কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর

حَدَّثَنَا الْمُثَنَّى، قَالَ: ثنا سُوَيْدٌ، قَالَ: أَخْبَرَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي قُبُورَ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ رَأْسِ الْحَوْلِ، فَيَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ. قَالَ: وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ يَفْعَلُونَ ذَلِكَ
-“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত্-তায়মী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) প্রতি বছরের শুরুতে উহুদের যুদ্ধে শহিদগণের কবরে আসতেন। অত:পর বলতেন: “আস-সালামু আলাইকুম বিমা ছাবারতুম ফানি’মা উকবা দারে”। তিনি বলেন: হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه), উমর (رضي الله عنه) ও উছমান (رضي الله عنه) অনুরূপ করতেন।”  ২২১২১.  তাফছিরে তাবারী, হাদিস নং ২০৩৪৫, সূরা রা’দ এর ২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়; তাফছিরে ছা’লাভী, ৫ম খন্ড, ২৮৭ পৃ:; তাফছিরে নিছাপুরী, ২য় খন্ড, ২২৭ পৃ:; তাফছিরে কুরতবী, ৯ম খন্ড, ৩১২ পৃ:; তাফছিরে আবু ছাউদ, ৫ম খন্ড, ১৮ পৃ:; মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩য় খন্ড, হাদিস নং ৬৭১৬; তাখরিজু আহাদিছুল কাশ্শাফ, হাদিস নং ৬৫১;
এই হাদিসের রাবী مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ {মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত-তায়মী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎)} একজন নির্ভরযোগ্য রাবী বা বর্ণনাকারী এবং বিখ্যাত তাবেঈ। যেমন- তাঁর ব্যাপারে নিচের বর্ণনা গুলো লক্ষ্য করুন:- ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় কিতাবে বলেন,
مُحَمَّد بن إِبْرَاهِيم التَّيْمِيّ من ثِقَات التَّابِعين -“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত তায়মী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎)” বিশ্বস্ত তাবেঈগণের একজন।”  ২২২২২. ইমাম যাহাবী: আল মুগনী ফিদ-দোয়াফা, রাবী নং ৫২০৩;

আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
قلت: وثقة الناس واحتج به الشيخان -“আমি (ইবনে হাজার আস্কালানী) বলছি: লোকেরা তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলীম (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার উপর নির্ভর করেছেন।”  ২২৩২৩.  ইমাম আসকালানী: লিছানুল মিযান, ৫ম খন্ড, ২০ পৃ:;
ইমাম ইজলী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) {ওফাত ২৬১ হিজরী} তদীয় কিতাবে বলেন,
محمد بن إبراهيم التيمي: مدني ثقة. -“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত্-তায়মী মাদানী’ বিশ্বস্ত রাবী।”  ২২৪২৪. ইমাম ইজলী: আছ-ছিক্বাত, রাবী নং ১৪৩২;
সুতরাং ‘মুহাম্মদ ইব্রাহিম আত্ তায়মী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎)’ এর রেওয়ায়েত ছহীহ্ হিসেবে স্বীকৃত কারণ সে বুখারী-মুসলীমের রাবী। আর এই ছহীহ্ রেওয়ায়েত হতে জানা যায় যে, প্রিয় নবীজি (ﷺ) প্রতি বছরের শুরুতে নির্দিষ্ট দিনে উহুদের যুদ্ধের শহিদগণের মাজার যিয়ারত করতেন, এমনকি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه), হযরত উমর (رضي الله عنه) ও হযরত উছমান (رضي الله عنه) এরূপ আমল করেছেন। সুতরাং নির্দিষ্ট দিনে কবর যিয়ারতে যাওয়া স্বয়ং রাসূলে পাক (ﷺ) ও তিন খলিফার মুস্তাহাব পর্যায়ের সুন্নাত। এ বিষয়ে নিচের হাদিসটি উল্লেখযোগ্য,
قَالَ أَبُو غَسَّانَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عِمْرَانَ، عَنْ مُوسَى بْنِ يَعْقُوبَ الزَّمْعِيِّ، عَنْ عَبَّادِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِي قُبُورَ الشُّهَدَاءِ بِأُحُدٍ عَلَى رَأْسِ كُلِّ حَوْلٍ فَيَقُولُ: {سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ} [الرعد: ২৪] قَالَ: وَجَاءَهَا أَبُو بَكْرٍ، ثُمَّ عُمَرُ، ثُمَّ عُثْمَانُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ،
-“আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ্ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) উহুদের যুদ্ধের সকল শহিদগণের মাজারে প্রতি বছরের শুরুতে আসতেন। অত:পর বলতেন: তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হউক যে তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, আর সেখানেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। তিনি বলেন: আর সেখানে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), উমর (رضي الله عنه) ও উসমান (رضي الله عنه) যাইতেন।”  ২২৫২৫. তারিখে মাদিনা লি-ইবনে শিবাহ, ১ম খন্ড ১৩২ পৃ:; ইবনে জারির তাঁর ‘তাফছিরে’ ১৩তম খন্ড, ৬ পৃ:; তাফছিরে দূর্রে মানছুর, ৪র্থ খন্ড, ৬৪১ পৃ:; তাফছিরে কবীর, সূরা রা’দ এর ২০-২৪ এর ব্যাখ্যায়; ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী, ৩৮২১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; শামী, যিয়ারত অধ্যায়ে, ২য় খন্ড, ২২ পৃ:;
এই হাদিসের সনদে عَبَّادُ بْنُ أَبِي صَالِحٍ ‘আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ্’ রয়েছে। যার আরেক নাম عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي صَالِحٍ (আব্দুল্লাহ ইবনে আবী সালেহ), তার সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় কিতাবে বলেন: صالح الحديث.-“সে হাদিস বর্ণনায় গ্রহণযোগ্য।”  ২২৬২৬. ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, ২য় খন্ড, ৩৬৬ পৃ:;
ইমাম যাহাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) অন্যত্র আরো বলেন: وَثَّقَهُ ابْنُ مَعِينٍ. -“ইমাম ইবনে মাঈন (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।” ২২৭ ২৭.  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ১৮২;
ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম মিযযী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন:
 قال ابن معين: ثقة. روى له مسلم، وأبو داود، والترمذى، وابن ماجه 
-“ইমাম ইবনে মাঈন (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: সে বিশ্বস্ত। ইমাম মুসলীম, আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।”  ২২৮২৮.  ইমাম আইনী: মাগানিল আখইয়ার, রাবী নং ২ 

১২৩৩; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৩৩৮;


ইমাম মুগলতাঈ (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: قال الساجي: ثقة -“ইমাম ছাজী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: সে বিশ্বস্ত।”  ২২৯২৯.  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২৯৯২;

ইমাম ইজলী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: عباد بن أبي صالح السمان: ثقة. -“আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ সাম্মান বিশ্বস্ত।”  ২৩০৩০. ইমাম ইজলী: আছ ছিক্বাত, রাবী নং ৭৬২;
‘আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ’ তার পিতার সূত্রে বর্ণিত রেওয়ায়েত কে নাছিরুদ্দিন আলবানীও ছহীহ্ বলেছেন। দেখুন সুনানে আবু দাউদের তাহকিক হাদিস নং ৩২৫৫।
এই হাদিস পূর্বের হাদিসের সমর্থক। যদিও হাদিসটির সনদ নবী করিম (ﷺ) পর্যন্ত পৌছেনি। কিন্তু এর মারফূ ও পূর্ণ সনদ বিদ্যমান রয়েছে। কারণ ‘আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ্’ তার পিতার সূত্রে হযরত আবু হুরায়রা (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন। যেমন নিচের রেওয়ায়েত টি লক্ষ্য করুন,
وَرَوَى عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عِمْرَانَ بْنِ مُوسَى: عَنْ عَبَّادِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي قُبُورَ الشُّهَدَاءِ، فَإِذَا أَتَى فُرْضَةَ الشِّعْبِ يَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ. وَكَانَ يَفْعَلُهُ أَبُو بَكْرٍ ثُمَّ عُمَرُ بَعْدَهُ ثُمَّ عُثْمَانُ.
-“আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ্ তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত আবু হুরায়রা (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে, তিনি বলেছেন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) উহুদের যুদ্ধে শহিদগণের কবরে আসতেন।..... হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), উমর (رضي الله عنه) ও উছমান (رضي الله عنه) অনুরূপ করতেন।”  ২৩১৩১.  ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, ১ম খন্ড, ১৪৩ পৃ:; ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ’লামী নুবালা, ১ম খন্ড, ৪২৫ পৃ:, গাজওয়ায়ে হামরায়ে আসাদ অধ্যায়ে;
অতএব, মারফূ ও নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, হযরত রাসূলে করিম (ﷺ), সিদ্দিকে আকবর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত উমর (رضي الله عنه) ও হযরত উছমান (رضي الله عنه) প্রতি বছরের শুরুতে উহুদ যুদ্ধে শহিদগণের মাজার যিয়ারত করতে যেতেন। তাই বছরে নির্দিষ্ট দিনে কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া ও কবর যিয়ারত করা উভয়’ই সুন্নাত।

উহুদের যুদ্ধের শহিদগণের কবর যিয়ারতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল এই, তিনি (ﷺ) (ওফাতের পূর্বে) সর্বশেষ যিয়ারত শেষে সেখানেই খুতবা দেন এবং ফরমান: 
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ أَبِي حَبِيبٍ، عَنْ أَبِي الخَيْرِ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: صَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَتْلَى أحد بعد ثَمَانِي سِنِينَ كَالْمُوَدِّعِ لِلْأَحْيَاءِ وَالْأَمْوَاتِ ثُمَّ طَلَعَ الْمِنْبَرَ فَقَالَ: إِنِّي بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فَرَطٌ وَأَنَا عَلَيْكُمْ شَهِيدٌ وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْحَوْضُ وَإِنِّي لَأَنْظُرُ إِلَيْهِ من مَقَامِي هَذَا وَإِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ وَإِنِّي لَسْتُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا بعدِي وَلَكِنِّي أخْشَى عَلَيْكُم الدُّنْيَا أَن تنافسوها فِيهَا
-“আমি তোমাদের অগ্রবর্তী, আমি তোমাদের পক্ষে সাক্ষী হব এবং তোমাদের সাথে প্রতিশ্রুতি থাকল কাউছার নামক ঝর্নার পাশে তোমাদের সাথে আবার সাক্ষাৎ হবে। আমি এখান থেকেই তা দেখতে পাচ্ছি। নিশ্চয় আমাকে জমীনের চাবি সমূহ দান করা হয়েছে। আমি তোমাদের ব্যাপারে এই আশংকা করিনা যে, তোমরা পুনরায় শিরিকে লিপ্ত হবে। বরং আমার ভয় হচ্ছে তোমরা দুনিয়ার লোভ-লালশায় লিপ্ত হয়ে পড়বে।”  ২৩২৩২.  ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ১৩৪৪; মুসলীম;
এই হাদিস দ্বারা ইহা সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে, মাজার যিয়ারত জায়েয, যেমনটা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমল করেছেন। হুজুর (ﷺ) তাঁর নূরানী দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছিলেন যে, শেষ জামানায় মু’মীনদের উপর বাতিল পন্থিরা এই বৈধ আমলের জন্য শিরিকের অপবাদ দিবে। তাই তিনি নিজেই মাজার যিয়ারত শেষে এই খুতবা প্রদান করেন।
Top