সৃষ্টি জগতে প্রিয় নবীজি (ﷺ) প্রথম মানুষ

حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَاصِمٍ، حَدَّثَنا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنا الوليد، حَدَّثَنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ وَسَعِيدٌ، عَن قَتادَة عَنِ الْحَسَنِ، عَن أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وسَلَّم قَال: كُنْتُ أَوَّلَ الناس فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ. 

-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ, প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।”  ৬৫০৫০,  ইমাম ইবনে আদী: আল-কামিল ফিদ-দোয়াফা, ৩য় খন্ড, ৪৮৮ পৃ:; আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর, হাদিস নং ৬৪২৩; যখিরাতুল হুফ্ফাজ, হাদিস নং ৪৩৭৫;

এই হাদিসটি خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ (খুলাইদ ইবনে দালাজ) এর একক সূত্রে হলে দ্বায়িফ হত, কিন্তু সে ইহা এককভাবে বর্ণনা করেননি বরং তার সাথে سَعِيدٌ (সাঈদ) বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ সাঈদ ও খুলাইদ উভয়ে একত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তাই ইহা শক্তিশালী রেওয়ায়েত। সর্বোপরি এই রেওয়ায়েত টি নির্ভরযোগ্য ও ক্বাবী বা শক্তিশালী, কারণ অন্য রেওয়ায়েত দ্বারাও ইহা শক্তিশালী হয়েছে। কারণ হযরত আদম (عليه السلام) এর সৃষ্টির পূর্বেও আল্লাহর হাবীব (ﷺ) ‘নবী’ ছিলেন। সুতরাং তিনিই প্রথম নবী ও প্রথম মানুষ এতে কোন সন্দেহ নেই। সামান্য শাব্দিক ব্যবধানে অন্যত্র উল্লেখ আছে:
رواه ابن سعد عن قتادة مرسلًا. -“ইবনে সাদ হযরত কাতাদা (র:) থেকে ‘মুরছাল ছহীহ্’ রূপে বর্ণনা করেছেন।  ৬৫১৫১,  ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ১১৮ পৃ:;

এই সনদটি ছহীহ্, এ সম্পর্কে ইমাম ইবনে সাদ (র:) ও বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ্, আল্লামা আবুল ফজল হাফিজ ইবনে কাছির (র:) {ওফাত ৭৭৪ হি.} উল্লেখ করেন:
أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ عَنْ سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ: كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ.  وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ 
-“হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এরূপ বলেছেন: সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে। ইহা প্রমাণিত ও অধিক ছহীহ্।”  ৬৫২৫২,  ইমাম ইবনে সা’দ: তাবকাতে কোবরা, ১ম খন্ড, ১১৯ পৃ:; হাফিজ ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩২৫ পৃ: ‘আমর ইবনে র্মুরা জাহনী’ এর কিচ্ছার বর্ণনায়; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৮৮২৪; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩১৯১৬; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১৫৮৩১; শারফুল মোস্তফা,, ২য় খন্ড, ৭২ পৃ:; কাজী আয়্যায: শিফা শরীফ, ১ম খন্ড, ১১৪ পৃ:; বাহ্জাতুল মাহফিল, ১ম খন্ড, ১৩ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৪২ পৃ:; শরহে মাওয়াহেব লিয-যুরকানী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১০ম খন্ড, ২৭৪ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: শরহে শিফা, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃ:;

এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজ ইবনে কাছির (র:) বলেন: 
وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ -“ইহা প্রমাণিত ও অধিক ছহীহ্।”  ৬৫৩৫৩,  হাফিজ ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩২৫ পৃ:;

হযরত কাতাদা (র:) থেকে দুইটি ধারায় হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। যেমন প্রথমটি হল:- কাতাদা- সাঈদ ইবনে আবী উরওয়া- আব্দুল ওয়াহ্হাব ইবনে আত্বা। এবং দ্বিতীয়টি হল: কাতাদা- আবু হিলাল- উমর ইবনে আছেম। দুইটি সূত্রই শক্তিশালী।
বর্ণনাকারী তাবেঈ কাতাদা (র:) তো নিজেই সু-প্রসিদ্ধ তাবেঈ ও বিশ্বস্ত। ‘আবু হিলাল’ أَبُو هِلالٍ এর মূল নাম হল مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمٍ الرَّاسِبِيُّ (মুহাম্মদ ইবনে সুলাইম রাছেবী) তার ব্যাপারে একদল ইমাম বিশ্বস্ত বলেছেন ও তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন লক্ষ্য করুন:- 
وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: مَحِلُّهُ الصِّدْقُ. قُلْتُ: عَلَّقَ لَهُ الْبُخَارِيُّ. -“ইমাম আবু হাতিম বলেন, সে মূলত সত্যবাদী। আমি (যাহাবী) বলি: ইমাম বুখারী তার থেকে তালিকরূপে হাদিস বর্ণনা করেছেন।”  ৬৫৪৫৪,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৭৪;

ইমাম মিযযী (র:) আরো উল্লেখ করেন,
استشهد به البخاري في الصحيح، وروى له في كتاب القراءة خلف الإمام 
-“ইমাম বুখারী (র:) তার ছহীহ্ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। ‘কিরায়াতু খালফাল ইমাম’ গ্রন্থে তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।”  ৬৫৫৫৫,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২৫৫৬;

وقال عثمان الدارمي قلت لابن معين حماد بن سلمة أحب إليك في قتادة أو أبو هلال فقال حماد أحب إلي وأبو هلال صدوق وقال مرة ليس به بأس وقال الآجري منه عن أبي داود وأبو هلال ثقة
-“উছমান দারেমী বলেন, আমি ইমাম ইবনে মাঈন (র:) কে বললাম, আপনার কাছে কাতাদা এর চেয়ে হাম্মাদ ইবনে সালামা কি অধিক পছন্দনীয় অথবা আবু হেলাল? তিনি বললেন: হাম্মাদ আমার কাছে পছন্দনীয়, আবু হেলাল সত্যবাদী। আরেকবার বললেন, তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” আজরী ইমাম আবু দাউদ (র:) থেকে বলেন, আবু হেলাল বিশ্বস্ত।”  ৬৫৬৫৬,  হাফিজ ইবনে হাজার: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৩০৩; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২৫৫৬;

বর্ণনাকারী ‘আব্দুল ওয়াহ্হাব ইবনে আত্বা’ ছহীহ্ মুসলীমের রাবী ও বিশ্বস্ত। ‘সাঈদ ইবনে আবী উরওয়া’ ছহীহ্ বুখারী ও মুসলীমের রাবী।
বর্ণনাকারী ‘উমর ইবনে আছেম’ হল ইমাম বুখারী (র:) এর একজন উস্তাদ। যেমন ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (র:) বলেন: 
عمر بن عَاصِم هُوَ من شُيُوخ البُخَارِيّ -“উমর ইবনে আছেম তিনি ইমাম বুখারীর শায়েখ।”  ৬৫৭৫৭,  ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ২৩তম খন্ড, ১৮১ পৃ: ২৫৬৬ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;

কাজী শাওকানী বলেন: وَقَدْ رَوَاهُ عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ وَهُوَ مِنْ الثِّقَات 
-“অবশ্যই ইহা বর্ণনা করেছেন উমর ইবনে আছেন আর তিনি বিশ্বস্তদের একজন।”  ৬৫৮৫৮,  কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, ১ম খন্ড, ৯৯ পৃ: ৭৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;

সুতরাং দুইটি সনদই শক্তিশালী ও বিশুদ্ধ। হাদিসটি মুরছাল ছহীহ্ তবে এর মুত্তাছিল ছহীহ্ রেওয়ায়েত রয়েছে। যেমন ইমাম ইবনে আদী (র:) এভাবে বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَاصِمٍ، حَدَّثَنا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنا الوليد، حَدَّثَنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ وَسَعِيدٌ، عَن قَتادَة عَنِ الْحَسَنِ، عَن أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وسَلَّم قَال: كُنْتُ أَوَّلَ الناس فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ.
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।”  ৬৫৯৫৯,  ইমাম ইবনে আদী: আল-কামিল ফিদ-দোয়াফা, ৩য় খন্ড, ৪৮৮ পৃ:; আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর, হাদিস নং ৬৪২৩; যখিরাতুল হুফ্ফাজ, হাদিস নং ৪৩৭৫;

এই হাদিস সম্পর্কে পূর্বে আলোকপাত হয়েছে। সুতরাং হাদিসটি হাছান অথবা ছহীহ্।
Top