“আমি, আবু বকর, উমর একই মাটির তৈরী” এই হাদিসের ভিত্তি


 أَخْبَرَنَاهُ أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ غَالِبٍ، قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرٍ الإِسْمَاعِيلِيُّ، قَالَ: أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ الْهَرَوِيُّ قَاطِنُ دِمَشْقَ، قَالَ: حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْبَغْدَادِيُّ بِمِصْرَ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ سَهْلٍ أَبُو هَارُونَ الرَّازِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْرَقُ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ الشَّيْبَانِيُّ، عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ الْجُشَمِيِّ، عَن عبد الله بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ يُذَرُّ عَلَى سُرَّتِهِ مِنْ تُرْبَةٍ، فَإِذَا طَالَ عُمُرُهُ رَدَّهُ اللَّهُ إِلَى تُرْبَتِهِ الَّتِي خَلَقَهُ اللَّهُ مِنْهَا وَأَنَا وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ خُلِقْنَا مِنْ تُرْبَةٍ وَاحِدَةٍ وَفِيهَا نُدْفَنُ 
-“হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন: প্রত্যেক শিশুর নাভিতে সেই মাটি রাখা হয় যেখানে তাকে দাফন করা হবে। তিনি আরো বলেন: আমি, আবু বকর, উমর একই মাটির তৈরী এবং একই জায়গায় দাফন হব।”  ৪৩৪৩,  তারিখে বাগদাদ, ৩য় খন্ড, ৫৪২ পৃ: রাবী নং ১০৬২;

এই হাদিসের সনদে একজন মিথ্যাবাদী ও বাতিল বর্ণনাকারী রয়েছে। তার নাম হল: موسى بن سهل بن هارون (মূসা ইবনে সাহল ইবনে হারুন) যেমন ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: 
مُوسَى بن سهل بن هَارُون الرَّازِيّ عَن اسحاق الْأَزْرَق بِخَبَر كذب 
-“মূসা ইবনে সাহল ইবনে হারুন রাজী বর্ণনাকারী ইসহাক্ব আযরাকী থেকে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করত।”  ৪৪৪৪,  ইমাম যাহাবী: আল মুগনী, রাবী নং ৬৪৯৪;

বিখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা ইবনে জাওযী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) একে موضوع ‘জাল হাদিস’ বলেছেন। ৪৫৪৫,  হাফিজ ইবনে যাওজী: কিতাবুল মওজুয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৮ পৃ:; তাফছিরে মারেফুল কোরআন, ৮৫৬ পৃ:, সৌ: সং: বা:; তাফছিরে মাজহারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৭৩ পৃ:;


 ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) আরো বলেন:
موسى بن سهل بن هارون الرازي عن إسحاق الأزرق بخبر باطل 
-“মূসা ইবনে সাহল ইবনে হারুন রাজী ইসহাক্ব আযরাকী থেকে বাতিল রেওয়ায়েত বর্ণনা করত।”  ৪৬৪৬,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এতদাল, রাবী নং ৮৮৭৩; ইমাম আসকালানী: লিছানুল মিযান, রাবী নং ৪১৪;

অতএব, এই বর্ণনা বাতিল ও ভিত্তিহীন। আকায়েদ শাস্ত্রে কখনোই এরূপ রেওয়ায়েত হুজ্জত বা দলিল হবেনা। এই হাদিস দিয়েও অনেকে রাসূল ( ﷺ‎‎) কে মাটির তৈরী বলা অপচেষ্টা করেন। অথচ ইহা একটি গরীব ও বানোয়াট তথা জাল হাদিস। খতিবে বাগদাদী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটিকে غريب ‘গরীব’ বলেছেন। যেমন উল্লেখ আছে:
غريب من حديث الثوري عن الشيباني، لا أعلم يروي إلا من هذا الوجه،
-“শায়বানী থেকে ছাওরীর বর্ণিত রেওয়ায়েত টি ‘গরীব’ এই সূত্রটি ছাড়া এ বিষয়ে অন্য কোন সূত্র আমার জানা নেই।” ৪৭৪৭,  তারিখে বাগদাদ, ৩য় খন্ড, ৫৪২ পৃ: রাবী নং ১০৬২;

অনুরূপ আরেকটি বাতিল রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ الْحُسَيْنِ بْنِ مُحَمد بْنُ عَمْرو بْنِ أَبِي سَلَمَةَ التِّنِّيسِيُّ، حَدَّثني عَبد اللَّهِ بْنُ مُحَمد بْنِ مُوسَى بْنِ هارون بتنيس، حَدَّثَنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ عُبَيد التَّمَّارُ عَنْ يعقوب بن الجهم، حَدَّثَنا مُحَمد بْنُ وَاقِدٍ عَنِ الْمَسْعُودِيِّ عَنْ عُمَر مَوْلَى عَفْرَةَ، عَن أَنَس بن مالك قَالَ قَال رَسُول اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وَسلَّمَ... قَالَ لأَن اللَّهَ خَلَقَنِي وَخَلَقَ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ مِنْ تُرْبَةٍ وَاحِدَةٍ وَفِيهَا نُدْفَنُ.
-“হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন:... আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেছেন: নিশ্চয় আমাকে, আবু বকর ও উমরকে একই মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সেখানে দাফন করা হবে।”  ৪৮৪৮,  ইমাম ইবনে আদী: আল কামিল ফি দোয়াফাই রিজাল, ৮ম খন্ড, ৪৭৫-৭৬ পৃ:;

এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস, ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও হাফিজুল হাদিস, ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, هذا حديث موضوع -“এই হাদিস বানোয়াট বা ভিত্তিহীন।”  ৪৯৪৯,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, রাবী নং ৯৮০৯; ইমাম আসকালানী: লিছানুল মিযান, রাবী নং ১০৯৬;

আকায়েদ শাস্ত্রে কখনোই এরূপ রেওয়ায়েত হুজ্জত বা দলিল হবেনা। আমরা সকলেই জানি, বায়হাকীতে ছহীহ্ সনদে আছে: শেষ জামানায় হযরত ঈসা (عليه السلام) পৃথিবীতে আসবেন এবং রাজত্ব করবেন। পরে তিনি ইন্তেকাল করলে তাঁকে রাসূল ( ﷺ‎‎) এর রওজা মোবারকের পাশে দাফন করা হবে। এখনো সেই দাফনের জায়গাটুকু খালি আছে। যদি এটা সঠিক হাদিস হত তাহলে আবু বকর, উমর (رضي الله عنه) এর সাথে হযরত ঈসা (عليه السلام) এর নামও থাকত। কথায় বলে, সব চুরেই চুরি করে এবং সাথে প্রমাণও রেখে যায়। অনুরূপ আরেকটি বাতিল রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়,
وَقَالَ الْحَكِيم فِي نوادره حَدَّثَنَا الفضلُ بْن مُحَمَّد حَدَّثَنَا بَكْر بْن مُحَمَّد حَدَّثَنَا أَبُو عَبْد الرَّحْمَن المَقْبُري عَن إِبْرَاهِيم بن يزِيد الخوزي قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ سِيرِينَ يَقُولُ: لَوْ حَلَفْتُ حَلَفْتُ صَادِقًا بَارًّا غَيْرَ شَاكٍّ وَلا مُسْتَثْنٍى إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى مَا خَلَقَ نبيه وَلا أَبَا بَكْرٍ وَلا عُمَرَ إِلا مِنْ طِينَةٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ رَدَّهُمْ إِلَى تِلْكَ الطِّينَةِ وَالله أعلم.
-“মুহাম্মদ ইবনে ছিরীন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যদি আমি কসম করে বলি তাহলে সত্যি হবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা নবী ( ﷺ‎‎), আবু বকর ও উমরকে একই মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ সর্বোজ্ঞ।”  ৫০৫০,  ইমাম ছিয়তী: আল লাআলীল মাছনূয়া, ১ম খন্ড, ২৮৫ পৃ:; হাকেম তিরমিজি: নাওয়াদেরুল উছুল, ১ম খন্ড, ২৬৮ পৃ:; উমদাতুল ক্বারী, মাজহারী;

ইহা মূলত হাদিসে রাসূল ( ﷺ‎‎) নয়, এমনকি কোন সাহাবীর বাণীও নয় বরং ইহা তাবেঈর কওল যা মাকতু পর্যায়ের যা সাধারণত শরিয়তে দলিল হয়না। ইমাম হাকেম তিরমিজি ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর ‘নাওয়াদেরুল উসূল’ কিতাবে ইহার সনদ উল্লেখ নেই, ইমাম ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ইহার সনদ উল্লেখ করেছেন, আল্লাহই সর্বোজ্ঞ। পাশাপাশি ইহার সনদে إِبْرَاهِيم بن يزِيد الخوزي (ইব্রাহিম ইবনু ইয়াজিদ আল খাওজী) নামক রাবী রয়েছে যার ব্যাপারে প্রচুর সমালোচনা ও মিথ্যার অভিযোগ রয়েছে। যেমন নিচের রেফারেন্স গুলো লক্ষ্য করুন,
وقال البرقي: كان يتهم بالكذب. -“ইমাম বারকী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: তার উপরে মিথ্যার অভিযোগ রয়েছে।” ৫১৫১,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৩১৮;


قال أحمد، والنسائي: متروك. وقال ابن معين: ليس بثقة. وقال البخاري: سكتوا عنه.
-“ইমাম আহমদ, ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে পরিত্যাজ্য বলেছেন। ইমাম ইবনু মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, সে বিশ্বস্ত নয়। ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, তার ব্যাপারে চুপ থেকেছেন।” ৫২৫২,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এতেদাল, রাবী নং ২৫৪;


وفي رواية محمد بن عبد الله بن الجنيد عن البخاري: إذا قال سكتوا عنه يعني: لا يحتجون بحديثه.
-“মুহাম্মদ ইবনু আব্দিল্লাহ ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম বুখারী যখন কারো ব্যাপারে চুপ থাকে তখন বুঝতে হবে ইমামগণ তার হাদিসের উপর নির্ভর করেনা।” ৫৩৫৩,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৩১৮;


ইমাম ইবনু সাদ, ইমাম ইবনু জারুদ, ইমাম আবুল কাশেম বালখী, ইমাম ইবনে শাহিন, ইমাম সাজী, ইমাম উকাইলী, ইমাম ইয়াকুব ইবনু সুফিয়ান, ইমাম ইবনু ছামআনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ضعيف দুর্বল বলেছেন।  ৫৪৫৪,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৩১৮;


ইমাম আলী ইবনে মাদিনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: 
ضعيف، لا أكتب عنه شيئا. -“সে দুর্বল আমি তার বর্ণিত হাদিস লিখিনা।” ৫৫৫৫,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৩১৮;

ইমাম দারা কুতনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে منكر الحديث. বলেছেন।  ৫৬৫৬,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৩১৮;

ইমাম আলী ইবনু যুনাইদ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে متروك বলেছেন। ৫৭৫৭,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৩১৮;

সুতরাং এই রেওয়ায়েত একদিকে মাকতু অপরদিকে খুবই দুর্বল, যা আকাইদ ও আহকাম শাস্ত্রের দলিল হওয়ার যোগ্য নয়। অনুরূপ আরেকটি বাতিল রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়,
أنبأنا أبو صادق مرشد بن رستم بن يحيى وأبو عبد الله محمد بن أحمد بن إبراهيم قالا أنا أبو الحسن محمد بن الحسين النسأبوري ح ثم أخبرنا أبو محمد عبد الرحمن بن أبي الحسن بن إبراهيم أنا سهل بن بشر الأسفرايني أنا علي بن منير بن أحمد بن الحسن وأبو الحسن النيسابوري قالا أنا أبو طاهر محمد بن أحمد بن عبد الله نا أبو يحيى زكريا بن يحيى الساجي نا عبد الله بن هارون بن موسى نا قدامة بن محمد نا مخرمة بن بكير عن أبيه عن علي بن عبد الله بن جعفر عن أبيه أن رسول الله (صلى الله عليه وسلم) قال يا عبد الله هنيئا لك مريا خلقت من طيني 
-“আলী ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেছেন: হে আব্দুল্লাহ তোমার জন্য সুখবর যে, তোমাকে আমার অবশিষ্ট মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।”  ৫৮৫৮,  তারিখে ইবনে আসাকির, ৫৪১৪ নং রাবী, ২৭তম খন্ড, ২৬১ পৃ:; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৭১৬৭;

এই হাদিসের সনদেقدامة بن محمد المدني  (কুদামা ইবনে মুহাম্মদ মাদানী) রয়েছে। তাকে ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) চিনেন না, ইমাম ইবনে হিব্বান ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন ও তার উপর নির্ভর করা জায়েয নয় বলেছেন। ইমাম ইবনে আদী বলে: তার হাদিস গুলো ‘গাইরে মাহফুজ’ বা অসংরক্ষিত। ৫৯৫৯,  মিযানুল এতেদাল; তাহজিব;
 
এছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে হারুন ইবনে মূসা নামক আকেজন রাবী রয়েছে, তার বিষয়ে ইমাম ইবনু হাতিম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) সমালোচনা করেছেন।  ৬০৬০,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ২৮৭;


ইমাম হাকেম আবু আহমাদ ও ইমাম আবু আহমদ ইবনু আদী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে منكر الحديث বলেছেন।৬১৬১,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৫২৩;


  ইমাম দারা কুতনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকেمتروك الحديث. বলেছেন।  ৬২৬২,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮১৫;


সে এমন হাদিস বর্ণনা করত যেগুলোর ভিত্তি খুজে পাওয়া যেতনা। ৬৩৬৩,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮১৫;


 আকায়েদ শাস্ত্রে কখনোই এরূপ রেওয়ায়েত হুজ্জত বা দলিল হবেনা। অনুরূপ আরেকটি বাতিল রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়,
أَخْبَرَنِي أَبُو الْقَاسِمِ عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي عُثْمَانَ الدَّقَّاقُ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْوَرَّاقُ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْحُسَيْنِ بْنِ دَاوُدَ الْقَطَّانُ سَنَةَ إِحْدَى عَشْرَةَ وَثَلاثِ مِائَةٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَلَفٍ الْمَرْوَزِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْمَرْوَزِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خُلِقْتُ أَنَا وَهَارُونُ بْنُ عِمْرَانَ، وَيَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا، وَعَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ مِنْ طَيِنَةٍ وَاحِدَةٍ 
-“মূসা ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মদ তদীয় পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন: আমি, হারুন ইবনে ইমরান, ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া, আলী ইবনে আবী তালেব একই মাটি থেকে তৈরী।”  ৬৪৬৪,  কাজী শাওকানী: ফাওয়াইদুল মাজমুয়া, হাদিস নং ৩৯; তারিখে বাগদাদ, রাবী নং ৩০৪১;

এই রেওয়ায়েত উল্লেখ করে মাওলানা কাজী শাওকানী বলেন: 
رواه الخطيب عن علي مرفوعًا، وهو موضوع. -“খতিব বাগদাদী ইহা আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন আর ইহা ভিত্তিহীন।  ৬৫৬৫,  কাজী শাওকানী: ফাওয়াইদুল মাজমুয়া, হাদিস নং ৩৯;

‘কাশফুল হাছিছ’ গ্রন্থে হাদিসটি উল্লেখ করে লিখেছেন: هَذَا مَوْضُوع 
-“ইহা ভিত্তিহীন কথা।” ৬৬৬৬,  কাশফুল হাছিছ, রাবী নং ৬৫৬;


 এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস, ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) লিখেছেন: هَذَا مَوْضُوع -“ইহা ভিত্তিহীন কথা।”  ৬৭৬৭,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এতেদাল, রাবী নং ৭৪৯০;


হাফিজুল হাদিস, ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: 
هَذَا مَوْضُوع -“ইহা ভিত্তিহীন কথা।”  ৬৮৬৮,  আসকালানী: লিছানুল মিযান, রাবী নং ৫৩৬;


আকায়েদ শাস্ত্রে কখনোই এরূপ রেওয়ায়েত হুজ্জত বা দলিল হবেনা। অনুরূপ আরেকটি বাতিল রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়,
أخبرنا أبو بكر محمد بن القاسم بن المظفر بن الشهرزوري بدمشق أنا أبو عمرو عثمان بن محمد بن عبيد الله المحمي بنيسابور أنا الشيخ أبو عبد الله محمد بن عبد الله الصوفي نا أبو أحمد محمد بن إبراهيم بن أبرويه بأستراباذ نا أبو الحسن علي بن الحسن القومسي بجرجان نا محمد بن الفضل بن حاتم نا محمد بن الحسن الجوري نا أحمد بن الحسن بن أبان المصري نا الضحاك بن مخلد عن ابن عون عن ابن سيرين عن أبي هريرة قال قال رسول الله (صلى الله عليه وسلم)... وخلقت أنا وأبو بكر وعمر من طينة واحدة وندفن جميعا في بقعة واحدة
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম ( ﷺ‎‎) বলেছেন:... আমি আবু বকর ও উমর একই মাটির তৈরী ও সবাই একই স্থানে দাফন হব।”  ৬৯৬৯,  ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৪৪তম খন্ড, ১২১ পৃ:;



এর বর্ণনার মাঝে أحمد بن الحسن بن أبان المصري (আহমদ ইবনে হাছান ইবনে আবান মিছরী) রয়েছে। তার ব্যাপারে ইমামদের অভিমত লক্ষ্য করুন:-
قال ابن عدي: كان يسرق الحديث. وقال ابن حبان: كذاب دجال، يضع الحديث على الثقات. وقال الدارقطني: وهو كذاب.
-“ইমাম ইবনে আদী বলেন: সে হাদিস চুরি করত। ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন: সে মিথ্যাবাদী দাজ্জাল ও বিশ্বস্ত রাবী থেকে হাদিস জালকারী। ইমাম দারে কুতনী বলেন: সে মিথ্যাবাদী।”  ৭০৭০,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এতেদাল, রাবী নং ৩৩০; ইমাম আসকালানী: লিছানুল মিযান, রাবী নং ৪৮০;


আকায়েদ শাস্ত্রে কখনোই এরূপ রেওয়ায়েত হুজ্জত বা দলিল হবেনা। অনুরূপ আরেকটি বাতিল রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়,
خلقت أنا وأبو بكر وعمر من طينة واحدة. "الديلمي عن ابن عباس
-“আমি আবু বকর, উমর একই মাটির তৈরী। দায়লামী ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে।”   ৭১৭১,  দায়লামী, ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩২৬৮৩; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১১৯৫৩;


এই বর্ণনার কোন সনদই নেই। আকায়েদ শাস্ত্রে কখনোই এরূপ রেওয়ায়েত হুজ্জত বা দলিল হবেনা। অনুরূপ আরেকটি বাতিল রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়,
 وعن محمد بن علي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم... وخلقت أنا وجعفر من طينة واحدة (ابن عساكر عن وهب بن وهب عن جعفر بن محمد عن أبيه مرسلاً، ووهب كان يضع الحديث
-“মুহাম্মদ ইবনে আলী বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন:... আমি ও জাফর একই মাটির তৈরী। (ইমাম ছিয়তী বলেন) ওহাব ইবনে ওহাব বর্ণনা করেছেন জাফর ইবনে মুহাম্মদ থেকে মুরছাল রূপে। আর বর্ণনাকারী ওহাব হাদিস জাল করত।”  ৭২৭২,  ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১১৯৫০; তারিখে ইবনে আসাকির, ৭২তম খন্ড, ১২৬ পৃ:;


আকায়েদ শাস্ত্রে কখনোই এরূপ জাল রেওয়ায়েত হুজ্জত বা দলিল হবেনা। অনুরূপ আরেকটি বাতিল রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়,
مُحَمَّد بن خلف الْمروزِي قَالَ الذَّهَبِيّ كذبه يحيى بن معِين قَالَه بن الْجَوْزِيّ فِي الموضوعات قَالَ ثَنَا مُوسَى بن إِبْرَاهِيم عَن مُوسَى بن جَعْفَر بن مُحَمَّد عَن ابائه مَرْفُوعا خلقت أَنا وَهَارُون وَعلي من طِينَة وَاحِدَة هَذَا مَوْضُوع 
-“মুহাম্মদ ইবনে খালাফ মারওয়াজী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী উল্লেখ করেন, ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ইবনে জাওযী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ‘মাওজুয়াত’ গ্রন্থে  এরূপ উল্লেখ করেছেন। মূসা ইবনে ইব্রাহিম বর্ণনা করেছেন- মূসা ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মদ হতে- তিনি তাদের পিতার সূত্রে মারফ‚ রূপে: আমি হারুন ও আলী একই মাটি থেকে তৈরী। আর ইহা বানোয়াট কথা।” ৭৩৭৩,  কাশফুল হাছিছ, রাবী নং ৬৫৬, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃ:; মুজামে শুয়ূখু তাবারী, রাবী নং ১১২;


উল্লেখিত দলিল ভিত্তিক আলোচনার দ্বারা প্রমাণিত হয়, প্রিয় নবীজি রাসূলে করিম ( ﷺ‎‎) মাটির তৈরী বিষয়ক সকল রেওয়ায়েত ভ‚য়া, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এর মধ্যে কয়েকটির কোন সনদই নেই। সকলেই অবগত আছেন, উসূলে হাদিসের ভাষায় একাধিক দ্বায়িফ হাদিস একত্রিত হয়ে শক্তিশালী হয়ে হাছান লি’গাইরিহীর স্তরে পৌছে, কিন্তু একাধিক জাল ও বানোয়াট রেওয়ায়েত একত্রিত হয়ে শক্তিশালী হয়না। তাই কেউ যদি একাধিক রেওয়ায়েত দেখে ইহাকে ‘হাছান’ বলে ফেলে তাহলে বুঝতে হবে সে ‘আসমাউর রিজাল’ শাস্ত্রে দক্ষ ছিলনা।
-----------------------------
Top