রাসূল ( ﷺ‎‎)’র চেহারার নূরে মা আয়েশা (رضي الله عنه)’র সুই পাওয়া
হাফিজুল হাদিস ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম ইবনু আসাকির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) সনদসহ বর্ণনা করেছেন,
عَن عَائِشَة قَالَت كنت أخيط فِي السحر فَسَقَطت مني الابرة فطلبتها فَلم أقدر عَلَيْهَا فَدخل رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فتبينت الإبرة بشعاع نور وَجهه 
-“হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি শেষ রাতে সাহরীর সময় কাপড় সেলাই করছিলাম, হঠাৎ আমার হাঁত থেকে সুঁই পড়ে গেল। অনেক খুজাখুজির পরেও সেটি পাওয়া গেলনা। অত:পর রাসূল ( ﷺ‎‎) আগমন করলেন এবং তাঁর মুখমন্ডলের নূরের আলোতে সেই সুইটি দৃষ্টিগোচর হল।”
৬৪৬৪,  ইমাম আবু নুয়াইম: দালাইলুন নবুয়াত, ১ম খন্ড, ১১৩ পৃ: ১১৭ নং হাদিস; ইমাম ইবনু আসাকির: তারিখে ইবনে আসাকির, ৩য় খন্ড, ৩১০ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: খাছায়েছুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১০৭ পৃ:; ইমাম খারকুশী: শরফুল মুস্তফা, ২য় খন্ড, ১০৩ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ৪৩১২২; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৫৪৯২; ইমাম ইবনু ছালেহী শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২য় খন্ড, ৪০ পৃ:;
)

  হাদিসটির সনদ নিম্নরূপ-
أَخْبَرَنَا أَبُو مُحَمَّدٍ الْحُسَيْنُ بْنُ أَحْمَدَ السَّمَرْقَنْدِيُّ الْحَافِظُ بِنَيْسَابُورَ أَنَا أَبُو إِبْرَاهِيمَ إِسْمَاعِيلُ بن عِيسَى بن عبد الله التَّاجِرُ السَّمَرْقَنْدِيُّ بِهَا ثَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يحيى بن الْفضل بن عبد الله الْفَارِسِيُّ ثَنَا أَبُو الْحَسَنِ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ الْجُرْجَانِيُّ الْحَافِظُ بِسَمَرْقَنْدَ ثَنَا مَسْعَدَةُ بْنُ بَكْرٍ الْفَرْغَانِيُّ بِمَرْوٍ وَأَنَا سَأَلْتُهُ فَأَمْلَى عَلَيَّ بَعْدَ جُهْدٍ ثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي عَوْنٍ ثَنَا عَمَّارُ بْنُ الْحَسَنِ ثَنَا سَلَمَةُ بْنُ الْفَضْلِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ بْنِ يَسَارٍ عَنْ يَزِيدَ بْنِ رَوْمَانَ وَصَالِحِ بْنِ كَيْسَانَ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْৃ
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু নুয়াইম: দালাইলুন নবুয়াত, ১ম খন্ড, ১১৩ পৃ: ১১৭ নং হাদিসে। এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
وَهَذَا، وَإِن كَانَ مَذْكُورا فِي معارج النُّبُوَّة وَغَيره من كتب السّير الجامعة للرطب واليابس فَلَا يسْتَند بِكُل مَا فِيهَا إِلَّا النَّائِم والناعس وَلكنه لم يثبت رِوَايَة ودراية.
-“ইহা যদিও মাআরিজুন নবুয়াত সহ অন্যান্য সিরাতের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইহার মধ্যে যা কিছু রয়েছে ইহা ঘুমন্ত ও অলস ব্যক্তিরা ব্যতীত কেউ নির্ভর করেনা। তবে ইহা রেওয়ায়েত ও দেয়ায়া কোনভাবেই ছাবিত নয়।” (লাখনভী: আছারুল মারফুয়া, ৪৬ পৃ:;)

আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর দৃষ্টিতে হাদিসটি ছাবিত নয় তথা ছহীহ্ নয়। কেননা মুহাদ্দিছিনে কেরাম যখন কোন হাদিসকে لم يثبت বলেন তখন ইহা অর্থ হয় হাদিসটি ছহীহ্ নয়। যেমন হাফিজুল হাদিস ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনা করেছেন, বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিছ, হাফিজুল হাদিস, ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, 
وَذكر السخاوي عَنهُ أَن لفظ لَا يثبت لَا يلْزم مِنْهُ أَن يكون مَوْضُوعا فَإِن الثَّابِت يَشْمَل الصَّحِيح فَقَط والضعيف دونه. 
-“ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাফিজ ইবনু হাজার ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় لا يثبت এই শব্দটি হাদিসকে মওজু বলা আবশ্যক করেনা, কেননা ছাবিত শব্দটি শুধুমাত্র ছহীহ্ এর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় জয়ীফের ক্ষেত্রে নয়।” ৬৬৬৬,  আল্লামা তাহের পাটনী: তাযকিরাতুল মওদ্বুআত, ৭৫ পৃষ্ঠা

অতএব, মুহাদ্দিছিনে কেরামের উসূল মোতাবেক এই হাদিস জয়ীফ। এছাড়া নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিছগণের লিখিত সিরাত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে কোন মওজু বা জাল হাদিস উল্লেখ করা হয়না। যেমন বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা নূরুদ্দিন আলী হালভী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) স্বীয় কিতাবের মুকাদ্দমায় বলেছেন,
ولا يخفى أن السير تجمع الصحيح والسقيم والضعيف والبلاغ والمرسل والمنقطع والمعضل دون الموضوع
-“আর ইহা গোপন নয় যে, নিশ্চয় সিরাত গ্রন্থে ছহীহ্, ছাক্বীম, দ্বায়িফ, বালাগ, মুরছাল, মুনকাতে, মু’দাল সবই বর্ণনার মাধ্যমে একত্রিত করা হয় তবে মওজু হাদিস ব্যতীত।” ৬৭৬৭,  আল্লামা হালভী: সিরাতে হালভিয়া, মুকাদ্দমা ৫ পৃ:;

অতএব, এই নীতি মোতাবেক মা আয়েশা (رضي الله عنه) এর সূই হারানোর হাদিসটি মওজু নয় বরং জয়ীফ সনদের। কেননা বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তিনজন মুহাদ্দিছ এই হাদিসকে তিনাদের সিরাত গ্রন্থে সংকলন করেছেন। যেমন হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম খারকুশী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম ইবনু ছালেহী শামী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎)। হাদিসের বর্ণনাকারী ‘মুসয়াদাহ ইবনু বাকর’ সম্পর্কে ইমাম দারা কুতনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) মিথ্যাবাদী বলেছেন যার ইঙ্গিত হিসেবে ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) মিযানের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। তবে ইমাম খতিবে বাগদাদী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় তারিখের মধ্যে এই রাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করে কোন সমালোচনা করেননি। আসমাউর রিজাল ও উসূলে সামগ্রীক বিষয় গুলো বিবেচনা করেই আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটিকে لم يثبت বলেছেন, সরাসরি মওজু বা বাতিল বলেননি। এখানে আরেকটি বিষয় বলা উচিৎ। কোন কোন ইমাম বলেছেন,
قَالَ الْمِزِّيُّ كُلُّ حَدِيثٍ فِيهِ يَا حُمَيْرَاءُ فَهُوَ مَوْضُوعٌ إِلا حَدِيثًا عِنْدَ النَّسَائِيِّ
-“ইমাম মিযযী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, প্রত্যেক ঐ হাদিস যে হাদিসে ‘ইয়া হুমাইরা’ শব্দ রয়েছে তা সবই মওজু শুধুমাত্র নাসাঈ এর একটি হাদিস ব্যতীত।”৬৮৬৮,  ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আল মাসনূ ফি মারিফাতিল হাদিসিল মাওজু;


  এই অভিমতটি কিছু মুহাদ্দিছগণ বললেও অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ বলেছেন,
وَقَالَ بَعْضهمْ كُلُّ حَدِيثٍ وَرَدَ فِيهِ الْحُمَيْرَاء ضَعِيف -“প্রত্যেক ঐ হাদিস যে হাদিসে ‘ইয়া হুমাইরা’ শব্দ রয়েছে তা সবই জয়ীফ।” ৬৯৬৯,  ইমাম ছিয়তী: শারহু সুনানি ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, ১৭৮ পৃ:;


 যেমন শারিহে বুখারী, ইমাম বদরুদ্দিন আইনী হানাফী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেছেন,
يَا حُمَيْرَاءُ أَتُحِبِّينَ أَنْ تَنْظُرِي إلَيْهِمْ فَقلت نعم إِسْنَاده صَحِيح قَالَ بَعضهم وَلم أر فِي حَدِيث صَحِيح ذكر الْحُمَيْرَاء إِلَّا فِي هَذَا (قلت) رُوِيَ من حَدِيث هِشَام بن عُرْوَة عَن أَبِيه عَن عَائِشَة قَالَت أَسْخَنْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ مَاءً فِي الشَّمْسِ فَقَالَ: لا تَفْعَلِي يَا حُمَيْرَاءُ، فَإِنَّهُ يُورِثُ الْبَرَصَ وَهَذَا الحَدِيث وَإِن كَانَ ضَعِيفا فَفِيهِ ذكر الْحُمَيْرَاء
-“হে হুমাইরা! তোমরা কি পছন্দ করো আমি তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি? আমি বললাম, হ্যাঁ। ইহার সনদ ছহীহ্। কোন কোন মুহাদ্দিছগণ বলেছেন, হুমাইরা শব্দ উল্লেখ রয়েছে এরুপ কোন ছহীহ্ হাদিস দেখিনি ইহা ছাড়া। আমি আইনী বলি, হিশাম ইবনু উরওয়া তার পিতার সূত্রে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎)’র জন্য সূর্যের আলোতে গরম করতাম। আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বললেন, হে হুমাইরা! তুমি আমার জন্য এরুপ করোনা, নিশ্চয় ইহা বারাছের উত্তারাধিকার। জয়ীফ হলেও ইহা হাদিস, ইহার মধ্যে ‘হুমাইরা’ শব্দ রয়েছে।”৭০৭০,  ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৭০ পৃ:;
 
এখানে ইমাম বদরুদ্দিন আইনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ‘হুমাইরা’ শব্দ থাকার পরেও হাদিসটি জয়ীফ বলেছেন, মওজু বলেননি। এ ব্যাপারে হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
قَالَ الشَّيْخُ أَحْمَدُ رَحِمَهُ اللَّهُ: قُلْتُ: وَأَمَّا مَا رُوِيَ عَنْ عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مِنْ قَوْلِهِ فِي ذَلِكَ: يَا حُمَيْرَاءُ لَا تَفْعَلِي، فَإِنَّهُ يُورِثُ الْبَرَصَ، لَا يَثْبُتُ الْبَتَّةَ، قَدْ بَيَّنَّا ضَعْفَهُ فِي كِتَابِ السُّنَنِ
-“শায়েখ আহমদ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, আমি বললাম, যে সকল হাদিস হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে রাসূলে আকরাম ( ﷺ‎‎) বর্ণিত হয়েছে এবং ইহা মধ্যে রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎)’ বাণী ‘হে হুমাইরা! তুমি আমার জন্য এরুপ করোনা, নিশ্চয় ইহা বারাছের উত্তারাধিকার। ইহা ছাবিত নয়, অবশ্যই আমরা ইহার দুর্বল হওয়ার বিষয়টি কিতাবুস সুনানের মধ্যে বর্ণনা করেছি।” ৭১৭১,  ইমাম বায়হাক্বী: মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাদিস নং ৫১৩;


এখানেও ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) يَا حُمَيْرَاءُ ‘ইয়া হুমাইরা’ শব্দ থাকার পরেও হাদিসকে জয়ীফ বলেছেন, মওজু বলেননি। এ বিষয়ে ইমাম ইসমাঈল আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
وأقول فيه إن الحديث الذي رواه البيهقي والدارقطني وغيرهما عن عائشة في الْمَاءِ الْمُشَمَّسِ أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لها لا تفعلي يا حميراء، فإنه يورث البرص ليس بكذب مختلق بل ضعيف،
-“সূর্যের তাপে গরমকৃত পানি সম্পর্কীত হাদিস সম্পর্কে আমি বলি যা ইমাম বায়হাক্বী, ইমাম দারা কুতনী ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) আয়েশা (رضي الله عنه) কে বললেন, ‘হে হুমাইরা! তুমি আমার জন্য এরুপ করোনা, নিশ্চয় ইহা বারাছের উত্তারাধিকার। ইহা মিথ্যা ও নিকৃষ্ট নয় বরং জয়ীফ সনদের।” ৭২৭২,  ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ১১৯৮ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;

এখানেও ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) يَا حُمَيْرَاءُ ‘ইয়া হুমাইরা’ শব্দ থাকার পরেও হাদিসকে জয়ীফ বলেছেন, মওজু বলেননি। এ ব্যাপারে ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: نُقِلَ عَنِ الْإِمَامِ جَمَالِ الدِّينِ يُوسُفَ الْمُزَنِيِّ أَنَّهُ قَالَ: كُلُّ حَدِيثٍ فِيهِ يَا حُمَيْرَاءُ فَهُوَ مَوْضُوعٌ وَاللَّهُ تَعَالَى أَعْلَمُ هَذِهِ الْمَقَالَةُ لَا تَصِحُّ عَلَى عُمُومِهَا لِأَنَّ مُجَرَّدَ اشْتِمَالِ الْحَدِيثِ عَلَى " يَا حُمَيْرَاءُ " لَا يَدُلُّ عَلَى الْوَضْعِ، نَعَمْ إِنْ وُجِدَ مَعَهُ أَسْبَابٌ أُخَرُ تَدُلُّ عَلَى الْوَضْعِ يُحْكَمُ بِهِ وَإِلَّا فَلَا 
-“হাফিজ ইবনু হাজার ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ইমাম জামালুদ্দিন ইউসূফ মুজানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে নকল করেছেন, নিশ্চয় তিনি বলেছেন: প্রত্যেক ঐ হাদিস যার মধ্যে ইয়া হুমাইরা শব্দ রয়েছে ইহা মওজু, আল্লাহই সর্বোজ্ঞ। এই কথা আমভাবে বিশুদ্ধ নয়। কেননা এককভাবে ইয়া হুমাইরা শব্দ ব্যবহার করা হাদিস বানোয়াট হওয়ার দলিল নয়। হ্যাঁ যদি ইহার সাথে বানোয়াট হওয়ার অন্য কোন কারণ খুজে পাওয়া যায় তাহলে মওজু হওয়ার হুকুম দেওয়া হবে অন্যথায় নয়।” ৭৩৭৩,  ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩০০৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;



এখানে ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) স্পষ্ট করে বলেছেন, ইয়া হুমাইরা শব্দ থাকলেই হাদিস জাল বিষয়টি এরুপ নয়, বরং হাদিস হওয়ার জন্য অন্য কারণ থাকতে হবে। এবার একটি হাদিস লক্ষ্য করুন যেটার মধ্যে يَا حُمَيْرَاءُ ইয়া হুমাইরা শব্দ রয়েছে অথচ মুহাদ্দিছ হাদিসটিকে ছহীহ্ বলেছেন। ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) উল্লেখ করেছেন, হযরত তাঊস ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনা করেছেন, হাদিসের শেষে হাদিসটিকে ছহীহ্ বলা হয়েছে। যেমন,
عن طاوس: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لنسائه أيتكن التى تنبحها كلاب كذا وكذا أباك يا حميراء (نعيم بن حماد فى الفتن وسنده صحيح)
হাদিসটি উল্লেখ রয়েছে ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর ‘জামেউল আহাদিছ, গ্রন্থের হাদিস নং ৪৪২৭৭। এখানে স্পষ্ট করেই ইমাম ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎)/মুহাক্কিক يَا حُمَيْرَاءُ ইয়া হুমাইরা থাকার পরেও হাদিসটিকে ছহীহ্ বলেছেন।
মেসকাত শরীফের, হাদিস নং ৩০০৭-এ يَا حُمَيْرَاءُ ‘ইয়া হুমাইরা’ থাকার পরেও তাহকিক করতে গিয়ে লা-মাজহাবী আলবানী জয়ীফ বলেছে। 
ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর ‘জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ১৪৫২৮; ইহার মধ্যেও يَا حُمَيْرَاءُ ‘ইয়া হুমাইরা’ থাকার পরেও জয়ীফ বলা হয়েছে।
ইমাম নূরুদ্দিন হায়ছামী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) يَا حُمَيْرَاءُ ইয়া হুমাইরা থাকার পরেও হাদিসকে বাতিল বলেননি।  ৭৪৭৪,  ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৫১৯৭;



ইমাম শিহাবুদ্দিন বুয়ূছিরী কেনানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় ‘মিসবাহুস যুজাযা, গ্রন্থের ৩য় খন্ড, ৮১ পৃষ্টায় হাদিসের মধ্যে يَا حُمَيْرَاءُ ‘ইয়া হুমাইরা’ থাকার পরেও হাদিসটিকে জয়ীফ বলেছেন।
ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর ‘জামেউল আহাদিছ, গ্রন্থের  হাদিস নং ২৫৯০৬, ২৫৯০৭, সেখানে يَا حُمَيْرَاءُ ইয়া হুমাইরা শব্দ থাকার পরেও হাদিসটিকে জয়ীফ বলা হয়েছে, মওজু বলেনি।
অতএব, ঢালাওভাবে يَا حُمَيْرَاءُ ‘ইয়া হুমাইরা’ থাকলেই হাদিসটি জাল বিষয়টি এরুপ নয়। মুহাদ্দিছিনে কেরামগণ যাচাই বাছাই করেই হাদিস তিনাদের কিতাবে সংকলন করেন ও হাদিসের হুকুম বয়ান করেন। সুতরাং সার্বিক বিচারে হাদিসটির নূন্যতম স্তর হবে জয়ীফ। তবে এই হাদিসের সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي ثَابِتٍ الزُّهْرِيُّ، حَدَّثَنِي إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ ابْنُ أَخِي مُوسَى، عَنْ عَمِّهِ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ كُرَيْبٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْلَجَ الثَّنِيَّتَيْنِ إِذَا تَكَلَّمَ رُؤِيَ كَالنُّورِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ.
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, যখন আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) কথা বলতেন তখন তাঁর সামনের দুই দাঁতের ফাক দিয়ে নূর বের হয়ে যেত।” ৭৫৭৫,  সুনানে দারেমী শরীফ, ১ম খন্ড, ৫৮ পৃ:; ইমাম তিরমিজি: শামায়েলে মুহাম্মাদীয়া, হাদিস নং ১৪ পৃষ্টা নং ১৭; ইমাম বায়হাক্বী: দালায়েলুন্নবুয়াত ১ম খন্ড, ২১৫ পৃ:; ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, ৮ম খন্ড, ৪৯৭ পৃ:; তাবারানী তাঁর কবীর ও আওছাতে; ইমাম ছিয়তী: খাছায়েছুল কোবরা, ১ম খন্ড, ১০৬ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ২য় খন্ড, ১৯ পৃ:; তারিখুল খামিছ, ১ম খন্ড, ১০৬ পৃ:; ইমাম ইবনে হাজার মক্কী: আশরাফুল অছায়েল, ১ম খন্ড, ৬৬ পৃ:;


সুতরাং আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) চেহারা মুবারক থেকে নূর বের হত এবং সেই নূরের আলোতেই রাতের বেলায় আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) হারিয়ে যাওয়া সূই খুজে পেয়েছেন।
--------------------------------
Top