জিহাদে আকবর প্রসঙ্গে

قَالَ عَلَيْهِ السَّلَامُ: رَجَعْنَا مِنَ الْجِهَادِ الْأَصْغَرِ إِلَى الْجِهَادِ الْأَكْبَرِ
-“রাসূলে পাক (ﷺ) বলেন: আমরা ছোট জিহাদ হতে বড় জিহাদে প্রবেশ করছি।” 
২৪১৪১. তারিখে বাগদাদ, ১৫তম খন্ড, ৬৮৫ পৃ: হাদিস নং ৪৫৯০; ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৮৪৩০; হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ১১২৬০; তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ১৫৮ পৃ:, ২য় খন্ড, ১৪৮ পৃ:। তাফছিরে কবীর, ১১তম খন্ড, ৯ পৃ:, ২৩ তম খন্ড, ১৮১ পৃ:; তাফছিরে ছালাভী, ৭ম খন্ড, ৩৬ পৃ:; তাফছিরে কুশাইরী, ২য় খন্ড, ৭৪ পৃ;; তাফছিরে রাগেব ইস্পাহানী, ১ম খন্ড, ৫৬ পৃ:; তাফছিরে বাগভী, ৩য় খন্ড, ৩১৫ পৃ:; তাফছিরে জামকশারী, ৩য় খন্ড, ১৭৩ পৃ:; তাফছিরে বায়জাবী, ২য় খন্ড, ৯২ পৃ:; তাফছিরে খাজেন, ৩য় খন্ড, ২৬৬ পৃ:; তাফছিরে সিরাজুম মুনীর, ২য় খন্ড, ৫৬৮ পৃ:; তাফছিরে আবু সাউদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১২২ পৃ:; তাফছিরে মাজহারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৫২ পৃ:; 
দ্বায়ফুজ জামে কিতাবে, ৪০৮০ নং হাদিস; ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ২১১; আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ৩৭৫ পৃ: ১৩৬০ নং হাদিস; গাউছে পাক: ছেররুল আছরার, ৭৯ পৃ:; গাজ্জালী: মুকাশাফাতুল কুলুব, ২৪ পৃ:;

সনদ ও মতনসহ হাদিসটি নিম্নরূপ:-
أَخْبَرَنَا وَاصِلُ بْنُ حَمْزَةَ فِي سَنَةِ خَمْسِينَ وَأَرْبَعِ مِائَةٍ، قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو سَهْلٍ عَبْدُ الْكَرِيمِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ أَحْمَدَ بْنِ سُلَيْمَانَ، بِبُخَارَى، قَالَ: حَدَّثَنَا خَلَفُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْمَاعِيلَ الْخَيَّامُ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمِ بْنِ نُعَيْمٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، قَالَ: أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ مُوسَى، عَنِ الْحَسَنِ هُوَ ابْنُ هَاشِمٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ الْعَلاءِ، قَالَ: حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ غَزَاةٍ لَهُ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَدِمْتُمْ خَيْرَ مَقْدَمٍ، وَقَدِمْتُمْ مِنَ الْجِهَادِ الأَصْغَرِ إِلَى الْجِهَادِ الأَكْبَرِ 
-“হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর যুদ্ধ থেকে ফিরলেন এবং সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা উত্তম স্থানে প্রবেশ করলে। আর তোমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদে প্রবেশ করলে।”  ২৪২৪২. খতিবে বাগদাদী: তারিখে বাগদাদ, ১৫তম খন্ড, ৬৮৫ পৃ:; ইবনে আব্দিল র্বার জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২য় খন্ড, ৫৮৩ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৮৫৩০;

এই হাদিসের আরেকটি সনদ হচ্ছে,
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَبْدَانَ، أَنْبَأَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا تَمْتَامٌ، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَعْلَى، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَدِمَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْمٌ غُزَاةٌ، فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمْتُمْ خَيْرَ مَقْدَمٍ مِنَ الْجِهَادِ الْأَصْغَرِ إِلَى الْجِهَادِ الْأَكْبَرِ. قَالُوا: وَمَا الْجِهَادُ الْأَكْبَرُ؟ قَالَ: مُجَاهَدَةُ الْعَبْدِ هَوَاهُ. هَذَا إِسْنَادٌ ضَعِيفٌ
-“হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর সাথে এক যুদ্ধে প্রবেশ করলাম। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন: তোমরা উত্তম স্থানে প্রবেশ করলে। আর তোমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদে প্রবেশ করলে।”  ২৪৩৪৩.  ইমাম বায়হাক্বী: যুহুদুল কবীর, হাদিস নং ৩৭৩; তাখরিজু আহাদিসুল কাশশাফ, হাদিস নং ৮২৫;

এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজ যায়নুদ্দিন ইরাকী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
أخرجه الْبَيْهَقِيّ فِي الزّهْد من حَدِيث جَابر وَقَالَ: هَذَا إِسْنَاد فِيهِ ضعف. 
-“ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর ‘আয যুহুদ’ গ্রন্থে হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এই সনদে দুর্বলতা রয়েছে।”  ২৪৪৪৪. হাফিজ ইরাকী: তাখরিজু আহাদিসুল এহ্ইয়া, হাদিস নং ২;

এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম আজলুনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন:
قال العراقي: رواه الْبَيْهَقِيّ بسند ضعيف عن جابر, ورواه الخطيب في تاريخه عن جابر
-“হাফিজ ইরাকী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এই হাদিস জাবের (رضي الله عنه) হতে দ্বায়িফ সনদে উল্লেখ করেছেন। খতিবে বাগদাদী তাঁর তারিখে জাবের (رضي الله عنه) হতে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।”  ২৪৫৪৫. ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ১ম খন্ড, ৩৭৫ পৃ:;

এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন:
قُلْتُ ذَكَرَ الْحَدِيثَ فِي الْإِحْيَاءِ وَنَسَبَهُ الْعِرَاقِيُّ إِلَى الْبَيْهَقِيِّ مِنْ حَدِيثِ جَابِرٍ وَقَالَ هَذَا إِسْنَادٌ فِيهِ ضَعْفٌ
-“আমি বলি, এই হাদিস এহ্ইয়া গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে আর হাফিজ ইরাকী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এই হাদিসকে হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর প্রতি নিছবত করেছেন, এবং বলেছেন এর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।”  ২৪৬৪৬.  ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ২১১;

এই হাদিস সম্পর্কে জামালুদ্দিন আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইবনে ইউছুফ যায়লায়ী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৭৬২ হিজরী বলেন: 
قلت غَرِيب جدا وَذكره الثَّعْلَبِيّ هَكَذَا من غير سَنَد -“আমি বলি, এই হাদিস গরীব, ইমাম ছা’লাভী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এই হাদিস সনদ বিহীন উল্লেখ করেছেন।”  ২৪৭৪৭. তাখরিজু আহাদিসুল কাশশাফ, হাদিস নং ৮২৫;

এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম মানাভী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
عَن جَابر وَإِسْنَاده ضَعِيف -“হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আর ইহার সনদ দুর্বল।”  ২৪৮৪৮.  ইমাম মানাভী: আত তাইছির বি’শারহি জামেইছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ১৯৫ পৃ:;

তবে হাদিসটির স্তর حسن হাছান হতে পারে, কারণ যে সকল রাবীদের কারণে দ্বায়িফ বলা হচ্ছে সে সকল রাবীদের রেওয়ায়েত ‘হাছান’ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। যেমন এর সনদে ৩জন রাবী রয়েছে যাদের ব্যাপারে সমালোচনা করা হয়। এবার তাদের সম্পর্কে ইমামদের অভিমত লক্ষ্য করুন, এই হাদিসের একজন রাবী হচ্ছে لَيْثُ بنُ أَبِي سُلَيْمٍ (লাইছ ইবনে আবী সুলাইমান) সম্পর্কে ইমামগণের অনেকে সমালোচনা করলেও অনেকেই তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন ইমাম যাহাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন:- 
لَيْثُ بنُ أَبِي سُلَيْمٍ الكوفي: حسن الحديث، -“লাইছ ইবনে আবী সুলাইমান কুফী হাছানুল হাদিস।”  ২৪৯৪৯.  ইমাম যাহাবী: দিওয়ানুদ দোয়াফা, রাবী নং ৩৫০৩;

وَقَالَ ابْن معِين أَيْضا لَا بَأْس بِهِ -“অনুরূপভাবে ইমাম ইবনে মাঈন (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”  ২৫০৫০.  ইমাম যাহাবী: আল মুগনী ফিদ দোয়াফা, রাবী নং ৫১২৬;

وَقَالَ أَبُو دَاوُدَ: سَأَلْتُ يَحْيَى عَنْ لَيْثٍ، فَقَالَ: لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ. -“ইমাম আবু দাউদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, আমি ইয়াহইয়া (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) কে লাইছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”  ২৫১৫১.  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫; ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ’লামী নুবালা, রাবী নং ৮৪;

وقال بن عدي له أحاديث صالحة -“ইমাম ইবনে আদী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, তার হাদিস গুলো গ্রহণযোগ্য।”  ২৫২৫২.  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭;

وَقَالَ البَرْقَانِيُّ: سَأَلْتُ الدَّارَقُطْنِيَّ عَنْهُ، فَقَالَ: صَاحِبُ سُنَّةٍ، يُخَرَّجُ حَدِيْثُه.
-“বারকানী বলেন, আমি ইমাম দারে কুতনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) কে লাইছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: সে সুন্নাহর অনুসারী ও তার হাদিস বর্ণনা করি।”  ২৫৩৫৩.  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭; ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ’লামী নুবালা, রাবী নং ৮৪;

وَقَدِ اسْتَشْهَدَ بِهِ البُخَارِيُّ فِي الصحيح، وروى له في كتا رفع اليدين فِي الصلاة، وغيره.
-“ইমাম বুখারী তার ছহীহ্ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন এবং ‘রফে ইয়াদাইন ফিস সালাত’ ও অন্যান্য গ্রন্থে লাইছ থেকে রেওয়ায়েত করেছেন।”  ২৫৪৫৪. ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭; ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ’লামু নুবালা, রাবী নং ৮৪;

قال الساجي وكان أبو داود لا يدخل حديثه في كتاب السنن الذي ضعفه كذا قال وحديثه ثابت في السنن لكنه قليل 
-“ইমাম ছাজী বলেন, ইমাম আবু দাউদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) লাইছ এর দুর্বল হাদিস গুলো তার সুনান গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। যেমনটি তিনি বলেছেন এবং তার হাদিস গুলো ছহীহ্ প্রমাণিত যেগুলো সুনান গ্রন্থে রয়েছে কিন্তু এগুলোর সংখ্যা কম।”  ২৫৫৫৫.  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫;

অতএব, ইমামগণের অনেকেই লাইছ এর উপর নির্ভর করেছেন ও حسن الحديث (হাছানুল হাদিস) বলেছেন। স্বয়ং ইমাম আবু দাউদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার উপর নির্ভর করে বলেছেন তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই। অতএব, এই রাবীর বর্ণিত হাদিসের সর্বনিম্ন স্তর হবে حسن ‘হাছান’ হতে পারে। এই হাদিসের দ্বিতীয় রাবী عيسى بن إبراهيم البركي (ঈসা ইবনে ইব্রাহিম বারকী) তার সম্পর্কে ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেছেন:-
قال أبو حاتم: صَدُوق. -“ইমাম আবু হাতিম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: সে সত্যবাদী।”  ২৫৬৫৬. ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৩১৯; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৬১৫;

وَقَال النَّسَائي: ليس به بأس. -“ইমাম নাসাঈ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”  ২৫৭৫৭.  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৬১৫;

وذكره ابنُ حِبَّان في كتب الثقات -“ইমাম ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।”  ২৫৮৫৮.  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৬১৫;

وقال البزار في مسنده كان ثقة وقال الساجي صدوق -“ইমাম বাজ্জার (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় মুসনাদে বলেছেন, সে বিশ্বস্ত। ইমাম ছাজী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: সে সত্যবাদী।”  ২৫৯৫৯.  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৩৮০;

وقال مسلمة بن قاسم ثقة -“ইমাম মাসলামাহ ইবনু কাশেম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: সে বিশ্বস্ত।”  ২৬০৬০.  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৩৮০;

এই রাবী সম্পর্কে কোন ইমাম সমালোচনা করেছেন বলে আমি খুজে পাইনি। তাই এই রাবীর রেওয়ায়েত অবশ্যই ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য হবে। এই হাদিসের তৃতীয় রাবী يَحْيَى بْنُ يَعْلَى بْنِ حَرْمَلَةَ (ইয়াহইয়া ইবনে ইয়ালা হারমালাহ) সম্পর্কে কেউ সমালোচনা করেনি, ইমামগণ তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন লক্ষ্য করুন:-
قال أبو بكر بْن أبي خيثمة، عَن يحيى بْن مَعِين: ثقة -“আবু বকর ইবনু আবী খায়ছামা (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে বর্ণনা করেন, সে বিশ্বস্ত।” ২৬১৬১.  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬৯৫০;

وذكره ابنُ حِبَّان في كتاب الثقات -“ইমাম ইবনু হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” ২৬২৬২. ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬৯৫০;

روى له مسلم، والتِّرْمِذِيّ، والنَّسَائي، وابن ماجه. -“ইমাম মুসলীম, ইমাম তিরমিজি, ইমাম ইবনু মাজাহ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।” ২৬৩৬৩.  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬৯৫০;

وذكره أبو حفص بن شاهين في كتاب الثقات -“ইমাম আবু হাফছ ইবনু শাহীন (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে বিশ্বস্তদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।” ২৬৪৬৪.  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৫২২৫;

অতএব, রাবীদের সামগ্রীক বিচারে ও অন্যান্য রেওয়ায়েত দ্বারা সমর্থন পাওয়ার কারণে হাদিসটিকে হাছান বলা যায়, যা উৎসাহ প্রদানের জন্য যথেষ্ঠ। এই ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত রয়েছে,
وَرَوَى النَّسَائِيّ فِي كتاب الكنى أخبرني صفوان بْن عَمْرو، قال: حَدَّثَنَا مُحَمَّد ابن زياد أبو مسعود من أهل بيت المقدس، سَمِعت إِبْرَاهِيم بن أبي عبلة يَقُول لِأُنَاس جَاءُوا من الْغَزْو وَقد جئْتُمْ من الْجِهَاد الْأَصْغَر فَمَا فَعلْتُمْ فِي الْجِهَاد الْأَكْبَر قَالُوا يَا أَبَا إِسْمَاعِيل وَمَا الْجِهَاد الْأَكْبَر قَالَ جِهَاد الْقلب
-“আবু মাসউদ মুহাম্মদ ইবনে যিয়াদ মাকদেছী বলেন, আমি হযরত ইব্রাহিম ইবনে আবী উবালাহ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি লোকদেরকে বলছেন: তোমরা যুদ্ধ থেকে আসলে আর অবশ্যই ইহা ছোট জিহাদ, এখন বড় জিহাদ করতে হবে। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবা ইসমাঈল! জেহাদে আকবর কি? তিনি বললেন: ক্বাল্বের জিহাদ।” ২৬৫৬৫.  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, ২১০ নং রাবীর ব্যাখ্যায়; তাখরিজু আহাদিসুল কাশশাফ, হাদিস নং ৮২৫; তারিখে দামেস্ক, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৩৮ পৃ:;
 
ইব্রাহিম ইবনে আবী উবালাহ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ছিলেন বিশিষ্ট তাবেই। দেখুন ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর কিতাবুস ছিক্বাত এর রাবী নং ৪৯১০। তাবেঈ এর বাণী আছার দ্বারাও প্রমাণিত হয় ক্বাল্বের জেহাদ হল জেহাদে আকবর বা বড় জেহাদ। এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায়, 
قال صلّى الله عليه وسلم لقوم قدموا من الجهاد مرحباً بكم قدمتم من الجهاد الأصغر إلى الجهاد الأكبر فقالوا وما الجهاد الأكبر قال جهاد النفس قال العراقي: رواه البيهقي في الزهد 
-“রাসূলে পাক (ﷺ) যুদ্ধ থেকে আগত লোকদেরকে বললেন: তোমাদেরকে স্বাগতম যে তোমরা ছোট জেহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করছ। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বড় জিহাদ কি? নবীজি (ﷺ) বললেন: নাফছের সাথে জিহাদ। ইমাম যায়নুদ্দিন ইরাকী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: ইমাম বায়হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর যুহুদ গ্রন্থে ইহা বর্ণনা করেছেন।”  ২৬৬৬৬. তাখরিজে আহাদিসুল এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন, হাদিস নং ২৪৫১;

এর সমর্থনে আরেকটি হাদিস রয়েছে, যেমন:
قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم الْجِهَاد جهادان وأفضلهما جِهَاد النَّفس
-“রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: জিহাদ দুই ধরণের এর মধ্যে সর্বোত্তম জিহাদ হল নাফ্ছের’ জিহাদ।”  ২৬৭৬৭. হাকেম তিরমিজী: নাওয়াদেরুল উসূল, ৪র্থ খন্ড, ৫৬ পৃ:; ইমাম গাজ্জালী: মুকাশাফাতুল কুলুব, ২৪ পৃ:; তারিখে দামেস্ক, ৪৮তম খন্ড, ৪২৯ পৃ:;

এ ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত পাওয়া যায়,
وعن أبي ذر رضي الله عنه، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أفْضَلُ الجِهَادِ أنْ يُجاهِدَ الرَّجُلُ نَفْسَهُ 
-“হযরত আবু যার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: সর্বোত্তম জিহাদ হল নিজের নাফছের সাথে জিহাদ করা।”  ২৬৮৬৮.  ইমাম ছিয়তী: জামেউস ছাগীর, হাদিস নং ১৯৭৯; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩৮৩৩ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ২০৯২; ইবনু নাজ্জার তাঁর তারিখে; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ১১২৬২ ও ১১২৬৫; আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর, হাদিস নং ১৯৭৯; বাছাইরু ফিল ফিতান, ১ম খন্ড, ৭৬ পৃ:;

নাছিরুদ্দিন আলবানী এই হাদিসকে صحيح ছহীহ্ বলেছেন, দেখুন ‘ছহীহ্ জামেউস ছাগীর’ হাদিস নং ১০৯৯। কিন্তু ইমাম আবু নাঈম ও দায়লামীর সনদ দ্বায়িফ । যেমন আল্লামা ইমাম মানাভী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, 
وَرَوَاهُ عَنهُ أَيْضا أَبُو نعيم والديلمي بِإِسْنَاد ضَعِيف -“ইমাম আবু নুয়াইম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও দায়লামী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) দ্বায়িফ সনদে এরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন।  ২৬৯৬৯.” আল্লামা মানাভী: আত তাইছির শরহে জামেইস ছাগীর, ১ম খন্ড, ১৮২ পৃ:;

ইমাম হাকেম তিরমিজি (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেন,
وَقَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم الْمُجَاهِد من جَاهد نَفسه فِي ذَات الله تَعَالَى وَذَلِكَ أفضل الْجِهَاد
-“আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: মুজাহিদ হল তারা, যারা আল্লাহর জাতের ব্যাপারে স্বীয় নাফছের সাথে জিহাদ করে, আর ইহাই সর্বোত্তম জেহাদ।” ২৭০৭০.  নাওয়াদেরুল উসূল, ২য় খন্ড, ২৩৪ পৃ:;

 এ ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত রয়েছে,
الجُلُوسُ مَعَ الفُقَرَاءِ مِنَ التَّواضُعِ وَهُوَ مِنْ أفْضَلِ الجِهادِ (فر) عَن أنس.
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, বিনয়ের সাথে ফকির লোকের সাথে বসা হল সর্বোত্তম জেহাদ।”  ২৭১৭১. ইমাম ছিয়তী: জামেউস ছাগীর, হাদিস নং ৬৩৯৯; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১১৪৪৯; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৫৭৩৮; মুসনাদে ফেরদৌস, হাদিস নং ২৬৪৬; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ১৬৫৮৫; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১০৫৭;

এ সম্পর্কে ইমাম আব্দুর রহমান জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
ان جِهَاد النَّفس الْجِهَاد الْأَكْبَر وَجِهَاد الْكفَّار الْجِهَاد الْأَصْغَر كَمَا روى رَجعْنَا من الْجِهَاد الْأَصْغَر الى الْجِهَاد الْأَكْبَر
-“নিশ্চয় নাফ্ছের সাথে জেহাদ হল সর্বোত্তম জেহাদ, আর কাফেরের সাথে জেহাদ হল ছোট জেহাদ। যেমনটি বর্ণিত আছে যে, আমরা ছোট জেহাদ থেকে বড় জেহাদে প্রত্যাবর্তন করছি।”  ২৭২৭২.  শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, ২৮২ পৃ:;

ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
عن أبي ذر: أفضل الجهاد أن يجاهد الرجل في نفسه وهواه، أقول، وهو الجهاد الأكبر،
-“হযরত আবু যার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, ব্যক্তির সর্বোত্তম জেহাদ হল স্বীয় নাফছ ও হাওয়া তথা শয়তানের সাথে জেহাদ করা। আমি বলি: এটাই জেহাদে আকবর।”  ২৭৩৭৩.  ইমাম মোল্লা আলী: শরহে মুসনাদে আবী হানিফা, ১ম খন্ড, ৩৭১ পৃ:;

সর্বোপরি বলা যায়, যে হাদিস দ্বায়িফ অথবা হাছান সনদে বর্ণিত রয়েছে, সে হাদিসকে মওজু বলা কোন রাস্তা নেই। যেনে রাখা আবশ্যক যে, উছুলে হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী কোন দ্বায়িফ হাদিসের সাথে ছহীহ্ হাদিসের সাদৃশ্য থাকলে ঐ দ্বায়িফ হাদিসটিও ক্বাবী বা শক্তিশালী হয়ে যায় এবং একাধিক দ্বায়িফ সূত্র বর্ণিত হলেও বর্ণিত হলেও ইহা ক্বাবী বা শক্তিশালী রেওয়ায়েত হয়ে যায়। তাই এই হাদিস খানা ছহীহ্ হাদিসের সাথে মিল থাকার কারণে এবং একাধিক সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে ইহা শক্তিশালী হয়ে ‘হাছান’ অথবা ছহীহ্ লি’গাইরিহীর পর্যায়ের হয়ে গেছে। 
Top