আলিমের চেহারার দিকে নজর করলে ৬০ বছর নফল বন্দেগীর সওয়াব
হাফিজুল হাদিস, ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম ইসমাঈল আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেছেন,
عن أنس مرفوعا نَظْرَةٌ فِي وَجْهِ الْعَالِمِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سنة صياما وقياما
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেন: আলিমের চেহারার দিকে তাকানো ৬০ বছর নফল সালাত ও নফল রোজার চেয়ে আল্লাহর কাছে উত্তম।”(ছাময়ান ইবনে মাহদী তাঁর নুছখায় হাদিসটি হযরত আনাস রাঃ থেকে মারফূ সনদে উল্লেখ করেছেন; ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ৪৪৬ পৃ: হাদিস নং ১২৫১; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ২৮৫ পৃ:; তাজকিরাতুল মাওজুয়াত লিল ফাতানী, ১ম খন্ড, ২১ পৃ:;)  
এই হাদিসের সম্পর্কে ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেছেন,
فِي نُسْخَةٍ سَمْعَانَ وَغَيْرِهِ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مَرْفُوعًا بِهِ وَبِمَعْنَاهُ وَلَا يَصِحُّ قَالَهُ السَّخَاوِيُّ
-“ছামআন ও অন্যান্যদের নূছখার মধ্যে হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে মারফূভাবে ইহা ও ইহা আমার মাআনা বর্ণিত রয়েছে। ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: ইহা ছহীহ্ নয়।”(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফূয়া, হাদিস নং ৫৬২;) 
যেমন হাফিজুল হাদিস, ইমাম শামছুদ্দিন ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
وكذا أورده الديلمي بلا سند عن أنس مرفوعا بلفظ: النظر إلى وجه العالم عبادة، وكذا الجلوس معه والكلام والأكل، ولا يصح.
-“ইমাম দায়লামী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) সনদবিহীন অনুরূপ হাদিস হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন: আলিমের চেহারার দিকে তাকানো ইবাদত। এমনিভাবে তাদের সাথে বসা, কথা বলা ও খাওয়া দাওয়া করাও এবাদত। ইহা ছহীহ্ নয়।”(ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ৪৪৬ পৃ: হাদিস নং ১২৫১;) 
এই হাদিস উল্লেখ করে আল্লামা ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও আল্লামা ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: وَلَا يَصِحُّ -“ইহা ছহীহ্ হাদিস নয়।”(ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ৪৪৬ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ২৮৫ পৃ:;)  ইমাম ইসমাঈল আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
ولا يصح شئ من ذلك كله كما سبق ذلك، -“এ বিষয়ে কোনটাই ছহীহ্ নয় যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।”(ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ২৮১১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;)  
মুহাদ্দেছিনে কেরামের ভাষায় কোন হাদিসকে وَلَا يَصِحُّ বললেই ইহাকে মওজু বা বাতিল বুঝায়না, বরং হাছান অথবা দ্বায়িফ হতে পারে। যেমন আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, 
قَوْلَ السَّخَاوِيِّ لَا يَصِحُّ لَا يُنَافِي الضَّعْفَ وَالْحُسْنَ -“ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎)‘র বক্তব্য হাদিসটি ‘ছহীহ নয়’ নিষেধ দ্বারা হাদিসটি ‘হাছান’ ও দ্বায়িফ হওয়াকে নিষেধ করে না।” (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারূল মারফূআ-১ম খন্ড, ৩৪৯ পৃ. হাদিস নং ৫০২;) 
অনুরূপ আল্লামা আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় ‘কাশফুল খাফা’ কিতাবের ২৫২৫ নং হাদিসের তাহকিকে বলেছেন। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) আরো বলেন-
وَقَالَ ابْنُ الْهَمَّامِ: وَقَوْلُ مَنْ يَقُولُ فِي حَدِيثٍ أَنَّهُ لَمْ يَصِحَّ إِنْ سَلِمَ لَمْ يُقْدَحْ ; لِأَنَّ الْحُجَّةَ لَا تَتَوَقَّفُ عَلَى الصِّحَّةِ، بَلِ الْحَسَنُ كَافٍ،– فصل الثانى من باب: ما يجوز من العمل فى الصلاة.
-“ইমাম কামালুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে হুমাম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: কোন হাদিস সম্পর্কে কোন মুহাদ্দিছ যদি বলেন যে এ হাদিসটি ছহীহ্ (বিশুদ্ধ) নয়, তাদের কথা সত্য বলে মান্য করা হলেও কোন অসুবিধা নেই, যেহেতু (শরীয়তের) দলীল বা প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শুধু (হাদিস) ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ হওয়া নির্ভরশীল নয়। সনদ বা সূত্রের দিক দিয়ে ‘হাছান’ হলেও (হাদিসটি শরীয়তের দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য) যথেষ্ট।”(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাত: ৩য় খন্ড, ৭৭ পৃ, হাদিস: ১০৮, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন;)  হাফিজ ইবনে হাজার মক্কী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার কিতাবে লিখেন-
وَقَول أَحْمد إِنَّه حَدِيث لَا يَصح أَي لذاته فَلَا يَنْفِي كَونه حسنا لغيره وَالْحسن لغيره يحْتَج بِهِ كَمَا بَين فِي علم الحَدِيث- (الصواعق المحرقة على أهل الرفض والضلال والزندقة:  خاتمة الفصل الاول من الباب: الحادى عشر:২২৮)
-“ইমাম ইবনে হাজার মক্কী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎)‘র একটি হাদিস প্রসঙ্গে বক্তব্য হাদিসটি  لَا يَصح বিশুদ্ধ নয় এর অর্থ হবে ছহীহ্ লিজাতিহী তথা জাতি বা প্রকৃত অর্থে ছহীহ্ নয় উক্ত হাদিসটি (সনদের দিক দিয়ে) হাছান লিজাতিহী বা অন্য সনদে হাছান লিগায়রিহী (জাতিগত ছহীহ্ না হওয়া; সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছহীহ’র কারণে নিজে ছহীহ্ হওয়া।) হওয়াকে মানা (নিষেধ) করে না। আর হাছান লিগায়রিহীও (শরিয়তের) প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। যা ইলমে হাদিস তথা হাদিসশাস্ত্র হতে জানা যায়।”  (ইমাম ইবনে হাজার মক্কী: আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, ২য় খন্ড, পৃ-৫৩৬, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন;)
সুতরাং وَلَا يَصِحُّ হাদিসটি ছহীহ্ নয়, তবে নিশ্চয় ‘হাছান’ অথবা ‘দ্বায়িফ’ সনদের হাদিস, কারণ ইহা সনদযুক্ত ও মারফ‚ হাদিস। অতএব, এই হাদিসটি মারফূ এবং হাছান অথবা দ্বায়িফ । প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, ইমামগণের কেউ এই হাদিসকে জাল হাদিস বলেননি, কিন্তু কওমীদের গুরু জনাব আব্দুল মালেক সাহেব তিনার ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ নামক বইয়ের প্রথম প্রকাশের ৯২ পৃষ্টায় বলে দিলেন- “লোকমুখে প্রসিদ্ধ উপরোক্ত কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস নয়।” দেখুন তারা ইমামদের নামে এভাবেই মিথ্যাচারিতা করেছে।
কওমীদের আরেকজন গুরুজন জনাব জুনায়েদ বাবু নগরীর তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় লিখিত “প্রচলিত জাল হাদিস” গ্রন্থের ১৭৬ পৃষ্টায় বলেছেন- “উপরোক্ত দুটি বাক্যের কোনটিই হাদীস নয়। হাদীস গবেষক ওলামারা এ দুটিকে মাওজু তথা বানোয়াট হাদীস বলে উল্লেখ করেন। আল্লামা সাখাবী বলেন: وَلَا يَصِحُّ অর্থাৎ এ বর্ণনা শুদ্ধ নয়।” 
কি মিথ্যাচারিতা দেখুন! কোন ইমাম হাদিসটিকে মাওজু বা বানোয়াট বলেননি। ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) وَلَا يَصِحُّ বলেছেন, কিন্তু ইহার মাআনা বা ব্যাখ্যা কি সে ব্যাপারে আপনাদেরকে আমি ডকুমেন্টসহ বলেছি যে, ইহা হাছান অথবা দ্বায়িফ হবে, মাওজু নয়।
------------------------------
Top