নবীজির ওফাতের পরে রওজা যিয়ারত করা জীবদ্দশায় যিয়ারত করার সমান

حَدَّثَنِي أَبُو الْقَاسِمِ بْنُ سَعِيدٍ قَالَ: ثنا سَعْدٌ قَالَ: ثنا حَفْصُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ حَجَّ فَزَارَ قَبْرِي بَعْدَ وَفَاتِي كَانَ كَمَنْ زَارَنِي فِي حَيَاتِي

-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি হজ্ব করল ও আমার ওফাতের পরে রওজা যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার যিয়ারত করল।”  ৭৫৩৫৩,  ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ৩৩৭৬; ইমাম ফাকেহী: আখবারে মক্কা, হাদিস নং ৯৪৯; ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০২৭৪; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ৩৮৫৭; ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ১৩৪৯৭; সুনানে দারে কুতনী, হাদিস নং ২৬৯৩; মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ২৭৫৬;

হাদিস খানা সনদের দিকে ‘হাছান’ পর্যায়ের, তবে মওজু বা ভিত্তিহীন নয়। সকল ইমামগণের দৃষ্টিতে ফাজায়েলের ক্ষেত্রে হাছান হাদিস অবশ্যই আমলযোগ্য। সকল ইমামগণই হাদিসটি ‘হাফছ ইবনে আবী দাউদ’ এর সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন কিন্তু ইমাম ফাকেহী (র:), ইমাম তাবারানী (র:) তার ‘মুজামুল আওছাতে’ ও ইমাম বায়হাক্বী (র:) তার সুনানে কুবরায় ‘হাফ্ছ ইবনে সুলাইমান আবু উমর’ এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। মূলত নামে দুইজন বুঝালেও এগুলো একজনেরই নাম। এই হাদিসের সনদে  لَيْثُ بْنُ أَبِي سُلَيْمٍ (লাইছ ইবনে আবী সুলাইম) ও  حَفْصُ بْنُ سُلَيْمَانَ الأسدي (হাফছ ইবনে সুলাইমান আল আসাদী) নামক দুজন রাবী রয়েছে, যাদের ব্যাপারে ইমামগণের কেউ কেউ দুর্বল আখ্যা দিলেও অনেকেই তাদেরকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলেছেন। ফলে হাদিসটি মাঝামাঝি স্তর তথা হাছান হবে। যেমন নিচের বর্ণনা গুলো লক্ষ্য করুন:- حَفْصُ بْنُ سُلَيْمَانَ (হাফছ ইবনে সুলাইমান) এর আরেক নাম হল: “হাফছ ইবনে আবী দাইদ”
وَقَال أبو علي ابن الصواف، عن عَبد اللَّهِ بن أحمد بْن حنبل، عَن أبيه: صالح.
-“আবু আলী ইবনে ছুওয়াফ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার পিতা হতে বলেন: হাফ্ছ গ্রহণযোগ্য।”  ৭৫৪৫৪,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৩৯০; ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, রাবী নং ২১২১;

وَقَال عثمان بن أَحْمَد بن السماك ، عن حنبل بْن إسحاق، عَن أحمد بن حنبل: ما به بأس.
-“উছমান ইবনে আহমদ ইবনে সিমাক হযরত হাম্বল ইবনে ইসহাক্ব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র:) থেকে বর্ণনা করেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”  ৭৫৫৫৫,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৩৯০; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫৭;

قال وكيع: كان ثقة. -“ইমাম ওয়াকী (র:) বলেন: সে বিশ্বস্ত ছিলেন।  ৭৫৬৫৬,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৩৯০;

উল্লেখিত ইমামগণের মতামত গুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায়,  حَفْصُ بْنُ سُلَيْمَانَ (হাফছ ইবনে সুলাইমান)’ এর বর্ণিত হাদিস ‘হাছান’ পর্যায়ের। কারণ ইমামদের একটি দল তাকে বিশ্বস্ত ও নেক বান্দাহ বলেছেন। তাই উভয়ের মধ্যে সমযোতা সরূপ বলা যায় ইহা ‘ছহীহ্’ও নয় আবার ‘দ্বায়িফ’ও নয় বরং ‘হাছান’।
এই হাদিসের দ্বিতীয় রাবী لَيْثُ بْنُ أَبِي سُلَيْمٍ (লাইছ ইবনে আবী সুলাইম)
তার ব্যাপারে ইমাম যাহাবী (র:) বলেছেন:
لَيْثُ بنُ أَبِي سُلَيْمٍ الكوفي: حسن الحديث، -“লাইছ ইবনে আবী সুলাইম কুফী হাছানুল হাদিস।”  ৭৫৬৫৭,  ইমাম যাহাবী: দিওয়ানুদ দোয়াফা, রাবী নং ৩৫০৩;

قال أبو داود وسألت يحيى عن ليث فقال لا بأس به -“ইমাম আবু দাউদ (র:) বলেন আমি ইয়াহইয়া (র:) কে ‘লাইছ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বললেন: তার হাদিসের ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই।”  ৭৫৮৫৮,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৫৩; ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ’লামী নুবালা, রাবী নং ৮৪;

وقال بن عدي له أحاديث صالحة وقد روى عنه شعبة والثوري 
-“ইবনে আদী (র:) বলেন: তার বর্ণিত হাদিস সমূহ নেক, সূফিয়ান ছাওরী ও শুবা (র:) তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।”  ৭৫৯৫৯,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৫৩;

وقال البرقاني سألت الدارقطني عنه فقال صاحب سنة يخرج حديثه
-“বারকানী বলেন, আমি ইয়াহইয়া (র:) কে লাইছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেছেন: সে সুন্নাতের অনুসারী এবং তার হাদিস বর্ণনা করি।”  ৭৬০৬০,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৫৩;

وَقَالَ ابْن معِين أَيْضا لَا بَأْس بِهِ -“এমনিভাবে ইমাম ইবনে মাঈন (র:) বলেছেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” ৭৬১৬১,  ইমাম যাহাবী: আল মুগনী ফিদ দোয়াফা, রাবী নং ৫১২৬; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৩৬৯;

وعن أبى داود: ليس به بأس. وعن يحيى: لا بأس به. -“ইমাম আবু দাউদ (র:) থেকে বর্ণিত আছে: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই। ইমাম ইয়াহইয়া (র:) থেকেও বর্ণিত আছে: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”  ৭৬২৬২,  ইমাম আইনী: মাগানিল আখইয়ার, রাবী নং ২১৯১;

واستشهد به البخارى فى الصحيح -“ইমাম বুখারী (র:) তার ‘ছহীহ্’ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।”  ৭৬৩৬৩,  ইমাম আইনী: মাগানিল আখইয়ার, রাবী নং ২১৯১; ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ’লামী নুবালা, রাবী নং ৮৪;

উল্লেখিত ইমামগণের মতামতগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায়, لَيْثُ بْنُ أَبِي سُلَيْمٍ (লাইছ ইবনে আবী সুলাইম) এর বর্ণিত হাদিস গুলো এ চেটিয়ে দূর্বল তথা দ্বায়িফ হবেনা বরং রেওয়ায়েত গুলো হাছান পর্যায়ের। কেননা ইমামদের একদল তাকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আফছুছ হলো! নাছিরুদ্দিন আলবানী তার কিতাবে লিখেছেন এ দু’জন রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদিস নাকি জাল ও ভিত্তিহীন। (নাউজুবিল্লাহ)
Top