দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল
حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيئَةٍ
দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল। ৭৫৭৫, ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৫৭৮২; মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৫২১৩; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ৪৫০৩০; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৬৪২৮;
হাদিসটি সনদ সহকারে এভাবে উল্লেখ আছে,
حَدَّثَنِي سُرَيْجُ بْنُ يُونُسَ، قَالَ: ثنا عَبَّادُ بْنُ الْعَوَّامِ، عَنْ هِشَامٍ أَوْ عَوْفٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيئَةٍ
-“হযরত হাছান বছরী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম ( ﷺ) বলেছেন: দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল।” ৭৬৭৬, ইমাম আবী দুনিয়া: আয যুহুদ, হাদিস নং ৯;
এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন,
(فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ) أَيْ: بِإِسْنَادٍ حَسَنٍ -“শুয়াইবুল ঈমানে অর্থাৎ হাছান সনদে বর্ণিত আছে।” ৭৭৭৭, ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫২১৩ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
তিনি অন্যত্র আরো বলেন:
وَقَدْ رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الشُّعَبِ بِإِسْنَادٍ حَسَنٍ إِلَى الْحَسَنِ الْبَصْرِيِّ رَفَعَهُ مُرْسَلًا
-“ইমাম বায়হাক্বী তার শুয়াইবুল ঈমানে হাছান সনদে হযরত হাছান বাছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) পর্যন্ত মুরছাল মারফু রূপে বর্ণনা করেছেন।” ৭৮৭৮, ইমাম মোল্লা আলী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ১৬৩;
হাদিসটির সনদ সম্পর্কে হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর অভিমত,
وَتَعَقَّبَهُ شَيْخُ الْإِسْلَامِ ابْنُ حَجَرٍ الْعَسْقَلَانِيُّ رَحِمَهُ اللَّهُ، بِأَنَّ ابْنَ الْمَدِينِيَّ أَثْنَى عَلَى مَرَاسِيلِ الْحَسَنِ، وَالْإِسْنَادُ حَسَنٌ إِلَيْهِ،
-“শাইখুল ইসলাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেছেন যে, নিশ্চয় ইমাম ইবনে মাদানী ( رَحْمَةُ الله عليه) হযরত হাছান বছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর মুরছাল রেওয়ায়েত গুলোর প্রশংসা করেছেন। এই সনদটি হাছান হওয়ার প্রতি ঈঙ্গিত করেছেন।” ৭৯৭৯, ইমাম ছিয়তী: আদ দুরারুল মুনতাশিরা ফি আহাদিসিল মুশতাহিরা, ১ম খন্ড, ৯ পৃ:; আল্লামা মানাভী: আত তাইছির বি’শরহে জামিইছ ছাগির, হাদিস নং ৩৬৪৬; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫২১৩ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদির, ৩য় খন্ড, ৩৬৮ পৃ:;
হাদিসটি মুরছাল হলেও হুজ্জত হওয়ার যোগ্য, যেমন আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন,
وَالْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ إِذَا صَحَّ إِسْنَادَهُ وَلِهَذَا قَالَ ابْنُ الْمَدِينِيِّ مُرْسَلَاتُ الْحَسَنِ إِذَا رَوَاهَا عِنْهُ الثِّقَاتُ صِحَاحٌ
-“অধিকাংশ মুহাদ্দিছিনে কেরামের মতে মুরছাল হাদিস হুজ্জত বা দলিল হবে, যদি রেওয়ায়েতটি বিশুদ্ধ হয়। এ কারণেই ইবনে মাদানী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: হাছান বছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর সকল মুরছাল রেওয়ায়েত সমূহ যদি বিশ্বস্ত রাবীগণ বর্ণনা করেন তাহলে ঐ রেওয়ায়েত ছহীহ্ হবে।” ৮০৮০, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ১৬৩;
অতএব, হাদিসটি হাছান-ছহীহ্, যা হুজ্জত হওয়ার যোগ্য। এর সমর্থনেও আরো রেওয়ায়েত আছে। যেমন,
(أكْبَرُ الكَبائِرِ حُبُّ الدُّنْيا) (فر) عَن ابْن مَسْعُود. -“হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম ( ﷺ) বলেছেন: দুনিয়ার মহব্বত হলো সবচেয়ে বড় গোনাহ্।” ৮১৮১, ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ৪২৬১; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৩০১২; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ২২৭৪; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৬০৭৪; আল্লামা ছানআনী: আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ১৩৬৯; আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর, হাদিস নং ৩০১২; হাফিজ ইবনে হাজার হায়তামী: আল ইনাফাতু ফিমা যাআ ফিছ ছাদাকাতি ওয়া দ্বিয়াফাতি, ১ম খন্ড, ৬ পৃ:;
আল্লামা মানাভী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিসটিকে ضعيف দ্বায়িফ বলেছেন। ৮২৮২, আল্লামা মানাভী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইছি ছাগীর, ১ম খন্ড, ১৯৯ পৃ:;
ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় কিতাবে বলেন:
رواه الديلمي عن ابن مسعود رضي الله عنه وهو ضعيف.
-“ইমাম দায়লামী ( رَحْمَةُ الله عليه) হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন আর ইহা দ্বায়িফ ।” ৮৩৮৩, ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ৫২৪;
ইমাম ইবনে রাজব হাম্বলী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেন,
وَمِنْ كَلَامِ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الصَّحَابِيِّ: حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيئَةٍ، وَرُوِيَ مَرْفُوعًا، وَرُوِيَ عَنِ الْحَسَنِ مُرْسَلًا.
-“সাহাবী জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর বাণী হলো: ‘দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল।’ ইহা মারফু রূপে বর্ণিত আছে এবং ইমাম মুরছাল রূপেও বর্ণিত আছে।” ৮৪৮৪, জামেউল উলুম ওয়া হিকাম, ২য় খন্ড, ২০৩ পৃ:;
হাদিসটি হযরত ঈসা (عليه السلام) এর বাণী হিসেবেও হাদিসটি বর্ণিত আছে। যেমন,
حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَيَّانَ، ثَنَا مَحْمُودُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ الْفَرَجِ، ثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَمْرٍو الْبَجَلِيُّ، ثَنَا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، قَالَ: قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ: حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيئَةٍ،
-“হযরত সুফিয়ান ছাওরী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন, হযরত ঈসা (عليه السلام) বলেছেন: দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল।” ৮৫৮৫, ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৬৬ পৃ:;
হাদিসটি আরেকটি সূত্রে বর্ণিত আছে। যেমন,
وَأَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ بُشْرَانَ أَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ صَفْوَانَ ثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي الدُّنْيَا ثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ أَنَا أَبُو دَاوُدَ الْحَفَرِيُّ عَنْ سُفْيَانَ بْنِ سَعِيدٍ قَالَ: كَانَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَقُولُ: حُبُّ الدُّنْيَا أَصْلُ كُلِّ خَطِيئَةٍ
-“হযরত সুফিয়ান ইবনে সাঈদ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: হযরত ঈসা (عليه السلام) বলেছেন: দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল।” ৮৬৮৬, ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ৯৯৭৪; ইমাম বায়হাক্বী: যুহুদুল কবীর, হাদিস নং ২৪৭;
বিশিষ্ঠ তাবেঈ হযরত মালেক ইবনে দিনার ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকেও হাদিসটি এভাবে বর্ণিত আছে,
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِدْرِيسَ، نا هُرَيْمُ بْنُ عُثْمَانَ، عَنْ سَلَّامِ بْنِ مِسْكِينٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ دِينَارٍ، قَالَ: حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيئَةٍ،
-“হযরত মালেক ইবনে দিনার ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল।” ৮৭৮৭, ইমাম আবী দুনিয়া: আয যুহুদ, হাদিস নং ৪৯৭;
হাদিসটি আরেকজন তাবেঈ থেকে বর্ণিত আছে,
وحدثني أبو بكر اللفتواني عنه أنا أبو بكر الباطرقاني أنا أبو عبد الله بن مندة قال وأنبأني أبو عمرو بن مندة عنأبيه نا أبو سعيد بن يونس نا القاسم بن عبيد الله بن سعيد بن كثير بن عفير حدثني ابن لهيعة عن عقبة بن مسلم عن سعد بن مسعود قال حب الدنيا رأس الخطايا
-“হযরত সাঈদ ইবনে মাসউদ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল।” ৮৮৮৮, ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ২০তম খন্ড, ৪২০ পৃ:; আদ দুরারুল মুনতাশিরা ফি আহাদিসিল মুশতাহিরা, ১ম খন্ড, ৯ পৃ:;
অতএব, সার্বিক বিচারে বলা যায়,حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيئَةٍ
-“দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল।” অবশ্যই রাসূলে পাক ( ﷺ) এর হাদিস। পাশাপাশি সাহাবী ও তাবেঈ বর্ণিত আছার বা হাদিস। যারা ইহাকে রাসূল ( ﷺ) এর হাদিস নয় বলে থাকেন তাদের ইলিমের সল্পতাই বুঝাবে।
-------------------------------