিকে প্রসার করেছেন। আর হায়! আফসােস! একটু লক্ষ্য করুন; একদিকে আমাদের মত এমন লােকও রয়েছি যে, যারা সব ধরনের সুযােগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ্ তাআলার পথে সামান্যটুকু কষ্টও সহ্য করতে রাজী নই। নিশ্চয় এখন আর কোন নবী আসবেন না। মুসলমানদেরকেই নেকীর দাওয়াতের গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহর শপথ! আজ মুসলমানদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। মসজিদ গুলাের উজাড় অবস্থা (অর্থাৎ মুসল্লী শূন্যতা) দেখে অন্তর কেঁদে উঠে। একটি শিক্ষনীয় ঘটনা শুনুন:
(২) মাদানী কাফেলা মসজিদ আবাদ করল
এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা, সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দাওয়াতে ইসলামীর আশিকানে রসূলের ১২ দিনের মাদানী কাফেলা বাবুল মদীনা করাচী থেকে পাঞ্জাব প্রদেশের একটি শহর ‘সূহা-ওয়া'এর একটি মসজিদে গিয়ে পৌছল। পেলাে মসজিদের দরজায় তালা লাগানাে ছিল।তৎক্ষণাৎ চাবি সংগ্রহ করা হল। যখন দরজা খােলা হল তখন দেখা গেল,সবকিছুর উপর ধুলা-বালি জমে আছে। অবস্থা দেখে বুঝা গেল, দীর্ঘদিন থেকে মসজিদটি বন্ধ রয়েছে। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমরা সবাই মিলে-মিশে তা পরিস্কার করে নিলাম। এলাকায়ী দাওরা করে শহরের লােকদেরকে নেকীর দাওয়াত পেশ করে মসজিদে আসার জন্য অনুরােধ করা হল। আফসােস! আমাদের ইখলাসের মধ্যে ঘাটতি থাকার কারণে একজন মানুষও আমাদের সাথে আসলনা। কিন্তু আমরা সাহস হারায়নি। পাশেই দেখলাম খেলার মাঠ, তাতে কিছু ছেলে খেলাধুলায় ব্যস্ত। আল্লাহর নাম নিয়ে সেই খেলার মাঠে প্রবেশ করলাম এবং ভয়ে ভয়ে খেলারত যুবকদেরকে নেকীর দাওয়াত পেশ করলাম।اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আল্লাহ তাআলার অশেষ শুকরিয়া, আমাদের কথায় তাদের অন্তর নরম হয়ে গেল। কয়েকজন যুবক সাথে সাথে আমাদের সাথে চলে আসলেন। মসজিদে এসে আমাদের সাথে নামায আদায় ও সুন্নাতে ভরা বয়ান শুনার সৌভাগ্য অর্জন করলেন। আমাদের অনুরােধে তারা এ মসজিদকে আবাদ করার নিয়্যত করলেন। এ দৃশ্য দেখে সেখানে উপস্থিত প্রায় ৭০ বৎসর বয়সী এক বৃদ্ধ অশ্রুসিক্ত নয়নে বলতে লাগলেন, আমিতাে লোকদেরকে মসজিদ আবাদ করার ব্যাপারে সর্বদা বলতে থাকি কিন্তু আমার কথা কে শুনে? اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আজ আশিকানে রাসূলদের মাদানী কাফেলার বরকতে আমাদের ! মসজিদ আবাদ হয়ে গেল।
(৩) ৮০ জন সাহাবা ও সামান্য পরিমাণ খাবার
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বলেন: হযরত সায়্যিদুনা আবূ তালহা (رضي الله عنه) ঘরে গিয়ে হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) কে বললেন: “আমি তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইয্যত (ﷺ) এর দূর্বল আওয়াজ শুনলাম, যাতে আমি তাঁর-ক্ষুধার্ত থাকার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম।আপনার নিকট কি খাবারের কোন কিছু আছে?” উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) বললেন: “জ্বী হ্যাঁ।" অতঃপর তিনি জবের রুটির কিছু টুকরা বের করলেন,আর নিজের ওড়না নিয়ে সেটার এক প্রান্তে রুটি পেঁচিয়ে দিয়ে সেটা আমার কাপড়ের নীচে আঁড়াল করে দিয়ে ওড়নার অন্য প্রান্ত আমার (অর্থাৎ- সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) এর) উপর জড়িয়ে/ঝুলিয়ে দিলেন।অতঃপর আমাকে রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর পবিত্র দরবারে পাঠালেন।আমি ঐ রুটি নিয়ে হাজির হলাম। তখন দেখলাম, আল্লাহর প্রিয় হাবীব, :হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) অনেক মানুষসহ মসজিদে বসা আছেন। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে গেলাম। মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) (গায়বের সংবাদ দেয়াবস্থায়) ইরশাদ করলেন: “তােমাকে কি আবূ তালহা পাঠিয়েছে?" আমি আরয করলাম: “জ্বী হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ " (ﷺ)! ইরশাদ করলেন:খাবার খাওয়ানাের জন্য এসেছ?” আমি আরয করলাম: “জ্বী সারকার"।প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) সাহাবায়ে কিরাম عليم الر رضون এ কে ইরশাদ করলেন: “চলাে।" সবাই চলতে শুরু করলেন আর আমি তাঁদের আগে আগে চলতে লাগলাম। অবশেষে আমি হযরত সায়্যিদুনা আবু তালহা (رضي الله عنه) এর নিকট আসলাম এবং অবস্থা সম্পর্কে বললাম। তখন আবু তালহা (رضي الله عنه) বললেন:“ওহে উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه)! নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) লােকদের সাথে নিয়ে আসছেন, আর আমাদের কাছে এমন কিছু নেই যা। তাঁদের সকলকে খাওয়ানাে যেতে পারে।হযরত সায়্যিদুনা উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) বললেন:(الله ورسوله اعلم) অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) -ই ভাল জানেন। হযরত সায়্যিদুনা আবূ তালহা (رضي الله عنه) চললেন। অবশেষে নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হলেন। প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁর সাথে ঘরে এসে পৌঁছলেন। ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার,রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “ওহে উম্মে সুলাইম(رضي الله عنه)! যা কিছু তােমার নিকট রয়েছে তা নিয়ে এসাে।" তিনি (رضي الله عنه) ঐ রুটি গুলাে নিয়ে আসলেন। ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) এর নির্দেশে রুটি টুকর করা হল। অতঃপর হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) সে গুলােতে ঘিয়ের বাসন থেকে ঘি লাগালেন। আর তা তরকারী হিসাবে ব্যবহার করলেন। অতঃপর নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এগুলাের উপর কিছু পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন: “দশজনকে ভেতরে আসার অনুমতি দাও।" তারা দশজনকে ডাকলেন। তাঁরা খেলেন এমনকি পরিতৃপ্ত হয়ে বাইরে চলে গেলেন। পুনরায় বললেন “আরাে দশজনকে ডাক।” তারা দশজনকে ডাকলেন। তাঁরা খানা খেলেন এবং বাইরে চলে গেলেন। পুনরায় বললেন: “আরাে দশজনকে ডাক।" শেষ পর্যন্ত দলের সকলে খাবার খেলেন এবং পরিতৃপ্ত হলেন। ঐ দলটি ৭০ কিংবা ৮০ জন সাহাবা عليم الر رضون বিশিষ্ট ছিল। (মুসলিম শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭৮, হাদীস নং-২০৪০)
এক বর্ণনা মতে; পর্যায়ক্রমে দশজন করে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন আর দশজন করে বের হতে থাকেন। অবশেষে তাঁদের মধ্যে । কেউই এমন ছিল না, যিনি ভেতরে গিয়ে খাবার খাননি। সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে গেলেন। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ঐ খাবারকে যখন একত্রিত করলেন তখন তা ততটুকুই ছিল যতটুকু খাওয়ার পূর্বে ছিল। অন্য আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, দশজন করে সাহাবায়ে কিরাম খাবার খেতে থাকেন এমনকি ৮০জন সাহাবা খাবার খান। এরপর খাতেমুল ; মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) ও ঘরের বাসিন্দারা খাবার খেলেন তবুও তা অবশিষ্ট রইলাে। আরাে এক বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, “যে খাবার বেঁচে গেছে তা তাঁরা প্রতিবেশীদেরকে দিয়ে দিলেন।” (সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০৪০)।
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এটা রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম,রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম(ﷺ) এর মু'জিযা ছিল, বাহ্যিকভাবে দেখতে সামান্য পরিমাণ খাবার ৮০ জন সাহাবায়ে কিরাম عليم الر رضون খাওয়ার পরও পূর্বে যতটুকু ছিল ততটুকুই রয়ে গেল। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) এর সম্মান মর্যাদাই কিরূপ যে, নিজে ক্ষুধার্ত থাকেন আর নিজের গােলামদেরকে প্রচুর পরিমাণে নেয়ামত সমূহ খাওয়ান।
হুযুর (ﷺ) এর ঈমান সতেজকারী বাণী হচ্ছে انما انا قاسم و الله يعطى অর্থাৎ- আল্লাহ্ তাআলা দান করেন আর আমি বণ্টন করি। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৭১)।
রব হে মু'তি ইয়ে হে কাসিম, রিযিক উসকা হে খিলাতে ইয়ে হে
ঠান্ডা ঠান্ডা মিঠা মিঠা, পিতে হাম হে পিলাতে ইয়ে হে
উছ কি বখশিশ ইন কা সদকা, দেতা উহ হে দিলাতে ইয়ে হে
انا اعطينك الكوثر সারি কাসরাত পাতে ইয়ে হে,
কেহ দো রযা ছে খুশ হাে কুশ রাহ, মুঝদাহ রযা কা ছুনাতে ইয়ে হে।।
(৪) দীর্ঘাকৃতির মাছ
হযরত সায়্যিদুনা আবু আবদুল্লাহ্ জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (رضي الله عنه) বলেন: রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) আমাদের (৩০০ জন) কে কুরাইশদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলেন আর হযরত সায়্যিদুনা আবু উবাইদা (رضي الله عنه) কে আমাদের সিপাহসালার নিযুক্ত করলেন এবং আমাদেরকে খেজুরের একটি বস্তা পথ খরচা স্বরূপ প্রদান করলেন। হযরত সায়্যিদুনা আবু উবাইদা (رضي الله عنه) আমাদেরকে (প্রতিদিন) একটি করে খেজুর দিতেন। জিজ্ঞাসা করা হল, “আপনারা عليم الر رضون একটি খেজুর দ্বারা কিভাবে জীবনধারণ করতেন?" তখন বললেন: “আমরা এটাকে চুষতাম যেভাবে শিশু (কোন বস্তু) চুষে এবং এরপর পানি পান করে নিতাম। তখন তা ঐ দিন ও রাত পর্যন্ত আমাদের জন্য যথেষ্ট হত। আমরা নিজেদের বর্শা দ্বারা গাছের পাতা (যেগুলাে উট আহার করে) নীচে ফেলতাম আর সেগুলাে পানিতে ভিজিয়ে খেয়ে নিতাম।" তিনি বলেন: “আমরা সমুদ্রের কিনারা দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন (দূর থেকে) এক পার্শ্বে বালির বড় টিলার ন্যায় কিছু একটি দৃষ্টিগােচর হল। আমরা যখন কাছে পৌছলাম তখন দেখতে পেলাম যে, সেটা একটা প্রাণী (যা মৃত), যেটাকে আম্বর (মাছ) বলা হয়।” হযরত সায়্যিদুনা আবু উবাইদা (رضي الله عنه) বলেন: “এটাতাে মৃত বস্তু।” অতঃপর নিজেই বললেন: “না, বরং আমরা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে প্রেরিত আর আমরা আল্লাহর পথে (ঘর থেকে বের হয়েছি) আর আপনারা এই উপায়হীন অবস্থায় রয়েছেন, তাই (এটা) খেয়ে নিন।” আমরা তিনশত জন একমাস এটা খেয়ে কাটিয়েছি। এমনকি আমরা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে গেলাম। আমার স্মরণ আছে, আমরা সেটার চোখের গর্ত থেকে বড় মটকা ভরে ভরে চর্বি বের করতাম। আর আমরা ঐ (মাছ) থেকে ষাড়ের ন্যায় বড় বড় টুকরা কেটে নিতাম। (এ মাছের চোখের বৃত্ত এত বড় ছিল,)। হযরত সায়্যিদুনা আবু উবাইদা (رضي الله عنه) আমাদের মধ্য থেকে ১৩ জন কে সেটার চোখের গর্তে বসালেন। (আর তাতে সহজে সবার বসার জায়গা হয়ে গেল।) এটার একটি পাঁজরের হাড় ধরে (কামানের মত) দাঁড় করালাম অতঃপর একটি বড় উটের উপর বসার ঘর স্থাপন করলাম আর ঐ উট এর নীচ দিয়ে চলে গেল। আমরা সেটার শুকনাে মাংসের টুকরা পথ খরচের জন্য সাথে রাখলাম। যখন আমরা মদীনায়ে মুনাওওরায় পৌছলাম তখন আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবীবে লবীব (ﷺ) এর নিকট হাজির হলাম এবং হুযুর (ﷺ) এর নিকট এটার আলােচনা করলাম। তখন হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “সেটা রিযিক ছিল, যা আল্লাহ্ তাআলা তােমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তােমাদের নিকট ঐ মাংসের কোন অংশ আছে কি? (যদি থাকে) তবে আমাদেরকেও খাওয়াও। আমরা হুযুর পাক (ﷺ) এর নিকট ঐ মাছের মাংস পেশ করলাম। তখন রাসূলে পাক (ﷺ) তা খেলেন।
(সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড, ১৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯৩৫)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৫) উম্মতের আমানতদার
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সাহাবায়ে কিরাম عليم الر رضون এর প্রেরণা ও আগ্রহের প্রতি উৎসর্গ হােন! তাদের এমন নিঃস্ব অবস্থা ছিল, প্রতিদিন শুধু একটি মাত্র খেজুর ও গাছের পাতা খেয়ে আল্লাহর পথে শত্রুদের সাথে। লড়াই করতেন আর নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করতেন। এখন যে ঘটনা আপনারা লক্ষ করলেন এ অভিযানের নাম ‘সাইফুল বাহর'। এটাকে “জায়সুল উসরাহ্”ও বলা হয়। তিনশত জন বীরের সিপাহসালার হযরত সায়্যিদুনা আবু উবাইদা বিন আল জাররাহ্ (رضي الله عنه) “আশারায়ে ; মুবাশশারাহ্” (জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০জন) এর অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। বারগাহে রিসালাত (ﷺ) থেকে তাঁকে “আমীনুল উম্মাহ্" (অর্থাৎ- উম্মতের আমানতদার) এই প্রিয় উপাধীটি দান করা হয়েছিল। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর ইনফিরাদী কৌশিশের ফলে তিনি মুসলমান হয়ে ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী, শক্তিমান ও দীর্ঘ দেহী ছিলেন এবং তাঁর পবিত্র মুখমন্ডলে মাংস কম ছিল। উহুদের যুদ্ধের সময় মদীনার তাজেদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) এর মুখমন্ডল মােবারকে যখন লােহার ঢুপির দুটি কড়া ঢুকে গিয়েছিল তখন তিনি নিজের দাঁত দ্বারা সেগুলাে টেনে বের করেছিলেন, যার কারণে তাঁর (رضي الله عنه) সামনের দুটি দাঁত শহীদ হয়ে গিয়েছিল। (আল উসাবা, ৩য় খন্ড, ৪৭৬ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের!সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা!জাইশুল উসরাহ' এর সময় বৃহৎ আকৃতির মাছ লাভ হওয়া, একমাস পর্যন্ত সাহাবারেয় কিরাম (ﷺ) সেটা আহার করা, উটের উপর বােঝাই করে সাথে নিয়ে আসা, মদীনায়ে মুনাওয়ারাতেও সাথে করে নিয়ে আসা, মাছের স্বাদের মধ্যে পরিবর্তন না আসা এসব কিছু আল্লাহ্ তাআলার রহমতে সায়্যিদুনা আবূ উবাইদাহ্ বিন জাররাহ (رضي الله عنه) ও সাহাবায়ে কিরাম عليم الر رضون এর বরকত ও কারামত ছিল। আল্লাহ তাআলার পথে যে-ই সফর করেন আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত তার উপর বর্ষিত হয়, বিপদেও সম্মান অর্জিত হয়, আর শান্তিই শান্তি। প্রত্যেক মুসলমানকে সাহাবায়ে কিরাম ও এর এসব মহান ত্যাগ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ইসলামের সাহায্যের জন্য সদা প্রস্তুত থাকা উচিত। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর প্রত্যেকেরই এই মাদানী চিন্তা-ধারা হচ্ছে, “আমাকে নিজের ও সারা দুনিয়ার মানুষের সংশােধনের চেষ্টা করতে হবে।” এ মাদানী লক্ষ্য অর্জনের জন্য আশিকানে রাসূলদের মাদানী কাফেলা সমূহ সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামে সফর করতে : থাকে। প্রত্যেক মুসলমানের মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে সেটার বরকত সমূহ অর্জন করা উচিত। আল্লাহর পথে সফরে বের হওয়া ঐ পবিত্র সত্ত্বাগণের বিশাল আকৃতির মাছের মাধ্যমে অদৃশ্য থেকে সাহায্যের ঘটনা আপনারাও লক্ষ্য করেছেন। আজও যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে ইসলামের সাহায্যে প্রবল আগ্রহ নিয়ে ঘর থেকে বের হয়, সেও বঞ্চিত থাকে না। যেমন- দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলার ঘটনা শুনুন।
(6) হৃদ রােগী ভাল হয়ে গেল
বাবুল মদীনা করাচীর এক ইসলামী ভাইয়ের হৃদপিন্ডে ব্যথা শুরু হল। ডাক্তার বললেন: আপনার হৃদপিন্ডের দুটি শিরাই বন্ধ রয়েছে, ANGIOGRAPHY (এনজিওগ্রাফী) করে নিন। এ রােগের চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকে ভর্তি হলে হাজার হাজার টাকা খরচ হত। এ বেচারা গরীব মানুষ, এত বড় খরচের অংক শুনে ভয় পেয়ে গেলেন। এক ইসলামী ভাই তাকে ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমে দাওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত সমূহ প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলাতে সফর করে সেখানে দোয়া করার জন্য উৎসাহিত করলেন। তাই তিনি তিন দিনের জন্য মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেলেন। ফিরে আসার সময় সুস্থতা অনুভব করলেন। ফিরে এসে যখন পুনরায় পরীক্ষা করালেন তখন সব রিপোর্ট সঠিক পাওয়া গেল। ডাক্তার অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: 'তুমি কি কোথাও চিকিৎসা করিয়েছ? তােমারতাে হৃদপিন্ডের দুটি বন্ধ শিরা পুনরায় চালু হয়ে গেছে? এটা কি করে সম্ভব হল?' জবাব দিলেন, اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ “দাওয়াতে ইসলামীর । মাদানী কাফেলাতে সফর করে দোয়া করার বরকতে হৃদপিন্ডের জীবন নাশক রােগ থেকে আমার মুক্তি লাভ হয়েছে।"
লুটনে রহমতে কাফিলে মে চলাে,শিখনে সুন্নাতে কাফিলে মে চলাে।দিল মে গর দরদ হাে ডরসে রুশ যরদ হাে, পাওগে রাহাতে কাফিলে মে চলল।
(৭) ইয়াহইয়া (عليه السلام) ও শয়তান
বর্ণিত, হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহইয়া (عليه السلام) একদা শয়তানের কাছে প্রচুর সংখ্যক ফাঁদ দেখে জিজ্ঞাসা করলেন: এগুলাে কি? সে জবাব দিল, এগুলাে কামভাব এর জাল, যা দ্বারা আমি মানুষদেরকে শিকার করে থাকি। তিনি (عليه السلام) জিজ্ঞাসা করলেন: এগুলাের মধ্যে আমাকে আটকানাের জন্যও কি কোন জাল আছে? সে বলল , তবে শুধুমাত্র এক রাতে আপনি (عليه السلام) পেট ভরে খাবার খেয়ে ছিলেন। তখন আমি ঐ রাতে আপনার উপর নামাযকে ভারী করে দিয়েছিলাম। হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহইয়া (عليه السلام) এ কথা শুনে বললেন: 'আল্লাহর শপথ! আগামীতে কখনাে আমি পেট ভরে খাব না। শয়তান বলল: আমিও ভবিষ্যতে কখনাে কাউকে এ ধরনের উপকারী কথা বলব না।” (মিনহাজুল আবেদীন, ৯৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
ইবাদতে কখন স্বাদ অর্জিত হয়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা বর্ণনা করার পর হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) বলেন: “এটা ঐ নিস্পাপ সত্ত্বার অবস্থা, যিনি সারাজীবনের মধ্যে একবার মাত্র পরিতৃপ্ত হয়ে খেয়েছেন। তাহলে ঐ ব্যক্তির অবস্থা কিরূপ হবে, যে সারাজীবন শুধুমাত্র একবার পেটকে ক্ষুধার্ত রেখেছে? এ ধরণের পেটুক মানুষ কি ইবাদতের স্বাদ লাভের আকাংখা করতে পারে?পেট ভরে খাওয়ার কারণে ইবাদতে ঘাটতি আসে। কারণ মানুষ যখন খুব ভালভাবে পরিতৃপ্ত হয়ে খাবার খেয়ে নেয় তখন তার শরীর ভারী হয়ে যায়, চোখ ঘুমে ভরে আসে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অলস হয়ে পড়ে। চেষ্টা করা সত্ত্বেও কোন কাজ-কর্ম করতে পারে না। অধিকাংশ সময় মাটিতে মৃত লাশের ন্যায় পড়ে থাকে। কথিত আছে, যখন তুমি পেটুক হয়ে যাবে তখন তুমি নিজেকে শিকলে আবদ্ধ অবস্থায় মনে কর। হযরত সায়্যিদুনা আবু সুলাইমান দারানী (رحمة الله) বলেন: আমি ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বাদ ঐ সময় অনুভব করি, যখন ক্ষুধার কারণে আমার পেট পিঠের সাথে লেগে থাকে। (মিনূহাজুল আবেদীন, ১৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের 'সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৮) দুধ বমি করে দিলেন
একবার আমীরুল মুমীনীন হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর গােলাম তাঁর (رضي الله عنه) খিদমতে দুধ নিয়ে আসল। তিনি তা পান করে নিলেন। গােলাম বলল: আমি পূর্বে যখনই কোন কিছু আপনার নিকট পেশ করতাম তখন আপনি (رضي الله عنه) সেটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, কিন্তু এ দুধের ব্যাপারে আপনি কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না। এটা শুনে তিনি (رضي الله عنه) জিজ্ঞাসা করলেন: এ দুধ কেমন? গােলাম বলল যে, আমি অন্ধকার যুগে এক অসুস্থ ব্যক্তির উপর মন্ত্র পড়ে ফুঁক দিয়েছিলাম, যার বিনিময়ে আজকে সে এ দুধ প্রদান করেছে। হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) এ কথা শুনার সাথে সাথে নিজের কণ্ঠ নালীতে আঙ্গুল দিয়ে ঐ দুধ পেট থেকে বের করে দিলেন। অতঃপর খুবই বিনয় সহকারে দরবারে ইলাহীতে আরয করলেন: “ইয়া আল্লাহ্! যা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল তা আমি করেছি। আর এটার সামান্য পরিমাণ অনেক ক্ষুদ্র অংশ যা রগের মধ্যে রয়ে গেছে তা ক্ষমা করে দাও।' (মিনহাজুল আবেদীন, ৯৭ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক আর তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা শুনলেনতাে হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) কিরূপ উচ্চ পর্যায়ের মুত্তাকী ছিলেন।কাফিরেরা কুফরী বাক্য পাঠ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়-ফুঁক করে থাকে। অন্ধকার যুগেও এরকম করা হত। এ গােলাম যেহেতু অন্ধকার যুগে ফুঁক মারার কাজ করেছিল, সে কুফরি মন্ত্র পাঠ করে ফুঁক দিয়েছে হয়তাে, এ ভয়ে সেটার বিনিময়ে অর্জিত দুধ সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) বমি করে বের করে দিলেন।
ইয়াকিনান মান্বয়ে খওফে খােদা সিদ্দিকে আকবর হে,
হাকিকি আশিকে খায়রুল ওরা সিদ্দিকে আকবর হে।
নিহায়েত মুত্তাকী ও পারসা সিদ্দিকে আকবর হে,
তাকি হে বলকে শাহে আতকিয়া সিদ্দিকে আকবর হে।
(৯) ভূনা ছাগল হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) কিছু মানুষের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সামনে ভুনাকৃত ছাগল (এর মাংস) রাখা ছিল। তারা তাঁকে খাবার খাওয়ার জন্য আহ্বান করলেন। তখন তিনি (رضي الله عنه) এ কথা বলে খাবার খেতে অস্বীকৃতি জানালেন, প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) এ অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
কখনাে জবের রুটিও পেট ভরে খাননি। (সহীহ বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৪১৪)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক আর তাঁর 'সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
খােদায়া মে উমদা গিজায়ে না খাও গমে মুস্তফা মে বস আছাে বাহাও।
ঝলসানাে রাস
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) এর নবী করীম (ﷺ) বিরহ বেদনা এরূপ ছিল, নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) এর পবিত্র ক্ষুধার কথা স্মরণ করে ভুনাকৃত ছাগলের মাংস খেতে অস্বীকার করলেন। আর আহ! অপরদিকে আমাদের ন্যায় নাম মাত্র আশিকরা, যদি। জ্বলন্ত কয়লায় ভুনা ছাগলের মাংস বরং ঝলসানাে রানও সামনে এসে যায় তবে ইশক ও প্রেম সবকিছু ভুলে গিয়ে ক্ষুধার্ত বাঘের ন্যায় সেটার উপর 'ঝাঁপিয়ে পড়ব আর উভয় হাত দ্বারা চুষে চুষে খাবারের মধ্যে এমনভাবে মগ্ন হয়ে যাব যে, সম্ভবত জামাআত সহকারে নামায পড়ার ব্যাপারেও হুশ থাকবেনা। আহ! আজ-কাল প্রায় দাওয়াতে এ রকমই হয়ে থাকে। এমনকি বুযুর্গদের ওরশ এর দাওয়াতের ন্যায় নফল কাজ করার সময় 'আল্লাহর পানাহ! প্রায় নামাযী খাবারের প্রতি লােভী হওয়ার কারণে জামাআত ছেড়ে দেন। আমার মাদানী অনুরােধ হচ্ছে, যখনই কোন দাওয়াতের আয়ােজন করেন, তখন এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন, এ সময়ের মধ্যে আবার যেন কোন নামাযের সময় এসে না যায়। যদি! খাবারের মাঝে নামাযের সময় চলে আসে তবে দাওয়াতকারী ও মেহমান প্রত্যেকেই লখাে ব্যস্ততা সত্ত্বেও খাবার বন্ধ করে দিয়ে তৎক্ষণাৎ মসজিদে চলে যাবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত শরীয়ত সম্মত কোন অপারগতা থাকবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত মসজিদের প্রথম জামাআতে অংশগ্রহণ করা ওয়াজিব। যদি ঘরে জামাআত করেও নেন তবুও জামাআত তরকের গুনাহ থেকে রেহাই পাবেন না। এ কথার স্বপক্ষে মুফতীগণ কি বলেন শ্রবণ করুন; বরং কিছু ; ফুক্বাহায়ে কিরাম এর মতে “ইকামাতের পূর্বে মসজিদে যে আসবেনা সে গুনাহগার হবে।”
কুফরের উপর মৃত্যু হওয়ার ভয়
ইফতার পার্টি, দাওয়াতে ওরশ ও না'তের মাহফিল ইত্যাদির কারণে ফরয নামাযে মসজিদের জামাআতে ঊলা (অর্থাৎ প্রথম জামাআত) পরিত্যাগ করার কোন ধরণের অনুমতি নেই। এমনকি এ হুকুম থেকে তারাও বাদ যাবে না যেসব মানুষ ঘর বা হলরুম কিংবা বাংলাের কম্পাউন্ডে তারাবীর নামাযের জামাআতের ব্যবস্থা করে থাকেন, অথচ নিকটেই মসজিদ বিদ্যমান রয়েছে। এ অবস্থায় তাদের উপরও ওয়াজিব যে, প্রথমে (ইশার) ফরয নামায জামাআতে উলার সাথে মসজিদে আদায় করা। যে সব মানুষ শরীয়ত সম্মত অপারগতা ছাড়া সুযােগ থাকা সত্ত্বেও ফরয নামায মসজিদে জামাআতে উলার সাথে আদায় করেন না, তাদের ভয় করা উচিত। কারণ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন: যার এটা পছন্দ হয়, কাল আল্লাহ্ তাআলার সাথে মুসলমান অবস্থায় সাক্ষাৎ লাভ করবে, তবে সে যেন ঐ পাঁচ ওয়াক্ত নামায (এর জামাআত) ঐ স্থানে (নিয়মিত আদায়) করে, যেখানে আযান দেয়া হয়।কেননা, আল্লাহ্ তোমাদের নবী (ﷺ) এর জন্য সুনানে হুদা শরীয়ত সম্মত (তথা আইন সম্মত) করেছেন। আর এ (জামাআত সহকারে) নামাযগুলােও সুনানে হুদার অন্তর্ভূক্ত। আর যদি তােমরা নিজেদের ঘরে পড়ে নাও যেভাবে পিছনে থেকে যাওয়া লােকেরা ঘরে নামায পড়ে নেয়, তাহলে তােমরা নিজ নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ করবে, আর যদি নিজ নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও, তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (মুসলিম শরীফ, ১ম খন্ড, ২৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৫৭)
এ হাদীসে মােবারাকা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, জামাআতে উলাতে নিয়মিত অংশগ্রহণকারীর ঈমানের সাথে মৃত্যু লাভ হবে এবং যে শরীয়ত সম্মত অপারগতা ছাড়া মসজিদের জামাআতে উলা পরিত্যাগ করে তার জন্য আল্লাহর পানাহ! কুফরের উপর মৃত্যুবরণ করার ভয় রয়েছে। যারা অহেতুক অলসতাবশতঃ পরিপূর্ণ জামাআত সহকারে নামায আদায় করতে পারেনা তারা মনােযােগ দিয়ে শ্রবণ করুন, আমার আক্বা আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মওলানা শাহ আহমদ রযা খান (رحمة الله) বলেন: বাহরুর রাইক ও “কুনিয়া” কিতাবে রয়েছে, যদি আযান শুনে দুখুলে মসজিদ (অর্থাৎ মসজিদে প্রবেশের জন্য! ইকামতের অপেক্ষা করে, তবে গুনাহগার হবে”। (ফতওয়ায়ে রযবীয়াহ, ৭ম খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা। আল বাহরু রাইক, ১ম খন্ড, ৬০৪ পৃষ্ঠা)
ফতােওয়ায়ে রযবীয়াহ শরীফের ঐ পৃষ্ঠাতে রয়েছে, “যে ব্যক্তি আযান শুনে ইকামতের জন্য ঘরে অপেক্ষা করে , তার সাক্ষ্য গ্রহণযােগ্য নয়।" (আল বাহরুর রা-ইক, ১ম খন্ড, ৪৫১ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যে ইকামতের পূর্বে মসজিদে না যায়, কিছু ফুকাহায়ে কিরাম رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی এর মতে, সে গুনাহ্ঙ্গার ও অর্থাৎ সাক্ষীর জন্য অনুপযুক্ত। তাহলে যে কোন অপারগতা ছাড়া ঘরে জামাআত প্রতিষ্ঠা করে অথবা জামাআত ছাড়া নামায আদায় করে কিংবা আল্লাহর পানাহ! নামাযই পড়ে না, তার কি অবস্থা হবে?
ইয়া রব্বে মুস্তফা! (ﷺ) আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাআতে উলার প্রথম কাতারে, প্রথম তাকবীরের সাথে আদায় করার সৌভাগ্য সর্বদা নসীব করুন। امین
মে পাচো নামাযে পড়াে বা জামাত,
হাে তাওফীক আয়ছি আতা ইয়া ইলাহী।
(১০) ভাবাবেগপূর্ণ খুৎবা
হযরত সায়্যিদুনা খালিদ বিন উমাইর আদাবী (رضي الله عنه) বলেন: বসরার শাসক হযরত সায়্যিদুনা উতবা বিন গাওয়ান (رضي الله عنه) এক সময় আমাদেরকে এরূপ খুৎবা (ভাষণ) দিলেন, আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসার পর বললেন: “নিশ্চয় দুনিয়া নিজের ধ্বংস হওয়ার কথা ঘােষণা করে দিয়েছে আর সেটা সীমাহীন দ্রুতবেগে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। তবে শুধু এতটুকু অবশিষ্ট রয়ে গেছে, যতটুকু বাসনের তলানি(বাসনের তলায় খাবার খাওয়ার পর সামান্য পরিমাণ যা কিছু থেকে যায় সেটাকে তলানি বলে) আর বাসনের মালিক এ থেকে উপকার অর্জন করছে।তােমরা এ দুনিয়া থেকে ঐ ঘরের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, যেটা কোনদিন ধ্বংস হবেনা। এজন্য তােমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে উত্তম বস্তু রয়েছে তা নিয়ে ঐ আখিরাতের ঘরের দিকে প্রত্যাবর্তন কর। আমাদেরকে এটা বলা হয়েছে যে, জাহান্নামের কিনারা থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হবে, যেটা সত্তর বৎসর পর্যন্ত নীচের দিকে পড়তে থাকবে কিন্তু তা সত্ত্বেও সেটা জাহান্নামের তলায় গিয়ে পৌছাবেনা। আর আল্লাহর শপথ! এ জাহান্নামকে অবশ্যই ভর্তি করা হবে। তােমরা কি এতে অবাক হচ্ছ? আর আমাদেরকে এটাও বলা হয়েছে যে, “জান্নাতের দরজাগুলাের দুটি প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব ৪০ বৎসরের সমান পথ হবে। এর মধ্যে একটি দিন অবশ্যই এমন আসবে, যখন তা ভীড়ের কারণে পূর্ণ হয়ে যাবে।” আমি আমাকে দেখলাম, আমি নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) এর সাথে ৭ জন মানুষের মধ্যে সপ্তম নম্বরে ! ছিলাম। আমাদের কাছে গাছের পাতা ছাড়া খাওয়ার জন্য কিছু ছিলনা। এমনকি (পাতা খাওয়ার কারণে) আমাদের ঠোটের কোনা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। আমি একটি চাদর পেলাম আর সেটা (মধ্যখানে ছিড়ে) নিজের ও সা'দ বিন মালিক (رضي الله عنه) এর মাঝে বন্টন করে নিলাম। অর্ধেক চাদর আমি লুঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করেছি আর অর্ধেক সা'দ বিন মালিক (رضي الله عنه) (তখন তা অসচ্ছলতার সময় ছিল) আর আজ আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই কোন না কোন শহরের শাসক। আমি এ বিষয় থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি যে, আমিতাে (ভাল ধারণাবশত) নিজেকে মহান মনে করব কিন্তু আল্লাহর নিকট আমি খুবই তুচ্ছ সাব্যস্ত " হব। (মুসলিম শরীফ, ২য় খন্ড, ৪০৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৯৬৭)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা শুনলেনতাে! সাহাবায়ে কিরাম عليم الر رضون নেকীর দাওয়াত সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রচন্ড ক্ষুধা সহ্য করেছেন। এমনকি গাছের পাতা খেয়ে ও ভীষণ ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করে ইসলামের বৃক্ষে পানি দিয়েছেন। সত্যিই ঐ সময়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। যেমনিভাবে অন্য একটি বর্ণনা থেকেও তা প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন
(১১) আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপকারী
আশরায়ে মুবাশশারার মধ্য থেকে একজন জান্নাতী সাহাবী হযরত সায়্যিদুনা সা'দ বিন আবী ওয়াককাস (رضي الله عنه) বলেন: আমি আরবের সে প্রথম ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে সর্ব প্রথম তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) এর সাথে জিহাদ করতাম। আর আমাদের কাছে কাঁটাযুক্ত গাছের পাতা ছাড়া খাওয়ার জন্য কিছুই থাকত না। শৌচকার্যের সময় আমাদের মল ছাগলের বিষ্টার মত হত। যাতে তৈলাক্ত : পদার্থের নাম গন্ধও থাকতনা। (সহীহ বুখারী, ৭ম খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬৪৫৩)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আরাম লাভ হওয়ার পরও এ সকল সাহাবায়ে কিরামদের عليم الر رضون প্রবল আগ্রহ শেষ হয়ে যাওয়া তাে দূরের কথা বিন্দুমাত্র কমেওনি বরং আল্লাহর ভয় আরাে বেড়ে গেল এই ভেবে যে, আবার যেন এমন না হয়, আমরা নিজেদেরকে বুযুর্গ মনে করে বসব আর আল্লাহ্ আমাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকেও এ সকল সাহাবায়ে কিরাম عليم الر رضون এর সদকায় নেকীর দাওয়াত প্রসার করার ব্যাকুলতা ও এর জন্য কতাওবানী দেওয়ার আগ্রহ দান করুক। আমীন। প্রত্যেক ইসলামী ভাইয়ের উচিত, তিনি যেন নিজের এমন মানসিকতা তৈরী করেন যে, “আমাকে নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশােধনের চেষ্টা করতে হবে,
আর সাহাবায়ে কিরামগণের عليم الر رضون আল্লাহর পথে কতাওবানী সমূহের কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করার জন্য, দাওয়াতে ইসলামী'র সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় সফরের সৌভাগ্য লাভ করে, দ্বীন ও দুনিয়ার বরকত সমূহ অর্জন করুন। মাদানী কাফেলার এক বাহার পেশ করা হচ্ছে:
(১২) হাতের আঁচিল
ঠান্ডু আদম সিন্ধু প্রদেশ, এর এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা, আমি প্রায় দু’বৎসর পর্যন্ত হাতের অসুস্থতার কারণে চিন্তিত ছিলাম। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। একবার অপারেশনও করিয়েছি কিন্তু যতই চিকিৎসা করছি রােগ ততই বাড়ছিল। অন্তরে এক রকম ভয় এসে গেল, সম্ভবত এর কারণে ক্যান্সার হয়ে যাবে আর আমার হাত শেষ পর্যন্ত কেটে ফেলা হবে। আল্লাহ তাআলা কুরআন ও সুন্নাতের। বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর সূবায়ী মাজলিশে মুশাওয়ারাত বেলুচিস্থানকে' সর্বদা নিরাপদ রাখুন। আমীন। তারা সূবায়ী (প্রাদেশিক) পর্যায়ে কোয়েটাতে দু'দিন ব্যাপী সুন্নাতে ভরা ইজতিমা এর (২৭-২৮ জুমাদিল উলা, ১৪২৫ হিজরী) আয়ােজন করলেন। সৌভাগ্যক্রমে আমিও সুন্নাতে ভরা ইজতিমাতে অংশগ্রহণ করলাম। দাওয়াতে ইসলামীর অসংখ্য মাদানী কাফেলা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সর্বদা সফররত থাকে, আর গ্রামে-গঞ্জে, লােকালয়ে নেকীর দাওয়াতের সাড়া জাগিয়ে থাকে। আমি শুনেছি যে, মাদানী কাফেলাতে সফরকারীদের দোয়া সমূহ কবুল হয়। আমিও সাহস করলাম, আর কোয়েটা থেকে দাওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের ১২ দিনের মাদানী কাফেলার। মুসাফির হয়ে গেলাম। আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মাদানী আক্কা, প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) এর ওয়াসীলা পেশ করে কেঁদে কেঁদে সেখানে দোয়া করলাম। আমি গুনাহগারের উপর দয়া হয়ে গেল।اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমার হাত থেকে সবগুলাে আঁচিলগুলাে ঝরে গেল। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, যেসব জায়গায় অপারেশন করিয়েছিলাম, সেগুলাের চিহ্ন তাে অবশিষ্ট রয়েছে কিন্তু ১২ দিনের মাদানী কাফেলাতে আঁচিলগুলাে ঝরে যাওয়ার চিহ্ন পর্যন্তও অদৃশ্য হয়ে গেল!الحمد لله على احسانه كرمه
লুটনে রহমতে কাফিলে মে চল,
শিকনে সুন্নাতে কাফিলে মে চল।
যখম বিগড়ে ভরে ফুড়ে পুসি মিটে,
গর হাে মাচ্ছে জড়ে কাফিলে মে চলাে।
সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইআমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানাের অভ্যাস গড়ে তুলুন।اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন মানসিকতা সৃষ্টি হবে।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ছরকারে বাগদাদ হুযূরে গউসে পাক (رضي الله عنه) নফস ও শয়তান থেকে মুক্তির জন্য বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ২৫ বৎসর যাবত ইরাক শরীফের জঙ্গল সমূহে একাকী অবস্থায় সাধনা করতে থাকেন।
তু হে উও গউছ কেহু হার গউছ হে শায়দা তেরা
তু হে উহ গইছ কে হার গউছ হে পিয়াসা তেরা।
(১৩) শীতের রাতে ৪০ বার গোসল
‘বাহ্জাতুল আহ্বার শরীফে রয়েছে: ছরকারে বাগদাদ, হুযূরে গউসে পাক (رحمة الله) বলেন:اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি কারখের জঙ্গল গুলােতে অনেক বছর অবস্থান করেছি। আমি সেখানে গাছের পাতা ও ঘাসের চারা খেয়ে জীবন যাপন করতাম। আমার পরিধানের জন্য এক ব্যক্তি প্রতি বৎসর সুতার তৈরী একটি জুব্বা দিয়ে যেতেন। আমি দুনিয়ার মােহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হাজার চেষ্টা করেছি, আমি একা ও চিন্তিত অবস্থায় থেকেছি। আমার নীরবতার কারণে লােকেরা আমাকে বােবা ও পাগল বলত। কখনাে কখনাে কাঁটার উপর খালি পায়ে চলতাম, ভয়ানক গুহা ও ভীতিপ্রদ উপত্যকা সমূহে নির্ভয়ে ঢুকে পড়তাম। দুনিয়া সজ্জিত হয়ে আমার সামনে প্রকাশ হত, কিন্তু اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি সেটার প্রতি মনােনিবেশ করতাম না। আমার নফস কখনাে আমার সামনে বিনয়ী ভাব প্রকাশ করত যে, আপনার যা ইচ্ছা তাই করুন। আবার কখনাে আমার সাথে ঝগড়া করত। আল্লাহ আমাকে সেটার উপর বিজয় দান করতেন। আমি অনেক দিন পর্যন্ত ‘মাদায়েন' এর বনে অবস্থান করেছি, আর সেখানে নিজের নফসকে সাধনায় নিয়ােজিত করে রেখেছিলাম। এক বৎসর যাবত পতিত বস্তু সমূহ কুড়িয়ে আহার করতাম ও পানি মােটেই পান করতাম না। অতঃপর এক বৎসর শুধুমাত্র পানি দ্বারা জীবন ধারণ করতাম আর পতিত বস্তু কিংবা অন্য কোন খাদ্য খেতাম না। এরপর এক বৎসর কোন কিছু পানাহার করা ব্যতীত উপবাস অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করতাম। সে সময় আমার উপর কঠিন পরীক্ষা আসত। একবার প্রচন্ড শীতের রাতে এভাবে আমার পরীক্ষা নেয়া হল যে, বার বার চোখে ঘুম আসত আর আমার উপর গােসল ফরয হয়ে যেত। আমি তৎক্ষণাৎ নদীতে যেতাম আর গােসল করে নিতাম। এভাবে এক রাতে শীতের প্রচন্ড (হাঁড় কাঁপানাে) ঠান্ডায় ৪০ বার আমি ঠান্ডা পানি দিয়ে গােসল করেছি। (বাহজাতুল আসরার, ১৬৪, ১৬৫ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(১৪) মাটি থেকে খুঁজে খুঁজে পতিত টুকরা খাওয়া
ছরকারে বাগদাদ হুযূরে গউসে পাক (رحمة الله) বলেন: “আমি যখন শহরে খাওয়ার জন্য পতিত টুকরা কিংবা জঙ্গলের কোন ঘাস বা ফুলের পাপড়ী তুলতে চাইতাম আর এমন সময় যদি দেখতাম, অন্য ফকিরও এটা খুঁজছেন, তখন নিজের ইসলামী ভাইকে ঈসার (তথা অপরকে নিজের উপর প্রাধান্য দান করে তা তুলতাম না বরং ওভাবেই রেখে দিতাম যাতে তারা তুলে নিয়ে যায় আর নিজে ক্ষুধার্ত থাকতাম। যখন ক্ষুধার কারণে দুর্বলতা সীমার বাইরে চলে গেল আর আমি মৃত্যুর নিকটবর্তী হয়ে গেলাম তখন “ফুলের বাজার থেকে একটি খানার বস্তু যা মাটিতে পতিত অবস্থায় ছিল তা আমি উঠালাম আর এক কোনায় গিয়ে সেটা খাওয়ার জন্য বসলাম। এরই মধ্যে একজন অনারবী যুবক সেখানে আসল যার কাছে টাটকা রুটি ও ভুনা মাংস ছিল। সে সেখানে বসে তা খেতে লাগল। এটা দেখে আমার খাওয়ার আগ্রহ প্রচন্ডভাবে বেড়ে গেল। যখন সে তার খাবার খাওয়ার জন্য লােকমা উঠাত তখন ক্ষুধার অস্থিরতার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মন চাইত যেন মুখ হা করে দিই যাতে সে আমার মুখে লােকমা ঢেলে দেয়। এ সময়ও আমি অত্যন্ত ধৈর্যধারণ করলাম, আর আমার নফসকে ধমক দিয়ে বললাম, “ধৈর্যহারা হবিনা, আল্লাহ আমার সাথে আছেন। আমি আমার এ নীতির উপর অটল রইলাম আর প্রতিজ্ঞা করলাম অবস্থা যা-ই হােক না কেন আমি কিন্তু এ যুবক থেকে চেয়ে কখনাে খাব না। হঠাৎ ঐ যুবক আমার দিকে মনােনিবেশ করল, আর বলতে লাগল, “ভাই! আসুন, আপনিও (رحمة الله) খাবারে অংশ গ্রহণ করুন।" আমি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলাম। সে বারংবার অনুরােধ করতে লাগল। আমার নফস আমাকে খাওয়ার জন্য খুবই উৎসাহ দিল কিন্তু আমি তারপরও অস্বীকৃতি জানালাম। কিন্তু ঐ যুবকের বারংবার বলার কারণে আমি সামান্য পরিমাণ খাবার খেয়ে নিলাম। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কোথাকার বাসিন্দা? আমি বললাম: “জীলানের” সে বলল: আমিও জীলানের অধিবাসী। আচ্ছা, “আপনি সুপ্রসিদ্ধ আবিদ ও যাহিদ, আল্লাহর ওলী হযরত সায়্যিদ আবদুল্লাহ্ সূমাঈ (رحمة الله) এর নাতি আবদুল কাদির (رحمة الله) কে চেনেন?” আমি বললাম: “সেতাে আমিই।” একথা শুনে সে অস্থির হয়ে উঠল আর বলতে লাগল, “আমি যখন বাগদাদ আসছিলাম তখন আপনার আম্মাজান (رحمة الله) আপনাকে দেয়ার জন্য আমাকে সােনার আটটি দিনার দিয়েছিলেন। আমি এখানে বাগদাদে এসে আপনাকে (رحمة الله) খুঁজতে থাকি কিন্তু কেউ আপনার (رحمة الله) সন্ধান দিতে পারে নি।শেষ পর্যন্ত আমার সব টাকা-পয়সা খরচ হয়ে যায়। আজ তিনদিন থেকে আমি উপবাস। আমি যখন ক্ষুধায় দুর্বল হয়ে গেলাম এবং প্রাণ যাওয়ার : উপক্রম হল তখন আমি আপনার (رحمة الله) আমানত থেকে এ রুটি ও ভুনাকৃত মাংস ক্রয় করলাম। হুযূর! আপনি (رحمة الله) আনন্দচিত্তে এটা আহার করুন। কারণ এগুলাে আপনারই (رحمة الله) সম্পদ। প্রথমে আপনি (رحمة الله) আমার মেহমান ছিলেন আর এখন আমি আপনার (رحمة الله) মেহমান।" অবশিষ্ট টাকা-পয়সা ফেরত দিয়ে বলল: “আমি ক্ষমা প্রার্থী। উপায়হীন অবস্থায় আমি আপনার (رحمة الله) টাকা থেকে খাবার কিনেছি।” আমি তার কথায় খুবই খুশী হলাম। আমি অবশিষ্ট খাবার ও আরাে কিছু মূল্যবান জিনিস তাকে দান করলাম, সে তা গ্রহণ করল এবং বিদায় নিল। (আব্দুজাইল আলা বাতিল হানা-বিলা, ৩য় খন্ড, ২৫০ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
তলব কা মুহ তাে কিস কাবিল হে ইয়া গউছ,
মগর তেরা করম কামেল হে ইয়া গউছ। (হাদায়িখে বখশিশ)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা। এ ধরণের ক্ষুধা সহ্য করা ও কঠিন মুসিবতে আক্রান্ত হওয়ার পর নিজেরই সম্পদ ফিরে পাওয়ার পরও সেটা দান করে দেয়া সত্যিই অনেক বড় ধরনের ত্যাগের কথা, আর এটা আওলিয়ায়ে কিরামগণের رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی অংশ আমাদের গউসে আযম (رحمة الله) এর উপবাসকে শত মারহাবা ও তাঁরদানকেও শত কোটি মারহাবা! হায়! এমন যদি হত!আমাদের মাঝেও দানের আগ্রহ সৃষ্টি হয়ে যেত।হায়! হায়! আমাদেরতাে পেট ভর্তি করে নেয়ার পর অবশিষ্ট খানাটুকুও দান করার উদ্দীপনা থাকেনা বরং আগামীতে খাওয়ার জন্য সেগুলাে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দেই। হায়! এমন যদি হত, দানের মহান সাওয়াব অর্জনের জন্য আমাদেরও মন-মানসিকতা সৃষ্টি হয়ে যেত।
(১৫) কঠোরতার পর সহজতা
হযরত আল্লামা ইমাম শারানী (رحمة الله) “তাবকাতে কুবরা” নামক গ্রন্থে হুযূর গউসুল আযম (رحمة الله) এর এ বাণী উদ্ধৃত করেন, “প্রথম দিকে আমার উপর ভীষণ কঠোরতা আরােপ হয়েছে। যখন কঠোরতা সীমাহীন বৃদ্ধি পেল তখন আমি দুর্বল হয়ে শুয়ে গেলাম আর আমার মুখে কুরআনে পাকের এ দুইটি আয়াত জারী হয়ে গেল।
ﻓَﺈِﻥَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻌُﺴْﺮِ ﻳُﺴْﺮًﺍ
ﺇِﻥَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻌُﺴْﺮِ ﻳُﺴْﺮًﺍ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: (৫) . সুতরাং নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে, (৬) নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (পারা- ৩০, সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াত- ৫-৬)।
এ আয়াতগুলাের বরকতে ঐ সকল কঠোরতা আমার কাছ থেকে দূর হয়ে গেল।”
ওয়াহ কিয়া মরতবা আয় গউছ হে বালা তেরা,
উর্চে উঠো কে ছরাে ছে কদম আ'লা তেরা। (হাদায়িকে বখশিশ)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁরসদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিশ্চয় কিছু লাভ করার জন্য কিছু ত্যাগ করতে হয়। আমাদের গউসুল আযম (رحمة الله) নিজের আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্য অর্জন ও আপন নানাজান, আল্লাহর প্রিয় হাবীব (ﷺ) এর সন্তুষ্টি অর্জন, নফস ও শয়তানের উপর জয়ী হওয়া, দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে মুক্তি লাভ, গুনাহের রােগ হতে নিজেকে রক্ষা, আল্লাহর সৃষ্টিকে সঠিক পথে আনা,মুবাল্লিগের মহান সৌভাগ্য অর্জন করে অসংখ্য সাওয়াব লাভ, নেকীর দাওয়াতের বিশ্বময় প্রসারতা দান ও অসংখ্য কাফিরকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দেয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। যাক আমরা হুযূরে গউসে পাক (رحمة الله) এর ন্যায় সাধনাতাে করতে অক্ষম, কিন্তু তারপরও সাহস না হারিয়ে এটাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে কিছু না কিছু অগ্রসর হওয়ার চেষ্টাতাে করতে পারি।
ছাচ হে ইনসান কো কুছ খােকে মিলা করতা হে,
আপ কো খেকে তুঝে পায়েগা জাও ইয়া তেরা। (যওকে নাত)
ছরকারে বাগদাদ (رحمة الله) এর ভালবাসা পােষণকারী
ইসলামী ভাইয়েরা! গউসে আযম (رحمة الله) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ২৫ বৎসর ইরাকের জঙ্গলে অতিবাহিত করেছেন। আর সেখানে অতুলনীয় ক্ষুধা ও পিপাসার কষ্ট সহ্য করেছেন। হায়! এমন যদি হত, আমাদেরও কুরআন সুন্নাত প্রচারের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামী'র সুন্নাত প্রশিক্ষণের নিয়্যতে গ্রামে-গঞ্জে, নগরে-বন্দরে ও দেশ থেকে দেশে সফরকারী মাদানী কাফেলায় মুসাফির হওয়ার সৌভাগ্য নসীব হত।
(১৬) প্রতিদিনের খাবার ১০টি মাত্র মুনাক্কা (বড় কিসমিস)
হযরত আবু আহমদ সগীর (رحمة الله) বলেন: আমাকে হযরত সায়্যিদুনা আবু আবদুল্লাহ বিন খাফীফ (رحمة الله) নির্দেশ দিলেন যে, প্রতি রাতে যেন তাঁর ইফতারীর জন্য ১০টি মুনাক্কা (বড় কিসমিস) পেশ করি। এক রাতে দয়া করে আমি ১০টির পরিবর্তে ১৫টি মুনাক্কা হাজির করলাম। তিনি রাগের সাথে আমার দিকে তাকালেন আর বললেন: “তােমাকে ১৫টি আনার নির্দেশ কে দিয়েছে?” তিনি সেখান থেকে শুধুমাত্র ১০টি খেলেন আর বাকী ৫টি খেলেন না। (রিসালাতুল কুশাইরয়্যাতু, ১৪৩ পৃষ্ঠা)।
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
মুনাক্কার (বড় কিসমিস) আশ্চর্যজনক উপকার
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো হযরত সায়্যিদুনা আবূ আবদুল্লাহ (رحمة الله) প্রতিদিন শুধুমাত্র ১০টি মুনাক্কা দিয়ে জীবন ধারণ করতেন। আওলিয়ায়ে কিরামদের عليم الر رضون আপন নফসকে শাস্তি দেয়ার নিয়ম প্রণালীর প্রতি মারহাবা! তিনি মুনাক্কা নিবার্চন করে খুবই উত্তম করেছেন। শুকনাে ছােট আঙ্গুরকে কিসমিস ও শুকনাে বড় আঙ্গুরকে মুনাক্কা বলা হয়।
ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “এটা খাও, এটা (মুনাক্কা) উত্তম খাবার, ইহা রগ এবং জোড়া কে মজবুত করে, দুর্বলতা দূর করে, রাগকে ঠান্ডা করে, কফ দূর করে, চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও মুখকে সুগন্ধিময় করে তােলে।" (কাশফুল খাফা, ২য় খন্ড, ৪৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৮৪)
হযরত মাওলা আলী (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদীসে পাকে এটাও রয়েছে যে, (মুনাক্কা) দুর্বলতা দূর করে, মেজাজকে শান্ত করে, নিঃশ্বাসকে সুগন্ধিময় করে ও চিন্তা দূর করে। (কানযুল উম্মাল, ১০ম খন্ড, ১৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৮২৬১)
কিসমিমের পানি পান করা সুন্নাত
নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর জন্য কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখা হত। হুযুর (ﷺ) সে পানি ঐ দিন, দ্বিতীয় দিন এবং অনেক সময় এর পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পান করতেন। এর পর এটার ব্যাপারে যখন নির্দেশ দিতেন তখন খাদিমগণ তা পান করে নিতেন কিংবা তা ফেলে দেয়া হত। কারণ পরে তাতে পরিবর্তন এসে যেত। (আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৭, হাদীস- ৩৭১৩)
মুনাক্কা ঔষধও বটে আবার খাদ্যও। এটা ইচ্ছা করলে যেভাবে আছে সেভাবে কিংবা ছাল ফেলে দিয়ে প্রয়ােজন পরিমাণ খেয়ে নিন। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হযরত সায়্যিদুনা ইমাম যুহুরী (رحمة الله) বলেন: যার হাদীসে মােবারাকা সমূহ মুখস্ত করার আকাঙ্খা হয়, সে যেন (প্রয়ােজন পরিমাণ) মুনাক্কা খায়। মুনাক্কা দানাসহ খাওয়া যায়। বরং ইমাম যুহুরী (رحمة الله) বলেন: “মুনাক্কার দানা পাকস্থলীর সুস্থতা দান করে। মুনাক্কা কয়েক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। অতঃপর সেটার ছাল ফেলে দিয়ে মজ্জা বের করে নিন।মুনাক্কার মজ্জা ফুসফুসের জন্য মহৌষধ ও পুরাতন কাঁশির জন্য ফলদায়ক। গুর্দা ও মূত্রথলির ব্যথা দূর করে, কলিজা ও প্লীহাকে শক্তিশালী করে। পেট নরম করে, পাকস্থলী মজবুত করে এবং হজম শক্তি ঠিক করে।
কাঁশির চিকিৎসা
প্রতি দিন ৪০টি কিসমিস (যদি সম্ভব হয় দ্বিগুণ করে নেওয়াতে কোন অসুবিধা নেই) ও তিনটি বাদাম নিয়ে এগুলাের উপর ১১ বার দরূদ শরীফ পাঠ করে ফুঁক দিয়ে তা খেয়ে নিন। এরপর দু'ঘন্টা পানি পান করবেন না।اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কাঁশির জন্য খুবই উপকার হবে। কফ বের হয়ে আসবে এবং পুনরায় কফ তৈরী হবে না। (প্রয়ােজনবশতঃ কিসমিসের সংখ্যা বৃদ্ধি করুন) খুব ছােট বয়সের শিশুদের জন্য প্রয়ােজন অনুযায়ী পরিমাণ কিছুটা কম করে নিন। আরােগ্য লাভ না হওয়া পর্যন্ত এ চিকিৎসা চালু রাখুন।
লাল মুনাক্কার উপকারীতা
হযরত মাওলায়ে কায়িনাত, আলিয়ুল মুরতাদা শেরে খােদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, যে প্রতি দিন ২১টি লাল মুনাক্কা খাবে, সে ঐ সকল রােগ থেকে নিরাপদ থাকবে যেগুলাের ব্যাপারে আতংকিত। (আবু নুআ'রুম)
(১৭) বেগুনের আকাঙ্খা
হযরত সায়্যিদুনা আবূ নসর তামার (رحمة الله) বলেন: “اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ একদা রাত্রিবেলা হযরত সায়্যিদুনা বিশৃরে হাফী (رحمة الله) আমাদের ঘরে তাশরীফ আনলেন। আমি ওলী-এ-কামিলের আগমনে আল্লাহর শােকর আদায় করলাম। অতঃপর আরয করলাম: “ইয়া সায়্যিদী!(رحمة الله) আমাদের এখানে খােরাসান থেকে তুলা এসেছিল, তা দিয়ে আমার মেয়ে সুতা কেটে সেগুলাে বিক্রি করে মাংস ক্রয় করেছে। দয়া করে! আমাদের ঘরে ইফতার করে নিন। “তিনি বললেন: যদি আমি কারাে ঘরে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা করি তাহলে আপনার এখানেই খাব।” অতঃপর বলতে লাগলেন, “দীর্ঘদিন যাবত বেগুন খাওয়ার ইচ্ছা পােষণ করছি কিন্তু এখনাে খাওয়া হল না।” আমি বললাম: “ইয়া সায়্যিদী! (رحمة الله) সৌভাগ্যবশতঃ এ গােস্তে হালাল উপার্জনের বেগুনও দেয়া হয়েছে। তিনি (رحمة الله) বললেন: “আমিতাে ঐ সময় বেগুন খাব যখন সেটার ভালবাসা আমার অন্তর থেকে বের হয়ে যাবে।” (রিসালাতুল কুশাইরিয়া, ১৪৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! আল্লাহর ওলী (رحمة الله) নফসের কামনার অনুসরণ করা থেকে কি পরিমাণ সংযমী ! ছিলেন নফসের দাবীর কারণে হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله) দীর্ঘদিন হয়ে গেল, বেগুন খাচ্ছেন না! এসব মহান সত্ত্বাগণের মাদানী ধারণা হচ্ছে এরূপ নফস যখন বলে খাও, তখন না খাওয়া, আর যদি বলে খেয়াে না' তখন খেয়ে নেয়া। মােটকথা তার নফসের ইচ্ছার বিপরীত করতেন।
(১৮) খুব খাও আর পান কর
কথিত আছে, কয়েক বৎসর থেকে হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله) এর বিচিওয়ালা সবজী, যা রান্না করে খাওয়া হয় যেমন মটর, কলাই ইত্যাদি খেতে মন চাচ্ছিল কিন্তু তিনি (رحمة الله) নিজের নফসকে দমন করে তা খেলেন না। তাঁর ইন্তিকালের পর কেউ তাঁকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করল, “আল্লাহ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন?” তিনি জবাব দিলেন, “আল্লাহু তাআলা আমাকে ক্ষমার সুসংবাদ শুনিয়ে বললেন: আরে ঐ মানুষ যে দুনিয়াতে না খেয়েছ, না পান করেছ, এখন ভালভাবে খাও আর পান কর।" (রিসালাতুল কুশারিয়া, পৃষ্ঠা ৪০৬)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
গদা ভী মুনতাজির হে খুলদ মে নেকো কি দাওয়াত কা,
খােদা দিন খায়র ছে লায়ে সাখী কে ঘর যিয়াফত কা। (হাদায়িকে বখশিশ)
(১৯) খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্য
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুয্যার (رحمة الله) এর বর্ণনা, আমার অভ্যাস ছিল, প্রতি তৃতীয় দিনে খাবার খাওয়া। একদা সফরের সময় জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম আর খাবার না খাওয়া অবস্থায় দ্বিতীয়বার তৃতীয় দিন শুরু হয়ে গেল। অনেক ক্ষুধা লেগে ছিল। দুর্বলতার কারণে ক্লান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে গেলাম। এরই মধ্যে অদৃশ্য থেকে আওয়াজ এল, “আবু সাঈদ! নফসকে খুশী করার জন্য খানার আকাঙ্খা করবে নাকি কিছু খাবার ছাড়া দুর্বলতা দূর করতে ইচ্ছুক?” আমি বললাম: “ইয়া আল্লাহ্! আমিতাে শুধু শক্তি চাই।” তাঁর (رحمة الله) বর্ণনা যে, “তখন আমার মাঝে এমন শক্তি সৃষ্টি হয়ে গেল, সেখান থেকে উঠলাম এবং কোন কিছু পানাহার করা ব্যতীত আরাে ১২ মনযিল পথ অতিক্রম করলাম।” (কাশফুল মাহজুব অনূদিত (উর্দু), ৪৫৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে আল্লাহ্ ওয়ালাগণ স্বাদ লাভের জন্য নয় বরং ইবাদাতের শক্তি অর্জনের জন্য খেয়ে থাকেন আর এ কারণে আল্লাহ্ প্রচুর দয়া তাঁদের উপর হয়, পানাহার করা ব্যতীত তাঁদের রূহানী (আত্মিক) শক্তি অর্জিত হয়ে থাকে। সুতরাং হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খায্যার (رحمة الله) পানাহার ব্যতীত শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলার প্রদানকৃত শক্তিতে আরাে ১২ মনযিল পথ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন। একদিনে যতটুকু পথ অতিক্রম করা হয়! তাকে মনযিল বলা হয়। এটার মানে এ হল, তিনি পানাহার ছাড়া আরাে ১২ দিনের পথ অতিক্রম করেছেন।
হাে কার গর নফাসাকা মুঝপে হিলা,
করম ইয়া ইলাহীনবী কা ওয়াসিলা।
(২০) খাওয়া থেকে বাঁচার জন্য লুকিয়ে গেলেন।
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খাযর (رحمة الله) বলেন:“একবার (একটি) কাফেলার সঙ্গে সফরের সময় ক্রমাগত উপবাসের এক পর্যায়ে একটি খেজুরের বাগান দৃষ্টি গােচর হল। তখন নফসকে কিছুটা আশ্বস্ত করলাম, আমি এখন খেজুর খাব। কিন্তু আমি নফসের কথা কিভাবে রাখি! কাফেলার লােকেরা তাে সেখানেই অবস্থান নিল যেখানেবাগান ছিল। আমি এটা এড়ানাের জন্য একটু দূরে গিয়ে জঙ্গলে (বালির) আড়ালে লুকিয়ে থাকলাম, যাতে নফস খেজুর খাওয়ার দাবী না করে একটু পরেই একজন সফরসঙ্গী খুঁজতে খুঁজতে আমার কাছে এসে বারবার অনুরােধ করে তার সাথে বাগানের দিকে নিয়ে গেল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “আমি যে এখানে আছি তুমি কিভাবে জানতে পারলে? ” সে বলল: আমি অদৃশ্য থেকে এ আওয়াজ শুনলাম যে, “আমার এক ওলী অমুক জায়গায় বালির মধ্যে লুকিয়ে আছে, তাঁকে নিজের সাথে নিয়ে এসাে।" (ভাযকিরাতুল আওলিয়া, ২য় খন্ড, ৩৬ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামী দুনিয়ার অসংখ্য দেশে সুন্নাতের বাহার! ছড়াচ্ছে। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে সম্পৃক্ত হয়ে নিজের এমন মানসিকতা তৈরী করে নেয়া যে, “আমাকে নিজের এবং সারা দুনিয়ার। মানুষের সংশােধনের চেষ্টা করতে হবে।”
(২১) ওলীর সংস্পর্শের ফয়েয
হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম খাওয়াস(رحمة الله) একবার জঙ্গলে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি কোথেকে বের হয়ে আসল আর বলতে লাগল, “আমি আপনার সংস্পর্শে থাকতে চাই।” তিনি (رحمة الله) যখন তার দিকে দৃষ্টি দিলেন তখন তাঁর অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হল। এরই মধ্যে সে বলতে লাগল, “আমি খ্রীষ্টান পাদ্রী। রােম থেকে আপনার (رحمة الله) সংস্পর্শে থাকার জন্য হাজির হয়েছি।” তাঁর (رحمة الله) অন্তরে সৃষ্ট ঘৃণার গােপন রহস্য প্রকাশ পেয়ে গেল। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি কাফির হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছিল। তিনি (رحمة الله) পাদ্রীকে বললেন: “আমার নিকট পানাহারের কোন কিছু নেই, আবার যেন এমন না হয়, তুমি ক্ষুধায় কষ্ট পাবে।" সে বলতে লাগল, ইয়া সায়্যিদী! দুনিয়াতে আপনার (رحمة الله) এরকম নামের ঢংকা বাজছে আর আপনি এখনাে পানাহারের চিন্তায় ব্যস্ত রয়েছেন। তার কথায় তিনি (رحمة الله) আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং তার মনােভাব জানতে পেরে তাকে তাঁর সংস্পর্শে থাকার অনুমতি দিয়ে দিলেন। ৭ দিন ৭ রাত পানাহার করা ব্যতীত কেটে গেল। এখন সে ভয় পেয়ে গেল, আর বলতে লাগল, “ইয়া সায়্যিদী! এখন এ ব্যাপারটা আমার সয্যের বাইরে চলে গেছে। পানাহারের কোন ব্যবস্থা করে দিন।" তিনি (رحمة الله) সিজদায় পড়ে গেলেন আর আল্লাহর দরবারে আরয করলেন: “ইয়া আল্লাহ! এ কাফির আমার ব্যাপারে সু-ধারণা পােষণ করেছে। আমার মান-সম্মান তােমার হাতে, আমাকে এ কাফিরের সামনে অপমান কর না।” দোয়া করে যখন সাজদা থেকে মাথা উঠালেন তখন দেখতে দেখতে একটি ছােট্ট খাবারের থালা সেখানে হাজির হয়ে গেল, যাতে দুইটি রুটি ও দুই গ্লাস পানি রাখা ছিল। পানাহার করে উভয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। আবার ৭ দিন। অতিবাহিত হওয়ার পর তারা অন্য কোথাও অবস্থান নিলেন। তখন ঐ পাদ্রী সিজদায় পড়ে দোয়া করল। তৎক্ষণাৎ একটি থালা আত্মপ্রকাশ করল, যাতে ৪ টি রুটি ও ৪ গ্লাস পানি ছিল! তিনি (رحمة الله) আশ্চার্য হয়ে গেলেন আর এ সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এসব থেকে কিছু তিনি খাবেন না, কারণ এ খানা একজন কাফিরের জন্য এসেছে। সে বলতে লাগল, “ইয়া সায়্যিদী! পানাহার করুন! আর দুইটি বিষয়ের সুসংবাদও শুনুন, একটি হচ্ছে আমি ইসলাম গ্রহণ করছি। এ কথা বলে সে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে নিল। অন্যটি হচ্ছে, আল্লাহর নিকট আপনার (رحمة الله) অনেক উঁচু মর্যাদা রয়েছে।” আমি সিজদায় গিয়ে এ দোয়া করেছিলাম, ইয়া আল্লাহ! প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) যদি সত্য রাসূল হয়ে থাকেন তবে আমাকে দুইটি রুটি ও দুই গ্লাস পানি দান কর আর যদি ইবরাহীম খাওয়াস (رحمة الله) তােমার ওলী হয়ে থাকেন তবে আরাে দুইটি রুটি ও দুই গ্লাস পানি দান কর।" দোয়া শেষ করে যখনই আমি মাথা উঠালাম তখন খানার এ থালা বিদ্যমান দেখতে পেলাম।" হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম খাওয়াস (رحمة الله) এ কথা শুনার পর খাবার খেলেন আর اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ ঐ নওমুসলিম বেলায়াতের উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্টিত হল। (কাশফুল মাহজুব হতে সংকলিত, ৪৩৩-৪৫ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহর ওলীগণ رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی অনেক অনেক দিন ধরে উপবাসের কষ্ট সহ্য করে থাকেন। তাঁদেরকে সাহায্য করা হয় আর তাঁদের জন্য অদৃশ্য থেকে খাবার দেয়া হয়। সায়্যিদুনা ইবরাহীম খাওয়াস (رحمة الله) এর সংস্পর্শে থেকে কাফিরও আল্লাহর দয়া লাভে সৌভাগ্যবান হলেন আর মুসলমান হয়ে বেলায়াতের মর্যাদা পেয়ে গেলেন। প্রত্যেকের উচিত, মন্দ সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা এবং নেককারদের সংস্পর্শ অবলম্বন করা।
হাদীসে পাকে রয়েছে: “উত্তম সহচর সে-ই, যাকে দেখলে তােমাদের অন্তরে আল্লাহর স্মরণ আসে আর তাঁর কথা বার্তার মাধ্যমে তােমাদের (নেক) আমল বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর আমল তােমাদেরকে আখিরাতের (কথা) স্মরণ করিয়ে দেয়।" (জামে সগীর, দ্বিতীয় অংশ, ২৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৬৩) :
ইয়াক যামানা ছুহবতে বা আউলিয়া,
বেহতর আযু ছদ সালা আত বেরিয়া।
(২২) উত্তম সংস্পর্শ উত্তম মৃত্যু
তেলকে গােলাপ ফুলের মধ্যে রেখে দিলে তখন সেটার সংস্পর্শে থেকে তেল গােলাপী রং ধারণ করে। অনুরূপভাবে তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামী'র মাদানী। পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আশিকানে রাসূলদের সংস্পর্শে থেকে পাথরও আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) এর মেহেরবাণীতে মূল্যবান হীরায় পরিণত হয়। আর খুব আলাে বিচ্ছুরণ করে মৃত্যুর সময় এমন জাঁকজমকের সাথে মৃত্যুদূতের ডাকে সাড়া দেয় যে, যারা এ অবস্থা দেখে বা শুনে তারা ঈর্ষার আগুনে জ্বলে উঠে আর জীবিত থাকার পরিবর্তে এ ধরণের মৃত্যু নসীব হওয়ার ইচ্ছা পােষণ করতে থাকে। যেমন- টানঢুল্লা ইয়ার সিন্ধু প্রদেশ এর এক লােক দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের ! প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আশিকানে রাসূলদের সংস্পর্শের বরকতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিতভাবে পড়া শুরু করল আর রমযানুল মােবারকের শেষ দশদিন দাওয়াতে ইসলামীর উদ্দ্যেগে অনুষ্ঠিত সুন্নাতে ভরা ইতিকাফে আশিকানে রাসূলদের সাথে মসজিদে বসে গেলেন। দশদিনের মধ্যে কিছু সূরা, দোয়া ও সুন্নাত মুখস্ত করে নিলেন। চেহারায় এক মুষ্ঠি দাঁড়ি ও মাথায় সবুজ ইমামার তাজ সাজানাের নিয়্যত করার সাথে সাথে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমাতে অংশগ্রহণ ও মাদানী কাফেলাতে সফর করার জন্যও নাম লিখালেন। মােট কথা তার জীবনে এক আশ্চর্য রকম মাদানী পরিবর্তন এসে গেল। আশিকানে রাসূলদের সংস্পর্শে এসে মাদানী রঙে রঙ্গিন হয়ে গেলেন। গুনাহ্ সমূহ থেকে তাওবা করে সুন্নাতে ভরা জীবন যাপন করা শুরু করে দিলেন। হঠাৎ একদিন তার কাপড়ে আগুন লেগে বেচারার শরীর মারাত্মক ভাবে ঝলসে গেল। হাসপাতালে নেয়া হল। ডাক্তাররা বললেন: তার শরীর ৮০ ভাগ জ্বলে গেছে। এমতাবস্থায়ও যারা তাকে দেখেছে তারাও অবাক হয়ে গেল, কষ্ট প্রকাশ করার পরিবর্তে তিনি যিকির ও দরূদ শরীফ পাঠে মশগুল রয়েছেন। ইতিকাফের সময় আশিকানে রাসূলদের সংস্পর্শে থেকে যেসব সূরা ও দোয়া মুখস্ত করেছিলেন তা পড়তে লাগলেন। কম-বেশী ৪৮ ঘন্টা ধরে ক্রমান্বয়ে কুরআনে পাকের সূরা ও দোয়া ইত্যাদি পড়তে থাকেন এবং সকালে ফজরের আযানের সময় উচ্চ স্বরে لااله الا الله محمد رسول الله (ﷺ) পাঠ শুরু করলেন আর এই অবস্থায় তাঁর রূহ দেহ পিঞ্জর থেকে উড়ে চলে গেল। আল্লাহু তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর 'সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(২৩) মন্দ সহচর্যে মন্দ মৃত্যু
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মৃত্যুকালীন তার অবস্থা দেখে আমাদের সু-ধারণা হয়েছে যে, মরহুম জীবন যুদ্ধে সফলকাম হয়ে গেলেন। এখন মন্দ সংস্পর্শ ও পরিবারে মন্দ পরিবেশ, যেমন টিভি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অশ্লীল ছায়াছবি, নাটক দেখা ও গান-বাজনা শুনার ঘৃন্য অভ্যাসের ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী, সতর্ককারী মৃত্যুর একটি কম্পন সৃষ্টিকারী ও উপদেশমূলক ঘটনা শুনুন। যেমন- এখন যে ঘটনা আপনারা শুনলেন তাতে ঐ মরহুমের চিকিৎসাকারী ডাক্তারদের বক্তব্য হচ্ছে, “অদ্ভুত ঘটনা এ যে- দাওয়াতে ইসলামীওয়ালা এ যুবক কুরআনে পাকের তিলাওয়াত করাবস্থায় ও কালিমায়ে তায়্যিবা পাঠরত অবস্থায় যে ওয়ার্ডে মৃত্যুবরণ করেছেন, কিছুদিন পূর্বে এক (মডার্ণ) যুবতীও একই রকম আগুনে দগ্ধ হয়ে এ ওয়ার্ডে এসেছিল। কিন্তু মৃত্যুর সময় ঐ যুবতীর মুখে এ কথাগুলাে উচ্চারিত হচ্ছিল: “গান শুনাও! গান শুনাও! নাচ দেখাও! নাচ দেখাও!” এভাবে বলতে বলতে ঐ দুর্ভাগা যুবতীর মৃত্যু হয়ে গেল।” যদি ঐ যুবতী মুসলমান হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ্ বেচারীর গুনাহ্ ক্ষমা করে দিন।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিশ্চয় একদিন না একদিন আমাদের মৃত্যুবরণ করতে হবে। হায়! এমন যদি হত জীবনের শেষ মূহুতে কালিমায়ে তায়্যিবা পড়তে পড়তে, দরূদ ও সালাম পেশ করাবস্থায় প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর দীদারের মাঝে আমাদের রূহ বের করা হত।اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামী পৃথিবীর অগণিত দেশে সুন্নাতের বাহার ছড়াচ্ছে। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিজের মধ্যে এ মন-মানসিকতা তৈরী করা যে, “আমাকে নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশােধনের চেষ্টা করতে হবে।” اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ
(২৪) ক্ষুধার্ত বাঘ
হযরত সায়্যিদুনা দাতা গঞ্জেবখশ আলী হাজবেরী (رحمة الله) বলেন: “আমি শায়খ আহমদ হাম্মাদী সাখাসী (رحمة الله) কে তাঁর তাওবার কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বলতে লাগলেন, “একবার আমি আমার উটগুলাে নিয়ে “সাখাস” হতে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে জঙ্গলে একটি ক্ষুধার্ত বাঘ আমার একটি উটকে আহত করে ফেলে দিল এবং এরপর একটি উচু টিলার উপর চড়ে গর্জন করতে লাগল। সেটার আওয়াজ শুনতেই অনেক হিংস্র জানােয়ার জড়াে হয়ে গেল। বাঘটি নিচে আসল আর ঐ আহত উটটিকে টেনে ছিড়ে ফেলল কিন্তু সেটা নিজে কিছু খেল না বরং পুনরায় টিলার উপর গিয়ে বসল। জড়াে হওয়া হিংস্র জানােয়ারগুলাে উটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল আর হুড়াহুড়ি করে খেয়ে ফিরে যেতে লাগল। অবশিষ্ট পরিত্যক্ত মাংস খাওয়ার জন্য বাঘটি নিকটে আসলে একটি লেংড়া শিয়াল দূর থেকে আসতে দেখা গেল। বাঘটি পুনরায় আপন জায়গায় ফিরে গেল। শিয়ালটি প্রয়ােজন অনুসারে খেয়ে যখন ক্ষুধা মিটিয়ে চলে গেল, তখন বাঘটি ঐ মাংস থেকে সামান্য পরিমাণ খেল। আমি দূর থেকে এসব কিছু গভীর মনােযােগ সহকারে লক্ষ্য করছিলাম। হঠাৎ বাঘটি আমার দিকে আসল আর সুস্পষ্টভাষায় মুখ দিয়ে বলল: “আহমদ! এক লােকমা দান করাতাে কুকুরের কাজ, সত্য পথের সাহসী বীরতাে নিজের জানও অন্যের জন্য কতাওবান (উৎসর্গ করে দেয়)” আমি এ অসাধারণ ঘটনায় অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে গেলাম এবং নিজের সকল গুনাহ্ থেকে তাওবা করলাম ও দুনিয়া বিমুখ হয়ে আমার আল্লাহ তাআলার প্রতি আসক্ত হয়ে গেলাম।" (কাশফুল মাহজুব, অনুদিত, ৩৮৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
মুরগীর তাওয়াক্কুল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে ক্ষুধার্ত বাঘ নিজের শিকারকৃত পশু অন্য জীব-জন্তুর জন্য দান করে নিজের ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করল। এছাড়া আল্লাহর দানকৃত ক্ষমতায় সেটা কিরূপ জবরদস্ত উপদেশ দিল যে, একটি লােকমা দান করাতে কুকুরের কাজ, বীর পুরুষের উচিত, নিজের জান কতাওবান করে দেয়া।" কিন্তু হায়! আমাদের মত এ যুগের আমলহীন মুসলমান অন্যকে এক লােকমা দান করাতাে দূরের কথা, পারলে আরও অন্যের মুখ থেকে কয়েক লােকমা ছিনিয়ে নিয়ে নিজের মুখে দেয়ার চেষ্টা করি। শুধু তাই নয়, একটু খাবারের কারণে অনেক সময় হত্যা ও লুটতরাজ করতেও দ্বিধাবােধ করি না। অধিক পরিমাণে খাবার মওজুদ থাকা সত্ত্বেও সামান্য বস্তুর জন্য এসব বিশৃংখলা সৃষ্টি করে চলি। কথিত আছে, “পৃথিবীতে শুধুমাত্র তিনটি প্রাণী এমন রয়েছে, যারা খাবার পুঞ্জিভুত করে। (১) (আমাদের ন্যায় গুনাহগার) মানুষ (২) ইদুর (৩) পিপড়া। এরা ছাড়া অন্য কোন প্রাণী অন্য সময়ের জন্য খাবার জমা করে রাখেনা। আপনারা মুরগীর তাওয়াক্কুল লক্ষ্য করেছেন হয়তাে।সেটাকে যখন পানির পেয়ালা দেয়া হয় তখন পানি পান করার পর পেয়ালার কিনারায় পা দিয়ে সেটা উল্টিয়ে দেয়। মুরগির আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ভরসা রয়েছে যে, এখন যখন পানি পান করিয়েছেন তাহলে পিপাসা লাগলে আবারও তিনি পানি পান করাবেন। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেটাকে পানি পান করানাের কাজটাও মানুষের মাধ্যমে করানাে হয়। তবে আল্লাহর নেক বান্দাদের তাওয়াক্কুল তাে এর চেয়েও অতুলনীয় হয়ে থাকে। তাওয়াক্কুলের এক সংজ্ঞা এটাও যে, “শুধুমাত্র আল্লাহর সাহায্যের উপর ভরসা করা আর যা কিছু মানুষের নিকট আছে সেগুলাে থেকে হাত গুটিয়ে নেয়া।” (রিসালাতুল কুশাইরিয়াহু, ১৬৯ পৃষ্ঠা, তাওয়াক্কুল অধ্যায়) আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসাকারীদের কি মর্যাদা হয়ে থাকে তা (দেখুন)। যেমন
(২৫) তাওয়াক্কুলকারী যুবক
হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম খাওয়াস (رحمة الله) বলেন: “শাম দেশের একজন আল্লাহ্ ওয়ালা যুবকের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি আমাকে বললেন: “আপনি (رحمة الله) কি আমার সংস্পর্শে থাকাটা পছন্দ করবেন?” আমি বললাম: “আমিতাে ক্ষুধার্থ থাকি। তিনি (رحمة الله) বললেন: আমিও উপবাস থাকব।” চারদিন এভাবে উপবাস অবস্থায় কেটে গেল। এরপর কোথা থেকে কিছু খাবার আসল। আমি তাঁকে বললাম: আসুন খেয়ে নিন। উত্তর দিলেন, আমি অঙ্গীকার করেছি কারাে মাধ্যমে কোন জিনিস গ্রহণ করব না। আমি আনন্দিত হয়ে বললাম: মারহাবা! আপনি অনেক দরকারী কথা বলেছেন। এটা শুনে তিনি বলতে লাগলেন, “হে ইব্রাহীম! আমার মিথ্যা প্রশংসা করিওনা। কারণ লালন পালনকারী পরওয়ারদিগার তােমার অবস্থা এবং তাওয়াক্কুল ভালভাবে জানেন। অতঃপর বলতে লাগলেন, “তাওয়াক্কুলের সর্বনিম্নস্তর হচ্ছে, উপবাসের উপর উপবাস থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারাে প্রতি মনােনিবেশ না করা।” (রিসালাতুল কুশাইরিয়া তাওয়াক্কুল অধ্যায়, ১৬৮ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
ছাচ হে ইনসান কো কুচ কুকে মিলা করতা হে, আপ কো কুকে তুজে পায়ে গা জাও ইয়া তেরা। (যাকে নাত)
ইয়া রব্বে মুস্তফা (ﷺ) আমাদেরকে নফস ও শয়তানের অনিষ্ট হতে রক্ষা কর এবং ক্ষুধার মত মহান নেয়ামত দান করে তােমার ধৈর্যধারণকারী ও শােকর গুজারকারী বান্দা বানাও।
ভুক কি নেয়ামত ছে তু নাওয়ায মওলা,
ছবর কি দৌলত ছে তু নাওয়ায মাওলা।
(২৬) রিযক নিজেই আহারকারীকে খুঁজ ছিল
হযরত সায়্যিদুনা আবূ ইয়াকূব আকতা বসরী (رحمة الله) বলেন: “একবার আমি মক্কা শরীফের অভ্যন্তরে ১০দিন পর্যন্ত উপবাস ছিলাম। যার কারণে আমার মাঝে দুর্বলতা এসে গেল আর আমি এ ধারণা নিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে গেলাম, সম্ভবত সেখানে কোন খাবার পেয়ে যাব, যা খেয়ে আমার দুর্বলতা দূর করব। রাস্তায় পতিত অবস্থায় একটি শালগম দৃষ্টিগােচর হলে তা তুলে নিলাম। সেটা পরিত্যক্ত হয়ে বাসী হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হল, কেউ যেন আমাকে বলছে, “তুমি দশদিন ক্ষুধার্ত থাকার পর এটাই একটি মাত্র শালগম তােমার জন্য ছিলাে! আমি সেটা পুনরায় যথাস্থানে রেখে দিলাম এবং মসজিদুল হারাম শরীফে গিয়ে হাজির হলাম। এরই মধ্যে একজন ‘আযমী' (প্রত্যেক অনারবী লােককে ‘আযমী' বলা হয়) আমার নিকট এলাে আর একটি ছােট্ট সিন্ধুক প্রদান করে বলতে লাগল, “এটা আপনার”। আমি বললাম: “আমার কিভাবে হল?” বলল: “আমরা দশদিন যাবত সমুদ্রে সফররত ছিলাম। একদিন এমন তুফান আসল যে আমাদের নৌকা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তখন আমরা সবাই একযােগে নিয়্যত করলাম, যদি আল্লাহ্ আমাদেরকে এ বিপদ থেকে মুক্তি দেন তাহলে আমরা দান-খয়রাত করবাে। আমি নিয়্যত এটাও করেছি যে, মসজিদুল হারাম শরীফে যাকে আমি সর্বপ্রথম দেখতে পাব তাকে এটা পেশ করবাে। তাই আপনিই সে প্রথম ব্যক্তি যাকে আমি এখানে পেয়েছি। আমি যখন ছােট সিন্ধুকটি খুললাম, তখন তাতে মিসরের ময়দায় প্রস্তুত কেক, খােসা ছাড়ানাে বাদাম ও কান্দ।সাফীদ (এক প্রকার মিষ্টি) এর ডালি ছিল। আমি মনে মনে নিজেকে (সম্বােধন করে) বললাম যে, “তাের রিযিকৃ দশদিন থেকে তাের দিকে আসছিল কিন্তু তুই সেটা জঙ্গলে খোঁজার জন্য বের হয়ে গিয়েছিলি!” আমি সেগুলাে থেকে অল্প অল্প নিজের জন্য রেখে বাকীগুলাে তাকে ফেরত দিয়ে বললাম “আমি গ্রহণ করেছি এখন এগুলাে আপনি নিয়ে যান এবং আমার পক্ষ থেকে আপনার বাচ্চাদের উপহার স্বরূপ দিয়ে দেবেন।" (রিসালাতুল কুশাইরিয়াহু, তাওয়াক্কুল অধ্যায়, ১৬৯-১৭০ পৃষ্ঠা) ।আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা। আল্লাহ তাআলার আওলিয়াগণের عليم الر رضون তাওয়াক্কুল কিরূপ অদ্ভুত হয়ে থাকে। দশদিনের উপবাস থাকা সত্ত্বেও যখন খাবারের বস্তু পেলেন তখনও সামান্যটুকু গ্রহণ করে বাকীগুলাে ফেরত দিয়ে দিলেন। এক ওয়াক্ত খেয়ে নেয়ার পর তাঁদের এটার পরােয়া থাকে না, পরে কি খাব! এ সকল মহান সত্ত্বাদের মন-মানসিকতা এমনভাবে তৈরী হয়ে আছে, আল্লাহ্ যতক্ষণ জীবিত রাখা পছন্দ করেন ততক্ষণের জন্য রিযিক তিনি নিজেই একত্রিত করে দেবেন। আল্লাহু তাআলা ইরশাদ করেন: ﻭَﻣَﺎ ﻣِﻦ ﺩَﺁﺑَّﺔٍ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺇِﻻَّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺭِﺯْﻗُﻬَﺎ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং ভূ পৃষ্ঠে বিচরণকারী কেউ এমন নেই, যার ও জীবিকা আল্লাহর করুনার দায়িত্বে নেই। (পারা-১২, সূরা- হুদ, আয়াত- ৬)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এখানে একটি মাদানী সুক্ষ্ম বিষয় লক্ষ্যণীয় আর তা হচ্ছে, আল্লাহ প্রত্যেকের রুজির ব্যাপার নিজের দায়িত্বে নিয়েছেন কিন্তু প্রত্যেকের ক্ষমার ব্যাপারে তিনি দায়িত্ব নেননি।তাই ঐ মুসলমান কিরূপ বােকা, যে নির্ধারিত রিযকের জন্য দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ায় কিন্তু অনির্ধারিত ক্ষমা পাওয়ার ব্যাপারে মনকে আল্লাহ্ তাআলার দিকে ঝুকায় না। দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে আশিকানে রাসূলদের প্রশিক্ষণের জন্য সফররত মাদানী কাফেলাতে আখিরাতের প্রত্যাশা ও ক্ষমা লাভ করার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা প্রদান করা হয়। যেমন
(২৭) উৎসাহী মুবাল্লিগ
আশিকানে রাসূলদের এক মাদানী কাফেলা জাহলাম পাঞ্জাব প্রদেশ এর একটি গ্রামে ১২ দিনের সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য পৌছল। যে মসজিদে অবস্থান করছিল, সেটার সামনের ঘরে থাকা এক যুবকের উপর একজন আশিকে রাসূল ইনফিরাদী কৌশিশ করতে গিয়ে মাদানী কাফেলাতে সফর করার প্রতি তাকে উৎসাহ প্রদান করলেন। তখন যুবক শুধু ২ দিন সাথে থাকার জন্য রাজী হলেন আর মাদানী কাফেলা ওয়ালাদের সাথে সুন্নাত শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষা প্রদানে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। শুধুমাত্র দুইদিন মাদানী কাফেলাতে কাটানাের বরকতে তার নিজের মধ্যে আমূল পরিবর্তন এসে গেল। এখন তিনি নিজের ঘরের লোকদের নামাযের ব্যাপারে উপদেশ দেয়া শুরু করলেন। যেহেতু তিনি ঘরের প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন, তাই اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ তার কথায় প্রায় সকলেই নামায পড়া শুরু। করে দিলেন। তিনি পার্শ্ববর্তী মামার ঘরে গিয়েও নেকীর দাওয়াত পেশ করলেন। তিনি মাদানী কাফেলা থেকে অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে ঘরের সবাইকে টিভির ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে ভালভাবে বুঝালেন। যার ফল এই হল যে, টিভিকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার মন-মানসিকতা সকলের তৈরী হয়ে গেল। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ শেষ পর্যন্ত পরস্পরের ঐক্যমতের মাধ্যমে ঘর থেকে টিভি বের করে দেয়া হল। পরের দিন اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ সকালে কাপড় ইস্ত্রি করার সময় হঠাৎ তার শরীরের সাথে বিদ্যুৎ সংযােগ হয়ে সাথে সাথে তিনি ইন্তেকাল করলেন। পরিবারের লােকদের বর্ণনা যে, আমরা পরিস্কারভাবে শুনেছি যে, ইন্তিকালের সময় তার মুখ সর্বদা কালিমায়ে তায়্যিবা لااله الا الله محمد رسول الله (ﷺ) জারী ছিল।
কোয়ী আয়া পাকে চালা গেয়া,
কোয়ী উমর ভর ভী না পা ছকা
মেরে মওলা তুজ সে গিলা নেহী,
ইয়ে তাে আপনা আপনা নসীব হে।
সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইআমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার : যিম্মাদারের নিকট জমা করানাের অভ্যাস গড়ে তুলুন।اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন মানসিকতা সৃষ্টি হবে।
(২৮) ডিম-রুটি
হযরত সায়্যিদুনা আবু তুরাব নখশবী (رحمة الله) বলেন: “সফর অবস্থায় আমার নফস শুধু একবার ডিম ও রুটি খাওয়ার আকাঙ্খা করল।আমি একটি গ্রামে গেলাম। সেখানে এক ব্যক্তি হঠাৎ করে এসে আমাকে । ঝাপটে ধরল আর চিৎকার দিয়ে বলতে লাগল, “এ ব্যক্তিও চোরদের সাথে ছিল।" মুহুর্তে সেখানে লােকের ভীড় জমে গেল, আর আমাকে চোরদের সাথী মনে করে লােকেরা সত্তরটি চাবুক মারল। এরপর তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি আমাকে চিনে বলল: ইনিতাে চোর হতে পারে না। ইনি হলেন আবু তুরাব নখশবী (رحمة الله)। তখন লােকেরা লজ্জিত হয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাইল। তাদের মধ্য থেকে একজন আমাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন আর মেহেমানদারী করাবস্থায় ঘটনাক্রমে ডিম ও রুটি খাওয়ার জন্য দিলেন। আমি নফসকে খুব করে ধিক্কার দেয়ার পর তাকে সম্বােধন করে বললাম: “সত্তরটি চাবুক খাওয়ার পর এখন তাের দাবী পূরণ হয়েছে, এখন ডিম ও রুটি খেয়ে নে।" (রিসালাতুল কুশাইরিয়াহু, ১৪৪ পৃষ্ঠা) :
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(২৯) সাদা পেয়ালা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সত্যিই আল্লাহ ওয়ালাগণের রীতি-নীতি এরকম চমৎকারই হয়ে থাকে। আল্লাহ্ পাক নিজ দয়ায় তাঁদেরকে নফসের আনুগত্য থেকে রক্ষা করে থাকেন। যার ঘটনা এখনই বর্ণনা করা হয়েছে হযরত সায়্যিদুনা আবূ তুরাব নখশবী (رحمة الله) কারামত সম্পন্ন একজন আল্লাহর ওলী ছিলেন। যেমন- একবার মদীনা শরীফে সফরের সময় এক বিজন মরু প্রান্তরে কোন একজন মুরীদ পিপাসার অভিযােগ করল, তখন তিনি (رحمة الله) যমীনে নিজ মােবারক পা দিয়ে আঘাত করলেন। সাথে সাথে মিষ্টি পানির ঝর্ণা প্রবাহিত হল। এ অবস্থা দেখে অন্য আর এক মুরীদ আরয করল: “আমিতাে পেয়ালা দিয়ে পানি পান করব।" তিনি (رحمة الله) যমীনে হাত দিয়ে আঘাত করলেন তখন একটি সাদা পেয়ালা আত্মপ্রকাশ করল। এ ঘটনা বর্ণনাকারী হযরত শায়খ আবুল আব্বাস (رحمة الله) বলেন: “ঐ সাদা পেয়ালাটি মক্কা শরীফ পর্যন্ত আমাদের সাথে ছিল।" (ভাযকিরাতুল আওলিয়া, ১ম খন্ড, ২৬৪ পৃষ্ঠা)।
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
হােগা ছায়রাব সরে কাওসার ও তাসনিম ওহী, জিস কে হাতে মে মদীনে কা পিয়ালা হােগা।
কুমন্ত্রণা
ডিম ও রুটি খাওয়াতে কোন গুনাহের কাজ নয়, তাহলে একজন ওলী আল্লাহকে তাঁর এ ইচ্ছার জন্য এমন জবরদস্ত শাস্তি কেন দেয়া হল?
কুমন্ত্রণার প্রতিকারমূলক জবাব
আল্লাহ্ ওয়ালাগণের (رحمة الله)) সাথে এরকম ঘটনা হওয়ার পিছনে কয়েকটি কারণ থাকে। যথা- প্রথমত: তাঁদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া, দ্বিতীয়ত: তাদেরকে পরীক্ষা করা, তৃতীয়ত: এরূপে তাঁদের পদ মর্যাদা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। সাধারণ মুসলমানও তাে অনেক সময় বাহ্যিকভাবে নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও বিপদ-আপদের শিকার হয় এবং রােগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে! এর রহস্যের মধ্যে এটাও রয়েছে যে, এভাবে তার গুনাহ্ ক্ষমা করা হয় এবং পদ মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। আম্বিয়া ও সাহাবায়ে কিরাম এবং শােহাদায়ে কারবালাগণের عليم الر رضون উপরওতাে এরকম অনেক পরীক্ষা এসেছে। স্বয়ং খাতেমুল মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) কেও দুষ্ট কাফিরেরা বিভিন্নভাবে অনেক কষ্ট দিয়েছে।
মর্যাদা অনুযায়ী পরীক্ষা
হযরত সায়্যিদুনা সা'দ (رضي الله عنه) বলেন যে, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর নিকট আরয করা হল: “কোন ব্যক্তি কঠিন পরীক্ষায় লিপ্ত হয়?” প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “(সর্বপ্রথম) আম্বিয়ায়ে কেরাম عَلَیۡہِ السَّلاَم অতঃপর তাঁদের পরে যাঁরা সর্ব উৎকৃষ্ট, এরপর তাঁদের পরে যাঁরা সর্ব উৎকৃষ্ট, অর্থাৎ পদমর্যাদা অনুসারে। আদম সন্তানের সাথে দ্বীনের যেরকম সম্পর্ক হয়ে থাকে, সে হিসেবে তাকে (আপদ ও) মুসীবতে লিপ্ত করে দেয়া হয়। যদি সে দ্বীনের (ব্যাপারে) শক্তিশালী হয়, তবে মুসীবতও তার উপর কঠিন হবে। আর যদি দ্বীনের (ব্যাপারে) দুর্বল হয়, তবে তার উপর মুসিবতও সহজতর করা হয়। এ ধারাবাহিকতা সর্বদা চলতে থাকবে। তাকে মুসিবতের পর মুসিবতে জড়াতে জড়াতে (তার জন্য অবস্থা এমন হয়) শেষ পর্যন্ত যমীনের উপর সে এভাবে চলে যে, তার আর কোন গুনাহই অবশিষ্ট থাকে না। (জামে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৭০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৪০৬)
যা হােক এসব কিছু আল্লাহ্ রব্বল ইয্যতের ইচ্ছায় হয়ে থাকে আর নেক্কার বান্দাগণ ধৈর্যধারণ করে সাওয়াবের ভান্ডার কুঁড়িয়ে নিজ অবস্থার কথা
এভাবে বলে:
জে সুহনা মেরে দুখ ভিচ রাজী, তে মে ছুখ নু চুল্পে পাওয়া।
অর্থাৎ- আমার প্রিয়তম যখন আমার দুঃখের উপর সন্তুষ্ট
আমি কেন আমার দুঃখের ব্যাপারে অভিযোগ করব। পেরেশানী ও রােগ-ব্যাধিতে সন্তুষ্ট থাকার ব্যাপারে প্রাসঙ্গিকভাবে একটি ঈমান তাজাকারী ঘটনা লক্ষ্য করুন।
(৩০) সর্বদা জ্বর
একদিন তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “মুসলমানের উপর যে মুসীবতই আসে, আল্লাহ্ সেটার কারণে তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন।” একথা শুনে হযরত সায়্যিদুনা উবাই ইবনে কা'ব (رضي الله عنه) দোয়া করলেন, “ইয়া আল্লাহ! আমি তােমার কাছে আমার মৃত্যু পর্যন্ত এমন জ্বর প্রত্যাশা করছি, যা আমাকে নামায, রােযা, হজ্ব ও ওমরা এবং তােমার পথে জিহাদ থেকে বিরত না রাখে।" তাঁর (رضي الله عنه) দোয়া কবুল হল। বর্ণনাকারীর বর্ণনা হচ্ছে, হযরত সায়্যিদুনা উবাই ইবনে কা'ব (رضي الله عنه) এর সর্বদা জ্বর থাকত। শেষ পর্যন্ত তাঁর (رضي الله عنه) (এ অবস্থায়) ইন্তিকাল হয়ে গেল। তিনি (رضي الله عنه) এ অবস্থায়ও মসজিদে নামায পড়ার জন্য হাজির হতেন, রােযা রাখতেন, হজ্ব ও ওমরা করতেন এবং জিহাদ করতেন।” (কানযুল উম্মাল, ৩য় খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৮৬৩৩)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
জ্বরের ফযীলত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জ্বরের ফযীলতের কথাইবা কি বলব,হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) বলেন যে, “হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর সামনে উপস্থিতিতে জ্বরের ব্যাপারে একদা আলােচনা চলছিল, তখন এক ব্যক্তি জ্বরকে মন্দ বলল।” খাতেমুল মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “জ্বরকে মন্দ বলােনা, এজন্য যে, সেটা (মুমীনকে) গুনাহ্ থেকে এভাবে পবিত্র করে দেয়, যেভাবে আগুন লােহার মরিচাকে পরিস্কার করে দেয়।" (সুনানে ইবনে মাজাহু, ৪র্থ খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৪৬৯)
ফুক দে জু মেরী খুশিয়াে কে চমন কো আক্বা,
চাক দিল চাক জিগর হৌজিশে সিনা দেলো।
(৩১) মসুরের ডালের চরম ফিস
হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম বিন শায়বান (رحمة الله) বলেন: “আমি চল্লিশ বৎসর যাবত ছাদের নীচে কোন রাত কাটাইনি। আমার সর্বদা পেট ভরে মসুরের ডাল খাওয়ার খুব ইচ্ছা হতাে। একবার শাম দেশে রান্নাকৃত মসুরের ডালের পেয়ালা কেউ আমাকে দিল। আমি তা থেকে খেলাম। যখন বাইরে আসলাম তখন এক দোকানে দেখলাম অনেক বােতল লটকানাে আছে। আমি মনে করি এগুলাে সিরকা (আখ বা আঙ্গুরের টক শরবত) হয়ত। তাই ভালভাবে দেখছিলাম। কেউ বলে উঠল, “আপনি কী দেখছেন, এগুলাে হচ্ছে মদ।” আর মটকার দিকে ইশারা করে বলল: “এগুলােতেও মদ রয়েছে।” আমি শরীয়াত বিরােধী কাজ দেখে রাগের বশবর্তী হয়ে পড়লাম আর এ কারণে আমার মধ্যে উত্তেজনা চলে আসল, আর আমি দোকান থেকে মদের মটকা বাইরে এনে মাটির উপর ফেলতে শুরু করলাম। আমার সাহসের কারণে দোকানদারের মধ্যে আমার প্রতি ভীতির সঞ্চার হল কারণ সে আমাকে সরকারী লোক মনে করে নিয়েছিল। তাই নিচুপ হয়ে আমার কান্ড দেখতে থাকল। যখন আসল ব্যাপার প্রকাশ পেয়ে গেল তখন দোকানদার আমাকে ধরে মিসর ও শামের শাসক ইবনে তুলুনের নিকট সােপর্দ করল। মদের মটকা ভাঙ্গার দায়ে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হল। তাই আমাকে দু'শত বেত্রাঘাত করা হল এবং দীর্ঘ দিনের জন্য জেলখানায় বন্দি করা হল। ছাড়া পাওয়ার উপায় এভাবে হল যে, একবার আমার সম্মানিত ওস্তাদ হযরত সায়্যিদুনা আবু আবদুল্লাহ্ মাগরিবী (رحمة الله) ঐ শহরে আগমন করলেন। তিনি আমার খবর শুনে আমার সাথে সাক্ষাত করার জন্য জেলাখানায় গেলেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: “তুমি কি অপরাধ করেছ?” বললাম: “পেট ভরে মসুরের ডাল খেয়েছি আর এটার ফিস স্বরূপ বন্দি জীবন লাভ করা ছাড়াও দু'শত বেত্রাঘাত খেয়েছি। তিনি বললেন: “অপরাধের তুলনায় শাস্তি খুবই সস্তা ও সামান্য (হয়েছে)। এরপর তাঁকে মটকার কাহিনীও বললাম।" তিনি সুপারিশ করে আমাকে মুক্ত করলেন।"
(রিসালাতুল কুশাইরিয়্যাহ, ১৫৩ পৃষ্ঠা, নফসের বিরােধীতা অধ্যায়) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ ওয়ালাগণ নফসের আনুগত্য থেকে সর্বদা বেঁচে থাকার চেষ্টা করতেন। যদি কখনাে নফসের দাবী পূরণ করে বসতেন তখন অনেক সময় কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে যেতেন। এবং এর মাধ্যমে তাঁদের পদমর্যাদা আরাে বৃদ্ধি পেয়ে যেত। এসব কিছু আশিক- মাশুকের গােপন ব্যাপার।
মকতবে ইশক কা দসতুর নিরালা দেখা,
উছ কো ছুটি না মিলী জিছ কো ছবক ইয়াদ রাহা।
(৩২) মাছের কাঁটা
হযরত সায়্যিদুনা আবুল খায়র আসকালানী (رحمة الله) কয়েক বৎসর যাবত মাছ খাওয়ার ইচ্ছা পােষণ করছিলেন। অবশেষে হালাল পন্থায় এটার সুযােগ এসে গেল। কিন্তু যেমাত্র খাওয়ার জন্য হাত বাড়ালেন তখন মাছের কাঁটা তাঁর আঙ্গুলে ঢুকে গেল। আঘাতপ্রাপ্ত স্থান এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হল যে, অবশেষে তাঁর (رحمة الله) হাতই নষ্ট হয়ে গেল। এতে তিনি আল্লাহ্ তাআলার দরবারে আরয করলেন: “ইয়া আল্লাহ! এটাতাে ঐ ব্যক্তির অবস্থা, যে একটি হালাল বস্তু খাওয়ার ইচ্ছা। পােষণ করেছে এবং সেটার দিকে হাত বাড়িয়েছে। এখন ঐ ব্যক্তির কী অবস্থা হবে, যে হারাম বস্তু খাওয়ার ইচ্ছায় সেটার দিকে হাত বাড়াবে।"
(রিসালাতুল কুশাইরিয়াহু, ১৪২ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ওয়ালাগণের অবস্থা সাধারণের চেয়ে অন্য রকম হয়ে থাকে। তাঁরা কষ্ট পাওয়ার পর সেটার ভিত্তি কিসের উপর প্রতিষ্ঠিত তা বের করে ফেলেন এবং খুবই বিনয় প্রকাশ করে তা থেকে তাওবা করে থাকেন। আমাদের সু-ধারণা হচ্ছে, হযরত সায়্যিদুনা আবুল খায়র আসকালানী (رحمة الله) এর হাতে মাছের কাঁটা পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বিদ্ধ হয়েছে। সাধারণ মানুষেরও মাঝে মাঝে মাছ খাওয়ার সময় গলায় কাঁটা আটকে যায়। যদি কখনাে এরূপ হয় তবে ধৈর্য সহকারে সহ্য করা উচিত। কারণ মুসলমানের উপর যে কোন মুসীবতই চলে আসুক না কেন তাতে হয়তাে তার গুনাহ্ মাফ করা হয় কিংবা তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি করা। হয়। যেমন কাঁটা বিদ্ধ হওয়ার ফযীলত হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) ও সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রয়েছে, খাতেমুল মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “কোন দুঃখ, কোন ব্যথা, কোন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, কোন কষ্ট, কোন দুর্ভোগ ও কোন পেরেশানী মুসলমান পায়না, এমনকি কাঁটাও যা বিদ্ধ হয়, বরং আল্লাহ্ তাআলা এগুলাের কারণে তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী শরীফ, ৭ম খন্ড, ৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৬৪১-৫৬৪২)
বিপদের রহস্য
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: যখন বান্দার জন্য আল্লাহর জ্ঞানে কোন পুর্ণাঙ্গ মর্যাদা নির্ধারণ করা হয়, আর সে নিজের আমল দ্বারা ঐ মর্যাদা পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনা, তখন আল্লাহ্ তাআলা তার শরীর কিংবা সম্পদ অথবা আওলাদের উপর মুসীবত আরােপ করেন, । অতঃপর তাকে ধৈর্যশক্তি দান করেন। অবশেষে তাকে ঐ মর্যাদা পর্যন্ত পৌছিয়ে দেন, যা তার জন্য আল্লাহর জ্ঞানে নির্ধারিত হয়ে গেছে। (সুনানে আবু দাউদ, ১২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩০৯০)
উও ইশকে হাকীকী কী লজ্জাত নেহী পা ছেকতা,
জু রজো মুসীবত ছে দোছার নেহী হােতা।
(৩৩) গাজর আর মধু
বুযুর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی নফসের খুবই বিরােধীতা করতেন। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা শায়খ সিররী সাকতী (رحمة الله) বলেন: আমার নফস ৩০ কিংবা ৪০ বৎসর যাবৎ তাগিদ করছিল, শুধু একটি গাজর মধুতে ভিজিয়ে যেন খাই। কিন্তু اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি নফসের কথা রাখিনি।" (রিসালাতুল কুশাইরিয়াহু, ১৫৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৩৪) আঞ্জির ফল বের করে ফেললেন
হযরত সায়্যিদুনা জাফর বিন নাসীর (رحمة الله) বলেন: হযরত সায়্যিদুনা শায়খ জুনাইদ (رحمة الله) আমাকে একটি দিরহাম দিয়ে ওয়াযীরী আঞ্জির ফল নিয়ে আসার জন্য বললেন। আমি এনে দিলাম। তিনি (رحمة الله) ইফতারের সময় যখন আঞ্জির ফল মুখে দিলেন তখন তৎক্ষণাৎ তা মুখ থেকে বের করে ফেললেন আর কেঁদে দিলেন এবং বললেন: “এখান থেকে আঞ্জির ফল সরিয়ে নাও।" আমি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন: “আমার অন্তর থেকে আওয়াজ এল, “তােমার লজ্জা করেনা, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটি ইচ্ছা ত্যাগ করার পর পুনরায় তা পূর্ণ করতে যাচ্ছ।" (রিসালাতুল কুশাইরিয়াহু, ১৫৪ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক। কেউ একেবারে সত্যি বলেছেন, “নিজের লাগাম” “খায়েশের" হাতে ন্যস্ত করনা, এটা তােমাকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে।” (রিসালাতুল কুশাইরিয়াহু, ১৫৪ পৃষ্ঠা)
(৩৫) হালুয়া বিক্রেতা লােকমা খাওয়ালেন।
শায়খুল মুহাকিকীন, খাতেমুল মুহাদ্দিসীন, হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (رحمة الله) বলেন: “আমার পীর-মুর্শিদ সায়্যিদী শায়খ আবদুল ওয়াহ্হাব মুত্তাকী (رحمة الله) ও তাঁর একবন্ধু একবার দুর্ভিক্ষের সময় মসজিদের কোনায় আলাদাভাবে ইবাদতরত ছিলেন। উভয়ে আগে থেকে পরস্পর এটা নির্ধারণ করেছিলেন যে, আমরা পরস্পর কথা-বার্তা বলব না, কারাে কাছ থেকে খাবার চাইব না আর নিজের হাতে কোন কিছু খাব না। অনবরত বিশ দিন এভাবে কেটে গেল। একুশতম দিনে একজন হালুয়া বিক্রেতা মসজিদে এসে উভয়ের মাঝখানে খাবার রেখে চলে গেল।
(যেহেতু এটা নির্ধারণ হয়েছিল, নিজের হাতে কিছু খাবে না সুতরাং) তাঁরা উভয়ে এ থেকে কিছু খেলেন না। বাইশতম দিনে সে আবার আসল আর খাবার রেখে চলে গেল। এবারও উভয়ে খাবারে হাত দিলেন না। তেইশতম দিনে ঐ হালুয়া বিক্রেতা এসে স্বয়ং নিজের হাতে লােকমা তৈরী করে তাঁদের উভয়কে খাবার খাওয়ালেন।
(আখবারুল আখইয়ার, ২৭৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবায়ে নূরিয়্যাহ রাবিয়্যাহ সকর হতে মুদ্রিত)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(36) মাংসের অকেজো হাঁড়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হযরত সায়্যিদুনা শায়ূখ আবদুল ওয়াহহাব মুত্তাকী কাদিরী, শাযলী (رحمة الله) অনেক বড় উপবাসী আল্লাহ্ তাআলার অলি ছিলেন। কোন একবার সাধনা, কারাে নিকট কিছু না চাওয়া ও ক্ষুধার ব্যাপারে আলােচনা শুরু হলে তিনি বললেন: “একটি সময় এমনও ছিল, আমি কসাইয়ের ফেলে দেয়া অকেজো হাঁড় ও গমের ক্ষুদ্রাংশ যা ক্ষেতের মধ্যে ফেলে দেয়া হয় তা তুলে নিতাম আর সেগুলাে ধুয়ে হাঁড় সাথে সিদ্ধ করে সেটার এক পেয়ালা ঝােল পান করে কাটাতাম। লােকেরা যখন এটা জানতে পারল, তখন তারা নানা ধরনের খাবার দিতে শুরু করল। এ অবস্থা দেখে আমি সেখান থেকে চলে গেলাম। এরপর থেকে কোন জায়গায় ৩ দিনের বেশি অবস্থান না করার নিয়ম করে নিলাম।" (প্রাগুক্ত, ২৭৭ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
ভুক কি আদত বনে আওর ইন্তিকামাত ভি মিলে
খাতিমা বিল খাইর হে আল্লাহ! জান্নাত ভি মিলে।
সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইআমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানাের অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন মানসিকতা সৃষ্টি হবে।
(৩৭) খাবার খাওয়ার পূর্বে ভয় ।
হযরত সায়্যিদুনা ওয়াহাব বিন ওয়ারুদ (رحمة الله) একদিন : কিংবা দুই দিন অথবা তিনদিন ক্ষুধার্ত থাকার পর একটি রুটি নিতেন আর এভাবে দোয়া করতেন, “ইয়া আল্লাহ্! তুমি জান যে, আমি এটা খাওয়া ছাড়া তােমার ইবাদত করার শক্তি পাব না আর আমার দুর্বল ও পেরেশানস্থ হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। ইয়া আল্লাহ্! যদি এ রুটিতে কোন ক্ষতি ও হারাম মিশ্রিত থাকে, তাহলে অজ্ঞাতবস্থায় আমার পেটে প্রবেশ করাতে আমাকে এ খাবারের জন্য পাঁকড়াও কর না।" এ দোয়া করার পর তিনি (رحمة الله) রুটিটি পানিতে ভিজিয়ে আহার করতেন।
(মিনহাজুল আবেদীন, ৯৮ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
খাবার খেয়ে কান্না করা উচিত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চিন্তা-ভাবনা ছাড়া প্রতিটি বস্তু খেতে থাকলে তা দুশ্চিন্তার কারণ হবে। আখিরাতের হিসাবের ব্যাপারে আমাদের ভয় করা উচিত। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) ইহইয়াউল উলুম এ লিখেছেন, “খাবার খেয়ে ক্রন্দনকারী ও খাবার খেয়ে খেলা-ধূলা, হাসি-তামাশায় লিপ্ত ব্যক্তি উভয়ে এক সমান হতে পারে না।" (ইহইয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ৮ পৃষ্ঠা)
তিনি (رحمة الله) আরাে বলেন: “মানুষ সন্দেহযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে যেন ইসতিগফার ও আফসােস করে। যাতে তার অশ্রু ও আফসােসের কারণে তার জন্য প্রজ্জলিত জাহান্নামের আগুন নিভে যায়। এরূপ খাবার খাওয়ার কারণে যদি (কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলার সামনে) পেশ হওয়া লাগে। কেননা, তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্দুল ইযত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে মাংস হারামের মাধ্যমে পূর্ণ হয়, সেটার জন্য অধিক উপযুক্ত হচ্ছে আগুন। (শুয়ুবুল ঈমান, ৫ম খন্ড, ৫৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৭৬১)
(৩৮) শুকনাে রুটির টুকরা
হযরত সায়্যিদুনা জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) বলেন: একদিন হযরত সায়্যিদুনা হারিস বিন আসাদ মুহাসিবী (رحمة الله) আমার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁর মধ্যে ক্ষুধার চিহ্ন উপলব্দি করে আর করলাম: “চাচাজান! আসুন কিছু খেয়ে নিন।” তিনি (رحمة الله) আসলেন, ঘরে অন্য কিছু ছিলনা, শুধু প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে বিয়ের খাবার এসেছিল, তাই দিলাম। তিনি এক গ্লাস নিলেন আর কয়েক বার মুখের মধ্যে ঘুরালেন অতঃপর দরজায় গিয়ে (মুখ থেকে বের করে ফেললেন এবং চলে গেলেন। এর কিছুদিন পর যখন তাঁকে পুনরায় দেখলাম, তখন আমি ঐদিন খাবার না খাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন: “আমার ক্ষুধা পেয়েছিল তাই আমি ইচ্ছা করলাম, তােমার দেয়া খাবার খেয়ে নেব আর তােমাকে খুশী করব। কিন্তু আল্লাহ্ ও আমার সাথে এ প্রতিজ্ঞা রয়েছে, যে খাবারে “সন্দেহ" থাকবে তা আমার কণ্ঠনালীর নীচে যাবে না। একারণে আমি তা গিলতে পারিনি। আমি বললাম: ঐ খাবার আমার প্রতিবেশীর কাছ থেকে বিয়ে উপলক্ষ্যে এসেছিল। আজকে আমার ঘরে তাশরীফ আনুন। তিনি (رحمة الله) তাশরীফ আনলেন। আমি শুকনাে রুটির টুকরা পেশ করলাম। তিনি (رحمة الله) তা খেয়ে নিলেন আর বললেন: “দরবেশগণকে এ ধরনের খাবারই পেশ করবে।” (রিসালাতুল কুশাইরিয়াহু ৪২৯-৪৩০ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৩৯) আঙ্গুলের রগ অস্থির হয়ে উঠত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! লক্ষ ক্ষুধা লাগুক না কেন তবুও আল্লাহর ওলীরা رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی সন্দেহযুক্ত খাবার খেতেন না। হযরত সায়্যিদুনা হারিস মুহাসিবী (رحمة الله) এর উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছিল। হযরত সায়্যিদুনা আবূ আলী দাক্বাক্ব (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, “যখনই হযরত সায়্যিদুনা হারিস মুহাসিবী (رحمة الله) কোন সন্দেহযুক্ত খাবারের দিকে হাত বাড়াতেন, তখন তাঁর (رحمة الله) একটি আঙ্গুলের রগ অস্থির হয়ে উঠত। তিনি (رحمة الله) তখন ঐ খাবার আহার করতেন না।" (প্রাগুক্ত, ৪২৯ পৃষ্ঠা)
অনেক আওলিয়ায়ে কিরামগণের رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی এ ধরনের স্পষ্ট কারামত ছিল, তাঁদের হারাম ও সন্দেহপূর্ণ খাবারের ব্যাপারে জানা হয়ে যেত।আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৪০) আবিদ ও আনার গাছ
কথিত আছে, একজন আবিদ কোন এক পাহাড়ে বাস করতেন। সেখানে একটি আনার গাছ ছিল। প্রতিদিন তিনটি আনার তাতে ধরত। তিনি তা খেতেন আর ইবাদত করতেন। আল্লাহ একদিন তার কাছ থেকে পরীক্ষা নিতে চাইলেন। পরীক্ষা শুরু হল। একদিন আনার ধরলনা। তিনি ধৈর্য ধরলেন। দ্বিতীয় দিনও এ ঘটনা ঘটল। তৃতীয় দিন (ক্ষুধায়) অস্থির হয়ে পাহাড় থেকে নীচে নেমে গেলেন। সেটার নীচে একজন খ্রীষ্টান বাস করত। তিনি তার কাছে গিয়ে কিছু খাবার চাইলেন।সে তাঁকে চারটি রুটি দিল। রুটি দেখে তার কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। আবিদ কুকুরটিকে একটি রুটি দিয়ে দিলেন। কুকুর সেটা খেয়ে পুনরায় তার পিছু নিল। তখন তিনি আর একটি রুটি দিয়ে দিলেন, কুকুর সেটাও খেয়ে ফেলল কিন্তু পিছু ছাড়ল না। এভাবে কুকুরটি যখন চারটি রুটিই খেয়ে নিল এবং তারপরও ঘেউ ঘেউ করা থেকে বিরত রইল না, তখন আবিদ বললেন: “ওহে, মিথ্যা চেষ্টাকারী লােভী! তাের লজ্জা করে না,আমি তাের মালিকের ঘর থেকে ভিক্ষা করে চারটি রুটি নিয়েছি আর! তুই আমার কাছ থেকে সবগুলাে ছিনিয়ে নিয়েছিস, তারপরও পিছু ছাড়ছিসনা।" (আল্লাহু তাআলার হুকুমে কুকুরের জবান খুলে গেল) কুকুর বলে উঠল, “আমিতাে তাের থেকে বেশি নির্লজ্জ নই যে মালিক বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম ও কষ্ট ছাড়া এমন পবিত্র রিযিক তােকে খাইয়েছে, (সামান্য পরীক্ষায় ফেলে) তিন দিন না দেয়াতে (ক্ষুধায়) এরূপ ভয় পেয়ে গেলি যে, তাঁর শত্রু (খ্রষ্টান) এর ঘরে ভিক্ষা চাইতে এসেছিস!” (আহসানুল বিআ, ১৪৪ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা থেকে এ শিক্ষা লাভ হল যে, যে আল্লাহ আমাদেরকে এতসব নেয়ামত দান করেন, যদি কখনাে তাঁর পক্ষ থেকে কোন পরীক্ষা এসে যায় তখন অধৈর্য প্রদর্শন ও অভিযােগ করার পরিবর্তে ধৈর্য ও সহ্য করা উচিত। এ কথাটা এ ঘটনা থেকে বুঝে নিন।
(৪১) সুলতান মাহমুদ ও আয়ায আর তিক্ত শশার টুকরী
বর্ণিত, প্রসিদ্ধ আশিকে রাসূল বাদশাহ্ সুলতান মাহমূদ গযনবী (رحمة الله) এর নিকট কেউ একদা কিছু শশা (কাকড়ি) নিয়ে হাজির হল। সুলতান শশাগুলাে (কাকড়িগুলাে) গ্রহণ করলেন আর দাতাকে পুরস্কৃত করলেন। অতঃপর নিজের হাতে শশার (কাকড়ির) একটি টুকরা কেটে নিজের অতি প্রিয়ভাজন গােলাম আয়াযকে প্রদান করলেন, আয়ায মজা করে খেতে লাগল। এরপর সুলতান আর একটি ছিলকা কাটলেন আর নিজে খাওয়া শুরু করলেন। তখন দেখা গেল, তা এরূপ তিতা ছিল, মুখে রাখা কঠিন। সুলতান অবাক দৃষ্টিতে আয়াযের দিকে দেখলেন আর বললেন: “আয়ায! এরূপ তিতা শশা (কাকড়ি) তুমি কিভাবে খেয়েছ? বাহ্! তােমার চেহারায়তাে বিন্দুমাত্র বিরক্তির চিহ্নও প্রকাশ পেলনা?” আয়ায বলল: “আলীজা! শশা (কাকড়ি) সত্যিই খুবই তিতা ছিল। যখন মুখে দিলাম তখন আমার জ্ঞান বলে উঠল ফেলে দে, কিন্তু ইশক বলে উঠল, “আয়ায খবরদার! এটা ঐ হাত প্রদত্ত শশা, যে হাত দ্বারা প্রতিদিন মিষ্টি বস্তু সমূহ খেয়েছিস। যদিওবা একদিন তিক্ত বস্তু দিয়েছে তাতে কি হয়েছে! এটা ফেলে দেয়া ভালবাসার বহির্ভুত কাজ হবে। তাই ইশকের পথ-নির্দেশনা অনুযায়ী আমি শশার তিতা টুকরাগুলি হাসিমুখে খেয়ে নিলাম।” (রাহবারে যিন্দেগী, ১৬৭ পৃষ্ঠা) আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ রকম মর্যাদাবান মুসলমানদের মত আমাদেরও স্বভাব হওয়া উচিত। যে আল্লাহ আমাদের উপর অগণিত দয়া করেছেন, যদি কখনাে তাঁর পক্ষ থেকে কোন মুসীবত ও হঠাৎ দুর্ঘটনাও এসে পড়ে, তবে সেটাকে হাসি মুখে গ্রহণ করে নেয়া উচিত। খাঁটি প্রেমিক সে নয়, যে প্রিয়তমের পক্ষ থেকে ভালবাসা ও প্রেম পাওয়ার কারণে কৃতজ্ঞ থাকে। খাঁটি প্রেমিক সেই, যে প্রিয়তমের পক্ষ থেকে ধিক্কার পাওয়ার পরও তার প্রতি কৃতজ্ঞ ও জান উৎসর্গকারী হয়ে থাকে।
উও ইশকে হাকীকী লজ্জাত নেহী পা ছকতা,
জু রজো মুসীবত ছে দো-ছার নেহী হােতা।
(৪২) খ্রীষ্টান পীর ইসলাম গ্রহণ
এক বুযুর্গ (رحمة الله) একজন খ্রীষ্টান পাদ্রীকে ‘ইনফিরাদী কৌশিশ' করে তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর সে বলল: “হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহল্লাহ্ (عليه السلام) এর মু'জিযা ছিল, ৪০ দিন পর্যন্ত তিনি কিছু খেতেন না আর এ চরম উৎকর্ষতা শুধুমাত্র নবী عَلَیۡہِ السَّلاَم কিংবা সিদ্দীকেরই থাকতে পারে।” ঐ বুযুর্গ (رحمة الله) বললেন: “যদি আমি ৫০ দিন পর্যন্ত উপবাস থাকতে পারি তবে তুমি কুফর ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে যাবে?” এবং একথা মেনে নেবে যে, ইসলামই সত্য আর তুমি মিথ্যার পক্ষালম্বনকারী?" সে। জবাব দিল, “হ্যাঁ”। সুতরাং ঐ বুযুর্গ (رحمة الله) তখন থেকে তার কাছেই রয়ে গেলেন আর ৫০ দিন পর্যন্ত কিছু খেলেন না। এরপর আরাে ১০ দিন বাড়িয়ে মােট ৬০ দিন পর্যন্ত উপবাস রইলেন। ঐ পাদ্রী এ কারামত দেখে মুসলমান হয়ে গেল। (ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা থেকে কেউ এটা ভাববেন না, ঐ বুযুর্গ (رحمة الله) আল্লাহর পানাহ! হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ (عليه السلام) হতে মর্যাদায় এগিয়ে গেছেন। ইসলাম স্বীকৃত আকীদা (বিশ্বাস) এটা হচ্ছে, কোন নবী عَلَیۡہِ السَّلاَم হতে অন্য কেউ উত্তম হতে পারেনা। আর যে নবী নয় এমন ব্যক্তিকে নবী عَلَیۡہِ السَّلاَم হতে যে উত্তম মনে করে, সে কাফির। আসলে কথা হচ্ছে, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ঐ পাদ্রী এ রকম মনে করত যে, হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ এর পর বর্তমানে আল্লাহর প্রিয় হাবীব (ﷺ) এর কোন গােলাম ৪০ দিন উপবাস থাকতে পারবেনা।
এজন্য ঐ বুযুর্গ (رحمة الله)কারামত দেখিয়ে তার ভুল ধারণা দূর করলেন যে, ৪০ দিন উপবাস থাকা হযরত সায়্যিদুনা ঈসা (عليه السلام) এর বিশেষত্ব নয়, বরং তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নব্যুয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইযযত (ﷺ) এর গােলামগণ ৪০ দিন নয় মাত্র ৬০ দিন উপবাস থাকার পরও বেঁচে থাকতে সক্ষম।
চাহে তাে ইশাররা ছে আপনে কায়াহী পলট দে দুনিয়া কি, ইয়ে শান হে খিদমত গারাে কি ছরকার কা আলম কিয়া হােগা।
(৪৩) মাছ-ভাত
বসরার এক বুযুর্গ (رحمة الله) এর ব্যাপারে কথিত আছে, ২০ বৎসর যাবত তাঁর নফস মাছ-ভাত ও রুটি খাওয়ার ইচ্ছা করছিল কিন্তু তিনি নিজের নফসকে এমনভাবে দমন করতে থাকেন যে, এগুলাে ইহজীবনে আর খেলেনই না। তাঁর ইন্তিকালের পর কেউ তাঁকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করল, আল্লাহ্ আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন?" তিনি বললেন: “আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে আমাকে যেসব নেয়ামত দান করা হয়েছে তা বলার বাইরে। সর্বপ্রথম আমাকে মাছ-ভাত ও রুটি দিয়ে বলা হয়েছে, আজকে যত মন চায় খাও। (ইইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা)।
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক আর তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! নফসের আনুগত্য যারা করেন না আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁদের কিরূপ উচ্চ মর্যাদা লাভ হয়ে থাকে। যে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নফসকেদমন করে দুনিয়ার নেয়ামতসমূহ উপভােগ করা থেকে বেঁচে থেকে ক্ষুধা সহ্য করার ক্ষেত্রে কৃতকার্য হয়ে যান তাঁদেরকে মােবারকবাদ। যেহেতু মৃত্যুর পর তাঁদেরকে জান্নাতের মহান নেয়ামত সমূহ প্রদান করা হবে।
যেমন- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
ﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑُﻮﺍ ﻫَﻨِﻴﺌًﺎ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﺳْﻠَﻔْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﻳَّﺎﻡِ ﺍﻟْﺨَﺎﻟِﻴَﺔِ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আহার কর, পান কর তৃপ্তি সহকারে পুরস্কার সেটারই, যা তােমরা বিগত দিন গুলােতে আগে প্রেরণ করেছে।(পারা- ২৯, সূরা- হাক্কাহ, আয়াত- ২৪)
(৪৪) অন্তরের জন্য লাভজনক
হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবূ সুলাইমান দারানী (رحمة الله) বলেন: “নফসের কোন ইচ্ছা বর্জন করা, অন্তরের জন্য এক বৎসরের রােযা ও রাত্রি জাগরণ থেকেও অধিক লাভজনক। (প্রাগুক্ত, ৩য় খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক আর তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৪৫) জান্নাতের ওলীমা
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) বলেন: “আখিরাতের পথের যাত্রী বুযুর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی নফসের ইচ্ছা সমূহ পূর্ণ করা থেকে বেঁচে থাকতেন। কেননা মানুষ যদি ইচ্ছা অনুযায়ী মজাদার বস্তু খেতে থাকে তখন এতে তার নফসের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি হয় আর তার হৃদয় কঠোর হয়ে যায়। এছাড়া সে দুনিয়ার মজাদার বস্তুগুলাের প্রতি এমনভাবে মিশে যায়, দুনিয়ার স্বাদের বস্তুগুলাের আকর্ষণ তার অন্তরে বাসা বাঁধে আর সে আল্লাহর সাক্ষাৎ ও তাঁর মহান দরবারে হাজির হওয়ার কথা ভুলে বসে। তার জন্য দুনিয়া “জান্নাত” ও মৃত্যু জেলখানা হয়ে যায়। যে নিজের নফসের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করে আর সেটাকে স্বাদের বিষয়গুলাে থেকে বঞ্চিত রাখে, তবে দুনিয়া তার জন্য জেলখানা হয়ে যায় আর সে তাতে এমন অনুভব করে যেন তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
এখন তার নফস দুনিয়া থেকে স্থানান্তরিত হতে ও মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের বন্দীত্ব থেকে মুক্ত হওয়াকে ভালবাসে। এ কথার দিকে ইশারা করে হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহইয়া মুআয রাযী (رحمة الله) বলেন: “ওহে সিদ্দীকগণের দল! জান্নাতের ওলীমা খাওয়ার জন্য নিজেকে ক্ষুধার্ত রাখাে। কেননা নফসকে যতটুকু ক্ষুধার্ত রাখা যায়, ততটুকু খাবারের ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।" (অর্থাৎ যখন প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে তখন খাবার খাওয়াতে বেশি স্বাদ অনুভব হয়। এটার অভিজ্ঞতা প্রায় রােযাদারদের হয়ে থাকে। সুতরাং দুনিয়াতে বেশি ক্ষুধার্ত থাকো, যাতে জান্নাতের মহান নেয়ামত সমূহের ভালভাবে স্বাদ গ্রহণ করতে পার)। (প্রাগুক্ত, ৯৯ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর 'সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৪৬) রৌদ্রে শুকানাে আটা
হযরত সায়্যিদুনা উতবাতুল গােলাম (رحمة الله) আটা খামির করে রােদ্রে শুকিয়ে আহার করতেন আর বলতেন “একটি রুটির টুকরা ও লবণ খেয়ে দিন কাটানাে উচিত। যাতে কিয়ামতের দিন ভুনা মাংস ও ভাল ভাল খাবার পাওয়া যায়।" (ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ১০০ পৃষ্ঠা) । আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৪৭) ৪০ বছর যাবত দুধ পান করেননি
হযরত সায়্যিদুনা মালিক বিন দীনার (رحمة الله) সম্পর্কে বর্ণিত; তাঁর নফস ৪০ বছর যাবত দুধ পান করার ইচ্ছাপােষণ করছিল। কিন্তু তিনি (رحمة الله) তা পান করেননি।
একদিন উপহারস্বরূপ কেউ কিছু খেজুর দিলেন, তখন তিনি (رحمة الله) শিষ্যদের তা প্রদান করে বললেন: আপনারা খেয়ে নিন, আমি ৪০ বছর যাবত খেজুর (খাওয়াতাে দূরের কথা) স্বাদও গ্রহণ করিনি।” (প্রাগুক্ত, ১০৯ পৃষ্ঠা) আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৪৮) মাংস-রুটি
হযরত সায়্যিদুনা উতবাতুল গােলাম (رحمة الله) সাত বৎসর যাবত মাংস খাওয়ার ইচ্ছাকে এড়িয়ে যান। অতঃপর একদিন রুটি ও মাংসের একটি টুকরা ক্রয় করলেন। মাংসের টুকরা ভুনে রুটির উপর রাখলেন। এরই মধ্যে এক ইয়াতীম ছেলে সেখানে উপস্থিত হল। তিনি (رحمة الله) তাকে রুটি ও মাংসের টুকরা দিয়ে দিলেন। অতঃপর কাঁদতে লাগলেন আর ২৯ পারার সুরাতুদ দাহর এর ৮নং আয়াতে কারীমা তিলাওয়াত করতে লাগলেন -
ﻭَﻳُﻄْﻌِﻤُﻮﻥَ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺣُﺒِّﻪِ ﻣِﺴْﻜِﻴﻨًﺎ ﻭَﻳَﺘِﻴﻤًﺎ ﻭَﺃَﺳِﻴﺮًﺍ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:এবং আহার করায় তাঁর ভালবাসার উপর মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে।
(পারা- ২৯, সূরা দাহর, আয়াত ৮)
হযরত সায়্যিদুনা উতবাতুল গােলাম (رحمة الله) এরপর কখনাে রুটি ও ভুনা মাংসের স্বাদ গ্রহণ করেননি। (প্রাগুক্ত, ২১১ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৪৯) ভয়াবহ ধূলাঝড়
হযরত সায়্যিদুনা উতবাতুল গােলাম বলেন: অনেক বৎসর ধরে আমার নফস খেজুর খাওয়ার ইচ্ছা করছিল। আমি একদিন কিছু খেজুর কিনে ইফতার করার জন্য রাখলাম। এরই মধ্যে এমন ভয়াবহ ধূলাঝড় শুরু হল যে, চর্তুদিক অন্ধকারে ছেয়ে গেল। যার ফলে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতির সঞ্চার হল। এ অবস্থা দেখে আমি নিজেকে সম্বােধন করে বললাম: “এটা তাের সাহস ও (নফসের আনুগত্য করে) খেজুর কেনার কারণে হয়েছে, আর তাের গুনাহের কারণে লােকেরা ধূলাঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। অতঃপর প্রতিজ্ঞা করলাম, এখন আর এগুলাের স্বাদ গ্রহণ করবনা।" (প্রাগুক্ত, ২১০ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হযরত সায়্যিদুনা উতবাতুল গােলাম (رحمة الله) এর এটা বিনয় ছিল, ধূলাঝড় যখন আসল তখন এর জন্য নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করলেন। বুযুর্গগণের বরকতে বিপদ-আপদ আসেনা, দূর হয়। এটা অসম্ভব নয় যে, ভূমিকম্প আসছিল আর তা তাঁর বরকতে ধূলাঝড়ে রূপ নিল।বর্ণিত আছে, “নেককার বান্দাদের। আলােচনাকালে রহমত অবতীর্ণ হয়।” (কাশফুল খিফা, ২য় খন্ড, ৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭৭২)
যখন শুধু আলােচনা করাতে রহমত নাযিল হওয়ার সুসংবাদ রয়েছে তাহলে যেখানে আল্লাহ্ তাআলার ওলীর পুন্যবান সত্ত্বা বিদ্যমান থাকবেন, সেখানে রহমতের অবস্থা কি ধরনের হতে পারে!
জু ওলিয়াে কে মাযারাে পর মুসলমা আতে যাতে হে
খােদা কি রহমতাে সে হিসসা ওয়াফির উহ পাতে হে
(৫০) সবুজ পেয়ালা
হযরত সায়্যিদুনা শফীক বিন ইবরাহীম (رحمة الله) বলেন: “আমি একদা মক্কা শরীফে হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র জন্মস্থানের নিকট হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম - (رحمة الله) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি (رحمة الله) রাস্তার ধারে বসে কাঁদছিলেন। আমি তাঁর (رحمة الله) কাছে গিয়ে বসলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, “ওহে আবূ ইসহাক! (এটা তাঁর (رحمة الله) উপনাম ছিল) কেন কাঁদছেন?” তিনি বললেন: “ভাল”। আমি আমার কথা দুই তিনবার বলার পর তিনি । বললেন: “ওহে শফীক (رحمة الله) ! আমার কথার গােপনীয়তা রক্ষা করবে তাে।” আমি বললাম: “যা মন চায় বলে দিন!" তিনি বললেন: “আমার নফস ৩০ বৎসর থেকে সিকবাজ (সিরকা, মাংস ও সুগন্ধিযুক্ত মসলা দ্বারা তৈরী তরকারী) খাওয়ার আগ্রহে অস্থির ছিল। কিন্তু আমি তাকে দমন করতে থাকি। গতরাতে যখন আমি বসাবস্থায় ছিলাম তখন আমার ঘুম এসে গেল। এক যুবককে সবুজ পেয়ালা হাতে দেখলাম, যা থেকে ঐ তরকারি সুগন্ধ উঠছিল। আমি সাহস করে তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম। তখন সে (যুবক) ঐ পেয়ালা আমার দিকে অগ্রসর করে বলল: “ওহে ইবরাহীম (رحمة الله)! খেয়ে নিন।” আমি বললাম: “আমি খাবনা। আমি এটা আল্লাহর জন্য ত্যাগ করেছি।" সে বলল: “আল্লাহই আপনাকে এটা দান করেছেন, খেয়ে নিন।” আমার কাছে এর কোন প্রত্যুত্তর ছিলনা, তাই আমি কেঁদে ফেললাম। তখন সে বলল: “খেয়ে নিন, আল্লাহ আপনার উপর দয়া করুন।" আমি বললাম: “আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চয়তা মিলবেনা কোথেকে এসেছে ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের পেটে ঢালবে না।” সে বলল: “খেয়ে নিন। আল্লাহ আপনাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে এ খাবার দিয়ে বলা হয়েছে যে, ওহে খিজির এটা নিয়ে যাও আর ইবরাহীম বিন আদহাম (رحمة الله) এর নফসকে খাওয়াও।
কারণ আল্লাহ তাঁকে (সিকবাজ হতে) বিরত রাখার ক্ষেত্রে, এ দীর্ঘ ধৈর্যের কারণে তাঁর উপর অনুগ্রহ করেছেন। ওহে ইবরাহীম (رحمة الله) ! আমি ফিরিশতাগণকে বলতে শুনেছি, “যাকে দান করা হয়, আর সে যদি না নেয় তবে এরপর চাইলেও তাকে আর তা দেয়া হবে না।” আমি বললাম: “যদি ব্যাপার এমন হয় তবে আল্লাহ্ তাআলার সাথে কৃত ওয়াদার কারণে আপনার সম্মুখে আমি খাবনা। অতঃপর যখন আমি ফিরে তাকালাম, তখন দেখলাম এক যুবক তাকে কোন বস্তু দিয়ে বলছে: “ওহে খিযির عَلَیۡہِ السَّلاَم তাঁকে আপনি খাইয়ে দিন। সুতরাং তিনি عَلَیۡہِ السَّلاَم আমাকে লােকমা দিতে থাকেন। এ অবস্থায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি যখন উঠলাম তখনও আমার মুখে সেটার স্বাদ বিদ্যমান ছিল। সায়্যিদুনা শফীক (رحمة الله) বলেন: “আমি আরয করলাম: “আপনার হাত দেখি!” আমি তাঁর (رحمة الله) হাত ধরলাম এবং তাতে চুমু দিলাম।” (ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ১০০-১০১ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
ঈমানের সাথে মৃত্যুর আমল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়ের! আপনারা দেখলেন তাে! হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম (رحمة الله) নফসের ইচ্ছা গুলােকে কিভাবে পদদলিত করেছেন। ৩০ বৎসর ধরে ‘সিকবাজ' খাওয়ার আকাঙ্খাকে দমন করে রেখেছেন। আল্লাহর রহমতে হযরত সায়্যিদুনা খিযির এ তাশরীফ আনলেন এবং তাঁকে নিজের পবিত্র হাতে ‘সিকবাজ' খাওয়ালেন। হযরত সায়্যিদুনা খিযির (عليه السلام) আল্লাহর একজন নবী, যিনি এখনও পার্থিব জীবনের অধিকারী। তিনি عَلَیۡہِ السَّلاَم এর বরকতের একটি মাদানী ফুল পেশ করছি। এটাকে নিজ অন্তরের মাদানী পুস্পস্তবকে অবশ্যই সাজিয়ে নিন।
যেমন- ‘তফসীরে সাভী শরীফে রয়েছে, যে কেউ হযরত সায়্যিদুনা খিযির عَلَیۡہِ السَّلاَم এর নাম কুনইয়াত (উপনাম) পিতার নাম, ও উপাধী মনে রাখবে তার ঈমানের সাথে মৃত্যু লাভ হবে। তাঁর নাম, কুনইয়াত, পিতার নাম ও উপাধী: “আবুল আব্বাস বালইয়া বিন মালকান আল্ খিদ্বার।" (তাফসীরে সা-ভী, ২য় খন্ড, ১২০৭ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৫১) নফসের সাথে কথােপকথন
হযরত সায়্যিদুনা ইমামে আযম আবু হানীফা (رحمة الله) এর শাহজাদা হযরতে সায়্যিদুনা হাম্মাদ (رحمة الله) বলেন: “আমি হযরত সায়্যিদুনা দাউদ তাই (رحمة الله) এর খিদমতে হাজির হলাম। তাঁর ঘর থেকে আওয়াজ আসছিল, “ওহে নফস! তুই গাজর খাওয়ার ইচ্ছা করেছিলি, আমি খাইয়ে দিয়েছি, পুনরায় তুই খেজুর খেতে চাচ্ছিস, আল্লাহর শপথ! তােকে কখনাে খেজুর খাওয়াব না।” আমি সালাম করে ভেতরে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি (رحمة الله) একা ছিলেন। (অর্থাৎ তিনি নিজের নফসের সাথে কথা বলছিলেন) (প্রাগুক্ত, ১০১ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর। সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
(৫২) সবজী খাবনা
হযরত সায়্যিদুনা মালিক বিন দায়গম (رحمة الله) বলেন: একবার আমি বসরার বাজার দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন এক তরকারীর দিকে আমার দৃষ্টি পড়ল, আমার নফস দাবী করে বসল যে, আজকে রাতে এ সবজী খাওয়াও। আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, ৪০ রাত পর্যন্ত এ সবজী খাবনা।(প্রাত্তক্ত, ১০১ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইআমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানাের অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন- মানসিকতা সৃষ্টি হবে।
নামাযের জন্য আতর লাগানাে মুস্তাহাব।
সদরুল আফাজিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী (رحمة الله) উক্ত আয়াতে করীমার টীকায় লিখেছেন: অর্থাৎ পােষাকের সাজ সজ্জা। অপর এক বর্ণনা অনুযায়ী মাথায় চিরুনী করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ইত্যাদিও সাজ সজ্জার অন্তর্ভুক্ত আর সুন্নাত হল বান্দা সুন্দর আকৃতি ও অবস্থায় নামাযের জন্য হাজির হবে। কেননা, নামাযে রবের সাথে মুনাজাত তথা কথাবার্তা হয়ে থাকে। তাই সাজ-গােজ করা আতর ব্যবহার করা মুস্তাহাব। মুসলিম শরীফের হাদীসে রয়েছে: “জাহেলী যুগে দিনে পুরুষেরা এবং রাতে মহিলারা উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করত।" এই আয়াতটিতে সতর ঢাকার এবং কাপড় পরিধান করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতটিতে এর দলিল রয়েছে যে, নামায ও তাওয়াফ সহ যে কোন অবস্থায় সতর ঢাকা ওয়াজিব। (খাযায়িনুল ইরফান, ২৪৮ পৃষ্ঠা)
নামাযীর সামনে দিয়ে গমন করা মারাত্মক গুনাহ্
(১) ছরকারে মদীনা, সুলতানে বা-করীনা, করারে কলব ও সীনা ফয়যে গঞ্জীনা ছাহেবে মুয়াত্তর পসীনা, বায়েছে নুকূলে সকীনা (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যদি কেউ জানত যে, আপন নামাযী ভাইয়ের সামনে দিয়ে আড়াল হয়ে গমন করার মধ্যে কী (রকম গুনাহ) রয়েছে, তাহলে সে এক কদম চলা থেকে এক শত বছর দাঁড়িয়ে থাকাটা উত্তম মনে করত।” (সুনানে ইবনে মাযাঃ ১ম খন্ড, ৫০৬ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ১৪৬)
(২) হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মালিক (رحمة الله) বলেন: হযরত সায়্যিদুনা কাবুল আহবার (رحمة الله) বলেছেন: নামাযীর সামনে দিয়ে গমনকারী যদি জানত, এতে তার কী ধরনের গুনাহ রয়েছে, তাহলে সে মাটিতে ধসে যাওয়াকে গমন করা থেকে উত্তম মনে করত। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, ১ম খন্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ৩৭১)
নামাযীর সামনে দিয়ে গমনকারী ব্যক্তি নিঃসন্দেহে গুনাহগার। কিন্তু নামায আদায়কারী ব্যক্তির নামাযে এর কারণে কোন পার্থক্য সৃষ্টি হবে না। (ফতােওয়ায়ে রযবীয়া, ৭ম খন্ড, ২৫৪ পৃষ্ঠা)
ফয়য়ানে রমযান
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দয়ালু আল্লাহ তাআলার কোটি কোটি ইহসান হচ্ছে তিনি আমাদেরকে রমযান মাসের মতাে মহান নেয়ামত দ্বারা ধন্য করেছেন। রমযানের কল্যাণ সম্পর্কে কী বলবাে? এর প্রতিটি মুহুর্তই রহমতে পরিপূর্ণ। এ মাসে প্রতিদান ও সাওয়াব অনেকগুণ বেড়ে যায়। নফলের সাওয়াব ফরযের সমান, আর ফরযের সাওয়াব সত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়; বরং এ মাসে রােযাদারের ঘুমও ইবাদতে গণ্য হয়। আরশবহনকারী ফেরেশতারা রােযাদারদের দোয়ার সাথে ‘আমীন' বলেন। এক হাদীসে পাক অনুযায়ী, রমযানের রােযাদারের জন্য সমুদ্রের মাছগুলাে ইফতারের সময় পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬)
ইবাদতের দরজা
রােযা গােপন ইবাদত, কেননা আমরা প্রকাশ না করলে কেউ এ কথা জানতে পারে না যে, আমরা রােযা রেখেছি কিনা। আল্লাহ গােপন ইবাদতকে বেশি পছন্দ করেন। একটি হাদীস শরীফ অনুসারে, “রােযাকে ইবাদতের দরজা বলা হয়েছে।” (আল জামেউস সগীর, ১৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৪১৫)
কুরআন অবতরণ
এ মােবারক মাসের একটি বৈশিষ্ট্য হল, আল্লাহ তাআলা এতে কুরআন পাক নাযিল করেছেন। সুতরাং পবিত্র কুরআনে পরম করুণাময় আল্লাহ্ তাআলা কুরআন নাযিল ও রমযান মাস সম্পর্কে ইরশাদ করেন:
ﺷَﻬۡﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻯۡٓ ﺍُﻧۡﺰِﻝَ ﻓِﻴۡﻪِ ﺍﻟۡﻘُﺮۡﺍٰﻥُ ﻫُﺪًﻯ ﻟِّﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَ ﺑَﻴِّﻨٰﺖٍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟۡﻬُﺪٰﻯ ﻭَﺍﻟۡﻔُﺮۡﻗَﺎﻥِۚ ﻓَﻤَﻦۡ ﺷَﻬِﺪَ ﻣِﻨۡﻜُﻢُ ﺍﻟﺸَّﻬۡﺮَ ﻓَﻠۡﻴَـﺼُﻤۡﻪُؕ ﻭَﻣَﻦۡ ﮐَﺎﻥَ ﻣَﺮِﻳۡﻀًﺎ ﺍَﻭۡ ﻋَﻠٰﻰ ﺳَﻔَﺮٍ ﻓَﻌِﺪَّﺓٌ ﻣِّﻦۡ ﺍَﻳَّﺎﻡٍ ﺍُﺧَﺮَؕ ﻳُﺮِﻳۡﺪُ ﺍﻟﻠّٰﻪُ ﺑِﮑُﻢُ ﺍﻟۡﻴُﺴۡﺮَ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺮِﻳۡﺪُ ﺑِﮑُﻢُ ﺍﻟۡﻌُﺴۡﺮ ﻭَﻟِﺘُﮑۡﻤِﻠُﻮﺍ ﺍﻟۡﻌِﺪَّﺓَ ﻭَﻟِﺘُﮑَﺒِّﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﻋَﻠٰﻰ ﻣَﺎ ﻫَﺪٰٮﻜُﻢۡ ﻭَﻟَﻌَﻠَّﮑُﻢۡ ﺗَﺸۡﻜُﺮُﻭۡﻥَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: রমযান মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে-মানুষের জন্য হিদায়াত ও পথ-নির্দেশ এবং মীমাংসার সুস্পষ্ট বাণী সমূহ। সুতরাং তােমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেনাে অবশ্যই সেটার রােযা পালন করে। আর যে কেউ অসুস্থ হয় কিংবা সফরে থাকে, তবে ততসংখ্যক রােযা অন্য দিনগুলােতে (পূর্ণ করবে)। আল্লাহ (তাআলা) তােমাদের জন্য সহজ চান এবং ততামাদের জন্য কঠিন (ক্লেশ) চান না। আর এজন্য যেন তােমরা সংখ্যা পূরণ । করবে এবং আল্লাহ তাআলার) মহিমা বর্ণনা করবে এর উপর যে, তিনি । তােমাদেরকে হিদায়ত করেছেন এবং যাতে তােমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হও। (পারা-২, সূরা-বাকারা, আয়াত-১৮৫)
রমযানের সংজ্ঞা
এ পবিত্র আয়াতগুলাের প্রাথমিক অংশে سهر رمضان الذ ى (অর্থাৎ-এই রমযান মাস) এর ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ মুফাসসির হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী! আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله) তাফসীরে নঈমীতে লিখেছেন:رمضان ও শব্দটি হয়তাে رحمن শব্দের মতাে আল্লাহ তাআলার নাম। যেহেতু, এ মাসে দিনরাত আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা হয়, সেহেতু এ মাসকে রমযান অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার মাস বলা হয়। যেমন- মসজিদ ও কা'বাকে ‘আল্লাহ তাআলার ঘর বলা হয়। কারণ, সেখানে আল্লাহ্ তাআলারই কাজ পালন করা হয়। তেমনিভাবে রমযান আল্লাহ্ তাআলার মাস। কারণ, এ মাসেও আল্লাহ তাআলারই কাজ হয়ে থাকে। রােযা ও তারাবীহ ইত্যাদি আল্লাহ্ তাআলারই জন্য; কিন্তু রােযা রাখাবস্থায় যেই বৈধ চাকুরী, বৈধ ব্যবসা ইত্যাদি করা হয়, তাও আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত বলে গণ্য হয়। এ কারণে এই মাসের নাম ‘মাহে রমযান' অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার মাস।
অথবা এটা رمضاء থেকে নির্গত। رمضاء বলে হেমন্ত কালের বৃষ্টিকে। যা দ্বারা পৃথিবী ধুয়ে যায়, আর বসন্তকালের শষ্য খুব বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়। সুতরাং এ মাসও হৃদয়ের ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে পরিস্কার করে দেয়। এর ফলে আমল সমূহের শষ্যক্ষেত সবুজ ও সজীব থাকে, এ কারণে এটাকে রমযান মাস' বলে। “শ্রাবণে প্রতিদিন বৃষ্টি চাই, ভাদ্র মাসে চাই ‘চারদিন আর আশ্বিনে চাই একদিন।" এ একদিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতের ফসল পেকে যায়। সুতরাং অনুরূপভাবে, এগার মাস নিয়মিতভাবে নেক কার্যাদি অব্যাহত রাখা হয়, তারপর রমযানের রােযাগুলাে এই নেক কাজগুলাের শস্যক্ষেতের ফসল পাকিয়ে দেয়। অথবা এটা رمض (রামদ্বুন) থেকে গঠিত। এর অর্থ ‘উষ্ণতা কিংবা জ্বলে যাওয়া। যেহেতু এ মাসে মুসলমানগণ ক্ষুধা ও পিপাসার তাপ সহ্য করে, কিংবা এটা গুনাহগুলাে জ্বালিয়ে দেয় সেহেতু সেটাকে রমযান' বলা হয়। কানযুল উম্মাল'-এর অষ্টম খন্ডের ২১৭ পৃষ্ঠায় হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে: ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “এ মাসের নাম ‘রমদ্বান রাখা হয়েছে, কেননা, এটা গুনাহ সমুহকে জ্বালিয়ে দেয়।"
মাসগুলাের নামকরণের কারণ
হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) বলেন: কোন কোন তাফসীরকারক رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی বলেছেন: “যখন মাসগুলাের নাম রাখা হলাে, তখন যে মৌসুমে যে মাস ছিলাে, সে অনুসারেই ওই মাসের নাম রাখা হয়েছে। যে মাস গরমের মৌসুমে ছিলাে, সে মাসকে রমযান' বলা হয়েছে। যা বসন্ত কালে ছিলাে সেটাকে রবীউল আউয়াল, যে মাস শীতের মৌসুমে ছিলাে, যখন পানি জমে বরফ হয়ে যাচ্ছিলাে, সেটাকে জমাদিউল উলা বলা হলাে। ইসলামে প্রতিটি নামের পিছনে কোন না কোন কারণ থাকে। বস্তুত নাম' কাজ অনুসারেই রাখা হয়। অন্যান্য পরিভাষাগুলােতে এমনটি থাকে না। আমাদের দেশে মুখের নাম 'মুহাম্মদ ফাযিল' (জ্ঞানীগুণী মুহাম্মদ) আর ভীরু ও কাপুরুষের নাম 'শের বাহাদুর’ও রাখা হয়ে থাকে। এছাড়াও কুৎসিৎ চেহারা সম্পন্ন মানুষকে বলা হয় “ইউসুফ খান; কিন্তু ইসলামে এ দোষটা নেই। রমদ্বান বহু বৈশিষ্ট্যের ধারক। এ কারণে এর নাম “রমদ্বান’ হয়েছে। (তাফসীরে নঈমী, ২য় খন্ড, ২০৫ পৃষ্ঠা)
স্বর্ণের দরজা বিশিষ্ট পরিবেশ
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, মক্কী মাদানী সুলতান, রহমতে আলামিয়ান হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যখন রমযান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন আসমান ও জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়।আর সেগুলাে সর্বশেষ রাত পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। যে কোন বান্দা এ বরকতময় মাসের যে কোন রাতে নামায পড়ে, তবে আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি সিজদার পরিবর্তে (অর্থাৎ বিনিময় স্বরূপ) তার জন্য পনের শত নেকী লিপিবদ্ধ করেন। আর তার জন্য জান্নাতে লাল পদ্মরাগ পাথরের মহল তৈরী করেন, যার ষাট হাজার দরজা থাকবে, প্রতিটি দরজার কপাট স্বর্ণের তৈরী হবে, যাতে লাল বর্ণের পদ্মরাগের পাথর খচিত থাকবে। সুতরাং যে কেউ রমযানের প্রথম রােযা রাখে তার জন্য আল্লাহ তাআলা রমযানের শেষ দিন পর্যন্ত গুনাহ মাফ করে দেন এবং তার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকেন। রাত ও দিনে যখনই সে সিজদা করে তার ওই প্রতিটি সিজদার বিনিময়ে তাকে (জান্নাতে) একেকটা এমন গাছ দান করা হবে, সেটার ছায়া অতিক্রম করতে ঘােড়ার আরােহীকে পাঁচশ' বছর দৌড়াতে হবে।" (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৩১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৬৫)
سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলার কতােই 'মহান করুণা যে, তিনি আপন হাবীব, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর ওসীলায় এমন মাহে রমযান দান করেছেন যে, এ সম্মানিত মাসে জান্নাতের সমস্ত দরজা খুলে দেয়া হয়, নেকীর প্রতিদান এতাে বেশি বেড়ে যায় যে, বর্ণিত হাদীস অনুসারে রমযানুল মােবারক এর রাতগুলােতে নামায সম্পন্নকারীকে প্রতিটি সিজদার বিনিময়ে পনের শত নেকী দান করা হয়। অনুরূপভাবে, জান্নাতের আযীমুশশান পরিবেশের অতিরিক্ত প্রদান করা হবে। এ বরকতময় হাদীসে রােযাদারদের জন্য এ মহা সুসংবাদও রয়েছে যে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকেন।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত আশিকানে রাসূলদের সংস্পর্শে থাকাবস্থায় মাহে রমজানুল মােবারকের বরকত অর্জনের মন-মানসিকতা খুব বেশি করে তৈরী হয়। অন্যথায় খারাপ সংস্পর্শে থেকে এই মােবারক মাসে অধিকাংশ লােক।
গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আসুন! গুনাহের সাগরে ডুবন্ত এক চিত্রশিল্পীর জীবনী পড়ুন যাকে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ মাদানী রঙে রঙ্গিন করে দিয়েছে। যেমন
আমি একজন চিত্রশিল্পী ছিলাম।
আওরঙ্গি টাউন বাবুল মদীনা করাচী এর এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনার সারসংক্ষেপ হচ্ছে: আফসােস! শত কোটি আফসােস!! আমি একজন চিত্রশিল্পী ছিলাম। মিউজিক্যাল প্রােগ্রাম ও ফ্যাশনের কাজ করতে করতে আমার জীবনের খুব মূল্যবান সময় বরবাদ হয়ে যাচ্ছিল। অন্তর ও মস্তিস্কের মধ্যে এমন অলসতার পর্দা পড়ে গিয়েছিল যে, নামায পড়ার সৌভাগ্য হত না, গুনাহ করার পরও অনুশােচনা জাগত না। সাহরায়ে মদীনা টুল প্লাজা সুপার হাইওয়ে বাবুল মদীনা করাচীতে বাবুল ইসলামে অনুষ্ঠিত তিন দিনের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় (১৪২৪ হিজরী ২০০৩ ইং) অংশগ্রহণ করার জন্য এক জিম্মাদার ইসলামী ভাই ইনফিরাদী কৌশিশ করে আমাকে খুব উৎসাহিত করেন। সৌভাগ্যের বিষয়! তাতে শরীক হওয়ার সৌভাগ্য নসীব হল। তিন দিনের ইজতিমা শেষে হৃদয়গ্রাহী দোয়াতে আমার নিজের বিগত গুনাহের উপর খুবই ঘৃণা ও অনুশােচনা হল। আমি আমার জযবাকে আর ধরে রাখতে পারলাম না, খুব কাঁদলাম। আর এই কাঁদাটা আমার কাজে এসে গেল।اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ পেয়ে গেলাম। আমি গান-বাজনা ও আনন্দ উৎসবের অনুষ্ঠান থেকে তাওবা করলাম এবং মাদানী কাফেলায় সফর করাকে নিজের জন্য আবশ্যক করে নিলাম। ২৫শে ডিসেম্বর ২০০৪ ইং তারিখে আমি যখন মাদানী কাফেলায় সফর করার জন্য রওয়ানা হচ্ছিলাম তখন আমার ছােট বােনের ফোন আসল। সে বুক ভরা কান্নার আওয়াজে আমাকে তার এক অন্ধ মেয়ের জন্মের সংবাদ শুনাল। আর সাথে এটাও বলল যে, ডাক্তার বলেছেন, এই বাচ্চার কখনাে দৃষ্টিশক্তি আসবে না। ততটুকু বলেই তার কথা আটকে গেল এবং ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। আমি এতটুকু বলে তাকে সান্ত্বনা দিলাম যে, اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ মাদানী কাফেলায় দোয়া করব। আমি মাদানী কাফেলায় নিজে খুব দোয়া করলাম এবং আশিকানে রাসূলদের দিয়েও দোয়া করালাম, যখন মাদানী কাফেলা থেকে ফিরে আসলাম তখন ফিরার দ্বিতীয় দিন আমার ছােট বােনের আনন্দে ভরা হাসি মিশ্রিত ফোন আসল এবং সে খুশি মনে এই আনন্দের সংবাদটুকু শুনাল যে, اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমার অন্ধ মেয়ের চোখে দৃষ্টিশক্তি ফিরে এসেছে এবং ডাক্তার এই বলে আশ্চর্য হল যে, এটা কিভাবে সম্ভব! কেননা আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোন চিকিৎসাই ছিল না। এই বর্ণনা দেয়ার সময় اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি বাবুল মদীনা করাচীর এলাকায়ী মুশাওয়ারাত এর একজন রােকন হিসেবে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সৌভাগ্য অর্জনের চেষ্টা করছি।
আফাতু ছে না ডর, রাখ করম পর নজর
রৌশন আখে মিলে, কাফিলে মে চলাে।
আপকো ডাক্টর, নে গাে মায়ুস কর,
ভী দিয়া মত ঢরে কাফিলে মে চলো।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ কতই প্রিয়! এর সংস্পর্শে এসে সমাজের না ; জানি কত অসংখ্য পথহারা মানুষ সৎচরিত্রবান হয়ে সুন্নাতে ভরা সম্মানের জীবন অতিবাহিত করছে আর মাদানী কাফেলার বাহারতাে আপনাদের সামনেই আছে। যেভাবে মাদানী কাফেলায় সফরের বরকতে অনেকের দুনিয়াবী সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সেভাবে নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) এর সুপারিশে আখিরাতের বিপদগুলােও আনন্দে পরিণত হয়ে যাবে।
টুট যায়েগে গুনাহগাররা কে ফাওরান কয়দাবন্দ,
হাশর কো খুল যায়েগি তাকৃত রাসুলুল্লাহ কি।
পাঁচটি বিশেষ দয়া
হযরত সায়্যিদুনা জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত: ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “আমার উম্মতকে রমযান মাসে পাঁচটি এমন বিষয় দান করা হয়েছে, যেগুলাে আমার পূর্বে অন্য কোন নবী (عليه السلام) পায়নি "
১/ যখন রমযানুল মােবারকের প্রথম রাত আসে, তখন আল্লাহ্ তাআলা তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। আর যার প্রতি আল্লাহ রহমতের দৃষ্টি দেন তাকে কখনাে আযাব দিবেন না।
২/ সন্ধ্যায় তাদের মুখের গন্ধ (যা ক্ষুধার কারণে সৃষ্টি হয়) আল্লাহ্ তাআলার নিকট মেশকের চেয়েও বেশি সুগন্ধিময় হয়।
৩/ ফেরেশতাগণ প্রত্যেক দিনে ও রাতে তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকেন।আল্লাহ্ তাআলা জান্নাতকে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন: “আমার নেক বান্দাদের জন্য সুসজ্জিত হয়ে যাও! শীঘ্রই তারা দুনিয়ার কষ্টের বিনিময়ে আমার ঘর ও দয়ার মধ্যে শান্তি পাবে।
৪/ যখন রমযান মাসের সর্বশেষ রাত আসে তখন আল্লাহ তাআলা সবাইকে ক্ষমা করে দেন।”উপস্থিতদের মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে আরয করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহু (ﷺ) ! এটা কি ‘লাইলাতুল কদর?” ইরশাদ করলেন: “না”। তােমরা কি দেখনি, শ্রমিকগণ যখন নিজের কাজ সম্পন্ন করে নেয়, তখন তাদেরকে পারিশ্রমিক দেয়া হয়?” (আত তাগরিব ওয়াত্তরহীব, ২য় খন্ড, ৫৬পৃষ্ঠদী-৭)
সগীরা গুনাহের কাফফারা
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হুযুর পুরনূর, শাফিয়ে ইয়াউমুন নূশুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ
“পাঁচ ওয়াক্তের নামায, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত, এক রমযান মাস থেকে পরবর্তী রমযান মাস পর্যন্ত গুনাহ্ সমূহের কাফফারা হয়ে যায়,যতক্ষণ কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা হয়।" (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ১৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৩)
তাওবার পদ্ধতি
سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ রমযানুল মােবারকে রহমতের মুসলধারে বৃষ্টি ও সগীরা গুনাহের কাফফারার মাধ্যম হয়ে যায়। কবীরা গুনাহ তাওবা মাধ্যমে ক্ষমা হয়ে যায়।
তাওবা করার পদ্ধতি হচ্ছে
যে গুনাহ্ হয়েছে, বিশেষভাবে ওই গুনাহ্ উল্লেখ করে মনে মনে তার প্রতি ঘৃনা ও ভবিষ্যতে সেটা থেকে বেঁচে থাকার অঙ্গীকার করে তাওবা করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, মিথ্যা বলা এটা কবীরা গুনাহ্।' সুতরাং আল্লাহ তাআলার মহান দরবারে আরয করবে: “ইয়া আল্লাহ্!আমি এ যে মিথ্যা বলেছি, তা থেকে তাওবা করছি। ভবিষ্যতে বলবােনা। তাওবা করার সময় অন্তরে মিথ্যা বলার প্রতি ঘৃণা, আর "ভবিষ্যতে বলবাে না" কথাটা বলার সময় অন্তরে এ দৃঢ় ইচ্ছাও থাকবে যে, যা কিছু মুখে বলছি, তেমনি করবাে। তখনই হবে তাওবা। যদি বান্দার হক বিনষ্ট করে থাকে, তবে তাওবার সাথে সাথে ওই বান্দার নিকট থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়া জরুরী।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হাদীস শরীফের কিতাব সমূহে রমযান শরীফের ফযীলতসমূহ যথেষ্ট পরিমাণে বর্ণিত হয়েছে। রমযানুল : মােবারকে এতাে বেশি পরিমাণ বরকত ও রহমত রয়েছে যে, আমাদের প্রিয় নবী রাসুলে আরবী (ﷺ) এ পর্যন্ত ইরশাদ করেছেন যে, যদি বান্দাগণ জানতাে রমযান কি, তাহলে আমার উম্মত আশা করতাে, “আহ! সারা বছরই যদি রমযান হতাে?” (সহীহ ইবনে খুযাইমা, ৩য় খন্ড, ১৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৮৮৬) ।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর জান্নাতরূপী বাণী
হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী (رضي الله عنه)বলেন: রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) শাবান মাসের শেষ দিনে ইরশাদ করেছেন: “হে লােকেরা! তােমাদের নিকট মহান ও বরকতময় মাস এসেছে। মাসটি এমন যে, তাতে একটি রাত (এমনি) রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। এ (বরকতময়) মাসের রােযা আল্লাহ্ তাআলা ফরয করেছেন। ' আর সেটার রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী করা তাতাওভু (অর্থাৎ সুন্নাত) যে ব্যক্তি এতে নেক কাজ (নফল ইবাদত) করলাে, তা হলাে ফরয ইবাদতের সমান। আর যে ব্যক্তি ফরয আদায় করেছে, তা হলাে সত্তর ফরযের সমান। এ মাস ধৈর্যের। আর ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। আর এ মাস হচ্ছে সমবেদনা প্রকাশ ও উপকার সাধনের মাস। এ মাসে মু'মিনদের জীবিকা বাড়িয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি এতে রােযাদারকে ইফতার করায়, তা তার গুনাহ্ সমূহের জন্য (মাগফিরাত)। তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে দেয়া হবে। আর যে ইফতার করায় সে তেমনি সাওয়াব পাবে যেমন পাবে রােযা পালনকারী, তার রােযা পালনকারীর সাওয়াবে কোনরূপ কমতি হবে না। আমরা আরয করলাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহু (ﷺ) আমাদের মধ্যে প্রত্যেকের এমন জিনিস নেই, যা দিয়ে ইফতার করাবে, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “আল্লাহ তাআলা এ সাওয়াব ওই ব্যক্তিকে দিবেন, যে এক ঢােক দুধ, কিংবা একটা খেজুর অথবা এক ঢােক পানি দ্বারা রােযাদারকে ইফতার করায়। আর যে ব্যক্তি রােযাদারকে পেট ভরে আহার করায়, তাকে আল্লাহ তাআলা আমার ‘হাওয' থেকে পান করাবেন। ফলে সে আর কখনাে পিপাসার্ত হবে না। শেষ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটা হচ্ছে ওই মাস, যার প্রথমাংশ (অর্থাৎ-প্রথম দশদিন) “রহমত', সেটার মধ্যভাগ (অর্থাৎ মধ্যভাগের দশদিন) মাগফিরাত' এবং শেষাংশ (অর্থাৎ শেষ দশদিন) জাহান্নাম থেকে মুক্তি (নাজাত)' । যে ব্যক্তি তার কর্মচারীর উপর এ মাসে কাজকর্ম সহজ করে দেয়, আল্লাহ্ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন। এ মাসে চারটি কাজ বেশি পরিমাণে কর, সেগুলাের দুটি হচ্ছে এমন যে, সে দুটি দ্বারা তােমরা আপন রবকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। আর অবশিষ্ট দুটির প্রতি তাে তােমরাই মুখাপেক্ষী। সুতরাং যে দু’টি কাজ দ্বারা তােমরা আপন প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করতে পারবে, সে দুটি হচ্ছে- (১) لا اله الا الله (আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই) মর্মে সাক্ষ্য দেয়া এবং (২) ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যে দুটি থেকে তােমরা বাঁচতে পারােনা, সেগুলাে হচ্ছে: (১) আল্লাহ তাআলার মহান দরবারে জান্নাত আশা করা এবং (২) জাহান্নাম থেকে আল্লাহ্ তাআলার আশ্রয় প্রার্থনা করা। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, ১৮৮৭ পৃষ্ঠা, ৩য় খন্ড)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এতক্ষণ যে হাদিসে পাক বর্ণনা করা। হয়েছে, তাতে মাহে রমযানুল মােবারকের রহমত, বরকত ও মহত্ত্বের আলােচনা করা হয়েছে। এ বরকতময় মাসে কলেমা শরীফ বেশি পরিমাণে পড়ে ‘ইসতিগফার' অর্থাৎ বারবার তাওবা করার মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা উচিত। আর এ দুটি কাজ থেকে কোন অবস্থাতেই উদাসীন হওয়া উচিত না। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার দরবারে জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য বেশি পরিমাণে প্রার্থনা করা চাই।
রমযান মোবারকের চারটি নাম
الله اكبر মাহে রমযানেরও কেমন কল্যাণ (ফয়যান)! হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) তাফসীরে নঈমী' শরীফে বর্ণনা করেন: “এ বরকতময় মাসের সর্বমােট চারটি নাম রয়েছে- (১) মাহে রমযান, (২) মাহে সবর, (৩) মাহে মুওয়াসাত (সমবেদনা জ্ঞাপন ও উপকার সাধনের মাস) এবং (৪) মাহে ওয়াসআতে রিক (জীবিকা প্রশস্ত হবার মাস)।" তিনি আরাে লিখেছেন: “রােযা হচ্ছে ধৈর্য, যার প্রতিদান- স্বয়ং মহান আল্লাহ আর তা এই মাসেই পালন করা হয়। এ কারণে সেটাকে ‘মাহে সবর' বলা হয়। মুওয়াসাত’ মানে উপকার করা। যেহেতু, এ মাসে সমস্ত মুসলমানের সাথে, বিশেষ করে পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করা বেশি সাওয়াবের কাজ। তাই সেটাকে মাহে মুওয়াসাত' বলা হয়। এতে জীবিকা প্রশস্ত হয়। ফলে গরীবরাও নেয়ামত ভােগ করে। এজন্য এর নাম রিযিক প্রশস্ত হওয়ার মাসও। (তাফসীরে নঈমী, ২য় খন্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা)
রমযানুল মােবারকের ১৩টি মাদানী ফুল
(এই সকল মাদানী ফুল তাফসীরে নঈমী ২য় খন্ড থেকে নেয়া হয়েছে)। (১) কা'বা শরীফ মুসলমানদেরকে তার কাছে ডেকে রহমত প্রদান করে,কিন্তু এটা (মাহে রমযান) এসে রহমত বন্টন করে। এ বিষয়টা এমন যেন সেটা (কা'বা) একটা কূপ, আর এটা (রমযান শরীফ) হচ্ছে সমুদ্র। অথবা ওটা (অর্থাৎ কাবা) হচ্ছে সমুদ্র আর এটা (অর্থাৎ রমযান) হচ্ছে বৃষ্টি। (২) প্রতিটি মাসে বিশেষ বিশেষ কিছু দিন-তারিখ রয়েছে। আর তারিখগুলাের মধ্যেও বিশেষ মুহুর্তে ইবাদত-বন্দেগী করা হয়।। যেমন-ঈদুল আযহার কয়েকটা (বিশেষ) তারিখে হজ্জ, মুহররমের দশম দিন উত্তম, কিন্তু রমযান মাসে প্রতিদিন ও প্রতিটি মুহুর্তে ইবাদত করা হয় । রােযা ইবাদত, ইফতার ইবাদত, ইফতারের পর তারাবীর জন্য অপেক্ষা করা ইবাদত, তারাবীহ পড়ে সেহেরীর জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে ঘুমানাে ইবাদত, তারপর সেহেরী খাওয়াও ইবাদত। মােটকথা,প্রতিটি মুহুর্তে আল্লাহ তাআলার শান ও মহা বদান্যতাই নজরে পড়ে ) রমযান' হচ্ছে একটা ভাট্টি'। ভাট্টি হল অপরিস্কার লােহাকে পরিস্কার এবং পরিস্কার লােহাকে মেশিনের যন্ত্রাংশে পরিণত করে দামী করে দেয়, আর স্বর্ণকে অলংকারে পরিণত করে ব্যবহারের উপযুক্ত করে দেয়, তেমনিভাবে রমযান মাস গুনাহগারদের পবিত্র করে এবং নেককার লােকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়। (৪) রমযানে নফলের সাওয়াব ফরযের সমান এবং ফরযের সাওয়াব সত্তর গুণ বেশি পাওয়া যায়। (৫) কিছু সংখ্যক আলিম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমযানে মৃত্যুবরণ করে, তাকে কবরে প্রশ্ন করা হয় না।” (৬) এ মাসে শবে কদর রয়েছে। আগের আয়াত থেকে বুঝা গেলাে যে, কুরআন রমযান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় আমি সেটাকে কুদর রাত্রিতে অবতরণ করেছি। (পারা-৩০, সূরা-কদর, আয়াত-১)
উভয় আয়াতকে মিলালে বুঝা যায় যে, শবে কদর রমযান মাসেই। আর তা ২৭তম রাতে হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। কেননা, লায়লাতুল ক্বদর এর মধ্যে ৯টি বর্ণ আছে, আর এ শব্দ দু'টি সূরা ক্বদরে তিনবার করে ইরশাদ হয়েছে। যার গুণফল দাঁড়ায় ২৭ (সাতাশ)। সুতরাং বুঝা গেলাে সেটা (শবে ক্বদর) ২৭ তম রাতেই।
(৭) রমযান মাসে শয়তানকে বন্দী করা হয়, দোযখের দরজা বন্ধ করে ।
দেয়া হয়, জান্নাতকে সুসজ্জিত করা হয় এবং দরজাগুলাে খুলে দেয়া হয়। এ কারণে, এসব দিনে সকর্ম অধিক ও গুনাহ কমে যায়। যে সব লোেক গুনাহ করেও নেয়, তারা নফসে আম্মারা' কিংবা “নিজেদের সাথী শয়তান’ (সঙ্গে অবস্থানকারী শয়তান) পথভ্রষ্ট করার কারণে করে থাকে। (৮) রমযানে পানাহারের হিসাব হয় না। ! (৯) কিয়ামতে রমযান ও কুরআন রােযাদারের জন্য সুপারিশ করবে। রমযান বলবে: “ওহে আমার মালিক! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত রেখেছিলাম। আর কুরআন আরয করবে: “ওহে আমার রব! আমি তাকে তিলাওয়াত ও তারাবীর মাধ্যমে ঘুমাতে দেইনি। (১০) রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) রমযানুল মােবারকে প্রত্যেক কয়েদীকে মুক্ত করে দিতেন এবং প্রত্যেক ভিখারীকে দান করতেন। মহা মহিম প্রতিপালকও রমযান মাসে দোযখীদেরকে মুক্তি দেন। সুতরাং রমযানে নেক কাজ করা এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। (১১) কুরআন শরীফে শুধু রমযান শরীফের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেটার ফযীলতসমূহই বর্ণিত হয়েছে। অন্য কোন মাসের নাম ও ফযীলত সুস্পষ্টভাবে নেই। মাসগুলাের মধ্যে কুরআন শরীফে শুধু রমযান মাসের নাম নেয়া হয়েছে, নারীদের মধ্যে শুধু বিবি মরিয়ম (رضي الله عنه)َا এর নাম এসেছে, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে শুধু হযরত : সায়্যিদুনা যায়দ ইবনে হারিসা (رضي الله عنه) এর নাম নেয়া হয়েছে, যার কারণে ওই তিন জনের মহত্ব জানা গেলাে। (১২) রমযান শরীফে ইফতার ও সেহেরীর সময় দোয়া কবুল হয়; (অর্থাৎ ইফতারের সময় ও সেহেরী খাওয়ার পর) এ মর্যাদা অন্য কোন মাসে নেই।(১৩) (রমযান) শব্দের মধ্যে পাঁচটি বর্ণ আছে: ر দ্বারা رحمت الهى (আল্লাহ্ তাআলার রহমত) বুঝায়, ميم দ্বারা محبت الهى (মাওলার ভালবাসা) ض দ্বারা ضمان الهى (আল্লাহ্ তাআলার বদান্যতার দায়িত্ব) বুঝায়, الف দ্বারা امان الهى (আল্লাহ তাআলার নিরাপত্তা) এবং ن দ্বারা نور الهى (আল্লাহ তাআলার নূর) বুঝায়। তদুপরি, রমযানে পাঁচটি ইবাদত বিশেষভাবে সম্পন্ন হয়: (১) রােযা, (২) তারাবীহ, (৩) তিলাওয়াতে কুরআন, (৪) ইতিকাফ এবং (৫) শবে ক্বদরের ইবাদত। সুতরাং যে কেউ সত্য অন্তরে এ পাঁচটি ইবাদত করবে সে ওই পাঁচটি পুরস্কারের উপযুক্ত হবে। (তাফসীরে নঈমী, ২য় খন্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা)
জান্নাতকে সাজানাে হয়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রমযানুল মােবারককে স্বাগত জানানোর জন্য সারা বছরই জান্নাতকে সাজানাে হয়। সুতরাং হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত: রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “নিশ্চয় জান্নাতকে বছরের শুরু থেকে আগামী বছর পর্যন্ত রমযানুল মােবারকের জন্য সাজানাে হয়। আরাে ইরশাদ করেন: “রমযান শরীফের প্রথম দিন জান্নাতের গাছগুলাের নিচে থেকে (সুন্দর চোখ বিশিষ্ট) হুরদের উপর বাতাস প্রবাহিত হয়, আর তারা আরয করে: “হে পরওয়ারদিগার! তােমার বান্দাদের মধ্যে এমনসব বান্দাদেরকে আমাদের স্বামী করিও, যাদেরকে দেখে আমাদের চক্ষুগুলাে জুড়ায়। আর তারাও যখন আমাদেরকে দেখে তখন তাদেরও চক্ষু জুড়ায়।" (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, : ৩১২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৬৩৩)
اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ জান্নাতের বৈশিষ্ট্যের কথা কী বলব! আহ! আমাদের যদি বিনা হিসেবে ক্ষমা করে দেয়া হয় ও জান্নাতুল ফিরদাউসে মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) এর প্রতিবেশী হওয়া নসীব হয়ে যায়।
কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামী ওয়ালাদের উপর কেমন কেমন দয়া বর্ষিত হয় তার একটি মাদানী ঝলক আপনারা শুনুন:
জান্নাতে প্রিয় নবী (ﷺ) এর প্রতিবেশী হওয়ার সুসংবাদ ইসলামী ভাই ও বোনদের ফ্রী দরসে নিযামী (অর্থাৎ আলিম কোর্স) করানোর জন্য দা'ওয়াতে ইসলামীর তত্ত্বাবধানে “জামেয়াতুল মদীনা” নামে অনেক জামেয়া (বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ ১৪২৭ হি: সালে দা’ওয়াতে ইসলামীর ঐ সকল জামেয়াতুল মদীনার (বাবুল মদীনা করাচীতে) প্রায় ১৬০ জন ছাত্র ১২ মাসের জন্য আল্লাহ্ তাআলার রাস্তায় সফর করে। শুরুতে তাদেরকে মাদানী কাফেলা কোর্স করানো হয়। এই কোর্স করানো অবস্থায় ছাত্রদের মাঝে ইসলামের খিদমত করার জযবা (আগ্রহ) এমনভাবে বৃদ্ধি পেল যে তাদের জযবায় মদীনা শরীফের ১২ চাদের আলো লেগে গেল। আর তাদের মধ্যে প্রায় ৭৭ জন ছাত্র নিজেদেরকে সারাজীবনের জন্য মাদানী কাফেলার মুসাফির হিসেবে পেশ করে দিল! মহান ত্যাগের ক্ষেত্রেসবচেয়ে বেশি উৎসাহের কারণ এটা ছিল, স্বপ্নে নবীকুল সুলতান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) এর দীদার দ্বারা এক আশিকে রাসূলের চক্ষুদ্বয় শীতল হয়ে যায়। নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) এর মোবারক ঠোটদ্বয় নড়ে উঠল, আর রহমতের ফুল ঝরতে লাগল, শব্দগুলো এভাবে ইরশাদ হল: যারা নিজেদেরকে সারাজীবনের জন্য পেশ করে দিয়েছে, আমি তাদেরকে জান্নাতের মধ্যে আমার সাথে রাখব।” স্বপ্নদ্রষ্টা আশিকে রাসূল ইসলামী ভাইয়ের মনে তখন এই আশা জাগল যে, আহ! শত কোটি আফসোস! আমিও যদি ঐ সৌভাগ্যশালী ইসলামী ভাইদের অন্তর্ভূক্ত হতাম! প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার মনের এই আক্বা জেনে ফেললেন আর ইরশাদ করলেন: “যদি তুমিও তাদের দল-ভূক্ত হতে চাও তবে নিজেকে সারা জীবনের জন্য পেশ করে দাও।”
ছরে আরশ পর হে তেরি গুজার,
দিলে ফরশ পর হে তেরি নজর
মালাকুতো মুলক মে কুয়ি শাই,
নেহী উহ জো তুঝ পে ইয়া নেহী
সৌভাগ্যবান আশিকানে রাসূলের মহা সু-সংবাদের প্রতি মোবারকবাদ! আল্লাহ্ তাআলার রহমতের প্রতি দৃষ্টি রেখে খুব দৃঢ়ভাবে আশা করা যায় যে, যে সকল ভাগ্যবানদের ব্যাপারে এই মাদানী স্বপ্ন দেখানো হয়েছে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ তাদের জীবনে শেষ পরিণাম ঈমানের সাথে হবে এবং তারা প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী (ﷺ) এর করুণায়
জান্নাতুল ফিরদাউসে তাঁর (ﷺ) এর প্রতিবেশী হতে পারবে। তবে আমাদের এটা মনে রাখা উচিত, উম্মতের স্বপ্ন শরীয়াতের শরীয়াত দলীল নয়। স্বপ্নের মাধ্যমে দেওয়া সুসংবাদের ভিত্তিতে কাউকে নিশ্চিত জান্নাতী বলা যাবে না।
ইযনে ছে তেরে ছরে হাশর কাহী কাশ! হুযুর,
ছাথ আত্তারকো জান্নাত মে রাখখো গা ইয়া রব।
প্রতি রাতে ষাট হাজার গুনাহগারের মুক্তি লাভ
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “রমযান শরীফের প্রতিটি রাতে আসমানে সুবহে সাদিক পর্যন্ত একজন আহ্বানকারী এ বলে আহ্বান করে, “হে কল্যাণকামী! আল্লাহ্ তাআলার আনুগত্যের দিকে অগ্রসর হও এবং আনন্দিত হয়ে যাও! ওহে অসৎকর্মপরায়ণ! অসৎকর্ম থেকে বিরত হও এবং শিক্ষা গ্রহণ করো। কেউ মাগফিরাত চাওয়ার আছো কি? তার দরখাস্ত পূরণ করা হবে। কেউ তাওবাকারী আছো কি? তার তাওবা কবুল করা হবে। কেউ প্রার্থনাকারী আছো কি? তার দোয়া কবুল করা হবে।কোন দোয়া চাওয়ার কেউ আছো কি? তার প্রার্থনা পূরণ করা হবে। আল্লাহ্ তাআলা রমযানুল মোবারকের প্রতিটি রাতে ইফতারের সময় ষাট হাজার গুনাহগারকে দোযখ থেকে মুক্তি দান করেন। আর ঈদের দিন সমগ্র মাসের সমসংখ্যক গুনাহগারকে ক্ষমা করা হয়।”(দুররে মনসুর, ১ম খন্ড, ১৪৬ পৃষ্ঠা)
হে মদীনার আশিকরা! রমযান মাসের শুভাগমন কি জিনিস?
আমরা গরীবদের ভাগ্য জেগে ওঠে। আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহ ও বদান্যতায় রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। আর মাগফিরাতের মুক্তিনামা বেশি পরিমাণে বন্টন করা হয়। আহ! আমরা গুনাহগারগণ যদি মাহে রমযানের মাধ্যমে প্রিয় আক্বা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর রহমতপূর্ণ হাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির আদেশ নামা পেয়ে যেতাম! ইমামে আহলে সুন্নাত دَامَتۡ بَرَکَاتُہُمُ الۡعَالِیَہরসূলে করীম (ﷺ) এর মহান দরবারে
আরয করেছেন:
তামান্না হে ফরমাইয়ে রোযে মাহশার,
ইয়ে তেরী রেহাঈ কী চিট্ঠী মিলী হে।
প্রতিদিন দশলক্ষ গুনাহগারকে দোযখ থেকে মুক্তিদান
আল্লাহ্ তাআলার দান, দয়া ও ক্ষমার কথা উল্লেখ করে এক
জায়গায় নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যখন রমযানের প্রথম রাত আসে, তখন আল্লাহ্ তাআলাআপন সৃষ্টির দিকে দয়ার দৃষ্টি দেন। বস্তুতঃ যখন আল্লাহ্ তাআলা কোন বান্দার দিকে দয়ার দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো আযাব দিবেন না। আর প্রতিদিন দশলক্ষ (গুনাহগারকে) জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন।(এভাবে) যখন ঊনত্রিশতম রাত আসে তখন গোটা মাসে যতসংখ্যক লোককে মুক্তিদান করেছেন, তার সমসংখ্যক মানুষকে ওই রাতে মুক্তিদান করেন। অতঃপর যখন ঈদুল ফিতরের রাত আসে তখন ফেরেশতাগণ আনন্দ প্রকাশ করে। আর আল্লাহ্ তাআলা আপন নূরকে বিশেষভাবে বিচ্ছুরিত করেন এবং ফেরেশতাদেরকে বলেন:“হে ফেরেশতার দল! ওই শ্রমিকদের কি প্রতিদান হতে পারে, যে তার দায়িত্ব পালন করেছে? ফেরেশতাগণ আরয করেন: “তাকে পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়া হোক।” আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: “আমি তোমাদেরকে সাক্ষী করছি-আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।”
(কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, ২১৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৭০২)
জুমার দিনের প্রতিটি মুহুর্তে দশ লক্ষ জাহান্নামীর মাগফিরাত
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত: খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহ্ তাআলা মাহে রমযানে প্রতিদিন ইফতারের সময় এমন দশলক্ষ গুনাহগারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন, যাদের গুনাহের কারণে জাহান্নাম অনিবার্য (ওয়াজিব) হয়েছিলো। অনুরূপভাবে, জুমার রাতে ও জুমার দিনে (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ করে জুমার দিনের সূর্যাস্ত পর্যন্ত) প্রতিটি মুহুর্তে এমন দশলক্ষ গুনাহগারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়, যারা শাস্তির উপযোগী বলে সাব্যস্ত হয়েছিল।” (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৭১৬)
‘ইস্ইয়াঁ ছে কভী হাম নে কানারা নাহ্ কিয়া,
পর তূ নে দিল আ-যূরদাহ হামারা না কিয়া।
হামনে তো জাহান্নাম কী বহুত কী তাজভীয্,
লে-কিন তেরী রহমত নে গাওয়ারা না কিয়া।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উপরোল্লেখিত বরকতময় হাদীসগুলোতে মহামহিম স্রষ্টার কতোই মহান পুরস্কার ও বদান্যতার কথা উল্লেখ রয়েছে। سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ প্রতিদিন এমন দশলক্ষ গুনাহগারকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যারা তাদের গুনাহের কারণে জাহান্নামের উপযোগী হয়েছিল। তাছাড়া, জুমার রাতে ও জুমার দিনে তো প্রতিটি মুহুর্তে দশলক্ষ করে পাপী দোযখের শাস্তি থেকে মুক্ত বলে সাব্যস্ত হয়ে যায়। তদুপরি, রমযানুল মোবারকের শেষ রাতের তো কতোই সুন্দর বাহার!গোটা রমযানে যতসংখ্যক লোককে ক্ষমা করা হয়েছিলো ততসংখ্যক পাপী ওই এক রাতে দোযখের শাস্তি থেকে মুক্তি পায়। আহ! যদি আল্লাহ্ তাআলা আমরা গুনাহগার-পাপীদেরকেও ওই মাগফিরাত-প্রাপ্তদের মধ্যে শামিল করে নিতেন।
জব কাহা ‘ইস্ইয়া’ ছে মাইনে সখ্ত লা-চার মে হোঁ,
জিন্কে পাল্লে কুছ নেহী হায় উন্ খরীদারো মে হোঁ।
তেরী রহমত কে লিয়ে শামিল গুনাহ্গারোঁ মে হোঁ,
বোল উঠি রহমত নাহ্ ঘাব্রা মাই মদদগারোঁ মে হোঁ।
কল্যাণই কল্যাণ
আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা উমর ফারুকে আযম (رضي الله عنه) বলেন: “ওই মাসকে স্বাগতম, যা আমাদেরকে পবিত্রকারী! গোটা রমযান মাস কল্যাণই কল্যাণ। দিনের বেলায় রোযা হোক, কিংবা রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত। এ মাসে ব্যয় করা জিহাদে অর্থ ব্যয় করার মত মর্যাদা রয়েছে।” (তাম্বীহুল গাফিলীন, ১৭৬ পৃষ্ঠা)
ব্যয়কে বাড়িয়ে দাও
হযরত সায়্যিদুনা দ্বামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত: তাজেদারে
রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “মাহে রমযানে পরিবারের লোকজনের ব্যয়কে বাড়িয়ে দাও। কেননা, মাহে রমযানে খরচ করা আল্লাহ্ তাআলার রাস্তায় খরচ করার মতোই।” (আল জামেউস সগীর, ১৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৭১৬)
বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট হুরেরা
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত: আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যখন রমযান শরীফের প্রথম তারিখ আসে,তখন মহান আরশের নিচে থেকে মাসীরাহ নামক বাতাস প্রবাহিত হয়, যা জান্নাতের গাছপালাকে নাড়া দেয়। ওই বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে এমন মনোরম উচ্চস্বর ধ্বনিত হয়, যার চেয়ে উত্তম সুর আজ পর্যন্ত কেউ শুনেনি। ওই সুর শুনে (সুন্দর চোখ বিশিষ্ট) হুরেরা বেরিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত তারা জান্নাতের উঁচু উঁচু মহলগুলোর উপর দাঁড়িয়ে যায়। আর বলে, “কেউ আছো, যে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে আমাদের প্রাত্রী হবে, যাতে তার সাথে আমাদের বিবাহ হয়?” তারপর ওই হুরগুলো জান্নাতের দারোগা (হযরত) রিদ্বওয়ান عَلَیۡہِ السَّلاَم কে জিজ্ঞাসা করে: “আজ এ কেমন রাত?” হযরত রিদ্বওয়ান عَلَیۡہِ السَّلاَم তদুত্তরে বলেন: “হ্যাঁ! এটা মাহে রমযানের প্রথম রাত। জান্নাতের দরজাগুলো নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) এর উম্মতের রোযাদারের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।” (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৩)
দুটি অন্ধকার দূরীভূত হয়
বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ তাআলা হযরত সায়্যিদুনা মূসা কলীমউল্লাহ (عليه السلام) কে ইরশাদ করেন: আমি উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) কে দুটি ‘নূর’ (জ্যোতি) দান করেছি। যাতে তারা দু‘টি অন্ধকারের বিপদ থেকে নিরাপদে থাকে। সায়্যিদুনা মুসা কলীমউল্লাহ্ (عليه السلام) আরয করলেন: “ইয়া আল্লাহ্! ওই নূর দু‘টি কি কি?” ইরশাদ হলো, রমযানের নূর” ও “কুরআনের নূর’।” সায়্যিদুনা মুসা কলীমউল্লাহ (عليه السلام) আরয করলেন: “অন্ধকার দু‘টি কি কি?” ইরশাদ করলেন: “একটা কবরের, আর অপরটা কিয়ামতের।” (দুর্রাতুন্নাসিহীন, ৯ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহ্ তাআলামাহে রমযানের প্রতি গুরুত্বারোপকারীর উপর কি পর্যায়ের দয়া প্রদর্শনকারী! উল্লেখিত দু‘টি বর্ণনায় মাহে রমযানের কতো বড় বড় দয়া ও কল্যাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে! রমযান মাসের প্রতি গুরুত্বারোপকারী মাত্রই রোযা পালন করে, পরম করুণাময় আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করে এবং জান্নাতগুলোর চিরস্থায়ী নেয়ামতগুলো অর্জন করে। তাছাড়া, দ্বিতীয় বর্ণনায় দু‘টি ‘নূর’ ও দু‘টি ‘অন্ধকার’ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্ধকার দূর করার জন্য আলো জরুরী। পরম করুণাময় আল্লাহ এই মহান দয়ার উপর কোরবান হয়ে যাই! তিনি আমাদেরকে কুরআন ও রমযানের দু‘টি ‘নূর’ দান করেছেন, যাতে কবর ও কিয়ামতের ভয়ানক অন্ধকার দূর হয়ে যায় এবং আলোই আলো হয়ে যায়।
রোযা ও কুরআন সুপারিশ করবে
রোযা ও কুরআন কিয়ামতের দিন মুসলমানের জন্য সুপারিশের সামগ্রী তৈরী করবে। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন: ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “রোযা ও কুরআন বান্দার জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।” রোযা আরয করবে: “হে দয়ালু
প্রতিপালক! আমি আহার ও প্রবৃত্তিগুলো থেকে দিনে তাকে বিরত রেখেছি। আমার সুপারিশ তার পক্ষে কবুল করো!” কুরআন বলবে: “আমি তাকে রাতের বেলায় ঘুমাতে দেইনি। আমার সুপারিশ তার পক্ষে কবুল করো।” সুতরাং উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ২য় খন্ড, ৫৮৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬৬৩৭)
ক্ষমা করার অজুহাত
আমিরুল মু’মিনীন হযরত মাওলায়ে কায়িনাত আলী মুরতাজা শেরে খোদা (رضي الله عنه) বলেন: “যদি আল্লাহ্ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) কে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে ‘রমযান’ ও ‘সূরা ইখলাস শরীফ’ কখনো দান করতেন না।” (নুযহাতুল মাজালিস, ১ম খন্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা)
ঢরথা কেহ ঈসইয়া কী ছাজা আব হোগী ইয়া রৌজে জযা,
দী উনকী রহমত নে ছদা ইয়ে ভী নেহী, উও ভী নেহী।
(হাদায়িখে বখশিশ)
লক্ষ রমযানের সাওয়াব
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত: তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি মক্কা শরীফে রমযান মাস পেলো, রোযা রাখলো এবং রাতে যথাসম্ভব জেগে জেগে ইবাদত করলো, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য অন্য জায়গার এক লক্ষ রমযান মাসের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন। আর প্রতিদিন একটা গোলাম মুক্ত করার সাওয়াব, প্রতি রাতে একটা গোলাম মুক্ত করার সাওয়াব, প্রতিদিন জিহাদে ঘোড়ার উপর সাওয়ারী দেয়ার সাওয়াব এবং প্রতিটি দিনে ও রাতে সাওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন।” (ইবনে মাজাহ, ৩য় খন্ড, ৫২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩১১৭)
আহ! যদি ঈদ মদীনায় হত!
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মক্কায়ে মুকাররামা মহামহিম ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) এর পবিত্র জন্মভূমি। রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) এর ওসীলায় কি পরিমাণ দয়া করেছেন যে, তাঁর প্রিয় মাহবুব রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর কোন গোলাম (উম্মত) যদি রমযান মাসে মক্কা শরীফে অতিবাহিত করে এবং সেখানে রোযা পালন করে তারাবীহ পড়ে, তবে তাকে অন্যান্য স্থানের এক লক্ষ রমযান মাসের সমান সাওয়াব দান করা হবে, প্রতিটি দিন ও রাতে একটি করে গোলাম আযাদ করার সাওয়াব এবং একেকটা নেকী অতিরিক্ত দান করেন। আহ! আমাদেরও যদি রমযান মাস মক্কায়ে মুকার্রামায় অতিবাহিত করার মহা সৌভাগ্য হয়ে যেতো!আর তাতে প্রতি মুহুর্ত ইবাদত করার সামর্থ হয়ে যেতো! তারপর রমযান অতিবাহিত করে সাথে সাথে ঈদ উদযাপনের জন্য আমাদের প্রিয় আক্বা নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) এর নূরানী রওযায় হাযির হয়ে “ঈদের বখশিশ” ভিক্ষা চাওয়ার সৌভাগ্য হত ও রহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) এর দয়ার সাগরে ঢেউ এসে যেতো! আহ! ‘হুযুর’ (ﷺ) এর নূরানী হাত থেকে যদি আমরা গুনাহগারগণ ‘ঈদের বখশিশ’ পেতাম! এ সবকিছু হুযুর (ﷺ) এর বদান্যতায়ই সম্ভব!
বিশ্বনবী (ﷺ) ইবাদতের জন্য তৎপর ও প্রস্তুত হতেন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রমযান মাসে আমাদের উচিত হবে আল্লাহ্ তাআলার খুব বেশি ইবাদত করা এবং এমন প্রতিটি কাজও করা চাই, যাতে আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর মাহবুব খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন এর সন্তুষ্টি রয়েছে। কারণ, এ মাসেও যদি কেউ তার ক্ষমা করিয়ে নিতে না পারে, তবে সে আর কবে করাবে? আমাদের প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী (ﷺ) এ মাস আসার সাথে সাথেই আল্লাহ্ তাআলার ইবাদতে বেশি মাত্রায় মগ্ন হয়ে যেতেন। যেমনিভাবে উম্মুল মু‘মিনীন সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) বলেন: “যখন রমযান আসতো, তখনই আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মহামহিম আল্লাহ্ তাআলার ইবাদতের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও তৎপর হয়ে যেতেন। আর গোটা মাসেই নিজের বিছানা মোবারকের উপর তাশরীফ আনতেন না।” (দুররে মানসুর, ১ম খন্ড, ৪৪৯ পৃষ্ঠা)
প্রিয় নবী (ﷺ) রমযানে বেশি পরিমাণে দোয়া করতেন তিনি আরো বলেন: “যখন রমযান মাসের শুভাগমন হতো তখন নবী করীম রঊফুর রহীম (ﷺ) এর রং মোবারক পরিবর্তন হয়ে যেতো। আর হুযুর (ﷺ) বেশি পরিমাণে নামায পড়তেন, খুব কান্নাকাটি করে দোয়া করতেন এবং আল্লাহ্ তাআলার ভয় হুযুরকে আচ্ছন্ন করত।” (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৩১০ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৬২৫)
প্রিয় নবী (ﷺ) রমযানে বেশি পরিমাণে দান করতেন প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ পবিত্র মাসে বেশী পরিমাণে দান-সদকা করাও সুন্নাত। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: “যখন রমযান মাস আসে তখন প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) প্রত্যেক কয়েদীকে মুক্তি দিয়ে দিতেন এবং প্রত্যেক ভিখারীকে দান করতেন।” (দুররে মানসুর, ১ম খন্ড, ৪৪৯ পৃষ্ঠা)
সবচেয়ে বেশি দানশীল
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ٰ(رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন:
নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) সমস্ত মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি দানশীল। হুযুর (ﷺ) এর দানশীলতার সমুদ্রে তখন বেশি ঢেউ ছিলো। যখন (রমযান মাসে) হুযুর(ﷺ) এর সাথে জিব্রাঈল আমীন عَلَیۡہِ السَّلاَم রমজানের প্রত্যেক রাতে সাক্ষাতের জন্য হাযির হন এবং প্রিয় নবী (ﷺ) তাঁর সাথে কুরআন পাঠের অবতারণা করেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সবেগে প্রবাহমান বাতাসের চেয়েও বেশী পরিমাণে কল্যাণের ক্ষেত্রে দান করতেন।” (সহীহ বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬)
হাত উঠা কর এক টুকড়া আয় করীম,
হে ছখী কে মাল মে হকদার হাম। (হাদায়িকে বখশিশ)
হাজার গুণ সাওয়াব
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রমযান মাসে সৎ কার্যাদির সাওয়াব খুব বেশি হয়ে যায়। সুতরাং এ মাসে অধিক থেকে অধিকতর সৎ কাজ করতে চেষ্টা করুন। সুতরাং হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম নাখই (رحمة الله) বলেন“রমযান মাসে একদিন রোযা রাখা (অন্য সময়) এক হাজার রোযা রাখার চেয়ে উত্তম। রমযান মাসে একবার ‘তাসবীহ’ পাঠ করা (অর্থাৎ سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ বলা) অন্য মাসে এক হাজার বার তাসবীহ পাঠ করা (অর্থাৎ سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ বলার চেয়ে উত্তম। রমযান মাসে এক রাকআত নামায পড়া, রমযান ব্যতীত অন্য মাসের এক হাজার রাকআত অপেক্ষা উত্তম। (আদ্ দুররুল মানসুর, ১ম খন্ড, ৪৫৪ পৃষ্ঠা)
রমযানে যিকিরের ফযীলত
হযরত আমীরুল মু‘মিনীন সায়্যিদুনা উমর ফারুকে আযম
(رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত: ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) এর রহমতপূর্ণ বাণী:ذاكر الله فى رمضان يغفر له وسا ءل الله فيه لا يخيب
অনুবাদ:- “রমযান মাসে আল্লাহ্ তাআলার যিকরকারীকে ক্ষমা করা হয় এবং আল্লাহ্ তাআলার দরবারে প্রার্থনাকারী বঞ্চিত থাকে না।” (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৩১১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৬২৭)
সুন্নাতে ভরা ইজতিমা ও আল্লাহ্ তাআলার যিকির
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ওইসব লোক কতইনা সৌভাগ্যবান, যারা এ বরকতময় মাসে বিশেষ করে যিকর ও দরূদের মাহফিলে এবং সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় শরীক হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে আর আল্লাহ্ তাআলার মহান দরবারে নিজেদের দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল প্রার্থনা
করে।কুরআন ও সুন্নতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতে ভরা ইজতিমা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলার যিকির দ্বারা সাজানো। কেননা তিলাওয়াত, না’ত শরীফ, সুন্নাতে ভরা বয়ান, দোয়া, সালাত ও সালাম ইত্যাদি সবকিছু আল্লাহ্ তাআলার যিকির এর অন্তর্ভূক্ত। দা’ওয়াতে ইসলামীর ইজতিমার বরকতের একটি ঝলক শুনুন। যেমন-
ছয়টি কন্যা সন্তানের পর পুত্র সন্তান
মারকাযুল আউলিয়া (লাহোর) এর এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা কিছুটা নিজের ভাষায় বর্ণনা করছি: সম্ভবত ২০০৩ সালের কথা। এক ইসলামী ভাই আমাকে তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর তিনদিনের আন্তর্জাতিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় (সাহরায়ে মদীনা, মদীনাতুল আউলিয়া মুলতানে) অংশগ্রহণ করার জন্য দা’ওয়াত পেশ করেন। আমি তাকে বললাম, ভাই! আমি ছয়টি কন্যা সন্তানের বাবা, আমার ঘরে বর্তমানে আরো একটি সন্তান আসার অপেক্ষায় আছে, দোয়া করবেন যাতে এবার আমার পুত্র সন্তান হয়। ঐ ইসলামী ভাই অতি বিনয়ের সাথে ইনফিরাদী কৌশিশ করতে করতে বললেন, اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আপনারতো এখন তিনদিনের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করা খুবই জরুরী। হজ্জের পর উপস্থিত লোকসংখ্যার দিক থেকে আশিকানে রসুলদের সবচেয়ে বড় ইজতিমা মুলতান শরীফে এসে দোয়া করুন, না জানি কার দোয়ার সদকায় আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তার কথা আমার হৃদয়ে খুবই প্রভাব ফেলল। আর আমি সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় (মুলতান শরীফ) উপস্থিত হয়ে গেলাম। সেখানকার মনোরম দৃশ্যাবলী বর্ণনা করার মত ভাষা আমার নেই। আমার জীবনে এই প্রথমবারের মত খুব বেশি আত্মার প্রশান্তি মিলল।ইজতিমার কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাআলা আমাকে চাঁদের মত ফুটফুটে একটি মাদানী মুন্না (ছেলে সন্তান) দান করেন। ঘরের সকলের আনন্দ বর্ণনা করার সীমা নেই। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। আল্লাহ্ তাআলা আমাকে পরবর্তীতে আরো একটি পুত্র সন্তান দান করে ধন্য করেন। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ এই বর্ণনাটি দেয়ার সময় আমি দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী মহলে মাদানী কাফেলার যিম্মাদার হিসেবে খিদমত করার সৌভাগ্য অর্জন করছি।প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ ও সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় কেন রহমত বর্ষণ হবে না! কেননা জানি না ঐ সকল আশিকানে রসুলদের মধ্যে কতজন আল্লাহ্ তাআলার ওলী রয়েছেন। আমার আক্বা আ’লা হযরত (رحمة الله) বলেন: “জামাআতের মধ্যে বরকত রয়েছে আর দোয়ায়ে مجمع المسلمين اقرب بقبول
(অর্থাৎ- মুসলমানদের সমাবেশে দোয়া করাটা কবুল হওয়ার খুবই কাছাকাছি) ওলামায়ে কিরামগণ বলেন: যেখানে ৪০ জন নেককারমুসলমান একত্রিত হয়, তাদের মধ্যে একজন অবশ্যই আল্লাহ্ তাআলার ওলী থাকেন। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, খন্ড-২৪, ১৮৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে শরহে জামি সগীর, হাদীস নং-৭১৪, ১ম খন্ড, ৩১২ পৃষ্ঠা দারুল হাদীস, মিশর ব্যাখ্যায় বর্ণিত) মূল কথা হল: দোয়া কবুল হওয়ার কোন চিহ্ন যদিও দেখা না যায় তবুও অভিযোগের শব্দাবলী মুখে উচ্চারণ না করা চাই। আমাদের কোন কথায় আমাদের কল্যাণ আছে তা আমাদের চেয়ে আল্লাহ্ তাআলা অধিক ভালো জানেন। আমাদেরকে প্রতিটা মুহুর্তে আল্লাহ্ তাআলার শোকর গুজার বান্দা হয়ে থাকা চাই। তিনি ছেলে সন্তান দান করলেও শোকর, মেয়ে দান করলেও শোকর, উভয়টি দান করলেও শোকর, আর একেবারে না দিলেও সদা সর্বদা শোকর আদায় করাই উচিত। ২৫ পারা সুরায়ে শূরা এর ৪৯ ও ৫০ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে
:ﻟِﻠَّﻪِ ﻣُﻠْﻚُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻳَﺨْﻠُﻖُ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺎﺀ ﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀ ﺇِﻧَﺎﺛًﺎ ﻭَﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀ ﺍﻟﺬُّﻛُﻮﺭَ
ﺃَﻭْ ﻳُﺰَﻭِّﺟُﻬُﻢْ ﺫُﻛْﺮَﺍﻧًﺎ ﻭَﺇِﻧَﺎﺛًﺎ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀ ﻋَﻘِﻴﻤًﺎ ﺇِﻧَّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﻗَﺪِﻳﺮٌ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলারই জন্য আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব। তিনি সৃষ্টি করেন যা ইচ্ছা করেন। যাকে চান কন্যা সন্তান সমূহ দান করেন এবং যাকে চান পুত্র সন্তান সমূহ দান করেন। অথবা উভয়ই যুক্তভাবে প্রদান করেন পুত্র ও কন্যা সন্তান। যাকে চান বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি জ্ঞানময়, শক্তিমান। (পারা-২৫, সূরা-শূরা, আয়াত-৪৯, ৫০)
সদরুল আফাযিল, হযরত আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (رحمة الله) বর্ণনা করেন: তিনি মালিক, নিজের অনুগ্রহকে যেভাবে চান বণ্টন করেন। যে যা চায় দান করেন। নবীগণের মধ্যে এই সব অবস্থা আমরা দেখতে পাই। হযরত সায়্যিদুনা লুত (عليه السلام) ও হযরত সায়্যিদুনা শোয়াইব (عليه السلام) এর শুধুমাত্র কন্যা সন্তানই ছিল। কোন ছেলে সন্তান ছিল না। হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম (عليه السلام) এর শুধুমাত্র ছেলে সন্তান ছিল মেয়ে ছিল না। প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) কে আল্লাহ্ তাআলা ৪ জন শাহযাদা ও ৪ জন শাহযাদী দিয়েছেন এবং হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহইয়া (عليه السلام) ঈসা হযরত ও (عليه السلام) এর কোন সন্তানই ছিলনা। (খাযাইনুল ইরফান, ৭৭৭ পৃষ্ঠা)
রমযানের পাগল
এক ব্যক্তি, যার নাম ছিলো মুহাম্মদ। গোটা বছর নামায পড়তো না। যখন রমযান শরীফের বরকতময় মাস আসতো, তখন সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করত এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিতভাবে পড়তো। এমনকি গত বছরের নামাযগুলোও কাযা আদায় করে দিতো। লোকেরা তাকে বলত: “তুমি এমন করো কেন?” সে বলত: “এ মাসটা হচ্ছে রহমত, বরকত, তাওবা ও মাগফিরাতের। হতে পারে আল্লাহ্ তাআলা আমাকে আমার এ ‘আমলের কারণে ক্ষমা করবেন।” যখন তার ইনতিকাল হলো, তখন কেউ তাকে স্বপ্নে দেখলো আর বললো: আল্লাহ্ তাআলা তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? সে বললো: “আমার মহামহিম আল্লাহ আমাকে রমযান শরীফের প্রতি সম্মান দেখানোর কারণে ক্ষমা করে দিয়েছেন।” (দুররাতুন্নাসিহীন, ৮ম পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং
তাঁর সদকায় আমাদের গুনাহ্ ক্ষমা হোক।
আল্লাহ্ তাআলা অমুখাপেক্ষী
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহ্ তাআলারমযান মাসের প্রতি গুরুত্বারোপকারীকে কতো উচ্চ পর্যায়ের দয়া করেছেন! বছরের অন্যান্য মাসকে বাদ দিয়ে শুধু রমযান মাসে ইবাদতকারীকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ ঘটনা থেকে কেউ আবারএকথা বুঝে বসবেন না যে, ‘এখনতো আল্লাহর পানাহ্ সারা বছরের নামায থেকে অব্যাহতি পাওয়া গেলো! শুধু বরকতময় রমযান মাসেই রোযা-নামায পালন করে নিবো। আর সোজা জান্নাতে চলে যাবো।’প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রকৃতপক্ষে ক্ষমা করা ও আযাব দেওয়া এ সবকিছু আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি ইচ্ছা করলে কাউকে বাহ্যতঃ কোনো ছোট নেক আমলের উপর ভিত্তি করেই দয়া করে মাফ করে দেন।আর তিনি চাইলে কাউকে আবার তার বড় বড় নেক আমল থাকা সত্ত্বেও কোন একটা ছোট গুনাহের উপর ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে পাকড়াও করে নিবেন। যেমন ৩য় পারা সুরা বাকারা ২৮৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে: ﻓَﻴَـﻐۡﻔِﺮُ ﻟِﻤَﻦۡ ﻳَّﺸَﺎٓﺀُ ﻭَﻳُﻌَﺬِّﺏُ ﻣَﻦۡ ﻳَّﺸَﺎٓﺀ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: অতঃপর যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন আর যাকে ইচ্ছা করবেন শাস্তি দিবেন; (পারা-৩, সূরা-বাকারা, আয়াত-২৮৪)
তূ বে-হিসাব বখ্শ্ কেহ্ হ্যায় বে-শুমার জুর্ম,
দে-তা হোঁ ওয়াস্তাহ্ তুঝে শাহে হিযায কা।
তিনটি জিনিসের মধ্যে তিনটি জিনিস গোপন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কোন নেকীই ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।
জানিনা, আল্লাহ্ তাআলার মহান দরবারে কোন নেকীটা পছন্দ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে, কোন ছোট থেকে ছোটতর গুনাহও না করা চাই। জানিনা, কোন গুনাহের উপর আল্লাহ্ তাআলা অসন্তুষ্ট হয়ে যান। আর তাঁর কষ্টদায়ক শাস্তি এসে আমাদের ঘিরে ফেলে। আ’লা হযরত (رحمة الله) এর খলীফা, ফকীহে আযম সায়্যিদুনা আবূ ইউসূফ মুহাম্মদ শরীফ,
মুহাদ্দিসে কুটলভী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন: “আল্লাহ্ তাআলা তিনটি জিনিষের মধ্যে তিনটি জিনিষকে গোপন রেখেছেন: (১) নিজের সন্তুষ্টিকে নিজের আনুগত্যের মধ্যে, এবং (২) নিজের অসন্তুষ্টিকে নাফরমানীর মধ্যে এবং (৩) নিজের ওলীগণকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে।” একথা উদ্ধৃত করার পর ফকীহে আযম (رحمة الله) বলেন: “প্রতিটি নির্দেশ পালন করা ও প্রতিটি নেকীকে কাজে পরিণত করা চাই। কারণ, একথা জানা নেই, কোন পাপের উপর তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে যান! হোক না ওই পাপ অতি ছোট। যেমন, (বিনানুমতিতে) কারো কাঠি (Toothpick) দিয়ে খিলাল করা।এটা বাহ্যিকভাবে অতি মা’মূলী বিষয়। কিংবা কোন প্রতিবেশীর মাটি দ্বারা তার অনুমতি ছাড়া নিজের হাত পরিস্কার করা। এটাও একটা নগণ্য বিষয়। কিন্তু এটাও হতে পারে, এ মন্দ কাজটিতেই মহান আল্লাহ্ তাআলার অসন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে। সুতরাং এমন ছোট ছোট কাজ থেকেওবিরত থাকা চাই।” (আখলাকুস সালিহীন, ৫৬ পৃষ্ঠা)
কুকুরকে পানি পানকারীণিকে ক্ষমা করা হয়েছে
হে রহমত প্রার্থীরা! যখন আল্লাহ্ তাআলা ক্ষমা করতে চান তখন বাহ্যিকভাবে যতই ছোট নেকীই হোক না কেন, তিনি সেটার উপর ভিত্তি করে দয়া পরবশ হয়ে যান। সুতরাং এ প্রসঙ্গে বহুসংখ্যক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন-এক নারীকে শুধু এজন্যই ক্ষমা করা হয়েছে, সে একপিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে ছিল। (বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৩২১)
এক হাদীসে নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: এক ব্যক্তি রাস্তা থেকে একটা গাছকে এ জন্য সরিয়ে দিয়েছে, পথচারীগণ যেন তা দ্বারা কষ্ট না পায়। আল্লাহ্ তাআলা খুশী হয়ে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (মুসলিম শরীফ, ১৪১০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯১৪)
অন্য এক বিশুদ্ধ হাদীস শরীফের দাবী অনুসারে ‘নম্রতা’ (অর্থাৎ ঋণ আদায়ের ব্যাপারে শিথিলতা) অবলম্বনকারী এক ব্যক্তিকে নাজাত দানের ঘটনাও এসেছে। (বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২০৭৮)
আল্লাহ্ তাআলার রহমতের ঘটনাবলী আলোচনা করতে গেলে সেগুলোর সংখ্যা এতো বেশী হয়, আমরা সেগুলো এ ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা করতে পারবনা,
মুযদাহবাদ আয় ‘আছিয়ো! যাতে খোদা গাফ্ফার হে,
তাহনিয়াত আয় মুজরিমো! শাফি’ শাহে আবরার হে।
(হাদায়িখে বখশিশ)
আযাব থেকে মুক্তি লাভের কারণ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যখন আল্লাহ্ তাআলা দয়া করতে চান তখন যেকোন একটা আমলকে নিজের দরবারে কবুল করেন তারপর ওই কারণে তাঁর রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এখন একটা বরকতময় হাদীস পেশ করা হচ্ছে, যাতে এমন কতগুলো লোকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা কোন না কোন নেকীর কারণে আল্লাহ্ তাআলার পাকড়াও থেকে বেঁচে গেছে। আর আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাদেরকে আবৃত করেছে। যেমন: হযরত সায়্যিদুনা আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত: একদা খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) তাশরীফ আনলেন আর ইরশাদ করলেন: “আজ রাতে আমি এক আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখেছি। তা হচ্ছে:
(১) এক ব্যক্তির রুহ কব্জ করার জন্য ‘মালাকুল মওত عَلَیۡہِ السَّلاَم আসলো, কিন্তু তার মাতা পিতার আনুগত্য করা (অর্থাৎ আনুগত্যের সাওয়াব) সামনে এসে দাঁড়ালো এবং সে বেঁচে গেলো।
(২) এক ব্যক্তিকে কবরের আযাব ঘিরে ফেললো, কিন্তু তার অযু (রূপী নেকী) তাকে রক্ষা করলো।
(৩) এক ব্যক্তিকে শয়তান ঘিরে ফেললো, কিন্তু আল্লাহ্ তাআলার যিকির (রূপী নেকী) তাকে রক্ষা করে নিলো।
(৪) এক ব্যক্তিকে আযাবের ফেরেশতারা ঘিরে ফেলল, কিন্তু তাকে (তার) নামায (রূপী নেকী) রক্ষা করলো।
(৫) এক ব্যক্তিকে দেখলাম, পিপাসায় কাতর হয়ে তার জিহ্বা বের হয়ে যাচ্ছিলো। আর একটা হাওযে পানি পান করার জন্য যাচ্ছিলো, কিন্তু তাকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছিলো। এর মধ্যে তার রোযা এসে গেলো। আর (এ নেকী) তাকে পরিতৃপ্ত করে দিলো।
(৬) এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যেখানে সম্মানিত নবীগণ عَلَیۡہِ السَّلاَم হয়ে বসে আছেন। সেখানে সে তাঁদের নিকট যেতে চাচ্ছিলো। কিন্তু তাকে (সেখান থেকে) তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছিলো।এর মধ্যে তার ‘জানাবাতের ফরজ গোসল’ এসে হাযির হলো। আর (তার এ নেকী) তাকে আমার নিকটেই বসিয়ে দিলো)।
(৭) এক ব্যক্তিকে দেখলাম, তার সামনে ও পিছনে, ডানে ও বামে, উপরে ও নিচে অন্ধকারই অন্ধকার। সে ওই অন্ধকারে হতভম্ব ও পেরেশান। তখন তার হজ্ব ও ওমরা সামনে এসে গেলো। আর (এ নেকী) তাকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর মধ্যে পৌঁছিয়ে দিলো।
(৮) এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে মুসলমানদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলো, কিন্তু কেউ তার সাথে কথা বলতে রাজি না। তখন ‘আত্মীয়দের প্রতি সদ্ব্যবহাররূপী নেকীটা মু’মিনদেরকে বললো: “তোমরা তার সাথে কথাবার্তা বলো।” সুতরাং মুসলমানরা তার সাথে কথা বলতে আরম্ভ করলো।
(৯) এক ব্যক্তির শরীর ও চেহারার দিকে আগুন এগিয়ে আসছিল। আর সে তার হাতে তা দূর করতে চাচ্ছিলো। তখন তার সদকা এসে পড়লো এবং তার সামনে ঢাল হয়ে তার মাথার উপর ছায়া হয়ে গেলো।
(১০) এক ব্যক্তিকে ‘যাবানিয়্যা’ (অর্থাৎ আযাবের বিশেষ ফেরেশতাগণ) চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেললো। কিন্তু তার ‘সৎকাজের নির্দেশ দান ও অসৎকাজে বাধা প্রদান’ (রূপী নেকী) এসে হাযির হল আর তা তাকে রক্ষা করলো এবং রহমতের ফেরেশতাদের হাতে সোপর্দ করে দিলো।
(১১) এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে হাঁটুর উপর ভর করে বসা ছিলো। কিন্তু তার ও আল্লাহ্ তাআলার মধ্যভাগে পর্দা ছিলো। অতঃপর তার সৎচরিত্র আসলো। এ (নেকী) তাকে রক্ষা করে নিলো এবং আল্লাহ্ তাআলার সাথে মিলিয়ে দিলো।
(১২) এক ব্যক্তিকে দেখলাম তার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হচ্ছে। তখন তার মধ্যে ‘আল্লাহ্ তাআলার ভয়’ (তাকওয়া) এসে পড়লো। আর এ (মহান নেকীর বরকতে) তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হলো।
(১৩) এক ব্যক্তির নেকীর ওজন হালকা ছিলো। কিন্তু তার দানশীলতা এসে পড়লো এবং নেকীর ওজন ভারী করে দিলো।
(১৪) এক ব্যক্তি জাহান্নামের কিনারায় দাঁড়ানো ছিলো; অতঃপর ‘আল্লাহ্ তাআলার ভয়’ (রূপী নেকী) আসলো এবং সে বেঁচে গেলো।
(১৫) এক ব্যক্তি জাহান্নামে পতিত হলো; কিন্তু তার ‘আল্লাহ্ তাআলার ভয়ে বিসর্জনকৃত অশ্রু’ এসে গেলো। আর (এ অশ্রুর বরকতে) সে বেঁচে গেলো।
(১৬) এক ব্যক্তি পুলসিরাতের উপর দাঁড়ানো ছিলো এবং গাছের ডালের মতো কাঁপছিলো; কিন্তু তার ‘আল্লাহ্ তাআলার প্রতি ভাল ধারণা যে, “তিনি তাকে দয়াই করবেন” তার (এ নেকী) তাকে রক্ষা করলো এবং সে পুলসিরাতের উপর দিয়ে অতিক্রম করে চলে গেলো।
(১৭) এক ব্যক্তি পুলসিরাতের উপর দিয়ে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে চলছিলো। তখন তার নিকট ‘আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা’ (রূপী নেকী) এসে পড়লো। আর (এ নেকী) তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে পুলসিরাতপার করিয়ে দিলো।
(১৮) আমার উম্মতের এক ব্যক্তি জান্নাতের দরজাগুলোর নিকট পৌঁছলো। ওইসব দরজা তার জন্য বন্ধ ছিলো। তখন তার لا اله الا الله মর্মে-সাক্ষ্য দেয়া (নেকীটি) আসলো। আর তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হলো এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করলো।
চোগলখোরীর ভয়ঙ্কর শাস্তি!
(১৯) কিছু মানুষের ঠোট কাটা হচ্ছিলো। আমি জিব্রাইল عَلَیۡہِ السَّلاَم জিজ্ঞাসা করলাম: ওরা কারা? বললো: “এরা মানুষের মাঝে চোগলখোরী করতো।”
গুনাহের অপবাদের ভয়ঙ্কর শাস্তি!
(২০) কিছু মানুষকে তাদের জিহবার সাথে লটকিয়ে রাখা হয়েছিলো। আমি জিব্রাইল عَلَیۡہِ السَّلاَم কে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। বললো: “তারা বিনা কারণে মানুষের বিরুদ্ধে গুনাহের অপবাদ দিত।” (শরহুস সূদূর, ১৮২ পৃষ্ঠা)
কোন নেকীই ছেড়ে দেয়া উচিত নয়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! পিতামাতার আনুগত্য, অযু, নামায, আল্লাহ্ তাআলার যিকির, হজ্ব ও ওমরা, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহার, সৎকাজের নির্দেশ ও অসৎকাজে বাধাদান, সদকা, সৎচরিত্র, দানশীলতা, আল্লাহ্ তাআলার ভয়ে কান্নাকাটি, তদুপরি আল্লাহ্ তাআলার প্রতি ভালো ধারণা ইত্যাদি নেকীর কারণে আল্লাহ্ তাআলা আযাবে লিপ্ত লোকদেরকে দয়া করেছেন এবং তিরস্কার ও শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়েছেন। মোটকথা, এটা হচ্ছে তাঁর অনুগ্রহ ও বদান্যতার বিষয়। তিনি মহামহিম মালিক ও খোদ মুখতার। যাকে চান ক্ষমা করে দেন। যাকে চান শাস্তি দেন। এসবই তাঁর ন্যায় বিচার। যেখানে তিনি একটা মাত্র নেকীর উপর খুশী ও দয়াপরবশ হয়ে ক্ষমা করে দেন, সেখানে কখনো আবার কোন একটা মাত্র গুনাহের উপর অসন্তুষ্ট হলে তাঁর জালালিয়তে ঢেউ খেলে। অতঃপর তাঁর পাকড়াও কঠোর হয়ে থাকে। যেমন- এখন উল্লেখকৃত দীর্ঘ হাদীসের শেষভাগে চোগলখোরদের (অর্থাৎ যারা একজনের কথা অন্যজনকে লাগিয়ে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ করায়) এবং অন্যের প্রতি গুনাহের অপবাদ রচনাকারীদের পরিণতি। আমাদের প্রিয় আক্বা তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) স্বচক্ষে দেখে আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। (অর্থাৎ যেখানে একটা নেকীর কারণে নাজাত হতে পারে, সেখানে কোন একটা গুনাহের কারণে পাকড়াও হতে পারে। সুতরাং বিবেকবান হচ্ছে সে-ই, যে কোন একটা মাত্র ছোট নেকী হলেও সেটা বর্জন না করে। কারণ, হয়তো এ নেকী তার নাজাতের ওসীলা হয়ে যেতে পারে। পক্ষান্তরে গুনাহ্ যতোই সামান্য হোক না কেন, তা কখনোই করবে না।