ইলিম অন্বেষণ করলে পূর্ববর্তী গোনাহ মাফ
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُعَلَّى، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ خَيْثَمَةَ، عَنْ أَبِي دَاوُدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَخْبَرَةَ، عَنْ سَخْبَرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ، كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضَى
-“হযরত সাখবারাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি ইলিম অন্বেষণ করবে, তার জন্যে তার পূর্ববর্তী পাপ সমূহ কাফ্ফারা হয়ে যাবে।” ৭৯৯৯৯, জামে তিরমিজি শরীফ, হদিস নং ২৬৪৮; সুনানে দারেমী শরীফ, ১ম খন্ড, ১৪৯ পৃ: হাদিস নং ৫৮০; ইমাম ইবনে কানেঈ: মুজামু ছাহাবা, ১ম খন্ড, ৩২১ পৃ:; ইমাম আবু নুয়াইম: মারেফাতুস সাহাবা, হাদিস নং ৩৬৫৬; ইমাম ইবনুল আছির: উসদুল গাবা, ১৯৪৩ নং রাবীর ব্যাখ্যা; ইমাম আসকালানী: আল ইছাবা ফি তামিজিছ ছাহাবা, রাবী নং ৩১০৫; ইমাম ছিয়তী: জামেউস ছাগীর, হাদিস নং ১২৪৬১; মেসকাত শরীফ, ২২১ নং হাদিস; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১ম খন্ড, ৪৩৬ পৃ:; জামেউল উসুল, হাদিস নং ৫৮২৮; তুহফাতুল আশরাফ, হাদিস নং ৩৮১৩; হাফিজ ইবনে কাছির: জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান, ৩য় খন্ড, ২৬৫ পৃ:; ইত্তেহাফু মিহরাত, হাদিস নং ২৪৬০৬; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ১২০১৩; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২৮৭০০; মুসনাদে জামে, হাদিস নং ৩৯৮৮;
এই হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম তিরমিজি (র:) বলেছেন:
هَذَا حَدِيثٌ ضَعِيفُ الإِسْنَادِ، -“এই হাদিসের সনদ দূর্বল।” ৮০০৮০০, তিরমিজি শরীফ, মেরকাত, ১ম খন্ড, ৪৩৭ পৃ:;
ইমাম মিযযী (র:) বলেন, هَذَا حديث ضعيف الإسناد، -“এই হাদিসের সনদ দ্বায়িফ ।” ৮০১১, ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, ২১৮৫ নং রাবীর ব্যাখ্যায়;
কারণ বর্ণনাকারী ‘আবু দাউদ আ’মা’ أَبُو دَاوُدَ الأَعْمَى এর সম্পূর্ণ নাম হল,نُفَيْعُ بْنُ الْحَارِثِ الْهَمْدَانِيُّ، ‘নুফাঈ ইবনুল হারেছ হামদানী’। ইমামগণের নিকেট সে দুর্বল রাবী।
এই হাদিসের রাবী عبد الله بن سخبرة ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারা’ সম্পর্কে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মাকদেছী (র:) ওফাত ৩০১ হিজরী ও ইমাম বুখারী (র:) বলেন,
أبو معمر صاحب ابن مسعود وهو عبد الله بن سخبرة -“আবু মামার ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর সঙ্গী হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারা (র:)।” ৮০২২, তারিখু ওয়াল আসমাউল মুহাদ্দেছীন ওয়া কুনাহুম, রাবী নং ৫৩৬; ইমাম বুখারী: তারিখুল কবীর, রাবী নং ২৮০;
ইমাম ইবনে হিব্বান (র:) তাকে الثقات ‘বিশ্বস্তদের’ অন্তর্ভূক্ত করেছেন। দেখুন ‘কিতাবুস সিক্বাত’ রাবী নং ৩৬৬২। ইমাম ইবনে শাহীন (র:) ওফাত ৩৮৫ হিজরী বলেন,
أَبُو معمر عبد الله بن سَخْبَرَة كُوفِي ثِقَة قَالَه يحيى -“আবু মামার আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারাহ কূফী একজন বিশ্বস্ত রাবী এরূপ বলেছেন ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (র:)।” ৮০৩৩, তারিখু আসমাউ ছিক্বাত, রাবী নং ৬৮৩;
ইমাম ইজলী (র:) ওফাত ২৬১ হিজরী বলেন,
عبد الله بن سَخْبَرَة أَبُو معمر من أَصْحَاب عبد الله ثِقَة -“আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারাহ আবু মামার ছিলে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর সঙ্গী, সে বিশ্বস্ত।” ৮০৪৪, ইমাম ইজলী: ছিক্বাত, রাবী নং ৮৯২;
এই রাবী সম্পর্কে ইমাম ফালুজী আছরী (র:) ও ইমাম হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী (র:) বলেন,
أبو معمر، هو: عبد الله بن سخبرة، الأزدي، ويقال: الأسدِي، الكوفي، توفي في إمارة عبيد الله بن زياد، من الثانية، ثقة.
-“আবু মামার আর তিনি হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারা আজদী, তাকে উসাদী আল-কূফী বলা হয়। উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ এর যুগে সে মারা যায়। সে বিশ্বস্ত রাবী।” ৮০৫৫, ইমাম ইবনে জারির তাবারী: মুজামুস ছাগীর, রাবী নং ৫৯৮৬; ইমাম আসকালানী: আল ইছাবা ফি তামিজিছ ছাহাবা, রাবী নং ৩১০৫; ইমাম আসকালানী: তাকরিবুত তাহজিব, রাবী নং ৩৩৪১;
হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (র:) আরো বলেন,
قال أبو بكر بن أبي خيثمة عن يحيى بن معين ثقة وذكره ابن حبان في الثقات قال ابن سعد وهو ثقة وله أحاديث وقال العجلي كوفي تابعي ثقة.
-“আবু বকর ইবনে হাইছামা ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (র:) হতে বর্ণনা করেন, সে বিশ্বস্ত। ইবনে হিব্বান (র:) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ইবনে সা’দ (র:) বলেন: সে বিশ্বস্ত, তার একাধিক রেওয়ায়েত রয়েছে। ইমাম ইজলী (র:) বলেন: কূফী তাবেঈ ছিলেন এবং বিশ্বস্ত।” ৮০৬৬, ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৩৯৭;
ইমাম যাহাবী (র:) বলেন,
تَابِعِيٌّ مَشْهُورٌ، وُلِدَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَثَّقَهُ ابْنُ مَعِينٍ.
-“সু-পরিচিত তাবেঈ ছিলেন। সে রাসূলে পাক (ﷺ) এর যুগেই জন্মগ্রহণ করেছিল। ইবনে মাঈন (র:) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।” ৮০৭৭, ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, রাবী নং ৫৩;
ইমাম মিযযী (র:) বলেন,
قال أَبُو بكر بْن خيثمة، عَنْ يحيى بْن مَعِين: ثقة. وذكره ابنُ حِبَّان فِي كتاب الثقات
-“আবু বকর হাইছামা হযরত ইবনে মাঈন (র:) থেকে বর্ণনা করেন, সে বিশ্বস্ত। ইবনে হিব্বান (র:) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” ৮০৮৮, ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩২৯১;
আল্লামা হাফিজ ইবনে কাছির (র:) বলেন,
أبو مَعْمَر: عبد الله بن سَخْبَرَة الأَزْديُّ، تابعي -“আবু মামার আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারাহ আজদী ছিলেন তাবেঈ।” ৮০৯৯, হাফিজ ইবনে কাছির: তাকমিল ফি জারহি ওয়া তাদিল, ৩য় খন্ড, ৪৫০ পৃ:;
ইমাম আবু হাতিম রাজী (র:) বলেছেন, سألت يحيى بن معين عن أبي معمر فقال: كوفي ثقة.
-“আমি ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (র:) কে আবু মামার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন: কূফী বিশ্বস্ত।” ৮১০১০, জারাহ ওয়া তাদিল, রাবী নং ৩২১;
দেখুন এতজন ইমাম ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ছাখবারাহ’ সম্পর্কে তাবেঈ, বিশ্বস্ত বলার পরেও জনাব আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব তিনার ‘হাদিসের নামে জালিয়াতী’ বইয়ের ৪৫২ পৃষ্টায় লিখেছেন- “আব্দুল্লাহ ইবনু ছাখবারাহ নামক ব্যক্তিটিও অপরিচিত।” মিথ্যাচারিতা কাকে বলে দেখুন!
এই হাদিসের আরেকজন রাবী ‘ছাখবারাহ’ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র:) বলেন, سَخْبَرَة الْأَزْدِيّ لَهُ صُحْبَة روى عَنهُ عبد الله ابْنه -“ছাখবারাহ আজদী (رضي الله عنه) সাহাবী ছিলেন, তার থেকে তদীয় সন্তান আব্দুল্লাহ রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন।” ৮১১১১, দোয়াফাই ছাগীর, রাবী নং ১৫৯; ইমাম বুখারী: তারিখুল কবীর, রাবী নং ২৫২৭;
ইমাম ইবনে হিব্বান (র:) তাকে ‘কিতাবুস সিক্বাত’-এ এভাবে উল্লেখ করেছেন, سَخْبَرَة الْأَزْدِيّ وَالِد عَبْد اللَّه بْن سَخْبَرَة يُقَال إِن لَهُ صُحْبَة
-“ছাখবারাহ আজদী (رضي الله عنه) ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারাহ এর পিতা। তাকে সাহাবী বলা হয়েছে।” ৮১২১২, কিতাবুস সিক্বাত, রাবী নং ৬০৬;
‘ছাখবারা’ সম্পর্কে হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী (র:) বলেন,
صحابي في إسناد حديثه -“তিনি সাহাবী ছিলেন, তার থেকে বর্ণিত হাদিসের সনদ দুর্বল।” ৮১৩১৩, ইমাম আসকালানী: তাকরীতুত তাহজিব, রাবী নং ২২১৩;
মুহাম্মদ ইবনে হুছাইন মুছিলী আজদী ওফাত ৩৭৪ হিজরী ও ইমাম আবু হাতিম (র:) বলেন, سخبرة الأزدي، له صحبة، -“ছাখবারাহ আজদী (رضي الله عنه) সাহাবী ছিলেন।” ৮১৪১৪, জিকরু ইমে কুল্লে ছাহাবী, রাবী নং ২৩৭, জারাহ ওয়া তাদিল, রাবী নং ১৩৯১;
ইমাম ইবনে আছির (র:) ওফাত ৬৩০ হিজরী, হাফিজ ইবনে আব্দিল র্বাররর (র:) ও ইমাম মিযযী (র:) বলেন:
سخبرة، والد عَبد اللَّهِ بْن سخبرة، يقال: لَهُ صحبة. -“ছাখবারাহ (رضي الله عنه) ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারাহ (র:) এর পিতা, তাকে সাহাবী বলা হয়।” ৮১৫১৫, ইমাম ইবনুল আছির: উসদুল গাবা, রাবী নং ১৯৪৩; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২১৮৫; ইসতিআব বি’মারিফাতিল আসহাব, রাবী নং ১১৩০;
এতজন ইমাম হযরত ছাখবারাহ (رضي الله عنه) কে সাহাবী হিসেবে উল্লেখ করার পরেও জনাব আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব তিনার ‘হাদিসের নামে জালিয়াতী’ বইয়ের ৪৫২ পৃষ্টায় লিখেছেন- “অনুরূপভাবে এ ‘সাখবারাহ’ নামক সাহাবীর কথাও এ ‘অন্ধ আব্দুল্লাহ’ ছাড়া কেউ কখনো উল্লেখ করেন নি।”
দেখুন পিতার কথা বিশ্বস্ত সন্তান উল্লেখ করে হাদিস বর্ণনা করাতেও সমালোচনা করলেন।! বড়ই হাস্যকর!! উল্লেখিত বর্ণনার আলোকে বলা যায়, এই হাদিসের মান হাছান অথবা ছহীহ্ পর্যায়ের হবে। কারণ সাহাবী ‘ছাখবারাহ’ ও তদীয় পুত্র তাবেঈ ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারাহ’ উভয়েই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য রাবী। ইমামগণ তাদের ব্যাপারে সু-স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
অথচ ভূয়া তাহকিক কারী নাছিরুদ্দিন আলবানী ও তার অন্ধ অনুসারী মুজাফ্ফর বিন মহসিন বলেছে,
ولا نعرف لعبد الله بن سخبرة كبير شيء، ولا لأبيه، -“আমি আব্দুল্লাহ ইবনে ছাখবারাহ সম্পর্কে বেশী কিছু জানিনা এবং তার পিতা সম্পর্কেও জানিনা।” ৮১৬১৬, আলবানী: ছিলছিলায়ে জয়ীফা, ১০ম খন্ড, ৩০ পৃ:;
আশ্চর্যের বিষয় হল, যিনি হাদিস বর্ণনা করেছেন তিনি হাদিস খানাকে ‘জাল’ বলেননি, এবং কোন ইমাম’ই হাদিসটিকে ‘মওজু’ বলেননি। অথচ ভূয়া তাহকিক কারী নাছিরুদ্দিন আলবানী হাদিস খানাকে ‘জাল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আর এ কথা সকলেই অবগত আছেন, উৎসাহ প্রদানে ও ফাজায়েলের ক্ষেত্রে ‘দ্বায়িফ’ হাদিস গ্রহণযোগ্য।