কিতাবঃ ফাযায়েলে দরূদ
লেখক, সংকলকঃ ড. মাসুম বিল্লাহ সানি
৯ম অধ্যায়: দুরূদ পাঠের অগণিত ফজিলত
❏ হাদিস ১-৮২:
❏ সাক্ষাত, বিদায়, কোন মজলিশে দুরূদ পাঠ
❏ রহমত নাজিল হয়
❏ ফেরেশতাগণ কর্তৃক দুরূদ প্রেরণকারীর জন্য দোয়া প্রার্থনা
❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকটবর্তী হয়ে শাফায়াত লাভ
❏ দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত
➠দোয়া আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে
➠প্রত্যেক দো'আ পর্দাবৃত থাকে
➠দুরূদের মাধ্যমে দোয়া কবুল হয়
➠কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে মুসাফাহা
❏ উম্মতের জন্য মাগফিরাত ও গুনাহের কাফফারা
❏ আশি বছরের গুনাহ্ মাফ
❏ জিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের পর দুরূদ পাঠ
❏ দুরূদ পাঠ উম্মতের জন্য পবিত্রতা
❏ অভাব ও বিপদাপদ দূরীভূত হয়
❏ কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ
❏ মিজানের পাল্লা ভারী
❏ আরশের ছায়াতলে অবস্থান
❏ কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ
❏ জান্নাত লাভ
❏ উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ সাওয়াব
❏ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ
❏ গোলাম আযাদ, হজ্জ্ব ও জিহাদের সমপরিমাণ সাওয়াব
❏ ৪০০ জিহাদের সওয়াব (প্রত্যেক জিহাদ ৪০০ হজ্জের সমান)
❏ ৭০জন ফেরেশতা সাওয়াব লিখতে থাকেন
❏ অযু করার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ
❏ কানে শব্দ হলে দুরূদ শরীফ পাঠ
❏ আযাব থেকে মুক্তি
❏ নিরাপদে পুলসিরাত পার
❏ চেহারার উজ্জ্বলতা ও দুরূদ পাঠের ঘটনা
❏ দুরূদ শরীফ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ বাণী
❏ দুরূদ পাঠের মাধ্যমে বংশধর কল্যাণপ্রাপ্ত হয়
❏ কোন কিছু ভুলে গেলে দুরূদ পাঠ।
সাক্ষাত, বিদায়, কোন মজলিশে দুরূদ পাঠ
❏ হাদিস ১:
ইবন হিব্বান (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ) বলেন, কিছু লােক যখন কোন এক মজলিসে একত্রিত হয় এবং আল্লাহর যিকির ও নবী করীম (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পড়া ছাড়া ঐ মজলিস ত্যাগ করে, তবে রােজ কিয়ামতে সেই মজলিস তাদের জন্য আফসােসের কারণ হবে। এমনকি যদিও সে সব লােক জান্নাতে প্রবেশ করে (কিন্তু তাদের অন্তরে সর্বদা আফসােস অনুভূত হবে)।
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইবনু হিব্বান, সহীহ, ২:৩৫২, নং-৫৯১।
(২) ইবনু আবি আসিম, কিতাবুয যুহুদ, ১:২৭।
(৩) মুনযিরী, তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২:২৬৩, নং-২৩৩১।
(৪) হাইছামী, মাওয়ারিদুয যামআন, ১:৫৭৭, নং-২৩২২।
(৫) হাইছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১০:৭৯, ।
❏ হাদিস ২:
তিরমিযি শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, "যে সকল লোক কোন মজলিশে বসে, আর তাতে আল্লাহ্ তাআলার যিকির করল না এবং তাঁর নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফও পাঠ করল না, কিয়ামতের দিন ঐ মজলিশ তাদের জন্য আফসোসের কারণ হবে (আল্লাহ্ তা'আলা) চাইলে তাদেরকে আযাব দিবেন, নতুবা ক্ষমা করে দিবেন।”
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৬৭৪ পৃ. হা/১৮২৬,
(২) তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ২৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৩৯১,
(৩) আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, ৯/১৪১ পৃ. হা/২৫৪১০,
(৪) ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৪/৪৭২ পৃ. হা/২৫৫৭,
(৫) হাইসামী, মাওয়ারেদুয যামান, হা/২৩২১,
(৬) মিশকাত শরীফঃ বাবে যিকিরিল্লাহ অধ্যায়ঃ হাদিস নং-২১৬৫
(৭) ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/৪৫৪ পৃ. ২/২৫।
(৮) ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৪ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।
❏ হাদিস ৩:
ইমাম ইসমাঈল কাযী (رحمة الله) হযরত আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,
"কোন গােত্র বৈঠক করে আর খাড়া হয়ে যায়, আর নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ না পড়ে। তাহলে এ মজলিশ তাদের আক্ষেপের কারণ হবে। আর যদি তারা জান্নাতে প্রবেশ করে, তাহলে সাওয়াব পাবে না।"
[নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, হা/১০২৪৩, ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৪ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী]
❏ হাদিস ৪:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে লোক নিজেদের মজলিশ থেকে আল্লাহ তাআলার যিকির এবং হুযুর (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা ব্যতীত উঠে যায়, তবে সে দুর্গন্ধময় লাশ থেকে উঠল।” (শুয়াবুল ঈমান, ২য় খন্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৫৭০)
রহমত নাজিল হয়
❏ হাদিস ৫:
আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
مَن صَلّي عَلَيَّ و احِداً صلَّي اللهُ عَلَيهِ عَشراً
যে কেউ আমার উপর একবার দূরুদ পড়ে মহান আল্লাহ তার উপর ১০ বার দূরূদ পাঠান।
তথ্যসূত্রঃ
ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন- আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ।
১.সহীহ মুসলিম, ১/৩০৬ পৃ. হা/৪০৮, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সালাত, সালাওয়াত আলান্নবী (আঃ)।
২.মুসনাদে আহমদ, ১৪/৪৪৪ পৃ. হা/৮৮৫৪,
৩.সুনানে নাসাঈ, ৩/৫০ পৃ. হা/১২৯৬ এবং
৪.ইমাম নাসাঈঃ আস-সুনানুল কোবরা, হা/১২২০,
৫.সুনানে আবি দাউদ, ২/৮৮ পৃ. হা/১৫৩০,
৬.সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৯০৬,
৭.ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৫ পৃ. হা/৬৮৪,
৮.খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৯১ পৃ. হা/৯২১,
৯.সুনানে তিরমিযি খঃ২ পৃষ্ঠা২৭০
ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) বলেন, এ হাদিসটি হাসান, সহীহ।”
১০.জালাউল আফহাম, ৫১ পৃ:, ইবনুল কাইয়ুম লিখেন,
- ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসাঈ (رحمة الله) তাদের সুনান কিতাবগুলোতে, ইবনে হিব্বান তার আস-সহীহ গ্রন্থে সংকলন করেন।
১১.মুসনাদে তাইয়াসী খন্ড,১ পৃষ্ঠা ২৮৩ হাদীস ২১-২২;
১২.ইমাম নববীঃ রিয়াদুস সালেহীন পৃষ্ঠা ৩৮১।
১৩.আসাবাবু আলতানযিল ওয়াহেদী পৃষ্ঠা ২৫০,
১৪.দূররিল মানসূরঃ সূয়ূতী খন্ড,৫, পৃৃঃ ২১৮,
১৫.তাফসীরে কুরতুবী, খন্ড,১৪ পৃষ্ঠা ২৯৪।
❏ হাদিস ৬:
হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে কেউ আমার প্রতি দুরূদ প্রেরণ করে, তার এ দুরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে এবং আমি তাকে দু’আ দিয়ে থাকি। উপরন্তু তার জন্য দশটি নেকী লেখা হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্রঃ
(ক.) মেশকাতুল মাসাবীহ,৩য় খন্ড,পৃ:নং-৫৩৪, ফাছলুছ ছানী অনুচ্ছেদ
(খ.) আল-মু’জামুল আওসাত,২য় খন্ড, পৃ:নং-১৭৮
(গ.) আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব,২য় খন্ড,পৃ:নং -৫৬৭-৬৮,যিকর ও দু’আ অধ্যায়,হাদীস নং-১৫,ইফাবা:
(ঘ.) মাজমা’উয যাওয়ায়েদ,১০ম খন্ড, পৃ:নং-২৫২, হাদীস নং-১৭২৯৭,দুরূদ পাঠ।
❏ হাদিস ৭:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
"...যে ব্যক্তি একবার আমার প্রতি দুরূদ সালাম পাঠ করে তার জন্য আল্লাহ তাআলা দশটি রহমত বর্ষণ করেন।’’
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম মুসলিম : আস সহীহ : ১/১০২পৃ. কিতাবুস সালাত : হাদীস : ৩৮৪,
২.খতীব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১৪০ : হাদীস : ৬০৬,
৩.আবু দাঊদ : আস সুনান : ১/৩৫৯পৃ. কিতাবুত সালাত : হাদীস : ৫২৩,
৪.নাসাঈ : আস-সুনান : কিতাবুল আযান, ২/২৫পৃ. হাদীস : ৬৭৮,
৫.ইবনে মাজাহ : আস সুনান : ১/৮২পৃ .হাদিস : ৭১০,
৬.সুয়ূতী : জামেউস সগীর : ১/৫৫পৃ হাদীস : ৭০২,
৭.ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : কিতাবুস সালাত, ৫/৫৪৭পৃ হাদীস : ৩৬১৪।
❏ হাদিস ৮:
হযরত আবু তালহা আল আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি হযরত নবী করিম (ﷺ) এর ওপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে , আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার ওপর দশটি রহমত নাযিল করেন, দশটি উচ্চ মর্যাদা দান করেন , আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হয় এবং দশটি গুনাহ মার্জনা করা হয় ।
তথ্যসূত্রঃ
১.আহমদ ইবনে হাম্বল, আল মুসনদ, খ . ২৬ , পৃ . ২৭২ , হাদীস : ১৬৩৫২।
২.ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ হৃদয়ের টানে মদিনার পানে, পৃ ৩৪৯।
৩.তিরমিযী, ২য় খন্ড, ২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৪, মুসলিম, ২১৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪০৮
❏ হাদিস ৯:
সাহল ইবনে সাদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত "রাসূল (ﷺ) প্রবেশ করলে আবু তালহা (رضي الله عنه) তাঁর নিকট দ্রুত পৌঁছলেম এবং তাঁকে অভ্যর্থনা জানালেন এবং বললেনঃ
আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চেহারা আনন্দিত দেখতে পাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ জিব্রাইল সবেমাত্র আমার নিকট এসেছিলেন ও বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! যে কেউ একবার আপনার উপর দূরুদ পড়ে মহান আল্লাহ তাকে ১০ টি হাসানাহ পুরস্কার দেন, ১০ টি অপকর্ম ও বদ থেকে তাকে মুক্ত করেন এবং তাকে ১০ ধাপ উপরে তুলেন।"
তথ্যসূত্রঃ
▪ কানযুল উম্মাল খন্ড,১, পৃষ্ঠা ৪৩৬ ,৪৪৮,খন্ড,২ পৃষ্ঠা ১৭৯।
▪ এ রেওয়াতেটি সাঈদ ইবনে ওমর আনসারী (رضي الله عنه)ও আবু বারদা বিন নাইয়র (رضي الله عنه)ও আনাস (رضي الله عنه) থেকে ও বর্ণিত হয়েছে।
▪ কানযুল উম্মল খন্ড,১,পৃষ্ঠা ৪৩৮-৪৩৯ এবং ৪৪৮-৪৪৯
▪ সূনানে নাসাঈ খন্ড,৩, পৃষ্ঠা ৫০ কিতাবুস সালাত। অধ্যায় মাহানবীর (ﷺ) উপর দূরুদের ফযিলত ।
▪ ফারায়িদুল সাযাতিন,খঃ১ পৃষ্ঠা ২৪,
▪ তারিখে বাগদাদ খঃ৮ পৃষ্ঠা ২৮১।
❏ হাদিস ১০:
হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) ও
হযরত বারা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
من صلى على واحدة صلى الله عليه عشر صلوة وحطت عنه عشر خطيات ورفعت له عشر درجات –
“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার উপর ১০ টি রহমত নাযিল করেন, তার ১০ টি গুনাহ মুছে দেন এবং তার ১০ টি স্তর সমুন্নত করে দেন।"
ইমাম হাকিম (رحمة الله) এ হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন।
তথ্যসূত্রঃ
(১) সুনানে নাসাঈ, কিতাবুস সাহু, বাবুল ফাদ্বলে ফিস সালাতে আলান্নাবী, ৪: ৫০, নং: ১২৯৭।
(২) ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ১:২২৪, নং: ৬৪৩। (৩) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, মুসনাদ, ৩:১০২, নং: ১২০১৮।
(৪) ইবনু আবি শাইবাহ, মুসান্নাফ, ২:২৫৩, নং: ৮৭০৩।
(৫) ইমাম বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান, ২:২১০, নং: ১৫৫৪।
(৬) ইমাম হাকিম, মুস্তাদরাক লিল হাকিম, ১: ৭৩৫, নং: ২০১৮।
(৭) সুনানে নাসাঈ,আস-সুনানুল কোবরা, ২/৭৭ পৃ. হা/১২২১, হা/১০১২২,
(৮) মেশকাত শরীফ-৮৭ পৃষ্টা,
(৯) তিরমিজি শরীফ, কানজুল উম্মাল,
(১০) মুফতি আমজাদ আলী আজমীঃ বাহারে শরিয়ত ৩য় খন্ড, সাকলাইন প্রকাশনী।
(১১) যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসুল মুখতার, ৪/৩৯৭ পৃ. হা/১৫৬৮, তিনি বলেন-“এ হাদিসটির সনদ সহীহ।”
❏ হাদিস ১১:
ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) ও ইমাম দারেমি (رحمة الله) সংকলন করেন,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে তালহা (رضي الله عنه) তিনি তার পিতা আবু তালহা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা হুযূর (ﷺ) আমাদের নিকট তাশরীফ আনলেন, তখন তাঁর চেহরা মােবারকে খুশীর নিদর্শন পরিলক্ষিত হতেছিল। তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরাঈল (عليه السلام) এসে বলেছেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ) ! আপনার প্রভু বলতেছেন যে, এটা কি আপনার সন্তুষ্টির বিধান করবাে না যে, আপনার যে কোন উম্মত আপনার প্রতি ১বার দুরূদ শরীফ পাঠ করলে নিশ্চয়ই আমি তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবাে? এবং আপনার উম্মতের যে কেহ আপনার উপর একবার সালাম প্রেরণ করলে আমি তার উপর ১০ বার শান্তি বর্ষণ করবাে।”
তথ্যসূত্রঃ
(১) নাসাঈ, সুনান, কিতাবুস সাহু, বাবুল ফাদ্বলে ফিস সালাতে আলান্নাবী (ﷺ), ৩: ৫০, নং: ১২৯৫।
(২) দারিমী, সুনান, ২:৪০৭, নং: ২৭৭৩, ৩/১৮২৫ প, হা/২৮১৫,
(৩) ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৬/২৮১ প, হা/১৬৩৬১ এবং হা/১৬৩৬৩,
(৪) ইবনুল মুবারক, কিতাবুয যুহুদ, ১: ৩৬৪, নং ১০৬৭।
(৫) ইবনু আবি শাইবাহ, মুসান্নাফ, ২: ২৫২, নং: ৮৬৯৫। |
(৬) তাবরানী, মুজামুল কবীর, ৫:১০০, নং: ৪৭২০।
(৭) নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৭৭ পৃ. .
(৮) ইমাম বাগভী শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৬ প, হা/৬৮৫,
(৯) ইবনে কাসীর, জামেউল মাসানিদ ওয়াল সুনান, ১০/৫৯ পূ, হা/১২৬৯০,
(১০) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/২৮১ পৃ. হা/৪০০৯, এটি সকলের ঐক্যমত্যে সহীহ।
(১১) খতিব তিবরিযিঃ মিশকাতুল মাসাবিহ ৮৬।
(১২) ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ দালায়েলুল বারাকাত।
(১৩) মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৭৯, সাকলাইন প্রকাশনী।
❏ হাদিস ১২:
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আ’স (رضي الله عنه) বলেন:
من صلى على النبى صلى الله عليه وسلم واحدة صلى الله عليه وملا ئكته سبعين صلاة
“যে (ব্যক্তি) হুযুর (ﷺ) এর উপর এক বার দুরূদ পাঠ করবে, তার উপর আল্লাহ্ তাআলা এবং তাঁর ফিরিশতাগণ তাঁর উপর ৭০ বার রহমত প্রেরণ করবেন।”
[মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ২য় খন্ড, ৬১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৬৭৬৬, মিশকাত শরীফ ৮৭]
❏ হাদিস ১৩:
হযরত আনাস ইবন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তা'আলা তার উপর ১০ টি রহমত অবতীর্ণ করেন। যে ব্যক্তি আমার উপর ১০ বার দুরূদ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার উপর ১০০টি রহমত অবতীর্ণ করেন। আর যে ব্যক্তি আমার উপর ১০০বার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির দু'চোখের মাঝখানে (কপালে) নিফাক (মুনাফিকি) এবং আগুন থেকে মুক্তি লিপিবদ্ধ করে দেন এবং কিয়ামত দিবসে তার আবাস (এবং মর্যাদা) শহীদগণের সাথে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
(১) তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৭:১৮৮, নং-৭২৩৫।
(২) তাবরানী, মুজামুস সাগীর, ২:১২৬, নং-৮৯৯।
(৩) মুনযিরী, তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২:২৩২, নং-২৫৬০।
(৪) হাইছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১০:১৬৩।
❏ হাদিস ১৪:
হজরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর ১০০ বার দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার ওপর ১০০০ বার রহমত নাযিল করবেন।আর যে আমার প্রতি তার প্রেম ও ভালোবাসার কারণে পড়বে আমি কেয়ামতের দিনে তাকে শাফায়াত করব এবং তার জন্য সাক্ষী হব। [ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ)]
❏ হাদিস ১৫:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “মুসলমান যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উপর দুরূদে পাক পড়তে থাকে, ফিরিশতারা তার উপর রহমতরাজি নাযিল করতে থাকে, এখন বান্দার মর্জি সে কম পড়ুক কিংবা বেশি।” (ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯০৭)
❏ হাদিস ১৬:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় জিব্রাইল عَلَيْهِ السَّلَام আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন: “যে (ব্যক্তি) আপনি (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ্ তাআলা তার উপর রহমত নাযিল করেন। আর যে আপনার উপর সালাম প্রেরণ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার উপর নিরাপত্তা নাযিল করেন।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খন্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৬৬৪)
❏ হাদিস ১৭:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করো, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।” (আল কামিলু লিইবনে আছি, ৫ম খন্ড, ৫০৫ পৃষ্ঠা)
❏ হাদিস ১৮:
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক (ﷺ) বলেছেন যে, যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ পড়বে তখন সে যেন পবিত্রতা অর্জন করে। অতঃপর তোমরা কালেমায়ে শাহাদাত পড় এবং তারপর আমার উপর দুরূদ পড়। তখন তার উপর রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হবে।
ফেরেশতাগণ কর্তৃক দুরূদ প্রেরণকারীর জন্য দোয়া প্রার্থনা
❏ হাদিস ১৯:
এ রেওয়ায়েতটি আবু তালহার (رضي الله عنه)'র ভাষায় এরূপ অতিরিক্তি সহকারে এসেছে,
ফেরশতা তাকে (দূরুদ পাঠকারীকে) সেটিই বলে যা আপনাকে বলা হয়েছে। বললামঃ হে জিব্রাইল! এ ফেরেশতাটিকে কি বললেন? মহিয়ান, গড়িয়ান আল্লাহ যখন আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে আপনার নেবুওয়াতের ঘোষণা দেয়া সময় পর্যন্ত দুটি ফেরেশতা আপনার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। আপনার এমন কোন উম্মত নেই যে দূরুদ পড়েনি আর ফেরেশতাগণ তাকে বলেননিঃ তোমাকেও! মহান আল্লাহ তোমার উপর দূরুদ পাঠিয়েছেন। [কানযুল উম্মাল খন্ড,১ পৃষ্ঠা ৪৪০,৪৪৯ এবং খঃ২ পৃষ্ঠা১৮১।]
❏ হাদিস ২০:
“হযরত আবদুল্লাহ বিন আমের বিন রাবেঈ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হযরত আমের ইবনে রাবে'ঈ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে এক ভাষণে বলতে শুনেছি, কোন ব্যক্তি যখন আমার উপর দুরূদ পাঠ করে, ফিরিশতাগণ তার জন্য রহমতের দুআ করতে থাকেন। অতএব আল্লাহর কোন বান্দা এটি বেশি করে করুক অথবা কম করুক।”
তথ্যসূত্রঃ
১.মুসনাদে আহমদ, ২৪/৪৫১ পৃ. হা/১৫৬৮০, এ গ্রন্থের তাহকীককারী শায়খ শুয়াইব আরনাওয়াত বলেন, এটি হাসান।
২.ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩২৭ পৃ. হা/২৫৭৬, তিনিও বলেছেন হাদিসটি হাসান।
৩.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), ১৭৬ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।
❏ হাদিস ২১:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) কিতাবে আমার উপর দুরূদ পাক লিখেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ইস্তিগফার (অর্থাৎ- ক্ষমা প্রার্থনা) করতে থাকবে।” (মুজাম আওসাত, ১ম খন্ড, ৪৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৮৩৫)
কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকটবর্তী হবে ও শাফায়াত নসীব হবে
❏ হাদিস ২২:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পড়েছে।” (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৪)
❏ হাদিস ২৩:
হয়বত রুওয়াইফিঈ ইবনে সাবিত আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর দুরূদ পাঠ করবে এবং বলবে “হে আল্লাহ! আপনি তাঁকে কিয়ামতের দিন তােমার সর্বাধিক নিকটবর্তী ও মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত কর!" রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হবে।"
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৮/২০১ পৃ. হা/১৬৯৯১,
২.ইমাম তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৩/২১ পৃ. হা/৩২৮৫,
৩.ইমাম আবু বকর ইবনে খাল্লাল, আস-সুন্নাহ, ১/২৬০ পৃ. হা/৩১৫,
৪.মুসনাদে বাযযার, ৬/২৯৯ পৃ. হা/২৩১৫,
৫.ইমাম তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ৫/২৫ পৃ. হা/৪৪৮০-৮১,
৬.ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ২/৭৭০ পূ, হা/৩০৯১,
৭.ইমাম মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৯৬৭. হা/২১৮৮-২১৮৯,
৮.ইমাম হাইসামী (রঃ) এ হাদিসটির সনদ প্রসঙ্গে বলেন, -“এ হাদিসটি ইমাম বাযযার, তাবরানী তার মুজামুল আওসাত ও মুজামুল কাবীরে এ সনদ্বয় হাসান সূত্রে বর্ণনা করেছেন।”
(হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১৬৩ পৃ. হা/১৭৩০৪)
৯.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃ ১৮১, সাকলাইন প্রকাশনী।
❏ হাদিস ২৪:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اَللَّهِ ﷺ إِنَّ أَوْلَى اَلنَّاسِ بِي يَوْمَ اَلْقِيَامَةِ, أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلَاةً. (رواه الترمذي و ابن حبان)
“কিয়ামতের দিবসে ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে অধিক নিকটবর্তী হবে যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) আমার প্রতি সর্বাধিক দুরূদ শরীফ পাঠ করেছে।"
তথ্যসূত্রঃ
১.ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/২০৭পৃ. হাদিস,৩০৬, ও ৬/৩২৫পৃ. হাদিস.৩১৭৮৭,
২.সুনানে তিরমিযী, আবওয়াবুল বিতির, বাবু মা জাআ ফি ফাদলিস সালামে আলান্নবী (ﷺ), ২/৩৫৪, নং: ৪৮৪।
৩.সহিহ ইবনে হিব্বান, ২: ১৯২, নং: ৯১১।
৪.যাহাবী, মিযানুল ই'তিদাল : ৪/২০৯ পৃ: রাভী : ৯৪৪০,
৫.সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১৬০ পৃ: হাদিস : ২৬৮,
৬.সাখাভী : আল কওলুল বদী : ২৪১ পৃ:
৭.ইবনে হাজার হায়সামী : মাওরিদুয় যামান । ১৫৯৪পৃ.হাদিস : ২৩৮৯,
৮.ইবনে আছির,জামিউল উসূল, ৪/৪০৫পৃ. হাদিস,২৪৭৫,
৯.নাওয়াবী খলাসাতল আহকাম, ১/৪৩৯পৃ. হাদিস,১৪৩৩, তিনি বলেন সনদটি হাসান।
১০.মিযী,তুহফাতুল আশরাফ বি মা'রিফাতুল আতরাফ, ৭/৬৯পৃ. হাদিস,৯৩৪০,
১১.ইবনুল ইরাকী, তাখরীযে আহাদিসুল ইহইয়াউল উলম, ১/৩৬৬পৃ.
১২.সুয়ূতি, আদুরল মুনতাসিরাহ, ১/৮৫পৃ. হাদিস,১৪০,
১৩.শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩৫১, হাদিস,৩৮১৯,
১৪.আযলূনী : কাশফুল খাফা : ১/২৩৯ পৃ: হাদিস : ৮৩৫,
১৫.সুয়ুতি : আদ দুররুল মুনতাসিরাহ: ৫/২১৮:
১৬.ইমাম বুখারী : তারীখুল কবীর : ৫/১৭৭ পৃ: হাদিস,৫৫৯,
১৭.ইমাম আদী : আল কামিল : ৬/২৪২পু,
১৮.ইমাম দারেকুতনী : আল ইল্লল : ২৪১ পৃ.
১৯.বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা , ৩/২৪৯পৃ, হাদিস : ৫৭৯১,
২০.বায়হাকী : শুআবুল ঈমান : ৩/১২৯ পৃ. হাদিস :১৪৬২,
২১.আবু ইয়ালা, আল-মুসনাদ, ৮: ৪২৭, নং: ৫০১১। তিনিও বলেন, হাদিসটি হাসান।
২২.ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩২৭ পৃ. হা/২৫৭৭, তিনিও বলেন, হাদিসটি হাসান।
২৩.খতিব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১১৮ পৃ. হাদিস : ৯২৩,
২৪.মােল্লা আলী কারী : মেরকাত : ১৮-৯ পূ, হাদিস : ৯২৩,
২৫.সুয়ুতী : জামিউস সগীর : ১/১৬৮ পৃ. হাদিস : ২২৪৯,
২৬.দায়লামী : মুসনাদিল ফিরদাউস : ১/৮১ পৃ. হাদিস : ২৫০,
২৭.হাকিম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ২/৪২১ পৃ.
২৮.দিন্নুরী মালেকী, মাযালিসে দিন্নুরী, ১/৪২৯পৃ. হাদিস,১২৮,
২৯.বগবী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৭পৃ. হাদিস,৬৮৬,
৩০.মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৮৯পৃ. হাদিস,২১৫১,
৩১.দরবেশহুত, আস্-সুনানিল মুত্তালিব, ১/৭৫পৃ. হাদিস,২৯৫,
৩২.মিযযী, তাহযীবুল কামাল, ১৫/৪৮২ ক্রমিক,অ৫০৯,
৩৩.মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন।
❏ হাদিস ২৫:
ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকে মারফু বর্ণনা করেন, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
من صلى على حين يصبح عشرا وحين يمس عشر اأد ركته شفاعتي يوم القيامة
"যে ব্যক্তি সকালে আমার প্রতি ১০ বার, আর সন্ধ্যায় ১০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে সে কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভ করবে।”
তথ্যসূত্রঃ
(১) মুনযিরী, তারগীব ওয়াত্তারহীব, ১:২৬১, হা-৯৮৭।
(২) ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১২০ পৃ. হা/১৭০২২, তিনি বলেন, এ সনদটি শক্তিশালী ও সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ।”
(৩) আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, ১/৪৯২ পৃ, হা/২১৬৪।
(৪) ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৫ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।
(৫) হযরত আবু বকর ইবনে আসেম রহ. [ওফাত-২৮৭হি] কিতাবুস সালাত আ'লান নাবিয়্যিন এর ৬১ পৃষ্টায়,
❏ হাদিস ২৬:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
من صلى على اوسأل لى الوسيلة حقت عليه شفاعتى يوم القيامة অর্থাৎ যে ব্যাক্তি আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে অথবা আমাকে উসিলা বানাবে কিয়ামতের দিন তার উপর আমার শাফায়াত আবশ্যক হবে।
[ইমাম আবু ইসহাক (رحمة الله) [ওফাত ২৮২ হি] ফযলুস সালাত আ'লান নাবিয়্যি এর ৫০ পৃষ্টা]
❏ হাদিস ২৭:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে এটা বলে:
اَللّٰهُمَّ صَلِّى عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّاَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ المُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।” (মুজাম কবীর, ৫ম খন্ড, ২৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৪৮০)
অনুবাদ: হে আল্লাহ্! হযরত মুহাম্মদ এর উপর রহমতনাযিল কর এবং তাঁকে কিয়ামতের দিন তোমার দরবারে নৈকট্যতম স্থান প্রদান কর।
দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত
❏ হাদিস ২৮:
দোয়া আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে
“হযরত আমিরুল মু'মিনিন ফারুকে আযম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দোয়া আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে, তা উপরে উঠে না যতক্ষণ না হুযূর নবী কারিম (ﷺ) উপর দুরূদ পাঠ করা হয়।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ১/৬১৪ পূ, হা/৪৮৬,
২.ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৮৭ পৃ. হা/৬৭৯, ৫/২০৫ পৃ. হা/১৪০১,
৩.খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৯৬-পৃ. হা/৯৩৮,
৪.মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩৩০, পৃ. হা/২৫৯০,
৫.ইবনে কাসির, মুসনাদে আমিরুল মু'মিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব, ১/১৭৬, ইমাম ইবনে কাসির (رحمة الله) বলেন- “এ হাদিসটির সনদ শক্তিশালী।"
৬.তুহফাতুল আশরাফ, ৮/২৫ পৃ. হা/১০৪৪৯,
৭.ইমাম ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ৩৫৫ পৃ. হা/২১২১,
৮.মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/২৬৮ পৃ. হা/৩৯৮৪ ও ২/২৬৯ পৃ: হা/৩৯৮৬ এ হাদিসটি তিনি মারফু সূত্রে সংকলন করেছেন।
৯.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃ ১৮১, সাকলাইন প্রকাশনী।
❏ হাদিস ২৯:
প্রত্যেক দো'আ পর্দাবৃত থাকে
হযরত আলী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন,
"প্রত্যেক দো'আ পর্দাবৃত থাকে; যতক্ষণ না রাসূল (ﷺ) এবং তার আহলে বায়তের উপর দুরূদ পড়া হয়।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ১: ২২০, নং: ৭২১।
(২) বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, ২:২১৬, নং-১৫৭৫।
(৩) দাইলামী, মুসনাদুল ফিরদাউস, ৩:২৫৫, নং-৪৭৫৪।
(৪) মুনযিরী, তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২:৩৩০, নং-২৫৮৯।
(৫) হাইছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১০:১৬০।
▪ ইমাম তাবরানী ও ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এ হাদীসকে উত্তম (যাইয়্যিদ) সনদে বর্ণনা করেন।
▪ ইমাম হাইছামী (رحمة الله) বলেন, এ হাদীসের বর্ণনাকারীরা ‘সিকাহ’ বা বিশ্বাসযােগ্য।
▪ ইমাম মুনযিরী, বাইহাকী ও তাবরানীর বর্ণিত হাদীসের সকল রাবীকে সিকাহ বলেছেন।
❏ হাদিস ৩০:
দুরূদের মাধ্যমে দোয়া কবুল হয়
হযরত ফুদ্বালা বিন আবীদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবীয়ে কারীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) মাসজিদে নবুবী শরীফে উপস্থিত ছিলেন। ঐসময় একজন ব্যক্তি এলেন এবং নামায পড়ে এইভাবে দুয়া করতে লাগলেন, ইয়া আল্লাহ আমার উপরে রহম করুন এবং আমাকে মাফ করে দিন। তখন নবীয়ে কারীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) বললেন ; অ্যায় নামাযী তুমি প্রার্থনার ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি করে দিয়েছ। তখন ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ) আমাকে কিভাবে দুয়া করতে হবে। তখন হুযুর (ﷺ) বললেন, আমার উপরে দুরূদ শরীফ পাঠ করে দুয়া করা উচিৎ। হযরত ফুদ্বালা বিন আবীদ (رضي الله عنه) বলেন, ঐ সময়েই আর একজন ব্যক্তি এলেন এবং হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র ফরমানের মত করলেন। তা দেখে হুযুর (ﷺ) বললেন, দুয়া কবুল হয়ে গেছে। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
❏ হাদিস ৩১:
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, আমি একদা নামায পাঠ করলাম ঐসময়ে হুযুর (ﷺ), হযরত আবুবকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমার (رضي الله عنه) উপস্থিত ছিলেন। আমি নামাযের পরে বসে গেলাম এবং আল্লাহ তায়ালার হামদ ও সানা পাঠ করলাম। তারপর আমি নবীয়ে কারীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করলাম এবং দুয়া প্রার্থনা করলাম, তখন নবীয়ে কারীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) বললেন তুমি যা প্রার্থনা করবে সেটাই পাবে অর্থাৎ, তোমার দুয়া কবুল হবে। (মিশকাত শরীফ)
❏ হাদিস ৩২:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইরশাদ করেন, “নামাযের পর হামদ, সানা ও দুরূদ শরীফ পাঠকারীকে বলা হয়: দোয়া কর, কবুল করা হবে। প্রার্থনা কর, প্রদান করা হবে।” (নাসায়ী, ২২০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১২৮১)
❏ হাদিস ৩৩:
কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে মুসাফাহা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) আমার উপর সারা দিনে পঞ্চাশ বার দুরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করব (অর্থাৎ- হাত মিলাব)।”
১.আল কুরবাতু ইলা রব্বিল আলামীন, লি ইবনে বশিকওয়াল, ৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯০,
২.ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ),
৩.মাওলানা ইলিয়াস আত্তার কাদেরীঃ ফায়জানে সুন্নাত।
❏ হাদিস ৩৪:
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, তুমি যখন দোয়া কর তখন হুজুর (ﷺ) এর উপর কিছু দুরূদ ও ওটার সঙ্গে সামিল কর। কেননা দুরূদ তো নিশ্চয়ই কবুল হয় আর আল্লাহর শান এমন নয় যে তিনি দোয়ার কিছু অংশ কবুল করবেন আর বাকী অংশ কবুল করবেন না। (অর্থাৎ, পরম করুণাময় দুরূদের বরকতে করুণাস্বরূপ নেক দোয়া কবুল করেন) (ফাযায়েলে দুরূদ)
৮.উম্মতের জন্য মাগফিরাত ও গুনাহের কাফফারা
❏ হাদিস ৩৫:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أکثِرُوا الصَّلاةَ عَلَيَّ. فَاءنَّ صَلاتَکُم عَلَيَّ مَغفِرَةُ لِذُنُو بِکُم.
আমার প্রতি অধিক দূরুদ পড়। কারণ, আমার প্রতি তোমাদের দূরুদ তোমাদের গুণাহ মাফের উপায় হবে। [কানযূল উম্মাল খন্ড,১ পৃষ্ঠা ৪৩৬, ইবনে আসাকির, ৬১তম খন্ড, ৩৮১ পৃষ্ঠা]
❏ হাদিস ৩৬:
হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে আরও বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যদি পরস্পর সাক্ষাতের সময় দু'জন মুসলমান একে অপরের হাত ধরে মুসাফাহ করেন এবং রাসূলে খােদা (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠ করেন, তবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে উভয়ের আগের পরের গুনাহ মার্জনা করে দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্রঃ
(১) আবুল কাসিম আল-আস্পাহানী (رحمة الله) এ রিওয়ায়তটি বর্ণনা করেছেন।
(২) হাফিয ইবনে আলী বিশকওয়াল (رحمة الله) রিওয়ায়তটি বর্ণনা করেছেন।
(৩) আস-সাখাবীঃ, আল কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; ৫. ২৪০
(৪) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৮, গাজী প্রকাশনী।
❏ হাদিস ৩৭:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা পোষণকারী যখন দু’জন বন্ধু যখন পরস্পর সাক্ষাত করে ও মুসাফাহা করে আর রাসূলে খােদা (ﷺ) এর উপর দুরূদ পাক পাঠ করে, তবে তারা উভয়ে পরস্পর পৃথক হবার পূর্বে আগের ও পরের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।”
[মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৩য় খন্ড, ৯৫ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৯৫১]
❏ হাদিস ৩৮:
অদৃশ্যের সংবাদ দাতা, নবী করীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) ইরশাদ করেন “যে ব্যক্তি আঁমার প্রতি ভালবাসা ও আগ্রহের কারণে প্রতিটি দিন ও রাতে তিন তিন বার করে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তা’আলা তার বদান্যতার দায়িত্বে একথা অপরিহার্য করে নেন যে, তিনি তার ওই দিন ও রাতের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।”
[মু’জামুল কবীর, ১৮তম খন্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯২৮, আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ফায়জানে সুন্নাত]
❏ হাদিস ৩৯:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে আমার প্রতি ভালবাসা ও ভক্তি সহকারে তিনবার করে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাআলার উপর (নিজ বদান্যতায়) দায়িত্ব যে, তিনি তার ঐ দিন ও ঐ রাতের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
[আল মুজামুল কবীর লিখিত তিবরানী, ১৮তম খন্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৯২৮]
❏ হাদিস ৪০:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, এ অধিকহারে দুরূদ পাঠের ফলে তোমার সকল চিন্তা-পেরেশানী দূর হয়ে যাবে এবং তোমার গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে যাবে।”
[ইমাম সুয়ূতীঃ নবীগণ স্বশরীরে জীবিত]
❏ হাদিস ৪১:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “কেউ যদি তাঁর উপর সালাম পাঠ করে, আর তার গুনাহ যতই হোক না কেন, তার প্রতি ওই রহমতটুকু তাঁর (ﷺ) নুরানী হৃদয়ে জাগ্রত হবে, যা তাঁর স্বভাবজাত; ফলে তিনি ওই ব্যক্তির সালামের জবাব নিজেই দেবেন। পূর্বে তার অনেক গুনাহ থাকলেও তার সালামের জবাবে কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি হবে না।"
❏ হাদিস ৪২:
হুজুর (ﷺ) দুরূদ শরীফ পাঠ কারীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন এবং তাঁর চোখ মুবারক শীতল হয় (অর্থাৎ,তিনি সন্তুষ্ট হন) [মুসনাদুল ফিরদাউস]
❏ হাদিস ৪৩:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় আমার উপর বেশী পরিমানে দুরূদ পাক পাঠ করে, তার মৃত্যুর সময় আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাত সমস্ত সৃষ্টি কে বলবেন এ বান্দার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো।
[নুজহাতুল মাজালিস, ফায়জানে সুন্নাত, ইমাম বাগাভী, শারহুস সুন্নাত,সহি ইবনে হিব্বান, বাইহাক্কী শুয়াবুল ইমান, বুখারীর তারিখুল কাবীর]
❏ হাদিস ৪৪:
দুরূদ পাঠকারীর তিন দিন পর্যন্ত গোনাহ্ লেখা হয় না
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى عليه صلاة واحدة امر الله حافظيه ان لا – يكتبا عليه – ذنبا ثلاثة ايّام –
অর্থাৎ : রাসূলে খোদা (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর মাত্র একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। আল্লাহ তায়ালা তার কেরামান কাতেবীন ফেরেশতাদ্বয়কে কে তার উপর তিনদিন পর্যন্ত কোন গুনাহ্ না লেখার নির্দেশ দেন। (জিকরে এলাহি- ৯৮)
আশি বছরের গুনাহ্ মাফ
❏ হাদিস ৪৫:
হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে এবং তা কবুল হলে আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বৎসরের গুনাহ মিটিয়ে দেবেন।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম আল্লাউদ্দিন হাসকাফী (رحمة الله), দুররুল মুখতার, ১/২২১ পৃ., গ্রন্থে ইমাম আবু শায়খ ইস্পাহানী (رحمة الله) সূত্রে।
২.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতােয়ায়ে শামী, ১/৫২ পৃ.,
৩.ইফরাকী, মুখতাসারু তারিখে দামেস্ক, ২/৪১৩ পৃ.
৪.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله),বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড) ১৭৭ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।
❏ হাদিস ৪৬:
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন,
الصلواة على نور على الصراط فمن صلى على يوم الجمعة ثمانين مرة غفرت له ذنوب ثمانين سنة –
অর্থাৎ আমার উপরে প্রেরিত দুরূদ পুলসিরাতে নুর হবে। যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিন আমার উপরে আশি বার দুরূদ পাঠ করবে। তার আশি বছরের গোনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে।
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম দারে কুতনী ও ইমাম ইবনে শাহীন বর্ণনা করেছেন।
২.ইমাম নাবহানীঃ জাওয়াহেরুল বিহার ৪র্থ- ১৬৩,
৩.আল ফিরদৌস বিমাসুরিল খাত্তাব, ২য় খন্ড, ৪০৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৮১৪।
জিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের পর দুরূদ
❏ হাদিস ৪৭:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) কুরআন পড়ল এবং আপন প্রতিপালকের প্রশংসা করলো, অতঃপর আমার উপর দুরূদে পাক পড়ল, তারপর নিজ প্রতিপালক থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করল, তবে সে মঙ্গলকে সেটার জায়াগা থেকে তালাশ করে নিলো।”
(শুয়াবুল ঈমান, ২য় খন্ড, ৩৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২০৮৪,
ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ))
দুরূদ পাঠ উম্মতের জন্য পবিত্রতা
❏ হাদিস ৪৮:
হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন
صلو على فان الصلواة على عفارة لكم وزكاة
অর্থাৎ, তোমরা আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। কেননা, আমার উপর দুরূদ পাঠ করলে তোমাদের জন্য গুণাহের কাফফারা এবং (অভ্যন্তরীন) পবিত্রতা অর্জন হবে।
[ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ)-১০৩, ইবনে আসাকির, ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানজুল উম্মাল]
❏ হাদিস ৪৯:
হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, আমার উপর দুরূদ পড়াে, নিশ্চয় আমার উপর তােমাদের দুরূদ তােমাদের শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতার একটি উপকরণ।
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইবনু আবি শাইবা, মুসান্নাফ, ২:২৫৩, নং-৮৭০।
(২) আবু ইয়ালা, মুসনাদ, ১১:২৯৮, নং-৬৪১৪।
(৩) হারিস, মুসনাদ (যাওয়ায়িদুল হাইছামী) , ২:৯৬২, নং-১০৬২।
❏ হাদিস ৫০:
হুজুর (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের জন্য পবিত্রতা ও গোসল রয়েছে, আর ঈমানদারদের অন্তর গুলোর মরিচার পবিত্রতা হচ্ছে আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা। (ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ), ফায়জানে সুন্নাত)
অভাব ও বিপদাপদ দূরীভূত হয়
❏ হাদিস ৫১: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
وقال صلى عليه وسلم من عسرت عليه حاجة فليكثر با الصلوة على قانها تكشف الهموم والغموم والكروب وتكثر الارزاق وتقضى الحوأئج –
অথাৎ, যে ব্যাক্তি বিপদগ্রস্থ হয়ে কঠিন সমস্যায় উপনীত হবে। সে যেন আমার প্রতি অধিক পরিমাণ দুরূদ শরীফ পাঠ করতে থাকে। কেননা দুরূদ শরীফ সকল প্রকার দুঃখ বেদনার বিষন্নতা এবং কঠিন বিপদাপদ দূরীভূত করে এবং রিযিক বৃদ্ধি করে। এমনকি সকল প্রকার অভাব অনটন মিটিয়ে দেয়।
[ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন সোলাইমান যাযুলী (رحمة الله) দালায়েলুল খাইরাত]
❏ হাদিস ৫২:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যহ ৫০০ বার আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে সে কখনও অভাবী হবে না।
[তোহফাতুল আখিয়ার, ফায়জানে সুন্নাত]
মিজানের পাল্লা ভারী
❏ হাদিস ৫৩:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمربرحل الي النار فاقول ردوه الى الميزان فاضع له شيئا كالا نملة معى فى ميزان انه وهو الصلاة على فترجع ميزانه وينادى سعدفلان –
অথার্ৎ : কিয়ামত দিবসে এক ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তখন আমি বলব, তাকে মিজানের দিকে নিয়ে যাও। আমি মিজানের মধ্যে তার জন্য আমার আঙ্গুলের ন্যায় একটি জিনিস রাখব। তা হল আমার উপর পঠিত তার দুরূদ শরীফ। অত:পর তার মিজানটি ভারি হয়ে যাবে এবং তার সম্পর্কে অদৃশ্য হতে বলা হবে, অমুক ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে। [অর্থাৎ যে ব্যক্তি দুরূদ শরীফ পাঠ করেছে সে ব্যাক্তিটি সফলকাম হয়েছে] (জিকরে এলাহি- ১০০)।
আরশের ছায়াতলে অবস্থান
❏ হাদিস ৫৪:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলার আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না। তিন ব্যক্তি (ঐ দিন) আল্লাহ তা‘আলার আরশের ছায়ায় থাকবে। আরজ করা হল: ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) তারা কারা হবে? ইরশাদ করলেন:
(১) ঐ ব্যক্তি যে আমার উম্মতের পেরেশানী দূর করে,
(২) আমার সুন্নাতকে জীবিতকারী,
(৩) আমার উপর অধিক পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠকারী।”
তথ্যসূত্রঃ
১. আল বাদূরুস সাফিরাতু লিস্ সূয়ুতী, ১৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৬৬,
২. ইমাম সুয়ূতীঃ আরশের ছায়ায় যাদের কায়া, পৃষ্ঠা ৪২,
৩. শরহুয যুরকানী আলাল মুয়াত্তা, কিতাবুস শে'র, খন্ড ৪. পৃষ্ঠা, ৪৬৯, হাদিস ১:৮৪১।
কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ
❏ হাদিস ৫৫:
হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পার্থিব জীবনে আমার ওপর অত্যাধিক দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে কিয়ামতের ভয়-ভীতি ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকবে।
[আল্লামা ইসপাহানি,আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস নং: ১৬৮৭]
❏ হাদিস ৫৬:
(৩২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করে তোমরা তোমাদের মজলিশ সমূহকে সজ্জিত করো, কেননা তোমাদের দুরূদে পাক পাঠ করা কিয়ামতের দিন তোমাদের জন্য নূর হবে।” (ফিরদৌসুল আখবার, ১ম খন্ড, ৪২২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩১৪৯)
❏ হাদিস ৫৭:
(২১) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “হে লোকেরা! নিশ্চয় কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা এবং হিসাব নিকাশ থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে আমার উপর দুনিয়াতে অধিক হারে দুরূদ শরীফ পাঠ করে থাকে।” (আল ফিরদৌস বিমাসুরিল খাত্তাব, ৫ম খন্ড, ২৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৮১৭৫)
❏ হাদিস ৫৮:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
যে ব্যক্তি এটা চাই যে কেয়ামতের দিন তাকে সওয়াবের পাল্লা ভরপুর করে দেওয়া হোক, তার উচিত সে যেন আমার উপর বেশী পরিমানে দুরূদ শরীফ পাঠ করে।
(সা আদাতুদ্দা রাঈন, ফায়জানে সুন্নাত)
❏ হাদিস ৫৯:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
ঐ ব্যক্তি কেয়ামতের দিনে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ভয়ানক অবস্তাদি থেকে নাজাত প্রাপ্ত হবে, যে দুনিয়াই আমার উপর সর্বাপেক্ষা বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ কারী হবে। (ফায়জানে সুন্নাত)
❏ হাদিস ৬০:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে হাওযে কাওসারের উপর আমি এমন এমন দল পাবো যাদের কে আমি বেশী পরিমানে দুরূদ শরীফ পাঠ করার কারনে চিনব। (কাশফুল গুম্মাহ)
দুরূদ পাঠে জান্নাত লাভ
❏ হাদিস ৬১:
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হুজুর (ﷺ) বলেছেন , যে ব্যক্তি আমার উপর একহাজার বার দুরূদ পাক পাঠ করে, সে যতক্ষণ না নিজের স্থান জান্নাতের মধ্যে দেখে নেবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত মৃতুবরণ করবে না।
[আত্তারগীব ফি ফাযায়িলিল আমাল লি ইবনে শাহিন, ১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৯, সা’দাতুদ দারাইন, আল - মাকতাবাতুত তাওফিকিয়্যাহ,তুরস্ক, পৃ-১১৫]
❏ হাদিস ৬২:
হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর দিনে এক হাজার বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, সে তাঁর জান্নাতের ঠিকানা না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করবে না। [আল্লামা মুনযিরি, আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস নং: ২৫৭৯]।
❏ হাদিস ৬৩:
হযরত তুফাইল ইবন উবাই (رضي الله عنه) তাঁর পিতা উবাই ইবন কা’ব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
عن ابى بن كعب قال قلت بارسول الله انى اكثر الصلوة عليك فكم اجعل لك من صوتى فقال ماشئت قلت الربع قال ماشئت فان زدت فهو خير لك قلت النصف قال ماشئت فان زدت فهو خيرلك قلت الثلثين قال ماشئت قان زدت فهوخير لك قلت اجعل لك صلوتى كلها قال اذا يكفر فمك ويكفر لك ذنبك–
“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাতের এক-চতুর্থাংশ অতিবাহিত হলে উঠে গেলেন এবং বলতে লাগলেন, হে লােক সকল! তােমরা আল্লাহ যিকর কর, তােমরা আল্লাহর যিকর কর। প্রকম্পিতকারী এসে গিয়েছে যার পিছনে আসবে পশ্চাদগামী। মৃত্যু তার তিক্ততা নিয়ে এসে গিয়েছে, মৃত্যু তার তিক্ততা নিয়ে এসে গিয়েছে। আমি (উবাই) বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি তাে দু'আর মধ্যে অনেক সময় কাটাই, অতএব আপনার উপর দুরূদের জন্য কতটুকু সময় দেবাে? হুযুর (ﷺ) বললেন, তােমার ইচ্ছা। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ? তিনি বললেন, তােমার ইচ্ছা; আরাে অধিক করলে তােমার জন্য বেশি মঙ্গলময় হবে। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তােমার ইচ্ছা; আরাে বেশি করলে তােমার জন্য ভাল হবে। উবাই (رضي الله عنه) বলেন, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তােমার ইচ্ছা; আরাে বেশি করলে তােমার জন্য ভাল হবে। উবাই (رضي الله عنه) তখন বললেন, আমার দু'আর সবটুকু সময় আপনার উপর দুরূদ পড়ার জন্য দিয়ে দিবাে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাহলে তােমার সব দুশ্চিন্তা দূরীভূত হওয়ার জন্যে যথেষ্ট হবে এবং তােমার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৪/২১৮ পৃ. হা/২৪৫৭,
তিনি বলেন-“এ হাদিসটি হাসান সহিহ।
২.খতিব তিবরিযি, মিশকাত, (ভারতীয় ছাপা-৮৬),
৩.ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩২৭ পৃ. হা/২৫৭৭, তিনি বলেন,-“ইমাম আহমদ, তিরমিযি, হাকেম এটি সহিহ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।“ তিনি আরও বলেন, এ হাদিসটির সনদ অত্যন্ত শক্তিশালী।”
৪.ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৪৫৭পৃ. হা/৩৫৭৮, এবং হা/৩৮৯৪, ইমাম হাকেম নিশাপুরী (রঃ) বলেন-“এ হাদিসটির সনদ সহীহ।”
৫.ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৮৫ পৃ. হা/১৪১৮ এবং হা/১৪৭৭,
৬.ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার তালখীছ গ্রন্থে একে সহীহ বলেছেন।
৭.ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসুল মুখতার, ৩/৩৯০ পৃ. হা/১১৮৮, তিনি বলেন-“এ হাদিসটির সনদ হাসান।”
৮.ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৫ পৃ. হা/৮৪৬৭,
৯.ইমাম মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/২৭৬ পৃ. হা/৩৯৯৭,
১০.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃ ১৮১, সাকলাইন প্রকাশনী।
১১.মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৭/১২৯পৃ.
১২.ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/১৬৮পৃ.
১৩.ইমাম ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ১১/৫পৃ. হা/৮৪৬৭।
❏ হাদিস ৬৪:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
ان الجنة تشتاق الى خمسة نفرتالى القرأن وحافظ للسل ن ومطعم الجيعان ومكس العريات ومن صلى على حبيب الرحمن
অর্থাৎ, পাঁচ প্রকার মানুষের প্রতি স্বয়ং বেহেশতই আকৃষ্ট হয়ে আছে :
১। কোরআন শরীফ তেলাওয়াকারী
২। নিজের জিহ্বাকে অনর্থক কথাবার্তা থেকে রক্ষাকারী।
৩। ক্ষুধার্থকে অন্নদানকারী।
৪। বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান এবং
৫। আল্লাহর প্রিয় হাবিবের প্রতি দুরূদ পাঠকারী। সুবাহানাল্লাহ দুরূদ পাঠকারীর কত বড় মর্যাদা।
(জিকরে এলাহি- ৯৮)
❏ হাদিস ৬৫:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, জান্নাতে সব থেকে বেশী হুর ওই ব্যক্তিরই হবে, যে সব থেকে বেশী দুরূদ শরীফ পাঠ কারী হবে।
উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ সাওয়াব
❏ হাদিস ৬৬:
মাওলা আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর এক বার দুরূদে পাক পাঠ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য এক ‘ক্বীরাত’পরিমাণ সাওয়াব লিখে দেন। ক্বীরাত হচ্ছে: উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ।
[মুসান্নিফে আবদুর রাজ্জাক, ১ম খন্ড,৩৯ পৃষ্ঠা,হাদীস- ১৫৩, ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ)]
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ
❏ হাদিস ৬৭:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) একথা পছন্দ করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার মহান দরবারে পেশ হবার সময় আল্লাহ্ তাআলা তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন, তবে তার উচিত আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ করা।”
[ফিরদৌসুল আখবার, বিমাসুরিল খাত্তাব, ২য় খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৬০৮৩, কাশফুল গুম্মাহ]
গোলাম আযাদ, হজ্জ্ব ও জিহাদের সমপরিমাণ সাওয়াব
❏ হাদিস ৬৮:
হযরত আলী মুরতজা (رضي الله عنه) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে,
"নবীজী (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠের ফলে গুনাহ এমনিভাবে মুছে যায়, যেমনিভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। গােলাম আযাদ করা থেকে নবীজী (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ প্রেরণ করা উত্তম। আর আল্লাহর পথে তরবারি উত্তোলন করা থেকে তাঁর ভালােবাসা উত্তম।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) আবুল কাসিম আল-আস্পাহানী (رحمة الله) এ রিওয়ায়তটি বর্ণনা করেছেন।
(২) হাফিয আবু নুআইম (رحمة الله) তার হিলয়াতুল আউলিয়া নামক কিতাবে এ রিওয়াতটি বর্ণনা করেছেন।
(৩) আস-সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পু, ১২৬
৩৫৭
(৪) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৭, গাজী প্রকাশনী।
❏ হাদিস ৬৯:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
যে আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে সে ১০ জন গোলাম আজাদ ও ২০টি ইসলামী যুদ্ধে অংশগ্রহণের মতো সওয়াব দেয়া হয়।
[ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ হৃদয়ের টানে মদিনার পানে, ৩৪৯, জযবুল কুলুব ও ফায়জানে সুন্নাত]
❏ হাদিস ৭০:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “ফরয হজ্ব আদায় করো, নিশ্চয় এটির সাওয়াব বিশটি যুদ্ধে (গাযওয়া) অংশগ্রহণ করার চেয়েও বেশি, আর আমার উপর এক বার দুরূদ শরীফ পাঠ করা, এটার সমপরিমাণ সাওয়াব।” [ফিরদৌসুল আখবার, বিমাসুরিল খাত্তাব, ১ম খন্ড, ৩৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৪৮৪]
❏ হাদিস ৭১: ৪০০ জিহাদের সওয়াব আর প্রত্যেক জিহাদ ৪০০ হজ্জের বরাবর
হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদিন নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করলেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম নির্দেশিত হজ্জ করার পর একটি ইসলামী জিহাদ করে, তবে তা ৪০০ হজ্জের বরাবর হবে। তার এ বাণী শ্রবণের পর যাদের হজ্জ করা এবং জিহাদ করার সামর্থ ছিল না তাদের অন্তর ভেঙে পরে, আল্লাহ তা'আলা তাদের সম্পর্কে নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট অহী প্রেরণ করেন, যে ব্যক্তি আপনার ওপর দুরূদ পাঠ করবে, তিনি ৪০০ জিহাদের সওয়াব পাবেন। আর প্রত্যেক জিহাদ ৪০০ হজ্জের বরাবর হবে।'
তথ্যসূত্রঃ
(১) আবু হাফস ইবনে আবদুল মজীদ আল মাইয়ানিশী (رحمة الله), আল-মজালিসুল মক্কীয়া নামক কিতাবে রিওয়ায়তটি বর্ণনা করেছেন।
(২) আস-সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃষ্ঠা ১৩২।
(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৮, গাজী প্রকাশনী।
(৪) জযবুল কুলুব উর্দূ- ২৬৭ পৃ:।
৭০জন ফেরেশতা সাওয়াব লিখতে থাকেন
❏ হাদিস ৭২:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি এটা বলে:
جَزَ اللهُ عَنّا مُحَمَّدًا مَّا هُوَ اَهْلُه
৭০ জন ফিরিশতা এক হাজার দিন পর্যন্ত তার জন্য নেকী লিখতে থাকে।”
[ইমাম তাবারানীঃ আল-মুজাম আওসাত, ১ম খন্ড, ৮২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৩৫]
অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলা আমাদের পক্ষ থেকে হযরত মুহাম্মদকে এমন প্রতিদান প্রদান করুন, তিনি যেমন এর উপযুক্ত।
অযু করার সময় দুরূদ শরীফ পড়া।
❏ হাদিস ৭৩:
ইমাম ইবনে মাযাহ (رحمة الله) হযরত সাহল বিন সাদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, “ঐ ব্যক্তির অযু পূর্ণাঙ্গ হলাে না, যে নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়েনা।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম সুয়ুতি, জামেউস সগীর, ১ম খণ্ড, হা/১৪৪৬০,
২.আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, ২ . হা/২৬২৩৯,
৩.ইমাম তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ৬/১২১ পৃ. হা/৫৬৯৮,
৪.ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/৪৫৬ পৃ.।
৫.ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৫ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।
কানে শব্দ হবার সময় দুরূদ শরীফ পড়া চাই।
❏ হাদিস ৭৪:
হযরত ইবনে আবি রাফের বর্ণনা, যা ইমাম ইবনুস সুন্নি (رحمة الله) মারফু বর্ণনা করেন। নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“কারাে কান থেকে শব্দ হতে শুরু করে, তখন আমাকে স্মরণ করাে আর আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পড়াে। আর বলবে, আল্লাহ তাআলা তাকে স্মরণ করুণ। যে আমাকে কল্যাণের সাথে স্মরণ করেছে।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১ম খন্ড, হা/১৫৯৯,
২.বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ২/৮৪, হা/৪৯০,
৩.ইমাম তাবরানী, মু'জামুল আওসাত, ৯/৯২পৃ, হা/৯২২২,
৪.ইমাম তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ১/৩২১ পৃ. হা/৯৫৮,
৫.ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদ, হা/৩৮৮৪,
৬.আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, ১৫/৪১৭ পৃ. হা/৪১৬৪৪,
৭.হায়ছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১৩৮ পূ, হা/১৭১৪২,
৮.ইমাম হাইসামী বলেন,-“এ হাদিসটির সনদ হাসান।
৯.ইমাম ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ, হা/১২৪৩৩।
১০.ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৫ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।
আযাব থেকে মুক্তি
❏ হাদিস ৭৫:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
ان الله تعالى ينظر الى من يصلى على ومن نظر الله تعالى اليه لايعد به ابدا-
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা দয়ার দৃষ্টি দান করেন। ঐ ব্যক্তির উপর যে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে। আর যার প্রতি আল্লাহর দয়ার দৃষ্টি পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কখনো আযাব দিবেন না। [আফযালুস সালাত পৃষ্টা: ৪১]
নিরাপদে পুলসিরাত পার
❏ হাদিস ৭৬:
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণীত, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাইরে তাশরীফ আনলেন এবং এরশাদ করলেন, আমি গতরাতে একটি আশ্চর্য জনক স্বপ্ন দেখেছি। আমার এক উম্মত পুলসিরাত দিয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পার হওয়ার চেষ্টা করছে। এসময় দুরূদ শরীফ (যা সে আমার উপর পাঠ করত) এসে তার হাত ধরে তাকে সোজা করে নিরাপদে পুলসিরাত পার করে দিল। (হাশিয়ায়ে দালায়েলুল খাইরাত- ৯১ পৃ:)
আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন যার নাম আযরাঈল। কিয়ামতের দিন সেই ফেরেশতা স্বীয় পালক পুলসিরাতে বিছিয়ে আহ্বান করবেন। যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর দুরূদ প্রেরণ করছে সে যেন আমার পালকে পা রেখে নিরাপদে পুলসিরাত পার হয়ে যায়। (হাশিয়ায়ে দালায়েলুল খাইরাত- ৯৪, বার মাসের আমল ও ফযিলত- ১৮১-৮২ পৃ:)
❏ হাদিস ৭৭:
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণীত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ কারীদের জন্য পুলসিরাতে নূর থাকবে- لم يكن من اهل النار সে দোযখবাসী হবে না।
[ইমাম যাযুলী (رحمة الله): দালায়েলুল খাইরাত]
চেহারার উজ্জ্বলতা ও দুরূদ পাঠের ঘটনা
❏ হাদিস ৭৮:
হযরত সুফিয়ান (رحمة الله), হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) একদিন বাইতুল্লাহ তাওয়াফে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে তাওয়াফ অবস্থায় প্রতি কদমে দুরূদ শরীফ পাঠ করছে। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তুমি তাওয়াফ অবস্থায় তাসবীহ তাহলীল ও দোয়ায়ে মাছুরা বাদ দিয়ে শুধু দুরূদ শরীফ কেন পড়ছ? এ ব্যপারে কি তোমার কাছে কোন দলিল প্রমাণ আছে। সে বলল আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। আগে বলুন আপনি কে? আমি বললাম, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস। লোকটি বলল, যদি আপনি বিশেষ কোন ব্যক্তি না হতেন তাহলে আমি আমার অবস্থার কথা বলতাম না বরং গোপনে রাখতাম। অতপর সে বলল, একদিন আমি আমার পিতাকে নিয়ে হজ্জ্বে গমন করি। পথিমধ্যে এক জায়গায় অবস্থান করলাম। সেখানে আমার পিতা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করলাম তাঁর খেদমত করতে ও তাকে বাঁচাতে। কিন্তু তাকদীর তদবীরের উপর অগ্রগামী হল। তিনি ইন্তেকাল করলেন আর তার চেহারা কালো বর্ণের হয়ে গেল। অন্য এক বর্ণনায় গাধার ন্যায় হয়ে গেল। আমি পিতার চেহারা চাদর দিয়ে ঢেকে দিলাম এবং এই চিন্তায় আমার তন্দ্রা এসে গেল। স্বপ্নে দেখলাম অত্যান্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট শুভ্র পোশাক পরিধান কৃত এবং সুগন্ধিযুক্ত এক ব্যক্তি ধীরগতিতে আমার পিতার নিকট আগমন করলেন। তিনি আমার পিতার চেহারা থেকে চাদর তুলে স্বীয় হাত বাড়িয়ে পিতার চেহারায় মালিশ করেন। ফলে আমার পিতার চেহারা উজ্জল ও শুভ্র হয়ে গেল। এরপর তিনি চলে যেতে লাগলেন। আমি দৌড়ে গিয়ে তার আচল ধরে বললাম, জনাব! হে আল্লাহর মকবুল বান্দাহ! আপনি কে? এই অজানা অচেনা জনপদে আমার পিতার সাহায্য করার জন্য আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন তুমি কি আমাকে চিনতে পারনি? আমি মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ। যার উপর কোরআন নাযিল হয়েছিল। নি:সন্দেহে তোমার পিতা সারা জীবন নিজের উপর (গোনাহের দ্বারা) যুলুম করেছে এবং আল্লাহর নাফরমানীতে রত ছিল তবে আমার উপর বেশী করে দুরূদ পাঠ করত। মৃত্যুর পর যখন আযাবে লিপ্ত হল তখন আমার নিকট ফরিয়াদ করেছে। তাই আমি সাহায্যের জন্য এসেছি। যে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে আমি অবশ্যই তাকে সাহায্য করি। অত:পর আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। আমি চোখ খোলে দেখি আমার পিতার চেহারা চাদের চেয়ে বেশী আলোকিত ও নূরানী হয়ে গেল।
[আফযালুস সালাত- ৫৬ পৃ:, ইমাম সাফুরী রহঃ নুজহাতুল মাজলিস-৮৯ পৃ: জযবুল কুলুব ফার্সী-২৫৩, বার মাসের আমল ও ফযীলত ১৭২-৭৩ পৃ:]
দুরূদ শরীফ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ বাণী
❏ হাদিস ৭৯:
হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) বলেন: “নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা গুনাহ সমূহকে এত দ্রুত মিটিয়ে দেয় যে, পানিও আগুণকে তত দ্রুত নিভাতে পারে না, আর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর সালাম প্রেরণ করা গর্দান সমূহ (অর্থাৎ- গোলামদেরকে) আযাদ করার চেয়েও উত্তম।” (তারিখে বাগদাদ, ৭ম খন্ড, ১৭২ পৃষ্ঠা)
❏ হাদিস ৮০:
হযরত সায়্যিদুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বলেন: “তোমরা তোমাদের মজলিশ সমূকে আল্লাহর নবী, রাসুলে আরবী (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করে সজ্জিত করো।” (তারিখে বাগদাদ, ৭ম খন্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা)
দুরূদ পাঠের মাধ্যমে বংশধর কল্যাণপ্রাপ্ত হয়
❏ হাদিস ৮১:
হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, "রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠ পাঠককে, তাঁর সন্তানকে এবং সন্তানের সন্তানকে উপকৃত করে।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইবনে বিশকওয়াল (رحمة الله) হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন।
(২) আবু বকর আশ-শাফিয়ী (رحمة الله), আল-ফাওয়ায়িদ, পৃ. ৫১৯, হাদীস: ৬৪০
(৩) জযবুল কুলুবে বর্ণিত হয়েছে।
(৪) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী' ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৩৬;
(৫) কিতাবুর রিদ্দাদ বর্ণিত হয়েছে।
(৬) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬০, গাজী প্রকাশনী।
কোন কিছু ভুলে গেলে দুরূদ পাঠ।
❏ হাদিস ৮২:
হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“তােমরা যখন কোন বিষয় ভুলে যাও, তখন আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়াে ইনশাআল্লাহ স্মরণ হয়ে যাবে।”
[ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৬ পৃ]