হাদিস নং- ০১। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা বলতো, যদি তোমাদের মধ্যে কারো (গৃহের) দরজায় একটি নহর (নদী) থাকে, যাতে সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে। তবে তার শরীরে কি কোন ময়লা থাকতে পারে? তারা বললেন, না, কোন ময়লা থাকবে না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বললেন, এটা হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উদাহরণ। আল্লাহ ওইগুলোর বরকতে (নামাযীর) গুনাহগুলো মোচন করে দেন১। (সহীহ বুখারী)
শরাহঃ ১. এখানে গুনাহগুলো মানে সগীরাহ গুনাহ (ছোটখাটো গুনাহ)। কবীরাহ গুনাহ ও বান্দার হক্ব এর বহির্ভূত্ কারণ- ওইগুলো শুধু নামায দ্বারা ক্ষমা করা হয় না। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ৫ ওয়াক্ত নামাযকে জলশায় (নদী বা সমুদ্র) এর সাথে তুলনা করেছেন। কূপের সাথে করেন নি। কারণ- কূপের মধ্যে যদি প্রবেশ করা হয়, তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সেটার পানি গোসল করার উপযোগী থাকে না। কেননা, ওই পানি প্রবহমান নয়; কিন্তু নহরের (নদী বা সমুদ্রের) পানি প্রবহমান। প্রত্যেক কে তা বিভিন্নভাবে পবিত্র করে দেয়। তেমনিভাবে নামাযও সবদিক দিয়ে পবিত্র করে দেয়, হোক না বান্দা যতোই অপবিত্র।
হাদিস নং- ০২। হযরত আমর বিন শুয়াইব (رحمة الله) তিনি তার পিতা হতে তিনি তার পিতামহ থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততিদিগকে নামাযের জন্য আদেশ করবে, যখন তার বয়স সাত বছরে পৌছবে। যখন দশ বছর হবে (নামাযে যেতে প্রয়োজনে শাসনের জন্য) প্রহার করবে২ এবং তাদের জন্য ভিন্ন শয্যায় শয়নের ব্যবস্থা করবে৩। (আবু দাউদ)
শরাহঃ ২. এ বয়সে যদিও তাদের উপর নামায ফরয নয়, কারণ- তারা না-বালেগ। কিন্তু অভ্যাস গড়ার জন্য তাদেরকে এখন থেকে নামাযী বানাও। যেহেতু দশ বছর বয়সে ছেলেমেয়েদের বুঝার যথেষ্ট জ্ঞান হয়। তাই মারধর করার হুকুমও দিয়েছেন। ৩. ভাই-বোনদেরকে আলাদা-আলাদা বিছানার উপর শয়ন করাও। কারণ তারা এখন বালেগ হবার কাছাকাছি পৌছে গেছে।
হাদিস নং- ০৩। হযরত উম্মু আয়মান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, তুমি সেচ্ছায় সালাত পরিত্যাগ করবে না৪; কেননা যে ব্যক্তি সেচ্ছায় সালাত পরিত্যাগ করবে, তার উপর থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিরাপত্তা উঠিয়ে নেয়া হবে৫। (আল-মুসনাদে আহমদ)
শরাহঃ ৪. প্রত্যেক জ্ঞানবান প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নর-নারীর উপর নামায ফরজে আইন। যে ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায পরিত্যাগ করবে তা যদি এক ওয়াক্ত হয় সে ফাসিক। ৫. নামাযী আল্লাহ-রাসূলের নিরাপত্তায় থাকে, শত মুসীবত থেকে নিরাপদে থাকে। বে-নামাযী এ থেকে বঞ্চিত হয়।
হাদিস নং- ০৪। হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, মিসওয়াক করে যে নামায পড়া হয় তা মিসওয়াকবিহীন পড়ার চেয়ে সত্তর গুন উত্তম৬। (আল-মুস্তাদরাক)
শরাহঃ ৬. আলোচ্য হাদিস খানার ব্যাখ্যা আপন অর্থেই প্রকাশ আছে। এখানে ৭০ সংখ্যাটি বেশি বুঝানোর জন্য এসেছে। যেন বলা হয়, শত-শত, হাজার-হাজার। প্রকাশ থাকে যে, প্রত্যেক নামাযে মিসওয়াক করতে হবে না, যদি ওযু থাকে। কেননা মিসওয়াক ওযুর সুন্নত, নামাযের নয়। সুতরাং যে ব্যক্তির প্রথমে মিসওয়াক করে ওযু করেছে, যদি পরের ওয়াক্তেও ওযু থাকে তবে মিসওয়াক করতে হবে না।
হাদিস নং- ০৫। হযরত আবদুল্লাহ সুনাবিহি (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন কোনো মু’মিন বান্দা অযু করা শুরু করে, অতঃপর যখন কুলি করে, তখন তার মুখ হতে যাবতীয় গুনাহ বের হয়ে যায়। আর যখন নাকে পানি দেয় তখন তার মুখ হতে যাবতীয় গুনাহ বের হয়ে যায়। আর যখন মু’মিন মুখমন্ডল ধৌত করে তখন মুখমন্ডল হতে যাবতীয় গুনাহ দূর হয়ে যায়। এমনকি তার চক্ষুদ্বয়ের পাতার নিচ হতেও গুনাহসমূহ দূর হয়ে যায়। যখন সে তার দুই হাত ধৌত করে তখন তার হাত হতে পাপ রাশি বের হয়ে যায়। এমনকি তার দুই হাতের নখসমূহের নিচের গুনাহও ঝরে যায়। যখন সে মাথা মাসেহ করে তখন তার মাথা হতে যাবতীয় গুনাহ বের হয়ে যায়। এমনকি তার পায়ের আঙুলির নিচের গুনাহ পর্যন্তও। অবশেষে যখন যে তার দুই পা ধৌত করে তখন তার পায়ের গুনাহ বের হয়ে যায়। অতঃপর তার মসজিদে গমন ও নামায পড়া তার জন্য অতিরিক্ত (সাওয়াবের) কাজ৭। (সহিহ নাসাঈ)
শরাহঃ ৭. এখানেও সগীরাহ গুনাহর কথা বলা হয়েছে। উত্তম ভাবে ওযু করলে ওযুতে যে যে অঙ্গগুলোর ধৌত করা হয় তার সমস্ত সগীরাহ গুনাহ ঝড়ে যায়। আমাদের মাযহাবের ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ওযুতে ঝড়ে যাওয়া গুনাহ স্বচক্ষে দেখতেন।
হাদিস নং- ০৬। হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে দশটি কাজ নবীগণের সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত৮।
(১) গোঁফ খাটো করা৯
(২) দাঁড়ি লম্বা করা১০
(৩) মিসওয়াক করা
(৪) পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা
(৫) নখ কর্তন করা১১
(৬) আঙ্গুলির গিরা সমূহ ধৌত করা
(৭) বগলের পশম উপড়ায়ে ফেলা১২
(৮) নাভীতলের লোম কর্তন করা১৩
(৯) শৌচকর্ম করা
(১০) বর্ণনাকারীর বলেন, দশম বিষয়টি আমি ভুলে গিয়েছি। মনে হয়, এটি কুলি করা হবে। (সহীহ মুসলিম)
শরাহঃ ৮. এই দশটি কাজ পূর্বের শরিয়তেও ছিল। এই কাজগুলো সমস্ত নবীগণের সুন্নত। ৯. উপরের ঠুটোর লাল রং প্রকাশ পাবে। মানে চামড়া দেখা যাবে। এর চেয়ে বেশি কাটানো নিষিদ্ধ এবং বড় করা নিষিদ্ধ। দাড়ি ও গোঁফ একেবারে কাটা নিষিদ্ধি, গুনাহ। ১০. এক মুষ্টি পরিমাণ
দাড়ি রাখা নবীগনের সুন্নত। এক মুষ্টি থেকে বেশিগুলো কাটা যাবে। ১১. হাত ও পায়ের নখ। এভাবে যে, প্রথমে ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে শুরু করে কনিষ্ঠায় শেষ করবে। তারপর বাম হাতের কনিষ্ঠা থেকে আরম্ভ করে বৃদ্ধাঙ্গুলে শেষ করবে। তারপর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটবে। তারপর ডান পায়ের কনিষ্ঠা থেকে আরম্ভ করে বাম পায়ের কনিষ্ঠায় শেষ করবে। জুমআর দিন নখ কাটা মুস্তাহাব। আর বৃহস্পতিবার আসরের নামাযের পর খুব ভালো। ১২ ও ১৩. উভয়টি সম্পূর্ণ মুন্ডানো সুন্নত। কাচি দিয়ে কাটা ঠিক নয়। একেবারে ফেলে দিতে হবে।
হাদিস নং- ০৭। হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে ঈমান রাখে সে যেন ইযার (কাপড়) পরিহিত ছাড়া হাম্মামখানায় (গোসলখানায়) প্রবেশ না করে১৪। আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান আছে সে যেন এমন দস্তরখানে না বসে যেখানে শরাব পরিবেশন করা হয়১৫। (সহিহ তিরমিযি)
শরাহঃ ১৪. যদি একাকী হয় তবুও কাপড় পরিহিত ছাড়া গোসল করা নিষিদ্ধ। তবে, পুরুষ লুঙ্গী পরে ময়দানে গোসল করতে পারবে। কারণ- তার সতর হচ্ছে নাভী থেকে দু’হাটু পর্যন্ত। কিন্তু নারীরা গোসল খানা কিংবা আড়ালে হোক কাপড় পরিহিত অবস্থায় গোসল করবে। কেননা, তার সতর হচ্ছে- মাথা থেকে পা পর্যন্ত। ফকীহগণ বলেন- একাকী অবস্থায় ও বিনা কারণে উলঙ্গ হওয়া নিষিদ্ধ। আল্লাহকে লজ্জা করা চাই। একাকী অবস্থায় আড়াল করা মুস্তাহাব। আর সবার সামনে ওয়াজিব। ১৫. যেখানে মদ থাকে বা পরিবেশন করা হয় সেখানে বসা হারাম।
হাদিস নং- ০৮। হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ঋতুবর্তী স্ত্রীর সাথে সহবাস করে অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে অথবা জ্যোতিষীর কাছে যায় এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, সে অবশ্যই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর উপর নাযিলকৃত জিনিসকে (কুরআন) অস্বীকার করলো১৬। (সহিহ তিরমিযি)
শরাহঃ ১৬. এ তিন ব্যক্তি কোরআন ও হাদিসের হুকুম অস্বীকারকারী হয়ে কাফির হয়েছে। এখানে কুফর বুঝানো উদ্দেশ্য, যা ইসলামের বিপরীত। বৈধ বা গুনাহ হবে না এমন মনে করলে কাফির। আর যদি গুনাহ মনে করে এবং এ থেকে বিরতও থাকে না তবে তা হবে ফাসেকী।
হাদিস নং- ০৯। হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ প্রশ্রাব পায়খানার স্থানে যাবে তখন ক্বিবলাকে সম্মুখে অথবা পিছনে না রাখে১৭। আর ডান হাতে যেন পবিত্রতা অর্জন না করে১৮। (সহিহ বোখারী)
শরাহঃ ১৭. অর্থ্যাৎ পায়খানা-প্রস্রাব করার সময় কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ করা হারাম। ময়দান বা প্রাচীর ঘেরা স্থানের কোন শর্তারোপ নেই। যে কোনো অবস্থায় কাবার দিকে মুখ কিংবা পিঠ দিয়ে ইনতিনজাহ করা হারাম। ১৮. ডান হাতে প্রস্রাব বা পায়খানা সম্পূর্ণ করা মাকরূহ-ই তানজিহি। কেননা ডান হাত পানাহার ও তাসবীহ-তাহলীল গণনা করার জন্য। তাই সেটা দিয়ে অপবিত্র কাজ কর না।
হাদিস নং - ১০। হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহমত করুন, যে ন¤্র হয় যখন সে বেচাকেনা করে এবং যখন দাবী করে১৯। (বুখারী)
শরাহঃ ১৯. বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ন¤্রতা হচ্ছে- গ্রাহককে ওজনে কম কিংবা খারাপ জিনিষ দেওয়ার চেষ্টা না করা, আর কেনার মধ্যে ন¤্রতা হচ্ছে- দাম সঠিক ও উৎকৃষ্টভাবে পরিশোধ করা, বিক্রেতাকে পেরেশান না করা। আর দাবীর মধ্যে ন¤্রতা হচ্ছে- যখন কারো উপর তার কর্জ পাওনা থাকে, তবে নম্্রতার সাথে চাইবে এবং অপারগ ঋণগ্রহীতাকে অবকাশ (সময়) দেবে; তাকে বিরক্ত বা বাধ্য করবে না। যার মধ্যে এ তিনটি গুণের সমাবেশ ঘটবে, তিনি আল্লাহর মাক্ববুল বান্দা। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ ফরমান- এবং যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে অবকাশ দাও সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত। (সূরা বাকারা- ২৮০)
হাদিস নং- ১১। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) জিজ্ঞাসা করেছেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এমন বিষয় নির্দেশ করুন, যে আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করবো২০। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা খুদার্তকে খাবার খাওয়াও২১ ও নিকট আত্মীয়দের সাথে সদাচারণ করো২২ এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে তখন তোমরা নামাযে রত থাকবে২৩। (মুস্তাদরাক)
শরাহঃ ২০. এ তিনটি আমল করলেই জান্নাত পাবে এমনটি নয় বরং এখানে এই আমলগুলো গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। ২১. ক্ষুধার্তকে আহার করানো সুন্নত। এখানে ক্ষুধার্ত মানে মানুষ ও পশু সবই অন্তর্ভূক্ত। ২২. আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা। অন্য হাদিসে আছে, প্রতিবেশী যদি তোমাকে ভালো বলে তাহলে তুমি ভালো। ২৩. তাহাজ্জুদ এর নামায পড়া রাতে গভীরে। জান্নাতে লাভের জন্য এই তিনটি আমলের অনেক গুরুত।
হাদিস নং- ১২। হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) হুজুর সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহান দরবারে আরয করেছেন যে, রাতে তিনি জানাবতগ্রস্থ হয়ে থাকেন।২৪ তখন হুজুর সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন, “ওযু করে নাও, বিশেষ অঙ্গ ধুয়ে নাও। তারপর শুয়ে পড়ো২৫।(বোখারী)
শরাহ : ২৪. সুতারাং তখনই কি গোসল করে নেবেন, না ভোরে করবেন? তিনি মনে করেছিলেন- হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে গোসল করে নেওয়া ওয়াজিব; অথচ কখনো কখনো তাৎক্ষণিকভাবে গোসল করে নেওয়া কষ্টকর হয়। ২৫. এটা মুস্তাহাব নির্দেশক বিধান। কেননা, ওযু করে শয়ন করা মুস্তাহাব তরীকা। অন্য রেওয়াতে বর্ণনা আছে, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জুনুবী হতেন এবং কিছু আহার ও শয়ন করতে চাইতেন, তখন নামাযের ওযু করে নিতেন। (বোখারী, মুসলিম) আলিমগণ বলেছেন, জানাবতের অবস্থায় ওযু না করে পানাহার করলে জীবিকা সংকীর্ণ হয়। (মিরআতুল মানাজীহ) উল্লেখ্য- জানাবত মানে- যার কারণে গোসল ওয়াজিব হয়ে থাকে। জুনবী ওই ব্যক্তিকে বলে যার উপর জানাবত এর গোসল ওয়াজিব। (স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা কারণে জানাবতগ্রস্থ হয়। মেলামেশা করার কারণে যদি বীর্যপাত হোক বা না হোক গোসল ওয়াজিব)
হাদিস নং- ১৩। হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের পাচঁটি হক রয়েছে২৬: (১) সালামের জবাব দেয়া, (২) রোগীর সেবা শশ্রæষায় যাওয়া (৩) জানাযায় অংশ গ্রহণ করা (৪) দাওয়াত কবুল করা২৭ ও (৫) হাচিঁর উত্তর দেয়া২৮।(বুখারী)
শরাহঃ ২৬. এখানে পাঁচ সংখ্যাটি সীমাবদ্ধ করার জন্য নয়। বরং গুরুত্বারোপের জন্য। অর্থ্যাৎ এ ৫টি হক্ব বহু মর্যাদাপূর্ণ এবং জরুরী। ২৭. দাওয়াতে অংশ নেওয়া সুন্নত। কিন্তু যদি কোথাও দাওয়াত অনুষ্ঠানে হারাম বা নাজায়েয কাজ হয় তাহলে দাওয়াতে যাওয়াও হারাম বা নাজায়েয। যেমন: দাওয়াত অনুষ্ঠানে নাচগানের ব্যবস্থা থাকলে, বাদ্যযন্ত্র থাকলে। ২৮. হাচিঁ দাতা যখন আলহামদু লিল্লাহ বলবে আর যে শুনবে উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা।
হাদিস নং- ১৪। হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এরশাদ করতে শুনেছি, যে কোন মুসলমানই ভোর বেলায় অপর কোন মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফিরিশতা তাকে সন্ধ্যায় পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। আর যদি সন্ধ্যা বেলায় দেখতে যায় তাহলে ভোর বেলা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফিরিশতা দোয়া করতে থাকে এবং তার জন্য বেহেশতে বাগান থাকবে২৯। (তিরমিজি)
শরাহ: ২৯. অর্থাৎ রোগীর দেখাশোনাকে সাধারণ নেকী মনে হয়, কিন্তু এটা অগণিত ফিরিশতার দোয়া পাবার মাধ্যম এবং জান্নাত অর্জিত হবার কারণ- তবে শর্ত হচ্ছে যদি তা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হয়। অন্য হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে স্বীয় মুসলমান ভাইকে দেখতে যায় সাওয়াব হাসিলের জন্য, তাকে দোযখ থেকে সত্তর হাজার বছর দূরে রাখা হবে। (তিরমিজি, আবু দাউদ)
হাদিস নং- ১৫। হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে মুখ চাপড়ায়, জামার পকেট ছিড়ে ফেলে এবং জাহেলী যুগের মত চিৎকার করে অর্থ্যাৎ বিলাপ করে৩০। (বুখারী)
শরাহঃ ৩০. অর্থ্যাৎ কেউ মারা গেলে; মুখে চাপড়ানো বা অন্য অঙ্গে, কাপড় ছিড়ে ফেলা, মহান রবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা, অধৈর্যের প্রলাপকারী আমাদের দল ও আমাদের তরীকার অনুসারীদের অন্তর্ভূক্ত নয়। এ কাজগুলো হারাম। তবে উক্ত কাজগুলো পরিহার করে নিরবে চোখের পানি ফেলে কাঁদতে পারবে।
হাদিস নং- ১৬। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, চার কারণে নারীকে বিবাহ করা যায়; তার ধনসম্পদের কারণে, বংশের কারণে, সৌন্দর্যের কারণে এবং দ্বীনের কারণে। তোমরা দ্বীনদার নারীকে পছন্দ কর৩১। তোমার দু’হাত ধুলিময় হোক৩২। (বুখারী)
শরাহঃ ৩১. সাধারণত মানুষ নারীর সম্পদ, সৌন্দর্য এবং বংশের দিকই বিবেচনা করে, এসব বিষয় দেখেই বিবাহ করে; কিন্তু নারীর ভদ্রতা ও দ্বীনদারী অন্য সব বিষয়ের পূর্বে দেখো। কারণ- সম্পদ, বংশ ও সৌন্দর্য অস্থায়ী জিনিষ, দ্বীন হচ্ছে স্থায়ী সম্পদ। তাছাড়া দ্বীনদার মা দ্বীনদার সন্তান জন্ম দেন। ৩২. যদি তুমি আমার এ নির্দেশ অনুসারে আমল না করো, তবে পেরেশান হয়ে যাবে। অন্য রেওয়াতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নারীর সম্পদ দেখে তাকে বিবাহ করে, সে গরীব থাকবে, যে ব্যক্তি নারীর বংশ দেখে বিবাহ করবে, সে অপমানিত হবে এবং যে ব্যক্তি দ্বীন দেখে বিবাহ করবে তাকে বরকত দেওয়া হবে। (মিরকাত) সম্পদ এক ঝটকায় এবং সৌন্দর্য এক অসুখের কারণেই লোপ পেতে পারে।
হাদিস নং- ১৭। হযরত জারূদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুসলমানদের হারানো জিনিস আগুনের স্ফুলিঙ্গ স্বরূপ৩৩। (দারেমী, তিরমিযি)
শরাহঃ ৩৩. অর্থ্যাৎ যে ব্যক্তি মুসলমানের হারানো জিনিষ মন্দ উদ্দেশ্যে তুলে নেয়, অর্থ্যাৎ মালিক কে পৌছানোর ইচ্ছা না থাকে, খিয়ানত (আত্মসাৎ) করার উদ্দেশ্য থাকে, সে দোযখী।
হাদিস নং- ১৮। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, সুদের ৭০টি অংশ আছে। তন্মধ্যে সর্বনিম্ন পরিমাণের হিস্সা হচ্ছে- মানুষ তার মায়ের সাথে যিনা করা৩৪।(ইবনে মাজাহ)
শরাহঃ ৩৪. অর্থ্যাৎ মায়ের সাথে যিনা করাই যখন সেটার গুনাহগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা কম পর্যায়ের হলো, তখন অন্যান্য পর্যায়গুলো অর্থ্যাৎ বাকি ৬৯টি শাখা তার চেয়ে বেশি জঘন্যই হবে। আল্লাহ আমাদের সুদ থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
হাদিস নং- ১৯। হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের থেকে কেউ কিছু কর্জ কাউকে দেয়, তারপর ঋণ গ্রহিতা তাকে কিছু হাদিয়া দেয় অথবা তাকে আপন ঘোড়ার উপর আরোহণ করায়, তবে না আহোরণ করবে, না হাদিয়া গ্রহণ করবে৩৫, কিন্তু ওই অবস্থায় (বৈধ) যে, যদি এ দু’জনের মধ্যে এ নিয়ম আগে থেকে চলে আসে৩৬। (ইবনে মাজাহ)
শরাহঃ ৩৫. যেই কর্জ উপকার দেয়, ওই উপকারটুকু সুদ। আর হাদিয়া এবং ঘোড়া আরোহণও (যানবাহন) অতিরিক্ত উপকার; যা এ কর্জের কারণে পাওয়া গেছে। সুতরাং এতে সুদের সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের ইমাম-ই আযম আবূ হানীফা (رحمة الله) প্রখর রোদেও আপন ঋণ গ্রহিতার দেওয়ালের ছায়ায় দাড়াননি, রোদের মধ্যে দাড়িয়ে ছিলেন। এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছেন, ভয় হচ্ছে এ ছায়া গ্রহণ সুদ হয়ে যাবে কিনা। ৩৬. বন্ধুত্বের কারণে যদি পূর্বে থেকেই হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া হতো বা বিশেষ সেবা অথবা ধার হিসেবে কোন জিনিষ যাই হোক না কেন, ইত্যাদির নিয়ম আগে থেকেই ছিল তবে তা গ্রহণ করতে পারবে। এখন এ হাদিয়া কর্জের কারণে নয় বরং বন্ধত্বের কারণেই হলো।
হাদিস নং- ২০। হযরত মাক্বাল ইবনে ইয়াসার (رضي الله عنه) হতে বর্ণি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের পাশে সূরা ইয়াসীন পড়ো৩৭। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
শরাহঃ ৩৭. যার রূহ বের হয়ে যাচ্ছে তার পাশে বসে সূরা ইয়াসীন পড়ো যেন সহজে কব্জ হয়। দাফনের পরে কবরের পাশে ও মৃত ব্যক্তির বাড়িতেও পড়া যায়। সূরা ইয়াসীন এ সমস্যাধির সমাধানের সুপ্রভাব বিদ্যামান। অন্য রেওয়াতে হযরত উম্মে সালামাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা অসুস্থ (মৃত্যুর নিকটবর্তী ব্যক্তি) কিংবা মৃতের পাশে যাবে তখন ভালো কথা বলবে। কেননা ফেরেস্তারা তোমাদের কথার উপর আমিন বলে থাকেন। (মুসলিম)
হাদিস নং- ২১। হযরত হাসান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষের উপর একটা যুগ এমনই আসবে যে, তাদের পার্থিব কথাবার্তা মসজিদেগুলোতে হবে। তোমরা তাদের মসজিদে বসবে না৩৮। আল্লাহর এমন লোকদের প্রয়োজন নেই৩৯। (শুআবুল ঈমান, ইমাম বায়হাক্বী)
শরাহঃ ৩৮. বিজ্ঞ আলেমগণ বলেছেন, মসজিদে পার্থিব বা দুনিয়াবী বৈধ কথাবার্তাও নেকীগুলোকে বরবাদ করে দেয়। কিন্তু কুরআন-হাদিসের কথাবার্তা বলা জায়েয। ৩৯. আল্লাহ তাদের উপর দয়া করবেন না। অন্যথায় মহান রবের কোন বান্দার প্রয়োজন নেই।
হাদিস নং- ২২। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমলও বন্ধ হয়ে যায়- তিন ধরণের আমল ব্যতীত; একটি হচ্ছে স্থায়ী সাদকাহ, কিংবা ওই ইলম, যা দ্বারা উপকার পৌছুতে থাকে কিংবা ওই সুসন্তান যে তার কল্যাণের জন্য দোয়া করতে থাকে৪০। (মুসলিম)
শরাহঃ ৪০. স্থায়ী সাদকাহ মানে- যেগুলো থেকে মানুষ উপকার পেতে থাকে। যেমন- মসজিদ, মাদ্রাসা, দানকৃত বাগান ইত্যাদি। ইলম মানে দ্বীনি কিতাবপত্র রচনা করা, দ্বাীনদার ছাত্র, যাদের কাজ দ্বারা দ্বীনি ফয়য-বরকত পৌছুতে থাকে। সুসন্তান মানে আলিম কিংবা নেক আমলকারী সন্তান। উল্লেখ্য এখানে দোয়া করতে বলাটা উৎসাহমূলক। নেক সন্তান যদি দোয়া নাও করে তবুও মাতাপিতা সাওয়াব পেতে থাকেন।
হাদিস নং- ২৩। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুসলমান হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যার জিহব্বা ও হাত থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে৪১। আর মুহাজির হলেন, ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ ছেড়ে দেয়৪২। (বুখারী)
শরাহঃ ৪১. অর্থ্যাৎ পরিপূর্ণ মুসলমান; নয়তো পরিপূর্ণ মসলমান নয়। এখানে নিরাপদ মানে অত্যাচার- নির্যাতন করা, গীবত করা, গালি দেওয়া, চোগলখুরী ও মারধর করা, কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা বুঝায়। অন্য রেওয়াতে হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মুসলমানকে কষ্ট দেয়, সে যেন আমাকে কষ্ট দিল; আর যে ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দিয়েছে, সে যেন আল্লাহকে কষ্ট দিল। (ইমাম তাবরানী- আসওয়াত কিতাবে) ৪২. গুনাহ ছেড়ে দেওয়াকেও আভিধানিক অর্থে হিজরত বলে, যা সর্বদা অব্যাহত থাকবে। যে হিজরত করে তাকে মুজাহির বলে।
হাদিস নং- ২৪। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার পক্ষ থেকে মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দাও, যদিও একটি মাত্র আয়াত হয়৪৩। আর তোমরা বনী ইসরাঈল থেকে ঘটনাবলীর বর্ণনা গ্রহণ করো; এতে কোন ক্ষতি নেই। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে, সে যেন নিজের ঠিকানা দোযেখে বানিয়ে নেয়৪৪। (বুখারী)
শরাহঃ ৪৩. আয়াত এর আভিধানিক অর্থ আলামত বা চিহ্ন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর মুজিযাসমূহ, হাদীস সমূহ, বিধানাবলী এবং পবিত্র কুরআনের আয়াত সমূহ সবই আয়াতের অর্ন্তভূক্ত। অর্থ্যাৎ যার কাছে কোন মাসআলা, হাদীস অথবা কোরআন শরীফের আয়াত জানা থাকে সে যেন তা অপরকে পৌছিয়ে দেয়। দ্বীন প্রচার শুধু আলিমদের উপর ফরয নয়; প্রত্যেক মুসলমান তার জ্ঞান অনুযায়ী দ্বীনের প্রচারক। ৪৪. অর্থ্যাৎ মিথ্যা হাদীস রচনাকারী দোযখী।
হাদিস নং- ২৫। আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের দুনিয়ার এই আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। আরয করা হলো- ইহাই কি যথেষ্ঠ? হযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম তাকিদের সাথে জোর দিয়ে এরশাদ করলেন- দুনিয়ার সর্ব প্রকার আগুনের সমষ্টির উপরে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুন বেশি উত্তপ্ত ও প্রাধান্য বিস্তারকারী। দোযখের আগুনের ৭০টি উত্তাপের মধ্যে প্রত্যেকটির উত্তাপের পরিমান হবে দুনিয়ার সর্বপ্রকার আগুনের সমান৪৫। (বুখারী)
শরাহঃ ৪৫. দুনিয়ার আগুনের উত্তাপ কত ডিগ্রী পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব তা বিজ্ঞানীরাই ভাল বলতে পারবে। এ রকম শত প্রকারের আগুন রয়েছে। সবগুলোর উত্তাপ একসাথে করলে জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ হবে। এ কথার দ্বারা অনেকের মতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের আধিক্য বুঝিয়েছেন। হুবহু পরিমান উদ্দেশ্য নয়। জাহান্নামের আগুনের পরিমাণ ৭০দ্ধ৭০ = ৪৯০ গুণ বেশি হলো তার সম্মিলিত উত্তাপ কী পরিমাণ হতে পারে তা সহজেই অনুমানীয়।
হাদিস নং- ২৬। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তির নাসিকা ধূলি মিশ্রিত হোক৪৬, যার নিকট আমার আলোচনা হয়েছে, আর সে আমার প্রতি দুরূদ পাঠ করেনি। ঐ ব্যক্তির নাক ধূলি মিশ্রিত হোক, যার নিকট রমযান আসলো, আর সেটা তার ক্ষমা লাভের পূর্বেই চলে যায়। ঐ ব্যক্তির নাক ধূলি মিশ্রিত হোক, যার সামনে তার মাতা-পিতা অথবা উভয়ের মধ্যে একজন বার্ধক্যে (বৃদ্ধ) পেয়েছে অথচ (তারা) তাকে জান্নাতে পৌছিয়ে দেয়নি৪৭। (তিরমিজি)
শরাহঃ ৪৬. আরবীতে এধরণের দোয়া মানে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা। প্রকৃত বদদোয়া বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। নবীর নাম শুনে প্রথমবার দুরূদ পাঠ ওয়াজিব, তারপর মুস্তাহাব। অনেক আলেম তো বলেছেন যে, যতবার নাম শুনবে ততবার বলা ওয়াজিব। তবে তা দূর্বল অভিমত। রমজানে গুনাহ মাফ করাতে না পারাটা বড়ই আফসোসের বিষয়। ৪৭. বৃদ্ধ মাতা-পিতার সেবার মাধ্যমে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করা ও তাদের থেকে জান্নাত লাভের দোয়া করানো। মোটকথা এই তিনটি বস্তু মুসলমানদের জন্য বড়ই উপকারী। যারা এই তিন বস্তু পেয়েছে, তার থেকে ফায়দা হাসিল করতে পারেনি সে বড়ই হতভাগা। এতে নবীর অসন্তুষ্টি রয়েছে।
হাদিস নং- ২৭। হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার ওয়ারিশকে তার মীরাস থেকে বঞ্চিত করে৪৮, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিনে জান্নাতের মীরাস থেকে বঞ্চিত করবেন৪৯। (ইবনে মাজাহ)
শরাহঃ ৪৮. নিজের ওয়ারিশকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করার অনেক উপায় আছে, যেমন- কাউকে ওসীয়ত করা, যাতে ওয়ারিশদের হিস্সা কমে যায়। কারো জন্য কর্জের মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়া, যাতে হিস্সা কমে যায়। স্ত্রীকে, তালাক দেওয়া, হত্যা করে ফেলে, নিজের সন্তানকে অস্বীকার করা, আর বলা সে আমার সন্তানই নয়। পুত্রকে অবাধ্য বলে ইত্যাদি। মোটকথা এগুলোর ফলে ওয়ারিশ বঞ্চিত হবে না। ৪৯. মহান রব এমন জালিমকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করে দেবেন। এ বঞ্চিত হওয়া মানে এটাও হতে পারে, প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। যেমনি অপেক্ষামান ওয়ারিশকে বঞ্চিত করেছে, তেমনি তাকেও জান্নাতে প্রবেশের জন্য কিয়ামতের দিন অনেক অপেক্ষা করতে হবে। এ অপেক্ষা তার জন্য বড়ই কষ্টকর হবে।
হাদিস নং- ২৮। হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত দিবসে আমার অতি নিকটতম সেই হবে, যে আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে৫০। (তিরমিজি)
শরাহঃ ৫০. কিয়ামতে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে শান্তিতে থাকবে যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর সাথে থাকবে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর সাথে থাকার মাধ্যম হলো দুরূদ শরীফ বেশি করে পাঠ করা। এতে প্রমাণ হয়, দুরূদ শরীফ সর্বোত্তম আমল। কারণ- সমস্ত পূর্ণ কাজ দ্বারা জান্নাত লাভ হয়, আর দুরূদ দ্বারা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম কে পাওয়া যায়। অন্য রেওয়াতে হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলে, দোয়া আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে। তা থেকে কোন কিছুই উপরের দিকে উঠে না, যতক্ষণ না তুমি আপন নবীর উপর দরুদ শরীফ প্রেরণ কর। (তিরমিযি)
হাদিস নং- ২৯। হযরত মুআয (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম আমাকে ১০টি জিনিসের আদেশ দিয়েছেন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন, (১) মহান রবের সাথে কাউকে শরীক করো না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় কিংবা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। (২) স্বীয় পিতা-মাতার নাফরমানী করো না, যদিও তারা তোমার ঘরবাড়ী ও সম্পদ থেকে বের হয়ে যাবার আদেশ দেন৫১। (৩) ফরয নামায ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো ছেড়ে দিও না, কেননা কেউ স্বেচ্ছায় ফরয নামায ছেড়ে দিলে তার উপর থেকে আল্লাহর করুণার দায়িত্ব চলে যায়৫২। (৪) কখনো মদ পান করো না, কারণ সেটা সমস্ত অশ্লীলতার শির৫৩। (৫) গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করো, কেননা গুনাহর কারণে আল্লাহর অসন্তুষ্টি অবর্তীণ হয়৫৪ (৬) জিহাদ হতে পালানো থেকে বেঁচে থাকো, যদিও লোকেরা মারা যায়। (৭) আর যখন মানুষকে মহামারীর মৃত্যু স্পর্শ করে আর তুমি তাদের মধ্যে থাকো, তাহলে তুমি সেখানে অটল থাকো। (৮) নিজের উপার্জন থেকে পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় কর৫৫। (৯) স্বীয় আদব শিক্ষাদানের লাঠি তাদের উপর থেকে তুলে নিও না এবং (১০) তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাও৫৬। (মুসনাদে আহমদ)
শরাহঃ ৫১. এটি মুস্তাহাব সূচক বিধান। এখানে পিতা-মাতা অনুগত থাকার গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। পিতা-মাতার বৈধ আদেশ পালন করতে হবে। পিতা-মাতার আদেশে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেওয়াও মুস্তাহাব। হযরত ইসমাঈল (আঃ) ইব্রাহীম (আঃ) এর ইঙ্গিত পেয়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এটি মুস্তাহাব আমল ছিল। কিন্তু পিতা-মাতার আদেশে স্ত্রী বা সন্তানের উপর যুলম (অন্যায়) করবে না। কেননা অন্যায় থেকে বেঁচে থাকা আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ। ৫২. বে-নামাযী আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে না। নামাযের বরকতে মানুষ দুনিয়ায় বিপদ সমূহ থেকে, মৃত্যুর সময় শেষ পরিণিত থেকে, কবর থেকে এবং হাশর থেকে নিরাপদ থাকে। ৫৩. মদ দ্বারা সকল নেশা জাতীয় বস্তুকে বুঝনো হয়েছে। মদ পান করলে ভাল মন্দ বুঝার ক্ষমতা থাকে না। মদ পানকারী মলমূত্র পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। ৫৪. ছোট গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে। ছোট গুনাহ মনে করে সম্পন্ন করে ফেলো না। ছোট গুনাহ আগুনের স্ফুলিঙ্গের মত, যা কখনো বাড়ি-ঘর পর্যন্ত জালিয়ে দেয়। শয়তান প্রথমে ছোট গুনাহ করায়। তারপর বড় গুনাহ করায়। তাই সব ধরণের গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। ৫৫. স্ত্রী-সন্তান (পরিবার-পরিজন) লালন-পালন করার জন্য উপার্জন করাও ইবাদত। ৫৬. স্ত্রী-সন্তান পরিবার-পরিজনদের প্রতি লক্ষ্য রাখো। তাদের সংশোধন করতে থাকো। ছোট বাচ্চাদের প্রয়োজনে মারধর করবে। বড়দের আল্লাহর ভয় দেখাবে বা ধমক দিবে।
হাদিস নং- ৩০। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা, মাতা-পিতার নাফরমানী করা৫৬, কাউকে হত্যা এবং মিথ্যা শপথ করা৫৭ কবীরাহ গুনাহ সমুহের অন্তর্ভূক্ত। (বোখারী)
শরাহঃ ৫৬. তাদের হক¦ সমূহ আদায় না করা অথবা তাদের বৈধ আদেশ সমূহের বিরোধিতা করা। মাতা-পিতা আদেশ বলতে দাদা-দাদী এবং নানা-নানীর আদেশও বুঝায়। এ হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, মাতা-পিতার অবাধ্যতা সবচেয়ে জঘন্য গুনাহ। কারণ শিরক এর পরই তার উল্লেখ করা হয়েছে। ৫৭. মিথ্যা ঐ শপথকে বলা হয়, যাতে দেখে শুনে অতীত ঘটনার ব্যাপারে মিথ্যা শপথ করা হয়। এর কাফ্ফারা নেই, এ শপথ মানুষ কে গুনাহর মধ্যে ডুবিয়ে দেয়।
হাদিস নং- ৩১। হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম আমাদেরকে এটা ব্যতীত খুব কমই ওয়াজ করতেন, যাতে তিনি বলতেন, যে আমানতদার নয়, তার ঈমান নেই, যে ব্যক্তি ওয়াদা পালনকারী নয় তার দ্বীন নেই৫৮। (শুআবুল)
শরাহঃ ৫৮. আমানতদারী এবং ওয়াদা পালন করা ব্যতীত ঈমান ও দ্বীন পরিপূর্ণ হয় না। আমানতের মধ্যে ধন-সম্পদ, মানুষের ইজ্জাত-সম্মান, এমনকি নারীর আপন সতীত্ব রক্ষা করা-সবই অন্তর্ভূক্ত। বরং সকল নেক আমলও আল্লাহর আমানত। হুযুরের প্রতি ইশক্ব-মুহাব্বত হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর আমানত। বিয়ের আকদ্বের সময়, পীরের কাছে বাইয়াত হওয়ার সময়, বন্ধুর সাথে বৈধ অঙ্গীকার করা সবই ওয়াদার অন্তর্ভূক্ত। তবে অবৈধ অঙ্গীকার ভঙ্গ করা অপরিহার্য। আমানত ও ওয়াদার ব্যাপারে অন্য হাদিসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, ৪টি স্বভাবযার মধ্যে বিদ্যামান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। ১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে, ২. কথা বললে মিথ্যা বলে, ৩. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং ৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি করে। (বুখারী)
হাদিস নং- ৩২। হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামকে কোন জিনিস বা বিষয় পেরেশান করতো, তখন তিনি বলতেন, ইয়া-হাইয়্যু, ইয়া-কাইয়্যূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগী-সু। অর্থ্যাৎ “হে চিরঞ্জীব, হে প্রতিষ্ঠিাদাতা, তোমার রহমতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করছি৫৯। (তিরমিজি)
শরাহঃ ৫৯. অর্থ্যাৎ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর পেরেশানি দূর হয়ে যেত। কোন কোন আলেম বলেছেন, ইয়া-হাইয়্যু ও ইয়া-কাইয়্্যূম এদু’টি ইসমে আযম। ইসমে আযম সহকারে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
হাদিস নং- ৩৩। হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেন, ওই গোশত জান্নাতে যাবে না, যা হারাম থেকে জন্মেছে৬০ আর যেই গোশত হারাম থেকে জন্মেছে, তা থেকে আগুন অতি নিকটে৬১। (আহমদ, দারেমী)
শরাহঃ ৬০. জান্নাতে প্রথম দিকে যাবে না বরং শাস্তি ভোগ করার পর যাবে। গোশত মানে গোশতধারী ব্যক্তি। আর জন্মেনো মানে লালিত হওয়া। অর্থ্যাৎ যে ব্যক্তি হারাম খেয়ে লালিত হয়েছে সে জান্নাতে কিভাবে যাবে? পবিত্র জায়গায় পবিত্র লোকদের জন্যই। ৬১. অর্থ্যাৎ হারামখোর দোযখের উপযোগী। সে মরবে আর দোযখে যাবে। যদি এ ব্যক্তি তাওবা করে বা নবীর সুপারিশ পায় তবে ভিন্ন কথা।
হাদিস নং- ৩৪। হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমি অত্যন্ত মযী বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলাম। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করতেও লজ্জাবোধ করছিলাম তার সাহেবজাদীর কারণে। তাই আমি মিক্বদাদকে বললাম, তিনি হুযুর কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন এরশাদ করলেন, সে লজ্জা স্থান ধূয়ে নেবে এবং ওযু করে নেবে৬২। (বুখারী)
শরাহঃ ৬২. যৌন উত্তেজনার সময় যে পাতলা পানি বের হয় তা হলো মযী। মযী প্রস্রাবের মতো, কিন্তু আটালো। আর প্রস্রাবের পর যে সাদা ফোটা বের হয়, তাকে ওয়াদী বলা হয়। এ দুটি বের হওয়ার কারণে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু গোসল ফরয হয় না। সেটার বিধান প্রস্রাবের বিধানের মতোই। যদি মযী ইত্যাদি দ্বারা এক টাকার মুদ্রা পরিমাণ জায়গা ভিজে যায়, তবে পানি দ্বারা ইসতিনজা (ধোয়া) ওয়াজিব। এ হাদীস থেকে এটাও জানা গেল, বুযুর্গদের প্রতি লজ্জাবোধ করা ঈমানের পরিচয়। তবে লজ্জার কারণে মাসআলা জিজ্ঞাসা না করা এবং জ্ঞানহীন থেকে যাওয়া গুনাহ। হযরত আলী লজ্জাও করেছেন, জেনেও নিয়েছেন। বীর্য বের হলে গোসল ওয়াবিজ। বীর্য দুধের মতো সাদা ও গাঢ় চটচটে।
হাদিস নং- ৩৫। হযরত আবদুর রহমান ইবনে গানাম আশআরী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশআরী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কসম! তিনি আমাদের কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে। যারা ব্যাভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান (জানবে) করবে৬৩। (বোখারী)
শরাহঃ ৬৩. আজকাল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামের এই ভবিষ্যৎ বাণী অনেকটা সত্য পরিণত হচ্ছে। মানুষ মদ এমনভাবে পান করে যেন, সেটা হালাল। উল্লেখ্য মদ দ্বারা সকল নেশা জাতীয় বস্তুকে বুঝানো হয়েছে। গান-বাজনা নিয়ে ইখতেলাফ (মতানৈক্য) আছে। তবে গান বা সামা বাদ্যযন্ত্র বিহীন জায়েয আছে। তাও শরীয়ত বিরোধী কথা-বার্তা না থাকলে, নারীদের মাধ্যমে না হলে এমন আরো কিছু শর্তে বাদ্যযন্ত্র বিহীন গান বা সামা জায়েয। আর বাদ্যযন্ত্র হারাম। তবে দফ বাজানো জায়েয আছে। আমি মোঃ তোফাজ্জল হোসাইন সামা নিয়ে একটি গবেষাণা করেছি। তার নাম দিয়েছি রিছালায়ে সামা। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। দফ নামক বাদ্যযন্ত্রটি ছাড়া বাকি বাদ্যয ন্ত্র হারামের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে।
হাদিস নং- ৩৬। হযরত ইবনে মাস’উদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি এরশাদ করেছেন, নারী হলো গোপন রাখার উপযোগী৬৪। যখন সে (পর্দা হতে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে গভীরভাবে দেখে৬৫। (তিরমিজি)
শরাহঃ ৬৪. যা প্রকাশ হলে লজ্জার কারণ হয়। নারীর বেপর্দা থাকা বধুর পিত্রালয় ও শ্বশুরালয় উভয়ের জন্য লজ্জা-শরমের কারণ হয়। ৬৫. হাদীসে “ইছতাশরা ফাহা” (আরবী উচ্চারণট্রি) অর্থ হলো - কোনো জিনিষকে গভীরভাবে দেখা। অথবা এর অর্থ- মানুষের দৃষ্টিতে সেটাকে উত্তম করে উপস্থাপন করা, যাতে মানুষ তাকে গভীরভাবে দেখে। (মিরকাত) অর্থ্যাৎ নারীরা যখন বেপর্দা হয়, তখন শয়তান মানুষের দৃষ্টিতে তাকে ভাল করে দেখায়, যেন তারা অবশ্যই তার দিকে তাকায়। প্রসিদ্ধ প্রবাদ বাক্য রয়েছে যে, “পরনারী ও নিজের সন্তানগণকে ভালো মনে হয় এবং পরের ধন ও নিজের বৃদ্ধিকে অধিক মনে হয়। অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম, হযরত আলী (رضي الله عنه) কে লক্ষ্য করে বলেন- হে আলী! এক দৃষ্টির পর অন্য দৃষ্টি দিও না! কেননা, তোমার জন্য প্রথম দৃষ্টি বৈধ, দ্বিতীয় দৃষ্টি বৈধ নয়। (তিরমিজি) এখানে প্রথম দৃষ্টি মানে- হঠাৎ বা অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি। যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রথমই দেখে তবে তাও দ্বিতীয় দৃষ্টির অর্ন্তভূক্ত। মানে বৈধ নয়। গুনাহ হবে। (মিরআতুল মানাজীহ)
হাদিস নং- ৩৭। হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম কে আমি তার বিদায় হজ্জে আরাফার দিন তার কাসওয়া নামক উষ্ট্রিতে আরোহিত অবস্থায় বক্তৃতা দিতে দেখেছি এবং তাকে বলতে শুনেছি: হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিষ রেখে গেলাম, তোমরা তা ধারণ বা অনুসরণ করলে কখনও পথভ্রষ্ঠ হবে না। আল্লাহ তায়ালার কিতাব এবং আমার আহলে বাইত৬৬। (তিরমিজি)
শরাহঃ ৬৬. আল্লাহ কিতাব মানে কুরআন মাজিদ। এখানে কুরআনের ঐ সব আয়াতের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো রহিত (আদেশ বাতিল) হয়নি। আহলে বাইত মানে নবীর পরিবার, বংশধর। নবী অন্য হাদিসে বলেন, এই দুটির একটি থেকে অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গরুত্বপূর্ণ এবং বলেন, এ দুটি কখন আলাদা হবে না কাওছারে আমার সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত। (তিরমিজি) অর্থ্যাৎ কুরআন যেমনি হক্ব, হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত তেমনি আহলে বাইতও হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের অনুকরণ করতে হবে। নয়তো সঠিক পথ পাওয়া যাবে না।
হাদিস নং- ৩৮। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি মনে কর যে, আমার দৃষ্টি (কেবল) ক্কিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার নিকট খুশু (বিনয়) ও রুকু কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন হতেও তোমাদের দেখতে পাই৬৭। (বুখারী, সালাত অধ্যায়)
শরাহঃ ৬৭. এটা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামের মুজিযা। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামের পিছনে রুকু, সিজদা, অন্তরের বিনয় (খুশু) ও ন¤্রতা কিছুই গোপন থাকে না। এতে আরও বুঝা যায় তিনি আমাদের হৃদয়ের ভেদ ও রহস্য সম্পর্কেও অবগত। অর্থ্যাৎ এই হাদিস থেকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ হয় যে, তার কাছে কিছুই গোপন নেই, তিনি ইলমে গায়েবের খরব দাতা ও হাজির-নাজির। অন্য রেওয়াতে হযরত আনাস ইবনু মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম উহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন। তার সঙ্গে ছিলেন আবু বকর (رضي الله عنه) ,উমর (رضي الله عنه) ও উসমান (رضي الله عنه)। তাদের নিয়ে পাহাড়টি দুলে উঠল। আল্লাহর রাসূল পাহাড়কে পায়ে আঘাত করে বললেন, হে উহুদ, থামো! তোমার উপর নবী, সিদ্দীক ও শহীদ ছাড়া অন্য কেউ নেই। (বুখারী শরিফ- হাদিস নং- ৩৬৮৬) অন্য হাদিসের শেষ অংশটি এরকম আছে, হে উহুদ! থামো তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ রয়েছেন। (বুখারী শরিফ- হাদিস নং- ৩৬৭৫) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, দু’জন শহীদ তথা- উমর ও উসমান। তারা যে শহীদ হবে তা নবী এখনই বলে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এই তো ইলমে গায়েব।
হাদিস নং- ৩৯। হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলিমদের নিকট খবর এসে পৌছার পূর্বেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম তাদেরকে যায়দ, জাফার ও ইবনু রাওয়াহা (رضي الله عنه) এর (শাহাদাতের) কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যায়দ (رضي الله عنه) পতাকা হাতে এগিয়ে গেলে তাকে শহীদ করা হয়। অতঃপর জাফার (رضي الله عنه) পতাকা হাতে এগিয়ে গেলে তাকেও শহীদ করা হয়। অতঃপর ইবনু রাওয়াহা (رضي الله عنه) পতাকা হাতে নিলে তাকেও শহীদ করা হল। এ সময় তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রæ ঝরছিল। (তিনি বললেন) শেষে আল্লাহর তলোয়ারদের মধ্য হতে আল্লাহর এক তলোয়ার (খালিদ বিন ওয়ালীদ) পতাকা ধারণ করল। ফলে আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করলেন৬৮। (বুখারী, মাগাযী অধ্যায়)
শরাহঃ ৬৮. এই হাদিসেরও কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। এই হাদিস থেকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ হয় যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম হাজির-নাজির। নবী মক্কায় বসে সিরিয়ায় হওয়া যুদ্ধে কি ঘটছে তা তিনি স্বচক্ষে দেখে দেখে বললেন এবং এক পর্যায়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর দু’চোখ মোবারক হতে অশ্রæ বের হয়ে যায়। হাযির শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- সামনে উপস্থিত থাকা। নাযির শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি, চোখের মণি ইত্যাদি। আর হাযির-নাযির এর পারিভাষিক অর্থ হলো- (১) পবিত্র ক্ষমতা সম্মপন্ন ব্যক্তি একই স্থানে অবস্থানপূর্বক সমগ্র জগতকে নিজ হাতের তালুর মত দেখা। (২) দূরে-কাছের আওয়াজ শুনতে পারা, অথবা এক মুহুর্তে সমগ্র ভ্রমণ করার ক্ষমতা রাখা। অনেক দূরে অবস্থানকারী বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করতে পারা।
এক্ষেত্রে আসা-যাওয়া রুহানীভাবে অথবা রুপক শরীর নিয়ে বা আসল দেহ নিয়ে হতে পারে উদাহরণ স্বরুপ- হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন- আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবো। যদি তোমাদের কোন ভাল আমল করতে দেখি তাহলে আমি তোমাদের ভাল আমল দেখে আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের কোন মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবো। ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ - ৫/৩০৮পৃ. হাদিস নাং ১৯২৫, জামিউস সগীর- হাদিস নং ৩৭৭০-৭১, ইবনে কাছির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া- ৪/২৫৭পৃ., কানযুল উম্মাল- হাদিস নং- ৩১৯০৩। এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো- নবিজ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের ভাল, মন্দ সব কিছুই দেখতেছেন এবং দেখতে থাকবেন। ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন- এ হাদিসটি বুখারী সহিহ গ্রন্থের ন্যায় বিশুদ্ধ। (মাযমাউয যাওয়াইদ - ৯/২৪ পৃষ্ঠা হাদিস নং- ১৪২৫০)
তাছাড়া হাযির-নাযির সম্পর্কে আরো কয়েকটি হাদিস দেখুনঃ (১) উকবাহ ইবনু আমির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত- একদা নবী বের হয়ে মৃত ব্যক্তির সালাতে জানাযার মত উহুদ যুদ্ধে শহীদ সাহাবাগণের কবরের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর ফিরে এসে মিম্বারে উঠে বললেন- আমি তোমাদের জন্য অগ্রগামী ব্যক্তি, আমি তোমাদের হয়ে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য দিব। আল্লাহর কসম, আমি এখানে বসে থেকেই আমার হাউযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। (বুখারী শরীফ- মানাকিব অধ্যায়ে- হাদিস নং- ৩৫৯৬ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত, বুখারী শরীফ- মানাকিব অধ্যায়ে- হাদিস নং- ৩৩৪১) (সুবহানাল্লাহ) কোথায় হাউযে কাওসার আর কোথায় নবী বসে আছেন। এখন থেকে তিনিহাউযে কাওসার তার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। এটি হলো হাযির নাজির। এই হাদিসে আরো লক্ষ্য করুন- নবী বলছেন, আমি তোমাদের হয়ে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য দিব।যদি তিনি হাযির-নাযির না হন তাহলে সাক্ষী দিবে কি করে? সাক্ষী তো সেই দিতে পারে যে ঘটনার স্থলে উপস্থিত থাকে। ঘটনার স্থলে উপস্থিত থাকা বা ঘটনাটি স্বয়ং স্থান থেকে স্বচোখে দেখা উভয়কে হাযির-নাযির বলে। ঠিক এমন আরো একটি হাদিস আছে- (বুখারী শরিফ- মাগাযী অধ্যায়ে- হাদিস নং - ৪০৪২ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত, বুখারী শরীফ- মাগাযী অধ্যায়ে- হাদিস নং- ৩৭৪৭)
(২) হযরত উসামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মদীনায় একটি উচু টিলায় আরোহণ করলেন, তারপর (সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ করে) বললেন, আমি যা দেখেছি, তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ? আমি দেখছি বারি ধারার ন্যায় ফাসাদ ঢুকে পড়ছে তোমাদের ঘরে ঘরে। (বুখারী শরীফ- মানাকিব অধ্যায়ে- হাদিস নং- ৩৫৯৭ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত, বুখারী শরীফ- মানাকিব অধ্যায়ে- হাদিস নং- ৩৩৪২)
(৩) যায়নাব বিনত জাহাশ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইয়াজুজ ও মাজুজের দেয়ালে এতটুকু পরিমাণ ছিদ্র হয়ে গিয়েছে, এ কথা বলে দু’টি আঙ্গুল গোলাকৃতি করে দেখালেন। (বুখারী শরীফ- হাদিস নং ৩৫৯৮ ও ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত, বুখারী শরীফ- মানাকিব অধ্যায়ে- হাদিস নং- ৩৩৪৩) অপর একটি হাদিসে, হাবাশা (ইথিওপিয়া) এর বাদশাহ নাজাশীর মৃত্য সংবাদ সেদিন শুনালেন, যেদিন তিনি মারা গিয়েছিলেন এবং বললেন তোমাদের ভাই এর জন্য জানাযার সালাত আদায় কর। (বুখারী শরিফ, আনসারগণের মর্যাদা, পরিচ্ছেদ: বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু) উল্লেখিত হাদিসটি ব্যাখ্যায় ইমামগণ বলেছেন- নবীর সামনে তার লাশ হাযির হয়ে গিয়েছিলো আর নবী তার লাশ দেখে দেখে জানাযার নামায পড়েছেন।
হাদিস নং- ৪০। হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, তোমরা সওমে বিসালা পালন করবে না। লোকেরা বলল, আপনি যে সওমে বিসাল করেন? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি৬৯। (বুখারী, সাওম অধ্যায়)
শরাহঃ ৬৯. এই হাদিস সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম আমাদের মত নয়। তিনি নূরের মানুষ। তিনি নূর। আজ এক শ্রেণির মুসলমান আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, নবী আমাদের মত। নাউযুবিল্লাহ। এই থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। বুখারীতেই এমন আরো কয়েকটি হাদিস রয়েছে। মুসলিম শরিফের সাওম অধ্যায়ও আছে, হাদিস নং- ২৪৫৪, ইফা. ২৪৩১। সাহাবীগণের আকিদাও ছিলো তিনি আমাদের মত নয়। বুখারী শরীফে ঈমান অধ্যায়ে মা আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে একটি হাদিস উল্লেখ আছে। নবী নূর সম্পর্কে একটি হাদিস : ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (ইমাম বুখারীর দাদা ওস্তাদ) তার সনদ ও সূত্র-পরস্পরায় হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন- আমি আরজ করলাম হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আপনার উপর আমার পিতা-মাতা উৎসর্গীত, আল্লাহ সর্ব প্রথম কোন বস্তুটি সৃষ্টি করেছে? উত্তরে নবী করিম (ﷺ) বললেন- “হে জাবের, আল্লাহ তায়ালা সর্ব প্রথম সকল বস্তুর পূর্বে আপন নূর হতে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। (অনেক লম্বা হাদিস তাই সংক্ষেপে এতটুকুই লিখলাম) জুযউল মুফকুদ মিলান মুসান্নাফ - ১ম খন্ড, ৬৩ পৃষ্ঠা, হাদিস নং- ৬৩। এই তথ্যটি আল্লাম ঈসা হিমইয়ারি কর্তৃক সংকলিত জুযউল মুফকুদ মিলান মুসান্নাফ কিতাব থেকে নেওয়া।তাছাড়া এই হাদিসটি ইমাম বায়হাকীর হাদীস গ্রন্থ “দালায়েলুন নবুয়ত” ১৩ খন্ড, ৬৩ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি লিপিবদ্ধ করেছেন। এই হাদিস জানামার অনেক হাদিস সংকলক তার নিজ নিজ কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন।
কিন্তু আমি এখানে শুধু দেওবন্দী ও ওহাবী আলেমদের কিতাবের প্রমাণগুলো উল্লেখ করছি : (১) মাওলানা আশরাফ আলী থানভী “নশরুত্তীব ফি যিকরিন্নাবিয়্যিল হাবীব” কিতাবের ১ম অধ্যায়ে, অধ্যায়ের নাম- নূরে মুহাম্মদীর বিবরণে, হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন-
এই হাদিস দ্বারা এই কথা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, নূরে মুহাম্মদী হলো আল্লাহ পাকের সর্ব প্রথম সৃষ্টি। তাছাড়া মাওলানা থানভী তার অপর কিতাব- (২) শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুনবী - ২৬ পৃষ্ঠায় এই হাদিস উল্লেখ করেছেন এবং সেখানে বলেন- এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা প্রথম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর সৃষ্টি করেছেন।
(৩) রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি তার “ফাতওয়ায়ে রশিদিয়াহ” ১ম খন্ড ২৭৮পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটির সম্পর্কে বলেন- এ হাদিসগুলো সিহাহ এর মধ্যে নেই। কিন্তু শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ) উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেছেন যে, এ হাদিসটির ভিত্তি আছে।
(৪) আল্লামা আব্দুল হাই লানৌভী তার “আসারুল মারফু’আর” কিতাবের ৪২ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
(৫) হুসাইন আহমদ মাদানী তার “শিহাবুস সাকিব” কিতাবের ৫০ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটির অংশ বিশেষ উল্লেখ করেছেন। (৬) শাহ ইসমাঈল দেহলভী তার “রেসালায়ে একরোজী” কিতাবের ১১ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
(৭) মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী তার “বারাহেনে কাতেয়া ফি মওলিদে খাইরিল বারিয়াহ” কিতাবের ৫ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
(৮) মাওলানা ইদরিস কান্দলভী তার “মাকামাত ফি হাদিসিয়্যাহর” কিতাবের ২৪১ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
(৯) দেওবন্দী মুহাদ্দিস সরফরায খাঁন সফদর তার “নূর আওর বাশার” কিতাবের ৩২ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন এ্বং সত্যতা স্বীকার করেছেন।
(১০) আল্লামা মুফতি মনসূরুল হক যিনি অসংখ্য কওমী দেওবন্দী আলেমদের উস্তাদ, তিনি মাসিক পত্রিকা “আদর্শ নারী” ২০১২ সনের জানুয়ারী তথা রবিউল আউয়ালের সংখ্যার “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সারা জাহানের রহমত” শিরোনামের ৩ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
(১১) মাওলানা আমিনুল ইসলাম তার “নূরে নবী (দ.)” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
(১২) বি-বাড়িয়ার বড় হুজুর মুফতি সিরাজুল ইসলাম তার “গাওয়াহেরে সিরাজি” কিতাবে ৬৯ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
এখানে শুধু হযরত জাবের (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিসটি দেওবন্দী ওহাবী আলেমদের কিতাব থেকে উল্লেখ করলাম। কারণ বর্তমানে তাদের উত্তরসূরিগণ নবী কে নূর বলতে চাই না। তাই শুধু তাদের কিতাব থেকে দলিল দিলাম। তাছাড়াও আরো বহু আলেমে দ্বীন তাদের কিতাবে এই হাদিসটি উল্লেখ করে নবী করিম সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নূর বলে স্বীকার করেছেন তাদেরগুলো উল্লেখ করেনি। তাছাড়া দেওবন্দী ওহাবীদের আরো বহু কিতাবে নবীকে নূর বলেছেন তার মধ্যে একটি হলো-
(১৩) শাইখুল হাদিস আজিজুল হক যিনি অসংখ্য দেওবন্দী আলেমদের উস্তাদ, তিনি তার বুখারী শরীফের অনুবাদ ৫ম খন্ডেও বলেছেন এবং কওমী দেওবন্দী পত্রিকা মাসিক “আদর্শ নারীর” ২০১২ সনের জানুয়ারি তথা রবিউল আউয়ালের সংখ্যার “মহানবীর (ﷺ) অলৌকিক বিলাদাত” শিরোনামের ১০ পৃষ্ঠায় নবীজি নূর ছিলেন বলেছেন।
(১৪) রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি তার “ইমদাদুস সুলুক” কিতাবের ২৭৬ পৃষ্ঠায় সূরা মায়েদাহ, আয়াত- ১৫ উল্লেখ করে বলেন- উল্লেখিত আয়াতে নূর দ্বারা উদ্দেশ্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম। তার উক্ত কিতাবের একই পৃষ্ঠায় তিনি আরো লিখেন- হাদিসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহের ছায়া হত না। আর একথা তো স্পষ্ট যে নূর ছাড়া আর সব কিছুরই ছায়া হয়। (ইমদাদুস সুলুক - ২৭৬পৃষ্ঠায়)
✅হাদিসের অংশ সমাপ্ত ✅
কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী (রাহঃ) এর প্রধান শিষ্য ও তার জানাযার নামায পড়ানো ওয়ালা, যাকে আ’লা হযরত “সদরুশ শরীয়া” উপাধি দান করেন, আল্লামা মুফতি আমজাদ আলী আযমী (রাহঃ) এর বিখ্যাত ফিকহি অমরগ্রন্থ “বাহারে শরীয়ত” কিতাব হতে কিছু মাসআলা উল্লেখ করছি যা আমাদের জন্য অন্ত্যন্ত জরুরী ও পালনীয় বিষয় বটে। উল্লেখ্য এখানে শুধু ঐসব মাসআলা উল্লেখ করব যা আমরা পালন করছি কিন্তু সঠিক ভাবে করছি না, বা ভুল করে করছি অথবা একেবারে অজানা। ধারাবাহিক বা বিস্তারিত কোন মাসআলাই উল্লেখ করব না।
গোসলের ফরয ৩টি :
(১) কুলি করা :
মুখের প্রত্যেক অংশের কোণা, ঠোঁট থেকে কন্ঠনালির গোড়া পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় যেন পানি পৌঁছে। অধিকাংশ লোক মনে করে যে, সামান্য পানি মুখে নিয়ে নিক্ষেপ করলেই কুলি হয়ে যায়। যদিও মুখের গোড়া এবং কন্ঠনালির কিনারা পর্যন্ত পানি না পৌঁছে। এনমভাবে গোসল হবে না। এ রকম ভাবে গোসল করার পর নামাযও জায়েয হবে না। বরং মাড়ি, দাঁত, দাঁতের ফাঁক জিহব্বার উভয় পার্শ্বে গলার কিনারা পর্যন্ত পানি প্রবাহিত করা ফরয।
(২) নাকে পানি দেওয়া:
নাকের উভয় ছিদ্রের যতদূর নরম জায়গা আছে ওই পর্যন্ত ধৌত করা। পানি নাক দ্বারা টেনে উপরে নিয়ে যাওয়া, যেন চুল বরাবর কোন অংশও বাকি না থাকে। অন্যথায় গোসল হবে না।
(৩) গোটা বাহ্যিক শরীরের উপর পানি প্রবাহিত করা।
মাথার চুল থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত শরীরের প্রত্যেক শুকনো স্থানে পানি প্রবাহিত করা, অনেক সাধারণ মানুষ এমনকি কতেক শিক্ষিত লোকেরা পর্যন্ত মাথার উপর পানি ঢেলে শরীরের উপর হাত ফিরায়ে নেয়। আর মনে করে, গোসল হয়ে গেছে। অথচ এমন অনেক অঙ্গ রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত বিশেষভাবে তা ধৌত করা না হবে, গোসলই হবে না।
গোসলের কয়েকটি সুন্নত
১। প্রথমে গোসলের নিয়ত করা।
২। উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
৩। প্রশ্রাবের অঙ্গ ধৌত করা। পবিত্র-অপবিত্র উভয় অবস্থায়।
৪। শরীরের যে স্থানে নাপাকি রয়েছে তা দূর করা। (যদি নাপাকি থাকে)
৫। নামাযের ন্যায় অযু করা; পা ধৌত করবে না। যদি চৌকি- আসন বা পাথরেরর উপর গোসল করে তখন পাও ধৌত করবে।
৬। তিনবার ডান কাধেঁর উপর পানি প্রবাহ করা।
৭। তিনবার বাম কাধেঁর উপর পানি প্রবাহ করা।
৮। মাথার উপর এবং সমস্ত শরীরে উপর তিনবার পানি প্রবাহিত করা।
৯। সমস্ত শরীরে হাত ফিরানো।
১০। গোসলের সময় ক্বিবলামুখী না হওয়া। (এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করছি, ছোট শিশুদের যখন গোসল করানো হয় তখন যেন কি¦বলামুখী করে গোসল না করানো হয়। ক্বিবলামুখী উলঙ্গ হয়ে গোসল করা মারাত্মক গুনাহ। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে যে গোসল করাবে তার গুনাহ হবে)
১১। কোনো প্রকার কথা না বলা।
১২। কোনো প্রকার দোয়া পড়বে না।
ওযুর পর্বঃ ৮টি জিনিস ওযু ভেঙ্গে দেয়ঃ
(১) যা কিছু পায়খানা-প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বের হয়,
(২) মুখভর্তি বমি, (৩) প্রবহমান রক্ত, (৪) অজ্ঞান হওয়া (৫) নিশাগ্রস্থ হওয়া (৬) অলসতার নিদ্রা, (৭) রুকু-সিজদা বিশিষ্ট নামাযে অট্টহাশি দেওয়া (সশব্দে হাসা), (৮) মুবাশারাত (নারী ও পুরুষ বিবস্ত্র হয়ে একজনের গোপনাঙ্গ অপর জনের গোপনঙ্গের সাথে লাগানো, যদিও প্রবেশ না করে)।
ওযুর কয়েকটি সুন্নত
১. নিয়্যাত করা
২. অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত। অযুর পূর্বে যদি পেশাব করে তখনও বিসমিল্লাহ বলবে। কিন্তু পায়খানায় গমনকালে কাপড় খোলার পুর্বে বলবে না। অপবিত্র স্থানে এবং সতর খোলার পর মুখে আল্লাহর যিক্র করা নিষিদ্ধ। (সুত্র: বাহারে শরীয়ত, ফাতওয়ায়ে শামী)
৩. তিন বার কুলি করা, আর তা গড়গড়ায়া কুলি করা। যদি রোযাদার না হয়।
৪. কান মাসেহ করা,
৫. দাঁড়ি খিলালকরা,
৬. দুই হাত ও পদদ্বয়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করবে। বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করবে। আর বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা শুরু করবে এবং কনিষ্ঠাঙ্গুলি দিয়ে শেষ করবে। খিলাল ছাড়া পানি যদি আঙ্গুলির ভিতরাংশে গড়িয়ে না যায়, তখন খিলাল করা ফরয। (দেখা যায় যে, হাত আঙ্গুলগুলো খিলাল করলেও পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে না। ওযুর সুন্নাত পালন না করলে ওযু পরিপূর্ণ হবে না)
ওযুর কয়েকটি মুস্তাহাব
১। ক্বিবলামূখী হওয়া।
২। ডান হাত দ্বারা কুলি করবে ও নাকে পানি দিবে
৩। বাম হাত দ্বারা নাক পরিষ্কার করবে।
৪। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি নাকে প্রবেশ করা।
৫। উভয় হাত দ্বারা মুখ ধোয়া।
৬। ওযুর পর হাত না ঝাড়া, কারণ এটা শয়তানের জন্য পাখায় পরিণত হয়।
ওযুর কয়েকটি মাকরূহ সমূহ
১। মহিলার গোসল বা ওযুর অবশিষ্ট পানি দ্বারা অযু করা।
২। ওযুর জন্য নাপাক স্থানে বসা।
৩। নাপাক স্থানে ওযুর পানি ফেলা।
৪। ক্বিবলার দিকে থুথু বা গলা পরিষ্কার করে বর্জ্য ফেলা ও কুলি করা।
৫। অপ্রয়োজনে দুনিয়াবী কথা বল।
৬। অতিরিক্ত পানি ব্যয় করা।
৭। এক হাত দ্বারা মুখ ধোয়া।
৮। গলা মাসেহ করা।
৯। বাম হাত দ্বারা কুলি করা বা নাকে পানি দেয়া।
১০। ডান হাত দ্বারা নাক পরিষ্কার করা।
১১। তিনবার নতুন পানি দিয়ে তিনবার মাথা মাসেহ করা।
আযান পর্ব :
১। বুদ্ধিমান শিশু, ক্রীতদাস, অন্ধ, জারজ সন্তান, অযুবিহীন ব্যক্তির আযান শুদ্ধ। কিন্তু ওযুবিহীন আযান দেয়া মাকরুহ।
২। আযান বলা অবস্থায় বিনা ওজরে গলা হাঁক দেয়া মাকরূহ।
৩। আযানে ধ্বনি সমূহে সুর তোলা হারাম। উদাহরণ স্বরূপ- আল্লাহু আকবার শব্দদ্বয়ের, “আলিফ” কে দীর্ঘ করে পড়া। এভাবে “বা” হরফ এর পর অতিরিক্ত একটি “আলিফ” যুক্ত করে পড়া।
৪। আযানের শব্দাবলি সংগীতের তাল ও লয়ের ধ্বনিতে সুর তোলাও সুরেলার অর্ন্তভূক্ত; যা অবৈধ। (রুদ্দুর মুহতার, ২/৫৬পৃৃ.)
৫। যদি ভুল আযান দেয়া হয়। যেমন- গানের সুর সহকারে আযান দিলো, তখন তার জবাব দেবে না; বরং এ ধরনের আযান শুনাও যাবে না। (রুদ্দুর মুহতার, ২/৮২পৃৃ.)
৬। শক্তির অধিক আওযাজ উচ্চরণ করা মাকরূহ।
৭। উচুঁ স্থানে আযান দেয়া সুন্নাত।
৮। “হাইয়া আলাল সালাহ” ডান দিকে মুখ করে বলবে এবং “হাইয়া আলাল ফালাহ” বাম দিকে মুখ করে বলবে। ইকামতের সময়ও অনুরুপ করবে।
৯। যদি আযান বা ইকামতের শব্দাবলি কোথাও আগে পরে হয়ে যায়, তাহলে তখনই শুদ্ধ করে নেবে। শুরু থেকে আযান দেয়ার প্রয়োজন নেই।
১০। আযানের সময় উভয় কানের ছিদ্্ের আঙ্গুল রাখা মুস্তাহাব; হাত রাখা উত্তম।
১১। অপবিত্র ব্যক্তিও আযানের উত্তর দেবে। ঋতুবর্তী মহিলা, খোতবা শ্রবণকারী ব্যক্তি, জানাযা আদায়কারী, সহবাসে লিপ্ত ব্যক্তি অথবা পায়খানা প্রস্রাবে নিয়োজিত ব্যক্তি আযানের জবাব দেবে না।
১২। কয়েকটি আযান শুনতে পেলো, এমতাবস্থায় প্রথম আযানের উত্তর দেবে। তবে সবগুলো আযানের জবাব দেয়াটা উত্তম।
১৩। ইকামতের সময় কোনো ব্যক্তি আসলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা মাকরূহ বরং বসে যাবে। যখন “হাইয়া আলাল ফালাহ” বলবে তখন দাঁড়িয়ে যাবে। অনুরুপ যে সব লোক আগে থেকে মসজিদে উপস্থিত থাকে তারাও বসে থাকবেন, যখন “হাইয়া আলাল ফালাহ” বলবেন তখন দাঁড়াবে। ইমামের ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য। (ফাতাওয়ায়ে আমলগিরি ১/১৫৭পৃ.এবং বাহারে শরীয়ত ৩য় খন্ড, আযান অধ্যায়)
মহিলাদের নামাযের নিয়ম
আমাদের সমাজে মহিলারা শরিয়তের বিধি-বিধান জানার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। আমি খোজ খবর নিয়ে জেনেছি যে, অধিকাংশ মহিলারা নামায পুরুষদের মত করেই করে। কিন্তু মহিলাদের নামাযে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। আমি এখানে মহিলাদের নামাযের নিয়ম-কানুন বর্ণনা করছি।
(১) মহিলাদের জন্য সুন্নাত হলো, স্কন্ধ বা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানো তবে হাত চাদর বা ইত্যাদি থেকে বের করবে না। (২) মহিলা বাম হাতের তালু সিনার একটু নীচে রেখে তার পিটের উপর ডান হাতের তালু রাখবে। (কিছু লোক তাকবীরের পর হাত সোজা ঝুলিয়ে রাখে অতঃপর বাঁধে এরূপ করা উচিত নয়। এটি পুরুষ বা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে) (৩) মহিলারা রুকুতে সামান্য ঝুকবে। অর্থ্যাৎ শুধু এতটুকু পরিমাণ, যেন হাত হাটু পর্যন্ত পৌছে পিট সোজা করবে না। (৪) এবং হাটুর উপর জোর (ভর) দেবে না এবং হাঁটুকে আকড়েও ধরবে না। বরং শুধুমাত্র হাত রাখবে। (৫) এবং হাতের আঙ্গুল সমূহ খোলা রাখবে এবং পদযুগল ঝুকায়ে রাখবে, পুরুষের ন্যায় ভালভাবে সোজা করবে না। (৬) মহিলা সর্বাঙ্গ একত্রিতকরণ করে সিজদা আদায় করবে। পেটকে মিলাবে উরুর সাথে আর উরুকে পায়ের গোছার সাথে এবং পায়ের গোছাকে জমিনের সাথে। (সব মিলিয়ে মহিলা সিজদা করবে)। (৭) মহিলা সিজদা ও বৈঠকে উভয় পা ডান দিকে বের করে রাখবে এবং বাম নিতম্বের (পাছার) উপর বসবে। (৮) ডান হাত ডান উরুর মধ্যভাগে রাখবে, এবং বাম হাত বাম উরুর মধ্যভাগে রাখবে। বাকি সবকিছুই পুরুষদের মত। (সূত্র: ফতহুল কাদীর, বাহারে শরীয়ত, কানুনে শরীয়ত, নামাযের আহকাম ইত্যাদি)
নামাযের মাসআলা সম্পর্কিত অধ্যায়ঃ
তাকবিরে তাহরিমা সম্পর্কিত কিছু মাসআলাঃ
১। ইমামকে রুকুতে পাওয়া গেলো, তাকবিরে তাহরিমা বলে রুকুতে চলে গেলো, অর্থাৎ তাকবির এ সময় শেষ করলো, হাত বাড়ালে হাটু পর্যন্ত চলে যাবে, তবে নামায হবে না।
২। আল্লাহ শব্দকে আ----ল্লাহ বা আকবার শব্দকে আকবা-----র বললে (অর্থ্যাৎ টেনে বললে) নামায হবে না। বরঞ্চ এতে অর্থের অশুদ্ধি জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃত পড়লে কাফির হবে।
৩। মুকতাদি আল্লাহ শব্দ ইমামের আগেই বললো, কিন্তু আকবার শব্দ ইমামের সাথে শেষ করলো, তবে নামায হবে না।
৪। ইমামের আগে তাকবিরে তাহরিমা বললো, ইক্তেদার নিয়্যত করলে নামাযের অন্তর্ভুক্ত হল না এবং শুরুও হলো না এবং ইমামের নামাযে অন্তর্ভূক্ত হল না; বরং পৃথকভাবে হলো। (আলমগীরি)
৫। ইমামের তাকবিরের অবস্থা জানা নেই কখন বললো, যদি প্রবল ধারণা হয় যে, ইমামের আগে নিজে বলেছে নামায হবে না। আর যদি প্রবল ধারণা হয় ইমামের আগে বলা হয়নি তখন হয়ে যাবে। যদি কোনো দিকে প্রবল ধারণা না হয় তবে নতুন করে তাহরীমা বাঁধবে। (দুররুল মুখতার)
কিয়াম সম্পর্কিত কিছু মাসআলাঃ নামাযে কিয়াম মানে দাড়ানো ফরয।
১। ফরয, বিতর, দুই ঈদের নামায, ফজরের সুন্নাতে দাঁড়ানো ফরয। সঠিক ওজর ছাড়া ওসব নামাযে বসে পড়লে হবে না।
২। দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামান্য কষ্ট হওয়াটাই ওজর নয়, বরং দাঁড়িয়ে একেবারে সিজদা করতে না পারাটাই হচ্ছে ওজর। বা দাড়িয়ে সিজদা করলে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে বা চতুর্থাংশ সতর খুলে যাচ্ছে বা ক্বিরাত পাঠে অক্ষম হয়ে পড়েছে, এমনি দাঁড়াতে পারে কিন্তু এতে রোগ বেড়ে যায় বা দেরীতে সুস্থ হবে বা কষ্ট সহ্যের বাহির হয়ে পড়েছে এমতাবস্থায় বসে পড়বে।
৩। যদি লাঠি, খাদেম বা দেওয়ালের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো যায় তখন দাঁড়িয়ে পড়া ফরয।
৪। যদি কিছুক্ষণ মাত্র দাঁড়াতে পারে যদিও দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলতে পারে তখন দাঁড়িয়ে এতটুকু বলাটা ফরয। অতঃপর বসে যাবে।
জরুরি সতর্কতাঃ আজকাল সাধারণতঃ এটা দেখা যায় যে, সামান্য জরাক্রান্ত বা কষ্ট অনুভুত হলেই বসে নামায পড়া শুরু করে দেয়, অথচ এসব লোকেরাই দশ পনের মিনিট বরঞ্চ তার চেয়ে বেশি পরিমাণ সময় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ধরণের কথা-বার্তায় ব্যস্ত থাকে, এসব মাসআলার ব্যাপারে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত এবং যতগুলো নামায দাঁড়ানোর সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও বসে আদায় করেছে তা পুনরায় পড়া ফরয। অনুরুপভাবে এমনি যদি দাঁড়াতে না পারে কিন্তু লাঠি কিংবা দেওয়াল বা মানুষের সাহায্যে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল তা করেনি, সে নামাযও হয়নি। তা পুনরায় পড়া ফরয। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন। (বাহারে শরীয়ত)
রুকু-সিজদার মাসআলাঃ
(১) রুকুতে হাটুদ্বয়কে হাত দ্বারা ধরা। (২) আঙ্গুল সমূহ ভালো ভাবে খোলা রাখা। (৩) রুকু অবস্থায় হাটু সোজা রাখা। (৪) রুকুর মধ্যে মস্তক অবনত করবে না, উচুঁও করবে না। বরং পিঠের সমান রাখবে। (৫) রুকুর মধ্যে পিঠকে ভালভাবে বিছাবে এমনকি পিঠের উপর যদি পানির পেয়ালাও রাখা হয় তা যেন স্থির থাকে। সিজদা : (৬) সিজদায় গেলে প্রথমে জমিনের উপর হাটু রাখবে। অতঃপর হাত রাখবে। অতঃপর নাক রাখবে। তারপর কপাল রাখবে এবং যখন সিজদা থেকে উঠবে তার বিপরীত করবে অর্থ্যাৎ, প্রথমে কপাল উঠাবে, অতঃপর নাক, তারপর হাত, তারপর হাটু উঠাবে। (৭) সিজদায় এক পা আলগা করে রাখা মাকরূহ ও নিষিদ্ধ। (৮) সিজদায় আঙ্গুল সমূহ ক্বিবলার দিকে থাকা। (৯) প্রত্যেক পায়ের তিনটি করে আঙ্গুলের পেট জমীনের উপর লাগা ওয়াজিব। (১০) দশটি আঙ্গুল ক্বিবলার দিকে থাকা সুন্নত। (১১) দুই সিজদা করার পর দ্বিতীয় রাকআতের জন্য হাতের পাঞ্জার শক্তি দিয়ে হাটু উপর হাত রেখে উঠবে। এটা সুন্œত। দূর্বলতা বা অন্য কোন ওজর থাকলে, যদি জমিনের উপর হাত রেখে উঠে তবে ক্ষতি নেই।
বৈঠকের সুন্নাত
১। বেঠকে- বাম পা বিছিয়ে তার উপর উপবেশন করে ডান পা খাড়া রাখবে।
২। পদদ্বয়কে এমনভাবে দাঁড় করানো- যেভাবে সিজদায় দাঁড় করানো হয় এবং পায়ের দুই গোড়ালির উপর দুই নিতম্বকে রেখা বসা মাকরূহ। অর্থ্যাৎ দুই নিতম্ব রেখে বসা মাকরূহ। একটি বাম পায়ের সাথে লাগা থাকবে ও অন্যটি আলগা থাকবে।
৩। তাশাহুদের সময় শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা। নিয়ম- কনিষ্ঠা ও তার পার্শ্ববর্তী আঙ্গুলকে বন্ধ করে নিন, বৃদ্ধাঙ্গুলও মধ্যমা দ্বারা বৃত্ত তৈরি করুন আর লা- বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল উঠান। এসময় আঙ্গুল এদিক সেদিক নড়াচড়া করবেন না, লা- বলার পর নামিয়ে ফেলবেন, অতঃপর সমস্ত আঙ্গুল সোজা করে নিন। এটি সুন্নাত।
সিজদায়ে সাহু সম্পর্কিত মাসআলাঃ
যে সব বিষয় নামাযে ওয়াজিব, ওগুলোর থেকে যদি কোন একটি ওয়াজিব ভুলে বাদ পড়ে, তাহলে ঘাটতি পূর্ণ করার জন্য সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব। সিজদায়ে সাহুর নিয়ম হলো- শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ার পর ডান দিকে সালাম ফিরায়ে দুটি সিজদা করবে এবং পুনরায় তাশাহুদ, দুরূদ ও দোয়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরাবে।
১। ইচ্ছাকৃত কোন ওয়াজিব বাদ দেয়, তাহলে সাহু সিজদা করলেও নামায হবে না।
২। কোন ফরয বাদ পড়লে সাহু সিজদা দিলেও নামায হবে না। নামাযের বাহিরে ও ভিতরে মোট ১৩টি ফরয আছে। বাহির ৬টি যথা- (১) পাক হওয়া, (২) সতর ঢাকা, (৩) কিবলামুখী হওয়া, (৪) ওয়াক্ত হওয়া (৫) নিয়ত করা ও (৬) তাকবীরে তাহরিমা। ভিতরে ৭টি যথা- (১) তাকবীরে তাহরিমা (২) কিয়াম করা (৩) কিরাত পাঠ করা, (৪) রুকু করা (৫) সিজদা করা (৬) শেষ বৈঠক ও (৭) সালাম দ্বারা নামায শেষ করা। এগুলো বাদ পড়লে সাহু সিজদা দিলেও নামায হবে। “বাহারে শরীয়ত” কিতাবে ৪৯টি ওয়াজিব উল্লেখ আছে। এখানে সংক্ষিপ্ত করার জন্য সবগুলো উল্লেখ করেনি। এখানে সবচেয়ে বেশি ভুল হয় এবং কম জানে এমন কয়েকটি উল্লেখ কবব। বিস্তারিত জানার জন্য কোন আলেম বা কিতাব থেকে জেনে নিবেন।
৩। প্রথম বৈঠকে পূর্ণ তাশাহুদ পড়ার পর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতে যদি ততক্ষণ দেরি করে যতক্ষণ, আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মদ পড়তে লাগে, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব। কিছু পড়–ক বা চুপ থাকুক, উভয় অবস্থায় সাহু সিজদা ওয়াজিব।
৪। কিরাত ইত্যাদি পড়ার সময় চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল এবং তিনবার “সুবহানাল্লাহ” বলতে পারার মত দেরি হয়ে গেল, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব।
৫। তাদীলে আরকান অর্থ্যাৎ যথাযথভাবে নামায আদায় করতে ভুলে গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব।
৬। যে ব্যক্তি ভুলে প্রথম বৈঠক করেনি এবং তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যাচ্ছিল, সে ব্যক্তি যদি এতটুকু দাঁড়ায় যে বৈঠকের কাছাকাছি আছে, তাহলে বসে যাবে, নামায শুদ্ধ হবে এবং সিজদায়ে সাহুও প্রয়োজন হবে না। আর যদি এতটুকু উঠে যায় যে দাঁড়ানোর কাছাকাছি হয়ে গেছে, তাহলে দাঁড়িয়ে যাবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে।
৭। ইমাম প্রকাশ্য নামাযে, নামায জায়েয হওয়া পরিমাণ এক আয়াত নিশ্চুপে পড়েছে। অথবা অপ্রকাশ্য নামাযে প্রকাশ্যভাবে কিরাত পড়েছে তখন সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। এক শব্দ আস্তে বা অপ্রকাশ্যে পড়ে তা ক্ষমারযোগ্য হবে।
৮। একাকী নামায আদায়কারী অপ্রকাশ্য কিরাত বিশিষ্ট নামাযে প্রকাশ্যে পড়লে তখন সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। প্রকাশ্যের স্থলে নিঃশব্দে পড়লেও ওয়াজিব হবে না।
৯। ছানা, দোয়া ও তাশাহুদ উচ্চ আওয়াজে পড়া সুন্নাতের বিপরীত হবে। কিন্তু সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না।
১০। আলহামদুলিল্লাহ পড়া ভুলে গিয়ে, সুরা শুরু করে দিয়ে এক আয়াত পরিমাণ পড়ে নেয়, এখন স্মরণ হয়, তখন আলহামদু পড়ে সুরা পড়বে এবং সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। এভাবে সুরা পড়ার পর বা রুকুতে অথবা রুকু হতে দাঁড়াবার পর স্মরণ হলে তখন সূরা ফাতিহা পড়ে অন্য সূরা পড়বে এবং রুকু দোহরাবে (পুনরায় রুকু করবে) ও সাহু সিজদা করবে।
১১। ছানা, আউজুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে এবং ক্বিরাত শুরু করে দিল, তখন পুনরায় পড়বে না। যেহেতু তার স্থান চলে গেলো। এভাবে যদি ছানা পড়তে ভুলে গেল, আউজুবিল্লাহ শুরু করে দিল, তখন ছানা পুনরায় পড়বে না। এবং সাহু সিজদাও দিবে না। কারণ সাহু সিজদা দিতে হয় ওয়াজিব বাদ পড়লে।
১২। সূরা মিলানো ভুলে গিয়ে রুকুতে স্মরণ হলো, তখন দাঁড়িয়ে যাবে এবং সূরা মিলাবে অতঃপর রুকু করবে এবং শেষে সাহু সিজদা করবে। যদি দ্বিতীয়বার রুকু না করে নামায হবে না।
মসবুক ব্যক্তির নামায সম্পর্কিত কয়েকটি মাসআলাঃ
মসবুক হচ্ছে যে ব্যক্তি জামাতের ওই সময় শামিল হয়, যখন ইমাম এক বা একাধিক রাকাত পড়ে ফেলে এবং নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত ইমামের সাথে থাকে এবং বাদ পড়া রাকাতগুলো একাকী আদায় করে।
১। মসবুক ইমামকে বৈঠকে পেলে এভাবে শামিল হবে যে প্রথম নিয়ত করে দাঁড়াবে এবং সোজা দাড়ানো অবস্থায় তাকবীর তাহরীমা বলবে। যদি প্রথম তাকবীর বলার সাথে রুকুর সীমা পর্যন্ত ঝুকে যায়, তাহলে নামায হবে না।
২। মসবুক যদি ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাযের ৪র্থ রাকাতে জামাতে শামিল হয়, তাহলে ইমামের সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে যাবে এবং এক রাকাত আলহামদু ও অন্য একটি সূরা পড়ে বৈঠক করবে এবং পুনরায় দাঁড়িয়ে যাবে এবং সেই রাকাতেও আলহামদু ও অন্য একটি সূরা পড়বে এবং এ রাকাতে বৈঠক করবে না বরং আর এক রাকাত কেবল আলহামদু পড়ে বৈঠক করে নামায শেষ করবে। অর্থাৎ ইমামের সাথে বৈঠক ব্যতীত ওকে
আরও ২টি বৈঠক করতে হবে। প্রথম বৈঠক প্রথম রাকাতের পর এবং আরও দু’রাকাত পড়ার পর ২য় বৈঠক।
৩। মসবুক যদি মাগরিবের ৩য় রাকাতে শামিল হয়, তাহলে ইমামের সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে যাবে। আলহামদু ও অন্য একটি সূরা সহকারে এক রাকাত পড়ে বৈঠক করে পুনরায় দাঁড়িয়ে যাবে এবং আলহামদু ও অন্য একটি সূরা পড়ে রাকাত পূর্ণ করবে এবং শেষ বৈঠক করে নামায শেষ করবে। অর্থাৎ নিজের দু’রাকাতেই বৈঠক করবে এবং দু’রাকাতেই আলহামদু ও অন্য সূরা পড়বে। এখানেও ইমামের সাথের বৈঠক বাদ দিয়ে আরও দু’বৈঠক হবে।
৪। চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযের তৃতীয় রাকাতে শামিল হলো, তাহলে ইমামের পরে আরও দু’রাকাত পড়বে এবং এ দু’রাকাতে আলহামদু ও অন্য একটি সূরা নিশ্চয় পড়বে।
৫। মসবুক অর্থ্যাৎ এক বা দু’রাকআত পর যুক্ত মুসল্লি শুরুতে ছানা পড়তে পারেনি যখন অবশিষ্ট রাকআত পড়বে ছানা পড়ে নেবে।
নামাযের কতিপয় মাকরূহ সমূহঃ
১। কাপড় ঝুলিয়ে রাখা, যেমন মাথা বা কাঁধে এভাবে রাখা, যেন উভয় কিনারা ঝুলে থাকে। এসব মাকরূহ তাহরীমি। মাকরূহ তাহরীমি হলো ওয়াজিবের বিপরীত। মাকরূহ তাহরীমি হলে গুনাহ হবে এবং বার বার করলে কবীরাহ গুনাহ হয়। (বাহারে শরীয়ত)
২। পায়খানা, প্রস্রাবের গতি প্রবল হওয়ার সময় বা বায়ু নির্গত হওয়ার প্রবলতার সময় নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমি।
৩। এদিক ওদিক মুখ ফিরিয়ে দেখা মাকরূহ তাহরীমি। মুখ না ফিরে শুধু চোখের কোণে বিনা প্রয়োজনে এদিক ওদিক দেখে তখন মাকরূহ তাহযিহী।
৪। কাপড় এমনভাবে জড়িয়ে যাওয়া, যার দ্বারা হাত বের করা যাচ্ছে না তাহলে মাকরূহ তাহরীমি হবে।
৫। বিনা প্রয়োজনে গলা হাঁকড়ানো বা ইচ্ছাকৃতভাবে হাই তোলা মাকরূহ তাহরীমি। হাই আসলে বাঁধা দেওয়া মুস্তাহাব।
৬। রুকুর মধ্যে পিঠ থেকে উচুঁ বা নিচু করা মাকরূহ।
নামাযের আরো কিছু মাসআলাঃ
১। ইমাম প্রকাশ্য ক্বিরাত শুরু করে দিলে মুক্তাদি ছানা পড়বে না। যদি দূর বা বধির হওয়ার কারণে ইমামের আওয়াজ শুনতে না পায় যেমন- জুমআ, দ্’ুঈদের পিছন সারির মুক্তাদি দূর হওয়ার কারণে ক্বিরাত শুনতে পায় না। ইমাম ক্বিরাত ধীরে পড়লে তখন ছানা পড়ে নেবে।
২। ইমামকে রুকুতে বা প্রথম সিজদায় পেল, ছানা পড়ে পাওয়ার যদি প্রবল ধারণা থাকে পড়ে নেবে। বৈঠক বা দ্বিতীয় সিজদায় পেল, তখন ছানা ছাড়া নামাযে শামিল হওয়া উত্তম।
৩। যে ফরযের পর সুন্নাত রয়েছে সে সব নামাযের পর কথা বলা সমীচিন নয়। যদিও সুন্নাত আদায় হয় কিন্তু সাওয়াব কম পাবে। সুন্নাত আদায়ে বিলম্ব করাও মাকরূহ। এভাবে বড় বড় অযিফা ও দোয়া পড়ারও অনুমতি নেই।
৪। ক্বিরাতে এতটুকু আওয়াজ দরকার যদি শ্রবণের অন্তরায় সৃষ্টিকারী হৈ চৈ না হয়, তখন নিজে যেন শুনতে পায়। এতটুকু আওয়াজ না হলে নামায হবে না।
৫। ক্বিরাত বড় করে পড়ার অর্থ হলো, অন্য লোকের অর্থ্যাৎ যারা প্রথম কাতারে আছে তারা যেন শুনতে পায়। এটা নিম্মসীমা। উপরের কোন সীমা নির্ধারণ নেই। এবং ধীরে পড়া অর্থ হলো- যেন নিজে শুনতে পায়। (বাহারে শরীয়ত)
কাযা নামায সম্পর্কিত মাসআলাঃ
১। শরয়ী বিনা ওজরে ব্যতীত নামায কাযা করা বড় কঠিন গুনাহ। তার জন্য কাযা পড়ে নেয়া ওয়াজিব এবং বিশুদ্ধ অন্তরে তওবা করবে। তওবা অথবা মকবুল হজের দ্বারা বিলম্বে আদায়ের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তওবা তখনই শুদ্ধ হবে, যখনই কাযা পড়ে নেবে।
২। বান্দার উপর যে কাজ করার আদেশ রয়েছে, তা যথাসময়ে পালন করাকে আদায় বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের পর পালন করাকে কাযা বলা হয়। আর ঐ আদেশ পালনে যদি কোন ক্ষতি সৃষ্টি হয়, তখন ক্ষতি দূর করার জন্য দ্বিতীয় বার পালন করাকে ইয়াদা বা পুনরায় পড়া বলা হয়।
৩। যদি সময়ের মধ্যে তাকবিরে তাহরিমা বাঁধা হয়, তাহলে নামায কাযা হবে না, বরং আদাই হবে। কিন্তু ফজর, জুমআ ও উভয় ঈদের সালামের পূর্বে বাঁধে, যদি ওয়াক্ত চলে যায়। নামায বাতিল হয়ে যাবে
৪। সময়ের মধ্যে যদি তাহরীমা বেঁধে ফেলে, তখন কাযা পড়াও ফরয। অবশ্য কাযা হওয়াতে তার উপর গুনাহ হবে না। কিন্তু জাগ্রত অবস্থায় বা স্মরণে আসার পর কাযার গুনাহ হবে। মাকরূহ সময় না হলে ঐ সময়েই পড়ে নেবে। বিলম্ব করা মাকরূহ।
রোজা ভঙ্গের কয়েকটি কারণঃ
১। পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়; যদি রোযাদার হবার কথা স্মরণ থাকে।
২। হুক্কা, সিগারেট, ইত্যাদি পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। যদিও নিজের ধারণায় কন্ঠনালী পর্যন্ত ধোঁয়া পৌছেনি।
৩। চিনি ইত্যাদি, এমন জিনিস যা মুখে রাখলে হলে যায় বা মুখে রাখলো আর থুথু গিলে ফেললো এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে।
৪। ঘুমন্ত অবস্থায় পানি পান করলে, কিছু খেয়ে ফেললো তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
৫। কুলি করছিলো। অনিচ্ছা সত্তে¡ও পানি কন্ঠনালী বেয়ে নিচে নেমে গেলো। কিংবা নাকে পানি দিলো, কিন্তু তা মগজে পৌঁছে গেলো তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
৬। অন্য কারো থুথু গিলে ফেললো কিংবা নিজের থুথু হাতে নেয়ার পর গিলে ফেললো রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত থুথু কিংবা কফ মুখের ভিতর বিদ্যমান থাকে। তা গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হয় না।
৭। দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে তা কন্ঠনালীর নিচে নেমে গেলো। আর রক্ত থুথু অপেক্ষা বেশি কিংবা সমান অথবা কম ছিলো, কিন্তু সেটার স্বাদ কন্ঠে অনুভুত হলো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে। এবং যদি কম ছিলো আর স্বাদও কন্ঠে অনুভূত হয়নি, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না।
৮। নশ টানলো বা নাকের ছিদ্রে ওষুধ প্রয়োগ করলো বা কানে তেল দিল এবং তা ভিতরে চলে গেল, তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। রঙ্গিন সুতা মুখে রাখার ফলে থুথু রঙ্গিন হয়ে গেলো ও তা গিলে ফেললো তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (বাহারে শরীয়ত, ফয়যানে সুন্নাত ১ম খন্ড)
বিঃদ্রঃ রোযার মাকরূহ সমূহ অনেক আছে। সেগুলো কোন আলেম থেকে বা অন্য কিতাব থেকে জেনে নিবেন। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ থাকলে, আমি আদাবুল রমাদ্বান নামে একটি কিতাব লিখব সেখানে রোযার সব মাসআলা লিখব ইনশাআল্লাহ।
অপবিত্র বস্তু পবিত্র করার কয়েকটি পদ্ধতি
১। অপবিত্রতা যদি আকৃতি সম্পন্ন হয়, যেমন পায়খানা, গোবর, রক্ত ইত্যাদি তখন ধৌত করার ক্ষেত্রে গণনা করা শর্ত নয়, বরং তা দূর করা জরুরি। যদি একবারে দূর হয় তখন একবার ধৌত করলেই পাক হয়ে যাবে। যদি চারবারে অথবা পাঁচবারে দূর হয়, তখন চার-পাচঁবার ধৌত করতে হবে। তবে তিনবারের কমে যদি নাজাসাত (নাজাসাত মানে যা স্বয়ং নাপাক) দূর হয়ে যায়, তবে তিনবার পূর্ণ করা মুস্তাহাব।
২। যদি নাজাসাত দূর হয়ে যায়, কিন্তু তার চিহ্ন রং বা গন্ধ যদি বাকি থাকে তাও দূর করা আবশ্যক। নাপাকের চিহ্ন দূর করা যদি কষ্টকর হয় তখন নাপাকির চিহ্ন দূর করা জরুরি নয়। তিনবার ধৌত করে নিলে পবিত্র হয়ে যাবে। সাবান, গরম পানি ইত্যাদি দ্বারা ধৌত করার প্রয়োজন নেই।
৩। দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তান ও কন্যা সন্তানদের প্রশ্রাব যদি কাপড়ে কিংবা শরীরে লাগে, কাপড় বা শরীর তিনবার ধৌত করতে হবে। তিনবার ধৈৗত করলে ও মোচড়ালে পাক হয়ে যাবে।
৪। কাপড়ের কোন অংশ নাপাক কোন অংশ পাক, তা যদি জানা না থাকে সম্পূর্ণটাই ধুয়ে নেবে। আর যদি জানা থাকে, যেমন- আস্তিন অথবা কলারে নাপাক লেগেছে, কিন্তু এটা জানা নেই যে, কোন অংশে নাপাকি রয়েছে, তখন আস্তিন বা কলার ধৌত করা সম্পূর্ণ কাপড় ধৌত করার নামান্তর। আর যদি অনুমান করে কোনো অংশ ধুয়ে নেয় তখনও পাক হয়ে যাবে। আর যে চিন্তাবিহীন কোনো অংশ ধুয়ে নিলো তখনও পাক হয়ে যাবে। কিন্তু এমতাবস্থায় যদি কয়েক রাকাত নামায আদায় করার পর অবগত হলো অপবিত্র অংশ ধোয়া হলো না, তখন পুনরায় ধুয়ে নেবে; নামাযসমূহ পুনরায় পড়বে।
৫। বীর্য কাপড়ে লেগে শুকিয়ে গেলো, তখন ঘসে ঝাড়া দিলে এবং পরিষ্কার করে নিলে কাপড় পাক হয়ে যাবে। যদিও ঘষার পর তার লক্ষণ কাপড়ে বাকি থাকে। শরীরেও যদি বীর্য লেগে থাকে, উপরোক্ত পদ্ধতিতে পাক হয়ে যাবে। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া)
৬। বীর্য কাপড়ে লেগেছে এখনো আর্দ্র (ভেজা)। ধৌত করলে পাক হবে, ঘষে নিয়ে যথেষ্ট হবে না।(ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া)
শৌচকার্য সম্পর্কিত কয়েকটি মাসআলা
১। ছোট শিশুকে পায়খানা প্রশ্রাব করানোর সময় শিশুর মুখ ক্বিবলার দিকে করা হলে এ জন্য তাকে তত্ত¡াবধানকারী গুনাহগার হবে এবং এটা মাকরূহ হবে তার জন্যই। (ফাতওয়ায়ে শামী)
২। মলমুত্র বা পেশাব ত্যাগের সময় চন্দ্র সূর্য কোনোটার দিকে মুখ বা পিট করা যাবে না। অনুরুপ ভাবে বাতাসের দিকে প্রশ্রাব করা নিষিদ্ধ। (ফাতওয়ায়ে শামী)
৩। নিচু স্থানে বসেও উপরিস্থানে প্রশ্রাব করা নিষেধ।
৪। এমন শক্ত ভূমিতে প্রশ্রাব করা নিষেধ যেখান থেকে ছিটকা পড়ে আসে। এমন স্থানকে নরম করে নেবে অথবা গর্ত খনন করে প্রশ্রাব করবে।
৫। কংকর, পাথর, ছেড়া কাপড় এসবগুলোর ঢিলার হুকুমের অন্তর্ভূক্ত। এগুলো দ্বারা পরিষ্কার করা জায়েয।
৬। হাড় খাদ্যজাতীয় বস্তু, গোবর, পাকা ইট, সীসা, কয়লাসহ এমন সব বস্তু যে গুলোর কিছু মূল্য আছে যদিও কম মূল্যের হোক এগুলো দ্বারা শৌচকার্য করা শাকরূহ। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া)
কেউ মারা গেলে করণীয় সম্পর্কে কিছু মাসআলা
১। মৃত ব্যক্তির সকল নিকটআত্মীয়দের সমবেদনা প্রকাশ করা মুস্তাহাব। কিন্তু মহিলার জন্য তার মুহরিমই সমবেদনা প্রকাশ করবে। সমবেদনা প্রকাশের সময় এরূপ বলবে যে, আল্লাহ মরহুমকে ক্ষমা করুন, তাকে স্বীয় রহমতের মধ্যে আবৃত করুন এবং তোমাদের ধৈর্য দান করুন এবং বিপদের জন্য সাওয়াব দান করুন।
২। মৃত ব্যক্তির প্রতিবেশী বা দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক সেই দিন ও রাতে মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য খাবার আনা উত্তম এবং তাদেরকে জোরপূর্বক খাওয়াবে।
২৪
৩। মৃত ব্যক্তির পরিবার কর্তৃক মৃত্যু পরবর্তী কুলখানী চেহলাম ইত্যাদিতে লোকজন দাওয়াত করা নাজায়িয এবং খুবই মন্দ বিদআত। দাওয়াত তো খুশীর সময় শরীয়ত সম্মত। দুঃখে মুসীবতের সময় নয়। আর যদি ফকীর মিসকিনদের খাওয়ানো হয় তা হবে উত্তম। (ফাতহুল কাদীর ২য় খন্ড ২৫১পৃষ্ঠা।)
৪। যে সব লোকজন দ্বারা কুরআন মাজীদ বা কালেমা তৈয়্যবাহ পড়ানো হয়েছে, ওদের জন্য খানা তৈরি করা নাজায়েয। অর্থ্যাৎ এরা যদি জানাশুনা হয় অথবা যদি তার সম্পদশালী হয়। (রদ্দুল মুহতার)
৫। কুলখানি ইত্যাদি খাবার পরিবেশন অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে করা হয়। এতে সর্তক থাকা প্রয়োজন যে কোন নাবালেগ ওয়ারিশ যেন না থাকে। অন্যথায় কঠোর হারাম। অনুরূপ কিছু ওয়ারিশ উপস্থিত না থাকে সে কারণে তখনও নাজায়েয হবে। যদি অনুপস্থিত ওয়ারিশদের থেকে অনুমতি নেয়া হয় তাহলে সমস্যা নেই। উপস্থিত প্রাপ্ত বয়স্ক স্বীয় অংশ থেকে কুলখানী, ফাতিহা ইত্যাদির আয়োজন করলেও ক্ষতি নেই। (ফাতওয়ায়ে খানিয়া ও রযভিয়্যাহ)
৬। মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য যে খাবার পাঠানো হয়, সে খাবার শুধু পরিবারের লোকজনই খাবে। তাদের প্রয়োজনের বেশি পাঠানো অনুচিত। অন্যান্যদের সে খাবার খাওয়া নিষেধ। শুধু প্রথম দিন খাবার পাঠানো সুন্নাত। এরপর মাকরূহ।
৭। কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব। প্রতি সপ্তাহে একদিন যিয়ারত করবে, বৃহস্পতি, শনি ও সোমবার যিয়ারত করা উচিত। সবচেয়ে উত্তম হলো জুমআর দিন সকালে বেলা যিয়ারত করা। (শরহে মেশকাত, তাফসীরে রুহুল বায়ান)
৮। মহিলার লাশ অবতরণকারী মহিলার মুহরিম হতে হবে। কোন মুহরিম না থাকলে, অন্য আত্মীয়গণ নামাবে। তারাও না থাকলে অপরিচিত বা পরহেজগার লোকেরা নামালেও কোন ক্ষতি নেই। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া)
৯। গোসল দানকারী যেন পবিত্র থাকে। নাপাক বা ঋতুবর্তী মহিলা গোসল করালে মাকরূহ হবে। তবে গোসল হয়ে যাবে। অযুহীন ব্যক্তি গোসল করালে মাকরূহও হবে না। তবে উত্তম হলো গোসলদানকারী যেন মৃত ব্যক্তির সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয় হয়। তা না হলে অথবা এমন ব্যক্তি গোসল দিতে না জানে তাহলে অন্য যে কোন বিশ্বস্ত পরহেজগার ব্যক্তি গোসল করাবে। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া)
১০। স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তাকে গোসল দিতে পারবে না, স্পর্শও করতে পারবে না, তবে দেখা নিষেধ নয়। (দুররুল মুখতার) জনসাধারণের মাঝে এটা প্রসিদ্ধ যে, স্বামী তার স্ত্রীর জানাযা কাঁধ নিতে পারবে না, কবরে নামাতে পারবে না, মুখ দেখতে পারবে না, এটা নিছক ভুল, শুধু গোসল করাতে পারবে না ও বিনা আবরনে শরীরের উপর হাত রাখা নিষেধ। (বাহারে শরীয়ত)
১১। অনেক লোক জুতা পরিধান করে জানাযার নামায পড়ে, অনেকে জুতার উপর দাড়িয়ে পড়ে। যদি জুতা পরিধান করে পড়া হয় তাহলে জুতা এবং জুতার নীচের মাটি উভয় পবিত্র হওয়া আবশ্যক। নয়তো তার জানাযার নামায হবে না।
১২। উল্লেখ্য আমি দেখেছি যে, জানাযার নামাযে সালাম ফিরানোর সময় হাত বাঁধা অবস্থায় সালাম ফিরাতে। কিন্তু তা একেবারেই ভুল। নিয়ম হলো, চতুর্থ তাকবীরের পর হাত খুলে সালাম ফেরাবে। (ফাতওয়ায়ে রযভিয়্যাহ- ৯ম খন্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা)
মসজিদের দোয়া প্রসঙ্গঃ
দুঃখজনক হলেও সত্য অধিকাংশ মসজিদ ও কিছু ধর্মীয় শিক্ষণীয় পুস্তকে মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার যে দোয়াটি দেখছেন তা সম্পূর্ণ দোয়া নয়। এটি সম্পূর্ণ দোয়ার শেষ অংশটুকু। নবীজির প্রতি সালাত ও সালাম সহ হলো পূর্ণাঙ্গ দোয়া। নবীজির সম্মান খচিত অংশটুকু বাদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালাই জানেন তাদের উদ্দেশ্য কি? মসজিদের প্রবেশ ও বাহিরের পূর্ণাঙ্গ দোয়াটি সকলের খেদমতে পেশ করছি। মনে রাখবেন হাদিসে বয়ান আছে, একটি মৃত সুন্নত জীবিত কারী ১০০ আল্লাহর রাস্তায় শহিদের মর্যাদা পায়।
মসজিদে প্রবেশ করার দোয়াঃ বিস্মিল্লাহি ওয়াচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহি আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি ওয়াফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।
মসজিদে বাহির হওয়ার দোয়াঃ বিস্মিল্লাহি ওয়াচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহি আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি ওয়াফতাহলি আবওয়াবা ফাদলিকা।
নিচে সংক্ষেপ করার লক্ষ্যে দুটি হাদিস পেশ করছিঃ
১। হযরত ফাতিমা আল-কুবরা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মসজিদে ঢুকতেন তখন মুহাম্মাদের (স্বয়ং নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতে, “রাব্বিগফিরলী যুনুবী ওয়াফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা”। যখন তিনি মসজিদ হতে বের হতেন তখনও মুহাম্মাদের (নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন: “রাব্বিগফিরলী যুনুবী ওয়াফতাহলী আবওয়াবা ফাদলিকা”। সহিহ তিরমিজি শরিফ : অধ্যায় মসজিদ, অনুচ্ছেদ : মসজিদে প্রবেশের দু’আ, হাদিস নং ৩১৪। সুনানে আবু দাউদ শরিফ : অনুচ্ছেদ : কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের সময় যে দু’আ পাঠ করবে। হাদিস নং: ৪৬৫। আহমাদ শরিফ : হাদিস নং: ১৫৬২৭। দারিমী শরিফ: হাদিস নং: ১৩৯৪, ২৬৯১। তাহক্কীক্ক আলবানী কিতাবে এই হাদিসটি সহিহ বলেছে। ইবনে মাজাহ : অধ্যায় মসজিদে প্রবেশের দুআ। ফাতিমাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, হাদিস নং : ৭৭১। একই অধ্যায় এর আবু হুমায়দ আস-সাঈদী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, হাদিস নং ৭৭২
২। ইবনে মাজাহ : অধ্যায় মসজিদে প্রবেশের দুআ। হাদিস নং : ৭৭৩, হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন সর্ব প্রথম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর সালাম পাঠ করে। অতপর যেন বলে: হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন। আর বের হওয়ার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর সালাম পাঠ করে যেন বলে : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা করুন। এই হাদিসটি বাদে অন্যান্য হাদিসে বের হওয়ার সময় সালাম পাঠ পর বলা আছে, হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলো খুলে দিন। (নিচে আরও কিছু দলিল: ফত্ওয়া -এ-শামী ১ম খন্ড ৩৬৩ পৃষ্ঠা। মিরআত শরহে মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড ৪৫০ ও ৪৫১ পৃষ্ঠা। ওহাবীদের গুরু ইবনে তাইমিয়্যা, আল কালিমুত তাইয়্যেব কিতাবের ৪০ পৃষ্ঠায়, ফি দুখুলিল মসজিদ ওয়াল খুরুজ মিনহু পরিচ্ছেদ উল্লেখ আছে।)
দৃষ্টি আর্কষণ করছি : আজ নবীকে মিলাদে দাড়িয়ে সালাম দিলে, দাড়িয়ে সালাম পাঠ করলে এক শ্রেণির মুসলমান বলে বেদায়াত, শিরক। আজ যখন এই হাদিসগুলো সিহা সিত্তার কিতাবে আমার দেখতে পাই যেখানে মসজিদে প্রবেশ ও বাহির কালেও নবী কে সালাম দিতে হয়, নবীর উপর দুরুদ পড়তে। তবে কেন মিলাদে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দিলে বেদায়াত হবে, শিরক হবে। মসজিদে প্রবেশ করার সময় কি আমরা দাড়িয়ে থাকি না বসে থাকি? অবশ্যই দাড়িয়ে এই সালাম দেই। যেখানে নবীর সম্মান সেখানে কেন তাদের এত আপত্তি? ভাবে দেখুন, কবর পাশে দিয়ে গেলে বলতে হয়, আস্সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর। কিভাবে বলছেন? কীভাবে দিলেন এই সালাম? কাকে দিলেন? এই কবরে কাফির, মুনাফিক, গুনাহগার ও মুমিন থাকতে পারে। আর আপনি আমি সালাম দিলাম পুরো কবর বাসীকে। তাও আবার দাড়িয়ে দাড়িয়ে। এখন কেন শিরক বা বেদায়াত এর কথা আসে না? কেন শুধু নবীর বেলায় এই সব ফত্ওয়া? ভেবে দেখুন তার ইসলামে বর্হিভূত কেন দল কি না? তার সঠিক হতে পারে?
খাবারের কয়েকটি সুন্নাতঃ
১। বসার সুন্নাত : খাবার খাওয়ার জন্য বসার একটি সুন্নাত এই যে, ডান হাঁটু দাঁড় করিয়ে ও বাম পা বিছিয়ে সেটার উপর বসে পড়বেন।
২। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকে ডান হাতে খাবে ও ডান হাতে পান করবে এবং ডান হাতে নেবে ও ডান হাতে দেবে। কারণ শয়তান বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে এবং বাম হাতে দেয় ও বাম হাতে নেয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩২৬৬)
৩। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয় বরকত খাবারের মধ্যভাগে অবতীর্ণ হয়, সুতরাং তোমরা এক পাশ থেকে খাবার খাও এবং মধ্যখান থেকে খেয়ো না। (তিরমিযী শরীফ, ৩য় খন্ড, ৩১৬ পৃ.)
৪। খাওয়ার ৫টি সুন্নাত: (১) নিজের সামনে থেকে খাবেন (২) কেউ সাথে খেলে, তার সামনে থেকে খাবেন না (৩) থালার মাঝখান থেকে খাবেন না, (৪) প্রথমে দস্তরখানা উঠানো হলে এরপর আহারকারীরা উঠবেন (৫) অন্যরাও যদি খাবারে অংশ নেন তবে ততক্ষণ পর্যন্ত হাত থামাবেন না, যতক্ষণ সবাই শেষ না করেন। (ফয়যানে সুন্নাত ১ম খন্ড)
৫। খানা খাওয়ার সময় শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করতে ভুলে গেলে পড়বেনঃ
“বিসমিল্লাহি আওয়া লাহু অ আখিরাহ” (তিরমিযী শরিফ, ১৮৫৮, আবু দাউদ- ৩৭৬৭)
৬। হযরত জাবির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম আঙ্গুলগুলো ও থালা চাটার নির্দেশ দিয়েছেন ও বলেছেন, “তোমাদের জানা নেই যে, খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। (মুসলিম শরীফ, ১১২২)
অন্য রেওয়াতে আছে, “যে থালা ও নিজের আঙ্গুলগুলো চাটে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার পেট পূর্ণ করে। (অর্থ্যাৎ দুনিয়াতে দরিদ্রতা থেকে রক্ষা পাবে, কিয়ামাতের ক্ষুধা থেকে নিরাপদ থাকবে) {তাবরানীর মুজমুআল কাবীর}
৭। হযরত জাবির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “গরম খাবার ঠান্ডা করে নাও, কারণ গরম খাবারে বরকত হয় না। (মুস্তাদরাক, হাদিস নং- ৭১২৫)
৮। খাবার ও চা ইত্যাদিতে ঠান্ডা করার জন্য ফুঁক মারবেন না, কারণ এতে বরকত শূন্যতা হয়। অধিখ গরম খাবার খাবেন না। খাওয়ার উপযোগী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। (রুদ্দুল মুখতার ৯ম খন্ড, ৪৯১ পৃষ্ঠা)
বিসমিল্লাহর ফজিলত
১। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর মাধ্যমে আরম্ভ করা হয় না, তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ফয়যানে সুন্নাত, ১ম খন্ড, ১পৃষ্ঠা)
২। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, হযরত উসমান (رضي الله عنه) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর ফজিলত জানতে চাইলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করলেন, “এট্ াআল্লাহ তায়ালার নাম সমূহের মধ্যে একটি নাম। আর আল্লাহ তায়ালার ইস্মে আযম এবং এর মধ্যে এমন নিকটবর্তী সম্পর্ক যেমন চোখের কালো অংশ ও সাদা অংশের মধ্যকার সম্পর্ক। (আল-মুস্তাদরাক, হাদিস নং- ২০৭১) ইস্মে আযম সহকারে দোয়া করলে, দোয়া কবুল হয়। উল্লেখ্য যে, বিসমিল্লাহ করুন বা কোন দোকানদার যদি বলে আমার তো আজ এখনো বিসমিল্লাহ-ই হয়নি। এমনটি বলা নিষেধ। (ফয়যানে সুন্নাত ১ম খন্ড, ২০পৃষ্ঠা)
৩। হারাম ও অবৈধ কাজের পূর্বে বিসমিল্লাহ কোন অবস্থাতেই পড়া উচিত নয়। ফাতাওয়ায়ে আলমগিরীর ২য় খন্ড ২৭৩ পৃষ্ঠায় আছে, “মদ পান করার সময়, ব্যভিচার করার সময় বা জুয়া খেলার সময় বিসমিল্লাহ বলা কুফরী।
৪। হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করা হয় না, ঐ খাবার শয়তানের জন্য হালাল হয়ে যায়। (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-২০১৭)
বিসমিল্লাহ পাঠের কয়েকটি উপকারী আমলঃ
১। যে মহিলার বাচ্চা বাঁচে না, তিনি বিসমিল্লাাহির রাহমানির রাহীম ৬১ বার লিখে বা লিখিয়ে নিজের নিকট রাখবেন (ইচ্ছা করলে তাতে বাতাস না ঢোকার জন্য প্লাষ্টিকে মুড়ে কাপড়, মোটা প্লাষ্টিক বা চামড়া দিয়ে সেলাই করে গলায় কিংবা হাতে বেঁধে নিতে পারেন) ইনশাআল্লাহ বাচ্চা জীবিত থাকবে। (ফয়যানে সুন্নাত, ১ম খন্ড ১০৩ পৃষ্ঠা) বিঃদ্রঃ আরবীতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লিখতে হবে। লিখার সময় যবর, যের ও পেশ ইত্যাদি লাগানোর প্রয়োজন নেই। আমি এখানে আরবী এবারত উল্লেখ করিনি।
২। ঘরের দরজা বন্ধ করার সময় স্মরণ করে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করে নিন। ইনশাআল্লাহ শয়তান ও দুষ্ট জীন ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী- ৬ষ্ঠ খন্ড,৩১২পৃষ্ঠা ও ফয়যানে সুন্নাত ১ম খন্ড, ১০৪ পৃ.)
৩। শোয়ার পূর্বে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করে ৩ বার বিছানা ঝেড়ে নিন। ইনশাআল্লাহ কষ্টদায়ক বস্তু, জীব-জন্তু হতে নিরাপত্তা লাভ হবে। (ফয়যানে সুন্নাত ১ম খ.)
গর্ভবতী মহিলার দুটি আমলঃ
১। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এটা কোন একটি কাগজে ৫৫ বার লিখে বা লিখিয়ে নিয়ে (আরবীতে লিখতে হবে) প্রয়োজন মত তাবিজের ন্যায় ভাঁজ করে মোম বা প্লাষ্টিক দিয়ে জাম করে কাপড়ে, রে´িন বা চামড়া দিয়ে সেলাই করে গর্ভবর্তী মহিলারা গলায় ঝুলাবে বা বাহুতে বাঁধবে ইনশাআল্লাহ গর্ভও ঠিক থাকবে এবং বাচ্চাও বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকবে। (ফয়যানে সুন্নাত ১ম খন্ড, ৭২১ পৃ.)
২। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ১১ বার কোন প্লেট বা কাগজে লিখে ধুয়ে গর্ভবতী মহিলাকে পান করান। ইনশাআল্লাহ গর্ভ নিরাপদে থাকবে। আর যে সমস্ত মহিলার বুকে দুধ নেই বা কম আছে তার জন্যও এই আমল উপকারী। (ফয়যানে সুন্নাত ১ম খন্ড, ৯২৪ পৃ.)
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ফাযেলে বেরলভী (رحمة الله) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আ’লা হযরত এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি উচুঁ পর্যায়ের আলেম এবং উচ্চ স্তরের অলি ছিলেন। যার সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখে তাহার পরিচয় দেওয়া যাবে। তিনি ছিলেন ৫৫টি বিষয় এর জ্ঞানী। যাহার সম্পর্কে বর্তমান থেকে শুরু করে তাহার সমকালীন আলেমরাও প্রশংসা করেছেন। আরব ও অনারব থেকে শুরু করে এমনকি দেওবন্দী আলেমগণও তাহার প্রশংসা করেছেন। তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রকৃতি আশেক। যত গরমই পড়–ক না কেন, তিনি কখনই পাগড়ী ও আচকান ছাড়া নামায পড়েন নাই। নবী করীম (ﷺ) এর সুন্নাত পরিপূর্ণ ভাবে পালন করতেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি প্রেম এমনই ছিল যে, খোস্তাকে রাসূলগণ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে কুটক্তি করত তখন তিনি তা শুনে কাঁদতেন। (সুবহানাল্লাহ) এখন প্রথমে তাহার সম্পর্কে তৎকালীন আলেমরা কি বলেছেন তা সংক্ষেপে কয়েকটি উল্লেখ করে, তাহার জীবনী ধারাবাহিক আলোচনা করব। আল্লাহ তায়ালা তাওফীক দান করুন। আমীন।
আরবের আলেমগণ যা বলেছেঃ
(১) শায়েখ আবদুল্লাহ ইবনে মোহাম্মাদ সাদ্দাকাহু ইবনে যিনী দাহলান জীলানী মাক্কী বলেছেন- সেই পবিত্র সত্বা যিনি ইহার১ সংকলক (আ’লা হযরত) কে ফজীলত ও কামালতের মাধ্যমে সম্মানিত করিয়াছেন এবং তাঁহাকে এই যুগের জন্য গুপ্ত রাখিয়াছেন এবং শেষে যথা সময়ে প্রকাশ করিয়া দিয়াছেন। (আদ-দৌলাতুল মক্কিয়া)
(২) শায়েখ মোহাম্মাদ মুখতার ইবনে আত্বারাদুল জাবী মাক্কী বলেছেন- নিশ্চয় সংকলক (আ’লা হযরত) বর্তমান যুগের মুহাক্ক্কি উলামায় কিরামদিগের বাদশা। ইহার সমস্ত কথা সত্য। ইনি যেন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজিজাগুলির মধ্যে একটি মুজিজা। যাহা এই অদ্বিতীয় ইমামের হাতে আল্লাহ তায়ালা প্রকাশ করিয়াছেন। (আদ-দৌলাতুল মক্কিয়া)
(৩) শায়েখ মোহাম্মাদ তাফিকুল আইউবিল আনসারীল মাদানী বলেছেন- মহাজ্ঞানী সংকলক এর নিকট আমি আশা রাখিতেছি যে, তিনি তাহার নেক দোয়াতে আমাকেও শামীল করিয়া রাখিবেন। কারণ, তাহার দোয়া হইল কবুল হইবার উপযুক্ত। আল্লাহ তায়ালা তাহাকে জীবিত রাখেন। কারণ, তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাচ্ছা প্রেমিকদিগের একজন। (আদ-দৌলাতুল মক্কিয়া) সংক্ষেপ করার লক্ষ্যে এখানে ৩টি বাণীই উল্লেখ করলাম। নয় তো আরো বহু বাণী উল্লেখ করা যেতো।
টাকীঃ ১. আদ-দৌলাতুল মক্কিয়া বিল মা’দ্দাতিল গায়বিয়া, এই গ্রন্থটি মক্কার জেলখানায় বসে আরবীতে রচিত। ভারভীয় দেওবন্দী ওহাবীদের চক্রান্তে মক্কা শরীফের জেলখানায় বসে মাত্র ৮ ঘন্টা সময়ের মধ্যে আ’লা হযরত (رحمة الله) উক্ত কিতাবখানা নবীর ইলমে গায়েবের উপর রচনা করেন। মক্কার গভর্ণর এর নির্দেশে আ’লা হযরত উক্ত কিতাবখানা লিখেন। গভর্ণর পান্ডুলিপি দেখে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইলমে গায়েবের দলিলাদি দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান এবং মক্কী ও মদীনা সহ ৭০জন আলেম এতে একমত পোষণ করে তাদের মতামত সহ স্বাক্ষর প্রদান করেন ও আ’লা হযরতের প্রসংশা করেন।
দেওবন্দীগণ যা বলেছেনঃ
(১) মাওলানা আশরাফ আলী থানুভী সাহেব বলিতেন- যদি আমি মাওলানা আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভীর পিছনে নামায পড়িবার সুযোগ পাইতাম, তাহা হইলে আমি পড়িয়া নিতাম। (্উসওয়ায় আকাবির দেওবন্দে- ১৮ পৃষ্ঠা ও “মাহে নূর” মাসিক পত্রিকা, দিল্লী, এপ্রিল সংখ্যা, ২০০৭ সাল, পৃষ্ঠা ৩৮)
(২) মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস তাবলিগী জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা বলিতেন- যদি কাহারো হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বাত শিখিতে হয়, তাহা হইলে মাওলানা বেরলভীর কাছ থেকে শিখিতে হইবে। (“মাহে নূর” মাসিক পত্রিকা, দিল্লী, এপ্রিল সংখ্যা, ২০০৭ সাল, পৃষ্ঠা ৩৮)
(৩) আবুল আলা মাওদুদী জামায়াতী ইসলামীর প্রতিষ্ঠিতা বলেছেন- মাওলানা আহমদ রেযা খাঁন মরহুম মগফুর আমার দৃষ্টিতে একজন অসাধারণ জ্ঞান ও দূরদর্শিতার অধিকারী সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি মুসলিম মিল্লাতের একজন উচুঁ পর্যায়ের সম্মানিত শীর্ষ স্থানীয় নেতা। যদিও কতিপয় মতামত ও ফতোয়া সম্পর্কে তার সাথে আমার বিরোধ রয়েছে। তবুও আমি তার প্রভূত দ্বীনি খেদমতকে স্বীকার করি। (আল মীযান- ১০পৃষ্ঠা) এভাবে আরো প্রসংশা উল্লেখ করা যাবে সংক্ষিপ্ত করার লক্ষ্যে এখানেই ক্ষান্ত হলাম।
আ’লা হযরত (رحمة الله) এর উপর গবেষণাঃ
অনুসনন্ধানে পাওয়া যায় যে, ২০১৬ সন পর্যন্ত ইমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খান বেরেলভী (رحمة الله) এর উপর প্রায় ২৩ জনের অধিক গবেষক পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেছেন। তার মধ্যে ৪টি উল্লেখ করছি :
(১) ডিগ্রির শিরোনামঃ কানুযুল ইমান আওর দিগর মা’রূফ উর্দু কুরআনি তরাজিম কা তাকাবুলি জায়েজাহ। গবেষকঃ প্রফেসর ড. মজিদ উল্লাহ কাদেরি। তত্ত¡াবধায়কঃ প্রফেসর ড. মাসউদ আহমেদ। ইউনিভার্সিটিঃ কারাচি ইউনিভার্সিটি, পাকিস্তান।
ডিগ্রির অর্জনের সনঃ ১৯৯৩খ্রিঃ
(২) ডিগ্রির শিরোনামঃ ইমাম আহমদ রেযা আওর উনকি মাকতুবাত
গবেষকঃ ড. গোলাম জাবের শামস মিসবাহি তত্ত¡াবধায়কঃ প্রফেসর ড. আলিম উল্লাহ হালি। ইউনিভার্সিটিঃ মগ্ধা ইউনিভার্সিটি, বিহার, ভারত। ডিগ্রির অর্জনের সনঃ ২০০৪খ্রিঃ
(৩) ডিগ্রির শিরোনামঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামা এর শানে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ খান (রা) রচিত না’ত সাহিত্যঃ একটি বিশ্লেষণ
গবেষকঃ ড. মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন তত্ত¡াবধায়কঃ ড. মহাম্মদ আবদুর রশিদ
ইউনিভার্সিটিঃ ঢাকা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা, বাংলাদেশ। ডিগ্রির অর্জনের সনঃ ২০১৬খ্রিঃ
২৯
(৪) ডিগ্রির শিরোনামঃ
গবেষকঃ ড. মিসেস উশা সানিয়াল। ইউনিভার্সিটিঃ কলম্বো ইউনিভার্সিটি, নিউইয়র্ক, আমেরিকা। ডিগ্রির অর্জনের সনঃ ১৯৯০খ্রিঃ
আ’লা হযরত (رحمة الله) এর উপর এম ফিল ডিগ্রিঃ
(১) ডিগ্রির শিরোনামঃ আল ইমাম আহমদ রেযা খান ওয়া আসরুহু ফিল ফিকহিল হানফি। গবেষকঃ মাওলানা মুশতাক আহমদ শাহ আল আজহারি
ত্ত¡াবধায়কঃ ড. আবদুল ফাত্তাহ মুহাম্মদ নাজ্জার। ইউনিভার্সিটিঃ আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর। ডিগ্রির অর্জনের সনঃ ১৯৯৭খ্রিঃ
(২) ডিগ্রির শিরোনামঃ মুহাম্মদ আহমদ রেযা কি আরবি জবান ওয়া আদব মে খিদমাত।
গবেষকঃ প্রফসর ড. মাহমুদ হোসাইন বেরেলভী। তত্ত¡াবধায়কঃ ড. আবদুল বারি নদভি। ইউনিভার্সিটিঃ আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, ভারত। ডিগ্রির অর্জনের সনঃ ১৯৯০খ্রিঃ
আ’লা হযরতের উপর এম ফিল গবেষণা এবং এম এড পর্যায়ে শিক্ষানীতির উপর লিখিত গবেষণাধর্মী প্রবন্ধও লিখা হয়েছে। এমনকি ডি লিট গবেষণা থিসিস পর্যন্ত হয়েছে। যেমন-
শিরোনামঃ ইমাম আহমদ রেযা কি আদবি খিদমাত। গবেষকঃ মাওলানা মুফতি ড. মুহাম্মদ মুকাররম আহমদ। ইউনিভার্সিটিঃ জওহরলাল ইউনিভার্সিটি, নিউদিল্লি, ভারত। রেজিস্ট্রেশন অনুমোদনঃ ১৯৯৮খ্রিঃ (এটি ডি লিট গবেষণা)
আ’লা হযরত এর শুভ জন্মঃ
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী (رحمة الله) ১০ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী, ১৪ই জুন ১৮৫৬ ইং রোজ শনিবার যোহরের সময় বেরেলী শহরের যাচুলী গ্রামে পাঠান বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ মাওলানা শাহ রেযা নকী আলী খান (رحمة الله) তিনিও ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলেম। তার পিতা জন্মের সময় নাম রাখেন “মুহাম্মদ আহমদ মিয়া”। কিন্তু তার পিতা আহমদ নামে ডাকলেও তার মাতামহ ডাকতেন “আম্মান মিয়া” বলে। আ’লা হযরত এর দাদাজান মাওলানা রেযা আলী খান (رحمة الله) তার নাম রাখলেন “আহমদ রেযা”। আর তিনি জগতের কাছে পরিচিত “আ’লা হযরত” নামে। তবে তিনি নিজের নামের সাথে “আব্দুল মোস্তফা” লিখেতেন। “আব্দুল মোস্তফা” মানে নবীর গোলাম।
বংশ পরিচয়ঃ
তাঁর পূর্ব পুরুষগণ কান্দাহারের অধিবাসী ছিলেন। মাওলানা শাহ সাঈদুল্লাহ খান২ (رحمة الله) মুঘল শাহ সুলতান মুহাম্মদ ও নাসির সাহেবের সাথে লাহোর গমন করেন এবং সেখানে সম্মানিত সরকারী পদে অধিষ্ঠিত হন। মাওলানা শাহ সাঈদুল্লাহ খান সাহেব ও তার পরবর্তী বংশধরগণের মধ্যে যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ও ওলী ছিলেন। তাঁর ৬ষ্ঠ পুরুষ পরেই ফকীহ জামান মাওলানা শাহ নকী আলী খানের ঔরসে ইমাম আহলে সুন্নাত শাহ আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী জন্মগ্রহণ করেন। তার বংশ তালিকা নিম্ন প্রদান করা গেল-
আ’লা হযরত আমহদ রেযা বিন মাওলানা মুহাম্মদ নকী আলী বিন মাওলানা রেযা আলী বিন মাওলানা মুহাম্মদ কাজেম বিন মাওলানা মুহাম্মদ আযন বিন সা’দাত ইয়ার খান বিন সাঈদুল্লাহ খাঁন (رحمة الله)।
আ’লা হযরতের শৈশবকালের কয়েকটি ঘটনা
সাধারণত প্রত্যেক যুগের বাচ্চাদের অবস্থা এই যে, ৫/৬ বৎসর পর্যন্ত তাদের কোন কথার হুশ থাকে না এবং তারা কোন বিষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছাতে পারে না। তবে আ’লা হযরত এর শৈশবকাল খুবই গুরুত্ব বহন করে। যেমন- ৪ বছর বয়সেঃ মাত্র ৪ বছরের ছোট্ট বয়সে কুরআন শরীফ সম্পূর্ণ নাযেরা (দেখে দেখে) পড়ার নেয়ামত লাভে ধন্য হন।
৩০
৬ বছর বয়সেঃ রবিউল আওয়ালের পবিত্র মাসে মিম্বরে আরোহণ করে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিষয় বস্তুর উপর এক বড় মাহফিলে চমৎকার বয়ান করে ওলামায়ে কেরাম এবং মাশায়েখদের প্রশংসা এবং বাহবাহ অর্জন করেন। অনেক বর্ণনা মতে, তিনি উক্ত মাহফিলে ২ ঘন্টার মতে বয়ান করেছিলেন।
৬ বছর বয়সে গাউসে পাকের প্রতি ভালোবাসাঃ আ’লা হযরতের শৈশবকালের যত ঘটনা তার মধ্যে এই ঘটনাটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে, ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী (رحمة الله) মাত্র ৬ বছর বয়সে জানিয়ে নিয়েছিলেন যে, বাগদাদ শরীফ ভারতের কোন দিকে। তিনি ওই সময় হতে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আর কোন দিন বাগদাদ শরীফের দিকে পা করেন নাই। (সাওয়ানেহ আ’লা হযরত- ১১৭পৃ.)
৮ বছর বয়সেঃ তিনি জীবনের প্রথম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দীদার লাভ করে মাত্র ৮ বছর বয়সে। তিনি স্বপ্ন দেখেন, তৎকালীন বিখ্যাত আলেম ও অলি মাওলান কাফী (رحمة الله) তাকে বলছেন, হে আহমদ রেযা! তুমি ঐ ঘরে প্রবেশ করে, ঐ ঘরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ এনেছে। আ’লা হযরত উক্ত ঘরে প্রবেশ করলে দেখতেন পান নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মা আমেনার খুলে বসে আছেন। (সুবহানাল্লাহ)।
৮ বছর বয়সে লিখেন প্রথম কিতাবঃ আ’লা হযরত তিনি জীবনের প্রথম কিতাবও লিখে ছিলেন এই ৮ বছর বয়সে। আরবী কিতাব “হেদায়াতুন নাহু” এর ব্যাখ্যা লিখেছিলেন।
১৩ বছর বয়সে জীবনের প্রথম ফতোয়া লিখেনঃ আ’লা হযরত (رحمة الله) এর যখন মাত্র ১৩ বৎসর ১০ মাস ৪ দিন, তখনই পাঠ্য শিক্ষায় শেষ বর্ষ সনদ অর্জন করেন। সেই সময় ২১টি বিয়ষের পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করেন। এই দিনই তিনি এক ব্যক্তির আবেদন ক্রমে “রাদাআত” বা স্তন্যপান সম্পর্কীয় এক জটিল বিষয়ে ফতোয় দান করেন। তার লিখিত ফতোয়াটি সঠিক ও নির্ভুল দেখে তার পিতা তাকে মসনাদে ইফ্তা তথা ফতোয়া দানের আসনে সমাসীন করান এবং তাকে ফতোয়া দানের ক্ষমতা অর্পন করেন।
আ’লা হযরতের প্রথম রোজাঃ আ’লা হযরত (رحمة الله) এর জীবনের প্রথম রোজা রাখিবেন। একটি ঘরে রাখা হয়েছিল ইফতারের বহু প্রকার খাদ্য এবং পায়েস। যখন বেলা দুপুর হয়ে গেল। ছেলের কষ্ট হচ্ছে ভেবে তাহার পিতা তাহার হাত ধরিয়া ঐ কামরায় মধ্যে প্রবেশ করেন এবং দরজা বন্ধ করে দিয়ে একটি পায়েসের পিয়ালা তাহার হাতে দিযে বললেন- তুমি খাইয়া নাও। আ’লা হযরত বললেন: আমি রোজা করিতেছি। কেমন করে খাইবো? বুযুর্গ পিতা বললেন- শিশুদের রোজা এই রকম হয়। তুমি খেয়ে ফেল। দরজা বন্ধ রয়েছে। কেউ তোমাকে দেখতে পারবে না। আ’লা হযরত বললেন: যাহার হুকুমে রোজা রেখেছি তিনি তো দেখতে পাচ্ছেন। ইহা শুনে পরম পিতার চক্ষুতে অশ্রæ এসে যায়। পুত্রকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ¯েœহমায়া হাত মস্তকে বুলিয়ে বলে উঠেন- “বেটা, তোমার রোজা রাখা স্বার্থক, তুমি ধন্য। (হায়াতে আ’লা হযরত)
শৈশবে আ’লা হযরত এর স্মরণশক্তিঃ আ’লা হযরত (رحمة الله) নিজেই বলেছেন যে, আমার উস্তাদ যার থেকে আমি ইবতেদায়ী কিতাব সমূহ পড়তাম। যখন আমাকে সবক পড়ানো হত। আমি এক দু’বার দেখে কিতাব বন্ধ করে দিতাম। যখন সবক শুনতেন তখন অক্ষরে অক্ষরে শব্দে শব্দে শুনিয়া দিতাম। প্রতিদিন এই অবস্থা দেখে তিনি খুবই আশ্চর্য হতেন। তিনি একদিন আমাকে বললেন: “প্রিয় বৎস আহমদ! তুমি বল, তুমি কি মানুষ না জ্বিন? আমার পড়াতে দেরী হয় কিন্তু তোমার মুখস্থ করতে দেরী হয় না!” তিনি বললেন: আল্লাহর তায়ালার জন্য সকল প্রশংসা, আমি মানুষ। তবে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়েছি। (হায়াতে আ’লা হযরত ১ম খন্ড, ৬৮পৃষ্ঠা)
আরো একটি অসাধারণ স্মৃতি শক্তির ঘটনাঃ এই ঘটনাটি আ’লা হযরতের প্রাপ্ত বয়সের। একবার আ’লা হযরত মাওলানা ওয়াছি আহমদ মুহাদ্দিস সুরতী সাহেবের নিকট মেহমান হন। আলাপের এক পর্যায়ে একটি কিতাবের নাম উল্লেখ করা হলে আ’লা হযরতের বিশাল লাইব্রেরিতে কিতাবটি না থাকায় ২ খন্ড বিশিষ্ট বিরাটকার কিতাবটি ধার নেন। রাত গভীর হওয়ায় এক ছাত্রের আবেদনে সেদিন আ’লা হযরত মাওলানার বাড়িতে অবস্থান করেন। পরদিন ফিরার সময় সুরতী সাহেবকে কিতাবখানা ফেরত দিলে, তিনি এর কারণ জানতে চান। উত্তরে আ’লা হযরত বলেন: গতকাল বাড়ী না ফেরার সুযোগে রাত্রে কিতাবখানা শেষ পর্যন্ত একবার দেখে নিয়েছি। মুহাদ্দিস সুরতী সাহেব আশ্চার্যন্বিত হয়ে আরয করলেন, একবার দেখায় কি যথেষ্ট? আ’লা হযরত (رحمة الله) বললেন: “আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে আগামী ২/৩ মাস পর্যন্ত তো ফাতওয়া প্রণয়ণের ক্ষেত্রে যেখানে যেখানে এই কিতাবের উদ্ধৃতির প্রয়োজন হবে ইনশাআল্লাহ, তা মুখস্থ লিখে দিতে পারবো। গোটা কিতাবের বিষয়বস্তু ও কথাগুলো তো সারা জীবনই মুখস্থ থাকবে। (তাজাল্লিয়াতে ইমাম আহম রেযা)
আ’লা হযরতের শাদী মোবারকঃ
১২৯১ হিজরীতে তিনি যখন ১৯ বৎসরে পদার্পণ করলেন তখন তার বিবাহের জন্য পাত্রী খোঁজা হলো। তার ফুফা হযরত শেখ ফজল হোসাইন সাহেবের মেঝো সাহেবজাদী “এরশাদ বেগম” সাহেবাকে তার পাত্রী হিসাবে ঠিক করা হলো। কোন এক মোবারক দিনে আকদে মাসনুন অনুষ্ঠিত হল। তার এ শাদী মোবারকের মধ্যে আহকামে শরীয়াহ সুনানে নববীয়ার পরিপূর্ণ সন্নিবেশ ছিল। যারা এ শাদীয়ে মোবারক দেখেছেন তারা বলেন, শরীয়তের আদেশ অনুয়ায় হলে এ রকমই হবে। তাহার স্ত্রী সাহেবা শরীয়তের আহকামে প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। নামায রোজার খুব পাবন্দ ছিলেন। উত্তম চরিত্রের অধিকারীনি ছিলেন। সংসারের সকল কাজ ঠিকঠাক ভাবে পালন করতে আবার আ’লা হযরতের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন। (ইমাম আহমদ রেযা এর জীবন ও কারামত)
আ’লা হযরত এর আওলাদগণঃ
আ’লা হযরত কেবলার ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে মোট ৭ জন সন্তান ছিল। দুই ছেলের মধ্যে (১) হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা হামেদ রেযা খাঁন। (২) মুফতীয়ে আজম হিন্দ মাওলানা মোস্তফা রেযা খাঁন। বিঃদ্রঃ আ’লা হযরত এর মেয়েদের নাম এখানে উল্লেখ করছি না।
কিতাব রচনায় আ’লা হযরতঃ
আ’লা হযরত ৭০টির বিষয়ে প্রায় ১৪০০শ কিতাব রচনা করেছেন। তার রচনা মধ্যে “ফাতাওয়ায়ে রযভিয়্যাহ” সুবিখ্যাত একটি কিতাব। তিনি এই কিতাবটি ১২ খন্ডে লিখে শেষ করেছিলেন। বর্তমানে লাইব্রেরিতে এটি ৩০ খন্ডে পাওয়া যায়। “ফাতাওয়ায়ে রযভিয়্যাহ” যার সর্বমোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ২১৬৫৬টি, সর্বমোট প্রশ্নের উত্তর ৬৮৪৭টি এবং সর্বমোট রিসালা হল ২০৬টি (অর্থ্যাৎ ছোট কিতাব)। বাতিলদের আকিদা খন্ডনে তিনি ৪৫০শ কিতাব লিখেছেন। উল্লেখ্য আ’লা হযরত (رحمة الله) এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলে যে, তিনি কখনো ডান হাতে বাতিল ফেরকার কথা লিখতেন না। তিনি তাদের আকিদার খন্ডন ও তাদের কথা লিখতেন বাম হাত দিয়ে। কারণ জিজ্ঞেসা করলে, আ’লা হযরত উত্তর দিয়েছিলেন- যে হাত দিয়ে আমি আমার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শান লিখি, সেই হাত দিয়ে গোস্তাখে রাসূলদের কথা আমি কি করে লিখবো। তাই বাম দিয়ে লিখি। (সুবহানাল্লাহ! কি অপরুপ নবী প্রেম)
হাদিস পড়ানোর সময় নবীর দীদার নসীবঃ তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এত ভালোবাসতেন যে, একবার তিনি বসে বসে হাদিস পড়াচ্ছেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দীদার নসীব হয়ে গেলো। তিনি দেখলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সামনে উপস্থিত। তখন তিনি সাথে সাথে সম্মানার্থে দাড়িয়ে গিলেন। তার পর থেকে আর কখন তিনি হাদিস পড়ানোর সময় বসে পড়াতেন না। (ইমাম আহমদ রেযা এর জীবন ও কারামত)
৩২
“হাদায়েকে বখশিশ শরীফ” আ’লা হযরতের নবী প্রেমের বাস্তব নমুনাঃ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসায় লিখিত তার বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ “হাদায়েকে বখশিশ শরীফ”। যেখানে তিনি অসংখ্য নাতে রাসূল লিখেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তাহার অগাদ ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে উক্ত গ্রন্থে। তিনি তার জীবনে কখনো দুনিয়ার কোনো রাজা-বাদশার জন্য কবিতা লিখেন নি। একবার আ’লা হযরতকে “নানপারা” এর নবাব আ’লা হযরতকে তার প্রশংসায় একটি কিতাব লিখতে বলেন। তখন আ’লা হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে একটি নাত লিখলেন। উক্ত নাতের এক জায়গায় লিখেন-
“করোঁ মাদাহে আহলে দোয়াল রেযা, পড়ে উস বালা মে মেরী বুলা,
মাই গদা হোঁ আপনে করীম কা, মেরা দ্বীন পারায়ে নান নেহী।”
অর্থ - ধনবানে গুণ রেযা নাহি গায়, কীবা কাজ জড়াবে সে সেই বালায়,
নিজ মুনিবে আমি ডেকে যাই, মম দ্বীনও তো নয় “নানপারায়”।
উর্দুতে নান মানে রুটি আর পারা মানে টুকরো। অর্থ্যাৎ আ’লা হযরত “নানপারা” শব্দটি কে উল্টিয়ে বলাতে অর্থ হলো- আমার দ্বীন তো রুটির টুকরো নয়, যে কারণে আমি সম্পদশালীদের তোষামোদ করতে থাকবে। আমি তো উভয় জাহানের সুলতানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারের ভিখারী। দুনিয়াতে আমার আর কারো প্রয়োজন নেই। লক্ষ্য করুন, কি বুদ্ধিমত্ত¡ার সাথে, কত চমৎকার করে ঐ নবাবের তিরষ্কার করলেন। তার এলাকার নাম নিয়ে, তাকে উল্টিয়ে লিখে জানিয়ে দিলেন আমি তোমাদের মুখাপেক্ষী না।
আ’লা হযরতের স্বয়ং পীরের বাণীঃ
আ’লা হযরতের বাইয়াত হওয়ার ঘটনাটি অনেক লম্বা, তাই সংক্ষেপে লিখছি। তিনি তার এক আলেম বন্ধুর পরামর্শ বাইয়াত হওয়ার জন্য আ’লা হযরত এর পিতা সহ মারেহেরা শরিফ সৈয়দ শাহ আলে রাসূল (رحمة الله) এর দরবারের যান। সেখানে হাজির হতেই সৈয়দ শাহ আলে রাসূল (رحمة الله) আ’লা হযরতকে লক্ষ্য করে বলেন; আসুন! আমি তো কয়েক দিন ধরে আপনার অপেক্ষায় রয়েছি। তারপর আ’লা হযরত ও তার পিতামহ উভয় তার হাতে বাইয়াত হন। আস সাথে সাথেই তাদেরকে সমস্ত সিলসিলার খিলাফত দেন। এতে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলেন। কেউ আর সাহস করে বলতে পারছেন যে, এমনটি কেন করলেন। তখন সৈয়দ শাহ আলে রাসূল (رحمة الله)এর নাতি সৈয়দ শাহ আবুল হোসাইন আহমদ নূরি মিয়া তার দাদাজান কে আরয করলেন, হুজুর এ ছোট্ট বাইশ বছরের ছেলের উপর এত বড় দয়া! একটি সিলসিলার নয়; বরং সমস্ত সিলসিলার খেলাফত দিলেন একি রহস্য? আমরা তো জানি আপনার দরবার থেকে খেলাফত পাওয়া অনেক কঠিন। তখন সৈয়দ শাহ আলে রাসূল (رحمة الله) বললেন- “তুমি মাওলানা আহমদ রেযা সম্পর্কে কি জান? অন্যান্যরা এখানে অপবিত্র কলব নিয়ে আসে, ফলে কঠোর সাধনা করিয়ে এদেরকে তৈরি করতে হয় বলে খেলাফত অর্জনের সময় লাগে। কিন্তু এরা দুজন পবিত্র কলব নিয়ে আমার নিকট এসেছে। এরা তো তৈরি হয়ে এসেছেন। এদের কেবল নিসবত বা শিষ্যত্বের প্রয়োজন। এখানে এসে তাও অর্জন হয়ে গেলো। তখন তিনি অশ্রæসিক্ত নয়নে আরো বলেন- “আমি এত দিন চিন্তায় ছিলাম যে, কাল কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, হে আলে রাসূল! তুমি আমার জন্য কি এনেছো? আজ আমার সেই চিন্তা দূরীভুত হলো। আমি উত্তরে বলব, হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে আহমদ রেযাকে নিয়ে এসেছি। (আ’লা হযরত এর জীবন ও কারামত)
৩৩
গণিত শাস্ত্রে আ’লা হযরতঃ
আ’লা হযরতের শুধু ইলমে দ্বীনেরই জ্ঞান ছিল না। এছাড়াও আ’লা হযরতের ৫৫টি বিষয়ের জ্ঞানী ছিলেন। তেমন একটি ঘটনা গণিতের সমাধানের ব্যাপারে রয়েছে। আলিগড় বিশ্ব বিধ্যালয় (ভারত) এর ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর জিয়া উদ্দিন, যিনি গণিত শাস্ত্রে বিদেশী ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং স্বর্ণ পদকও লাভ করেছিলেন। একবার কোন এক গাণিতিক সমস্যার সমাধানের জন্য পেরেশান হয়ে পড়েন। তিনি এর সমাধানের জন্য জার্মান যেতে চাইলেন। তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার সুলাইমান আশরাফ তিনি অনুরোধ করলেন এই সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি আমার পীরের কাছে একবার যান। প্রথম তিনি রাজি না হলেও বেরেলী শরীফে আগমন করেন। আ’লা হযরত তাকে বললেন:: আপনার প্রশ্œটা বলুন। ডক্টর জিয়া উদ্দিন আ’লা হযরতকে বিস্তারিত বললেন। প্রশ্নটা শুনে আ’লা হযরত সাথে সাথেই তার সন্তোষজনক উত্তর দিয়ে দিলেন। তার উত্তর শুনে ডক্টর জিয়া উদ্দিন কিছুক্ষণ অবাক হয়ে রইলেন। তারপর: হযরত এ প্রশ্নের সমাধানের জন্য আমি জার্মান যেতে ইচ্ছা করেছিলাম, কিন্তু আমাদের ধর্ম বিভাগের মাওলানার অনুরোধে এখানে আসলাম। আপনার উত্তর শুনে মনে হচ্ছে, আপনি সমস্যাটার সমাধান যেন বইতে নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছেন। (হায়াতে আ’লা হযরত)
মাত্র এক মাসে কুরআন শরীফ মুখস্থঃ
আ’লা হযরতের এক বন্ধু চিঠির মাধ্যমে তাকে হাফেজ বলেছিলেন। হযরত আইয়ুব আলী সাহেব বর্ণনা করেন, একদিন আ’লা হযরত (رحمة الله) বলেন: “আমার সম্পর্কে কিছু অনবহিত লোক আমার নামের আগে হাফেজ লিখে থাকেন, অথচ আমি পবিত্র কুরআনের হাফেজ নই।” যে দিন আ’লা হযরত একথা বলেছেন, সেদিন থেকে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ মুখস্থ করা শুরু করে দেন এবং ইশার নামাযের জন্য অযু করার পর থেকে জামাআত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত (প্রায় ৩০ মিনিট সময়) তিনি কুরআন শরীফ মুখস্থ করার জন্য সময় নির্ধারণ করে নেন। এভাবে তিনি দৈনিক এক পারা করে মাত্র ৩০ দিনে ৩০ পারা কুরআন শরীফ হিফজ করা শেষ করেন। আ’লা হযরত (رحمة الله) বলেন, এভাবে আমি কুরআন মুখস্থ করি যেন আল্লাহর ঐসব বান্দাদের কথা যেন ভুল প্রমাণিত না হয়।
রাসূলের সুন্নাতের পাবন্দী ও বড় কারামতঃ
আ’লা হযরতের খ্যাতি যখন পাক-ভারত থেকে শুরু করে আরব-অনারব পর্যন্ত পৌছে গেছে। তখন তার এ সুনাম ও কারামতের কথা শুনে এক ভক্ত তার দরবারে হাজির হলো, এই নিয়তে যে তিনি আ’লা হযরতের কোন একটি কারামত দেখবেন। ঐ ভক্ত আ’লা হযরতের দরবারে কিছু দিন কাটান এই নিয়তে যে, কোন একদিন হয়তো তার নসীব হবে আ’লা হযরতের কারামত দেখার। কিছু দিন যাওয়ার পর যখন ঐ ভক্ত কোন কারামত দেখতে পেলো না, তখন সে হতাশ হয়ে আ’লা হযরতের দরবার থেকে কিছু না বলেই কোন এক নামাযের জামাতের পর চলে যাচ্ছিল। তখন ঐ ভক্তকে আ’লা হযরত ডাক দিয়ে দাড়াঁতে বলেন, এবং জিজ্ঞেস করেন- এখানে কেন এসেছিল আর কোনই বা এতদিন থাকার পর কিছু না বলে চলে যাচ্ছ? উত্তর ঐ ভক্ত তার মনের বাসনা খুলে বললেন। ইমামে এশক্বে মহব্বত, ফানা ফির রাসূল, আশেকে নবী, আ’লা হযরত বললেন- হে যুবক! তুমি আমার এখানে অবস্থানরত আমাকে কোন দিন, কোন সময় সুন্নাত তরীকা বিরুদ্ধী কাজ করতে দেখেছো? তুমি কি আমাকে কখন সুন্নাত তরক করতে দেখেছো? উত্তরে ঐ ভক্ত বলল- না হুজুর, আপনাকে এমন পাইনি। তখন আ’লা হযরত বললেন- হে যুবক! এর থেকে বড় কারামত আর কি হতে পারে, যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত তরিকার উপর অটল থাকতে পারে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের উপর অটল থাকাই হলো বড় কারামত। (সুবাহানাল্লাহ) আজ তো এমন অলি পাওয়া যায় যে, তারা মানুষকে কারামত দেখাচ্ছে কিন্তু নবীর সুন্নাত তো দূরের কথা তাদের মাঝে ফরযই পাওয়া যায় না। তাদের অনুসরণ থেকে দূরের থাকুন।
৩৪
ট্রেন বন্ধ রইলঃ
আ’লা হযরত একবার রেলযোগে কোথাও যাচ্ছিলেন। ট্রেন আসতে দেরি হওয়ায় আসরের সময় হয়ে গিয়েছিল। ট্রেনও চলে আসল, তখন আ’লা হযরত বলল আসরের সময় হয়ে গেছে আমি নামায পড়ব। সাথের লোক জন বলল হুজুর তাতে দেরি হয়ে যাবে আর ট্রেন চলে যাবে। আ’লা হযরত বললেন- না, আমি আগে নামায পড়ব। তিনি প্লাটফর্মে নামাযে দাড়িয়ে গেলেন। ওদিকে ট্রেনটি প্লাটফর্ম ছেড়ে যেতে এখন পারেনি হঠাৎ ট্রেনের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল। ট্রেনের কর্তৃপক্ষ দেখলেন ইঞ্জিনে কোন সমস্যা নেই কিন্তু ট্রেন চলছে না। ইতিমধ্যে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ বলতে লাগল, ওখানে একজন বুর্যুগ ব্যক্তি নামায পড়ছেন। হয়তো ওনাকে রেখে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। তখন ষ্টেশন মাস্টার সহ আ’লা হযরত এর নিকট আসলেন। আ’লা হযরত নামায শেষ করলে, ষ্টেশন মাষ্টার ঘটনাটি খুলে বলে দোয়া চাইলেন। তখন আ’লা হযরত বললেন- “তোমরা ইঞ্জিনের পূজা কর, আর আমি ঐ মহা আল্লাহর ইবাদত করি। যার হুকুম ছাড়া কিছুই হয় না। আমি আল্লাহ কে খুশি করার জন্য নামায দাড়ালাম আর মহা আল্লাহ তোমাদের ইঞ্জিনকে বিকল করে দিলেন, আমাকে খুশি করার জন্য। যাও, আল্লাহর নামে ইঞ্জিন চলবে। তখন ট্রেনের ইঞ্জিন চলাতে সক্ষম হয়। আ’লা হযরত ঐ ট্রেনে চড়েও তার গন্তব্য যান। (সুবহানাল্লাহ)
আ’লা হযরত এর কাফশঃ
জনাব আবদুল আলী রেজভী সাহেব বর্ণনা করেন, আমার পিতা মাওলানা আবদুল হাই ইবনে আবদুল লতিফ সাহেব বলেন- ৮ই জমাদিউল আওয়াল ১৩৩২ হিজরী রোজ সোমবার শেষ রাতে তথা তাহাজ্জুদের নামাজের সময় ফিলিভেতে মাওলানা ওয়াছি আহমদ মুহাদ্দিস সুরতী সাহেবের ইন্তেকাল করলেন। এদিকে আ’লা হযরত বেরলভী শরীফে ঐ সময় তার দুই সাহেবজাদাকে বললেন, মাওলানা ওয়াছি আহমদ মুহাদ্দিস সুরতী সাহেবের এখন ইন্তেকাল হয়েছে। (সুবহানাল্লাহ আ’লা হযরত (رحمة الله) এর কাশফ কারামত দেখুন। যে রাতে সুরুতী সাহেব ফিলিভেতে ইন্তেকাল করলেন ঐ রাতে বেরলভী শরীফে আ’লা হযরত তার দুই সাহেবজাদাদের খবর দিয়ে দিলেন।)
আ’লা হযরত এর আরো একটি কারামতঃ
হযরত মন্না মিয়া বর্ণনা করেন- আমার পীর ও মুর্শিদ আ’লা হযরত মসজিদে হতে নামায শেষ করে হাটতে বের হলেন। পথে দেখতে পেলেন, এক গলিতে কিছু মানুষের ভীড়। একজনকে আ’লা হযরত ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এখানে কিসের ভীড়? জবাব দিল- এক অমুসলিম যাদুকর তার যাদু প্রদর্শন করছে। সে ৩/৪ কিলো পানি, সামান্য ওজনের একটা কিছুতে নিয়ে উঠাচ্ছে। ইহা শুনার পর আ’লা হযরত কেবলাও ঐ সমাগমস্থলে গেলেন এবং ঐ জাদুকরকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি শুনেছি তুমি নাকি ৩/৪ পানি সামান্য ওজনের কোন পাত্রে নিয়ে উঠাচ্ছে? যাদুকর বলল- জ্বি হ্যাঁ। আ’লা হযরত বললেন- অন্য জিনিসও কি ওঠাতে পারো? সে বলল- যা দিবেন তাই উঠাতে পারবো। তখন আ’লা হযরত নিজের জুতা পা হতে খুলে তাকে দিয়ে বললেন- এই জুতা উঠানো তো দূরের কথা, আগে তা এই জায়গা হতে সরিয়ে দেখাও তো। ঐ যাদুকর সেই জুতা অনেক চেষ্টা করেও স্বীয় স্থান হতে কিঞ্চিত পরিমাণও নাড়াতে পারলো না। পরে আ’লা হযরত কেবলা এরশাদ করলেন, জাদুকার সাহেব এতক্ষণ তুমি মানুষদের যে জাদুর নৈপূন্যতা দেখাতে ছিলে, এখন আমার সামনে ঐ পাত্র জাদু দ্বারা উঠায়ে দেখাও। তখন জাদুকর অনেক চেষ্টা করেও তা দেখাতে অক্ষম হয়ে গেল। যাদুকর এই কারামত দেখে আ’লা হযরতের কদমে পড়ল এবং সাথে সাথে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।
শরীয়তের বিষয়ে আ’লা হযরতের সাবধানতাঃ
আ’লা হযরত শরীয়তের বিষয়ে এতই সাবধানতা অবলম্বন করতেন যে, কোনো মুসলমানকে কাফের বলা দূরের কথা, তিনি কোনো কুকুরকেও ওহাবী বলতে নিষেধ করেছেন। ১২-ই রবিউল আওয়াল, আ’লা হযরতের দরবারে জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আয়োজন চলছে। হক্কানী ওলামায়ে আহলে সুন্নাত তকরীর পেশ করছেন। আ’লা হযরত মঞ্চে এসে উপস্থিত হলেন। এখন তাকরীর পেশ করছেন আ’লা হযরতের খলিফা হযরত মাওলানা আবু সিরাজ আবদুল হক শামসি রেজভী (رحمة الله) তিনি তকরীর পেশ করার সময় দেখলেন, আ’লা হযরতের ফাতাওয়া বিভাগের সামনে একটা কুকুরকে অযথা বসে থাকতে দেখে হযরত শামসি রেজভী হঠাৎ বললেন, এ ওহাবীকে (কুকুর) বের করে দাও। হযরত শামসি রেজভীর কথা শুনে আ’লা হযরত সাথে সাথে বলে উঠলেন, মাওলানা চুপ থাকেন। আপনি এটা কি বললেন? এ কুকুর কি আমার নবীর শানে বেয়াদবী করেছে? আপনি শুধু শুধু কেন এই কুকুরকে ওহাবী খেতাবে ধিক্কার দিলেন? আপনি কেন এ কুকুরকে ওহাবী বলে অপবাদ দিলেন? কাল কিয়ামতের ময়দানে যদি এ কুকুর আপনার বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ দরবারে বিচার দেয় যে, মাওলা আামি কি কখনো আপনার নবীর শানে বেয়াদবী করেছি? আমাকে কেন এ নিকৃষ্ট শব্দটি দ্বারা অপবাদ দিয়েছে? তখন আপনি কি বলবেন মাওলানা? (আল্লাহু আকবার! দেখুন, শরিয়তের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বনের নমুনা)
আ’লা হযরত এর ওফাতঃ আ’লা হযরত (رحمة الله) এর ওফাত হয় ২৫শে সফর ১৩৪০ হিজরী মোতাবেক ২৮শে অক্টোবর ১৯২১ইং রোজ জুমআবার, ঠিক জুমাআর আযানের সময়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে অপেক্ষমানঃ
মাওলানা আব্দুল আযীয মুবাদাবাদী যিনি দারুল উলুম আশরাফিয়া, আযমগড় এর শিক্ষক ছিলেন। তিনি আজমীর শরীফ দরগাহর সাজ্জাদানশীল দিওয়ান সাইয়্যেদ আলে রাসূল সাহেবের১ সম্মানিত চাচা হতে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। ঘটনাটি নিম্নরুপঃ ২৫শে সফর ১৩৪০ হিজরী বায়তুল মুকাদ্দাসে একজন সিরীয় বুজুূর্গ স্বপ্নে নিজেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থি দেখতে পেলেন। ,তিনি সমস্ত সাহাবায়ে কিরামদেরকেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত দেখতে পেলেন। মজলিশে কারও কোন সাড়া শব্দ নেই, সকলেই নিরব নিস্তদ্ধ ছিল। মনে হল সবাই যেন কারো আগমণের অপেক্ষায় আছেন। সিরীয় বুজুর্গ বিনীতভাবে হুজুর এর দরবারে আরয করলেন: “ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত হোক। আমাকে একটু বলুন: কার অপেক্ষা করা হচ্ছে? আল্লাহর নবী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন: “আমরা আহমদ রেযার জন্য অপেক্ষা করছি। সিরীয় বুজুর্গ আরজ করলেন: “হুজুর! আহমদ রেযা কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন: “তিনি হলেন হিন্দুস্থানের বেরেলীর"
কিতাবের পরিচিতি ও ভূমিকাঃ
ব্যাখ্যাসহ ৪০ হাদিস, গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা ও আ’লা হযরত (رحمة الله)'র সংক্ষিপ্ত জীবনী
আরবাউনা হাদিসান মিন আহাদিস রাসূল (ﷺ) মাআ শরহিহা
রাসূল (ﷺ) এর চল্লিশ হাদিস ও তার ব্যাখ্যা
সংকলনেঃ মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসাইন
সভাপতি, পিউরী আ’লা হযরত সুন্নী যুব ঐক্য সংগঠন। বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।
সম্পাদনায়ঃ হাফেয খন্দকার আবু সুফিয়ান
এম এ (হাদিস), ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
পরিবেশনায়ঃ
পিউরী আ’লা হযরত সুন্নী যুব ঐক্য সংগঠন।
বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।
টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
গ্রন্থস্বত্ত্বঃ সংকলক কর্তৃক সংরক্ষিত।
প্রথম প্রকাশঃ ৩১ শে জুলাই, ২০২০ ইং
শুভেচ্ছা মূল্যঃ ৫০/-
মুদ্রণে ও কম্পোজঃ স্টুডেন্টস্ কম্পিউটার এন্ড ষ্টেশনারী। বসন্তপুর, (কলেজ রোড, টিএনটি মসজিদ সংলগ্ন)
অভিমত
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লী ওয়া নুসাল্লিমু আলা রাসূলিহিল কারিম।
আম্মা বা’দ, আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।
আমি অত্যন্ত খুশি হলাম যে, মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসাইন এমন একটি কিতাব খুব সুন্দর করে সাজিয়ে লিখেছেন। এই কিতাবটি সাধারণ সুন্নীজনতার অতি প্রয়োজন মনে করি। কারণ এই কিতাবটিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় মাসআলা। এই কিতাবটি পড়লে অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। এখানে প্রতিটি কথা কুরআন সুন্নাহ থেকে লিখা হয়েছে। এখানে ঈমানী ও আমলী কথা লিখা হয়েছে। এই কিতাবটি পড়লে সবার উপর হবে বলে আমি মনে করি। আজ বাতেল পন্থীরা আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে কিছু বদ আকীদার বই দেখিয়ে। তাই যুব সমাজকে আমি এই কিতাব পড়ার জন্য আহব্বান করছি।
অতি সুন্দর একটি গ্রন্থ উপহার দেওয়ার জন্য অত্র গ্রন্থের সংকলকের প্রতি আমার দোয়া ও মোবারকবাদ রইল। আল্লাহ যেন অত্র গ্রন্থের সংকলক কে যথাযথ প্রতিদান প্রধান করেন। সেই মসলেক আ’লা হযরত এর উপর আমাদের সকল কে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমিন বিহুরমতে সাইয়্যেদিল মুরসালীন।
হাফেয ক্বারী তাফসীরুল ইসলাম রোমান
খতিব ও ইমাম, বড় পিউরী সুন্নীয়া জামে মসজিদ
শিক্ষক, বাজিতপুর সৈয়দ ওয়াজেদ সুন্নীয়া মাদ্রাসা
বিঃ দ্রঃ আরো অনেক আলেমের অভিমত ছিলো, কোন কারণে দেওয়া যায় নাই। পরর্বতীতে সংষ্কারে দেওয়া হবে। ইনশাআল্লাহ।
সূচিপত্র
ভূমিকা /
নামায সম্পর্কিত হাদিস / ০১ পৃ.
গান-বাজনা সম্পর্কিত হাদিস /১৩ পৃ.
আহলে বাইয়াত সম্পর্কিত হাদিস / ১৪ পৃ.
ইলমে গায়েব সম্পর্কিত হাদিস /১৪ পৃ.
হাজির-নাজির সম্পর্কিত হাদিস / ১৫ পৃ.
নবীর নূর সম্পর্কিত হাদিস / ১৭ পৃ.
মহিলাদের নামাযের নিয়ম / ২২ পৃ.
নামায সম্পর্কিত মাসআলা / ২৩-২৮ পৃ.
মৃত্যুর পর করণীয় সম্পর্কে কিছু মাসআলা / ৩১ পৃ.
মসজিদের দোয়া / ৩২ পৃ.
খাবারের সুন্নাত / ৩৪ পৃ.
বিসমিল্লাহ এর ফজিলত / ৩৫ পৃ.
আ’লা হযতর এর জীবনী / ৩৬-৪৮ পৃ.
অভিমত
নাহ্মাদুহু ওয়া নুসাল্লী ওয়া নুসাল্লিমু আলা রাসূলিহিল কারিম।
আম্মা বা’দ, আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।
আমি অত্যন্ত খুশি হলাম যে, মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসাইন এমন একটি কিতাব খুব সুন্দর করে সাজিয়ে লিখেছেন। এই কিতাবটি সাধারণ সুন্নীজনতার অতি প্রয়োজন মনে করি। কারণ এই কিতাবটিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় মাসআলা। এই কিতাবটি পড়লে অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। এখানে প্রতিটি কথা কুরআন সুন্নাহ থেকে লিখা হয়েছে। এখানে ঈমানী ও আমলী কথা লিখা হয়েছে। এই কিতাবটি পড়লে সবার উপকার হবে বলে আমি মনে করি। আজ বাতেল পন্থীরা আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে কিছু বদ আকীদার বই দেখিয়ে। তাই যুব সমাজকে আমি এই কিতাব পড়ার জন্য আহব্বান করছি।
অতি সুন্দর একটি গ্রন্থ উপহার দেওয়ার জন্য অত্র গ্রন্থের সংকলকের প্রতি আমার দোয়া ও মোবারকবাদ রইল। আল্লাহ যেন অত্র গ্রন্থের সংকলক কে যথাযথ প্রতিদান প্রধান করেন। সেই মসলেক আ’লা হযরত এর উপর আমাদের সকল কে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমিন বিহুরমতে সাইয়্যেদিল মুরসালীন।
হাফেয ক্বারী তাফসীরুল ইসলাম রোমান
খতিব ও ইমাম, বড় পিউরী সুন্নীয়া জামে মসজিদ
শিক্ষক, বাজিতপুর সৈয়দ ওয়াজেদ সুন্নীয়া মাদ্রাসা
ভূমিকা
নাহ্মাদুহু ওয়া নুসাল্লী ওয়া নুসাল্লিমু আলা রাসূলিহিল কারিম।
আম্মা বা’দ, আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।
মনের মধ্যে অনেক দিনের সুপ্ত বাসনা ছিল যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চল্লিশটি হাদিস সংকলন করব। সেই কাজ করতে গিয়ে আমি অত্র কিতাব খানাকে ৩টি ভাগে ভাগ করেছিঃ প্রথম ভাগে রেখেছি নবি করিম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চল্লিশটি হাদিস এবং তার ব্যাখ্যা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের সামনে দ্বীনের বিধানাবলী সম্পর্কিত চল্লিশটি হাদিস হিফয্ করে (পেশ করে), তাকে আল্লাহ ফক্বীহ হিসেবে পুণরুত্থিত করবেন এবং ক্বিয়ামতের দিন আমি তার সুপারিশকারী ও সাক্ষী হবো। (মিশকাত) এই হাদিসে ব্যাখ্যায় বলা আছে যে ব্যক্তি দ্বীনি বিধান সম্পৃক্ত চল্লিশটি হাদিস উম্মতের নিকট পৌছেয়ে দিবে, কিয়ামতের দিন তার হাশর দ্বীনদার আলিমদের সাথে হবে। আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সুপারিশ করবেন এবং তার ঈমানের উপর সাক্ষী দিবেন। অবশেষে আল্লাহর অশেষ দয়ায় ও রাসুলূল্লাহ তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মেহেরবাণীতে এই কাজটি সম্পন্ন করেছি। আমি এখানে এমন হাদিসগুলোই নির্বাচন করেছি যেগুলো আমাদের জানা-অজানা ও নিত্য প্রয়োজনীয়। তবে তার সাথে আমি হাদিস গুলোর ব্যাখ্যাও লিখে দিয়েছি। আমি হাদিসগুলো সংকলনের সাথে তার ব্যাখ্যা লিখেছি যেন সাধারণ মানুষ সহজে হাদিসের কথাগুলো বুঝতে পারে এবং তার উপর আমল করতে পারে।
দ্বিতীয় ভাগে রেখেছি কিছু মাসআলা। তৃতীয় ভাগে রেখেছি, আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ওলীয়ে নেয়ামত, আযিমুল বারকাত, আযিমুল মারতাবাত, পারওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদ্আত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, হযরত আল্লামা মাওলানা আলহাজ্ব, আল হাফিজ, আল ক্বারী, শাহ্ ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী (رحمة الله) এর জীবনী। যার প্রসংশা যতই করা হোক না তা কমই হবে। কেননা তিনি ছিলেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রকৃতি প্রেমিক। নবী প্রেমের বাস্তব নমুনা। আমরা এমন অনেকেই আছি যে, তাহার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। তাই তাহার জীবনী সংক্ষেপ্ত ভাবে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য আমি উক্ত হাদিসগুলোর ব্যাখ্যা হানাফী মাহযাবের সুন্নী আকিদার নির্ভরযোগ্য “মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ” কিতাব থেকে নিয়েছি।
অত্র গ্রন্থে যাবতীয় ভুলভ্রান্তি, ক্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা সুন্দর সৃষ্টিতে দেখবেন। যদি কোন ভুলভ্রান্তি পান আমাকে অবহিত করুন পরবর্তী সংষ্কারে ঠিক করা হবে। ইনশাআল্লাহ।
সংকলক- মোঃ তোফাজ্জল হোসাইন
সভাপতি, পিউরী আ’লা হযরত সুন্নী ঐক্য যুব সংগঠন
মোবাইলঃ ০১৩০৪১৬৬২০২