আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

اَلْمَوْرِدُ الرَّوِى فِيْ مَوْلِدٍ النَّبَوِى



মূলঃ

ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)


অনুবাদঃ

মো. কবিরুজ্জামান

মো. আবুল খায়ের ইবনে মাহতাবুল হক


টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি ও সিরাজুম মুনির তানভির


ব্যবস্থাপনায়ঃ

শাহজালাল লতিফিয়া ইসলামী গবেষনা সংস্থা

বিয়ানীবাজার, সিলেট

০১৭২২১১৫১৬১


প্রকাশকঃ

মোঃ শাহ্ আলম সরকার, সমাচার, ৩৭ পি. কে. রায় রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০। ফোন ৪৭১১৬১৪৩

প্রকাশকালঃ

একুশে বইমেলা, ২০১৭

গ্রন্থস্বত্বঃ অনুবাদক   

প্রচ্ছদঃ মশিউর রহমান 

বর্ণবিন্যাসঃ বাঁধন, সমাচার কম্পিউটার সিস্টেম,  বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০

পরিবেশকঃ এস.এস. বুক্স ৩৮ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০

উত্তর আমেরিকা পরিবেশক : মুক্তধারা, জ্যাকসন

হাইট, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। 

যুক্তরাজ্য পরিবেশক: সঙ্গীতা লিমিটেড, ২২ ব্রিকলেন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

মূল্যঃ ২৫০ টাকা 


ঘরে বসে সমাচার এর সকল বই কিনতে ভিজিট করুন

ফোনে অর্ডার করতে ০১৫ ১৯৫২ ১৯৭১ হট লাইন ১৬২৯৭

_________________________________



সুচিপত্রঃ


❏ ভুমিকা

❏ অনারবে মীলাদ

❏ মক্কা বাসির মিলাদ

❏ মিসর ও সিরিয়া বাসীর মিলাদ

❏ মক্কা বাসীর মীলাদ মাহফিল 

❏ মদীনা বাসীর মীলাদ মাহফিল

❏ মীলাদ মাহফিলের প্রতি বাদশা মুজাফফারের আমল

❏ সকল সৃষ্টি প্রাণবন্ত হলো 

❏ প্রথম সৃষ্টি নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)

❏ দুরুদ শরীফের উছিলায় মহরানা আদায়

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উছিলায় ক্ষমা লাভ

❏ যুগে যুগে সচ্ছ ও নির্মল ধারায় আমার আগমন। 

❏ হুযূর (ﷺ) এর ভাষায়ই পিতৃ পরিচয়

❏ আদম (عليه السلام) সৃষ্টির চৌদ্ধ হাজার বছর পূর্বে আমি নূর হিসাবে ছিলাম

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পূর্ব পুরুষগণের পরিচয় ও বিশেষণ

❏ আব্দুল মুত্তালিব কর্তৃক খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) কে কোরবানি ও জমজম কুপ খনন

❏ আমেনা (رضي الله عنه) এর বিবাহের ঘটনা

❏ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মোজেজা

❏ নূরে মোহাম্মাদী (ﷺ) দ্বিতীয় প্রমাণ

❏ ইব্রাহীম (عليه السلام) এর দোয়ার নির্যাস ইসা (عليه السلام) এর সুসংবাদ ও মা জননীর স্বপ্ন কথা গুলোর ব্যাখ্যা।

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম কালীন অলৌকিক ঘটনাবলী 

❏ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে পিতার ইন্তেক্বাল

❏ আবু লাহাব কর্তৃক সুআইবিয়াকে মুক্তিদান এবং আবু লাহাবের মুক্তি লাভ

❏ মুহরে নবুওত দর্শনে এক ইয়াহুদীর অচেতন হওয়া 

❏ মক্কায় ইহুদী পন্ডিতের সুসংবাদ ও মুসলমান হওয়ার কাহিনী

❏ সিরীয় সন্নাসী ঈসার সুসংবাদ প্রদান

❏ মুবিজানের স্বপ্ন ও পারস্য সম্রাটের প্রাসাদ কম্পিত 

❏ ৪টি স্থানে ইবলিস বিলাপ করেছিল

❏ খতনাকৃত অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেছেন 

❏ মোহাম্মাদ নাম করনের কারণ

❏ মোহাম্মদ নাম করনে দ্বিতীয় কারণ

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নাম সংক্রান্ত পর্যালোচনা

❏ রাসূলের প্রশংসায় ইমাম সুয়ূতী নিন্মোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম সাল, জন্ম মাস, জন্ম দিন ও জন্ম কালীন সময়ের পর্যালোচনা

❏ একটি সুক্ষ্ম আলোচনা

❏ যে মাসে হুযূর (ﷺ) এর আগমন

❏ যে তারিখে জন্ম গ্রহন করেছেন

❏ যে সময়ে জন্ম গ্রহন করেছেন

❏ বেলাদত রজনী ক্বদর রজনীর চেয়েও শ্রেষ্টতম

মাতৃগর্ভে অবস্থান

❏ হালিমা (رضي الله عنه) এর গৃহে রাসূল পাক (ﷺ) এর যে সমস্ত মোজেযা প্রকাশ পেয়েছিল

❏ হুযূর (ﷺ) বক্ষ বির্দীন হওয়ার ঘটনা

❏ মাতৃ বিয়োগ ও মাতুলালয়ে প্রকাশিত মোজেজা

❏ আবু তালেবের সঙ্গে সিরিয়া সফর

❏ হুযূর (ﷺ) এর সঙ্গে আবু বকরের সিরিয়া সফর এবং বহিরা পাদ্রীর সাক্ষাৎ লাভ

❏ সিরিয়ায় তৃতীয় সফরে নাসতোর পাদ্রীর সাক্ষাৎ লাভ

❏ খাদিজা (رضي الله عنه) এর বিবাহ

❏ ৩৫ বছর বয়সে কাবা মেরামতের কাহিনী

❏ হস্তিবাহিনীর ৪০ বছরের মাথায় নবুওয়ত লাভ

❏ সর্বশেষ অবতারীত আয়াতের ব্যাখ্যা

❏ হুযূর (ﷺ) সাথে জিব্রাঈল ও পাহাড়ীয় ফেরেস্তাদ্বয়ের কথোপকথন

❏ সকাল- সন্ধায় আমল 

❏ সর্বশেষ অবতারীত আয়াত


❏ সংজোযন

❏ সংক্ষিপ্ত মীলাদ শরীফ

❏ মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে গ্রন্থ 

❏ ইসলামি বিশ্বকোষ মাওলিদ 




অনুবাদকের কথা


الحمد لله والشكر لله والصلوة والسلام على رسول لله اما بعد فقد قال الله تعالى فى القران الكريم من يطع الرسول فقط اطاع الله (الخ) وقال عليه السلام من احب سنتى فقط احبنى ومن احبنى كان معى فى الجنة.


রাসূলে পাক (ﷺ) এর প্রতি আন্তরিক মহব্বত ও তাঁর অনুসরণই নাজাতের একমাত্র অসিলা। আর এটাই স্বাভাবিক যে, ভালোবাসা মহব্বতকৃত ব্যক্তিকেই বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে,


 من احب شئيا اكثر ذكره 


আর মহানবী (ﷺ) হলেন, অপরিসীম গুণের অধিকারী।তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী শাফিউল মুজনিবীন, রাহমাতুল্ল্লিল আলামীন। তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে আরবী ভাষায় লিখিত আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)’ বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ একটি গ্রন্থ। প্রথিতযশা মুহাদ্দিস আল্লামা মুল্লা আলী আলী কারী (رحمة الله) যার লিখক। এমন মহান একজন লিখকের অমূল্য কীর্তির বঙ্গানুবাদ করার মতো যোগ্যতা বা সাধ্য আমার নেই। কিন্তু তারপরও এ গ্রন্থের গুরুত্ব এবং ব্যাপক কল্যাণের চিন্তা করেই এবং মাওঃ আবুল খায়ের ইবনে মাহতাবুল হকের পিড়াপিড়িতে আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে এ কাজ শুরু করি। 


নিঃসন্দেহে আল্লাহ আমাকে এ কাজের জন্য তাওফীক দিয়েছেন যার প্রমাণ যখনই আমি এর অনুবাদ লিখতে বসেছি তখনই সহজতা অনুভব করেছি। লিখক তাঁর কিতাবে অত্যন্ত সহজভাবে বিশ্বনবী (ﷺ) জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলের ব্যাপারে অনবদ্য আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। এসব আলোচনা দ্বিধা-বিভক্ত মুসলমান ভাইদের উপকারে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এতো বড় মাপের একজন আলেমের অনবদ্য গ্রন্থের অনুবাদ যথার্থভাবে করা সম্ভব হবেনা, এটাই স্বাভাবিক। তারপরও রাবু্বল আলামীন তাঁর এ আকিঞ্চন বান্দার দ্বারা এ কাজ করিয়েছেন, সেজন্য তাঁর দরবারে জানাই লক্ষ-কোটি সুজুদ। আল্লাহ পাক এর মাধ্যমে পরকালে আমাদেরকে তাঁর নবীর শাফায়াতের অধিকারী করুন এ আমার একান্ত কামনা। 

গ্রন্থখানা অনুবাদে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকা অসাভাবিক নহে, কার নজরে বিচ্যুতির দৃষ্টি আসলে অনূরুধ যে আমাদের অবগত করা। পরবর্তিতে তা সংশোধন করা হবে। 

আল হাকীর 

মু. কবিরুজ্জামান 


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 


আমরা সকল প্রশংসা জ্ঞাপন করছি সে মহান আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালার, যিনি তাঁর রাসূলে কিবরিয়া (ﷺ) এর আনুগত্যতার সাথে নিজের ভালবাসাকে সংযুক্ত ও শর্তারোপ করেছেন। যেমনঃ এর স্বপক্ষে নিন্মোক্ত বাণী প্রমাণ বহন করে। মহান আল্লাহর বাণী : 


 قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ 


অর্থাৎ: বলুন হে রাসূল! যদি তোমরা আল্লাহ পাককে ভাল বাসতে চাও তবে প্রথমে আমার অনুস্মরণ ও অনুকরন কর। তবেই তিনি (আল্লাহপাক) তোমাদেরকে ভাল বাসবেন। 


সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সে নবী (ﷺ) এর প্রতি, যিনি আল্লাহ পাকের নিকট সুমহান ও সর্ব শ্রেষ্ট জীব হিসাবে বিবেচিত, আরও বর্ষিত হোক তাঁর পরম ও চরম আহলে বায়েত ও সকল ছাহাবায়ে কেরামগনের প্রতি। 


হামদে বারী সালাত ও সালাম নিবেদনের পর মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূলে পাক (ﷺ) এর ভালবাসা হচ্ছে ইসলামী চিন্তা গবেষনার গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তন্মধ্যে প্রধান হচ্ছে-

(১) তাঁকে সর্বোচ্ছ সম্মান প্রদান করা। 

(২) তাঁর আনীত ও সকল শিক্ষা দীক্ষার প্রতি যথাযথ আমল করা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, জাতী ইসলামী চিন্তা ধারার এ গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পূর্ণভাবে ভূলে গিয়েছে। অথচ জাতি আজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে পাকের প্রতি কঠোর ভালবাসা পোষন করা বাঞ্চনীয় ছিল। তাই আল্লাহও রাসূলের প্রতি অগাধ ভালবাসা উপেক্ষা করার দরুন তা একেবারে হ্রাস পেয়ে গেছে। ফলে তাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও উন্নতির পরিবর্তে অবনতি ক্ষতিগ্রস্থতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এরই সুবাদে আজকের কাফের বেনিয়া গোষ্টিরা তাদের উপর প্রভাব প্রতিপত্বি বিস্তার লাভের প্রস্তুতি ও সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূলে পাকের প্রতি উম্মতের সুগভীর ভালবাসার সু-সম্পর্ক দুর্বল ও নশ্যাত-করার মানসে গবেষনা ও শিক্ষামুলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে উম্মতে মুহাম্মদী ঝড়বাদীদের আওতায় চলে যাওয়ার ফলে তারা আজ বিজয়ের পরিবর্তে পরিনত হয়েছে বিজিত সম্প্রদায়ে এবং পশ্চিমা নুংড়া জাতিদের নিকৃষ্ট গবেষনার স্রোতে ভেসে গিয়েছে। ফলে তারা তাদের প্রতিপালক ও স্বীয় রাসূলকে ভূলে গিয়েছে। যদ্বরুন ইউরোপীয় ও ঝড়বাদীরা তাদের গাড়ে সাওয়ার হয়ে তাদের উপর নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার লাভ করে। তা এক চরম বেদনাদায়ক ও আক্ষেপের বিষয়। 


এজন্য আমরা তাদের সকল ষঢ়যন্ত্র নশ্যাত করার মানসে শিক্ষামুলক আরবী ভাষায় প্রচারিত বিকল্প ধারা প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। 


আমরা পূর্ববর্তী তিনজন নির্ভর যোগ্য ইমাম ও ইসলামী উম্মাহর লিখিত তিন খানা অমুল্য গ্রন্থ হতে সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত্ব উদঘাটন করেছি যেগুলো তাঁদের নিকট সমাদৃত ও গৃহীত। 

মীলাদ সংক্রান্ত বহুল তথ্য উপাত্ত্বগুলো নিন্মোক্ত তিনটি গ্রন্থ হতে সংকলিত। 


১। আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবী (ইমাম মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) 

২। মাওলিদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)। (হাফিজ ইবনে কাছীর রচিত) 

৩। মাওলিদু নাবী। (হাফিজ ইবনে হাজার হায়তামী রচিত) 


অতএব, বহুযুগ ধরে বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুসলমানরা আজ মীলাদ শরীফের প্রতি গুরুত্বরোপ দিয়ে আসছে বিধায় মীলাদ বিরোধীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে তাই আমরা এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিশে­ষন করতে শরয়ী প্রমাণাদী উপস্থাপন করছি। এর মূল উদ্দেশ্য যাতে আমরা নবী প্রেমীক উম্মতদের পুনঃরায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে পাক (ﷺ) এর ভাল বাসার দিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। 

 কেননা মহান আল্লাহ পাক নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা স্বীয় রাসূলে পাক (ﷺ) এর অনুগত্যকে নিজের ভালবাসার অন্তর্ভূক্ত করেছেন। 


 যেমনঃ মহান আল্লাহ পাকের বাণীঃ -


قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ 


 অর্থাৎ: বলুন। তোমরা যদি আল্লাহকে ভাল বাসতে চাও তবে পূর্বে রাসূল কে ভালবাস। তবেই তিনি তোমাদেরকে ভাল বাসবেন। 


আর এ ভালবাসা সম্পর্কে হুযূরে পাক (ﷺ) এরশাদ ফরমানঃ 


لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ والِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ .


অর্থাৎ তোমরা ততক্ষন যাবত পুর্ণ মুমিন হতে পারবেনা যতক্ষন যাবত না আমি তার নিকট তার নিজের চেয়ে, পিতা-মাতার চেয়ে, সন্তান-সন্ততির চেয়ে এবং সমস্ত মানুষের চেয়েও অত্যধিক প্রিয় হই। 

অতএব ততক্ষন পর্যন্ত আমরা আমাদের সৃষ্টি কর্তা মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হবোনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর রাসূলে পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হবোনা এমনকি রাসূলে পাক (ﷺ) এর ভালবাসা ব্যতীত তাঁর অনুস্বরণ ও অনুকরণ করা ও আমাদের পক্ষে-কশ্মিন কালেও সম্ভব হবেনা। 

মহান আল্লাহ পাক এ মুল্যবান গ্রন্থ গুলোর সংস্করণের তাওফিক দানের জন্যে আমরা তাঁর কৃতজ্ঞতার পাশের্ব আবদ্ধ। 


পাশা পাশি উক্ত গ্রন্থ গুলো সংকলন বিষয়ে সাবির্কভাবে সর্বোত্তম সহযোগীতা করায় মহামান্য শায়েখ আলহাজ লতীফ আহমদ চিশতী এবং মহামান্য শায়েখ আলহাজ মুহাম্মদ জামীল চিশতী মহোদ্বয় গনের প্রতি কৃতজ্ঞতার বিকলপ নেই। 

পরিশেষে মহান আল্লাহ পাকের দরগাহে এ আকুতী জানাই যে, তিনি যেন আমাদের পূর্ব পুরূষ হতে এ গুরুত্ব পূর্ণ অমুল্য গ্রন্থ সংকলন ও সংস্করনের অক্লান্ত ও অবিশ্রান্ত পরিশ্রমকে মঞ্জুর করেন এবং এ মেহনতকে তাঁর মোবারক দরগাহে একনিষ্টতার ধার প্রান্তে পৌছে দেন। 

(আমীন ছুম্মা আমীন) 



বিনীত 

আল্লাহর সন্তুষ্টির ভিখারী 

মুহাম্মদ খান কাদেরী 

ইসলামী বাস্তবায়নকেন্দ্র 

(২০৫-শাদমান নং (১) লাহোর পাকিস্থান) 





লেখকের কথা


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম


সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাকের, যিনি বিশ্বজগতের প্রতি পালক। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর প্রতি তাঁর পরম আহলে বাইত ও সকল সাহাবায়ে কেরামগনের (رضي الله عنه) প্রতি।

 

পরর্বতী বক্তব্য হলো, মহান আল্লাহ পাক এ অধমকে হাফিজে হাদীস শায়েখ আব্দুর রহমান বিন আলী আশ শায়বাণী (যিনি ইবনে দিবা নামে পরিচিত) তাইছিরুল উছুল ইলা-জামিউল উছুল, গ্রন্থকারের প্রনেতা) র প্রণীত আল মাওলিদু নাবী, গ্রন্থের খেদমতের উছিলায় ইহসান করেছেন। 


গ্রন্থ খানার টিকা ও গবেষনা কাজে আমি নিজেকে উৎসর্গ করি। পাশা পাশি বর্ণিত হাদীস গুলো সন্নিবেশিত করি। আশা করি আল্লাহ পাকের প্রশংসায় মীলাদ প্রেমীকদের নয়ন যুগল হবে। 


এরপর আমার নিকট বার্তা পৌছে যে, হাফিজে হাদীস শায়েখ মুল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এর প্রণীত গ্রন্থ সংকলন করার জন্য। তিনি ছিলেন স্বীয় যুগের এক প্রতিভা সম্পন্ন বড় ইমাম। 


যেমন: হাদীস সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সে যুগের এক কীনারাহীন বিদ্যাসাগর। এজন্য তৎকালীন যুগে লোকেরা তাঁকে অমুল্য জ্ঞানসমুদ্র বলে উপাধি দেয়। 


এ অমুল্য গ্রন্থ প্রায় ৯৩ পৃ: সম্বলিত এবং চমৎকার পরিমার্জিত পান্ডুলিপি। এর অন্য আরেকটি পান্ডুলিপি অতিচমৎকার ফার্সি ভাষায় লিখিত পাওয়া যায়। তবে এর প্রথম হস্তলিপি স্পষ্ট ও পরিমার্জিত থাকার দ্বরুন আমরা তার উপর আস্থা রাখি। গ্রন্থের উপর বহু টিকা লিখা হয়েছে। 


গ্রন্থকার (رحمة الله) তাঁর গ্রন্থে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহীহ ও জঈফ হাদীস বর্ণনা করেছেন বিধায় আমি (লেখক) অতিরিক্ত কোন হাদীস বর্ধিত করিনি। গ্রন্থকার (رضي الله عنه) স্বীয় গ্রন্থ প্রণয়নে অধিকাংশ ক্ষেত্রে زعموا- روى- قيل শব্দগুলো বর্ণনা করেছেন। আর হাদীস বিশরাদগনের কাছে এ ধরনের বর্ণনাই যথেষ্ট। আবার কোন কোন সময় গ্রন্থ প্রণয়নে সনদ সহকারে এমন বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন, যা নির্ভরযোগ্য তাবেঈন ও আইম্মায়ে কেরামগনের বর্ণিত হাদীস। অথচ বর্ণনা প্রাক্ষালে একথা বলেননি যে, হাদীসটি নবী করীম (ﷺ) এর নিকট মারফু হিসেবে পরিচিত বরং তা মাওকুফ হাদীস। তবে মুফাসিসরীনে কেরামগনের বর্ণিত হাদীসকে তিনি অত্যধিক প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তাঁদের বর্ণিত হাদীস মারুফু বলে রায় প্রদান করতেন। 


আমাদের দৃষ্টিতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সমূহ মারফু সুত্রে বর্ণিত ও প্রকাশ্য দলীলের বিপরীত নয়। 


তাঁর সংগৃহীত হাদীস গুলো বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্বাস, কা’ব এবং হালীমা সাদিয়াগন (رضي الله عنه)। চতুর্থ ঘটনা বর্ণনা করেন নবীজীর মাতা হযরত সাইয়্যিদা আমেনা (رضي الله عنه)। 


অত্রএব তাঁদের বর্ণিত ঘটনাসমুহ কি সমালোচিত হতে পারে না কখনও না। 




 

গ্রন্থকার ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) সংক্ষিপ্ত পরিচিতি


তাঁর নাম ইমাম মুল্লা আলী বিন মহাম্মদ সুলতান হারুবী (যিনি মুল্লা আলী কারী হানাফী নামে পরিচিত)। তিনি ছিলেন এক বিশাল প্রতিভা সম্পন্ন, স্বীয় যুগের একমাত্র ব্যক্তিত্ব উজ্জল নক্ষত্র, ভাষা পরিমার্জনকারী, বিশে­ষণের আলোকধারা। তাঁর খ্যাতি সবর্ত্রে প্রচারিত। তিনি হিরা প্রদেশে জন্ম গ্রহন করেন। 


ইলমে হাদীসের উদ্দেশ্যে জ্ঞান আহরণের জন্য তিনি সুদূর মক্কায় ভ্রমন করেন। হাদীস সংগ্রহ করেন সেখানকার নির্ভর যোগ্য উস্তাদ জনাব আবুল হাসান আল বিকরী (رحمة الله) সাইয়্যিদ যাকারীয়া আল হাসানী, শিহাব আহমদ বিন হাজার হায়তামী, শায়েখ আহমদ আল মিছরী (যিনি ক্বাজী যাকারীয়া ছাহেবের সুযোগ্য ছাত্র) শায়েখ আব্দুল্লাহ সানাদী, আল্লামা কুতবুদ্দিন মক্কী সহ প্রমুখ মুহাদ্দিসীনে কেরামগনের নিকট হতে। 


তাঁর সুখ্যাতি সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়ে 


তাঁর জীবদ্দশায় তিনি বহু সুক্ষগ্রন্থ প্রণয়ন করে গেছেন, যে গুলো পরিমার্জিত সংশোধিত সুচী ভিত্তিক এবং বিশাল ফায়দা সংবলিত। তন্মধ্যে মেরক্বাত শরহে মেশকাত ১১ খন্ডে প্রনীত, তা তাঁর সর্ববৃহৎ প্রণীত ও বিশ্বনন্দিত অমুল্য গ্রন্থ, তাছাড়া শরহে শিফা, শরহে শামায়েল, শরহে নুখবাতুল ফিকর শরহে শাত্বেরা, শরহুল জাযরীয়্যা লাখছুন মিনাল ক্বামুস (যা কামুস নামে প্রশিদ্ধ)। তাছাড়া “আল আয়মনারুল জানিয়্যা ফি আসমায়িল হানাফিয়্যা, শরহে ছুলাছিফয়াতে বুখারী নযুতাহুল খাতীর, আল ফাতীর ফি তারজমায়ে শায়খ আব্দুল কাদীর গ্রন্থ গুলোও অন্যতম।



মৃত্যু


তিনি ১০১৪ হিজরীর শাওয়াল মাসে পবিত্র মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল ফরমান। এবং জান্নাতুল মুয়াল্লা নামক স্থানে তাকেঁ দাফন করা হয়। 


তাঁর মৃত্যু সংবাদ যখন মিসরের উলামায়ে কেরামদের কাছে পৌছে, তখন তাঁরা আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে জড়ো হয়ে তাঁর গায়েবানা জানাযা আদায় করেন। তাঁর গায়েবানা জানাযায় প্রায় চার হাজারের ও অধিক লোক অংশগ্রহন করেন। 

 


হুযূরে পাক (ﷺ) এর জন্মানুষ্ঠান


হুযূরে পাক (ﷺ) এর জন্মানুষ্ঠান নিয়ে বহু আলোচনা সমালোচনা হয়। তা কি জায়েয? না জায়েয নয়? এ বিষয়ের অবতারনার জন্য কলম হাতে নিলাম। আমার ব্যক্তিগত চিন্তা ধারা ও আজকের সমস্ত মুসলিম জাতিরা যে চিন্তা গবেষনা করছে তা হচ্ছে যে, হুযূরে পাক (ﷺ) এর জন্মানুষ্ঠান বিষয়ে যতই আলোচনা সমালোচনা হোকনা কেন সর্বোপরি তা যে যুক্তি সঙ্গত ও বৈধ বিষয় তা সন্দেহের অবকাশ নেই। তা প্রতি বছর প্রতি মৌসুমে পালিত হয়ে আসছে। আবার কেহ তা শ্রবনে বিরক্ত ও হচ্ছে। তাই আমার কিছু সংখ্যক বন্দু মহল আমার পক্ষ থেকে মীলাদ সংক্রান্ত কিছু প্রমাণ উদঘাটন করতঃ জানতে চাইলে আমি তা লিখার মনস্থ করি। যেহেতু জেনে শুনে কোন বিষয় গোপন করা যে মহা অপরাধ তা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে উক্ত বিষয়ে কলম চালনাকে দায়ীত্ব মনে করি। আল্লাহ পাকের নিকট এ প্রার্থনা জানাই, তিনি যেন যথাযতভাবে উক্ত বিষয়ে লিখার শক্তি দান করেন। (আমীন) 


মীলাদ মাহফিল বৈধ হওয়ার যুক্তি নির্ভরদলীল সমূহ 


১। আমরা হুযূরে পাক (ﷺ) এর জন্মানুষ্ঠান, এমনকি মীলাদ মাহফিলে তাঁর জীবনী আলোচনা করা, শ্রবন করার উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া, সালাত ও সালাম পাঠ করা, প্রশংসা গাওয়া, শ্রবন করা, খানা খাওয়ানো, উম্মতের হৃদয়ে আনন্দ জাগানো ইত্যাদি বিষয় গুলোকে বৈধ বলে মনে করি। 

২। মীলাদ মাহফিলকে কেবল বিশেষ কোন রাত্রে বা দিনে পালন করা হলে আমরা তাকে সুন্নাত বলিনা বরং যারা তার বিশ্বাসী প্রকৃত পক্ষে তারাই আহলে বিদআতী, ধর্মে নতুন বিষয় উদ্ভাবনকারী। 


কেননা হুযূরে পাক (ﷺ) এর আলোচনা এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখা নিদির্ষ্ট নয় বরং যে কোন সময়ে তা করা যায় তা সকল উম্মতে মুহাম্মদীর উপর ওয়াজিবও বটে। নবী পাকের আলোচনায় স্বীয় আত্মা পরিপুর্ণ করাও ওয়াজিব। বিশেষত: নবী করীম (ﷺ) এর আগমনের মাস তথা মাহে রবিউল আউয়াল আসলে ঈমানদারগণ মানুষকে তার প্রতি অগ্রসর হওয়ার মানসে আহবান করা বা অনুষ্ঠান করিয়ে মীলাদ মাহফিলের সকল ফয়েজ ও বরকত উপলদ্ধি করানো উচিত। 


মুসলমানকে অতীত ও বর্তমান বিষয়ে এমনকি যারা উপস্থিত থাকবে তারা অনুপস্থিতগনের অবহিত করবে। 


৩। মীলাদ মাহফিল সহ পূবোর্ক্ত নেক কর্ম মুলক কাজ পালন করা আল্লাহর দাওয়াত প্রচারের সুবৃহৎ উসিলা। মানুষের জন্য তা স্বর্ণালী যোগ বিধায় তার জন্য তা পরিহার করা উচিত নয়। এবং প্রত্যেক আহবানকারী উলামায়ে কেরামদের জন্য আবশ্যক যে, তারা যেন মীলাদ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতিকে হুযূরে পাকের আলোচনা, তাঁর চরিত্র, কৃতিত্ব, শিষ্ঠাচারীতা, ন্যায় পরায়নতা, উদারতা, জীবনী আলোচনা, মুয়ামালাত, মুআশারাত ও ইবাদত বিষয়ে লোকদের জানিয়ে দেয়া। তাদেরকে নছীহত মুলক কথা বার্তার মাধ্যমে নেক ও কল্যানের পথে পরিচালিত করা এবং বিদআত, শিরকী ফিৎনাহ ফাসাদ, মুছিবত থেকে বেচে থাকার ভীতি প্রদর্শন করা। 


আর আমরা সুন্নীরা আল্লাহর করুনায় সার্বাক্ষণিক ভাবেই এ কাজের আহবান করে আসছি এবং মুসলিম সমাজকে এর প্রতি উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিচ্ছি। তাতে আমাদের ব্যক্তিগত কোন সার্থ নেই বরং আমরা তাঁকে আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের এক পবিত্র ও বিশাল উসিলা হিসেবে মনে করি। 

অতএব, জেনে শুনে যারা নবী পাকের ধর্মের কোন ফায়দা লাভ করতে চায়না তারা সমপূর্ণ ভাবেই মীলাদ মাহফিলের সকল কল্যান রহমত ও বরকত হতে বঞ্চিত থাকবে। 



মীলাদ মাহফিল জায়েয হওয়ার দলীলসমুহ


১। মীলাদনুষ্ঠান পালন করা হুযূরে পাক (ﷺ) এর প্রতি আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করার এক উত্তম রীতি। এ আনন্দ ও খুশী জাহেরের দ্বরুন কুখ্যাত কাফের আবু লাহাব ও উপকৃত হয়েছে। যেমনঃ বোখারী শরীফে এ প্রসঙ্গে এসেছেঃ 


انه خفف عن ابى لهب كل يوم الا ثنين سبب عتقه لثو يبة جاريته لما بشرته بولادة المصطفى صلى الله عليه وسلم- 


অর্থাৎ কুখ্যাত আবু লাহাব হতে প্রতি সোমবার জাহান্নামের অগ্নি হালকা করা হয়, যেহেতু তার কৃতদাসী সুয়াইবিয়া কর্তৃক ভাতিজা মুহাম্মদ এর আগমনের সংবাদ জানানোর কারণে তাকে মুক্ত করে দিয়েছিলো। একথা কাব্যাকারে উপস্থাপন করেছেন হাফিজ শামছুদ্দিন মুহাম্মদ বিন নাছির দিমাশকী (رحمة الله) 

 

اذا كان هذا كافرا جاء ذمه * بتبت يداه فى الجحيم مخلدا- 

اتى انه فى يوم الاثنين دائما * يخفف عنه للسرور باحمدا- 

فماالظن باالعبد الذى كان عمره * با حمد مسرورا ومات موحدا 


অর্থাৎঃ আবু লাহাব কাফের হওয়ায় তার নিন্দায় সুরা লাহাব এমর্মে অবর্তীণ হয়েছিল যে, সে চির জাহান্নামী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার ব্যাপারে অত্যাশ্চর্য একটি ঘটনা আছে যে, প্রতি সোমবার তার থেকে প্রজ্জলিত অগ্নিশিখা হালকা করা হয়, কেবল আহমদী শুভাগমনের খুশী প্রকাশের দ্বরুন। তাহলে ঐ ব্যক্তির বেলায় কি অবস্থা হবে, যে সুদীর্ঘ জীবনে আহমদী শুভাগমনে খুশী যাহের করে একত্ববাদে মৃত্যু বরণ করে। রাসূলে পাক (ﷺ) নিজেই নিজের আগমনের দিনকে অত্যধিক সম্মান করতেন এবং এদিবসে তাঁর প্রতি খোদা প্রদত্ত সমুহ নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতেন। যারা এভাবে শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে তিনি তাদেরকে মর্যাদায় ভুষিত করবেন। নবীদের জন্মানুষ্ঠানের শুকরিয়াকে কোন সময় রোজা পালনের মাধ্যমেও করা হতো্ যেমনঃ হাদীস শরীফে হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস এসেছে, তিনি বলেছেনঃ 


ان رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ قَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ


অর্থাৎঃ হুযূরে পাক (ﷺ)কে সোমবার দিনের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন: এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনে আমার উপর প্রথম কোরআন অবর্তীণ হয়। ইমাম মুসলিম (رضي الله عنه) এ হাদীসটি সহীহ মুসলিম শরীফের কিতাবুস সিয়াম অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন। 


আলোচ্য হাদীস হুযূরে পাকের মীলাদানুষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে থাকে। তবে মীলাদ অনুষ্ঠানের বিভিন্ন আকৃতি থাকলেও মূল অর্থ ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন তাতে রোজা দ্বারা পালন করা হোক বা খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে হোক, যিকরের আলোচনা মাহফিল হোক বা নবী (ﷺ) এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠের মাধ্যমে হোক অথবা মাহফিলের আয়োজন করে তাঁর শামায়েল শরীফ শুনানোর মাধ্যমে হোক তাতে কোন বৈপরিত্ব নেই। 


৩। হুযূরে পাকা (ﷺ) এর আগমনের খুশী যাহের করা পবিত্র কুরআনে পাকের নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা নির্দেশিত। 


মহান আল্লাহ পাকের বাণীঃ 


قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ


অর্থাৎঃ বলুন হে রাসূল! আল্লাহর ফজল ও করুনা এ দুটো দ্বারা তারা যেন খুশী যাহের করে। অতএব, মহান আল্লাহ পাক আমাদরেকে তাঁর রহমত দ্বারা খুশী যাহের করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ই হচ্ছেন সর্বোত্তম রহমত। যার প্রমাণ মিলে নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমাতে وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ অর্থাৎঃ আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি। 


৪। হুযূরে পাক (ﷺ) অতীত যুগের সময়োপযোগী বড় বড় ধর্মীয় ঘটনাসমুহ বর্ণনা করতেন। এবং বলতেন যখন এ দিবস গুলো আসবে তখন তোমরা তার আলোচনা করবে, এর যথার্থ সম্মান করবে। রাসূলে পাক (ﷺ) এ স্মরনীয় মহিমান্বিত কার্যাবলী নিজেই পালন করেছেন। যেমন: হাদীস শরীফে এসেছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মদীনায় পৌছলেন, তখন সেখানকার ইয়াহুদী গোষ্টিকে দেখতে পেলেন যে, তারা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তিনি তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, আমরা ঐ দিনে রোজা রাখার কারণ হলো, যেহেতেু মহান আল্লাহ পাক ঐ দিনে আমাদের নবী মুসা (عليه السلام) কে নীল দরিয়ার বিশাল তরঙ্গে ফেরাউনের আক্রমনএ থেকে রক্ষা করেছেন এবং ফেরাউন সহ তার বাহিনীকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারেন। তাই এ নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ আমরা ঐ দিনে রোজা রাখি। তা শ্রবনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) , বললেনঃ


 نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ:، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ


অর্থাৎ: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরেকে লক্ষ্য করে বললেন: আমরা তোমাদের চেয়ে মুসা (عليه السلام) এর প্রতি অধিক হক্বদার। এর পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও রোজা রেখেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও রোজা রাখার নির্দেশ দেন। 


৫। প্রচলিত ধারায় উদযাপিত মীলাদ মাহফিলের আয়োজন রাসূলে পাকের যুগে ছিলনা বিধায় সুত্র মতে তা বিদআতের আওতায় পড়ে যায় কিন্তু শরীয়াতের দলীলের আওতাভুক্ত হওয়ায় তাকে বিদআতে হাসানাহ বলা হয়েছে। আর কাওয়ায়িদে কুল্লীয়্যা তথা সাধারন নিয়মানুযায়ী তা বেদআত হয়েছে সামাজিক গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তবে একক নিয়মানুযায়ী নয়, যা রাসূলে পাকের যুগে কোন একজন পালন করেছেন পরবর্তীতে তা ইজমায় পরিনত হয়ে গেছে। 


৬। মূলত: মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠের নিমিত্তে, যা নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ পাকের বাণীঃ 


إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً .


অর্থাৎ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর ফেরেস্তাগন তাঁর নবীর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। অতএব, হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করতে থাক। 


একথা শতস্ফুর্ত যে, শরঈভাবে যা কিছু পাঠ করা হয় মূল তা শরীয়তে দলীল হিসেবে বিবেচিত হয়। অতএব, নবী করীম (ﷺ) এর প্রতি যতই দরুদ শরীফ পড়া হবে ততই নুবুওয়তী ফয়েজ দিলে আসতে থাকবে, মুহাম্মদী সাহায্য অনবরত আসতে থাকবে। 


৭। মীলাদ শরীফ মূলত: হুযূরে পাকের জন্মালোচনাকে অন্তভূর্ক্ত করে এমনকি তাঁর মোজেযা, সীরাত এবং তাঁর পরিচয়কে অন্তভূর্ক্ত করে। অর্থাৎ: নবীজীর জন্মালোচনা, মোজেযা, সীরাত ও জীবনী আলোচনার সমন্বয়ে গঠিত মীলাদ। 


৮। আমাদের জন্য উচিত রাসূলে পাকের পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায় তাঁর গুনাবলী পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করা, তাঁর চরিত্র বর্ণনা করা। যেহেতু কবি সাহিত্যিকরা তাদেঁর কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে রাসূলে পাকের প্রশংসা জ্ঞাপন করে তাঁর নৈকট্যের ধারপ্রান্তে পৌছিয়েছেন পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের আমলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করেছেন। সুতরাং ব্যক্তি যদি প্রশংসা সুচক কবিতা আবৃত্তি করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে তবে যারা তাঁর পবিত্র শামায়েলসমুহ সংগ্রহ করে তার প্রতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কেন সন্তুষ্ট হবেন না? অতএব, বান্দাহ রাসূলে পাকের প্রতি সীমাতিরিক্ত সন্তুষ্টি ও ভালবাসা লাভের কারণে তাঁর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়ে থাকে। 


৯। রাসূলে পাক (ﷺ) এর মু’জিযা ও শামায়েল সমুহের পরিচয় জানা সীমাতিরিক্ত ভালবাসা ও পরিপর্ূণ ঈমানদারের লক্ষন। সাধারন মানব-মানবা সৌন্দর্যের প্রেমে আকর্ষীত হোক চরিত্রে বা গঠনে অথবা ইলমে আমলে, অবস্থায় অথবা আকীদাগত দিক থেকে কিন্তু হুযূরে পাক (ﷺ) এর চরিত্র মাধুর্য্যতা, সৌন্দর্যতা আকর্ষনীয়তা চেয়ে কোন বিষয় অত্যধিক সৌন্দর্যমন্ডিত ও সুরভীত নয়। অতিরিক্ত ভালবাসা ও পরিপূর্ণ ঈমান দুটি শরীয়ত কর্তৃক আদিষ্ট বিষয় বিধায় এ দুটিই নৈকট্য লাভের মূল উৎস। 


১০. রাসূলে পাকের তা’যীম তাকরীম করা শরীয়ত কর্তৃক প্রবর্তীত। বিশেষত: তাঁর আগমনের দিনে আনন্দ উল্লাস-খুশী যাহের করা, ভূজ অনুষ্ঠান করা, যিকরের মাহফিল করা, দরীদ্রদের খাদ্যদান করা হচ্ছে সর্বোত্তম তা’যীম, তাকরীম, আনন্দ, উল্লাস ও খুশী যাহের এবং আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার নামান্তর। 


১১। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জুমআর দিনের ফজিলত ও বৈশিষ্ট বণর্না করত: বললেন এ দিনে হযরত আদম (عليه السلام) জন্ম গ্রহণ করেন অর্থাৎ: এ দিনে তিনি অস্তিত্ব জগতে ফিরে আসেন বা তাঁর দেহ মোবারক তৈরী করা হয়। যে মোবারক সময়ে জন্মগ্রহণ করেছেন তা দ্বারা সাব্যস্থ হলো যে, নবীগনের আগমনের দিনই হচ্ছে মীলাদ অনুষ্ঠানের দিন। যদি তাই হয়, তবে যে দিন নবীউল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, মুহাম্মদ (ﷺ) জন্ম গ্রহণ করেছেন, সে দিনকে কেন আমরা ঈদ হিসেবে পালন করবো না। তা মূলত: শরীয়ত সম্মত ও যুক্তি সঙ্গত।


১২। মীলাদ শরীফ এমন একটি কাজ যাকে উলামায়ে কেরাম ও সকল মুসলমানগন উত্তম বলে রায় দিয়েছেন, যা শরীয়তের পঞ্চম দলীল মুস্তাহসান হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুসলিম জনতা তা পালন করে আসছে এবং প্রতিটি দেশে তার আমল প্রবাহমান হয়ে আসছে। 


আর উক্ত প্রমাণ হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) কতৃর্ক নিন্মে বর্ণিত হাদীসে মাওকুফ সুত্রে বর্ণিত হওয়ায় তা শরীয়ত সিদ্ধ। 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণীঃ 

 

فَمَا رَأوهُ الْمُؤْمِنُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللهِ حَسَنٌ ، وَمَا رَآهُ قَبِيحًا فَهُوَ عِنْدَ اللهِ قَبِيحٌ.


অর্থ: মুসলমান উলামায়ে কেরামগন যেটাকে উত্তম বলে মনে করেন, তা আল্লাহর নিকট উত্তম বলে বিবেচিত। অপর দিকে তারা সেটাকে নিকৃষ্ট বলে রায় দিয়েছেন, তা আল্লাহর কাছেও নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত। ইমাম আহমদ বিন হাজার (رحمة الله) তা বর্ণনা করেছেন। 


১৩। মীলাদ মাহফিলে হুযূরে পাকের যিকরের বৈঠক, সাদক্বা খায়রাত, প্রশংসা ও তা’জীম কিয়াম প্রদর্শন করা হয়ে থাকে বিধায় তা সু্ন্নাত। আর উক্ত কার্যাদী শরীয়ত কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রশংসনীয়। এবিষয়ে বহু বিশুদ্ধ হাদীসসমুহ বর্ণিত আছে এবং উক্ত আমলের প্রতি উদ্ভুদ্ধ হওয়ার ও উৎসাহ দিয়েছে। 


১৪। মহান আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমানঃ 


وَكُـلاًّ نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاء الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ 


অর্থাৎ: রাসূলগণের সংবাদ মধ্যকার কিছু কাহিনী আমি আপনার নিকট বর্ণনা করেছি, যাতে করে এর দ্বারা আমি আপনার অন্তকরণকে সুদৃঢ় করতে পারি। এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়ে গেলো যে, রাসূলগনের কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করার হেকমত হচ্ছে মূলত: হুযূরে পাক (ﷺ) এর অন্তকরণকে সুদৃঢ় রাখা। যদি তাই হয়, তবে আমরা ও আজ নবীগণের সংবাদ জানার মাধ্যমে আমাদের হৃদয় সুদৃঢ় রাখার প্রত্যাশী। আর এক্ষেত্রে সকল নবীগণের তুলনায় আমাদের নবী (ﷺ) এর আলোচনা জিন্দা রাখার মাধ্যমে আমাদের ক্বলব সুদৃঢ় রাখবো। তা ই যুক্তি নির্ভর কথা। 


১৫। সলফে সালেহীনগণ যে কাজ করেননি বা যেটি ইসলামের প্রাথমিক যুগেও ছিলনা সেটা নিকৃষ্ট ও নিন্দনীয় বেদআত বটে। এ ধরনের কাজ করা সম্পুর্ণ হারাম বরং তাকে অস্বীকৃতি জানানোও অত্যাবশ্যক। আর যেগুলো শরঈ দলীলের উপর গঠিত হয়েছে তা মেনে নেয়া ওয়াজিব। যেমনঃ কোন কোনটি ওয়াজিব। কোনটি হারাম, যা মাকরূহের উপর গঠিত তা মাকরূহ, যা মুবাহ তা মুবাহ, অথবা কোনটি মুস্তাহাব হলে মুস্তাহাব হিসেবে পরিগণিত হবে। 



এরপর উলামায়ে কেরামগন বেদআতকে মোট পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। যে গুলো হচ্ছে: 


১। ওয়াজিব বেদআতঃ-যেমন : কোরআন হাদীস ও আরবী ভাষা জানার নিমিত্বে নাহু-ছরফ শিক্ষা করা বাতীল পন্থীদের দাঁতভাঙ্গা জাওয়াব দেয়া। 


২। মানদ্বুব বেদআতঃ- যেমন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, গগন চুম্বী মিম্বারের উপর আযান দেয়া, উত্তম কাজ যা প্রথম যুগে সুচীত হয়নি। 


৩। মাকরূহ বেদআত:- যেমন: মসজিদসমুহ সীমাতিরিক্ত কারুকার্য করা, কিতাব বাধাই করা। ইত্যাদি। 


৪। মুুবাহ বেদআত:- খাওয়া, পান করার প্রচুর্যতা প্রশান্ততা ও প্রসস্থ জায়গা তৈরী করা। 


৫। হারাম বেদআত- যেমন: যা নতুন আবিস্কৃত কিন্তু কুরআন হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং সাধারণভাবে শরঈ দলীল তাকে গ্রাহ্য করেনা যেহেতু তা শরয়ী আওতায় পড়েনি। 


১৬। যে বিষয় ইসলামের প্রথম যুগে সমাজবদ্ধভাবে বিন্যস্ত ছিলনা কিন্তু এককভাবে তার অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল তা ও শরীয়তে গ্রাহ্য। কেননা শরীয়তের আওতায় যা প্রতিষ্টিত হয়ে যায়, তা এককভাবে হলেও মূলত: তা শরীয়ত কর্তৃক প্রবর্তীত। তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।


১। প্রত্যেক বেদআত আবার হারাম নয়। কেননা যদি সকল বেদআত হারাম হয়ে যায়, তবে হযরত আবু বকর, ওমর ও যায়েদ (رحمة الله) গনের আমলে কুরআন মযীদ সংরক্ষণ করা হারাম হয়ে যেতো, যখন সাহাবায়ে কেরামগনের মধ্যকার কিছু সংখ্যক হাফিজে কুরআন ও কারীগনের ইন্তেকালে কুরআনের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হওয়ার আশংকায় তা গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এবং হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর আমলে তিনি একই ইমামের পিছনে তারাবীহের ২০ রাকাত নিন্মোক্ত বাণী نعمت البدعة هذه (কতইনা উত্তম বেদআত) তা দ্বারা সুন্নাত সাব্যস্থ করেছিলেন তাও হারাম হয়ে যাবে। মানুষের সামগ্রীক ফায়দা সম্বলিত সমস্ত গ্রন্থ ভান্ডার সমুহ হারাম হয়ে যাবে, আর আমাদের উপর আবশ্যক হয়ে যেতো কাফেরদের সাথে তীর বর্শা দ্বারা যুদ্ধ করা আবার তারাও আমাদেরকে গুলি, কামান তোপ, যুদ্ধ ট্যাংক উড়োজাহাজ, ডুবোজাহাজ, সাবমেরিন ও নৌবহর দ্বারা হামলা করতো। মিনারার উপর আযান দেয়া হারাম হয়ে যাবে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা কেন্দ্র (ক্লিনিক) ত্রানসামগ্রী এতীম খানা লঙ্গর খানা জেলখান্ এগুলো সবই হারাম হয়ে যেতো। 


এতএব, যে সমস্ত উলামায়ে কেরামগন كل بدعت ضلالة (প্রত্যেক বেদআত গোমরাহী) দ্বারা বেদআত সাইয়্যিয়া উদ্দেশ্য নিয়েছেন এবং বলেছেন যে, সাহাবা ও তাবেঈনগনের আমলে যে সকল বিষয় আবিস্কৃত হয়েছে এবং তা রাসূলে পাকের আমলে বিদ্যমান ছিলনা বিধায় তা বেদআত। এর প্রতি উত্তরে আমরা বলবো আমরাতো বর্তমান যুগে এমন অনেক মাসআলাসমুহ উদগাঠন করেছি যা পূর্ববর্তী আমলে ছিলনা। যেমন: তারাবীহের নামাজের পর আমাদের দেশে শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদের নামাজ জামাত বদ্ধ হয়ে আদায় করি উক্ত রাত্রে সমস্ত কুরআন খতম করা হয়, খতমে কুরআনের দোয়া দীর্ঘভাবে পাঠ করা হয়, হারামাইন শরীফাইনের ইমামদ্বয় কর্তৃক রামদ্বান শরীফের ২৭ তারিখ তথা লাইলাতুল কদরের রজনীতে খুতবা পরিবেশন করা, এবং তাহাজ্জুদের নামজের জন্য একজন আহবানকারী কর্তৃক এ বলে আহবান করা صلاة الليل اثابكم الله ইত্যাদি। এগুলোর কোনটিই হুযূরে পাকের আমলে প্রচলিত ছিলনা এমনকি পরবর্তী সাহাবী যুগেও ছিলনা। তাহলে আমাদের ঐ ধারাবাহীক আমল বেদআত হয়ে যাবে কি? এবার বলতে হবে যে, এগুলো বেদআত কিন্তু বেদআতে হাসানাহ বা উত্তম বেদআত। 


১৮। ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন এমন কতগুলো বিষয় উদ্ভাবন হল, যা শরীয়তে মোটেই গ্রাহ্য নয় বা কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াসের সম্পূর্ণ বিপরীত, তা হবে বেদআতে দ্বালালাহ বা ভ্রান্ত বেদআত। আর যেগুলো সত্য ও কল্যানের উপর ভিত্তিকরে প্রবর্তীত হয় অথচ এগুলো শরীয়তের চারটি মূলনীতির বিরোধী নয় তবে তা সন্দেহাতীতভাবে শরীয়ত সিদ্ধ ও প্রশংসীত। ইমাম ইজদুদ্দীন বিন আব্দুস সালাম ও ইমাম নব্বীদ্বয় ও তাকে সর্মথন করেছেন এবং এ আমল সমূহ প্রবাহমান রেখেছেন। অনূরূপ ইমাম ইবনুল আছীর স্বীয় গ্রন্থে বিদআত অধ্যায়ে বেদআতে হাসানা বলে মন্ত্যব্য করেছেন। 


(১৯) শরীয়ত বিরোধী উদ্ভাবনা ছাড়া যেগুলো শরীয়তের আওতায় পড়ে এবং জনগন তাতে অস্বীকার করেনা, প্রকৃত পক্ষে তা ধর্মের অন্র্Íভুক্ত। 

কোন কোন গুড়াপন্থিরা বলে থাকে যে, পূর্ববর্তী আমলে যা ছিলনা বা যে কাজের সর্মতন ছিলনা থাকে কোন অবস্থাতেই দলীল হতে পারেনা বরং তা শরীয়তে তা অগ্রাহ্য ও তাদের এহেন যুুক্তি সম্পুর্ণ অযৌক্তিক ও অবান্তর বৈ কিছুই নয়। কেননা হুয়ূর পাক (ﷺ) প্রকৃত বেদআত উদ্গাঠনকারীকে সুন্নাত ও এর প্রচলনকারীকে প্রতিদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। যা নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা প্রণিধান যোগ্য। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান- 


مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ .


অথার্ৎ- যে ব্যক্তি ইসলামে একটি উত্তম রীতি প্রর্বতন করতঃ এর প্রতি আমল করবে তার আমল নামায় যারা এর প্রতি আমল করবে তাদের সমপরিমান প্রতিদান দান করা হবে। অথচ আমল কারীদের আমল নামা হতে সরিষা পরিমান ছাওয়াব হ্রাস করা হবেনা। ইমাম ইযযুদ্দীন বিন আব্দুস সালাম ও ইমাম নববীদ্বয় ও তাকে সমর্থন করেছেন এবং এ আমল গুলো প্রবাহমান রেখেছেন। অনুৃরুপভাবে ইমাম ইবনুল আছির স্বীয় গ্রন্থের বেদয়াত অধ্যায়ে বেদআতে হাসানা বলে মন্তব্য করেছেন। 


২০। মীলাদ মাহফিল হচ্ছে মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ) এর সকল আলোচনা জীবিত রাখার এক উত্তম মাধ্যম। আর আমাদের দৃষ্টিতে ইসলামে তা প্রবর্তীত ও উত্তম কাজ। কেননা তুমি লক্ষ্য কর হজ্জের বিধি বিধানের দিকে। এগুলো মুসলমানরা বারং বার পালন করে আসছে তার কারণ কি? মূলত: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মানীয় ও প্রশংসনীয় ঘটনা আল্লাহর নিদর্শন গুলোর স্মৃতি চারণ করা। যেমন: সাফা মারওয়া পাহাড়ে দৌড়া দৌড়ী করা, পাথর নিক্ষেপ করা, মিনাপ্রান্তরে জবেহ করা ইত্যাদি কাজসমুহ অতীত ঘটনা ও নিদর্শনসমুহ বিধায় বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুসলমানগন বাস্তবে হজ্ব পালনের মাধ্যমে এ নিদর্শন গুলোর স্মৃতি চারন করত: জিন্দা রাখে। 


২১। মীলাদ মাহফিল শরীয়ত সম্মত হওয়ার ব্যাপারে আমরা পূর্বে যে সমস্ত বৈধ যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছি তা কেবল মাত্র মীলাদে মুস্তফা (ﷺ) এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে যে সমস্ত মীলাদ মাহফিলে এমন র্গহীত নিকৃষ্ট ও নিন্দনীয় কাজ হয় যে গুলোর প্রতি ঘৃণা করা আবশ্যক যেমন: নারী পুরুষের সংমিশ্রন, হারাম কাজে মগ্ন হওয়া, সীমাতিরিক্ত অপচয় করা যেগুলোর প্রতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সন্তুষ্ট নন এগুলো নি:সন্দেহে হারামও নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। 


তবে একটি বিষয়ের জওয়াব স্পষ্টভাবে দেয়া আবশ্যক যে, যদি কেউ পুবোর্ক্ত নিষিদ্ধ ও নিকৃষ্ট কাজ মীলাদ মাহফিলে সংমিশ্রন করে, তবে তার দ্বারা স্থায়ীভাবে হারাম সাব্যস্ত হয়না। কেননা কোন বৈধ বিষয়ের সাথে অবৈধ বিষয় মিশ্রন হলে অস্থায়ীভাবে তা হারাম হতে পারে কিন্তু মুলকে হারাম করেনা। 


অতএব, তাতে প্রতীয়মান হলো যে, মীলাদ শরীফে কোন অশ্লীল ও শরীয়ত গর্হীত কাজ হলে তখনই তা হারাম হবে অন্যতায় শরীয়ত সম্মত কাজের মাধ্যমে পালিত হলে তা সর্ব সম্মতি ক্রমে বৈধ ও শরীয়ত সম্মত কাজ বলে বিবেচিত হবে। 


লিখকঃ

মোহাম্মদ বিন আলাভী




Top