রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস, রমজান আমার উম্মতের মাস
ইমাম ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মদ ইবনে ফাদ্বল ইস্পাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৫৩৫ হিজরী বর্ণনা করেছেন,
أخبرنا عبد الواحد بن علي بن فهد ببغداد، ثنا أبو الفتح بن أبي الفوارس، ثنا عبد الله بن محمد بن جعفر، ثنا عبد الله بن محمد بن زكريا، ثنا يوسف بن إسحاق البابي وكان ثقة، ثنا محمد بن بشير البغدادي، ثنا قران بن تمام، عن يونس، عن الحسن، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: رجب شهر الله عز وجل وشعبان شهري، ورمضان شهر أمتي
-“হযরত হাছান বছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম ( ﷺ) বলেছেন: রজব মহান আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।” ৫৪৫৪, ইমাম ইসমাঈল ইস্পাহানী: আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, হাদিস নং ১৮৫৭;
ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন,
قُلْتُ أَمَّا صَدْرُ الْحَدِيثِ وَهُوَ قَوْلُهُ رَجَبُ شَهْرُ اللَّهِ وَشَعْبَانُ شَهْرِي وَرَمَضَانُ شَهْرُ أُمَّتِي فقد ذكره أَبُو الْفَتْح ابْن أَبِي الْفَوَارِسِ فِي أَمَالِيهِ عَنِ الْحَسَنِ مُرْسَلًا كَمَا ذَكَرَهُ السُّيُوطِيُّ فِي جَامِعِهِ الصَّغِيرِ
-“আমি (মোল্লা আলী ক্বারী) বলছি, হাদিসের প্রথম অংশটি অর্থাৎ ‘রজব মহান আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।’ ইহা বর্ণনা করেছেন ইমাম আবুল ফাতাহ ইবনু আবীল ফাওয়ারিছ ( رَحْمَةُ الله عليه) ‘আমালী’ গ্রন্থে। যেমনটা ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেছেন।”৫৫৫৫, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, ১ম খন্ড, ৪৬০ পৃ:;
আর ইমাম ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর ‘জামেউছ ছাগীর’ গ্রন্থে কোন মাওজু হাদিস উল্লেখ নেই। যেমনটা ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় কাশফুল খাফা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল ইবনে ছিলাহ ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ১১৮২ হিজরী উল্লেখ করেছেন,
(أبو الفتح بن أبي الفوارس في أماليه عن الحسن مرسلاً) قال الحافظ العراقي في شرح الترمذي: حديث ضعيف جداً،
-“ইমাম আবুল ফাতাহ ইবনু আবীল ফাওয়ারিছ ( رَحْمَةُ الله عليه) ‘আমালী’ গ্রন্থে হযরত হাছান বছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে মুরছালরূপে বর্ণনা করেছেন। হাফিজ ইরাকী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় শারহু তিরমিজি গ্রন্থে বলেছেন ইহা নিতান্ত দুর্বল সনদের হাদিস।” ৫৬৫৬, আত তানভীর শরহে জামেইছ ছাগীর, ৪৩৯৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম আব্দুর রউফ মানাভী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন,
أَبُو الْفَتْح بن أبي الفوارس فِي أَمَالِيهِ عَن الْحسن الْبَصْرِيّ مُرْسلا وَرَوَاهُ عَنهُ أَيْضا الْأَصْفَهَانِي فِي ترغيبه وَهُوَ شَدِيد الضعْف
-“ইমাম আবুল ফাতাহ ইবনু আবীল ফাওয়ারিছ ( رَحْمَةُ الله عليه) ‘আমালী’ গ্রন্থে হযরত হাছান বছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে মুরছালরূপে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ ইমাম আসবাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه) তার ‘তারগীব’ গ্রন্থে ইহা বর্ণনা করেছেন। আর ইহা খুবই দুর্বল সনদের হাদিস।” ৫৭৫৭, ইমাম মানাভী: আত তাইছির বি’শারহি জামেইছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ২৯ পৃ:;
আল্লামা দরবেশ হুত বলেছেন,
ضعيف ولم يصح في رجب حديث كما قاله ابن رجب وغيره
-“ইহা দুর্বল হাদিস, রজবের ব্যাপারে কোন হাদিস ছহীহ্ নেই যেমনটি বলেছেন ইমাম ইবনু রজব হাম্বলী ( رَحْمَةُ الله عليه) ও অন্যান্যরা।” ৫৮৫৮, আছানিল মাতালিব, হাদিস নং ৭০২;
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী, ইমাম মানাভী, আল্লামা মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল, আল্লামা দরবে হুত ( رَحْمَةُ الله عليه) প্রমূখের মতে এই হাদিসের সনদের মান ضعيف جداً । কিন্তু কওমীদের বড় আলেম জনাব জুনায়েদ বাবুনগরীর তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় লিখা ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ নামক বইয়ের চতুর্থ প্রকাশের ১০৪ পৃষ্টায় ইমাম ছিয়তীর নাম উল্লেখ করে মওজু বলে দিলেন!
এই হাদিসের সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়। ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه) বর্ণনা করেছেন,
وَأَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، حَدَّثَنَا خَلَفُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْكَرَابِيسِيُّ، بِبُخَارَى، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ نُصَيْرٍ، حَدَّثَنِي جَدِّي نُصَيْرُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ مُوسَى، عَنْ نُوحِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، عَنْ زَيْدٍ الْعَمِّيِّ، عَنْ يَزِيدَ الرَّقَاشِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خِيرَةُ اللهِ مِنَ الشُّهُورِ شَهْرُ رَجَبٍ وَهُوَ شَهْرُ اللهِ، مَنْ عَظَّمَ شَهْرَ اللهِ رَجَبٍ فَقَدْ عَظَّمَ أَمْرَ اللهِ، وَمَنْ عَظَّمَ أَمْرَ اللهِ أَدْخَلَهُ جَنَّاتِ النَّعِيمِ، وَأَوْجَبَ لَهُ رِضْوَانَهُ الْأَكْبَرَ، وَشَعْبَانُ شَهْرِي فَمَنْ عَظَّمَ شَهْرَ شَعْبَانَ فَقَدْ عَظَّمَ أَمْرِي، وَمَنْ عَظَّمَ أَمْرِي كُنْتُ لَهُ فَرَطًا وَذُخْرًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَشُهِرُ رَمَضَانَ شَهْرُ أُمَّتِي فَمَنْ عَظَّمَ شَهْرَ رَمَضَانَ، وَعَظَّمَ حُرْمَتُهُ وَلَمْ يَنْتَهِكْهُ، وَصَامَ نَهَارَهُ، وَقَامَ لَيْلَهُ، وَحَفِظَ جَوَارِحَهُ خَرَجَ مِنْ رَمَضَانَ وَلَيْسَ عَلَيْهِ ذَنْبٌ يَطْلُبُهُ اللهُ بِهِ. قَالَ الْإِمَامُ أَحْمَدُ: هَذَا إِسْنَادٌ مُنْكَرٌ بِمَرَّةٍ،
-“হযরত আনাস ইবনু মালেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: মাস সমূহের মধ্যে রজব মাস আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম মাস। যে ব্যক্তি আল্লাহর মাস রজবকে সম্মান করবে সে যেন আল্লাহর নির্দেশকে সম্মান করল আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশকে সম্মান করল আল্লাহ তাকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন এবং তার জন্যে সবচেয়ে বড় রেদ্বওয়ান আবশ্যক করবেন। শাবান আমার মাস, যে ব্যক্তি আমার মাস শাবানকে সম্মান করবে সে যেন আমার নির্দেশকে সম্মান করল, আর যে ব্যক্তি আমার নির্দেশকে সম্মান করবে আমি তার জন্যে কেয়ামতের দিন সবচেয়ে অধিক বান্ধব হব। রমজান আমার উম্মতের মাস, যে ব্যক্তি রমজানকে সম্মান করবে, ইহার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোকেও সম্মান করবে ও ইহার ব্যাপারে কোন অসম্মান করবেনা, যে ব্যক্তি ইহার দিনের বেলায় রোজা রাখবে ও রাতে নামাজ আদায় করবে ও আশেপাশের বিষয় গুলোকে সংরক্ষণ করবে, এই অবস্থায় রজমাস মাস থেকে বের হবে তার যেন কোন গোনাহ থাকল না, এই অবস্থায় আল্লাহ তাকে উঠাবেন। ইমাম আহমদ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: ইহার সনদ মুনকার।” ৫৯৫৯, ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ৩৫৩২; ইমাম বায়হাক্বী: ফাদ্বাইলুল আওকাত, হাদিস নং ১০; ইমাম ছিয়তী: তাফছিরে দুর্রে মানছুর, ৪র্থ খন্ড, ১৮৬ পৃ:; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৫২১৭;
এই হাদিসের মধ্যেও পূর্বের হাদিসের মাআনা প্রমাণিত হল। পূর্বের হাদিসটি জয়ীফ এবং এই হাদিসটি মুনকার। সর্বোপরি বিষয়টি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। শারিহে মুসলীম ইমাম শারফুদ্দিন নববী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন-
قد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف فى فضائل الاعمال:مقدمة المؤلف
-“উলামায়ে কেরাম এই বিষয়ে সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছেন দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।” ৬০৬০ . ইমাম নববী: আরবাঈন: ১/২০ পৃ. এবং ইমাম ইবনে দাকিকুল ঈদ, শরহে আরবাঈনুন নববিয়্যাহ, ১/২০ পৃ.
সুতরাং হাদিসটি দুর্বল সনদের হলেও সর্বসম্মতিক্রমে ফাদ্বায়েলের বেলায় গ্রহণযোগ্য। হযরত হাছান বছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর মুরছাল ক্বাবী হয়না তবে ইমাম যুরকানী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: وَمَرَاسِيلُهُ ضَعِيفَةٌ -“হাছান বছরীর মুরছাল গুলো দুর্বল পর্যায়ের।”৬১৬১, ইমাম যুরকানী: শারহু মুয়াত্তা, ৩য় খন্ড, ২৩২ পৃ:;
সামগ্রীকভাবে ‘মুরছাল’ সনদ প্রসঙ্গে আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رَحْمَةُ الله عليه) একটি হাদিসের সনদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন-
وَقَالَ أَبُو دَاوُدُ: هَذَا مُرْسَلٌ: أَيْ: نَوْعٌ مُرْسَلٌ وَهُوَ الْمُنْقَطِعُ لَكِنَّ الْمُرْسَلَ حُجَّةٌ عِنْدَنَا وَعِنْدَ الْجُمْهُورِ
-“ইমাম আবু দাউদ বলেন সনদটি মুরছাল, আর মুরছাল হলো মুনকাতে‘ঈ এর প্রকার। তবে জমহুর মুহাদ্দিছীনে কেরামের নিকট মুরছাল হুজ্জাত বা দলিলের উপযুক্ত।” ৬২৬২, মিরকাতুল মাফাতিহ, ১/৩৬৮ পৃ. হা/৩২৩, কিতাবুত ত্বহারাত;
শারিহে বুখারী আল্লামা আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী ( رَحْمَةُ الله عليه) লিখেন-
وقال النسائي: إنه مرسل، أقول: إن المرسل حجة عند الجمهور
-“ইমাম নাসাঈ (رَحْمَةُ الله عليه) বলেন, এ হাদিসটি মুরছাল, আমি বলি, তবে জমহুর মুহাদ্দিছীনে কেরামের নিকট মুরছাল হুজ্জাত বা দলিলের উপযুক্ত।” ৬৩৬৩, আরফুয মাযী, ১/৪৩৭ পৃ.;
অতএব, উসূল মোতাবেক ফাদ্বায়েলের বিষয় বিধায় হাদিসটি গ্রহণযোগ্য।