হরিণীর ঘটনা
হরিণীর ঘটনাটি একাধিক সাহাবী থেকে একাধিক সূত্রে বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে। যেমন এ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল,
প্রথম সূত্র: হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ التُّسْتَرِيُّ، وَالْحُسَيْنُ بْنُ مُهَّانَ، قَالَا: ثنا زَكَرِيَّا بْنُ يَحْيَى، ثنا حِبَّانُ بْنُ أَغْلَبَ بْنِ تَمِيمٍ الْمَسْعُودِيُّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانٍ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ ضَبَّةَ بْنِ مِحْصَنٍ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الصَّحْرَاءِ فَإِذَا مُنَادٍ يُنَادِيهِ يَا رَسُولَ اللهِ فَالْتَفَتَ، فَلَمْ يَرَ أَحَدًا، ثُمَّ الْتَفَتَ فَإِذَا ظَبْيَةٌ مُوَثَّقَةٌ، فَقَالَتْ: ادْنُ مِنِّي يَا رَسُولَ اللهِ فَدَنَا مِنْهَا، فَقَالَ: حَاجَتَكِ؟ قَالَتْ: إِنَّ لِي خَشَفَيْنِ فِي ذَلِكَ الْجَبَلِ فَحُلَّنِي حَتَّى أَذْهَبَ، فَأُرْضِعَهُمَا، ثُمَّ أَرْجِعُ إِلَيْكَ، قَالَ: وَتَفْعَلِينَ؟، قَالَتْ: عَذَّبَنِي اللهُ بِعَذَابِ الْعِشَارِ إِنْ لَمْ أَفْعَلْ، فَأَطْلَقَهَا فَذَهَبَتْ، فَأَرْضَعَتْ خَشَفَيْهَا، ثُمَّ رَجَعَتْ، فَأَوْثَقَهَا وَانْتَبَهَ الْأَعْرَابِيُّ، فَقَالَ: لَكَ حَاجَةٌ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: نَعَمْ تُطْلِقُ هَذِهِ، فَأَطْلَقَهَا فَخَرَجَتْ تَعْدُو، وَهِيَ تَقُولُ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّكَ رَسُولُ اللهِ
-“হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একবার আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) মরুভূমি এলাকায় যান। সেখানে তিনি শুনতে পেলেন, কে যেন বলছে ইয়া রাসূলাল্লাহ! ফলে তিনি পিছনে ফিরলেন কিন্তু কেউ নেই। পুনরায় তাকিয়ে একটি হরিণীকে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেলেন। হরিণী বলছিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার নিকট আসুন। রাসূল ( ﷺ‎‎) তার কাছে গেলেন ও জিজ্ঞাসা করলেন, কি প্রয়োজন? হরিণী বলল, পাহাড়ের পাদদেশে আমার দুটি দুগ্ধপোষ্য বাচ্চা রয়েছে। আপনি আমাকে বন্ধন মুক্ত করেদিন, আমি বাচ্চাদ্বয়কে দুধ পান করিয়ে আসব। প্রিয় রাসূল ( ﷺ‎‎) বললেন, তুমি দুধ পান করিয়ে আসবে? সে বলল, হ্যাঁ। যদি ফিরে না আস তাহলে? জবাবে হরিণী বলল, আল্লাহ পাক যেন দশ মাসের গর্ভবর্তী উটনীর মত শাস্তি দেন। হুজুর ( ﷺ‎‎) হরিণীকে ছেড়ে দিলেন। হরিণী আচ্চাদেরকে দুধ পান করিয়ে ফিরে আসল। তখন জিব্রাইল (عليه السلام) এসে হাজির হলেন ও আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে সালাম বলেছেন এবং ইরশাদ করেছেন, আমার সত্ত্বা ও ইজ্জতের কসম! আমি আপনার উম্মতের জন্য তার চেয়ে অধিক অনুগ্রহশীল, যেমন এই হরিণী তার বাচ্চাদের সাথে অনুগ্রহ দেখিয়েছে। আমি তাদেরকে আপনার দিকে ফিরেিয় দিব, যেমনি হরিণী আপনার দিকে ফিরে এসেছে।” ১৯১৯,  ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৭৬৩; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ১০১ পৃ:; ইমাম কাজী আয়্যাজ: শিফা শরীফ, ১ম খন্ড, ৬০২ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: শারহু শিফা, ১ম খন্ড, ৬৪১ পৃ:; ইমাম যুরকানী: শারহু মাওয়াহিব, ৬ষ্ঠ, ৫৫৮ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৯ম খন্ড, ৫১৯ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ২য় খন্ড, ১৭৯ পৃ:; ইমাম ইবনু কাছির: মুযিযাতুর রাসূল দ:, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃ:;


এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম নূরুদ্দিন হাইছামী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَفِيهِ أَغْلَبُ بْنُ تَمِيمٍ وَهُوَ ضَعِيفٌ.
-“ইমাম তাবারানী ইহা বর্ণনা করেছেন, ইহার সনদে ‘আগলাব ইবনু তামীম’ রয়েছে সে দ্বায়িফ রাবী।”  ২০২০,  ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৪০৮৮;


হাফিজুল হাদিস, ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এই হাদিস উল্লেখ করে বলেছেন,
فِي إِسْنَاده أغلب بن تَمِيم ضَعِيف لَكِن للْحَدِيث طرق كَثِيرَة تشهد بِأَن للقصة أصلا
-“এই সনদের মাঝে ‘আগলাব ইবনু তমীম’ রয়েছে সে দ্বায়িফ রাবী কিন্তু ইহার সাক্ষ্য হিসেবে অনেকগুলো সূত্র রয়েছে, যার দ্বারা ইহার ভিত্তি প্রমাণিত হয়।” ২১২১,  ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ১০১ পৃ:;

এই বর্ণনাকারী أَغْلَبُ بْنُ تَمِيمٍ ‘আগলাব ইবনু তামিম’ সম্পর্কে ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) منكر الحديث. বলেছেন।  ২২২২,  ইমাম যাহাবী: দিওয়ানুদ দোয়াফা, রাবী নং ৪৮৯;


ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ضَعِيف বলেছেন।২৩২৩,  ইমাম নাসাঈ: আদ দোয়াফা ওয়াল মাতরুক্বীন, রাবী নং ৬১;


  ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, لَيْسَ بِشَيْءٍ. সে কিছু নয়।” ২৪২৪,  ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ২২;


 ইমামগণের কেই এই রাবীকে মিথ্যাবাদী বলেননি। অতএব, এই রাবীর বর্ণিত রেওয়ায়েত মওজু বা ভিত্তিহীন হবেনা বরং নূন্যতম দ্বায়িফ হবে।

দ্বিতীয় সূত্র: হযরত আনাস ইবনু মালেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, 
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي شَيْبَةَ قَالَ: ثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ مَيْمُونٍ قَالَ: ثَنَا عَبْدُ الْكَرِيمِ بْنُ هِلَالٍ الْجُعْفِيُّ، عَنْ صَالِحٍ الْمُرِيُّ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَوْمٍ قَدْ صَادُوا ظَبْيَةً، فَشَدُّوهَا إِلَى عَمُودِ الْفُسْطَاطِ، فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي وَضَعْتُ وَلِي خَشَفَانِ، فَاسْتَأْذِنْ لِي أَنْ أُرْضِعَهُمَا، ثُمَّ أَعُودَ إِلَيْهِمْ، فَقَالَ: أَيْنَ صَاحِبُ هَذِهِ؟ فَقَالَ الْقَوْمُ: نَحْنُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَلُّوا عَنْهَا حَتَّى تَأْتِيَ خَشَفَيْهَا تُرْضِعْهُمَا، وَتَأْتِي إِلَيْكُمْ . قَالُوا: وَمَنْ لَنَا بِذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: أَنَا. فَأَطْلَقُوهَا فَذَهَبَتْ، فَأَرْضَعَتْ، ثُمَّ رَجَعَتْ إِلَيْهِمْ، فَأَوْثَقُوهَا، فَمَرَّ بِهِمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أَيْنَ أَصْحَابُ هَذِهِ؟ قَالُوا: هُوَ ذَا نَحْنُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: تَبِيعونَهَا؟ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ هِيَ لَكَ، فَخَلُّوا عَنْهَا، فَأَطْلَقَهَا فَذَهَبَتْ
 -“হযরত আনাস ইবনু মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) একটি গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন আর গোত্রের লোকেরা একটি হরিণীকে তাবুর খুটির সাথে বেঁধে রেখেছিল। এমন সময় হরিণী বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বাঁধা অবস্থায় রয়েছি অথচ আমার দুইটি বাচ্চা রয়েছে। আমাকে অনুমতি দেন আমি যেন তাদেরকে দুধ পান করিয়ে আসতে পারি। রাসূল ( ﷺ‎‎) ঐ কওমকে বললেন, তোমরা তাকে ছেড়ে দাও, সে তার বাচ্চাদের দুধ পান করাবে তারপর তোমাদের কাছে ফিরে আসবে। তারা বলল, আমাদের নিকট জামিনদার হবে কে? প্রিয় রাসূল ( ﷺ‎‎) বললেন, আমি। অত:পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হল তারপর কিছুক্ষন পরে দুধ পান করিয়ে ফিরে আসার পর তাকে বাঁধা হল। প্রিয় রাসূল ( ﷺ‎‎) বললেন, তোমরা হরিণের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছ? তারা বলল, এটা আপনার জন্য। অত:পর প্রিয় রাসূল ( ﷺ‎‎) বললেন, তোমরা তাকে ছেড়ে দাও। অত:পর তারা হরিণীকে ছেড়ে দিল ও সে তার গন্তব্য স্থানে চলে গেল।” ২৫২৫,  ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ৫৫৪৭; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ১০১ পৃ:; ইমাম আবু নুয়াইম: দালাইলুন নবুয়াত, হাদিস নং ২৭৪; ইমাম যুরকানী: শারহু মাওয়াহিব, ৬ষ্ঠ, ৫৫৮ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৯ম খন্ড, ৫১৯ পৃ:; ইমাম ইবনু কাছির: মুযিযাতুর রাসূল দ:, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃ:;


এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম নূরুদ্দিন হাইছামী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَفِيهِ صَالِحٌ الْمُرِّيُّ وَهُوَ ضَعِيفٌ.
-“ইমাম তাবারানী ইহা বর্ণনা করেছেন, ইহার সনদে ‘ছালেহ মুররী’ রয়েছে সে দ্বায়িফ রাবী।”  ২৬২৬,  ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৪০৮৭;


এই হাদিসের বর্ণনাকারী صَالِحٌ المُرِّيُّ এর সম্পূর্ণ নাম হল صَالِحٌ المُرِّيُّ أَبُو بِشْرٍ بنُ بَشِيْرٍ القَاصُّ ছালেহ আল মুর্রি আবু বিশর ইবনু বাশির আল কাছ। ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে  বলেছেন। ২৭২৭,  ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ৮ম খন্ড, ৪৬ পৃ: রাবী নং ৯;


 ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ضَعِيْفٌ বলেছেন।২৮২৮,  ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ৮ম খন্ড, ৪৬ পৃ: রাবী নং ৯;


  ইমাম ইবনু মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) থেকে অন্যত্র আছে ليس به بأس -“তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”  ২৯২৯,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৬৫১;


ইমাম আবু দাউদ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, لاَ يُكْتَبُ حَدِيْثُهُ -“আমি তার বর্ণিত হাদিস লিখিনা।”৩০৩০,  ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ৮ম খন্ড, ৪৬ পৃ: রাবী নং ৯;


  ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ضَعِيْفٌ বলেছেন।”৩১৩১,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৬৫১;


  এছাড়া ইমাম উকাইলী, ইমাম দারা কুতনী, ইমাম আবু আব্দিল্লাহ হাকেম, ইমাম বারাকী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ضَعِيْفٌ বলেছেন। ৩২৩২,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৪৩৫;


 ইমাম আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, তিনি একজন الزاهد দুনিয়া বিমুখ লোক ছিলেন। ইমামদের কেউ তাকে মিথ্যাবাদী বলেননি। তাই নূন্যতম এই রাবীর বর্ণিত হাদিসের মান দ্বায়িফ হবে।

তৃতীয় সূত্র: হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
أَنْبَأَنِي أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، إِجَازَةً، أَخْبَرَنَا أَبُو جَعْفَرٍ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ دُحَيْمٍ الشَّيْبَانِيُّ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَازِمِ بْنِ أَبِي غَرْزَةَ الْغِفَارِيُّ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ قَادِمٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الْعَلَاءِ خَالِدُ بْنُ طَهْمَانَ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: مَرَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِظَبْيَةٍ مَرْبُوطَةٍ إِلَى خِبَاءٍ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، حُلَّنِي حَتَّى أَذْهَبَ فَأُرْضِعَ خِشْفِي، ثُمَّ أَرْجِعَ فَتَرْبِطَنِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صَيْدُ قَوْمٍ وَرَبِيطَةُ قَوْمٍ، قَالَ: فَأَخَذَ عَلَيْهَا فَحَلَفَتْ لَهُ، فَحَلَّهَا، فَمَا مَكَثَتْ إِلَّا قَلِيلًا حَتَّى جَاءَتْ وَقَدْ نَفَضَتْ مَا فِي ضَرْعِهَا فَرَبَطَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ أَتَى خِبَاءَ أَصْحَابِهَا فَاسْتَوْهَبَهَا مِنْهُمْ فَوَهَبُوهَا لَهُ، فَحَلَّهَا 
-“হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল ( ﷺ‎‎) এক হরিণীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, হরিণীটি তাবুতে বাধা ছিল। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার বাঁধন খুলে দিন, আমি বাচ্চাদেরকে দুধ পান করিয়ে চলে আসব। রাসূল ( ﷺ‎‎) বললেন, তুমি একদল লোকের নিকট বাঁধা ও শিকার। তাই তোমাকে ফির আসার ওয়াা করতে হবে। হরিণী কসম খেয়ে ওয়াদা করলে রাসূল ( ﷺ‎‎) তাকে ছেড়ে দিলেন। সে চলে গেল ও কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসল। তখন তার স্তন খালি ছিল। তিনি তাকে বেঁধে দিলেন। এরপর দলের লোকজন এলে রাসূল ( ﷺ‎‎) তাদেরকে বললেন, এই হরিণীটি আমাকে দিয়ে দাও। তারা দিয়ে দিলে রাসূল ( ﷺ‎‎) তার বাঁধন খুলে দিয়ে তাকে মুক্ত করে দিলেন।” ৩৩৩৩,  ইমাম বায়হাক্বী: দালাইলুন নবুয়াত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৪ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ১০১ পৃ:; ইমাম যুরকানী: শারহু মাওয়াহিব, ৬ষ্ঠ, ৫৫৮ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৯ম খন্ড, ৫১৯ পৃ:; ইমাম ইবনু কাছির: মুযিযাতুর রাসূল দ:, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃ:; আল্লামা নূরুদ্দিন আলী হালাভী: সিরাতে হালাভিয়া, ৩য় খন্ড, ৩৯৯ পৃ:;


এই হাদিসটি উল্লেখ করে ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
وَرُوِيَ مِنْ وَجْهٍ آخَرَ ضَعِيفٍ -“ইহার আরেকটি দুর্বল সূত্র বর্ণিত রয়েছে।”  ৩৪৩৪, ইমাম বায়হাক্বী: দালাইলুন নবুয়াত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৪ পৃ:;

এই হাদিসের বর্ণনাকারী عطية بن سعد العوفي ‘আতিয়া ইবনু সাদ কূফী’ সম্পর্কে ইমাম আবু হাতিম, ইমাম নাসাঈ, ইমাম আবু যুরাআ, ইমাম আহমদ, ইমাম হুশাইম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে ضعيف বলেছেন।  ৩৫৩৫,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৯৫৬;

ইমাম ইবনু মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে صالح বলেছেন।  ৩৬৩৬,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৯৫৬;


ইমামদের কেউ তাকে মিথ্যাবাদী বলেননি। তাই নূন্যতম এই রাবীর বর্ণিত হাদিসের মান দ্বায়িফ হবে। ইহার আরেকজন রাবী হল أَبُو الْعَلَاءِ خَالِدُ بْنُ طَهْمَانَ তাকে ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ثقة ছিক্বাহ বলেছেন। ৩৭৩৭,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এতেদাল, রাবী নং ২৪৩৩;


 ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে স্মৃতি দুর্বল হওয়ার পূর্বে ثقة বলেছেন। ৩৮৩৮,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এতেদাল, রাবী নং ২৪৩৩;


 ইমাম আবু হাতিম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে সত্যবাদী বলেছেন। ৩৮৩৯,  ইমাম যাহাবী: মিযানুল এতেদাল, রাবী নং ২৪৩৩;


 সামগ্রীক বিচারে হাদিসটির নূন্যতম স্তর দ্বায়িফ হবে।

চতুর্থ সূত্র: হযরত জায়েদ ইবনু আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْحَسَنِ الْقَاضِي، أَنْبَأَنَا أَبُو عَلِيٍّ حَامِدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْهَرَوِيُّ، حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا أَبُو حَفْصٍ عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا يَعْلَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْغَزَّالُ، حَدَّثَنَا الْهَيْثَمُ بْنُ حَمَّادٍ، عَنْ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ سِكَكِ الْمَدِينَةِ، فَمَرَرْنَا بِخِبَاءِ أَعْرَابِيٍّ فَإِذَا ظَبْيَةٌ مَشْدُودَةٌ إِلَى الْخِبَاءِ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ هَذَا الْأَعْرَابِيَّ اصْطَادَنِي وَلِي خِشْفَانِ فِي الْبَرِيَّةِ، وَقَدْ تَعَقَّدَ اللَّبَنُ فِي أَخْلَافِي، فَلَا هُوَ يَذْبَحَنِي فَأَسْتَرِيحُ، وَلَا يَدَعَنِي فَأَرْجِعُ إِلَى خِشْفَيَّ فِي الْبَرِيَّةِ، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنْ تَرَكْتُكِ تَرْجِعِينَ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، وَإِلَّا عَذَّبَنِي اللهُ عَذَابَ الْعَشَّارِ، فَأَطْلَقَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمْ تَلْبَثْ أَنْ جَاءَتْ تَلَمَّظُ، فَشَدَّهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْخِبَاءِ، وَأَقْبَلَ الْأَعْرَابِيُّ وَمَعَهُ قِرْبَةٌ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَبِيعُنِيهَا؟ قَالَ: هِيَ لَكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَأَطْلَقَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ زَيْدُ بْنُ أَرْقَمَ: فَأَنَا وَاللهِ رَأَيْتُهَا تَسِيحُ فِي الْبَرِيَّةِ، وَتَقُولُ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ
-“হযরত জায়েত ইবনু আরকাম (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী করিম ( ﷺ‎‎)’র সাথে ছিলাম। মদিনার গলি পথে জনৈক বেদুইনের তাবুতে পৌছে একটি হরিণীকে বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। হরিণী বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই বেদুঈন আমাকে শিকার করেছে অথচ জংগলে আমার দুটি বাচ্চা ক্ষুধার তাড়নায় কস্ট করছে। আর স্তনে দুধ জমে যাওয়ায় আমিও নিদারুন কস্ট অনুভব করছি। বেদুঈন আমাকে যবাই করে ফেললেও আমি এই কস্ট থেকে রেহাই পেতাম কিংবা আমাকে ছেড়ে দিলে আমি বাচ্চাদের কাছে চলে যেতাম কিন্তু শিকারী কিছুই করছেনা। প্রিয় রাসূল ( ﷺ‎‎) হরিণীকে জিজ্ঞাস করলেন, যদি তোমাকে ছেড়ে দেই তাহলে তুমি ফিরে আসবে? সে বলল, হ্যাঁ আমি ফিরে আসব। প্রিয় রাসূল ( ﷺ‎‎) হরিণীকে ছেড়ে দিলেন ও কিছুক্ষণ পরে হরিণী চাটতে চাটতে ফিরে এলেন। রাসূল ( ﷺ‎‎) তাকে বেঁধে দিলেন। ইতিমধ্যে বেদুঈন এসে গেল। তার সাথে ছিল একটি পানির মশক। প্রিয় রাসূল ( ﷺ‎‎) বললেন, তুমি হরিণীটি বিক্রি করবে? সে বলল, হরিণীটি আপনারই। সে মতে রাসূল ( ﷺ‎‎) তাকে মুক্ত করে দিলেন। হযরত জায়েদ ইবনু আরকাম (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি দেখলাম সে জংগলে তাসবীহ্ পাঠ করছে এবং বলছে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।” ৪০৪০,  ইমাম বায়হাক্বী: দালাইলুন নবুয়াত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৪ পৃ:; ইমাম আবু নুয়াইম: দালাইলুন নবুয়াত, হাদিস নং ২৭৩; ইমাম ইবনু কাছির: মুযিযাতুর রাসূল দ:, ১ম খন্ড, ১৬৭ পৃ:; ইমাম যুরকানী: শারহু মাওয়াহিব, ৬ষ্ঠ, ৫৫৯ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৯ম খন্ড, ৫১৯ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ১০২ পৃ:; আল্লামা নূরুদ্দিন আলী হালাভী: সিরাতে হালাভিয়া, ৩য় খন্ড, ৩৯৯ পৃ:;


পঞ্চম সূত্র: হযরত ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
ইমাম তক্বী উদ্দিন মুকরিজি ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৮৪৫ হিজরী তীয় কিতাবে আরেকটি সূত্রের কথা এভাবে বর্ণনা করেছেন,
وروى ابن شاهين من حديث يحيى بن حبيب بن عديّ قال: حدثنا حماد بن زيد عن منصور بن طاووس عن أبيه عن سعيد بن جبير عن ابن عباس رضي اللَّه عنه قال: مرّ رسول اللَّه صلّى اللَّه عليه وسلّم ذات يوم في بعض شأنه،ৃ
-“ইমাম ইবনু শাহিন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ইবনে আাদীর সূত্রে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।... ৪১৪১,  ইমাম তক্বী উদ্দিন মুকরিজি: ইমতাউল আসমা’ ৫ম খন্ড, ২৪১ পৃ:;

ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এভাবে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন,
وفي حلية الأولياء لأبي نعيم أن رجلاً مر بالنبي صلى الله عليه وسلم ومعه ظبي قد اصطاده فأنطلق الله سبحانه الذي لأنطق كل شيء الظبي فقالت يارسول الله أن لي أولادناً وأنا أرضعهم وأنهم الآن جياع فأمر هذا أن يخليني حتى أذهب فأرضع أولادي وأعود قال فإن لم تعودي قالت إن لم أعد فلعنني الله كمن تذكر بين يديه فلا يصل عليك، أو كنت كمن صلى ولو يدع فقال النبي صلى الله عليه وسلم أطلقها وأنا ضامنها فذهبت الظبية ثم عادت فنزل جبريل عليه السلام وقال يا محمد الله يقرئك السلاة ويقول لك وعزتي وجلالي (لق) أنا أرحم بامتك من هذه الظبية بأولادها وأنا أردهم إليك كما رجعت الظبية إليك صلى الله عليه وسلم
-“ইমাম আবু নুয়াইম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎)’র হিলিয়া গ্রন্থে রয়েছে, একব্যক্তি হরিণ শিকার করে হুজুর পাক ( ﷺ‎‎)’র পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আল্লাহ পাক হরিণীকে কথা বলার শক্তি দান করেন। হরিণী আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ছোট ছোট দুদ্ধপায়ী বাচ্চা রয়েছে। তারা এখন ক্ষুধার্থ। অতএব, আপনি শিকারীকে বলুন, সে যেন আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি বাচ্চা দুটিকে দুধ পান করিয়ে ফিরে আসব। নবীয়ে রহমত ( ﷺ‎‎) বললেন, যদি তুমি ফিরে না আস? হরিণী বলল, যদি আমি ফিরে না আসলে তখন আমার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। যেমন ঐ ব্যক্তি উপর অভিসাপ যার সামনে আপনার জিকির করা হল, অথচ আর সে আপনার উপর দুরুদ পাঠ করলনা। অথবা ঐ ব্যক্তির উপর অভিসাপের মত যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করল কিন্তু দোয়া করলনা। অত:পর রাসূল ( ﷺ‎‎) ঐ শিকারীকে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। আমি তার যিম্মাদার হলাম। সে হরিণীকে ছেড়ে দিল। হরিণী দুধ পান করিয়ে ফিরে আসল। তখন জিব্রাইল (عليه السلام) হাজির হলেন ও আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে সালাম বলেছে! এবং আপনার জন্য বলেছেন, আমার সত্ত¡ার ও ইজ্জতের কসম! আমি (আল্লাহ) আপনার উম্মতের জন্য তার চেয়েও অধিক অনুগ্রহশীল যেমন হরিণী তার বাচ্চাদের সাথে অনুগ্রহ দেখিয়েছে। আমি তাদেরকে আপনার দিকে ফিরিয়ে দিব যেমন হরিণী আপনার দিকে ফিরে এসেছে। ৪২৪২,  ইমাম ছাখাবী: কাওলুল বাদী, ১ম খন্ড, ১৫৩ পৃ:;


এই হাদিস সম্পর্কে ইমামদের অভিমত
হাফিজুল হাদিস, ইমাম আব্দুর রহমান জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এই হাদিস উল্লেখ করে বলেছেন,
فِي إِسْنَاده أغلب بن تَمِيم ضَعِيف لَكِن للْحَدِيث طرق كَثِيرَة تشهد بِأَن للقصة أصلا
-“এই সনদের মাঝে আগলাব ইবনু তমীম রয়েছে সে দ্বায়িফ রাবী কিন্তু ইহার সাক্ষ্য হিসেবে অনেকগুলো সূত্র রয়েছে, যার দ্বারা ইহার ভিত্তি প্রমাণিত হয়।”  ৪৩৪৩,  ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ১০১ পৃ:;

এই হাদিস গুলো সম্পর্কে শারিহে বুখারী, ইমাম শিহাবুদ্দিন কাস্তালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় কিতাবে বলেছেন,
ومن ذلك: حديث الغزالة. روى حديثها البيهقى من طرق، وضعفه جماعة من الأئمة، لكن طرقه يقوى بعضها بعضا.
-“হরিণীর হাদিস সম্পর্কে। ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তিনার সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন। ইমামদের এক জামাত ইহাকে দুর্বল বলেছেন, কিন্তু ইহার একটিকে আরেকটি শক্তি যোগিয়েছে।”  ৪৪৪৪,  ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ২য় খন্ড, ১৭৯ পৃ:;


বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, ইমাম আব্দুল বাক্বী যুরকানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এই হাদিস সম্পর্কে তদীয় কিতাবে বলেছেন,
وضعَّفه جماعة من الأئمة حفاظ الحديث ونقاده، لكن له طرق يقوي بعضها بعضًا؛ لأن الطرق إذا تعددت وتباينت مخارجها، دلَّ ذلك على أن للحديث أصلًا، فيكون حسنًا لغيره لا لذاته،
-“ইমামদের হাফিজ ও নাক্বিদগণের এক জামাত ইহাকে দুর্বল বলেছেন, কিন্তু ইহার একটিকে আরেকটি শক্তি যোগিয়েছে। কেননা একটি সূত্র আরেকটি সূত্রের সাথে একত্রিত হয়ে ইহার ভিত্তির দলিল সাব্যস্ত হয় এবং হাছান লি’গাইরিহীর স্তরে পৌছে, তবে হাছান লি’জাতিহীর স্তরে নয়।” ৪৫৪৫,  ইমাম যুরকানী: শারহু মাওয়াহিব, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫৫৭ পৃ:;


হরিণী ঘটনার এই হাদিস গুলো সম্পর্কে প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ, ইমাম ইবনে ছালেহী শামী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় কিতাবে বলেছেন,
قال القطب الحضرميّ في خصائصه: هذا الحديث ضعّفه بعض الحفّاظ لكن طرقه يتقوى بعضها ببعض، انتهى.
وقال الشيخ: لهذا الحديث طرق كثيرة تشهد أن للقصّة أصلا، انتهى.
-“আল্লামা কুতুবুল হাদ্বরামী তিনার খাছাইছ গ্রন্থে বলেছেন: এই হাদিসকে কোন কোন হাফিজ দুর্বল বলেছেন, কিন্তু ইহার একাধিক সূত্রগুলো একটি আরেকটিকে শক্তি যোগিয়েছে। শায়েখ বলেছেন: সাক্ষ্য হিসেবে এই হাদিসের অনেক গুলো সূত্র রয়েছে, যার দ্বারা ইহার ভিত্তি প্রমাণিত হয়।” ৪৬৪৬,  ইমাম ইবনে ছালেহী শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৯ম খন্ড, ৫২০ পৃ:;



এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন,
وَأَمَّا تَسْلِيمُ الْغَزَالَةِ فَلَمْ نَجِدْ لَهُ إِسْنَادًا لَا مِنْ وَجْهٍ قَوِيٍّ وَلَا مِنْ وَجْهٍ ضَعِيفٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ
-“আর হরিণীর সালামের ঘটনা আমি কোথাও ইহার সনদ খুজে পাইনি। কোন শক্তিশালী সনদেও পাইনি, দুর্বল সনদেও পাইনি। আল্লাহই সর্বোজ্ঞ।” ৪৭৪৭,  ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫৯২ পৃ:;



কিন্তু পরবর্তীতে ইমাম আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। যেমন ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
قَالَ ابْنُ كَثِيرٍ وَلَيْسَ لَهُ أَصْلٌ وَمَنْ نَسَبَهَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ كَذَبَ ذَكَرَهُ ابْنُ الدَّيْبَعِ وَذَكَرَ الْقَسْطَلَّانِيُّ مَقُولَ ابْنِ كَثِيرٍ ثُمَّ قَالَ لَكِنَّهُ وَرَدَ فِي الْجُمْلَةِ فِي عدَّة أَحَادِيث يتقوى بَعْضهَا بِبَعْض أَوْرَدَهُ شَيْخُ الْإِسْلَامِ الْعَسْقَلَانِيُّ وَذَكَرَ ابْنُ السُّبْكِيِّ أَنَّ تَسْلِيمَ الْغَزَالَةِ رَوَاهُ الْحَافِظُ أَبُو نُعَيْمٍ الْأَصْفَهَانِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ
قُلْتُ وَكَذَا رَوَاهُ الدَّارَقُطْنِيُّ وَالْحَاكِمُ وَشَيْخُهُ ابْنُ عَدِيٍّ كَمَا ذَكَرَهُ الدَّمِيرِيُّ فِي حَيَاةِ الْحَيَوَانِ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ
-“ইমাম ইবনু কাছির বলেছেন: ইহার কোন ভিত্তি নেই, যে ব্যক্তি ইহাকে রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎)’র দিকে নিসবত করবে সে মিথ্যা বলল। ইহা ইমাম ইবনু দাবে’ ও ইমাম কাস্তালানী উল্লেখ করেছেন। অত:পর ইমাম কাস্তালানী বলেছেন: ইহা অনেক গুলো হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, যার একটিকে আরেকটি শক্তি যোগিয়েছে। ইহা উল্লেখ করেছেন শাইখুল ইসলাম ইমাম আসকালানী এবং ইবনু সুবকী উল্লেখ করেছেন যে, হরিণীর সালামের হাদিস ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী ও ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) দালাইলের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। আমি (মোল্লা আলী ক্বারী) বলি: অনুরূপ ইমাম দারা কুতনী, ইমাম হাকেম ও তিনার শায়ে ইমাম ইবনে আদী বর্ণনা করেছেন। যেমনটা ইমাম দামেরী তদীয় হায়াতুল হাইওয়ান গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।” ৪৮৪৮,  ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ১৩৭;



এখানে ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটি একাধিক ভিত্তির কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসের একাধিক সনদ থাকায় মূল্যায়ন করেছেন ও শক্তিশালী বলেছেন। ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) অন্যত্র আরো বলেছেন। যেমন,
وضعفه جماعة من الأئمة حتى قال ابن كثير لا أصل له وأن من نسبه إلى النبي صلى الله تعالى عليه وسلم فقد كذب لكن طرقه يقوي بعضها بعضا
-“ইমামদের এক জামাত ইহাকে দুর্বল বলেছেন, এমনকি ইমাম ইবনু কাছির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) (প্রাথমিকভাবে) বলেছেন: ইহার কোন ভিত্তি নেই। যে ব্যক্তি ইহাকে রাসূল ( ﷺ‎‎)’র দিকে নিসবত করবে সে মিথ্যা বলল। কিন্তু ইহার একটিকে আরেকটি শক্তি যোগিয়েছে।” ৪৯৪৯,  ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: শারহু শিফা, ১ম খন্ড, ৬৪২ পৃ:;



এখানে ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ইমাম ইবনু কাছির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এই মততে রদ বা খন্ডন করে প্রমাণ করেছেন এই হাদিস ভিত্তিহীন নয় বরং ইহার একাধিক সূত্র রয়েছে।
হাফিজুল হাদিস ইমাম শামছুদ্দিন ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন,
وليس له كما قاله ابن كثير أصل، ومن نسبه إلى النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فقد كذب، ولكن قد ورد الكلام في الجملة في عدة أحاديث يتقوى بعضها ببعض،
-“ইমাম ইবনু কাছির বলেছেন: ইহার কোন ভিত্তি নেই, যে ব্যক্তি ইহাকে রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎)’র দিকে নিসবত করবে মিথ্যা বলল। কিন্তু ইহা বহু সংখ্যক হাদিসের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, যার একটিকে আরেকটি শক্তি যোগিয়েছে।” ৫০৫০,  ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, হাদিস নং ৩৩২;


এখানেও ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ইমাম ইবনু কাছির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর বক্তব্যকে রদ বা খন্ডন করেছেন।
ইমাম আজলুনী (رضي الله عنه) এই হাদিস সম্পর্কে বলেছেন,
وليس له كما قال ابن كثير أصل، ومن نسبه إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقد كذب، وقال في المقاصد لكن قد ورد في عدة أحاديث يتقوى بعضها ببعض
-“ইমাম ইবনু কাছির বলেছেন: ইহার কোন ভিত্তি নেই, যে ব্যক্তি ইহাকে রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎)’র দিকে নিসবত করবে মিথ্যা বলল। মাকাসিদ গ্রন্থে ইমাম ছাখাবী বলেছেন: ইহা বহু সংখ্যক হাদিসের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, যার একটিকে আরেকটি শক্তি যোগিয়েছে।” ৫১৫১,  ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ১ম খন্ড, ৩০৬ পৃ: ৯৮৯ নং হাদিস;


এখানেও ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর বাণী দ্বারা ইমাম ইবনু কাছির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর বক্তব্যকে রদ বা খন্ডন করেছেন।
প্রাথমিকভাবে ইমাম ইবনু কাছির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটিকে ভিত্তিহীন বললেও পরবর্তীতে তিনি ইহার ভিত্তি স্বীকার করেছেন। যেমন তিনি নিজের কিতাবেই বলেছেন,
حَدِيثُ الْغَزَالَةِ قَالَ الْحَافِظُ أَبُو نُعَيْمٍ الْأَصْبَهَانِيُّ رَحِمَهُ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ: ৃقُلْتُ: وَفِي بَعْضِهِ نَكَارَةٌ وَاللَّهُ أَعْلَمُ،
-“হরিণীর হাদিস: হাফিজ আবু নুয়াইম ইস্পাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার কিতাব দালাইলুন নবুয়াত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।... আমি (ইবনু কাছির) বলি: ইহার কোন কোন রেওয়ায়েতে ত্রæটি রয়েছে।” ৫২৫২,  ইমাম ইবনু কাছির: মুযিযাতুর রাসূল দ:, ১ম খন্ড, ১৬৫ পৃ:;


এখানে ইমাম ইবনু কাছির হাদিসটি ভিত্তি রয়েছে স্বীকার করেছেন তবে সনদের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যত্র তিনি আরো লিখেছেন,
وتسليم الغزالة، وإفراد الإقامة، وإفراد الحج، وترك البسملة آحادا.
-“হরিণীর সালামের ঘটনা, একবার একামতের হাদিস, ইফরাদ হজ্বের হাদিস, বিসমিল্লাহ পরিত্যাগের হাদিস এগুলো আহাদ সূত্রে প্রমাণিত।”৫৩৫৩,  ইমাম ইবনু কাছির: তুহফাতুত তালিব বি’মারিফাতি আহাদিছি মুখতাছারি ইবনে হাজিব, ১ম খন্ড, ১৫০ পৃ:;
 
এখানেও ইমাম ইবনু কাছির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটির ভিত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। অতএব, এই হাদিস পাঁচজন সাহাবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে বর্ণিত রয়েছে। মুহাদ্দেছিনে কেরাম এই হাদিসকে শাওয়াহিদ থাকায় ক্বাবী বা শক্তিশালী বলেছেন। তাই এই হাদিসকে জাল বা ভিত্তিহীন বলার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু কওমীদের বড় আলেম জনাব জুনায়েদ বাবুনগরীর তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় লিখা ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ নামক বইয়ের চতুর্থ প্রকাশের ১৮৪ পৃষ্টায় লিখেছেন,
“উপরোক্ত ঘটনাটি মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী এবং মুহাদ্দিস সাখাবী উল্লেখ করেছেন এবং এ ঘটনা ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।” ইমামগণের নামে কি জগন্য জালিয়াতী দেখুন!! পরে আবার ঘা ঢাকা দেয়ার চেস্টা করেছেন।
Top