- গ্রন্থ: চল্লিশ হাদিস দ্বারা মদীনা শরীফের ফযিলত
- রচনায়: হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি
- টেক্সট রেডীঃ ডা. মাসুম বিল্লাহ সানি
সূচী পত্র
- ১. মদীনা মুনাওয়ারা হারম
- ২. মদীনা অবাঞ্চিত লোকদের বের করে দেয়
- ৩. বসবাসের জন্য মদীনা সর্বোত্তম স্থান
- ৪. ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে
- ৫. মদীনা মুনাওয়ারায় মক্কা মুকাররমার দ্বিগুণ বরকত
- ৬. মদীনাবাসীর সাথে প্রতারণা করার পরিণাম
- ৭. মদীনায় দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না
- ৮. মদীনা আবর্জনা ও মরিচাকে দূরীভূত করে
- ৯. মদীনায় মৃত্যু বরণের ফযিলত
- ১০. মদীনা থেকে মন্দ লোক বের না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না
- ১১. মদীনার দু:খ-কষ্টে ধৈর্য্যধারণের ফযিলত
- ১২. মদীনার প্রতি নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ভালবাসা
- ১৩. মদীনা শরীফে রোযা- জুমুআর ফযিলত
- ১৪. মসজিদে নববীর ফযিলত
- ১৫. মসজিদে কুবায় নামায আদায় করার ফযিলত
- ১৬. মসজিদে কুবার ফযিলত
- ১৭. মদীনায় উত্তম ব্যক্তিরাই বসবাস করবে
- ১৮. মদীনার মাটি ঔষধ
- ১৯. মদীনা শরীফের ধূলিকণা শেফা
- ২০. মদীনা শরীফ নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হারম
- ২১. মসজিদে নববীর সম্প্রসারিত অংশও মসজিদে নববী
- ২২. মদীনাবাসীকে কষ্ট দেওয়ার পরিণাম
- ২৩. মদীনা মুনাওয়ারার আজওয়া খেজুরের ফযিলত
- ২৪. মদীনা মক্কা থেকে উত্তম
- ২৫. মদীনাকে ইয়াসরিব বলা নিষিদ্ধ
- ২৬. রিয়াদুল জান্নাতের ফযিলত
- ২৭. রাসূল্লাল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যিয়ারতের ফযিলত
- ২৮. মদীনা শরীফ থেকে জ্বরকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে
- ২৯. রাসূলূল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা
- ৩০. হযরত ওমর ((رضي الله عنه)) এর দোয়া
- ৩১. মদীনায় কবর হওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাম্য
- ৩২. সর্বশেষ ধ্বংস হবে মদীনা
- ৩৩. মদীনা নিরাপদ হারম
- ৩৪. মদীনার প্রশংসিত নাম
- ৩৫. মদীনার অপর নাম তাবা
- ৩৬. মদীনা বিজয় হয়েছে কুরআন দ্বারা
- ৩৭. মদীনাবাসীকে সম্মান করার গুরুত্ব
- ৩৮. মদীনার কোন এলাকা জনশূন্য হওয়া নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পছন্দ করতেন না
- ৩৯. মসজিদে নববীতে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায পড়ার ফযিলত
- ৪০. মদীনার জন্য রাসূল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দোয়া
লেখকের কথা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি মদীনা তায়্যেবাকে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (ﷺ)’র হিজরতের জন্য নির্বাচিত করে ভূ-মণ্ডলে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী করেছেন। দুরূদ-সালাম প্রেরণ করছি মানবতার অগ্রদূত, সমগ্র সৃষ্টির উৎস হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)’র চরণে যার সংস্পর্শে মদীনা শরীফের কবর মোবারকের মাটি আরশ আ’জমের চেয়ে উত্তম হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছে।
স্মরণ করছি সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কিরামগণকে বিশেষত যারা চল্লিশটি হাদিস মুখস্ত ও প্রচার করার ফযিলত সম্বলিত নবী করিম (ﷺ)’র হাদিসের উপর আমল করতে গিয়ে চল্লিশ হাদিসের উপর কিতাব রচনা করেছেন। এ বিষয়ে যারা কিতাব লিখেছেন তারা হলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (رحمة الله), মুহাম্মদ ইবনে আসলাম তূসী (رحمة الله), হাসান ইবনে সূফিয়ান নাসায়ী (رحمة الله), আবু বকর আজূররী (رحمة الله), আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহীম ইস্পাহানী (رحمة الله), দারে কুতনী (رحمة الله), হাকেম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله), আবু আবদুর রহমান সূলামী (رحمة الله), আবু সাঈদ মালীনি (رحمة الله), আবু ওসমান সাবূনী (رحمة الله), মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (رحمة الله), আবু বকর বায়হাকী (رحمة الله), ইমাম নববী (رحمة الله) সহ অসংখ্য মুতাকাদ্দীমীন ও মুতাআখখিরীনগণ। বিশেষ করে ইমাম নববী (رحمة الله)’র ‘আল আরবাইন’ নামক গ্রন্থখানি ওলামায়ে কিরামগণের মধ্যে প্রসিদ্ধতা লাভ করেছে। মুজাদ্দিদ আল্লামা ইবনে দকীকুল ঈদ (رحمة الله)ও এ গ্রন্থের শরাহ লিখিছেন। অথচ বয়সে তিনি ইমাম নববী (رحمة الله) থেকে ছয় বছরের বড় ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কর্তৃক বর্ণিত চল্লিশ হাদিসের ফযিলত লাভ ও সলফে সালেহীনগণের অনুসরণার্থে অদম চল্লিশ হাদিসের উপর একটি পুস্তিকা রচনা করার প্রয়াস পেয়েছি। আর বিষয় নির্বাচিত করেছি ‘মদীনা শরীফের ফযিলত’।
চল্লিশ হাদিস মুখস্থ করণ ও বর্ণনা করার ফযিলতের হাদীসখানা প্রখ্যাত মুহাদ্দিসগণ তাদের লিখিত কিতাবে বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদীসখানা নবী করিম (ﷺ)’র বড় বড় সাহাবীগণ থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমন- হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ (رضي الله عنه)হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه), হযরত আবুদ দারদা (رضي الله عنه), হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه), হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) প্রমুখ প্রখ্যাত সাহাবীগণ বর্ণনা করেছেন। হাদীসখানা নিম্নরূপ:
مَنْ حَفِظَ عَلَى أُمَّتِيْ أَرْبَعِيْنَ حَدِيْثًا مِنْ أَمرِ دِيْنِهَا بَعَثَ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي زُمْرِةِ الْفُقْهَاءِ وَالْعُلَمَاءِ" وَفِيْ رِوَايِةٍ: "بَعْثَ اللهُ فَقِيْهًا عَالِمًا".وَفِيْ رِوَايَةِ أَبِيْ الدَّرْدَاءِ: "وَكُنْتُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَافِعًا وَشَهِيْدًا" وَفِيْ رِوَايَةِ اِبْنِ مَسْعُوْدِ ”قِيْلَ لَهُ اُدْخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتَ" وَفِيْ رِوَايَةِ اِبْنِ عُمَرَ "كُتِبَ فِيْ زُمْرَةِ الْعُلَمَاءُ وَحُشِرَ فِيْ زُمْرَةِ الْشُهَدَاءِ"
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তার দ্বীন সম্পর্কীয় চল্লিশটি হাদিস মুখস্থ করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত দিবসে তাকে ফুকাহা এবং উলামাদের দলভুক্ত করবেন।
➥[১] ইমাম বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান, খন্ড:২, পৃষ্ঠা: ২৭০
অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ফকীহ এবং আলেমগণের অন্তর্ভূক্ত করবেন।
➥[২] আল্লামা যাহাবী (رحمة الله) মীযানুল ই’তিদাল, খন্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ২৪৫-২৪৬
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه)’র অপর বর্ণনায় আছে- রাসূলুল্লাহু (ﷺ) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে আমি তার জন্য সুপারিশকারী এবং সাক্ষী হব।
➥[৩] ইমাম বায়হাকী তার সুনান গ্রন্থে, খন্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৭০
হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র বর্ণনায় আছে- তাকে বলা হবে তোমার ইচ্ছামত জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর।
➥[৪] আবু নুয়াইম, হুলিয়া, খন্ড:৭, পৃ. ১৮৯
হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র বর্ণনা মতে, তাকে উলামাদের দলভুক্ত করা হবে এবং শোহাদাদের সাথে তার হাশর হবে।
➥[৫] ইবনে জওযী (رحمة الله)’র আল ইলালুল মুতানাহিয়্যাহ, ১ পৃষ্ঠা. ১২৪
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا حَدُّ الْعِلْمِ الَّذِي إِذَا بَلَغَهُ الرَّجُلُ كَانَ فَقِيهًا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ حَفِظَ عَلَى أُمَّتِي أَرْبَعِينَ حَدِيثًا فِي أَمْرِ دِينِهَا بَعَثَهُ اللهُ فَقِيهًا وَكُنْتُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَافِعًا وَشَهِيْدًا-
হযরত আবুদ দারদা (رضي الله عنه)বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হল ইলমের কোন সীমানায় পৌঁছলে ফকীহ হতে পারে? উত্তরে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তার দ্বীনের ব্যাপারে চল্লিশটি হাদিস মুখস্থ করেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ফকীহরূপে কবর থেকে উঠাবেন। কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষী হব।
➥[৬] মিশকাত পৃ. ৩৬, ইমাম নববী (رحمة الله) বলেছেন, এখানে حفظ দ্বারা চলিশটি হাদিস বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। টীকা নং ১২, মিশকাত পৃ. ৩৬
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদিস অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়ার ফযিলতের উপরও একাদিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَضَّرَ اللهُ عَبْدًا سَمِعَ مَقَالَتِي فَحَفِظَهَا وَوَعَاهَا وَأَدَّاهَا فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ غَيْرِ فَقِيهٍ وَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন, যে আমার কথা শুনেছে তারপর তাকে যথাযথভাবে স্মরণ রেখেছে ও সংরক্ষণ করেছে, আবার তা যথাযথভাবে অন্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। কেননা, জ্ঞানের অনেক বাহক নিজে জ্ঞানী নন এবং অনেকে এমন রয়েছে, যারা নিজের তুলনায় উচ্চতর জ্ঞানীর কাছে জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়।
➥[৭] ইমাম শাফেঈ, বায়হাকী, মাদখাল গ্রন্থে, হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী, সূত্র: মিশকাত, পৃ: ৩৫
وَعَن ابْن مَسْعُودٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: نَضَّرَ اللهُ امْرَأً سَمِعَ مِنَّا شَيْئًا فَبَلَّغَهُ كَمَا سَمِعَهُ فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعَى لَهُ مِنْ سَامِعٍ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন, যে আমার কোন কথা শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে সেভাবেই তা অপরকে পৌঁছে দিয়েছে। কেননা অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয় সে ব্যক্তি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষাকারী হয়।
➥[৮] তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ, কিন্তু দারেমী এটা হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। সূত্র: মিশকাত পৃ. ৩৫
নবী করিম (ﷺ) বলেছেন-
لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الغَائِبَ، فَإِنَّ الشَّاهِدَ عَسَى أَنْ يُبَلِّغَ مَنْ هُوَ أَوْعَى لَهُ مِنْهُ
এখানে উপস্থিত ব্যক্তি (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। কারণ উপস্থিত ব্যক্তি হয়ত এমন ব্যক্তির কাছে পৌঁছাবে, যে এ বাণীকে তার থেকে বেশী সংরক্ষণ করতে পারবে।
➥[৯] বুখারী, পৃ. ১৬, হাদিস নং ৬৭
যে সব ওলামায়ে কিরাম চল্লিশ হাদিসের উপর কিতাব রচনা করেছেন, তাদের কেউ দ্বীনের উসূল, কেউ দ্বীনের ফুরূ, কেউ জিহাদ, কেউ যুহদ, কেউ আদব, কেউ বক্তব্য ইত্যাদি বিষয় সমূহের উপর লিখেছেন। আশেকে রাসূল (ﷺ)গণের রূহের খোরাক মিঠানোর উদ্দেশ্যে ‘মদীনা মুনাওয়ারার ফযিলত’ বিষয়টি অদম বেছে নিয়েছি। আশা করি পুস্তিকাটি বিজ্ঞ পাঠকের হৃদয়ে আসন করে নিতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রিন্টিং জগতটি বড়ই সুক্ষ্ম। একাদিকবার প্র“ফ দেখার পরও অজান্তে অনেক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যায়। কিন্তু বিজ্ঞ পাঠকের চোখে ধরা পড়ে ঐসব ভুল। তাই ক্রটি-বিচ্যুতি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি কাম্য। আর আমাদেরকে অবহিত করলে পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করা হবে। বইটির প্রকাশে যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান রয়েছে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা যেন অদমের এই ক্ষুদ্র খেদমতটুকু কবুল করেন এবং দুনিয়া-আখিরাতের সফলতা দান করেন। আমীন, বেহুরমতে খাতামিন নবীয়্যিন।
মদীনা মুনাওয়ারা হারম
১. عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: المَدِينَةُ حَرَمٌ مِنْ كَذَا إِلَى كَذَا، لاَ يُقْطَعُ شَجَرُهَا، وَلاَ يُحْدَثُ فِيهَا حَدَثٌ، مَنْ أَحْدَثَ حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
১. অনুবাদ: হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, মদীনা এখান থেকে ওখান পর্যন্ত হারম। সুতরাং তার গাছ কাটা যাবে না এবং কুরআন-সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ মদীনায় করা যাবে না। যদি কেউ কুরআন-সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ করে তাহলে তার প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাদের এবং সকল মানুষের লা’নত।
➥[১০] সহীহ বুখারী, পৃ. ২৫১, হাদিস নং ১৭৪৬
ব্যাখ্যা: মদীনা মুনাওয়ারা মক্কা মুকাররমাহর ন্যায় হারম। মক্কার গাছপালা কাটা যেমনি নিষেধ মদীনা মুনাওয়ারার গাছপালা কাটাও নিষেধ। আর মদীনা তায়্যেবায় যারা কুরআন-সুন্নাহর খেলাফ কাজ করবে তাদের উপর মহান আল্লাহ, সকল ফেরেশ্তা ও সকল মানুষের অভিশাপ। অতএব, মদনা শরীফে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকা একান্ত প্রয়োজন।
মদীনা অবাঞ্চিত লোকদের বের করে দেয়
২. عَنْ اَبِى هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أُمِرْتُ بِقَرْيَةٍ تَأْكُلُ القُرَى، يَقُولُونَ يَثْرِبُ، وَهِيَ المَدِينَةُ، تَنْفِي النَّاسَ كَمَا يَنْفِي الكِيرُ خَبَثَ الحَدِيدِ
২. অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, আমি এমন জনপদে হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যে জনপদ অন্য সব জনপদের উপর বিজয়ী হবে। লোকেরা তাকে ইয়াসরিব বলে থাকে। এ হল মদীনা। তা অবাঞ্চিত লোকদেরকে এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে কামারের অগ্নিচুলা লোহার মরিচা দূর করে দেয়।
➥[১১] সহীহ বুখারী, পৃ.-২৫২, হাদিস নং ১৭৫০
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাল্লাহ (ﷺ) মক্কা থেকে মদীনা হিজরত তাঁর নিজের ইচ্ছায় করেন নি বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে হিজরত করেছেন। হযরত ওমর রা থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় নবী (ﷺ) এর জন্য মদীনাকে পছন্দ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)হিজরতের পূর্বে মদীনা মুনাওয়ারাকে ইয়াসরিব বলা হত। ইয়াসরিবের আবহাওয়া স্বাস্থ্য সম্মত ছিল না। মহামারী এলাকা ছিল। ওখানকার অধিবাসীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হত। বিশেষত জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়ে শারিরীকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমনে তার নাম পরিবর্তন হয়ে মদীনাতুল মুনাওয়ারা হয়েছে। তার আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে স্বাস্থ্য সম্মত হয়েছে এবং মদীনা শরীফের মাটি মু’মিনের জন্য শেফা হয়েছে। হাফেজ ইবনে হাজর (رحمة الله) ফতহুল বারী গ্রন্থে লিখেছেন, অনেক ওলামাগণের মতে মদীনাকে ইয়াসরিব বলা মাকরূহ। ইমাম ইবনে দীনার মালেকী (رحمة الله) বলেন, যে ব্যক্তি মদীনাকে ইয়াসরিব বলবে তার জন্য একটি গুনাহ লিখা হয়।
تَأْكُلُ القُرَى অর্থ: মদীনা অন্যান্য শহরের উপর বিজয়ী হবে। আর এর অর্থ হল মদীনা অন্যান্য শহরের চেয়ে ফযিলতের দিক দিয়ে প্রাধান্য পাবে। অথবা মদীন াবাসীরা সর্বদা অন্যান্য অধিবাসীদের উপর জয়ী হবে। আমালেকা গোত্র মদীনায় ছিল তারা অন্যান্য গোত্রের উপর বিজয়ী হয়েছিল। অতঃপর ইহুদীরা আসল তারা আমালেকার উপর বিজয়ী হল। তারপর সায়্যিদুল মুরসালীন (ﷺ) ও মুহাজিরগণ এসেছেন তাঁরা মাগরীব থেকে মাশরিক পর্যন্ত বিজয়ী হলেন।
বসবাসের জন্য মদীনা সর্বোত্তম স্থান
৩. عَنْ سُفْيَانَ بْنِ أَبِي زُهَيْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: تُفْتَحُ اليَمَنُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيْهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ الشَّأْمُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ العِرَاقُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
৩. অনুবাদ: হযরত সুফিয়ান ইবনে আবু যুহায়র (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, ইয়ামান বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সাওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং তাদের অনুগত লোকদের উঠায়ে তথায় নিয়ে যাবে। অথচ মদীনাই তাদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তারা বুঝত। সিরিয়া বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সাওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং তাদের অনুগত লোকদের উঠায়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদীনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর। এরপর ইরাক বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সাওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বজন এবং তাদের অনুগতদেরকে উঠায়ে তথায় নিয়ে যাবে অথচ মদীনাই তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা জানত।
➥[১২] সহীহ বুখারী শরীফ, পৃ. ২৫২ হাদিস নং ১৭৫৪
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)অগ্রীম বলে দিয়েছেন যে, একদিন ইয়ামন, সিরিয়া ও ইরাক মুসলমানদের হাতে বিজয় হবে। আর লোকেরা বসবাসের জন্য সেসব দেশে সপরিবারে এবং আত্মীয়স্বজন নিয়ে চলে যাবে। কিন্তু তারা জানেনা যে, ঐসব দেশে বসবাসের চেয়ে মদীনা শরীফে বসবাস করা কতই উত্তম।
যে শহরে প্রিয় নবী (ﷺ) বসবাস করেন সেটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আবাস স্থল। সেখানকার দু:খ-কষ্ট সহ্য করার মধ্যেও অনেক ফযিলত রয়েছে। কিন্তু মানুষ পৃথিবীর সাময়ীক সুখ-শান্তির জন্য নব বিজিত ঐসব দেশে বসাবাসের জন্য চলে যাবে। অন্যান্য দেশে ধন- দৌলত ও আরাম-আয়েশী বেশী থাকতে পারে কিন্তু মদীনা পাকের যে বরকত, নবী করিম (ﷺ)’র প্রতিবেশী হওয়ার সৌভাগ্য ও দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার যত উপকরণ মদীনায় আছে তা পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
উক্ত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর ইলমে গায়েব প্রকাশিত হয়। তিনি অগ্রীম যে সংবাদ দিয়েছিলেন পরবর্তীতে তা বাস্তবায়িত হয়েছিল। তিনি যে ধারাবাহিকভাবে বলেছেন সে ভাবেই ঔ দেশসমূহ বিজিত হয়েছিল।
ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে
৪. عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى المَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا
৪ অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, ঈমান মদীনাতে ফিরে আসবে যেমন সাপ তার গর্তে ফিরে আসে।
➥[১৩] সহীহ বুখারী শরীফ, পৃ. ২৫২, হাদিস নং ১৭৫৫
ব্যাখ্যা: কেউ কেউ বলেছেন, হাদিসের বিষয়টি ইসলামের প্রাথমিক যুগের সাথে সম্পৃক্ত। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যামানায় যাদের অন্তরে ঈমানী জযবা ছিল তারা দলে দলে নবীর দর্শন লাভের জন্য এবং দ্বীন শিক্ষার জন্য মদীনায় চলে আসত। অথবা বিষয়টি সব সময়ের জন্য। সর্বকালে মানুষ নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কবর শরীফ যিয়ারত ও মসজিদে নববীতে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে সমগ্র পৃথিবী থেকে মানুষ মদীনা পাকে আসতে থাকবে। অথবা বিষয়টি আখেরী যামানার সাথে সম্পৃক্ত। সমগ্র পৃথিবী থেকে দ্বীন সংকুচিত হয়ে মদীনা শরীফ চলে আসবে। কেননা দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে একমাত্র মদীনা শরীফ নিরাপদ থাকবে।
ঈমানকে সাপের সাথে তুলনা দেয়ার কারণ হল- সাপকে কেউ আঘাত করলে দ্রুত তার গর্তে প্রবেশ করে নিরাপত্তা লাভ করে। তেমনিভাবে শেষ যামানায় কাফির মুশরিকের অত্যাচারে ঈমানদারগণ অতিষ্ট হয়ে মদীনায় গিয়ে আশ্রয় নিবে এবং সেখানে তারা নিরাপত্তা লাভ করবে।
মদীনা মুনাওয়ারায় মক্কা মুকাররমার দ্বিগুণ বরকত
৫. عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: اللَّهُمَّ اجْعَلْ بِالْمَدِينَةِ ضِعْفَيْ مَا جَعَلْتَ بِمَكَّةَ مِنَ البَرَكَةِ
৫. অনুবাদ: হযরত আনাস (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! মক্কাতে তুমি যে বকরত দান করেছ, মদীনাতে এর দ্বিগুণ বরকত দাও।
➥[১৪] সহীহ বুখারী শরীফ, পৃ. ২৫৩, হাদিস নং ১৭৬৪
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মদীনার বরকতের জন্য দোয়া করলেন আল্লাহর দরবারে। নিশ্চয়ই তাঁর দোয়া কবুল হয়েছে। যে সব ওলামা কিরাম মক্কা থেকে মদীনাকে প্রাধান্য দেন তারা উপরোক্ত হাদিসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন। কারণ উক্ত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মক্কা থেকে মদীনার জন্য দ্বিগুণ বরকতের দোয়া করেছেন। উক্ত হাদিসের সমর্থনে আরো বহু হাদিস আছে যাতে নবী করিম (ﷺ) মদীনার জন্য মক্কা থেকে দ্বিগুণ বরকতের দোয়া করেছেন।
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন লোক প্রথমে ফসল লাভ করত তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট নিয়ে আসত। তখন তিনি তা গ্রহণ করতেন আর বলতেন, হে আল্লাহ! আমাদের ফল-শস্যে বরকত দাও। আমাদের আড়িতে বরকত দাও ও আমাদের সেরিতে বরকত দাও। হে আল্লাহ! ইব্রাহীম তোমার বান্দা, তোমার বন্ধু ও তোমার নবী এবং আমিও তোমার বান্দা ও নবী। তিনি তোমার নিকট মক্কার জন্য দোয়া করেছেন আর আমি তোমার নিকট মদীনার জন্য দোয়া করছি, যে রূপ দোয়া ইব্রাহিম (عليه السلام) তোমার নিকট মক্কার জন্য করেছিলেন। আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আপন পরিবারের সর্বকনিষ্ট ছেলেকে ডাকতেন এবং তাকে ঐ ফল দান করতেন।
➥[১৫] মুসলিম, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৩৯, হাদিস নং ২৬০১
মদীনাবাসীর সাথে প্রতারণা করার পরিণাম
৬. عَنْ سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: لاَ يَكِيدُ أَهْلَ المَدِينَةِ أَحَدٌ، إِلَّا انْمَاعَ كَمَا يَنْمَاعُ المِلْحُ فِي المَاءِ(متفق عليه)
৬. অনুবাদ: হযরত সা’দ (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, যে কেউ মদীনাবাসীর সাথে ষড়যন্ত্র বা প্রতারণা করবে, সে লবণ যেভাবে পানিতে গলে যায়, সেভাবে গলে যাবে।
➥[১৬] বুখারী ও মুসলিম শরীফ, সূত্র: মিশকাত শরীফ,পৃ. ২৪০, বুখারী হাদিস নং ১৭৫৬
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিস মতে মদীনাবাসীদের সাথে প্রতারণা করার পরিণাম হল আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন। এ বিষয়েও বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্ন শাস্তির কথা উল্লেখ আছে।
মদীনাবাসীরা হলেন নবীর প্রতিবেশী। আর নবী করিম (ﷺ) তাঁর প্রতিবেশীকে ভালবাসেন। সুতরাং আল্লাহও তাদেরকে ভালবাসেন। তাই মদীনাবাসীর সাথে প্রতারণা করলে আল্লাহ শাস্তি দেন।
হযরত ওমর (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মদীনাবাসীকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তাকে কষ্ট দেবেন। তার উপর আল্লাহর অভিশাপ, ফেরেস্তাদের অভিশাপ এবং সমগ্র পৃথিবীবাসীর লা’নত। তার ফরয-নফল কিছুই কবুল হবে না।
মদীনা শরীফে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যারা যাবে তাদেরকে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। তাদের দ্বারা কোন অবস্থাতেই যেন কোন মদীনাবাসীর কষ্ট না হয়।
মদীনায় দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না
৭. عَنْ أَبِي بَكْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ يَدْخُلُ المَدِينَةَ رُعْبُ المَسِيحِ الدَّجَّالِ، لَهَا يَوْمَئِذٍ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ، عَلَى كُلِّ بَابٍ مَلَكَانِ
৭. অনুবাদ: হযরত আবু বাকরা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, মদীনাতে দাজ্জালের ত্রাস ও ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। ঐ সময় মদীনার সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক পথে দু’জন করে ফেরেস্তা নিয়োজিত থাকবে।
➥[১৭] সহীহ বুখারী শরীফ, পৃ. ২৫২. হাদিস নং ১৭৫৮
ব্যাখ্যা: শেষ যামানায় কানা দাজ্জাল প্রকাশিত হবে। সে সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণ করবে আর মানুষকে গোমরাহ করবে। কিন্তু মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। বুখারী শরীফে হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه)বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন। বর্ণিত কথা সমূহের মধ্যে তিনি একথাও বলেছিলেন যে, মদীনার প্রবেশ পথে অনুপ্রবেশ করা দাজ্জালের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা মদীনার প্রবেশ পথ সমূহে ফেরেস্তা নিয়োগ করবেন যেন দাজ্জাল মদীনায় প্রবেশ করতে না পারে।
মদীনা আবর্জনা ও মরিচাকে দূরীভূত করে
৮. عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، جَاءَ أَعْرَابِيٌّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَبَايَعَهُ عَلَى الإِسْلاَمِ، فَجَاءَ مِنَ الغَدِ مَحْمُومًا فَقَالَ: أَقِلْنِي، فَأَبَى ثَلاَثَ مِرَارٍ، فَقَالَ: المَدِينَةُ كَالكِيرِ تَنْفِي خَبَثَهَا وَيَنْصَعُ طَيِّبَهَا
৮. অনুবাদ: হযরত জাবির (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, একজন বেদুইন নবী করিম (ﷺ) এর নিকট এসে ইসলামের উপর বাইয়াত গ্রহণ করল। পরদিন সে জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে বলল, আমার (বাইয়াত) ফিরিয়ে নিন। নবী করিম (ﷺ) তা প্রত্যাখ্যান করলেন। এভাবে তিনবার হল। অতঃপর বললেন, মদীনা কামারের হাঁপরের মত, যা তার আবর্জনা ও মরিচাকে দূরীভূত করে এবং খাঁটি ও নির্ভেজালকে পরিচ্ছন্ন করে।
➥[১৮] সহীহ বুখারী শরীফ, পৃ. ২৫৩, হাদিস নং- ১৭৬২
ব্যাখ্যা: একজন বেদুইন নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাতে ইসলামের উপর বাইয়াত গ্রহণ করল। পরে লাগাতার তিনদিন এসে বলল, আমি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি। আপনি আমার বাইয়াত ফিরিয়ে নিন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বাইয়াত ফিরিয়ে নিলেন না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, মদীনা কামারের হাঁপরের মত আবর্জনা ও মরিচাকে দূরীভূত করে আর খাঁটি লোকদের পরিচ্ছন্ন করে। বুখারী শরীফে অপর হাদিসে আছে- قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّهَا تَنْفِي الرِّجَالَ كَمَا تَنْفِي النَّارُ خَبَثَ الحَدِيدِ নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, মদীনা (মুনাফিক) লোকদের বহিষ্কার করে দেয়, যেভাবে আগুন লোহার মরিচাকে দূর করে দেয়।
➥[১৯] বুখারী: হাদিস নং ১৭৬৩
মদীনায় মৃত্যু বরণের ফযিলত
৯. وَعَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَمُوتَ بِالْمَدِيْنَةِ فَلْيَمُتْ لَهَا فَإِنِّي أَشْفَعُ لِمَنْ يَمُوتُ بِهَا
৯. অনুবাদ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, যার সুযোগ হয় মদীনায় মৃত্যু বরণ করতে সে যেন মদীনায় মৃত্যু বরণ করে। কেননা তথায় মৃত্যুবরণকারীর জন্য (কিয়ামত দিবসে) আমি সুপারিশ করব।
➥[২০] মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃ ২৪০, হাদিস নং ২৬১৯
ব্যাখ্যা: মদীনা শরীফে শেষ জীবন পর্যন্ত কাটিয়ে অবশেষে মদীনা শরীফে ইন্তেকাল করলে নবী করিম (ﷺ) সেই ব্যক্তির জন্য কিয়ামত দিবসে সুপারিশ করবেন। যেখানে মৃত্যুবরণ করলে জান্নাতুল বাকীতে দাফনের সুযোগ পাবে, যেখানে অসংখ্য সাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইতে রাসূল দাফন হয়েছেন।
ইমাম মালেক (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে, প্রায় দশ হাজার সাহাবীর করব রয়েছে জান্নাতুল বাকীতে।
হযরত ওমর (رضي الله عنه) দোয়া করতেনঃ
:اللهم ارْزُقْنِىْ شَهَادَةً فِىْ سَبيْلِ اللهِ وَاِجْعَلْ مَوْتِىْ بِبَلَدِ رَسُوْلِكَ
হে আল্লাহ! আমাকে আপনার রাস্তায় শহীদ হওয়ার তাওফিক দিন এবং আমার মৃত্যুটা আপনার রাসূলের শহরে নসীব করুন।
কাযী আয়ায (رحمة الله) বলেন, মদীনাবাসীর জন্য বিশেষ সুপারিশ দ্বারা উদ্দেশ্য হল- তাদের মর্তবা অত্যন্ত উঁচু হবে অথবা তাদের হিসাব-নিকাশ সহজ হবে বা আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দিয়ে সম্মানিত করবেন। অথবা তারা নূরানী মিম্বরে অবস্থান করবে কিংবা তারা দ্রুত জান্নাতে প্রবেশ করবে।
➥[২১] শরহে সহীহ মুসলিম, কৃত. আল্লামা গোলাম রসূল সাঈদী, খন্ড: ৩, পৃ. ৭২৮
মদীনা থেকে মন্দ লোক বের না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না
১০. وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَنْفِيَ الْمَدِينَةَ شِرَارَهَا كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ
১০. অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না মদীনা থেকে মন্দ লোকদেরকে দূর করে দিবে, যেভাবে দূর করে দেয় হাঁপর লোহার খাদকে।
➥[২২] মুসলিম, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৩৯-৪০, হাদিস নং ২৬০৯
ব্যাখ্যা: বুখারী শরীফের অপর এক হাদিসে আছে, আনাস (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, মক্কা ও মদীনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যেখানে দাজ্জাল অনুপ্রবেশ করবে না। মক্কা এবং মদীনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফেরেস্তাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। এরপর মদীনা তার অধিবাসীদেরকে নিয়ে তিনবার কেঁপে উঠবে। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা সমস্ত কাফির এবং মুনাফিকদেরকে (মদীনা থেকে) বের করে দিবেন।
➥[২৩] সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৭১৬
অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে মদীনা থেকে সমস্ত কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকদেরকে বের করে দেয়া হবে। কেবল খালিস মুসলমানগণই সেখানে থাকবে। তারপর কিয়ামত সংঘটিত হবে।
কামারের হাঁপর যেভাবে লোহা থেকে মরিচা দূর করে পরিচ্ছন্ন করে দেয় মদীনা ও তার থেকে মন্দ লোকদেরকে বহিষ্কার করে দিয়ে মদীনাকে পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে রাখবে।
মদীনার দু:খ-কষ্টে ধৈর্য্যধারণের ফযিলত
১১. وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَصْبِرُ عَلَى لَأْوَاءِ الْمَدِينَةِ وَشِدَّتِهَا أَحَدٌ مِنْ أُمَّتِي إِلَّا كُنْتُ لَهُ شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
১১. অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, আমার উম্মতের কোন ব্যক্তি মদীনার অভাব অনটন ও দু:খ কষ্টে ধৈর্যধারণ করবে, নিশ্চয় আমি কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশকারী হব।
➥[২৪] মুসলিম, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৩৯, হাদিস নং ২৬০০
ব্যাখ্যা: মুসলিম শরীফে হযরত সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন- لَا يَدَعُهَا أَحَدٌ رَغْبَةً عَنْهَا إِلَّا أَبْدَلَ اللهُ فِيهَا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ وَلَا يَثْبُتُ أَحَدٌ عَلَى لَأْوَائِهَا وَجَهْدِهَا إِلَّا كُنْتُ لَهُ شَفِيعًا أَو شَهِيدا يَوْم الْقِيَامَة যে ব্যক্তি অনাগ্রহে মদীনা ত্যাগ করবে, তার পরিবর্তে আল্লাহ তার অপেক্ষা উত্তম ব্যক্তিকে তথায় দিবেন এবং যে মদীনার অভাব- অনটন ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যের সাথে ঠিকে থাকবে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী কিংবা সাক্ষী হব।
➥[২৫] মুসলিম, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৩৯, হাদিস নং ২৫৯৯
অর্থাৎ: নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পছন্দীয় স্থান হিসেবে পার্থিব দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মদীনায় অবস্থান করতে হবে। মদীনার ফযিলতের কথা বিবেচনা করে দু:খ-কষ্টকে তুচ্ছ মনে করে ধৈর্য ধারণ করে বসবাস করলে এর বিনিময় স্বরূপ নবী করিম (ﷺ) গুনাহগারদের জন্য সুপারিশ করবেন আর নেককারদের জন্য সাক্ষী হবেন।
অনেক ওলামাগণ বলেছেন, মদীনা শরীফের কোন বস্তুকে খারাপ বলা যাবে না এবং কোন মন্দ জিনিসকে মদীনার দিকে সম্পর্কিত করা যাবে না।
মদীনার প্রতি নবী করিম (ﷺ) এর ভালবাসা
১২. عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ، فَنَظَرَ إِلَى جُدُرَاتِ المَدِينَةِ، أَوْضَعَ رَاحِلَتَهُ وَإِنْ كَانَ عَلَى دَابَّةٍ حَرَّكَهَا مِنْ حُبِّهَا
১২. অনুবাদ: হযরত আনাস (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় নবী করিম (ﷺ) সফর থেকে ফিরে আসার পথে যখন তিনি মদীনার প্রাচীরগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করতেন, তখন তিনি তাঁর উটকে দ্রুত চালাতেন আর তিনি অন্য কোন জন্তর উপর থাকলে তাকেও দ্রুত চালিত করতেন, মদীনার ভালবাসার কারণে।
➥[২৬] সহীহ বুখারী, পৃ. ২৫৩, হাদিস নং ১৭৬৫
ব্যাখ্যা: স্বভাবত মানুষ তার বাসস্থানকে ভালবাসে। এরূপ ভালবাসা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মধ্যেও ছিল মদীনার প্রতি। তাই তিনি কোন সফর থেকে আসলে মদীনার প্রাচীরসমূহ দেখলে মদীনার প্রতি তাঁর মনের আকর্ষণ বেড়ে যেত। ফলে বাহনকে দ্রুত চালিয়ে ঘরে পৌঁছার চেষ্টা করতেন।
নবী করিম (ﷺ) মদীনাকে ভালবাসতেন তাই নবীর প্রত্যেক উম্মতের উপর আবশ্যক মদীনাকে ভালবাসা, মদীনাবাসীকে ভালবাসা এবং মদীনার প্রত্যেক বস্তুকে ভালবাসা। এটাই হল সত্যিকারের আশেকে রাসূলের প্রমাণ।
মদীনা শরীফে রোযা- জুমুআর ফযিলত
১৩. عَنْ بِلَالِ بْنِ الْحَارِثِ المُزَنِى رَضِى اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهُ قَالَ رَمَضَانُ بِالْمَدِينَةِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ رَمَضَانَ فِيمَا سِوَاهَا مِنَ الْبُلْدَانِ، وَجُمُعَةٌ بِالْمَدِينَةِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ جُمُعَةٍ فِيمَا سِوَاهَا مِنَ الْبُلْدَانِ
১৩. অনুবাদ: হযরত বিলাল ইবনে হারেস মুযানী (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মদীনার এক রমযান অন্যান্য শহরের রমযানের চেয়ে হাজারগুণ উত্তম। মদীনার এক জুমুআ অন্যান্য শহরের হাজার জুমুআর চেয়ে উত্তম।
➥[২৭] তাবরানী শরীফ, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ. ২৭
ব্যাখ্যা: মদীনা শরীফে এক রমযানে রোযা রাখা মদীনা ছাড়া অন্য কোথাও এক হাজার রমযান মাসে রোযা রাখার চেয়ে উত্তম। অনুরূপভাবে মদীনা শরীফে এক জুমা আদায় করা মদীনা ব্যতিত অন্য কোথাও এক হাজার জুমা আদায় অপেক্ষা উত্তম।
মসজিদে নববীর ফযিলত
১৪. عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِى اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا افضل من أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ مِنَ الْمَسَاجِدِ، إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ فَإِنِّي آخِرُ الْأَنْبِيَاءِ , وَإِنَّ مَسْجِدِى آخِرُ الْمَسَاجِدِ
১৪. অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার এই মসজিদে নামায আদায় করা মসজিদে হারাম ব্যতিত অন্যান্য মসজিদে নামায আদায় করার চেয়ে হাজারগুণ উত্তম। আমি হলাম সর্বশেষ নবী আর আমার মসজিদ হল সর্বশেষ মসজিদ।
➥[২৮] মুসলিম, নাসাঈ, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা পৃ. ৩১, মুসলিম, হাদিস নং- ৩২৭২, সূত্র: শরহে সহীহ মুসলিম
ব্যাখ্যা: আল্লামা সমহুদী (رحمة الله) বলেন, মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসা ব্যতিত বাকী মসজিদসমূহের চেয়ে মসজিদে নববীতে নামায আদায় করা লক্ষ নামাযের চেয়ে উত্তম।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه)বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, আমার মসজিদে নামায পড়া মসজিদে হারাম ব্যতিত অন্যান্য মসজিদের চেয়ে একহাজার গুণ বেশী উত্তম আর মসজিদে হারামে নামায পড়া মসজিদে নববীর চেয়ে একশতগুণ উত্তম। অন্যান্য মসজিদের চেয়ে একলক্ষগুণ উত্তম।
➥[২৯] আল্লামা নুর“দ্দীন আলী ইবনে আহমদ সমহুদী (رحمة الله) ৯১১ হি., ওয়াফাউল ওয়াফা, খন্ড ১, পৃ. ৪১৮-১৯
হযরত জাবের (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন,
صَلَوةٌ فِىْ مَسَجِدِى اَفْضَلُ مِنْ مِأَةِ اَلْفِ صَلَوْةٍ فِيْمَا سِوَاهُ اِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامِ وَصَلَوةُ فِىْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اَفْضَلُ مِنْ مِأَةِ اَلْف صَلَوةٍ فِيْمَا سِوَاهُ
আমার মসজিদে নামায পড়া মসজিদে হারাম ব্যতিত অন্যান্য মসজিদে এক লক্ষ নামাযের চেয়ে উত্তম। মসজিদে হারামে নামায পড়া অন্যান্য মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে একলক্ষগুণ উত্তম।
➥[৩০] আল্লামা বদর উদ্দিন আইনী (رحمة الله) (৮৫৫) উমদাতুলকারী খন্ড ৭, পৃ. ২৫৬
আর হাদিসের অংশ
فَإِنِّي آخِرُ الْأَنْبِيَاءِ , وَإِنَّ مَسْجِدِى آخِرُ الْمَسَاجِدِ
অর্থ আমি হলাম পৃথিবীর সর্বশেষ নবী আর আমার মসজিদ হল নবীদের আখেরী মসজিদ। যেহেতু নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পরে কোন নবী আসবে না সেহেতু মসজিদে নববীর পরে আর কোন নবী দ্বারা কোন মসজিদ নির্মাণ হবে না।
মসজিদে কুবায় নামায আদায় করার ফযিলত
১৫. عَنْ أُسَيْدَ بْنَ ظُهَيْرِ الأَنْصَارِيَّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الصَّلَاةُ فِي مَسْجِدِ قُبَاءٍ كَعُمْرَةٍ
১৫. অনুবাদ: হযরত উসায়দ ইবনে জুহায়র (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মসজিদে কুবায় নামায আদায় করা একটা উমরার সমতুল্য।
➥[৩১] আহমদ, তিরমিযী, হাকেম, সূত্র: আরবাউন হাদিসান কি ফাযায়েলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা পৃ. ৩৫
ব্যাখ্যা: মসজিদে কুবা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্মাণকৃত ইসলামের প্রথম মসজিদ। হিজরতের সময় তিনি কুবা নামক স্থানে বনী আমর গোত্রে অবস্থান করেন। এসময় তিনি এ মসজিদ নির্মাণ করলেন। পবিত্র কুরআনে এই মসজিদের এবং এটা এলাকাবাসীর প্রশংসা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
:لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَنْ تَقُومَ فِيهِ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ
নিশ্চয় যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথমদিন থেকে সেটিই আপনার দাঁড়াবার স্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আল্লাহ অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন।
➥[৩২] সূরা তাওবা, আয়াত ১০৮
ঐ এলাকার অধিবাসীরা মাটি-পাথর দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করার পর পুনরায় পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতেন। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রশংসা করেন।
রাসূলুল্লাল্লাহ (ﷺ) প্রতি শনিবার পায়ে হেঁটে মসজিদে কুবায় আসতেন। তিনি বলেন-
"مَنْ تَوَضَّأَ فَأَسْبَغَ الْوُضُوْءَ، ثُمَّ جَاءَ مَسْجِدِ قُباء، فَصَلَّى فِيْهِ، كَانَ لَهُ أَجْرُ عُمْرَةَ".
যে ব্যক্তি ভালভাবে উযূ করে মসজিদে কুবায় এসে নামায আদায় করবে, তার জন্য রয়েছে একটি উমরার সাওয়াব।
➥[৩৩] আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়েলিল মদীনা মুনাওয়ারা পৃ. ৩৮
ইবনে আবি শায়বা বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেন:
لِاَنْ اُصَلِّى فِىْ مَسْجِدِ قُبَاءِ رَكَعَتَيْنِ اُحَبَّ اِلَىَّ مِنْ اَنْ اتَى بَيْتُ الْمُقَدَّسِ مَرَّتَيْنِ لَوْيَعَلَمُوْنَ مَافِى قُبَاءِ لَصَرَفُوْا اِلَيْهِ اَكْبَادُ الْاِبْلِ
মসজিদে কুবায় দুই রাকআত নামায আদায় করা আমার নিকট বায়তুল মোকাদ্দাসে দুইবার গিয়ে নামায পড়ার চেয়ে বেশি প্রিয়। মসজিদে কুবা’র নামাযের ফযিলত সম্পর্কে যদি তারা জানত তবে মানুষ তার দিকে দূর-দূরান্ত থেকে উট হাঁকিয়ে সফর করে আসত।
➥[৩৪] হাফিয ইবনে হাজর আসকলানী (رحمة الله) (৮৫২ হি.) ফতহুল বারী, খন্ড ৩, পৃ. ৬৯
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)বলেন,
مَنْ صَلَّى فِىْ مَسَاجِدِ الْاَرْبَعَةِ غُفِرَلَهُ ذُنُوْبُهُ
যে ব্যক্তি চারটি মসজিদে নামায পড়বে তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর এই চারটি মসজিদ হল ১. মসজিদে হারাম ২. মসজিদে নববী ৩. মসজিদে আকসা ও ৪. মসজিদে কুবা।
➥[৩৫] জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব পৃ. ১৪১
হাফেয ইরাকী বলেন, মসজিদে কুবা যিয়ারত করা এবং তাতে নামায আদায় করা মুস্তাহাব আর শনিবারে যাওয়া সুন্নাত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র হাদিস দ্বারা।
➥[৩৬] (আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়েলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা পৃ. ৩৮)
উল্লেখ্য যে, মদীনার ফযিলত বর্ণনার মধ্যে মসজিদে কুবার ফযিলত এর কথা আসার কারণ হল মসজিদে কুবাটি মদীনায় অবস্থিত।
মসজিদে কুবার ফযিলত
১৬. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِي قُبَاءً يَعْنِي كُلَّ سَبْتٍ،، كَانَ يَأْتِيهِ رَاكِبًا وَمَاشِيًا، قَالَ ابْنُ دِينَارٍ:وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَفْعَلُهُ
১৬. অনুবাদ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)প্রত্যেক শনিবারে মসজিদে কুবায় যেতেন। তিনি পায়ে হেঁটেও যেতেন আবার সাওয়ারীর উপর হয়েও যেতেন। বর্ণনাকারী ইবনে দীনার (رحمة الله) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)অনুরূপ করতেন।
➥[৩৭] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৩২৯২
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিস খানা বুখারী শরীফেও আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)প্রতি শনিবারে মসজিদে কুবায় যাওয়ার কারণ হল- আল্লামা আইনী (رحمة الله) বলেন- হিজরতের সময় সর্বপ্রথম নবী করিম (ﷺ) মসজিদে কুবা নির্মাণ করেন অতঃপর মসজিদে নববী নির্মাণ করেন। মসজিদে নববীতেই তিনি জুমুআ পড়াতেন। কুবা বাসীরা সকলেই মসজিদে নববীতে এসে জুমুআর নামায পড়তেন। মসজিদে কুবায় জুমুআর নামায হত না। তাই তার ক্ষতিপুরণ হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)শনিবারে কুবায় যেতেন। দ্বিতীয় কারণ হল- শনিবারে তিনি অবসর থাকতেন তাই প্রিয়জনদের সাক্ষাত করার জন্য তিনি কুবায় যেতেন। তৃতীয় কারণ হল- অধিকাংশ কুবাবাসী জুমুআ পড়ার জন্য শুক্রবারে মদীনায় চলে আসত এবং নবীর সাক্ষাতে ধন্য হত। যারা অক্ষম ও দূর্বল তারা তাঁর সাক্ষাত থেকে বঞ্চিত হত। এ কারণে তিনি দয়া পরবশ হয়ে শনিবারে তাদের নিকট চলে যেতেন। যাতে যারা মদীনায় যেতে পারে নি তারাও যেন তাঁর সাক্ষাত লাভে ধন্য হয়।
➥[৩৮] শরহে মুসলিম, গোলাম রাসূল সাঈদী (رحمة الله), খন্ড ৩, পৃ. ৭৭১
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)তিন মসজিদ তথা মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা ছাড়া ও অন্য কোন মসজিদের দিকে সফর করতে নিষেধ করেছেন অথচ তিনি প্রতি শনিবারে মসজিদে কুবায় যেতেন। এর উত্তর হল- ঐ তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য কোন মসজিদে যাওয়ার মানত করা যাবে না। অথবা ঐ তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য কোন মসজিদে দূর-দূরান্ত থেকে সফর করা যাবে না। সাধারণভাবে যাওয়া-আসা করা নিষেধ নয়।
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) ও আল্লামা আইনী (رحمة الله)’র মতে উক্ত হাদিস দ্বারা নফলী ইবাদতকে কোন কোন দিনের সাথে খাস করা বৈধ এবং ঐ আমলকে নিয়মিত করাও জায়েয।
➥[৩৯] শরহে মুসলিম, গোলাম রাসূল সাঈদী (رحمة الله), খন্ড ৩, পৃ. ৭৭১
ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন- এই হাদিসে প্রমাণিত হয় যে, কোন দিনকে যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা জায়েয।
➥[৪০] আল্লামা ইয়াহিয়া ইবনে শরফ নববী (رحمة الله) (৬৭৬) হি. শরহে মুসলিম, খন্ড. ১, পৃ. ৪৪৮
এভাবে ওরস, ফাতেহা, মাদরাসার সভা কিংবা দ্বীনি মাদরাসায় ছবক পড়ানোর জন্য ঘন্টা নির্ধারণ করা যদি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন উদ্দেশ্য না হয়ে অন্য কোন ফায়েদা অর্জনের উদ্দেশ্যে হয় তাহলে মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর মতেও জায়েয।
➥[৪১] আশরাফ আলী থানভী, বাওয়াদেরে নাওয়াদের পৃ. ৪৫৮
মদীনায় উত্তম ব্যক্তিরাই বসবাস করবে
১৭. عَنْ عَامِر بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنِّي أُحَرِّمُ مَا بَيْنَ لَابَتَيِ الْمَدِينَةِ أَنْ يُقْطَعَ عِضَاهُهَا، أَوْ يُقْتَلَ صَيْدُهَا، وَقَالَ:الْمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، لَا يَدَعُهَا أَحَدٌ رَغْبَةً عَنْهَا إِلَّا أَبْدَلَ اللهُ فِيهَا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ، وَلَا يَثْبُتُ أَحَدٌ عَلَى لَأْوَائِهَا وَجَهْدِهَا إِلَّا كُنْتُ لَهُ شَفِيعًا، أَوْ شَهِيدًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
১৭. হযরত আমের তার পিতা সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه)থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, আমি মদীনার দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানকে হারম করছি। ওখানকার কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ কাটা যাবে না এবং কোন শিকার বধ করা চলবে না। তিনি আরো বলেন, মদীনা তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা জানত। যে ব্যক্তি অনাগ্রহে মদীনা ত্যাগ করবে, তার পরিবর্তে আল্লাহ তায়ালা তার অপেক্ষা উত্তম ব্যক্তিকে তথায় দিবেন এবং যে উহার অভাব অনটন ও দুঃখ, কষ্টে ধৈর্য্যরে সাথে টিকে থাকবে, আমি কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশকারী কিংবা সাক্ষী হব।
➥[৪২] মুসলিম শরীফ, হাদিস নং ৩২১৪
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় মদীনায় বসবাস করা উত্তম মানুষ হওয়ার আলামত। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, কেউ মদীনা ত্যাগ করলে আল্লাহ তায়ালা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিকে মদীনায় বসবাসের সুযোগ করে দেবেন। তাই পার্থিব দুঃখ-কষ্টের কারণে মদীনা ত্যাগ করা উচিত নয়। এই সামান্য কষ্ট সহ্য করে মদীনায় বসবাস করলে কিয়ামতের দিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের সুপারিশ নসীব হবে গুনাহগার হলে আর নেক্কার হলে তাঁর সাক্ষী নসীব হবে।
মদীনার মাটি ঔষধ
১৮. عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ لِلْمَرِيضِ:بِسْمِ اللهِ، تُرْبَةُ أَرْضِنَا، بِرِيقَةِ بَعْضِنَا، يُشْفَى سَقِيمُنَا، بِإِذْنِ رَبِّنَا
১৮. অনুবাদ: হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) রোগীর জন্য (মাটিতে) এ দোয়া পড়তেন- আল্লাহর নামে আমাদের দেশের (মদীনার) মাটি এবং আমাদের কারো থু-থু আমাদের পালনকর্তার অনুমতিতে আমাদের রোগীকে আরোগ্য দান করে থাকে।
➥[৪৩] বুখারী শরীফ পৃ. ৮৫৫, হাদিস নং ৫৩৩৪
ব্যাখ্যা: ইমাম নববী (رحمة الله) হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, যখন কোন ব্যক্তি রোগাক্রান্ত কিংবা আহত হত তখন নবী করিম (ﷺ) এরূপ করতেন। নবী করিম (ﷺ) অঙ্গুলী মোবারকে স্বীয় থুথু মোবারক লাগিয়ে মাটিতে রাখতেন যাতে অঙ্গুলী মোবারকে মাটি লাগে। তারপর এই দোয়া পাঠ করে অঙ্গুলী মোবারকের মাটি ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিতেন। এতে রোগী আরোগ্য লাভ করত।
ইমাম নববী (رحمة الله) আরো বলেন, এখানে أَرْضِنَا আমাদের মাটি দ্বারা বিশেষ করে মদীনা শরীফের মাটি উদ্দেশ্য। এটা মদীনা শরীফের মাটির বরকতে হয়। بِرِيقَةِ بَعْضِنَا দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর থু-থু মোবারক উদ্দেশ্য।
➥[৪৪] প্রান্ত ঠীকা: বুখারী শরীফ, টীকা নং ২. পৃ. ৮৫৫
মদীনা শরীফের ধূলিকণা শেফা
১৯. عَنْ ثَابِتْ بِنْ قَيْسِ بْنِ شَمَّاسٍ، عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَليْهِ وَسلَّم: غُبَارُ الْمَدِيْنَةِ شِفَاءٌ مِنْ الجُذَامِ
১৯. অনুবাদ: হযরত সাবিত ইবনে কায়েস ইবনে সাম্মাস (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, মদীনা শরীফের ধূলিকণা কুষ্ঠব্যাধির জন্য শেফা।
➥[৪৫] আবু নুয়াইম, আততিব্বি, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়েলিল মদীনাতুল মুনাওয়ারা পৃ. ৪১
ব্যাখ্যা: হাদিসখানা ইমাম সূয়ুতী (رحمة الله) জামেউল কবীর ও জামেউস সগীর গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণনা করেন। জুযাম তথা কুষ্ঠরোগ বড় মারাত্মক একটি রোগ। আল মু’জামুল ওয়াসীত অভিধানে এর অর্থ বলা হয়েছে, الجُذَامُ عِلّةٌ تَتَأكُلُ مِنْهَا الْأَعْضَاءَ وَتَتَسَاقُطُ অর্থাৎ কুষ্ঠরোগ হচ্ছে শরীরের অঙ্গসমূহ খেয়ে ফেলা এবং শরীরের অঙ্গসমূহ ঝড়ে পড়া। এর দ্বারা শরীরের অঙ্গ বিকৃত হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে এ রোগ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যায়। নবী করিম (ﷺ) উম্মতের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে মদীনা শরীফের ধূলিকণাকে এ রোগের শেফা বলেছেন। যদিও বা এর পক্ষে বৈজ্ঞানিক কোন সমর্থন না থাকে তবুও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ঘোষণার বরকতে এবং ভক্তি বিশ্বাস নিয়ে মদীনা শরীফের মাটি দ্বারা চিকিৎসা করলে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাকে শেফা দান করবেন।
আল্লামা কাস্তালানী (رحمة الله) মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যা গ্রন্থে লিখেন, মদীনার ধূলিকণা কুষ্ঠ ও শ্বেত রোগের জন্য বিশেষভাবে উপাকারী। আল্লামা যুরকানী (رحمة الله) এমন অনেক লোকদের কথা লিখেছেন যাদের শ্বেত রোগ ছিল। মদীনা পাকের মাটি লাগানোতে শেফা লাভ করেছিল।
আল্লামা যুরকানী (رحمة الله) লিখেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বনু হারেস গোত্রে গেলেন। তারা ছিল অসুস্থ। তিনি তাদের অবস্থা জিজ্ঞাসা করলে, তারা বলল, আমরা জ্বর রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, তোমাদের নিকট তো ‘সাঈব’ বিদ্যমান। এটি মদীনা পাকের একটি বিশেষ স্থানের নাম যা ‘ওয়াদীয়ে বুহতান’ এ অবস্থিত। তারা বলল, সাঈব দিয়ে কী করব? তিনি বললেন, ঐ জায়গার মাটি পানিতে মিশিয়ে এই দোয়া পাঠ করে পান কর। দোয়াটি হল- بِسْمِ اللهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا، بِرِيقَةِ بَعْضِنَا، شِفَاءٌ لِمَريْضِنَا بِإِذْنِ رَبِّنَا তারা এরূপ করলে আল্লাহর মেহেরবাণীতে জ্বর সেরে গেল।
এই ঘটনা বর্ণনাকারী একজনে বলেন, লোকেরা ঐ জায়গার মাটি নিতে নিতে গর্ত হয়ে গিয়েছিল। আল্লামা সামহুদী (رحمة الله) বলেন ঐ স্থানটি আদৌ বিদ্যমান। লোকেরা ঐ স্থানের মাটি রোগের শেফার জন্য নিয়ে যায়।
ওয়াফাউল ওয়াফা গ্রন্থে আল্লামা সামহুদী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (ﷺ) বলেছেন, ঐ সত্ত্বার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, মদীনা শরীফের মাটির মধ্যে প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে। আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, অধিকাংশ ওলামাগণ এই চিকিৎসাকে পরিক্ষিত সত্য বলেছেন।
শায়খ মজিদ উদ্দিন ফিরোজাবাদী বলেন, আমি নিজেই পরীক্ষা করেছি। আমার এক গোলাম লাগাতার এক বছর জ্বরে আক্রান্ত ছিল। আমি ‘সাঈব’ নামক স্থানের মাটি নিয়ে পানিতে মিশিয়ে তাকে পান করালে সে সুস্থ হয়ে যায়।
আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, আমি নিজেও উপকৃত হয়েছি। যে সময় মদীনা শরীফে অবস্থান করার আমার সুযোগ হল তখন আমার পায়ে এমন ভীষণ ফোলা আসল যে, ডাক্তারগণ সর্বসম্মতিক্রমে বলেছেন, এটা আর ভাল হবে না এবং এটা অঙ্গহানীর বা মৃত্যুর আলামত। আমি ঐ পবিত্র মাটি দ্বারা চিকিৎসা করলাম। অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম।
➥[৪৬] জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব পৃ. ২৭-২৮
মদীনা শরীফ নবী করিম (ﷺ) হারম
২০. عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِكُلِّ نَبِيٍّ حَرَمٌ، وَحَرَمِي الْمَدِينَةُ
২০. অনুবাদ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, প্রত্যেক নবীর একটি হারম আছে, আর আমার হারম হল মদীনা।
➥[৪৭] মুসনাদে আহমদ, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়েলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা। পৃ. ৫৩
ব্যাখ্যা: যুগে যুগে মানবজাতির হেদায়তের জন্য আগমণকারী প্রত্যেক নবীর হারম ছিল। আর আমাদের প্রিয় নবী সায়্যিদুল আম্বীয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মদীনা মুনাওয়ারাকে হারম করেছেন। তিনি যেমন নবী কুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তাঁর ঘোষিত হারমও হবে সর্বশ্রেষ্ঠ হারম।
হারমের সম্মানার্থে এর গাছ-পালা কর্তন করা এবং এর মধ্যে শিকার করা হারাম। এমনি ভাবে হারম এলাকায় বিশেষভাবে গুনাহের কাজ পরিহার করা আবশ্যক। হারমের ইজ্জত নষ্ট হয় এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকাও একান্ত কর্তব্য।
মসজিদে নববীর সম্প্রসারিত অংশও মসজিদে নববী
২১. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْ بُنِيَ مَسْجِدِىْ هَذَا إِلَى صَنَعَاءَ كَانَ مَسْجِدِيْ
২১. অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, যদি আমার মসজিদকে সানাআ পর্যন্তও বৃদ্ধি করে তবুও তা আমার মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে।
➥[৪৮] যুবায়ের ইবনু বাক্কার, আখবার“ল মদীনা, সূত্র, আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ.৫৫
ব্যাখ্যা: মসজিদে নববীকে সম্প্রসারিত করে সানাআ নামক স্থান পর্যন্তও যদি নিয়ে যাওয়া হয় তবুও তা আমার মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে। হযরত আবু হোরায়ারা (رضي الله عنه) থেকে অপর হাদিসে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন,
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ لَوْزِيْدَ فِىْ هَذِهِ الْمَسْجِدِ مَا زِيْدَ لَكَانَ الكُّلُّ مَسْجِدِىْ
আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, এই মসজিদকে যতটুকু বৃদ্ধি করা হোক সম্পূর্ণ আমার মসজিদ হিসাবে বিবেচিত হবে।
অপর হাদিসে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
لَوْ مُدَّ مَسْجِدُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلَى ذِىْ الخُلَيْفَةَ لَكَانَ مِنْهُ
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)’র মসজিদকে যদি যুল হুলাইফা পর্যন্তও বৃদ্ধি করা হয় তাও এই মসজিদই হবে।
➥[৪৯] আবরাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ, ৫৬ ও জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, পৃ, ১৩৩
মসজিদে নববীতে নামাযের যে অতিরিক্ত সাওয়াবের কথা আছে ইমাম নববী (رحمة الله)’র মতে তা রাসূলুল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সময়কালে মসজিদে নববী যতটুকু ছিল ততটুকুর সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু আল্লামা আইনী (رحمة الله)’র মতে মসজিদের প্রশস্ত অংশেও নামায পড়লে বাড়তি সাওয়াব পাবে। অর্থাৎ যতটুকু স্থানকে মসজিদে নববী বলা হবে ততটুকু স্থানে নামাযের সাওয়াব বেশী-সাব্যস্ত হবে। আল্লামা মুহিব তিবরী (رحمة الله) বলেন, পরবর্তীতে ইমাম নববী (رحمة الله) তাঁর মত পরিহার করেছেন।
➥[৫০] শরহে সহীহ মুসলিম খন্ড.৩, পৃ.৭৬১ ও জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, পৃ.১৩৩
মদীনাবাসীকে কষ্ট দেওয়ার পরিণাম
২২. عَنْ عَبْدُ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ اَذَى اَهْلَ الْمَدِيْنَةِ اَذَاهُ اللهُ وَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَاعَدْلًا-
২২. অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, যে কেউ মদীনাবাসীকে কষ্ট দেবে আল্লাহ তায়ালা তাকে কষ্ট দেবেন আর তার উপর আল্লাহ, ফেরেস্তা ও সকল মানুষের অভিশাপ। তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন না।
➥[৫১] তাবরানী সূত্র, আরাবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ. ৫৯-৬০
ব্যাখ্যা: নবী করিম (ﷺ) যেহেতু মদীনাবাসীকে ভালবাসেন সেহেতু স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে ভালবাসেন। তাই মদীনাবাসীকে কেউ কষ্ট দিলে তার শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তায়ালা তাকে কষ্ট দেন।
উপরোক্ত হাদিস শরীফখানা মদীনাবাসীকে কষ্ট দানকারীর জন্য বড় শাস্তি ও ভীতি প্রদর্শন করে। ইমাম তাবরানী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন,
-قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِيْنَةُ مَهَاجِرِىْ وَمَضْجَعِى فِى الْاَرْضِ حَقٌ عَلَى اُمَّتِىْ اَنْ يَكُوْنَ جِيْرَانِى مَا اِجْتَنِبُوْا الْكَبَائِرَ فَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ سَقَاهُ اللهِ مِنْ طِيْنَةِ الْخَبَالِ عُصَارَةِ اَهْلِ النَّارِ
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করেন, মদীনা আমার হিজরতের স্থান, মদীনা আমার শয়নের স্থান, মদীনা থেকেই আমি কিয়ামত দিবসে উঠব। আমার উম্মতের উপর আবশ্যক আমার প্রতিবেশীদেরকে সম্মান করা যতক্ষণ না তারা কবীরাগুনাহ করবে। আর যে ব্যক্তি এরূপ করবে না তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা “তিনতে খাবাল” পান করাবেন। আর এটি হল জাহান্নামের একটি গর্ত যাতে জাহান্নামীদের রক্ত ও পুঁজ একত্রিত হয়।
➥[৫২] আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ. ৬০ ও জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, পৃ.৩০-৩১
সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে,
لَا يُرِيدُ أَحَدٌ أَهْلَ الْمَدِينَةِ بِسُوءٍ إِلَّا أَذَابَهُ اللهُ فِي النَّارِ ذُوْبَ الرَّصَاصِ، أَوْ ذُوْبَ الْمِلْحِ فِي الْمَاءِ
কেউ যদি মদীনাবাসীর সাথে অসদাচরণ করবে, তাদেরকে কষ্ট দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে গলে ফেলবেন যেভাবে আগুনে শীসা এবং পানিতে লবণ গলে।
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূল (ﷺ) মদীনা মুনাওয়ারায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি দু’হাত তুলে দোয়া করলেন-
اللهم مَنْ اَرَادَنِى وَاَهْلَ بِلَدِىْ بِسُوْءٍ فَعَجَّلَ هَلَاكَهُ
হে আল্লাহ! যে কেউ আমার এবং আমার শহরবাসীর সাথে খারাপ ইচ্ছা পোষণ করবে তুমি তাকে দ্রুত ধ্বংস করে দাও।
নাসাঈ শরীফে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন,
مَنْ اَخَافَ اَهْلَ الْمَدِيْنَةِ ظَالِمًا اَخَافَهُ اللهُ وَكَانَتْ عَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
যে ব্যক্তি মদীনাবাসীকে অন্যায়ভাবে ভীতি প্রদর্শন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ভীতি প্রদর্শন করবেন। আর তার উপর আল্লাহ, ফেরেস্তা ও সকল মানবজাতির লা’নত।
➥[৫৩] জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, পৃ. ৩২-৩৩
মদীনা মুনাওয়ারার আজওয়া খেজুরের ফযিলত
২৩. عَنْ سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَصَبَّحَ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعَ تَمَرَاتٍ عَجْوَةً، لَمْ يَضُرَّهُ فِي ذَلِكَ اليَوْمِ سُمٌّ وَلاَ سِحْرٌ
২৩. অনুবাদ : হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মদীনা মুনাওয়ারার সাতটি আজওয়া খেজুর সকাল বেলা খাবে সারাদিন কোন বিষ ও যাদু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
➥[৫৪] ইমাম আহমদ, বুখারী ও মুসলিম, সূত্র, আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ. ৬৭
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসে ‘আজওয়া’ খেজুর দ্বারা মদীনা শরীফের আজওয়া উদ্দেশ্য। ইমাম মুসলিম (رحمة الله)
بَابُ فَضْلِ ثَمْرِ الْمَدِيْنَةِ
নামক অধ্যায়ে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন।
মুসলিম শরীফের হাদিসে বর্ণিত আছে,
مَنْ اَكَلَ سَبَعَ تَمَرَاتٍ مِمَّا بَيْنِ لَا بَيْتِهَا اَىْ اَلْمَدِيْنَةَ لَمْ يَضُرُّهُ ذَالِكَ الْيَوْمِ سُمٌّ
যে ব্যক্তি মদীনা শরীফের সাতটি খেজুর খাবে সারাদিন তাকে বিষে প্রতিক্রিয়া করতে পারবেনা।
আজওয়া খেজুর সম্পর্কে ইবনুল আসীর (رحمة الله) বলেন,
وَالْعَجْوَةُ ضَرْبٌ اَكْبَرُ مِنَ الصِّيْحَانِى يَقْرُبُ اِلٰى السَوَادِ وَهُوَ مِمَّا غَرَسَةٌ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِيْنَةِ بِيَدِهِ
অর্থাৎ আজওয়া খেজুর হল সীহানীর চেয়ে বড় আকারের কাল রঙের খেজুর যা রাসূল (ﷺ) নিজ হাতে মদীনা শরীফে বপন করেছিলেন।
➥[৫৫] আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ.৬৮
হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)এই খেজুরকে মাথা ঘুরানো রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করার আদেশ দিতেন।
➥[৫৬] জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, পৃ.২৮
ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, উক্ত হাদিসে মদীনা মুনাওয়ারার খেজুরের কথা বলা হয়েছে। বিশেষত আজওয়া খেজুরের ফযিলত সম্পর্কে। সাত সংখ্যাকে খাস করার কারণ একমাত্র আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)’ই অধিক জানেন। এর হেকমত কী? তার জ্ঞান আমাদের নেই। তবে এর উপর ঈমান রাখা ওয়াজিব এবং এই ফযিলতের উপর বিশ্বাস রাখা আবশ্যক। যেভাবে নামাযের রাকাত ও যাকাতের পরিমাণের রহস্য সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ কিন্ত এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব।
➥[৫৭] আল্লামা ইমাম নববী (رحمة الله) (৬৭৬ হি.), শরহে মুসলিম, খন্ড-২, পৃ.১৮১
আজওয়া খেজুরে বিষ ও যাদুর প্রতিরোধক বিদ্যমান আছে কিনা এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না থাকলেও নবী করিম (ﷺ)’র বাণীর অনুসরণার্থে ভক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে আমল করলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীর বাণীর ইজ্জতের খাতিরে শেফা দান করবেন ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া তিনি নিশ্চয় ওহী বা ইলহাম মারফত জ্ঞাত হয়ে একথা বলেছেন। এ দু’টি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ঊর্ধ্বে। তাই আমাদের আমল করে যাওয়াই উচিত।
কেউ কেউ বলেন, বিষ মানুষের শরীরের রক্তকে শীতল করে জমাট করে দেয়। তারপর রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়। পক্ষান্তরে খেজুর মানুষের রক্তে তাপ সৃষ্টি করে রক্তকে গরম ও সচল রাখে। তাই খেজুর খেলে বিষ প্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। এটাই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)’র বাণীর উদ্দেশ্য।
আর সাত সংখ্যা বলা কারণ হল- এর মধ্যে অনেক রহস্য নিহিত আছে। পবিত্র কুরআনে সূরা ইউসুফের ৪৩নং আয়াতে আছে -سَبْعَ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ উক্ত সূরার উক্ত আয়াতে আছে -سَبْعٌ عِجَافٌ ও وَسَبْعَ سُنْبُلَاتٍ خُضْرٍ
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)’র হাদিসের মধ্যে আছে
- صَبُّوا عَلَّى مِنْ سَبْعِ قِرْبٍ ও غَسْلُ الاٰنَاءِ مِنْ وُلِغَ الْكَلْبِ سَبْعًا
ইত্যাদি।
আরবরা সংখ্যাটি আধিক্যের জন্য ব্যবহার করে। কোন নির্দ্দিষ্ট সংখ্যা বা সীমাবদ্ধের জন্য নয়।
কেউ কেউ বলেন, সাত সংখ্যাকে খাস করার কারণ হল- কেননা এ সংখ্যায় যে বৈশিষ্ট্য আছে অন্য কোন সংখ্যায় তা নেই। আসমান সাতটি, জমিন সাতস্থর, দিন সাতটি, তাওয়াফ ও সাঈ সাতবার, শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ সাতটি, তাকবীরে তাহরীমা সহ ঈদের তাকবীর সাতটি, মানুষের দাঁত সাত প্রকার এবং তারকা সাতটি।
➥[৫৮] আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ, ৬৯-৭০
মদীনা মক্কা থেকে উত্তম
২৪. عَنْ رَافِعْ بْنِ خَدِيْجٍ رَضِيَ اللهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِيْنَةُ خَيْرٌ مِنْ مَكَّةَ
২৪. অনুবাদ : হযরত রাফে ইবনে খাদীজ (رضي الله عنه)নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মদীনা মক্কা থেকে উত্তম।
➥[৫৯] তাবরানী ও দারে কুতুনী, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ, ৮৭
ব্যাখ্যা: ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন,ইমাম মালেক (رحمة الله) বলেন, মদীনা মুনাওয়ারা পৃথিবীর সমস্ত শহর থেকে উত্তম এবং এর ফযিলত সমস্ত শহরের চেয়ে বেশী।
➥[৬০] আল্লামা আইনী, (৮৫৫ হি.) উমদাতুল কারী, খন্ড- ১০, পৃ. ২৩৫
আল্লামা আইনী (رحمة الله) বলেন, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ (رحمة الله)’র মত এটিই। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)’র মতে মক্কা মদীনা থেকে উত্তম।
মদীনার ফযিলত বর্ণনায় ইমাম মানভী (رحمة الله) বলেন- কেননা মদীনা হল রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)’র হারম, ওহী অবতরণের স্থান, বরকতের স্থান। যেখান থেকেই ইসলামের কালিমা বুলন্দ হয়েছে। মদীনাই হল শরীয়তের কেন্দ্রবিন্দু। অধিকাংশ ফরয বিধান সেখানেই নাযিল হয়েছে। হযরত ওমর (رضي الله عنه)ও ইমাম মালেক (رحمة الله)’র মতে এবং অধিকাংশ মদীনাবাসী ওলামাগণের মতে মদীনা মক্কা থেকে উত্তম। তবে জমহুর ওলামাগণের মতে মক্কা মদীনা থেকে উত্তম। উপরোক্ত হাদিস ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। অর্থাৎ নিরাপত্তার দিক দিয়ে উত্তম।
➥[৬১] শরহে আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ, ৮৮
ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) বলেন, হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করেন, কোন নবীর উপর ঐ স্থানে মৃত্যু আসে যে স্থানটি নবীর নিকট অধিক প্রিয় হয়। আর যে স্থান নবী করিম (ﷺ) এর প্রিয় হয় তা আল্লাহ তায়ালার নিকটও প্রিয় হয়। সুতরাং যে স্থানটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট প্রিয় সে স্থানটিই সবচেয়ে উত্তম হয়।
মদীনা মুনাওয়ারা মক্কা মুকারামাসহ সকল শহর থেকে উত্তম।
হাকেম এর বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমন শহরে হিজরত করার আদেশ দিয়েছ যা আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ছিল। এখন আমাকে এমন শহরে বসবাস করাও যা তোমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট মদীনা সবচেয়ে প্রিয়।
একথার উপর একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, হাদিস শরীফে আছে, اِنَّ مَكَّةَ خَيْرٌ مِنْ بِلَادِ اللهِ মক্কা সমস্ত শহরের মধ্যে উত্তম। অপর রেওয়ায়েতে আছে- اِنَّ مَكَّةَ اَحَبَّ اَرْضِ اللهِ اِلَى اللهِ নিশ্চয় আল্লাহর নিকট আল্লাহর পৃথিবীর মধ্যে মক্কাই পছন্দনীয়। উপরোক্ত হাদিস দুটি দ্বারা মক্কা মুকাররমার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। এর উত্তরে আল্লামা সামহুদী (رحمة الله) বলেন, এসব হাদিস হিজরতের পূর্বের। কেননা, নবী করিম (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণকে মদীনায় বসবাস করার ও মৃত্যু বরণ করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
➥[৬২] শরহে মুসলিম, কৃত আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদী (رحمة الله) খন্ড ৩, পৃ. ৭৩৫-৭৩৬
আল্লামা সামহুদী (رحمة الله) বলেন, মক্কায় হজ্বের ফযিলত আছে, পক্ষান্তরে মদীনায় যিয়ারতে নবীর ফযিলত আছে। মক্কায় মসজিদে হারামের ফযিলত আছে, পক্ষান্তরে মদীনায় মসজিদে নববীর ফযিলত আছে। হাদীস শরীফে আছে.
مَنْ حَجَّ اِلَى مَكَّةَ ثُمَّ قَصَدَنِىْ فِىْ مَسْجِدِىْ كُتِبَتْ لَهُ حَجَّتَانِ مَبْرُوْرَتَانِ
যে ব্যক্তি মক্কায় হজ্ব সমাপন করে আমার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে আমার মসজিদে আসে তার জন্য দু’টি মকবুল হজ্জের সাওয়াব লিখিত হয়।
➥[৬৩] জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, সূত্র: দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম. পৃ. ৩৭৭
মক্কায় ওমরার ফযিলত আছে পক্ষান্তরে মদীনায় মসজিদে কুবার ফযিলত আছে।
➥[৬৪] জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, সূত্র: দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম., পৃ. ৭৩৭
হাদিস শরীফে আছে-
اَلصَّلَوةُ فِىْ مَسْجِدِ قُبَاءٍ كَعَمْرَةٍ
মসজিদে কুবায় নামায আদায় করা একটি ওমরার সাওয়াব।
➥[৬৫] আহমদ, তিরমিযী
আল্লামা কাস্তালানী (رحمة الله) বলেন, আমি মদিনাকে মক্কা থেকে উত্তম প্রমাণের জন্য দীর্ঘ আলোচনা শুরু করেছি অথচ আমাদের ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) বলেন, মক্কা মদীনা থেকে উত্তম। তবে কথা হল প্রত্যেকে এমন স্থানকে উত্তম বলে, যেখানে তার মাহবুব তথা প্রিয়জন অবস্থান করে।
➥[৬৬] জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, সূত্র: দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম., পৃ. ৭৩৭
মদীনাকে ইয়াসরিব বলা নিষিদ্ধ
২৫. عَنِ الْبَرَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ سَمَّى الْمَدِينَةَ يَثْرِبَ، فَلْيَسْتَغْفِرِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ، هِيَ طَابَةُ هِيَ طَابَةُ
২৫. অনুবাদ: হযরত বারা (رضي الله عنه)নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি মদীনাকে ইয়াসরিব বলবে সে যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। মদীনা পবিত্র, মদীনা পবিত্র।
➥[৬৭] মুসনাদে আহমদ, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ. ৭৭
➥[৬৮] বুখারী শরীফ, হাদিস নং ১৭৫১, বাব নং ১১৭২
➥[৬৯] ইমাম আহমদ, বুখারী, মুসলিম ও নাসাঈ, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ. ৯৭
➥[৭০] আল্লামা আইনী (رحمة الله) (৮৫৫ হি.) উমদাতুলকারী খন্ড ১১. পৃ. ২৪৯
➥[৭১] শরহে সহীহ মুসলিম, খন্ড. ৩, পৃ. ৭৪৪-৭৪৫
➥[৭২] বুখারী শরীফ, হাউয অধ্যায়, খন্ড. ২, পৃ. ৯৭৪
➥[৭৩] ইমাম বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান, মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৪০
ব্যাখ্যা: নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিয়ম ছিল যে, খারাপ অর্থবোধক নাম তিনি পরিবর্তন করে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখতেন। অনেক নারী-পুরুষ সাহাবীর নাম তিনি পরিবর্তন করে সুন্দর ও অর্থবহ নাম রেখেছেন। অনুরূপভাবে মদীনার পূর্ব নাম ‘ইয়াসরিব’ কেও তিনি পরিবর্তন করে মদীনায়ে তায়্যেবাহ রেখেছেন। অর্থাৎ পবিত্র শহর।
‘ইয়াসরিব’ নাম পরিবর্তন করার কারণ হল, এর অর্থ হল ধ্বংস ও ফাসাদ। অথবা এটি ছিল জাহেলী যুগের নাম। অথবা এটি একটা প্রতিমার নাম। যার নাম দিয়ে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছে।
ইমাম বুখারী (رحمة الله) তাঁর তারীখ গ্রন্থে একটি হাদিস লিখেছেন- যে কেউ একবার যদি ‘ইয়াসরিব’ বলে সে যেন দশবার মদীনা বলে, যেন এর ক্ষতিপূরণ হয়।
➥[৬৭] মুসনাদে আহমদ, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ. ৭৭
আল্লামা ইবনে হাজর (رحمة الله) ফতহুল বারী গ্রন্থে লিখেছেন, শিরোনামে বর্ণিত হাদিস দ্বারা অনেকেই মদীনাকে ‘ইয়াসরিব’ বলা মাকরূহ বলেছেন। পবিত্র কুরআনে সূরা আহযাবে يَا أَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ বলা হয়েছে। তা মুনাফিকের কথাকে বর্ণনা করা হয়েছে। এর দ্বারা ‘ইয়াসরিব’ বলা জায়েযের দলীল নেয়া যাবে না।
হযরত ঈসা ইবনে দীনার মালেকী (رحمة الله) বলেন, কেউ মদীনাকে ‘ইয়াসরিব’ বললে তার জন্য একটি গুনাহ লিখা হয়।
বুখারী শরীফে হযরত হুমায়েদ (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদীনার নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছালে, তিনি বললেন, هذه طابة এই হল তাবা।
➥[৬৮] বুখারী শরীফ, হাদিস নং ১৭৫১, বাব নং ১১৭২
এখন মদীনাকে মদীনাতুর রাসূল, মদীনাতুল মুনাওয়ারা বা মদীনাতুত তায়্যেবাহ নামে ডাকা হয়। বর্তমানে মদীনা শরীফের রাস্তায় সাইনবোর্ডে মদীনাতুল মুনাওয়ারা লেখা আছে। কোথাও কেবল মদীনা লেখা দেখা যায় না।
মদীনা শরীফ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র কদম মোবারকের সদকায় এমনভাবে পবিত্র হয়ে গেল যে, ইতিপূর্বে যার আবহাওয়া ছিল অস্বাস্থ্যকর এখন তা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য সম্পন্ন হয়ে গেল। ইতিপূর্বে যেখানে গেলে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ত আর এখন সেখানে রুগী গেলে সুস্থ হয়ে যায়। ইতিপূর্বে এর মাটি ছিল রোগ জীবানুতে ভরা এখন এর মাটি হল জীবাণুমুক্ত শেফা। এ ব্যাপারে অদমও পরীক্ষীত।
রিয়াদুল জান্নাতের ফযিলত
২৬. عَنْ عَلِىٍّ وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الجَنَّةِ، وَمِنْبَرِي عَلَى حَوْضِي
২৬. অনুবাদ: হযরত আলী ও হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মধবর্তী স্থান হল জান্নাতের বাগান সমূহের একটি বাগান। আর আমার মিম্বরটি হল আমার হাউযের উপর অবস্থিত।
➥[৬৯] ইমাম আহমদ, বুখারী, মুসলিম ও নাসাঈ, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ. ৯৭
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসখানা কোন কোন বর্ণনায় بَيْتِي এর স্থলে قبرى আছে। উভয়টির অর্থ এক। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ঘরই তাঁর কবর মোবারক। এ হাদিসে নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, আমার ঘর বা কবর থেকে আমার মিম্বর পর্যন্ত স্থানটি রহমত নাযিলের এবং সৌভাগ্য অর্জনের জন্য জান্নাতের মতই অথবা এ স্থানে ইবাদত করা জান্নাতে প্রবেশের উপলক্ষ। অথবা এ স্থানটি জান্নাতে স্থানান্তর করা হবে।
➥[৭০] আল্লামা আইনী (رحمة الله) (৮৫৫ হি.) উমদাতুলকারী খন্ড ১১. পৃ. ২৪৯
আল্লামা আবদুল্লাহ দাসতানী মালেকী (رحمة الله) বলেন, আমাদের শায়খ আবু আবদুল্লাহ বলেন, এ হাদিসটাকে হাকীকী অর্থে ব্যবহার করতে কোন বাঁধা নেই। এ স্থানটি জান্নাতের একটি টুকরা। আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদী (رحمة الله) বলেন, এমতটিই অধিক শুদ্ধ।
➥[৭১] শরহে সহীহ মুসলিম, খন্ড. ৩, পৃ. ৭৪৪-৭৪৫
হাফেজ ইবনে হাজর (رحمة الله) ফতহুল বারী গ্রন্থে বলেছেন- এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মদীনা মক্কা থেকে উত্তম। কেননা মদীনার এ স্থানটি জান্নাতের একটা টুকরা। অপর হাদিসে বর্ণিত আছে, জান্নাতের একটি কামান রাখার স্থানও দুনিয়ার সবকিছু অপেক্ষা উত্তম। আর وَمِنْبَرِي عَلَى حَوْضِي এর অর্থ মসজিদে নববীতে যে স্থানে মিম্বর শরীফ আছে কিয়ামত দিবসে সেখানেই ‘হাউযে কাউসার’হবে। কিয়ামতের ময়দানে মীযানের আগে হাউযে কাউসার থাকবে। এটি জান্নাতের একটি প্রস্রবণ। মানুষ কবর থেকে পিপাসার্ত অবস্থায় উঠবে। তখন মু’মিনদেরকে হাউযে কাউসারের পানি পান করানো হবে।
হাউয প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه)নবী করিম (ﷺ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন,
حَوْضِي مَسِيرَةُ شَهْرٍ، مَاؤُهُ أَبْيَضُ مِنَ اللَّبَنِ، وَرِيحُهُ أَطْيَبُ مِنَ المِسْكِ، وَكِيزَانُهُ كَنُجُومِ السَّمَاءِ، مَنْ شَرِبَ مِنْهَا فَلاَ يَظْمَأُ أَبَدًا
আমার হাউয একমাসের দূরত্বের সমান (বড়) হবে। এর পানি দুধের চেয়ে শুভ্র, ঘ্রাণ মিশকের চেয়ে সুগন্ধ ও এর পান পাত্রগুলো হবে আকাশের তারকার ন্যায় অধিক। যে ব্যক্তি তা থেকে একবার পান করবে সে আর পিপাসার্ত হবেনা।
➥[৭২] বুখারী শরীফ, হাউয অধ্যায়, খন্ড. ২, পৃ. ৯৭৪
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যিয়ারতের ফযিলত
২৭. عَنْ رَجُلٍ مِنْ آلِ الْخَطَّابِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:مَنْ زَارَنِي مُتَعَمِّدًا كَانَ فِي جِوَارِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَكَنَ الْمَدِينَةَ وَصَبَرَ عَلَى بَلَائِهَا كُنْتُ لَهُ شَهِيدًا وَشَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ مَاتَ فِي أَحَدِ الْحَرَمَيْنِ بَعَثَهُ اللهُ مِنَ الْآمِنِينَ يَوْمَ الْقِيَامَة
২৭. অনুবাদ: হযরত খাত্তাব পরিবারের এক ব্যক্তি (সাহাবী) নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে কেবল আমার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এসে আমার যিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার প্রতিবেশি হবে। আর যে মদীনাতে বসবাস এখতিয়ার করবে এবং তার কষ্টে ধৈর্যধারণ করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব। যে দুই হেরেম শরীফের কোন একটিতে মৃত্যুবরণ করবে, কিয়ামতের দিন তাকে আল্লাহ তায়ালা বিপদমুক্তদের অন্তর্গত করে উঠাবেন।
➥[৭৩] ইমাম বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান, মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৪০
ব্যাখ্যা: মদীনা মুনাওয়ারাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর রওযা মোবারক এটাও মদীনা শরীফের ফযিলতের অন্য একটি কারণ। আর যারা দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যে নয় কেবল নবী করিম (ﷺ) এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা শরীফ আসবে এবং তার যিয়ারত করবে কিয়ামতের দিন সে নবী করিম (ﷺ) এর প্রতিবেশী বা তাঁর কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য লাভ করবে। এ হাদিস দ্বারা ওলামা কিরামগণ বলেছেন, কেবল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করে মদীনা শরীফ গিয়ে তার যিয়ারত করা সামর্থবানদের জন্য আবশ্যক। যেমন হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)বর্ণিত হাদিসে আছে,
-قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ جَاءَنِي زَائِرًا لَا تُعْمِلُهُ حَاجَةٌ إِلَّا زِيَارَتِي، كَانَ حَقًّا عَلَيَّ أَنْ أَكُونَ لَهُ شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার যিয়ারতে আসবে, আমার যিয়ারত ছাড়া তার অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকবে না তখন তার জন্য সুপারিশ করা আমার উপর আবশ্যক হয়ে পড়ে।
➥[৭৪] তাবরানী
হাদিসে বর্ণিত দুই হেরেম শরীফ দ্বারা মক্কা ও মদীনা উদ্দেশ্যে। যে ভাগ্যবান ব্যক্তি ওই দুই হেরেম শরীফের কোন একটিতে যদি মৃত্যুবরণ করে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন নিরাপদ ব্যক্তিদের সাথে তাকে উঠাবেন। ফলে সে কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে মুক্ত থাকবে।
মদীনা শরীফ থেকে জ্বরকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে
২৮. وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وُعِكَ أَبُو بَكْرٍ وَبِلَالٌ فَجِئْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِينَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ وَصَحِّحْهَا وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِهَا وَمُدِّهَا وَانْقُلْ حُمَّاهَا فَاجْعَلْهَا بِالْجُحْفَةِ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
২৮. অনুবাদ: হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মদীনায় আগমণ করলেন, হযরত আবু বকর ও বিলাল (رضي الله عنه)ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হলেন। আমি গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে এ খবর দিলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের জন্য মদীনাকে প্রিয় করে দাও, যে ভাবে মক্কা আমাদের নিকট প্রিয় বা তা অপেক্ষা অধিক। মদীনাকে আমাদের পক্ষে স্বাস্থ্যকর কর। আমাদের জন্য উহার আড়ি ও উহার সেরিতে বরকত দাও এবং উহার জ্বরকে জুহফায় স্থানান্তরিত করে দাও।
➥[৭৫] বুখারী ও মুসলিম সূত্র: মিশকাত, পৃ. ২৩৯
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মদীনা শরীফ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত হওয়ার জন্য দোয়া করেছেন এবং জ্বরকে জুহফা নামক স্থানে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা নবীর দোয়া কবুল করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা
২৯. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "رَأَيْتُ كَاَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ ثَائِرَةَ الرَّأْسِ خَرَجَتْ مِنَ الْمَدِينَةِ حَتَّى قَامَتْ بِمَهْيَعَةٍ وَهِيَ الجُحْفَةُ فَأَوَّلْتُهَا أَنَّ وَبَاءَ المَدِينَةِ نُقِلَ إِلَى مَهْيَعَةِ
২৯. অনুবাদ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি স্বপ্ন দেখলাম যে, একজন এলোমেলোকেশী কাল স্ত্রীলোক মদীনা হতে বের হয়ে গেল এবং মাহ্ইয়াতে গিয়ে অবস্থান করল। আমি এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলাম, মদীনার মহামারী মাহইয়া তথা জুহফায় স্থানান্তরিত হল।
➥[৭৬] বুখারী, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৩৯
ব্যাখ্যা: মিশকাতের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘লুমুআত’ এ আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, ‘জুহফা’ হল মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী একটি স্থানের নাম। ঐ সময় ওখানে ইহুদীরা বসবাস করত।
➥[৭৭] ৮নং টীকা, মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৩৯
হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র দোয়া
৩০. عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ:اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ، وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُولِكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
৩০. অনুবাদ: হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম তাঁর পিতা আসলাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ওমর (رضي الله عنه)থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (ওমর (رضي الله عنه)) দোয়া করতেন হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত বরণ করার সুযোগ দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূলের শহরে দাও।
➥[৭৮] বুখারী, হাদিস নং- ১৭৬৯
ব্যাখ্যা: ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (رضي الله عنه)আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়ার জন্য এবং মদীনা শরীফে ইন্তেকাল করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। তাঁর উভয় দোয়া কবুল হয়েছিল। হিজরী ২৩ সালে ২৬ যিলহজ্ব, বুধবার মসজিদে নববীতে ফজরের নামাযের ইমামতি করার প্রাক্কালে হযরত মুগীরা ইবনে শোবা (رضي الله عنه)’র গোলাম আবু লু’লু ফিরোজের বিষ মিশ্রিত ছুরির আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
মদীনায় কবর হওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাম্য
৩১. عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ جَالِسًا وَقَبْرٌ يُحْفَرُ بِالْمَدِينَةِ فَاطَّلَعَ رَجُلٌ فِي الْقَبْرِ فَقَالَ: بِئْسَ مَضْجَعِ الْمُؤْمِنِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:بئس مَا قُلْتَগ্ধ قَالَ الرَّجُلُ إِنِّي لَمْ أُرِدْ هَذَا إِنَّمَا أَرَدْتُ الْقَتْلَ فِي سَبِيلِ اللهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:لَا مِثْلَ الْقَتْلِ فِي سَبِيلِ اللهِ مَا عَلَى الْأَرْضِ بُقْعَةٌ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ يَكُونَ قَبْرِي بِهَا مِنْهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
৩১. অনুবাদ: তাবেয়ী হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বসে আছেন, তখন মদীনায় একটি কবর খোঁড়া হচ্ছিল। এক ব্যক্তি কবরে উঁকি মেরে দেখে বলল, মু’মিনের কী মন্দ স্থান এটা! তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, তুমি কী মন্দ কথাই না বললে। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটা এই অর্থে বলিনি। আমার কথার মর্ম হল, সে আল্লাহর রাস্তায় বিদেশে কেন শহীদ হল না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়ার মত কিছুই হতে পারে না, তবে মনে রেখ, আল্লাহর যমীনে এমন কোন স্থান নেই যাতে আমার কবর হওয়া মদীনা অপেক্ষা আমার নিকট প্রিয়তর হতে পারে। এটা তিনি তিনবার বললেন।
➥[৭৯] ইমাম মালেক (رحمة الله) মুরসাল রূপে, সূত্র: মিশকাত শরীফ পৃ. ২৪১, হাদিস নং ২৬২৬
ব্যাখ্যা: মদীনা শরীফে বসবাস করা এবং মদীনা শরীফে মৃত্যুবরণ করা পৃথিবীর অন্যত্র থেকে আফযল এই হাদিসে তাই প্রমাণ করে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও তাঁর কবর মোবারক মদীনা শরীফে হওয়াটা কামনা ও পছন্দ করতেন। ইমাম মালেক (رحمة الله) কখনো মদীনা থেকে বাইরে যেতেন না এই ভয়ে যে, হয়ত ওখানে তাঁর মৃত্যু হয়ে যাবে।
সর্বশেষ ধ্বংস হবে মদীনা
৩২. عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: آخِرُ قَرْيَةٍ مِنْ قُرَى الْإِسْلَامِ خَرَابًا الْمَدِينَةُ
৩২. অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, ইসলামী জনপদ সমূহের মধ্যে মদীনা সর্বশেষ ধ্বংস হবে।
➥[৮০] তিরমিযি, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৪০ হাদিস নং ২৬২০
ব্যাখ্যা: কাফের, মুশরিক ও দাজ্জালের অপচেষ্টায় যখন পৃথিবী থেকে ইসলামকে ধ্বংস করা হবে তখনও ইসলাম মদীনায় বহাল থাকবে। কারণ দাজ্জাল মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। হযরত ইস্রাফিল (عليه السلام) সিঙ্গায় ফুক দিলে সর্বশেষ মদীনাও ধ্বংস হবে।
মদীনা নিরাপদ হারম
৩৩. عَنْ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ آمِنٌ
৩৩. অনুবাদ: হযরত সাহল ইবনে হুনাইফ (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, মদীনা হল নিরাপদ হারম।
➥[৮১] আবু আউয়ানা, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা পৃ. ৮৩
ব্যাখ্যা: নবী করিম (ﷺ) মদীনা শরীফকে নিরাপদ হারম বলেছেন। কারণ মদীনা তায়্যেবা হল মহামারী, জ্বর, মুশরিক, মুনাফিক ও দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে মুক্ত ও নিরাপদ। যুদ্ধ বিগ্রহ ও শত্র“র আক্রমণ থেকেও মদীনাবাসীরা নিরাপদ। অভাব-অনটন থেকে মুক্ত। কারণ তাদের খাদ্য-বস্তুর জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)দোয়া করেছেন।
মদীনা এলাকার পশু-পাখি শিকার হওয়া থেকে এবং গাছ-পালা কর্তন হওয়া থেকে নিরাপদ। মোট কথা হল সবদিক বিবেচনায় মদীনা শরীফ হল এ পৃথিবীর বুকে একটি নিরাপদ ও শান্তির শহর।
মদীনার প্রশংসিত নাম
৩৪. عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْمَدِينَةُ قُبَّةُ الْإِسْلَامِ، وَدَارُ الْإِيمَانِ، وَأَرْضُ الْهِجْرَةِ، وَمُبَوَّأُ الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ
৩৪. অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, মদীনার নাম হল ইসলামের কিল্লা, ঈমানের কেন্দ্রবিন্দু, হিজরতের ভূমি এবং হালাল-হারামের উৎস।
➥[৮২] তাবরানী, সূত্র: আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা পৃ. ৯১
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মদীনা শরীফের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম উল্লেখ করেছেন। শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, যে শহরের নাম যত বেশী হবে তার ফযিলত ও মর্যাদা তত বেশী প্রমাণিত হয়। ওলামাগণ মদীনা শরীফের একশত নাম উল্লেখ করেছেন। হাদিসে বর্ণিত প্রত্যেকটি নাম ব্যাখ্যার দাবীদার। মদীনা হল ঈমান, ইসলামের মূলকেন্দ্র। সমগ্র বিশ্বে ঈমান ইসলাম প্রচারিত ও প্রসারিত হয়েছে মদীনা থেকে।
মদীনা ছিল তৎকালে হিজরতের একমাত্র নিরাপদ স্থান। সাহাবীগণ মক্কায় জায়গা-সম্পত্তি, ধন-দৌলত এমনকি পরিবার-পরিজন সবাইকে ত্যাগ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তষ্টির জন্য মদীনায় হিজরত করেন। আর শরীয়তের অধিকাংশ বিধান তথা হালাল-হারাম মদীনাতেই নাযিল হয়েছে। কারণ মক্কায় কেবল ঈমান আনার আদেশ ছিল। তাই মদীনারই এক নাম হল হালাল-হারামের উৎস।
আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) জযবুল কুলূব গ্রন্থের শুরুতে মদীনার বহুল প্রচলিত নাম সমূহের ব্যাখ্যা করেছেন।
তাওরাত গ্রন্থে মদীনা শরীফের নাম উল্লেখ করা হয়েছে নিম্নরূপ:
المدينة ، المجبورة ، جابرة ، طابة ، طيبة ، بندر ، السكينة ، القاصمة ، المحبوبة ، العذراء ، المرحومة ، دار الهجرة ، دار السنة ، مدخل صدق ، حسنة ، البلاط ، الطيبة ، البحيرة ، البحرة
➥[৮৩] আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা পৃ. ৯২
মদীনার অপর নাম তাবা
৩৫. عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَقْبَلْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مِنْ تَبُوكَ، حَتَّى أَشْرَفْنَا عَلَى المَدِينَةِ، فَقَالَ:هَذِهِ طَابَةٌ
৩৫. অনুবাদ: হযরত আবু হুমাইদা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে আমরা তাবুক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদীনার নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছলে, তিনি বলেন এই হল তাবা।
➥[৮৪] বুখারী শরীফ, হাদিস নং ১৭৫১, পৃ. ২৫২
ব্যাখ্যা: তাবা হল মদীনা মুনাওয়ার উপাধি, এর অর্থ হল পবিত্র, সুগন্ধি, সুস্বাদু ইত্যাদি। যেহেতু মদীনা শরীফ শিরক-নাজাসাত থেকে পবিত্র। তাছাড়া এর আবহাওয়া অত্যন্ত পবিত্র ও স্বচ্ছ এবং রোগজীবাণু থেকে পবিত্র।
অনেকেই বলেন, ওখানকার অধিবাসীরা মদীনা শরীফের মাটি এবং দেয়াল সমূহে এমন উত্তম সুগন্ধি অনুভব করে যা দুনিয়ার কোন সুগন্ধির সাথে তুলনা হতে পারে না।
হাদিস শরীফে আছে, নবী করিম (ﷺ) বলেন-
اِنَّ اللهَ اَمَرَنِىْ اَنْ اُسَمِّىَ الْمَدِيْنَةَ طَابَة
আল্লাহ তায়ালা আমাকে আদেশ করেছেন যে, আমি যেন মদীনার নাম তাবা রাখি।
ওহাব ইবনে মুহাব্বেহ (رحمة الله) বলেন, তাওরাতে মদীনা পাকের নাম طَيْبَه، طَابَه ও طَيِّبَة উল্লেখ আছে। ইমাম মালেক (رحمة الله) এর মাযহাব হল, কেউ যদি মদীনা পাকের মাটিকে অপবিত্র বলে এবং এর আবহাওয়াকে খারাপ বলে সে শাস্তির যোগ্য। বিশুদ্ধভাবে তাওবা না করা পর্যন্ত তাকে বন্দী করে রাখা হবে।
➥[৮৫] জযবুল কুলূব ইলা দিয়াবিল মাহবুব, পৃ. ৫-৬
মদীনা বিজয় হয়েছে কুরআন দ্বারা
৩৬. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أُفْتِحَتِ الْقُرَى بِالسَّيْفِ وَاُفْتِحَتِ الْمَدِيْنَةُ بِالْقُرْاٰنِ
৩৬. অনুবাদ: হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করেন, আরবের সকল শহর বিজয় হয়েছে তরবারী দ্বারা আর মদীনা বিজয় হয়েছে কুরআন দ্বারা।
➥[৮৬] মুয়াত্তা, সূত্র: আল মাদখাল, খন্ড-২, পৃ.২৫
ব্যাখ্যা : মদীনা শরীফ আল্লাহ তায়ালার প্রিয়। তাই মদীনা শরীফকে পবিত্র কুরআন দিয়ে বিজয় দান করেন। আরবের অন্যান্য শহর যুদ্ধ-বিগ্রহ, অস্ত্র-শস্ত্র ও রক্তপাতের মাধ্যমে বিজয় হয়েছিল। এমন কি মক্কা বিজয়কালেও সামান্য হলেও তা দেখা গেছে। কিন্তু মদীনা বিজয়ে কোন অস্ত্রের ঝনঝনানী ছিল না, কোন যুদ্ধ-বিগ্রহের প্রয়োজন হয়নি। কোন রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি। কেবল সন্ধি ও আপোষের মাধ্যমে মদীনা বিজয় হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা মদীনার গলিসমূহকে মানুষের রক্তে রঞ্জিত হওয়া থেকে মুক্ত রেখেছেন। এটাও মদীনা তায়্যেবার অন্যতম ফযিলত।
মদীনাবাসীকে সম্মান করার গুরুত্ব
৩৭. عَنْ مَعْقَلِ بْنِ يَسَارٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْمَدِيْنَةُ مُهَاجِرِى وَ مَضْجَعِى فِى الْاَرْضِ حَقٌّ عَلَى اُمَّتِى اَنْ يَكُوْنُوْا جِيْرَانِى مَا اِجْتَنِبُوْا الكَبَائِرَ فَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ سَقَاهُ اللهُ مِنْ طِيْنَةِ الخَبَالِ عِصَارَةُ اَهْلِ النَارِ
৩৭. অনুবাদ: হযরত মা’কল ইবনে ইয়াসার (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করেন, মদীনা আমার হিজরতের স্থান, পৃথিবীতে আমার শয়নের স্থান (আমার কবর মোবারক এখানেই হবে), মদীনা আমার (কিয়ামত দিবসে) উঠার স্থান। আমার উম্মতের উপর আবশ্যক আমার প্রতিবেশীর ইজ্জত-সম্মান করা যতক্ষণ তারা কবীরা গুণাহে থেকে বিরত থাকবে। অতঃপর যারা এরূপ করবেনা আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে “তীনাতুল খাবাল” পান করাবেন। আর তা হল জাহান্নামীদের রক্ত পূঁজ।
➥[৮৭] তাবরানী, মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন, সূত্র, আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা, পৃ. ৬০ ও জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, পৃ.৩০-৩১
ব্যাখ্যা: নবী করিম (ﷺ) মদীনা শরীফের ফযিলত বর্ণনায় বলেন, মদীনা আমার হিজরতের স্থান, আমার দুনিয়াতে বসবাসের স্থান এবং মৃত্যুর পর আমার কবর জগতে অবস্থান স্থল। কিয়ামতের দিন এখান থেকেই আমি উঠব। সুতরাং মদীনাবাসী আমার প্রতিবেশী, তাদেরকে সম্মান করা, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা আমার উম্মতের উপর আবশ্যক। পক্ষান্তরে যারা মদীনাবাসীর সাথে এরূপ আচরণ করবে না বরং তাদেরকে অসম্মান করবে কিংবা কষ্ট দেবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জাহান্নামীদের থেকে নির্গত রক্ত-পূঁজ পান করাবেন।
মদীনার কোন এলাকা জনশূন্য হওয়া নবী করিম (ﷺ) পছন্দ করতেন না
৩৮. عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: أَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ أَنْ يَتَحَوَّلُوا إِلَى قُرْبِ المَسْجِدِ، فَكَرِهَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنْ تُعْرَى المَدِينَةُ وَقَالَ: يَا بَنِي سَلِمَةَ أَلاَ تَحْتَسِبُونَ آثَارَكُمْ فَأَقَامُوا
৩৮. অনুবাদ: হযরত আনাস (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনূ সালিমা গোত্রের লোকেরা মসজিদে নববীর নিকটে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করল। নবী করিম (ﷺ) মদীনা জনশূন্য হওয়া অপছন্দ করলেন। তাই তিনি বললেন, হে বনূ সালিমা! মসজিদে নববীর দিকে তোমাদের হাঁটার সাওয়াব কি তোমরা হিসাব কর না? এরপর তারা সেখানেই রয়ে গেল।
➥[৮৮] বুখারী শরীফ, হাদিস নং ১৭৬৬
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মদীনা শরীফকে ভালবাসতেন। তাই মদীনার কোন এলাকা জনশূন্য হোক তা তিনি চাইতেন না। এ কারণেই তিনি মদীনায় বসবাস করার প্রতি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হাদিস দ্বারা মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। মদীনার দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার ফযিলত বর্ণনা করেছেন।
মুসলিম শরীফে এক হাদিসে আছে, নিশ্চয় নামাযের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রতিদান পাবে সেই ব্যক্তি, যে সবচেয়ে বেশী দূর থেকে হেঁটে নামাযে আসে।
➥[৮৯] বুখারী ও মুসলিম, সূত্র রিয়াদুস সালেহীন, পৃ. ৪২৭, হাদিস নং-১০৫৭
বনূ সালিমা গোত্র মসজিদে নববীতে নামাজের জন্য যাতায়াতের সুবিধার্থে এরূপ করতে চেয়েছিল। কিন্তু নবী করিম (ﷺ)’র অনাগ্রহ দেখে এবং প্রতি পদক্ষেপে সাওয়াবের কথা শুনে তারা তাদের ইচ্ছে পরিহার করল এবং সেখানেই বসবাস করতে লাগল।
মসজিদে নববীতে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায পড়ার ফযিলত
৩৯. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: " مَنْ صَلَّى فِي مَسْجِدِي أَرْبَعِينَ صَلَاةً، لَا يَفُوتُهُ صَلَاةٌ، كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ، وَ بَرَاءَةٌ مِنَ الْعَذَابِ، وَبَرِئَ مِنَ النِّفَاقِ
৩৯. অনুবাদ: হযরত আনাস (رضي الله عنه)নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ধারাবাহিকভাবে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায এমনভাবে পড়বে যেন কোন নামায তাতে ছুটে না যায়, তবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লিপিবদ্ধ করা হয়, আযাব থেকে মুক্তি লিপিবদ্ধ করা হয় এবং নিফাক থেকে মুক্তি লিপিবদ্ধ করা হয়।
➥[৯০] হাদিসখানা ইমাম আহমদ (رحمة الله) এবং ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার ‘আওসাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
ব্যাখ্যা: ইতিপূর্বে মসজিদে নববীতে নামায আদায়ের ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। উপরোক্ত হাদিসে মসজিদে নববীতে ধারাবাহিকভাবে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায আদায়ের ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। এই ফযিলত অর্জন করার জন্য হাজীগণ হজ্ব করার পূর্বে কিংবা পরে মদীনা শরীফে কমপক্ষে ৮দিন অবস্থান করে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায মসজিদে নববীতে আদায় করে থাকেন।
হাজীগণ ছাড়াও সাধারণ যিয়ারতকারীগণও এ বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। যিয়ারতকারীগণ কোথাও কোন মুকাদ্দাস নিশান দেখার উদ্দেশ্যে গেলেও নামাযের সময় যেন মসজিদে নববীতে এসে নামায আদায় করেন। এজন্য ফজরের নামাযের পরে অন্যান্য পবিত্র স্থান যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া উচিত। তখন দীর্ঘসময় পাওয়া যায় এবং যিয়ারত শেষে মসজিদে নববীতে এসে যোহরের নামায জামাতে আদায় করা সহজ হয়।
চল্লিশ সংখ্যার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যে ব্যক্তি লাগাতার চল্লিশ দিন যাবত নামায পড়ে সে স্থায়ী নামাযী হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এখানে সংখ্যার গুরুত্ব মুখ্য নয় বরং মূল বিষয়টি হল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন বিধায় বিশ্বাস ও ভক্তি নিয়ে আমল করলে বর্ণিত ফযিলত অর্জিত হবে।
চল্লিশ ওয়াক্ত নামায ধারাবাহিকভাবে মসজিদে নববীতে আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা ঐ নামাযীকে জাহান্নামের আগুন, অন্যান্য আযাব এবং নিফাক থেকে মুক্ত ও নিরাপদ রাখবেন।
মদীনার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দোয়া
৪০. عَنْ اَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّاسُ إِذَا رَأَوْا أَوَّلَ الثَّمَرَةِ جَاءُوا بِهِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا أَخَذَهُ قَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثَمَرِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا اللَّهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ عَبْدُكَ وَخَلِيلُكَ وَنَبِيُّكَ وَإِنِّي عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ وَإِنَّهُ دَعَاكَ لِمَكَّةَ وَأَنَا أدعوكَ للمدينةِ بمثلِ مَا دعَاكَ لمكةَ ومِثْلِهِ مَعَهُ. ثُمَّ قَالَ: يَدْعُو أَصْغَرَ وَلِيدٍ لَهُ فيعطيهِ ذَلِك الثَّمر. رَوَاهُ مُسلم
৪০. অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন লোক প্রথম ফসল লাভ করত তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট নিয়ে আসত। যখন তিনি তা গ্রহণ করতেন তখন বলতেন, হে আল্লাহ! আমাদের ফল-শষ্যে বরকত দাও, আমাদের এ শহরে (মদীনায়) বরকত দাও। আমাদের আড়িতে বরকত দাও, আমাদের সেরিতে বরকত দাও। হে আল্লাহ! ইব্রাহীম (عليه السلام) তোমার বান্দা, তোমার বন্ধু ও তোমার নবী আর আমিও তোমার বান্দা ও নবী। তিনি তোমার নিকট মক্কার জন্য দোয়া করেছেন আর আমি তোমার নিকট মদীনার জন্য দোয়া করছি, যেরূপ দোয়া তিনি তোমার নিকট মক্কার জন্য করেছিলেন। অত:পর আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)নিজ পরিবারের সর্বকনিষ্ট ছেলেকে ডাকতেন এবং ঐ ফল তাকে দান করতেন।
➥[৯১] মুসলিম শরীফ, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃ. ২৩৯, হাদিস নং ২৬০১
ব্যাখ্যা: মদীনাবাসীদের ঘরে যখন প্রথম ফসল আসত তখন তারা কিছু ফসল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট নিয়ে আসত যেন তিনি তা গ্রহণ করে ফসলে বরকত হওয়ার জন্য দোয়া করেন। তিনিও তাদের ফসল গ্রহণ করে আল্লাহর দরবারে মদীনা শরীফের জন্য এবং মদীনা শরীফের ফসলে, আড়ি- সেরিতে বরকত হওয়ার জন্য দোয়া করতেন।
বতর্মানেও এই প্রথা চালু আছে। অনেকেই তাদের ক্ষেত-খামারের উৎপাদিত প্রথম ফসলটি কোন বুযুর্গ হক্কানী-রব্বানী পীর-মাশায়েখ কিংবা আলেমে দ্বীনের খেদমতে নিয়ে আসেন। তারা তা গ্রহণ পূর্বক মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। এটা সুন্নাতে রাসূল।
সমাপ্ত
তথ্যসূত্র
১. সহীহ বুখারী শরীফ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) ২৫৬হি.
২. সহীহ মুসলিম শরীফ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) ২৬১ হি.
৩. জামে তিরমিযী শরীফ ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (رحمة الله) ২৭৯ হি.
৪. শোয়াবুল ঈমান ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ৪৫৮হি.
৫. মিযানুল ই’তিদাল ইমাম শামশুদ্দিন যাহাবী (رحمة الله) ৭৪৮ হি.
৬. হুলিয়াতুল আউলিয়া আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) ৪৩০ হি.
৭. আল ইলালুল মতানাহিয়্যাহ আল্লামা ইবনে জওযী (رحمة الله) ৫৭৯ হি.
৮. মিশকাতুল মাসাবীহ শায়খ ওয়ালী উদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (رحمة الله) ৭৪৯ হি
৯. জযবুল কুলূব ইলা দিয়ারিল মাহবুব শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ১০৫২ হি
১০. শরহে সহীহ মুসলিম আল্লামা ইয়াহিয়া ইবনে শরফ নববী (رحمة الله) ৬৭৬ হি.
১১. মুসনাদে আহমদ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ২৪১ হি.
১২. ওয়াফাউল ওয়াফা আল্লামা সমহুদী (رحمة الله) ৯১১ হি.
১৩. তাবরানী শরীফ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) ৩৬০ হি.
১৪. উমদাতুল কারী আল্লামা বদর উদ্দিন আইনী (رحمة الله) ৫৮৮ হি.
১৫. আবু দাউদ শরীফ ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) ২৭৫হি.
১৬. নাসাঈ শরীফ ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) ৩০৩ হি.
১৭. ইবনু মাজাহ শরীফ ইমাম ইবনে মাজাহ (رحمة الله) ২৭৩ হি.
১৮. দারে কুতনী ইমাম দারে কুতনী (رحمة الله) ৩৮৫ হি.
১৯. শরহে সহীহ মুসলিম আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদী (رحمة الله)
২০. মুয়াত্তা ইমাম মালেক (رحمة الله) ১৭৯ হি.
২১. আরবাউনা হাদিসান ফি ফাযায়িলিল মদীনাতিল মুনাওয়ারা মুহাম্মদ ইবনে আহমদ
২২. ফতহুল বারী আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) ৮৫২ হি.
২৩. আখবারুল মদীনা যুবাইর ইবনু বাক্কার (رحمة الله)
কিতাবের পরিচিতি ও ভূমিকাঃ
গ্রন্থ: চল্লিশ হাদিস দ্বারা মদীনা শরীফের ফযিলত
রচনায়: হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি
আরবী প্রভাষক, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা
ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
০১৮১৭-২৩২৩৬৪
টেক্সট রেডীঃ ডা. মাসুম বিল্লাহ সানি
প্রকাশকাল: জানুয়ারি ২০১৮ইং
প্রকাশনায়: চিশতি প্রকাশনী
বালুচরা, বায়েজীদ, চট্টগ্রাম।
প্রকাশক: আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ মুরশেদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্বস্বত্ব: লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
বর্ণবিন্যাস, প্রচ্ছদ ও মুদ্রণে
মোহনা ম্যানশন (৪র্থ তলা), আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।
হাদিয়া: ৪০/= (চল্লিশ) টাকা
প্রকাশকের কথা
সকল প্রশংসা উভয় জগতের সৃষ্টিকর্তা, সমগ্র সৃষ্টির পালনকর্তা ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহর জন্য, যিনি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র পরশে মদীনার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে সুস্বাস্থ্যকর করেছেন। মদীনার মাটিকে করেছেন ‘খাকে শিফা’ (আরোগ্য প্রদানকারী মাটি)। অসংখ্য দুরূদ-সালাম প্রেরণ করছি সৃষ্টি কুলের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র দরবারে যিনি মদীনায় বসতি স্থাপন করে মদীনাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বরকতময় শহরের মর্যাদায় সমাসীন করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)প্রত্যেক মু’মিন নর-নারীর কাছে অতীব প্রিয়। আর প্রিয় জনের সাথে যা কিছু সম্পৃক্ত সব কিছুই একান্ত প্রিয় হয়ে থাকে। মহানবী (ﷺ) তাঁর প্রত্যক্ষ জীবনের সুদীর্ঘকাল পবিত্র মদীনায় কাটিয়েছেন এবং আনছার সাহাবীদের উদ্দেশ্যে প্রিয় নবীর উক্তি (হুনাইনের যুদ্ধের গণীমত বন্টণ শেষে) “আমি তোমাদের সাথে আছি কিয়ামত অবধি থাকব”।- সুতারাং প্রিয় নবী (ﷺ) স্বীয় কবর শরীফে এখনো জীবিত অবস্থায় বসবাস করছেন। তাই আশেকে রাসূল মু’মিনগণ মদীনা শরীফকে অধিক ভালবাসেন।
বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থে মহানবী (ﷺ)’র বর্ণিত অসংখ্য বাণী পরিলক্ষিত হয় যাতে তিনি মদীনা শরীফ ও মদীনার পানি, গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বত, আলো-বাতাস, বালি ইত্যাদি বিভিন্ন বস্তুর ফযিলত সম্পর্কে গুরত্বারোপ করেছেন।
বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক জনাব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি বিশুদ্ধ চল্লিশটি হাদীস দ্বারা মদীনা শরীফের মান-মর্যাদার উপর এক খানা অতীব মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। বইটিতে তিনি হাদিসের সরল অনুবাদের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপস্থাপন করেন।
বইটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। ইহার তথ্য উপাত্ত্বগুলি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আকীদার সমাজ বিনির্মানে সুন্দর পাঠক মহল সৃজন করবেন নিশ্চয়ই।
বইটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি। সম্মানিত পাঠক মহলের নিকট আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম নুরুল হক (رحمة الله)’র মাগফিরাতের জন্য দোয়া কামনা করিছ।
মুহাম্মদ মুরশেদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।