প্রিয় নবীজি (ﷺ) এলেমের শহর হযরত আলী (رضي الله عنه) তার দরজা

حَدَّثَنَا الْمَعْمَرِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الصَّائِغُ الْمَكِّيُّ، قَالَا: ثنا عَبْدُ السَّلَامِ بْنُ صَالِحٍ الْهَرَوِيُّ، ثنا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا فَمَنْ أَرَادَ الْعِلْمَ فَلْيَأْتِهِ مِنْ بَابِهِ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: আমি এলেমের শহর হযরত আলী তার দরজা। যে সেই এলেম অর্জনের ইচ্ছা করবে সে ঐ দরজা হয়েই আসবে।”  ৫৩০৩০,  ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ১১০৬১; মুস্তাদ্রাকে হাকেম, ৫ম খন্ড, ১৭৪৩ পৃ: হাদিস নং ৪৬৩৭; ইমাম ইবনে জারির তাবারী: তাহজিবুল আছার, হাদিস নং ১৭৩; হাফিজ উকাইলী: দোয়াফাইল কবীর, ৩য় খন্ড, ১৪৯ পৃ: হাদিস নং ১১৩৪; তারিখে বাগদাদ, ৫ম খন্ড, ৫৭১ পৃ:; মুজামে ইবনে মুকরী, হাদিস নং ১৭৫; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১১ তম খন্ড, ২৫২ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিছ, ২য় খন্ড, ১৮৮ পৃ:; ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৪৬৭০; তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৫ম খন্ড, ৩১১ পৃ:;

এই হাদিসের সনদে 
عَبْد السلام بْن صالِح بْن سُلَيْمَان بْن أيّوب بْن ميسرة، أَبُو الصَّلْت (আব্দুস সালাম ইবনে ছালেহ্ ইবনে সুলাইমান ইবনে আইয়ুব ইবনে মাইছারাহ আবুস সালত) নামক রাবী রয়েছে। অনেকে তার ব্যাপারে সমালোচনা করলেও ইমামদের অনেকে তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন লক্ষ্য করুন:-
وقال الدوري سمعت ابن معين يوثق أبا الصلت -“দাওরী বলেন, আমি ইবনে মাঈন (র:) কে ‘আবু সালত’ কে বিশ্বস্ত বলতে শুনেছি।”  ৫৩১৩১,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৬১৯;

وقال الحاكم وثقة أمام أهل الحديث يحيى بن معين -“ইমাম হাকেম বলেছেন: হাদিসের জগতের ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (র:) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।”  ৫৩২৩২,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৬১৯;

قَالَ الْحَاكِم أَبُو الصَّلْت ثِقَة مَأْمُون -“ইমাম হাকেম (র:) বলেন: আবু সালত বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য রাবী।”  ৫৩৩৩৩,  ইমাম ছিয়তী: আল লাআলী মাসনুয়া, ১ম খন্ড, ৩০৪ পৃ:;

وقال العجلي ثقة. -“ইমাম ইজলী (র:) বলেছেন: সে বিশ্বস্ত।”  ৫৩৪৩৪,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩২৯৬;

অতএব, এই রাবীর হাদিস হাছান বা ছহীহ্ পর্যায়ের। কারণ ইমামগণের অনেকে তার উপর নির্ভর করেছেন ও বিশ্বস্ত বলেছেন। তবে হাদিসটি ‘আবুস সালত আব্দুস সালাম’ ছাড়াও ভিন্ন আরেকটি সনদে বর্ণিত আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:-
حَدَّثَنَا بِصِحَّةِ، مَا ذَكَرَهُ الْإِمَامُ أَبُو زَكَرِيَّا، ثنا يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ، ثنا أَبُو الْحُسَيْنِ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ تَمِيمٍ الْقَنْطَرِيُّ، ثنا الْحُسَيْنُ بْنُ فَهْمٍ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ الضُّرَيْسِ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ الْفَيْدِيُّ، ثنا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:ৃ
-“ইমাম আবু যাকারিয়া উল্লেখ করেন- ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন হাদিস বর্ণনা করেন- আবু হুছাইন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে তামিম কানতারী- হুছাইন ইবনে ফাহম- মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে দুরাইছ- মুহাম্মদ ইবনে জাফর ফায়দী- আবু মুয়াবিয়া- আ’মাশ- মুজাহিদ- ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন:...।” (হাকেম)
এই হাদিসের সনদে সমালোচিত কোন রাবী নেই তাই ইহা শক্তিশালী। এর সনদে ‘মুহাম্মদ ইবনে জাফর ফায়দী’ রয়েছে, যার ব্যাপারে লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী বেহুদা সমালোচনা করার চেষ্টা করেছে অথচ ইমামদের কেউ তার ব্যাপারে কোন প্রকার সমালোচনা করেননি বরং ইমাম ইবনে হিব্বান (র:) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। যেমন:- ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (র:) বলেছেন: 
قد حَدَّث بِهِ مُحَمَّد بْن جَعْفَر الفيدي وَهُوَ ثِقَة -“এমনিভাবে মুহাম্মদ ইবনে জাফর ফায়দী হাদিস বর্ণনা করেছেন আর সে বিশ্বস্ত।”  ৫৩৫৩৫,  ইমাম ছিয়তী: আল লাআলী মাসনুয়া, ১ম খন্ড, ৩০৪ পৃ:;

ذكره بن حبان في الثقات -“ইমাম ইবনে হিব্বান (র:) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।”  ৫৩৬৩৬,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ১২৮;

روى عنه مسلم حديثا -“ইমাম মুসলীম (র:) তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।”  ৫৩৭৩৭,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ১২৮;

সুতরাং হাদিসটি ছহীহ্ সূত্রেও বর্ণিত আছে এবং এর একাধিক সূত্র রয়েছে। যেমন এর ভিন্ন আরেকটি সূত্র হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে,
حَدَّثَنِي أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْفَقِيهُ الْإِمَامُ الشَّاشِيُّ الْقَفَّالُ، بِبُخَارَى وَأَنَا سَأَلْتُهُ حَدَّثَنِي النُّعْمَانُ بْنُ الْهَارُونِ الْبَلَدِيُّ، بِبَلَدٍ مِنْ أَصْلِ كِتَابِهِ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ الْحَرَّانِيُّ، ثنا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، ثنا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ بَهْمَانَ التَّيْمِيِّ قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ، وَعَلِيٌّ بَابُهَا، فَمَنْ أَرَادَ الْعِلْمَ فَلْيَأْتِ الْبَابَ
-“হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: আমি এলেমের শহর হযরত আলী তার দরজা। যে সেই এলেম অর্জনের ইচ্ছা করবে সে ঐ দরজা হয়েই আসবে।”  ৫৩৮৩৮,  মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৪৬৩৯;

হাদিসটি আরেকটি সাহাবী থেকে ভিন্ন আরেকটি সূত্রে বর্ণিত আছে,
أخبرنا أبو المظفر عبد المنعم بن عبد الكريم وأبو القاسم زاهر بن طاهر قالا أنا أبو سعد محمد بن عبد الرحمن أنا أبو سعيد محمد بن بشر بن العباس أنا أبو لبيد محمد بن إدريس نا سويد بن سعيد نا شريك عن سلمة بن كهيل عن الصنابحي عن علي قال قال رسول الله (صلى الله عليه وسلم) أنا مدينة العلم وعلي بابها فمن أراد العلم فليأت باب المدينة
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন: আমি এলেমের শহর হযরত আলী তার দরজা। যে সেই এলেম অর্জনের ইচ্ছা করবে সে ঐ দরজা হয়েই আসবে।”  ৫৩৯৩৯,  তারিখে ইবনে আসাকির, ৪২তম খন্ড, ৩৭৮ পৃ:;

ইমাম তিরমিজি (র:), ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (র:) ও ইমাম আহমদ (র:) সামান্য শাব্দিক ব্যবধানে বর্ণনা করেছেন এভাবে:
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ: نا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الرُّومِيُّ قَالَ: نا شَرِيكٌ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ الصُّنَابِحِيّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ، وَعَلِيٌّ بَابُهَا .
-“হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: আমি গভীর জ্ঞানের গৃহ হযরত আলী তার দরজা।”  ৫৪০৪০,  ইমাম আহমদ: ফাদ্বাইলে সাহাবা, হাদিস নং ১০৮১; মেসকাত শরিফ, ৫৬৪ পৃষ্টা; তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৩৭২৩; শারিয়াতু লিল আজরী, হাদিস নং ১৫৫০; ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ১ম খন্ড, ৬৪ পৃ:;

এ বিষয়ে আরেকটি বর্ণনায় আছে এরূপ,
عن ابن مسعود رفعه: أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَأَبُو بَكْرٍ أَسَاسُهَا وَعُمَرُ حِيطَانُهَا وَعُثْمَانُ سَقْفُهَا وَعَلِيٌّ بَابُهَا 
-“হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন, নবীজি (ﷺ) বলেছেন: আমি এলেমের শহর, আবু বকর ইহার খুটি বা ভিত্তি,... হযরত আলী তার দরজা।”  ৫৪১৪১,  মুসনাদে ফেরদৌস, হাদিস নং ১০৫; আল ফেরদৌস, হাদিস নং ১০৫; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ১৮৫ পৃ:; ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ৯৭ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: আল লাআলী মাসনুয়া, ১ম খন্ড, ৩০৮ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১১ তম খন্ড, ২৫৩ পৃ:;

এই হাদিসটির প্রথম দিক ও শেষের দিক মিলালে উল্লেখিত হাদিসের সাথে হুবহু মিলে যায়। কোন কোন ইমাম হাদিসটিকে নিয়ে সমালোচনা করলেও সর্বজন মান্য ইমামগণ এই হাদিস সম্পর্কে কি মন্তব্য করেছেন নিচে লক্ষ্য করুন:-
ইমাম হাকেম নিছাপুরী (র:) কয়েকটি সনদ উল্লেখ করে প্রথম সনদটি সম্পর্কে বলেন: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ -“এই হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ।”  ৫৪২৪২,  হাকেম, ৫ম খন্ড, ১৭৪৩ পৃ:; কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ১৮৫ পৃ:; মাকাছিদুল হাছানা, ৯৭ পৃ:;

আফছুছের বিষয় হল, ইমাম হাকেম (র:) তার ‘আল মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে হাদিসটিকে স্পষ্ট ছহীহ্ বলার পরেও ইবনু ইউসূফ মাকদেছী তদীয় ‘আল ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে ভূয়া দাবী করেছেন যে, وَقَالَ الْحَاكِمُ: مَوْضُوعٌ. 
-“ইমাম হাকেম নাকি হাদিসটিকে মাওজু বলেছেন। ৫৪৩৪৩,  শাওকানী: ফাওয়াইদুল মওজুয়াহ, হাদিস নং ৫৭;

 (নাউজুবিল্লাহ)
অপর একটি দূর্বল সনদ উল্লেখ করে ইমাম হাকেম (র:) বলেন,
وَلِهَذَا الْحَدِيثِ شَاهِدٌ مِنْ حَدِيثِ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ بِإِسْنَادٍ صَحِيحٍ 
-“এই হাদিসের সমর্থনে সুফিয়ান ছাওরী (র:) থেকে বর্ণিত ছহীহ্ রেওয়ায়েত রয়েছে।”  ৫৪৪৪৪,  মুস্তাদরাকে হাকেম, ৫ম খন্ড, ১৭৪৪ পৃ:;

এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম ইবনে মাঈন (র:) ও খতিবে বাগদাদী (র:) এর অভিমত,
قال الْقَاسِمُ: سَأَلْتُ يَحْيَى بْنَ مَعِين عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ، فَقَالَ: هُوَ صَحِيحٌ. وقال الخطيب أراد أنه صحيح
-“কাশেম বলেন, আমি ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (র:) এই হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: ইহা ছহীহ্ হাদিস। খতিব (র:) বলেন: আমার জানামতে নিশ্চয় ইহা ছহীহ্ হাদিস।”  ৫৪৫৪৫,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৬১৯ নং রাবীর ব্যাখ্যায়; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৪২১ নং রাবীর ব্যাখ্যায়;

লক্ষ্য করুন, হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (র:) ও ইমাম মিযযী (র:) স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (র:) হাদিসটিকে ছহীহ্ বলেছেন, এর পরেও ইবনু ইউসূফ মাকদেছী তার ‘আল ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে ভূয়া দাবী করেছেন যে, ইমাম ইবনে মাঈন নাকি হাদিসটি ভিত্তিহীন বলেছেন। (নাউজুবিল্লাহ)
আরো আশ্চর্যের কথা হল, কওমী অঙ্গনের বড় আলিম জনাব মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবের তত্ত¡াবধানে ও নির্দেশনায় লিখিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ নামক বইয়ের চতুর্থ প্রকাশের ৬১ পৃষ্টায় লিখেছেন,
“ইমাম বুখারী (রাহ: ইন্তি- ২৫৬ হি:) বলেছেন: হাদিসটি মিথ্যা, এর কোন ভিত্তি নেই। অনুরূপ মন্তব্য করেছেন হাফিজুল হাদিস ইয়াহইয়া ইব্নে সাঈদ ও মুহাদ্দিস আবু হাতিম রাজী। হাফিজুল হাদিস ইমাম যাহবী, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা ও মুহাদ্দিস ইবনে জাওযীর মতে হাদিসটি মওজু। মুহাদ্দিস খতিব বাগদাদী (ইন্তি- ৪৬৩ হি:) উল্লেখ করেছেন যে, হাফিজুল হাদিস ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন (রাহ:) এর মতে হাদিসটি অলীক যার কোন ভিত্তি নেই।”
দেখুন জনাব বাবুনগরীর জেলজ্যান্ত মিথ্যাচারিতা। পাইকারীভাবে ইমামদের নামে হাদিসটিকে মওজু বা জাল বানিয়ে দিলেন।
ইমাম তিরমিজি (র:) ও ইমাম বুখারী (র:) এই হাদিস সম্পর্কে বলেন:
وقال الترمذي: إنه منكر، وكذا قال شيخه البخاري، وقال: إنه ليس له وجه صحيح، 
-“ইমাম তিরমিজি (র:) বলেন: এই হাদিস মুনকার, ইমাম বুখারী (র:) বলেন: এ ব্যাপারে একটিও ছহীহ্ সূত্র নেই।” ৫৪৬৪৬,  ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ৯৭ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ১৮৪ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মওজুয়াতুল কবীর, ৪০ পৃ:;
 
সুতরাং ইমাম বুখারী ও তিরমিজি (র:) তাঁরাও হাদিসটিকে মাওজু বা ভিত্তিহীন বলেননি। ইমাম বুখারী (র:) বলেছেন: ইহা ছহীহ্ সনদে নেই, অর্থাৎ, ‘হাছান’ কিংবা ‘দ্বায়িফ’ সনদে রয়েছে। ইমাম তিরমিজি (র:) হাদিসটিকে ‘মুনকার’ বলেছেন কিন্তু ‘দ্বায়িফ’ বলেননি। কারণ ‘মুনকার’ মানে ‘দ্বায়িফ’ নয় ।
আল্লামা আবু ছাঈদ আলাঈ (র:) ও হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (র:) বলেছেন,
عن أبي سعيد العلائي: الصواب أنه حسنৃ وكذا قال الحافظ ابن حجر في فتوى له، 
-“আবু সাঈদ আলাঈ হতে বর্ণিত, নির্ভরযোগ্য মতে নিশ্চয় ইহা ‘হাছান’। অনুরূপ বলেছেন হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (র:) তার ফাতওয়া গ্রন্থে।”  ৫৪৭৪৭,  ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ১৮৫ পৃ:;

এ ব্যাপারে আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (র:) বলেন:
وَسُئِلَ عَنْهُ الْحَافِظُ الْعَسْقَلَانِيُّ فَأَجَابَ بِأَنَّهُ حَسَنٌ لَا صَحِيحٌ كَمَا قَالَ الْحَاكِمُ وَلَا مَوْضُوعٌ كَمَا قَالَ ابْنُ الْجَوْزِيِّ 
-“হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (র:) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বলেন: নিশ্চয় ইহা ‘হাছান’ তবে ছহীহ্ নয়, যেমনটি ইমাম হাকেম (র:) বলেছেন, এবং ইহা ভিত্তিহীন নয়। ঠিক এমনটি আল্লামা ইবনে জাওযী (র:) বলেছেন।”  ৫৪৮৪৮,  ইমাম মোল্লা আলী: মওজুয়াতুল কবীর, ৪০ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মওজুয়াতুল কোবরা, ৭২ পৃ:;

এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (র:) এর অভিমত:
ذَكَرَهُ السُّيُوطِيُّ وَقَالَ الْحَافِظُ أَبُو سَعِيدٍ الْعَلَائِيُّ الصَّوَابُ أَنَّهُ حَسَنٌ 
-“ইমাম ছিয়তী (র:) হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন: হাফিজ আবু ছাইদ আলাঈ (র:) বলেন: নির্ভরযোগ্য মতে নিশ্চয় ইহা ‘হাছান’।”  ৫৪৯৪৯,  ইমাম মোল্লা আলী: মওজুয়াতুল কবীর, ৪০ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মওজুয়াতুল কোবরা, ৭২ পৃ:;

ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) হাদিসটি حَسَنٌ ‘হাছান’ হওয়ার ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেছেন। নিম্ন লিখিত ইমামগণ এই হাদিস সম্পর্কে ‘ছহীহ্’ ও ‘হাছান’ এবং ভিত্তিহীন নয় এরূপ মন্তব্য করেছেন,
ইমাম বুখারী (র:),
ইমাম ইবনে মাঈন (র:),
ইমাম খতিবে বাগদাদী (র:),
ইমাম হাকেম নিছাপুরী (র:), 
ইমাম তিরমিজি (র:),
ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (র:), 
হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (র:),
হাফিজ আবু ছাঈদ আলাঈ (র:), 
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (র:),
আল্লামা ইবনে জাওযী (র:) প্রমূখ..... 
এতজন ইমাম হাদিসটিকে হাছান ও ছহীহ্ বলার পরেও জনাব আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব তিনার ‘হাদিসের নামে জালিয়াতী’ বইয়ের ৪০৯ পৃ: লিখেছেন- “এই হাদিসটিকে অভিজ্ঞ মুহাদ্দিছগণ বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ হাদিসটিকে মিথ্যা না বলে যয়ীফ বলে উল্লেখ করেছেন।”
প্রিয় পাঠক! আপনারাই বলুন ইমাম ইবনু মাঈন (র:) থেকে ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (র:) সকলেই হাদিসটিকে হাছান বা ছহীহ্ বলেছেন। তাহলে তারা কি অভিজ্ঞ মুহাদ্দিছ ছিলেন না? বড় আশ্চয্যের বিষয় হল, জাহাঙ্গীর সাহেব এভাবেই ইমামদের নামে জালিয়াতী করতেন।
সর্বোপরি প্রমাণিত হল, এই হাদিস বিশুদ্ধ। কেননা একাধিক সনদে ইহা বর্ণিত রয়েছে। এর মধ্যে কোনটা ‘ছহীহ্ রেওয়ায়েত ’ কোনটা ‘হাছান ও ক্বাবী’ বা অধিক শক্তিশালী ও কোন রেওয়ায়েত দুর্বল, সব গুলো মিলে হাদিস খানা ক্বাবী বা শক্তিশালী ও বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়। অনুরূপ আরেকটি রেওয়ায়েত আছে,
أَنْبَأَنَا أَبُو مُحَمَّدٍ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ نَاجِيَةَ قَالَ: حَدَّثَنَا شُجَاعُ بْنُ شُجَاعٍ أَبُو مَنْصُورٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ بَحْرٍ الْبَصْرِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا شَرِيكٌ قَالَ: حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ كُهَيْلٍ عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا مَدِينَةُ الْفِقْهِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: আমি ফিকহ-এর শহর আলী তার দরজা।”  ৫৫০৫০,  শারিয়াতু লিল আজরী, হাদিস নং ১৫৪৯;

এই অনুরূপ আরেকটি রেওয়ায়েত আছে,
حَدَّثَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ إِسْحَاقَ بْنِ زَاطِيَا قَالَ: حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْعُثْمَانَيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا مَدِينَةُ الْحِكْمَةِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: আমি হেকমতের শহর আলী তার দরজা।”  ৫৫১৫১,  শারিয়াতু লিল আজরী, হাদিস নং ১৫৫১;

Top