বই পরিচিতি

ওয়াসওয়াসা এবং এর প্রতিকার


লেখক

আমীরে আহলে সুন্নাত দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবু বিলাল

মুহাম্মদ ইলিয়াস আত্তার কাদরী রযবী (মা.জি.আ.)


প্রকাশনায়

মাকতাবাতুল মদীনা


টেক্সট

তানভীর বিন শাব্বির




প্রারম্ভিকা


اَلْحَمْدُ لِلّٓهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ- وَالْصَّلَاةُ وَالْسَّلَامُ عَلَيْ سَيِّدِيْ الْمُرْسَلِيْنَ

اَعُوْذُ بِاللّٰهِ مَنَ الْشَّيْطَانِ الْرَّجِيْم - بِسْمِ اللهِ الْرَّحْمٰنِ الْرَّحِيْم 


কিতাব পাঠের দোয়া


কোন ধর্মীয় কিতাব পড়ার শুরুতে নিচের দোয়া পড়লে اِنْ شَاءَ الله عَزَّ وَجَلَّ তা স্মরণ থাকবে - 

اَللَّهُمَّ افْتَحْ عَلَيْنَا حِكْمَتَكَ وَانْشُرْ عَلَيْنَا رَحْمَتَكَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَام -

অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য জ্ঞান ও হিকমতের দরজা খুলে দাও এবং আমাদের উপর তোমার বিশেষ অনুগ্রহ নাযিল কর! হে চির মহান ও চির মহিমান্বিত!

(আল মুস্তাদরাক, ১ম খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকির, বৈরুত) 


(দোয়াটি পড়ার আগে ও পরে একবার করে দরূদ শরীফ পাঠ করুন) 


 

কিয়ামতের দিনে আফসোস


ফরমানে মুস্তফা (ﷺ)  : “কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি আফসোস করবে, যে দুনিয়াতে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পেলো কিন্তু জ্ঞান অর্জন করলো না এবং ঐ ব্যক্তি আফসোস করবে, যে জ্ঞান অর্জন করলো আর অন্যরা তার কাছ থেকে শুনে উপকার গ্রহণ করলো অথচ সে নিজে গ্রহণ করলো না (অর্থাৎ, সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করলো না)।” 

(তারিখে দামেশক লি ইবনে আসাকির, ৫১তম খন্ড, ১৩৭ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকির বৈরুত)


ওয়াসওয়াসা এর শাব্দিক অর্থ 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! “ওয়াসওয়াসা” এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে: “নিম্ন স্বর” শরীয়াতের পরিভাষায় “মন্দ খেয়াল এবং খারাপ চিন্তা ভাবনাকে ওয়াসওয়াসা (তথা কুমন্ত্রণা) বলা হয়।” (আশিয়া, ১ম খন্ড, ৩০০ পৃষ্ঠা)

 

তাফসীরে বাগভীতে রয়েছে: ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) ঐ বিষয়কে বলে, যা শয়তান মানুষের অন্তরে প্রবিষ্ট করায়। (তাফসীরে বাগভী, ২য় ও ৪র্থ খন্ড, ১২৭ ও ৫৪৮ পৃষ্ঠা) সাধারণত ভাবে “ওয়াসওয়াসা” অর্থাৎ “কুমন্ত্রণা” প্রত্যেকের আসে, কারো বেশি বা কারো কম। অনেকে অনেক বেশি সংবেদনশীল হওয়ার কারণে “কুমন্ত্রণা” সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে তা নিজের উপর আরোপ করে নেয় অতঃপর নিজেই কষ্টে পরে যায়! যদি “কুমন্ত্রণা”র প্রতি মনোযোগ দেয়া না হয় তবে সাধারণত তা নিজে নিজে শেষ হয়ে যায়। যখনই “কুমন্ত্রণা” আসতে শুরু করে তখন আল্লাহ তায়ালার যিকির যেমন :- الله الله যিকির শুরু করে দিন। ইনশাআল্লাহ! শয়তান শয়তান পলায়ন করবে। মুসলমান যতই আল্লাহ পাকের আনুগত্যে অগ্রগামী হয়, ততই শয়তানের বিরোধীতা ও শত্রুতা বৃদ্ধি পায় এবং সে বিভিন্ন ধরণের ধোকাবাজির ফাঁদ পাততে থাকে আর তাকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত এবং তাঁর প্রিয় রাসুল (ﷺ) এর সুন্নাত থেকে বিরত রাখারও ভরপুর চেষ্টা করে থাকে আর বিভিন্ন ধরণের ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) দিয়ে, অশ্লিল চিন্তা ভাবনা মনের মধ্যে এনে বিচলিত করতে থাকে, এমনকি অনেক সময় অজ্ঞতার কারণে মানুষ তার কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে নেকী এবং কল্যাণের কাজ থেকে বিরত থাকে আর এভাবেই শয়তান তার উদ্দেশ্যে সফল হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে মজীদের ১৮তম পারার সূরা মুমিনুনের ৯৭ ও ৯৮ নং আয়াতে তাঁর প্রিয় মাহবুব (ﷺ) কে ইরশাদ করেন 

وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَٰتِ ٱلشَّيَٰطِين

وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:এবং আপনি আরয করুন! ‘হে আমার রব! তোমারই আশ্রয় (প্রার্থনা করছি) শয়তানদের প্ররোচনা থেকে; এবং হে আমার রব! তোমারই আশ্রয় চাচ্ছি আমার নিকট তাদের উপস্থিত থেকে’। 


না ওয়াসওয়াসে আ’য়ে না কভী গন্ধে খেয়ালাত 

হো যেহেন কা অউর দিল কা আতা কুফলে মদীনা


প্রত্যেকের সাথে একজন ফিরিশতা এবং 

একজন শয়তান থাকে 


দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৩৪৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “মিনহাজুল আবেদীন” এর ৭৯ ও ৮০ নং পৃষ্ঠায় লিখিত হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহ.) এর বর্ণনার সারমর্ম হলো: আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের অন্তরে একজন ফিরিশতা নিযুক্ত করেছেন, যিনি তাকে নেকীর দাওয়াত দেয়, সেই ফিরিশতাকে মুলহিম এবং তাঁর দাওয়াতকে ইলহাম বলে। এর বিপরীতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একজন শয়তানকেও নিযুক্ত করে দিয়েছেন, যে গুনাহের দাওয়াত দেয়, এই শয়তানকে ওয়াসওয়াস এবং এর দাওয়াতকে ওয়াসওয়াসা বলে। সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহ.) আরো বলেন: “যদিওবা অধিকাংশ ওলামায়ে কিরাম এর এই অভিমত যে, ফিরিশতা মানুষকে নেকী সমূহের দিকে আহবান করে এবং শয়তান শুধুমাত্র গুনাহের দিকে।” কিন্তু আমার শায়খ বলেন যে, শয়তান অনেক সময় নেকীর দাওয়াত দিয়েও গুনাহের দিকে লাগিয়ে দেয় এবং সে এভাবে বড় নেকীর পরিবর্তে ছোট নেকীর দিকে আহবান করে, যেনো একটি বড় গুনাহ করার ক্ষতি নেকীর সাওয়াব থেকে বেশি হয়। যেমন; অহমিকা (অথার্ৎ নিজেকেই বড় মনে করা)। 


সরওয়ারে দ্বীঁ লি’জে আপনে নাতোয়ানোঁ কি খে'র 

নফস ও শয়তাঁ সায়্যিদা কব তক দাবাতে জায়েঙ্গে। 

(হাদায়িকে বখশীশ শরীফ)


হামযাদ কাকে বলে 


মিরকাত এবং আশিয়াতুল লুমআতে রয়েছে যে, যখনই মানুষের সন্তান জন্ম হয়, তখন ইবলিসেরও একটি সন্তানজন্ম হয়, যাকে ফার্সি ভাষায় হামযাদ এবং আরবীতে ওয়াসওয়াস বলে। (আশিয়াতুল লুমআত, ১ম খন্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা। মিরকাত, ১ম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা। মিরআত, ১ম খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা) 


*প্রিয় নবী (ﷺ) এর হামযাদ মুসলমান হয়ে গিয়েছিলো


  হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)  থেকে

বর্ণিত যে, মদীনার তাজেদার  َইরশাদ করেন: তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে একজন সাথী জ্বিন (শয়তান) এবং একজন সাথী ফিরিশতা নাই। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো: ইয়া রাসূলাল্লাহ  َআপনার সাথেও কি রয়েছে? ইরশাদ হলো: আমার সাথেও, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাকে তার ব্যাপারে সহায়তা করেছেন, যার কারণে সেই শয়তান মুসলমান হয়ে গেছে, এখন সে আমাকে কল্যাণের পরামর্শই দেয়। (সহীহ মুসলিম, ১৫১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৭১৪) 


সবার সাথেই একজন শয়তান থাকেই 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এটা মনে রাখবেন যে, শুধু প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী (ﷺ)َএর হামযাদই মুসলমান হয়েছিলো,অবশিষ্ট সবার “হামযাদ” অকাট্য কাফের। যাইহোক আমাদের সাথে এমন এক শয়তান নিযুক্ত আছে, যে কট্টর কাফের এবং আমাদের কুমন্ত্রণা প্রদান করে আর সর্বদা আমাদের বিরোধীতা ও শত্রুতায় লিপ্ত রয়েছে। 


মুঝে নফসে জালিম পে দেয় জিয়ে গালিব 

হো না কাম হামযাদ ইয়া গউসে আযম। 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ২৯৭ পৃষ্ঠা)


صَلُّوْ عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد (ﷺ)


শয়তানের কাজ শেষ অথচ তুমি ব্যস্ত 


দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত ৮৫৩ পৃষ্ঠা সম্বলিত অনুদিত কিতাব “মিনহাজুল আবেদীন” এর ৭৭ পৃষ্ঠায় হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)  হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহইয়া বিন রাযী মুয়ায (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)َ এর এই উক্তিটি উদ্ধৃত করে বলেন: “শয়তানের কাজ শেষ কিন্তু তুমি ব্যস্ত, সে তোমাকে দেখছে কিন্তু তুমি তাকে দেখছো না, তুমি তাকে ভূলে গেছো কিন্তু সে তোমাকে ভূলেনি এবং তোমার মাঝেও শয়তানের অনেক বন্ধু বান্ধব (যেমন; নফস এবং কামনা ইত্যাদি বিদ্যমান) রয়েছে, তাই তার সাথে লড়াই করে তার উপর প্রাধান্য লাভ করা আবশ্যক, নয়তো তুমি এর অনিষ্টতা এবং ধ্বংসযজ্ঞতা থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে না।” 

(মিনহাজুল আবেদীন (আরবী), ৪৬ পৃষ্ঠা)


কলিজা শায়াতিঁ কা থররা উঠে গা 

পুকারো সভী মিল কে ইয়া গউসে আযম। 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৩৯৬ পৃষ্ঠা)


শয়তান মানব দেহে রক্তের ন্যায় চলাচল করে 


 শয়তান আমাদের এতই নিকটবর্তী যে, অদৃশ্যের সংবাদ দাতা আকা (ﷺ) َইরশাদ করেন: “নিশ্চয় শয়তান মানব দেহে রক্তের ন্যায় চলাচল করে।” (বুখারী, ১ম খন্ড, ৬৬৯ পৃষ্ঠা,হাদীস নং- ২০৩৮)

সূফীয়ানে কিরামগণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)  বলেন: অতএব এর পথকে ক্ষুধার মাধ্যমে সংকীর্ণ করে দাও। (কাশফুল খিফা, ১ম খন্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা) 


অতিভোজনের ৬টি উদ্বেগজনক ক্ষতি 


 যারা অতি মাত্রায় খাবার খায়, তারা একবার ভাবুন যে, শয়তানথেকে কিভাবে পিছু ছাড়াবেন! হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: বর্ণিত আছে, অতিভোজনে ছয়টি অমঙ্গল নিহিত: 

(১) অন্তর থেকে খোদাভীতি চলে যায় 

(২) আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির প্রতি দয়ার প্রেরণা অর্থাৎ, সহানুভূতি চলে যায়, কেননা এরূপ ব্যক্তি এমন মনে করে যে, আমার ন্যায় সবারই পেট ভরা আছে ।

(৩) ইবাদত করতে কষ্ট হয় 

(৪) ওয়াজ ও নসিহত (সুন্নাতে ভরা বয়ান) শুনে অন্তরে নম্রতা সৃষ্টি হয় না 

(৫) যদি সে নিজে মুবাল্লিগ হয় এবং বয়ান ও হিকমতপূর্ণ কথাবলে, তবে মানুষের অন্তরে এর প্রভাব বিস্তার করে না 

(৬) বিভিন্ন ধরণের রোগ জন্ম নেয়।

 (ইহইয়াউল উলুম থেকে সংক্ষেপিত, ৩য় খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা) 


ইয়া ইলাহী! ভোক কি দৌলত সে মালামাল কর, 

দো জাহাঁ মে আপনি রহমত সে মুঝে খোঁশহাল কর। 


 (ক্ষূধার উপকারীতা এবং অধিক আহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য ফয়যানে সুন্নাত ১ম খন্ডের “পেটের কুফলে মদীনা” অধ্যায়টি অধ্যয়ন করুন) আল্লাহ তায়ালা যখন শয়তানকে অভিশপ্ত ঘোষনা করলেন তখন সে মানুষের সাথে শত্রুতার ঘোষনা করলো! তার উক্তিটি কোরআনে মজীদের ৮ম পারায় সূরা আ’রাফের ১৬ ও ১৭ নং আয়াতে এভাবে উদ্ধৃত করা হয়:

 قَالَ فَبِمَآ أَغْوَيْتَنِى لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَٰطَكَ ٱلْمُسْتَقِيمَ 

ثُمَّ لَءَاتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَٰنِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَٰكِرِينَ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: বললো, ‘শপথ এরই যে, তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছো। আমি অবশ্যই তোমার সরল পথের 

উপর তাদের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকবো’। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের নিকট আসবো- তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক থেকে এবং আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’।


মাহবুবে খোদা সর পে আজল আ’কে খাড়া হে 

শয়তান সে আত্তার কা ঈমান বাঁচা লো। 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৮৬ পৃষ্ঠা)


কুমন্ত্রণার ভিন্ন ভিন্ন রূপ 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! শয়তান তো তাদের বিরুদ্ধেও শত্রুতা বন্ধ করে না, যারা তার সাথে শত্রুতাই পোষণ করে না এবং তার বিরোধিতাও করে না বরং তার দৃঢ় বন্ধু আর এই অভিশপ্তের আনুগত্য করে, যেমনটি কাফের, পথভ্রষ্ট এবং গুনাহগার লোক, যখন সে তার এই “বন্ধু”কেও ছাড়ে না এবং তাদেরকেও ধারাবাহিক ভাবে ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে আর ধ্বংসযজ্ঞতার অতল গহ্বরে পতিত হতে থাকে, সেক্ষেত্রে ঐ সকল ওলামায়ে দ্বীন এবং সুন্নাতের মুবাল্লিগগণের )كَثَّرَهُمْ اللهُ تَعَالَيْ   (অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা এরূপ লোকের আধিক্য করুন) সাথে তার শত্রুতার অবস্থা কিরূপ হবে, যারা সর্বদা তার বিরোধিতা করে, মুসলমানদেরকে তার আক্রমন সম্পর্কে সতর্ক রাখে এবং এভাবে তাকে রাগান্বিত করে আর তার পথভ্রষ্টকারী পরিকল্পনাকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার কাজে ব্যস্ত থাকে। সুতরাং এর কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করতে থাকা উচিৎ, কেননা এই অভিশপ্ত শয়তান অনেক বেশি ধোকাবাজ ও চালাক, প্রত্যেককে তার মানসিকতা অনুযায়ী কুমন্ত্রণার শিকারে পরিনত করে, যেমনটি প্রসিদ্ধ মুফাসসীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: মনে রাখবেন যে, শয়তান আলিমদের মনে জ্ঞানগর্ব কুমন্ত্রণা এবং সূফীদেরকে প্রেমময় কুমন্ত্রণা, সাধারণের মনে কুরুচিপূর্ণ কুমন্ত্রণা প্রদান করে। (অর্থাৎ) “যেমন শিকার তেমন ফাঁদ!” অনেক সময় (গুনাহকে এমন ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করে যে,) মানুষ এই গুনাহকে ইবাদত মনে করে নেয়! (মিরাত, ১ম খন্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা)


 মাঝে মাঝে শয়তান নিজেকে “খোদা” পরিচয় দিয়েও সামনে আসে এবং পথভ্রষ্ট করার অপচেষ্টা করে, যেমনটি আমাদের পীর ও মুর্শিদ, শাহানশাহে বাগদাদ হুযুরে গউসে আযম সায়্যিদুনা শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর নিকট এসেছিলো। 


সুন লো শয়তাঁ নে হার তরফ হার সু, 

খুব ফেয়লা কে জাল রাখা হে। 


صَلُّوْا عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد (ﷺ)


আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে কুমন্ত্রণা 


আমাদের প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা (ﷺ)ইরশাদ করেন: তোমাদের মধ্যে কারো নিকট যখন শয়তান আসে তখন তাকে বলে যে, অমুক জিনিস কে সৃষ্টি করেছে? অমুকটি কে করেছে? এমনকি বলে যে, তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন এই পযার্য়ের প্রশ্ন করে, তখন “ أَعُوْذُ بِالله  ” পাঠ করে নাও এবং তাকে এড়িয়ে চলো। (বুখারী, ২য় খন্ড, ৩৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩২৭৬)


সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায় না 


 প্রসিদ্ধ মুফাসসীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন  এই হাদীসে পাকের আলোকে বলেন: অর্থাৎ এই প্রশ্নটির উত্তর চিন্তা করার চেষ্টাও করবে না, নয়তো শয়তান প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে থাকবে। أَعُوْذُ بِالله পাঠ করে একে তাড়িয়ে দাও। বরং বলেন: قَالَ فَٱخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ অর্থাৎ তুমি জান্নাত থেকে বের হয়ে যাও। (পারা: ১৪, সূরা: হাজার, আয়াত: ৩৪)

 মনে রাখবেন! “ أَعُوْذُ بِالله ” পাঠ করা শয়তান তাড়ানোর মহৌষধ। (মিরাত, ১ম খন্ড, ৮২ পৃষ্ঠা) 


নফস ও শয়তাঁ কি শরারত দূর হো 

 ইয়ে করম ইয়া মুস্তফা ফরমায়ে।

 (ওয়সায়িলে বখশীশ, ৮৭ পৃষ্ঠা)


কুমন্ত্রণার কোরআনী প্রতিকার 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানতে পারলাম যে, যখনই কুমন্ত্রণা 

আসবে “ أَعُوْذُ بِالله” পাঠ করে তাকে তাড়ানো উচিত কুমন্ত্রণা আসা অবস্থায় কোরআনে পাকেও আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় 

প্রার্থনা করার আদেশ দেয়া হয়েছে, যেমনটি ৯ম পারার সূরা 

আ’রাফের ২০০ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,

وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيْطَٰنِ نَزْغٌ فَٱسْتَعِذْ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:এবং হে শ্রোতা! যদি শয়তান 

তোমাকে কোন খোঁচা দেয়, তবে আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিঃসন্দেহে তিনি শ্রোতা, জ্ঞাতা। 


মুঝকো দেয় দেয় পানাহ শয়তাঁ সে, 

ইস সে ঈমাঁ মেরা বাঁচা ইয়া রব! 


ইমাম রাযী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং শয়তান 


দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত ৫০২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “মলফুযাতে আ’লা হযরত (সংশোধিত)” এর ৪৯৩ থেকে ৪৯৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে: (হযরত সায়্যিদুনা) ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর অন্তিম মুহুর্ত যখন সন্নিকটে এলো, শয়তান আসলো, সেই সময় শয়তান আপ্রান চেষ্টা চালায় যে, যেকোন ভাবে এর (বান্দার) ঈমান ছিনিয়ে নেয়া যায়। যদি সেই সময় (সেই ব্যক্তি ঈমান থেকে) ফিরে যায়, তবে আর কখনো ফিরে পাবে না। (সুতরাং) সে (অর্থাৎ, শয়তান) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলো যে, তুমি সারা জীবন মুনাযারা ও বিতর্ক করে অতিবাহিত করেছো, আল্লাহ তায়ালার পরিচয়ও কি লাভ করেছো? তিনিবললেন: “নিশ্চয় আল্লাহ (তায়ালা) এক।” সে (অর্থাৎ, শয়তান) বললো: এর দলিল কি? তিনি  (একটি দলিল দাঁড় করালেন। সেই (অথার্ৎ শয়তান) দূভার্গা মুয়াল্লিমুল মালাকুত (অর্থাৎ ফিরিশতাদের শিক্ষক) ছিলো, সে সেইদলিল খন্ডন করলো। তিনি ২য় দলিল দিলেন, সে তাও খন্ডন করলো। এমনকি হযরত (সায়্যিদুনা) ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) দাঁড় দলিল তিনশ ষাটটি  করলেন এবং সে সবই খন্ডন করলো। এখন তিনি (ইমাম সাহেব  (খুবই পেরেশানিতে পরে গেলেন এবং একেবারে হতাশ হয়ে গেলেন। তাঁর পীর হযরত (সায়্যিদুনা শায়খ) নাজমুদ্দিন কুবরা 

অনেক দূরে একটি সাথানে অযু করছিলেন, সেখান থেকে তিনি (অর্থাৎ পীর ও মুর্শিদ) তাকে (ইমাম রাযী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে আওয়াজ দিলেন: “এটা কেনো বলছোনা যে,আমি আল্লাহ তায়ালাকে বিনা দলিলে এক বলে জানি।” 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দেখলেন তো আপনারা যে, শয়তান 

কেমন কেমন ভাবে আক্রমন করে! যদি এর কথায় ধ্যান দেয়া হয় তবে সে পিছু ছাড়েনা। একে no lift করুন, এর“কুমন্ত্রণার” প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করাও কুমন্ত্রণার প্রতিকার, তাছাড়া আল্লাহ তায়ালার প্রতি সর্বদা শয়তানের অবাধ্যতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে থাকা উচিৎ এবং এটাও জানা গেলো যে, কোন কামিল পীরের মুরীদ হয়ে যাওয়া উচিৎ, কেননা মুর্শিদের কৃপাদৃষ্টিও শয়তানের কুমন্ত্রণাকে দূরীভূত করে।


হে আত্তার কো সলবে ঈমাঁ কা ধড়কা, 

বাঁচা ইস কা ঈমাঁ বাঁচা গউসে আযম। 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ২৯৬ পৃষ্ঠা)

َ

তাকদীরের ব্যাপারে কুমন্ত্রণা 

 

শয়তান তাকদীরের ব্যাপারেও অন্তরে কুমন্ত্রণা প্রদান করতে থাকে, যেমন; যা কিছু তাকদীরে লেখা রয়েছে, আমরা তা এড়িয়ে যেতে পারি না, তাকদীরে সামনে একান্তই অপারগ, আমরা তো তাই করি, যা তাকদীরে লিপিবদ্ধ রয়েছে, অতঃপরও কবর ও জাহান্নামে শাস্তি কেন? ইত্যাদি। নিঃসন্দেহে এটাও শয়তানের ধোকা, এই বিষয়ে চিন্তাও করবেন না, অন্যথায় শয়তান পথভ্রষ্ট করবে, “أَعُوْذُ بِالله” পাঠ করে এই অভিশপ্তকে তাড়িয়ে দিন। যে যেরূপ করার ছিলো, সেরূপই লিখে দেয়া হয়েছ।


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মনে রাখবেন! যে যেরূপ করার ছিলো, আল্লাহ তায়ালা তা আপন ইলম দ্বারা জ্ঞাত হলেন এবং তার জন্য তেমনই লিখে দিয়েছেন, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান ও লিখা কাউকে বাধ্য করেনি। বিষয়টি এই সাধারণ উদাহরণ দ্বারা বুঝার চেষ্টা করুন, যেমনটি বর্তমানে আইনানুযায়ী খাবার এবং ঔষধ ইত্যাদির প্যাকেটে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ (Exp. Date) লেখা হয়ে থাকে, শিশুরাও এইবিষয়টি বুঝে যে, কোম্পানির যেহেতু অভিজ্ঞতা রয়েছে যে, এই জিনিসটি অমুক তারিখের পর নষ্ট হয়ে যাবে, তাই সম্ভাব্য তারিখ লিখে দেয়, তবে কোম্পানির (Exp. Date) লিখে দেয়াতে সেই জিনিসটিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নষ্ট হওয়াতে বাধ্য করেনি, যদি তা না’ও লিখা হতো তবুও সেই জিনিসটি নির্দিষ্ট সময়ের পর নষ্ট হয়েই যাবে। 


তাকদীর সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া 

 

এপ্রসঙ্গে দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত ৬৯২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “কুফরিয়্যা কালেমাত কে বারে মে সাওয়াল জাওয়াব” এর ৫৮৩ থেকে ৫৮৫ পৃষ্ঠায় রয়েছে: ফতোয়ায়ে রযবীয়া ২৯তম খন্ডের ২৮৪ থেকে ২৮৫ পৃষ্ঠায় একটি প্রশ্নোত্তর উপস্থাপন করা হলো। প্রশ্ন: “যায়েদ” বলে যা হয়েছে এবং হবে সবই আল্লাহ তায়ালার আদেশেই হয়েছে এবং হবে, তবে বান্দাকে কেন গ্রেফতার করা হবে এবং তাকে কেন শাস্তির উপযুক্ত 

করা হলো? সে এমন কি কাজ করলো, যাতে আযাবের অধিকারী হলো? যা কিছু তিনি (অথার্ৎ আল্লাহ তায়ালা) তাকদীরে লিখে দিয়েছেন, তাই হয়, কেননা কোরআনে পাক দ্বারা প্রমাণিত যে, তার বিনা অনুমতিতে একটি কণাও নড়ে না, তবে বান্দা নিজের কোন ক্ষমতায় ঐ কাজটি করলো, যে কারণে সে দোযখী হলো বা কাফিরহলো অথবা ফাসিক হলো। তাকদীরে যদি মন্দ কাজ লিখা থাকে তবে মন্দ কাজ করবে এবং ভাল লিখা থাকলে তবে ভাল। সবার্বস্থায় তাকদীরের অনুগত, তবে কেন তাকে অপরাধী বানানো হয়? চুরি করা, যেনা করা, হত্যা করা ইত্যাদি যা বান্দার তাকদীরে লিখে দেয়া হয়েছে, তেমনই হবে, অনুরূপভাবে নেক কাজ করার ব্যাপারেও। উত্তর: “যায়েদ পথভ্রষ্ট, বেদ্বীন (নাস্তিক), তাকে কেউ জুতা মারলে কেন সে অসন্তুষ্ট হয়? এটাও তো তাকদীরে ছিলো। কেউ তার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে চাইলে সে কেন বিগড়ে যায়? এটাও তো তাকদীরে ছিলো, এটা শয়তানী কর্মকান্ডের একটি প্রতারণা, যা লিখে দেয়া হয়েছে, আমাদের তা করতে হবে (অথচ কখনো এরূপ নয়) বরং যা আমরা করতাম, তা তিনি (অথার্ৎ আল্লাহ তায়ালা) তাঁর ইলম দ্বারা জেনে লিখে দিয়েছেন।” মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত “বাহারে শরীয়াত” এর ১ম অংশের ২৪ পৃষ্ঠায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকত হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিখেন: “খারাপ কাজ করে তাকদীরের দিকে ইঙ্গিত করা এবং আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার দোহায় দেয়া খুবই গর্হিত কাজ, বরং আদেশ এরূপ যে, যা ভাল কাজ করবে তা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বলবে এবং যা খারাপ কাজ সংগঠিত হয়েছে তা নিজের অপূর্ণতা জ্ঞান করবে।”


তাকদীর সম্পর্কে কুমন্ত্রণার একটি উত্তম প্রতিকার 


দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত ৩৪৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “মিনহাজুল আবেদীন” এর ৮৬ থেকে ৮৭ পৃষ্ঠায় হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যা কিছু বর্ণনা করেছেন, তার সারাংশ হচ্ছে: ইবলিশ অনেক সময় কুমন্ত্রণা প্রদান করে এভাবেও পথভ্রষ্ট করে যে, মানুষের নেককার ও গুনাহগার হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ভাগ্য নির্ণয়ের দিনই হয়ে গেছে, সেদিন যে গুনাহগারের দলে ছিলো, সে গুনাহগারই থাকবে এবং যে নেককারদের দলে ছিলো, সে নেককারই থাকবে। তোমাদের নেক ও মন্দ আমলের ভাগ্য নির্ণয়ের সিদ্ধান্তে কোনরূপ পার্থক্য আসতে পারে না। যদি আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে এই শয়তানি কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচান এবং বান্দারা অভিশপ্ত শয়তানকে এভাবে প্রতিত্তোর দিক যে, “আমি আল্লাহ তায়ালার বান্দা এবং বান্দার কাজ হচ্ছে, তার মাওলার আদেশ মান্য করা, আর আল্লাহ তায়ালা যেহেতু সমগ্র জগতের রব, তাই যা ইচ্ছা আদেশ দেন এবং যা ইচ্ছা করেন, অতঃপর তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য কোনভাবেই ক্ষতিকর নয়, কেননা যদি আমি আল্লাহর জ্ঞানে (অর্থাৎ পূর্ণবান) সৌভাগ্যবান হই, তবুও যদি আরো অধিক সাওয়াবের মুখাপেক্ষী এবংّ َআল্লাহর জ্ঞানে (লাওহে মাহফুযে) আমার নাম দূভার্গাদের তালিকায় লিখা হয়, তবুও নেক আমল করাতে নিজেকে এই বলে নিন্দা করবোনা যে, আমাকে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য ও ইবাদত না করার কারনে শাস্তি দিবেন এবং কমপক্ষে এটা তো হবে যে, অবাধ্য হিসেবে জাহান্নামে যাওয়ার চাইতে অনুহত হিসেবে যাওয়াই উত্তম। কিন্তু এই সব কিছু সন্দেহ মাত্র, অন্যথায় তাঁর ওয়াদা (প্রতিজ্ঞা) সত্য, এবং তাঁর কথা অকাট্য সত্য আর আল্লাহ তায়ালা আনুগত্য ও ইবাদতকারীদেরকে উত্তম প্রতিদান দেয়ার ওয়াদা দিয়েছেন, তবে যে ব্যক্তি ঈমান ও আনুগত্য (অথার্ৎ ইবাদত) এর মাধ্যমে রব তায়ালার দরবারে উপস্থিত হবে, সে কখনো জাহান্নামে যাবেনা, বরং আল্লাহ তায়ালার দয়া এবং নেক আমলের কারনে   সৗেদেফর জোন্নাতুলَ َ َজায়গা পাবে। কিন্তু বাস্তবিকই এই প্রবেশ আল্লাহ তায়ালার ওয়াদার কারনেই হবে। এই সত্য ওয়াদাকে প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজীদের ২৪তম পারা সূরা যুমার এর ৭৪ নং আয়াতে পূর্ণবান লোকদের জন্য এই উক্তিটি উদ্ধৃত করেছেন: 

وَقَالُوا۟ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى صَدَقَنَا وَعْدَهُۥ وَأَوْرَثَنَا ٱلْأَرْضَ نَتَبَوَّأُ مِنَ ٱلْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَآءُۖ فَنِعْمَ أَجْرُ ٱلْعَٰمِلِينَ 

ইংরেজি: And they will say, "Praise to Allah, who has fulfilled for us His promise and made us inherit the earth [so] we may settle in Paradise wherever we will. And excellent is the reward of [righteous] workers."

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আপন প্রতিশ্রুতি আমাদের প্রতি (সত্যই) পূর্ণ করেছেন। 


আল্লাহ কি রহমত সে তো জান্নাত হি মিল গেয়ী, 

আয় কাশ! মাহাল্লে মে জাগা উন কে মিলি হো। 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ১০৭ পৃষ্ঠা)


ঈমানের ব্যাপারে কুমন্ত্রণা 


 প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কোন সময় শয়তান তাকে এমন এমন কুমন্ত্রণা দিতে থাকে যে, যা মুখে বর্ণনা করার সাহস হয় না। যেহেতু সাহাবায়ে কিরামগণ (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)  আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) َএর আনুগত্যে সর্বদা ব্যস্ত থাকতন। তাই শয়তান তাদের কুমন্ত্রণার মাধ্যমে খুবই ব্যথিত করতেন। যেমনটি মুসলিম শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে, কিছু সাহাবায়ে কিরামগণ (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার (ﷺ) َএর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন: আমরা আমাদের অন্তরে এরূপ ধারণা (কুমন্ত্রণা) অনুভব করি যে, যা বর্ণনা করাও খুব খারাপ মনে হচ্ছে। প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী (ﷺ)  َইরশাদ করেন: তোমরা কি এরূপ অনুভব করো? আরয করলো: জি হ্যাঁ। ইরশাদ করলেন: “এটাই হলো প্রকাশ্য ঈমান।” (সহীহ মুসলিম,৮০পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৩২)


ভয়ানক কুমন্ত্রণা


 নবীয়ে করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) َএর সম্মানিত খিদমতে উপস্থিত হয়ে এক ব্যক্তি আরয করলো: আমি অন্তরে এরূপ ধারণা অনুভব করি যে, তা বলার চেয়ে জ্বলে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়াকেই অধিক পছন্দ করছি। তিনি ইরশাদ করলেন: আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, এই ধারণা গুলোকে কুমন্ত্রণা বানিয়ে দিয়েছেন। (আস সুন্নাতু লি আবি আসেম, ১৫৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৭০)


প্রসিদ্ধ মুফাসসীর, হাকিমুল উম্মত, হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: অথার্ৎ আল্লাহ তায়ালা এই ধারনাকে কুমন্ত্রণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যার কারণে কোন আটকও রাখেননি, তা দয়াময় আল্লাহ তায়ালা বান্দার দূর্বলতা ও অপারগতা হিসেবে মনে করেন। (মিরাত, ২১ খন্ড, ৮৬ পৃষ্ঠা) 


কুমন্ত্রণা ক্ষমাযোগ্য 

 

হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী, হুযুর পুরনুর (ﷺ)  ইরশাদ করেন: নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালাَ আমার কারণেই আমার উম্মতের মনের ধারণা (অর্থাৎ কুমন্ত্রণা) ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এর উপর কাজ বা কথা বলবে না। (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৫২৮) 


 প্রসিদ্ধ মুফাসসীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন: খারাপ ধারণার কারণে আটক করা হবে না, এটা এই উম্মতের বৈশিষ্ট্য, পূর্ববর্তী উম্মতদের এই বিষয়েও (অর্থাৎ কুমন্ত্রণা অন্তরে আসলে বা ইচ্ছাকৃত ভাবে আনলে) আটকানো হতো, মনে রাখবেন যে, খারাপ ধারণা এবং খারাপ ইচ্ছা হচ্ছে সম্পূর্ণ আলাদা, খারাপ ইচ্ছার কারণে আটকানো হয় এমনকি কুফরের ইচ্ছাও “কুফরী”। (মিরাত, ১ম খন্ড, ৮১ পৃষ্ঠা)


কুমন্ত্রণার কারণে কখন আটকানো হয় 


 খাতেমুল মুহাদ্দিসিন, হযরত আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: যে খারাপ ধারণা মনের মধ্যে অনিচ্ছাকৃত ও হঠাৎ করে চলে আসে, একে হাজিস বলে, এটি অস্থায়ী, এই এলো এই গেলো। এটি পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্যও ক্ষমাযোগ্য ছিল এবং আমাদের জন্যও ক্ষমাযোগ্য, কিন্তু যা মনের মধ্যে রয়ে যায়, তাও আমাদের জন্য ক্ষমাযোগ্য, পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্য ক্ষমাযোগ্য ছিলোনা। যদি এর সাথে অন্তরে স্বাদ ও খুশি সৃষ্টি 

হয়, তবে তাকে হাম্মা বলা হয়, এর কারণেও আটকানো হয়না আর যদি এর সাথেসাথে কাজটি সম্পাদন করার ইচ্ছা থাকে, তবে তা হলো আযম (দৃঢ় প্রতিজ্ঞা), এতে আটকানো হবে। 

(আশিয়াতুল লুমআত ১ম খন্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা) 


কুমন্ত্রণার কারণে ঈমান চলে যায় না 

 

কুমন্ত্রণা যতই আসুক না কেন এবং যতই ভয়ানক হোক না কেন, এতে ঈমান নষ্ট হয় না! ঈমান সম্পর্কিত কুমন্ত্রণা আসার কারণে মন চিন্তাগ্রস্থ হওয়া, এই বিষয়ের নিদর্শন যে, অন্তর ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ। পারা ১৪, সূরা নাহলের ১০৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: 

مَن كَفَرَ بِٱللَّهِ مِنۢ بَعْدِ إِيمَٰنِهِۦٓ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُۥ مُطْمَئِنٌّۢ بِٱلْإِيمَٰنِ وَلَٰكِن مَّن شَرَحَ بِٱلْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ ٱللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ 

ইংরেজি: Whoever disbelieves in Allah after his belief...  except for one who is forced [to renounce his religion] while his heart is secure in faith. But those who [willingly] open their breasts to disbelief, upon them is wrath from Allah, and for them is a great punishment;

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং তার অন্তর ঈমানের উপর অবিচলিত থাকে।


কুমন্ত্রণাকে খারাপ মনে করাটাই হলো প্রকৃত ঈমান 


 প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ঈমানের ব্যাপারে কুমন্ত্রণা আসা ঈমানের পরিপূর্ণতার নিদর্শন, চোর বা ডাকাত ওখানেই যায়, যেখানে সম্পদের ছড়াছড়ি হয়ে থাকে, তেমনিভাবে যেখানে ঈমান অধিক মজবুত হবে, শয়তান তত বেশি বিরক্ত করবে। কোন মুসলমানের কুমন্ত্রণায় ভয় করা, চিন্তিত হওয়া, কেঁদে কেঁদে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা আসলেই ঈমানী চেতনার নিদর্শন। প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকিমুল উম্মত হযরত আহমদ ইয়ার খাঁন  (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন:“কুমন্ত্রণাকে খারাপ মনে করাটাই হলো প্রকৃত ঈমান।” (মিরাতুল মানাজিহ, ১ম খন্ড, ৮২ পৃষ্ঠা) 


ইস্তিকামত দি’জিয়ে ইসলাম পর, কিজিয়ে রহমত এ্যয় নানায়ে হুসাইন। 

দিল সে দুনিয়া কি হাওয়াস সব দূর হো, কিজিয়ে রহমত এ্যয় নানায়ে হুসাইন। 

নায’আ, কবর ও হাশর, মি'যাঁ হার জাগা 

কিজিয়ে রহমত এ্যয় নানায়ে হুসাইন। 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৯৩ পৃষ্ঠা)


ইবাদতে কুমন্ত্রণা 


 ঈমানের ন্যায় “ইবাদতে”ও শয়তান কুমন্ত্রনা দিয়ে থাকে এবং এই কাজে সে একা নয়, তার সাথে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীও রয়েছে। প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: শয়তানের বংশধরের (অথার্ৎ ইবলিশের সন্তানদের) বিভিন্ন দল রয়েছে, তাদের নাম ও কাজ আলাদা আলাদা, সুতরাং ‘অযু’তে প্ররোচনা প্রদানকারী দলের নাম ওয়ালহান এবং ‘নামাযে’র মধ্যে প্রলোভিতকারী দলের নাম খিনযাব। অনুরূপভাবে মসজিদে, বাজারে, মদের আসরে তাদের আলাদা আলাদা বাহিনী রয়েছে। (মিরআত ১ম খন্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা) 


নয়জন শয়তানের নাম ও কাজ 


দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা হতে প্রকাশিত ১১০৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “ফয়যানে সুন্নাত” এর ৩১ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে: আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)  বলেন যে, শয়তানের সন্তান নয়জন: 

(১) যালীতূন (২) ওয়াসীন (৩) লাকূস (৪) আ’ওয়ান (৫) হাফ্ফাফ 

(৬) মুররাহ্ (৭) মুসাব্বিত (৮) দাসীম ও (৯) ওয়ালহান। 


 (১) যালীতূন: বাজার সমূহে নিয়োজিত আর সেখানে নিজের পতাকা গেঁথে রাখে। 

(২) ওয়াসীন: মানুষদের আকস্মিক বিপদে ফেলার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।

(৩) লাকূস: আগ্নি পূজারীদের সাথে থাকে। 

(৪) আ’ওয়ান: শাসকদের সাথে থাকে। 

(৫) হাফ্ফাফ: মদ্যপায়ীদের সাথে থাকে। 

(৬) মুররাহ: গান-বাজনাকারীদের সাথে থাকে।

(৭) মুসাব্বিত: বাজে কথা-বার্তা সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত। সে মানুষের মুখে বাজে কথা-বার্তা চালু করে দেয় আর মূল বাস্তবতা থেকে লোকেরা উদাসীন হয়ে থাকে। 

(৮) দাসিম: ঘর সমূহে নিয়োজিত রয়েছে। যদি ঘরের সদস্যরা ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম না করে ও বিসমিল্লাহ না পড়ে পা ভিতরে রাখে, তবে সে এসব ঘরের সদস্যদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দেয়। এমনকি মারামারি বরং তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। 

(৯) ওয়ালহান: ‘অযু’তে কুমন্ত্রণা দেয়ার কাজে নিয়োজিত। 

(আল মুনাব্বিাহাত, ৯১ পৃষ্ঠা) 


নফস ও শয়তান হো গেয়ী গা’লিব, 

উনকে চুঁঙ্গল সে তো ছোঁড়া ইয়া রব! 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ,৫১ পৃষ্ঠা)


মসজিদে কুমন্ত্রণা 

 

কুমন্ত্রনা দানকারী শয়তান মসজিদের ভেতরেও অনেক বেশি প্ররোচনা দিয়ে থাকে, সেখানে উপস্থিত অনেক মুসলমানদেরকে দুনিয়াবী কথাবাতার্য় লিপ্ত করিয়ে দেয়, কাউকে ঝগড়ায় লিপ্ত করিয়ে দেয়, কখনো কখনো বৃদ্ধদেরকে রাগান্বিত করে শোরগোল লাগিয়ে দেয় َকাউকে কুদৃষ্টি, অসৎ চরিত্র, গীবত ও চুগলখোরী ইত্যাদি গুনাহের কাজে ফাসিঁয়ে দেয়, যাকে গুনাহে ফাঁসাতে পারে না, তাকে কম নেকীর প্রতি ধাবিত করে দেয় এবং তা তো হয়তো প্রত্যেকেরই অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন; দরস ও বয়ান চলছে কিন্তু মসজিদে উপস্থিত হওয়ার পরও কিছু লোক এতে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হয়ে দূরে বসে উদাসীনতার সহিত এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকে। যে লোকেরা মসজিদে উপস্থিত হওয়ার পরও আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন থাকে এবং জ্ঞানের আসর ইত্যাদি থেকে বিমূখ থাকে, তারা ফতোয়ায়ে রযবীয়া শরীফে বর্ণিত এই হাদীসে পাক মনোযোগ সহকারে পড়েন: হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত যে, মক্কী মাদানী মুস্তফা (ﷺ) করেন: যখন তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে অবস্থান করে, শয়তান এসে তার শরীরের উপর হাত বুলিয়ে দেয়, যেমনিভাবে তোমাদের মধ্যে কেউ নিজের ঘোড়াকে পোষ মানানোর (অর্থাৎ অনুগত ও বাধ্য করার) জন্য তার উপর হাত বুলিয়ে থাকে। অতঃপর যদি ঐ ব্যক্তি ফেঁসে যায়, (অর্থাৎ তার কুমন্ত্রণায় পরে যায়) তখন তাকে বেঁধে নেয় বা লাগাম লাগিয়ে দেয়। হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা বলেন যে, (এই) হাদীসের সত্যতা তোমরা নিজের চোখে দেখছো, যে বাঁধা রয়েছে, তাকে তোমরা দেখবে যে, এমনভাবে নত হয়ে আছে, আল্লাহর যিকির করছে না এবং যে লাগাম দিয়েছে, সে মুখ খোলে আল্লাহ তায়ালার যিকির করতে পারে না। 

(মুসনাদে ইমাম আহমদ, হাদীস নং-৮৩৭, ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৭৭১ হতে ৭৭২ পৃষ্ঠা)


গান্ধে গান্ধে ওয়াসাভিস আ‘তে হে 

মেরে দিল সে উনহে নিকাল আক্বা। 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ২০৯ পৃষ্ঠা)

صَلُّوْا عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد


গোসলের সময় কুমন্ত্রণা

 

গোসলের সময় শয়তান সন্দেহ সৃষ্টি করে, যেমন; কখনো কুমন্ত্রণা আসে যে, সম্ভবত পিঠ শুকনো রয়ে গেছে, সম্ভবত মাথার চুল ভালোভাবে ভিজেনি, অমুক অঙ্গটি শুকনা রয়ে গেছে ইত্যাদি। অথচ এরূপ নয়, যদি ঐ অংশ ভালোভাবে ঘষে ধুয়ে নেয়া হয়, তবে সন্দেহে পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। 


গোসলে কুমন্ত্রণা আসার একটি কারণ । মনে রাখবেন! গোসল খানায় প্রস্রাব করার কারণে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হয়, সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা উচিৎ, যেমন: নবীয়ে করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) করেন: “কেউ যেনো কখনোই গোসল খানায় প্রস্রাব না করে, অতঃপর এতে গোসল বা অযু করলে, সাধারনত অধিকাংশ কুমন্ত্রণা তা থেকে সৃষ্টি হয়। 

(সুনানে আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৭) 


হাদীসে পাকের ব্যাখ্যা দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা হতে প্রকাশিত ২৯৭ পৃষ্ঠা সম্বলিত “ইসলামী বোনদের নামায (হানাফী)” এর ১৯৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে। প্রসিদ্ধ মুফাসসির,হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এই হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন: যদি গোসলখানার মেঝে শক্ত হয় এবং এতে

পানি বের হওয়ার পাইপ থাকে, তবে সেখানে প্রস্রাব করাতে কোন ক্ষতি নেই। তবে উত্তম হল না করা, কিন্তু যদি মেঝে কাঁচা হয় আর পানি বের হওয়ার রাস্তাও না থাকে, তবে প্রস্রাব করা খুবই মন্দ কাজ, কেননা এতে মেঝে নাপাক হয়ে যাবে আর গোসল বা অযুতে নাপাক পানি শরীরে পড়বে। এখানে দ্বিতীয় অবস্থাই উদ্দেশ্য। এজন্য জোরপূর্বক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ এর থেকে কুমন্ত্রণা এবং সন্দেহের রোগ সৃষ্টি হয়, যেমনটি পরীক্ষিত যে, অথবা অপবিত্র ছিটা পড়ার কুমন্ত্রণা থাকে।

 (মিরআত, ১ম খন্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা


কুমন্ত্রণার ধ্বংসযজ্ঞতার ঘটনা


 আমার আক্বা, আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)  ফতোয়ায়ে রযবীয়া ১ম খন্ডের ১০৪৩ পৃষ্ঠার ‘২য় অংশে’ কুমন্ত্রণার উত্তম প্রতিকার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: কুমন্ত্রণা না শুনা, এর উপর আমল না করা, এর বিরোধীতা করাও (কুমন্ত্রণার প্রতিকার)। এই মহা বিপদের (অথার্ৎ কুমন্ত্রণার) অভ্যাস হলো যে, এর (অর্থাৎ কুমন্ত্রণা) উপর যতই আমল করবে, ততই বৃদ্ধি পাবে এবং যখন ইচ্ছাকৃত এর বিপরীত করা হয় তখন আল্লাহর হুকুমে কিছুক্ষনের মধ্যেই তা একেবারে দূর হয়ে যাবে। হযরত সায়্যিদুনা ওমর ইবনে মুররাহ (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন: “শয়তান যাকে দেখে যে, আমার কুমন্ত্রণা তার মাঝে প্রভাব বিস্তার করছে, সবচেয়ে বেশি তার পিছনে পড়ে থাকে।”

(মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা, ১ম খন্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা)


ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁর “ফতোয়া”য় বলেন: আমাকে কিছু উপযুক্ত লোকেরা বর্ণনা করলো যে, “দু’জন কুমন্ত্রণার শিকার ব্যক্তির” গোসলের প্রয়োজন হলো, নীল নদে গেলো, সূর্য উদয়ের পর পৌঁছেছে, একজন অপরজনকে বললো:‌ তুমি নেমে ডুব দিতে থাক, আমি গণনা করবো আর তোমাকে বলবো যে, পানি তোমার পুরো মাথায় পৌঁছেছে কিনা। সে নামলো এবং ডুবৎদিতে শুরু করলো আর অপরজন বলতে লাগলো যে, এখনো তোমার মাথার কিছু অংশ বাকি আছে, সেখানে পানি পৌঁছেনি, একজনরই এরূপ করতে করতে সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেলো, অবশেষে সে উঠে এলো এবং মনে সন্দেহ রয়ে গেলো যে, গোসল হয়েছে কিনা? অতঃপর সে অপরজনকে বললো: তুমি নামো, আমি গণনা করবো। সে ডুব দিতে লাগলো এবং সে (প্রথমজন) বলতে লাগলো যে, এখনো তোমার পুরো মাথায় পানি পৌঁছেনি, এখানে দুপুর থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেল, অগত্যা (দ্বিতীয়জন) নদী থেকে উঠে এলো এবং মনে সন্দেহ রয়েই গেল। সারা দিনের নামায হারালো এবং গোসল আদায় হওয়া সম্পর্কে বিশ্বাস হচ্ছিলো না এবং হলোও না।) অর্থাৎ আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) এটি কুমন্ত্রণাকে মানার প্রতিফল। 

(হাদীকাতুন নাদীয়া, ২য় খন্ড, ৬৯১ পৃষ্ঠা)


মুঝে ওয়াসওয়াসোঁ সে বাঁচা ইয়া ইলাহী!

 পায়ে গাউস ও আহমদ রযা ইয়া ইলাহী!

صَلُّوْا عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد 


অযুতে কুমন্ত্রণা 


ওয়ালহান নামক শয়তান অযুর ব্যাপারে বিভিন্ন কুমন্ত্রণা দিয়ে 

থাকে, যেমন; অযুর সময় সন্দেহ প্রদান করে যে, অমুক অংশ ধৌত হয়নি, অমুক অংশ তিনবারের পরিবর্তে দুইবার ধৌত হয়েছে, অনুরূপভাবে অযু সম্পন্ন ব্যক্তিকেও কুমন্ত্রণা প্রদান করে যে, তোমার অযু ভঙ্গ হয়ে গেছে, অযু করেছো অনেক্ষণ হয়ে গেছে এতক্ষণ কি আর অযু আছে! ইত্যাদি, এমতাবস্থায় শয়তানের কুমন্ত্রনার প্রতি একেবারেই মনোযোগ না দেয়া উচিৎ। অযুতে কুমন্ত্রণা প্রদানকারী শয়তানের ব্যাপারে শাহানশাহে মদীনা, প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন: অযুর জন্য একটি শয়তান রয়েছে, যার নাম হলো “ওয়ালহান” সুতরাং তোমরা পানির কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাক। 

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, ২৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৪২১)


পায়জামার রুমালীর উপর পানি ছিঁটানো 


 যদি অযুর পর প্রস্রাবের ফোঁটা পরার ব্যাপারে সন্দেহ হতে থাকে, তবে এই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার একটি পদ্ধতি এটাও যে, অযুর পর নিজের পায়জামা বা সেলোয়ারের রুমালীর (অর্থাৎ লজ্জাস্থানের নিকটবর্তী চারকোণা একটি কাপড়) উপর পানি ছিটিয়ে দিন। হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) তাজেদারে মদীনা (ﷺ) َইরশাদ করেন: যখন তুমি অযু করবে, তখন পানি ছিটিয়ে দাও।

 (ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড,২৭০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৬৩)


অতঃপর যদি প্রস্রাবের ফোঁটার কুমন্ত্রণা আসে, তবে ধারণা করে নিন, যে পানি ছিটিয়ে ছিলো, এটা তার প্রভাব, তবে হ্যাঁ যার আসলেই প্রস্রাবের ফোঁটা আসে তার বিষয়টি ভিন্ন।


অযুর মধ্যে কুমন্ত্রণা আসলে তখন কি করবে? 


 দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা 

হতে প্রকাশিত ১২৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” প্রথম খন্ডের ৩১০ পৃষ্ঠায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: “যদি অযু করার সময় কোন অঙ্গ ধৌত করার ক্ষেত্রে সন্দেহ সৃষ্টি হলো এবং তা জীবনের প্রথম ঘটনা, তবে তা ধৌত করে নিন আর যদি সবসময় সন্দেহ সৃষ্টি হয় তবে সেদিকে মনোযোগ দিবেন না। অনুরূপভাবে যদি অযু করার পর সন্দেহ হয় যে, অযু কি আছে নাকি ভেঙ্গে গেছে, তবে এমতাবস্থায় তার অযু করার প্রয়োজন নেই। তবে হ্যাঁ! যদি এই সন্দেহ কুমন্ত্রণা স্বরূপ না হয়, তবে করে নেয়া উত্তম এবং যদি কুমন্ত্রণা হয়, তবে তা কখনোই মানবে না, এ অবস্থায় সাবধানতা মনে করে অযু করা সাবধানতা নয় বরং অভিশপ্ত শয়তানের আনুগত্য প্রকাশ করা। ” 


তু অযু কে ওয়াসওয়াসোঁ সে ইয়া খোদা মুঝকো বাঁচা, 

সাথ যা‘হির কে মে‘রা বাতিন ভি হো জা‘য়ে সাফা।


নামাযে অযু ভঙ্গ হওয়ার কুমন্ত্রণা 


 নামাযে শয়তান কখনো কুমন্ত্রণা দেয় যে, অযু ভঙ্গ হয়ে গেছে, কখনো প্রস্রাবের ফোঁটা বের হওয়ার, কখনোবা বায়ু বের হওয়ার সন্দেহ অন্তরে দিয়ে থাকে। সুতরাং এ প্রসঙ্গে আমার আক্বায়ে নেয়ামত, আ’লা হযরত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, আশিকে মাহে নবুওয়ত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কতিপয় হাদীসে মুবারাকা উদ্ধৃত করার পর বলেন: এই হাদীসে মুবারাক থেকে এটাই অর্জিত হয়েছে যে, শয়তান নামাযে ধোঁকা দেয়ার জন্য কখনো মানুষের লজ্জাস্থানে থুথু নিক্ষেপ করে, যেনো তার ধারণা হয় যে, প্রস্রাবের ফেঁাটা বের হয়েছে, কখনো পেছনে ফুঁক দেয় বা লোম টেনে দেয়, যেনো বায়ু বের হওয়ার ধারণা হয়। এর (এরূপ কুমন্ত্রণা আসাতে) হুকুম হচ্ছে যে, নামায ভঙ্গ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আদ্রতা বা আওয়াজ বা গন্ধ পাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্পষ্ট অপবিত্রতা (অর্থাৎ অযু ভঙ্গ হওয়ার উপর) দৃঢ় বিশ্বাস না হয়। 

(ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৭৭৪ পৃষ্ঠা)


শয়তানকে বলে দাও: “তুই মিথ্যুক” 

 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যতক্ষণ পর্যন্ত অযু ভঙ্গ হওয়ার উপর দৃঢ় বিশ্বাস হবেনা যে, যার উপর শপথ করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত অযু ভঙ্গ হবেনা, শয়তান যখন বলবে: তোমার অযু ভঙ্গ হয়ে গেছে, তখন মনে মনে উত্তর দিন যে, কলুষিত শয়তান তুই মিথ্যুক এবং আপন নামাযে মনোযোগী থাকুন, যেমন; হযরত সায়্যিদুনা আবু সাইদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত যে, প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা ইরশাদ করেন: যখন তোমাদের কারো নিকট শয়তান এসে কুমন্ত্রণা দেয় যে, তোমার অযু ভঙ্গ হয়ে গেছে, তখন দ্রুত তাকে মনে মনে উত্তর দাও যে, তুই মিথ্যুক। যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের কানে শুনেনি বা নাকে গন্ধ পায়নি। 

(আল ইহসান বিতারতিবে সহীহ ইবনে হিব্বান, ৪র্থ খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৬৫৬) 

 

আমি নগন্য আমার আমলও নগন্য 

 

আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন  বলেন: “যদি তবুও শয়তান কুমন্ত্রণা দেয় যে, তুমি এই আমল পরিপূর্ণ করোনি, এতে অমুক ত্রুটি রয়ে গেছে, তখন শয়তানকে বলে দাও যে, তোমার আন্তরিকতা সামলে রাখো (অর্থাৎ শয়তান নিজের সহানুভূতি যেনো নিজের কাছেই রাখে, আমার নিকট প্রকাশ করার কোন কারণ নেই এবং আমার জন্য মনকষ্ট পাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই), আমার দ্বারা এতটুকুই হতে পারে, যদি (আমার আমল) অসম্পূর্ণ হয়, তবে আমিও তো নগন্য, নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী করেছি, আমার মাওল দ َয়ালু। আমার দূর্বলতা ও অক্ষমতার প্রতি দয়া করে এতটুকুই কবুল করে নিবেন, তাঁর মহত্বের উপযুক্ত আমল কেইবা করতে পারে! যদি এরূপ করাতেও কুমন্ত্রণা দূর

না হয়, তবে বলে দাও যে, যদি তোমার বলাতে আমার অযু না হয়, আমার নামায না হয়, তবে না হোক, কিন্তু  তোমার ধারনা 

কুমন্ত্রণা অনুযায়ী অযু ছাড়া বা যোহরের তিন রাকাত পড়াও 

পছন্দনীয়, হে অভিশপ্ত! তোমার আনুগত্য করবো না। যখন মনে মনে এরূপ দৃঢ় সংকল্প করে নিবে, তখন কুমন্ত্রণার শিকড় সহ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে শত্রু (শয়তান) অপদস্থ ও হতভাগা পিছপা হয়ে যাবে। 

(ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৭৮৬-৭৮৭ পৃষ্ঠা) 


 হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর বাণীরও উদ্দেশ্য এটাই যে, তিনি  বলেন: আমার অযু ছাড়া নামায আদায় করে নেয়া, শয়তানের আনুগত্য করার চেয়ে বেশি পছন্দনীয়। (এখানে আসলেই অযু ছাড়া নামায আদায় করা উদ্দেশ্য নয় বরং শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করাই উদ্দেশ্য) 

(হাদীকাতুন নাদীয়া, ২য় খন্ড, ৬৮৮ পৃষ্ঠা) 


যাও! আমি অযু ছাড়াই নামায আদায় করবো 

 হযরত সায়্যিদুনা ইমামে আযম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর ওস্তাযুল ওস্তাদ ইমামে আজল ইবরাহীম নাখয়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)  বলেন: শয়তানের কুমন্ত্রণার উপর আমল করো না, যদি সে বেশি বিরক্ত করে তবে তাকে বলে দাও: “আমি অযু ছাড়াই পড়বো, তোমার কথা শুনবো না।” আর এভাবে সেই অভিশপ্ত বিরত থাকবে এবং তার কথা শুনলে, তবে সে আরো অধিক বিরক্ত করবে।


মে তেরী ইতা’আত করোঁ ইয়া ইলাহী!

 না শয়তাঁ কী হারগিয সুনোঁ ইয়া ইলাহী! 


নামাযে কুমন্ত্রণা 


 নামাযেও শয়তান বিরক্ত করে থাকে এবং মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করতে থাকে। “মুসলিম শরীফে” বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত সায়্যিদুনা ওসমান বিন আবিল আস (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন যে, আমি আরয করলাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ !َশয়তান আমাকে এবং আমার নামাযে ও তিলাওয়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, নামাযে সন্দেহ সৃষ্টি করে দেয়। হুযুরে আকরাম, নূরে মুজাসসাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: এই শয়তান কে খিনযাব বলা হয়, যদি কখনো তুমি তা অনুভব করো, তখন আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করো এবং বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করো। সুতরাং আমি এরূপ করেছি, তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে দূর করে দিয়েছেন। 

(সহীহ মুসলিম, ১২০১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২২০৩) 


নামাযে আসা কুমন্ত্রণাগুলো থেকে বাঁচার পদ্ধতি 

 

প্রসিদ্ধ মুফসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উল্লেখিত হাদীসে পাকের ব্যাখ্যায় বলেন: নামায শুরু করার সময় তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে, অভিজ্ঞতা এরূপ যে, যে ব্যক্তি তাহরীমা (অর্থাৎ নামায শুরু করার) পূর্বে এভাবে (অর্থাৎ বাম দিকে ৩ বার) থুথু নিক্ষেপ করে লা হাওল শরীফ  পাঠ করবে, অতঃপর তাহরীমা করবে (অথার্ৎ নামায শুরু করবে), নামাযের মধ্যে দৃষ্টির হিফাযত করবে (তা এভাবে যে,) দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানে, রুকুতে পায়ের উপর (অর্থাৎ পায়ের পাতার উপরের অংশে), সিজদায় নাকের উপর (অর্থাৎ নাকের হাঁড়ের উপর), বৈঠকে (অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝখানে বসা) এবং কাদায় (অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাত ইত্যাদি পাঠ করার সময়) কোলের দিকে দৃষ্টি রাখবে, তবেَ  ّনামাযে একাগ্রতা (অথার্ৎ বিনয়ী ও নম্রতা) নসীব হবে। 

(মিরাতুল মানাজিহ, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃষ্ঠা) 


থুথু শয়তানের মুখে গিয়ে পড়ে 

 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মিশকাত শরীফের “বাবুল ওয়াসওয়াসা” এর মধ্যে উল্লেখিত আরো একটি হাদীসে পাকে 

রয়েছে, যেখানে ‘কুমন্ত্রণার প্রতিকারে’র জন্য বাম দিকে ৩ বার থুথু নিক্ষেপ করার কথা উল্লেখ রয়েছে, এই হাদীসে পাকের আলোকে প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: এই থুথু শয়তানের মুখে গিয়ে পড়ে, যার ফলে সে অপদস্থ হয়ে পালিয়ে যায়, কেননা শয়তান অধিকাংশ সময় বাম দিক দিয়ে আসে। এ থেকে বুঝা যায় যে, কখনো কখনো থুথুর কারনেও শয়তান পালিয়ে যায়।

 (মিরআত, ১ম খন্ড, ৮৮ পৃষ্ঠা)


সাগে মদীনা 'র  ُলিখক এর অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে যে, যখন ইস্তিঞ্জাখানায় শয়তানের কুমন্ত্রণা আসে, তখন বাম কাঁধের দিকে ৩ বার থুথু দেয়ার ফলে শয়তান অপদস্থ হয়ে পালিয়ে যাবে। 


(ইস্তিঞ্জাখানায় লা হাওলা শরীফ ও অন্যান্য দোয়া ইত্যাদি পড়া নিষেধ)


না ওয়াসওয়াসা আয়ে না মুঝে গান্ধে খেয়ালাত, 

কর যেহেন কা আল্লাহ আতা কুফলে মদীনা


রাকাতের ব্যাপারে কুমন্ত্রণা 

 

শয়তান নামাযে কুমন্ত্রণা দিয়ে তার রাকাতের মধ্যেও সন্দিহান করে দেয়। হাদীসে পাকে রয়েছে যে, এক ব্যক্তি প্রিয় নবী (ﷺ) َএর দরাবারে উপস্থিত হয়ে কুমন্ত্রণার অভিযোগ করলো যে, নামাযের মনে থাকে না, দু’রাকাত পড়েছি নাকি তিন রাকাত। হুযুর নবীয়ে করিম, রউফুর রহীম (ﷺ) করেন: যখন তোমার এরূপ হবে তখন নিজের ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে নিজের বাম রানে আঘাত করবে এবং পাঠ করবে, এটা শয়তানের নিকট ছুড়ির (আঘাতের) ন্যায়।

(আল মু’জামুল কবীর লিত তাবরানী, ১ম খন্ড, ১৯২ পৃষ্ঠা,হাদীস নং- ৫১২)


 অনুরূপভাবে যার নামাযে কুমন্ত্রণা আসার অভ্যাস আছে, তার উচিৎ যে, নামায শুরু করার পূর্বেই এই আমল করে নেয়া।


রুকুর মধ্যে সন্দেহের মাসয়ালা 


 দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশিত প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা 

কর্তৃক প্রকাশিত ১২৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” ১ম খন্ডের ৭১৮ পৃষ্ঠায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী  (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: যার রাকাতের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, যেমন; তিন রাকাত হলো নাকি চার রাকাত এবং বালিগ হওয়ার পর এটাই ১ম ঘটনা, তবে সালাম ফিরিয়ে বা নামায ভঙ্গকারী এমন কোন কাজ করে নামায ভঙ্গ করে দিন বা প্রবল ধারণা অনুযায়ীই পড়ে নিন কিন্তু সবার্বস্থায় এই নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে। শুধুমাত্র ভঙ্গ করার নিয়্যতই যথেষ্ট নয়, আর যদি এই সন্দেহ প্রথমবার নয় বরং এর পূর্বেও হয়েছিলো তখন প্রবল ধারণা যেদিকে হবে সেদিকেই আমল করুন, অন্যথায় কমকেই অবলম্বন করুন, অথার্ৎ তিন রাকাত এবং চার রাকাতের মধ্যে সন্দেহ হলে তখন তিন রাকাতকেই নির্দিষ্ট করুন, দুই রাকাত এবং তিন রাকতের মধ্যে সন্দেহ হলে তখন দুই রাকাতকে। এবং এই অনুমানকেই অনুসরন করুন) এবং ৩য় ও ৪র্থ উভয় রাকাতে কাদা করবে (অর্থাৎ তাশাহুদ পাঠ করবে) যে ৩য় রাকাতটি ৪র্থ রাকাত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল (অর্থাৎ ৩য় রাকাতটি ৪র্থ রাকাত এর স্থানে ছিল) এবং ৪র্থ রাকাতে কাদা করার পর সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে। তবে প্রবল ধারনা করাবস্থায় সাহু সিজদা করতেহবে না।


শয়তানের জন্য অপদস্থতা ও যন্ত্রণার কারণ


আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন তিন: রাকাত এবং চার রাকাতের মধ্যে সন্দেহ হলে তখন তিনকেই প্রাদান্য দিয়ে এক রাকাত বেশি পড়ে নিন, অতঃপর সাহু সিজদা করে নিন, এবার যদি আসলেই তার পাঁচ রাকাত হয় তবে এই দুইটি সিজদা যেনো এক রাকাতের পরিপুরক হয়ে তার নামায দুই রাকাত পূর্ণ হয়ে যায়। এক রাকাত যেন একা না থাকে, যা শরয়ীভাবে অগ্রহণযোগ্য বরং এই সিজদাগুলোসহ মিলে যেনো দু’রাকাতের নফল আলাদাভাবে আদায় হয়ে যাবে। যদি আসলেই চার রাকাত হয় তবে এই সিজদা শয়তানের জন্য অপদস্থতা ও যন্ত্রণার কারণ হবে যে, সে সন্দেহ সৃষ্টি করে নামায ভঙ্গ করাতে চেয়েছিলো। (ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ১০ম খন্ড, ৮২৬ পৃষ্ঠা) 


এক বুযুর্গ শয়তানকে নিরাশ করে ফিরিয়ে দিলো 

 

এক বুযুর্গের নিকট নামাযের পর শয়তান এসে বললো: আপনি এই নামায বিশুদ্ধ ভাবে পড়েননি, সুতরাং একে পুনরায় আদায় করে নিন। উত্তর দিলেন: আমি কখনোই এই নামায পুনরায় আদায় করবো না, কেননা যেভাবে আমার পড়ার ছিলো, সেভাবে আমি পড়ে নিয়েছি, যদি এতে ভূল রয়ে যায়, তবে আমি তা আমার রব তায়ালার নিকট ক্ষমা চেয়ে নিবো। শয়তান বললো। নামাযের ন্যায় মহান ইবাদতের ব্যাপারে অলসতা করবেন না, এতে অলসতা করার সুযোগ 

নেই, আপনি পুনরায় নামায পড়ে নিন। তিনি বললেন: যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, আমি এই নামায পুনরায় কখনোই পড়বো না। শয়তান আবারো বললো: দেখুন, আমি আপনার কল্যাণের জন্য উপদেশ দিচ্ছি, আমি আপনার কল্যাণকামী, আল্লাহ তায়ালার দরবারে আপনার সম্মান ও মযার্দা অনেক উচ্চ, নামায এক মহান ইবাদত, আপনার মতো নেককার বান্দার নামাযের ব্যাপারে একগুঁয়োমি করা উচিৎ নয়। ঐ বুযুর্গ শয়তানকে অপমান করার জন্য বললেন: যাই হোকনা কেন, আমি এই নামায পুনরায় পড়বো না, আর আল্লাহ তায়ালার দরাবারের উচ্চ মযার্দার কথা বলছো, তবে আমি তাঁর দরবারে উচ্চ মযার্দার পরিবর্তে নিকৃষ্টতার উপরই সন্তুষ্ট। শয়তান বললো: আল্লাহ তায়ালাএরূপ নামায কবুলই করেন না। ঐ বুযুর্গ বললেন: আমার আল্লাহ তায়ালা খুবই দয়ালু, তিনি আপন করুণায় আমার এই অপরিপূর্ণ আমলকেও কবুল করে নিবেন, যা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো, তা আমি করে নিয়েছি, এবার কবুল করা তাঁর কাজ। এখন তুমি এখান থেকে দূর হয়ে যাও, আমি তোমার কুমন্ত্রণায় পড়ে এই নামায কখনোই পুনরায় আদায় করবো না। অবশেষে যখন শয়তান তার পরাজয় অনুভব করলো তখন অপদস্থ ও যন্ত্রণা নিয়ে ফিরে গেল। 


 মনে রাখবেন! এই বুযুর্গ তাকে (শয়তান) এরূপ কঠোরতার সহিত প্রত্যাখান করার উদ্দেশ্য এটাই ছিল যে, শয়তানকে অপদস্থ করা, তার কুমন্ত্রণাকে দূরীভূত করা যায় এবং তার পথরোধ বন্ধ করা। এই উদ্দেশ্য ছিল না যে, আমল অশুদ্ধ ও অপরিপূর্ণই ছেড়ে দিবে এবং অলসতা ও উদাসীনতাকে অব্যাহত রাখবে আর প্রতারক নফস এবং আল্লাহ তায়ালার দয়ার উপরই ভরসা করে নেয়া যে, যেনতেন ভাবে ভূল নামায আদায় করে নিবে এবং এটাকেই যথেষ্ট মনে করে নিবে আর মনকে সান্তনা দেয়ার জন্য এরূপ বলবেন যে, আল্লাহ তায়ালা দয়ালু তিনি ক্ষমা করে দিবেন। (আশিআহ, ১ম খন্ড, ৯২ পৃষ্ঠা)


কুমন্ত্রণার অনন্য খন্ডন 


 এক বুযুর্গের প্রায় এই কুমন্ত্রণা আসতো যে, যেখানে আমি নামায পড়ছি, সেই স্থান অপবিত্র, তখন তিনি এই কুমন্ত্রণাকে এভাবে খন্ডন করলেন যে, ইচ্ছাকৃত সেখানেই নামায পড়তো, যেখানে অপবিত্রতার সন্দেহ হতো। (আশিআহ ১ম খন্ড, ৯৩ পৃষ্ঠা) 


★ কুমন্ত্রণার প্রতি মনোযোগই দিওনা 


 এক ছাত্র শিক্ষা জীবন শেষ করে দেশে ফিরে যাচ্ছিলো, তখন সম্মানিত ওস্তাদ জিজ্ঞাসা করলেন: যখন ইবাদতের মাঝে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়, তখন কি করো? আরয করলো: তা তাড়িয়ে দিই। জিজ্ঞাসা করলেন: যদি আবারো কুমন্ত্রণা দেয় তখন? উত্তর দিলো: তাকে পুনরায় দূর করে দিই। তৃতীয়বার জিজ্ঞাসা করলো: যদি তৃতীয়বার কুমন্ত্রণা দেয় তখন? বললো: তবুও তাকে তাড়িয়ে দিই। শিক্ষক মহোদয় উপদেশ দিলেন: যখন শয়তান তোমাকে ইবাদতেকুমন্ত্রণা দিবে, তখন তার দিকে মনোযোগ দিওনা, কেননা যদি তুমি তার কুমন্ত্রণাকে থামাতে লেগে যাবে, তখন সে তোমাকে ঐ কাজেই ব্যস্ত রাখবে বরং তুমি তার সাথে “পথের কুকুরের” মতোই আচরণ করো, তার প্রতি মনোযোগই দিও না এবং তার থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। (অর্থাৎ "আউযুবিল্লাহ"  পুরোটা পাঠ করে নাও)

 (রুহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ৬ পৃষ্ঠা) 


নামাযোঁ মে শয়তাঁ খালাল ঢালতা হে, 

মুঝে ইস কে শর সে বাঁচা ইয়া ইলাহী! 


صَلُّوْا عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد


পবিত্রতার ক্ষেত্রে কুমন্ত্রণা 


 শয়তান পবিত্রতার ক্ষেত্রেও কুমন্ত্রণা প্রদান করে এবং সন্দেহ 

ও সংশয় সৃষ্টি করে যে, এটা অপবিত্র, ওটা অপবিত্র। আপনি 

কুমন্ত্রণার প্রতি মনোযোগ দিবেন না, পবিত্রতার ক্ষেত্রে পবিত্র 

শরীয়াতে আমাদের জন্য অনেক বেশী সহজতা রেখেছেন, কিন্তু দ্বীনের জ্ঞান কম হওয়ার কারণে অনেকে কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে যায়। শরীয়াতের এই মাসয়ালা অন্তরে গেঁথে নিন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোন জিনিস অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে অবগত না হয়, শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে তা অপবিত্র বলা যাবে না, বরং কোন জিনিসের অপবিত্রতা খোঁজার পেছনে পরার প্রয়োজন নেই।অপবিত্রতার ব্যাপারে অনুসন্ধান করার প্রয়োজন নেই 


 আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা

শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)  ফতোয়ায়ে রযবীয়া ৪র্থ খন্ডের ৫১৫ পৃষ্টায় উদ্ধৃত করছেন: আমীরুল মু‘মিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুক  এক হাউজের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন (সেই হাউজটি “দা’দরদা” অথার্ৎ ১০ গজের ছোট এবং আবদ্ধ পানির হুকুমে ছিলো আর আবদ্ধ পানি থেকে যদি হিংস্র প্রাণী পানি পান করে তবে তা অপবিত্র হয়ে যায়) ওমর ইবনে আস (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) যিনি সাথে ছিলেন। (সেই) হাউজের মালিককে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো: তোমার হাউজ থেকে কি হিংস্র প্রাণীরাও পানি পান করে? (আমীরুল মু‘মিনিন (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)  (বললেন: “হে হাউজের মালিক! আমাদেরকে বলো না।” 

(মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক, ১ম খন্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা, নম্বর- ৪৭)


প্রাণীদের উচ্ছিষ্ট সম্পর্কিত মাদানী ফুল 

 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দেখলেন তো আপনারা! অপবিত্রতার অনুসন্ধানে পরার প্রয়োজন নেই, অথচ এর সম্ভাবনা রয়েছে যে, হাউজে হিংস্র প্রানী যেমন; কুকুর পানি পান করেছে এবং যে আবদ্ধ অর্থাৎ ১০ গজের কম পানি কুকুর উচ্ছিষ্ট করে দেয় তা অপবিত্র হয়ে যায়। কিন্তু যে জানেই না যে, হিংস্র প্রাণী এর থেকে পানি পান করেছে কিনা, তার জন্য ঐ পানি পবিত্র। দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত ১২৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” প্রথম খন্ডের ৩৪২ পৃষ্টায় ১০ নং মাসয়ালায় রয়েছে: “শুকর, কুকুর, বাঘ, চিতা, নেকড়ে, হাতী, শেয়াল এবং অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর উচ্ছিষ্ট নাপাক। এপ্রসঙ্গে হিংস্র প্রাণীর উচ্ছিষ্ট সম্পর্কিত আরো ৮টি মাদানী ফুলও আলোচনা করা হলো, َনিয়া ও আখিরাতে উপকার অর্জিত হবে। 


(১) যে প্রাণীর মাংস খাওয়া যায়, চতুষ্পদ প্রাণী হোক বা পাখি, তাদের উচ্ছিষ্ট “পবিত্র”, যদিওবা নর (পুরুষ) হয়, যেমন; গাভী, ষাঁড়, মহিষ, ছাগল, কবুতর, তিতির ইত্যাদি। 

(২) যে মুরগী বাইরে বিচরণ করে এবং আবর্জনায় মুখ দেয়, তবে এর উচ্ছিষ্ট মাকরূহ এবং যদি ঘরে বন্ধ থাকে, তবে পবিত্র। 

(৩) অনুরূপভাবে অনেক গাভী যাদের অভ্যাস আবর্জনা খাওয়া, তাদের উচ্ছিষ্ট মাকরূহ এবং যদি এখনই নাপাকী খেয়েছে ও এরপর এমন কোন বিষয় পাওয়া যায়নি যার ফলে তার মুখ পবিত্র হয়ে গেছে আর এ অবস্থায় (যদি আবদ্ধ অথার্ৎ ১০ গজের কম) পানিতে মুখ দিলে তা নাপাক হয়ে যাবে। (আর যদি প্রবাহিত পানিতে মুখ দিয়ে পানি পান করে তবে মুখ পবিত্র হয়ে যাবে) 


অনুরূপভাবে যদি ষাঁড়, মহিষ, ছাগলের নরদের (পুরুষ) অভ্যাস অনুযায়ী মাদীদে (নারী) প্রস্রাবের ঘ্রাণ নেয় এবং এতে তাদের মুখ নাপাক হয়ে যাবে আর এতক্ষন পর্যন্ত দৃষ্টির অদৃশ্য হয়নি যতক্ষনে পবিত্র হয়ে যায়, তবে তাদের উচ্ছিষ্ট অপবিত্র এবং যদি ৪টি (আবদ্ধ) পানিতে মুখ দেয় তবে প্রথম ৩টি অপবিত্র ও ৪র্থটি পবিত্র।


(৪) ঘোড়ার উচ্ছিষ্ট পবিত্র। 

(৫) ঘরে অবস্থানরত প্রাণী যেমন: বিড়াল, ইঁদুর, সাপ, টিকটিকির উচ্ছিষ্ট মাকরূহ। 

(৬) বিড়াল ইঁদুর খেলো এবং সাথেসাথেই পাত্রে মুখ দিলে তবে তা অপবিত্র হয়ে গেলো এবং যদি জিহ্বা দিয়ে মুখ চেঁটে নিলো যে, রক্তের চিহ্ন চলে গেলো, তবে অপবিত্র নয়। 

(৭) ভালো পানি থাকাবস্থায় মাকরূহ পানি দ্বারা অযু ও গোসল করা মাকরূহ এবং যদি ভালো পানি না থাকে, তবে কোন ক্ষতি নেই। অনুরূপভাবে মাকরূহ উচ্ছিষ্ট খাওয়া ধনীদের জন্য মাকরূহ, গরীব ও অভাবীদের জন্য মাকরূহ বিহীনভাবে জায়িয। 

(৮) যে সকল প্রাণীর উচ্ছিষ্ট অপবিত্র তাদের ঘাম এবং লালাও অপবিত্র এবং যে সকল প্রাণীর উচ্ছিষ্ট পবিত্র তাদের ঘাম এবং লালাও পবিত্র আর যে সকল প্রাণীর উচ্ছিষ্ট মাকরূহ তাদের ঘাম এবং লালাও মাকরূহ।

 (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৪২ হতে ৩৪৪ পৃষ্ঠা)


কাদার মাধ্যমে কুমন্ত্রণার আশ্চর্য্য প্রতিকার 


 আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানাশাহ ইমাম আহমদ রযা খান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ফতোয়ায়ে রযবীয়া ১ম খন্ডের ৭৭১ পৃষ্ঠায় বলেন: সা‘লেহীন  অর্থাৎ নেককার বান্দাদের মধ্য হতে একজন বলেন: আমার পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে কুমন্ত্রণা ছিলো। রাস্তার কাদা যদি কাপড়ে লেগে যেতো তবে তা ধৌত করতাম। (অথচ যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানা যাবে নাততক্ষণ পর্যন্ত কাদা পাক হয়ে থাকে) একদিন ফজরের নামাযের জন্য যাচ্ছিলাম, রাস্তার কাদা লেগে গেল, আমি ধৌত করতে চাইলাম এবং স্মরনে এলো যে, ধৌত করতে গেলে জামাআত চলে যাবে, হঠাৎ আল্লাহ তায়ালাَ আমাকে হিদায়ত দান করলেন এবং আমার অন্তরে প্রদান করলেন যে, এই কাদায় ফিরে যাও এবং সম্পূর্ণ কাপড়ে কাদা লাগিয়ে নাও আর এই অবস্থায় নামাযে অংশগ্রহণ করো। আমি এমনই করলাম, অতএব কুমন্ত্রণা এলো না। 

(আল হাদীকাতুন নাদীয়া, ২য় খন্ড, ৬৯৯ পৃষ্ঠা) 


যতক্ষণ পর্যন্ত জানবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কাদা পবিত্র 

 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! এটা ইলমে 

দ্বীনের বরকত, সেই বুযুর্গের মাসয়ালাটি জানা ছিল যে, রাস্তার কাদা ততক্ষণ পর্যন্ত অপবিত্র সাব্যস্ত করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ কাদা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যাবেনা, সুতরাং তিনি কুমন্ত্রণার ভালই প্রতিকার করলেন! দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত রিসালা “কাপড় পাক করার পদ্ধতি” তে রয়েছে: রাস্তার কাদা (হোক তা বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে) পবিত্র যতক্ষণ পর্যন্ত তা অপবিত্র হওয়াটা নিশ্চিত হবেনা, তবে যদি পা বা কাপড় লেগে যায় এবং ধৌত করা ব্যতীত নামায পড়ে নিলে হয়ে যাবে, কিন্তু ধুঁয়ে নেয়া উত্তম। 

(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৯৪ পৃষ্ঠা)


চাদরের কোন্ কোণায় নাপাক ছিলো তা স্মরণ না থাকলে তবে? 


 কখনো জামায় নাপাকী লেগে গেলো এবং ভূলে গেলো যে 

কোথায় লেগেছে, তখন মানুষ কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে যায়, 

এমতাবস্থায়ও পবিত্র শরীয়াত আমাদের অনেক সহজতা প্রদার করেছেন। সুতরাং ফতোয়ায়ে রযবীয়া শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে, চাদরের এক কোণায় নিশ্চিত নাপাকী ছিলো এবং নির্দিষ্ট করে স্মরণ নেই (অর্থাৎ স্মরণ নেই যে, কোন কোণায় নাপাকী ছিলো) তখন যেকোন একটি কোণা ধুয়ে নিন, পবিত্রতার হুকুম দেয়া যাবে। 

(ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ৪র্থ খন্ড, ৫১১ পৃষ্ঠা) 


শিশু পানিতে হাত দিলো, তবে? 


 অনেক সময় ছোট্ট শিশুরা পানিতে হাত দিয়ে দেয়, তখন 

মানুষ সন্দেহে পরে যায় যে, পানি পবিত্র আছে নাকি অপবিত্র হয়ে গেছে! এই বিষয়েও সন্দেহে পরার কোন প্রয়োজন নেই, কেননা ফুকাহায়ে কিরামগণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) আদেশ দিচ্ছেন: “যে পানিতে শিশুরা হাত বা পা দিয়ে দেয়, তবে তা পবিত্র, যতক্ষণ পর্যন্ত নাপাকী 

প্রমানিত না হয়।”

 (ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ৪র্থ খন্ড, ৪৮৬ পৃষ্ঠা) 


তাহারাত কে বা‘রে মে শয়তান আকছার, 

দেলা তা হে শক, হো করম ইয়া ইলাহী!

صَلُّوْا عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد


তালাকের ব্যাপারে কুমন্ত্রণা 


 অনেক সময় মানুষকে শয়তান কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে যে, মনে 

করে দেখো, তোমার মুখ থেকে তোমার স্ত্রীর জন্য তালাকের শব্দ বের হয়ে গিয়েছিলো! এমতাবস্থায় যখন মন সায় দেয় যে, তালাক দেইনি, শুধু কুমন্ত্রণা মাত্র, তখন শয়তানকে বলে দাও: তুমি মিথ্যুক, আমি তালাক দেইনি। এপ্রসঙ্গে আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) একটি ঘটনা উদ্ধৃত করে বলেন: ইমাম আবু হাযেম যিনি তাবেঈন ইমামদের অন্যতম, তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে অভিযোগ করলো যে,শয়তান আমাকে কুমন্ত্রণায় ফেলে দেয় এবং আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট এটাই হয় যে, সে এসে বলে, তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছো। ইমাম সাহেব সাথেসাথেই বললো: তুমি কি আমার নিকট এসে আমার সামনে তোমার স্ত্রীকে তালাক দাওনি? সে ঘারড়ে গিয়ে বললো: আল্লাহর শপথ! আমি কখনোই আপনার সামনে তাকে তালাক দিইনি। তিনি বললেন: যেভাবে আমার সামনে শপথ করেছো, শয়তানকে কেন শপথ করে বলোনা যে, সে যেনো তোমার পিছু ছেড়ে দেয়। (অথার্ৎ এতই যখন দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমার সামনে শপথ করতে পারছো, তো ঐ বিশ্বাসেই শয়তানকেও শপথ করে বলে দাও যে, হে অভিশপ্ত! দূর হয়ে যা, আল্লাহর শপথ! আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দেইনি। 

(ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৭৮৫ পৃষ্ঠা)


মেরী পেরেশানিয়াঁ ওয়াসওয়াসোঁ কী, 

তো কর দূর বেহরে রযা ইয়া ইলাহী! 


َصَلُّوْا عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد



কেউ খাওয়ালো, তবে অনুসন্ধান করবেন না 


 অনেক সময় খাবারের দাওয়াতেও মানুষ কুমন্ত্রণার শিকার 

হয়ে যায় যে, জানি না এর খাবার হালাল উপার্জনের নাকি হারামের? এই ব্যাপারে হাদীসে পাকে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবীব, হুযুর পুরনূর (ﷺ) َইরশাদ করেন: তোমাদের মধ্যে যখন কেউ তার মুসলমান ভাইয়ের নিকট যায় এবং সে তাকে তার খাবার থেকে খাওয়ায় তবে খেয়ে নাও এবং এ ব্যাপারে প্রশ্ন করোনা আর যদি সে তার পানীয় হতে পান করাতে চায় তবে পান করে নাও এবং এ ব্যাপারে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করো না। 

 (শুয়াবুল ঈমান, ৫খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৮০১) 

খাবারের ব্যাপারে অনুসন্ধানে গুনাহের দরজা খোলে যেতে পারে। সুবহানাল্লাহ!! কতইনা সহজ। আহ! যদি আমাদের ধর্মীয় জ্ঞান থাকতো যে, ইলমে দ্বীনও “কুমন্ত্রণা” মূলৎপাটনের অন্যতম মাধ্যম। 

আফসোস! আমরা দ্বীন সম্পর্কে ফলেও প্রায় শয়তানের কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে যাই। আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ফতোয়ায়ে রযবীয়া ৪র্থ খন্ডের ৫২৮ হতে ৫২৯ পৃষ্ঠায় বলেন: হুজ্জাতুল ইসলাম, হাকীমুল উম্মত, কাশফুল গুম্মাহ ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইহইয়াউল উলুম শরীফে বলেন: আমি বলছি (যাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে) তার জন্য জায়িয নেই যে, সে ঐ ব্যক্তি (দাওয়াত প্রদানকারী) থেকে প্রশ্ন করার বরং যদি সে খোদাভীরুতা অবলম্বন করতে চায়, তবে নম্রতার সহিত বর্জন করুন এবং যদি (দাওয়াতে) যেতেই হয় তবে কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করেই খেয়ে নিন, কেননা জিজ্ঞাসা করাতে কষ্ট দেয়া, লজ্জা ও ভয় সৃষ্টি করাই এবং তা নিঃসন্দেহে হারাম। 

ইমাম গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেন:- আর কতবড় মূর্খ ধার্মিক, যে অনুসন্ধান করার মাধ্যমে মনে ভয় সৃষ্টি করে দেয় এবং খুবই কঠোর ও কষ্টদায়ক বাক্য ব্যবহার করে থাকে, আসলে শয়তান তাদের দৃষ্টিতে একে উত্তম বানিয়ে দেয়, যেনো সে হালাল ভক্ষনকারী হিসেবে প্রসিদ্ধি পায় এবং যদি এর কারণ শুধু দ্বীনই হয়, তবুও মুসলমানের অন্তরে কষ্ট দেয়ার ভয় এরূপ জিনিসকে পেটে প্রবেশ করার ভয় থেকে বেশী, যার সম্পর্কে সে জানে না, কেননা যে বিষয়ে সে জানেনা ঐ বিষয়ের জবাবদিহিতা হবেনা। যদি সেখানে এরূপ কোন নিদর্শন না থাকে, যার ফলে বিরত থাকাটা আবশ্যক হয়ে পড়ে। তবে জেনে নাও! বিরত থাকা, জিজ্ঞাসার বিপরীত, অনুসন্ধান নয় আর যদি খাওয়া জরুরী হয় তবে খেয়ে নাও এবং ভালো ধারণা করাই হলো পরহেযগারী। 

(ইহয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ১৫০ পৃষ্ঠা)


দিল পে শয়তান নে আক্বা হে জমায়া কবযা, 

হোঁ গুনাহোঁ মে গিরিফতার রাসুলে আরাবী। 

আহ! বড়তা হি চলা জাতা হে মরিযে ইচইয়াঁ ।

দো শিফা সৈয়্যদে আবরার রাসুলে আরাবী। 

َ


শয়তানের দু’টি ধরণ 

 

এটা তো ছিলো “জ্বিন শয়তান” এর কুমন্ত্রণার বর্ণনা। অনুরূপভাবে “শয়তানুল ইনস” অথার্ৎ “মানুষ শয়তান”ও পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে থাকে এবং মনে সন্দেহ ও সংশয় প্রদান করে। যেমনটি আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর বর্ণনার সারমর্ম হলো: 

শয়তানের দু’টি ধরণ রয়েছে: 

(১) জ্বিন শয়তান অথার্ৎ অভিশপ্ত ইবলিশ এবং তার বংশধর। 

(২) মানুষ শয়তান অথার্ৎ কাফির ও বদ মাযহাবীদের দাওয়াত প্রদানকারী এবং তাদের ধর্মের প্রতি আহ্বানকারী। তিনি আরো বলেন: আয়িম্মায়ে দ্বীনরা বলেন যে, “মানুষ শয়তান জ্বিন শয়তান থেকে ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে।” 

(ফতোয়ায়ে রযবীয়া ১ম খন্ড, ৭৮০-৭৮১ পৃষ্ঠা) 


 আল্লাহ তায়ালাَ সূরা নাস’এ এই দু’ধরণের শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনার আদেশ দিয়েছেন। অতএব আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:

ٱلَّذِى يُوَسْوِسُ فِى صُدُورِ ٱلنَّاسِ 

 مِنَ ٱلْجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ 

ইংরেজি: Who whispers [evil] into the breasts of mankind - From among the jinn and mankind."

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:যে মানুষের অন্তরসমূহে কু-প্ররোচনা প্রদান করে, জ্বিন ও মানুষ। 


মানুষ শয়তান 


 হাদীসে পাকে রয়েছে যে, আমাদের প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী 

মুস্তফা (ﷺ) হযরত সায়্যিদুনা আবু যর গিফারী (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)কে ইরশাদ করেন: মানুষ শয়তান এবং জ্বিন শয়তানের প্ররোচনা হতে আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। আরয করলো: মানুষের মধ্যেও কি শয়তান রয়েছে? ইরশাদ করলেন: হ্যাঁ। 

(মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৮ম খন্ড, ১৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২১৬০২) 

সুতরাং যতগুলো কাফির, মুশরিক, পথভ্রষ্ট, বদ মাযহাব এবং রাসুল (ﷺ) এর কটুক্তিকারী এরা সবাই মানুষ শয়তানের অন্তর্ভূক্ত এবং ইবলিশের পাশাপাশি তাদের প্ররোচনা থেকেও আমাদের আশ্রয় প্রার্থনা করতে থাকা উচিৎ। কিন্তু আফসোস! অনেক মুসলমান তাদের সাথে মেলামেশা করে থাকে এবং তাদের কথাবার্তার খুবই মনোযোগ সহকারে শুনে। তাদের ধমর্ীয় অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করে, তাদের বইও পড়ে, এই কারণেই নিজের দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে সন্দেহ ও সংশয়ে পরে যায় যে, আসলে কি তারা সঠিক নাকি আমরা? অতঃপর অনেকে তাদের ফাঁদে এমনভাবে ফেঁসে যায় যে,তাদেরইগুণ গাইতে থাকে এবং এটাও পর্যন্ত বলতে শুনা যায় যে, “তারাও তো সঠিক বলছে!” 

আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা (খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি)ফতোয়ায়ে রযবীয়া প্রথম খন্ডের ৭৮১-৭৮২ পৃষ্ঠায় এদের থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিতে গিয়ে বলেন: ভাইয়েরা! তোমরা নিজেদের লাভ ক্ষতি সম্পর্কে অধিক জান বা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নবী (ﷺ) তাঁদের আদেশ তো এটাই যে, শয়তান তোমার নিকট কুমন্ত্রণা দেয়ার জন্য আসলে সোজা এটাই উত্তর দাও যে, “তুই মিথ্যুক” এমন নয় যে, তুমি দৌড়ে দৌড়ে তাদের (কাফির বা বেদ্বীন এবং বদ মাযহাবীদের) নিকট যাও এবং তোমার প্রতিপালক, তোমার কোরআন, তোমার নবী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বাক্য সমূহ শুনো। (আ’লা 

হযরত আরো বলেন (৮ম পারা সূরা আল আনআম এর ১১২ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে

وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِىٍّ عَدُوًّا شَيَٰطِينَ ٱلْإِنسِ وَٱلْجِنِّ يُوحِى بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ ٱلْقَوْلِ غُرُورًاۚ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُۖ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ 


ইংরেজি: And thus We have made for every prophet an enemy - devils from mankind and jinn, inspiring to one another decorative speech in delusion. But if your Lord had willed, they would not have done it, so leave them and that which they invent.

অনুবাদ:“এবং আপনার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে তারা এমন করতোনা, সুতরাং তাদেরকে তাদের মিথ্যা রচনার উপর ছেড়ে দিন।” দেখুন তাদের এবং তাদের কথাবাতার্কে ছেড়ে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন, বা তাদের থেকে শুনার জন্য গমন থেকে বিরত থাকার এবং শুনুন এরপর (সূরা আনআমের ১১৩নং) আয়াতে ইরশাদ হয়েছে  

وَلِتَصْغَىٰٓ إِلَيْهِ أَفْـِٔدَةُ ٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِٱلْءَاخِرَةِ وَلِيَرْضَوْهُ وَلِيَقْتَرِفُوا۟ مَا هُم مُّقْتَرِفُونَ 

ইংরেজি: And [it is] so the hearts of those who disbelieve in the Hereafter will incline toward it and that they will be satisfied with it and that they will commit that which they are committing.

(অনুবাদ: এবং এজন্যযে, সেই দিকে তাদেরই অন্তর ঝুঁকবে, যাদের পরকালের উপর ঈমান নেই, এবং সেটাকে পছন্দ করবে ও পাপার্জন করবে যে (পাপ) তাদের অর্জন করার রয়েছে।) 

দেখো তাদের কথায় কান দেয়া, তাদের কাজের কথা বলা, যারা পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না এবং তাদের পরিণাম এটাই বললেন যে, ঐ অভিশপ্ত কথা তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করবে এবং তারাও তাদের ন্যায় হয়ে গিয়েছে (অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার নিকট এর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা)। মানুষ নিজের অজ্ঞতায় ধারনা করে যে, আমি মন থেকে মুসলমান, আমার উপর তার কি প্রভাব পড়বে! অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন: যে দাজ্জালের সংবাদ শুনে, তার উপর ওয়াজিব যে, তার থেকে দূরে পালানো, কেননা আল্লাহর শপথ! মানুষ তার পাশে গেলো এবং এই ধারণা করলো যে, আমি তো মুসলমান অর্থাৎ সে আমার কি ক্ষতি করবে, সেখানে সে তার ধোঁকার পরে তার অনুসারী হয়ে যাবে। 

(আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৩১৯) 


দাজ্জাল দ্বারা কি শুধু ঐ এক অপবিত্র দাজ্জালকে মনে করো, যে আসবে, কখনোই নয়! সকল পথভ্রষ্টতার প্রতি আহ্বানকারী ও দাওয়াত প্রদানকারী সবাই দাজ্জাল এবং সবাইকে দূরে পালানোর আদেশ দেয়া হয়েছে আর এতে এরূপ ভয় বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন: শেষ যুগে মিথ্যুক দাজ্জাল লোক হবে, যারা তোমার নিকট এমন সব কথা নিয়ে আসবে, যা না তুমি শুনেছো না তোমার বাপ দাদারা শুনেছে, তবে তাদের থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকে তোমার থেকেদূরে রাখো, যেনো তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে, যেনো তারা তোমাকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ না করে। 

(মুসলিম, ৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৭। ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৭৮১-৭৮২ পৃষ্ঠা) 


সরওয়ার দিঁ! লি’জিয়ে আপনে না’তো ওয়ানো কী খবর, 

নফস ও শয়তাঁ সায়্যিদা! কব তক দাবাতে জা’য়েঙ্গে। 



শয়তান ব্যাঙের আকৃতিতে 

 

হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) َবর্ণিত, কেউ আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করলো: “হে আল্লাহ!আমাকে বনী আদমের (অর্থাৎ মানুষের) অন্তরে শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রদানের পদ্ধতি দেখিয়ে দাও।” সে স্বপ্নে দেখলো যে, একজন স্বচ্চ কাঁচের ন্যায় মানুষ, যার ভেতরে বাইরে সব কিছু দেখা যাচ্ছে, তার কাঁধ এবং কানের মধ্যবর্তী স্থানে শয়তান ব্যাঙের আকৃতিতে বসে তার লম্বা চিকন শুড়কে কাঁধ হতে তার অন্তর পর্যন্ত প্রবেশ করিয়ে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে, যখনই ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার যিকির করে, শয়তান পিছনে সরে যায়।

 (মুকাশাফাতুল কুলুব, ৫৯ পৃষ্ঠা)


হুযুর (ﷺ) এর কোন মুহুর্ত আল্লাহর যিকির হতে উদাসিন ছিল না 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেলো যে, আল্লাহ তায়ালার যিকির কুমন্ত্রণার উত্তম চিকিৎসা, কেননা শয়তান আল্লাহ তায়ালার যিকিরে দূরে পালিয়ে যায়, আমাদের প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তাফা (ﷺ)  َএর কোন মুহুর্তই, কোন নিশ্বাসই আল্লাহ তায়ালার যিকির হতে উদাসিন ছিলো না। আমাদের যখনই সুযোগ হয় বিনা প্রয়োজনে মুখ বন্ধ রাখার পরিবর্তে “আল্লাহ আল্লাহ” বা দরূদ শরীফ পড়তে থাকা উচিত এভাবেই সাওয়াবের “মিটার” চলতে থাকবে এবং শয়তানও দূর্বল হতে থাকবে। 

(ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা) 


শয়তান গলে পাখির মতো হয়ে যাওয়া 


 হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ِউদ্ধৃত করছেন: হযরত সায়্যিদুনা কায়েস বিন হাজ্জাজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: আমার শয়তান (হামযাদ) আমাকে বললো: যখন আমি তোমার ভেতরে প্রবেশ করলাম, তখন উটের মতো (শক্তিশালী) ছিলাম এবং এখন পাখির ন্যায় (দূর্বল) হয়ে গেছি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: কেন? বলতে লাগলো: তুমি আল্লাহ তায়ালার যিকিরের মাধ্যমে আমাকে গলিয়ে দিয়েছো।

 (ইহয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা)

 তবে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসিন থাকা ভালো বিষয় নয়।


শয়তান পিছনে সরে যায় 

হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন: শয়তান মানুষের অন্তরে বসে থাকে, যখন বান্দা আল্লাহর যিকির হতে উদাসিন হয়ে যায়, তখন শয়তান কুমন্ত্রণা দিতে থাকে এবং যখন মানুষ আল্লাহর যিকির করতে থাকে তখন শয়তান পিছনে সরে যায়। 

(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ৯ম খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা)


যিকির এবং কুমন্ত্রণার মাঝে যুদ্ধ 


 হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: হযরত সায়্যিদুনা মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আল্লাহ তায়ালার এই বাণী

مِن شَرِّ ٱلْوَسْوَاسِ ٱلْخَنَّاسِ 

From the evil of the retreating whisperer -

 (পারা ৩০, সূরা নাস, আয়াত ৪) 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: তারই অনিষ্ট হতে যে অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং আত্মগোপন করে।


 এর তাফসীরে বলা হয়েছে যে, সে (শয়তান) অন্তরে ছেয়ে আছে, যখন মানুষ আল্লাহ তায়ালার যিকির করে তখন সে সংকুচিত হয়ে যায়, যখন উদাসীন হয় তখন সে অন্তরে ছড়িয়ে পরে। আর আল্লাহ তায়ালার যিকির এবং শয়তানের কুমন্ত্রণার মাঝে যুদ্ধে এভাবেই অব্যহত থাকে, যেমনিভাবে আলো এবং অআঁধার, তাছাড়া রাত ও দিনের মাঝে লড়াই অব্যহত থাকে, এই দুটি অর্থাৎ যিকির ও কুমন্ত্রণা একে অপরের বিরোধী। আল্লাহ তায়ালা (২৮ পারা, সূরাতুল মুজাদালাহ এর ১৯ নং আয়াতে) ইরশাদ করেন: 

ٱسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ ٱلشَّيْطَٰنُ فَأَنسَىٰهُمْ ذِكْرَ ٱللَّهِۚ أُو۟لَٰٓئِكَ حِزْبُ ٱلشَّيْطَٰنِۚ أَلَآ إِنَّ حِزْبَ ٱلشَّيْطَٰنِ هُمُ ٱلْخَٰسِرُونَ 

ইংরেজি: Satan has overcome them and made them forget the remembrance of Allah . Those are the party of Satan. Unquestionably, the party of Satan -  they will be the losers.

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: তাদের উপর শয়তান বিজয়ী হয়ে গেছে, সুতরাং তাদের নিকট থেকে আল্লাহর স্মরণকে ভূলিয়ে দিয়েছে। 

(ইহয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৩৫ পৃষ্ঠা) 


শয়তান অন্তরকে কখন গ্রাস করে 

 

হযরত সায়্যিদুনা আনাস (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন: নবীয়ে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেন: শয়তান মানুষের অন্তরে নিজের শুঁড় রাখে, যদি সে আল্লাহ তায়ালার যিকির করে, তবে সে সংকুচিত হয়ে যায় আর যদি আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে যায়, তবে তার অন্তরকে গ্রাস করে নেয়। 

(আবু ইয়ালা, ৩য় খন্ড, ৪৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪২৮৫) 


৪০ বছরের ব্যক্তি যদি তাওবা না করে, তবে...  বর্ণিত আছে, যখন মানুষের বয়স চল্লিশ বছর হয়ে যায় এবং তাওবা করেনা, তখন শয়তান তার চেহেরার উপর নিজের হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে: এই চেহেরার প্রতি উৎসর্গ হয়ে যাও, যা কল্যাণ পাবে না। 

(ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৩৫ পৃষ্ঠা)


শাহজাদায়ে আ’লা হযরত, তাজেদারে আহলে সুন্নাত, হুযুর 

মুফতীয়ে আযম আল্লাহ তায়ালার দারবারে আরয করেন:


জু হে গা’ফিল তেরে যিকির সে যুলজালাল, 

উস কী গাফলত হে উস পর ওয়াবা‘ল ওয়া নাকাল, 

কা’রে গাফলত সে হাম কো খোদায়া নিকাল, 

হাম হোঁ যা’কির তেরে আউর মযকুর তু, 

 সামানে বখশিশ


কুমন্ত্রণার প্রতি মনোযোগ দিবেন না 

 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ‘কুমন্ত্রণা’র একটি প্রতিকার এটাও যে, এর দিক থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে নেয়া। আহ! যদি এরূপ হয় যে, যখনই কুমন্ত্রণা আসবে আমরা কল্পনায় মক্কা মুকাররামা  এর সুন্দর মরুদ্যানের চিন্তায় বিভোর হয়ে যেতাম, মসজিদুল হারাম শরীফে উপস্থিত হয়ে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন এবং আনন্দচিত্তে সম্মানিত কাবার চারিদিকে প্রদক্ষিণ করাতে ব্যস্ত হয়ে যেতাম। আহ! প্রিয় মদীনার সুন্দর স্মরনে হারিয়ে যেতাম, মদীনার সুন্দর ও অপরূপ দৃশ্য অবলোকনে মগ্ন হয়ে যেতাম, কখনোবা মদীনার মনোমুগ্ধকর কাঁটার, কখনোবা সেখানকার সুগন্ধময় ফুলের কল্পনায় ডুবে যেতাম। কখনোবা মদীনার সুন্দর উপত্যকার, কখনোবা মদীনার নূরানী গলির সৌন্দর্যে আত্মহারা হয়ে যেতাম। কখনোবা মদীনার হৃদয়াঙ্গম পাহাড়ের, কখনোবা মদীনার মরুভূমির সৌন্দর্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখুন, কখনোবা মদিনার পবিত্র পরিবেশের, কখনোবা সুবাশিত বাতাসের কল্পনায় স্বাদ উপভোগ করুন। কখনোবা সবুজগুম্বদের সৌন্দর্যের, কখনোবা সোনালি জালীর সামনে আদব সহকারে উপস্থিত হওয়ার কল্পনা করুন এবং যদি আগ্রহ হয় তবে শাহানশাহে মদীনা (ﷺ) এর সুন্দর কল্পনা করে নিন। আহ! আমাদের মদীনা এবং মদীনা ওয়ালা আক্বা (ﷺ) এমন কল্পনা, হৃদয়োত্তাপ, প্রেম এবং আকর্ষন অর্জিত হয়ে যাক যে, দুনিয়ার চিন্তা এবং অনুশোচনা তাছাড়া শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে মুক্ত হয়ে যাই, আহ! 


এ্যয়সা গুমাদে উন কি বিলা মে খোদা হাঁমে, 

ঢুন্ডা কঁরে পর আপনি খবর কো খবর না হো। 

(হাদায়িকে বখশীশ শরীফ)


কুমন্ত্রণার ৮টি প্রতিকার 


১. আল্লাহ তায়ালার দিকে প্রত্যাবর্তন করুন। (অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার নিকট শয়তান থেকে মুক্তির জন্য সাহায্য প্রার্থনা করুন এবং আল্লাহর যিকির শুরু করুন) 

২. اَعُوْذُ بِاللّٰهِ مَنَ الْشَّيْطَانِ الْرَّجِيْم পাঠ করা।

৩. لاحول ولا قوة الا بالله العلي العظيم পাঠ করা।

৪. সূরা নাস তিলাওয়াত করুন। 


‌৫. ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلْمُؤْمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُوا۟ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَاۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ ٱلْمَصِيرُ  পাঠ করা। 


৬. هُوَ ٱلْأَوَّلُ وَٱلْءَاخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلْبَاطِنُۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ (২৭ পারা, সূরা হাদীদ, আয়াত ৩) পড়ুন, এর ফলে দ্রুত কুমন্ত্রণা দূর হয়ে যায়। 


৭. أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ بِٱلْحَقِّۚ إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ - وَمَا ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ بِعَزِيزٍ

 (পারা: ১৩, সূরা: ইব্রাহীম, আয়াত: ১৯-২০) অধিকহারে পাঠ করাতে এর অর্থাৎ কুমন্ত্রণার মূলৎপাঠন করে দেয়। (ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৭৭০ পৃষ্ঠা)  


৮. প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: “সূফীয়ায়ে কিরামগণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) বলেন: যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় একুশ বার لا حول শরীফ” পাঠ করে পানিতে দম করে পান করে নিন, তবে أن شاء الله عز وجل শয়তানীَ  কুমন্ত্রণা থেকে অনেকাংশে নিরাপদ থাকবে।” 

(মিরাতুল মানাজিহ, ১ম খন্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা) 


মুহিত দিল পে হুয়া হায় নফসে আম্মারা, 

দেমাগ পর মরে ইবলিস ছা গিয়া ইয়া রব! 

রেহাই মুঝকো মিলে কাশ! নফস ও শয়তাঁ সে, 

তেরে হাবীব কা দেয় তা হো ওয়াসেতা ইয়া রব! 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ)


যদি কুমন্ত্রণা কোন অবস্থাতেই না যায় তবে... 


 যদি ওযিফা ও আমল এর মাধ্যমে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া না যায়, তবে ভয়ের কোন কারন নেই। দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা হতে প্রকাশিত মিনহাজুল আবেদীনে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যা কিছু বর্ণনা করেছেন, তার সারমর্ম হলো: যদি আপনি এরূপ অনুভব করেন যে, আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করার পরও শয়তান পিছু ছাড়ছে না এবং প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করছে, তবে এর উদ্দেশ্য এটায় যে, আল্লাহ তায়ালা আপনার সাধনা, সক্ষমতা ও ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন, অথার্ৎ আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা নিচ্ছেন যে, আপনি শয়তানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং যুদ্ধ করছেন নাকি তার থেকে হেরে যাচ্ছেন। দেখুন না! তিনি আমাদের উপর কাফেরদেরকেও তো বিজয়ী করে রেখেছেন, অথচ তিনি এবিষয়ে পরিপূর্ণভাবে সক্ষম যে, আমাদের জিহাদ করা ছাড়াও তার (শয়তান) ক্ষতি ও ফিতনাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারেন, কিন্তু তিনি এরূপ করেন না বরং 

বান্দাদেরকে তার সাথে জিহাদের আদেশ দিয়ে থাকেন, যেনো পরীক্ষা করেন যে, কার অন্তরে জিহাদের প্রেরণা এবং শাহাদাতের স্পৃহা রয়েছে এবং কে পরিপূর্ণ একনিষ্টতা ও ধৈর্য্যের সহিত এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাজ্জালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেন: আর এভাবেই শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও আমাদেরকে দক্ষতা ও পরিপূর্ণ চেষ্টার আদেশ দিয়েছেন। অতঃপর আমাদের ওলামায়ে কিরামগণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) বলেন যে, শয়তানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং একে ধরাশায়ী করতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।


(১) তুমি তার চক্রান্ত ও চালাকী সমূহ জেনে নাও, যখন এসম্পর্কে জেনে নেবে, তখন সে তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। যেমন; যখন চোর জানতে পারলো যে, ঘরের মালিক আমার সম্পর্কে জেনে গেছে, তখন সে পালিয়ে যায়। 


(২) তুমি শয়তানের পথভ্রষ্টকারী এবং গুনাহে ভরা দাওয়াকে গ্রহণ করোনা, তোমার অন্তর কখনোই যেনো তার দাওয়াতে প্রভাবিত না হয়, তাছাড়া তুমি তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রতি মনোযোগও দিওনা, কেননা ইবলিশ এক ঘেউ ঘেউ করা কুকুরের মতো, যদি তুমি তার উত্ত্যক্ত করে তবে আরো বেশি চিৎকার করবে আর যদি তার কুমন্ত্রণার প্রতি মনোযোগ না দাও, তবে সেও চুপ হয়ে যাবে। 


(৩) অধিকহারে আল্লাহর যিকির করো। (মিনহাজুল আবেদীন (আরবী), ৪৬ পৃষ্ঠা)


যিকিরের কারণে শয়তানের কষ্টকর অবস্থা বর্ণিত আছে: শয়তানের জন্য আল্লাহ তায়ালার যিকির এতই কষ্টকর, যেমনটি মানুষের বাহুতে পচন।

 (মিনহাজুল আবেদীন, ৪৬ পৃষ্ঠা) 

পচন রোগটি এমন এক রোগ যা মানুষের মংসে প্রভাবিত হয় এবং শরীর থেকে মাংস ঝড়ে পরতে থাকে। 


ইমতেহাঁ কে কাহা কা’বিল হো মে পেয়ারে আল্লাহ! 

বে সবর বখশ দেয় মাওলা তেরা কিয়া জাতা হে। 

(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৭২ পৃষ্ঠা)


কুমন্ত্রণা

প্রায় আল্লাহর যিকির করার পরও শয়তানের কুমন্ত্রণা যায় না। যেমন; নামায সবচেয়ে বড় যিকির কিন্তু নামাযে তো অনেক বেশি কুমন্ত্রণা আসে, এমনকি ভুলে যাওয়া বিষয়ও শয়তান স্মরণ করিয়ে দেয়! কুমন্ত্রণার প্রতিকার: নিঃসন্দেহে যিকিরের মাধ্যমে শয়তান পালিয়ে যায় আর নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন। যেমনটি কোরআনে পাকের সূরা গাফির এর ৬০ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:

    ٱدْعُونِىٓ أَسْتَجِبْ لَكُمْۚ   

  "Call upon Me; I will respond to you."

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আমার নিকট দোয়া করো, আমি কবুল করবো। 

এরপরও প্রায় দোয়া কবুলের প্রভাব প্রকাশ পায় না, অতঃএব জানা গেলো যে, যিকিরের মাধ্যমে শয়তানকে তাড়ানো এবং দোয়া কবুল হওয়ার কিছু শর্তও রয়েছে, যেমনিভাবে ঔষধের ব্যাপার হলো যে, সংযমতা অবলম্বন না করলে ঔষধ কাজ করে না, যেমন; কেউ “ডায়াবেটিক” রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তারপরও মিষ্টান্ন খেয়েই যাচ্ছে, তবে ঔষধ কি করবে। সুতরাং যিকিরের মাধ্যমে কুমন্ত্রণা হতে মুক্তি পেতে এবং শয়তানকে তাড়ানোর জন্য গুনাহ হতে বেঁচে থাকাটা আবশ্যক। যদি খোদাভীরুতা অবলম্বন না করে তবে যিকির নামক ঔষধের কুমন্ত্রণা রোগে প্রভাব বিস্তার করা অসম্ভব হয়ে পড়বে! 


হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাজ্জালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: শয়তান ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো, যে তোমার নিকটেই আসে, যদি তোমার এবং তার মধ্যখানে রুটি বা মাংস না থাকে তবে তাড়ালে চলে যায় অর্থাৎ শুধু আওয়াজ করেই তাকে তাড়ানো যায় আর যদি তোমার সামনে মাংস থাকে এবং সে ক্ষুধার্তও হয় তবে সে মাংসের উপর ঝাপিয়ে পরে এবং শুধু আওয়াজ করে তাড়ালেও যায়না। তো যে অন্তর শয়তানের খাবার বিহীন হয়, সেই অন্তর থেকে যিকিরের কারণে শয়তান দূর হয়ে যায়, যখন অন্তরের মধ্যে কামভাবের প্রাধান্য থাকে, তবে অন্তরের ভিতরের অংশ শয়তানের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং সেই সময় করা আল্লাহর যিকিরকে অন্তরের চারিদিকে ছড়িয়ের দেয়। খোদাভীরু লোকদের অন্তর, যা নফসের কুপ্রবৃত্তি ও মন্দ স্বভাবের পরিপন্থি, তাদের প্রতি শয়তান কুপ্রবৃত্তির কারণে আসেনা বরং উদাসীনতার কারনে যিকির থেকে দূরে থাকার কারণে আসে। যখন সে যিকিরের দিকে ধাবিত হয়, তখন সে দূর হয়ে যায়। (ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা) তবে যারা রাত দিন গুনাহে লিপ্ত থাকে এরূপ ব্যক্তি তো যেনো শয়তানের বন্ধু এবং শয়তান তার বন্ধুদের নিকট হতে এত সহজেই পালিয়ে যায়, তা আর কোথায়! ১৭তম পারা, সূরা হজ্ব এর ৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:

كُتِبَ عَلَيْهِ أَنَّهُۥ مَن تَوَلَّاهُ فَأَنَّهُۥ يُضِلُّهُۥ وَيَهْدِيهِ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ 

It has been decreed for every devil that whoever turns to him -  he will misguide him and will lead him to the punishment of the Blaze.

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: যার সম্বন্ধে (এ নিয়ম) লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথে বন্ধুত্ব করবে, তবে সে অবশ্যই তাকে পথভ্রষ্ট করে দেবে এবং তাকে দোযখের শাস্তির পথ প্রদর্শন করবে। 

 

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: আসল যিকির অন্তরে ঐ সময় অর্জিত হবে, যখন অন্তরকে খোদাভীরুতার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করা হয়, তাছাড়া একে খারাপ গুণ হতে পবিত্র করতে হবে, অন্যথায় যিকির শুধু আসা যাওয়াই করবে, অন্তরে এর (অথার্ৎ যিকির) রাজত্ব এবং নিয়ন্ত্রন থাকবে না, সুতরাং সে শয়তানের রাজত্বকে দূর করতে পারবে না। তিনি আরো বলেন: যদি তুমি শয়তান থেকে বাঁচাতে চাও তবে প্রথমে খোদাভীরুতার মাধ্যমে পরহেযগারীতা অবলম্বন করো, অতঃপর যিকিরের ঔষধ ব্যবহার করবে, আর এভাবেই শয়তান তোমার থেকে পালিয়ে যাবে। 

(ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৪৫-৪৭ পৃষ্ঠা) 


নফস ও শয়তাঁ হো গেয়ে গা‘লিব, 

উন কে চুঙ্গাল সে তু ছুঁড়া ইয়া রব! 

কর কে তাওবা মে ফির গুনাহো মে,

 হো হি জা‘তা হোঁ মুবতালা ইয়া রব! 

নি’ম জাঁ কর দিয়া গুনাহোঁ নে,

মরযে ইচইয়াঁ সে দে শিফা ইয়া রব!

امين بجاه النبي الامين

صَلُّوْا عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد



অন্তরে কুফরী ধারণা আসা 


প্রশ্ন: ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে কি হুকুম, যে ব্যক্তি বলে যে, দুঃখের সময় আমার অন্তরে কুফরী ধারণা আসতে থাকে। 


উত্তর: অন্তরে কুফরী ধারণা আসা এবং তা বর্ণনা করাকে খারাপ মনে করা প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন। কেননা কুফরী প্ররোচনা শয়তানের পক্ষ থেকে এসে থাকে এবং ঐ অভিশপ্ত ধিকৃত চায় যে, মুসলমানের ঈমানের সম্পদ ছিনিয়ে নিতে। নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) মহত্বপূর্ণ খেদমতে সাহাবায়ে কিরাম (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উপস্থিত হয়ে আরয করলো: আমাদের এরূপ ধারনা আসে যে, যা বর্ণনা করা আমরা খুবই খারাপ মনে করছি। নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) ইরশাদ করেন: আসলেই কি এরূপ হয়? তারা আরয করলো: জ্বি হ্যাঁ! ইরশাদ করলেন: “এটি তো প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন।

 (সহীহ মুসলিম, ৮০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৩২)


সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীক্বা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ِ(রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: কুফরী বিষয় অন্তরে সৃষ্টি হওয়া এবং মুখে বলাকে খারাপ জানা, তবে তা কুফরী নয় বরং প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন যে, যদি অন্তরে ঈমান না থাকতো তবে একে খারাপ কেন মনে করতো। (বাহারে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ৯ম অংশ, ৪৫৬ পৃষ্ঠা) 


প্রশ্ন: যদি কারো সামনে আলোচনা করলো যে, আমার অমুক অমুক কুফরী কুমন্ত্রণা আসে, আমি এতে খুবই বিরক্ত, আমাকে এর কোন প্রতিকার বলে দিন। এই অবস্থায়ও কি কুফরের হুকুম আসবে? 

উত্তর: না, এই অবস্থায় কুফরের হুকুম আসবে না। 

(কুফরীয়া কালিমাত কে বারে মে সাওয়াল জাওয়াব, ৪২৩-৪২৪ পৃষ্ঠা)


-: সমাপ্ত :-


Top