উম্মতের এখতেলাফ রহমত

اخْتِلافُ أُمَّتِي رَحْمَةٌ

-“আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: আমার উম্মতের ইখতেলাফ রহমত।” ৩৮৮৮৮, ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, ১ম জি: ২৪ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৪৪৮; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, ১০খন্ড, ৫৯ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিছ, হাদিস নং ৮৭৪; ইমাম ছাখাভী: মাকাছিদুল হাছানা, ২৬ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ৫৬ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী মওজুয়াতুল কোবরা, ৫১ পৃ:; মওজুয়াতুল কবীর, ২৬ পৃ:;

ইমাম আবু বকর বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর ‘মাদখাল’ গ্রন্থে যে রেওয়ায়েতটি সনদসহ উল্লেখ করেছেন তাহল এভাবে:-

أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْحَافِظُ، وَأَبُو بَكْرٍ أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ ,قَالَا: ثنا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ يَعْقُوبَ ,ثنا بَكْرُ بْنُ سَهْلٍ الدِّمْيَاطِيُّ، ثنا عَمْرُو بْنُ هَاشِمٍ الْبَيْرُوتِيُّ، ثنا سُلَيْمَانُ بْنُ أَبِي كَرِيمَةَ، عَنْ جُوَيْبِرٍ، عَنِ الضَّحَّاكِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَهْمَا أُوتِيتُمْ مِنْ كِتَابِ اللَّه فَالْعَمَلُ بِهِ لا عُذْرَ لأَحَدٍ فِي تَرْكِهِ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي كِتَابِ اللَّه فَسُنَّةٌ مِنِّي مَاضِيَةٌ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ سُنَّةً مِنِّي فَمَا قَالَ أَصْحَابِي، إِنَّ أَصْحَابِي بِمَنْزِلَةِ النُّجُومِ فِي السَّمَاءِ، فَأَيُّمَا أَخَذْتُمْ بِهِ اهْتَدَيْتُمْ، وَاخْتِلافُ أَصْحَابِي لَكُمْ رَحْمَةٌ،

-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব দেওয়া হয়েছে তোমরা ইহার উপর আমল কর। আমল তরক করার জন্য কোন ওজর খুজবেনা। যখন কোন বিষয় কিতাবুল্লাহ এর মধ্যে না থাকবে তখন আমার সুন্নাহ রয়েছে। আর যখন আমার সুন্নাহ’র মধ্যে না থাকবে তখন আমার সাহাবীদের কথা লক্ষ্য করবে। নিশ্চয় আমার সাহাবীগণ আকাশের তারার মত, যেকোন একটিকে গ্রহণ করলে হেদায়েতের রাস্তা পেয়ে যাবে। আর আমার সাহাবীদের এখতেলাফ বা মতানৈক্য তোমাদের জন্য রহমত।”  ৩৮৯৮৮,  ইমাম বায়হাক্বী: আল মাদখাল, হাদিস নং ১৫২; ইমাম ছিয়তী; জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ২৪৩৫৫; ইমাম ছাখাভী: মাকাছিদুল হাছানাহ, ৩৯ নং হাদিস; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ১০০২; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১৫৩;

এই হাদিসের সনদের মান সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস, ইমাম যায়নুদ্দিন ইরাকী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৮০৬ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেছেন,
ذكره الْبَيْهَقِيّ فِي رسَالَته الأشعرية تَعْلِيقا وأسنده فِي الْمدْخل من حَدِيث ابْن عَبَّاس بِلَفْظ اخْتِلَاف أَصْحَابِي لكم رَحْمَة وَإِسْنَاده ضَعِيف.
-“ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর ‘রেছালায়ে আশয়ারীয়া’ গ্রন্থে তা’লিক রূপে বর্ণনা করেছেন। ইহা সনদসহ ‘মাদখাল’ গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে এই শব্দে রয়েছে: আমার সাহাবীদের এখতেলাফ বা মতানৈক্য তোমাদের কাছে রহমত। এর সনদ দ্বায়িফ ।” ৩৯০ ৯০, হাফিজ ইরাকী: তাখরিজু আহাদিসুল এহইয়া, ১নং হাদিস;

এ বিষয়ে হাফিজুল হাদিস, ইমাম শামছুদ্দিন ছাখাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
وفي المدخل له من حديث سفيان عن أفلح بن حميد عن القاسم بن محمد قال: اختلاف أصحاب محمد صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رحمة لعباد اللَّه،
-“মাদখালে রয়েছে.. হযরত কাশেম ইবনে মুহাম্মদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর সাহাবীগণের এখতেলাফ আল্লাহর বান্দাদের জন্য রহমত।” ৩৯১৯১,  ইমাম ছাখাভী: মাকাছিদুল হাছানাহ, ৩৯ নং হাদিস;

 এ বিষয়ে ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেন,
وَفِي مُسْنَدِ الْفُرْدَوْسِ مِنْ طَرِيقِ جُوَيْبِرٍ عَنِ الضَّحَّاكِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ مَرْفُوعًا اخْتِلَافُ أَصْحَابِي لَكُمْ رَحْمَةٌ 
-“মুসনাদে ফেরদৌছে রয়েছে.. হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) মারফূরূপে বর্ণনা করেন, আমার সাহাবীদের এখতেলাফ তোমাদের জন্য রহমত।”  ৩৯২৯২, আদ দুরারুল মুনতাশিরা, হাদিস নং ৬; আসরারুল মারফুয়া, ১৭ নং হাদিস;

ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) আরো উল্লেখ করেন,
وَذَكَرَ ابْنُ سَعْدٍ فِي طَبَقَاتِهِ عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَّمَدٍ قَالَ كَانَ اخْتِلَافُ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَحْمَةٌ لِلنَّاسِ
-“ইবনে সা’দ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর তাবকাতে হযরত কাশেম ইবনে মুহাম্মদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: নবী মুহাম্মদ (ﷺ)এর সাহাবীগণের এখতেলাফ মানুষের জন্য রহমত।”  ৩৯৩৯৩, ইমাম ছিয়তী: আদ দুরারুল মুনতাশিরা, হাদিস নং ৬; ইমাম মোল্লা আলী: আসরারুল মারফুয়া, ১৭ নং হাদিস;

এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বক্তব্য হল,
قَالَ الْبَيْهَقِيُّ رَحِمَهُ اللَّهُ: هَذَا حَدِيثٌ مَتْنُهُ مَشْهُورٌ ,وَأَسَانِيدُهُ ضَعِيفَةٌ ,لَمْ يَثْبُتْ فِي هَذَا إِسْنَادٌ وَاللَّهُ أَعْلَمُ
-“ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: এই হাদিসের মতন সু-পরিচিত আর সনদ সমূহ দ্বায়িফ। এই সনদটি প্রমাণিত নয়, আল্লাহই সর্বোজ্ঞ।”  ৩৯৪৯৪, ইমাম বায়হাক্বী: আল মাদখাল, ১ম খন্ড, ১৬৩ পৃ: হাদিস নং  ১৫৪ এর ব্যাখ্যায়;

অর্থাৎ ইমাম বায়হাক্বীর (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর তাহকিকে হাদিসটি ছহীহ সনদে প্রমাণিত নয় বরং হাছান অথবা দ্বায়িফ সনদের। 
এই হাদিস উল্লেখ করে আল্লামা ইসমাঈল আজলুনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ইমাম শামছুদ্দিন ছাখাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) লিখেছেন,
قال في المقاصد: رواه البيهقي في المداخل بسند منقطع عن ابن عباس 
-“ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ‘মাদ্বাখিলে’ মুনকাতে সনদে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।”  ৩৯৫৯৫,  ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ২৬ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ৫৬ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মওজুয়াতুল কোবরা, ৫১ পৃ:;

হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رضي الله عنه) এই হাদিস সম্পর্কে বলেন:
 أنه حديث مشهور على الألسنة-“নিশ্চয় ইহা লোক মুখে প্রসিদ্ধ হাদিস।” ৩৯৬৯৬,  ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ২৭ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ৫৭ পৃ:;
 ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেছেন,
وَقَالَ السُّيُوطِيُّ أَخْرَجَهُ نَصْرُ الْمَقْدِسِيُّ فِي الْحُجَّةِ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي الرِّسَالَةِ الْأَشْعَرِيَّةِ بِغَيْرِ سَنَدٍ

-“ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, ইমাম নছর মাকদেছী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় হুজ্জাত গ্রন্থে ইহা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় ‘রিছালাতুল আশয়ারীয়া’ গ্রন্থে সনদবিহীন বর্ণনা করেছেন।”  ৩৯৭৯৭, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ১৭ এর ব্যাখ্যায়;

ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় ‘মাদখাল’ গ্রন্থে সনদসহ হাদিস বর্ণনা করেছেন, তারপরেও জনাব আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব তার ‘হাদিসের নামে জালিয়াতী’ বইয়ের ৪১৪ পৃষ্টায় মুহাদ্দিছগণের নাম বিক্রি করে লিখেছেন- “মুহাদ্দিছগণ ঘোষনা করেছেন যে, এ বাক্যটি হাদীস হিসাবে সমাজে বহুমুখে প্রচারিত হলেও কোন হাদিসের গ্রন্থে এ হাদিসটি সনদসহ পাওয়া যায়না। কোন ছহীহ্, যয়ীফ বা জাল সনদেও এ কথাটি বর্ণিত হয়নি।” প্রিয় পাঠক! আপনারাই বলুন, এটাকি ইমামগণের নামে জালিয়াতী নয়? 
সুতরাং হাদিসটি সনদসহ ও সনদ বিহীনভাবে বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত রয়েছে। এই হাদিস দ্বারা বুজা যায় যে, উম্মতের এখতেলাফ আর সাহাবীদের এখতেলাফ একই কথা কারণ সাহাবীগণও নবীজির উম্মত। সুতরাং সবগুলো সনদ মিলিয়ে হাদিসটি ক্বাবী বা শক্তিশালী। 
Top