আব্দুল মুত্তালিব কর্তৃক খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) কে কোরবানি ও জমজম কুপ খনন
📚কিতাবঃ আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)
🖋️মূলঃ ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী (رحمة الله)


ইমাম তাবারানী (رحمة الله عليه ) ইবনে ওয়াহাবের সুত্রে তিনি উসামা বিন যায়েদ হতে, তিনি কাবিছা যুআইব হতে, তিনি বলেন সাইয়িদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এরশাদ ফরমান সাইয়্যিদিনা খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) মান্নত করেন যে, যদি মহান আল্লাহ পাক আমাকে দশটি সন্তান দান করেন, তবে আমি তাদের একজন কে তাঁর রাস্তায় কুরবানী করে দিব। 

মহান আল্লাহ পাক তাঁর মান্নত পূর্ণ করত দশটি সন্তান দান করেন ফলে এবার তিনি কাকে কুরবানি দিবেন এ বিষয়ে লটারী করেন। লটারীতে প্রথম সন্তান হযরত আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর নাম উঠে। অথচ খাজা আব্দুল্লাহ ছিলেন পিতার সবচেয়ে প্রিয়তম সন্তান। 

যা হোক পাদ্রীর পরামর্শ মতে তিনি দশটি উঠ দিয়ত করেন এর পরও আব্দুল্লাহর নাম উঠে। এভাবে প্রতিবার আব্দুল্লাহর পরিবর্তে দশটি করে মোট একশত উঠ দিয়ত করেন। অবশেষে আব্দুল্লাহর পরিবর্তে খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) একশত উঠ কুরবাণী করেন। হযরত যুবায়ের ইবনে বাক্কার (رضي الله عنه) বলেন খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) একশত উঠ কুরবাণী করে তা লোকের মধ্যে বন্টন করলে পর লোকেরা তা ভক্ষন করে নেয়। 

ইমাম ছাখাবির মতে উক্ত ঘটনার পর হতেই মানুষের জীবন বিনিময় হিসাবে একশত উট প্রদানের প্রচলন হয়ে হয়ে পড়ে। এমনকি ইসলামী শরীয়তের বিধানেও যে ক্ষেত্রে “কেসাস” তথা খুনের বদলা খুন হয়না - যেমন অনিচ্ছা কৃত খুন কিংবা খুনের বিনিময়ে বাদীপক্ষ যদি জীবন বিনিময় গ্রহনে সম্মত হয় তবে সে ক্ষেত্রেও একশত উট দেয়ার বিধান রয়েছে। ফেকাহ শাস্ত্রে তাকে “দিয়ত” বলে। 

পিতা কর্তৃক পুত্রকে কুরবাণী করার কারন সম্পর্কে ইমাম কাস্তালানী (رضي الله عنه) বলেন খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) এর মান্নত ছিল যে, মহান আল্লাহ পাক আমার মাধ্যমে যদি যম যম কুপকে পুন:রায় খনন করত: তা উদ্ধার করার ক্ষমতা দান করেন, তবে আমি আমার পুত্রকে তাঁর সন্তুষ্টির মানসে কুরবাণী করবো। আব্দুল মুত্তালিবের জীবনের উল্লোখযোগ্য খেদমত হলো যমযম কুপের পুন; খনন এবং আবাদ করণ। জোরহাম গোত্র খাজা গোত্রের নিকট পরাজিত হয়ে কাবার অভিবাকত্ব ত্যাগ করে যাওয়ার প্রাক্ষালে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং হাতিয়ার সামাগ্রী ঐ কুপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। কালের আর্বতে ঐসব চিহ্ন টুকুও মুছে গিয়েছিল। খাজা আব্দুল মুত্তালিব স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ঐ কুপের চিহ্ন অবগত হন। এবং একে খনন করে পরিস্কার পরিচন্ন করার জন্যও আদিষ্ট হন। সে মতে আব্দুল মুত্তালিব একমাত্র সন্তান হারিছকে নিয়ে এ স্থানের খনন কাজ আরম্ভ করেন। কুরাইশদের শত বাধা উপেক্ষা করে হারেসকে বাধার মোকাবেলায় দাঁড় করিয়ে শেষ পর্য়ন্ত মাটি খনন আরম্ভ করেন। তিনি তার সঠিক স্থান বের করে তা খনন করত: পুনরায় সচল করেন। এ ঘটনার পর থেকে তাঁর মর্যাদা ও সুখ্যাতি আর অধিক বেঢ়ে যায়। 

আমেনা (رضي الله عنه) এর বিবাহের ঘটনা 

ইমাম বারাক্কী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মহিয়সী মাতা হযরত আমেনা (رضي الله عنه) কে স্বীয় পিতা খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) কর্তৃক বিবাহের কারন হচ্ছে যে, এক বার খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর পিতা হযরত সাইয়্যিদিনা খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) ইয়ামনে আগমন করেন এবং সেখানকার নেতৃস্থানীয় এক ব্যক্তির নিকট আগমন করেন। এ সময় তাঁর দরবারে মুরবা নম্নীয় একব্যক্তি আসেন. এবং হযরত কাবুল আহবার (رضي الله عنه) বলেন: হযরত খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) মা আমেনা (رضي الله عنه) কে বিবাহ করার পরক্ষনেই মহান আল্লাহ পাক তাঁকে নূর, সম্মান, মর্যাদা, জামালত ও কামালত দান করে সম্মানের উচ্ছাসনে আসীন করেন। যদ্বরুন তিনি স্বীয় কওমের মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্টত্ব ও মযার্দাবান বলে দাবী করতেন। নূরে মোহাম্মদী (ﷺ) খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর দুচোখের মধ্যখানে স্থায়ীত্ব লাভ করে। পরে মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশ ক্রমে ঐ নূরে মোহাম্মদী (ﷺ) স্বীয় মাতা আমেনা (رضي الله عنه) এর রেহেম শরীফে এসে স্থান লাভ করে। 

ইমাম বায়হাক্বী (رضي الله عنه) স্বীয় দালায়েলে মামার এর সুত্রে, তিনি যুহরী থেকে বর্ণনা করে বলেন: সাইয়্যিদিনা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) ছিলেন কুরাইশ বংশের অত্যন্ত সৌন্দর্য্যময় যুবক। একবার তিনি একদল মহিলা জামাতের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করেন। এমন সময় তন্মধ্যকার এক মহিলা বলে উঠল হে কুরাইশ মহিলাগণ! তোমাদের মধ্যকার যে কেউ এ কুরাইশ বংশীয় সুদর্শন যুবকটিকে বিবাহ করবে, সে অবশ্যই তাঁর দুচোখের মধ্যখানের নূর নাুীয় বিশাল নেয়ামত শিকার করার সৌভাগ্য অর্জন করবে। 
Top