প্রিয় নবীজি (ﷺ) আল্লাহকে উত্তম সূরতে দেখেছেন
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَائِشٍ الْحَضْرَمِيِّ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: رَأَيْتُ رَبِّيَ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ
-“হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: আমি আমার রবকে উত্তম সূরতে দেখেছি।” ৫০৭৭, ইমাম ইবনে সা’দ: তবকাতুল কুবরা, ৩৭৯৮ নং রাবীর ব্যাখ্যায়; ইবনে আবী হায়ছামা ওফাত ২৭৯ হিজরী: তারিখুল কবীর, রাবী নং ১২৪৮ এর ব্যাখ্যায়; হাফিজ ইবনে কাছির: জামেউল মাছানিদ ওয়াছ ছুনান, ৮ম জি: ২২২৫ পৃ:; ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৩৪তম খন্ড, ৪৬১ পৃ:; তিরমিজি শরিফ, ২য় জি: ১৬৪ পৃ:; তাফছিরে ইবনে কাছির, ৪র্থ খন্ড, ২৯৫ পৃ:; তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ২৫০ পৃ:;
সনদ ও মতনসহ হাদিসটি নিম্নরূপ,
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُبَارَكِ، حَدَّثَنِي الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنِي ابْنُ جَابِرٍ، عَنْ خَالِدِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، وَسَأَلَهُ، مَكْحُولٌ أَنْ يُحَدِّثَهُ، قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَائِشٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: رَأَيْتُ رَبِّي فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ
-“মাকহুল বলেন আমি আব্দুর রহমান ইবনে আইশ (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: আমি আমার রবকে উত্তম সূরতে দেখেছি।” ৫০৮৮, সুনানে দারেমী, হাদিস নং ২১৯৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ২৬০৮; ইমাম ইবনে আছেম: আল আহাদু ওয়া মাছানি, হাদিস নং ২৫৮৫; ইবনে খুজাইমা: আত তাওহীদ, হাদিস নং ৫৪; ইমাম তাবারানী: মুসনাদে শামেঈন, হাদিস নং ৫৯৭; ইমাম দারে কুতনী: রুইয়াতুল্লাহি, হাদিস নং ২৩৯;
এই সম্পর্কে ৩টি হাদিস উল্লেখ করে ইমাম হায়ছামী (رَحْمَةُ الله عليه) বলেন,
رَوَاهُ كُلَّهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُ الْحَدِيثِ الَّذِي فِيهِ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثِقَاتٌ، وَكَذَلِكَ الرِّوَايَةُ الْأُولَى،
-“প্রত্যেকটি রেওয়ায়েত ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাদের দিকে বের হয়ে আসলেন..’ এই হাদিসের সকল রাবীগণ বিশ্বস্ত যেমনটি প্রথম রেওয়ায়েত টি।” ৫০৯৯, ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১১৭৪১;
এই হাদিস সম্পর্কে লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী পর্যন্ত صحيحٌ ছহীহ্ বলতে বাধ্য হয়েছেন। দেখুন ছিলছিলায়ে ছহীহা, হাদিস নং ৩১৬৯।
عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَائِشٍ “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ (رضي الله عنه)” কে অনেকে সাহাবী নয় বলে হাদিসটিকে ‘মুরছাল’ বলে উড়িয়ে দিতে চান। অথচ তাঁর ব্যাপারে ইমামগণের অভিমত হল:
ذكره في الصحابة: محمد بن سعد والبخاري وابو زرعة الدمشقي والبغبوي وابو زرعة الحراني وابن حبان ابن السكن وغيرهم
-“ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সাদ (رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম বুখারী (رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম আবু যুরাআ দামেস্কী (رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম বাগভী (رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম আবু যুরাআ হারানী (رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম ইবনে ছুকান (رَحْمَةُ الله عليه) ও অন্যান্য ইমামগণ তাঁকে সাহাবী বলে উল্লেখ করেছেন।” ৫১০১০, হাফিজ ইবনে কাছির: জামেউল মাসানিদ ওয়াছ সুনান, ৮ম জি: ২২২৫ পৃ:;
ইমাম ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه) বলেন,
عَبْد الرَّحْمَن بْن عائش الْحَضْرَمِيّ لَهُ صُحْبَة -“আব্দুর রহমান ইবনে আইশ (رضي الله عنه) ছিলেন সাহাবী।” ৫১১১১, ইমাম ইবনে হিব্বান: কিতাবুছ ছিক্বাত, রাবী নং ৮৩৮;
আল্লামা ইমাম ইবনে আসাকির (رَحْمَةُ الله عليه) বলেন,
عبد الرحمن بن عائش الحضرمي له صحبة وقيل لا صحبة له
-“আব্দুর রহমান ইবনে আইশ হাদ্বরামী (رضي الله عنه) ছিলেন সাহাবী, কেউ কেউ বলেছেন তিনি সাহাবী নন।” ৫১২১২, ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, রাবী নং ৩৮৪২;
ইবনে আসাকির (رَحْمَةُ الله عليه) ‘সাহাবী নন’ এই কথাকে قيل (ক্বিলা) শব্দ প্রয়োগ করে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। এই রাবী সম্পর্কে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رَحْمَةُ الله عليه) বলেন,
وقال ابن السكن: يقال له صحبة. وذكره في الصحابة محمد بن سعد، والبخاري، وأبو زرعة الدمشقيّ، وأبو الحسن بن سميع، وأبو القاسم البغوي، وأبو زرعة الحرّاني وغيرهم.
-“ইবনে সুকান (رَحْمَةُ الله عليه) বলেন তিনি সাহাবী ছিলেন। মুহাম্মদ ইবনে সা’দ (رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম বুখারী (رَحْمَةُ الله عليه), আবু যুরাআ দামেস্কী (رَحْمَةُ الله عليه), আবুল হাছান ইবনে সামী (رَحْمَةُ الله عليه), আবুল কাশেম বাগভী (رَحْمَةُ الله عليه), আবু যুরাআ হারানী (رَحْمَةُ الله عليه) ও অন্যান্যরা তাকে সাহাবী বলেছেন।” ৫১৩১৩, ইমাম আসকালানী: আল ইছাবা ফি তামিজিয ছাহাবা, রাবী নং ৫১৬৪;
এ ছাড়াও এই হাদিসের আরেকটি সনদ রয়েছে,
وَقَالَ يَزِيدُ بْنُ يَزِيدَ بْنِ جَابِرٍ: عَنْ خَالِدِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَائِشٍ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
وَقَالَ خَارِجَةُ بْنُ مُصْعَبٍ: عَنْ يَزِيدَ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ خَالِدِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَيَّاشٍ، عَنْ بَعْضِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَৃ
-“হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) এর এক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন.. পূর্বের হাদিসের অনুরূপ।”
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ (رضي الله عنه) নবী পাকের কিছু সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন,... পূর্বের হাদিসের অনুরূপ।” ৫১৪১৪, ইলালে দারে কুতনী, ৯৭৩ নং হাদিস;
আরেকটি সূত্রেও হাদিসটি বর্ণিত আছে,
فقال يَحْيى بن أبي كثير: عن أبي سلام ممطور عن عَبْد الرَّحْمن بن عائش عن مَالِك بن يخامر عن مُعَاذ بن جبل.
-“ইয়াহইয়া ইবনে কাছির বর্ণনা করেন আবী সালাম মামতুর হতে, তিনি আব্দুর রহমান ইবনে আইশ (رضي الله عنه) থেকে তিনি হযরত মালেক ইবনে ইউখামির (رضي الله عنه) হতে, তিনি হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (رضي الله عنه) হতে,... পূর্বের হাদিসের অনুরূপ।” ৫১৫১৫, ইমাম দারে কুতনী: মু’তালিফু ওয়াল মুখতালিফু, ৩য় খন্ড, ১৫৫৮ পৃ:;
তাই হাদিসটি কোন দিকেই ‘মুরছাল’ নয়, বরং ‘মুত্তাছিল ছহীহ্’ তথা ধারাবাহিক সনদ পরম্বরায় সরাসরি রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে প্রমাণিত বিশুদ্ধ হাদিস। আফছুছ! বাতিল পন্থিরা عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَائِشٍ হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ (رضي الله عنه) কে কিভাবে ‘সাহাবী নয়’ বলেন? হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকেও হাদিসটি আরেকটি সূত্রে বর্ণিত আছে,
حَدَّثنا مُحَمَّدُ بْنَ الْمُثَنَّى، قَال: حَدَّثنا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، قَال: حَدَّثني أَبِي عَنْ قَتَادَةَ، عَن أَبِي قِلاَبَةَ عَنْ خَالِدِ بْنِ اللَّجْلاجِ عَنْ عَبد اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، رَضِي اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم قَالَ: رَأَيْتُ رَبِّي فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: আমি আমার রবকে উত্তম সূরতে দেখেছি।” ৫১৬১৬, মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ৪৭২৭; ইমাম ইবনে খুজাইমা: আত তাওহীদ, হাদিস নং ৫৬; ইমাম দারা কুতনী: রুইয়াতুল্লাহি, হাদিস নং ২৬৭;
হাদিসাট আরেকটি সূত্রেও বর্ণিত আছে,
حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ مَالِكٍ الْفَزَارِيُّ الْكُوفِيُّ، ثنا عَبَّادُ بْنُ يَعْقُوبَ الْأَسَدِيُّ، ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِي رَافِعٍ، قَالَ:ৃ فَقَالَ: رَأَيْتُ رَبِّي فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ،
-“হযরত আবী রাফে (رضي الله عنه) বলেন,... অত:পর নবীজি (ﷺ) বলেন: আমি আমার রবকে উত্তম সূরতে দেখেছি।” ৫১৭১৭, ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৯৩৮; ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১২২২;
এর বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত রয়েছে,
نعيم: حدثنا ابن وهب، قال: حدثنا عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِلَالٍ، عَنْ مَرْوَانَ بْنِ عُثْمَانَ، عَنْ عِمَارَةَ بْنِ عَامِرٍ، عَنْ أُمِّ الطُّفَيْلِ أَنَّهَا سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: رَأَيْت ربي في أحسن صورة،
-“হযরত উম্মে তোফাইল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন: আমি আমার রবকে উত্তম সূরতে দেখেছি।” ৫১৮১৮, ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৫ম খন্ড, ৭১০ পৃ:; মুশকিলুল হাদিস ওয়া বায়ানিহী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃ:;
এই হাদিসটি ভিন্ন আরেকটি সূত্রেও বর্ণিত আছে,
حَدِيثٌ آخر نا أَبُو مَنْصُورِ بْنُ خَيْرُونَ وَالْقَزَّازُ قَالا نا عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ المأمون قال نا الدارقطني قَالَ نا أَبُو بَكْرٍ أَحْمَدُ بْنُ عِيسَى بْنِ عَلِيٍّ الْخَوَّاصُ قَالَ نا سُفْيَانُ بْنُ زِيَادِ بْنِ آدَمَ قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو رَبِيعَةَ فَهْدُ بْنُ عَوْفٍ قَالَ نا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَأَيْتُ رَبِّي فِي أَحْسَنِ صورة.
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: আমি আমার রবকে উত্তম সূরতে দেখেছি।” ৫১৯১৯, ইলালু মুতানাহিয়া ফি আহাদিসিল ওয়াহিয়া, হাদিস নং ১৯;
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর হাদিস উল্লেখ করে হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে কাছির (র:) বলেন:
فَإِنَّهُ حَدِيثٌ إِسْنَادُهُ عَلَى شَرْطِ الصَّحِيحِ -“নিশ্চয় এই হাদিসের সনদ ছহীহ্ শর্ত গুলো রয়েছে।” ৫২০২০, তাফছিরে ইবনে কাছির, ৪র্থ খন্ড, ২৯৫ পৃ:;
বিভিন্ন কিতাবে একাধিক রাবী হতে ছহীহ্, হাছান ও দ্বায়িফ সব ধরণের সনদ দ্বারা হাদিসটি বর্ণিত, তাই হাদিস খানা বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী।