❏ ঘটনা ১০:
বিকৃত চেহারা চাঁদের মত উজ্বল
হযরত শায়খ শিবলী (رحمة الله) বলেন, বায়তুল্লাহ্ শরীফ যিয়ারতের সময় আমি একবার এক যুবকের সাক্ষাত পাই। সে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্ধারিত দোয়া না পড়ে সর্বত্রই সে দরূদ শরীফ পাঠ করছিল। শিবলী (رحمة الله) বলেন, তুমি কি দরূদ শরীফ ছাড়া অন্য কোনো দোয়া পারতে পার না? তুমি সর্বত্রই দরূদ শরীফ পাঠ করছো কেন? যুবকটি বলল, আমি অনেক দোয়া মুখস্ত পারি। কিন্তু দরূদ শরীফের যে উপকার আমি নিজে লাভ করেছি অন্য কোন দোয়ায় তা পাইনি। তাই সর্বত্র দরূদ শরীফ পাঠ করছি।
হযরত শিবলী (رحمة الله) বললেন, ঘটনাটি কী আমাকে খোলে বল। অনেক বছর আগের কথা। আমি আর আমার বাবা হজ্বে আসছিলাম। বাগদাদে পৌছার পর আমার বাবা ভীষণভাবে জ্বরাক্রান্ত হলেন এবং কয়েকদিন পর মারা গেলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর তার মুখের আকৃতি শুকরের মত হয়ে গেল। আমি এ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। তার মুখের উপর একটি কাপড় টেনে দিলাম। কাউকে এ অবস্থা বলতেও পারছিলাম না। আবার একা একা দাফন করতেও পারছিলাম না। প্রচন্ড কষ্ট, চিন্তা ও দূর্ভাবনায় আমি উপুর হয়ে পড়েছিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতেও পারব না। আমি ঘুমের মধ্যে দেখি কি অসাধারণ সুন্দর এক পবিত্র মানুষের আগমণ। রূপময় সেই উজ্জলকান্তি পবিত্র আমার বাবার কাছে এলেন। মুখ থেকে কাপড় সড়িয়ে তার মুখে হাত বুলিয়ে দিলেন। আর এমনিতেই আমার বাবার চেহারা চাঁদের মত উঁজ্বল হয়ে উঠল। তারপর তিনি যখন চলে যেতে উদ্যত হলেন আমি তাকি জড়িয়ে ধরে তার পরিচয় জানতে চাইলাম। বড়ই বিপদে আপনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, তিনি আমি পাপীদের আশ্রয়, অপরাধীদের সুপারিশকারী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ)। এই কথা শুনেই আমি পবিত্র কদমে লুটিয়ে পড়লাম। কদমবুছি করলাম। তারপর আরয করলাম হে রাসূল (ﷺ) আমার বাবার মৃত্যুর সংবাদ আপনি কিভাবে পেলেন? আমি তো এই সংবাদ এখনো কাউকে দেইনি। ইরশাদ করলেন, তোমার বাবা প্রতি রাতে আমার প্রতি তিনশতবার দরূদ শরীফ পাঠ করত। আজ রাতে যখন তার দরূদ আমার কাছে পৌছায়নি, তখন আমি সেই ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আমার কাছে তোমার বাবার দরূদ শরীফ প্রতিদিন পৌঁছাত। তখন ফেরেশতা আমাকে বলল, সে তো আজ মারা গেছে এবং তার অবস্থা এই। একথা শুণে আমার খুবই দু:খ হলো। তাই চলে এলাম। অত:পর হুযুর (ﷺ) চলে গেলেন। তারপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফজরের নামাজ পড়লাম। দেখলাম সত্যিই আমার বাবার চেহারা চাঁদের মত উজ্জল হয়েগেছে। আরও দেখলাম লোক দলে দলে চারদিক থেকে ছুটে আসছে। যেন শহরে সব মানুষ ঢলে পড়েছে আমাদের দিকে। আমি ভেবে হয়রান হলাম। এদেরকে কে সংবাদ দিল। আমি অবশেষে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা আমার বাবার মৃত্যু এবং যানাজার সংবাদ কীভাবে পেলেন? তারা বলল, আমরা আকাশ থেকে একটি গায়েবী আওয়াজ শোনলাম। যেই ব্যক্তি স্বীয় পাপ মাফ করতে চায়, সে যেন অমুক মহল্লার অমুক স্থানে একজন লোক মারা গেছে, তার যানাজায় গিয়ে শরীক হয়।
অত:পর যুবক বলল- দরূদ শরীফের মহান এই মর্ম ও মর্যাদা আমি নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছি। একারণেই আমি অন্যসব দোয়া ছেড়ে এখন সর্বদা দরূদ শরীফই পাঠ করছি। একথা শোনার পর শায়খ শিবলী (رحمة الله) বললেন- তুমি বাবার এই খুটিটি আরও শক্ত করে ধর এবং কখনও ছেড়ে দিও না। ▶[জিকরে এলাহি-পৃ: ১০৪]
❏ ঘটনা ১১:
হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আহমদ ইবনে মনসুর رحمة الله عليه যখন ওফাত প্রাপ্ত হন, তখন একজন শীরাযবাসী তাঁকে স্বপ্নে দেখলেন-তিনি শীরাযের জামে মসজিদের মেহরাবে দাঁড়ানো। আর তাঁর পরনে ছিলো উন্নতমানের পোশাক। মাথার উপর মুক্তা খচিত তাজ শোভা পাচ্ছিলো। স্বপ্নে যে দেখেছে সে স্বপ্নদ্রষ্টা আরয করল, “হযরত কেমন আছেন?” তিনি বললেন, “আল্লাহ তা’আলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমার উপর দয়া করেছেন। আমাকে তাজ পরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন।” লোকটি বললো, “কি কারণে?” বললেন, আমি তাজেদারে মদীনা হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর উপর বেশি পরিমাণে দুরূদে পাক পড়তাম, বস্তুত: এই আমলটা কাজে এসেছে।”
▶(ইমাম সাখাবীঃ আল কাউলূল বদী, পৃ-২৫৪)