জিকির থেকে গাফিল হলে শয়তান ক্বাল্বে বসবাস করে
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الشَّيْطَانُ جَاثِمٌ عَلَى قَلْبِ ابْنِ آدَمَ فَإِذَا ذَكَرَ اللَّهَ خَنَسَ وَإِذا غفَلَ وسوس . رَوَاهُ البُخَارِيّ تَعْلِيقا
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: শয়তান মানুষের ক্বাল্বে বাস করে, যখন সে আল্লাহর জিকির করে সে বাগিয়া যায়। আর যখন জিকির থেকে গাফেল হয় তখন অছওয়াছা দেয়।” ৫৫৫৫৫, ছহীহ্ বুখারী শরীফ, হাদিস নং ৪৯৭৭ এর পূর্বে ‘সূরা নাছ’ এর ব্যাখ্যায়; মেসকাত শরিফ, ১৯৯ পৃ: হাদিস নং ২২৮১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৩৯৯১; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫ম খন্ড, ১৬৩ পৃ:; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ৩৪৭৭৪; ইবনে আবীদ্ব দুনিয়া, আনাস রা: হতে; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, ১ম খন্ড, ২১৪ পৃ:; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, ১ম খন্ড, ৩৪৬ পৃ: হাদিস নং ৬৬৬;
হাদিসটি মাওকুফ রূপে সনদ সহকারে নিম্নরূপ,
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الصَّنْعَانِيُّ بِمَكَّةَ، ثنا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عَبَّادٍ، أَنْبَأَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَنْبَأَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، عَنْ حَكِيمِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلَّا عَلَى قَلْبِهِ الْوَسْوَاسُ، فَإِنْ ذَكَرَ اللَّهَ خَنَسَ، وَإِنْ غَفَلَ وَسْوَسَ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এমন কেউ জন্ম হয়নি যাকে শয়তান অছওয়াছা দেয়নি। যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তান দূর হয়ে যায় আর যখন জিকির থেকে গাফিল হয় তখন অছওয়া দেয়।” ৫৫৬৫৬, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৩৯৯১;
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকেম ও যাহাবী (র:) বলেন,
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ -“এই হাদিস বুখারী-মুসলীমের শর্ত অনুযায়ী ছহীহ্।” ৫৫৭৫৭, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৩৯৯১;
এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (র:) বলেন,
وَرَوَاهُ فِي مُصَنَّفِهِ وَرِجَالُهُ وَرِجَالُ الصَّحِيحِ -“মুছান্নাফের মধ্যে ইহা বর্ণনা করেছেন আর ইহা বর্ণনাকারী সকলেই বিশুদ্ধ।” ৫৫৮৫৮, ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ২২৮১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
এই হাদিস সম্পর্কে মাওলানা উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন,
قلت: قال الحاكم: هذا حديث صحيح على شرط الشيخين، ووافقه الذهبي وعزاه الشوكاني في الفتح القدير لابن المنذر وابن مردوية والضياء والبيهقي أيضاً،
-“আমি বলি: ইমাম হাকেম (র:) বলেন: এই হাদিস বুখারী-মুসলীমের শর্ত অনুযায়ী ছহীহ্। ইমাম যাহাবী (র:) একমত পোষণ করেছেন। শাওকানী তার ফাতহুল কাদীরে অনুরূপ বলেছেন। ইবনে মুনজির (র:) ইবনে মারদুবিয়া (র:) অনুরূপ বলেছেন। ইমাম বায়হাক্বী (র:) অনুরূপ বলেছেন।” ৫৫৯৫৯, মেরআত শরহে মেসকাত, ২২৮১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
এই হাদিসের আরেকটি সূত্র হচ্ছে,
حَدَّثَنَا ابْنُ حُمَيْدٍ، قَالَ: ثنا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي قَوْلِهِ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ قَالَ: الشَّيْطَانُ جَاثِمٌ عَلَى قَلْبِ ابْنِ آدَمَ، فَإِذَا سَهَا وَغَفَلَ وَسْوَسَ، وَإِذَا ذَكَرَ اللَّهَ خَنَسَ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, ‘ওয়াছ ওয়াছিল খান্নাছ’ এর ব্যাখ্যায় বলেন: শয়তান আদম সন্তানের ক্বাল্বে বসবাস করে যখন সে (আল্লাহর জিকির) থেকে ভুলে যায় ও অলস হয় তখন শয়তান ধোকা দেয়, যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তান দূর হয়ে যায়।” ৫৬০৬০, তাফছিরে তাবারী, ২৪তম খন্ড, ৭৫৪ পৃ: সূরা নাসের ব্যাখ্যায়;
এই হাদিস সম্পর্কে কাজী ছানাউল্লাহ পানিপাথি (র:) বলেন,
ورواه البخاري تعليقا عن ابن عباس مرفوعا بلفظ الشيطان جاثم على قلب ابن آدم فاذا ذكر الله خنس وإذا غفل وسوس
-“ইমাম বুখারী (র:) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে মারফূ রূপে বর্ণনা করেন যে, শয়তান আদম সন্তানের ক্বাল্বে বসবাস করে যখন সে (আল্লাহর জিকির) থেকে ভুলে যায় ও অলস হয় তখন শয়তান ধোকা দেয়, যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তান দূর হয়ে যায়।” ৫৬১৬১, তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ২৩৬ পৃ:;
আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপাথি (র:) ও খতিবে তিবরিজি (র:) হাদিসটি বুখারীতে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে মারফূ বলে স্বীকৃতি দিলেন, কিন্তু এই হাদিস হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে কোথাও মারফূ সূত্রে খুজে পাইনি। তবে এই হাদিস হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত আছে,
حَدَّثَنَا أُمَيَّةُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الْبَاهِلِيُّ، بِالْبَصْرَةِ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي الشَّوَارِبِ، ثنا عَدِيُّ بْنُ عُمَارَةَ الْجَرْمِيُّ، ثنا زِيَادٌ النُّمَيْرِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الشَّيْطَانَ وَاضِعٌ خَطْمَهُ عَلَى قَلْبِ ابْنِ آدَمَ، فَإِذَا ذَكَرَ اللَّهَ خَنَسَ
-“হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: শয়তান আদম সন্তানের ক্বাল্বে বসবাস করে যখন সে (আল্লাহর জিকির) থেকে ভুলে যায় ও অলস হয় তখন শয়তান ধোকা দেয়, যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তান দূর হয়ে যায়।” ৫৬২৬২, ইমাম ইবনে শাহিন: আত তারগীব ফিল ফাদ্বাইলিল আমাল, হাদিস নং ১৫৫; ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬৮ পৃ:; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ৪৩০১;
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী (র:) বলেন,
رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى، وَفِيهِ عَدِيُّ بْنُ أَبِي عُمَارَةَ وَهُوَ ضَعِيفٌ. -“ইমাম আবু ইয়ালা (র:) ইহা বর্ণনা করেছেন, এর সনদে ‘আদী ইবনে আবী উমারা’ নামক রাবী রয়েছে সে দ্বায়িফ ।” ৫৬৩৬৩, ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১১৫৬০;
তবে এই রাবী সম্পর্কে ইমাম আবু হাতেম (র:) বলেন,
قال أبو حاتم: ليس به بأس.-“তার বিষয়ে কোন অসুবিধা নেই।” ৫৬৪৬৪, ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, রাবী নং ২৪৭; ইমাম আবু হাতিম: জারাহ ওয়া তা’দিল, রাবী নং ১৫;
وذكره ابن حبان في الثقات -“ইমাম ইবনে হিব্বান (র:) তাকে ‘বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। দেখুন: ইবনে হিব্বান (র:) এর ‘কিতাবুস সিক্বাত’ এর রাবী নং ১০১২৫ এবং লেছানুল মিযান, রাবী নং ৩৮১।
قال الدوري، عن ابن معين: ليس به بأس -“দাওরী হযরত ইবনে মাঈন (র:) হতে বলেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” ৫৬৫৬৫, ইমাম ইবনে নাজি: তাজঈল আলা কুতুবি জারহি ওয়া তাদিল, রাবী নং ৫৩৫;
وذكره ابن شاهين في الثقات -“ইবনে শাহিন (র:) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” ৫৬৬৬৬, ইমাম ইবনে নাজি: তাজঈল আলা কুতুবি জারহি ওয়া তাদিল, রাবী নং ৫৩৫;
قال أحمد بن حنبل: هو شيخ. -“ইমাম আহমদ (র:) বলেন: সে শায়েখ ছিলেন।” ৫৬৭৬৭, ইমাম ছাখাবী: আস সিক্বাত, রাবী নং ৭৭৩১;
অতএব, এই রাবীর বর্ণিত হাদিস দ্বায়িফ হবেনা বরং সর্বনিম্ন হাছান হবে অথবা ছহীহ্। কারণ একমাত্র ইমাম উকাইলী ছাড়া অন্য কেউ তার ব্যাপারে সমালোচনা করেননি। আর সকলেই জ্ঞাত আছে ইমাম উকাইলী বুখারী মুসলীমের অনেক রাবীর ব্যাপারেও সমালোচনা করেছেন। তাই বলে বুখারী ও মুসলীমের রেওয়ায়েত দ্বায়িফ হয়ে যাবেনা। সুতরাং হাদিসটি ছহীহ্।