━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

بِسْــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ الرَّحِيم


কিতাবঃ ফাযায়েলে দুরূদ


━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━






১ম অধ্যায়ঃ দুরূদ পাঠের আদব সংক্রান্ত মাসায়েল।

সালাম ব্যতিত দুরূদ পাঠ মাকরূহ


ইমাম শারফুদ্দিন আল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তিবী (رحمة الله) তিনি তার

شرح الطبي على مشكاة المصابيح – নামক কিতাবের ৬৫ পৃষ্টায় উলে­খ করেন-

ويكره الاقتط رعلى الصلاة دون اسلام وبالعكس 

এর ভাবার্থ হল- আল্লামা আত তিবী (رحمة الله) বলেন, সালাম ব্যতিরেকে শুধুমাত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা এবং দুরূদ ব্যতিরেকে শুধুমাত্র সালাম পাঠ করা মাকরূহ। 

[ইমাম শারফুদ্দিন আল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তিবীঃ شرح الطبي على مشكاة المصابيح – নামক কিতাবের ৬৫ পৃষ্টা, আনওয়ারে মদীনা]


কিন্তু যদিও এই মাকরূহ এর ব্যাপারে কোন কোন আলেম নিরবতা পালন করেছেন। (জজবুল কুলুব) 


হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান (رحمة الله) কর্তৃক প্রণীত দালায়েলুল খাইরাত থেকে উল্লেখিত কিছু আদবঃ

 

১। পাঠক মহল এর জন্য প্রয়োজন হল নিজেকে আত্মার সর্ব প্রকার রুগ্ন থেকে পুত: পবিত্র রাখা। যেমন অহংকার হিংসা বিদ্বেশ ইত্যাদি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। তারপর অযু করে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করে সুগন্ধি লাগিয়ে দুরূদ পাঠ করা। কেননা অযুবিহীন দুরূদ পাঠ করা আদব বা শিষ্টাচার বিরোধী। যদিও বা শরীয়তে তা যায়েজ আছে।

২। জায়নামাজে কেবলামুখী হয়ে বসে বিনয়ী অন্তরে দুরূদ শরীফ পড়বেন।

৩। নিজ অন্তরকে সমুদয় দুনীয়াবী কল্পনা থেকে মুক্ত ও পবিত্র রেখে একাগ্রচিত্তে পাঠ করতে হবে।

৪। রিয়া বা  লোক দেখানোর জন্য দুরূদ শরীফ পাঠ করবে না।

৫। যেমনিভাবে মুখে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তেমনিভাবে অন্তরকেও একাগ্রতা চাই। অন্যথায় দুরূদ পাঠে কোন ফল হবে না।

৬। দুরূদ শরীফ পাঠকালীন সময়ে এই ধারণা পোষণ করতে হবে যে আমার এই দুরূদ শরীফ হুযুরে পাক (ﷺ) এর দরবারে ফিরিশতা কর্তৃক পৌছানো হচ্ছে বা তিনি নিজেই তা শুনছেন।

৭। নিজ অন্তরকে ক্ষীন করে রোদন উন্মুখ অন্তরে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।

৮। অন্তরের সম্পর্কটা আল্লাহর সাথে হবে?

৯। দুরূদ শরীফ পাঠ করার সময় যেন কারো সাথে কথা না হয়।

১০। যে সমস্ত জায়াগায় অপবিত্র ও দুর্গন্ধময় সে সমস্ত জায়াগায় দুরূদ শরীফ পাঠ করা অনুচিত।

১১। হাসি ঠাট্টাকালে দুরূদ পাঠ করা কুফুরীর আশংকা বিদ্যমান।

১২। গুণাহের কাজের সময় দুরূদ শরীফ একবারেই পড়বে না।

১৩। যেখানে হাসি ও আনন্দ উল্লাস, তামাশা, নাচ-গান হয় সেখানে দুরূদ শরীফ পাঠ করা যাবে না।

 আশাকরি নবীজীপ্রেমিক আশেকগণ এ নিয়ম কানুন মেনে দুরূদ শরীফ পাঠে সচেতনতা অবলম্বন করবেন।{ যিকরে এলাহী]


যে সমস্ত স্থানে বা অবস্থায় দুরূদ পড়া নিষিদ্ধ এবং বৈধঃ


১। সহবাসের সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

২। প্রস্রব পায়খানার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৩। ব্যবসার মাল বহুল প্রচারের জন্য দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৪। হাচি দেওয়ার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৫। জবেহ করার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৬। তোষামোদের সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৭। দুনীয়াবি কোন স্বার্থের জন্য (যেথায় দুরূদ শরীফ পড়া উদ্দেশ্য নয় বরং দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য থাকে) সেখানে দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৮। আশ্চর্য্যকর সংবাদ শ্রবণ করার সময়।

৯। হোচট খাওয়ার পর।

🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী: ১/৩৮৩ পৃ)


ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এই স্থান ছাড়া বাকী স্থানে দরুদ-সালাম পড়া সম্পর্কে লিখেন-


(قَوْلُهُ وَمُسْتَحَبَّةٌ فِي كُلِّ أَوْقَاتِ الْإِمْكَانِ(أَيْ حَيْثُ لَا مَانِعَ.


-‘‘নিষিদ্ধ স্থান ব্যতীত প্রত্যেক যায়গায় রাসূল (ﷺ) এর দরুদ-সালাম পাঠ করা মোস্তাহাব।’’

🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী,  ১/৫১৮পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)



বাহারে শরীয়তে দোয়া-দরুদ বিষয়ক কিছু মাসায়েলঃ



মাসআলা নং-১: 

জীবনে একবার দরুদ শরিফ পড়া ফরয। প্রত্যেক যিকরের জলসায় দরুদ শরিফ পড়া ওয়াজিব।🔺(১)


মাসআলা নং-২: 

নাম মােবারক নিজে উচ্চারণ করুক বা অন্যজন থেকে শ্রবণ করুক। মজলিসে যদি শতবার উল্লেখ হয় প্রত্যেকবার দরুদ শরিফ পড়া উচিত। নাম মােবারক নিলাে বা শুনলাে, সে সময় দরুদ পড়ল না অন্যসময়ে তা পড়বে নেবে।🔺(২)


মাসআলা নং-৩: 

বিক্রেতা বিক্রির বস্তুর গুনাগুন ও শ্রেষ্ঠত্ব ক্রেতার নিকট গ্রহণীয় করে তােলার উদ্দেশ্যে দরুদ শরিফ পড়া বা সুবহানাল্লাহ বলা জায়িয নেই। এমনিভাবে কোন বড়লােককে দেখে দরুদ শরিফ পড়া এ নিয়্যতে যেন তার আগমন সম্পর্কে মানুষের নিকট সংবাদ পৌঁছে যায় এবং মানুষ তার সম্মানে উঠে দাঁড়াবে এবং জায়গা ছেড়ে দেবে তা জায়েয নেই।🔺(৩)


মাসআলা নং-৪: 

যত পরিমাণ সম্ভব দরুদ শরিফ পড়া মুস্তাহাব এবং বিশেষভাবে নিন্মােক্ত স্থানেঃ

(১) জুম'আ দিবসে, 

(২) জুম'আ রাতে, 

(৩-৪) সকাল-সন্ধ্যায়, 

(৫) মসজিদে গমনকালে, 

(৬) মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়, 

(৭) রওযা মােবারকের যিয়ারতের সময়, 

(৮) সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের উপর, 

(৯) খুতবায়,

(১০) আযানে জবাবের পর, 

(১১) ইক্বামতের সময়, 

(১২) দোয়ার শুরু শেষ এবং মাঝখানে, 

(১৩) দোয়া কুনুতের পর, 

(১৪) হজ্জের মধ্যে লাব্বায়ক তালবিয়া সমাপ্তির পর, 

(১৫) একত্র হলে বা বিদায়কালে, 

(১৬) অযু করার সময়, 

(১৭) কোনাে কিছু ভুলে গেলে সে সময়, 

(১৮) ওয়ায করার সময়, 

(১৯) পড়া বা পড়ানাের সময়, 

(২০) বিশেষত: হাদিস শরিফ পাঠকালে প্রথমে এবং শেষে, 

(২১) প্রশ্ন বা ফাতওয়া লিখার সময়, 

(২২) লেখনির সময়,

(২৩) বিবাহের সময়, 

(২৪) কর্জ বা ধার দেওয়ার সময়, 

(২৫) কোনাে বড় কাজ করার সময়, 

(২৬) নাম মােবারক যখন লিখবে দরুদ শরিফ অবশ্যই লিখবে। অনেক আলেমদের মতে- সে সময় দরুদ শরিফ লিখা ওয়াজিব।🔺(৪)


মাসআলা নং-৫: 

অধিকাংশ লােকদের মধ্যে বর্তমানে দরুদ শরিফের পরিবর্তে ( ص ) ( عم ) ( صلعم ) সংক্ষেপে লিখার প্রবণতা দেখা যায় এরূপ লিখা নাজায়িয কঠোর হারাম এভাবে এ (ﷺ) এর স্থলে (عه ) (ص ) (رضي الله عنه) লিখা এটাও উচিত নয়। যাদের নাম মুহাম্মদ, আহমদ, আলি, হাসান, হােসাইন ইত্যাদি তাদের নাম সংক্ষেপে (রাঃ) (আঃ) লিখাও নিষিদ্ধ। এ স্থানে তাে ব্যক্তি উদ্দেশ্য তার দিকে দরুদের ইঙ্গিতের কি অর্থ?🔺(৫) 


মাসআলা নং-৬: 

ফরজ নামাযে শেষ বৈঠক ছাড়া দরুদ শরিফ পড়বে না। 🔺(৫)  নফল নামাযের প্রথম বৈঠককেও সুন্নাত।  দরুদের পর দোয়া পড়বে।🔺(৬)


মাসআলা নং-৭: 

দোয়া আরবি ভাষায় পড়বে। অনারবী ভাষায় পড়া মাকরূহ। 🔺(৭)


মাসআলা নং-৮: 

মুসলমান হলে নিজের জন্য পিতামাতা, ওস্তাদবৃন্দ, বিশ্বের সকল মুমিন নরনারীর জন্য প্রার্থনা করবে। নির্দিষ্ট করে শুধু নিজের জন্য করবে না। 🔺(৮)


মাসআলা নং-৯: 

পিতামাতা ও শিক্ষকবৃন্দ যদি কাফির হয় তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া করা হারাম। মৃত্যুবরণ করলে তাদের মাগফেরাত কামনা করাটা ফকিহগণ কুফরি বলেছেন, তবে জীবিত থাকলে তাদের জন্য হেদায়ত নসিবের তৌফিক কামনা করে দোয়া করবে। 🔺(৯)


মাসআলা নং-১০: 

স্বভাবগত অসম্ভব ও শরয়ী অসম্ভবের বেলায় দোয়া হারাম।🔺(১০) 


মাসআলা নং-১১: 

সে সব দোয়া যা কুরআন হাদিসে আছে সেগুলাের সাথে দোয়া করবে কিন্তু কুর’আনের দোয়া সমূহ কুরআনের (তেলাওয়াতের) নিয়্যতে এ স্থানে (নামাজে) পড়া জায়েজ নেই। বরঞ্চ কিয়াম ছাড়া নামাজের অন্য কোন স্থানে কুরআন পড়ার অনুমতি নেই।🔺(১১)


তথ্যসূত্রঃ_________________________


🔺১.

ক.ইমাম কুরতুবী, তাফসিরে আহকামুল কোরআন, ১৪/২৩৩ পৃ., 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী।

গ.ইমাম হাসকাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৭৬-২৮১ পৃ:, পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত'। 


🔺২.

ক.ইমাম হাসকাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৭৬-২৮১ পৃ., পরিচ্ছেদঃ সিফাতুস সালাত। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী, 

গ.ইমাম শামীঃ রুদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত।


🔺৩.

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮১ পৃ:, পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত! 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺৪.

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮১ পৃ., পরিচ্ছেদঃ সিফাতুস সালাত। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী, 

গ.ইমাম শামীঃ রুদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত।


🔺৫.

ক. তাহতাভী, হাশীয়াতুত তাহতাভী আ'লা দুররুল মুখতার, ১/৬ পৃ., পরিচ্ছেদ: খুতবাতুল কিতাব। 

খ. ইমাম আহমদ রেযা খান, ফাতওয়ায়ে রভিয়্যাহ, ২৩/৩৮৭ পৃ. 

গ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺৬. 

ক.ইমাম হাসকাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮২ পৃ:, পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত'। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺৭. 

ক.ইমাম হাসাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৫ পৃ., পরিচেছদ: সিফাতুস সালাত। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺৮.

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৬ পৃ., পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।

গ.ফতোয়ায়ে আলমগীরি,

ঘ.ইমাম হাসকাকী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত।


🔺৯. 

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৮ পৃ., পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত,

খ.ইমাম হাসকাকী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত।


🔺১০. 

ক.ইমাম হাসকাকী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৮ পৃ., পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত। 

খ.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, 

গ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺১১. 

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৯ পৃ, 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


_______________________________



Top