মোহাম্মাদ নাম করনের কারণ 
📚কিতাবঃ আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)
🖋️মূলঃ ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী (رحمة الله)


হুযূরে পাকের নাম মোহাম্মদ রাখার কয়েকটি কারন রয়েছে। তন্মধ্যে মায়ের স্বপ্নযুগে আদিষ্ট হওয়া অন্যতম। যেমন : এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে: 

وقال بعضى العلماء مقد الهم الله عذ وجل ان يسمعوه محمدا لما فيه من الصفات المحمودة يطابقالاسم المسمى وقد قيل الاسماء تنزل من السماء-

অর্থাৎ- কোন কোন উলামায়ে কেরামগনের মতে মহান আল্লাহ পাক তাঁদের (নবী পরিবারে) অন্তরে ইলহাম করেছিলেন, যাতে তারা নবজাতকের নাম রাখেন মোহাম্মদ। যেহেতু তাঁর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে হাজারও প্রশংসনীয় গুনাবলীর ভান্ডার যাতে নাম ও বাস্তবের সাথে সামঞ্জশ্য থাকে। আবার কেউ কেউ বলেন: হুযূরে পাকের পবিত্র নামসমুহ আকাশ হতে অবতারীত। যার বাস্তব প্রমাণ মিলে হাসসান বিন সাবেত (رضي الله عنه) এর চমৎকার কাব্য মালায়। তিনি বলেছেন: 

وضم الاله اسم النبى الى اسمه اذقال قى الخمس المؤذن اشهد 
وشق له من اسمه ليجله فذ والعرش محمود وهذا محمد- 

নিজ নামেতে যোগ করিলেন মোহাম্মদী নূর, 
ঐ শুনাযায় মোআযযীনের কন্ঠে সুমধুর 
তাঁর নামের অংশ দিলেন সম্মান দিবেন বলে। 
আরশপতি মাহমুদ তাই, মোহাম্মদ ভূমন্ডলে।

ইমাম সাখাবী (رضي الله عنه) বলেন: খাজা আব্দুল মুত্তালিব কর্তৃক নাতীর নাম মোহাম্মদ রাখার কারন মূলত: মহান আল্লাহর ইঙ্গিত অথবা তিনি জানতেন যে, তাঁর এ হের দৌহিত্র আল্লাহর কাছে এক বিশাল শানওয়ালা হবে। 


 মোহাম্মদ নাম করনে দ্বিতীয় কারন 
📚কিতাবঃ আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)
🖋️মূলঃ ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী (رحمة الله)

ইমাম আবু রাবে বিন সালিম আল কালায়ী (رضي الله عنه) বলেন: রাসূলে পাকের নাম ‘মোহাম্মদ’ রাখার দ্বিতীয় কারন সম্পর্কে উলামাযে কেরামগণ নিন্মোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করেন : 

زعموا انه رأى فى منا مه كان سلسلة من فضة خرجت من ظهره - بها طرف فى الماء وطرف فى الارض- وطرف فى المشرق وطرف فى المغرب- ثم عادة كانها ثجرة على كل ورقة منها نور- واذا اهل المشرق والمغرب يتعلقون بها- فقصها فعبرت له بمولود يكون من صلبه يتبعه اهل المشرق والمغرب ويحمده اهل السماء والارض فلذا ل سماءه به مع ما حدثته به امنة- 

অর্থাৎ- উলামায়ে কেরামগনের মতে এক বার খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) স্বপ্নে দেখলেন যে, রৌপ্য নির্মিত বিশাল একটি সিড়ি তাঁর পৃষ্ট হতে বের হয়ে এক অংশ আকাশে এক অংশ জমীনে, একাংশ প্রাচ্যে এবং আরেকাংশ পাশ্চাত্যে বিস্তৃত হয়ে পুন:রায় তা একত্র হয়ে একটি বিশাল বৃক্ষে পরিনত হয়ে গেছে যায়। বৃক্ষের প্রতিটি পাতায় পাতায় নূর বিদ্যমান রয়েছে। আর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য অধিবাসীরা বৃক্ষের প্রতিটি পাতায় লটকিয়ে আছে।

ঘটনাটি তিনি একগণক পাদী্রর কাছে ব্যক্ত করলে তিনি স্বপ্নের তাবীর করলেন এভাবে যে, একজন শানওয়ালা বাচ্ছা তাঁর পৃষ্ট হয়ে বেরিয়ে আসবে, ফলে সমগ্র প্রাচ্য ও প্রতিচ্ছ্যের অধিবাবাসীরা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে। 

আর একারনেই হয়তো তিনি নবজাতকের নাম মোহাম্মদ হিসেবে নাম করন করেন। 

উল্লেখ্য যে, মা আমেনা (رضي الله عنه) এর স্বপ্নের সাথে খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) এর স্বপ্নের হুবহু সামঞ্জশ্যতা পাওয়া যায়। 

অতএব, মোহাম্মদ ও আহমদ এ দুটো মহা পবিত্র নামদ্বয় কেবল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর, অন্য কারও নয়। যেমন এ সম্র্পকে পবিত্র কোরানে পাকের বাণী- 

وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ - مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ.

আয়াদ্বয় তাঁর বাস্তবতা প্রমাণ করে। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকীম নিশাপুরী (رضي الله عنه) স্বীয় মুস্তাদরাকে হাকীমে বর্ণনা করেন, হযরত আদম (عليه السلام ) আরশের ছায়ায় মোহাম্মদ (ﷺ) এর নামাঙ্কিত দেখে তাঁরই উসিলা নিয়ে প্রার্থনা জানালে মহান আল্লাহ পাক তাঁকে ক্ষমা করে দেন এবং আদম (عليه السلام ) কে সম্বোধন করে বলেন: لو لامحمد لما خلقتك (যদি মোহাম্মদ (ﷺ) না আসতেন তবে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতামনা। তাছাড়া হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত لولاك لما خلقت الافلاك অর্থাৎ:- হে নবী! যদি আপনি না আসতেন তবে সমগ্র সৃষ্টজীবকে এ নিখীল ধরনীর বুকে সৃষ্টি করতামনা। উক্ত হাদীসটি নি:সন্দেহে বিশুদ্ধ। 

শায়খুল মাশায়েখ শায়েখ মোহাম্মদ আলী আল মালিকী (رضي الله عنه) এ হাদীসের সত্যতায় বিশেষ একটি রেসালাহ প্রনয়ন করেন। (১নং হাশিয়া দ্র:) 
যদিও ছানাআনী এককভাবে এ হাদীসকে মাওজু বলে মন্তব্য করেন তবুও সকল মোহাদ্দেসীনে কেরামগণ তাকে সহীহ বলে মতপোষন করেন। 

কাজী আয়াজ (رضي الله عنه) বলেন- احمد শব্দটি افعل এর ওযনে ইসমে তাফদ্বীলের সীগা, যা হামদের বৈশিষ্ট হতে অত্যধিক বেশিষ্ট পূর্ণ। محمد শব্দটি مفعل এর ওযনে এসেছে, যা হামদের চেয়ে ও সীমাহীন প্রশংসনীয়। অতএব মোহাম্মদ শব্দটি হামদের চেয়ে ও আরও অর্থপূর্ণ। 

তাই নিখীল দুনিয়ার সমস্ত মানব ইহকাল ও পর কালে অত্যধিক প্রশংসা করবে। এ এক্ষেত্রে তিনি হবেন সকল প্রশাংসাকারীগনের উর্ধ্বে সীমাহীন প্রশংসা জ্ঞাপনকারী। আর কেয়ামতের মহা সংকটে লেওয়ায়ে হামদের পতাকা কেবল মোহাম্মদ (ﷺ) এর হাতেই থাকবে, যাতে হামদের পরিপুর্ণতা অজির্ত হয়। এবং মোহাম্মদ (ﷺ) সেদিন ছাহেবে হামদ হিসেবে প্রশিদ্ধি লাভ করবেন। তাঁকে কৃত অঙ্গীকার অনুযায়ী মাকামে মাহমুদে পৌছানো হবে এবং তথায় প্রথম থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত তথা সমগ্র মাখলুকাতরা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে। আর মোহাম্মদ (ﷺ) এর সম্মানার্থে সে দিন প্রশংসার সমস্ত দ্বার উম্মোক্ত করে দেয়া হবে। যেমন : সহীহ বোখারী ও মুসলিম শরীফদ্বয়ে এসেছে- لم يعطى غيره অর্থাৎ:- সর্বগুনে গুনান্বিত মোহাম্মদ (ﷺ) ব্যতীত অন্য কাউকেও এগুনে গুনান্নিত করেননি। 

প্রকাশ থাকে যে, হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) এর উম্মতগণকে পুর্ববর্তী সমস্ত আসমানী গ্রন্থে হাম্মদীন বলে আখ্যায়ীত করা হয়েছে। 

এ বিশে­ষিত ধারায় মোহাম্মদ (ﷺ)কে পবিত্র কোরানে পাকে মোহাম্মদ ও আহমদ, নামে অভিহিত করা হয়েছে আর এ দুটি পবিত্র ইসমে জাতি নামের মধ্যে লুকায়ীত আছে আহমদী গুনাবলীর সীমাহীন অদ্ভুদ কৌশল ও নিদর্শনসমুহ। 

কথিত আছে যে, হুযূরে পাকের জীবদ্দশায় উক্ত দুটি নামে অন্য কেউই ছিলনা বরং তা থেকে অন্যকে দুরে রাখেন। আহমদ নামটি পূববতর্ীর্ সকল গ্রন্থে বিদ্যামান ছিল বিধায় সমগ্র নবীগণ স্বীয় জাতীর কাছে এ নামেরই সুসংবাদ দান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। 

এবং এ কৌশল অবলম্বনে হয়তো কারও নাম এনামে রাখা হয়নি বা কেউ রাখার স্পর্ধা দেখায়নি। যাতে করে মোহাম্মদী নামের সীমাহীন গুনাবলীর সাথে অন্যের গুনাবলী মিশ্রিত না হয়। আর আহমদী নামের অনূরূপ মোহাম্মদী নামের সাথে ও তাল মিলিয়ে সমগ্র আরবও অনারবের কেউই রাখেনি এমনকি তাঁর অস্তিত্ব প্রকাশ পাওয়ার পুর্ব মুর্হুত পর্যন্তও না। 

তাঁর আবির্ভাবের পূর্ব মুহুর্তে আরবের অতিন্দ্রিয়বাদীরা তাঁর আগমনের বার্তা এভাবে পরিবেশন করেছেন যে, অতিশীঘ্রই আরবের কুরাইশ বংশে মোহাম্মদ নামে এক নবজাতকের শুভাগমন ঘটবে। এ সুবাদে আরবের কোন কোন সম্প্রদায়রা তাদের ছেলেদের ঐ নামে নাম করন করে। তাদের প্রত্যাশা ছিল যে, সে হবে একমাত্র মোহাম্মদ। 
Top