পাগড়ী মাথায় নামাজ পড়লে ৭০ গুণ সওয়াব বেশী
عَن جَابر قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم رَكْعَتَانِ بِعِمامَةٍ خَيْرٌ مِنْ سَبْعِينَ رَكْعَةً بِلا عِمامَةٍ
-“হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: পাগড়ী পরা অবস্থায় দুই রাকাত নামাজ পাগড়ী বিহীন নামাজের ৭০ রাকাতের সমান সওয়াব।” ৭৮৯৮৯, মুসনাদে ফিরদৌস, হাদিস নং ৩২৩৩; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১২৭৭৪; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, ১ম জি: ২৭৩ পৃ: হাদিস নং ৬৯৭৪; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৬৬২৫; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৪১১১৩৮; ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, ১ম খন্ড, ৪৬৬ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১৬০৩; আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর কিতাবে ৪৪৬৮ নং হাদিস; আল্লামা ছানআনী: আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, ৪৪৫২ নং হাদিস; আল্লামা মানাভী: আত তাইছির শরহে জামেউস ছাগীর, ২য় খন্ড, ৩৫ পৃ:; আলবানী: ছিলছিলায়ে আহাদিসিদ দ্বায়িফা, হাদিস নং ৫৬৯৯;
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম ইসমাঈল আজলুনী (র:) বলেন,
لكن أورد السيوطي في الجامع الصغير عن جابر بلفظ ركعتان بعمامة خير من سبعين ركعة من غير عمامة فهو غير موضوع لأن الجامع المذكور جرده مؤلفه عن الموضوع.
-“ইমাম ছিয়তী (র:) তার ‘জামেউস ছাগীর গ্রন্থে এই শব্দে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন:- পাগড়ী সহ ২ রাকাত পাগড়ী ব্যতীত ৭০ রাকাতের সমান। এই হাদিস মওজু নয়, কারণ জামেউছ ছাগীর কিতাবে লেখক কোন মওজু হাদিস উল্লেখ করেননি।” ৭৯০৯০, ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১৬০৩;
ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (র:) অনুরূপ বলেছেন,
قُلْتُ مَرْوِيُّ ابْنِ عُمَرَ نَقَلَهُ السُّيُوطِيُّ عَنِ ابْنِ عَسَاكِرَ فِي جَامِعِهِ الصَّغِيرِ مَعَ الْتِزَامِهِ بِأَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ فِيهِ الْمَوْضُوعَ
-“আমি (আলী ক্বারী) বলি: ইমাম ছিয়তী (র:) বর্ণনাকারী হযরত ইবনু উমার (رضي الله عنه) থেকে ইমাম ইবনু আসাকির (র:) এর রেফারেন্সে তদীয় জামেউছ ছাগীর গ্রন্থে তিনার প্রতিশ্রুতির সাথে ইহা উল্লেখ করেছেন। কেননা জামেউছ ছাগীর গ্রন্থে তিনি কোন মওজু হাদিস উল্লেখ করেননি।” ৭৯১৯১, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ২৬৩;
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (র:) আরো উল্লেখ করেন,
وَقَدْ جَاءَ فِي خَبَرٍ ضَعِيفٍ: صَلَاةٌ بِعِمَامَةٍ خَيْرٌ مِنْ سَبْعِينَ صَلَاةً بِغَيْرِ عِمَامَةٍ
-“অবশ্যই হাদিসে দ্বায়িফ সনদে এসেছে: পাগড়ী সহ ২ রাকাত পাগড়ী ব্যতীত ৭০ রাকাতের সমান।” ৭৯২৯২, ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৪১০ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা মানাভী (র:) বলেন,
(رَكْعَتَانِ بعمامة خير من سبعين رَكْعَة بِلَا عِمَامَة) لِأَن الصَّلَاة حَضْرَة الْملك وَالدُّخُول إِلَى حَضْرَة الْملك بِغَيْر تجمل خلاف الْأَدَب (فر عَن جَابر) وَهُوَ غَرِيب
-“পাগড়ী সহ ২ রাকাত পাগড়ী ব্যতীত ৭০ রাকাতের সমান। কেননা নামাজে ফেরেস্থারা উপস্থিত থাকেন, আর নামাজে পাগড়ী ব্যতীত প্রবেশ করা ফেরেস্থাদের আদবের খেলাফ। হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে মুসনাদু ফেরদৌছে বর্ণনা করেছেন আর ইহা গরীব।” ৭৯৩৯৩, আল্লামা মানাভী: আত তাইছির শরহে জামেউস ছাগীর, ২য় খন্ড, ৩৫ পৃ:;
হাদিসটি সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস ইমাম ছাখাবী (র:) বলেছেন,
ومما لا يثبت ما أورده الديلمي في مسنده عن ابن عمر رفعه
-“এমনিভাবে হযরত ইবনু উমার (رضي الله عنه) থেকে মারফূভাবে ইমাম দায়লামী (র:) তদীয় মুসনাদে ইহা বর্ণনা করেছেন, ইহা ছাবিত নয়।” ৭৯৪৯৪, ইমাম ছাখাভী: মাকাছিদুল হাছানাহ, ৭১৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
মুহাদ্দিছিনে কেরামগণ যখন কান হাদিস সম্পর্কে বলেন তখন ইহা মওজু বুঝায়না এবং ছহীহ্ও বুঝায়না, বরং দ্বায়িফ অথবা হাছান বুঝায়। যেমন হাফিজুল হাদিস ইমাম ছাখাবী (র:) বর্ণনা করেছেন, বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিছ, হাফিজুল হাদিস, ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ:) বলেছেন,
وَذكر السخاوي عَنهُ أَن لفظ لَا يثبت لَا يلْزم مِنْهُ أَن يكون مَوْضُوعا فَإِن الثَّابِت يَشْمَل الصَّحِيح فَقَط والضعيف دونه.
-“ইমাম ছাখাবী (র:) হাফিজ ইবনু হাজার (র:) থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় لا يثبت এই শব্দটি হাদিসকে মওজু বলা আবশ্যক করেনা, কেননা ছাবিত শব্দটি শুধুমাত্র ছহীহ্ এর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় জয়ীফের ক্ষেত্রে নয়।” ৭৯৫৯৫, আল্লামা তাহের পাটনী: তাযকিরাতুল মওদ্বুআত, ৭৫ পৃষ্ঠা
সুতরাং ইমাম ছাখাবী (র:) এর দৃষ্টিতে হাদিসটি নূন্যতম দ্বায়িফ। হাফিজ ইবনে তাইমিয়া কোন সমালোচনা ছাড়াই হাদিসটি এভাবে উল্লেখ করেছেন, وقد روى أبو حفص مرفوعا: -“অবশ্যই আবু হাফ্ছ (র:) মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।” ৭৯৬৯৬, হাফিজ ইবনে তাইমিয়া: শরহে উমদাতুল ফিকহ, ১ম খন্ড, ৩১৪ পৃ:;
‘আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর’ গ্রন্থে এবং আল্লামা মানাভী (র:) ‘ফায়জুল কাদীর’ কিতাবে ৪৪৬৮ নং হাদিসে বলেছেন, এর সনদে
طَارق بْن عَبْد الرَّحْمَن بْن الْقَاسِم الْقرشِي (ত্বারিক ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে কাছিম) রয়েছে, যাকে ইমামগণের অনেকে বিশ্বস্ত বলেছেন আবার অনেকে ‘শক্তিশালী নয়’ বলেছেন। যেমন:
ذكره ابنُ حِبَّان فِي كتاب الثقات -“ইবনে হিব্বান (র:) তাকে বিশ্বস্তদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।” ৭৯৭৯৭, ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ৩য় খন্ড, ৪৩৪ পৃষ্টা রাবী নং ৭;
قلت وقال العجلي ثقة -“ইবনে হাজার আসকালানী (র:) বলেন, আমি বলি: ইমাম ইজলী (র:) বলেছেন: সে বিশ্বস্ত রাবী।” ৭৯৮৯৮, ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ৩য় খন্ড, ৪৩৪ পৃষ্টা রাবী নং ৭;
সুতরাং ইমাম হায়ছামী (র:) এর উসূল মোতাবেক হাদিসটির সনদের স্তর হচ্ছে ‘হাছান’। “ত্বারেক ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে কাসেম” সম্পর্কে ইমাম নাসাঈ (র:) সমালোচনা করলেও ইমাম ইবন হিব্বান (র:) ও ইমাম ইজলী (র:) ‘বিশ্বস্ত’ বলেছেন তাই এ অবস্থায় তার বর্ণিত হাদিসের স্তর হবে ‘হাছান’।
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (র:), ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (র:), ইমাম ইসমাঈল আজলুনী (র:) প্রমূখ দ্বায়িফ বলেছেন, কিন্তু কওমীদের বড় আলেম জনাব জুনায়েদ বাবুনগরীর তত্ত¡াবধানে ও নির্দেশনায় লিখিত ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ নামক বইয়ের চতুর্থ প্রকাশের ১২৮ পৃষ্টায় লিখে দিয়েছেন-
“এ হাদীসটি সম্পূর্ণ বাতিল। হাফিজুল হাদিস আল্লামা ছাখাবী, ইমাম আজলুনী ও ইমাম শাওকানীও হাদিসটিকে মওজু বলে অভিহিত করেছেন।” অথচ ইহা ইমামগণের চূড়ান্ত ফায়ছালা নয়। এখানে ইমামদের নামে চূড়ান্ত কথা গোপন করে মিথ্যাচারিতা করা হয়েছে।