গাউছিয়া আজিজিয়া নামায শিক্ষা
রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (রহ.)
প্রকাশনায়ঃ আন্জুমানে কাদেরীয়া চিশ্তীয়া আজিজিয়া বাংলাদেশ।
অনুবাদঃ এম. এম. মহিউদ্দীন
শিক্ষক: ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা
নির্বাহী সম্পাদক: মাসিক আল্-মুবীন।
সার্বিক তত্ত্বাবধান
আল্লামা শাহ্জাদা আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন
অধ্যক্ষ: ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা
টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
সহযোগিতায়
আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল অদুদ
উপাধ্যক্ষ: ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা
গ্রন্থ স্বত্ব: লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রকাশকাল: ডিসেম্বর- ২০১৫
আর্থিক সহযোগিতা
আনজুমানে কাদেরীয়া চিশ্তীয়া আজিজিয়া
চট্টগ্রাম মহানগর শাখা
হাদিয়া
১০০ (একশত) টাকা মাত্র
সূচিপত্র
নং বিষয়
১. লেখকের কথা
২. অনুবাদকের কথা
৩. ঈমান ও আক্বিদা
৪. ঈমানে মুজমাল
৫. ঈমানে মুফাস্সাল
৬. ছয় কালেমা
৭. কালেমায়ে তৈয়্যেবা
৮. কালেমায়ে শাহাদাত
৯. কালেমায়ে তামজিদ
১০. কালেমায়ে তাওহীদ
১১. কালেমায়ে ইস্তিগফার
১২. কালেমায়ে রদ্দে কুফর
১৩. গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল
১৪. গোসলের নিয়ম
১৫. ওযুর নিয়ম
১৬. গোসলের নিয়ত
১৭. অযুর নিয়্যত
১৮. অযুর দু‘আ
১৯. তায়াম্মুমের নিয়ত
২০. মসজিদে প্রবেশের আদব
২১. মসজিদে প্রবেশের সময় দু‘আ
২২. মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দু‘আ
২৩. আযান
২৪. আযানের জওয়াব
২৫. আযানের দু‘আ
২৬. নামায
২৭. জায়নামাযের দু‘আ
২৮. তাকবীরে তাহরিমা
২৯. ছানা
৩০. তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু)
৩১. দরূদ শরীফ (দরূদে ইব্রাহীমি)
৩২. দু‘আয়ে মাছুরা
৩৩. মুনাজাত
৩৪. তা‘আউয (আ‘ঊযু বিল্লাহ)
৩৫. তাসমিয়া (বিসমিল্লাহ)
৩৬. নামাযের জন্য কয়েকটি সূরা
৩৭. এক নজরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের রাকাত সমূহ
৩৮. নামাযের ফরয সমূহ
৩৯. নামাযের ওয়াজিব সমূহ
৪০. নামাযের সুন্নাত সমূহ
৪১. নামাযের মুস্তাহাব সমূহ
৪২. নামাযের মাকরূহ সমূহ
৪৩. নামায ভঙ্গের কারণ সমূহ
৪৪. নামাযরত অবস্থায় দৃষ্টি রাখার বর্ণনা
৪৫. নামাযের মধ্যে পুরুষ ও মহিলাদের করণীয়
৪৬. পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় ও নিয়ত
৪৭. ফজরের নামায
৪৮. যোহরের নামায
৪৯. আছরের নামায
৫০. মাগরিবের নামায
৫১. এশার নামায
৫২. বিতর নামায
৫৩. দু‘আ কুনুত
৫৪. জুমার নামায
৫৫. পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাসবীহ
৫৬. আয়াতুল কুরছি
৫৭. নতুন চাঁদ দেখার সময় দু‘আ
৫৮. তারাবীহর নামায
৫৯. তারাবীহ নামাযের নিয়ত
৬০. তারাবীহ নামাযের তাসবিহ্
৬১. তারাবীহ নামাযের দু‘আ
৬২. রোযার নিয়ত
৬৩. ইফতারের নিয়্যত
৬৪. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার আদব ও করণীয়
৬৫. উভয় ঈদের নামায আদায়ের নিয়ম
৬৬. ঈদুল ফিতর নামাযের নিয়ত
৬৭. ঈদুল আযহার নামাযের নিয়ত
৬৮. নফল নামাযের বর্ণনা
৬৯. তাহাজ্জুদ নামায
৭০. তাহাজ্জুদ নামাযের নিয়ত
৭১. এশরাকের নামায
৭২. এশরাক নামাযের নিয়ত
৭৩. দ্বোহা ও যাওয়ালের নামায
৭৪. দ্বোহার নামাযের নিয়ত
৭৫. যাওয়াল নামাযের নিয়ত
৭৬. নামাযে আওয়াবীন
৭৭. নামাযে আওয়াবীনের নিয়ত
৭৮. মুসাফিরের নামায
৭৯. মুসাফিরের কছর নামাযের নিয়ত
৮০. অসুস্থতার নামায
৮১. তাওবার নামায
৮২. তাওবার নামাযের নিয়ত
৮৩. সালাতুস্ তাসবীহর নামায
৮৪. সালাতুস্ তাসবীহ নামাযের নিয়ত
৮৫. কাযায়ে হাজাতের নামায
৮৬. কাযায়ে হাযাত নামাযের নিয়ত
৮৭. ইস্তিস্কার নামায
৮৮. নামাযে ইস্তিস্কার নিয়ত
৮৯. হিফযুল ঈমান নামায
৯০. সালাতুল ক্বলব
৯১. শবে মে’রাজের নামায
৯২. শবে বরাতের নামায
৯৩. শবে বরাতের নামাযের নিয়ত
৯৪. শবে ক্বদরের নামায
৯৫. শবে ক্বদরের নামাযের নিয়ত
৯৬. শবে ক্বদরে পড়ার দোয়া
৯৭. সাহু সিজদা
৯৮. জানাযার নামায
৯৯. কবর যিয়ারতের দু‘আ
১০০. জামাতে নামায আদায়ের ফযিলত
১০১. নামায আদায়ের নিয়ম
লেখকের কথা
نَحْمَدُهٗ وَنُصَلِّى وَنُسَلِّمُ عَلٰى رَسُوْلِه الْــكَرِيْم، أمّابَعد!
আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন মানবজাতিকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে নাজাত ও মুক্তির পথ সুগম করার জন্য যুগে যুগে হযরাত আন্বিয়া আলাইহিমুস্সালামকে পৃথিবীর বুকে পাঠিয়েছেন। আর তাঁরা আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী যথাযথভাবে সকলের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান এবং তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে মানুষ সঠিক পথের সন্ধান লাভ করে পরকালে নাজাতের পথ লাভে ধন্য হয়ে আসছে।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানব জাতি এবং জ্বীন জাতিকে আল্লাহ তা‘আলা ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেন। রাসূল (ﷺ)’র বাণী হে আমার উম্মতগণ! তোমরা সর্বদা নামাযের পাবন্দী থাকবে। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে ঈমানের পরে দ্বিতীয় স্থান হচ্ছে নামায। নামায বিশুদ্ধভাবে আদায় করতে হলে এর নিয়ম-কানুন জানা আবশ্যক।
আমার কিছু হিতাকাঙ্খি ও স্নেহ ভাজনরা আমাকে নামায সম্পর্কে একটি পুস্তিকা লিখার জন্য অনুরোধ জানালে আমি তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও অন্যান্য নফল নামায যাতে সহীহ শুদ্ধভাবে আদায় করতে পারে তা এই পুস্তিকায় সংক্ষিপ্তাকারে সহজ ভাবে লিপিবদ্ধ করেছি। অত্র পুস্তিকাটি “গাউছিয়া আজিজিয়া নামায শিক্ষা” নামে নামকরণ করা হয়েছে। আশাকরি সহজভাবে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে অত্র পুস্তিকাটি অনন্য ভূমিকা পালন করবে।
আমি অত্র পুস্তিকাটি হানাফী মাযহাব মোতাবেক রচনা করি। কেননা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান তথা পুরা হিন্দুস্থানসহ তৎকালিন আরব রাষ্ট্র বিশেষত মদিনা শরীফ ও আরব আমিরাত পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকার মুসলমানগণ হানাফী মাযহাবের অনুসারী।
আনঞ্জুমানে কাদেরীয়া চিশ্তীয়া আজিজিয়া চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সদস্যবৃন্দের আর্থিক সহযোগীতায় প্রকাশিত এবং বিভিন্নভাবে আরো যারা সহযোগিতা করেছেন ও সর্বোপরি সকল পাঠককে আল্লাহপাক উভয় জগতে কামিয়াবি নসিব করুন। আমিন।
গ্রন্থকার
মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী
অনুবাদকের কথা
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْن وَالصَّلوٰةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى سَيِّدِالْاَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْن وَعلٰى آلـهٖ وَصَحْبِـهٖ اَجْمَعِيْن ، اَمَّا بَعْد !
এশিয়ার অন্যতম আলেমেদ্বীন পেশোয়ায়ে আহলে সুন্নাত শাইখে তরিকত লেখক ও গবেষক বহু দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা আলহাজ্ব মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (মা.জি.আ.)’র লেখিত প্রায় শতাধিক কিতাব ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। পান্ডুলিপি হিসাবে অপ্রকাশিত রয়েছে আরো অনেক কিতাব। বিভিন্ন বিষয়ের উপর তাঁর লেখনি অব্যাহত রয়েছে। তাঁর লিখিত অন্যতম একটি পুস্তিকা হচ্ছে “গাউছিয়া আজিজিয়া নামায শিক্ষা”। অত্র পুস্তিকাটি হানাফী মাযহাব মোতাবেক লিখিত হয়েছে। এতে সহজ ও বিশুদ্ধভাবে নামায আদায়ের নিয়মাবলী ও নামায সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যা প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি পুস্তিকা। মূলত: এটি উর্দুতে রচনা করেছেন আমি অধম যথাসাধ্য মূলপুস্তিকার ভাবার্থ যথাযথভাবে বাংলায় রূপান্তরের চেষ্টা করি। তারপরও যদি কোনো ভুলভ্রান্তি সম্মানিত পাঠকের দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে প্রকাশনা সংস্থাকে অবহিত করলে পরবর্তি সংস্কারে সংশোধিতকারে প্রকাশিত হবে।
পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে লেখক মহোদয় হুজুর কেবলা এবং প্রকাশনার ক্ষেত্রে যারা সহযোগিতা করেছেন ও পাঠকবৃন্দের উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করছি।
অনুবাদ
এম. এম. মহিউদ্দীন
শিক্ষক: ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা
নির্বাহী সম্পাদক: মাসিক আল্-মুবীন।
ঈমান ও আক্বিদা
মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরাম ঈমান’র পারিভাষিক সংজ্ঞা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
اَ لْاِيْمَانُ فِى الشَّرْعِ هُوَ التَّصْدِيْقُ بِمَا جَآءَ بِـه الرَّسُوْلُ مِنْ عِنْدِ اللهِ وَالْاِقْرَارُ بِـه .
অর্থ: যে পথ নির্দেশিকা ও হুকুম-আহ্কাম যা আল্লাহর পক্ষ হতে রাসূল (ﷺ) নিয়ে এসেছেন তা অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করার নাম ঈমান।
ঈমানে মুজমাল
اٰمَنْتُ بِاللهِ كَمَا هُوَ بِاَسْمَآئِـه وَصِفَاتِه وَقَبِلْتُ جَمِيْعَ اَحْكَامِـه وَاَرْكَانِه اِقْرَارُ بِاللِّسَانِ وَتَصْدِيْقُ بِالْقَلْبِ .
উচ্চারণ: আমান্তু বিল্লাহি কা-মা হুয়া বি-আছমা-য়িহী ওয়া ছিফাতিহী ওয়া ক্বাবিল্তু জামী‘আ আহ্কামিহী ওয়া আরকানিহী ইক্রারু বিল্লিসা-নী ওয়া তাস্দীকু বি-ল্ক্বলবি।
অর্থ: আমি ঈমান এনেছি আল্লাহ্ তা‘আলার উপর, তিনি যেমন আছেন। তাঁর নাম সমূহ এবং সিফত তথা গুণাবলী সমূহের উপর এবং আমি তাঁর সকল হুকুম ও নির্দেশাবলী গ্রহণ করলাম। আর তা হচ্ছে মুখে স্বীকারোক্তি এবং অন্তরে বিশ্বাস করা।
ঈমানে মুফাস্সাল
اَمَنْتُ بِاللهِ وَمَلٰئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِـه وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالٰى وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ .
উচ্চারণ: আমান্তু বিল্লাহি ওয়া মালা-য়িকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুছুলিহী ওয়াল্ ইয়াওমিল্ আখিরে ওয়াল্ ক্বাদ্রে খাইরিহী ওয়া র্শারীহি মিনাল্লাহি তা‘আলা ওয়াল্ বা‘ছে বা‘দাল্ মাওতি।
অর্থ: আমি ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর, কিয়ামত দিবসের উপর এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর- যা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে নির্ধারিত এবং মৃত্যুর পর পূনরুত্থানের উপর।
ছয় কালেমা
(এখানে ‘কালেমায়ে ইস্তিগ্ফার’ সহ ছয় কালেমা উল্লেখ করা হয়েছে)
১. কালেমায়ে তৈয়্যেবা
لَا اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ.
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নাই, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল।
২. কালেমায়ে শাহাদাত
أَشْهَدُ اَنْ لَا اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُولُـهٗ.
উচ্চারণ: আশহাদু আন্-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
৩. কালেমায়ে তামজিদ
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ ، وَاللهُ اَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ الْعَلِـىِّ الْعَظِيْمِ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।
অর্থ: মহান আল্লাহ্ পবিত্র এবং সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য প্রযোজ্য, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। আল্লাহ্ মহান এবং গুনাহ থেকে পরিত্রানের (বাঁচা) শক্তি এবং ভাল ও সঠিক কাজ করার সামর্থ একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি আলীশান এবং উচ্চ মর্যাদাবান।
৪. কালেমায়ে তাওহীদ
لَا اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهٗ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِىْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدًا ذُوْالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ، بِيَدِه الْخَيْرِ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ.
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহয়ি ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া হাইউন্ লা-ইয়ামুতু আবাদান্ আবাদা যুল্ যালালি ওয়াল্ ইক্রামি, বিয়াদিহিল খাইরি ওয়া হুয়া আলা কুল্লে শাইয়্যিন ক্বাদির।
অর্থ: আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক। তাঁর কোনো শরীক নেই, সবকিছু তাঁরই রাজত্ব এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যু করেন এবং তিনি চিরঞ্জীবী ও মৃত্যুঞ্জয়ী। তিনি উচ্চ মর্যাদাবান ও সম্মানিত। কল্যাণ ও উত্তমতা তাঁর হাতে এবং তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
৫. কালেমায়ে ইস্তিগফার:
اَسْتَغْفِرُاللهَ رَبِّـىْ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ اَذْنَبْتَهٗ حَمَدًا اَوْ خَطَاءً سِرًّا اَوْ عَلَانِيَّةً وَاَتُوْبُ اِلَيْهِ مِنَ الذَّنْبِ الَّذِىْ اَعْلَمُ وَمِنَ الذَّنْبِ الَّذِىْ لَا اَعْلَمُ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُيْوُبِ وَسَتَّارُ الْعُيُوْبِ وَغَفَّارُ الذُّنُوْبِ وَلَا حَوْلَ وَلَاقُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ الْعَلِـىِّ الْعَظِيْمِ .
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি যান্বিন্ আয্নাব্তাহূ হাম্দান্ আও খাতা-আন্ র্সীরান আও আ‘লানীয়াতান্ ওয়া আতুবু ইলাইহি মিনায্যান্বি আল্লাযি আ‘লামু ওয়া মিনায্যান্বিল্ ল্লাযী লা- আ‘লামু ইন্নাকা আন্তা আ‘ল্লামুল্ গুয়ুবি ওয়া সাত্তারুল্ উয়ুবি ওয়া গাফ্ফারুয্ যুনুবি ওয়া লা- হাওলা ওয়া-লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল্ আ‘লিয়ীল্ আ‘যীমি।
অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি আমার পালনকর্তা। প্রত্যেক গুনাহ হতে, যা আমি করেছি- ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত, ভুলবশত, প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে। আমি তাওবা করছি, তাঁর দরবারে আমার জানা-অজানা সকল গুনাহ হতে, নি:সন্দেহে আপনি গায়েব তথা অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কে অবগত এবং দোষ-ত্রুটি গোপনকারী এবং গুনাহ ক্ষমাকারী। গুনাহ হতে পরিত্রাণের ক্ষমতা এবং ভাল কাজ করার শক্তি একমাত্র আল্লাহরই পক্ষ হতে, যিনি আলীশান ও উচ্চ মর্যদাবান।
৬. কালেমায়ে রদ্দে কুফর
اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُبِكَ مِنْ اَنْ اُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَاَنَا اَعْلَمُ بِه وَاَسْتَغْفِرُكَ لِمَالَا اَعْلَمُ بِهِ تُبْتُ عَنْهُ وَتَبَرَّاْتُ مِنَ الْكُفْرِ وَالشِّرْكِ وَالْكِذْبِ وَالْغِيْبَةِ وَالْبِدْعَةِ وَالنَّمِيْمَةِ وَالْفَوَاحِشِ وَالْبُهْتَانِ والْمَعَاصِى كُلِّهَا وَأَسْلَمْتُ وَاٰمَنْتُ وَاَقُوْلُ لَا اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আন উশরিকা বিকা শাইয়া ওয়া আনা আ‘লামু বিহি ওয়াস্তাগ্ফিরুকা লিমা লা আ‘লামু বিহি তুবতু আনহু ওয়া তার্বারায়াতু মিনাল কুফরি ওয়াশশিরকি ওয়াল কিয্বি ওয়াল গিবাতি ওয়াল বিদআতি ওয়ান নামীমাতি ওয়াল ফাওয়াহিশি ওয়াল বোহতানি ওয়াল মায়াছি কুল্লিহা ওয়া আস্লামতু ওয়া আমানতু ওয়া আকুলু লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্।
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, কোনো বস্তু তোমার শরীক বানানো হতে এবং আমার নিকট যাতে এটির জ্ঞান হয়। আর আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি তোমার নিকট ঐ সকল গুনাহ হতে যার জ্ঞান আমার নিকট নেই। আর কুফর, র্শিক, মিথ্যা বলা, গীবত (পরনিন্দা), গোমরাহী, বিদ্আত, চুগলী তথা পরশ্রীকাতরতা, লজ্জাহীন কর্ম হতে, অপরাধ এবং বাকী সকল নাফরমানী হতে তোমার নিকট তাওবা করছি। আর আমি আত্মসমর্পণ করেছি ও ঈমান এনেছি এবং একথা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মা’বুদ নেই, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল।
গোসলের নিয়ম
যদি প্রয়োজন হয় তবে প্রথমে ইস্তিঞ্জা করে নিবে। অতঃপর শরীরে যে অপবিত্র লেগেছে তা ধুয়ে নিবে। তারপর সমস্ত শরীর ঘষা-মাজা করে তিনবার পানি প্রবাহিত করবে, যদি ঘষা-মাজা করা না হয় তাহলে হয়তো বা শরীরের কোন অংশ কিংবা চুল পানিতে ভিজবে না। স্মরণ রাখতে হবে ওযুর মধ্যে নাকের ভিতর পানি দেয়া এবং কুলি করা সুন্নাত। কিন্তু গোসলের মধ্যে তা ফরয, যদি গোসল ফরয হয়।
ওযুর নিয়ম
যদি প্রস্রাবের হাজত হয় তাহলে প্রথমে প্রস্রাব করে নিবে। তারপর কিবলার দিকে মুখ করে বসে বিছমিল্লাহ পড়া, তারপর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করা, মিসওয়াক দ্বারা দাঁত পরিস্কার করা। যদি মিস্ওয়াক না থাকে তাহলে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা দাঁত ঘষে নেয়া, তারপর ৩ বার কুলি করা, কুলি করার পর নাকে ৩ বার পানি দিয়ে বাম হাত দ্বারা নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করা, ৩ বার পানি দিয়ে মুখ ধোয়া, মুখ ধোয়ার সীমা হচ্ছে কপালের উপরিভাগের চুলের উৎপত্তির স্থান হতে নীচের থুতনী এবং এক কানের লতি হতে অপর কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখমন্ডল ধোয়া। যাতে করে চুল পরিমাণ অংশ যেন শুকনা না থাকে। যদি চুল পরিমাণ অংশ শুকনা থাকে তাহলে অযু হবে না। অতঃপর উভয় হাত কনু পর্যন্ত ৩ বার ধোয়া। প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাত। এরপর নতুন পানি নিয়ে মাথার চারিভাগের একভাগ ভিজা হাতে মসেহ করা এবং কান ও ঘাড় (গরদান) মাসেহ করা। সর্বশেষ উভয় পায়ের গিরা পর্যন্ত প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা ধোয়া। ওযু করার সময় কথা-বার্তা না বলা আবশ্যক। বরং প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় কালেমা শাহাদাত পাঠ করা অবস্থায় অযু সমাপ্ত করা।
গোসলের নিয়ত
نَوَيْتُ الْغُسْلَ لِرَفْعِ الْجَنَابَةِ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতুল গুস্লা লি-রাফ‘ইল জানা-বাতি।
অযুর নিয়্যত
نَوَيْتُ أَنْ اَتَوَضَّأُ لِرَفْعِ الْحَدَثِ وَاسْتِبَاحَةً لِلّصَّلَوةِ وَتَقَرُّبًا اِلَى اللهِ تَعَالٰى.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আতাওয্যাউ লি-রাফয়িল হাদাছি ওয়াস্তিবা হাতান্ লিস্সালাতি ওয়া তার্কারুবান ইলাল্লাহি তা‘আলা।
অযুর দু‘আ
بِسْمِ اللهِ الْعَلِـىِّ الْعَظِيمِ وَالْحَمْدُ للهِ عَلَى دِينِ الْإِسْلَامِ اَ لْاِسْلاَمُ حَقٌّ وَالْكُفْرُ بَاطِلٌ اَ لْاِسْلاَمُ نُوْرٌ وَالْكُفْرُ ظُلْمَةٌ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম ওয়াল হামদু লিল্লাহি আলা দ্বীনিল ইসলামে, আল্-ইসলামু হাক্কুন ওয়াল্ কুফ্রু বাতিলুন্ আল্-ইসলামু নুরুন ওয়াল্ কুফ্রু যুল্মাতুন।
তায়াম্মুমের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اَتَيَمَّـمَ لِرَفْعِ الْحَـدَثِ وَاسْتِبَاحَةً للِّـصَّلوٰةِ وَتَقَرُّبًا اِلٰى اللهِ تَعَالٰى
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ আতা-ইয়াম্মামা লি-রাফ্’ইল্ হাদাছে ওয়াস্তিবা-হাতান্ লিস্সালাতি ওয়া তার্ক্বারুবান্ ইলাল্লাহি তা‘আলা।
মসজিদে প্রবেশের আদব
মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যদি জুতার মধ্যে ময়লা থাকে তা পরিষ্কার করে নিতে হবে। মসজিদে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ পাঠ করবে। যাওয়ার সময় উপস্থিত সকলকে اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আস্-সালামু আলাইকুম) বলে সালাম দেবে। যদি মসজিদ খালি হয় কোন মুসল্লি না থাকে সে ক্ষেত্রে নিজের নফসকে সালাম বলবে অথবা اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ (আস্-সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্) বলে প্রবেশ করবে এবং মসজিদে প্রবেশর দু‘আ পড়বে।
অতঃপর কিবলার দিকে মুখ করে বসে যাবে। দুনিয়াবি কথা-বার্তা না বলে তাসবীহ, তাহমীদ ও ইস্তিগফার এবং দরূদ ও সালাম পাঠ করবে। খেলা-ধূলায় লিপ্ত হবে না এবং কোন প্রকার হৈ চৈ করবে না, হারানো বস্তু তালাশ করবে না। আর কোন বস্তু ক্রয়-বিক্রয় করবে না। মসজিদ হচ্ছে ইবাদাত বন্দেগীর জন্য পবিত্রতম স্থান। নামায ও ইবাদত শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে বের হবে। বের হবার সময় বের হবার দু‘আটি পাঠ করবে।
মসজিদে প্রবেশের সময় দু‘আ
اَللّٰهُمَّ ا فْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ. وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰى رَسُوْلِكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .ِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাফ্তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা। ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিকা মুহাম্মাদিন্ (ﷺ)।
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমার জন্য তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও। রহমত, বরকত ও শান্তি বর্ষণ করুন তোমার রাসূল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)ার উপর।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দু‘আ
اللّٰهُمَّ اِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ وَ رَحْمَتِكَ بَجَاهِ نَبِيِّكَ الْمُصْطَفٰى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা ওয়া রাহমাতিকা বা-যাহে নাবিয়ীকাল্ মুস্তফা- (ﷺ)।
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট তোমার দয়া, রহমত ও বরকতের প্রার্থনা করছি, তোমার নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)র উসিলা নিয়ে।
আযান
মোয়ায্যিন পাক পবিত্র হয়ে অযু করে ক্বিবলামুখী হয়ে আযান দিবে। আযানের বাক্য সমূহ নিম্নে দেয়া হলো।
اَللهُ اَكْـبَـرُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার (৪ বার)।
অর্থ: আল্লাহ মহান।
اَشْهَدُ اَنْ لَآ اِلٰـهَ اِلَّا اَللهُ
উচ্চারণ: আশহাদু আন্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু (২ বার)।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই।
اَشْـهَـدُ اَنَّ مُـحَمَّـدًا رَّسُـوْلُ اللهِ
উচ্চারণ: আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (২বার)।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল।
حَـىَّ عَـلٰـى الصَّـلٰـوةِ
উচ্চারণ: হাইয়্যা আলাস্ সালাহ্ (২ বার)। (ডান দিকে মুখ করে)
অর্থ: নামাযের জন্য আসুন।
حَــىَّ عَـلٰى الْـفَـلَاحِ
উচ্চারণ: হাইয়্যা আলাল ফালা-হ্ (২ বার)। (বাম দিকে মুখ করে)
অর্থ: কল্যাণের দিকে আসুন।
ফজরের আযানে অতিরিক্ত বলতে হবে-
الـصَّـلٰوةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّـوْمِ
উচ্চারণ: আস্ সালাতু খাইরুম মিনান্ নাওম (২ বার)।
অর্থ: ঘুম হতে নামায উত্তম।
اَللهُ اَكْـبَـرُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার (২ বার)।
অর্থ: আল্লাহ মহান।
لَآ اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (১ বার)।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
ইকামতের সময় حَــىَّ عَـلَى الْـفَـلَاحِ এরপর নিচের বাক্য দু’টি অতিরিক্ত বলতে হয়-
قَدْ قَامَتِ الصَّلوَةُ
উচ্চারণ: ক্বাদ্মাতিস্ সালাহ্
অর্থ: নিশ্চয়ই নামাযের জামাত দাঁড়ানো হয়েছে।
قَدْ قَامَتِ الصَّلوَةُ
উচ্চারণ: ক্বাদ্মাতিস্ সালাহ্
অর্থ: নিশ্চয়ই নামাযের জামাত দাঁড়ানো হয়েছে।
আযানের জওয়াব নিম্নরূপ
🌱মেয়ায্যিন যখন اَللهُ اَكْبَـرُ (আল্লাহু আকবার) বলবে,
জবাবে শ্রবণকারীরাও মনে মনে اَللهُ اَكْبَـرُ (আল্লাহু আকবার) বলবে।
🌱মোয়ায্যিন যখন اَشْهَدُ اَنْ لَآ اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ (আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ) বলবে,
জবাবে শ্রবণকারীরাও মনে মনে اَشْهَدُ اَنْ لَآ اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ (আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ) বলবে।
🌱মোয়ায্যিন যখন اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدَ ارَّسُوْلُ اللهِ বলবে,
জ্ঞাতব্য যে, আজানের প্রথম শাহাদাত-
(আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ) শ্রবণ পূর্বক صلَّى اللهُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ الله (সাল্লাল্লাহু আলাইকা এয়া রাসুলাল্লাহ্) এবং দ্বিতীয় শাহাদাত শ্রবণ পূর্বক-
قُرَّةُ عَيْنِىْ بِكَ يَا رَسُوْلَ الله
(ক্বুররাতু আইনী বিকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্।
অর্থ: হে আল্লাহর রসূল (ﷺ)! আপনি আমার চোখের প্রশান্তি) বলা মুস্তাহাব।
অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বয়ের নখ চুম্বন করত: নিজ চোখের উপর লাগাবে এবং বলবে اَللّٰهُمَّ مَتِّعْـنِىْ بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ (আল্লাহুম্মা মাত্তি‘নী বিছ্ছাময়ি ওয়াল্ বার্ছা। অর্থ: হে আল্লাহ্! শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন)। উক্ত আমলকারীকে হুযুর (ﷺ) তাঁর পিছে পিছে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। অর্থাৎ হুযুর (ﷺ) উক্ত আমলকারীকে সাথে করেই জান্নাতে যাবেন।
(ফতোয়ায়ে শামী, ১ম খণ্ড, ২৭০ পৃষ্ঠা, কান্যুল উব্বাদ, ফতোয়ায়ে ছুফীয়া ও তাফসীরে রূহুল বায়ান ইত্যাদি)
(এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আমার লিখিত “রাসূল (ﷺ)’র নাম মোবারক শ্রবণে বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা চুম্বন বিধান” বইটি দেখুন)।
🌱মোয়ায্যিন যখন حَـىَّ عَلَى الصَّلٰوةِ (হাইয়্যা আলাস সালাহ) বলবে।
জবাবে শ্রবণকারীরা মনে মনে لَا حَوْلَ وَلَا قُـوَّةَ اِلَّا بِاللهِ اَلَعَلِـىِّ الْعَظِيْم (লা-হাওলা ওয়া লা-কুয়্যাতা ইল্লা-বিল্লাহ্ হিল্ আলিয়্যীল আ’জিম) বলবে।
🌱মোয়ায্যিন যখন حَـىَّ عَلَى الْفَلَاحِ (হাইয়্যা আলাল ফালাহ) বলবে,
জবাবে শ্রবণকারীরা মনে মনে مَا شَآءَ اللهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَآءُ لَمْ يَكُنْ (মা শা-আল্লাহু কানা ওয়ামা লাম্ ইয়াশাউ লাম্ইয়াকুন্) বলবে।
🌱ফযরের সময় মোয়ায্যিন যখন اَلصَّلٰوةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ বলবে, জবাবে শ্রবণকারীরা মনে মনে صَدَقْتَ وِبِالْحَقِّ نَطَقْتَ وَبَرَرْتَ(ছদাক্তা ওয়াবিল্ হাক্কী নাতাক্তা ওয়া বার্রাতা) বলবে।
🌱মোয়ায্যিন যখন اَللهُ اَكْبَـرُ বলবে।
জবাবে শ্রবণকারীরা মনে মনে اَللهُ اَكْـبَـرُ বলবে।
মোয়ায্যিন যখন لَآ اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ বলবে।
জবাবে শ্রবণকারীরাও মনে لَآ اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ বলবেন।
আযানের দু‘আ
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰـذِه الـدَّعْـوَةِ التَّـامَّـةِ وَالـصَّلوٰةِ الْقَائِـمَةِ . اٰتِ سَيِّدِنَا مُحَمَّـدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَالدَّرَجَـةَ الرَّفِيْعَةَ وَابْـعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِىْ وَعَـدْتَـهُ وَارْزُقْنَا شَفَاعَتَه يَوْمَ الْقِيَامَةِ . اِنَّكَ لَا تُـخْلِفُ الْـمِيْعَادِ .
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রাব্বা হা-যিহিদ্ দা’ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি, ওয়াছ্ছ্লা-তিল ক্বা-য়িমাতি আ-তি সায়্যিদিনা মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাতা ওয়াদ্দারাজাতার রাফী’আতা, ওয়াব্‘আছহু মাক্বা-মাম্ মাহমুদানিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ্, ওয়ার যুক্বনা সাফা-আতা-হু ইয়াউমাল কিয়ামাহ্, ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী‘আদ্।
অর্থ: হে আল্লাহ ! তুমিই এ পরিপূর্ণ আহবান ও শাশ্বত (প্রতিষ্ঠিত) নামাযের প্রতিপালক। হযরত সৈয়্যদুনা মুহাম্মদ (ﷺ)কে দান করুন সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান ও সুমহান মর্যাদা আর তাঁকে অধিষ্ঠিত করুন প্রশংসিত স্থান, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দিয়েছ। আর আমাদেরকে কিয়ামতের দিন তাঁর শাফায়াত নসিব করুন। নিশ্চয়ই তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করো না।
নামায
প্রথমে নামাযি অযু করে কিবলামুখী হয়ে জায়নামাযে দাঁড়াবে। এরপর জায়নামাযের দু‘আ পাঠ করবে।
জায়নামাযের দু‘আ
اِنِّـى وَجَّهْتُ وَجْهِـىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَمَا اَنَا مِنَ الْـمُشْرِكِيْـنَ .
উচ্চারণ: ইন্নি ওয়ায্যাহাতু ওয়ায্হীয়া লিল্লাযি ফাতারাস্ সামাওয়াতে ওয়াল্ আরদ্বা হানিফান্ ওয়ামা আ-না মীনাল্ মুশ্রিকীনা।
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আকাশ সমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই।
(অতঃপর নামাযের নিয়্যত করবে)
তাকবীরে তাহরিমা
اَللهُ اَكْـبَـرُ (আল্লাহু আকবর) আল্লাহ্ মহান।
নিয়ত শেষে اللهُ اَكْـبَـرُ (আল্লাহু আকবর) বলে নামায শুরু করবে। এরই নাম তাকবিরে তাহরিমা। তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় পুরুষ দু’কান পর্যন্ত এবং মহিলা দু’কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উঠাবে। পুরুষ নাভীর নিচে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরবে। মহিলা বুকের উপর বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে। তারপর ছানা পাঠ করবে।
ছানা
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ، وَلَآ اِلٰـهَ غَيْرُكَ.
উচ্চারণ: সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহাম্দীকা, ওয়াতাবা রাকাস্মুকা ওয়া তা’আ-লা যাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ: হে আল্লাহ্! তোমার সত্তা পবিত্র এবং সৌন্দর্য্য, প্রশংসিত ও বরকতময়। তোমার নাম ও মর্যাদা উচ্চ। আর তুমি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই।
ছানা পাঠ করার পর আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা এবং যে কোনো একটি সূরা বা আয়াত পাঠ করবে। তারপর আল্লাহু আকবর বলে রুকুতে যাবে। নিচের তাসবিহটি তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার পড়বে।
রুকূর তাসবীহ্:-
سُبْـحَانَ رَبِّـىَ الْـعَظِـيْـمِ (৩ বার)
উচ্চারণ: সুব্হা-না রাব্বিয়াল্ আ’যীম্।
অর্থ: আমার মহান প্রতিপালক পবিত্র।
রুকুর তাসবিহ্ পাঠ শেষ হলে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময় তাসমি‘ পড়বে-
তাসমী سَمِـعَ اللهُ لِـمَنْ حَـمِـدَه .
উচ্চারণ: সামী আল্লা-হু লীমান্ হামিদা।
অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাকের প্রশংসা করে তিনি তা শ্রবণ করেন। রুকু হতে সোজা দাঁড়ানো অবস্থায় নিচের তাহমিদ পড়বে।
তাসমীর পরে তাহমীদ رَبَّـنَا لَكَ الْـحَمْـدُ .
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল্ হাম্দ।
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, সকল প্রশংসা তোমারই জন্যে।
এরপর আল্লাহু আকবর বলে সিজদায় যাবে। প্রথমে মাটিতে দু-হাঁটু, পরে দু-হাত, এরপর নাক ও কপাল রাখবে। সিজদায় নিচের তাসবিহ পড়বে।
সিজদার তাসবীহ
سُبْحَانَ رَبِّـىَ الْاَعْـلٰـى . (৩ বার)
উচ্চারণ: সুব্হা-না রাব্বিয়াল আ‘লা।
অর্থ: আমার সুমহান মর্যাদাবান প্রতিপালক পবিত্র।
এরপর আল্লাহু আকবর বলে সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে। তারপর আল্লাহু আকবর বলে আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পড়বে। অতঃপর আল্লাহু আকবর বলে সোজাসুজি দাঁড়িয়ে যাবে। প্রথম রাকাতের ন্যায় দ্বিতীয় রাকাতেও সূরা ফাতিহা এবং অন্য কোনো একটি সূরা পাঠ করবে। আর রুকু ও সিজদা শেষ করে বসবে এবং তাশাহুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু পড়বে।
তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু)
اَلتَّحِيَّـةُ لِلّٰهِ وَالصَّلٰوَاةُ وَالطَّيِّبَاتُ ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه، اَلسَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَآ إلٰـهَ إِلَّا اللهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه .
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাতু আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্ নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আস্সালামু আলাইনা ওয়া ‘আলা ইবাদিল্লাহিছ্ ছালেহীন। আশ্হাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্ হাদু আন্না মুহাম্মাদান্ আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
অর্থ: মৌখিক, শারীরিক এবং আর্থিক (হালাল মাল খরচ জনিত) ইবাদত একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য। হে প্রিয় নবী (ﷺ)! আপনার উপর শান্তি এবং আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত ও সব রকমের বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপর এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নেক ও সৎ বান্দাদের (মানুষ, জ্বীন ও ফেরেশ্তাগণের) উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সংশয়হীন খালিছ অন্তরে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ (ইবাদতের যোগ্য) নেই এবং ইহাও সংশয়হীন খালেছ অন্তরে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘আলার বান্দা ও তাঁর রসূল।
তাশাহ্হুদ পড়া শেষ হলে নিচের দরূদ শরীফ ও দু‘আ পড়বে-
দরূদ শরীফ (দরূদে ইব্রাহীমি)
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى سَيِّدِنَا إبْرَاهِيمَ وَعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا إبْرَاهِيمَ إنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيدٌ ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى سَيِّدِنَا اِبْرَاهِيمَ وَعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا إبْرَاهِيْمَ إنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা সায়্যিদি-না মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা আলে সায়্যিদি-না মুহাম্মাদিন্ কামা সাল্লাইতা আলা সায়্যিদি-না ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আলে সায়্যিদি-না ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক্ আলা সায়্যিদি-না মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা আলে সায়্যিদি-না মুহাম্মাদিন্ কামা বারাক্তা ‘আলা সায়্যিদি-না ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আলে সায়্যিদি-না ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।
অর্থ: হে আল্লাহ্! হযরত সায়্যিদিনা মুহাম্মদ (ﷺ) ও তাঁহার আওলাদের (বংশধরগণের) উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ সায়্যিদিনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর আওলাদের উপর রহমত নাযিল করেছেন। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সুমহান। হে আল্লাহ্! সায়্যিদিনা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) ও তাঁর আওলাদের উপর বরকত নাযিল করুন, যেরূপ সায়্যিদিনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর আওলাদের উপর বরকত নাযিল করেছেন। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সুমহান।
দরূদ শরীফ পড়ার পর নীচের দু‘আটি অথবা দু‘আয়ে মাছুরা পড়বে-
رَبِّ اجْعَلْنِـىْ مُقِيْمَ الصَّلوٰةِ وَ مِنْ ذُرِّيَـتِىْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَا . رَبَّنَا اغْفِرْلِىْ وَلِوَالِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابِ،
উচ্চারণ: রাব্বিয্ আ’লনী মুকিমাস্ সালাতি ওয়া মিন যুররিয়াতী রাব্বানা ওয়া তাকাব্বাল্ দু‘আ। রাব্বানা গ্ফিরলী ওয়ালীওয়া লিদাইয়া ওয়ালিল্ মু’মীনিনা ইয়াউমা ইয়াকুমুল্ হিসাব।
এরপর اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ (আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ) বলে প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে। এভাবে দু-রাকাত নামায শেষ হবে।
তিন বা চার রাকাত নামায আদায়ের সময় দ্বিতীয় রাকাত শেষে তাশাহ্হুদ পড়ে দাঁড়াবে এবং পূর্বের ন্যায় বাকি নামায আদায় করে বসবে। অতঃপর তাশাহ্হুদ, দরূদ শরীফ ও দু‘আ পড়ে সালাম ফিরাবে। যদি চার রাকাত সুন্নাত নামায হয় তবে শেষ দু-রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে। কিন্তু ফরয নামায হলে প্রথম দু’রাকাতের পর অন্য কোনো রাকাতে সূরা মিলাতে হবে না। নামায শেষ হলে মুনাজাত করবে।
মুনাজাত
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَام وَاِلَيْكَ يَرْجِـعُ السَّلَام حَيِّنَا رَبَّنَا بِاالسَّلَامْ وَاَدْ خِلْنَا دَارَالسَّلَام تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ يَا ذَالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আন্তাস্ সালামু ওয়া মিন্কাস্ সালাম ওয়া ইলায়কা ইর্য়াযী’য়ীস্ সালাম হায়য়েনা রাব্বা-না বিস্ সালাম ওয়া আদ্খীল-না দা-রা-স্ সালাম তা-বারাক্তা রাব্বা-না ওয়াতা’আলায়তা ইয়া যাল্ যালা-লী ওয়াল্ ইক্রামী।
তা‘আউয (আ‘ঊযু বিল্লাহ)
اَعُـوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّـيْطَانِ الـرَّجِـيْـمِ .
উচ্চারণ: আউযু বিল্লাহি মিনাশ্-শায়তানির রাযিম।
অর্থ: আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
তাসমিয়া (বিসমিল্লাহ)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْـمٰنِ الـرَّحِيْـمِ .
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
অর্থ: পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
নামাযের জন্য কয়েকটি সূরা নিম্নে দেয়া হলো
(সূরা ফাতেহার সাথে যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে পারবেন)
. সূরা ফাতিহা .
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
الْحَمْدُلِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ
উচ্চারণঃ আল্ হাম্দু লিল্লাহি রাব্বিল্ আ-লামিন্। আর-রাহমানির রাহীম। মালিকি ইয়াওমিদ্দীন। ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন্। ইহ্দিনাছ্ ছিরাত্বাল্ মুস্তাক্বীম। ছিরাতাল্ লাযীনা আন্ আমতা আলাইহিম্। গাইরিল্ মাগ্দুবি আলাইহিম্ ওয়া লাদ্ দোয়াল্লীন্।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তা‘আলারই জন্য, যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রভু। যিনি পরম করুণাময় অসীম দয়ালু। যিনি শেষ বিচারের দিনের মালিক। (হে আল্লাহ্) আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সর্বদা সরল সঠিক পথে পরিচালিত কর। তাঁদের পথে, যাদের উপর তুমি নিয়ামত প্রদান করেছ। তাদের পথে নহে, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট।
সূরা ফীল
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ وَّاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُولٍ
উচ্চারণ: আলাম্ তারা কাইফা ফা‘আলা রাব্বুকা বি আছ্হাবিল্ ফীল। আলাম্ ইয়াজ্‘আল্ কাইদা-হুম্ ফি তাদ্লীলিও ওয়া আরছালা আলাইহিম্ তোয়াইরান্ আবাবীল্। তারমীহিম্ বি হিযারাতীম্ মিন্ সিজ্জিল্। ফাজা‘আলাহুম্ কা-আছ্ফিম্ মা’কুল।
অর্থ: (হে আল্লাহর হাবীব (ﷺ)! আপনি কি দেখেন নি আপনার প্রভু হাতীর সঙ্গীদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি কি তাদের ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেন নি? এবং তিনি তাদের উপর আবাবীল পাখী পাঠিয়ে ছিলেন। সেগুলো তাদের প্রতি সিজ্জিল নামক পাথর নিক্ষেপ করেছিল; অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত ঘাসের মত করে দিলেন।
সূরা কুরাইশ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
لِإِيْلَافِ قُرَيْشٍ إِيْلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ فَلْيَعْبُدُوْا رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ اَ لَّذِي اَطْعَمَهُمْ مِنْ جُوْعٍ وَّاٰمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٍ
উচ্চারণ: লি-ঈলা-ফি ক্বোরাইশিন্ ঈ-লা-ফিহিম্ রিহলাতাশ্ শিতায়ি ওয়াচ্ছাইফ্। ফাল্ইয়া‘বুদু রাব্বা হাজাল্ বাইতিল্লাজী আত্‘আমাহুম্ মিন্জুয়িওঁ ওয়া আ-মানাহুম্ মিন্ খাওফ্।
অর্থ: কুরাইশদের অনুরোগের জন্য। তাদের অনুরাগ শীত ও গ্রীষ্মকালে বিদেশ ভ্রমণের জন্য। সুতরাং তাদের উচিত এ পবিত্র কা’বা ঘরের প্রতিপালকের ইবাদত করা, যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দান করেছেন এবং তাদেরকে ভয়-ভীতির কবল থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন।
সূরা মা‘উন
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ فَذَلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّيْنَ الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ الَّذِيْنَ هُمْ يُرَاءُوْنَ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ
উচ্চারণ: আরাআইতাল্লাযী ইয়ুকায্যিবু বিদ্দীন্। ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদু‘উল ইয়াতীমা ওয়ালা-ইয়াহুদ্দু ‘আলা ত্বা‘আমিল্ মিছ্কীন। ফাওয়াইলুল্ লিল্ মুছাল্লীনাল্ লাযীনা হুম্ আন্ ছালাতিহিম্ ছা-হূন। আল্লাযীনা হুম্ ইউরা-উনা ওয়া ইয়াম্নাউনাল্ মা‘ঊন।
অর্থ: (হে হাবীব (ﷺ)! আপনি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখেছেন যে কিয়ামতকে তথা শেষ বিচারের দিনকে মিথ্যা বলে জানে? অতঃপর সে ঐ ব্যক্তি যে এতিমকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয় এবং সে মিস্কীনদের খাদ্য দান করতে উৎসাহ দেয় না। অতঃপর এমন নামাযীদের জন্য ধ্বংস, যারা নিজেদেরই নামায সম্পর্কে গাফিল থাকে, যারা শুধু লোকজনকে দেখায় এবং ব্যবহার্য জিনিসপত্র ধার দেয় না।
সূরা কাউছার
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
اِنَّا اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
উচ্চারণ: ইন্না- আ‘ত্বাইনা কাল্কাওছার। ফাছাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ান্হার। ইন্না শা-নিআকা হুয়াল্ আব্তার।
অর্থ: নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউছার তথা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক প্রাচুর্য্য দান করেছি। সুতরাং আপনি আপনার প্রভুর জন্য নামায পড়তে থাকুন এবং কোরবানী দিন। নিশ্চয় যারা আপনার শত্রু তারাই নির্বংশ থাকবে।
সূরা কাফীরূন
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَا أَعْبُدُ وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَا أَعْبُدُ لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
উচ্চারণ: ক্বুল্ ইয়া-আইয়্যুহাল্ কাফিরূন। লা আ‘বুদু মা-তা‘বুদুন। ওয়া-লা-আন্তুম্ ‘আ-বিদুনা মা আ‘বুদ্। ওয়া-লা-আনা আ-বিদুম্ মা-আবাদ্তুম্। ওয়া-লা-আন্তুম্ ‘আ-বিদুনা মা-আ‘বুদ্। লাকুম দীনুকুম্ ওয়া লিয়া দীন্।
অর্থ: (হে রাসূল (ﷺ)! আপনি বলে দিন, হে কাফিরগণ! আমি তার ইবাদত করি না তোমরা যার পূজা করতেছ। আর তোমরাও তার ইবাদত কর না আমি যার ইবাদত করতেছি। আর আমি কখনও তার ইবাদত করব না তোমরা যার পূজা করতেছ। আর তোমরা তাঁর ইবাদত করবার জন্য নহে, আমি যার ইবাদত করতেছি। তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম আর আমার জন্য আমার ধর্ম।
সূরা নছর
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
إِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِيْنِ اللهِ أَفْوَاجًا فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
উচ্চারণ: ইযা জা-আ নাছ্রুল্লাহি ওয়াল্ ফাত্হু। ওয়া রাআইতান্ নাছা ইয়াদ্ খুলূনা ফী দীনিল্লাহি আফ্ওয়াজা। ফাছাব্বিহ্ বিহাম্দি রাব্বিকা ওয়াছ্তার্গ্ফিহু ইন্নাহু কা-না তাওবা-বা।
অর্থ: আল্লাহ্ তা‘আলার সাহায্য আর বিজয় যখন এসে পড়ে এবং আপনি দেখেন যে, লোকজন দলে দলে আল্লাহর দ্বীন তথা ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করতেছে, তখন আপনি আপনার প্রভুর প্রশংসার সাথে পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকুন এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি বহু তওবা কবুলকারী।
সূরা লাহাব
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
تَبَّتْ يَدَا أَبِيْ لَهَبٍ وَتَبَّ مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُه وَمَا كَسَبَ سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ وَّامْرَأَتُه حَمَّالَةَ الْحَطَبِ فِي جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَسَدٍ
উচ্চারণ: তাব্বাত্ ইয়াদা আবী লাহাবিওঁ ওয়াতাব্বা। মা আগ্না ‘আন্হু মালুহু ওয়ামা কাছাব। ছাইয়াছ্লা নারান্ যা-তা লাহাবিওঁ ওয়াম্রাআতুহু হাম্মা লাতাল্ হাত্বাব্। ফী জীদিহা হাব্লুম্মিম্মাছাদ্।
অর্থ: আবু লাহাবের হাত দু’টি ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে। তার ধন-সম্পদ এবং যা কিছু সে অর্জন করেছে ঐগুলো তার কোন কাজেই আসল না। সে তো শীঘ্রই লেলিহান আগুনের মধ্যে প্রবেশ করবে এবং তার স্ত্রী কাষ্ঠ বহণকারিণীও। তার গলার মধ্যে খেজুর গাছের ছালের রশি রয়েছে।
সূরা ইখলাস
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ اللهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَه كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ: ক্বুল্ হুওয়াল্লাহু আহাদ্। আল্লাহুছ্ ছামাদ্। লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়া লাম্ ইউলাদ্। ওয়া লাম্ ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান্ আহাদ্।
অর্থ: (হে রাসূল (ﷺ)! আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ্ কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তিনি কারো থেকে জন্ম নেননি। আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
সূরা ফালাক
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
উচ্চারণ: ক্বুল্ ‘আউযু বিরাব্বিল্ ফালাক্ব। মিন র্শারি মা খালাক্ব। ওয়া মিন্ র্শারি গা-ছিক্বিন্ ইযা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন র্শারিন্ নাফ্ফা-ছা-তি ফিল্ ‘উক্বাদ। ওয়া মিন্ র্শারি হা-ছিদিন্ ইযা হাছাদ্।
অর্থ: হে রাসূল (ﷺ)! আপনি বলুন, আমি প্রভাতের প্রভুর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে এবং অন্ধকার রাতের অপকার হতে, যখন এর অন্ধকার বিস্তৃতি লাভ করে এবং গিরা সমূহে ফুঁৎকারকারিনী নারীদের অনিষ্ট হতে এবং হিংসুক লোকের অনিষ্ট হতে, যখন সে হিংসায় মেতে উঠে।
সূরা নাস
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ مَلِكِ النَّاسِ إِلَهِ النَّاسِ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
উচ্চারণ: ক্বুল্ ‘আউযু বি-রাব্বিন্ না-ছ্। মালিকিন্ না-ছ্। ইলাহিন্ না-ছ্। মিন্ র্শারিল ওয়াছ্ওয়াছিল্ খান্নাছ্। আল্লাযী ইউওয়াছ্ওবিছু ফী ছুদুরিন্ নাছ্, মিনাল্ জিন্নাতি ওয়ান্নাছ্।
অর্থ: হে রাসূল (ﷺ)! আপনি বলুন, আমি মানব জাতির প্রভুর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, যিনি সমগ্র মানবের মালিক, মানব গোষ্ঠীর মা‘বুদ, আত্মগোপনকারী শয়তানের কুমন্ত্রণার অনিষ্ট হতে, যে মানুষের অন্তর সমূহে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে, জ্বীন ও মানবের মধ্য হতে।
এক নজরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের রাকাত সমূহ
ওয়াক্ত ফরয ওয়াজিব সুন্নাতে মোয়াক্কাদা সুন্নাতে গায়রে মোয়াক্কাদা নফল মোট রাকাত
ফযরঃ
২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ + ২ রাকাত ফরজ = ৪ রাকাত
যোহরঃ
৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ + ৪ ফরজ +২ সুন্নাত = ৬ রাকাত + ২ রাকাত নফল = ১২ রাকাত
আছরঃ
৪ রাকাত সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ + ৪ রাকাত ফরজ = ৮ রাকাত
মাগরিবঃ
৩ রাকাত ফরজ + ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ + ২ রাকাত নফল = ৭ রাকাত
এশাঃ
৪ রাকাত + ২ রাকাত + ৪ রাকাত + ২ রাকাত = ১২ রাকাত + ৩ রাকাত + ২ রাকাত = সর্বমোটঃ ১৭ রাকাত ।
জুমার নামায ১৪ রাকাত। ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্, ২ রাকাত ফরয, ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, ২ রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ, ২ রাকাত নফল। তাছাড়াও ২ রাকাত তাহিয়্যাতুল অযু এবং ২ রাকাত দুখূলুল মসজিদ নামায রয়েছে।
নামাযের ফরয সমূহ
নামাযের বাইরে এবং ভেতরে ১৩টি ফরয। এ ১৩টি ফরযকে আরকান ও আহ্কাম বলে। আহ্কাম ৭টি, আর আরকান ৬টি। এ ১৩টি ফরযের যে কোন একটি ছুটে গেলে বা বাদ পড়লে নামায হবে না। নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।
নামাযের আহকাম ৭টি
(নামাজের বাইরের ফরয)
(১) শরীর পাক হওয়া।
(২) কাপড় পাক হওয়া।
(৩) সতর ঢাকা।
(৪) নামাযের জায়গা পাক হওয়া।
(৫) কেবলামুখী হওয়া।
(৬) ওয়াক্ত মত নামায পড়া।
(৭) নামাযের নিয়ত করা।
নামাযের আরকান ৬টি
(১) দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা। দাঁড়িয়ে পড়তে অক্ষম হলে বসে নামায পড়া, বসতে অক্ষম হলে শুয়ে নামায পড়া। বিনা কারণে ফরয নামায বসে পড়লে আদায় হবে না। তবে নফল নামায পড়া যাবে।
(২) তাকবীরে তাহরিমা বলা।
(৩) ক্বেরাত পড়া।
(৪) রুকু করা।
(৫) সিজদা করা।
(৬) শেষ বৈঠকে বসা।
নামাযের ওয়াজিব সমূহ
(১) নিয়ম কানুনের প্রতি লক্ষ্য রেখে নামায পড়া।
(২) রুকু-সিজ্দায় কিছুক্ষণ দেরী করা।
(৩) রুকু ও সেজ্দা যথাযথ ভাবে আদায় করা।
(৪) দুই রাকাতের পর বসা। অর্থাৎ নামায ৪ রাকাত, ৩ রাকাত অথবা ৮ রাকাত হলে ২ রাকাতের পর বসা।
(৫) আত্তাহিয়্যাতু পড়া।
(৬) সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করা।
(৭) বিতরের নামাযে দোয়া কুনুত পড়া।
(৮) দুই ঈদের প্রত্যেক নামাযে অতিরিক্ত ৬ (ছয়) তক্বীর বলা।
(৯) মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকাতে, ফজরের দুই রাকাত ফরয নামাযে, জুমার নামাযে, দুই ঈদের নামায ও তারাবীহের নামাযে ইমামকে উচ্চস্বরে ক্বেরাত পাঠ করা এবং যোহর ও আছরের নামাযে চুপে চুপে ক্বেরাত পাঠ করা।
(১০) সূরা ফাতিহা পড়া।
(১১) সূরা ফাতিহার সাথে যে কোন একটি সূরা অথবা একটি বড় বা তিনটি ছোট আয়াত পড়া।
(১২) ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা বা ক্বেরাত পাঠ করা।
উক্ত ওয়াজিব সমূহের মধ্যে যে কোন একটি বাদ পড়লে সিজ্দায়ে ছহু বা ভুল সংশোধনী সিজ্দা দিতে হয়।
নামাযের সুন্নাত সমূহ
(১) আল্লাহু আক্বর তথা তাক্বীরে তাহরীমা বলার সময় পুরুষ কানের লতি পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোক কাঁধ বরাবর দুই হস্ত উত্তোলন করা এবং হস্ত উত্তোলন করার সময় আঙ্গুলগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় খোলা রাখা।
(২) ইমাম বড় আওয়াজে তাক্বীর বলা এবং তাক্বীরে তাহরীমার পর ফরয, সুন্নত, বিতর, নফল, তারাবীহ্ ইত্যাদি যাবতীয় নামাযে ইমাম, মোক্তাদি এবং একা নামাযী প্রত্যেকেরই ছানা পড়া।
(৩) তারপর চুপে চুপে আউযুবিল্লাহ্ ও বিছ্মিল্লাহ্ সম্পূর্ণ পড়া।
(৪) ইমাম, মোক্তাদি ও একা নামাযী সূরা ফাতিহার পর ‘আমীন’ নি:শব্দে বলা।
(৫) জমাতে ইমাম ক্বেরাত উচ্চস্বরে পড়ার সময় وَلَا الضَّآلِّـيْـنَ বলা শেষ করলে মোক্তাদিগণ প্রত্যেকে নিঃশব্দে ‘আমীন’ বলা।
(৬) পুরুষ ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রেখে নাভীর নীচে বাম হাতের তালু দ্বারা ধরা। স্ত্রীলোক বুকের উপর ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রেখে বাম হাতের তালু দ্বারা সীনা চেপে ধরা।
(৭) রুকুতে যাবার সময় তাক্বীর বলা এবং রুকুতে দুই হাতের তালু দ্বারা আঙ্গুলগুলি নীচের দিকে রেখে দুই হাঁটুর মালা চেপে ধরা।
(৮) রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّـىَ الْعَظِيْمِ ৩ বার বলা।
(৯) রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় একা নামাযী سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ও رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ উভয়ই বলা এবং ইমাম سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলার সময় মোক্তাদীগণ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলা।
(১০) সিজ্দায় যাবার সময় তাক্বীর বলে যাওয়া এবং সিজ্দায় হস্তদ্বয় ও হাঁটুদ্বয় জমিনে রাখা।
(১১) সিজ্দায় سُبْحَانَ رَبِّـىَ الْاَعْلٰى ৩ বার বলা।
(১২) সিজ্দা হতে তাক্বীর বলে উঠে পুরুষ বাম পা বিছিয়ে ডান পা খাড়া করে বাম পায়ের উপর বসা এবং স্ত্রীলোক নীতম্বের উপর বসে পদদ্বয় ডান দিকে বাহির করে দেয়া।
(১৩) দুই সিজ্দার মধ্যবর্তী সময়ে সোজা হয়ে বসা এবং রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
(১৪) শেষ বৈঠকে দরূদ ও দোয়া মাছুরা পাঠ করা।
(১৫) তারপর ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরে নামায শেষ করা।
নামাযের মুস্তাহাব সমূহ
(১) নামাযের মধ্যে যথাসাধ্য হাঁচি বন্ধ করার চেষ্টা করা ও হাই আসলে মুখে হাত রাখা।
(২) জমাতে নামায পড়ার সময় حَـىَّ عَلٰى الصَّلٰوةِ বলার সময় নামাযের জন্য দাঁড়ান এবং قَدْ قَامَتِ الصَّلٰوةُ বলার সময় ইমামকে নামায আরম্ভ করা।
(৩) রুকুতে মাথা ও পিঠ সোজা রাখা এবং সিজ্দায় যাবার সময় প্রথমে দুই হাঁটু তারপর দুই হাত, পরে নাক অতঃপর কপাল মাটিতে রাখা। উঠবার সময় প্রথমে কপাল, তারপর নাক উত্তোলন করা।
(৪) সিজ্দা হতে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হলে দুই হাতের তালু দ্বারা দুই হাঁটুর মালাতে ভর দিয়া উঠা।
(৫) নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে চারি আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখা।
(৬) বৈঠকে দুই জানুর উপর দুই হাত রাখা।
(৭) বেজোড় সংখ্যা তছ্বীহ্ পাঠ করা।
(৮) সিজ্দায় পেট হতে বাজু পৃথক রাখা ও পেটকে রান হতে পৃথক রাখা এবং রানকে নলা হতে পৃথক রাখা। কিন্তু স্ত্রীলোকের এই সমস্তের বিপরীত করা অর্থাৎ প্রত্যেক অঙ্গ মিলিয়ে রাখা।
(৯) দাঁড়ান অবস্থায় সিজ্দার জায়গায় দৃষ্টি রাখা।
(১০) রুকুতে পায়ের পিঠের উপর দৃষ্টি রাখা।
(১১) বসা অবস্থায় দুই রানের মধ্যবর্তী স্থানে দৃষ্টি রাখা।
(১২) নামাযের নিয়ত বাঁধবার সময় চাদরের মধ্য হতে হাত বের করা। মহিলাদের ক্ষেত্রে হাত বের করতে হবে না।
নামাযের মাকরূহ সমূহ
(১) মাথার উভয় পার্শ্বে অথবা কাঁধের উভয় দিকে কাপড় বা চাদর ইত্যাদি ঝুলিয়ে রাখা।
(২) কপালের ধূলা-বালি নামায পড়াকালিন পরিস্কার করা।
(৩) সম্মুখের কাতারে জায়গা থাকা স্বত্বেও পিছনে একা দাঁড়ান।
(৪) সম্মুখে, ডানে, বামে অথবা মাথার উপরে জীব জন্তুর ছবি থাকা।
(৫) সূরা পড়া শেষ না হতেই রুকুতে যাওয়া।
(৬) আকাশের দিকে দৃষ্টি করা।
(৭) আঙ্গুল ফুটান।
(৮) ডানে-বামে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা অথবা টেরা চোখে দেখা।
(৯) সিজ্দার সময় পুরুষের উভয় হাত মাটিতে বিছাইয়া দেওয়া।
(১০) টুপি ব্যতীত খালি মাথায় নামায পড়া।
(১১) জামার আস্তিন গুটিয়ে নামায পড়া।
(১২) পায়খানা-প্রস্রাব অথবা বায়ুর বেগ লয়ে নামায পড়া।
(১৩) বিনা কারণে কাশি দেওয়া।
(১৪) কাপড় দ্বারা নাক, মুখ ঢেকে রাখা।
(১৫) জীব-জন্তু অথবা মানুষের ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া।
(১৬) জামার বোতাম খোলা রাখা।
(১৭) নামায পড়ার জন্য মসজিদে স্থান নির্দিষ্ট করে রাখা।
(১৮) নামায পড়ার সময় লুঙ্গি অথবা পায়জামা উপরের দিকে টান দেওয়া।
(১৯) (পুরুষের ক্ষেত্রে) উরু (রান) পেটের সঙ্গে মিলিয়ে সিজ্দা করা।
(২০) শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এদিক সেদিক নড়া-চড়া করা।
(২১) সিজ্দায় যাবার সময় বিনা কারণে হাঁটুর পূর্বে হাত মাটিতে রাখা।
(২২) আজানের পর প্রথম জমাতে ইমাম মেহরাব ছেড়ে অন্য জায়গায় নামায পড়া।
(২৩) জমাতে নামায পড়ার সময় বাম দিকে লোক বেশী হওয়া।
(২৪) নামায পড়ার সময় থুথু ফেলা।
নামায ভঙ্গের কারণ সমূহ
নিম্নলিখিত কারণে পুরুষ ও স্ত্রীলোক উভয়েরই নামায ভঙ্গ হয়।
(১) নামাযের ১৩টি ফরযের যে কোন একটি বাদ পড়লে।
(২) নামাযের মধ্যে কথা বললে।
(৩) সালাম দিলে অথবা সালামের উত্তর দিলে।
(৪) হাঁচির জওয়াবে يَرْحَمُكَ اللهُ বললে।
(৫) উচ্চহাস্য করিলে।
(৬) কষ্ট বা বিপদের কারণে উচ্চস্বরে কাঁদলে।
(৭) উহ্ আহ্ শব্দ করলে।
(৮) কিছু খেলে বা পান করলে।
(৯) মোক্তাদি ইমামের অগ্রবর্তী হলে।
(১০) আমলে কাছীর করলে অর্থাৎ নামাযে এমন কাজ করা যা দেখলে অন্যে মনে করবে যে, সে নামাযে নহে এবং উভয় হাতে কাজ করাও আমলে কাছীরের মধ্যে শামিল।
(১১) স্ত্রীলোক নামায পড়া অবস্থায় সন্তান দুধ পান করলে।
(১২) ইমাম নিজের মোক্তাদি ছাড়া অন্যের লোকমা গ্রহণ করলে।
(১৩) নামাযের ক্বেরাতে এমন ভুল হলে যা দ্বারা অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়।
(১৪) সুসংবাদে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ ও দুঃসংবাদে اِنَّا لِلّٰهِ বললে।
নামাযরত অবস্থায় দৃষ্টি রাখার বর্ণনা
নামাযি ব্যক্তি কিয়াম তথা দাঁড়ানো অবস্থায় তার দৃষ্টি রাখবে সিজদার স্থানে। রুকু অবস্থায় পায়ের পাঞ্জা তথা পায়ের পিঠের উপর। আর সিজদার মধ্যে নাকের মাথার দিকে, তাশাহুদের বৈঠকের সময় নিজ ঝোলী তথা দুই রানের মধ্যবর্তী স্থানে দৃষ্টি রাখবে। প্রথম সালামের সময় ডান কাঁধের দিকে আর দ্বিতীয় সালামের সময় বাম কাঁধের দিকে দৃষ্টি রাখবে।
নামাযের মধ্যে পুরুষ ও মহিলাদের করণীয়
মেয়েদের নামাযের সঙ্গে পুরুষের নামাযের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এ সম্পর্কে নীচে বর্ণনা করা হলো-
তাকবীরে তাহরীমা
পুরুষ: হাত চাদরের ভেতরে থাকলে বের করে নিতে হবে। প্রথম তাকবীর উচ্চারণের সময় পুরুষেরা দুই হাত কান বরাবর তুলে নাভির নীচে হাত বাঁধবে। নামায বিশেষ জোরে বা চুপে চুপে তাকবীর উচ্চারণ করতে পারে। অর্থাৎ যে নামাযে চুপে চুপে তাকবীর বলতে হয় তাতে চুপে চুপে তাকবীর বলবে। আর যে নামাযে উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে হয় তাতে উচ্চস্বরে তাকবীর বলবে।
মহিলা: প্রথম তাকবীর উচ্চারণের সময় মেয়েরা দুই হাত কাঁধ বরাবর তুলবে। কাপড়ের ভিতর থেকে হাত বের করবে না। তাকবীরে তাহরীমার পর বাম হাত বুকের উপর রেখে তার উপর ডান হাত আলতো করে রেখে নামায শুরু করবে দু‘আ ও সূরা ইত্যাদি পুরুষের মতই পড়বে। কিন্তু কোন কিছুই শব্দ করে পড়তে পারবে না।
পোশাক
পুরুষ: যাতে সতর ঢাকা থাকে এবং শালীনতা বজায় থাকে এরকম পরিচ্ছন্ন পোশাকে পুরুষেরা নামায পড়বে।
মহিলা: মেয়েদের সমস্ত শরীরই সতর মুখমন্ডল এবং উভয় হাত ও পায়ের পাতা ব্যতীত সমস্ত শরীর এমনকি মাথার চুলও নামায পড়ার সময় ঢাকা থাকতে হবে। শাড়ী দিয়ে যদি সমস্ত শরীর ঢাকা না যায় তবে চাদর দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। গলা, হাত ও চুলসহ সমস্ত শরীরই ঢেকে রাখতে হবে।
ক্বেরাত
পুরুষ: পুরুষের নামায বিশেষ উচ্চস্বরে বা নিম্নস্বরে সূরা-ক্বেরাত পড়তে পারবে।
মহিলা: মহিলারা নামাযে কোনো অবস্থাতেই শব্দ করে সূরা, ক্বেরাত পড়তে পারবে না। নামাযে উঠা-বসার সময় তাদের আল্লাহু আকবরও নিম্নস্বরে পড়তে হবে। উচ্চস্বরে পড়তে পারবে না।
ক্বিয়াম
পুরুষ: ক্বিয়ামের সময় পুরুষেরা দুই পা কমপক্ষে চার আঙ্গুল, বেশীপক্ষে বার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রেখে দাঁড়াবে। অথবা শারীরিক গঠন অনুযায়ী উভয় পা ফাঁক করে দাঁড়াবে।
মহিলা: মহিলারা পা ফাঁক রেখে দাঁড়াতে পারবে না। দুই পায়ের পাতা মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে। অথবা শারীরিক গঠন অনুযায়ী উভয় পা ফাঁক করে দাঁড়াবে। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সকলেই সব ওয়াক্তের ফরয নামায দাঁড়িয়ে পড়তে হবে।
রুকু
পুরুষ: রুকুর সময় পুরুষেরা হাত, পা ফাঁক রেখে দুই হাত দিয়ে হাঁটু চেপে ধরে রুকু করবে। মাথা, পিঠ ও নিতম্ব সমান্তরাল রাখতে হবে।
মহিলা: মহিলারা রুকুর সময় দুই হাত শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে ঝুঁকে পড়ে হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে হাঁটু স্পর্শ করে রুকু করতে হবে। রুকুতে পুরুষদের মত তাদেরও তাসবিহ পড়তে হবে। রুকুতে পুরুষদের মত অত মাথা ঝুকতে হবে না।
সিজদা
পুরুষ: সিজদার সময় পুরুষেরা সোজাসুজি সিজদায় যাবে এবং সিজদায় সব অঙ্গ পরস্পর থেকে আলাদা রাখবে। শুধু পা দুটো মিলিত থাকবে। হাতের কব্জির উপরের অংশও মাটি থেকে উপরে উঠিয়ে রাখবে।
মহিলা: মহিলারা শরীরের সব অঙ্গ একসাথে মিলিয়ে রেখেই সিজদায় যাবে এবং সিজদা অবস্থাতেও সব অঙ্গ একত্রে মিলিয়ে হাত কনুই পর্যন্ত মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে সিজদা করবে।
বৈঠক
পুরুষ: পুরুষ বসার সময় ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে আঙ্গুলগুলো ভাঁজ করে কেবলামুখী রাখতে হবে।
মহিলা: মহিলারা বসার সময় দুই পা ডান দিকে বের করে দিয়ে নিতম্বরের উপর বসতে হবে। সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতে হবে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় ও নিয়ত
ফজরের নামায
ফজরের নামায সোবহে সাদিক হতে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত পড়তে পারা যায়। পূর্বাকাশের নীচে শেষ রাত্রিতে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত যে সাদা অংশ দেখা যায়, তাকে সোবহে সাদিক বলে। ফজরের নামায ৪ রাকাত। ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং ২ রাকাত ফরয।
ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ الْفَجْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্য়াতাই ছালাতিল্ ফাজ্রে ছুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারিফাতে আল্লাহু আক্বর।
ফজরের সুন্নত নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়া যাবে।
ফজরের দুই রাকাত ফরয নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ الْفَجْرِ فَرْضُ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিল্ ফাজ্রে ফারদোল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে ক্বিরাত একটু লম্বা পড়া এবং দ্বিতীয় রাকাতে প্রথম রাকাত হতে একটু ছোট পড়া উত্তম বা মোস্তাহাব। যদি কোন সময় ফজরের নামায জমাতে পড়ার দরুন দুই রাকাত সুন্নত নামায পড়তে পারা না যায়, তবে উহা সূর্য্যােদয়ের কিছুক্ষণ পরে পড়তে হবে।
যোহরের নামায
যোহরের নামাযের সময় সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পর থেকে আরম্ভ করে প্রত্যেক বস্তুর মূল ছায়া ব্যতীত এর দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত। যোহরের নামায ১২ রাকাত। ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, ৪ রাকাত ফরয, ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, ২ রাকাত নফল।
যোহরের ৪ রাকাত সুন্নাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ الظُّهْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু-আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাক্য়াতে সালাতিয্ যোহরে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
এই ৪ রাকাত সুন্নাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সুরা পড়তে পারা যায়।
যোহরের ৪ রাকাত ফরয নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ الظُّهْرِ فَرْضُ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু-আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাক্য়াতে সালাতিয্ যোহরে র্ফাদোল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
এই ৪ রাকাত ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা পড়তে পারা যায় এবং শেষের দুই রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়তে হয়।
যোহরের ২ রাকাত সুন্নাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ الْظُّهْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিল্ যোহরে ছুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারিফাতে আল্লাহু আক্বর।
এই ২ রাকাত সুন্নাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা পড়তে পারা যায়।
যোহরের ২ রাকাত নফল নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ النَّفْلِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিল্ নাফলে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারিফাতে আল্লাহু আক্বর।
এ নফল নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে কোনো সূরা পড়া যাবে।
আছরের নামায
আছরের নামাযের সময় হচ্ছে বস্তুর মূল ছায়া ব্যতীত দ্বিগুণ হওয়ার পর হতে সূর্য্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যায়। তবে সূর্য্যাস্তের আনুমানিক ২০ মিনিট পূর্ব হতে মাকরূহ সময় আরম্ভ হয়। আছরের নামায ৮ রাকাত। ৪ রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা, ৪ রাকাত ফরয।
আছরের ৪ রাকাত সুন্নাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ الْعَصْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু-আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাক্য়াতে সালাতিল্ আছরে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
এ ৪ রাকাত সুন্নাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর যে কোনো সূরা পড়া যাবে।
আছরের ৪ রাকাত ফরয নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ الْعَصْرِ فَرْضُ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু-আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাক্য়াতে সালাতিল্ আছরে ফারদোল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
এই ৪ রাকাত ফরয নামাযের প্রথম ২ রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা পড়তে পারা যায় এবং শেষের ২ রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়তে হয়।
মাগরিবের নামায
মাগরিবের নামাযের সময় হচ্ছে সূর্য্যাস্তের পর হতে আরম্ভ হয়ে যতক্ষণ পশ্চিমাকাশে লালবর্ণ থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত। মাগরিবের নামায ৭ রাকাত। ৩ রাকাত ফরয, ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ও ২ রাকাত নফল।
মাগরিবের ৩ রাকাত ফরয নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى ثَلٰثَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ الْمَغْرِبِ فَرْضُ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু-আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা সালাছা রাক্য়াতে সালাতিল্ মাগরিব ফারদাল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
এই ৩ রাকাত ফরয নামাযের প্রথম ২ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়তে পারা যায় এবং শেষের রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়তে হয়।
মাগরিবের ২ রাকাত সুন্নত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ الْمَغْرِبِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিল্ মাগরিবে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
এই দুই রাকাত সুন্নাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা পড়তে পারা যায়।
২ রাকাত নফল নামায-এর নিয়ত ও নিয়ম যোহরের নফল নামাযের অনুরূপ।
এশার নামায
এশার নামাযের সময় হচ্ছে সূর্য্যাস্তের পর পশ্চিমাকাশে সাদাবর্ণ শেষ হওয়ার পর থেকে আরম্ভ করে সোবহে সাদিক পর্যন্ত। তবে উত্তম সময় হচ্ছে মধ্য রাত পর্যন্ত। এশার নামায ১৭ রাকাত। ৪ রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা, ৪ রাকাত ফরয, ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, ২ রাকাত নফল, ৩ রাকাত বিতর ও ২ রাকাত নফল।
এশার ৪ রাকাত সুন্নাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ الْعِشَاءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু-আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাক্য়াতে সালাতিল্ এশায়ি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
এই ৪ রাকাত সুন্নাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা পড়তে পারা যায়।
এশারের ৪ রাকাত ফরয নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ الْعِشَاءِ فَرْضُ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু-আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাক্য়াতে সালাতিল্ এশায়ি ফারদোল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
এই ৪ রাকাত ফরয নামাযের প্রথম ২ রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা পড়া যাবে। শেষের ২ রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়তে হবে।
এশার ২ রাকাত সুন্নাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكَعَتَىْ صَلٰوةِ الْعِشَاءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিল্ এশায়ি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
এই ২ রাকাত সুন্নত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা পড়তে পারা যায়।
২ রাকাত নফল নামায-এর নিয়ত ও নিয়ম যোহরের নফল নামাযের অনুরূপ।
বিতর নামায
বিতর নামায তিন রাকাত যা আদায় করা ওয়াজিব। প্রত্যেক তিন রাকাতের মধ্যে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে। ৩য় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও ক্বিরাত পড়ার পর উভয় হাত তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় কান পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকব্র বলে নাভির নিচে উভয় হাত বাঁধবে। এরপর চুপে চুপে দু‘আয়ে কুনুত পাঠ করবে। দু‘আ কুনুত পাঠ শেষে রুকু-সিজদা ও তাশাহ্হুদ, দুরূদ ও দু‘আ পাঠ শেষ করে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে। বিতর নামায শুধুমাত্র রমযান শরীফের তারাবির নামাযের পর জামাতে আদায় করবে।
বিতর নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى ثَلٰثَ رَكْعَاتِ صَلٰوةِ الْوِتْرِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা ছালাছা রাক্য়াতে সালাতিল বিতরে ওয়াজিবুল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
দু‘আ কুনুত
اَللّٰهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ ، وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اَللّٰهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي، وَنَسْجُدُ وَ اِلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ، وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা ওয়া নাস্তাগ্ফিরুকা ওয়া নু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছ্নি আলাইকাল্ খাইরা ওয়া নাশ্কুরুকা ওয়া-লা নাক্ফুরুকা ওয়া নাখ্লাউ ওয়া নাত্রুকু মাইঁয়্যাফ্জুরুকা আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া লাকা নুছাল্লী ওয়া নাছ্জুদু ওয়া ইলাইকা নাছ্‘য়া ওয়া নাহ্ফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখ্শা আজাবাকা ইন্না আজাবাকা বিল্ কুফ্ফারি মুলহিক্।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমরা তোমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, তোমারই নিকট ক্ষমা চাচ্ছি, তোমার প্রতি ঈমান রাখছি, তোমারই উপর ভরসা করছি এবং তোমার উত্তম প্রশংসা করছি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তোমার কুফরি করছিনা। যারা তোমার অবাধ্য হয়েছে তাদের থেকে দূরে থাকছি এবং তাদের ত্যাগ করছি। হে আল্লাহ্, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করছি। তোমার উদ্দেশ্যেই নামায আদায় করছি এবং তোমাকেই সিজদা করছি। আমরা তোমার পানে ধাবিত হচ্ছি। তোমার জন্যই আমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টা। আমরা তোমার অনুগ্রহপ্রার্থী এবং তোমার শাস্তির ব্যাপারে ভীত-সন্ত্রস্ত। নিশ্চয়ই তোমার শাস্তি কাফিরদের জন্য অবধারিত।
জুমার নামায
জুমার নামায যোহরের সময় আদায় করা হয়। প্রত্যেক আকেল তথা জ্ঞানবান, বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) মুসলমানের উপর জুমার নামায ফরয। তবে মহিলা, গোলাম, রোগাক্রান্তদের উপর ফরয নয়। এরপরেও যদি তারা পড়ে তাহলে আদায় হয়ে যাবে। জুমার দিন গোসল করা সুন্নাত এবং খোশবু তথা সুগন্ধি লাগানো, পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা মুস্তাহাব। যে ব্যক্তি যত আগে জামে মসজিদে জুমার নামায আদায়ের জন্য আসবে সে ব্যক্তি তত বেশী সাওয়াব অর্জন করবে। রাসূলে করিম (ﷺ) এরশাদ ফরমায়েছেন যে, ফিরিশতা জুমার দিন মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে এবং সবার আগে যে ব্যক্তি প্রথমে মসজিদে আসে তার নাম লিখে নেয়, এভাবে একের পর এক যারা মসজিদে আসে তাদের নাম ক্রমানুযায়ী লিখে নেন।
হাদিস শরীফে এসেছে সৈয়্যদুল মুরসালীন (ﷺ) এরশাদ ফরমায়েছেন- যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম মসজিদে আসবে সে এমন পরিমাণ সাওয়াব পাবে, যেভাবে আল্লাহর রাস্তায় উট কোবরবানী করলে সাওয়াব পাওয়া যায়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম জুমার মসজিদে আসবে সে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় উট কোরবানী করার পরিমাণ সাওয়াব পাবে। এরপর যে আসবে সে গরু কোরবানী করার পরিমাণ সাওয়াব পাবে। তারপর মুরগী কোরবানী করার পরিমাণ, এরপর আল্লাহর রাস্তায় ডিম দান করার পরিমাণ সাওয়াব পাবে। আর যখন খোতবা আরম্ভ হয় তখন ফিরিশতারা খোতবা শ্রবণ করেন এবং লিখা বন্ধ করে দেন। আর যে পরে আসবে সে শুধুমাত্র নামাযের সাওয়াব পাবে।
জুমার নামায ১৪ রাকাত। ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্, ২ রাকাত ফরয, ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, ২ রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ, ২ রাকাত নফল।
তাছাড়াও ২ রাকাত তাহিয়্যাতুল অযু এবং ২ রাকাত দুখূলুল মসজিদ নামায রয়েছে।
নিম্নে নামাযের নিয়ত দেওয়া হলো-
২ রাকাত তাহিয়্যাতুল অযূর নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ التَّحِيَّةُ الْوُضُوْءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিত্ তাহ্হিয়াতুল ওযুয়ী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহী তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
২ রাকাত দুখূলুল্ মসজিদ নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ الدُّخُوْلِ الْمَسْجِدِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্‘আতাই সালাতীত্ দুখুলীল্ মাস্যীদী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহে তা‘আলা মুতাওয়ায্যিহান ইলা যিহাতীল্ কা’আবাতীশ শারিফাতী আল্লাহু আক্বর।
৪ রাকাত ক্বাব্লাল জুমআর নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ قَبْلَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাক্’আতি সালাতী কাবালাল্ জুম‘আতে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহে তা‘আলা মুতাওয়ায্যিহান ইলা যিহাতীল্ কা‘আবাতীশ শারিফাতী আল্লাহু আক্বর।
জুমআর ২ রাকাত ফরয নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُسْقِطَ عَنْ ذِمَّتِـىْ فَرْضُ الظُّهْرِ بِاَدَاءِ رَكْعَتَـىْ صَلٰوةِ الْجُمُعَةِ فَرْضُ اللهِ تَعَالٰى اِقْتَدَيْتُ بِهٰذَالْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াই তু-আন্ উস্কীতা আন্যীমাতী ফারযুয্ যোহরে বী-আদায়ে রাকা‘আতাই সালাতীল্ যুম্’আতী র্ফাদ্দুল্লাহি তা‘আলা ইক্তাদায়তু বীহাযাল ইমামী মুতোয়ায্যীহান ইলা যীহাতীল্ কা‘আবাতিশ্ শারীফাতী আল্লাহু আক্বর।
উল্লেখ্য যে, ইমাম সাহেব اِقْتَدَيْتُ بِهٰذَا الْاِامَامُ (ইক্তাদাইতু বিহাযাল্ ইমাম) এর পরিবের্ত اَنَا اِمَامُ لِّمَنْ حَضَرَ وَمَنْ يَّحْضُرُ (আনা ইমামুল্লিমান্ হাদারা ওয়া মাইঁয়াহ্দোরু) পড়বেন।
৪ রাকাত বা‘দাল জুমআর নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ بَعْدَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহে তা‘আলা আরবা’আ রাক্’আতে সালাতি বা’আদাল্ জুম্’আতী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহী তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
২ রাকাত ওয়াক্তিয়া সুন্নাতের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ الْوَقْتِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহে তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিল্ ওয়াক্তে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহী তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
২ রাকাত নফল নামায-এর নিয়ত ও নিয়ম যোহরের নফল নামাযের অনুরূপ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাসবীহ
سُبْـحَانَ الله (সুবহানাল্লাহ) অর্থ- আল্লাহ্ পবিত্র। ৩৩বার
اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ (আল্হামদুলিল্লাহ্) অর্থ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। ৩৩ বার।
اَللهُ اَ كْـبَـرْ (আল্লাহু আকবর) অর্থ- আল্লাহ মহান। ৩৪ বার।
এরপর ১ বার কালেমা তায়্যিবা পাঠ করবে।
* তারপর একবার আয়াতুল কুরছি পড়বে
اَللهُ لَآ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُوْدُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল্ হাইয়্যুল্ ক্বাইয়্যুম্। লা তা’খুযুহু ছিনাতুওঁ ওয়ালা নাউম। লাহু মাফিছ্ছামাওয়াতি ওয়া মাফিল্ আরদ। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফাউ ইন্দাহু ইল্লা বি-ইয্নিহী ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম্ ওয়ামা খাল্ফাহুম্ ওয়া- লা ইউহীতুনা বিশাই-য়িম্ মিন্ ইল্মিহী ইল্লা বিমা শাআ ওয়াছি‘আ কুরছিয়্যুহুছ্ ছামাওয়াতি ওয়াল্ আরদ, ওয়া লাইয়াউদুহু হিফ্যুহুমা ওয়া হুয়াল্ আলিয়্যুল আযীম।
অর্থ: আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ নাই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, তাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই। এমন কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর সমীপে সুপারিশ করবে? তাদের (লোকদের) সম্মুখে যা কিছু আছে এবং তাদের পশ্চাতে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন এবং তারা তাঁর (আল্লাহ তা‘আলার) জ্ঞানের কিছুই আয়ত্বে আনতে পারে না, তবে তিনি যা ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরছী আসমান সমূহ ও জমিনের সর্বত্রই ঘিরে রয়েছে। আর এ দুইটির রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁর পক্ষে মোটেই কঠিন নয় এবং তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান।
নতুন চাঁদ দেখার সময় দু‘আ
اَللّٰهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْاَمْنِ وَالإِيْمَانِ ، وَالسَّلاَمَةِ وَالإِسْلاَمِ ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ.
উচ্চারণঃ আল্লাহুমা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস্ সালামাতি ওয়াল ইসলামী রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহু।
তারাবীহর নামায
তারাবীহ নামায পুরুষ, মহিলা উভয়ের উপর সুন্নাত। রমযান শরীফের মাসে এশার নামাযের ফরয ও সুন্নাত আদায়ের পর ২০ রাকাত তারাবীহ্’র নামায, ২ রাকাত করে জামাতে আদায় করা। তারাবীহর নামাযের পর বিতর জামাতে পড়া হয়। যদি কারো তারাবীহর নামায কয়েক রাকাত বাকী থাকা অবস্থায় বিতর নামাযের জামাত আরম্ভ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বিতর জামাতে পড়া আবশ্যক। বিতরের পর বাকী তারাবীহর নামায একাভাবে আদায় করে নিবে। তারাবীহর নামাযের প্রতি ৪ রাকাত পর বসে তারাবীহর তাসবিহ পড়া মুস্তাহাব এবং তাসবিহ পড়ার পর মোনাজাত করবে। তারাহবির মধ্যে এক খতম কুরআন মজীদ আদায় করা সুন্নাত তথা মুস্তাহাসন। যদি সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ পড়া সম্ভব না হয় তাহলে সূরা অথবা আয়াত দিয়ে নামায আদায় করবে।
তারাবীহ নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَـىْ صَلٰوةِ التَّـرَاوِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্আতাই সালাতিত্ তারাবীহে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
তারাবীহ নামাযের তাসবিহ্
سُبْحَانَ ذِى الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوْتِ سُبْحَانَ ذِى الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ . سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَـىِّ الَّذِيْ لَايَنَامُ وَلَايَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدًا سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ الْمَلٰئِكَةِ وَالرُّوْحُ .
উচ্চারণ: সুব্হানা যিল্ মুলকে ওয়াল্ মালাকুতে সুব্হানা যিল্ ইয্যাতে ওয়াল্ আয্মাতে ওয়াল্ হাইবাতে ওয়াল্ ক্বুদরাতে ওয়াল্ কিব্রিয়ায়ে ওয়াল জাবারূতে সুব্হানাল্ মালিকিল্ হাইয়্যিল্লাযী লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুতু আবাদান্ আবাদান্ সুব্বুহুন্ কুদ্দুসুন্ রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতে ওর্য়া রূহ্।
তারপর হাত তুলে নিম্নের দু‘আ পড়বে
اَللّٰهُمَّ اِنَّا نَسْئَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَاخَالِقَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَاغَفَّارُ يَاكَرِيْمُ يَاسَتَّارُ يَارَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارٌّ. اَللّٰهُمَّ اَجِرْنَا وَخَلِّصْنَا مِنَ النَّارِ . يَامُجِيْرُ يَامُجِيْرُ يَامُجِيْرُ بِرَحْمَتِكَ يَـآاَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাছ্আলুকাল্ জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান্নারে ইয়া খালেক্বাল্ জান্নাতে ওয়ান্নারে বিরাহমাতিকা ইয়া আযীযু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া ছাত্তারু, ইয়া রাহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালেকু, ইয়া বাররু, আল্লাহুম্মা আর্জিনা ওয়া খাল্লিছ্না মিনান্নার, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু, বি-রাহমাতিকা ইয়া আরহার্মা রাহিমীন।
অর্থ: ইয়া আল্লাহ্! নিশ্চয় আমরা তোমার দরবারে বেহেশ্ত প্রার্থনা করছি এবং তোমার নিকট দোযখ হতে আশ্রয় চাচ্ছি তোমারই করুণায়, হে বেহেশত ও দোযখের স্রষ্টা! হে পরাক্রমশালী! হে অসীম ক্ষমাকারী! হে মহান দাতা! হে দোষ-ত্রুটি গোপনকারী! হে দয়াময়! হে মহাক্ষমতাবান! হে সৃষ্টিকর্তা! হে মঙ্গলকারী! হে আল্লাহ্ আমাকে আশ্রয় দান কর এবং আমাকে দোযখ হতে মুক্তি দাও, হে আশ্রয়দাতা! হে আশ্রয়দাতা! হে আশ্রয়দাতা! আপন করুণায়, হে সর্বাপেক্ষা বেশী দয়ালু।
রোযার নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اَصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمَضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضًا لَّكَ يَا اَللهُ فَتَقَبَّلْ مِنِّىْ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ আছুমা গাদাম্মিন্ শাহরে রামাযানাল্ মুবারাকে র্ফাদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল্ মিন্নী ইন্নাকা আন্ তাছ্ছামীউল আলীম্।
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার উদ্দেশ্যে আগামী দিন বরকতময় রমযান মাসের ফরয রোযা রাখার নিয়ত করলাম। অতএব ইহা আমার নিকট থেকে কবুল কর। নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের নিয়্যত
اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْ لَكَ صُمْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَعَلٰى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি লাকা ছুম্তু ওয়া বিকা আ-মান্তু ওয়া আ’লাইকা তাওয়াক্কাল্তু ওয়া ‘আলা রিয্কিকা আফতারতু।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোযা রেখেছি, এবং তোমার উপর ঈমান এনেছি, এবং তোমার উপর ভরসা রেখেছি। এবং তোমার দেয়া রিযিক হতে ইফতার করছি।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার আদব ও করণীয়
উভয় ঈদের নামায ওয়াজিব। উভয় ঈদের ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিসওয়াক করা ও গোসল করা সুন্নাত। আর আতর-সুগন্ধি লাগানো, সামর্থ অনুযায়ী ভাল পোশাক পরিধান করা, ঈদুল ফিতর দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া এবং ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে খাওয়া মুস্তাহাব। নামায ঈদগাহে গিয়ে আদায় করা, আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে রাস্তা বদল করা অর্থাৎ এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা হয়ে আসা, পায়ে হেঁটে যাওয়া, যাওয়ার সময় রাস্তায়-
اَللهُ اَكْبَرُ اَللهُ اَكْبَرُ - . لَآ اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ اَللهُ اَكْبَرُ . وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ .
উচ্চারণ: আল্লাহু আক্বর আল্লাহু আক্বর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আক্বর আল্লাহু আক্বর ওয়া লিল্লাহিল্ হামদ।
এই তাকবীরটি পাঠ করতে করতে যাওয়া, ঈদুল ফিতরের দিন নিম্ন স্বরে আর ঈদুল আযহার দিন উচ্চ আওয়াজে তাক্বীর পড়া। উল্লেখ্য যে, (আল্লাহু আক্বর আল্লাহু আক্বর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আক্বর আল্লাহু আক্বর ওয়া লিল্লাহিল্ হামদ) এই তাকবীরটি যুলহজ্জের ৯ তারিখ ফজর হতে ১৩ তারিখ আছর নামায পর্যন্ত ফরয নামাযের পর পাঠ করা ওয়াজিব। ঈদুল আযহার নামায শেষে কোরবানী পশু যবেহ করা হয়।
জানা আবশ্যক যে- উভয় ঈদের নামাযের পূর্বে ও পরে ঈদগাহে নফল নামায পড়া যাবে না। ঈদুল ফিত্র দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সদকায়ে ফিত্র দেওয়া ওয়াজিব। ফকীরদের উপর ওয়াজিব নয়। (আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বজ্ঞ)।
উভয় ঈদের নামায আদায়ের নিয়ম
সাধারণত: ঈদের নামায খোলা ময়দানে জামাতে আদায় করা আবশ্যক। বৃদ্ধ ও দূর্বল ব্যক্তি যদি শহরের বড় মসজিদে আদায় করে তা জায়েজ। নামাযীদের করণীয় হচ্ছে, প্রথমে সবাই যথা নিয়মে কাতারবন্দী হওয়া। যখন ইমাম সাহেব তাকবীরে তাহরীমা বলবে তখন মুক্তাদীগণ উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে বাম হাতের উপরে ডান হাত দিয়ে নাভির নিচে হাত বাঁধবে, এরপর ছানা পাঠ করবে। উল্লেখ্য যে, ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে তাকবীর বলবে আর মুক্তাদিগণ নিম্ন স্বরে তাকবীর বলে হাত বাঁধবে। ছানা পাঠের পর ইমাম উচ্চস্বরে প্রথম তাকবীর বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত নিয়ে ছেড়ে দিবে, হাত বাঁধবে না, মুক্তাদীগণও অনুরূপ করবে, অতঃপর দ্বিতীয় বার ইমাম তাকবীর বলে পূর্বের ন্যায় হাত ছেড়ে দিবে, মুক্তাদীগণও অনুরূপ করবে, এরপর তৃতীয়বার ইমাম ছাহেব তাকবীর বলে হাত বাঁধবে, সাথে সাথে মুক্তাদীগণও হাত বাঁধবে। তারপর ইমাম সাহেব নিম্নস্বরে তা‘উয ও তাসমীয়া (আ‘উযু বিল্লাহ ও বিছমিল্লাহ) পাঠ করে উচ্চস্বরে সূরায়ে ফাতেহা ও ক্বিরাত পাঠ করবে। মুক্তাদীগণ নীরব থেকে ইমামের ক্বিরাত শ্রবণ করবে এবং ইমাম ছাহেবের অনুসরণে রুকু-সিজদা করবে। রুকু-সিজদা করার সময় মুক্তাদীগণ নিম্নস্বরে তাকবীর বলবে এবং এভাবে রুকু- সিজদার তাসবীহ পাঠ করবে। রুকু-সিজদা শেষে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা ও ক্বেরাত পাঠ করবে আর মুক্তাদীগণ তা নীরবে শ্রবণ করবে। দ্বিতীয় রাকাতের ক্বিরাত পাঠ শেষে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ইমাম সাহেব ‘আল্লাহু আকবর’ তাকবীর বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিবে, মুক্তাদীগণও অনুরূপ করবে, তেমনি ভাবে দ্বিতীয় তাকবীর বলে ইমাম-মুক্তাদী উভয়ই হাত ছেড়ে দিবে, অতঃপর তৃতীয়বার তাকবীর বলে ইমাম সাহেব হাত উঠাবে এবং ছেড়ে দিবে, মুক্তাদীগণও ছেড়ে দিবে। এরপর চতুর্থ তাকবীর বলে ইমাম সাহেবের সাথে রুকুতে চলে যাবে। এরপর তাসমি তাহমীদ শেষে উভয় সিজদা ও সিজদার তাসবীহ পাঠ শেষে বসে তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দু‘আ পাঠ শেষে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে। নামায শেষে ইমাম সাহেব খোতবা পাঠ করবে, মুক্তাদীগণ তা শ্রবণ করা সুন্নাত। জুমার খোতবার ন্যায় ঈদের নামাযেও খোতবা দু’টি, তবে জুমার খোতবা নামাযের পূর্বে, আর ঈদের খোতবা নামাযের পরে।
ঈদুল ফিতর নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَـىْ صَلٰوةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتَّةِ تَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالٰى اِقْتَدَيْتُ بِهٰذَالْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিল্ ঈ’দীল্ ফিত্র মা‘আ ছিত্তাতে তাক্বী-রাতে ওয়াজিবুল্লাহে তা‘আলা ইক্তাদায়ীতু বিহা-যাল ইমামী মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
ঈদুল আযহার নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَـىْ صَلٰوةِ الْعِيْدِ الْاَضْحٰـى مَعَ سِتَّةِ تَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالٰى اِقْتَدَيْتُ بِهٰذَالْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্‘আতাই সালাতিল্ ঈ’দীল্ আয্হা মা‘আ ছিত্তাতে তাক্বী-রাতে ওয়াজিবুল্লাহে তা‘আলা ইক্তাদায়ীতু বিহা-যাল ইমামী মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
নফল নামাযের বর্ণনা
নফল নামায হচ্ছে- সুন্নাতে গায়রে মোয়াক্কাদা। যা আদায় করলে অসংখ্য সাওয়াব পাওয়া যাবে। এ নামায সমূহের নিয়ত করার সময় সুন্নাতও বলা যাবে, নফলও বলা যাবে অথবা সুন্নাত, নফল কিছুই উল্লেখ না করে কেবল মাত্র নামাযের নামের উল্লেখ করলে হয়ে যাবে। যেমন- লাইলাতুল ক্বদরের নামায, লাইলাতুল বরাতের নামায, এশ্রাক কিংবা সালাতুদ্ দোহার নামায ইত্যাদি।
তাহাজ্জুদ নামায:
তাহাজ্জুদ নামাযের সময় হচ্ছে অর্ধ রাতের পর হতে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এই নামায দুই রাকাতের নিয়তে অর্থাৎ দুই রাকাত করে চার রাকাত, আট রাকাত, বার রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। এই নামাযের মধ্যে অসংখ্য ও অগণিত ফযিলত রয়েছে। যতটুকু সম্ভব এই নামায ছেড়ে না দেয়া ভাল। এই নামাযে সূরায়ে ফাতেহার পর যে কোন সূরা কিংবা আয়াত পড়া যাবে, এতে নির্দিষ্ট সূরার কথা উল্লেখ নেই। আর যদি কখনো শরীরে অলসতা কিংবা দুর্বলতা অনুভব হয়, তবে এশার নামাযের পরে অর্থাৎ এশারের ফরয ও সুন্নাত আদায়ের পরে, বিতর নামাযের পূর্বে আদায় করে নেয়া ভাল।
তাহাজ্জুদ নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَـىْ صَلٰوةِ التَّهَجُّدِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبِةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্‘আতাই সালাতিত্ তাহাজ্জুদি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘আবাতিশ্ শারিফাতি আল্লাহু আক্বর।
এশরাকের নামায
এশরাক হচ্ছে সূর্য্য উদিত হয়ে হলুদ বর্ণ দূরিভূত হওয়ার পর এই নামায আদায় করা হয়। অর্থাৎ সূর্য উদিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর চার রাকাত নফল নামায আদায় করা- যাকে এশরাকের নামায বলা হয়। হাদীস শরীফে এর অনেক সাওয়াবের কথা বলা হয়েছে এবং হুযূর (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি ফযরের নামায জমাতে আদায় করার পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকির-আযকার ও তাসবীহ-তাহলীলে পাঠরত থাকার পর এশরাকের নামায আদায় করবে, আল্লাহপাক তাকে এবং তার সাথে সম্পৃক্ত আরো সত্তর হাজার লোককে ক্ষমা করে দিবেন।
এশরাক নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ الاِشْرَاقِ سُنَّةُ رَسُوْلِ للهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبِةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্‘আতাই সালাতিল্ এশ্রাকী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘আবাতিশ্ শারিফাতি আল্লাহু আক্বর।
দ্বোহা ও যাওয়ালের নামায
সালাতুদ্ দ্বোহার নামায আদায়ের সময় হচ্ছে দিনের দশটার সময় যখন সূর্য পরিপূর্ণ হয়। এই নামায দুই রাকাত করে মোট আট রাকাত। এই নামাযকে চাশতের নামাযও বলা হয়। আর সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পরার পর চার রাকাত পড়া যাবে। যাকে নামাযে যাওয়াল বলা হয়।
দ্বোহার নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكَعَتَىْ صَلٰوةِ الضُّحٰـى سُنَّةُ رَسُوْلِ للهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهْةِ الْكَعْبِةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্‘আতাই সালাতিদ্ দো-হায়ী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহে তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
যাওয়াল নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ الزَّوَّالِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহে তা‘আলা আরবা‘আ রাক্‘আতে সালাতিয্ জাওয়ালী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহে তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
নামাযে আওয়াবীন
সালাতুল আওয়াবীন বা নামাযে আওয়াবীন, যা সাধারণত: মাগরিবের নামাযের পরে দুই রাকাত করে ছয় রাকাত পর্যন্ত আদায় করা হয়। এই নামাযের মধ্যে অসংখ্য ফযিলত, বরকত ও সাওয়াব নিহিত।
নামাযে আওয়াবীনের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكَعَتَىْ صَلٰوةِ الْاَوَّبِيْنِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্আতাই সালাতিল্ আওয়াবীন্ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।
মুসাফিরের নামায
যে কোন ব্যক্তি শরীয়তের হুকুম মোতাবেক মুসাফির হিসাবে গণ্য হলে সে ব্যক্তি যোহর, আছর এবং এশারের ফরয নামায দুই রাকাত আদায় করবে। আর সুন্নাত নামাযের হুকুম হচ্ছে যদি সময়ের সংকীর্ণতা হয় তবে ফজরের সুন্নাত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নাত নামায ছেড়ে দেওয়া দুরস্ত। এমতাবস্থায় সুন্নাত ছেড়ে দেওয়ার কারণে গুনাহ হবে না। আর যদি সময় সংকীর্ণতা না হয় এবং নিজ সফর সঙ্গীগণ চলে যাওয়ার ভয় না হয় তাহলে সুন্নাত ছেড়ে না দিবে, বরং আদায় করে নিবে। উল্লেখ্য যে, সফর অবস্থায় সুন্নাত নামায পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে, এতে কমও নেই কসরও নেই। ফজর ও মাগরিবের ফরয এবং বিতর নামাযের মধ্যে কোন কমতি নেই। অর্থাৎ মুসাফির অবস্থায়ও তা পরিপূর্ণ আদায় করতে হবে। সফরের সীমা হচ্ছে ৪৮ মাইল। এখানে মাইল বলতে ইংরেজী মাইল বুঝানো হয়েছে।
মুসাফিরের কছর নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اَقْصُرَا لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ الْظُّهْرِ فَرْضُ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আক্ছুরা লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাকা‘আতি সালাতিয যোহর ফারদুল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।
এইভাবে যোহরের স্থলে আসর হলে আসরি, এশার হলে এশায়ি উল্লেখ করতে হবে।
অসুস্থতার নামায
নামায কোনো অবস্থায় ছেড়ে দেয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে নামায আদায়ের শক্তি থাকবে, ততক্ষণ দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। আর যখন দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা সম্ভব না হবে তখন বসে বসে নামায আদায় করবে। বসে বসে রুকু করবে এবং রুকু করে উভয় সিজদা আদায় করবে। আর বসা অবস্থায় রুকু করার নিয়ম হচ্ছে পেট বরাবর হয়ে ঝুকা। আর যদি রুকু সিজদা করার শক্তিও না থাকে। সে ক্ষেত্রে রুকু সিজদা ইশারা করে আদায় করবে এবং সিজদার জন্য রুকু থেকে একটু বেশী ঝুকবে। সিজদার জন্য টেবিল অথবা উঁচু কোন কিছু রাখা এবং এর উপর সিজদা করা দুরস্ত ও জায়েয নেই।
তাওবার নামায
যদি কোন ব্যক্তির কোন কথা ও বাক্য শরীয়তের খেলাপ তথা শরীয়ত পরিপন্থী হয়ে যায়, তাহলে খুলুছ নিয়তে ও একাগ্রতার সাথে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে কান্না-কাটি করে এর থেকে তাওবা করবে এবং তার কৃত কর্মের উপর অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং ভবিষ্যতে পরিপূর্ণ ও পাকাপোক্ত ভাবে শপথ করবে যে- আর কখনো এ ধরণের শরীয়ত বিরোধী কর্ম করবে না। আল্লাহ তা‘আলা দয়া-মেহেরবানী করে তার গোনাহ মাফ করে দিবেন।
তাওবার নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكَعَتَىْ صَلٰوةِ التَّوْبَـةِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهْةِ الْكَعْبِةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাকা‘আতাই সালাতিত্ তাওবাতে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘আবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।
সালাতুস্ তাসবীহর নামায
সালাতুস্ তাসবীহ নামাযের নিয়ম হচ্ছে- প্রথমে নামাযের নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে নাভীর নীচে হাত বেঁধে ছানা পাঠ করবে। ছানা পাঠের পর-
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَآ اِلٰـهَ اِلَّاللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ .
উচ্চারণ: সুব্হানাল্লাহি ওয়াল্ হাম্দুলিল্লাহি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আক্বর।
এই তাসবীহটি ১৫ বার পাঠ করবে। এরপর আউযু বিল্লাহ, বিছমিল্লাহ পাঠ করে সূরায়ে ফাতেহা এবং অন্য কোন সূরা পাঠ শেষে রুকু করার পূর্বে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করে রুকু করবে। রুকুতে গিয়ে রুকুর নির্দিষ্ট তাসবীহ পাঠ শেষে ১০ বার তাসবীহটি পাঠ করবে। এরপর রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ১০ বার তাসবীহটি পাঠ করবে। তারপর আল্লাহু আকবর বলে সিজদায় গিয়ে সিজদার নির্দিষ্ট তাসবীহ পাঠ শেষে ১০ বার তাসবীহটি পাঠ করে ‘আল্লাহু আকবর’ তাকবির বলে বসবে। দু’সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় ১০ বার তাসবীহটি পাঠ করবে। তারপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে অনুরূপ ১০ বার তাসবীহটি পাঠ করবে। এই নিয়মে চার রাকাত নামায আদায় করবে এবং প্রত্যেক রাকাতে ৭৫ বার তাসবীহ হবে। চার রাকাতে মোট ৩০০ বার তাসবীহ আদায় হবে। উল্লেখ্য যে, রুকু এবং সিজদার মধ্যে “সুবহানা রাব্বীয়াল আ‘যিম ও সুব্হানা রাব্বীয়াল আ‘লা” পাঠ করার পর তাসবীহ আদায় করতে হবে।
এই নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ‘ফাতেহা’র পর সূরা ‘তাকাছুর’, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ‘আ‘ছর’, তৃতীয় রাকাতে সূরা ‘কাফেরূন’ এবং চতুর্থ রাকাতে সূরা ‘ইখলাছ’ পাঠ করবে। আর যদি হাফিযে কুরআন হয়, তাহলে প্রথম রাকাতে সূরা ‘আল্ হাদীদ’, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ‘আল্ হাশর’, তৃতীয় রাকাতে সূরা ‘আছ্ ছফ্’, চতুর্থ রাকাতে সূরা ‘আত্তাগা-বুন’ পাঠ করবে। (ফতোয়ায়ে শামী ইত্যাদি)
মাকরূহ সময় ব্যতীত যে কোন সময় এই নামায আদায় করা যায়। তবে উত্তম হচ্ছে যোহর নামাযের পূর্বে। (ফতোয়ায়ে আলমগীরি, শামী)
যদি সম্ভব হয় প্রত্যেকদিন এই নামায আদায় করবে। আর যদি সম্ভব না হয় প্রত্যেক জুমার দিন, অথবা মাসে একবার, অথবা বৎসরে একবার। তা-ও যদি সম্ভব না হয় তাহলে জীবনে একবার আদায় করা উত্তম। এই নামাযের বদৌলতে আল্লাহ তা‘আলা আগে-পরের, ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত, বড় কিংবা ছোট সকল গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
সালাতুস্ তাসবীহ নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوةِ التَّسْبِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ للهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبِةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাকাআতি সালাতিত্ তাসবীহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহে তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘আবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।
কাযায়ে হাজাতের নামায
কাযায়ে হাজাতের নামায রাসূলে করিম (ﷺ) এক অন্ধ ব্যক্তিকে শিখিয়েছেন। এই নামায আদায় করাতে উক্ত অন্ধ ব্যক্তি তার দৃষ্টি ফিরে পেয়েছিল। অনুরূপ হযরত ওসমান ইবনে হানিফ আমিরুল মু’মিনীন হযরত ওসমান রাদ্বি আল্লাহু তা‘আলা আনহু এর খিলাফতকালে এক ব্যক্তিকে শিখিয়েছেন, যা আদায়ের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছিল।
হুযূর (ﷺ) এই নামায আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে বলেছেন- প্রথমে উত্তম ভাবে অযু করে খালেস ও বিশুদ্ধ নিয়তে ২ রাকাত নামায আদায় করবে এবং নামায শেষে বিনয়-নম্রভাবে আল্লাহর দরবারে নিম্নের দু‘আটি পাঠ করবে-
اَللّٰهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ وَاَتَوَسَّلُ وَاَتَوَجَّهُ وَلِيَكَ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِـىِّ الرَّحْمَةِ يَارَسُوْلَ اللهِ اِنِّىْ تَوَجَّهْتُ بِكَ اِلٰى رَبِّىْ فِىْ حَاجَتِىْ هَذِه لِتُقْضٰى لِى فَشْفَعَّةً فِـىَّ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ওয়া আতাওয়াস্সালু ওয়া আতাওয়ায্যাহু ওয়া লিয়াকা নাবীয়ীকা মুহাম্মাদিন্ নাবীর্য়ী রাহমাতি ইয়া রাসূলাল্লাহে ইন্নী তাওয়ায্যাহ্তু বীকা ইলা রাব্বি ফি হা-যাতী হাযী-হি লীতুক-জা লী ফাস্ফা‘আতান্ ফীইয়া।
حصن حصين(হুসনে হাসিন) গ্রন্থে বর্ণিত-এই নামায অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
কাযায়ে হাযাত নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوةِ قَضَاءِ حَاجَاتِ نَفْلِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبِةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাকা‘আতাই সালাতি কা-যায়ী হা-যা-তী নাফ্লী মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘আবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।
ইস্তিস্কার নামায
ইস্তিস্কা হচ্ছে দু‘আ ও ইস্তিগ্ফারের নাম। ইস্তিস্কা নামায জমাতে আদায় করা জায়েয। তবে জমাতে আদায় করা সুন্নাত নয়। জমাতেও পড়া যাবে অথবা একা একাও পড়া যাবে।
নামাযে ইস্তিস্কার নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ الْاِسْتِسْقَاءِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাকা‘আতাই সালাতিল্ ইস্তীস্-কায়ী মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘আবাতিশ্ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।
হিফযুল ঈমান নামায
হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে ব্যক্তি হিফযুল ঈমান নামায আদায় করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে দুনিয়া হতে ঈমানের সাথে মৃত্যু নসিব করাবে এবং মৃত্যুর সময় শয়তান মরদুদ তার ক্ষতি করতে পারবে না। এ নামায দু’রাকাত। যা মাগরিবের নামাযের পর আদায় করা হয়।
এ নামাযে প্রত্যেক রাকাতে সূরায়ে ‘ফাতিহা’র পর ১ বার ‘আয়াতুল কুরছি’, ৩ বার সূরা ‘ইখলাস’, ১ বার সূরা ‘ফালাক’, ১ বার সূরা ‘নাস’ পাঠ করে নামায শেষ করবে। নামায শেষে পূনরায় ১টি সিজদা করবে এবং সিজদায় গিয়ে-
يَا حَـىُّ يَا قَيُّوْمُ تَمُتَّنِىْ عَلَى الْاِيْمَانِ (ইয়া হায়্যু ইয়া কায়্যূমু তামুত্তানি ‘আলাল্ ঈমা-নী) ৩ বার পাঠ করবে।
(আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই (ﷺ) সর্বজ্ঞ)
সালাতুল ক্বলব
কোনো ব্যক্তির গুনাহের কারণে যদি অন্তর কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং ভালো কাজ করার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি না হয়, তার জন্য উচিত সালাতুল ক্বলব তথা ক্বলবের নামাযের নিয়ত করে ২ রাকাত নামায আদায় করা। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ‘ফাতিহা’র পর সূরা ‘ইখলাস’ শরীফ পাঠ করবে। তবে উক্ত নামাযের নিয়ত করা হতে আরম্ভ করে নামায সমাপ্ত করা পর্যন্ত সকল কিছু অন্তর দ্বারা পাঠ করবে। এমনকি একটা শব্দও যেন মুখে উচ্চারিত না হয়। সালাম শেষে একাগ্রহচিত্তে ৭০ বার ইস্তিগফার তথা আস্তাগ্ফিরুল্লাহ পাঠ করে নিজের পীরের কথা স্মরণ করে দু‘আ করবে। এরূপ আমল দ্বারা অবশ্যই তার অন্তর পরিষ্কার হবে এবং ভালো কাজ করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
শবে মে’রাজের নামায
রজব চাঁদের ২৬ তারিখ দিনগত রাত আল্লাহ্পাক রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)কে দাওয়াত দিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করান। এ রাতে রাসূল (ﷺ) আপন উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায আল্লাহর নিকট হতে তোহ্ফা হিসাবে নিয়ে আসেন। এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগীতে অসংখ্য সাওয়াব নিহিত। এই রাতকে শবে মে’রাজ বলা হয়। ২৭ রজব তারিখে রাত্রে এশার নামাযের পর বিতরের পূর্বে নফল নামায আদায় করা হয়। এ নামাযের নিয়ত নিম্নরূপ-
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَـىْ صَلٰوةِ الْلَيْلَةِ الْمِعْرَاجِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক্’আতাই ছলা-তি লাইলাতিল্ মি’রাজি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
এ নামাযের প্রতি রাকাতে সূরা ‘ফাতিহা’র পর যে কোন একটি সূরা মিলিয়ে নামায পড়া যাবে।
শবে বরাতের নামায
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাত্রিতে এ নামায পড়তে হয়। এশার নামাযের পর হতে ছোব্হে কাজেব পর্যন্ত এই নামাযের সময় থাকে। নামায, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর ও মোরাকাবা, দোয়া-দরূদ, ইস্তিগ্ফার ইত্যাদি নফল ইবাদতে সারা রাত্রি জাগরণ থাকলে অগনিত সাওয়াব পাওয়া যায় এবং সমস্ত গুনাহ্ মাফ হয়। এ রাতে দুই রাকাত করে মোট ১২ রাকাত নামায পড়তে হয়।
শবে বরাতের নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَـىْ صَلٰوةِ الْلَيْلَةِ الْبَرَأَتِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক্’আতাই ছলা-তিল লাইলাতিল্ বারাআতি মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
এই নামায পড়বার নিয়ম:- এই নামায এশার নামাযের পর এবং বিতর নামাযের পূর্বে পড়তে হয়।
শবে ক্বদরের নামায
রমযান মাসের ২৬ তারিখ দিনগত ২৭ তারিখ রাত্রিতে এ নামায পড়তে হয়। বিতর নামাযের পর হতে ছোবহে কাজেব পর্যন্ত এই নামাযের সময় থাকে। নামায, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর, মোরাকাবা, দোয়া-দরূদ, ইস্তিগ্ফার ইত্যাদি নফল এবাদতে সারা রাত্রি জাগরণ থাকলে অগনিত সাওয়াব পাওয়া যায় এবং সমস্ত গুনাহ্ মাফ হয়। এ রাতে দুই রাকাত করে মোট ১২ রাকাত নামায পড়তে হয়।
শবে ক্বদরের নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَـىْ صَلٰوةِ الْلَيْلَةِ الْقَدْرِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকা’আতাই ছলা-তিল লাইলাতিল্ ক্বাদ্রি মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
শবে ক্বদরে পড়ার দোয়া
اَللّٰهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّـىْ يَا غَفُوْرُ . يَا غَفُوْرُ . يَا غَفُوْرُ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু’য়্যুন্ তুহিব্বুল্ ‘আফ্ওয়া’ ফা’ফু আন্নী ইয়া-গাফূরু, ইয়া-গাফূরু, ইয়া-গাফূরু।
উল্লেখ্য যে, শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুর রাগায়েব ইত্যাদি নফল নামায জমাতে আদায় করা যাবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আমার লিখিত “আচ্ছালাতুত্-তা-তাউওয়ায়ু-বে- ইক্বতেদায়িল মুতাউয়ে” তথা নফল নামায জমাতে আদায়ের বিধান পুস্তিকাটি দেখুন।
সাহু সিজদা
নামাযের মধ্যে যে সকল জিনিস আদায় করা ওয়াজিব এর থেকে একটি ওয়াজিব অথবা কয়েকটি ওয়াজিব যদি ভুলে আদায় করা না হয়, তাহলে এর জন্য সাহু সিজদা করা ওয়াজিব। সাহু সিজদা আদায়ের ফলে নামায বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
সাহু সিজদা করার নিয়ম হচ্ছে- শেষ রাকাতে কেবলমাত্র তাশাহুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে দু’টি সিজদা করবে। এরপর বসে আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ এবং দু‘আ পাঠ শেষে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে।
জানাযার নামায
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিয়ে কাফন পরানোর পরে তার জন্য দু‘আ-প্রার্থনা করে যে নামায পড়া হয়, তাকে জানাযার নামায বলে।
মৃত ব্যক্তির খাটকে সকলের সম্মুখে রাখবে। মৃত ব্যক্তির মাথা উত্তর দিকে এবং পা দক্ষিণ দিকে রাখবে। ইমাম মৃত ব্যক্তির সিনা বরাবর দাঁড়াবে। জানাযার নামায চার তক্বীরের সাথে আদায় করতে হয়। জানাযার নামাযের নিয়ত হলো-
نَوَيْتُ أَنْ اُوَدِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلٰوةِ الْجَنَازَةِ فَرْضُ الْكِفَايَةِ اَلثَّنَاءُ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَالصَّلٰوَةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَاءُلِهَذَا الْمَيِّتِ / لِهَذِهِ الْمَيِّتِ اِقْتِدَيْتُ بِهَذَا الاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبِةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَ كْبَرُ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উওয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবা‘আ তাক্বীরাতি ছলা-তিল্ জ্বানাযাতি ফারদ্বুল্ কেফাইয়াতি আছ্ছানাউ লিল্লাহি তা‘আলা ওয়াছ্সালাতু আলান্নাবিয়্যি ওয়াদ্দু’আ-উ লিহা-যাল্ মাইয়্যিতি এক্বতাদাইতু বিহা-যাল্ ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জ্বিহাতিল্ কা‘আবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
অর্থ: আমি নিয়ত করলাম আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য চার তাকবির ফরযে কিফায়া জানাযার নামায আদায় করব। প্রশংসা আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য এবং দরূদ শরীফ রাসূলে করিম (ﷺ)ের জন্য। আর দু‘আ এই মৃতের জন্য। আমি ইক্তিদা করলাম এই ইমামের পিছনে কিবলার দিকে মুখ করে। আল্লাহ মহান। (প্রথম তাকবির বলে নামাযের নিয়ত বাঁধার পর নিচের দু‘আটি পড়বে)
ছানা
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلَآ إلٰهَ غَيْرُكَ.
উচ্চারণ: সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহাম্দিকা ওয়াতাবা রাকাস্মুকা ওয়া তা’আলাজ্বাদ্দুকা ওয়া জ্বাল্লা ছানাউকা ওয়ালা ইলা-হা গাইরুকা।
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি তোমাকে তোমার পবিত্র এবং প্রশংসার সাথে স্মরণ করছি এবং তোমার বরকতময় নাম এবং উচ্চ মর্যাদার সাথে প্রশংসা করছি এবং তুমি ব্যতিত কোন মা’বুদ নাই।
দ্বিতীয় তাকবির ‘আল্লাহু আকবর’ বলে নামাযের মধ্যে যে দরূদ শরীফটি পড়া হয় উহা পড়বে।
দরূদ শরীফ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى سَيِّدِنَا إبْرَاهِيمَ وَعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا إبْرَاهِيمَ إنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيدٌ ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى سَيِّدِنَا اِبْرَاهِيمَ وَعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا إبْرَاهِيْمَ إنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সায়্যিদি-না মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলে সায়্যিদি-না মুহাম্মাদিন্ কামা ছাল্লাইতা আলা সায়্যিদি-না ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলে সায়্যিদি-না ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক্ আলা সায়্যিদি-না মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলে সায়্যিদি-না মুহাম্মাদিন্ কামা বারাক্তা আলা সায়্যিদি-না ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলে সায়্যিদি-না ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।
তারপর তৃতীয় তাক্বীর বলে নিচের দু‘আটি পড়বে।
মৃতের জন্য দু‘আ
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْـرِنَا وَكَبِيْـرِِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْإِيمَانِ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগ্ফির লিহায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শা-হিদিনা ওয়া গা-য়িবিনা ওয়া ছগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উন্ছা-না। আল্লাহুম্মা মান্ আহ্ইয়াইতাহূ মিন্না ফাআহ্য়িহী আলাল্ ইসলামি, ওয়ামান্ তাওয়াফ্ফাইতাহূ মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু আলাল্ ঈমা-ন।
ইহা পড়ে চতুর্থ তক্বীর বলে ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরাবে।
মুর্দা বালক তথা নাবালেগ হলে তৃতীয় তক্বীরের পর উপরোক্ত দু‘আর পরিবর্তে এই দু‘আ পড়বে-
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْه لَنَا فَرْطًا وَّاجْعَلْه لَنَا اَجْرًا وَّزُخْرًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفَّعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ্ আল্হু লানা ফারতাঁও ওয়াজ্আল্হু লানা আজ্রাওঁ ওয়া যুখ্রাওঁ ওয়াজ্আল্হু লানা শাফিয়াওঁ ওয়া মুশাফ্ফা‘আন।
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য তাকে (ছেলেটিকে) অগ্রদূত করে লও এবং তাকে আমাদের জন্য প্রতিদানের উসিলা ও সঞ্চিত ধন করে লও এবং তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী ও গ্রহণযোগ্য সুপারিশকারী করে লও।
মুর্দা বালিকা তথা নাবালেগাহ হলে এই দু‘আ পড়বে-
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَّاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَّزُخْرًا وَّاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَّمُشَفَّعَةً .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ্ আল্হা লানা ফারতাঁও ওয়াজ্আ-ল্হা লানা আজ্রাওঁ ওয়া যুখ্রাওঁ ওয়াজ্আল্হা লানা শাফিয়াতান্ ওয়া মুশাফ্ফাআতান্।
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য তাকে (মেয়েটিকে) অগ্রদূত করে লও এবং তাকে আমাদের জন্য প্রতিদানের উসিলা ও সঞ্চিত ধন করে লও এবং তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারিনী ও গ্রহণযোগ্য সুপারিশকারিনী করে লও।
দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তক্বীর বলার সময় হাত উঠাতে হবে না। এই ভাবে জানাযার নামায শেষ করতে হয়। তবে ইমাম উচ্চ আওয়াজে ও মুক্তাদি নিম্নস্বরে তাক্বীর বলতে হবে।
উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তি স্ত্রীলোক হলে لِهٰذَا الْمَيِّتِ (লি-হাযাল্ মাইয়্যেতি) এর পরিবর্তে لِهٰذِهِ الْمَيِّتِ (লিহাযিহিল্ মাইয়্যেতি) বলতে হবে। মোক্তাদীগণ বলবেনاِقْتَدَيْتُ بِهٰذَ الْاِمَامِ (ইক্দাতাইতু বি-হাযল্ ইমামে) যিনি ইমাম তিনি বলবেন اَنَا اِمَامٌ لِّمَنْ حَضرَ وَ مَنْ يَّحْضُرُ ।
উচ্চারণ: আনা ইমামুল্লিমান্ হাদারা ওয়া মাইঁয়্যাহদোরু।
কবর যিয়ারতের দু‘আ
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ، أَنْتُمْ لَنَا سَلَفٌ وَنَحْنُ لَكُمْ تَبَعٌ وَاِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ. نَسْئَلُ اللهُ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَة، وَيَغْفِرُاللهُ لَنَا وَلَكُمْ وَيَرْحَمْنَا اللهُ اِيَّا نَا وَاِيَّاكُمْ.
উচ্চারণ: আস্সালামু আলাইকুম ইয়া আহ্লাল কুবুরে, আন্তুম লা-না সালাফুন্ ওয়া নাহ্নু লাকুম তাবা’য়ুন ওয়া ইন্না ইন্শাআল্লাহু বীকুম লা-হীকুন। নাস্য়ালুল্ল্লাহু লানা ওয়ালাকুমুল্ ’আফীয়াতে, ওয়াইয়াগ্ফীরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম ওয়া ইর্য়াহাম্-নাল্লাহু ই-য়া-না ওয়া ই-য়াকুম।
অর্থ: হে কবরবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের পূর্বে চলে গেছ, আর আমরা তোমাদের পরবর্তীতে আসতেছি এবং যদি আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছে হয় তাহলে অবশ্যই আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য আল্লাহর দরবারে শান্তি ও ক্ষমা কামনা করছি এবং আল্লাহ্পাক আমাদেরকে ও তোমাদেরকে করুণা ও দয়া করুন।
জামাতে নামায আদায়ের ফযিলত
আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন কালামে মজিদে এরশাদ করেছেন-
وَ اَقِيْمُوْ الصَّلوٰةَ وَاَتُوْ الزَّكَوٰةَ وَاَرْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْن
অর্থ: এবং তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকু করো রুকুকারীদের সাথে।
অত্র আয়াতে কারিমা দ্বারা নামায জামাতে আদায় করার গুরুত্ব ও তাকীদ প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়াও নামাযের সূচনা ও প্রবর্তনও জামাতের সাথে হয়েছে। পবিত্র হাদিসে জামাতে নামায অনাদায়ী কারীদের ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আর অসংখ্য হাদিসের মধ্যে জামাতে নামায আদায়ের বহু ফযিলত ও সাওয়াবের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
রাসূলে করিম (ﷺ)এরশাদ ফরমায়েছেন- যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন নামায জামাতে আদায় করবে সে দোযখ থেকে নাজাত পাবে এবং জান্নাতের হকদার হবে। (তিরমিযী শরীফ)
রাসূলে করিম (ﷺ) আরো এরশাদ করেছেন- যদি লোকেরা জামাতে নামায আদায়ের সাওয়াব সম্পর্কে জানত তাহলে সবাই মসজিদে এসে জামাতে নামায আদায় করত। একা নামায আদায় করার চেয়ে জামাতে নামায আদায়ে ২৫/২৭ গুণ সাওয়াব বেশী পাওয়া যায়। নামায জামাতে আদায় করাতে সময়ের অনুসরণ তথা সময়ের প্রতি ও সকলের প্রতি ভ্রাতৃত্বের সচেতনতা সৃষ্টি হয়।
রাজা-প্রজা, ধনী-গরীব সকলই একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে। যে নামাযি পরে এসেছে তার উচিত নয় প্রথম কাতারের নামাযিকে পিছনে সরিয়ে সে নিজে প্রথম কাতারে যাওয়া। যদিওবা সে বাদশা কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তি হোক না কেন।
আল্লাহপাক ও রাসূলে করিম (ﷺ) এর ফরমান মোতাবেক জামাতে নামায আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। প্রতিটি গ্রামের মসজিদে নামায জামাতে হওয়া ওয়াজিব।
নামায আদায়ের নিয়ম
নামাযির উচিত প্রথমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অর্জন করে নিয়মানুযায়ি অযু করে প্রথমে কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে, অতঃপর যে ওয়াক্তের নামায পড়বে, কিংবা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল ইত্যাদি যে নামাযই হোক না কেন সে নামাযের নিয়্যত করে উভয় হাত উভয় কানের লতি পর্যন্ত উঠায়ে আল্লাহু আকবর বলে নাভির নিচে বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে হাত বাঁধবে এবং ছানা পাঠ করবে। অতঃপর তাআ‘উয ও তাসমিয়া পাঠ করে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে এবং সূরায়ে ফাতিহার সাথে সূরায়ে ইখলাস কিংবা অন্যকোন সূরা বা ছোট তিন আয়াত অথবা বড় এক আয়াত পাঠ করে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে রুকু করবে, রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ ৩ বার, ৫ বার কিংবা ৭ বার পড়ে তাসমি তথা সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাহমিদ তথা ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। তারপর ‘আল্লাহু আকব’র বলে সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ ‘সুবহানা রাব্বিল আ’লা’ ৩ বার, ৫ বার কিংবা ৭ বার পাঠ করবে। অতঃপর আল্লাহু আকবর বলে বসে যাবে। ১ তাসবিহ সময় পরিমাণ বসে আল্লাহু আকবর বলে দ্বিতীয় সিজদা করে প্রথম সিজদার ন্যায় তাসবিহ পাঠ শেষে আল্লাহু আকবর বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে এবং প্রথম রাকাতের ন্যায় সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা পাঠ করবে তবে তাআ‘উয পড়তে হবে না। কিরাত শেষে রুকু, সিজদা প্রথম রাকাতের ন্যায় সমাপ্ত করে দু-জানু হয়ে বসে পড়বে এবং তাশাহুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু দরূদ শরীফ এবং দু‘আ পাঠ করে ডানে-বামে সালাম দিয়ে নামায শেষ করবে। আর যদি ৩ রাকাত কিংবা ৪ রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায হয় তাহলে দু’রাকাতে বসে আত্ত্যাহিয়্যাতু তথা তাশাহুদ পাঠ করে আল্লাহু আকবর বলে দাঁড়িয়ে বাকী রাকাত পূর্বের ন্যায় আদায় করবে তবে সূরায়ে ফাতেহার পর অন্য সূরা পড়তে হবে না। তবে ৪ রাকাত বিশিষ্ট সুন্নাত হলে শেষের ২ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা পাঠ করতে হবে। সর্বশেষ রাকাতে তাশাহুদ পাঠ করে এর সাথে দরূদ এবং দু‘আ আদায় করে প্রথমে ডানে তারপর বামে সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করবে। প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরছি ১ বার, সুবহানাল্লাহ-৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ-৩৩ বার, আল্লাহু আকবর-৩৪ বার পাঠ শেষে কালেমায়ে তাওহীদ ১ বার পাঠ করে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করবে।
আর যদি জামাতে নামায পড়তে হয়, তাহলে নামাযের নিয়্যত করে ইমামের পিছনে ইকতিদা করে প্রথম রাকাতে চুপে চুপে ছানা পাঠ করে নিরব থাকবে এবং বাকী রাকাতেও কিছু পড়বে না। তবে যখন ইমাম ছাহেব তাকবীর বলবে তখন মুক্তাদীগণ চুপে চুপে তাকবীর বলবে। রুকু, সিজদার তাসবীহ পাঠ করবে। আর যখন ইমাম ছাহেব তাসমি বলবে তখন মুক্তাদি তাহমিদ বলবে। ২ রাকাত বিশিষ্ট নামায হলে যথানিয়মে ২ রাকাত পর তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া পাঠ করবে। আর যদি ৪ রাকাত কিংবা ৩ রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে প্রথম বৈঠকে শুধুমাত্র তাশাহুদ পড়বে এবং শেষ রাকাতে তাশাহুদ, দরূদ ও দু‘আ পড়ে ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে।
আর যদি জামাত আরম্ভ হওয়ার পর কোন ব্যক্তি এমন অবস্থায় আসে যখন ইমাম ছাহেব প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করছে অথবা ফাতিহার পর অন্য সূরা পাঠ করছে, এমতাবস্থায় দ্রুত গিয়ে ইমামের সাথে ইকতিদা করে নিবে অর্থাৎ নামাযে শরীক হয়ে যাবে এবং নিরব থেকে ইমামের কিরাত শ্রবণ করবে। যখন ইমাম রুকুতে যাবে মুক্তাদিও চুপে চুপে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে রুকুতে যাবে, এভাবে ইমামের অনুসরণ করে নামায শেষ করবে। আর যদি ইমামের সাথে ইকতিদা করার পূর্বে কোন রাকাত নামায ছুটে যায় সেক্ষেত্রে ইমাম ছাহেব সালাম ফিরানোর পর ছুটে যাওয়া নামায পুরো করবে এবং যে রাকাত নিজে শুরু করবে তা ছানা পড়ে শুরু করতে হবে।
জানা আবশ্যক যে, যদি মুক্তাদির কিছু নামায বাকী থাকে তাহলে ইমামের সাথে শেষ রাকাতে শুধুমাত্র তাশাহুদ পাঠ করবে, দরূদ শরীফ এবং দু‘আ পাঠ করবে না। বরং ছুটে যাওয়া নামায আদায় করে শেষ রাকাতে তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দু‘আ পাঠ করে সালাম ফিরাবে।
নোট: বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মাসায়ালা-মাসায়েল ও বিশেষত নামায সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আমার লিখিত র্কুরাতুল উয়ুন লিমানিল মু’মিনুনাল মুখলিসুন, তরিকুস সালাত ‘আলা ছাবিলিল ইজাজ বিল-মাযহাবিল হানাফী, মুনিয়াতুল মোছলেমীন ১ম, ২য় খণ্ড, ফতোয়া আজিজিয়া ১ম, ২য় খন্ড ইত্যাদি কিতাবগুলো দেখুন।
সমাপ্ত