৩য় অধ্যায়ঃ দরূদ শরীফ না পড়ার ক্ষতি
❏ হাদিস ১: আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে বঞ্চিত
মালেক বিন হুয়াইরিস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বরে উঠেন, প্রথম সিঁড়িতে উঠে আমীন বলেন। অতঃপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। অতঃপর তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। অতঃপর বললেন, আমার নিকট জিবরীল (عليه السلام) এসে বললেন,
হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! যে ব্যক্তি রামাযান মাসে উপনীত হওয়ার পরও তার জীবনের গোনাহকে ক্ষমা করাতে পারল না, আল্লাহ তাকে রহমত থেকে দূর করুন। আমি তা শুনে বললাম, আমীন। তারপর বলেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে পেল, অথচ (তাদের সাথে সদ্ব্যহার না করে) জাহান্নামে প্রবেশ করল, আল্লাহ তা‘আলা তাকেও তাঁর রহমত থেকে দূর করুন। আমি বললাম, আমীন।
অতঃপর বললেন, যে ব্যক্তির সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়ার পর আপনার উপর দুরূদ পাঠ করল না, সেও আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে দূর হোক। আমিও তাতে বললাম, আমীন’।
তথ্যসূত্রঃ
[সহীহ ইবনু হিববান, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩০৮, হা/৪১০, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩০৪, হা/৯০৯, সহীহ আত-তারগীব হা/৯৯৬]
❏ হাদিস ২: জাহান্নামে প্রবেশ করবে
ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যার সামনে আমার আলােচনা করা হয়, অথচ সে আমার উপর দুরূদ পড়ে না, সে যখন মারা যাবে, তখন সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা তাকে তাঁর রহমত থেকে দূর করে দেবেন।”
তথ্যসূত্রঃ
[ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮, ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ৩/১৮৮ পৃ. হা/৯০৭]
❏ হাদিস ৩: জান্নতের রাস্তা ভূলে গেল
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
من ذكرت عنده فلم سصلى على اخطأ طريق الجنه –
“যার কাছে আমার আলোচনা হল, অথচ সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে জান্নতের রাস্তা ভূলে গেল।”
[তাবারানীঃ মুজামউল কবীর, ৩য় খন্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৮৮৭, ইমাম কাজী আয়াজঃ আশ-শিফা, তাফসীরে দূররে মানসূরে খন্ড,৫, পৃষ্ঠা ২১৮ এবং ইবনে মাযাহ পৃষ্ঠা ২৯৪ বর্ণিত হয়েছে]
❏ হাদিস ৪: সে যেন বেহেশতের পথের প্রতি উদাসীন
হযরত ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
مَن ذُکِرتُ عِندهُ فخطَئ الصلاةَ عَلَيَّ خَطَئ طَريقَ الحَنَّة
যদি কারো নিকট আমার নাম স্মরণ করা হলো আর সে আমার প্রতি দূরুদ পড়ার ব্যাপরে উদাসীন থাকলো, সে যেন বেহেশতের পথের প্রতি উদাসীন থাকলো।
[কানযুল উম্মাল খন্ড,১, পৃষ্ঠা ৪৩৮]
❏ হাদিস ৫: সে আমার প্রতি জুলুম করল
হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
مَن ذُکرتُ عِنرَهُ فَلَم يُصَلِّ عَلَيَّ فَقَد شقي
“যে (ব্যক্তির) নিকট আমার আলোচনা হল, আর সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে আমার প্রতি জুলুম করল।”
তথ্যসূত্রঃ
[সুনানে ইবনে মাযাহ খঃ১ পৃষ্ঠা১৪০, হাদীস ৪০০, মুসান্নিফে আবদুর রাজ্জাক, ২য় খন্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩১২৬]
❏ হাদিস ৬: ঐ ব্যক্তির নাক ধুলোয় ধূসরিত হােক
ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) করেন,
-“ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হােক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হােক) যার, নিকট আমার নাম আলােচনা হল অথচ আমার প্রতি দুরূদ পড়লাে না। ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হােক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হােক), যার নিকট রমজান আসলাে এবং চলে গেলাে অথচ তার মাগফিরাত হল না এবং ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হােক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হােক), যে বৃদ্ধাবস্থায় তার পিতা-মাতাকে পেল অথচ তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাল না। (অর্থাৎ তাদের আনুগত্য ও সেবা করেনি যাতে তারা জান্নাতের যােগ্য হতে পারতাে।)
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৫০ পৃ. হা/৩৫৪৫, হাদিসটি হাসান সহীহ বলে মেনে নিয়েছেন।
২.ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৪৪ পৃ. হা/৮৪৬৫,
৩.সহীহ ইবনে হিব্বান, ৩/১৮৯ পৃ. হা/৯০৮,
৪.ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১২/৪২১ পৃ. হা/৭৪৫,
৫.ইমাম বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ১/২৫০ পৃ. হা/১৭২,
৬.ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৮ পৃ: হা/৬৮৯,
৭.মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৮৯ পৃ. হা/২১৪৮ এবং ১৬/৩৭ পৃ. হা/৪৩৮৩০,
৮.ইমাম নববী, খুলাসাতুল আহকাম, ১/৪৪৪০ পৃ. হা/১৪৩৭,
৯.ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৭৩৪ পৃ. হা/২০১৬, এ হাদিসটির সনদও সহিহ!
১০.ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮,
১১.মেশকাত-৮৬।
❏ হাদিস ৭: তাদের উপর চরম অনুশোচনা সৃষ্টি হবে
রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেন,“যে সব লোক কোন মজলিশে বসল, আল্লাহ্ তাআলার যিকির এবং হুযুর (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়ানো হয় না, ঐ সব লোক কিয়ামতের দিন যখন তাদের পরিণাম দেখবে তবে তাদের উপর চরম অনুশোচনা সৃষ্টি হবে। যদিও তারা জান্নাতে প্রবেশ করে।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৩য় খন্ড, ৪৮৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৯৭২)
❏ হাদিস ৮: সে ব্যক্তি দুর্ভাগা
ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এ হাদিস হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“সে ব্যক্তি দুর্ভাগা, যার সামনে আমার আলােচনা করা হয়, আর সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ে না।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৪/১৬২ পূ, হা/৩৮৭১।
২.ইমাম তাবরানী, মুজামুল কবির, ৩/১২৭ পৃ. হা/২৮৮৫।
৩.ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮।
৪.আমলুল ইয়াউম ওয়াল লাইলাতি ইবনিস সুন্নতী, ৩৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৮১।
দুরূদ শরীফ বর্জনকারী বড়ই কৃপণ
❏ হাদিস ৯:
হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
البخيل الذى من ذكرت عنده فلم يصل على
অর্থাৎ, “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলোচনা হল, আর সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।”
তথ্যসূত্রঃ
[মেশকাত শরীফের ৮৭নং পৃষ্টা, মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৭৩৬]
❏ হাদিস ১০:
“হযরত হুসাইন ইবনে আলি (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন,
البَخِيلُ مَن ذُکِرتُ عِندَهُ فَلَم يُصَلِّ عَلَيَّ
"চরম কৃপণ হলাে ঐ ব্যক্তি, যার নিকট আমার আলােচনা করা হল অথচ সে আমার উপর দুরূদ পাঠ করলাে না।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৫০ পৃ, হা/৩৫৪৬, ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) বলেন, -“এ হাদিসটি হাসান, সহীহ, গরীব।
২.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৭৯, সাকলাইন প্রকাশনী।
৩.মুসনাদে আহমাদ,খন্ড,১ পৃষ্ঠা ২০১।
৪.সূনানে তিরমিযিঃ কিতাবে দোয়া খন্ড,১৩, পৃষ্ঠা ৬২-৬৩।
৫.ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল খন্ড,১, পৃষ্ঠা ৪৩৭, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৩৩৬-৩৩৮ ও ৪৫৩, এ ধরনের হাদীস হযরত আউফ বিন মালেক (رضي الله عنه), ইমাম হাসান (رضي الله عنه), হযরত জাবির (رضي الله عنه), হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه), কাতাদাহ (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণিত।
৬.ইমাম সুয়ূতীঃ তাফসীরে দূররুল মানসূর খন্ড,৫, পৃষ্ঠা ২১৮ এবং
৭.ইমাম নববীঃ রিয়াদুস সালেহীন পৃষ্ঠা ৩৮২।
❏ হাদিস ১১:
ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) সহ আর অনেকে সংকলন করেন এভাবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“সেই লােকই সবচেয়ে কৃপণ যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলাে আর সে দুরূদ পড়লাে না।”
তথ্যসূত্রঃ
[সহীহ ইবনে হিব্বান, ৩/১৯০ পৃ. হা/৯০৯, ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮]
❏ হাদিস ১২:
হযরত আবু যার গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
ان البخيل الناس من ذكرت عند فلم يصلى على
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সবচেয়ে বড় কৃপণ ব্যক্তি হল, যার সামনে আমার নাম উলেখ করা হয়েছে, অথচ আমার উপর সে দুরূদ পাঠ করে না।
তথ্যসূত্রঃ
[ফযলুস সালাত আ'লান নাবিয়্যীন- ৩৭]
❏ হাদিস ১৩:
হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, হে লোকেরা! আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে কৃপণ কে বলব না? সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! (ﷺ) বলুন, হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, من ذكرة عنده فلم يصل على যার সামনে আমার নাম ধরা হবে আর সে আমার উপর দুরূদ পড়ল না।
তথ্যসূত্রঃ
[কাশফুল গোম্মাহ- সূত্র মাওয়াইজে রেজভিয়্যাহ- ২য়/২১০পৃষ্টা]
❏ হাদিস ১৪:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হবে, সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিনে আমার যিয়ারত হতে বঞ্চিত থাকবে। হযরত আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সে ব্যক্তির কয়েকটি আ'লামত বা নিশানা বলে দিন। হাশরের দিন কোন ব্যক্তি আপনার জিয়ারত হতে মাহরূম হবে। তিনি (রাসূলুল্লাহ দ:) বললেন, কৃপণ ব্যক্তি। হযরত আয়শা (رضي الله عنه) আরয করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনি কোন কৃপণের কথা বলেছেন? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এমন কৃপণ যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করার পর আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ে না। সেই কৃপণের ব্যাপারে বলছি।
তথ্যসূত্রঃ
[মাওয়াইজে রেজভিয়্যাহ- ২য় খন্ড- ২১১ পৃ:]