অধ্যায়: হজ্জ্ব, আজান, নামাজ, ইকামাত, মসজিদ ও ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ পাঠ।


❏ হাদিস ১-২০:

❏ আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালাম।

❏ আযানের পর দুরূদ ও সালাম।

❏ ইকামাতের পূর্বে দুরূদ ও সালাম।

❏ মসজিদে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম।

❏ হাদিস ১-৭: 

➡নামাজের মধ্যে দুরূদ পাঠ সম্পর্কিত হাদিস ও মাসায়েল।

❏ হাদিস ১-৮:

❏ মোনাজাতের মধ্যে দুরূদ পাঠ। 

❏ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুরূদ।

❏ ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম।

❏ তালবীয়াহ পাঠ শেষ করার পর দুরূদ পড়া

❏ সাফা ও মারওয়ার মাঝে দুরূদ শরীফ পাঠ

❏ রওজা শরীফ যিয়ারতের সময় দুরূদ শরীফ পড়া।

❏ হাদিস ১-১৫ : 

➡বিভিন্ন শব্দে দুরূদ শরীফ পাঠ

❏ হাদিস ১-১৭ :

➡রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সহ অন্যান্য যাদের উপর দুরূদ পড়া যায়, বিভিন্ন শব্দে দুরূদে ইব্রাহীম।

আরো কিছু দুরূদ শরীফ। 



৮ম অধ্যায়: আজান, ইকামাত, নামাজ, মসজিদ ও ঘরে দুরূদ পাঠ।


আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালাম



❏ হাদিস ১:


সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু) বলেন-


يَا أَيهَا الَّذين آمنُوا صلوا عَلَيْهِ أثنوا عَلَيْهِ فِي صَلَاتكُمْ وَفِي مَسَاجِدكُمْ وَفِي كل موطن


-‘‘মহান রবের ঘোষণা হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবিবের উপর দুরূদ সালাম পাঠ কর। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এ আয়াতের মধ্যে দুরূদ-সালাম নামাযে, মসজিদের মধ্যে এবং এমনকি সর্বাবস্থায় (আযানের আগে পড়ে বলতে কোন কথা নেই) পড়ার হুকুম দেয়া হয়েছে।’’ 

[আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ১/৪২২পৃ. দারুল উরুবাত, কুয়েত, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৪০৭হি.]


❏ হাদিস ২:


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ بِلَالٌ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُقِيمَ الصَّلَاةَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللهُ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত বেলাল (رضي الله عنه) যখন ইকামাত (ইকামাতও এক প্রকার আযান) দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি নবীজির প্রতি সালাম পেশ করতেন এভাবে

السلام عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللَّهُ 

হে আল্লাহর নবি আপনার প্রতি সালাম.....।’’ 

[হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/৭৫পৃ. হাদিস নং. ২৩৮৯]


❏ হাদিস ৩:


‘‘আপনার জিকির (দুরূদ, সালাম, আলোচনা) কে আমি বুলন্দ করে দিয়েছি।’’ [সুরা ইনশিরাহ : আয়াত:৪]


উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে একটি হাদিস বর্ণিত আছেঃ


وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّهُ قَالَ: أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ رَبِّي وَرَبَّكَ يَقُولُ: كَيْفَ رَفَعْتُ ذِكْرَكَ؟ قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ، قَالَ: إِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ مَعِي قال الهيثمي رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ -   


রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : আমার নিকট জিবরাঈল  আলাইহিস সালাম আগমন করলেন বললেন আল্লাহ পাক জানতে চেয়েছেন তিনি আপনার জিকিরকে কীভাবে বুলন্দ করেছেন? রাসূল (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন। জিবরাঈল (আ.) বলেন মহান রব আমাকে : হে হাবিব! যেখানে আমার জিকির হবে সেখানে আমার সাথে আপনার ও জিকির হবে।’’ 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম আবু ইয়ালা: আল মুসনাদ : ২/৫২২ : হাদীস : ১৩৮০, 

২.ইমাম ইবনে হাইয়্যান : আস সহীস : ৮/১৭৫: হাদীস : ৩৩৮২, 

৩.ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফিরদাউস : ৪/৪০৫ : হদীস : ৭১৭৬, 

৪.ইমাম ইবনে খাল্লাল : আল মুসনাদ: ১/২৬২ : হাদীস : ৩১৮, 

৫.ইবনে হাজার আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী : ৮/৭১২পৃ. 

৬.আল্লামা ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৪/৫২৫পৃ., 

৭.আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ: ৮/২৫৪।



আযানের পর দুরূদ ও সালাম



❏ হাদিস ৪:

 

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। 


 باب مَا يَقُولُ إِذَا سَمِعَ الْمُؤَذِّنَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَحَيْوَةَ، وَسَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ، عَنْ كَعْبِ بْنِ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم يَقُولُ ‏"‏ إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لِيَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ تَعَالَى وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ اللهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَةُ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : م [১] 


তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেনঃ তোমরা আযান শুনতে পেলে মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রুপ বলবে। তারপর আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে। কেননা কেউ আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করলে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ প্রার্থনা করবে। ওয়াসিলাহ হচ্ছে জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদার আসন, যার অধিকারী হবেন আল্লাহর একজন বিশিষ্ট বান্দা। আমি আশা করছি, আমিই হবো সেই বান্দা। কেউ আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ্ প্রার্থনা করলে সে আমার শাফা‘আত পাবে।


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম মুসলিম : আস সহীহ : ১/১০২পৃ. কিতাবুস সালাত: হাদীস : ৩৮৪, 

২.খতীব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১৪০ : হাদীস : ৬০৬, 

৩.আবু দাঊদ : আস সুনান : ১/৩৫৯পৃ. কিতাবুত সালাত : হাদীস : ৫২৩,

৪.নাসাঈ : আস-সুনান : কিতাবুল আযান, ২/২৫পৃ. হাদীস  ৬৭৮, অনুঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ, হাদিস ৬৭৭।

৫.ইবনে মাজাহ : আস সুনান :  ১/৮২পৃ .হাদিস : ৭১০, 

৬.সুয়ূতী : জামেউস সগীর : ১/৫৫পৃ, হাদীস : ৭০২, 

৭.তিরমিযী (অধ্যায়ঃ মানাকিব, অনুঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মর্যাদা), ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : কিতাবুস সালাত, ৫/৫৪৭পৃ হাদীস : ৩৬১৪। 



ইকামাতের পূর্বে দুরূদ


❏ হাদিস ৫:


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ بِلَالٌ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُقِيمَ الصَّلَاةَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللهُ

-‘তিনি বলেন হযরত বেলাল (رضي الله عنه) যখন ইকামাত (ইকামাতও এক প্রকার আযান) দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি নবীজির প্রতি সালাম পেশ করতেন এভাবে,

السلام عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللَّهُ 

হে আল্লাহর নবি আপনার প্রতি সালাম.....।’’ 

(হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/৭৫পৃ. হাদিস নং. ২৩৮৯)


আজান ও ইকামাতের পূর্বে দুরূদ পড়া মুস্তাহাব নিম্নে বর্ণিত কিতাবগুলোতে বিস্তারিত রয়েছেঃ 


১.ইমাম কাজী আয়াজ: শিফা শরীফ : ২/৪৩পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন,

২.আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: শরহে শিফা : ২/১১৬পৃ দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন,

৩.আল্লামা সায়ীদ উল্লাহ খান ক্বাদেরী : তাখরীজে জাআল হক: ৭৮১পৃ)

৪.ইমাম আবু সাইয়েদ বকরী : ফতহুল মুঈন : ১/২২৩পৃ.)

৫.জাযরী,কিতাবুল ফিকহু আ‘লা মাযাহাবিল আরবা‘আ, ১/৩২৬পৃ.,

৬.আহলে হাদীস ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ৩০৮পৃ।

৭.মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলুস সুন্নাহ।



মসজিদে প্রবেশ ও বাহিরের সময় দুরূদ শরীফ পড়া 



❏ হাদিস ৬:


হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে পাক (ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন-  

"বিছমিল্লাহি আল্লহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন", 

আর যখন বের হতেন তখনও বলতেন -

"বিছমিল্লাহি আল্লহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনুস সুন্নী, আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, পৃষ্ঠা-১৮১। 

(২) ইবনে হাজার আসকালানী, নাতায়েযুল আফকার, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৮২ 

(৩) লিছানুল মিজান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩১৬। 


❏ হাদিস ৭:


আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, 

عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛  فَلْيُسَلِّمْ علَى النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وليقُلْ: اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيَقُلْ: اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ".

(سنن ابن ماجه, رقم الحديث ৭৭২, وسنن أبي داود, رقم الحديث ৪৬৫, واللفظ لابن ماجه, وصححه الألباني).

অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নাবী কারীম (ﷺ) এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:  

"اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ".

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার রহমতের দরজা আমার জন্য খুলে দিন। 

আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে এই দোয়াটি পাঠ করে:

  "اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ".

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলূকা মিস ফাদ্বলিকা।”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি”।


তথ্যসূত্রঃ

১) সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৭৭২ এবং 

২) সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫

৩) ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ,: ১/২৯৮পৃ. হাদিস: ৩৪১৫ও  ৬/৯২পৃ. হাদিস, ২৯৭৬৭, 


❏ হাদিস ৮:


আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, 

وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَن ّرَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, وَلْيَقُلْ: اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, وَلْيَقُلْ: اَللَّهُمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ".

(سنن ابن ماجه, رقم الحديث ৭৭৩, وسنن أبي داود, رقم الحديث ৪৬৫, واللفظ لابن ماجه, وصححه الألباني).

অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: 

তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নবী কারীম (ﷺ) এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:  

"اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”। 

আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে নবী কারীম (ﷺ) এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:  

  "اَللَّهمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত ও অভিশপ্ত শয়তান হতে রক্ষা করুন”।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৭৭৩ এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫] 


❏ হাদিস ৯:


ফাতেমা বিনতু মুহাম্মাদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, 

وَعَنْ فَاطِمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهاَ قَالَتْ: كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ المَسْجِدَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: "رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ"، وَإِذَا خَرَجَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: "رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ".

(جامع الترمذي, رقم الحديث ৩১৪, وسنن ابن ماجه, رقم الحديث ৭৭৩, واللفظ للترمذي, وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن, وصححه الألباني).

অর্থ: “আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যখন মাসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দুরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন: 

"رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ". 

অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”। 

আর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যখন মাসজিদ থেকে বের হতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দুরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন: 

" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ".

অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।


[জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৪ এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৭৭৩]



মসজিদে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম পেশ



❏ হাদিস ১০:


হযরত আমর ইবনে হাযম (رضي الله عنه) বলেন,

عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، اللَّهُمَ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَالْجَنَّةَ

রাসূল (ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি বলতেন আল্লাহর হাবিবের উপর সালাম ও সালাম বর্ষিত হউক। তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন…(১)।’’ 

(ইমাম আবদুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ,: ১/৪২৫পৃ.হাদিস:১৬৬৩, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)


❏ হাদিস ১১:


أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَلَامٍ كَانَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعَوَّذَ مِنَ الشَّيْطَانِ

"নিশ্চয়ই হযরত আবদুুল্লাহ বিন সালাম (رضي الله عنه) তিনি যখন কোন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি প্রথমে নবিয়ে দোজাহান (ﷺ) কে সালাম দিতেন তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন।(১)’’ 


তথ্যসূত্রঃ

(ক) ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৯৭পৃ. হাদিস : ২৯৭৬৮ 

(খ) ইবনে আবি উসামা ইবনে হারেস (ওফাত.২৮২হি.), মুসনাদে হারিস, ১/২৫৪পৃ.হাদিস,১/২৫৪পৃ.হাদিস,১৩০, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)


❏ হাদিস ১২:


হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ،

"রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে অতঃপর সে যেন তাঁর রাসূলের প্রতি সালাম দেয়। তারপর বলবে এই (মসজিদে প্রবেশের) দোয়া.....(১)..।’’


টিকা____________________________

🔺১.

মসজিদে প্রবেশ কালে দু‘আঃ

اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِيْ اَبْوَابَ رَحْمَتِكَ 

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার রহমতের দরজা আমার জন্য খুলে দাও।]

🔺২.

মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দোয়াঃ

اَللّٰهمَّ اِنِّي اَسْٮَٔلُكَ مِنْ فَضْلِكِ 

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলূকা মিস ফাদ্বলিকা।”

অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আপনার দয়া প্রার্থনা করি।

________________________________


❏ হাদিস ১৩:


এ বিষয়ে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতেও আরেকটি হাদিসে পাক বর্ণিত আছে।’’ 

وَقَال النَّخَعِيّ إذَا لَم يَكُن فِي الْمَسْجِد أَحَد فَقُل: السَّلَام على رسول الله صلى الله عليه وَسَلَّم وَإذَا لَم يَكُن فِي البَيْت أَحَد فَقُل: السَّلَام عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَاد اللَّه الصَّالِحِين

-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহিম নাখাঈ (رحمة الله) বলেন, যখন মসজিদের মধ্যে কোন লোক থাকবে না তখন রাসূল (ﷺ) কে সালাম দিবে এবং যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে আল্লাহর মাহবুব বান্দাগন আপনাদের প্রতি সালাম।’’

তথ্যসূত্রঃ

(ইমাম কাযী আয়ায : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৬৭পৃ. মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)


❏ হাদিস ১৪:



عن عبد الملك بن سعيد بن سويد، قال: سمعت ابا حميد، أو أبا أسيد الأنصاري يقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، ثم ليقل: اللهم <ص:۱۲۷» افتح لي أبواب رحمتك، فإذا خرج قليقل: اللهم إني أسألك من فضلك "، رواه أبو داود وابن ماجه والدارمي،

وقال الرازي : قال أبو زرعة : عن أبي حميد وابي أسيد كلاهما عن النبي صلى الله عليه وسلم أصح . وقال المناوي : إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم ندبا مؤكدا أو وجوبا علي النبي صلي الله عليه وسلم لأن المساجد محل الذكر ، والسلام علي النبي صلى الله عليه وسلم منه .


হযরত আবু হােমাইদ আস্-সায়েদী বা আবু উসাইদ আল আনছারী (رضي الله عنه) বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরম (ﷺ) বলেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন তার উচিৎ যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)-এর উপর সালাম প্রেরণ করা। তারপর বলবে, হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখন বলবে। হে আল্লাহ! আমি আপনার থেকে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।


এ হাদিসকে ইমাম আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ এবং দারেমী বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু হাতেম রাজী বলেন যে, ইমাম আবু জুরআ’ বলেন, হযরত আবু হােমাইদ এবং আবু ওসাইদ (رضي الله عنه) উভয় থেকে বর্ণিত বর্ণনাসমূহ বিশুদ্ধতম। এবং ইমাম মুনাভী বলেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন তার উচিৎ হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে সালাম পেশ করাকে পছন্দনীয় এবং আবশ্যকীয় মনে করে আবেদন করা, কেননা মসজিদ হল জিকির করার স্থান এবং হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে সালাম পেশ করাও আল্লাহর জিকির এর শামিল।


তথ্যসূত্রঃ

(১)দারেমী :  আস্ সুনান, ১/৩৭৭, হাদিস : ১৩৯৪।

(২)ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাআত, ১/২৫৪, হাদিস : ৭৭২।

(৩-৪)বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/৬১৯পৃ. হাদিসঃ ৪৩১৭ ও ২/৬১৯পৃ. হাদিসঃ ৪৩১৯, 

(৫)আবু দাউদ : আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত, ১/১২৬, হাদিস : ৩৬৫।

(৬)বাযযার, আল-মুসনাদ, ৯/১৬৯পৃ. হাদিসঃ ৩৭২০, 

(৭)নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ১/৪০৪পৃ. হাদিসঃ ৮১০, 

(৮)নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/২২০পৃ. হাদিস,১৭৭, 

(৯)আবূ আওয়ানাহ, আল-মুসনাদ, ১/৩৫৪পৃ. হাদিস, ১২৩৪ 

(১০)ইবনে হিব্বান : আস্ সহীহ, ৫/৩৯৭, হাদিস : ২০৪৮।

(১১)রাযী : ইলালুল হাদীস, ১/১৭৮, হাদিস : ৫০৯।

(১২)ড: তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন।

(১৩)মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ।


❏ হাদিস ১৫:


عن فاطمة بنت الحسين، عن جدتها فاطمة الكبرى قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل المسجد صلى على محمد وسلم، وقال: رب اغفر لي ذنوبي، وافتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرج صلى على محمد وسلم، وقال: رب اغفر لي ذنوبي، وافتح لي أبواب فضلك. رواه الترمذي وأحمد وعبد الراق.

وفي رواية يقول : بسم الله والسلام علي رسول الله .......... فذكر الحديث نحوه.  رواه ابن ماجه وابن أبي شيبة .


 وفي رواية : قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل المسجد صلي على محمد وسلم ....... فذكر الحديث نحوه.  رواه احمد وابو يعلي والتبراني-

وفي رواية : قالت : قال : السلام عليك أيها النبي ورحمه الله وبرگاته ، اللهم اغفرلي ذنوبي وافتح لي أبواب رزقك . رواه أبو يعلي في المعجم،


হযরত ফাতেমা বিনতু হােছাইন (رضي الله عنه) নিজ দাদীজান সৃষ্টি জগতের সৈয়দা ফাতেমাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বললেন, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) মসজিদে প্রবেশ করার সময় মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ)’র উপর সালাত ও সালাম পড়তেন, অতঃপর এ দোয়া বলতেন, হে রব! আমার জন্য আমার (অর্থাৎ উম্মতের) পাপ মােচন করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। এবং বাহির হওয়ার সময়ও মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) এর উপর সালাত ও সালাম পড়তেন, অতঃপর এ দোয়া চাইতেন। হে আমার রব! আমার জন্য আমার (উম্মতের) পাপ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ খুলে দিন।

এ হাদিসকে ইমাম তিরমিজী আহমদ এবং আবদুর রাজ্জাক বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার হাদিস হাসান।


অপর এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত (ﷺ) বলতেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ তা'আলার রাসূল (ﷺ) এর উপরও সালাম হােক... তারপর এরূপে হাদিস বয়ান করেন। ইহাকে ইমাম ইবনু মাজাহ এবং ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।


অপর এক বর্ণনায় সৈয়দা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) এর উপর সালাম প্রেরণ করতেন এবং এরূপে মসজিদ থেকে বাহির হওয়ার সময়ও মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ)’র উপর সালাম প্রেরণ করতেন, ইহার পর পূর্ববর্তী হাদিসের দোয়া বয়ান করলেন। ইহাকে ইমাম আহমদ, আবু ইয়া’লা এবং ত্বাবরানী বর্ণনা করেছেন।


আরেক বর্ণনায় আছে যে, সৃষ্টিজগতের সৈয়দা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বয়ান করলেন যে, হযরত (ﷺ) ইহাই বলতেন, হে আল্লাহর নবী! আপনার উপর শান্তি হােক এবং আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত হােক। এ হাদিসকে ইমাম আবু ইয়া'লা আল-মু'জম এ বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

ক. তিরমিযী : আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত ২/১২৭, হাদিস : ৩১৪।

খ. ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাআত, ১/২৫৩, হাদিস : ৭৭১।

গ. ইবনে আবূ শায়বা : আস্ মুসান্নাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৬। এবং ৬/৯৬, হাদিস : ২৯৭৬৪।

ঘ. আবদুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ, ১/৪২৫, হাদিস : ১৬৬৪।

ঙ. আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ, ৬/২৮২-২৮৩, হাদিস : ২৬৪৫৯-২৬৪৬২।

চ. আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ১২/১২১, ১৯৯, হাদিস : ৬৭৫৩, ৬৮২২। এবং আল মু'জাম, ১/৫৪, হাদিস : ২৪।

ছ. তাবরানী : আল মু'জামূল কবীর, ২২/৪২৪, হাদিস : ১০৪৪। এবং আদ্ দোয়া, ১/১৫০, হাদিস : ৪২৩-৪২৬। 

জ.ড: তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন।


❏ হাদিস ১৬:


عن أبي هريرة، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: " إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، وليقل : اللهم افتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرج، فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، وليقل : اللهم اعصمني من الشيطان الرجيم"

رواه ابن ماجه والنسائي والبخاري في الكبير. وقال الحاكم : هذا حديث صحيح علي شرط الشيخين . وقال الكناني : هذا إسناد صحيح ورجاله ثقات .


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) বললেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ কর, তখন তার উচিৎ যে, তিনি হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে সালাম পেশ করবে এবং (এর পর) ইহা বলবে, হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা সমূহ খুলে দিন। এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে, তখনও হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে সালাম পেশ করবে এবং (ইহার পর) বলবে হে আমার আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে বাচান।


অপর এক বর্ণনানুযায়ী বললেন, তার উচিৎ যে, সে (সালাম পেশ করার পর) বলবে, হে আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে দুরে রাখুন।

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু মাজাহ, নাসাঈ এবং বুখারী আত্তারিখুল কবর এ বর্ণনা করেছেন। এবং ইমাম হাকেম বললেন, এ হাদিস ইমাম বুখারী ও মুসলিম এর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ। ইমাম কেনানী বললেন, এ হাদিসের সনদ সহীহ এবং ইহার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযােগ্য।


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাত, ১/২৫৪, হাদিস : ৭৭৩। 

(২) বাযযার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৬৮পৃ. হাদিসঃ ৮৫২৩,

(৩) ইবনে খুযায়মা, আস্-সহিহ, ১/২৩১পৃ. হাদিসঃ ৪৫২,  

ও ৪/২১০পৃ. হাদিসঃ ২৭০৬ 

(৪) ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ৫/৩৯৫পৃ. হাদিসঃ ২০৪৭,

(৫) নাসায়ী : আস্ সুনানুল কুবরা, ৬/২৭, হাদিস : ৯৯১৮। 

(৬) বুখারী : আত্ তারীখুল কুবরা, ১/১৫৯, হাদিস : ৪৭০। 

(৭) হাকেম : আল মুসতাদরাক, ১/৩২৫, হাদিস : ৭৪৭।

(৮) কেনানি : মিসবাহুয যুযাজাহ, হাদিস : ২৯৩


❏ হাদিস ১৭:


عن محمد بن عبد الرحمن، أن عبد الله بن سلام كان إذا دخل المسجد سلم على النبي صلى الله عليه وسلم، وقال: «اللهم افتح لي أبواب رحمتك» ، وإذا خرج سلم على النبي صلى الله عليه وسلم وتعوذ من الشيطان .

 رواه ابن أبي شيبة .


হযরত মুহাম্মদ ইবনু আবদির রহমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (رضي الله عنه) যখনই মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর সালাম প্রেরণ করতেন তারপর বলতেন “আল্লাহুম্মফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা” (হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ খুলে দিন) এবং যখন মসজিদ থেকে বের হয়ে আসতেন তখনও হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র উপর সালাম প্রেরণ করতেন অতঃপর বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চেয়ে নিতেন (তাঁর এই আমল হুযূর (ﷺ)’র ওফাত মেশকের পর সর্বদা প্রচলিত ছিল।)

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

[ইবনে আবূ শায়বা : আল্ মুসাননাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৬]


❏ হাদিস ১৮:


وفي رواية : عن عقلمة أنه كان إذا دخل المسجد قال: «السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، صلى الله وملائكته على محمد»

رواه ابن أبي شيبة.


এক বর্ণনায় হযরত আলকামা (رضي الله عنه) বয়ান করেন যে, যখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন “আচ্ছালামু আলাইকা আইয়ুহান নবীত্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সাল্লাল্লাহু ওয়ামালাইকাতুহু আ'লা মুহাম্মাদিন (ﷺ)। (হে সম্মানিত নবী! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর দয়া এবং বরকতসমূহ হােক (সর্বদা) আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দয়া এবং তার ফেরেশতাদের পক্ষ থেকেও মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) এর উপর দুরূদ ও বরকতসমূহ হােক।)

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

[ইবনে আবূ শায়বা : আল্ মুসাননাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৭]


❏ হাদিস ১৯:


وفي رواية : عن إبراهيم كان إذا دخل المسجد قال: « بسم الله والصلاة على رسول الله» ، وإذا دخل بيتا ليس فيه أحد قال: «السلام عليكم» رواه ابن أبي شيبة .


এক বর্ণনায় হযরত ইবরাহীম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন, “বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু আ'লা রাসুলিল্লাহি” (আল্লাহ্ তা'আলার নামে এবং হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র উপর দুরূদ প্রেরণের সাথে আমি এ মসজিদে প্রবেশ করছি।) এবং যখন এমন কোন ঘরে প্রবেশ করতেন, যেখানে কোন কেউ নাই, তখন বলতেন “আসসালামু আলায়কুম” (আপনার উপর শান্তি হােক)। 

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

[ইবনে আবূ শায়বা : আল্ মুসাননাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৮]


❏ হাদিস ২০:


হযরত সাহল (رضي الله عنه) বলেন, আমি নবীজী (ﷺ) কে সালাম করার জন্য আসলাম। তখন হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) নবীজী (ﷺ) এর পাশের ঘরে রাত্রের খাবার গ্রহণ করছিলেন। তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি সাড়া দিলাম। তিনি বললেন, আসুন যাতে আমার সাথে নৈশ্যভোজে অংশ নিতে পারেন। আমি বললাম, জি না আমার প্রয়োজন নেই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তাহলে কেন দাঁড়িয়ে আছেন? আমি বললাম- وقفت اسلم على النيى صلى الله عليه وسلم 

অর্থাৎ, আমি নবী করীম (ﷺ) কে সালাম করার জন্য দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি। তিনি বললেন- اذا دخلت المسجد فسلم عليه  যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন তাকে সালাম করবে। 


নামাজের মধ্যে দুরূদ পাঠ সম্পর্কিত হাদিস ও মাসায়েলঃ



❏ হাদিস ১:


ইমাম তাবরানী (رحمة الله) মারফু সূত্রে হযরত সাহল বিন সাদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, 

لاصَلاةَ لِمَن لا يُصَلّي علي النَّبي

 (ص)

"যে নামাযে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি দূরুদ পড়ল না তার নামায নামাযই নয়।"


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম দারাকুতনী, আস-সুনান, ২/১৭০ পূ, হা/১৩৪২, 

২.ইমাম বায়হাকী, আল-মা'রিফাতুল সুনাল ওয়াল আছার, ৩/৬৯ পৃ. হা/৩৭২০, 

৩.ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৪০২ পৃ. হা/৯৯২, 

৪.ইমাম বায়হাকীঃ আস-সুনানুল কোবরা, ২/৫২৯ পৃ, হা/৩৯৬৭, 

৫.ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ৬/১২১ পৃ. হা/৫৬৯৮. ৩০৯। 

৬.ইমাম শিহাবুদ্দীন আল-কাস্তালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৪র্থ খন্ড, পৃ ১৫৭, সাকলাইন প্রকাশনী।

৭.সূনানে ইবনে মাযাহ খঃ ১, পৃঃ ১৪০, হাদীস ৪০০


❏ হাদিস ২:


ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) ও ইবনে মাযাহ (رحمة الله)  হযরত আবু মাসউদ আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, 

-“যে নামায পড়লাে আর আমি নবী (ﷺ) এবং আহলে বায়াতের উপর সালাত পড়লাে না তার নামায কবুল হবে না।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম দারাকুতনী, আস-সুনান, ২/১৭০ পূ, হা/১৩৪৩, 

২.ইমাম যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, ১৪২ পৃ., তিনি বলেন- “সনদে জাবের যঈফ রাবী, তার হাদিস নিয়ে অনেক আলােচনা-সমালােচনা রয়েছে।” 

৩.ইমাম শিহাবুদ্দীন আল-কাস্তালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৪র্থ খন্ড, পৃ ১৫৮, সাকলাইন প্রকাশনী।


❏ হাদিস ৩:


عن عبيد الله بن بريدة عن ابيه رضي الله تعالى عنه قال : قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : یا بريده ، إذا جلست في صلاتك ، قلاتتركن التشهد والصلاة على فانها زكاة الصلاة ، وسلم على جميع أنبياء الله ورسوله ، وسلم على عباد الله الصالحين .

رواه الدار قطني والديلمي.


হযরত ওবাইদুল্লাহ ইবনু বুরায়দা নিজ পিতা হযরত বুরায়দা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, হে বুরায়দা! যখন তুমি নিজ নামায পড়তে বসবে, তখন তাশাহহুদ এবং আমার উপর দুরূদ প্রেরণকে কখনাে ছেড়ে দেবে না। উহা নামাযের যাকাত। এবং আল্লাহ তা'আলার সমস্ত নবী এবং রাসূলগণের উপর এবং তাঁর নেক বান্দাদের উপরও সালাম প্রেরণ কর।

এ হাদিসকে ইমাম দারুকুতনী এবং দায়লামী বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

১. দারে কুতনী : আস্ সুনান, ১/৩৫৫, হাদিস: ৩

২. দায়লামী : আল্ মুসনাদুল ফেরদাউস, ৫/৩৯২, হাদিস: ৮৫২৭;

৩. হায়সামী : মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, ২/১৩২;

৪.ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন।


❏ হাদিস ৪:

 

ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) “কিতাবুল উম্ম” গ্রন্থে বলেন যে, আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে কারীমার দ্বারা নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠানাে ফরয করেন, নিশ্চয় আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ এ নবীর উপর দুরূদ প্রেরণ করেন, হে ইমানদারগণ, তোমরাও তাঁর প্রতি তাজিমের সাথে দুরূদ ও সালাম প্রেরণ কর।

[ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯২, সাকলাইন প্রকাশনী।]


❏ হাদিস ৫:

 

ইমাম উমারী  (رحمة الله) “আমালিল ইয়ামি ওয়াল লাইল” গ্রন্থে হযরত ইবনে উমর  (رحمة الله) শক্তিশালী সনদে বর্ণনা করেন, তিনি। বলেন, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

“কিরাত তাশাহুদ আর আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়া ব্যতিত নামায হয় না।"

[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/১৬৪ পৃ., ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯৫, সাকলাইন প্রকাশনী।]


ব্যাখ্যাঃ 


ইমাম যুরকানী  (رحمة الله) বলেন যে, উক্ত বর্ণনায় ওয়াজিবের কোন দলিল নেই, কারণ, যে, এর দ্বারা পূর্ণাঙ্গতার নিষেধ করা হয়। আর এ মমার্থ বেশী যুক্ত হয়, কারণ তাশাহুদের  হাদিস সমূহে দুরূদ শরীফের উল্লেখ নেই। (মানে, নামাজ অপূর্নাঙ্গ রয়ে যায়) 

(আল্লামা যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৩৪ পৃ.) 


❏ হাদিস ৬: 


হযরত আবু জাফরের হাদিসে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে নামাযে আমার উপর আমার আহলে বাইতের উপর দুরূদ শরীফ না পড়ে। তার নামায কবুল হবে না।” 

[সুনানে দারাকুতনী, ২/১৭১ পৃ. হা/১৩৪৩, ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯৬, সাকলাইন প্রকাশনী।]


ব্যাখ্যাঃ


◾ইমাম দারাকুতনী  (رحمة الله) বলেন, সহীহ হলাে এই যে, এ ইমাম আবু জাফর  (رحمة الله) মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হাসান (رحمة الله) এর অভিমত থেকে তিনি বলেন, যদি আমি নামায পড়ি আর তাতে নবী আকরাম (ﷺ) ও তাঁর পরিবার বর্গের উপর দুরূদ শরীফ না পড়ি, তখন আমি মনে করি যে আমার নামায পূর্ণাঙ্গ হয়নি। 

[ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯৬,সাকলাইন প্রকাশনী।]


◾মিশরের ফিকহবিদগণের (বিভিন্ন শহরের ফিকহী) মধ্যে হযরত ইমাম আহমদ  (رحمة الله) এক বর্ণনা অনুযায়ী- ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) এর আনুগত্য করেন, আর শেষে এর উপর আমল করেন, যেভাবে তার থেকে (তাঁর শিষ্য) ইমাম আর যারওয়া দামশকী  (رحمة الله) (আবু যারওয়া বিন আবদুর রহমান বিন আমর বিন আবদুল্লাহ বিন সাফওয়ান আন-নাসায়ী, হাফেজুল হাদিস ওফাত-২৮০ হিজরি) বর্ণনা করেন, আর এ অভিমত কে আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীর  (رحمة الله) করেন। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াই  (رحمة الله) বলেন যে, 

"যদি কোন ব্যক্তি ভুল করে নয়, বরং জেনে শুনে দুরূদ শরীফ না পড়ে, তাহলে তার নামাজ ওয়াজিব হবে।"

আর ইমাম আহমদ  (رحمة الله) থেকে প্রসিদ্ধ হল এই যে, নামাজে দুরূদ ছেড়ে দেয়ায় ঐ নামায বাতিল হয়ে যায়, জেনে শুনে ছেড়ে দেয় বা ভুলে ছেড়ে দেয়। 

তাঁর অধিকাংশ শিশ্যগণ এ অভিমত এমনকি কোন কোন হাম্বলী ইমামগণ নামাজে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলা ওয়াজিব ঘোষণা করেন যে, তারা যখন আরজ করেন ইমাম আহমদ  (رحمة الله) তাদের এভাবে শিক্ষা দিতেন। অথবা ইমাম ইবনে কাসীর  (رحمة الله) অনুরূপ বর্ণনা করেন, ইমাম খারকী  (رحمة الله) স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেয়ার শর্তে ইমাম ইবনে ইসহাক  (رحمة الله) এর আনুগত্য করেন।

[ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯৬-৩৯৭]সাকলাইন প্রকাশনী।


মালেকীদের মধ্যেও মতভেদ রয়েছে , যেভাবে ইমাম ইবনে হাজেব  (رحمة الله) নামাজের সুন্নাত সমূহের বর্ণনা করে বলেন , অর্থাৎ সহীহ অভিমত অনুযায়ী মতভেদ রয়েছে। তার ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ( মুহাম্মদ) বিন আবদুস সালাম  (رحمة الله) বলেন , এর মমার্থ হলাে এই যে , ওয়াজিব হবার সম্পর্কে দু ' টি অভিমত রয়েছে । আর ইমাম ইবনে মুওয়াজ (মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন যিয়াদাহ ইস্কান্দারী) এর বর্ণনায়ও এ কথা প্রকাশ হয়েছে। 


ইমাম ইবনে কাচ্ছার  (رحمة الله) ইমাম ইবনে মুওয়াজ  (رحمة الله) থেকে এ বিষয় স্পষ্ট বর্ণনা করেন, অনুরূপ "আশ-শিফা" গ্রন্থে এ শব্দ সমূহের সাথে হয় যে, তিনি ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) এর মত যাতে ফর‍য নামাযে (ওয়াজিব) মনে করতেন।

তিনি বলেন আবু ইয়ালা (আহমদ বিন মুহাম্মাদ) আবদী  (رحمة الله) এর ধারাবাহিকতায় তিন অভিমত প্রকাশ করেন, 

( ১ ) ওয়াজিব , ( ২ ) সুন্নাত , ( ৩ ) মুস্তাহাব। 

(আদ-দিরাজুল মাযহাব, ১ম খণ্ড, ১৭৫ পৃ , আস - সিলাত , ১ম , ৮৭ পৃ.) 


◾আমি “ সিরাজুল মুরিদীন ” গ্রন্থে ইমাম কাযী আবু বকর বিন আরাবী  (رحمة الله)' র প্রতি সম্পর্কিত অভিমত সমূহের মধ্যে দেখলাম যে , ইমাম ইবনে মাওয়ায  (رحمة الله) আর ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) বলেন যে, 

নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়া নামাযের ফরযের মধ্যে হয়েছে , আর এটাই সহীহ হয়। 


যে হানাফীগণ এ অভিমতের সমর্থক হয় যে, 

"যখনই নবী আকরাম (ﷺ) এর অালোচনা করা হয়, দুরূদ শরীফ পড়া ওয়াজিব হয়।" 

যথাঃ

▪ ইমাম তাহাবী  (رحمة الله),

▪ আর ইমাম সুরুজী এটাকে “শরহে হেদায়া” গ্রন্থে “আল-মুহিত", "আল আকদ" আর "আত-তােহফা” এর গ্রন্থকার থেকে তার গ্রন্থে নকল করেন। তাই এ অভিমতের দ্বারা অবধারিত হয় যে , তিনি তাশাহুদেও দুরূদ শরীফকে ওয়াজিব ঘােষণা দেন। 


❏ হাদিস ৭:


ইমাম ইবনে খােজাইমা  (رحمة الله), ইমাম ইবনে হিব্বান  (رحمة الله) আর ইমাম হাকেম  (رحمة الله) হযরত ফোজালাহ বিন ওবায়েদা আনসারী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নি বলেন যে, নবী আকরাম (ﷺ) এক ব্যক্তি থেকে শুনেন যে, 

"সে নামাযে এভাবে দোয়া প্রার্থনা করতেছে যে, সে না তাতে আল্লাহর প্রশংসা করছে, আর না নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়তেছে। তখন তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেন, এ ব্যক্তি জলদী করছে, তারপর তিনি তাকে তার নিজের নিকট ডাকেন, আর ইরশাদ করেন, 

“যখন তােমাদের মধ্যে কোন লােক নামায পড়বে, তখন আল্লাহ তাআলার প্রশংসার সাথে শুরু করবে। তারপর নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়বে, তারপর যা ইচ্ছা দোয়া প্রার্থনা করবে।”


তথ্যসূত্রঃ

▪ ইমাম তাবরানী, মুজামুল কবীর, ১৮/৩০৭ পৃ. হা/৭৯১, 

▪ ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ৫/২৯০ পৃ. হা/১৯৬০, 

▪ ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৩৯৪ পৃ. হা/৩৪৭৭, 

▪ ইমাম আহমদ, আল আল-মুসনাদ, ৩৯/৩৬৩ পৃ, হা/২৩৯৩৭,

▪ ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৪০১ পৃ. হা/৯৮৯, 

▪ সুনানে আবি দাউদ, পৃ. হা/১৪৮১, 

▪ মুসনাদে বাযযার, হা/৩৭৪৮, 

▪ আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, হা/৩৩৩০, 

▪ ইমাম কাসতালানী, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), ৩৯৯ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।


ইমাম যুরকানী  (رحمة الله) বলেন, উক্ত হাদিস দ্বারা ওয়াজিব প্রমাণ হয় না, যদি তাই হতো ঐ ব্যক্তিকে পুনরায় নামায পড়ার হুকুম দিতেন। (আল্লামা যুরকানী, শারহুল মাওয়াহিব ৩৭ পৃ.)


আমি গ্রন্থকার (ইমাম কাস্তালানী) বলতেছি যে, আমার ইমাম, ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله)'র কারামতের মধ্যে এটাও এক বিষয় যে ইমাম কাযী আয়ায  (رحمة الله) এ হাদিসকে নিজ সনদে ইমাম তিরমিযির সূত্রে নকল করেন, আর এ সনদ সম্পর্কে কোন ভৎর্সনা করা হয়নি। তিনি এটাকেঃ


فصل في المواطن التي تستحب فيها الصلاة على النبي - صلى الله عليه وسلم

"(এ পর্বে ঐ স্থান সমূহের উল্লেখ করা হবে, যাতে নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব হয় আর এর প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়।) 

এরপর নামাযের তাশাহুদের উল্লেখ করেন,

"আর এটা তাশাহুদের পর আর দোয়ার পর্বে হবে।" 

"আর এ হাদিস যা তােমরা দেখতেছাে, আমার দলিল সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় দলিল, অথচ এর দ্বারা ওয়াজিব প্রমাণ হয় না। এর দ্বারা ঐ দলিল সমূহের দুর্বলতা, আর হানাফী অবস্থানের শক্তি সামর্থ প্রমাণ হয়।]

তথ্যসূত্রঃ

▪ ইমাম কাসতালানী, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), ৩৯৯ পৃ। সাকলাইন প্রকাশনী।



মোনাজাতের মধ্যে দুরূদ পাঠ 



❏ হাদিস ১:


ফাযালাত বিন উবাইদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ [আবু দাউদে বর্ণিত বিষয়বস্তু অনুসারে]

আল্লাহর রাসূল (ﷺ) শুনতে পেলেন কোন ব্যক্তি নামাযে দোয়া পড়ছেন কিন্তু না আল্লাহকে স্মরণ করছে না আল্লাহর পয়গাম্বরের উপর দূরুদ পড়ছে। আল্লাহর রাসূল বললেনঃ সে তাড়াহুড়া করলো। অতঃপর তাকে ডাকলেন এবং তাকে ও অন্যদেরকে বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ নামায পড়লো সে যেন প্রথমে আল্লাহর হামদ ও সানা পড়ে,অতঃপর আল্লাহর রাসূলের উপর দূরুদ পড়ে। অতঃপর যা ইচ্ছা আল্লাহর নিকট চাইতে পারে।


তথ্যসূত্রঃ

[সূনানে আবু দাউদ খঃ ২ পৃঃ ৭৭, হাদীস ১৪৮০, সূনানে তিরমিযি, কিতাবে দোয়া খঃ ১৩ পৃঃ ২১]


❏ হাদিস ২:


অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক ব্যক্তিকে, যে নামায পড়লো ও নিজের জন্য দোয়া করলো কিন্তু না আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো এবং না আল্লাহর নবীর উপর দূরুদ পড়লো, বলেনঃ হে নামায আদায়কারী! যখনই নামায পড়লে ও বসলে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে ও আমার প্রতি দূরুদ পড়বে। অতঃপর আল্লাহর নিকট কিছু চাইবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, অপর এক ব্যাক্তিকে যে নামায পড়লো, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও রাসূলের প্রতি দূরুদ পাঠ করলো, তাকে বললেনঃ হে নামায আদায়কারী, তুমি যা দোয়া কর তা কবুল হবে। 


তথ্যসূত্রঃ

[মুসনাদে আহমাদ খঃ ৬ পৃঃ ১৮, সুনানে নাসাঈ খঃ৩ পৃঃ ৪৪, মুস্তাদরকে হাকিম কঃ ১ পৃঃ ২৬৮, ইমাম নববীঃ রিয়াদুস সালিহীন পৃঃ ৩৮২]


মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুরূদ


❏ হাদিস ৩:


হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন,

 عن على بن ابى طلب (رض) قال اذامرتم با المسجد فصلوا على النبى صلى الله عليه وسلم (فضل الصلواة على النبي)

অর্থাৎ, যখন তোমরা মসজিদের পাশ দিয়ে যাবে। তখন নবীজী (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। 

(ইমাম আবু ইসহাক কর্তৃক, ফাদ্বলুস সালাত- পৃষ্টা: ৭৯) 


ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ


❏ হাদিস ৪:


আশ-শিফা শরীফে ইমাম কাযী আয়ায আল-মালেকী (رحمة الله) একটি হাদিস সংকলন করেন,

قَالَ: إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ-

-‘‘যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে নবী (ﷺ)! আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’’ 

(ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/৪৩ পৃ, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)


এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফা গ্রন্থে লিখেন-


أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام


-‘‘কেননা, নবীজী (ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।’’ 

(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা : ২/১১৮ পৃ. দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)



তালবীয়াহ "লাব্বাইক আল্লাহুম্মাহ লাব্বাইক’ শেষ পর্যন্ত বলার পর দুরূদ শরীফ পড়বে। 


❏ হাদিস ৫:


ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) ও দারাকুতনী  (رحمة الله) হযরত কাশেম বিন মুহাম্মদ বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, তালবীয়্যাহ পাঠ সমাপ্তকারীকে হুকুম দেয়া যায় যে, সে যেন সর্বদা নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়ে। 

[সুনানে দারাকুতনী, ৩/২৫৭ পূ, হা/২৫০৭, ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৪ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।]


সাফা ও মারওয়ার মাঝে দুরূদ শরীফ পড়া। 


❏ হাদিস ৬:

 

ইমাম ইসমাঈল কাযী  (رحمة الله) হযরত উমর বিন খাত্তাব  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তােমরা যখন আসবে তাওয়াফের সাথে চক্কর লাগাবে আমি মাকামে ইবরাহীমের পাশে দুই রাকাত নামায পড়ে, সাফা পাহাড়ে এসে দাঁড়িয়ে যাবে। এমনকি বায়তুল্লাহ শরীফকে দেখে সাতবার তাকবীর বলবে, আর এর পূর্বে আল্লাহ তা'আলার হামদ ছানা পড়বে, নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়বে। আর নিজে নিজের জন্য দোয়া করবে। আর মারওয়াতেও অনুরূপ করবে। 

▪ ইমাম ইবনে কাসির  (رحمة الله) বলেন, এর সনদ হাসান অতি উত্তম ও শক্তিশালী।

[ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৪ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী]


রওজা শরীফ যিয়ারতের সময় দুরূদ শরীফ পড়া


❏ হাদিস ৭:


তাবেয়ী নাফে (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদ শরীফে প্রবেশ করে, অতঃপর রওজা আনােওয়ারে হাযির হতেন, আর এভাবে বলতেন, 

-“হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার প্রতি সালাম হােক, হে আবু বকর (رضي الله عنه)! আপনার প্রতি সালাম হােক, হে আব্বাজান [হযরত উমর (رضي الله عنه)]! আপনার প্রতিও সালাম হােক।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম আব্দুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ, ৩/৫৭৬ পৃ. হা/৬৭২৪, 

২.ইমাম বায়হাকী, মা'রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার, ৭/৫৩৩ পৃ, হা/১০৯৪০, 

৩.ইমাম বায়হাকি, আস-সুনানুল কোবরা, ৫/৪০২ পৃ. হা/১০২৭১ এবং 

৪.ইমাম বায়হাকি, আস-সুনানুস সুগরা, ২/২১০ পৃ. হা/১৭৭০, 

৫.ইমাম আবি শায়বা, ৩/২৮ পৃষ্ঠা, হা/১১৭৯৩, 

৬.ইমাম ইবনে সা'দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ৪/১১৭ পৃ. 


❏ হাদিস ৮:


❏ হযরত মালিক ইবনে আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, আর তােমাদের জন্য এ খবরের শানে এতােই যথেষ্ট হয়েছে হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওহাব (رحمة الله) তাঁর নিকট থেকে বর্ণনা করেন যে, মুসলমান বা যিয়ারতকারী এভাবে বলবে, 

-“হে আল্লাহর নবী আপনার প্রতি সালাম হােক, আর আল্লাহ তা'য়ালার রহমত ও বরকত হােক।”

[ইমাম শিহাবুদ্দীন আল-কাস্তালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৪র্থ খন্ড, পৃ ৭৬১, সাকলাইন প্রকাশনী]


❏ হযরত মালিক ইবনে আনাস (رضي الله عنه) আল-মাবসুত’ গ্রন্থে অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন, 

"নবী আকরাম (ﷺ), এরপর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) এর প্রতি সালাম পেশ। 

[আল্লামা জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৮/৩০৬ পৃ.]


 


বিভিন্ন শব্দে দুরূদ শরীফ পাঠ




❏ হাদিস ১: 


"আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিন 'আবদিকা ওয়া রাসূলিকা ওয়া ছাল্লি আলাল মু'মিনীনা ওয়াল মু'মিনাত ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত। 

[সহীহ ইবনে হিব্বান ৩/১৫৮]


❏ হাদিস ২:


রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) ইরশাদ করেন,

যে ব্যক্তি জুমার দিন এ দুরূদ শরীফটি এক হাজার বার পাঠ করবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে বেহেশতের মধ্যে তাঁর স্থান প্রত্যক্ষ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবে না। 

اللَّهُمَّ صَلّ وَسَلَّمَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِهِ ألف ألف مَرَةٍ »

‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মুহাম্মদীন ওয়া আলিহি আলফা আলফা মররতিন।' 

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৯৭; 

(২) ইবনে শাহান (رحمة الله), আত-তারগীব ফী ফাযায়িলিল আমাল ওয়া সাওয়াবি যালিক, পৃ. ১৪, হাদীস: ১৯; হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৫।


❏ হাদিস ৩:


ইমাম সাখাভী (رحمة الله) হাদীসে মরফু সূত্রে রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) পর্যন্ত সনদ সহকারে হাদীস বর্ণনা করেন যে, 

"যে ব্যক্তি সাত জুমুআ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন এ দুরূদ শরীফটি সাত বার করে পাঠ করবে, তার জন্য আমার শুপারিশ নিশ্চিত হবে। দুরূদ শরীফটি এই, 

বাংলা উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মুহাম্মদীন ওয়া আ'লা আলি মুহাম্মদীন সালাতান তাকূনু লাকা রিযাউন, ওয়া লাহিকিহি আদাউন, ওয়া আতিহিল ওয়াসীলাতা ওয়াল্ মাকামাল মাহমূদা আল্লাযী ওয়াআততাহূ, ওয়া আজযিহি মাহুওয়া আহলুহু, ওয়া আজযিহি ‘আন্না মিন্ আফযালি মা জাযায়তা নবীয়ান আন উম্মাতিহি, ওয়া সাল্লি আ'লা জমীয়ি ইখওয়ানিহি মিনান্ নবীয়ীনা ওয়াস সিদ্দীকীনা ওয়াশ শুহাদায়ি ওয়াস সলিহীনা, ইয়া আরহামার রাহিমীন। 

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী' ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ৫৭। 

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৬।


❏ হাদিস ৪:


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) ইয়াযীদ ইবনে ওয়াহব (رضي الله عنه) কে বলেছেন, তুমি জুমাবারে দুরূদ শরীফ পাঠ করা থেকে বিরত থেকো না। বরং এ দুরূদ শরীফটি এক হাজার বার করে পাঠ করবে: 

اللهم صَلِّ عَلَى مُحَمَّدِ النّبي الأمي » 

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মদীন আন্নবীয়িল উম্মী। 

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী, প, ১৯৭-১৯৮। 

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৬। 


❏ হাদিস ৫:


হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইব (رضي الله عنه)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,  

"যে ব্যক্তি জুমাবারে আমার ওপর ৮০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।"

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী, পৃ. ১৯৮; 

(২) ইবনে শাহীন (رحمة الله), আত-তারগীব ফী ফাযায়িলিল আমাল ওয়া সাওয়াব মালিক, পৃ. ১৪, হাদীস: ২২; হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৬। 


❏ হাদিস ৬:


হযরত হাসান (رضي الله عنه)-এর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি জুমাবারে রাসূলুল্লাহ  (ﷺ)-এর ওপর এ দুরূদ শরীফটি পাঠ করবে তার আশি বৎসরে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে: 

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মুহাম্মাদীন আবদিকা ওয়া রাসূলিকান নবীয়্যিল উম্মীয়ি, ওয়া আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া সাল্লাম তসলীমা।"

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ৬৭

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৭।


❏ হাদিস ৭: 


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : যে ব্যক্তি জুমআ'র দিন আমার প্রতি ৮০ বার দুরূদ শরীফ পড়বে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সাহাবীরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার প্রতি দুরূদ শরীফ আমরা কিভাবে পড়বাে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,

اللهم صل على محمد عبدك ونبيك ورسولك النبي الأمي 

“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া নাব্যিয়িকা ওয়া রাসূলিকা আন-নাবিয়্যিল উম্মি’ এভাবে পড়বে।”


তথ্যসূত্রঃ

১. দারে কুতনী : আস সুনান : ২/১৫৪ পৃ:,

২. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১৭৯পৃ.,

৩. খতিবে বাগদাদী : তারীখে বাগদাদ : ১৩/৪৮৯, তিনি হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে,

৪. ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৪৫ পৃ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে,

৫. ইমাম সাখাভী : আল কাশেফ, ১/১৬৭.পূ.

৬. ইরাকী, তানযিহুল শারীয়াতুল কোবরা, ২/৩৩১পৃ. হাদিসঃ ৪৫, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান’,

৭. ইরাকী, তাখরীযে ইহইয়াউল উলূম,১/২২০পৃ. ৩শ বলেন, "ইমাম ইবনে নুমান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন ও ১/৪৪৫প, হাদিস ৫১১। তিনি বলেন ইমাম ইবনে কাত্তান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।)

৮. ইবনুল যওজী, আল-ইল্ললুল মুতনাহিয়্যাত আহাদিসুল ওয়াহিয়্যাত, ১/৪৬৮পৃ. হাদিসঃ ৭৯৬, 

৯. আলুনী,কাশফুল খাফা, ১/১৮৯পৃ. হাদিস,৫০১, তিনি বলেন, ইমাম ইরাকি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।

১০. আবু তূলেব মক্কী,কুউয়াতুল কুলুব,১/১২১পৃ.দারুল। ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন,

১১. ইমাম গাযযালী, ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,১/১৮৬পৃ., 

১২. দারুল মা'রিফ বয়র, শায়খ খলিল (ওফাত-৮৬৯ হি.), 

১৩. বাশারাতুল মাহবুব বি তাকফীরুল যুনুব,১/৩৯পৃ. 

১৪. আবদুর রহমান সাফুরী, নুযহাতুল মাযালিস, ১/১৩৮পৃ. মাতবায়ে কাস্তালিয়া, কাহেরা, মিশর। 

১৫. প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের “স্বরূপ উন্মােচন”৪২২ পৃ।


❏ হাদিস ৮: 

জীবনের গোনাহ মাফ


হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্নিত আছে, তাজদারে মদিনা (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ

যে ব্যক্তি নিচের শরিফটি পড়বে? সে যদি! দাঁড়ানো থাকে তাহলে বসার পূর্বে, আর যদি বসা থাকে তাহলে দাঁড়ানোর পূর্বে তার জীবনের গুনাহ গুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। তা হলঃ "আল্লাহুম্মা ছল্লি আ'লা সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিও ওয়াআ'লা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়াসাল্লিম।"

[আফদ্বালুস সালাওয়াত আলা সায়্যিদিস সাদাত,৬৫পৃষ্টা]


❏ হাদিস ৯: 

ফেরেশতাগণ  ১০০০ দিন তার জন্য সওয়াব লিখতে থাকবে


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ

"যে ব্যক্তি একবারে নিম্নোক্ত দুরূদ একবার তিলাওয়াত করে, আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে তাঁর জন্য ১০০০ দিন সওয়াব লেখার জন্য নির্দেশ দেন। 

অপর বর্ণনায় আছে, এই দুরূদ একবার পাঠ করলে আগামী ১০০০ দিন নেকী লিখার জন্য আল্লাহর ফেরেশতাগণ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দুরূদটি হলঃ


 جَزَی اﷲُ عَنَّاسَيِّدِنَا مُحَمَّدًاﷺ مَا هُوَ أُهْلُهْ


“জাযাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদান মা হুয়া আহলুহু”

“জাযাল্লাহু আন্না সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদান মা হুয়া আহলুহু”


অনুবাদঃ "আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে আমাদের পক্ষ থেকে তিনি (আমাদের উপর) যতটা হকদার (প্রাপ্য), সে সংখ্যানুপাতে তার প্রতিদান দিন।"

তথ্যসূত্রঃ

(১).ইমাম তাবরানী (رحمة الله): আল-মু’জামুল কবির, (হাদীস: ১১৫০৯),

(২).ইমাম আবু নুয়াইম (رحمة الله), হিলিয়াতুল আউলিয়া

(৩).ইমাম মুনাযিরী (رحمة الله): তারগীব, খণ্ড ২ পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা ৫০৪।

(৪).ইমাম হায়সামী  (رحمة الله): মাজমা’উজ জাওয়াইদ, খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা, হাদিস ১৬৩,  

(৫).ইমাম সাখাবী  (رحمة الله): আল-কওলুল বদি, পৃষ্ঠা ১১৬।

(৬). ফাজাইলে আমল, খণ্ড  ১, পৃ ৪৩।


❏ হাদিস ১০: 

হাজার দিনের নেকী অর্জন


উচ্চারণঃ জাযাল্লা-হু আন্না মুহাম্মাদান মা-হুয়া আহলুহ।

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা সায়্যিদিনা- ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ'লা- আ-লি সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন কামাতুহিব্দু ওয়া তারদ্বা-লাহ্।

ফযীলতঃ এ দুরূদ শরীফদ্বয় পাঠকারীর জন্য ৭০ জন ফিরিশতা ১ হাজার দিন পর্যন্ত নেকী লিখতে থাকেন।

(তাবরানী, মাযরাউল হাস্নাত)


❏ হাদিস ১১: 


আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি শুক্রবার আসর সালাতের পর পরই তার দুরূদ ৮০ বার তেলাওয়াত করে, তার স্থান থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগে আল্লাহ ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করবেন এবং তাকে ৮০ বছরের ইবাদতের সমান পুরষ্কার দান করবেন।”

"আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিনীন নাবিয়িল উম্মি-ইয়ি ওয়া-আ'লা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা।"

অনুবাদ: "হে আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর দুরূদ প্রেরণ করুন এবং তাঁদেরকে সর্বোত্তম শান্তি প্রদান করুন।"

[ইমাম তাবারানীঃ মুজামুল কবীর ও ইমাম সুয়ূতীঃ জামেউস সগীরে এটি বর্ণনা করেছেন] 


❏ হাদিস ১২:


হযরত যায়েদ বিন খারিজাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমি নবী করিম (ﷺ) কে (দুরূদের ব্যপারে) জিজ্ঞেস করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তােমরা আমার উপর দুরূদ পড় এবং অনেক বেশি চেষ্টা করে দোআ কর। এভাবে বলবে, 

"আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন ওয়া আ'লা আলি মুহাম্মাদিন।" 

[সুনানে নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং- ১২২৫]


❏ হাদিস ১৩:


ইমাম আবূ দাউদ  (رحمة الله) সূত্রে বর্ণিত। তিনি,➡ আহমাদ ইবনু ইউনুস, যুহাইর, ➡মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক, ➡মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম ইবনুল হারিস এবং মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদের মাধ্যমে➡ ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমর (رضي الله عنه) হতে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা বলোঃ 


 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرٍو، بِهَذَا الْخَبَرِ قَالَ ‏"‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ ‏"‏ ‏.‏ - حسن [1


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন নাবিই্যুল উম্মীয়ি ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন।’’

তথ্যসূত্রঃ

[আহমাদ (৪/১১৯) মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম ইবনুল হারিস হতে, এর সনদ হাসান, সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৮১]


❏ হাদিস ১৪:


হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে পাক (ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন- তখন "বিছমিল্লাহি আল্লহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন", 

আর যখন বের হতেন তখনও বলতেন "বিছমিল্লাহি আল্লহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন।"

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনুস সুন্নী, আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, পৃষ্ঠা-১৮১। 

(২) ইবনে হাজার আসকালানী, নাতায়েযুল আফকার, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৮২ 

(৩) লিছানুল মিজান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩১৬। 


❏ হাদিস ১৫:

৭০ হাজার ফিরিশতা কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা


উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহীম। আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি তাওয়াদ্বাআ কুল্লা শাইয়িন লিআ’মাতিহী ওয়াল হামদুলিল্লা-হিল লাযি যাল্লা কুল্লা শাইয়িম বিইযতিহী ওয়াল হামদুলিল্লা-হিল লাযি নাফাআ কুল্লা শাইয়িন লিমুলকিহী ওয়াল হামদুলিল্লা-হিল লাযি ইসতাসলামা কুল্লা শাইয়িন লিকুদরাতিহী।

ফযীলতঃ হুযূর আকরম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলাে পাঠ করবে এবং সেটার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা'আলার নিকট (রহমত ও ক্ষমা) প্রত্যাশা করবে, আল্লাহ্ তা'আলা তার জন্য এক হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করেন এবং তার এক হাজার পদ মর্যাদা উন্নীত করেন আর ৭০ হাজার ফিরিশতাকে তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য নিয়ােজিত করেন। 

(ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল, খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-২২৮-২২৯)



রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সহ অন্যান্য যাদের উপর দুরূদ পড়া যায়, বিভিন্ন শব্দে দুরূদে ইব্রাহীম।



❏ হাদিস ১: 

শু‘বাহ  (رحمة الله) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছেঃ 


 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، بِهَذَا الْحَدِيثِ قَالَ ‏"‏ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : ق [1] 


‘‘সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা’’।

[সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة)

হাদিস নম্বরঃ ৯৭৭]


❏ হাদিস ২:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তােমরা বল, 

"আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা কামা ছাল্লাইতা আ'লা ইবরাহীমা ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদিন ওয়া আ'লা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আ'লা ইবরাহীমা।"

[সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৭৩৬]


❏ হাদিস ৩:


কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। 


. باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، قَالَ قُلْنَا أَوْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ أَمَرْتَنَا أَنْ نُصَلِّيَ عَلَيْكَ وَأَنْ نُسَلِّمَ عَلَيْكَ فَأَمَّا السَّلَامُ فَقَدْ عَرَفْنَاهُ فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏"‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : ق [1] 


তিনি বলেন, একদা আমরা বললাম অথবা লোকজন বললো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদেরকে আপনার উপর দুরূদ ও সালাম পড়ার আদেশ করেছেন। সালাম পাঠের নিয়ম আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আপনার উপর দুরূদ কিভাবে পাঠ করবো? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা বলো-


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ’’-

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ, তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষন করুন যেরূপ রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের উপর। আপনি ইবরাহীমকে যেমন বরকত দান করেছেন তেমনি মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের বরকত দান করুন। নিশ্চই আপনি প্রশংসিত ও মহান।


তথ্যসূত্রঃ

(১) তিরমিযী, আবওয়াবুস সালাত, বাবু মা জাআ ফি সিফাতিস সালাতি আলান্নাবী (ﷺ), ২:৫২, নং-৪৮৩। 

(২) নাসাঈ, সুনান, কিতাবুস সাহু, ৩:৪৭, নং-১২৮৭। 

(৩) নাসাঈ, সুনানুল কুবরা, ১:৩৮৩, নং-১২১। 

(৪) হুমাইদী, মুসনাদ, ২:৩১০, নং-৭১১। 

(৫) তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ১৯:১৩১, নং-২৮৭। 

(৬) ইউসুফ বিন মুসা, মু'তাছারুল মুখতাছার, ১:৫৪।

(৭) সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৭৬

(৮) বুখারী (অধ্যায় : তাফসীর, সূরাহ আল-আহযাব, অনুঃ আল্লাহর বানী : ইন্নাল্লাহা ওয়া মালায়িকাতাহু য়ুসাল্লুনা ‘আল্লান্নাবী ইয়া আইয়ূ হাল্লাযিনা আমানু সল্লু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লিমূ তাসলিমা, হাঃ ৪৭৯৭),

(৯) মুসলিম (অধ্যায় : সলাত, অনুঃ তাশাহহুদের পর নাবী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ), কিতাবুস সালাত, খঃ ১/৩০৫, হাদীস ৬৬, 

(১০) সুনানে দারামী খঃ ১, পৃঃ৩০১, 

(১১) সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস ৯০৪,

(১২) মুসনাদে আহমাদ খঃ ৪ পৃঃ ২৪১-২৪৪। 

(১৩) তাফসীরে তাবারী খঃ ২২, পৃঃ৩১,

(১৪) তাফসীরে কুরতুবী, খঃ ১৪, পৃঃ ৩৩৪, 

(১৫) তাফসীরে দূররুল মানসূর খঃ ৫, পৃঃ ২১৫-২১৬,

(১৬) কাঞ্জুল উম্মাল খঃ ২, পৃঃ ১৮০, 

(১৭) তাফসীরে ইবনে কাসির খঃ৩ পৃঃ৫০৭।


❏ হাদিস ৪:


ইমাম আবূ দাউদ  (رحمة الله) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনুল ‘আলা তার সনদে ইবনু বিশর ও মিস্‘আরের মাধ্যমে হাকাম হতে হাদীসটি বর্ণনার পর দুরূদ পাঠ সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ 


. باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، حَدَّثَنَا ابْنُ بِشْرٍ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنِ الْحَكَمِ، بِإِسْنَادِهِ بِهَذَا قَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ الزُّبَيْرُ بْنُ عَدِيٍّ عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى كَمَا رَوَاهُ مِسْعَرٌ إِلَا أَنَّهُ قَالَ ‏"‏ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ ‏"‏ ‏.‏ وَسَاقَ مِثْلَهُ ‏.‏ - صحيح : ق [1


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’’


ইমাম আবূ দাউদ  (رحمة الله) বলেন, হাদীসটি যুবাইর ইবনু ‘আদী  (رحمة الله) ইবনু আবূ লায়লাহ  (رحمة الله) হতে মিস্‘আরের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে সেখানে শুধু ‘‘কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা’’ এর স্থলে ‘‘কামা সল্লাইতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা’’ কথাটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ মিস‘আর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।


তথ্যসূত্রঃ

▪ সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة)

হাদিস নম্বরঃ ৯৭৮, তাশাহ্হুদ পড়ার পর নবীজী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ। 

▪ সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।


❏ হাদিস ৫:


আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,


 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حِبَّانُ بْنُ يَسَارٍ الْكِلَابِيُّ، حَدَّثَنِي أَبُو مُطَرِّفٍ، عُبَيْدُ اللهِ بْنُ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ كَرِيزٍ حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْهَاشِمِيُّ، عَنِ الْمُجْمِرِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَكْتَالَ بِالْمِكْيَالِ الأَوْفَى إِذَا صَلَّى عَلَيْنَا أَهْلَ الْبَيْتِ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ وَأَزْوَاجِهِ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ وَذُرِّيَّتِهِ وَأَهْلِ بَيْتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏ - ضعيف [1


কেউ যদি আমাদের আহলি বাইতের উপর দুরূদ পড়ার পুরো সওয়াব পেতে চায় সে যেন এভাবে বলেঃ 


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যি ওয়া আয্ওয়াজিহি উম্মাহাতিল মু‘মিনীনা ওয়া যুররিয়াতিহি ওয়া আহলি বাইতিহি কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’। 


অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি নবী মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রী উম্মাহাতিল মু‘মিনীন, তাঁর সন্তানাদি ও আহলি বাইতের উপর রহমাত বর্ষণ করুন যেমনি রহমাত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।’’


তথ্যসূত্রঃ

▪ সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৮২, তাশাহ্হুদ পড়ার পর নবীজী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ।

▪ বায়হাক্বী ‘সুনান’ (২/৫২৯), হাদিস ৩৯৬৫,

▪ বুখারী ‘আত-তারীখ’ (৩/৮৭), 

▪ সুয়ূতী একে আদ-দুররে মানসূর (৫/২১৬) গ্রন্থে এবং 

▪ তাবরীযীঃ মিশকাত (হাঃ ৯৩২) গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। 

▪ ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯১।


❏ হাদিস ৬:


আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। 


 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ السَّرْحِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي مَالِكٌ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ سُلَيْمٍ الزُّرَقِيِّ، أَنَّهُ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو حُمَيْدٍ السَّاعِدِيُّ، أَنَّهُمْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏"‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : ق [1] 


আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা  (رحمة الله) ... আবূ হুমায়দ সাঈদী  (رحمة الله) বর্ণনা করেন। একবার লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আমরা আপনার উপর কিভাবে দুরূদ পড়বো? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা বলোঃ


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আয্ওয়াজিহি ওয়া যুররিয়াতিহি কামা সল্লাইতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়াতিহি কামা বারাকতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’।


"অর্থঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (ﷺ) ও তার সহধর্মিণীগণ এবং তার সন্তান-সন্ততিগণের উপর রহমত নাযিল করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ, তার সহধর্মিণীগণ এবং তার আওলাদের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমনভাবে আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করেছেন। আপনি অতি প্রশংসিত এবং উচ্চ মর্যাদাশীল।


তথ্যসূত্রঃ

(১) বুখারী, সহিহ, কিতাবুল আম্বিয়া, বাবু কাউলিল্লাহ ৩:১২৩২, নং ৩১৮৯। আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। হাদীস যমীনে সর্বপ্রথম কোন মাসজিদ স্থাপিত হয়েছে, হাঃ ৩৩৬৯। সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬৭/ দু’আ (كتاب الدعوات), হাদিস নম্বরঃ ৫৯২০।

(২) মুসলিম, সহিহ, কিতাবুস সালাহ, বাবুস সালাতে আলান্নবী (ﷺ) বাদাত তাশাহহুদ, ১:৩০৬, নং ৪০৬।

(৩) ইবনে মাযাহ, সুনান, কিতাবু ইকামাতিস্ সালামে ওয়াস সুন্নাতে ফিহা, বাবুস সালাতে আলান্নাবী(ﷺ), ১:২৯৩, নং-৯০৫। 

(৪) মালিক, মুয়াত্তা, বাবু মা জাআ ফিস সালাতে আলান্নাবী(ﷺ), ১:১৬৫, নং-৩৯৫। 

(৫) নাসায়ী, সুনানুল কুবরা, ১:৩৮৪ , নং-১২১৭। 

(৬) সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৭৯, তাশাহ্হুদ পড়ার পর নবীজী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ।


❏ হাদিস ৭:


ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) বর্ণিত,


قالُوايارَسُولَ الله ! وَکَيفَ نُيفَ نُصَلّي عَلَيک ؟ قالَ ;قُولُوا: أللّهُمَّ صَلِّ عَلي مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ کَما صَلَّيتَ عَلي إبراهيمَ وَ آلِ أبراهيم إنَّکَ حَميدُ مَجيدُ وَبارِک عَل مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ کَما بارَکتَ عَلي إبراهيمَ وَ عَلي آلِ إبراهيمَ إبَّکَ حَميدُ مَجيدُ


হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা কিরূপে আপনার উপর দূরুদ পাঠ করবো ? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে; হে আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর প্রতি দূরুদ পাঠাও, যেরূপে ইব্রাহীম (عليه السلام) ও আলে ইব্রাহীমের প্রতি দূরুদ পাঠিয়েছ। প্রকৃতপক্ষে আপনি প্রশংসিত সমুন্নত এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরূপে ইব্রাহীম (عليه السلام) ও আলে ইব্রাহীমের উপর বরকত দান করেছ। প্রকৃতপক্ষে আপনি প্রশংসিত ও সমুন্নত। 

[ইমাম মুত্তাকী আল-হিন্দীঃ কানযূল উম্মাল]


❏ হাদিস ৮:


আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা (رحمة الله) বর্ণনা করেন, 


" باب الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا الْحَكَمُ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى، قَالَ لَقِيَنِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ فَقَالَ أَلاَ أُهْدِي لَكَ هَدِيَّةً، إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ عَلَيْنَا فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ عَلِمْنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ، فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏ "‏ فَقُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏‏.‏


একবার আমার সঙ্গে কাব ইবনু উজরাহ (رضي الله عنه) এর সাক্ষাত হলো। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেবো না। তা হল এইঃ একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনাকে কেমন করে সালাম দেব, আমরা আপনার উপর দুরূদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে, 


"ইয়া আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর খাস রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর পরিবারের উপর খাস রহমাত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল। ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমন আপনি ইববাহীম (عليه السلام) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযীল করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত উচ্চ মর্যাদাশীল।"

[সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ দু’আ (كتاب الدعوات), হাদিস নম্বরঃ ৫৯১৭]


❏ হাদিস ৯:


হযরত আবু মাসউদ আল আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

"রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এলেন ও আমাদের সাথে সাদ ইবনে এবাদার মজলিশে বসলেন। বাশির বিন সাদ (অবু নোমান বিন বাশির) তাঁকে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ! মহান আল্লাহ আপনার উপর দূরুদ পড়ার নিদের্শ দিয়েছেন। আমরা কিরূপে দূরুদ পড়বো? বর্ণনাকারী বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (এতটা) নিরবতা অবলম্বন করলেন যে আমাদের মনে হচ্ছিল যে হায় যদি এমন প্রশ্ন না করতাম। অতঃপর বললেনঃ 


"হে আল্লাহ ! মুহাম্মাদ ও আলে মুহম্মাদের প্রতি দূরুদ পাঠাও, যেমন ভাবে পাঠিয়েছ, মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর প্রতি বরকত দান কর, যেমনভাবে বরকত দান করেছ পৃথিবী বাসীদের মধ্যে ইব্রাহীমকে। প্রকৃতপক্ষে তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। সালামও ঠিক এরমই যা জেনেছ। "


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনে মাজাহ, সুনান, কিতাবু ইকামাতেস সালাতে ওয়াস্ সুন্নাতে ফিহা, বাবুস সালাতে আলান্নাবী (ﷺ), ১:২৯৩, নং-৯০৬ ।

(২) আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফ, ২:২১৩, নং-৩১০৯। 

(৩) আবু ইয়ালা, মুসনাদ, ৯:১৭৫, নং-৫২৬৭। 

(৪) তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ৮:১১৫, নং-৮৫৯৪। 

(৫) বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, ২:২০৮, নং-১৫৫০। 

(৬) ইমাম বায়হাকী,আস-সুনানুল কোবরা, ২/৫২৯ পৃ, হা/ ৩৯৬৫, তিনি বলেন- “এ হাদিসটি হাসান, মুত্তাসিল।" 

(৭) সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত খঃ১ পৃঃ৩০৫, হাদীস ৬৭, অনুঃ নবীজী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ। 

(৮) সূনানে দারেমী, খঃ ১ পৃঃ ৩১০, 

(৯) সুনানে আবু দাউদ খঃ ১ পৃঃ ২৫৮ , হাদীস ৯৮০, 

(১০) সুনানে নাসাঈ, অধ্যায় : সাহু, নবীজী(ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠর নির্দেশ, হাদিস ১২৮৪, মালিক হতে।

(১১) সূনানে তিরমিযী, অধ্যায় : তাফসীর, অনুঃ সূরাহ আল-আহযাব, হাঃ ৩২২০, তিনি বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।

(১২) তাফসীরে সূরা আহযাব খঃ পৃঃ ৯৫ 

(১৩) মুয়াত্তায়ে মালিক খঃ ১, পৃঃ ১৬৫ ও ১৬৬, 

(১৪) ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৮/৩০৪ পৃ. হা/১৭০৭২,

(১৫) কানযুল উম্মাল খঃ ২ পৃঃ ১৮২,

(১৬) তাফসীরে কুরতুবী খঃ ৪, পৃঃ ২৩৩। 

(১৭) তাফসীরে দূররুল মানসূর খঃ৫ পৃঃ২১৬ও২১৭। 

(১৮) তাফসীরে ইবনে কাসির খঃ৩ পৃঃ৫০৮। 

(১৯) তাফসীরে খাযিন খঃ৩ পৃঃ৪৭৭, 

(২০) মুস্তাদরাক আল হাকিম আস সহীহাইন খঃ১, পৃঃ২৬৮, 

(২১) সহিহ ইবনে হিব্বান, হা/১৯৫৯, 

(২২) সুনানে দারা কুতনী, ২/১৬৮ পৃ. হা/১৩৩৯, তিনি বলেন- হাদিসটি হাসান, মুত্তাসিল।

(২৩) ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯১।


❏ হাদিস ১০:


ইবরাহীম ইবনু হামযা  (رحمة الله) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,


باب الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ حَمْزَةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي حَازِمٍ، وَالدَّرَاوَرْدِيُّ، عَنْ يَزِيدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خَبَّابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا السَّلاَمُ عَلَيْكَ، فَكَيْفَ نُصَلِّي قَالَ ‏ "‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ ‏"‏‏.‏ 


একবার আমরা বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই যে 'আসসালামু আলাইকা' তা তো আমরা জেনে নিয়েছি। তবে আপনার উপর দুরূদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা পড়বে, 


"ইয়া আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর খাছ রহমত বর্ষণ করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যে রকম আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর উপর এবং ইবরাহীম (عليه السلام) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করেছেন।"


▪ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ দু’আ (كتاب الدعوات)

হাদিস নম্বরঃ ৫৯১৮।

▪ সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর, সূরা আহযাব, খঃ৩, পৃঃ১১৯ এবং 

▪ কিতাবে দাওয়াত খঃ ৪পৃঃ ৭২।

▪ সূনানে নাসাঈ খঃ ৩পৃঃ ৪৯।

▪ সূনানে ইবনে মাযাহ খঃ১ পৃঃ২৯২, হাদীস ৯০২

▪ মুসনাদে আহমাদ খঃ৩ পৃঃ৪৭।

▪ তাফসীরে দূররুল খঃ৫ পৃঃ২১৭।


❏ হাদিস ১১:


ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,

অতঃপর বললাম অথবা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আপনার উপর সালাম সম্পর্কে জেনেছি, কিন্তু আপনার উপর দূরুদ কিরূপে (পড়ে)? বললেনঃ 


"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও, যেরূপ পাঠিয়েছ ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর। তুমিতো প্রশংসিত ও উন্নত। এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত প্রদান কর, যেরূপ বরকত প্রদান করেছে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত।" 

[তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে সূরা আহযাব খঃ২২ পৃঃ৩১, তাফসীরে দূররুল মনসূর খঃ৫, পৃঃ২১৬]


❏ হাদিস ১২:


যাইদ ইবনে খারিজাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেনঃ

আমার উপর দূরুদ পাঠবে এবং দোয়া করবে ও বলবেঃ 


"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরূপ বরকত দান করেছ ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। [সুনানে নাসাঈ, কিতাবে সাহু খঃ৩ পৃঃ৪৯]


❏ হাদিস ১৩:


আবু তালহা (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণিত,

 

قُلنا: يارَسول الله!قَد علمنا کَيفَ السَّلام عَلَيک.فَکَيفَ الصَّلاة عَليکَ ؟قالَ : قولوا: أللّهُمَّ صَلِّ عَلي مُحَمَّدٍ وَ علي آلِ مُحَمَّدٍ وَ بارِک عَلي مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ کَماصَلَّيتَ و بارَکتَ عَلي إبراهيم وعلي آلِ ابراهيم إنَّکَ حَميدُ مَجيدُ


বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিরূপে আপনার উপর সালাম বলবো তা জেনেছি। আপনার উপর দূরুদ কিরূপ? বললেনঃ বল, 


"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরূপে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীনের উপর দূরুদ ও বরকত দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত।"

[কানযুল উম্মাল খঃ২, পৃঃ১৭৬, তাফসীরে দূররুল মানসূর খঃ৫, পৃঃ ২১৬, সুনানে নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদ]


❏ হাদিস ১৪:


বারদেয়ে খাযায়ী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) বলেনঃ

বলঃ হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ, রহমতও বরকত দান কর যেরূপে এ গুলো ইব্রাহীমকে দান করেছ। নিশ্চযই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। (মুসনাদে আহমাদ ও সুয়ুতির দূররুল মানসূর)


❏ হাদিস ১৫:


মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ বিন যাইদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) বলেনঃ

বলঃ হে আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ প্রেরণ কর যেরূপভাবে ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর উপর দূরুদ পাঠিয়েছ। মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরুপে ইব্রাহীমকে পৃথিবীবাসীর মধ্যে বরক দিয়েছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত সালাম ও সেরূপ যেমন টি জেনেছ। [কানযুল উম্মাল খঃ ১, পৃঃ৪৪২]


❏ হাদিস ১৬:


হযরত ইব্রাহীম (رضي الله عنه) থেকে اِنّ الله وَ ملا کث এ আয়াতের প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছে যে,

قالُوا يا رَسُولَ الله! هذَا السَّلام قَد عَرفناه .فَکَيفَ الصَّلاة عَليکَ ؟ فَقالَ 

তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এ সালামটি জানতাম। আপনার উপর দূরুদ কিরূপ? বললেনঃ বল, 


"হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর দূরুদ পাঠাও, যেমন ভাবে দূরুদ পাঠিয়েছ ইব্রাহিমের উপর। সত্যিই তুমি প্রশংসিত ও সনুন্নত।"

[ইমাম তাবারীঃ তাফসীরে তাবারী, খঃ২, পৃঃ৩২, 

ইমাম সুয়ূতীঃ তাফসীরে দূররে মানসূর খঃ৫, পৃঃ ২১৬]


❏ হাদিস ১৭:


উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ

قالَ اَصحابُ النَّبيّ يا رَسُول الله أُمِرنا أن نکثر الصَّلاةَ عَلَيکَ فِي اللَّيلَةِ الغراء وَ اليَوم الأزهَر وَ أحبّ ما صَلّينا عَلَيکَ کَم تُحِبّ. قالَ

সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে অন্ধকার রাতে ও আলোকিত দিবালোকে আপনার উপর দূরুদ বেশী পড়তে। (তা কতই না সুন্দর যে) আপনার উপর আমাদের দূরুদ এমন হবে যা আপনি পছন্দ করবেন। বললেনঃ বল; 


"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও, যেরূপ ভাবে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর দূরুদ পাঠিয়েছ এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর রহমত বর্ষণ কর, যেরূপে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর রহমত করেছো। মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরক দাত্ত, যেরুপে বরকত দিয়েছো ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহমকে নিশ্ময়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। আর সালামের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তো নিজেই জেনেছ। 

[ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল খঃ ২, পৃঃ ১৮২ ও খঃ ১, পৃঃ ৪৪৩]




আরো কিছু দুরূদ শরীফ :



৬ লক্ষ দুরূদ শরীফ পাঠের সাওয়াব


উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা- সায়্যিদিনাওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন আ’দাদা মা-ফী ই’লমিল্লা-হি সলা-তান দা-ইমাতাম্ বিদাওয়ামি মুকিল্লা-হ্। 


ফযীলতঃ হযরত সায়্যিদ আ’লী বিন ইউসুফ মাদানী (رحمة الله) আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, এ দুরূদ শরীফ ১ বার পাঠ করলে ৬ লক্ষ দুরূদ শরীফ পাঠের সাওয়াব অর্জন হয়। আর ১০০০ বার

পাঠ কারী দুনিয়া-আখিরাতে সম্মানিত হবে। ইনশা'আল্লাহ্।

(নুসখা সহীহ, দালায়িলুল খয়রাত, পৃষ্ঠা-১০১) 


১ লক্ষ দুরূদ শরীফ পাঠের সাওয়াব


উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা-সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিনিন্ নূরিযা-তিস্সা-রী ফী জামীই’ল আসারি ওয়াল আসমা-ই ওয়াস সিফা-তি ওয়া আ’লা আ-লিহী ওয়া সহাবিহী ওয়াসাল্লিম।

ফযীলতঃ এ দুরূদ শরীফ ১ বার পাঠ করলে ১ লক্ষ দুরূদ শরীফ পড়ার সাওয়াব অর্জন হয় এবং ৫০০ বার পাঠ করলে যে কোন নেক উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে ইনশা-আল্লাহ। (আহসানুল কালাম ফী সলাতুস সালাম)


১৪ হাজার দুরূদ শরীফ পাঠের সাওয়াব


উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি ওয়াসাল্লিম ওয়া বা-রিক আ’লা- সায়্যিদিনা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া-আ’লা- আ-লিহী আ'দাদা কামা-লিল্লা-হি ওয়া কামা-ইয়ালীকু বিকামালিহ্।। 

ফযীলতঃ এ দুরূদ শরীফ ১ বার পাঠ করলে ১৪ হাজার দুরূদ শরীফ পড়ার সাওয়াব অর্জন হয়।

(আফযালুস্ সলাত, পৃষ্ঠা-১৮৬)


➠নকশবন্দীয়া ও মুজাদ্দেদিয়া তরিকার শ্রেষ্ঠ দুরূদ


আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন, ওয়াসীলাতী ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লিম!


➠প্রিয় নবীর নৈকট্য লাভের দুরূদ


আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা মুহাম্মাদিন কামা তুহিব্বু ওয়াতারদা লাহু। 


➠সমস্ত গুণাহ ক্ষমার দুরূদ


আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আলিহি ওয়াসাল্লিম।


➠রহমতের ৭০টি দরজা খুলে দেয়া হয়


সাল্লাল্লাহু আ'লা মুহাম্মদ। 


➠মৃত্যুর সময় দীদারে মোস্তফা 


আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ওয়াবারিক আ'লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যিল হাবীবীল আলীয়্যিল ক্বাদরিল আ'যিমীল জাহী ওয়া আ'লা আলিহি ওয়াছাহবিহী ওয়াসাল্লিম।


ইমাম বুখারী (رحمة الله)'র ব্যবহৃত দুরূদ


ইমাম বুখারী (رحمة الله)-এর উনি নিজেও নবীজির নাম মােবারকের পর দুরূদে ইব্রাহিম লিখেননি। বরং (ﷺ) দুরূদখানা লিখেছেন। শুধু তাই নয় তিনি বুখারী শরীফে এ দুরূদটি ১০ হাজারেরও অধিক বার লিখেছেন।

[ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) বিরোধীদের আপত্তির জবাব, পৃষ্ঠা ১০৩]


লেখা বা বয়ানের শুরুতে বিভিন্ন দুরূদ পাঠ


"আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন, ওয়াল আক্বিবাতু লিল মুত্তাক্বিন, ওয়াচ্ছালাতু ওয়াচ্ছালামু আ'লা ছায়্যিদিল আম্বিয়ায়ি ওয়াল মুরছালিন।"


অনুরূপ বক্তব্য বা কোন লেকচার দেওয়ার শুরুতে দুরূদ পড়ার সময় সবাই পাঠ করে, 

نحمده ونصلی علی رسوله الكريم 

(নাহমুদুহু ওয়া নুছাল্লিই আ'লা রাছুলিহিল করিম) 


এ দুরূদটি হাদিসে বর্ণিত দুরূদ নয়, বরং সময় সংক্ষেপের জন্য অনির্দিষ্ট শব্দাবলী ব্যবহার করে দুরূদটি সংক্ষিপ্তভাবে পাঠ করা হয়। 






Top