আদম (عليه السلام) হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উছিলায় ক্ষমা লাভ
حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ عَمْرُو بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ مَنْصُورٍ الْعَدْلُ، ثنا أَبُو الْحَسَنِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، ثنا أَبُو الْحَارِثِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُسْلِمٍ الْفِهْرِيُّ، ثنا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مَسْلَمَةَ، أَنْبَأَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَمَّا اقْتَرَفَ آدَمُ الْخَطِيئَةَ قَالَ: يَا رَبِّ أَسْأَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ لَمَا غَفَرْتَ لِي، فَقَالَ اللَّهُ: يَا آدَمُ، وَكَيْفَ عَرَفْتَ مُحَمَّدًا وَلَمْ أَخْلُقْهُ؟ قَالَ: يَا رَبِّ، لِأَنَّكَ لَمَّا خَلَقْتَنِي بِيَدِكَ وَنَفَخْتَ فِيَّ مِنْ رُوحِكَ رَفَعْتُ رَأْسِي فَرَأَيْتُ عَلَىَ قَوَائِمِ الْعَرْشِ مَكْتُوبًا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ فَعَلِمْتُ أَنَّكَ لَمْ تُضِفْ إِلَى اسْمِكَ إِلَّا أَحَبَّ الْخَلْقِ إِلَيْكَ، فَقَالَ اللَّهُ: صَدَقْتَ يَا آدَمُ، إِنَّهُ لَأُحِبُّ الْخَلْقِ إِلَيَّ ادْعُنِي بِحَقِّهِ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُكَ
“হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যখন আদম (عليه السلام) দ্বারা অপ্রত্যাশিত কাজটি হয়ে গেল, তখন তিনি বললেন, হে আমার রব! আমি আপনার সত্য নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর উছিলায় প্রার্থনা করছি আমাকে ক্ষমা করে দিন। অত:পর আল্লাহ তা’আলা বললেন: হে আদম! তুমি কিভাবে মুহাম্মদ (ﷺ) কে চিনলে অথচ আমি তাঁকে সৃষ্টি করিনি? আদম (عليه السلام) বললেন: হে আমার রব! যখন আমাকে আপনি সৃষ্টি করেন এবং রুহ্ আমার ভিতরে প্রবেশ করান, তখন আমি আমার মাথা উপরের দিকে উঠিয়েছি এবং আরশের গায়ে লিখিত দেখেছি: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। ফলে আমি জানতে পারলাম যে, নিশ্চয় আপনার প্রিয় পাত্র ব্যতীত আপনার নামের পাশে নাম থাকতে পারেনা! তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন: তুমি সত্য বলেছে হে আদম! সে আমার কাছে খুবই ভালবাসার পাত্র বা সৃষ্টি, তুমি আমাকে তাঁর উছিলায় প্রার্থনা করেছ ফলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি যদি মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি না করতাম তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না।”
৭৩২৩২, ইমাম হাকেম: আল-মুস্তাদরাক, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮৩ পৃ:; ইমাম তাবারানী: মু’জামুল আওছাত, ৫ম খÐ, ৩৬ পৃ:; ইমাম বায়হাক্বী: দালায়েলুন্নবুয়্যাত, ৫ম খন্ড, ৩৭৪ পৃ:; আল্লামা ছামহুদী: অফাউল অফা, ৪র্থ জি: ২২২ পৃ:; ইবনে কাছির: মুসনাদে ফারুক, ২য় খন্ড, ৬৭১ পৃ:; ইবনে কাছির: জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান, ১৭তম খন্ড, ২৯৭ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কোবরা, ১ম খন্ড, ২৭ পৃ:; তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড, ২৬৪ পৃ:; ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩২৫ পৃ:; শরফুল মোস্তফা, ১৬ নং হাদিস; ইবনে কাছির: ‘সিরাতে নববিয়্যা’ গ্রন্থে, ১ম খন্ড, ৩২০ পৃ:; কাছাছুল আম্বিয়া, ১ম খন্ড, ২৯ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খন্ড, ৮৫ পৃ:; ছিরাতে হলভিয়া, ১ম খন্ড, ৩১৫ পৃ:; শরহে যুরকানী, ১ম খন্ড, ১১৯ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৩য় খন্ড, ৬০৫ পৃ:
এই হাদিস উল্লেখ করে ইমাম হাকেম নিছাপুরী (র:) ও ইমাম নূরুদ্দিন আলী ইবনে আহমদ ছামহুদী (র:) বলেন:
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ -
“এই হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ।”
৭৩৩৩৩, ইমাম হাকেম: আল মুস্তাদরাক, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮৩ পৃ:; আল্লামা ছামহুদী: অফাউল অফা, ৪র্থ জি: ২২২ পৃ:;
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম তাবারানী (র:) বলেন:
لَا يُرْوَى هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ عُمَرَ إِلَّا بِهَذَا الْإِسْنَادِ -
“হযরত উমর (رضي الله عنه) থেকে এই সনদ ব্যতীত অন্য কোন সনদে এই হাদিস দেখিনি।” ৭৩৪৩৪, ইমাম তাবারানী: মু’জামুল আওছাত, ৫ম খন্ড, ৩৬ পৃ:;
অর্থাৎ, ইমাম তাবারানী (র:) এর দৃষ্টিতে হাদিসটি গরীব যেহতেু ইহা একজন রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদিস। এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম বায়হাক্বী (র:) বলেছেন যা হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে কাছির (র:) সমর্থন করেছেন:
قَالَ الْبَيْهَقِيُّ تَفَرَّدَ بِهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَهُوَ ضَعِيفٌ
-“আব্দুর রহমান ইবনে জায়েদ আছলাম হতে বর্ণিত ইহা একক বর্ণনা, আর তিনি হলেন দ্বায়িফ ।” ৭৩৫৩৫, ইমাম বায়হাক্বী: দালায়েলুন্নবুয়্যাত, ৫ম খন্ড, ৩৭৪ পৃ:; হাফিজ ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ২য় খন্ড, ৬২৯ পৃ:;
ইমাম আহমদ ও ইমাম দারা কুতনী (র:) তাকে ضَعِيفٌ দুর্বল বলেছেন। ৭৩৬৩৬, ইমাম যাহাবী: দিওয়ানুদ দোয়াফা, রাবী নং ২৪৪৬;
এই عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ “আব্দুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম” রাবী বা বর্ণনাকারী সম্পর্কে ইমাম মিযযী (র:) উল্লেখ করেছেন,
وَقَال أَبُو أَحْمَد بْن عدي: له أحاديث حسان. وهو ممن احتمله الناس، وصدقه بعضهم. وهو ممن يكتب حديثه.
-“আবু আহমদ ইবনে আদী (র:) বলেন: তার অনেক হাদিস হাছান রয়েছে। সে এমন ব্যক্তি যার রেওয়ায়েত লোকেরা গ্রহণ করেছেন এবং অনেকে তাকে সত্যবাদী বলেছেন এবং সে ব্যক্তির হাদিস লিখেছেন।” ৭৩৭৩৭, ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৮২০;
ইমাম যাহাবী (র:) বলেন: وهو صاحب حَدِيثِ -“সে ছাহেবুল হাদিস।” ৭৩৮৩৮, ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, রাবী নং ২০১;
কিছু কিছু ইমামের মতে عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ “আব্দুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম” দ্বায়িফ রাবী আবার অনেক ইমামের মতে নির্ভরযোগ্য রাবী। সর্বোপরি বলা যায়, হাদিসটি জাল বা ভিত্তিহীন নয়, বরং এর সনদ বিদ্যমান রয়েছে। কেউ কেউ এর সনদকে ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ বলেছেন আবার কেউ কেউ দুর্বল বলেছেন। মুহাদ্দেছীনে কেরাম ইহাকে গ্রহণ করে তাঁদের কিতাবে হাদিসটি স্থান দিয়েছেন। তবে আফছুছের বিষয় হল, নাছিরুদ্দিন আলবানী তার চেলারা, এতজন ইমাম হাদিসটি গ্রহণ করার পরও হাদিসটিকে জাল বলার অপচেষ্টা করেছে। আর প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর শান-মানের ব্যাপারে ইহা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হাদিস।