সারা দুনিয়াকে নবীজি (ﷺ) হাঁতের তালুর মত দেখে

حَدَّثَنَا الْحَكَمُ بْنُ نَافِعٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ سِنَانٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو الزَّاهِرِيَّةِ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ أَبِي شَجَرَةَ الْحَضْرَمِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِيَ الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَأَنَّمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ،

-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ পাক সারা দুনিয়াকে আমার সামনে তুলে ধরে রেখেছেন। ফলে আমি ইহা দেখতেছি এবং কেয়ামত পর্যন্ত যা যা হবে সব কিছু আমি আমার হাঁতের তালুর মতই দেখতে থাকব।”  ৪৩৭৩৭,  ইমাম নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ: আল ফিতান, হাদিস নং ২; ইমাম তাবারানী তাঁর কবীরে, হাদিস নং ১৪১১২; ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৫ম খন্ড, ১৬ পৃ:; ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, ৮ম খন্ড, ৫১০ পৃ: হাদিস নং ১৪০৬৭; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ৬৮৫৪; শরহে যুরকানী, ১০ম খন্ড, ১২৩ পৃ:; ছানআনী: আত্তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ২৯৯ পৃ:; ইমাম ইবনে শাহিন: আত্তারগীব ওয়াত্তারহব লি কাওয়াইমুস সুন্নাহ, ২য় খন্ড, ২১১ পৃ:, হাদিস নং ১৪৫৬; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, ১ম খন্ড, ৩১৬ পৃ:; হাদিস নং ৩৩৯৭; হিন্দী: কানজুল উম্মাল, ৪র্থ খন্ড, ২৪৭ পৃ:, হাদিস নং ৩১৮১০ ও ৩১৯৭১; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কোবরা, ২য় খন্ড, ১৯৮ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৩য় খন্ড, ৫৫৯ পৃ:; দ্বায়িফু জামেউছ ছাগীর, ১ম খন্ড, ২৩৫ পৃ:, হাদিস নং ১৬২; মু’ছুয়াতু ফি ছাহিহী সিরাতে নববিয়্যা, ১ম খন্ড, ৩৬ পৃ:;

এই হাদিসের সনদ তাহকিক করে দেখেছি হাদিসটি হাছান অথবা দ্বায়িফ হবে, কিন্তু জাল হবেনা। আর প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর শান-মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে এরূপ সনদই যথেষ্ঠ। যেহেতু বিষয়টি কোন হুরমত ছাবিত করার জন্য নয়। সর্বোপরি তাবারানীর সনদ দীর্ঘ হলেও 
أبو عبد الله نعيم بن حماد بن معاوية الخزاعي المروزي -“ইমাম আবু আব্দিল্লাহ নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ ইবনে মুয়াবিয়া আল খাজাঈ আল-মারুজী রহ:, ওফাত ২২৮ হিজরী” এর সনদ অত্যান্ত সংক্ষিপ্ত ও সুন্দর, যা তাবারানীর সনদের চেয়ে আরো উত্তম। “আল ফিতান লি’নাঈম ইবনে হাম্মাদ” এর সনদটি নিচে লক্ষ্য করুন:-
حَدَّثَنَا الْحَكَمُ بْنُ نَافِعٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ سِنَانٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو الزَّاهِرِيَّةِ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ أَبِي شَجَرَةَ الْحَضْرَمِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ:
-“হাকাম ইবনে নাফে বর্ণনা করেছেন ‘সাঈদ ইবনে সিনান’ থেকে। তিনি বর্ণনা করেছেন ‘আবু জাহিরিয়্যা’ থেকে। তিনি বিশিষ্ট তাবেঈ কাছির ইবনে র্মুরা (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে। তিনি হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে।”..... তাবারানীর মুজামুল কবীরের সনদটি হচ্ছে,
حدثنا بكرُ بن سَهْل، ثنا نُعَيم بن حمَّاد المَرْوَزي، ثنا بَقيَّة، عن سعيد بن سِنان ثنا أبو الزاهريَّة، عن كَثير بن مُرَّة، عن ابن عمر، قال: قال رسولُ الله صلى الله عليه وسلم: إِنَّ اللهَ عَزَّ وجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِيَ الدُّنْيَا..
-“বকর ইবনে সাহল নাঈম ইবনে হাম্মাদ হতে, তিনি বাক্বিয়া থেকে, তিনি সাঈদ ইবনে সিনান হতে, তিনি আবু জাহিরিয়্যা হতে, তিনি কাছির ইবনে র্মুরা হতে, তিনি হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন:....।”
তাবারানীর এই হাদিসের সনদে سَعِيدُ بْنُ سِنَانٍ، أَبُو مَهْدِيٍّ الْحِمْصِيُّ “সাঈদ ইবনে সিনান আবু মাহদী আল হিমছী” নামক একজন রাবী রয়েছে, যাকে বাতিল পন্থিরা ‘দূষী রাবী’ বলতে চায়। অথচ এই রাবী সম্পর্কে ইমামগণের অভিমত শুনুন:- ইমাম আবু হাতিম রাজী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
أبو مهدي سعيد بن سنان مؤذن أهل حمص وكان ثقة -“আবু মাহদী সাঈদ ইবনে সিনান তিনি হাম্ছ বাসীর মুয়াজ্জিন ছিলেন, আর তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত।”  ৪৩৮৩৮,  ইমাম আবু হাতিম: জারাহ ওয়া তা’দিল, ৪র্থ খন্ড, ২৮ পৃ: রাবী নং ১১৪;

ইমাম মিযযী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেন,
وَقَال أَبُو بَكْر بْن أَبي خَيْثَمَة: حَدَّثَنِي صاحب لي من بني تميم قال: قال أَبُو مسهر: حَدَّثَنَا صَدَقَة بْن خَالِد، قال: حدثني أَبُو مهدي سَعِيد بْن سنان مؤذن أهل حمص وكان ثقة
-“ইমাম আবু বকর ইবনে আবী হায়ছামা বলেন, বনী তামিমের সাথী বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আবু মিছয়ার বলেন, ছাদাকা ইবনে খালেদ বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আবু মাহদী সাঈদ ইবনে সিনান আহলে হিম্ছ এর মুয়াজ্জিন হাদিস বর্ণনা করেছেন আর তিনি বিশ্বস্ত।”  ৪৩৯৩৯,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২২৯৫;

عن الدارقطني في رواية: هو ثقة. -“ইমাম দারে কুতনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে আরেকটি রেওয়ায়েতে আছে সে বিশ্বস্ত রাবী।” ৪৪০৪০,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯৮৮;

قال أحمد ضعيف وقال ابن معين ليس بثقة -“ইমাম আহমদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: সে দুর্বল রাবী। ইবনে মাঈন (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: সে বিশ্বস্ত নয়।” ৪৪১৪১,  ইমাম আবু হাতিম: জারহ ওয়া তা’দিল, ৪র্থ খন্ড, ২৮ পৃ: রাবী নং ১১৪;

 وقال البخاري منكر الحديث -“ইমাম বুখারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: সে মুনকার।” ৪৪২৪২,  ইমাম আবু হাতিম: জারাহ্ ওয়া তা’দিল, ৪র্থ খন্ড, ২৮ পৃ: রাবী নং ১১৪;

অতএব, এই রাবীর উপর নির্ভর করে হাদিসটিকে জাল বলার কোন সুযোগ নেই। তার ব্যাপারে ছিক্বাহ ও গাইরে ছিক্বাহ উভয় মন্তব্য রয়েছে, তবে কেউ তাকে কাজ্জাব বা মিথ্যাবাদী বলেননি। তাই নিশ্চয় এই হাদিস মধ্যম পন্থায় হাছান পর্যায়ের হবে। তাবারানীর সনদে এই হাদিসে আরেকজন রাবী হল: 
بَقِيَّةُ بنُ الوَلِيْدِ بنِ صَائِدِ بنِ كَعْبِ بنِ حَرِيْزٍ الحِمْيَرِيُّ “বাক্বিয়া ইবনে ওয়ালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে হারিজ হিময়ারী”। তবে তাবারানীর সনদে ‘বাকিয়া’ থাকলেও ইমাম নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ’ এর সনদে সে নেই। بَقيَّة ‘বাকিয়া’ মূলত ছহীহ্ মুসলীমের রাবী এবং ইমাম বুখারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ব্যাপারে ভাল সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। যার সম্পর্কে ইমামগণের উক্তি লক্ষ্য করুন:
عَنِ ابْنِ المُبَارَكِ، قَالَ: بَقِيَّةُ كَانَ صَدُوقاً -“ইমাম ইবনে মোবারক (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: সে সত্যবাদী।” ৪৪৩৪৩,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯;

ইমাম ইয়াইয়া ইবনে মাঈন (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) কে জিজ্ঞাসা করা হল,
وَسُئِلَ أَيُّمَا أَثْبَتُ: هُوَ أَوْ إِسْمَاعِيْلُ؟ -“জিজ্ঞাসা করা হল, কে অধিক প্রমাণিত সে (বাক্বিয়া) নাকি ইসমাঈল?  
قَالَ: كِلاَهُمَا صَالِحَانِ. -“উত্তরে তিনি বলেন, তারা দুই জনেই নেক বান্দাহ।” ৪৪৪৪৪,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮;

قَالَ يَعْقُوْبُ بنُ شَيْبَةَ: بَقِيَّةُ: ثِقَةٌ، حَسَنُ الحَدِيْث -“ইমাম ইয়াকুব (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: বাক্বিয়া বিশ্বস্ত ও তার হাদিস উত্তম।” ৪৪৫৪৫,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮;

وَقَال مُحَمَّد بْن سعد: كان ثقة -“মুহাম্মদ ইবনে সা’দ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: সে বিশ্বস্ত।” ৪৪৬৪৬,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮;

وَقَال أَحْمَد بْن عَبْد اللَّهِ العجلي: ثقة -“আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইজলী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: সে বিশ্বস্ত।” ৪৪৭৪৭,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮;

عثمان الدارميّ، عَنِ ابن مَعِين: بقيّة ثقة. قلت لَهُ: هُوَ أحبّ إليك أو محمد بْن حرب؟ فقال: ثقة وثقة. 
-“উছমান ইবনে দারেমী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হতে বর্ণনা করেন, বাক্বিয়া বিশ্বস্ত। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কাছে কে বেশী পছন্দনীয় বাক্বিয়া নাকি মুহাম্মদ ইবনে হারব? তিনি বলেন: সে বিশ্বস্ত এবং সেও বিশ্বস্ত।” ৪৪৮৪৮,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯;

وقال ابن عَدِيّ: ولبقيّة حديث صالح، -“ইমাম ইবনে আদী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: বাক্বিয়া হাদিস বর্ণনায় নেক।” ৪৪৯৪৯,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯;

وروى له مسلم حديثا واحدا -“ইমাম মুসলীম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।” ৪৫০৫০,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ১ম খন্ড, ৪৭২-৭৩ পৃ:;

استشهد به البخاري في الصحيح -“ইমাম বুখারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ছহীহ্ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।” ৪৫১৫১,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯;

وقال الحاكم في سؤالات مسعود: بقية ثقة مأمون :ইমাম হাকেম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) মাসউদ এর ছওয়ালে বলেন: বাক্বিয়া বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য।” ৪৫২৫২,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ১ম খন্ড, ৪৭২-৭৩ পৃ:;

আশ্চর্যের বিষয় হলো! ইমামগণ তার সম্পর্কে এরূপ ভাল মন্তব্য করার পরেও কাঠমিস্ত্রী নাছিরুদ্দিন আলবানী তার বর্ণিত হাদিসকে জাল বলার দু:সাহস দেখিয়েছেন। সুতরাং ইমামগণের অভিমত দ্বারা প্রমাণিত হয়, তার বর্ণিত হাদিসের মর্যাদা হবে ‘ছহীহ্ অথবা হাছান’। উল্লেখ্য যে, নাঈম ইবনে হাম্মাদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর সনদে ‘বাক্বিয়া’ নামক রাবী নেই।
তাবারানীর সনদে نعيم بن حمّاد بن معاوية  “নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ” নামক আরেকজন রাবী রয়েছে। তিনি তো নিজেই নির্ভরযোগ্য ইমাম। যার সম্পর্কে ইমামগণের অভিমত হল: 
وقال الخطيب: يقال: نُعَيْم أوّل من جمع المُسْنَد وصنَّف. -“খতিবে বাগদাদী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: নুয়াইম সর্বপ্রথম সনদ একত্রিত করেন এবং কিতাব প্রনয়ণ করেন।” ৪৫৩৫৩,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৪৭;

قال أبو زكريا نعيم بن حماد صدوق ثقة -“ইমাম আবু জাকারিয়া (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: ‘নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ’ সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।” ৪৫৪৫৪,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩১;

وقال العِجْليّ: صَدُوق ثقة. -“ইমাম ইজলী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: বিশ্বস্ত।” ৪৫৫৫৫,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৪৭;

وقال أبو حاتم: محله الصدق. -“ইমাম আবু হাতিম বলেন: সে মূলত সত্যবাদী।” ৪৫৬৫৬,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৪৭; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬৪৫১;

وقال مسلمة بن قاسم في كتاب الصلة: كان صدوقا -“ইমাম মাসলামাহ ইবনে কাশেম তার ‘কিতাবুস সিলাহ’ এর মধ্যে বলেন: সে সত্যবাদী।”  ৪৫৭৫৭,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৮৫০;

ইমাম আহমদ ও ইমাম ইবনে মাঈন (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন।  ৪৫৮৫৮,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬৪৫১;

 بن حبان في الثقات -“ইমাম ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ উল্লেখ করেছেন।” ৪৫৯৫৯,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬৪৫১;

সর্বোপরি সে ছহীহ্ বুখারীর রাবী ও ইমাম মুসলীম তার মুকাদ্দমায় ‘নুয়াইম’ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, ওহাবীরা এই রাবীকে নিয়েও সমালোচনা করার অপচেষ্টা করেন। অথচ তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন: ইমাম বুখারী, ইমাম দারেমী, ইমাম আবু হাতিম, ইমাম ইবনে মাঈন (رضي الله عنه) প্রমূখ ইমামগণ। এই রাবী সম্পর্কে ইমামগণের এরূপ ভাল মন্তব্য ও ইমাম বুখারী, দারেমী, আবু হাতিম এবং ইবনে মাঈন (رضي الله عنه) তার হাদিস গ্রহণ করার দ্বারা প্রমাণিত হয়, তার বর্ণিত হাদিসের মর্যাদা ‘ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ’।
ইমাম তাবারানীর সনদে আরেকজন রাবী রয়েছে, তার নাম হল: 
بكر بن سهل الدمياطي أبو محمد مولى بني هاشم “বাকর ইবনে সাহল” নামক আরেকজন রাবী রয়েছে। যার থেকে বিশ্ব নন্দিত ইমাম তাহাবী (رضي الله عنه), ইমাম তাবারানী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম আছেম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) প্রমূখ হাদিস বর্ণনা করে কোন প্রকার সমালোচনা করেননি। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম যাহাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার সম্পর্কে বলেন: حمل الناس عنه وهو مقارب الحال -“লোকেরা তার হাদিস গ্রহণ করেছেন এবং তার অবস্থা গ্রহণযোগ্য।” ৪৬০৬০,  ইমাম আসকালানী: লিছানুল মিযান, ২য় খন্ড, ২৪২ পৃ: রাবী নং ১৯৫; ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, রাবী নং ১২৮৪; ইমাম আইনী: মাগানিল আখইয়ার, রাবী নং ২৩৩;

ইমাম দাওদী মালেকী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: وهو مقارب الحديث -“তার অবস্থা গ্রহণযোগ্য। ৪৬১৬১,  তাবাকাতুল মুফাচ্ছিরীন, রাবী নং ১১১;

ইমাম হাকেম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার রেওয়াতকে ইমাম মুসলীম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর শর্তে ছহীহ্ বলেছেন। ৪৬২৬২,  মুস্তাদরাক, হাদিস নং ১৪৭১, ১৬৩৭, ২২৩৭, ২৬৭৭;

ইমাম যাহাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার রেওয়াতকে ছহীহ্ বলেছেন।  ৪৬৩৬৩,  মুস্তাদরাক, হাদিস নং ৭২৭৯, ৮৭৭৬, ৮৭৮৫;

উল্লেখ্য যে, ইমাম নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর সনদে এই রাবী নেই। সুতরাং মুহাদ্দিছগণ যার বর্ণিত হাদিস গ্রহণ করেছেন ও তার ব্যাপারে ভাল মন্তব্য করেছেন, তার বর্ণিত হাদিস জাল হতে পারেনা। ইমাম তাহাবী, ইমাম তাবারানী, ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম আছেম (رضي الله عنه) প্রমূখ তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং কোন প্রকার সমালোচনা করেননি। যদি রাবী সমালোচিত হতেন তাহলে উল্লেখিত ইমামগণ ইহা উল্লেখ করতেন। তাই তার বর্ণিত হাদিস ছহীহ্ অথবা হাছান। ইমাম হায়ছামী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনাকারী ‘সাঈদ ইবনে ছিনান’ ব্যতীত সকল রাবীদের ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন। তিনি এর সনদ সম্পর্কে বলেন, 
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ وَرِجَالُهُ وُثِّقُوا عَلَى ضَعْفٍ كَثِيرٍ فِي سَعِيدِ بْنِ سِنَانٍ الرَّهَاوِيِّ.
-“ইমাম তাবারানী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ইহা বর্ণনা করেছেন, এর সকল রাবীগণ বিশ্বস্ত তবে ‘সাঈদ ইবনে সিনান’ এর উপর অনেক দুর্বলতার অভিযোগ রয়েছে।” ৪৬৪৬৪,  মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ;

আমরা পূর্বে লক্ষ্য করেছি ‘সাঈদ ইবনে সিনান’ সম্পর্কে বিশ্বস্ত হওয়ার অভিমতও রয়েছে। ইমাম হায়ছামীর দৃষ্টিতেও হাদিসটি জাল নয় বরং দ্বায়িফ। এমনকি কুখ্যাত তাহকিককারী নাছিরুদ্দিন আলবানী তার ছিলছিলায়ে দ্বায়িফা গ্রন্থের ৯৫৭ নং হাদিসে এক পর্যায়ে হাদিসটিকে ضعيف দ্বায়িফ বলেছেন। সুতরাং এই হাদিস অবশ্যই নির্ভরযোগ্য حَسَنٌ হাছান অথবা ضعيف দ্বায়িফ স্তরের হাদিস। অজ্ঞতা ও মূর্খতার কারণে অথবা মনের ভিতরে রাসূলে পাক (ﷺ) এর প্রতি দুশমনি থাকার কারণে অনেকে এই হাদিস নিয়ে সমালোচনা করার অপচেস্টা করে থাকেন। 
Top