৪র্থ অধ্যায়ঃ জুমুআ ও ফাযায়েলে দুরূদ
জুমআ'র দিবা-রাত্রি অধিক হারে দুরূদ পাঠ
❏ হাদিস ১:
হযরত আওস ইবনে আওস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, "তােমাদের দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন জুমআ'বার। কেননাঃ
ওই দিন হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তার ওফাত হয়, ওই দিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং ওই দিন মানুষ অজ্ঞান হবে অতএব তােমরা সুতরাং উক্ত দিবসে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দুরূদ শরীফ পাঠ কর। কারণ, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়। অতঃপর আমি তােমাদের জন্য দু'আ করি এবং তােমাদের গুনাহ মার্জনার দরখাস্ত করি।
তথ্যসূত্রঃ
(১).আর দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৭৫, হাদীস: ১০৪৭;
(২) সুনানে নাসায়ী ১/১৫০।
(৩) সুনানে ইবনে মাযাহ:৭৬।
(৪).ইমাম নববী হাদীসটি বিশুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন।
(৫).শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৪, গাজী প্রকাশনী।
❏ হাদিস ২:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
"তােমরা আমার ওপর অধিক সংখ্যায় দুরূদ শরীফ পাঠ কর, অধিকতর উজ্জ্বল রজনীতে এবং উজ্জ্বল দিবসে।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৬৫;
(২) আন নুমায়রী (رحمة الله), আল-ই'লামু বি-ফযলিস সালাতি আলান্নাবিয়ি (ﷺ), পৃ. ৬৫, হাদীস: ১১৬।
(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৫।
কোন কোন আলিম বলেছেন যে, জুমআ'বারের রাতের এটিও একটি বৈশিষ্ট্য, যে ব্যক্তি উক্ত রজনীতে দুরূদ এবং সালাম প্রেরণ করেন, সরদারে দ’জাহান, রহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) নিজেই তাঁর সালামের উত্তর প্রদান করেন।
❏ হাদিস ৩:
"যে ব্যক্তি জুমআ'বারের আসরের নামায আদায়ের পর উক্ত স্থান থেকে সরে যাওয়ার পূর্বে উক্ত বৈঠকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওপর ৮০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
তথ্যসূত্রঃ
(১) মিনহাজ শরহে দামিরী।
(২) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী, পৃ. ১৯৮-১৯৯
(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৭।
❏ হাদিস ৪:
ইমাম হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) বলেন যে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আবু উমামাহ (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, তিনি নবী আকরাম (ﷺ) এর নিকট থেকে জুমআর রাত ও দিনে অধিক পরিমানে দুরূদ পড়ার হুকুম নকল করেন।
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ইমান, ৩/৪৩৩ পৃ, হা/২৭৭০,
২.ইমাম কাসতালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃ।
❏ হাদিস ৫:
জুম্মার দিন ও জুম্মার রাতে যে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে তা আমি নিজেই শুনে থাকি। [ইমাম সাফুরীঃ নুজহাতুল মাজালিস]
❏ হাদিস ৬:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “জুমআ' রাত এবং জুমআ'র দিন আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পড়ো, কেননা তোমাদের দুরূদে পাক আমার নিকট পেশ করা হয়।”
[তাবারানীঃ মুজাম আল-আওসাত, ১ম খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৪১]
❏ হাদিস ৭:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “জুমআ'র দিন ও জুমআ'র রাতে আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ করো। কেননা যে এমনটি করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার সুপারিশকারী ও সাক্ষী হবো।”
১.শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩০৩৩,
২.নাসাঈ ,ইবনে মাজাহ, তারগীব, তাবারানী, মুজাম উল আউসাত।
❏ হাদিস ৮:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) আমার উপর জুমআ'র দিন দুরূদ শরীফ পড়বে আমি কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ করব।”
[জমউল জাওয়ামি লিস্ সূয়ুতী, ৭ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা, হদীস- ২২৩৫২]
❏ হাদিস ৯:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি জুমআ'র দিন আমার উপর ১০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে, যখন সে কিয়ামতের দিন আসবে, তখন তার সাথে এমন একটি নূর থাকবে যে, যদি তা সমস্ত সৃষ্টিকে বন্টন করে দেয়া হয়, তবে তা সবার জন্য যথেষ্ট হবে।”
[ইমাম ইস্পাহানীঃ হিলয়াতুল আউলিয়া, ৮ম খন্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা]
❏ হাদিস ১০:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) আমার উপর জুমআ'র দিন ২০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে, তার ২০০ বছরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।” (জমউল জাওয়ামি লিস্ সূয়ুতী, ৭ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা)
❏ হাদিস ১১:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, "এই (জুমুয়ার) দিন এমন একটি দিন, যাতে ফেরেশতাগণ দুনিয়াতে উপস্থিত হন। তাঁরা আমার ওপর দুরূদ শরীফ পাঠকদের দুরূদ শ্রবণ করে আমার নিকট পৌছিয়ে দেন।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইবনে মাজাহ (رحمة الله), আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ৫২৪, হাদীস: ১৬৩৭,
(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৪।
❏ হাদিস ১২:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, জুমআর দিন আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠের পরিমাণ বাড়িয়ে দাও কেননা হচ্ছে এটা ইয়াউমে মাসাহুদ। এ দিনে ফেরেশতারা হাজির হন। আর নিশ্চয় তোমাদের মধ্য যে কেউ দুরূদ পাঠ করে, তার দুরূদ পড়া শেষ হবার পূর্বে ই তার দুরূদ আমার দরবারে পৌঁছে যায় । (ইমাম সুয়ূতীঃ জামেউস সাগীর)
❏ হাদিস ১৩:
হযরত আবু তালহা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “তােমরা জুমআ'বার আমার ওপর দুরূদ প্রেরণ কর, তা আরশে আযীমের নিচে পৌঁছে না, বরং যে ফেরেশতার নিকটেই পৌঁছে তিনি অপরাপর ফেরেশতাদেরকে বলেন, "তােমরা এ দুরূদ পাঠকারীদের জন্য ইস্তিগফার কর।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) আল-খতীবুল বগদাদী (رحمة الله), তারীখু বগদাদ, খ. ৮, পৃ. ৫৭০, হাদীস: ৪০৫০;
(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৪।
❏ হাদিস ১৪:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, -“প্রতি সােমবার ও শুক্রবার আমার ওফাতের পর তােমরা বেশী করে দুরূদ পাঠ করবে, কেননা তােমাদের দুরূদ আমি মাধ্যম ব্যতীত সরাসরি শুনি।”
[ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আনিসুল জালীস” এর ২২৭ পৃষ্ঠা]
জুমআ'র দিনে নির্দিষ্ট করে দুরূদ পড়া জায়েজ
❏ হাদিস ১৫:
হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : যে ব্যক্তি জুমআ'র দিন আমার প্রতি ৮০ বার দুরূদ শরীফ পড়বে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সাহাবীরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার প্রতি দুরূদ শরীফ আমরা কিভাবে পড়বাে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
اللهم صل على محمد عبدك ونبيك ورسولك النبي الأمي
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া নাব্যিয়িকা ওয়া রাসূলিকা আন-নাবিয়্যিল উম্মি’ এভাবে পড়বে।”
তথ্যসূত্রঃ
১. দারে কুতনী : আস সুনান : ২/১৫৪ পৃ:,
২. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১৭৯পৃ.,
৩. খতিবে বাগদাদী : তারীখে বাগদাদ : ১৩/৪৮৯, তিনি হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে,
৪. ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৪৫ পৃ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে,
৫. ইমাম সাখাভী : আল কাশেফ, ১/১৬৭.পূ.
৬. ইরাকী, তানযিহুল শারীয়াতুল কোবরা, ২/৩৩১পৃ. হাদিসঃ ৪৫, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান’,
৭. ইরাকী, তাখরীযে ইহইয়াউল উলূম,১/২২০পৃ. ৩শ বলেন, "ইমাম ইবনে নুমান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন ও ১/৪৪৫প, হাদিস ৫১১। তিনি বলেন ইমাম ইবনে কাত্তান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।)
৮. ইবনুল যওজী, আল-ইল্ললুল মুতনাহিয়্যাত আহাদিসুল ওয়াহিয়্যাত, ১/৪৬৮পৃ. হাদিসঃ ৭৯৬,
৯. আলুনী,কাশফুল খাফা, ১/১৮৯পৃ. হাদিস,৫০১, তিনি বলেন, ইমাম ইরাকি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
১০. আবু তূলেব মক্কী,কুউয়াতুল কুলুব,১/১২১পৃ.দারুল। ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন,
১১. ইমাম গাযযালী, ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,১/১৮৬পৃ.,
১২. দারুল মা'রিফ বয়র, শায়খ খলিল (ওফাত-৮৬৯ হি.),
১৩. বাশারাতুল মাহবুব বি তাকফীরুল যুনুব,১/৩৯পৃ.
১৪. আবদুর রহমান সাফুরী, নুযহাতুল মাযালিস, ১/১৩৮পৃ. মাতবায়ে কাস্তালিয়া, কাহেরা, মিশর।
১৫. প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের “স্বরূপ উন্মােচন”৪২২ পৃ।