بِسْــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ الرَّحِيم
কিতাবঃ ফাযায়েলে দুরূদ (২২২ হাদিস)
লেখক, অনুবাদক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
ছাত্রঃ এম.বি.বি.এস, ব্লগারঃ ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক রিসার্চার।
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
কিতাবঃ ফাজায়েলে দুরূদ (২২২ হাদিস)
লেখক, সংকলক, অনুবাদকঃ
মাসুম বিল্লাহ সানি (০১৭১০৩৫৫৩৪২)
প্রথম প্রকাশকালঃ ২৪.০১.২০২০
কপিরাইট © লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।
প্রকাশনায়ঃ সুন্নি সাইবার টিম
সম্পাদনাঃ………….।
উৎসর্গঃ
প্রিয় নবী (ﷺ), তাঁর আহলে বাইত ও শোহাদায়ে কারবালা
লেখক পরিচিতিঃ
তরুণ লেখক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ সানি, ২০১২ সাল থেকে কতিপয় ধর্মীয় বিষয় নিয়ে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা শুরু করে। এরই ফলশ্রুতিতে ২০১৫ সালে অনলাইন এক্টিভিটিস্ট হিসেবে ইসলামী-বিশ্বকোষ (সুন্নি-বিশ্বকোষ) নামক ব্লগ পরিচালনা শুরু করে। যা ইতিমধ্যেই ১০ হাজারের অধিক জ্ঞানের তথ্যভান্ডারে পরিনত হয়েছে। অতঃপর অনলাইনে দ্বীনের সঠিক আকিদা প্রচারে সাইবার টিম গঠন করে এক ধর্মপ্রাণ তরুণ মুসলমানদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সাইবার টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন ইসলামিক এপ্স, পি.ডি.এফ, ব্লগিংসহ অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছে। ধর্মীয় গবেষণার পাশাপাশি MBBS কোর্সে অধ্যয়ণরত আছেন। লেখক ৮ম শ্রেণী থেকে বিভিন্ন কাব্য ও সাহিত্য রচনায় নিয়োজিত।
লেখকের রচিত কবিতার সংখ্যা প্রায় শতাধিক। লিখিত উপন্যাস সংখ্যা ২। লেখকের লিখিত ইসলামিক কিতাবের মধ্যে রয়েছে ১.মানাকিবে আহলে বাইত, ২.কদম্বুচি শিরক নয় সুন্নাহ, ৩. আন নাবী আল উম্মী, ৪. ফাজায়েলে দুরূদ, ৫. ইলমে দ্বীন অর্জনের ফজিলত, ৬. ইবাদত কবুলে আকিদার বিশুদ্ধতার গুরুত্ব, ৭. আল-বিদআতঃ বিদআতে সাইয়্যা ও বিদআতে হাসানা, ৮.শব্দ ব্যবহারের শিষ্টাচার, ৯.সৃষ্টিতত্ত্ব ও নূরতত্ত্ব। যেগুলো এখনও অপ্রকাশিত।
মসলকে আ'লা হযরতের অনুসারী। ২০১৫ সালের দিকে পীরে কামেল, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.) এর নিকট বায়াত গ্রহণ করে তরিকায়ে কাদরীয়াতে দাখিল হন।
সূচীপত্রঃ
১ম অধ্যায়ঃ দুরূদ পাঠের আদব সংক্রান্ত মাসায়েল।
❏সালাম ব্যতিত দুরূদ পাঠ মাকরূহ
❏হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান (رحمة الله) কর্তৃক প্রণীত কিছু আদব।
❏যে সমস্ত স্থানে বা অবস্থায় দুরূদ পড়া নিষিদ্ধ এবং বৈধ।
❏বাহারে শরীয়তে দোয়া-দুরূদ বিষয়ক কিছু মাসায়েল।
২য় অধ্যায়ঃ কুরআন হাদিসে দুরূদ পাঠের নির্দেশ।
❏ আল-কুরআনের বর্ণনায় দুরূদের ফজিলত।
● আয়াত ১-৫
❏ আল-হাদিসের বর্ণনায় দুরূদ-সালামের ফজিলত
● হাদিস ১-২
৩য় অধ্যায়ঃ দুরূদ শরীফ না পড়ার ক্ষতি।
● হাদিস ১-১৪:
➥আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে বঞ্চিত
➥জাহান্নামে প্রবেশ করবে
➥জান্নতের রাস্তা ভূলে গেল
➥জান্নাতের পথের প্রতি উদাসীন
➥সে আমার প্রতি জুলুম করল
➥ঐ ব্যক্তির নাক ধুলোয় ধূসরিত হােক
➥তাদের উপর চরম অনুশোচনা সৃষ্টি হবে
➥সে ব্যক্তি দুর্ভাগা
➥দুরূদ শরীফ বর্জনকারী বড়ই কৃপণ।
৪র্থ অধ্যায়ঃ ফাযায়েলে দুরূদ ও জুম্মা।
● হাদিস ১-১৫
❏ জুমআ'র দিবা-রাত্রি অধিক হারে দুরূদ পাঠ।
❏ জুমআ'র দিনে নির্দিষ্ট করে দুরূদ পড়া জায়েজ।
৫ম অধ্যায়ঃ ফাযায়েলে দুরূদ ও ফেরেশতা।
● হাদিস ১-৫
❏ রওজা মুবারক ঘিরে ৭০ হাজার ফেরেশতার দিবা-রাত্রি দুরূদ পাঠ
❏ তাজিম ও মুহাব্বতের সাথে পাঠকৃত দুরূদ থেকে ফেরেশতার সৃষ্টি।
❏ বিরাটকার ফেরেশতার ঝাড়া দেয়া ডানা থেকে পরা প্রতিটি ফোঁটা থেকে ১জন ফেরেশতার সৃজন।
❏ ৭০ হাজার ডানা বিশিষ্ট পাখি সৃজন।
৬ষ্ঠ অধ্যায়ঃ আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম) সম্পর্কিত ফাযায়েলে দুরূদ।
● হাদিস ১-৬
❏ হযরত আদম (عليه السلام) এর মোহরানা আদায়।
❏ হযরত খিযির (عليه السلام) এবং হযরত ইলিয়াস (عليه السلام) এর ঘটনা সম্পর্কিত হাদীস।
❏ দুরূদের মাধ্যমে হযরত মূসা (عليه السلام) এর কল্যাণ লাভ।
❏ আল্লাহর আম্বিয়া (عليه السلام)-এর ওপর দুরূদ প্রেরণ।
৭ম অধ্যায়: হায়াতুল আম্বিয়া। উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ ও আমলসমূহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকট পৌঁছায়।
● হাদিস ১-২৮:
❏ ইমামগণের বর্ণনায় উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ পেশ।
❏ হাদিসের বর্ণনায় উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ পেশ।
❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকট আমাদের আমলসমূহ পৌঁছায়।
❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুরূদ পাঠকারীকে চিনেন এবং জবাব প্রদান করেন।
৮ম অধ্যায়: হজ্জ্ব, আজান, নামাজ, ইকামাত, মসজিদ ও ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ পাঠ।
● হাদিস ১-২০:
❏ আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালাম।
❏ আযানের পর দুরূদ ও সালাম।
❏ ইকামাতের পূর্বে দুরূদ ও সালাম।
❏ মসজিদে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম।
● হাদিস ১-৭:
➡নামাজের মধ্যে দুরূদ পাঠ সম্পর্কিত হাদিস ও মাসায়েল।
● হাদিস ১-৮:
❏ মোনাজাতের মধ্যে দুরূদ পাঠ।
❏ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুরূদ।
❏ ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম।
❏ তালবীয়াহ পাঠ শেষ করার পর দুরূদ পড়া
❏ সাফা ও মারওয়ার মাঝে দুরূদ শরীফ পাঠ
❏ রওজা শরীফ যিয়ারতের সময় দুরূদ শরীফ পড়া।
● হাদিস ১-১৫ :
➡বিভিন্ন শব্দে দুরূদ শরীফ পাঠ
● হাদিস ১-১৭ :
➡রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সহ অন্যান্য যাদের উপর দুরূদ পড়া যায়, বিভিন্ন শব্দে দুরূদে ইব্রাহীম।
❏ আরো কিছু দুরূদ শরীফ।
৯ম অধ্যায়: দুরূদ পাঠের অগণিত ফজিলত
● হাদিস ১-৮২:
❏ সাক্ষাত, বিদায়, কোন মজলিশে দুরূদ পাঠ
❏ রহমত নাজিল হয়
❏ ফেরেশতাগণ কর্তৃক দুরূদ প্রেরণকারীর জন্য দোয়া প্রার্থনা
❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকটবর্তী হয়ে শাফায়াত লাভ
❏ দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত
➠দোয়া আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে
➠প্রত্যেক দো'আ পর্দাবৃত থাকে
➠দুরূদের মাধ্যমে দোয়া কবুল হয়
➠কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে মুসাফাহা
❏ উম্মতের জন্য মাগফিরাত ও গুনাহের কাফফারা
❏ আশি বছরের গুনাহ্ মাফ
❏ জিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের পর দুরূদ পাঠ
❏ দুরূদ পাঠ উম্মতের জন্য পবিত্রতা
❏ অভাব ও বিপদাপদ দূরীভূত হয়
❏ কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ
❏ মিজানের পাল্লা ভারী
❏ আরশের ছায়াতলে অবস্থান
❏ কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ
❏ জান্নাত লাভ
❏ উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ সাওয়াব
❏ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ
❏ গোলাম আযাদ, হজ্জ্ব ও জিহাদের সমপরিমাণ সাওয়াব
❏ ৪০০ জিহাদের সওয়াব (প্রত্যেক জিহাদ ৪০০ হজ্জের সমান)
❏ ৭০জন ফেরেশতা সাওয়াব লিখতে থাকেন
❏ অযু করার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ
❏ কানে শব্দ হলে দুরূদ শরীফ পাঠ
❏ আযাব থেকে মুক্তি
❏ নিরাপদে পুলসিরাত পার
❏ চেহারার উজ্জ্বলতা ও দুরূদ পাঠের ঘটনা
❏ দুরূদ শরীফ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ বাণী
❏ দুরূদ পাঠের মাধ্যমে বংশধর কল্যাণপ্রাপ্ত হয়
❏ কোন কিছু ভুলে গেলে দুরূদ পাঠ।
১০ম অধ্যায়ঃ ইমাম ও বুজুর্গানে দ্বীনের বর্ণনায় দুরূদের ফজিলত।
● ঘটনা ১-১৮।
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
بِسْــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ الرَّحِيم
কিতাবঃ ফাযায়েলে দুরূদ
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১ম অধ্যায়ঃ দুরূদ পাঠের আদব সংক্রান্ত মাসায়েল।
সালাম ব্যতিত দুরূদ পাঠ মাকরূহ
ইমাম শারফুদ্দিন আল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তিবী (رحمة الله) তিনি তার
شرح الطبي على مشكاة المصابيح – নামক কিতাবের ৬৫ পৃষ্টায় উলেখ করেন-
ويكره الاقتط رعلى الصلاة دون اسلام وبالعكس
এর ভাবার্থ হল- আল্লামা আত তিবী (رحمة الله) বলেন, সালাম ব্যতিরেকে শুধুমাত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা এবং দুরূদ ব্যতিরেকে শুধুমাত্র সালাম পাঠ করা মাকরূহ।
[ইমাম শারফুদ্দিন আল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তিবীঃ شرح الطبي على مشكاة المصابيح – নামক কিতাবের ৬৫ পৃষ্টা, আনওয়ারে মদীনা]
কিন্তু যদিও এই মাকরূহ এর ব্যাপারে কোন কোন আলেম নিরবতা পালন করেছেন। (জজবুল কুলুব)
হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান (رحمة الله) কর্তৃক প্রণীত দালায়েলুল খাইরাত থেকে উল্লেখিত কিছু আদবঃ
১। পাঠক মহল এর জন্য প্রয়োজন হল নিজেকে আত্মার সর্ব প্রকার রুগ্ন থেকে পুত: পবিত্র রাখা। যেমন অহংকার হিংসা বিদ্বেশ ইত্যাদি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। তারপর অযু করে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করে সুগন্ধি লাগিয়ে দুরূদ পাঠ করা। কেননা অযুবিহীন দুরূদ পাঠ করা আদব বা শিষ্টাচার বিরোধী। যদিও বা শরীয়তে তা যায়েজ আছে।
২। জায়নামাজে কেবলামুখী হয়ে বসে বিনয়ী অন্তরে দুরূদ শরীফ পড়বেন।
৩। নিজ অন্তরকে সমুদয় দুনীয়াবী কল্পনা থেকে মুক্ত ও পবিত্র রেখে একাগ্রচিত্তে পাঠ করতে হবে।
৪। রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য দুরূদ শরীফ পাঠ করবে না।
৫। যেমনিভাবে মুখে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তেমনিভাবে অন্তরকেও একাগ্রতা চাই। অন্যথায় দুরূদ পাঠে কোন ফল হবে না।
৬। দুরূদ শরীফ পাঠকালীন সময়ে এই ধারণা পোষণ করতে হবে যে আমার এই দুরূদ শরীফ হুযুরে পাক (ﷺ) এর দরবারে ফিরিশতা কর্তৃক পৌছানো হচ্ছে বা তিনি নিজেই তা শুনছেন।
৭। নিজ অন্তরকে ক্ষীন করে রোদন উন্মুখ অন্তরে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
৮। অন্তরের সম্পর্কটা আল্লাহর সাথে হবে?
৯। দুরূদ শরীফ পাঠ করার সময় যেন কারো সাথে কথা না হয়।
১০। যে সমস্ত জায়াগায় অপবিত্র ও দুর্গন্ধময় সে সমস্ত জায়াগায় দুরূদ শরীফ পাঠ করা অনুচিত।
১১। হাসি ঠাট্টাকালে দুরূদ পাঠ করা কুফুরীর আশংকা বিদ্যমান।
১২। গুণাহের কাজের সময় দুরূদ শরীফ একবারেই পড়বে না।
১৩। যেখানে হাসি ও আনন্দ উল্লাস, তামাশা, নাচ-গান হয় সেখানে দুরূদ শরীফ পাঠ করা যাবে না।
আশাকরি নবীজীপ্রেমিক আশেকগণ এ নিয়ম কানুন মেনে দুরূদ শরীফ পাঠে সচেতনতা অবলম্বন করবেন।{ যিকরে এলাহী]
যে সমস্ত স্থানে বা অবস্থায় দুরূদ পড়া নিষিদ্ধ এবং বৈধঃ
১। সহবাসের সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।
২। প্রস্রব পায়খানার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।
৩। ব্যবসার মাল বহুল প্রচারের জন্য দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।
৪। হাচি দেওয়ার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।
৫। জবেহ করার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।
৬। তোষামোদের সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।
৭। দুনীয়াবি কোন স্বার্থের জন্য (যেথায় দুরূদ শরীফ পড়া উদ্দেশ্য নয় বরং দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য থাকে) সেখানে দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।
৮। আশ্চর্য্যকর সংবাদ শ্রবণ করার সময়।
৯। হোচট খাওয়ার পর।
🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী: ১/৩৮৩ পৃ)
ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এই স্থান ছাড়া বাকী স্থানে দরুদ-সালাম পড়া সম্পর্কে লিখেন-
(قَوْلُهُ وَمُسْتَحَبَّةٌ فِي كُلِّ أَوْقَاتِ الْإِمْكَانِ(أَيْ حَيْثُ لَا مَانِعَ.
-‘‘নিষিদ্ধ স্থান ব্যতীত প্রত্যেক যায়গায় রাসূল (ﷺ) এর দরুদ-সালাম পাঠ করা মোস্তাহাব।’’
🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী, ১/৫১৮পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)
বাহারে শরীয়তে দোয়া-দরুদ বিষয়ক কিছু মাসায়েলঃ
মাসআলা নং-১:
জীবনে একবার দরুদ শরিফ পড়া ফরয। প্রত্যেক যিকরের জলসায় দরুদ শরিফ পড়া ওয়াজিব।🔺(১)
মাসআলা নং-২:
নাম মােবারক নিজে উচ্চারণ করুক বা অন্যজন থেকে শ্রবণ করুক। মজলিসে যদি শতবার উল্লেখ হয় প্রত্যেকবার দরুদ শরিফ পড়া উচিত। নাম মােবারক নিলাে বা শুনলাে, সে সময় দরুদ পড়ল না অন্যসময়ে তা পড়বে নেবে।🔺(২)
মাসআলা নং-৩:
বিক্রেতা বিক্রির বস্তুর গুনাগুন ও শ্রেষ্ঠত্ব ক্রেতার নিকট গ্রহণীয় করে তােলার উদ্দেশ্যে দরুদ শরিফ পড়া বা সুবহানাল্লাহ বলা জায়িয নেই। এমনিভাবে কোন বড়লােককে দেখে দরুদ শরিফ পড়া এ নিয়্যতে যেন তার আগমন সম্পর্কে মানুষের নিকট সংবাদ পৌঁছে যায় এবং মানুষ তার সম্মানে উঠে দাঁড়াবে এবং জায়গা ছেড়ে দেবে তা জায়েয নেই।🔺(৩)
মাসআলা নং-৪:
যত পরিমাণ সম্ভব দরুদ শরিফ পড়া মুস্তাহাব এবং বিশেষভাবে নিন্মােক্ত স্থানেঃ
(১) জুম'আ দিবসে,
(২) জুম'আ রাতে,
(৩-৪) সকাল-সন্ধ্যায়,
(৫) মসজিদে গমনকালে,
(৬) মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়,
(৭) রওযা মােবারকের যিয়ারতের সময়,
(৮) সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের উপর,
(৯) খুতবায়,
(১০) আযানে জবাবের পর,
(১১) ইক্বামতের সময়,
(১২) দোয়ার শুরু শেষ এবং মাঝখানে,
(১৩) দোয়া কুনুতের পর,
(১৪) হজ্জের মধ্যে লাব্বায়ক তালবিয়া সমাপ্তির পর,
(১৫) একত্র হলে বা বিদায়কালে,
(১৬) অযু করার সময়,
(১৭) কোনাে কিছু ভুলে গেলে সে সময়,
(১৮) ওয়ায করার সময়,
(১৯) পড়া বা পড়ানাের সময়,
(২০) বিশেষত: হাদিস শরিফ পাঠকালে প্রথমে এবং শেষে,
(২১) প্রশ্ন বা ফাতওয়া লিখার সময়,
(২২) লেখনির সময়,
(২৩) বিবাহের সময়,
(২৪) কর্জ বা ধার দেওয়ার সময়,
(২৫) কোনাে বড় কাজ করার সময়,
(২৬) নাম মােবারক যখন লিখবে দরুদ শরিফ অবশ্যই লিখবে। অনেক আলেমদের মতে- সে সময় দরুদ শরিফ লিখা ওয়াজিব।🔺(৪)
মাসআলা নং-৫:
অধিকাংশ লােকদের মধ্যে বর্তমানে দরুদ শরিফের পরিবর্তে ( ص ) ( عم ) ( صلعم ) সংক্ষেপে লিখার প্রবণতা দেখা যায় এরূপ লিখা নাজায়িয কঠোর হারাম এভাবে এ (ﷺ) এর স্থলে (عه ) (ص ) (رضي الله عنه) লিখা এটাও উচিত নয়। যাদের নাম মুহাম্মদ, আহমদ, আলি, হাসান, হােসাইন ইত্যাদি তাদের নাম সংক্ষেপে (রাঃ) (আঃ) লিখাও নিষিদ্ধ। এ স্থানে তাে ব্যক্তি উদ্দেশ্য তার দিকে দরুদের ইঙ্গিতের কি অর্থ?🔺(৫)
মাসআলা নং-৬:
ফরজ নামাযে শেষ বৈঠক ছাড়া দরুদ শরিফ পড়বে না। 🔺(৫) নফল নামাযের প্রথম বৈঠককেও সুন্নাত। দরুদের পর দোয়া পড়বে।🔺(৬)
মাসআলা নং-৭:
দোয়া আরবি ভাষায় পড়বে। অনারবী ভাষায় পড়া মাকরূহ। 🔺(৭)
মাসআলা নং-৮:
মুসলমান হলে নিজের জন্য পিতামাতা, ওস্তাদবৃন্দ, বিশ্বের সকল মুমিন নরনারীর জন্য প্রার্থনা করবে। নির্দিষ্ট করে শুধু নিজের জন্য করবে না। 🔺(৮)
মাসআলা নং-৯:
পিতামাতা ও শিক্ষকবৃন্দ যদি কাফির হয় তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া করা হারাম। মৃত্যুবরণ করলে তাদের মাগফেরাত কামনা করাটা ফকিহগণ কুফরি বলেছেন, তবে জীবিত থাকলে তাদের জন্য হেদায়ত নসিবের তৌফিক কামনা করে দোয়া করবে। 🔺(৯)
মাসআলা নং-১০:
স্বভাবগত অসম্ভব ও শরয়ী অসম্ভবের বেলায় দোয়া হারাম।🔺(১০)
মাসআলা নং-১১:
সে সব দোয়া যা কুরআন হাদিসে আছে সেগুলাের সাথে দোয়া করবে কিন্তু কুর’আনের দোয়া সমূহ কুরআনের (তেলাওয়াতের) নিয়্যতে এ স্থানে (নামাজে) পড়া জায়েজ নেই। বরঞ্চ কিয়াম ছাড়া নামাজের অন্য কোন স্থানে কুরআন পড়ার অনুমতি নেই।🔺(১১)
তথ্যসূত্রঃ_________________________
🔺১.
ক.ইমাম কুরতুবী, তাফসিরে আহকামুল কোরআন, ১৪/২৩৩ পৃ.,
খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী।
গ.ইমাম হাসকাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৭৬-২৮১ পৃ:, পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত'।
🔺২.
ক.ইমাম হাসকাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৭৬-২৮১ পৃ., পরিচ্ছেদঃ সিফাতুস সালাত।
খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী,
গ.ইমাম শামীঃ রুদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত।
🔺৩.
ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮১ পৃ:, পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত!
খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী।
🔺৪.
ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮১ পৃ., পরিচ্ছেদঃ সিফাতুস সালাত।
খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী,
গ.ইমাম শামীঃ রুদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত।
🔺৫.
ক. তাহতাভী, হাশীয়াতুত তাহতাভী আ'লা দুররুল মুখতার, ১/৬ পৃ., পরিচ্ছেদ: খুতবাতুল কিতাব।
খ. ইমাম আহমদ রেযা খান, ফাতওয়ায়ে রভিয়্যাহ, ২৩/৩৮৭ পৃ.
গ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।
🔺৬.
ক.ইমাম হাসকাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮২ পৃ:, পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত'।
খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।
🔺৭.
ক.ইমাম হাসাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৫ পৃ., পরিচেছদ: সিফাতুস সালাত।
খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।
🔺৮.
ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৬ পৃ., পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত।
খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।
গ.ফতোয়ায়ে আলমগীরি,
ঘ.ইমাম হাসকাকী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত।
🔺৯.
ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৮ পৃ., পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত,
খ.ইমাম হাসকাকী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত।
🔺১০.
ক.ইমাম হাসকাকী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৮ পৃ., পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত।
খ.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুখতার, কিতাবুস সালাত,
গ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।
🔺১১.
ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৯ পৃ,
খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।
_______________________________
২য় অধ্যায়ঃ
কুরআন হাদিসে দুরূদ পাঠের নির্দেশ।
❏ আয়াত ১ :
হযরত ইয়াহিয়া (عليه السلام) এর জন্ম-ওফাত দিবস পালন ও আল্লাহ সুবহানু তায়ালার সালামঃ
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
"তাঁর [অর্থাৎ ইয়াহিয়া (عليه السلام) এর] প্রতি শান্তি যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।"
[সুরা মারইয়ম, আয়াত ১৫]
❏ আয়াত ২ :
হযরত ঈসা (عليه السلام) ওনার নিজের জন্মদিন পালন ও নিজের প্রতি সালামঃ
وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
"আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।" [সুরা মারইয়ম, আয়াত ৩৩]
❏ আয়াত ৩ :
মহান আল্লাহ বলেন,
أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ 94:1
“[হে হাবিব!] আমি কি আপনার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিইনি?” (সূরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত ১)
❏ আয়াত ৪ :
মহান আল্লাহ বলেন,
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ ﴿٤﴾ 94:4
"[হে হাবিব!] আমি আপনার জিকিরকে বুলন্দ করে দিয়েছি।’’ (সুরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত ৪)
❏ আয়াত ৫ :
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
"আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরূদ পাঠান। হে মুমিনরা! তোমরাও নবীর প্রতি দুরূদ প্রেরণ কর এবং উত্তমরূপে তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর ও তাঁর নির্দেশের অনুগত হও।" (সূরা আহযাব, আয়াত ৫৬)
আল-হাদিসের বর্ণনায় দুরূদ-সালামের ফজিলত
❏ হাদিস ১:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“যখন তোমরা রাসুলগণদের (عَلَيْهِمُ السَّلَام) উপর দুরূদ পাক পড়ো, তখন আমার উপরও দুরূদ শরীফ পাঠ করো, নিশ্চয় আমি সমস্ত জাহানের প্রতিপালকের রাসুল।”
[জমউল জাওয়ামি লিস্ সূয়ুতী, ১ম খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৩৫৪]
❏ হাদিস ২: যেখানে আমার জিকির সেখানে আপনারও জিকির হবেঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّهُ قَالَ: أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ رَبِّي وَرَبَّكَ يَقُولُ: كَيْفَ رَفَعْتُ ذِكْرَكَ؟ قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ، قَالَ: إِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ مَعِي قال الهيثمي رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ -
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : আমার নিকট জিবরাঈল (عليه السلام) আগমন করলেন বললেন আল্লাহ পাক জানতে চেয়েছেন তিনি আপনার জিকিরকে কীভাবে বুলন্দ করেছেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত। জিবরাঈল (عليه السلام) বলেন, মহান রব সংবাদ প্রেরণ করেছেন : হে হাবিব! যেখানে আমার জিকির হবে, সেখানে আমার সাথে আপনারও জিকির হবে।’’
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম আবু ইয়ালা: আল মুসনাদ : ২/৫২২ : হাদীস : ১৩৮০,
২.ইমাম ইবনে হাইয়্যান : আস সহীস : ৮/১৭৫: হাদীস : ৩৩৮২,
৩.ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফিরদাউস : ৪/৪০৫ : হদীস : ৭১৭৬,
৪.ইমাম ইবনে খাল্লাল : আল মুসনাদ: ১/২৬২ : হাদীস : ৩১৮,
৫.ইবনে হাজার আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী : ৮/৭১২পৃ.
৬.আল্লামা ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৪/৫২৫পৃ.,
৭.আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ: ৮/২৫৪।
৮.মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোওয়ায়ে আহলুস সুন্নাহ।
২য় অধ্যায়ঃ দুরূদ শরীফ না পড়ার ক্ষতি
❏ হাদিস ১: আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে বঞ্চিত
মালেক বিন হুয়াইরিস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বরে উঠেন, প্রথম সিঁড়িতে উঠে আমীন বলেন। অতঃপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। অতঃপর তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। অতঃপর বললেন, আমার নিকট জিবরীল (عليه السلام) এসে বললেন,
হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! যে ব্যক্তি রামাযান মাসে উপনীত হওয়ার পরও তার জীবনের গোনাহকে ক্ষমা করাতে পারল না, আল্লাহ তাকে রহমত থেকে দূর করুন। আমি তা শুনে বললাম, আমীন। তারপর বলেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে পেল, অথচ (তাদের সাথে সদ্ব্যহার না করে) জাহান্নামে প্রবেশ করল, আল্লাহ তা‘আলা তাকেও তাঁর রহমত থেকে দূর করুন। আমি বললাম, আমীন।
অতঃপর বললেন, যে ব্যক্তির সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়ার পর আপনার উপর দুরূদ পাঠ করল না, সেও আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে দূর হোক। আমিও তাতে বললাম, আমীন’।
তথ্যসূত্রঃ
[সহীহ ইবনু হিববান, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩০৮, হা/৪১০, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩০৪, হা/৯০৯, সহীহ আত-তারগীব হা/৯৯৬]
❏ হাদিস ২: জাহান্নামে প্রবেশ করবে
ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যার সামনে আমার আলােচনা করা হয়, অথচ সে আমার উপর দুরূদ পড়ে না, সে যখন মারা যাবে, তখন সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা তাকে তাঁর রহমত থেকে দূর করে দেবেন।”
তথ্যসূত্রঃ
[ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮, ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ৩/১৮৮ পৃ. হা/৯০৭]
❏ হাদিস ৩: জান্নতের রাস্তা ভূলে গেল
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
من ذكرت عنده فلم سصلى على اخطأ طريق الجنه –
“যার কাছে আমার আলোচনা হল, অথচ সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে জান্নতের রাস্তা ভূলে গেল।”
[তাবারানীঃ মুজামউল কবীর, ৩য় খন্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৮৮৭, ইমাম কাজী আয়াজঃ আশ-শিফা, তাফসীরে দূররে মানসূরে খন্ড,৫, পৃষ্ঠা ২১৮ এবং ইবনে মাযাহ পৃষ্ঠা ২৯৪ বর্ণিত হয়েছে]
❏ হাদিস ৪: সে যেন বেহেশতের পথের প্রতি উদাসীন
হযরত ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
مَن ذُکِرتُ عِندهُ فخطَئ الصلاةَ عَلَيَّ خَطَئ طَريقَ الحَنَّة
যদি কারো নিকট আমার নাম স্মরণ করা হলো আর সে আমার প্রতি দূরুদ পড়ার ব্যাপরে উদাসীন থাকলো, সে যেন বেহেশতের পথের প্রতি উদাসীন থাকলো।
[কানযুল উম্মাল খন্ড,১, পৃষ্ঠা ৪৩৮]
❏ হাদিস ৫: সে আমার প্রতি জুলুম করল
হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
مَن ذُکرتُ عِنرَهُ فَلَم يُصَلِّ عَلَيَّ فَقَد شقي
“যে (ব্যক্তির) নিকট আমার আলোচনা হল, আর সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে আমার প্রতি জুলুম করল।”
তথ্যসূত্রঃ
[সুনানে ইবনে মাযাহ খঃ১ পৃষ্ঠা১৪০, হাদীস ৪০০, মুসান্নিফে আবদুর রাজ্জাক, ২য় খন্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩১২৬]
❏ হাদিস ৬: ঐ ব্যক্তির নাক ধুলোয় ধূসরিত হােক
ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) করেন,
-“ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হােক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হােক) যার, নিকট আমার নাম আলােচনা হল অথচ আমার প্রতি দুরূদ পড়লাে না। ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হােক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হােক), যার নিকট রমজান আসলাে এবং চলে গেলাে অথচ তার মাগফিরাত হল না এবং ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হােক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হােক), যে বৃদ্ধাবস্থায় তার পিতা-মাতাকে পেল অথচ তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাল না। (অর্থাৎ তাদের আনুগত্য ও সেবা করেনি যাতে তারা জান্নাতের যােগ্য হতে পারতাে।)
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৫০ পৃ. হা/৩৫৪৫, হাদিসটি হাসান সহীহ বলে মেনে নিয়েছেন।
২.ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৪৪ পৃ. হা/৮৪৬৫,
৩.সহীহ ইবনে হিব্বান, ৩/১৮৯ পৃ. হা/৯০৮,
৪.ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১২/৪২১ পৃ. হা/৭৪৫,
৫.ইমাম বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ১/২৫০ পৃ. হা/১৭২,
৬.ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৮ পৃ: হা/৬৮৯,
৭.মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৮৯ পৃ. হা/২১৪৮ এবং ১৬/৩৭ পৃ. হা/৪৩৮৩০,
৮.ইমাম নববী, খুলাসাতুল আহকাম, ১/৪৪৪০ পৃ. হা/১৪৩৭,
৯.ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৭৩৪ পৃ. হা/২০১৬, এ হাদিসটির সনদও সহিহ!
১০.ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮,
১১.মেশকাত-৮৬।
❏ হাদিস ৭: তাদের উপর চরম অনুশোচনা সৃষ্টি হবে
রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেন,“যে সব লোক কোন মজলিশে বসল, আল্লাহ্ তাআলার যিকির এবং হুযুর (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়ানো হয় না, ঐ সব লোক কিয়ামতের দিন যখন তাদের পরিণাম দেখবে তবে তাদের উপর চরম অনুশোচনা সৃষ্টি হবে। যদিও তারা জান্নাতে প্রবেশ করে।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৩য় খন্ড, ৪৮৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৯৭২)
❏ হাদিস ৮: সে ব্যক্তি দুর্ভাগা
ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এ হাদিস হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“সে ব্যক্তি দুর্ভাগা, যার সামনে আমার আলােচনা করা হয়, আর সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ে না।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৪/১৬২ পূ, হা/৩৮৭১।
২.ইমাম তাবরানী, মুজামুল কবির, ৩/১২৭ পৃ. হা/২৮৮৫।
৩.ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮।
৪.আমলুল ইয়াউম ওয়াল লাইলাতি ইবনিস সুন্নতী, ৩৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৮১।
দুরূদ শরীফ বর্জনকারী বড়ই কৃপণ
❏ হাদিস ৯:
হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
البخيل الذى من ذكرت عنده فلم يصل على
অর্থাৎ, “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলোচনা হল, আর সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।”
তথ্যসূত্রঃ
[মেশকাত শরীফের ৮৭নং পৃষ্টা, মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৭৩৬]
❏ হাদিস ১০:
“হযরত হুসাইন ইবনে আলি (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন,
البَخِيلُ مَن ذُکِرتُ عِندَهُ فَلَم يُصَلِّ عَلَيَّ
"চরম কৃপণ হলাে ঐ ব্যক্তি, যার নিকট আমার আলােচনা করা হল অথচ সে আমার উপর দুরূদ পাঠ করলাে না।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৫০ পৃ, হা/৩৫৪৬, ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) বলেন, -“এ হাদিসটি হাসান, সহীহ, গরীব।
২.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৭৯, সাকলাইন প্রকাশনী।
৩.মুসনাদে আহমাদ,খন্ড,১ পৃষ্ঠা ২০১।
৪.সূনানে তিরমিযিঃ কিতাবে দোয়া খন্ড,১৩, পৃষ্ঠা ৬২-৬৩।
৫.ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল খন্ড,১, পৃষ্ঠা ৪৩৭, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৩৩৬-৩৩৮ ও ৪৫৩, এ ধরনের হাদীস হযরত আউফ বিন মালেক (رضي الله عنه), ইমাম হাসান (رضي الله عنه), হযরত জাবির (رضي الله عنه), হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه), কাতাদাহ (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণিত।
৬.ইমাম সুয়ূতীঃ তাফসীরে দূররুল মানসূর খন্ড,৫, পৃষ্ঠা ২১৮ এবং
৭.ইমাম নববীঃ রিয়াদুস সালেহীন পৃষ্ঠা ৩৮২।
❏ হাদিস ১১:
ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) সহ আর অনেকে সংকলন করেন এভাবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“সেই লােকই সবচেয়ে কৃপণ যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলাে আর সে দুরূদ পড়লাে না।”
তথ্যসূত্রঃ
[সহীহ ইবনে হিব্বান, ৩/১৯০ পৃ. হা/৯০৯, ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮]
❏ হাদিস ১২:
হযরত আবু যার গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
ان البخيل الناس من ذكرت عند فلم يصلى على
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সবচেয়ে বড় কৃপণ ব্যক্তি হল, যার সামনে আমার নাম উলেখ করা হয়েছে, অথচ আমার উপর সে দুরূদ পাঠ করে না।
তথ্যসূত্রঃ
[ফযলুস সালাত আ'লান নাবিয়্যীন- ৩৭]
❏ হাদিস ১৩:
হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, হে লোকেরা! আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে কৃপণ কে বলব না? সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! (ﷺ) বলুন, হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, من ذكرة عنده فلم يصل على যার সামনে আমার নাম ধরা হবে আর সে আমার উপর দুরূদ পড়ল না।
তথ্যসূত্রঃ
[কাশফুল গোম্মাহ- সূত্র মাওয়াইজে রেজভিয়্যাহ- ২য়/২১০পৃষ্টা]
❏ হাদিস ১৪:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হবে, সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিনে আমার যিয়ারত হতে বঞ্চিত থাকবে। হযরত আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সে ব্যক্তির কয়েকটি আ'লামত বা নিশানা বলে দিন। হাশরের দিন কোন ব্যক্তি আপনার জিয়ারত হতে মাহরূম হবে। তিনি (রাসূলুল্লাহ দ:) বললেন, কৃপণ ব্যক্তি। হযরত আয়শা (رضي الله عنه) আরয করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনি কোন কৃপণের কথা বলেছেন? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এমন কৃপণ যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করার পর আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ে না। সেই কৃপণের ব্যাপারে বলছি।
তথ্যসূত্রঃ
[মাওয়াইজে রেজভিয়্যাহ- ২য় খন্ড- ২১১ পৃ:]
৪র্থ অধ্যায়ঃ জুমুআ ও ফাযায়েলে দুরূদ
জুমআ'র দিবা-রাত্রি অধিক হারে দুরূদ পাঠ
❏ হাদিস ১:
হযরত আওস ইবনে আওস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, "তােমাদের দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন জুমআ'বার। কেননাঃ
ওই দিন হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তার ওফাত হয়, ওই দিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং ওই দিন মানুষ অজ্ঞান হবে অতএব তােমরা সুতরাং উক্ত দিবসে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দুরূদ শরীফ পাঠ কর। কারণ, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়। অতঃপর আমি তােমাদের জন্য দু'আ করি এবং তােমাদের গুনাহ মার্জনার দরখাস্ত করি।
তথ্যসূত্রঃ
(১).আর দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৭৫, হাদীস: ১০৪৭;
(২) সুনানে নাসায়ী ১/১৫০।
(৩) সুনানে ইবনে মাযাহ:৭৬।
(৪).ইমাম নববী হাদীসটি বিশুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন।
(৫).শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৪, গাজী প্রকাশনী।
❏ হাদিস ২:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
"তােমরা আমার ওপর অধিক সংখ্যায় দুরূদ শরীফ পাঠ কর, অধিকতর উজ্জ্বল রজনীতে এবং উজ্জ্বল দিবসে।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৬৫;
(২) আন নুমায়রী (رحمة الله), আল-ই'লামু বি-ফযলিস সালাতি আলান্নাবিয়ি (ﷺ), পৃ. ৬৫, হাদীস: ১১৬।
(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৫।
কোন কোন আলিম বলেছেন যে, জুমআ'বারের রাতের এটিও একটি বৈশিষ্ট্য, যে ব্যক্তি উক্ত রজনীতে দুরূদ এবং সালাম প্রেরণ করেন, সরদারে দ’জাহান, রহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) নিজেই তাঁর সালামের উত্তর প্রদান করেন।
❏ হাদিস ৩:
"যে ব্যক্তি জুমআ'বারের আসরের নামায আদায়ের পর উক্ত স্থান থেকে সরে যাওয়ার পূর্বে উক্ত বৈঠকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওপর ৮০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
তথ্যসূত্রঃ
(১) মিনহাজ শরহে দামিরী।
(২) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী, পৃ. ১৯৮-১৯৯
(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৭।
❏ হাদিস ৪:
ইমাম হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) বলেন যে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আবু উমামাহ (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, তিনি নবী আকরাম (ﷺ) এর নিকট থেকে জুমআর রাত ও দিনে অধিক পরিমানে দুরূদ পড়ার হুকুম নকল করেন।
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ইমান, ৩/৪৩৩ পৃ, হা/২৭৭০,
২.ইমাম কাসতালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃ।
❏ হাদিস ৫:
জুম্মার দিন ও জুম্মার রাতে যে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে তা আমি নিজেই শুনে থাকি। [ইমাম সাফুরীঃ নুজহাতুল মাজালিস]
❏ হাদিস ৬:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “জুমআ' রাত এবং জুমআ'র দিন আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পড়ো, কেননা তোমাদের দুরূদে পাক আমার নিকট পেশ করা হয়।”
[তাবারানীঃ মুজাম আল-আওসাত, ১ম খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৪১]
❏ হাদিস ৭:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “জুমআ'র দিন ও জুমআ'র রাতে আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ করো। কেননা যে এমনটি করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার সুপারিশকারী ও সাক্ষী হবো।”
১.শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩০৩৩,
২.নাসাঈ ,ইবনে মাজাহ, তারগীব, তাবারানী, মুজাম উল আউসাত।
❏ হাদিস ৮:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) আমার উপর জুমআ'র দিন দুরূদ শরীফ পড়বে আমি কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ করব।”
[জমউল জাওয়ামি লিস্ সূয়ুতী, ৭ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা, হদীস- ২২৩৫২]
❏ হাদিস ৯:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি জুমআ'র দিন আমার উপর ১০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে, যখন সে কিয়ামতের দিন আসবে, তখন তার সাথে এমন একটি নূর থাকবে যে, যদি তা সমস্ত সৃষ্টিকে বন্টন করে দেয়া হয়, তবে তা সবার জন্য যথেষ্ট হবে।”
[ইমাম ইস্পাহানীঃ হিলয়াতুল আউলিয়া, ৮ম খন্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা]
❏ হাদিস ১০:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) আমার উপর জুমআ'র দিন ২০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে, তার ২০০ বছরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।” (জমউল জাওয়ামি লিস্ সূয়ুতী, ৭ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা)
❏ হাদিস ১১:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, "এই (জুমুয়ার) দিন এমন একটি দিন, যাতে ফেরেশতাগণ দুনিয়াতে উপস্থিত হন। তাঁরা আমার ওপর দুরূদ শরীফ পাঠকদের দুরূদ শ্রবণ করে আমার নিকট পৌছিয়ে দেন।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইবনে মাজাহ (رحمة الله), আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ৫২৪, হাদীস: ১৬৩৭,
(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৪।
❏ হাদিস ১২:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, জুমআর দিন আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠের পরিমাণ বাড়িয়ে দাও কেননা হচ্ছে এটা ইয়াউমে মাসাহুদ। এ দিনে ফেরেশতারা হাজির হন। আর নিশ্চয় তোমাদের মধ্য যে কেউ দুরূদ পাঠ করে, তার দুরূদ পড়া শেষ হবার পূর্বে ই তার দুরূদ আমার দরবারে পৌঁছে যায় । (ইমাম সুয়ূতীঃ জামেউস সাগীর)
❏ হাদিস ১৩:
হযরত আবু তালহা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “তােমরা জুমআ'বার আমার ওপর দুরূদ প্রেরণ কর, তা আরশে আযীমের নিচে পৌঁছে না, বরং যে ফেরেশতার নিকটেই পৌঁছে তিনি অপরাপর ফেরেশতাদেরকে বলেন, "তােমরা এ দুরূদ পাঠকারীদের জন্য ইস্তিগফার কর।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) আল-খতীবুল বগদাদী (رحمة الله), তারীখু বগদাদ, খ. ৮, পৃ. ৫৭০, হাদীস: ৪০৫০;
(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৪।
❏ হাদিস ১৪:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, -“প্রতি সােমবার ও শুক্রবার আমার ওফাতের পর তােমরা বেশী করে দুরূদ পাঠ করবে, কেননা তােমাদের দুরূদ আমি মাধ্যম ব্যতীত সরাসরি শুনি।”
[ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আনিসুল জালীস” এর ২২৭ পৃষ্ঠা]
জুমআ'র দিনে নির্দিষ্ট করে দুরূদ পড়া জায়েজ
❏ হাদিস ১৫:
হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : যে ব্যক্তি জুমআ'র দিন আমার প্রতি ৮০ বার দুরূদ শরীফ পড়বে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সাহাবীরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার প্রতি দুরূদ শরীফ আমরা কিভাবে পড়বাে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
اللهم صل على محمد عبدك ونبيك ورسولك النبي الأمي
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া নাব্যিয়িকা ওয়া রাসূলিকা আন-নাবিয়্যিল উম্মি’ এভাবে পড়বে।”
তথ্যসূত্রঃ
১. দারে কুতনী : আস সুনান : ২/১৫৪ পৃ:,
২. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১৭৯পৃ.,
৩. খতিবে বাগদাদী : তারীখে বাগদাদ : ১৩/৪৮৯, তিনি হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে,
৪. ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৪৫ পৃ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে,
৫. ইমাম সাখাভী : আল কাশেফ, ১/১৬৭.পূ.
৬. ইরাকী, তানযিহুল শারীয়াতুল কোবরা, ২/৩৩১পৃ. হাদিসঃ ৪৫, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান’,
৭. ইরাকী, তাখরীযে ইহইয়াউল উলূম,১/২২০পৃ. ৩শ বলেন, "ইমাম ইবনে নুমান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন ও ১/৪৪৫প, হাদিস ৫১১। তিনি বলেন ইমাম ইবনে কাত্তান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।)
৮. ইবনুল যওজী, আল-ইল্ললুল মুতনাহিয়্যাত আহাদিসুল ওয়াহিয়্যাত, ১/৪৬৮পৃ. হাদিসঃ ৭৯৬,
৯. আলুনী,কাশফুল খাফা, ১/১৮৯পৃ. হাদিস,৫০১, তিনি বলেন, ইমাম ইরাকি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
১০. আবু তূলেব মক্কী,কুউয়াতুল কুলুব,১/১২১পৃ.দারুল। ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন,
১১. ইমাম গাযযালী, ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,১/১৮৬পৃ.,
১২. দারুল মা'রিফ বয়র, শায়খ খলিল (ওফাত-৮৬৯ হি.),
১৩. বাশারাতুল মাহবুব বি তাকফীরুল যুনুব,১/৩৯পৃ.
১৪. আবদুর রহমান সাফুরী, নুযহাতুল মাযালিস, ১/১৩৮পৃ. মাতবায়ে কাস্তালিয়া, কাহেরা, মিশর।
১৫. প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের “স্বরূপ উন্মােচন”৪২২ পৃ।
৫ম অধ্যায়ঃ ফাযায়েলে দুরূদ ও ফেরেশতা
রওজা মুবারক ঘিরে ৭০ হাজার ফেরেশতার দিবা-রাত্রি দুরূদ পাঠ
❏ হাদিস ১:
নবীহ্ বিন ওয়াহাব (রহঃ) বর্ণনা করছেন, হযরত কাআব বিন আহবার (رضي الله عنه) উম্মুল-মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه)'র কাছে আগমন করলেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে নবী-পাক (ﷺ) সম্বন্ধে আলােচনার সূচনা হয়। এমন সময় হযরত কাআব বিন আহবার (رضي الله عنه) বলেছিলেন,
"প্রত্যহ ভােরে ৭০ হাজার ফেরেশতা (আসমান থেকে জমিনে) অবতরণ করেন। তাঁরা (তাদের ডানাগুলাে দিয়ে) নূরানী কবর মােবারককে আচ্ছন্ন করে রাখেন। তাঁরা তাঁদের ডানা দিয়ে (বরকতের জন্য কবর মুবারক) স্পর্শ করেন এবং নবী-পাক (ﷺ) এর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করতে থাকেন। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে তারা (আসমানের দিকে) উঠে যান। পরে অনুরূপ আরাে ৭০ হাজার ফেরেশতা পবিত্র কবরকে তাদের ডানা দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখেন এবং বরকতের জন্য তাদের ডানা দিয়ে কবর-শরীফ স্পর্শ করেন। এভাবে ৭০ হাজার ফেরেশতা দিনে এবং ৭০ হাজার ফেরেশতা রাতে নবী-পাক (ﷺ) এর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করে থাকেন। এক সময় যেদিন (কেয়ামতের দিন) তার (নূরানী কবরের) জমিন ফেঁটে যাবে, তখন তিনি এমন ৭০ হাজার ফেরেশতার সমভিব্যাহারে সেখান থেকে জলওয়াগর হবেন, যারা তখন তাঁর মহত্ব ও গৌরবের ডঙ্কা বাজাতে থাকবেন।
তথ্যসূত্রঃ
(১) কুরতুবী, আত তাযকিরাতু ফি উমূরি আহওয়ালিল মাউতা ওয়া উমূরিল আখিরাতিঃ ২১৩, ২১৪, বাবুন ফি বিছিন নবী (ﷺ) মিন কবরিহী।
(২) দারিমী, আস-সুনান, খ, ১, পৃ. ২২৮, হাদীস: ৯৫।
(৩) বােখারী, আর রদু আলা মন ইয়াকূলুল কুরআনাল মাখলুক ৬৩, হাদিস নম্বর: ৮৯।
(৪) ইবনু হাব্বান, আল আযমাহ। ৩: ১০১৮, ১০১৯। হাদিস নম্বর: ৫৩৭।
(৫) ইবনু ইসহাক এযদী, ফদ্বলুস সালাতি আলান নবিয়্যি । ৯২, হদিস নম্বর: ১০১।
(৬) বায়হাকী, শুআবুল ঈমান। ৩: ৪৯২, ৪৯৩। হাদিস নম্বর: ৪১৭০।
(৭) আবু নাঈম, হিলিয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবাকাতুল আছফিয়া, ৫: ৩৯০।
(৮) ইবনু জাওযী, আল ওয়াফা বি আহওয়ালিল মােস্তফা (ﷺ) ৮৩৩, হাদিস নম্বর: ১৫৭৮।
(৯) ইবনু কাইয়িম, জালাউল আফহাম ৬৮, হাদিস নম্বর: ১২৯।
(১০) সামহুদী, ওয়াফাউল ওয়াফা ২: ৫৫৯।
(১১) কাস্তালানী, আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ্, ৪: ৬২৫।
(১২) যারকানী, শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ্,১২: ২৮৩, ২৮৪।
(১৩) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী' ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ৬০।
(১৪) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬০, গাজী প্রকাশনী।
❏ হাদিস ২:
হযরত কাবে আহবার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে একদিন তিনি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা (رضي الله عنه)-এর খিদমতে উপস্থিত হন। মজলিসের মধ্যে হযরত রাসূলে করীম (ﷺ)-এর আলােচনা চলছিল। এ সম্পর্কে হযরত কাব (رضي الله عنه) বলেন, এমন কোন দিন নেই, যাতে সূর্য উদিত হয়, আর সে দিন ৭০ হাজার ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর শরীফকে ঘিরে রাখে না। তারা আপন পাখা কুড়িয়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। যখন সন্ধ্যা হয়, তারা চলে যান এবং তাদের স্থলে আবার ৭০ হাজার ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। সকাল বেলার ফেরেশতারা যা করেছিলেন, সন্ধ্যা বেলায় ফেরেশতারাও তাই করেন। এ অবস্থা সে দিন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে, যেদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কবর শরীফ থেকে বের হয়ে আসবেন, সেদিনও তাঁর চতুষ্পর্শে হাজার হাজার ফেরেশতা তাঁকে ঘিরে থাকবেন।
তাজিম ও মুহাব্বতের সাথে পাঠকৃত দুরূদ থেকে ফেরেশতার সৃষ্টি
❏ হাদিস ৩:
ইবনে বাশকুয়াল (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনাকারী, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
من صلى على تعظيما الحقى خلق الله عزوجل من ذالك القوم
ملکاله جناح بالمشرق وآخر بالمغرب يقول عزو جل له صل على عبدی کما صلی علی نبي فهو يصلي عليه الى يوم القيامة
অর্থাৎ, যে আমার উপর আমার হকের তাজিম ও সম্মানের উদ্দেশ্যে দুরূদ পেশ করে, আল্লাহ তায়ালা ঐ দুরূদ থেকে একজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন, যার একটি ডানা পূর্ব দিকে, আর একটি ডানা পশ্চিম দিকে বিস্তৃত। আল্লাহ তায়ালা তাকে বলেন, দুরূদ প্রেরণ করাে আমার বান্দার উপর, যেভাবে সে আমার নবীর উপর দুরূদ প্রেরণ করেছে। ঐ ফেরেস্তা কিয়ামত পর্যন্ত তার উপর দুরূদ প্রেরণ করতে থাকবেন।
তথ্যসূত্রঃ
১. এ রেওয়ায়েত ইবনে সাবা এবং ফাকেহানীও বর্ণনা করেন।
২. আ'লা হযরতঃ ফেরেশতা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত কিতাবে বর্ণনা করেন।
বিরাটকার ফেরেশতার ঝাড়া দেয়া ডানা থেকে পরা প্রতিটি ফোঁটা থেকে ১জন ফেরেশতার সৃজন
❏ হাদিস ৪:
ইমাম সাখাবী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
"আল্লাহর একজন ফেরেস্তা রয়েছেন যার একটি বাহু পূর্বপ্রান্তে, আরেকটি বাহু পশ্চিম প্রান্তে। যখন কোন ব্যক্তি আমার প্রতি ভালােবাসা ও মুহাব্বতের সাথে দুরূদ পাঠ করে ঐ ফেরেস্তা পানিতে ডুব দিয়ে স্বীয় ডানা ঝাড়া দেয়। আল্লাহ তায়ালা তার ডানা থেকে ঝরে পরা প্রত্যেক পানির বিন্দু ও ফোঁটা থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন, যারা কিয়ামত পর্যন্ত দুরূদ প্রেরণকারীদের উপর ইস্তেগফার এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আ'লা হযরতের সম্মানিত পিতাঃ ‘আল কালামুল আওদাহ্ ফী তাফসীরে আলাম নাশরাহ' গ্রন্থে ইমাম সাখাবী (رحمة الله) থেকে।
২. আ'লা হযরতঃ ফেরেশতা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত কিতাবে বর্ণনা করেন।
৩. ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله)'র "আল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া" কিতাবে রয়েছে,
قدروی آن ثم ملائكة يسبحون فيخلق الله بكل تسبيحة ملكا
অর্থাৎ, কথিত আছে যে, ওখানে কতেক ফেরেস্তা রয়েছে, যারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক তাসবীহ থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন।
৭০ হাজার ডানা বিশিষ্ট পাখি সৃজন
❏ হাদিস ৫:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, "আল্লাহর প্রতিটি বান্দা আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করার সাথে সাথে দুরূদ শরীফটি অতি দ্রুত বেগে পূর্ব পশ্চিম স্থল, ও জলভাগে বের হয়ে পড়বে। এমন কোন জায়গা থাকবে না, যেখানে দুরূদ শরীফ পৌছাবে না, এবং সাথে সাথে এ কথা বলে ভ্রমণ করবে যে আমি হলাম অমুকের সন্তান অমুকের দুরূদ শরীফ, যা সমগ্র সৃষ্টির সেরা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর পঠিত। অত:পর সৃষ্টি জগতের সবাই প্রিয় নবীর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবেন। আর আল্লাহ তায়ালা এ দুরূদ শরীফ হতে ৭০ হাজার ডানা বিশিষ্ট একটি পাখি সৃজন করবেন। আর ৭০ হাজারের প্রতিটি ডানায় থাকবে ৭০ হাজার পালক। আর ৭০ হাজারের প্রতি পালকে থাকবে ৭০ হাজার মাথা প্রতিটি ৭০ হাজার মাথায় থাকবে ৭০ হাজার চেহারা। আর প্রতিটি ৭০ হাজার চেহারায় থাকবে ৭০ হাজার মুখমন্ডল। আর ৭০ হাজার মুখমন্ডলের প্রতিটিতে থাকবে ৭০ হাজার জিহ্বা, আর প্রতিটি ৭০ হাজার জিহ্বা দ্বারা আল্লাহর তাসবীহ তথা প্রশংসা করতে থাকবে। এ প্রশংসায় ছাওয়াবসমূহ দুরূদ শরীফ পাঠকারীর আমলনামায় লিখা হবে।
[দালায়েলুল খায়রাত, সোলায়মান যাজুলী (রহঃ), পৃষ্ঠা-12, জিকরে এলাহীঃ ১০০-১০১পৃষ্টা]
সৎ বাক্য, উত্তম বক্তব্যের ফজিলতঃ
▶ সৈয়দী শেখ আকবর (رحمة الله) বলেন,
"সৎ বাক্য, উত্তম বক্তব্য এবং ভালাে কর্ম ফেরেস্তা হয়ে আসমানের পানে সমুন্নত হয়।"
[সৈয়দী শেখ আকবর (رحمة الله) : ফতুহাতে মক্কীয়ার ২৯৭ তম পরিচ্ছেদ, আ'লা হযরতঃ ফেরেশতা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত]
▶ ইমাম আব্দুল ওয়াহাব শারানী (رحمة الله) বলেন, আল্লাহ সুব মহানু তায়ালার বাণী,
اليه يصعد الكلم الطيب والعسل الصالح يرفعه
অর্থাৎ, তাঁর দিকে পৌঁছে পবিত্র কালাম আর যে সৎকর্ম রয়েছে তা তাকে উচ্চতর স্থানে অধিষ্ঠিত করে -এর মর্মার্থ এটাই।
[ইমাম আব্দুল ওয়াহাব শারানী (رحمة الله) :‘আল ইয়াওয়াকীত ওয়াল জাওয়াহীর' গ্রন্থের সপ্তদশ অধ্যায়, আ'লা হযরতঃ ফেরেশতা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত]
▶ হুজুর (ﷺ) এর উপর দরুদ প্রেরণ কারীর উপর ৭০ হাজার ফেরেশতা দরুদ প্রেরণ করে। (সুররুল কুলুব)
৬ষ্ঠ অধ্যায়ঃ আম্বিয়া (আঃ) সম্পর্কিত ফাযায়েলে দুরূদ।
হযরত আদম (عليه السلام) এর মোহরানা আদায়
❏ হাদিস ১:
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত জুমআ'র দিন যোহর থেকে আছর পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা হাওয়া (عليه السلام) কে আদম (عليه السلام) এর বাম পাজর থেকে সৃষ্টি করলেন,আর তখন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। আদম (عليه السلام) যখন হাওয়া (عليه السلام) এর নিকট গেলেন তখন ফেরেশতারা মোহরানা আদায় করতে বললেন, তখন আদম (عليه السلام) বললেন তার মোহরানা কী? তখন ফেরেশতারা বললেন আপনি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর তিনবার দুরূদ শরীফ পড়ুন।”
তথ্যসূত্রঃ
[ইমাম কাস্তালানীঃ মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াঃ ১/৭৬পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল ইসলাম, বৈরুত, লেবানন,
ইবনে কাসীরঃ বেদায়া ওয়ান নেহায়াঃ ১/৭৪ পৃষ্ঠা,
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারীঃ আল মাওয়ারিদুর রাভী ফি মওলুদুন্নবীঃ ১৫ পৃষ্ঠা]
হযরত খিযির (عليه السلام) এবং হযরত ইলিয়াস (عليه السلام) এর ঘটনা সম্পর্কিত হাদীস
❏ হাদিস ২:
শায়খ মজদুদ্দীন (رحمة الله) থেকে আবুল মুযাফফর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ খাইয়াম সমরকন্দী (رحمة الله)-এর কাহিনীর পাশাপাশি হযরত খিযির (عليه السلام) এবং হযরত ইলিয়াস (عليه السلام) সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনার অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে যে,
তিনি বললেন, একদিন আমি পথ হারিয়ে গেলে, হঠাৎ একজন লােককে দেখতে পাই, তিনি আমাকে বললেন, এসাে! আমি তার সাথে চললাম। আমার মনে হচ্ছিল যে, সম্ভবত তিনি হযরত খিযির (عليه السلام) হবেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার নাম কী? তিনি বললেন, খিযির ইবনে আনশা আবুল আব্বাস (عليه السلام)। আমি তার সাথে আরও একজন লােককে দেখতে পাই। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার নাম কি? তিনি বললেন, ইলিয়াস ইবনে শাম (عليه السلام)। এরপর তাদের উভয়কে সম্বােধন করে আমি বললাম, আল্লাহ তা'আলা আপনাদের ওপর রহমত নাযিল করুক। আপনি কি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)-কে দেখেছেন? তারা বললেন, হ্যাঁ দেখেছি। আমি বললাম, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা তার পবিত্র জবান থেকে যা শুনেছেন তা আমাকে বলুন, যাতে আমি আপনাদের থেকে রিওয়ায়ত করতে পারি। তাঁরা বললেন, আমরা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)-কে ইরশাদ করতে শুনেছি,
“যে ব্যক্তি صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدِ ﷺ পাঠ করবে, তার অন্তর মুনাফিকী থেকে এমনভাবে পবিত্র হয়ে যাবে যেমন পানি দ্বারা বস্ত্র পরিষ্কার করা হয়।
উক্ত সনদে আরও বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (ﷺ)- ইরশাদ করেছেন,"যে ব্যক্তি صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدِ ﷺ বলবে, তাঁর মুখের ওপর রহমতের ৭০টি দরজা খুলে দেওয়া হয়।"
উক্ত সনদে আরও বর্ণিত আছে যে,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যখন তুমি কোন মজলিসে বসে বল,
بسم الله الرَّحْمنِ الرَّحِيم ، وَصَلَّى اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدِ
তবে আল্লাহ তা'আলা একজন ফেরেশতাকে নিয়ােগ করবেন, যিনি তােমাকে গীবত (পরনিন্দা) করা থেকে বিরত রাখেন। আর যদি তুমি মজলিস থেকে ওঠে যাওয়ার সময় বল,
بسم الله الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ ، وَصَلَّى اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدِ
তবে আল্লাহ তা'আলা জনগণকে তােমার গীবত করা থেকে বিরত রাখবেন।
উল্লিখিত সনদে আরও বর্ণিত আছে যে,
হযরত খিযির (عليه السلام) এবং হযরত ইলিয়াস (عليه السلام) বলেছেন যে, এক ব্যক্তি সিরিয়া থেকে হযরত রাসূলে মকবুল (ﷺ)-এর পবিত্র দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমার আব্বাজান আপনার মুলাকাতের জন্য খুবই উদগ্রীব, কিন্তু তিনি বৃদ্ধ এবং অন্ধ। আপনার দরবারে উপস্থিতির শক্তি নেই। তিনি (ﷺ) ইরশাদ করলেন, “তােমার আব্বাকে বল, তিনি যদি সাত রাতে বলে,
صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدِ ﷺ
তবে তিনি আমাকে স্বপ্নে দর্শন করবেন এবং তিনি আমার থেকে হাদীস রিওয়ায়ত করবেন।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৩৭-১৩৮।
(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৯, গাজী প্রকাশনী।
দুরূদের মাধ্যমে হযরত মূসা (عليه السلام) এর কল্যাণ লাভ
❏ হাদিস ৩:
উল্লিখিত কিতাবে হযরত কা'আবে আহবার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তা'আলা হযরত মূসা (عليه السلام)-এর নিকট অহী প্রেরণ করেন যে, পৃথিবীতে যদি আমার প্রশংসাকারী না থাকে, তবে আমি পৃথিবীতে এক বিন্দু বৃষ্টিও বর্ষণ করতাম না, একটি দানা পর্যন্ত উৎপন্ন করতাম না। এভাবে অনেক কিছু বলার পর ইরশাদ করলেন, হে মূসা (عليه السلام)! তুমি কি একথা বাসনা কর যে তােমার কথা তােমার মুখের, তােমার হৃদয়ের জল্পনা-কল্পনা তােমার হৃদয়ের, তােমার রূহ, তােমার শরীরের, তােমার দৃষ্টিশক্তি তােমার চোখের যতদূর নিকটবর্তী এর চেয়েও আমি তােমার অধিকতর নিকটবর্তী হই? হযরত মূসা (عليه السلام) আরজ করলেন, হ্যাঁ, ইয়া আল্লাহ! আমি এর বাসনা রাখি। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করলেন, তবে তুমি খুব বেশি বেশিভাবে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠ কর। তাহলে তােমার এ সম্পর্ক অর্জিত হবে।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) আস-সাখাওয়ী (رحمة الله), আল-ওকুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী, পৃ. ১৩৭;
(২) আল নুআইম আল-আসবাহানী (رحمة الله), হিয়াতুল আওলিয়া ওয়া তাবাকাতুল আসফিয়া, খ. ৬, পৃ. ৩২।
(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৭, গাজী প্রকাশনী।
(৪) ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) : মুকাশাফাতুল ক্বুলূব,পৃ:নং-৪৫, আধ্যাত্নিক কৃচ্ছ্রসাধনা এবং পাপ প্রবৃত্তির তাড়না অধ্যায়।
(৫) আল-বাহারেল মাদীদ,৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ:নং-৭৯
❏ হাদিস ৪:
অপর একটি রিওয়ায়তে আল্লাহ তাঁকে বলেন, “হে মূসা (عليه السلام)! তুমি কি কিয়ামতের তৃষ্ণা থেকে রেহাই পেতে চাও? তিনি আরজ করলেন, হ্যাঁ, ইয়া আল্লাহ! আমি অনুরূপ কামনা করি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন, তবে তুমি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর ওপর অধিক সংখ্যক দুরূদ শরীফ পাঠ কর।
তথ্যসূত্রঃ
(১) আবু নুআইম আল-আসবাহানী (رحمة الله), হিলয়াতুল আওলিয়া ওয়া তাবাকাতুল আসফিয়া, খ, ৪, প, ৪৫।
(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৭, গাজী প্রকাশনী।
আল্লাহর আম্বিয়া (عليه السلام)-এর ওপর দুরূদ প্রেরণ
❏ হাদিস ৫:
উক্ত কিতাবে হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,
"তােমরা আল্লাহ তা'আলার অপরাপর পয়গম্বর (عليه السلام)-এর ওপরও দুরূদ শরীফ প্রেরণ কর। তাঁদেরকেও রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আল হাবীবিশ শফী; পূ, ৬১।
(২) আল বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, খ, ১, পৃ. ২৭৭-২৭৮, হাদীস: ১৩০;
(৩) আল-বায়হাকী, আদ-দাওয়াতুল কবীর, খ, ১, পৃ. ২৬৩, হাদীস: ১৮০।
(৪) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৯, গাজী প্রকাশনী।
❏ হাদিস ৬:
হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,
"যদি তােমরা আমার ওপর সালাম প্রেরণ কর, তবে হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম (عليه السلام)-এর ওপরও সালাম প্রেরণ করবে।"
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইবনে আবি আসিম, কিতাবুস সালাত আলান্নাবী (ﷺ), পৃ. ৫৪, হাদীস: ৭০,
(২) ইমাম সাখাভী, আল কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী (ﷺ), পৃষ্ঠা ৬১।
(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৯, গাজী প্রকাশনী।