সামান্য সময় ধ্যাণ করা ৬০ বছর বন্দেগীর সমতুল্য সওয়াব

قَالَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ: تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سَنَةٍ أَوْ سِتِّينَ سَنَةً لَهُ
-“রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: এক মুহুর্ত নেক চিন্তা করা ৭০ বৎসর এবাদতের চেয়ে উত্তম, অন্য রেওয়ায়েতে রয়েছে ৬০ বছর।”  ২৭৫৭৫.  ইমাম আবী শায়েখ ইসপাহানী: আজমাত, হাদিস নং ৪৩; ইমাম ছিয়তী: জামেউস ছাগীর, হাদিস নং ৮৪১৯; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১৪৭৩৪; ইমাম দায়লামী: মুসনাদে ফিরদৌস, ২য় খন্ড, ৭০পৃ: হাদিস নং ২৩৯৭; মুসনাদে আবু নুয়াঈম, ১ম খন্ড, ২০৯ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, ২য় জি: ৩৬৫ পৃ:; তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৫ম খন্ড, ১৯ পৃ:; ২য় খন্ড, ১৭০ পৃ:; তাফছিরে কবীর, ২২তম খন্ড, ৪৬ পৃ:; তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১১-১২ তম খন্ড; গাউছে পাক: ছেররুল আছরার, ৬২ পৃ:; মুকাশাফাতুল কুলুব, ১ম খন্ড, ২১ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মওজুয়াতুল কবীর, ৫৬ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ২৭৮ পৃ:;

এই হাদিসটি ইমাম আবুশ শায়েখ ইস্পাহানী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৩৬৯ হিজরী সনদসহ এভাবে উল্লেখ করেছেন,
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَكَرِيَّا، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْقُرَشِيُّ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ نَجِيحٍ الْمَلَطِيُّ، حَدَّثَنَا عَطَاءٌ الْخُرَاسَانِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فِكْرَةُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سَنَةً
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: সামান্য সময় ধ্যান করা ৬০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”  ২৭৬৭৬.  ইমাম আবী শায়েখ ইসপাহানী: আজমাত, হাদিস নং ৪৩; ইমাম ছিয়তী: জামেউস ছাগীর, হাদিস নং ৮৪১৯; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১৪৭৩৪; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৮১৮৭; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৫৭১০;

এই হাদিসের সনদেعثمان بْن عَبْد اللَّه بْن سُرَاقة بْن المُعْتَمِر بْن أَنْس القُرَشيّ (উছমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ছুরাকা ইবনে মুতামার ইবনে আনাস আল কুরাইশী) রয়েছে। তার ব্যাপারে লা-মাজহাবীরে কেউ কেউ সমালোচনার করতে চায়, অথচ তিনি একজন বিশ্বস্ত রাবী। যেমন লক্ষ্য করুন:- وثَّقه أَبُو زُرْعة، والنّسائي -“ইমাম আবু যুরাআ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম নাসাঈ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।”  ২৭৭৭৭,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ১৮২;

ইমাম দারে কুতনী, ইবনে খালিফুন ও ইমাম আব্দুর রাহিম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন।  ২৭৮৭৮,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৬২৬;

وذكره ابنُ حِبَّان في كتاب الثقات -“ইমাম ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।”  ২৭৯৭৯,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী ৩৮৩৩;

অতএব, এই রাবীর বর্ণিত রেওয়ায়েত দ্বায়িফ কিংবা মাওজু হবে না। অপরদিকে এর সনদে আরেকজন রাবী রয়েছে তার নাম إسحاق بْن نَجِيح المَلَطيّ، (ইসহাক্ব ইবনে নাজিহ আল মালাতী) তার ব্যাপারে কেউ কেউ কিজবের অভিযোগ আনলেও অধিকাংশ ইমামগণ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়ে তার হাদিস বর্ণনা করেছেন। যেমন:-
ইমাম আলী ইবনে মাদানী, ইমাম ইবনে শাহিন, ইমাম ইবনে জারুদ, ইমাম জুযাযানী, ইমাম ছাজী, ইমাম উকাইলী, ইমাম দুলাভী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) প্রমূখ তাকে غير ثقة (গাইরে ছিক্বাহ) তথা দ্বায়িফ বলেছেন।  ২৮০৮০,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৩০;

ইমাম বুখারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম আলী ইবনে নাছর যাহদামী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে منكر মুনকার বলেছেন।  ২৮১৮১,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৮৭; ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৪৭৬;

ইমাম নাসাঈ ও দারে কুতনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে متروك মাতরুক বলেছেন।  ২৮২৮২, ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৮৭;

তাই إسحاق بْن نَجِيح المَلَطيّ، (ইসহাক্ব ইবনে নাজিহ আল মালাতী) এর রেওয়ায়েত উসূল মোতাবেক দ্বায়িফ স্তরের স্বীকৃতি পাবে। আর এ কারণেই ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার বর্ণিত রেওয়ায়েতকে ‘জামেউছ ছাগীর’ কিতাবে চয়ণ করেছেন ও দ্বায়িফ বলেছেন। আর সকলেই অবগত আছেন, ইমাম ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন ‘জামেউছ ছাগীর’ কিতাবে কোন জাল বা মওজু হাদিস নেই। আর এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা ইবনে জাওযী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) সরাসরি ‘জাল হাদিস’ না বলে তিনি বলেছেন, هَذَا حَدِيث لَا يَصح. -“এই হাদিস ছহীহ্ নয় অর্থাৎ দ্বায়িফ ।”  ২৮৩৮৩,  কিতাবুল মাওজুয়াত, ৩য় খন্ড, ১৪৪ পৃ:;

এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে হাফিজ যায়নুদ্দিন ইরাকী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) করেছেন,
حَدِيث تفكر سَاعَة خير من عبَادَة سنة أخرجه ابْن حبَان فِي كتاب العظمة من حَدِيث أبي هُرَيْرَة بِلَفْظ سِتِّينَ سنة بِإِسْنَاد ضَعِيف 
-“হাদিস: ‘এক মুহুর্ত ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।’ ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর কিতাবুল আজমাত-এ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে দ্বায়িফ সনদে ৬০ বছরের শব্দে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।”  ২৮৪৮৪,  হাফিজ ইরাকী: তাখরিজু আহাদিসুল এহইয়া, ১ম খন্ড, ১৭৯৮ পৃ: হাদিস নং ১;

এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম শিহাবুদ্দিন বুয়ূছিরী কেনানী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৮৪০ হিজরী বলেছেন,
رواه الأصبهاني بسند ضعيف، -“ইমাম ইস্পাহানী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) দ্বায়িফ সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন।”  ২৮৫৮৫, ইমাম কেনানী: ইত্তেহাফুল খাইরাতিল মিহরাত, ৫ম খন্ড, ৪০ পৃ: হাদিস নং ৪১৯৮;

এ কারণেই আল্লামা মানাভী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটি দুর্বল হওয়া বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: 
عَن أبي هُرَيْرَة بِإِسْنَاد واهٍ بل قيل مَوْضُوع -“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে দুর্বল সনদে বর্ণিত আছে, কেউ কেউ বলেছেন: মাওজু।”  ২৮৬৮৬, আল্লামা মানাবী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ১৭৩ পৃ:;

এখানে আল্লামা মানাভী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) মাওজু কথাটিকে قيل (কিইলা) শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে ঐ অভিমতকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। হাদিসটি ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় ‘জামেউছ ছাগীর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনম আর এই গ্রন্থে কোন জাল হাদিস উল্লেখ করা হয়নি। যেমন ইমাম আজলুনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, لأن الجامع المذكور جرده مؤلفه عن الموضوع.
-“কেননা জামেউছ ছাগীর কিতাবে লেখক কোন মওজু হাদিস উল্লেখ করেননি।”  ২৮৭৮৭,  ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১৬০৩;

ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) অনুরূপ বলেছেন,
قُلْتُ مَرْوِيُّ ابْنِ عُمَرَ نَقَلَهُ السُّيُوطِيُّ عَنِ ابْنِ عَسَاكِرَ فِي جَامِعِهِ الصَّغِيرِ مَعَ الْتِزَامِهِ بِأَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ فِيهِ الْمَوْضُوعَ
-“আমি (আলী ক্বারী) বলি: ইমাম ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনাকারী হযরত ইবনু উমার (رضي الله عنه) থেকে ইমাম ইবনু আসাকির (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর রেফারেন্সে তদীয় জামেউছ ছাগীর গ্রন্থে তিনার প্রতিশ্রুতির সাথে ইহা উল্লেখ করেছেন। কেননা জামেউছ ছাগীর গ্রন্থে তিনি কোন মওজু হাদিস উল্লেখ করেননি।”  ২৮৮৮৮, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ২৬৩;

উল্লেখিত দু’টি বক্তব্য থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, এই হাদিস জাল নয় কারণ হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় ‘জামেউছ ছাগীর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
অতএব, এই হাদিসটি দ্বায়িফ পর্যায়ের, যা সর্বসম্মতিক্রমে আমলের জন্য যথেষ্ঠ। হাফিজুল হাদিস, ইমাম যায়নুদ্দিন ইরাকী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) দৃষ্টিতে হাদিসটি দ্বায়িফ সনদের, মওজু নয়। কিন্তু কওমীদের বড় আলেম জনাব জুনায়েদ বাবুনগরীর তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় লিখিত ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ নামক বইয়ের চতুর্থ প্রকাশের ১৭৭ পৃষ্টায় লিখেছেন,
“এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস নয়। বরং এটা নবীর নামে বানানো মিথ্যা জাল হাদিস।” এটা কি ইমামদের নামে মিথ্যাচারিতা ও জালিয়াতী নয়? এর সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েত রয়েছে,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى الْمَرْوَزِيُّ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ الْمُتَوَكِّلِ أَبُو عَقِيلٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ قَيْسٍ الْمُلَائِيِّ، قَالَ: بَلَغَنِي أَنَّ تَفَكُّرَ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ دَهْرٍ مِنَ الدَّهْرِ
-“আমর ইবনে কায়েছ মুলাঈ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, আমার কাছে হাদিস পৌছেছে যে, এক মুহুর্ত ধ্যান করা যুগের পর যুগ নফল বন্দেগীর চেয়েও উত্তম।”  ২৮৯৮৯, ইমাম ইবনে শায়েখ ইছপাহানী: আল আজমাত, হাদিস নং ৪৮; ইমাম ছিয়তী; আল লাআলী মাসনুয়া, ২য় খন্ড, ২৭৬ পৃ:;

ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) আরো উল্লেখ করেন,
وَأخرج أَبُو الشَّيْخ فِي العظمة عَن ابْن عَبَّاس قَالَ: تفكر سَاعَة خير من قيام لَيْلَة وَأخرج ابْن سعد عَن أبي الدَّرْدَاء مثله وَأخرج الديلمي عَن أنس مَرْفُوعا مثله
وَأخرج أَبُو الشَّيْخ فِي العظمة عَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: فكرة سَاعَة خير من عبَادَة سِتِّينَ سَنَةً 
-“আবুশ শায়েখ তাঁর আজমাত গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, এক মুহুর্ত ধ্যান করা সারা রাত্র নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম। ইবনে সা’দ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম দায়লামী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) আনাস (رضي الله عنه) থেকে মারফূ সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
আবুশ শায়েখ তাঁর ‘আজমাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: এক মুহুর্ত ধ্যান করা ৬০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”  ২৯০৯০,  তাফছিরে দুর্রে মানছুর, ২য় খন্ড, ৪০৯ পৃ:;

ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেন,
قَالَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ: تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سَنَةً 
-“আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, এক মুহুর্ত ধ্যান করা ৬০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”  ২৯১৯১,  তাফছিরে কবীর, ২য় খন্ড, ৪০৭ পৃ:;

আল্লামা নিজামুদ্দিন হাছান ইবনে মুহাম্মদ নিছাপুরী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৮৫০ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন, 
أنه صلى الله عليه وسلم قال تفكر ساعة خير من عبادة ستين سنة 
-“নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, এক মুহুর্ত ধ্যান করা ৬০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”  ২৯২৯২, তাফছিরে নিছাপুরী, ১ম খন্ড, ২৩৩ পৃ:;

আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
وَفِي بَعْضِ الْأَخْبَارِ تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سَنَةٍ، وَفِي رِوَايَةٍ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سَنَةً
-“কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে, এক মুহুর্ত ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ৬০ বছরের এবাদতের কথা।”  ২৯৩৯৩,  ইমাম মোল্লা আলী: জামেউল অছাইল ফি শরহে শামাঈল, ২য় খন্ড, ১০ পৃ:;

আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) আরো উল্লেখ করেন,
وَوَرَدَ: تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سَنَةٍ كَذَا ذَكَرَهُ ابْنُ حَجَرٍ. وَقَالَ الْخَطَّابِيُّ: ذَكَرَ الْفَاكِهَانِيُّ بِلَفْظِهِ: فِكْرَةُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سَنَةٍ ، مِنْ كَلَامِ السِّرِّيِّ السَّقْطِيِّ.
قُلْتُ: ذَكَرَ السُّيُوطِيُّ فِي الْجَامِعِ الصَّغِيرِ: فِكْرَةُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سَنَةً
-“যেমন উল্লেখ আছে, সামান্য সময় ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম, যেমনটি ইবনে হাজার আসকালানী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেছেন। ইমাম খাত্তাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, ফাকেহানী র্সিরী সাকতী এর বাণী থেকে এই শব্দে উল্লেখ করেন যে, সামান্য সময় ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।
আমি বলি: ইমাম ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর ‘জামেউছ ছাগীর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, সামান্য সময় ধ্যান করা ৬০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”  ২৯৪৯৪,  ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত  শরহে মেসকাত, ৬৯২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;

তিনি আরো উল্লেখ করেন,
كَمَا وَرَدَ: تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سَنَةٍ أَوْ سِتِّينَ سَنَةً لَهُ، 
-“যেমন উল্লেখ আছে, সামান্য সময় ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম অথবা ৬০ বছরের চেয়ে উত্তম।”  ২৯৫৯৫,  মেরকাত, ১৪৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;

আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেন,
وروى ان المقداد بن الأسود رضى الله عنه دخلت على ابى هريرة رضى الله عنه فسمعته يقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تفكر ساعة خير من عبادة سنة ثم دخلت على ابن عباس رضى الله عنهما فسمعته يقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تفكر ساعة خير من عبادة سبع سنين ثم دخلت على ابى بكر رضى الله عنه فسمعته يقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تفكر ساعة خير من عبادة سبعين سنة فقال المقداد فدخلت على رسول الله صلى الله عليه وسلم فاخبرته بما قالو فقال صدقو
-“মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর কাছে গেলাম এবং শুনতে পেলাম, এক মুহুর্ত ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম। অত:পর হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর কাছে গেলাম এবং শুনতে পেলাম, এক মুহুর্ত ধ্যান করা ৭০ বছর ইবাদতের চেয়েও উত্তম। অত:পর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর কাছে গেলাম এবং শুনলাম তিনি বলছেন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: এক মুহুর্ত ধ্যান করা ৭০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম। অত:পর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর কাছে প্রবেশ করলাম এবং সকলের বর্ণনা কথা গুলো শুনালাম। প্রিয় নবীজি (ﷺ) সকলের কথা গুলো সত্য বলে স্বীকৃতি দিলেন।”  ২৯৬৯৬,  তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৪র্থ খন্ড, ৪৪০ পৃ:;

আল্লামা শামছুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে উমর ইবনে আহমদ ছাফারী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৯৫৬ হিজরী তদীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেন,
تفكر ساعة خير من عبادة سنة، وفي رواية من عبادة الدهر  
-“সামান্য সময় ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম। আরেক রেওয়ায়েতে আছে, এক যুগের চেয়েও উত্তম।”  ২৯৭৯৭,  শরহে বূখারী, লিছ ছাফারী, ১/২২৭;

এখানে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যেতে পারে, 
وَرَوَى إسْحَاقُ بْنُ رَاهْوَيْهِ فِي مُسْنَدِهِ أَخْبَرَنَا جَعْفَرُ بْنُ عَوْنٍ الْحُرَيْثِيُّ ثَنَا عَفَّانَ بْنُ جُبَيْرٍ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَوْمٌ مِنْ إمَامٍ عَادِلٍ، أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سَنَةً،
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: একজন ন্যায় পরায়ন ইমামের একদিন (অন্যদের) ৬০ বছরের নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”  ২৯৮৯৮,  ইসহাক ইবনে রাহবিয়া তাঁর মুসনাদে; ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ১১৯৩২; মুজামে ইবনে আসাকির, হাদিস নং ১১৯২; ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১৬৬৪৯; ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া ফি তাখরিজি আহাদিছিল হেদায়া, ৪র্থ খন্ড, ৬৭ পৃ:;

এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَقَالَ: لَا يُرْوَى عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ إِلَّا بِهَذَا الْإِسْنَادِ، وَفِيهِ زُرَيْقُ بْنُ السَّخْتِ وَلَمْ أَعْرِفْهُ.
-“তাবারানী তাঁর আওছাত ও কবীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেন: ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে এই সনদ ছাড়া অন্য কোন সনদে ইহা বর্ণিত হয়নি। এর সনদে ‘যুরাইক ইবনে ছাখাত’ রয়েছে আমি তাকে চিনিনা।”  ২৯৯৯৯,  ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১০৫৮৬;

ইমাম হায়ছামী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর কাছে زُرَيْق بن السخت (যুরাইক ইবনে ছাখাত) অপরিচিত রাবী হলেও ইমাম ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর কাছে সে পরিচিত ও বিশ্বস্ত রাবী। কারণ ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ‘কিতাবুস ছিক্বাত’-এ উল্লেখ করেছেন। দেখুন রাবী নং ১৩৩২৫। সর্বোপরি ‘ইসহাক্ব ইবনে রাহবিয়া (رَحْمَةُ الله عليه‎‎)’ এর সনদেزُرَيْق بن السخت (যুরাইক ইবনে ছাখাত) এই রাবী নেই, তাই ইহা বিনা প্রশ্নে ছহীহ্। এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
حَدَّثَنَا بَكْرُ بْنُ سَهْلٍ الدِّمْيَاطِيُّ، وَمُطَّلِبُ بْنُ شُعَيْبٍ الْأَزْدِيُّ قَالَا: ثنا أَبُو صَالِحٍ عَبْدُ اللهِ بْنُ صَالِحٍ، حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: قِيَامُ الرَّجُلِ فِي الصَّفِّ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سَنَةً
-“হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহর রাস্তায় থেকে কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ৬০ বছর নফল বন্দেগীর চেয়েও উত্তম।”  ৩০০৩০০,  ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ৮৭০৮; ইমাম তাবারানী: মুজামুল  কবীর, হাদিস নং ৩৭৭ ও ৪১৭; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ৪৬০২ ও ৬৯৯৫;

এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
وَفِيهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ صَالِحٍ كَاتِبُ اللَّيْثِ، وَثَّقَهُ أَحْمَدُ وَغَيْرُهُ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِ الْبَزَّارِ ثِقَاتٌ. 
-“এর সনদে লাইছ এর কাতিব ‘আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহ’ রয়েছে, তাকে ইমাম আহমদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও অন্যান্যরা বিশ্বস্ত বলেছেন আর বাকী সবল রাবীগণ বিশ্বস্ত।”  ৩০১১,,,  ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ৯৬৭১;

কোন কোন রেওয়ায়েতে ১ বছরের কথাও রয়েছে। যেমন আল্লামা সমরকান্দী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেন, 
وروى عن رسول اللَّه صلى اللَّه عليه وسلم أنه قال: تفكّر ساعة خير من عبادة سنة
-“আল্লাহর রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক মুহুর্ত ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।” ৩০২২,  তাম্বিহুল গাফেলীন, ১ম খন্ড, ২২ পৃ:;

 অন্যত্র আরো উল্লেখ করেন, 
وقال صلى الله عليه وسلم: تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سَنَةٍ 
-“আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: এক মুহুর্ত ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”  ৩০৩৩,  তাফছিরে সমকান্দী, ১ম খন্ড, ২৭৪ পৃ:;

ইমাম কুরতবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: 
وَرُوِيَ عَنْهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ: تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ عِبَادَةِ سَنَةٍ. 
-“রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে, এক মুহুর্ত ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”  ৩০৪৪,  তাফছিরে কুরতবী, ৪র্থ খন্ড, ৩১৪ পৃ:;

এ বিষয়ে ‘এক রাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম’ বলে অন্য রেওয়ায়েত রয়েছে,
حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الصَّبَّاحِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ الْمُؤَدِّبُ، حَدَّثَنَا عَمَّارُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ قِيَامِ لَيْلَةٍ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, সামান্য সময় ধ্যান করা সারা রাত্র নফল নামাজের চেয়েও উত্তম।”  ৩০৫৫,  ইমাম ইবনে শায়েখ ইস্পাহানী: আল আজমাত, হাদিস নং ৪২; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১০৮৯৭; ইমাম মোল্লা আলী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ১৪১ এর ব্যাখ্যায়;

এর সমর্থনে রেওয়ায়েত রয়েছে,
حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي الْجَعْدِ، عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ، عَنِ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ قِيَامِ لَيْلَةٍ
-“হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বলেন, সামান্য সময় ধ্যান করা সারা রাত্র নফল নামাজের চেয়েও উত্তম।”  ৩০৬ ৬, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল: আয যুহদ, হাদিস নং ৭৪৬; হান্নাদ ইবনে ছারি: আয যুহদ, ২য় খন্ড, ৪৬৮ পৃ:; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ১১৭; তাফছিরে সমকান্দী, ৩য় খন্ড, ৫ পৃ:; ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ১ম খন্ড, ২০৮ পৃ:; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৫৭১১;

এর সমর্থনে রেওয়ায়েত রয়েছে,
حَدَّثَنَا أَبِي، ثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ، ثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ سُفْيَانَ، ثَنَا دَاوُدُ بْنُ عَمْرٍو الضَّبِّيُّ، ثَنَا فُضَيْلُ بْنُ عِيَاضٍ، عَنْ هِشَامٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: تَفَكُّرُ سَاعَةٍ خَيْرٌ مِنْ قِيَامِ لَيْلَةٍ
-“হযরত হাছান বছরী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, সামান্য সময় ধ্যান করা সারা রাত্র নফল নামাজের চেয়েও উত্তম।”  ৩০৭৭,  ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল: আয যুহদ, হাদিস নং ১৫৪৭; ইবনে শায়েখ আছপাহানী: আল আজমাতে, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৭১ পৃ:; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ৩৫২২৩; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৮৪৯৩; ইমাম গাজ্জালী: এহইয়াউল উলমুদ্দিন, ৪র্থ খন্ড, ৪২৪ পৃ:; তাফছিরে ইবনে কাছির, ২য় খন্ড, ১৬২ পৃ:;

ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও আল্লামা হিন্দী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেছেন,
تفكر ساعة خير من قيام ليلة. صالح بن أحمد في كتاب التبصرة عن أنس مرفوعا، أبو الشيخ في العظمة عن ابن عباس موقوفا.
-“সামান্য সময় ধ্যান করা সারা রাত্র নফল নামাজের চেয়েও উত্তম। ইমাম ছালেহ্ ইবনে আহমদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ‘তাবছিরাহ’ কিতাবে হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে মারফু সূত্রে এবং আবু শায়েখ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ‘আজমাত’ গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে মাওকুফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।” ৩০৮৮,  ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৫৭১১; ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১০৮৯৭;

 এর সমর্থনে রেওয়ায়েত রয়েছে,
حَدَّثَنَا أَبِي رَحِمَهُ اللهُ ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي يَحْيَى ثنا إِسْمَاعِيلُ بْنُ يَزِيدَ ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْأَشْعَثِ، قَالَ: قَالَ سَمِعْتُ فُضَيْلَ بْنَ عِيَاضٍ يَقُولُ: الْمُؤْمِنُ قَلِيلُ الْكَلَامِ كَثِيرُ الْعَمَلِ وَالْمُنَافِقُ كَثِيرُ الْكَلَامِ قَلِيلُ الْعَمَلِ كَلَامُ الْمُؤْمِنِ حَكَمٌ وَصَمْتُهُ تَفَكُّرٌ 
-“ইব্রাহিম ইবনে আশআব বলেন আমি ফুদ্বাইল ইবনে ইয়াদ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন: মু’মীন কথা বলে কম আমল করে বেশী, আর মুনাফিক কথা বলে বেশী আমল করে কম, মু’মীনের কথাও গভীর জ্ঞানসম্পন্ন, তাদের চুপ থাকা ধ্যান।”  ৩০৯৯, ইমাম ইবনে শায়েখ ইছপাহানী: আল উজমাতে, ৮ম খন্ড, ৯৮ পৃ:;


এই হাদিস সম্পর্কে ইমামগণের অভিমত
হাফিজ যায়নুদ্দিন ইরাকী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেন,
حَدِيث تفكر سَاعَة خير من عبَادَة سنة أخرجه ابْن حبَان فِي كتاب العظمة من حَدِيث أبي هُرَيْرَة بِلَفْظ سِتِّينَ سنة بِإِسْنَاد ضَعِيف وَمن طَرِيقه ابْن الْجَوْزِيّ فِي الموضوعات وَرَوَاهُ أَبُو مَنْصُور الديلمي فِي مُسْند الفردوس من حَدِيث أنس بِلَفْظ ثَمَانِينَ سنة وَإِسْنَاده ضَعِيف جدا وَرَوَاهُ أَبُو الشَّيْخ من قَول ابْن عَبَّاس بِلَفْظ خير من قيام لَيْلَة .
-“হাদিস: ‘এক মুহুর্ত ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।’ ইবনে হিব্বান (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর কিতাবুল আজমাত-এ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে দ্বায়িফ সনদে ৬০ বছরের শব্দে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। ইবনে জাওযী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর সূত্রে ‘কিতাবুল মওজুয়াত’-এ আবুল মানছুর দায়লামী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাঁর ‘মুসনাদে ফেরদৌছে’ ৮০ বছরের কথা হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, আর এর সনদ খুবই দুর্বল। আবুশ শায়েখ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর কউল ‘এক রাত্রের চেয়েও উত্তম’ এই শব্দে বর্ণনা করেছেন।”  ৩১০১০,  হাফিজ ইরাকী: তাখরিজু আহাদিসুল এহইয়া, ১ম খন্ড, ১৭৯৮ পৃ: হাদিস নং ১;

এ প্রসঙ্গে ইমাম আজলুনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
تفكر ساعة خير من عبادة سنة وفي لفظ: ستين سنة. ذكره الفاكهاني بلفظ: فكر ساعة، وقال: إنه من كلام سري السقطي، وفي لفظ: ستين سنة، وذكره في الجامع الصغير بلفظ: فكرة ساعة خير من عبادة ستين سنة، وورد عن ابن عباس وأبي الدرداء بلفظ: فكرة ساعة خير من عبادة ستين سنة،
-“এক মুহুর্ত ধ্যান করা এক বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম। আরেক শব্দে আছে, ৬০ বছরের চেয়েও উত্তম।”
ফাকেহানী বর্ণনা করেন, শব্দটি হবে ‘ফিকরে ছায়াতুন’ এবং নিশ্চয় ইহা র্ছিরী ছাকতী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর কউল। আরেক শব্দে আছে ‘৬০ বছরের কথা’। জামেউস ছাগীর গ্রন্থে ইহা এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘এক মুহুর্ত ধ্যান করা ৬০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ও আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকে যে, ‘এক মুহুর্ত ধ্যান করা ৬০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”  ৩১১১১,  ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ৩৫৭ পৃ: হাদিস নং ১০০৪;

ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ৬০ বছরের চেয়ে উত্তম হাদিসটি আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে উল্লেখ করে বলেছেন এর সনদ ضعيف ‘দ্বায়িফ’।  ৩১২১২,  ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, ২য় জি: ৩৬৫ পৃ:;

আশ্চর্যের বিষয় যে, হাফিজ ইরাকী, ইমাম আজলুনী, ইমাম আবু নুয়াইম, ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর এই মন্তব্যের পরেও ‘নাছিরুদ্দিন আলবানী’ হাদিসটিকে জাল বলার অপচেষ্টা করেছেন। হাদিসটি ‘দ্বায়িফ’ হলেও জাল নয়। এর একাধিক সূত্র এবং সমর্থনপুষ্ট রেওয়ায়েত রয়েছে যা ‘হাছান লি’গাইরিহী’ এর স্তরে পৌছে যায়। সর্ব-সম্মতিক্রমে ফাজায়েলের ক্ষেত্রে ‘দ্বায়িফ’ হাদিস গ্রহণযোগ্য। 
Top