যে ব্যক্তি হজ্ব করল কিন্তু আমার যিয়ারত করলনা সে যেন আমার প্রতি যুলুম করল।

ইমাম ইবনু আদী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا على بن إسحاق، حَدَّثَنا مُحَمد بْنُ مُحَمد بْنِ النُّعْمَانِ بْنِ شِبْلٍ، حَدَّثني جَدِّي، حَدَّثني مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ، عنِ ابْنِ عُمَر، قَال: قَال رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ حَجَّ الْبَيْتَ فلم يزرنى فقد جفانى
 -“হজরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন: যে ব্যক্তি হজ্ব করল কিন্তু আমার যিয়ারত করল না সে যেন আমার উপর যুলুম করল।”(ইমাম ইবনে ছালেহী; সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২তম খন্ড, ৩৭৯; ইমাম ইবনে আদী: আল-কামিল, ৮ম খন্ড, ২৪৮ পৃ:; ইমাম ইবনে হিব্বান: মাজরুহীন, হাদিস নং ১১২৮; কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, ৫ম খন্ড, ১১৪ পৃ: ২০৭৩ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
  
এই হাদিসর গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
ابن عدي، والدار قطني في العلل وابن حبان في الضعفاء. والخطيب في رواة مالك بسند ضعيف جدا عن ابن عمر.
-“ইমাম ইবনু আদী, দারা কুতনী তার ইলালে, ইবনু হিব্বান তার দ্বোয়াফা গ্রন্থে, খতিব তার ‘রেওয়ায়েতে মালেক’ গ্রন্থে হযরত ইবনু উমার (رضي الله عنه) থেকে অত্যান্ত দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন।”(ইমাম ছিয়তী: আদ দুররুল মুনতাশিরা ফি আহাদিছিল মুশতাহিরাহ, ১ম খন্ড, ১৯ পৃ:;) 

এই হাদিসের সনদের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
قلت ولابن عدي في الكامل وابن حبان في الضعفاء والدارقطني في العلل وغرائب مالك وآخرين كلهم عن ابن عمر مرفوعا من حج ولم يزرني فقد جفاني ولا يصح
-“আমি (ছাখাবী) বলছি, ইমাম ইবনু আদী তার আল কামিল গ্রন্থে, ইবনু হিব্বান তার দ্বোয়াফা গ্রন্থে, দারা কুতনী তার ইলালে ও গারাইবুল মালেক গ্রন্থে এবং অন্যন্য সকলেই হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে মারফূরূপে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি হজ্ব করবে কিন্তু আমার যিয়ারত করবেনা সে যেন আমার প্রতি যুলুম করল। ইহা ছহীহ্ নয়।”(ইমাম ছাখাভী: মাকাছিদুল হাছানাহ, হাদিস নং ১১৭৮;) 

ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) কোন হাদিসকে ولا يصح বললে হাদিসটি নূন্যতম দ্বায়িফ বুঝায়। এ বিষয়ে পূর্বে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে হাফিজুল হাদিস, ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
وَذَكَرَهُ ابْنُ عَدِيٍّ وَابْنُ حِبَّانَ فِي تَرْجَمَةِ النُّعْمَانِ وَالنُّعْمَانُ ضَعِيفٌ جِدًّا
-“ইমাম ইবনু আদী ও ইমাম ইবনু হিব্বান ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনাকারী নুমানের তরজমায় ইহা উল্লেখ করেছেন। আর বর্ণনাকারী নুমান অত্যান্ত দুর্বল।”(ইমাম আসকালানী: তালখিছুল হাবীর, ২য় খন্ড, ৫৬৯ পৃ:;) 

ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর দৃষ্টিতে হাদিসটি দুর্বল সনদের তবে মাওজু নয়।
বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ, ইমাম আসকালানীর শশুর, ইমাম ইবনু মুলাক্কিন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে বলেছেন,
وَمن ضَعِيف الْبَاب: حَدِيث مَنْ حَجَّ وَلم يَزُرْني فقد جفاني -“এ বিষয়ে দুর্বল হাদিস হচ্ছে, যে ব্যক্তি হজ্ব করবে কিন্তু আমার যিয়ারত করবেনা সে যেন আমার প্রতি যুলুম করল।”(ইমাম ইবনু মুলাক্কিন: বদরুল মুনীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৯৯ পৃ:;)   

আল্লামা তাহের পাতনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এই হাদিস সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন,
قال الزركشي هو ضعيف -“ইমাম যারকাশী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, এই হাদিস দুর্বল।”(তাহের পাতনী: তাজকেরাতুল মওজুয়াত) 

এই হাদিসের বর্ণনাকারী مُحَمد بْنُ مُحَمد بْنِ النُّعْمَانِ بْنِ شِبْلٍ সম্পর্কে ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেছেন,
أتهمه الدارقطني وضعفه جدا -“ইমাম দারা কুতনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার উপর অভিযোগ দিয়েছেন এবং তাকে অত্যান্ত দুর্বল বলেছেন।”(ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৭১০;)  

এছাড়া অন্য কোন ইমাম এই রাবী সম্পর্কে চরম পর্যায়ের সমালোচনা করেছেন বলে আমি পাইনি। উল্লেখযোগ্য সকল মুহাদ্দিছ তাবকার ইমামগণ হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন, কেউ মওজু বা জাল হাদিস বলেননি। শুধুমাত্র ইবনু তাইমিয়া এবং এ বিষয়ে তার হিতাকাংখিরাই হাদিসটিকে মওজু বলেছেন। কেননা ইবনে তাইমিয়াই রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) এর যিয়ারতের বিরুদ্ধে ছিল। মূলত হাদিসটি মওজু হওয়ার কোন কারণ নেই। এ হাদিসের মাআনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
وعن علي بن أبي طالب رضي الله عنه قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: من زار قبري بعد موتي فكأنما زارني في حياتي، ومن لم يزر قبري فقد جفاني.
-“হজরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন: যারা আমার ওফাতের পরে যিয়ারত করবে সে যেন আমার জিবদ্দশায় যিয়ারত করল। যে আমার যিয়ারত না করবে সে যেন আমার উপর যুলুম করল।”(ইমাম খারকুশী: শরফুল মুস্তফা, হাদিস নং ৮৬২, ৩য় খন্ড, ১৭২ পৃ:; ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২তম খন্ড, ৩৭৭ পৃ:;)  

অতএব, হাদিসটি দ্বায়িফ পর্যায়ের।
প্রিয় পাঠক, আল্লামা ইবনু র্আরাক ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর তানজিহুশ শারিয়াহ, গ্রন্থের হাদিস নং ৮ এর ব্যাখ্যায়; আল্লামা তাহের পাতনীর তাজকেরাতুল মওজুয়াত, ১ম খন্ড ৭৬ পৃষ্টায় উল্লেখ রয়েছে قَالَ الزَّرْكَشِيّ هُوَ ضَعِيف 
-“ইমাম যারকাশী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটিকে দ্বায়িফ বলেছেন।” কিন্তু লা-মাজহাবী কাজী শাওকানী তার ‘ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে ও তিনার অনুসরণে কওমী আলেম জুনায়েদ বাবুনগরী তদীয় “প্রচলিত জাল হাদীস” বইয়ের ১২৬ পৃষ্টায় ইমাম যারকাশী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর নামে হাদিসটি জাল বানিয়ে দিলেন। কি আশ্চর্য জালিয়াতী! এমনকি ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) নিজের কিতাবে হাদিসটিকে ضَعِيف দ্বায়িফ বলেছেন যা কিছুক্ষণ পূর্বে আপনাদেরকে দেখিয়েছি। অথচ কওমী আলেম জুনায়েদ বাবুনগরীর তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় লিখিত “প্রচলিত জাল হাদীস” বইয়ের ১২৬ পৃষ্টায় বলেছেন ইমাম ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটিকে জাল বলেছেন। (নাউজুবিল্লাহ) কি জালিয়াতী দেখুন! ছাগানী ইবনে তাইমিয়ার মতাদর্শী তাই সে হাদিসটিকে কোন কারণ ছাড়াই জাল বলেছে। কিন্তু হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটিকে জাল বলেননি বরং দ্বায়িফ বলেছেন।
Top