প্রিয় নবীজি (ﷺ) কে দেখলে জাহান্নাম হারাম
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَبِيبِ بْنِ عَرَبِيٍّ الْبَصْرِيُّ قال: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ كَثِيرٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ: سَمِعْتُ طَلْحَةَ بْنَ خِرَاشٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَا تَمَسُّ النَّارُ مُسْلِمًا رَآنِي أَوْ رَأَى مَنْ رَآنِي
-“হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: ঐ মুসলমানকে জাহান্নামের আগুন স্পর্ষ করবেনা যে আমাকে দেখেছে অথবা আমাকে যারা দেখেছে তাদেরকে দেখেছে।” ৮১৭১৭, তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৩৮৫৮; ইমাম আবী আছেম: আস সুন্নাহ, হাদিস নং ১৪৮৪; ইমাম আবু নুয়াইম: মারেফাতুস সাহাবা, হাদিস নং ৩৮; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ১৩৬৫০; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩২৪৮০; ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৬৪২২;
এই হাদিসের রাবী مُوسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ كَثِيرٍ ‘মূসা ইবনে ইব্রাহিম ইবনে কাছির’ কে ইমাম ইবনে শাহিন ও ইবনে হিব্বান (র:) ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন। ৮১৮১৮, ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৭৭৪;
ইমাম আবু আলী তুশী (র:) তার বর্ণিত হাদিসকে حسن হাছান বলেছেন। ৮১৯১৯, ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৭৭৪;
ইমাম যাহাবী (র:) তার ব্যাপারে বলেন: صدوق مُقِلّ. -“সে সত্যবাদী ও হাদিস বর্ণনায় দরিদ্র বা তার হাদিস সংখ্যা খুব কম।” ৮২০২০, ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৩২২;
ইমাম যাহাবী (র:) তার ‘কাশেফ’ গ্রন্থে তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন। ৮২১২১, ইমাম যাহাবী: আল কাশেফ, রাবী নং ৫৬৭৬;
অতএব, এই রাবীর বর্ণিত হাদিস ছহীহ্ হওয়াতে কোন বাধা নেই। ইমামগণ তার ব্যাপারে কোন সমালোচনা করেননি। ইমাম তিরমিজি (র:) হাদিসটিকে حسن হাছান বলেছেন। আল্লামা ছানআনী (র:) হাসিটিকে ছহীহ্ বলেছেন। ৮২২২২, আল্লামা ছানআনী: আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৫৮৪৮;
মেসকাতের তাহকিকে নাছিরুদ্দিন আলবানী হাদিসটিকে حسن হাছান বলেছেন। আলবানী তার ‘তারাজিয়াতে আলবানী’ গ্রন্থে হাদিসটিকে حسن হাছান বলে স্বীকার করেছেন। ৮২৩২৩, আলবানী: তারাজিয়াাতে আলবানী, হাদিস নং ২৪৬;
এই হাদিসের সমর্থনে আরেকটি হাদিস রয়েছে,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ قَالَ: نَا مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ خَالِدٍ أَبُو مَرْوَانَ الْعُثْمَانِيُّ قَالَ: نَا نَافِعُ بْنُ صَيْفِيٍّ، وَكَانَ بَلَغَ مِائَةً وثِنْتَى عَشْرَةَ سَنَةً، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عُقْبَةَ الْجُهَنِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يَدْخُلُ النَّارَ مُسْلِمٌ رَآنِي، وَلَا رَأَى مَنْ رَآنِي،
-“আব্দুর রহমান ইবনে উকবা তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: ঐ মুসলমানকে আগুনে প্রবেশ করানো হবেনা যে আমাকে দেখেছে অথবা আমাকে যারা দেখেছে তাদেরকে দেখেছে।” ৮২৪২৪, ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ১০৩৬; ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৯৮৩; ইমাম আবী আছেম: আস সুন্নাহ, হাদিস নং ১৪৮৫; ইমাম আবু নুয়াইম: মারেফাতুস সাহাবা, হাদিস নং ৫৪১৫; ইমাম ইবনুল আছির: উছদুল গাবা ফি মারিফাতিস সাহাবা, ৩৭১৪ নং রাবীর ব্যাখ্যায়; হাফিজ ইবনে কাছির: জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান, হাদিস নং ৭৬৯৮; ইমাম আসকালানী: আল ইছাবা, ৫৬৩৫ নং রাবীর ব্যাখ্যায়; ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৬৪২২;
অতএব, কোন মুসলমান যদি রাসূলে করিম (ﷺ) কে দেখলে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবেনা। এমনকি কোন মুসলমান সাহাবীদেরকে দেখলেও তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবেনা। (সুবহানাল্লাহ)
র্হারা দিবসে রাসূল (ﷺ) রওজা থেকে আযান দিয়েছেন
أَخْبَرَنَا مَرْوَانُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ، قَالَ: لَمَّا كَانَ أَيَّامُ الْحَرَّةِ لَمْ يُؤَذَّنْ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثًا، وَلَمْ يُقَمْ، وَلَمْ يَبْرَحْ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيِّبِ الْمَسْجِدَ، وَكَانَ لَا يَعْرِفُ وَقْتَ الصَّلَاةِ إِلَّا بِهَمْهَمَةٍ يَسْمَعُهَا مِنْ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-“হযরত সাঈদ ইবনে আব্দুল আজিজ বলেন, র্হারা ফেতনার সময় ৩ দিন ও ৩ রাত মসজিদে নববীতে আযান ও ইকামত কিছুই হয়নি। সে সময় সাঈদ ইবনে মুছাইব (رضي الله عنه) মসজিদে নববীতে আটকা পড়েছিল। তিনি রাসূলে পাক (ﷺ) এর রওজা মুবারক থেকে (আযান ইকামতের) গুন গুন আওয়াজ দ্বারা নামাজের ওয়াক্ত নির্ধারণ করতেন।” ৮২৫২৫, সুনানে দারেমী, হাদিস নং ৯৪;
এই হাদিসের সকল রাবীগণ বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী। লা-মাজহাবী ওহাবীরা বিনা কারণে এই হাদিকে দ্বায়িফ বলে বেড়ায়। কারণ ‘মারওয়ান ইবনে মুহাম্মদ’ ছহীহ্ মুসলীমের রাবী ও বিশ্বস্ত। ‘সাঈদ ইবনে আব্দুল আজিজ’ ছহীহ্ মুসলীমের রাবী ও সর্ব সম্মতিক্রমে বিশ্বস্ত।” তাই হাদিসটি অবশ্যই ছহীহ্। এর সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়। যেমন লক্ষ্য করুন,
قَالَ أَخْبَرَنَا الْوَلِيدُ بْنُ عَطَاءِ بْنِ الْأَغَرِّ الْمَكِّيُّ قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ سُلَيْمَانَ عَنْ أَبِي حَازِمٍ قَالَ: سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ يَقُولُ: لَقَدْ رَأَيْتُنِي لَيَالِي الْحَرَّةِ وَمَا فِي الْمَسْجِدِ أَحَدٌ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ غَيْرِي وَإِنَّ أَهْلَ الشَّامِ لَيَدْخُلُونَ زُمَرًا زُمَرًا يَقُولُونَ: انْظُرُوا إِلَى هَذَا الشَّيْخِ الْمَجْنُونِ وَمَا يَأْتِي وَقْتَ صَلَاةٍ إِلَّا سَمِعْتُ أَذَانًا فِي الْقَبْرِ ثُمَّ تَقَدَّمْتُ فَأَقَمْتُ فَصَلَّيْتُ وَمَا فِي الْمَسْجِدِ أَحَدٌ غَيْرِي
-“আবী হাযম বলেন, আমি সাঈদ ইবনে মুছাইব (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: র্হারা দিবসে লোকেরা আমাকে দেখেছে আর মসজিদে নববীতে আমি ছাড়া আর কেউ ছিলনা। শামের লোকেরা দলে দলে প্রবেশ করেছেন আর বলেছেন দেখ এই বৃদ্ধ লোকটি পাগল। আমি নামাজের সময় চিনতাম শুধু নবী পাক (ﷺ) এর রওজা শরীফ থেকে আযান শুনে। অত:পর আমি দাঁড়াতাম ও ইকামত দিতাম এবং সালাত আদায় করতাম আর তখন মসজিদে কেউ থাকত না।” ৮২৬২৬, ইমাম ইবনে সা’দ: তাবাকাতুল কুবরা, ৫ম খন্ড, ১৩২ পৃ:;
দুইটি রেওয়ায়েত একত্রিত হয়ে অবশ্যই হাদিসটি আরো শক্তিশালী হবে। তাই বিষয়টি ছহীহ্ হওয়াতে আর কোন বাধা থাকবেনা।
রওজা মোবারকের সামনে সালাম দিলে নবীজি (ﷺ) সরাসরি শুনেন
أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ بِشْرَانَ، أخبرنا أَبُو جَعْفَرٍ مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْبَخْتَرِيِّ، حدثنا عِيسَى بْنُ عَبْدِ اللهِ الطَّيَالِسِيُّ، حدثنا الْعَلَاءُ بْنُ عَمْرٍو الْحَنَفِيُّ، حدثنا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ نَائِيًا أَبْلَغْتُهُ
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার রওজা মোবারকের কাছে এসে সালাত পাঠ করবেন তার সালাত আমি নিজ কানে শুনি। আর যারা দুর থেকে সালাম দেয় তাহলে ইহা আমার কাছে পৌছানো হয়।” ৮২৭২৭, ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ১৪৮১; তারিখে বাগদাদ, ১০৯০ নং হাদিস, ৪র্থ খন্ড, ৪৬৮ পৃ:; মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৯৩৪; ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, ৮১৫৪ নং রাবীর ব্যাখ্যায়; ইমাম সুবুকী: তবকাতুস শাফিয়াতুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১৭০ পৃ:; তাখরিজু আহাদিসুল কাস্সাফ, ৩য় খন্ড, ১৩৫ পৃ:; আল্লামা ইবনে মুলাক্কিন: বাদরুল মুনীর, ৫ম খন্ড, ২৯০ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ১১৯৭২; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২১৬৫; ফাওয়াইদুল মাজমুয়া, হাদিস নং ১৬;
ছহীহ্ সনদ সহকারে হাদিসখানা নিচে দেওয়া হল,
وَأَخْرَجَ أَبُو الشَّيْخِ فِي كِتَابِ الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَحْمَدَ لْأَعْرَجُ حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ الصَّبَّاحِ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ وَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ مِنْ بَعِيدٍ أبلغته
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার রওজা মোবারকের কাছে এসে সালাত পাঠ করবেন তার সালাত আমি নিজ কানে শুনি। আর যারা দুর থেকে সালাম দেয় তাহলে ইহা আমার কাছে পৌছানো হয়।” ৮২৮২৮, রওজাতুল মুহাদ্দেছীন, হাদিস নং ১১৯৩; হাফিজ ইবনুল কাইউম: জালাউল আফহাম, হাদিস নং ২৪; আজিমাবাদী: আওনুল মা’বুদ শরহে আবু দাউদ, ২০৪২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ২২৭৭০; তবকাতুস শাফিয়াতুল কুবরা লিছ সুবুকী, ৩য় খন্ড, ৪০৮ পৃ:; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২১৯৮;
এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (র:) বলেন,
وَأَخْرَجَهُ أَبُو الشَّيْخِ فِي كِتَابِ الثَّوَابِ بِسَنَدٍ جَيِّدٍ بِلَفْظِ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ
-“আবুশ শায়েখ তাঁর ‘কিতাবুছ ছাওয়াব’-এ হাদিসটি অতি-উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন, এই শব্দে: যে আমার রওজার কাছে এসে সালাত পাঠ করবে আমি তার সালাত শুনব।” ৮২৯২৯, ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বূখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৮৮ পৃ: ৩৪৪১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
অথচ আলবানী তার ছিলছিলায়ে দ্বায়িফার মধ্যে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (র:) এর নামে লিখেছেন:
فقول الحافظ في "الفتح" (৬ / ৩৭৯) : سنده جيد، غير مقبول
-“হাফিজ তার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে (৬/৩৭৯) বলেছেন: এর সনদ জায়্যেদ অগ্রহণযোগ্য।” ৮৩০৩০, ছিলছিলায়ে জয়ীফা, হাদিস নং ২০৩ এর ব্যাখ্যায়
কতবড় মিথ্যাবাদী!!
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (র:) বর্ণনা করেন,
وَرَوَاهُ أَبُو الشَّيْخِ، وَابْنُ حِبَّانَ فِي كِتَابِ: ثَوَابِ الْأَعْمَالِ، بِسَنَدٍ جَيِّدٍ.
-“আবুশ শায়েখ ও ইবনে হিব্বান (র:) ‘কিতাবুছ ছাওয়াবে’ হাদিসটি উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।” ৮৩১৩১, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, হাদিস নং ৯৩৪ এর ব্যাখ্যায়;
এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে আল্লামা নুরুদ্দিন আলী ইবনে মুহাম্মদ আল-কেনানী (র:) {ওফাত ৯৬৩ হি.} বলেন,
أخرجه أَبُو الشَّيْخ فِي الثَّوَاب. (قلت) وَسَنَده جيد كَمَا نَقله السخاوي عَن شَيْخه الْحَافِظ ابْن حجر
-“আবুশ শায়েখ তাঁর ‘ছাওয়াব’ গ্রন্থে উত্তম সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন। যেমনটি ইমাম ছাখাবী (র:) তাঁর ছাখাবী তিনার উস্তাদ হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (র:) থেকে বর্ণনা করেছেন।” ৮৩২৩২, তানজিয়াতু শারিয়াতুল মারফুয়া, ১ম খন্ড, ৩৩৫ পৃ:;
এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে আল্লামা আব্দুর রউফ মানাভী (র:) উল্লেখ করেন, قَالَ ابْن حجر اسناده جيد -“হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (র:) বলেন: ইহার সনদ জায়্যেদ বা অতি-উত্তম।” ৮৩৩৩৩, আল্লামা মানাভী: তায়ছির বি’শরহে জামেউছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ৪২৮ পৃ:;
এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম নববী (র:) বলেন,
وقال النووي في الأذكار ورياض الصالحين إسناده صحيح -“ইমাম নববী (র:) তাঁর ‘আজকার’ ও রিয়াদুছ ছালেহীন’ গ্রন্থে বলেন: ইহার সনদ ছহীহ্।” ৮৩৪৩৪, আজিমাবাদী: আওনুল মা’বুদ শরহে আবু দাউদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২২ পৃ:;
আফছুছের বিষয় হল, কুখ্যাত নাছিরুদ্দিন আলবানী এই হাদিসের রাবী عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي يَحْيَى الزُّهْرِيُّ أَبُو صَالِحٍ الْأَعْرَجُ ‘আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ ইবনে আবী ইয়াহইয়া যুহুরী আবু ছালেহ্ আল আরাজ’ সম্পর্কে বলেন, فهو مجهول -“সে অপরিচিত।” ৮৩৫৩৫, সিলসিলায়ে আহাদিসুদ দ্বায়িফা, হাদিস নং ২০৩;
অথচ এই রাবী মজহুল বা অপরিচিত নয় বরং মারুফ বা সু-পরিচিত, কারণ ইমামগণের কেউ তার ব্যাপারে সমালোচনা করেননি, বরং তার নাম, উপনাম, পিতা ও দাদার নাম, ভাইয়ের নাম, মৃত্যু সন, বাড়ি কোথায়, বংশের নাম ইত্যাদি পেশ করেছেন। এই রাবী সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্য হল,
عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي يَحْيَى الزُّهْرِيُّ أَبُو صَالِحٍ الْأَعْرَجُ تُوُفِّيَ سَنَةَ ثَلَاثِمِائَةٍ، هُوَ أَخُو مُحَمَّدِ بْنِ أَحْمَدَ بْنِ يَزِيدَ الزُّهْرِيِّ
-“‘আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ ইবনে আবী ইয়াহইয়া যুহুরী আবু ছালেহ্ আল আরাজ’ তিনশ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। তার ভাই হচ্ছে ‘মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে ইয়াজিদ যুহুরী’।” ৮৩৬৩৬, ইমাম আবু নুয়াইম: তারিখে ইসবাহান, রাবী নং ১১৩৭; তবকাতুল মুহাদ্দেসীন বি’ইসবাহান, রাবী নং ৪৮৬;
তাই স্পষ্ট করেই বলা যায় এই রাবী (মারুফ) বা সু-পরিচিত। যেহেতু ইমামদের কেউ তার ব্যাপারে সমালোচনা করেননি সেহেতু সে মকবুল বা গ্রহণযোগ্য রাবী। হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানী (র:) ইমাম নববী (র:), মোল্লা আলী ক্বারী (র:), আল্লামা মানাভী (র:) প্রমূখ এই রাবীর রেওয়ায়েতকে (ছহীহ্-যায়্যেদ) বা বিশুদ্ধ-অতি-উত্তম বলেছেন এবং অন্যান্য ইমামগণ সমর্থন করেছেন। এর থেকেই প্রমাণিত হয় এই রাবী মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য।
সুতরাং শুয়াইবুল ঈমানের সনদ দুর্বল হলেও আবুশ শায়েখ এর সনদ ছহীহ্। আর একই বিষয়ে একাধিক সনদ থাকলে পরস্পর মিলিত হয়ে হাদিসটি আরো ক্বাবী বা শক্তিশালী হয়ে যায়। সর্বোপরি এই হাদিসের সনদ ‘যায়্যেদ’ বা অতি-উত্তম বলে স্বীকৃত। সকল ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত, শুধুমাত্র আলবানী ও তার সাংগ-পাংগরা ব্যতীত।