আহলে বাইতের ভালোবাসা
শায়খ আরিফুল ইসলাম আশরাফী
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে নিকটের মানুষ হচ্ছেন আহলে বাইত বা নবী পরিবারের সদস্যগণ। তাই আহলে বাইতের সদস্যগণের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তা’আলা আহলে বাইত বা নবী পরিবার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا
অর্থাৎ- “হে নবী পরিবারের সদস্যবৃন্দ! আল্লাহ তায়ালা তো এটাই চান যে, তিনি তোমাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করে দেবেন এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরুপে পূতঃ পবিত্র রাখবেন।”
আহলে বাইতকে ভালোবাসা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের চাওয়া। এই প্রসঙ্গে কালামে পাকে ইরশাদ করেন-
قُلْ لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَي
অর্থাৎ- “হে প্রিয় হাবীব! আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের নিকট আমার অবদানের বিনিময়ে কিছুই কামনা করি না। তবে আমার নিকটাতœীয়দের প্রতি প্রেম ভালোবাসা অবশ্যই কামনা করি।”
উপরোক্ত আয়াতে কারীমাতে আমরা দেখি যে, যিনি আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছেন, তিনি বলছেন সেই ধর্ম প্রাপ্তির বিনিময়ে আমরা যেনো আহলে বাইতকে ভালোবাসি। আর এটা আল্লাহর হাবীব নিজে বলছেন না বরং আল্লাহ পাক তাঁকে দিয়ে বলাচ্ছেন। অর্থাৎ- আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা রাখা আল্লাহরও চাওয়া।
এছাড়া আহলে বাইতের মহব্বত প্রসঙ্গে অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন, একখানা হাদীসে এসেছে-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِ حَسَنٍ، وَحُسَيْنٍ، فَقَالَ: مَنْ أَحَبَّنِي وَأَحَبَّ هَذَيْنِ، وَأَبَاهُمَا، وَأُمَّهُمَا كَانَ مَعِي فِي دَرَجَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থাৎ- “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাত ধরে বলেন: যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে এবং এ দুজন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালোবাসে, সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই অবস্থানে থাকবে।”
অপর এক হাদিসে এসেছে, রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَحِبُّوا اللَّهَ لِمَا يَغْذُوكُمْ مِنْ نِعَمِهِ، وَأَحِبُّونِي بِحُبِّ اللَّهِ، وَأَحِبُّوا أَهْلَ بَيْتِي لِحُبِّي
অর্থাৎ- “তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে মহব্বত কর। কেননা তিনি তোমাদেরকে তার নিয়ামতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহর মহব্বতে তোমরা আমাকেও মহব্বত কর এবং আমার মহব্বতে আমার আহলে বাইতকেও মহব্বত কর।”
অত্র হাদিসে আহলে বাইতকে ভালোবাসার জন্য প্রিয় নবীজির স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই তো সাহাবায়ে কেরাম আহলে বাইতের ভালোবাসাকে সর্বাবস্থায় প্রাধান্য দিতেন। আহলে বাইতের ভালোবাসা সম্পর্কে হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
وَالَّذِيْ نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَرَابَةُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ اِلَيَّ أَنْ أَصِلَ مِنْ قَرَابَتِي
অর্থাৎ- “আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, আমার আতœীয়দের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার চেয়ে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আতœীয়দের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা অধিক পছন্দ করি।”
ইমাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার ভালোবাসা সম্পর্কে প্রিয় নবীজি ইরশাদ করেন-
اَللَّهُمَّ اِنِّي أُحِبُّهُمَا فَأَحِبَّهُمَا وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُمَا
অর্থাৎ- “হে আল্লাহ! আমি হাসান ও হুসাইনকে ভালোবাসি। অতএব আপনিও তাদের ভালোবাসুন। আর যারা হাসান হুসাইনকে ভালোবাসে সে প্রেমিকদেরকেও আপনি ভালোবাসুন।”
আহলে বাইতের ভালোবাসা ও অনুসরণেই মুক্তি। এই প্রসঙ্গে এক হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
اِنَّمَا مَثَلُ اَهْلِ بَيْتِي فِيْكُمْ كَمَثَلِ سَفِيْنَةِ نُوْحُ مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَمَنْ تَخْلَفَ عَنْهَا غَرِقَ
অর্থাৎ- “নিশ্চয়ই আমার আহলে বাইত হযরত নূহ আলাইহিস সালামের নৌকা সদৃশ। যে ব্যক্তি আহলে বাইতের নৌকায় আরোহন করবে সে মুক্তি পাবে। আর যে ব্যক্তি আহলে বাইতের নৌকায় আরোহন থেকে বিরত থাকবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে।”
আহলে বাইতের মর্যাদার আরেকটি নিদর্শন হলো নবীজি হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বেহেশতের মহিলাদের সর্দার এবং ইমাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে জান্নাতের যুবকগণের সর্দার ঘোষণা করেছেন।
অতএব, যারা আহলে বাইতকে ভালোবাসে না, আহলে বাইতের মর্যাদা আলোচনা করে না বুঝতে হবে তারা প্রকৃত মুসলমান নয়।