মৃত ব্যক্তির নিকট কোরআন পাঠ করা
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ قَالَ: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ شَقِيقٍ، عَنِ ابْنِ الْمُبَارَكِ، عَنْ سُلَيْمَانَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، وَلَيْسَ بِالنَّهْدِيِّ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اقْرَءُوهَا عِنْدَ مَوْتَاكُمْ، يَعْنِي يس
-“হযরত মাকিল ইবনে ইয়াসার (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: তোমরা তোমাদের মৃত লোকদের কাছে সূরা ইয়াছিন তেলাওয়াত কর।”৬২৬২, সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, ১০৫ পৃ: হাদিস নং ১৪৪৮; সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং ২১৩১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২০৩০১; খলিল আহমদ: বজলুল মাজহুদ, ১৪ তম জি: ৫৮ পৃ:; আল্লামা নিমাভী: আছারুছ ছুনান, ৩২৩ পৃ:; ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০৮৪৬;
এই হাদিসের সনদের মান ছহীহ্।
এই হাদিসের সনদে أَبِي عُثْمَانَ ‘আবী উছমান’ নামক একজন রাবী রয়েছে, যার সম্পর্কে লা-মাজহাবীরা বলেন যে, তিনি مَجْهُولٌ বা অপরিচিত রাবী। কিন্তু তাদের এ দাবী সঠিক নয়। কারণ হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনু হাজার আস্কালানী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন:
اسمه سعد. وقال أبو داود: هو أبو عثمان السَّلِّي. -“তার নাম হচ্ছে সাদ। ইমাম আবু দাউদ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন, তিনি হলেন আবু উছমান আস সাল্লী।” وذكره ابن حبان في الثقات. -“ইমাম ইবনে হিব্বান ( رَحْمَةُ الله عليه) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” ৬৩৬৩, বিস্তারিত দেখুন: হাফিজ ইবনে কাছির: তাকমিল ফি জারহে ওয়া তা’দিল, রাবী নং ২২১৮; হাফিজ ইবনু হাজার: তাহজিবুত তাহজিব, ৮ম খন্ড, ২৮৪ পৃ:; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৫০৬; খলিল আহমদ: বজলুল মাজহুদ, ১৪তম জি: ৫৯ পৃ:;
হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه) এই রাবীকে مقبول গ্রহণযোগ্য বলেছেন। ৬৪৬৪, ইমাম আসকালানী: তাকরিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮২৪০;
দেখুন! যাকে ইমাম আবু দাউদ ( رَحْمَةُ الله عليه) চিনেন, ইমাম ইবনে হিব্বান ( رَحْمَةُ الله عليه) তাঁকে চিনেন ও বিশ্বস্ত বলেছেন। হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানী ( رَحْمَةُ الله عليه) তার নাম উল্লেখ করেছেন ও মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য বলেছেন। অথচ লা-মাজহাবীরা বলে দিলেন তাকে আমরা চিনিনা!! তাই লা-মাজহাবীদের প্রপাগন্ডা আর মিথ্যাচার শুনে নিজেদের আমল নষ্ট করার কোন ইস্যু নেই। বিষয়টি বুঝার সুবিধার্থে আরো দুইটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করছি:-
وَأَخْرَجَ ابْنُ أَبِي الدُّنْيَا وَالدَّيْلَمِيُّ أَخْبَرَنَا مَرْوَانَ بْنِ سَالِمٍ عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عُمَرَ وَعَنْ شُرَيْحٍ عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا مِنْ مَيِّتٍ يُقْرَأُ عِنْدَ رَأْسِهِ سُورَةُ يس إِلَّا هَوَّنَ اللَّهُ عَلَيْهِ
-“হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আল্লাহর নবী ( ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তির মাথার নিকটে সূরা ইয়াছিন পাঠ করা হয় যেন তার জন্য আল্লাহর আযাব সহজ হয়।” ৬৫৬৫, কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, ১৩৬৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম ইবনে আবী দুনিয়া, দায়লামী শরীফ; খলিল আহমদ: বজলুল মাজহুদ, ১৪তম জি: ৫৯ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৬২২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
وَأخرج أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ وَابْن ماجة وَمُحَمّد بن نصر وَابْن حبَان وَالطَّبَرَانِيّ وَالْحَاكِم وَالْبَيْهَقِيّ فِي شعب الإِيمان أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى، قَالَ: حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَن معقل بن يسَار أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: أَيْضًا يس قَلْبُ الْقُرْآنِ، لَا يَقْرَؤُهَا عَبْدٌ يُرِيدُ الدَّارَ الْآخِرَةَ إِلَّا غَفَرَ اللَّهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ فَاقْرَءُوهَا عَلَى مَوْتَاكُمْ
-“হযরত মাকিল ইবনু ইয়াসার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেছেন, সূরা ইয়াছিন কুরআনের ক্বাল্ব, আখেরাতের ধারপ্রান্তে এসে বান্দার কাছে ইহা পাঠ করা হয় একমাত্র আল্লাহর ক্ষমা লাভের আশায়, যেন তার পূর্বের সকল গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তোমরা মৃত ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াছিন পাঠ করো।” ৬৬৬৬, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২০৩০০; ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০৮৪৭; ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৫১১; হাফিজ ইবনে কাছির: জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান, হাদিস নং ১০০৮৫; ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১০৮১৬; তাফছিরে দুর্রে মানছুর, ৭ম খন্ড, ৩৭ পৃ: সূরা ইয়াছিনের শুরুতে; শাওকানী: তাফছিরে ফাতহুল কাদীর, ৪র্থ খন্ড, ৪১১ পৃ:; খলিল আহমদ: বজলুল মাজহুদ ফি হল্লে আবী দাউদ, ১৪তম জি: ৫৯ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৬২২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, হাদিস নং ১৩৬৯; ইমাম মারুজী: মুখতাছারু কিয়ামু লাইলী ওয়া কিয়ামু রমাদ্বান, ১ম খন্ড, ১৬৮ পৃ:;
হাদিসটি হযরত মাকিল ইবনু ইয়াসার (رضي الله عنه) থেকে দুটি সূত্রে বর্ণিত ও হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণিত রয়েছে। তাই উসূল মোতাবেক হাদিসটি অবশ্যই একটি আরেকটিকে শক্তি যোগিয়ে শক্তিশালী হবে।
-----------------------------