মুহাম্মদ (ﷺ) কে না বানাইলে আসমান জমীন এমনকি আদমকেও বানানো হত না

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَمْشَاذَ الْعَدْلُ، إِمْلَاءً، ثنا هَارُونُ بْنُ الْعَبَّاسِ الْهَاشِمِيُّ، ثنا جَنْدَلُ بْنُ وَالِقٍ، ثنا عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ الْأَنْصَارِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ وَلَقَدْ خَلَقْتُ الْعَرْشَ عَلَى الْمَاءِ فَاضْطَرَبَ فَكَتَبْتُ عَلَيْهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولٌ اللَّهِ فَسَكَنَ 
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহ তা’আলা ঈসা (عليه السلام) এর প্রতি ওহী করলেন। হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর প্রতি ঈমান আন ও তোমার উম্মতদেরকে আদেশ দাও তারা যেন আমার নবীকে দেখা মাত্র ঈমান আনে। কেননা যদি মুহাম্মদ (ﷺ) কে না বানাইতাম তাহলে আদম (عليه السلام) কেও বানাইতাম না। আমি যদি মুহাম্মদ (ﷺ) কে না বানাইতাম তাহলে জান্নাত ও জাহান্নাম বানাইতাম না। আর অবশ্যই পানির উপরে আমার আরশ সৃষ্টি করেছিলাম ফলে ইহা নড়াচড়া করছিল, অত:পর ইহার উপর লিখে দিলাম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” ফলে আরশ থেমে গেল।” ৭৩৯৩৯,  ইমাম হাকেম: আল-মুস্তাদরাক, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮৩ পৃ:; ইমাম আবুশ শায়েখ ইস্পাহানী: তাবকাতুল মুহাদ্দেছীন, ৩য় খন্ড, ২৮৭ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: খাছায়েছুল কোবরা, ১ম খন্ড, ২৯ পৃ:; ইমাম আবু বকর ইবনে খিলাল তাঁর ‘আস সুন্নাহ’ গ্রন্থে, ১ম খন্ড, ২৬১ পৃ:, হাদিস নং ৩১৬; শিফাউছ ছিকাম; ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, ৪র্থ খন্ড, ৩০৭ পৃ:; ইমাম আসকালানী: লিছানুল মিযান, ৫ম খন্ড, ৩৪৩ পৃ:; আলবানী: সিলসিলায়ে আহাদিছুদ দ্বায়িফা, ১ম খন্ড, ৪৪৮ পৃ:

এই হাদিস উল্লেখ করে ইমাম হাকেম নিছাপুরী (র:) বলেন:
 هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ  -“এই হাদিসের সনদ ছহীহ্।”  ৭৪০৪০,  মুস্তাদরাকে হাকেম, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮৩ পৃ:;

ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) ও আল্লামা নূরুদ্দিন আলী ইবনে আহমদ ছামহুদী (র:) তদীয় কিতাবে হাদিসটি ছহীহ্ হওয়ার কথা এভাবে লিখেছেন:
وَأخرج الْحَاكِم وَصَححهُ -“হাকেম হাদিসখানা বের করেছেন ও ইহাকে ছহীহ্ বলে সমর্থন করেছেন।” ৭৪১৪১,  ইমাম ছিয়তী: খাছায়েছুল কোবরা, ১ম খন্ড, ২৯ পৃ:; আল্লামা ছামহুদী: অফাউল অফা, ৪র্থ জি: ২২৪ পৃ:;

এই হাদিসের সনদে سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ “ছাঈদ ইবনে আবী উরওয়া” নামক রাবী সম্পর্কে কেউ কেউ দ্বায়িফ ধারণা করলেও তাঁর সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র:) এর উস্তাদ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে কাত্তান (র:) বলেন: ইমাম শরফুদ্দিন নববী (র:) তার ব্যাপারে বলেন, 
واتفقوا على توثيقه. روى له البخارى ومسلم، -“তার বিশ্বস্ততার ব্যাপারে সকলেই একমত হয়েছে। ইমাম বুখারী ও মুসলীম তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।” ৭৪২৪২,  ইমাম নববী: তাহজিবুল আসমাউ ওয়াস ছিফাত, রাবী নং ২১৩;

 ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ৭৪৩৪৩,  ইমাম ইবনে হিব্বান: কিতাবুস ছিক্বাত, রাবী নং ৮১০৪;

وقال ابن معين والنسائي ثقة وقال أبو زرعة ثقة مأمون وقال ابن أبي خيثمة أثبت الناس
-“ইমাম ইবনে মাঈন ও ইমাম নাসাঈ তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইমাম আবু যুরাআ বলেছেন, সে বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য। ইমাম আবু হাইছামা বলেন, সে মানুষের মধ্যে প্রমাণিত ব্যক্তি।”  ৭৪৪৪৪,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ১১০;

وَقَالَ ابْنُ مَعِينٍ: أَثْبَتُهُمْ فِي قَتَادَةَ سَعِيدٌ، وَالدَّسْتُوَائِيُّ، وَشُعْبَةُ. -“ইমাম ইবনে মাঈন বলেন, সে কাতাদা, সাঈদ, দাসতুয়াঈ ও শুবা (র:) থেকে হাদিস বর্ণনায় প্রমাণিত।”  ৭৪৫৪৫,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৬৭;

وكان سفيان بن حبيب عالما بشعبة وسعيد. -“প্রখ্যাত ফকিহ্ আল্লামা সুফিয়ান ইবনে হাবীব আলিম হয়েছেন হযরত শুবা (র:) ও ছাঈদ ইবনে উরওয়া (র:) এর উছিলায়।”  ৭৪৬৪৬,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, ২য় খন্ড, ৪৬৮ পৃ:;

ইমাম ইবনে আদী (র:) বলেন: قال ابن عدي: سعيد من الثقات. 
-“ছাঈদ ইবনে উরওয়া বিশ্বস্তদের মধ্যে একজন।” ৭৪৭৪৭,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, ২য় খন্ড, ৪৬৮ পৃ:

وَقَال إسحاق بْن مَنْصُور عَنْ يحيى بْن مَعِين، وأبو زُرْعَة ، والنَّسَائي: ثقة.
-“ইসহাক্ব ইবনে মানছুর হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (র:), আবু যুরাআ (র:) ও ইমাম নাসাঈ (র:) থেকে বর্ণনা করেন, সে বিশ্বস্ত।” ৭৪৮৪৮,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২৩২৭;

وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: هُوَ ثِقَةٌ -“ইমাম আবু হাতিম বলেন, সে বিশ্বস্ত।” ৭৪৯৪৯,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৬৭;

وقال ابن سعد: كان ثقة. كثير الحديث -“ইমাম ইবনে সাদ বলেন, সে বিশ্বস্ত ও তা প্রচুর হাদিস।” ৭৫০৫০,  ইমাম মুগলতাঈ: উকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২০১৬;

 وقال العجلي: ثقة -“ইমাম ইজলী বলেন, সে বিশ্বস্ত।” ৭৫১৫১,  ইমাম মুগলতাঈ: উকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২০১৬;

ইমাম যাহাবী (র:) নিজেই অন্যত্র বলেন: سعيد بن أبي عرُوبَة ثِقَة 
-“সাঈদ ইবনে আবী উরওয়া বিশ্বস্ত।” ৭৫২৫২,  ইমাম যাহাবী: আল মুগনী ফিদ দুয়াফা, রাবী নং ২৪৩৩;

এছাড়া ‘আমর ইবনে আওছ আনছারী’ মাজহুল রাবী হলেও ইমাম হাকেম (র:)সহ অনেকেই তার উপর নির্ভর করে তার বর্ণিত হাদিস বর্ণনা করেছেন। সর্বোপরি এই হাদিস নির্ভরযোগ্য। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন। এমনকি হযরত আদম (عليه السلام) কে বানাইবার পূর্বেই আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন। আর মাটির তৈরী প্রথম মানুষ হল হযরত আদম (عليه السلام), আমাদের নবী এরও পূর্বে সৃষ্টি, তাই তিনি মাটির তৈরী নন, বরং আল্লাহর নূরের তৈরী। 
Top