‘মদিনার রওজার মাটি দিয়ে নবীজি সৃষ্টি’ কথাটি ভিত্তিহীন
কেউ কেউ বলে বেড়ায় যে, প্রিয় নবীজি ( ﷺ) কে মদিনার রওজা শরীফের মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ) অথচ এই কথার কোন ভিত্তি নেই। কারণ রাসূলে পাক ( ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণের কেউ এই কথা বলেছেন বলে কোন দুর্বল সনদেও পাওয়া যায়না। বরং ইহা একটি সনদবিহীন ভিত্তিহীন কথা। ইবনে জাওযী (ওফাত ৫৯৭ হি.) ও ইবনে সা’দ খারকুশী (ওফাত ৪০৭ হি.) সনদ বিহীন তাদের স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেন,
عَنْ كَعْبِ الْأَحْبَارِ قَالَ: لَمَّا أَرَادَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَخْلُقَ مُحَمَّدًا أَمَرَ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَأَتَاهُ بِالْقَبْضَةِ الْبَيْضَاءِ الَّتِي هِيَ مَوْضِعُ قَبْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعُجِنَتْ بِمَاءِ التَّسْنِيمِ فَغُمِسَتْ فِي أَنْهَارِ الْجَنَّةِ وَطَيَّفَهَا فِي السَّمَاوَاتِ، فَعَرَفَتِ الْمَلَائِكَةُ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ أَنْ يُعْرَفَ آدَمُ،..
-“হযরত কাব আহবার (তাবেঈ) বলেন: যখন আল্লাহ তা’আলা তার নবীকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন, তখন তিনি হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) কে তাঁর রওজা মোবারক থেকে এক মুষ্টি الْبَيْضَاءِ তথা আলোকময় সাদা বস্তু আনতে নির্দেশ দেন। যা রাসূল ( ﷺ) এর রওজা মোবারকে রাখা ছিল। তারপর সেখান থেকে মুষ্টি পরিমান অংশ জান্নাতের তাসনীম নহর দিয়ে ধৌত করা হয়। আর তা আসমান ও জমীনে তাওয়াফ করানো হয়। আর ফেরেস্থরা তাঁর মর্যাদা বুজতে ও চিনতে পারল আদম (عليه السلام) সৃষ্টি বহু পূর্বে। তারপর নূরে মুহাম্মদী আদম (عليه السلام) এর পৃষ্টদেশে রাখলে তারা তা দেখতে লাগল......।” ১৫১৫, হাফিজ ইবনে যাওজী: ‘আল ওয়াফা বি’আহওয়ালিল মুস্তাফা’, হাদিস নং ৮; ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ১ম খন্ড, ৩৪৯ পৃ:; হাফিজ ইবনে জাওযী: কিতাবুল মওজুয়াত, ১ম খন্ড, ২৮১ পৃ:; তারিখুল খামিছ, ১ম খন্ড, ২১ পৃ:; শরফুল মোস্তফা, ১ম খন্ড, ৩০০ পৃ:; শরহে মেসকাত লিত ত্বীবি, ৫৭৩৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫৭৩৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
এই বর্ণনা উল্লেখ করেই অনেকে বলেন যে, রাসূল ( ﷺ) কে রওজা শরীফের সাদা মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই নবীজি ( ﷺ) রওজা পাকের মাটির তৈরী। অথচ এই বর্ণনায় কোথাও মাটির কথা উল্লেখ নেই। বরং বলা হয়েছেبِالْقَبْضَةِ الْبَيْضَاءِ অর্থাৎ এক মুষ্টিالْبَيْضَاءِ তথা আলোময় সাদা বস্তু আনলেন। এখানে মাটির কথা বলা হয়নি। উল্লেখ্য যে, ইমাম কাস্তালানী ও আল্লামা হালবী এই বর্ণনার মতনকে তথা মূল শব্দকে কিছুটা পরিবর্তনরুপে উল্লেখ করেছেন। যেমন তারা উল্লেখ করেছেন:
أمر جبريل أن يأتيه بالطّينة -“জিব্রাইলকে আদেশ দিলেন মাটির খামিরা আনতে।” ১৬১৬, মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ছিরাতে হালভিয়া, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ;
অথচ ইবনে জাওযী, ইবনে আসাকির ও ইবনে সা’দ খারকুশী ( رَحْمَةُ الله عليه) কেউ এরূপ শব্দ উল্লেখ করেননি। তাহলে বুঝা গেল এটা মূলত ঐ বর্ণনার অংশ নয়। প্রিয় নবীজি ( ﷺ) এর মহা সম্মানিত সৃষ্টির বিষয়ে এ ধরণের শায মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
সর্বোপরি এই বর্ণনার কোন দ্বায়িফ সনদও নেই। এখন ইহাকে ছহীহ্ কিংবা হাছান অথবা দ্বায়িফ বলতে হলে সে বর্ণনার তেমন সনদ প্রয়োজন। যদি ইহার সনদ থাকত তাহলে বলা যেত, হযরত কাব আহবার একজন তাবেঈ ছিলেন, তিনি এই কথা কোন সাহাবী কিংবা রাসূল ( ﷺ) এর রেফারেন্স দিয়ে বলেননি বরং নিজের ইজতেহাদের কথা বলেছেন। যেহেতু ‘আছার’ হিসেবে এর কোন সনদ নেই সেহেতু ইহাকে দলিল হিসেবে যারা দাঁড় করানো অজ্ঞাতারই পরিচয় দিবে। সর্বোপরি আশেকে রাসূলদের কাছে আমার প্রশ্ন, রাসূলে পাক ( ﷺ) এর ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য রেওয়াতের মোকাবেলায় এরূপ সনদ বিহীন বর্ণনা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
যদি এর নির্ভরযোগ্য কোন সনদ থাকত তাহলে তাবেঈর কথা হিসেবে ইহা ‘মাকতু’ পর্যায়ের ‘আছার’ বলা হত। সকলেই অবগত আছেন কোন আইনী বিষয়ে ‘মাকতু’ রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য নয়। সর্বোপরি ইহা ছহীহ্ ও মারফূ রেওয়াতের খেলাফ বা বিপরীত এবং মওজু বা বানোয়াট বর্ণনা।
এবার হযরত কা’ব আহবার ( رَحْمَةُ الله عليه) এর আরেকটি সনদবিহীন রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
أنه لما خلق الله تعالى آدم، ألهمه أن قال: يا رب، لم كنيتني أبا محمد، قال الله تعالى: يا آدم ارفع رأسك، فرفع رأسه فرأى نور محمد في سرادق العرش فقال: يا رب، ما هذا النور؟ قال: هذا نور نبى من ذريتك اسمه فى السماء أحمد، وفى الأرض محمد، لولاه ما خلقتك ولا خلقت سماء ولا أرضا.
-“নিশ্চয় যখন আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হল, তখন হযরত আদম (عليه السلام) আল্লাহ পাকের দরবারে আবেদন করেছিলেন, হে আল্লাহ! আমার উপনাম ‘আবু মুহাম্মদ’ রাখা হল কেন? আল্লাহ পাক বললেন: হে আদম! তোমার মাথা উপরের দিকে উঠাও। আদম (عليه السلام) মাথা উঠিয়ে দেখলেন তাঁর চোখের সামনে আরশের পর্দায় নূরে মুহাম্মদী ভেসে উঠল। আদম (عليه السلام) আরজ করলেন: হে আল্লাহ! এই নূর মোবারক কার? আল্লাহ বললেন: এই ‘নূর’ হল ঐ নবীর যিনি তোমার বংশধরের একজন, যার আম আসমানে আহমদ এবং জমীনে তাঁর নাম মুহাম্মদ। যদি আমি তাঁকে না বানাইতাম তাহলে তোমাকেও বানাইতাম না, এমনকি আসমান জমীনও বানাইতাম না।” ১৭১৭, ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৭০ পৃ:; ইমাম যুরকানী: শরহে মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, ৮৫ পৃ:; যাওয়াহিরুল বিহার, ৩য় খন্ড, ৩৫২ পৃ:;
হযরত কাব আহবার ( رَحْمَةُ الله عليه) এর এই রেওয়ায়েত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) আদম (عليه السلام) সৃষ্টির পূর্বেই নূর ছিলেন। আসমান-জমীন এমনকি হযরত আদম (عليه السلام)ও আমাদের নবী ( ﷺ) এর উছিলায় সৃষ্টি হয়েছে (সুবহানাল্লাহ)। আমি এগুলোর কোনটিরই সনদ খুজে পাইনি। তবে এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) এর বক্তব্য শুনুন,
أَخْبَرَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سِيمَاءَ الْمُقْرِئُ، قَدِمَ عَلَيْنَا حَاجًّا، حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الْخَلِيلُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ الْخَلِيلِ الْقَاضِي السِّجْزِيُّ، أَنْبَأَنَا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ الثَّقَفِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ السَّكَنِ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ بْنُ هِلَالٍ، حَدَّثَنَا مُبَارَكُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ خُبَيْبِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَمَّا خَلْقِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ فَقَالَ يَا رَبِّ! مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ
অর্থাৎ, হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: তখন তাঁর (আদম আলায়হিস সালাম এর) সন্তানদেরকে দেখালেন, ফলে তিনি পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরিক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে তিনি একটি নূর দেখতে পেয়ে বললেন: ওহে রব! এই নূর কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন: সে তোমার পুত্র আহমদ! সেই প্রথম সৃষ্ট, সেই শেষ, সে প্রথম শাফায়াতকারী ও তারই শাফায়াত প্রথম কবুল করা হবে।” ১৮১৮, ইমাম বায়হাক্বী তাঁর দালায়েলুন্নবুয়াত, ৫ম খন্ড, ৪৮৩ পৃ: হাদিস নং ২২১৮; তারিখে ইবনে আসাকির; শরফুল মুস্তফা, ১ম খন্ড, ৩০৯ পৃ:; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩২০৫৩; ইমাম খাছাইছুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১০২ পৃ:;
এই হাদিস সম্পর্কে নাছিরুদ্দিন আলবানী তার কিতাবে বলেন:
قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري؛ -“আমি (আলবানী) বলছি: এই হাদিসের সনদ হাছান, ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর বর্ণনাকারী।” ১৯১৯, আলবানী: সিলছিলায়ে জয়ীফা, হাদিস নং ৬৪৮২;
এই হাদিসের সনদে مُبَارَكُ بْنُ فَضَالَةَ ‘মুবারক ইবনে ফাদ্বালাহ’ নামক রাবী সম্পর্কে কেউ কেউ ভ‚য়া আপত্তি তুলেন। অথচ ইমামগণ তাকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যেমন হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন,
وقال بن أبي خيثمة عن بن معين معين ثقة وقال محمد بن عثمان بن أبي شيبة عن بن المديني هو صالح وسط وقال العجلي لا بأس به وقال أبو زرعة يدلس كثيرا فإذا قال حدثنا فهو ثقة وقال الآجري عن أبي داود إذا قال حدثنا فهو ثبت وذكره بن حبان في الثقات
-“ইবনে আবী হায়ছামা ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه) বর্ণনা করেন, সে বিশ্বস্ত। মুহাম্মদ ইবনে উছমান ইবনে আবী শায়বাহ ইমাম ইবনে মাদানী ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে বলেন, সে গ্রহণযোগ্য ও মধ্যম। ইমাম ইজলী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই। ইমাম আবু যুরাআ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: তার অনেক তাদলীছ রয়েছে তবে যখন ‘হাদ্দাছানা’ বলবে তখন ঐ হাদিস বিশ্বস্ত প্রমাণিত বুঝাবে। ইমাম আজরী ইমাম আবু দাউদ ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে বলেন: যখন সে ‘হাদ্দাছানা বলবে তখন ঐ হাদিস প্রমাণিত বলে বুঝাবে।” ২০২০, ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৫০;
ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেন,
وَقَالَ ابْنُ مَعِينٍ: صَالِحُ الْحَدِيثِ. وَقَدِ اسْتَشْهَدَ بِهِ الْبُخَارِيُّ.
-“ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: সে গ্রহণযোগ্য। ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه) তার ব্যাপারে ভাল সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।” ২১২১, ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৩৩৭;
ইমাম মুগলতাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেন,
قال ابن المديني: سمعت أبا الوليد الطيالسي، سمعت هشيما يقول: مبارك بن فضالة ثقة، ولما خرج الحاكم حديثه في ্রالمستدركগ্ধ قال: والمبارك بن فضالة ثقة، وقال أبو الحسن العجلي: يكتب حديثه، جائز الحديث، وذكره ابن شاهين في الثقات.
-“ইবনে মাদিনী বলেন: আমি আবু ওয়ালিদ তায়ালিছী কে বলতে শুনেছি: হুশাইমানকে বলতে শুনেছি ‘মুবারক ইবনে ফাদ্বালাহ’ বিশ্বস্ত। ইমাম হাকেম তার ‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে তার থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন ও বলেছেন: সে বিশ্¦স্ত। ইমাম আবুল হাছান ইজলী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: তার হাদিস লিখি সে জায়েযুল হাদিস। ইমাম ইবনে শাহিন ( رَحْمَةُ الله عليه) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” ২২২২, ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৪১১;
ইমাম মিযযী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেন,
وَقَال المفضل بْن غسان الغلابي عَن يحيى بْن مَعِين: الربيع بْن صبيح، والمبارك بْن فضالة صالحان. وَقَال أَبُو بكر بْنُ أَبي خيثمة: سمعت يحيى بْن مَعِين: وسئل عَنِ المبارك، فقال: ضعيف. وسمعته مرة أخرى يقول: ثقة.
وَقَال معاوية بْن صَالِح، عَنْ يحيى بْن مَعِين: ليس به بأس وَقَال مُحَمَّد بْن عُثْمَانَ بْن أَبي شَيْبَة فِي موضع آخر: سألت علي بْن المديني عَنْه، فقال: هو صالح وسط. وَقَال أبو زُرْعَة: يدلس كثيرا، فإذا قال: حَدَّثَنَا فهو ثقة. وَقَال أَبُو حاتم: هو أحب إلي من الربيع بْن صبيح.
-“মুফাদ্দাল ইবনে গাচ্ছান গালাবী ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে বর্ণনা করেন: রবিঈ ইবনে ছাবেহ্ এবং মুবারক ইবনে ফাদ্বালাহ দু’জনই গ্রহণযোগ্য বান্দাহ ছিল। ইমাম আবু বকর ইবনে আবী হায়ছামা বলেন, আমি ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه) কে বলতে শুনেছি: তাকে মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বলেন: সে দুর্বল, আরেকবার তিনি বলেন: সে বিশ্বস্ত। মুয়াবিয়াহ ইবনে ছালেহ্ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে বলেন, তার ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই। মুহাম্মদ ইবনে উছমান ইবনে আবী শায়বাহ্ আরেক জায়গায় বলেন: আলী ইবনে মাদানী ( رَحْمَةُ الله عليه) তার ব্যাপারে কে জিজ্ঞাসা করা হল তিনি বলেন: সে গ্রহণযোগ্য ও মধ্যম। ইমাম আবু যুরাআ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: তার অনেক তাদলীছ রয়েছে তবে যখন সে যখন ‘হাদ্দাছানা’ বলেন তখন সে বিশ্বস্ত। ইমাম আবু হাতিম ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: সে আমার কাছে ‘রবিঈ ইবনে ছাবিহ্’ এর চেয়ে অধিক প্রিয়।” ২৩২৩, ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৫৭৬৬;
ইমাম হাকেম নিছাপুরী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় ‘মুস্তাদরাক’ কিতাবে বহু স্থানে তার রেওয়ায়েত কে ছহীহ্ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) একমত পোষণ করেছেন। ইমাম তিরমিজি ( رَحْمَةُ الله عليه) তার রেওয়ায়েত কে হাছান বলেছেন। অতএব, এই হাদিস নির্ভরযোগ্য ও ছহীহ্।
এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, রাসূলে করিম ( ﷺ) সৃষ্টির প্রথম এবং আদি পিতা হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেও তিনি নূর অবস্থায় ছিলেন। অতএব, রাসূলে করিম ( ﷺ) আদম (عليه السلام) সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন। কারণ মাটির তৈরী সর্বপ্রথম মানব হলে হযরত আদম (عليه السلام)। অথচ হযরত কাব আহবারের দোহাই দিয়ে বলা হচ্ছে জমীনের মাটি দিয়ে মুহাম্মদ ( ﷺ) সৃষ্টি!। (নাউজুবিল্লাহ)
এ বিষয়ে আরেক হাদিসে আছে,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَمْزَةَ، ثَنَا أَبُو الْجُمَاهِرِ، ثَنَا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كُنْتُ أَوَّل النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: আমি সৃষ্টি জগতে প্রথম নবী এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।” ২৪২৪, ইমাম আবু নুয়াইম: দালায়েলুন্নবুয়াত, ৬১ পৃ: হাদিস নং ৩; ইমাম তাবারানী তাঁর মুসনাদে শামিইন-এ, হাদিস নং ২৬৬২; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১০ম খন্ড, ৪৩৯ পৃ:; কাজী আয়্যায: শিফা শরীফ, ১ম জি: ২৬৬ পৃ:; হাফিজ ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ২য় খন্ড, ৬২৭ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: খাছায়েছুল কোবরা, ১ম খন্ড, ২১ পৃ:; শরফুল মোস্তফা, ১ম খন্ড, ২৮৮ পৃ:; উইনুল আছার, ১ম খন্ড, ৯৭ পৃ:; হাফিজ ইবনে কাছির: ‘সিরাতে নববিয়্যা’ ১ম খন্ড, ২৮৯ পৃ:; ইমতাউল আছমা, ৩য় খন্ড, ১৭০ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খন্ড, ৬৮ পৃ:; ইমাম ইবনে আদী: আল কামিল কিতাবু দ্বোয়াফায়, ৪র্থ খন্ড, ৪১৭ পৃ:;
এই হাদিসটি অন্য শব্দেও উল্লেখ আছে, যেমন:-
حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَاصِمٍ، حَدَّثَنا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنا الوليد، حَدَّثَنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ وَسَعِيدٌ، عَن قَتادَة عَنِ الْحَسَنِ، عَن أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وسَلَّم قَال: كُنْتُ أَوَّلَ الناس فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ.
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ, প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।” ২৫২৫, ইমাম ইবনে আদী: আল-কামিল ফিদ-দোয়াফা, ৩য় খন্ড, ৪৮৮ পৃ:; আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর, হাদিস নং ৬৪২৩; যখিরাতুল হুফ্ফাজ, হাদিস নং ৪৩৭৫;
সর্বোপরি এই রেওয়ায়েতটি নির্ভরযোগ্য অর্থাৎ, হাদিসটি ক্বাবী বা শক্তিশালী, কারণ অন্য রেওয়ায়েত দ্বারা ইহা শক্তিশালী হয়েছে। কারণ হযরত আদম (عليه السلام) এর সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহর হাবীব ( ﷺ) ‘নবী’ ছিলেন। সুতরাং তিনিই সৃষ্টির প্রথম মানুষ এতে কোন সন্দেহ নেই। এই হাদিসটি خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ (খুলাইদ ইবনে দালাজ) এর একক সূত্রে হলে দ্বায়িফ হত, কিন্তু সে ইহা এককভাবে বর্ণনা করেননি বরং তার সাথে سَعِيدٌ (সাঈদ) বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ সাঈদ ও খুলাইদ উভয়ে একত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তাই ইহা শক্তিশালী রেওয়ায়েত। সর্বোপরি এই রেওয়ায়েতটি নির্ভরযোগ্য ও ক্বাবী বা শক্তিশালী, কারণ অন্য রেওয়ায়েত দ্বারাও ইহা শক্তিশালী হয়েছে। এই হাদিসের সনদে
سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الأَزْدِيُّ (সাঈদ ইবনে বাশির আবু আব্দুর রহমান আযদী) নামক রাবী রয়েছে, তার ব্যাপারে কেউ কেউ সমালোচনা করলেও ইমামদের অনেকেই তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন ও তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন লক্ষ্য করুন:-
وقال أبو بكر البزار هو عندنا صالح ليس به بأس. -“ইমাম আবু বকর বাজ্জার ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: সে আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” ২৬২৬, ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ৪র্থ খন্ড, ৮ পৃ:; ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ১৯১০;
ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) তার ব্যাপারে বলেন:
الإِمَامُ، المُحَدِّثُ، الصَّدُوْقُ، الحَافِظُ، -“তিনি ইমাম, মুহাদ্দিদছ, সত্যবাদী ও হাফিজ ছিলেন।” ২৭২৭, ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ’লামী নুভালা, রাবী নং ৯৭, ৭ম খন্ড, ৩০৪ পৃ:;
وقال مَرْوَانُ الطَّاطَرِيّ: سَمِعْتُ سُفْيَانَ بْنَ عُيَيْنَةَ عَلَى جمرة العقبة يقول: حدثنا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، وَكَانَ حَافِظًا.
-“মারওয়ান তাতারী বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা ( رَحْمَةُ الله عليه) কে ‘জামরায়ে আকাবায়’ বলতে শুনেছি: আমাদেরকে সাঈদ ইবনে বাশির হাদিস বর্ণনা করেছেন আর সে একজন হাফিজ ছিলেন।” ২৮২৮, ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪র্থ খন্ড, ৩৭৩ পৃ:; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২২৪৩;
وقال دحيم: يوثقونه، كَانَ حَافِظًا. -“ইমাম দুহাইম ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: তাকে বিশ্বস্ত বলা হয় সে একজন হাফিজ ছিলেন।” ২৯২৯, ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪র্থ খন্ড, ৩৭৩ পৃ:; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২২৪৩;
ذكره ابن شاهين في الثقات -“ইমাম ইবনে শাহিন ( رَحْمَةُ الله عليه) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” ৩০৩০, ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯১০;
قال شعبة بن الحجاج: هو مأمون خذوا عنه. -“ইমাম শুবা ইবনে হাজ্জায ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: সে গ্রহণযোগ্য তোমরা তার থেকে হাদিস গ্রহণ কর।” ৩১৩১, ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯১০; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২২৪৩;
وذكره الحاكم في الثقات وخرج حديثه في مستدركه -“ইমাম হাকেম ( رَحْمَةُ الله عليه) তাকে বিশ্বস্তদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন এবং তার ‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।” ৩২৩২, ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯১০;
ذكره ابن خلفون في الثقات -“ইমাম ইবনে খালিফুন ( رَحْمَةُ الله عليه) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” ৩৩৩৩, ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯১০;
অতএব, এই হাদিস নিরর্ভরযোগ্য ও ছহীহ। সুতরাং আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) সৃষ্টির প্রথম মানুষ। এর সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
رَوَى قَتَادَةُ عَنِ الْحَسَنِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ قَوْلِهِ تَعَالَى وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ قَالَ: كُنْتُ أَوَّلَهُمْ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-“হযরত কাতাদা বর্ণনা করেছেন হাছান বছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে, তিনি আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) কে এই আয়াত “ইজ আখযনা মিছাকাহুম..” তিনি বলেন: সৃষ্টির মধ্যে আমিই ছিলাম তাঁদের প্রথম, আর প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।” ৩৪৩৪, তারিখে ইবনে আসাকির, তাফছিরে কুরতবী, ১৪তম খন্ড, ১২৭ পৃ:; তাফছিরে ইবনে আবী হাতেম, হাদিস নং ১৭৫৯৫;
সামান্য শাব্দিক ব্যবধানে অন্যত্র উল্লেখ আছে:
رواه ابن سعد عن قتادة مرسلًا. -“ইবনে সাদ হযরত কাতাদা ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে ‘মুরছাল ছহীহ্’ রূপে বর্ণনা করেছেন। ৩৫৩৫, ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ১১৮ পৃ:;
এই সনদটি ছহীহ্, এ সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ্, আল্লামা আবুল ফজল হাফিজ ইবনে কাছির ( رَحْمَةُ الله عليه) {ওফাত ৭৭৪ হি.} উল্লেখ করেন:
أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ عَنْ سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ: كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ. وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ
-“হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) এরূপ বলেছেন: সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে। ইহা প্রমাণিত ও অধিক ছহীহ্।” ৩৬৩৬, ইমাম ইবনে সা’দ: তাবকাতে কোবরা, ১ম খন্ড, ১১৯ পৃ:; হাফিজ ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩২৫ পৃ: ‘আমর ইবনে র্মুরা জাহনী’ এর কিচ্ছার বর্ণনায়; শারফুল মোস্তফা,, ২য় খন্ড, ৭২ পৃ:; কাজী আয়্যাজ: শিফা শরীফ, ১ম খন্ড, ১১৪ পৃ:; বাহ্জাতুল মাহফিল, ১ম খন্ড, ১৩ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৪২ পৃ:; ইমাম যুরকানী: শরহে মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১০ম খন্ড, ২৭৪ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: শরহে শিফা, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃ:;
অতএব, সনদসহ রাসূলে পাক ( ﷺ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল, প্রিয় নবীজি ( ﷺ) আদি পিতা হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টিরও বহু পূর্বে সৃষ্টি হয়েছেন। তিনি জমীনের মাটি দ্বারা নয় বরং সৃষ্টিগত ভাবেই আল্লাহর নূর।
এর সমর্থনে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করছি, আল্লামা ইমাম ছা’লাভী ( رَحْمَةُ الله عليه) {ওফাত ৪২৭ হিজরী} তদীয় তাফছিরে উল্লেখ করেন:
أخبرنا أبو عثمان سعيد بن محمد بن محمد بن إبراهيم العدل قال: حدّثنا أبو الحسين محمد بن منصور الواعظ قال: حدّثنا أبو عمر محمد بن عبد الواحد الزاهد قال: حدّثنا محمد ابن يونس الكديمي قال: حدّثنا عبيد الله بن عائشة قال: حدّثنا حماد بن سلمة عن ثابت عن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلّم: أنّ الله تعالى خلقني من نوره.....
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাঁর নূর থেকে আমাকে সৃষ্টি করেছেন.....।” ৩৭৩৭, তাফছিরে ছা’লাভী, ৭ম খন্ড, ১১১ পৃ:;
যেমন এ বিষয়ে হাদিস শরীফে আছে, ইমাম আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল মালেক হিমইয়ারী আল মারুফ আবুল হাছান ইবনে কাত্তান ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৬২৮ হিজরী তদীয় ‘কিতাবুল আহকাম’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন,
عن علي بن الحسين عن أبيه عن جده أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: كنت نورًا بين يدي ربي قبل خلق آدم بأربعة عشر ألف عام
-“হযরত আলী ইবনে হুছাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) তাঁর পিতা ও দাদা সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: আমি হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টির ১৪ হাজার বছর পূর্বেই আল্লাহর কাছে নূর হিসেবে বিদ্যমান ছিলাম।” ৩৮৩৮, ইমাম ইবনে কাত্তান: কিতাবুল আহকাম, ১ম খন্ড, ১৪২ পৃ;; শরফুল মোস্তফা, ১ম খন্ড, ৩০৮ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৭২ পৃ:; ইমাম যুরকানী: শরহে মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, ১৯৫ পৃ:; আনওয়ারে মুহাম্মদিয়া; কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ২৩৮ পৃ:; সিরাতে হলবিয়া, ১ম খন্ড, ৪৭ পৃ:; তাফছিরে রুহুল বয়ান, ২য় খন্ড, ৪২৯ পৃ:; নশরুত্বিব, ২৬ পৃ:; জিকরে হাসীন, ৩০ পৃ:;
ইমাম আজলুনী, ইমাম ইবনে ছালেহী, ইমাম কাস্তালানী ও ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) সকলেই এভাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন:
وفي أحكام ابن القطان فيما ذكره ابن مرزوق عن علي بن الحسين عن أبيه عن جده أن النبي صلى الله عليه وسلم قال...
-“ইবনে কাত্তান তার আহকাম গ্রন্থে উল্লেখ করেন, যা ইবনে মারজুক ( رَحْمَةُ الله عليه) হযরত আলী ইবনে হুছাইন (رضي الله عنه) এর পিতা ও দাদার সূত্রে উল্লেখ করেছেন।” ৩৯৩৯, ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৯৪ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: আল মাওরিদুর রাবী;
হাদিসটি মূলত ইমাম ইবনে মারজুক ( رَحْمَةُ الله عليه) এর কিতাবে সনদসহ রয়েছে। ইবনে মারজুক ( رَحْمَةُ الله عليه) এর সম্পূর্ণ নাম হল:أَحْمَدُ بنُ مُحَمَّدِ بنِ القَاسِمِ المِصْرِيُّ “আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে কাশেম আল মিছরী র:”। তিনি ابْنُ مَرْزُوْقٍ ইবনে মারজুক ( رَحْمَةُ الله عليه) নামে প্রসিদ্ধ। তার ইন্তেকাল ৪১৮ হিজরী। ৪০৪০, ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আলামিন নুবালা, রাবী নং ২৫৬;
সুবহানাল্লাহ! দেখুন আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টির ১৪ হাজার বছর পূর্বেও নূরের অবস্থায় ছিলেন। এখানে ১৪ হাজার বছর পৃথিবীর হিসেবে নয় বরং আল্লাহর হিসেবে। আল্লাহর হিসেবে একদিন পৃথিবীর হিসেবে ১ হাজার বছর, অথবা আরেক বর্ণনায় আছে ১দিন সমান ৫০ হাজার বছর।
আল্লামা হুছাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাছান দিয়ারবকরী ( رَحْمَةُ الله عليه) {ওফাত ৯৬৬ হিজরী} তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ كنت نُورًا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ تَعَالَى، قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَلْفَيْ عَامٍ،
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) নবী করিম ( ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি ( ﷺ) বলেছেন: আমি আদম (عليه السلام) সৃষ্টির ১ হাজার বছর পূর্বেও আল্লাহর কাছে নূর হিসেবে ছিলাম।” ৪১৪১, তারিখুল খামিছ, ১ম খন্ড, ২১ পৃ:;
এ সম্পর্কে বিশিষ্ট তাবেঈ ও আওলাদে রাসূল, ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এর পীর হযরত জাফর সাদেক (رضي الله عنه) এর বক্তব্য লক্ষ্য করুন,
قال جعفر الصادق رضى الله عنه أول ما خلق الله نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل كل شىء
-“হযরত জাফর সাদিক (رضي الله عنه) বলেন: সকল কিছু সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তা’আলা নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি করেছেন।” ৪২৪২, তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৮ম খন্ড, ৩৯৬ পৃ:;
সুতরাং সনদ বিহীন ভিত্তিহীন বর্ণনার উপর নির্ভর করে আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) কে জমীনের মাটির তৈরী বলা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। কেননা ‘সকল সৃষ্টির মূল মুহাম্মদ রাসূল ( ﷺ)’। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পাঠ করুন আমার লিখিত দলিল ভিত্তিক কিতাব ‘নূরে মুজাচ্ছাম’।
---------------------------------