১নং হাদিস

প্রতিটি কাজ তার নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: إنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إلَى مَا هَاجَرَ إلَيْهِ- (متفق عليه)

উচ্চারণ : আন উমারাব নিল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বালা: সামি’তু রাসূলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইয়াকুল: ইন্নামাল আ‘মালু বিননিয়্যাতি, ওয়া ইন্নামা লিকুল্লিম রিয়িন মা নাওয়া, ফামান কানাত হিযরাতুহু ইলাল্লাহি ওয়া রাসুলিহি ফা’হিযরাতুহু ইলাল্লাহি ওয়া রাসুলিহি, ওয়ামান কানাত হিজরাতুহু লিদুনইয়া ইউছিবুহা আও ইমরাআতিন ইয়ানকিহুহা ফাহিজরাতুহু ইলা মা হাজারা ইলাইহি (মুত্তাফাকুন আলাইহি)।

অনুবাদ : হযরত উমর বিন খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, প্রতিটি কাজ নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। নিশ্চয়ই প্রতিটি ব্যক্তির জন্য এটাই নির্ভর করে যা সে নিয়্যত করেছে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করবে তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে হিজরত হিসেবেই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি হিজরত করবে দুনিয়া অর্জন করা অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সে হিসেবেই গণ্য হবে, যার উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে। 

নোটঃ হিজরত শব্দের অর্থ দেশ বা জন্মভূমি ত্যাগ করা।


২য় হাদিসঃ ইসলামের ভিত্তী পাচঁটি

عَنْ‏   ‏ابْنِ عُمَرَ‏  ‏رَضِيَ  اللَّهُ عَنْهُ ‏ ‏قَالَ قَالَ   رَسُولُ  اللَّهِ ‏ﷺ   ‏بُنِيَ   الْإِسْلَامُ   عَلَى    خَمْسٍ  شَهَادَةِ  أَنْ  لَا    إِلَهَ  إِلَّا  اللَّهُ  وَأَنَّ  ‏مُحَمَّدًا رَسُولُ   اللَّهِ    وَإِقَامِ   الصَّلَاةِ   وَإِيتَاءِ    الزَّكَاةِ     وَالْحَجِّ   وَصَوْمِ رَمَضَانَ. (متفق عليه)

উচ্চারণ:   ‘আন   ইবনে     ওমারা   রাদিয়াল্লাহু    ‘আনহু     ক্বালা, ক্বালা      রাসুলুল্লাহি   ﷺ     বুনিয়াল   ইসলামু   আলা    খামছিন, শাহাদাতি    ‘আন     লা   ইলাহা   ইল্লাল্লাহু      ওয়ান্না   মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহি   ওয়া    ইকামিস  সালাতি  ওয়া  ইতায়িজ  যাকাতি  ওয়াল          হাজ্জা        ওয়া        সাওমি        রামাদান।        (মুত্তাফাক্বুন আলাইহি)


অনুবাদ: ইবনে ওমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ   এরশাদ    করেন-   ইসলামের   ভিত্তী    পাচটি,   ১:   সাক্ষ্য দেওয়া যে,   আল্লাহ ছাড়া  কোন ইলাহ  নেই, এবং    মুহাম্মাদ ﷺ    আল্লাহর  রাসুল,   ২:  নামাজ  কায়েম  করা,  ৩:  যাকাত প্রদান করা, ৪: হজ্ব   আদায়  করা এবং  ৫: রমাজানে   রোযা পালন করা।


[সহীহ বুখারী,  অধ্যায়:    অজু, ৪/১৬৪১ হা:  ৪২৪৩;   সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ১/৪৫ হা: ১৬]


৩নং হাদিস

ঈমানদারের তিনটি বৈশিষ্ট্য

عن أَنسٍ رضي اللَّه عنه عن النبي ﷺ قال : ثَلاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاَوَةَ الإِيَمَانِ : أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِواهُما ، وأَنْ يُحِبَّ المَرْءَ لا يُحِبُّهُ إِلاَّ للَّهِ ، وَأَنْ يَكْرَه أَنْ يَعُودَ في الكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ في النَّار- (متفق عليه)

উচ্চারণ : আন আনাসিন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আনিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ক্বালা: সালাসুন মান কুন্না ফিহি ওয়াজাদা বিহিন্না হালাওয়াতাল ঈমান: আয় ইয়াকুনাল্লাহু ওয়া রাসূলুহু আহাব্বা ইলাইহি মিম্মা সিওয়াহুমা, ওয়া আয় ইউহিব্বুল মারআ লা ইউহিব্বুহু ইল্লা লিল্লাহ, ওয়া আয় ইয়াকরাহা আন ইয়াউদা ফিল কুফরি বা’দা আন আনক্বাযাহুল্লাহু মিনহু, কামা ইয়াকরাহু আয় ইউক্বযাফা ফিন নার (মুত্তাফাকুন আলাইহি)।

অনুবাদ : হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে ঐ বৈশিষ্ট্যের কারণে ঈমানের স্বাদ লাভ করবে। সেগুলো হলো : (১) যার নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অন্য কিছুর চাইতে সবচেয়ে প্রিয় হবে, (২) যে ব্যক্তি কাউকে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই ভালোবাসবে, (৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহে কুফর থেকে মুক্তি লাভের পর পুরনায় কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে এভাবে অপছন্দ করবে, যেভাবে অগ্নিকু-ে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে।


৪নং হাদিস

নবীজীর ভালোবাসাই ঈমানের মূল

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللّه عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قال: لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكونَ أحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِه وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ- (متفق عليه)

উচ্চারণ : আন আনাসিন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আনিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ক্বালা: লা ইউমিনু আহাদুকুম হাত্তা আকুনা আহাব্বা ইলাইহি মিও ওয়ালিদিহী ওয়া ওয়ালাদিহি ওয়ান নাসি আজমাঈন (মুত্তাফাকুন আলাইহি)।

অনুবাদ : হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমাদের কেউ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষ হতে সর্বাধিক প্রিয় না হবো।

৫নং হাদিস

আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালোবাসার প্রতিদান

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : جَاءَ أَعْرَابِي قَالَ لرَسُولُ اللَّهِ ‏ ﷺ ، مَتَى السَّاعَةُ ؟ قَالَ : وَمَاذَا أَعْدَدْتَ لَهَا ؟ قَالَ احِبُّ اللَّهَ وَرَسُو له ، قَالَ : فَأَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ- (متفق عليه)

উচ্চারণ : আন আনাসিবনি মালেক ক্বালা জা’আ আ’রাবিয়্যুন ক্বালা লিরাসু লিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা: মাতাস সা’আ? ক্বালা: ওয়া মাজা আ’দাত্তা লাহা? ক্বালা উহিব্বুল্লাহা ওয়া রাসুলিহি, ক্বালা: ফা আনতা মা’আ মান আহবাবতা (মুত্তাফাকুন আলাইহি)।

অনুবাদ : হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একজন গ্রাম্য আরবীয় লোক আসল এবং জিজ্ঞেস করল কিয়ামত কখন হবে? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি অর্জন করেছ? সে বলল, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসি। নবীজী এরশাদ করলেন, তুমি যাকে ভালোবাস তার সাথেই তোমার হাশর হবে। 


৬নং হাদিস

সর্বোত্তম আমল

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ‏أَفْضَلُ الأَعْمَالِ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ-

উচ্চারণ : আন আবি যার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বালা, ক্বালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা: আফদ্বালুল আমালী আল হুব্বু ফিল্লাহি ওয়াল বুগদু ফিল্লাহি।

অনুবাদ : হযরত আবু যর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, সর্বোত্তম আমল হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে অপছন্দ করা।


৭নং হাদিস

দুনিয়া মুমিন ও কাফেরের জন্য কেমন?

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ :قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ-

উচ্চারণ : আন আবি হুরাইরাতা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বালা ক্বালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা: আদ্ দুনিয়া সিজনুল মু’মিনি ওয়া জান্নাতুল কাফিরি।

অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, দুনিয়া ঈমানদারের জন্য কারাগার আর কাফেরের জন্য জান্নাত।


৯নং হাদিস

ইহসানের পরিচয়

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ الْإِحْسَانُ أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ-

উচ্চারণ : আন আনাসিবনি মালেক ক্বালা ক্বালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা: আল ইহসানু আন তা’বুদাল্লাহা কাআন্নাকা তারাহু ফাইল লাম তাকুন তারাহু ফাইন্নাহু ইয়ারাকা।

অনুবাদ : হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ইহসান হচ্ছে তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছো। আর যদিও তুমি তাঁকে দেখতে নাও পাও, তাহলে মনে করবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে দেখছেন।


১০নং হাদিস

নবীজীর রাত্রীকালীন কঠোর ইবাদত

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ كَانَ يَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ: لِمَ تَصْنَعُ هَذَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ؟ قَالَ: أَفَلاَ أُحِبُّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا- (متفق عليه

উচ্চারণ : আন আয়িশাতা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা, আন্না নাবিয়্যাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা কানা ইয়াকুমু মিনাল লাইলি হাত্তা তাতাফাত্তারা ক্বাদামাহু ফাক্বালাত: আয়িশাতু লিমা তাসনাউ হাযা ইয়া রাসূলাল্লাহি, ওয়া ক্বাদ গাফারাল্লাহু লাকা মা তাক্বাদ্দামা মিন যাম্বিকা ওয়ামা তায়াক্ষারা? ক্বালা: আফালা উহিব্বু আন আকুনা আবদান শাকুরান। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)।

অনুবাদ : হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ইবাদতের জন্য এমনভাবে দ-ায়মান থাকতেন যে, নবীজীর পা মোবারক ফুলে যেত। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেন আপনি এমনটা করছেন? অথচ আপনি নিস্পাপ। নবীজী এরশাদ করলেন, আমি কি এটা পছন্দ করবো না যে, আমি শুকরগুজার বান্দাহ হই।


১১নং হাদিস

হাদিস প্রচারের হুকুম ও মিথ্যা প্রচারের কুফল

عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما : أنَّ النبيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً ، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ- (رواه البخاري)

উচ্চারণ : আন আবদিল্লাহিবনি আমর ইবনিল আস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ক্বালা, আন্না ন াবিয়্যাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ক্বালা: বাল্লিগু আন্নি ওয়ালাও আয়াহ, ওয়া হাদ্দিসু আন বানি ইসরাঈল ওয়া লা হারাযা, মান কাযাবা আলাইয়্যা মুতাআম্মিদান ফাল ইয়াতাবাও ওয়া মাক্ব’আদাহু মিনান নার (রাওয়াহুল বুখারী)।

অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত (বাক্য) হলেও মানুষের নিকট পৌছে দাও। আর তোমরা বনি ঈসরাঈল থেকে হাদিস বর্ণনা কর, এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করল (মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করল), সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা করে নিল। 


১২নং হাদিস

নবীজী হচ্ছেন বন্টণকারী

عَنْ مُعَاوِيَةَ رضي الله عنه يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَقُولُ: مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ، وَإِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَاللَّهُ يُعْطِي- (متفق عليه)

উচ্চারণ : আন মুয়াবিয়াতা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইয়াকুলু সামিতুন নাবিয়্যা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইয়াকুলু: মাইয়্যুরিদিল্লাহু বিহি খাইরান ইয়ুফাক্কিহু ফিদ্দীনি, ওয়া ইন্নামা আনা ক্বাসিমুন ওয়াল্লাহু ইয়ুতি (মুত্তাফাকুন আলাইহি)।

অনুবাদ : হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। আর নিশ্চই আমিই হচ্ছি বন্টণকারী আর আল্লাহ হচ্ছেন দাতা। 


১৩নং হাদিস

পবিত্রতা, তাসবিহ, সালাত, ধৈর্য এবং কুরআনের ফজিলত

عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ الطَّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ،وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآنِ -أَوْ: تَمْلَأُ- مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، وَالصَّلَاةُ نُورٌ، وَالصَّدَقَةُ بُرْهَان ٌ،وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ، وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَك أَوْ عَلَيْك، كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو، فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا- (رَوَاهُ مُسْلِمٌ)

উচ্চারণ : আন আবি মালিকিল আশআরি ক্বালা: ক্বালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা আত্ব তুহুরু শাতরুল ঈমান, ওয়াল হামদু লিল্লাহি তামলাউল মিযান, ওয়াসুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি তামলানি আও তামলাউ-মা বাইনাস সামায়ী ওয়াল আরদ্বি, ওয়াস সালাতু নূরুন, ওয়াস সাদাক্বাতু বুরহানুন, ওয়াস সাবরু দ্বিয়াউন, ওয়াল কুরআনু হুজ্জাতুল লাকা আও আলাইকা, কুল্লুন নাসি ইয়াগদু, ফাবাই-উ নাফসাহু, ফামু’তিকুহা আও মুবিকুহা (রাওয়াহু মুসলিম)।

অনুবাদ : হযরত আবু মালিক আল আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পবিত্রতা হল ঈমানের অংশ। ‘আলহামদু লিল্লাহ’ মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ’ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে। ‘সালাত’ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। ‘সদাকাহ’ হচ্ছে দলীল। ‘ধৈর্য’ হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর ‘আল কুরআন’ হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। বস্তুত: সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে আমলের বিনিময় বিক্রি করে। তার আমল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর আযাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে নিজেই তার নিজের ধ্বংস সাধন করে।


১৪নং হাদিস

মৃত্যুর পরও যে সাওয়াবের ধারা জারি থাকে

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ , قَالَ رَسُولَ اللَّهِﷺ: إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنهُ عَمَلُهُ إِلا مِنْ ثَلاثٍ : صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ- (رَوَاهُ مُسْلِمٌ)

উচ্চারণ : আন আবি হুরাইরাতা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বালা ক্বালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা: ইযা মা-তাল ইনসানু ইনক্বাতা’আ আনহু আমালুহু ইল্লা মিন ছালাছিন: সাদাক্বাতিন জারিয়াতিন, আও ইলমিন ইউনতাফা’উ বিহি, আও ওয়ালাদিন সালিহিন ইয়াদ’উ লাহু (রাওয়াহু মুসলিম)।

অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমলের (সাওয়াবের) ধারা বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ব্যতীত (এ তিনটি আমলের সাওয়াব বন্ধ হয় না)। (১) সদকায়ে জারিয়াহ, (২) এমন ইলম যা দ্বারা উপকার লাভ করা যায়, (৩) এমন সু-সন্তান যে তার জন্য দোয়া করবে। 


১৫নং হাদিস

দোয়া হচ্ছে ইবাদতের মূল

عن أَنسٍ رضي اللَّه عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: الدُّعَاءُ مُخُ‏ الْعِبَادَةِ-

উচ্চারণ : আন আনাসিন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বালা, ক্বালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা: আদ দু’আউ মুখখুল ইবাদাহ।

অনুবাদ : হযরত আনাস বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, দোয়া হচ্ছে ইবাদাতের মগজ (মূল)। 


১৬তম হাদিসঃ দোয়া কবুলের সময়

عن أبي  أمامة رضي الله عنه  قال: قيل «يَا  رَسُولَاللهِ  ﷺ أَيُّ     الدُّعَاءِ     أَسْمَعُ؟»     قَالَ:     ”جَوْفَ     اللَّيْلِ     الآخِرِ،وَدُبُرَ  الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ” رواه الترمذي و النسائي

উচ্চারণ: ‘আন আবি উমামাতা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ক্বালা ইয়া রাসূলাল্লাহি      ﷺ       আইয়্যুদ        দু’আয়ি      আসমা’উ?       ক্বালা যাওফাল     লাইলিল     আখিরি,      ওয়াদুবুরাস      সালাওয়াতিল মাকতুবাত। (রাওয়াহু তিরমিজি ও নাসাঈ)


অনুবাদ: হযরত   আবু  উমামা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা   আনহু) থেকে  বর্ণিত।    তিনি    বলেন,  একদিন  রাসুলুল্লাহ  ﷺ   এর   দরবারে    আরজ   করা    হল,    হে   আল্লাহ্‌র   রাসূল   সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,  কোন সময়ের  দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল   হয়ে   থাকে।   তিনি   ﷺ    এরশাদ   করলেন,     রাতের  শেষাংশে এবং ফরজ নামাজের পরে।


[তিরমিযী    ৫/৫২৬    হা:     ৩৪৯৯;    নাসায়ী,      আস    সুনানুল কুবরা, ৬/৩২, হা: ৯৯৩৬; আব্দুর  রাযযাক, আল মুসান্নাফ, ২/৪২৪,   হা:   ৩৯৪৪;  নাসায়ী,   আমালাল  ইয়াওমি    ওয়াল লাইলা, ১/১৮৬, হা: ১০৮; তাবরানী, আল ম’জামুল আওস্ত ৩/৩৭০, হা: ৩৪২৮; মুসনাদে শামী ১/৪৫৪, হা: ৮০৩]


১৭নং হাদিস

জানাজার নামাজের পর দোয়া

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺيَقُولُ : إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ- (رواه أبو داود)

উচ্চারণ : আন আবি হুরাইরাতা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বালা সামি’তু রাসুলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইয়াকুলু: ইযা সাল্লাইতুম আলাল মাইইয়্যিতি ফাআখলিছু লাহুদ দুয়া (রাওয়াহু আবু দাঊদ)।

অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়ে নিবে, (সাথে সাথে) তার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করবে। 


১৮নং হাদিস

কবর যিয়ারতের ফজিলত

عَنْ بريرة رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ، فَزُورُوهَا- (رواه مسلم والترميذي و زاد فَإِنَّها وَتُذَكِّرُكم الآخِرَةَ،)

উচ্চারণ : আন বুরায়রাতা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ক্বালা ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা: কুনতু নাহাইতুকুম আন জিয়ারাতিল কুবুরি, ফাযুরুহা (রাওয়াহু মুসলিম, ওয়াত তিরমিজি ওয়া যাদা, ফা ইন্নাহা তুযাক্কিরুকুমুল আখিরাতা)।

অনুবাদ : হযরত বুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর (সহিহ মুসলিম, সুনানে তিরমিজিতে এ বাক্যটা যুক্ত হয়েছে : কেননা এটি তোমাদের পরকালকে স্মরণ করে দিবে)। 


১৯তম       হাদিসঃ     

রাসুলুল্লাহ     ﷺ     এর     রওজ্বা  যিয়ারতের ফযিলত

عَنِ    ابْنِ  عُمَرَ،   قَالَ:    قَالَ  رَسُولُ    اللَّهِ   ﷺ  :  مَنْ  زَارَقَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي (رواه الدار قطني و البيهقي)

উচ্চারণ:  ‘আন   ইবনে  উমারা  (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) ক্বালা, ক্বালা   রাসূলুল্লাহি ﷺ মান যারা ক্বাবরি,  ওয়াজাবাত লাহু শাফায়াতি।

অনুবাদ: হযরত  ইবনে   উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা  আনহু) থেকে   বর্ণিত।   তিনি   বলেন,   রাসুলুল্লাহ   ﷺ   বলেছেন   যে  ব্যক্তি   আমার  রওজ্বা    যিয়ারত    করল,  তার  জন্য  সুপারিশ করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে গেল।

[সুনানে   দারে    কুত্বনী   ২/২৭৮    হাঃ    ১৯৪;    বায়হাকীঃকৃত শুয়াইবুল  ইমান ৩/৪৯০  হাঃ  ৪১৫৯; ইমাম   হায়সামী  কৃত মুজামুয যাওয়ায়েদ ৪/২]


২০নং হাদিস

মক্কা বা মদিনা শরীফে ইন্তেকালের ফজিলত

عَنْ حَاطِبٍ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ زَارَنِي بَعْدَ مَوْتِي ، فَكَأَنَّمَا زَارَنِي فِي حَيَاتِي ، وَمَنْ مَاتَ فِي أَحَدِ الْحَرَمَيْنِ بُعِثَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْآمِنِينَ- (رواه الدار قطني و البيهقي)

উচ্চারণ : আন হাতিবিন, ক্বালা ক্বালা ন্নাবিয়্যু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম: মান যারানি বা’দা মাওতি ফাকাআন্নামা যারানি ফি হায়াতি ওয়া মান মাতা ফি আহাদিল হারামাইনি বু’য়িছা ইয়াওমাল কিয়ামাতি মিনাল আমিনিন (রাওয়াহু দ্বারে-কুতনী ওয়াল বায়হাকী)।

অনুবাদ : হযরত হাতেব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যেই ব্যক্তি আমি দুনিয়া পর্দা করার পরে আমার রওজা যিয়ারত করে সে যেন আমার হায়াত অবস্থায়ই আমার যিয়ারত (সাক্ষাত) করল। যে ব্যক্তি হারামাঈন শারিফাঈন (মক্কা ও মদিনা) এর যে কোন একটিতে ইন্তেকাল করল, কিয়ামত দিবসে নিরাপত্তা প্রাপ্ত বান্দাদের সাথে সে উত্থিত হবে।


২১নং হাদিস

নামাজে আস্তে আমিন বলা

عَنْ وَائِلٍ بن حُجَرْ قَالَ سَمِعْتُ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ َقرَأَ ‏:‏ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ‏فَقَالَ ‏"آمِينَ‏"‏ ‏.‏ وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ- (رواه الترمذي و أحمد و الحاكم)

উচ্চারণ : আন ওয়ায়লিবনি হুজর ক্বলা সামিতু আন্নান্নাবিয়্যা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ক্বারাআ: গাইরিল মাগদ্বু বি আলাইহিম ওয়া লাদ্ দোয়াল্লীন ফাক্বালা “আমীন”। ওয়া খাফাদ্বা বিহা ছাওতাহু (রাওয়ায়হুত তিরমিজি ওয়া আহমাদ, ওয়াল হাকিম)।

অনুবাদ : হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে ‘গাইরিল মাগদ্বু বি আলাইহিম ওয়া লাদ্ দোয়াল্লীন’ পড়তেন অতঃপর বললেন, “আমিন”। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমিন বলার সময় স্বরকে নিচু করলেন (আস্তে পড়লেন)। 


২২নং হাদিস

ইমামের পিছনে কিরাত না পড়া

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: إنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا- )رواه أَبُو دَاوُد و ابن ماجه و أحمد(

উচ্চারণ : আন আবি হুরায়রাতা ক্বালা: ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা: ইন্নামা জু’ইলাল ইমামু লি ইউতাম্মা বিহি ফা-ইজা কাব্বারা ফাকাব্বিরু ও ইযা ক্বারাআ ফাআনছিতু (রাওয়াহু আবু দাউদ ওয়া ইবনে মাজাহ ওয়া আহমাদ)।

অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যাকেই ইমাম বানানো হয়, তাকেই (নামাজে) পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হয়। যখন সে তাকবির বলে তখন তোমরাও তাকবির বল। যখন সে কিরাত পড়বে, তখন তোমরা চুপ থাক।


২৩নং হাদিস

নামাজে শুধুমাত্র একবার হাত উত্তোলন করা

عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ: أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ؟قَالَ فَصَلَّى، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا فِي اول مَرَّةٍ – )رواه الترمذي و أَبُو دَاوُد و النسائي)

উচ্চারণ : আন আলক্বামাতা ক্বালা, ক্বালা আবদুল্লাহিবনু মাসঊদ, আলা উছাল্লি বিকুম সালাতা রাসুলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা? ক্বালা: ফাছাল্লা, ফালাম ইয়ারফা ইয়াদাইহি ইল্লা ফী আউয়ালি মাররাতিন (রাওয়াহুত তিরমিজি ওয়া আবু দাউদ ওয়ান নাসায়ী)।

অনুবাদ : হযরত আলকামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি কি তোমাদেরকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাজ আদায়ের পদ্ধতি শিক্ষা দিব না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি নামাজ পড়লেন এবং একবার ব্যতীত তিনি তার হাত উত্তোলন করলেন না (শুধু একবার হাত উত্তোলন করেন)। 


২৫নং হাদিস

তারাবির নামাজ বিশ রাকাত

عن ابن عباس رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرَ – (رواه ابن أبي شيبة و عبد بن حميد و الطبراني والبيهقي)

উচ্চারণ : আন ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা আন্না রাসুলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা কানা ইউসাল্লি ফী রামাদ্বানা ইশরীনা রাক’আতান ওয়ালবিতরা (রাওয়াহু ইবনে আবি শায়বা ওয়া আব্দ বিন হুমাইদ ওয়া ত্বাবারানী ওয়াল বায়হাক্বী)।

অনুবাদ : হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র রমজান মাসে বিশ রাকাত নামাজ (তারাবিহ) আদায় করতেন। অতঃপর বিতির পড়তেন। 


২৬নং হাদিস

শবে বরাতের ফযিলত

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: يَطْلُعُ اللَّهُ تَعَالَى إِلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ – (رواه ابن حبان)

উচ্চারণ : আন মু’আজিবনি জাবাল আনিন্নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ক্বালা: ইয়াতলু উল্লাহু তা’আলা ইলা খালক্বিহি লাইলাতান নিসফি মিন শা’বানা ফা-ইয়াগফিরু লিজামি’ই খালক্বিহি ইল্লা লি-মুশরিকিন আও মুশাহিনিন (রাওয়াহু ইবনু হিব্বান)।

অনুবাদ : হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, শাবানের মধ্যতম রজনীতে (১৫ই শাবান) আল্লাহ পাক বান্দাহদের উপর রহমতের দৃষ্টি দান করেন এবং মুশরিক ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।


২৭নং হাদিস

নবীজীর পিতা-মাতা মু’মিন ছিলেন

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَا وَلَدَنِي مِنْ سِفَاحٍ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ شَيْءٌ ، مَا وَلَدَنِي إِلا نِكَاحٌ كَنِكَاحِ الإِسْلامِ - (رواه الطبرني و البيهقي و ابن عساكر(

উচ্চারণ : আন ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ক্বালা, ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা: মা ওলাদানী মিন সিফাহী আহলিল জাহিলিয়্যাতি শাই-উন, মা ওয়ালাদানী ইল্লা নিকাহুন কা-নিহাহিল ইসলামি (রাওয়াহুত ত্বাবরানী ওয়াল বায়হাক্বী ওয়া ইবনু আসাকির)।

অনুবাদ : হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমার সম্মানিত পিতা-মাতার মধ্যে জাহেলী যুগের বিন্দু পরিমাণ খারাপ কিছু ছিল না। এবং আমার জন্ম ইসলাম সম্মত বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে হয়েছে। 


২৮নং হাদিস

নবীজী সোমবার রোযা রাখতেন

عن أبى قتادة حينما سُئِلَ النبي ﷺ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ قَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ- (رواه مسلم)

উচ্চারণ : আন আবি ক্বাতাদাতা হিনামা সু-ইলান্নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা আন সাওমি ইয়াওমিল ইসনাইনি ক্বালা যা’কা ইয়াওমু উলিদতু ফীহি ওয়া ইয়াওমুন বু’ইছতু আও উনযিলা আলাইয়্যা ফীহি (রাওয়াহু মুসলিম)।

অনুবাদ : হযরত আবু কাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রতি সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, এই দিনে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমাকে নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে অথবা আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। 


২৯নং হাদিস

সাহাবাগণ নবীজীর সম্মানে ক্বিয়াম করতেন

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَجْلِسُ مَعَنَا فِي الْمَجْلِسِ يُحَدِّثُنَا فَإِذَا قَامَ قُمْنَا قِيَامًا حَتَّى نَرَاهُ قَدْ دَخَلَ بُيُوتَ أَزْوَاجِهِ- (رواه أَبُو دَاوُد)

উচ্চারণ : আন আবি হুরায়রাতা রাদ্বিয়াল্লহু আনহু কানা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইয়াজলিছু মা’আনা ফীল মাজলিছি ইউহাদ্দিছুনা ফা-ইজা ক্বামা কুমনা ক্বিয়ামান হাত্তা নারাহু ক্বাদ দাখালা বুয়ুতা আয-ওয়াজিহি (রাওয়াহু আবু দাউদ)।

অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে মসজিদে নববীতে বসে দ্বীনি বিষয়ে আলোচনা করতেন। যখন তিনি দাঁড়াতেন, আমরাও দাঁড়িয়ে যেতাম। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা দাড়িয়ে থাকতাম যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা দেখতাম তিনি তার কোন এক বিবির ঘরে প্রবেশ করছেন।


৩০নং হাদিস

দরূদ ও সালাম পাঠের ফযিলত

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اَللَّهِ ﷺ إِنَّ أَوْلَى اَلنَّاسِ بِي يَوْمَ اَلْقِيَامَةِ, أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلَاةً- (رواه الترمذي و ابن حبان)

উচ্চারণ : আন ইবনে মাস’ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বালা, ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইন্না আওলা ন্নাছি বি ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি, আকছারুহুম আলাইয়্যা সালাতান (রাওয়াহুত তিরমিজি ওয়া ইবনু হিব্বান)।

অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের ময়দানে সে ব্যক্তি আমার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী থাকবে যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) আমার উপর সবচেয়ে বেশি দুরূদ ও সালাম পেশ করেছে। 


৩১নং হাদিস

সৃষ্টিকুলে নবীজীর মত কেউ নেই

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الوِصَالِ ، قَالُوا : فِإِنَّكَ تُوَاصِلُ ، قَالَ : أيُّكُمْ مِثْلِي ؟ ، إِنِّي أَبِيتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسْقِينِ- (متفق عليه)

উচ্চারণ : আন আবি হুরায়রাতা, ক্বালা: নাহা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা আনিল বিসালে, ক্বালু: ফা-ইন্নাকা তুওয়াসিলু, ক্বালা: আইয়ুকুম মিছলী? ইন্নি আবিতু ইউত্ব-‘ইমুনী রাব্বী ওয়া ইয়াসক্বীনি (মুত্তাফাকুন আলাইহি)।

অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওমে বেসাল রাখতে নিষেধ করেছেন। তখন কিছু সাহাবী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি নিজেতো সওমে বেসাল পালন করেন। নবীজী এরশাদ করলেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ আমার মত? আমি তো এমন ভাবে রাত্রিযাপন করি যেন আমার রব আমাকে খাওয়ান এবং পান করান। 

নোট : ‘সওমে বেসাল ’ এমন রোজা যার কোন সেহরি ও ইফতার নেই।


৩২নং হাদিস

নবীজী কখন নবুয়্যত লাভ করেছেন?

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالجَسَدِ-

উচ্চারণ : আন আবি হুরায়রাতা ক্বালা, ক্বালু ইয়া রাসুলাল্লাহ! মাতা ওয়াজাবাত লাকান্নুবুয়াতু? ক্বালা ওয়া আদামু বাইনার রূহী ওয়াল জাসাদি।

অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামগন আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার উপর কখন নবুয়্যতের দায়িত্বারোপ করা হয়েছে? নবীজী এরশাদ করলেন, যখন আদম নবী শরীর ও রূহের মধ্যবর্তী স্তরে ছিলেন। (অর্থাৎ যখন আদম নবী এর রূহ ও শরীরের মধ্যে কোন সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি, আমি তখনও নবী ছিলাম)। 


৩৩নং হাদিস

নবীজীর পাঁচটি নাম

عَنْ مُحمّدِ بنِ جُبَيْرِ بنِ مُطْعِمٍ عن أَبِيهِ قال قال رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: إِنّ لِي خمسة أَسْمَاءَ: أَنَا مُحمّدُ، وَأَنا أَحْمَدُ، وَأَنَا الْمَاحِي الّذِي يَمْحُو الله بِي الْكُفْرَ، وَأَنَا الْحَاشِرُ الّذِي يُحْشَرُالنّاسُ عَلَى قَدَمَيّ، وَأَنَا الْعَاقِبُ-

উচ্চারণ : আন মুহাম্মাদিবনি জুবায়েরিবনি মুত্বইম আন আবীহি ক্বালা, ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা: ইন্না লী খামছাতা আছমাআ আনা মুহাম্মাদু, ওয়া আনা আহমাদু, ওয়া আনাল মাহী আল্লাযী ইয়ামহুল্লাহু বিল কুফরা, ওয়া আনাল হাশিরু আল্লাযী ইউহশারুন নাছু আলা কাদামি, ওয়া আনাল আক্বিব।

অনুবাদ : হযরত মুহাম্মাদ বিন যুবাইর বিন মুতঈম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এরশাদ করেন, আমার পাঁচটি নাম আছে- (১) আমি ‘মুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত), (২) আমি ‘আহমদ’ (অধিক প্রশংসাকারী), (৩) আমি ‘মাহী’ (মোচনকারী) কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমার দ্বারা কুফরকে মিটিয়ে দিবেন, (৪) আমি ‘হাশের’ (সমবেতকারী), সকল লোককে আমার কদমে সমবেত করা হবে কিয়ামতের ময়দানে, (৫) এবং আমি ‘আক্বিব’ সর্বশেষ আগমনকারী (শেষ নবী)। 


৩৪নং হাদিস

নবীজীর উছিলায় দোয়া

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ حُنَيْفٍ أَنَّ رَجُلًا ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي قَال انْ شِئْتَ دَعَوْتُ وَإِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قَالَ فَادْعُهْ قَالَ فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ وُضُوءَهُ وَيَدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ يَا مُحّمَّدَ! إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِيَاللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ-

উচ্চারণ : আন উছমানাবনি হুনাইফিন আন্না রাজুলান, দ্বারিরাল বাছারি আতান্নাবীয়্যা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামা ফাক্বালা: উদ’উল্লাহা আয় ইউ’আফিয়ানী ক্বালা ইন শি’তা দা’আওতু ওয়া ইন শি’তা ছাবারতা ফাহুয়া খায়রুল্লাকা। ক্বালা ফাদ’উহু ক্বালা ফাআমারাহু আয় ইয়াতাওয়াদ্দা ফাইউহছিনা ওদ্বুয়াহু ওয়া ইয়াদউয়া বিহাজাদ্দো’আয়ে “আল্লাহুম্মা ইন্নি আছআলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বিনাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যির রাহমাতি, ইয়া মুহাম্মাদু ইন্নি তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা রাব্বী ফী হা-জাতী হাজিহি লিতুক্বদ্বা, লিয়া আল্লাহুম্মা ফাশাফফি’হু ফিয়্যা”।

অনুবাদ : হযরত ওসমান ইবনে হুনাইফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক অন্ধ ব্যক্তি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার দরবারে হাজির হয়ে আরজ করল, আমার চোঁখে জ্যোতি ফিরে পাবার জন্য দোয়া করুন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি যদি চাও আমি তোমার জন্য দোয়া করবো, আর যদি অপেক্ষা করতে চাও, তবে সেটা তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে। সে আরজ করল আক্বা এখনই দোয়া করুন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ভালোভাবে অজু করার এবং দু’রাকাত নামাজ পড়ার হুকুম করলেন। এবং বললেন- এই ভাবে দোয়া কর, “হে আল্লাহ! আমি আপনার দিকে মনোনিবেশ করছি এবং আপনার নিকট প্রার্থনা করছি আপনার নবী, রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উছিলায়। হে মুহাম্মাদ! আপনার উছিলায় আমি আমার প্রভুর কাছে হাজত (সমস্যা) পেশ করছি, আমার আবেদন যেন মঞ্জুর করা হয়। হে আল্লাহ! আমার হক্বের উপর আমার আক্বা ও মাওলা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুপারিশ কবুল করুন। 


৩৫নং হাদিস

নবীজী মাক্বামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত হবেন

عَنْ آدَمَ بْنِ عَلِيٍّ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يَقُولُ: إِنَّ النَّاسَ يَصِيرُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ جُثًا، كُلُّ أُمَّةٍ تَتْبَعُ نَبِيَّهَا يَقُولُونَ: يَا فُلاَنُ اشْفَعْ، يَا فُلاَنُ اشْفَعْ، حَتَّى تَنْتَهِيَ الشَّفَاعَةُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَلِكَ يَوْمَ يَبْعَثُهُ اللَّهُ المَقَامَ المَحْمُودَ-

উচ্চারণ : আন আদামাবনি আলী ক্বালা, ছামি’তু ইবনা উমারা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ইয়াকুলু: ইন্নান্নাছা ইয়াছিরুনা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি জুছান, কুল্লু উম্মাতিন তাতবা’উ নাবিয়্যাহা ইয়াকুলুনা: ইয়া ফুলান, ইশফা হাত্তা তানতাহীয়া-শ শাফা’আতু ইলা-ন্নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামা, ফা-জালিকা ইয়াওমা ইয়াব’আছুহুল্লাহুল মাক্বামাল মাহমুদা।

অনুবাদ : হযরত আদম বিন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন মানুষেরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। প্রত্যেক উম্মত তাদের নিজ নিজ নবীর পেছনে থাকবে এবং আরজ করবে, (হে অমুক! আমাকে শাফায়াত করুন) এমনিভাবে শাফায়াতের কথা নবীজীর কাছে এসে সমাপ্ত হবে। তাই ঐদিনে আল্লাহ পাক নবীজিকে মাক্বামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। 


৩৭নং হাদিস

সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করা কুফরী

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَبَّ اَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُاللهِ و المَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ-

উচ্চারণ : আন ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ক্বালা, ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা মান ছাব্বা আছহাবি ফা-আলাইহি লা’নাতুল্লাহি ওয়াল মালা-ইকাতি ওয়ান্নাছি আজমাঈন।

অনুবাদ : হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার সাহাবীদের নিয়ে সমালোচনা করে তার উপর আল্লাহর, ফেরেস্তাদের এবং সকল মানব জাতির অভিসম্পাত। 


৩৮নং হাদিস

আহলে বাইত উম্মতের নাজাতের উছিলা

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ : إِنَّمَا مَثَلُ أَهْلِ بَيْتِي فِيكُمْ كَمَثَلِ سَفِينَةِ نُوحٍ ، مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَمَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا غَرِقَ-

উচ্চারণ : আন আবী সা’ইদিনিল খুদরী ক্বালা, ছামি’তু রাসুলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামা, ইন্নামা মাছালু আহলি বাইতী ফীকুম কামাছালি ছাফিনাতি নূহিন, মান রাকিবাহা নাজা ওয়ামান তাখাল্লাফা আনহা গারিকা।

অনুবাদ : হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজীকে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে আমার আহলে বাইতের দৃষ্টান্ত হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর কিস্তির মত। এতে যে আরোহণ করেছে সে মুক্তি পেয়েছে, আর যে এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে। 


৩৯নং হাদিস

উম্মতে মুহাম্মদী কখনও শিরক করবে না

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ : قَالَ قَال رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنِّي فَرَطُ لَكُمْ ، وَأَنَا شَهِيدٌ عَلَيْكُمْ ، وَإِنِّي وَاللَّهِ لَأَنْظُرُ إِلَى حَوْضِي الْآنَ ، وَإِنِّي أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ أَوْ مَفَاتِيحَ الْأَرْضِ ، وَإِنِّي وَاللَّهِ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا بَعْدِي ، وَلَكِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تَنَافَسُوا فِيهَا-

উচ্চারণ : আন উকবাতাবনি আ‘মের ক্বালা, ক্বালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইন্নি ফারাতুল লাকুম ওয়া আনা শাহিদুন আলাইকুম, ওয়া ইন্নি ওয়াল্লাহি লা আন যুরু ইলা হাওদ্বি আল আন, ওয়া ইন্নি আতিতু মাফাতিহা খাজাইনিল আরদ আও মাফাতিহাল আরদ্বি, ওয়া ইন্নি ওয়াল্লাহি মা আখাফু আলাইকুম আন তুশরিকু বা‘দি ওয়া লাকিন্নি অখাফু আলাইকুম আন তানাফাসু ফিহা।

অনুবাদ : হযরত উক্ববা বিন আমের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী এরশাদ করেন, আমি তোমাদের অগ্রবর্তী ও তোমাদের উপর সাক্ষ্যদাতা। খোদার কসম! অবশ্যই এই মুহুর্তে আমি আমার হাউজ (কাউছার) দেখতে পাচ্ছি এবং অবশ্যই আমাকে জমিনের খাজানাসমূহের চাবি অথবা জমিনের চাবি দেওয়া হয়েছে। খোদার কসম! আমি এ নিয়ে ভীত নই যে, তোমরা আমার পরে শিরিকে লিপ্ত হবে বরং আমি এ নিয়ে ভীত যে, তোমরা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে।


৪০নং হাদিস

শেষ জামানায় দাজ্জাল ও মিথ্যাবাদীদের আবির্ভাব হবে

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنْ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّونَكُمْ وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ-

উচ্চারণ : আন আবী হুরায়রাতা ক্বালা, ক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইয়াকুনু ফী আখিরিয যামানি দাজ্জালুনা কাজ্জাবুনা ইয়া’তুনাকুম মিনাল আহাদীছি বিমা লাম তাছমা’উ আনতুম ওয়ালা আবাউকুম ফা-ইয়্যাকুম ওয়া ইয়্যাহুম লা ইউদ্বিল্লুনাকুম ওয়ালা ইয়াফতিনুনাকুম।

অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, শেষ যামানায় এমন কিছু দাজ্জাল ও মিথ্যাবাদী আত্মপ্রকাশ করবে যারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা) হাদিস বলবে যা না তোমরা কোনদিন শুনেছো, না তোমাদের বাপ দাদারা শুনেছে। সুতরাং তোমরা তাদের নিকট থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকেও তোমাদের কাছ থেকে দূরে রাখ। এতে করে তারা তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না এবং তোমাদেরকে ফিতনায় পতিত করতে পারবে না। 


    Top