হযরত জাবের (رضي الله عنه)’র নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) এর হাদিস

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ، فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ، فَجَعَلَ ذَلِكَ النُّورِ يَدُورُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ، وَلَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلا قَلَمٌ وَلا جَنَّةٌ وَلا نَارٌ وَلا مُلْكٌ وِلا سِمِاءٌ وَلا أَرْضٌ وَلا شَمْسٌ وَلا قَمَرٌ وَلا جِنِّيٌ وَلا إِنْسٌ. 
-“হযরত জাবের আল-আনছারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার পিতা-মাতা আপনার কদমে কুরবানী ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে সংবাদ দিন আল্লাহ সব কিছুর পূর্বে কি সৃষ্টি করেছেন? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে তাঁর নূর থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। অত:পর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে পরিক্রমন করতে থাকল যেভাবে আল্লাহ চেয়েছেন। তখন কোন ওয়াক্ত, লওহ-ক্বলম, জান্নাত-জাহান্নাম, ফেরেস্থা, আসমান-জমীন, চন্দ্র-সূর্য, জ্বীন-ইনছান কোন কিছুই ছিলনা।......।”
এই হাদিস খানা নিম্ন লিখিত কিতাব সমূহে আছে,
মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর যুয উল মাফকুদ, ৬৩ পৃ:;
আল মাদ্খাল, ১ম খন্ড, ৩২ পৃ: [কৃত: আল্লামা ইবনুল হাজ্জ র:];
মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৭১ পৃ: [শারিহে বুখারী ইমাম কাস্তালানী র:];
শরহে মাওয়াহেব লিয যুরকানী, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ: [আল্লামা ইমাম যুরকানী র:];
তাফহিমাতে ইলাহিয়্যা, ১৯ পৃ [কৃত: শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেছ দেহলবী র:];
নশরুত্তিব, ৫ পৃ: [কৃত: মাওলানা আশরাফ আলী থানভী];
ছিরাতে হালভিয়া, ১ম খন্ড, ৪৭ পৃ: [কৃত: আল্লামা নুরউদ্দিন হালভী র:];
তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১ম জি: ৯০ পৃ: [কৃত: আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী র:];
কাশফুল খাফা, ১ম খন্ড, ২৩৭ পৃষ্টা [কৃত: ইমাম আজলুনী র:];
আছারুল মারফ‚য়া, ৪২-৪৩ পৃ: [কৃত: আব্দুল হাই লাখনভী];
আল মাউরিদুর রাভী, ২২ পৃ: [কৃত: মোল্লা আলী ক্বারী র:];
ফাত্ওয়ায়ে হাদিছিয়্যা, ৪৪ পৃ: [কৃত: ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী র:];
আদ দুরারুল বাহিয়্যাহ, ৪-৮ পৃ: [কৃত: আল্লামা নববী র:];
এই হাদিসের সনদ হল:
عن عبد الرزاق عن معمر عن ابن منكدر عن جابر بن عبد الله قال قلت.....
-“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক হতে, তিনি মামার (র:) হতে, তিনি ইবনে মুনকাদির (র:) হতে, তিনি হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম......।” 
উল্লেখিত সনদখানা পুরোটাই বিশুদ্ধ বা ছহীহ্। কিন্তু আফছুছের বিষয় হল, ওহাবীরা নতুন ছাপা মুছান্নাফের কিতাব থেকে এই হাদিসটি পুরোটাই বাদ করে দিয়েছে। পুরাতন কিতাবে এই হাদিস খানা সনদসহ মওজুদ আছে। আর সেই পুরাতন আসল নূছখা থেকে আরবের ডুবাই অঞ্চলে আল্লামা ঈসা মানি হিমইয়ারী (হাফিজাহুল্লাহু) এর সংরক্ষনে রয়েছে এবং সেটার হুবহু স্কেনিং করা পৃষ্টা ‘যুয উল মাফকুদ’ কিতাবে তিনি দিয়েছেন। হাদিসখানা যে পূর্ব যুগে ‘মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক’ কিতাবে মওজুদ ছিল তার ব্যাপারে বিভিন্ন কিতাবে ইমামগণ সাক্ষ্য প্রদান রয়েছে। যেমন হাফিজ ইবনে হাজার মক্কী (র), আল্লামা ইমাম আজলুনী (র:), আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী হানাফী (র:), আল্লামা বুরহান উদ্দিন আলী হলভী (র:), শারিহে বুখারী আল্লামা ইমাম কাস্তালানী (র:), আল্লামা শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দেছ দেহলভী (র:), আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (র:), ইমাম যুরকানী (র:), মাওলানা আব্দুল হাই লাখনভী, আল্লামা নববী (র:), মাওলানা আশরাফ আলী থানভী সাহেব, প্রমূখ তদীয় কিতাব সমূহে হাদিসটিকে ‘মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক’ এর রেফারেন্সে কত সুন্দর করে উল্লেখ করেছেন। নিচে আলাদা করে প্রত্যেক ইমামরা কিভাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন তা দেওয়া হল:-
ইমাম আবুল আব্বাস শিহাবুদ্দিন কাস্তালানী (র:) (ওফাত ৯২৩ হিজরী) তদীয় কিতাবে এভাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন,
روى عبد الرزاق بسنده عن جابر بن عبد الله.... -“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (র:) তার সনদে হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে হাদিস বর্ণনা করেছেন.....।” ৬৬০৬০,  ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৪৮ পৃ:;

ইমাম যুরকানী (র:) তার ‘শরহে মাওয়াহেব’ এর মধ্যেও হাদিসটি ব্যাখ্যাসহ স্বীকৃতি দিয়ে এভাবেই উল্লেখ করেছেন। অনেকে লিখেছেন, ইমাম কাস্তালানী (র:) এই হাদিস খানা ভুলে মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর রেফারেন্স দিয়েছে। তারা আরো লিখেছে, ইমাম কাস্তালানী (র:) এর পূর্বে কেউ এই হাদিস উল্লেখ করেননি। অথচ ইমাম কাস্তালানী (র:) এর পূর্বেও বহু মুহাদ্দিছ ইমামগণ তাঁদের কিতাবে হাদিস খানা অথবা নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) যে প্রথম সৃষ্টি ইহা বর্ণনা করেছেন। যেমন লক্ষ্য করুন:

ইমাম আবু সা’দ নিছাপুরী খারকুশী (র:) {ওফাত ৪০৭ হিজরী} তাঁর সু-প্রসিদ্ধ সিরাত গ্রন্থ “শারফুল মোস্তফা” ১ম খন্ড, ৩০৭ পৃষ্টায় (যা দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যা, মক্কাতুল মুর্কারামা হতে প্রকাশিত হাদিস খানা নিম্মোক্তভাবে উল্লেখ রয়েছে:- 
روى عبد الرزاق بسنده عن جابر بن عبد الله.... -“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (র:) তাঁর সনদে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।” তৎকালীন কোন আলিম এই হাদিসের বিরুদ্ধে কথা বলেননি।

আল্লামা ইয়াহইয়া ইবনে আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া আল-আমরী হারদ্বী (র:) ওফাত ৮৯৩ হিজরী, তিনি “বাহ্জাতুল মাহফিল ওয়া বাগিয়াতুল আমছালফি তালখিছুল মু’যিজাত ওয়াল সিওরু ওয়াশ শামায়েল” কিতাবে ১ম খন্ড ১৫ পৃষ্টায় (যা দারুস সদর বইরুত থেকে প্রকাশিত) এই হাদিস খানা এভাবে উল্লেখ করেছেন:- 
أخرجه عبد الرزاق في مسنده بسند مستقيم من حديث جابر 
-“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক মজবুত সনদে জাবের (رضي الله عنه) এর হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।” তৎকালীন কোন আলিম এর বিরুদ্ধে সমালোচনা করেননি।

আল্লামা ইমাম হুছাইন ইবনে মুহাম্মদ হুছাইন দিয়ারবকরী (র:) ওফাত ৯৬৬ হিজরী তিনি তাঁর লিখিত “তারিখুল খামিছ” কিতাবে হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর হাদিসখানা এভাবে উল্লেখ করেছেন,
كما روى عن جابر بن عبد الله الانصارى أنه قال سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن أوّل شئ خلقه الله قال هو نور نبيك يا جابر
-“যেমন হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয় তিনি রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন। প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন: হে জাবের! সেটা তোমার নবীর নূর।” ৬৬১৬১,  ইমাম দিয়ার বকরী: তারিখুল খামিছ, ১ম খন্ড, ১৯ পৃ:;

উল্লেখ্য যে, ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (র:) এর প্রায় সম-সাময়িক বিশ্ব বিখ্যাত ইমাম আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী (র:) ওফাত ৯৭৪ হিজরী, তিনি তাঁর “ফাত্ওয়ায়ে হাদিছিয়্যা” কিতাবের ৪৪ পৃষ্টায় হাদিস খানা মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর রেফারেন্সে উল্লেখ করেছেন। যেমন:
فقد أخرج عبد الرَّزَّاق بِسَنَدِهِ عَن جَابر بن عبد الله الْأنْصَارِيّ رَضِي الله عَنْهُمَا
-“অবশ্যই আব্দুর রাজ্জাক (র:) তাঁর সনদে হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন.....।”  ৬৬২৬২,  ফাতওয়ায়ে হাদিছিয়্যা, ৪৪ পৃ:;

হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (র:) তার অন্য কিতাবে বলেন,
وروى عبد الرزاق فى مسنده أن النبى صلى الله عليه وسلم قال: إن الله خلق نور محمد قبل الأشياء من نوره،
-“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক তার মুসনাদে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা সব কিছুর পূর্বে নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি করেছেন।” ৬৬৩৬৩,  হাফিজ ইবনে হাজার মক্কী: আশরাফুল অছাইল ফি শরহে শামাইল, ১ম খন্ড, ৩৬ পৃ:;


হিজরী ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দিদ, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (র:) ওফাত ১০১৪ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন,
وروى عبد الرزاق بسنده عن جابر بن عبد الله.... -“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (র:) তার সনদে হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন..।”  ৬৬৪৬৪,  আল মাওরিদুর রাবী ফি মাওলিদিন নববী, ১৯ পৃ:;

অনুরূপ আল্লামা মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের ইবনে শায়েখ আব্দুল্লাহ আইদারুছ (র:) (ওফাত ১০৩৮ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেন,
وروى عبد الرَّزَّاق بِسَنَدِهِ ان النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ إِن الله خلق نور مُحَمَّد قبل الْأَشْيَاء من نوره
-“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক তার সনদে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা সব কিছুর পূর্বে আল্লাহর নূর থেকে নবী পাক (ﷺ) এর নূর সৃষ্টি করেছেন।” ৬৬৫৬৫,  নূরুছ ছাফির আনি আখবারিল কারনিল আশির, ৮ম পৃ:;

ইমামুশ শায়েখ ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল হাদী আল-আজলুনী (র:) (ওফাত ১১৬২ হিজরী) তদীয় কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন এভাবে,
 روى عبد الرزاق بسنده عن جابر بن عبد الله....-“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (র:) তার সনদে হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে হাদিস বর্ণনা করেছেন.....।” ৬৬৬৬৬,  ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ২৩৭ পৃ:

আধুনিক যুগের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী (র:) তদীয় কিতাবের বলেন, 
هُوَ ظَاهِرُ رِوَايَةِ عَبْدِ الرَّزَّاقِ فِي مُصَنَّفَةٍ عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ، فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ،
-“ইহা প্রকাশ্য বর্ণনা যে, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (র:) তাঁর ‘মুছান্নাফ’ গ্রন্থে হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার কদমে কুরবানী, আমাকে সংবাদ দিন আল্লাহ সব কিছুর পূর্বে কি সৃষ্টি করেছেন? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে তাঁর নূর থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।”  ৬৬৭৬৭,  আল্লামা লাখনবী: আছারুল মারফুয়া, ৪২ পৃ:;

এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী (র:) বলেছেন,
قد ثَبت من رِوَايَة عبد الرَّزَّاق أولية النُّور المحمدي -“অবশ্যই প্রথম সৃষ্টি নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টির আব্দুর রাজ্জাক (র:) এর রেওয়ায়েতটি প্রমাণিত।” ৬৬৮৬৮,  আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী: আছারুল মারফ‚য়া, ১ম খন্ড, ৪৩ পৃ:;

হাদিসটি আল্লামা নুরুদ্দিন হালভী (র:) (ওফাত ১০৪৪ হিজরী) তদীয় কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
وقد قال له جابر: يا رسول الله أخبرني عن أول شيء خلقه الله تعالى قبل الأشياء؟ قال: يا جابر إن الله خلق قبل الأشياء نور نبيك من نوره،
-“অবশ্যই রাসূল (ﷺ) কে জাবের (رضي الله عنه) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে বলুন সব কিছুর পূর্বে আল্লাহ কি সৃষ্টি করেছেন? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: হে জাবের! সব কিছুর পূর্বে আল্লাহ তার নূর থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।” ৬৬৯৬৯,  ছিরাতে হালভিয়া, ১ম খন্ড, ২১৪ পৃ:;


ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল বাকী যুরকানী (র:) ওফাত ১১২২ হিজরী তদীয় ‘শরহে মাওয়াহেব’ গ্রন্থে উক্ত হাদিস উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করেছেন ও কোন প্রকার সমালোচনা করেননি। শেষে তিনি বলেছেন- 
فليراجع من مصنف عبد الرزاق مع تمام الحديث، -“সম্পূর্ণ হাদিসটি মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক থেকে প্রাধান্য পেয়েছে।” ৬৭০৭০,  ইমাম যুরকানী: শরহে মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, ৯১ পৃ:;

ইমাম আব্দুল বাক্বী যুরকানী (র:) উক্ত কিতাবের আরেক জায়গায় স্পষ্ট করে এভাবে লিখেছেন,
كما في حديث جابر عند عبد الرزاق مرفوعًا: يا جابر إن الله قد خلق قبل الأشياء نور نبيك من نوره،
-“যেমনটি ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (র:) নিকট মারফূ সনদে হাদিস বর্ণিত রয়েছে, হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সব কিছুর পূর্বে তাঁর নূর থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।”  ৬৭১৭১,  ইমাম যুরকানী: শারহু মাওয়াহিব, ১ম খন্ড, ৫৪ পৃ:;  

المقصد الأول: في تشريف الله تعالى له عليه الصلاة والسلام,مدخل

শায়েখ আব্দুল হাক্ব মুহাদ্দেছ দেহলভী (র:) তদীয় ‘মাদারেজুন নবুয়াত’ কিতাবের প্রথম খন্ডে হাদিসটিকে ছহীহ্ বলেছেন।
বিশ্বখ্যাত মুফাচ্ছির আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী (র:) {ওফাত ১২৭০ হিজরী} সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতের তাফছিরে উল্লেখ করেন,
ولذا كان نوره صلّى الله عليه وسلّم أول المخلوقات، ففي الخبر أول ما خلق الله تعالى نور نبيك يا جابر
-“আর এ কারণেই তাঁর নূরানী সত্ত্বা সমস্থ মাখলুকাতের পূর্বে সৃষ্টি এবং এ কথাই হাদিস শরীফে আছে: হে জাবের! আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।” ৬৭২৭২,  আল্লামা আলুছী: তাফছিরে রুহুল মাআনী, ৯ম খন্ড, ১০০ পৃ:;

প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা আব্দুল গণী নাবলছী (র:) এই হাদিস সম্পর্কে বলেন,
قد خلق كل شئ من نوره صلى الله عليه وسلم كما ورد به الحديث الصحيح
-“অবশ্যই সব কিছু রাসূলে পাক (ﷺ) এঁর নূর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে, যেমন এ বিষয়ে ছহীহ্ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।”  ৬৭৩৭৩,  আল্লামা নাবলছী: হাদীকাতুন নাদিয়াহ শরহে তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া,

ভারতবর্ষে দেওবন্দীদের অন্যতম বড় আলিম মাও: আশরাফ আলী থানভী সাহেব তদীয় ‘নসরুত্তিব’ কিতাবে 
روى عبد الرزاق بسنده عن جابر بن عبد الله.... -“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (র:) তার সনদে হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে হাদিস বর্ণনা করেছেন.....। এরুপ উল্লেখ করে কোন প্রকার সমালোচনা করেননি।

মাওলানা শামছুল হক্ব ফরিদপুরী সাহেবের ফয়েজে ও বরকতে লিখিত, 
শায়খুল হাদিস আজিজুল হক্ব ছাহেবের অনুবাদকৃত বাংলা বোখারী শরীফে ‘সর্বপ্রথম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (স:)’ শিরোনামে হাদিসে জাবের (رضي الله عنه) সম্পর্কে স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন:-
     “এই হাকিকতে মুহাম্মদিয়াই নিখিল সৃষ্টি জগতের সর্বপ্রথম সৃষ্টি। লৌহ-ক্বলম, বেহস্থ-দোজখ, আসমান জমীন, চন্দ্র সূর্য, ফেরেস্তা এবং মানব-দানব সব কিছুই ঐ হাকিকতে মুহাম্মদিয়া বা নূরে মুহাম্মদীর পরে সৃষ্টি হয়েছে। এই তথ্য সু-স্পষ্টরূপে বিশিষ্ট ছাহাবী জাবের (رضي الله عنه) বর্ণিত এক হাদীছে উল্লেখ রহিয়াছে”।

লালবাগ শাহী মসজিদ এর ইমাম ও খতিব, সম্পাদক-মাসিক আল-বালাগ, সদস্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অফ গভর্ণরস, চেয়ারম্যান তফছিরে তাবারী প্রকল্প সম্পাদনা বোর্ড, তাফছিরে নূরুল কোরআন সহ বহুগ্রন্থ প্রণেতা, মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সাহেব হাদিসে জাবের (رضي الله عنه) সম্পর্কে স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন:-
     “আবির্ভাবের পূর্বেই সারা পৃথিবীতে সকল যুগে যাঁর নাম প্রচারিত হয়েছে, শুধু তাই নয়; বরং পৃথিবী সৃষ্টিরও পূর্বে আল্লাহ পাকের মহান আরশে এবং জান্নাতে যাঁর পবিত্র নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে, তিনিই আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম। 
এমনকি, এই সমগ্র সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বপ্রথম যাঁর সৃষ্টি তিনিই আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম।” অত:পর জাবের (رضي الله عنه) এর নূরের হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। তারপর বলেন: অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদীই হলো আল্লাহ পাকের সর্বপ্রথম সৃষ্টি, কেননা যেসব জিনিসের ব্যাপারে প্রথম সৃষ্টি হওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়, সে সমস্থ সৃষ্টি যে নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টির পর, তা এই হাদিস দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়।” ৬৭৪৭৪,  নূরে নবী, ১ম খন্ড, ২য় অধ্যায়, ৫ পৃষ্টা;


দেওবন্দীদের আরেক প্রখ্যাত আলিম শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব হাদিসে জাবের (رضي الله عنه) সম্পর্কে স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন:-
     “এই ভূমন্ডল, নভোমন্ডল এবং এতদুভয়ের যাবতীয় বস্তু রাসূলে করিম (সা:) এর সৃষ্টির বরকতমন্ডিত। তাঁর নূরে রহমত পরশিত করেই এসব কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ মহানবী (স:) এর নূরকে সৃষ্টি করেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক) তারপর সেই নূরকে কেন্দ্র করে অন্যান্য সকল কিছু, তথা আসমান-জমীন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, আলো-বাতাস, সমস্থ জীন-ইনছান, এক কথায় সমগ্র জগতের সৃষ্টি হয়।”  ৬৭৫৭৫,  মাসিক আদর্শ নারী, জানুয়ারী ২০১২ সংখ্যা, ৩ পৃষ্ঠা;

সুতরাং সকল মুহাদ্দেছীনে কেরাম এই হাদিসটির স্বীকৃতি ও নির্ভরযোগ্য উল্লেখ করেছেন, এর মধ্যে এটা নিয়ে মতবিরোধ করেননি। এজন্য আলা হযরত আল্লামা আহমদ রেজা খাঁন ফাজেলে বেরলভী (র:) তদীয় কিতাবে ইহাকে ‘তালাক্বা উম্মাহ বিল কবুল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ৬৭৬৭৬,  আলা হযরত: নূরুল মুস্তফা;

ইমাম ছিয়তী (র:) প্রাথমিকভাবে হাদিসে জাবের (رضي الله عنه) এর প্রায় অনুরূপ একটি মতন সম্পর্কে সমালোচনা করে বলেন: 
لَيْسَ لَهُ إِسْنَادٌ يُعْتَمَدُ عَلَيْهِ -“নির্ভর করার মত ইহার কোন সনদ নেই।” মূলত যে মতন সম্পর্কে ইমাম ছিয়তী (র:) এরুপ মন্তব্য করেছেন সেই মতনের সাথে মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাকের হাদিসে জাবের (رضي الله عنه) হুবহু মিল নেই। তথাপিও পরবর্তীতে তিনি হাদিসটির সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং তাঁর ‘খাছায়েছুল কোবরা’ কিতাবে হাদিসটি চয়ন করেছিলেন। যেমন ‘শায়েখ আব্দুল্লাহ গুমারী’ তার কিতাবে বলেন:
روى السيوطى فى الخصائص الكبرى لمصنف عبد الرزاق
-“ইমাম ছিয়তী (র:) তাঁর ‘খাছায়েছুল কুবরা’ কিতাবে মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর রেফারেন্সে হাদিস খানা বর্ণনা করেছেন।” ৬৭৭৭৭,  ইরশাদুত তালেবীন নজীব ইলা মা ফিল মাওলিদিন নাববী মিনাল আকাজিব এবং হাদিসের নামে জালিয়াতী পৃষ্টা নং ৩২৮;

অতীব আফছুছের বিষয় হল, বর্তমানে সেই ‘খাছায়েছুল কুবরা’ কিতাব থেকেও এই হাদিসখানা বাদ করে দিয়েছে। আল্লাহ পাক সব সত্যের পিছনে তার প্রমাণ রেখে দেন। যেমন ভন্ড ছালাফীদের অনুচর ‘শায়েখ আব্দুল্লাহ গুমারী’ তার কিতাবে ‘খাছাইছুল কুবরায়’ এই হাদিস থাকার কথাটি স্বীকার করেছেন।
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, রাসূলে পাক (ﷺ) নূর সর্বপ্রথম সৃষ্টির বিষয়টি হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (র:) তিনার কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
وقال زين العرب في شرح المصابيح: يعارض هذا الحديث ما روى: إنَّ أوَّل ما خلق الله العقل، إنَّ أوَّل ما خلق الله نوري، إنَّ أول ما خلق الله الروح، إنَّ أول ما خلق الله العرش.
ويجابُ بأنَّ الأولوية من الأمور الإضافية، فيؤوَّل أنَّ كل واحد مما ذكر خلق قبل ما هو من جنسه: فالقلم خلق قبل الأشجار. ونوره عليه الصلاة والسلام قبل الأنوار،
-“ইমাম জায়নুল আরব তাঁর ‘শারহু মাসাবিহ’ গ্রন্থে বলেছেন, এই হাদিস উল্লেখ করা হয় যা বর্ণিত হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বপ্রথম আকল সৃষ্টি করেছেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম আল্লাহ আমার নূর সৃষ্টি করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বপ্রথম রুহ সৃষ্টি করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বপ্রথম আরশ সৃষ্টি করেছেন।
এই সর্বপ্রথম হওয়ার বিষয়ে জবাব হচ্ছে, প্রত্যেক প্রথমটি তার জিনসের মধ্যে প্রথম বুঝাবে। ফলে কলম সকল গাছের পূর্বে সৃষ্টি বুঝাবে, আর নবী করিম (ﷺ) এর নূর মুবারক সকল নূরের পূর্বে সৃষ্টি।”  ৬৭৮৭৮,  ইমাম ছিয়তী: কুউতুল মুগতাজী আলা জামেইত তিরমিজি, ১ম খন্ড, ৫১৬ পৃ:;

হে মুসলীম ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ! এ এক কঠিন মচিবতের জামানা! নবীর দুশমনেরা কিতাব থেকে হাদিস বাদ করে দিচ্ছে স্বার্থের কারণে। এখন আল্লাহ’ই তাঁর নবীর ইজ্জত রক্ষা করবেন, ইহাই সর্বশেষ প্রত্যাশা। এছাড়াও মোট ৫২ জন মুহাদ্দিছ হাদিসখানা তাদের স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন। বিশ্ব বিখ্যাত মোহাদ্দিছ আল্লামা ইমাম যুরকানী (র:) এই হাদিস খানা কিতাবে থাকার বিষয়ে সমর্থন করেছেন, কোন প্রকার সমালোচনা করেননি। সুতরাং এই হাদিস সম্পর্কে আর কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। কারণ ইমাম কাস্তালানী (র:) এর বহু পূর্বেও ইমামগণ এই হাদিস তাঁদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং বিশ্ব বিখ্যাত ইমামগণের কেউ হাদিসটিকে জাল-মওজু বলেননি, বরং তাঁরা তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে নূরে মুহাম্মদীর স্বপক্ষে এই হাদিস দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। যেসকল ইমামগণ এই হাদিস উল্লেখ করেছেন, তাঁদের সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হল:
১. আল্লামা আবুল ফারাজ ইবনে জাওযী (র:),
২. আল্লামা নববী (র:),
৩. আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী (র:),
৪. আল্লামা ইমাম ইয়াহইয়া আল আমরী আল হারদ্বী (র:),
৫. আল্লামা ইমাম কাস্তালানী (র:),
৬. আল্লামা ইমাম যুরকানী (র:),
৭. ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (র:),
৮. আল্লামা ইমাম দিয়ার বকরী (র:),
৯. ইমাম আবু সাদ নিছাপুরী খারকুশী (র:),
১০. আল্লামা ইবনুল হাজ্জ মালেকী (র:),
১১. ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (র:),
১২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (র:),
১৩. আল্লামা ইমাম আজলুনী (র:),
১৪. আল্লামা শাহ্ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেছ দেহলভী (র:),
১৫. আল্লামা নূরউদ্দিন আলী হালভী (র:),
১৬. আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী (র:),
১৭. মাওলানা আব্দুল হাই লাখনবী (র:) সাহেব,
১৮. মাওলানা আশরাফ আলী থানভী সাহেব প্রমূখ।
প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে ‘নূর’ তারপর অন্ধকার সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় নূরের আগে অন্য কিছু সৃষ্টি করা হয়নি। এ বিষয়ে একাধিক সূত্র বর্ণিত আছে। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও বিশিষ্ট তাবে-তাবেঈ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক্ব (র:) বলেন: 
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ الْفَضْلِ، قَالَ: قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ: كَانَ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: النُّورُ وَالظُّلْمَةُ، 
-“ইবনে জারির তাবারী (র:) মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক্ব (র:) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম নূর সৃষ্টি করেছেন এরপর অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন।” ৬৭৯৭৯,  তাফছিরে তাবারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৪৬০ পৃ: হাদিস নং ৫৯০; ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী, ১০ম খন্ড, ৫৪৩ পৃ:;

 বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) এর বক্তব্য: وَرَوَى سَعِيدٌ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللَّهُ النُّورُ وَالظُّلْمَةُ، 
-“সাঈদ হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম নূর সৃষ্টি করেছেন এরপরে অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন।” ৬৮০৮০,  তাফছিরে কুরতবী, ২০তম জিল্দ ৬১ পৃ:;

সর্বপ্রথম যে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে তা অন্যভাবে আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন। যেমন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর বক্তব্য শুনুন:
أَخْبَرَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سِيمَاءَ الْمُقْرِئُ، قَدِمَ عَلَيْنَا حَاجًّا، حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الْخَلِيلُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ الْخَلِيلِ الْقَاضِي السِّجْزِيُّ، أَنْبَأَنَا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ الثَّقَفِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ السَّكَنِ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ بْنُ هِلَالٍ، حَدَّثَنَا مُبَارَكُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ خُبَيْبِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَمَّا خَلق الله عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ فَقَالَ يَا رَبِّ! مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: তখন তাঁর (আদম আলায়হিস সালাম এর) সন্তানদেরকে দেখালেন, ফলে তিনি পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরিক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে তিনি একটি নূর দেখতে পেয়ে বললেন: ওহে রব! এই নূর কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন: সে তোমার পুত্র আহমদ! সেই প্রথম সৃষ্ট, সেই শেষ, সে প্রথম শাফায়াতকারী ও তারই শাফায়াত প্রথম কবুল করা হবে।” ৬৮১৮১,  ইমাম বায়হাক্বী: দালায়েলুন্নবুয়াত, ৫ম খন্ড, ৪৮৩ পৃ: হাদিস নং ২২১৮; ইমাম খারকুশী: শরফুল মুস্তফা, ১ম খন্ড, ৩০৯ পৃ:; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩২০৫৩; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১০২ পৃ:;

এই হাদিস সম্পর্কে নাছিরুদ্দিন আলবানী তার কিতাবে বলেন:
قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري؛ -“আমি (আলবানী) বলছি: এই হাদিসের সনদ হাছান, ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ ইমাম বুখারী (র:) এর বর্ণনাকারী।” ৬৮২৮২,  আলবানী: সিলছিলায়ে জয়ীফা, হাদিস নং ৬৪৮২;

এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট করে প্রমাণিত হয়, রাসূলে করিম (ﷺ) সৃষ্টির প্রথম এবং আদি পিতা হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেও তিনি নূর অবস্থায় ছিলেন। অতএব, রাসূলে করিম (ﷺ) আদম (عليه السلام) সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন। কারণ মাটির তৈরী সর্বপ্রথম মানব হলে হযরত আদম (عليه السلام)। এর সমর্থনে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করছি, আল্লামা ইমাম ছা’লাভী (র:) {ওফাত ৪২৭ হিজরী} তদীয় তাফছিরে উল্লেখ করেন, 
 أخبرنا أبو عثمان سعيد بن محمد بن محمد بن إبراهيم العدل قال: حدّثنا أبو الحسين محمد بن منصور الواعظ قال: حدّثنا أبو عمر محمد بن عبد الواحد الزاهد قال: حدّثنا محمد ابن يونس الكديمي قال: حدّثنا عبيد الله بن عائشة قال: حدّثنا حماد بن سلمة عن ثابت عن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلّم: أنّ الله تعالى خلقني من نوره.....
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাঁর নূর থেকে আমাকে সৃষ্টি করেছেন.....।” ৬৮৩৮৩,  তাফছিরে ছা’লাভী, ৭ম খন্ড, ১১১ পৃ:;

এই হাদিসের সনদে হযরত আনাস (رضي الله عنه) সাহাবী। ছাবিত আল বুনানী (র:) প্রসিদ্ধ বিশ্বস্ত তাবেঈ। ‘হাম্মাদ বিন ছালামা’ ছহীহ্ মুসলীমের রাবী ও বিশ্বস্ত। বর্ণনাকারী ‘উবাইদুল্লাহ ইবনে আয়েশা’ সত্যবাদী ও নির্ভরযোগ্য রাবী। খতিবে বাগদাদী উল্লেখ করেন: 
أخبرنا علي بن طلحة المقرئ، أَخبرنا أَبُو الفتح مُحَمَّد بْن إِبْرَاهِيمَ الغازي، أخبرنا محمد بن محمد بن داود الكرجي، أَخْبَرَنَا عبد الرحمن بن يوسف بن خراش قَالَ: عبيد الله بن عائشة صدوق بصري.
-“আব্দুর রহমান ইউছুফ ইবনে খারাশ বলেন, উবাইদুল্লাহ ইবনে আয়েশা সত্যবাদী বছরা নিবাসী।”  ৬৮৪৮৪,  তারিখে বাগদাদ, ১০ খন্ড, ৩১৭ পৃ:;

ইমাম তুরকিমানী তাকে ثقة ছিক্বাহ বলে উল্লেখ করেছেন। ৬৮৫৮৫,  জাওহারুন নকী,৭ম খন্ড, ৩৪০ পৃ:;

‘মুহাম্মদ ইবনে ইউছুফ কাদেমী’ এর সম্পূর্ণ নাম হল ‘মুহাম্মদ ইবনে আউনূছ ইবনে মূসা ইবনে সুলাইমান ইবনে উবাইদ’। তার ব্যাপারে কিছু কিছু ইমামের সমালোচনা রয়েছে, তবে এক জামাত ইমাম তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন, ইমাম আহমদ প্রথমে তার সমালোচনা করলেও পরবর্তীতে তার উপর নির্ভর করেছেন। ইমাম ছাময়ানীও অনুরূপ। পরবর্তীতে তাকে كان حسن الحديث -হাছানুল হাদিস বলেছেন। ৬৮৬৮৬,  ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৪৩৭৭;

وقال الخطيب: قد قيل إن موسى بن هارون رجع عن الكلام فيه.
-“খাতিব বলেছেন: বলা হয়, নিশ্চয় ইমাম মূসা ইবনে হারুন (র:) প্রথমে তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন পরবর্তীতে এই বক্তব্য থেকে ফিরে এসেছেন।” ৬৮৭৮৭,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৪৩৭৭;

ইমাম যাহাবী বলেন: أحد الضعفاء. -“দুর্বল রাবীদের একজন।” ৬৮৮৮৮,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫৩০;

وأما إسْمَاعِيل الخطبيّ فَقَالَ: وَكَانَ ثقة.-“ইসমাঈল খাতাবী বলেছেন: সে বিশ্বস্ত।” ৬৮৯৮৯,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫৩০;

হাফিজ ইরাকী উল্লেখ করেন: وَوَثَّقَهُ الْخَطِيب খাতিব তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ৬৯০৯০,  তাখরিজু আহাদিছিল এহইয়া, ১ম খন্ড, ১১৪৯ পৃ:;

ইমাম মানাভী (র:) দৃষ্টিতে তার বর্ণিত হাদিস ضَعِيف দুর্বল। ৬৯১৯১,  ইমাম মানাভী: আত তাইছির, ১ম খন্ড, ২৮১ পৃ:;

বর্ণনাকারী ‘আবু উমর মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল ওয়াহেদ’ ثِقَةٌ ছিক্বহ রাবী। ৬৯২৯২, ইমাম ছাখাবী: আছ ছিক্বাত মিম্মান লা ইয়াকায়া ফি কুতুবি ছিত্তা, রাবী নং ১০৭৮;

‘আবুল হাছান মুহাম্মদ ইবনে মানছুর’ সম্পর্কে কাউকে সমালোচনা করতে পাইনি।
বর্ণনাকারী ‘আবু উছমান সাঈদ ইবনে মুহাম্মদ’ প্রসিদ্ধ ثِقَةٌ বিশ্বস্ত রাবী।
অতএব, সার্বিক বিচারে হাদিসটির মান হাছান অথবা দ্বায়িফ। যেটা রাসূলে পাক (ﷺ) এর শান মান প্রমাণে যথেষ্ঠ। এ বিষয়ে অনুরূপ আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
عَنْ ابْن عَبَّاس إِن الله عز وَجل خلقني من نوره وَخلق أَبَا بكر من نوري وَخلق عمر من نور أبي بكر وَخلق الْمُؤمنِينَ كلهم من نور عمر غير النَّبِيين وَالْمُرْسلِينَ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আমাকে তার নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। আবু বকর (رضي الله عنه) কে আমার নূর হতে, উমর (رضي الله عنه) কে আবু বকরের নূর হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। সকল মুমীনদেরকে উমরের নূর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু নবী-রাসূলগণ ব্যতীত।” ৬৯৩৯৩,  আল ফিরদৌছ, হাদিস নং ৬৪০;

তাই প্রমাণিত হল সর্বপ্রথম সৃষ্টি নূর, যেমন বিশ^ বিখ্যাত ইমাম ও হাফিজুল হাদিস, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (র:) (ওফাত ৮৫২ হিজরী) বলেছেন ও হিজরী ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দিদ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (র:) {ওফাত ১০১৪ হিজরী} সংকলন করেছেন,
قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ
-“হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী (র:) বলেন: প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে রেওয়ায়েতগুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এর সার কথা, যেমনটি আমি ‘শরহে শামায়েলে তিরমিজি’ কিতাবে বলেছি, নিশ্চয় এ গুলোর মধ্যে প্রথম সৃষ্টি হল ‘নূর’ যা দ্বারা রাসূলে পাক (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। অত:পর পানি সৃষ্টি করা হয় অত:পর আরশ সৃষ্টি করা হয়।” ৬৯৪৯৪,  ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১ম খন্ড, ২৪১ পৃ:, ৭৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;

তাই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম নবী পাক (ﷺ) এর নূর সৃষ্টি করেছেন।  
Top