নেক বান্দাদের পাশে কবর দেওয়ার ফজিলত

ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৪৩০ হিজরী ও আল্লামা ছদরুদ্দিন আবু তাহের আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইস্পাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৫৭৬ হিজরী তদীয় স্ব স্ব কিতাবে সনদসহ এভাবে বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ مَحْمُودٍ، ثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عِمْرَانَ بْنِ الْجُنَيْدِ، ثَنَا أَبُو أَحْمَدَ شُعَيْبُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْهَمْدَانِيُّ، ثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عِيسَى، ثَنَا مَالِكٌ، عَنْ عَمِّهِ أَبِي سُهَيْلِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ادْفِنُوا مَوْتَاكُمْ وَسَطَ قَوْمٍ صَالِحِينَ فَإِنَّ الْمَيِّتَ يَتَأَذَّى بِجَارِ السُّوءِ كَمَا يَتَأَذَّى الْحَيُّ بِجَارِ السُّوءِ
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন: তোমরা মৃতদেরকে নেককার মানুষের মাঝে দাফন কর, কারণ জিবীত মানুষ যেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়, মৃত মানুষও তেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়।”  ৬৭৬৭,  ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৫৪ পৃ:; মুজামুস সফর, হাদিস নং ৬৫; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ৯৯২; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ১২৭৬; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৫০৮; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৪২৩৭১; আল্লামা ছানআনী: আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৩১৭; আদ দুরারুল মুনতাশিরা ফি আহাদিসিল মুশতাহিরা, হাদিস নং ৬৫; ইমাম ছিয়তী: আল লাআলী মাসনূয়া, ২য় খন্ড, ৩৬৪ পৃ:; ইমাম ইবনে জাওযী: কিতাবুল মাওজুয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৩৭ পৃ:; তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৩য় খন্ড, ৪২৮ পৃ:; ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, হাদিস নং ৪৭; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১৬৯; 

উল্লেখিত রেওয়ায়েত সম্পর্কে ইমাম ইবনে জাওযী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: هَذَا حَدِيث لَا يَصح. এই হাদিস ছহীহ্ নয়। কারণ এর সনদে سُلَيْمَان بْن عِيسَى (সুলাইমান ইবনে ঈসা) নামক বিতর্কীত রাবী রয়েছে। এই হাদিসটি ‘সুলাইমান ইবনে ঈসা’ ব্যতীত ভিন্ন সূত্রেও অন্য একজন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইমাম ইবনু আসাকির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনা করেছেন,
أخبرني أبي أبو طاهر أنبأنا أبو حاتم عبد الرحمن بن علي بن يحيى الرواس الخطيب النسوي نا أبو العباس أحمد بن الحسين بن نبهان الصفار النسوي نا أبو الحسن مظفر بن الحسن بن المهند نا أحمد بن عمير بن جوصا بدمشق نا أبو عامر موسى بن عامر نا الوليد بن مسلم نا شيبان أبو معاوية عن شقيق بن سلمة عن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ادفنوا موتاكم وسط قوم صالحين فإن الميت يتأذى بجاره كما يتأذى الحي بجار السوء
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম ( ﷺ‎‎) বলেছেন: তোমরা মৃতদেরকে নেককার মানুষের মাঝে দাফন কর, কারণ জিবীত মানুষ যেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়, মৃত মানুষও তেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়।”  ৬৮৬৮,  তারিখে ইবনে আসাকির, রাবী নং ৭৪৭৩ এর ব্যাখ্যায়;



এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
وَأخرج أَيْضا عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَن النَّبِي قَالَ: إِذَا مَاتَ لأَحَدِكُمُ الْمَيِّتُ فَأَحْسِنُوا كَفَنَهُ وَعَجِّلُوا إِنْجَازَ وَصِيَّتِهِ وَأَعْمِقُوا.. قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَهَلْ يَنْفَعُ الْجَارُ الصَّالِحُ فِي الْآخِرَة قَالَ هَل يَنْفَعُ فِي الدُّنْيَا قَالُوا نَعَمْ قَالَ كَذَلِكَ يَنْفَعُ فِي الآخِرَةِ.
-“অনুরূপভাবে ইমাম মালেনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ‘মু’তালিফু ওয়াল মুখতালিফু’ গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) নবী করিম ( ﷺ‎‎) থেকে বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবীজি ( ﷺ‎‎) বলেছেন: যখন তোমাদের কেউ মারা যায় তখন তাকে উত্তমভাবে কাফন পরাও, দ্রæত জানাযা পড় ও অছিয়ত পূর্ণ করবে,.. লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মৃত ব্যক্তিরা কি আখেরাতে নেক বান্দাগণের দ্বারা উপকৃত হবে ? রাসূল ( ﷺ‎‎) বললেন: নেক বান্দা দ্বারা কি দুনিয়াতে উপকৃত হওয়া যায় ? লোকেরা বলল: হ্যাঁ। প্রিয় নবীজি ( ﷺ‎‎) বললেন: অনুরূপভাবে আখেরাতেও উপকৃত হবে।” ৬৯৬৯,  ইমাম ছিয়তী: আল লাআলী মাসনূয়া, ২য় খন্ড, ৩৬৫ পৃ:; আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর, ১ম খন্ড, ২২৯ পৃ:; ইমাম আজলুনী:  কাশফুল খাফা, ১৬৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;

 
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখযোগ্য, ইমাম ইবনু আসাকির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনা করেছেন,
أخبرنا أبو عبد الله محمد بن المفضل بن سيار الدهان بهراة أنا أبو سهل نجيب بن ميمون بن سهل بن علي الواسطي نا أبو علي منصور بن عبد الله بن خالد بن أحمد بن حماد الذهلي أنا أبو جعفر محمد بن محمد بن عبد الله بن حمزة بن جميل البغدادي ح قال وحدثني أبو يعلى عبد المؤمن بن خلف بن زيد بن طفيل النسفي قالا نا يحيى بن عثمان صالح نا أبو صالح كاتب الليث حدثني أبو يحيى سليمان بن عيسى بن نجيح السجزي عن سفيان بن سعيد الثوري عن عبد الله بن محمد بن عقيل عن محمد بن علي بن الحنفية عن علي بن أبي طالب قال أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن ندفن موتانا وسط قوم صالحين وقال إن الموتى يتأذون بجيران السوء كما يتأذى الأحياء
-“হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যে, আমাদের মৃতদের যেন নেক বান্দাদের মাঝে দাফন করি। কারণ জিবীত মানুষ যেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়, মৃত মানুষও তেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়।”৭০৭০,  তারিখে ইবনে আসাকির, ৩৭তম খন্ড, ১৩৭ পৃ: ৭৪৫১ নং রাবীর ব্যাখ্যায়;


  এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখযোগ্য, ইমাম দায়লামী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনা করেছেন,
وَقَالَ الديلمي أَنْبَأنَا وَالِدي أَنْبَأنَا أَبُو الْحَسَن عَلِيّ بْن مُحَمَّد بْن أَحْمَد الميداني الحَافِظ حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّد الْحَسَن بْن عَلِيّ الْجَوْهَرِي أَنْبَأَنَا أَبُو حَفْص عُمَر ابْن مُحَمَّد بْن عَلِيّ بْن يَحْيَى الزَّيَّات حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّد عَامر بْن سيار بحلب حَدَّثَنَا عَبْد القدوس بْن حبيب الكلَاعِي عَنِ ابْن طَاوس عَن أَبِيهِ عَنِ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ الله: أَحْسِنُوا الْكَفَنَ وَلا تُؤْذُوا مَوْتَاكُمْ بِعَوِيلٍ وَلا تَأْخِيرِ وَصِيَّةٍ.. وَاعْدِلُوا بِهِ عَنْ جِيرَانِ السُّوءِ.
-“হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন: তোমরা মৃতদেরকে উত্তমরূপে কাফন পরাও, আর মৃতদেরকে অছিয়াত দেড়ীতে আদায়ে কষ্ট দিওনা।.. (কবরস্থানে) মন্দ প্রতিবেশীদের ব্যাপারে ন্যায় বিচার কর।”  ৭১৭১,  ইমাম ছিয়তী: আল লাআলী মাসনূয়া, ২য় খন্ড, ৩৬৫ পৃ:;

অতএব, সুলাইমান ইবনে ঈসা এর রেওয়ায়েত অন্যান্য রেওয়ায়েত দ্বারা শক্তিশালী হয়েছে, কারণ এর একাধিক শাওয়াহিদ বা সাক্ষ্য রয়েছে। এ ব্যাপারে ইমামগণের অভিমত গুলো লক্ষ্য করুন। হাফিজুল হাদিস, ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন:-
قُلْتُ لَهُ شَوَاهِد أخرج الْمَالِينِي فِي المؤتلف والمختلف عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ الله أَنْ نَدْفِنَ مَوْتَانَا وَسَطَ قَوْمٍ صَالِحَيْنَ فَإِنَّ الْمَوْتَى يَتَأَذَّوْنَ بِجَارِ السُّوءِ كَمَا يَتَأَذَّى بِهِ الأَحْيَاءُ 
-“আমি (ছিয়তী) বলি: এর শাহিদ বা সাক্ষ্য রয়েছে, আল্লামা মালেনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ‘মু’তালিফু ওয়াল মুখতালিফু’ গ্রন্থে হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যে, আমাদের মৃতদের যেন নেক বান্দাদের মাঝে দাফন করি। কারণ জিবীত মানুষ যেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়, মৃত মানুষও তেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়।”  ৭২৭২,  ইমাম ছিয়তী: আল লাআলী মাসনূয়া, ২য় খন্ড, ৩৬৫ পৃ:;

ইমাম ইসমাঈল আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর অভিমত লক্ষ্য করুন,
ومما يشهد له ما أخرجه ابن عساكر عن علي أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن ندفن موتانا وسط قوم صالحين فإن الموتى يتأذون بالجار السوء كما يتأذى به الأحياء،
-“এ বিষয়টির সাক্ষ্য রয়েছে যা ইবনে আসাকির ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যে, আমাদের মৃতদের যেন নেক বান্দাদের মাঝে দাফন করি। কারণ জিবীত মানুষ যেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়, মৃত মানুষও তেমন খারাপ মানুষ দ্বারা কষ্ট পায়।”  ৭৩৭৩,  ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১৬৯;

তাজকিরাতুল মাওজুয়াত কিতাকের মুছান্নিফ আল্লামা মুহাম্মদ তাহের ইবনে আলী ফাতনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: قلت لَهُ شَاهد وَالله أعلم.  
-“আমি বলি: এর শাহিদ বা সাক্ষ্য রয়েছে। আল্লাহই সর্বোজ্ঞ।”  ৭৪৭৪,  তাজকিরাতুল মাওজুয়াত, ১ম খন্ড, ২১৮ পৃ:;

শাওয়াহিদ থাকার কারণে হাদিসটি ক্বাবী বা শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্য ও আমলযোগ্য তথা হাছান লি’গাইরিহী হবে। সুতরাং নেক বান্দাগণের কবর বা মাজারের পাশে কবর দিলে আলাদা মর্তবা রয়েছে, যা উল্লেখিত হাদিস গুলো দ্বারা প্রমাণিত হয়। ইমামগণ হাদিসটিকে শাওয়াহিদ থাকায় গ্রহণ করেছেন ও শক্তিশালী সাব্যস্ত করেছেন কিন্তু কওমীদের বড় আলেম জনাব জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবের তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় লিখিত ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ বইয়ের চতুর্থ প্রকাশের ১৯৮ পৃষ্টায় বলে দিলেন- “তবে মুহাদ্দিস সাখাবী, আজলুনী, ইবনে আররাক ও ইবনে জাওযী প্রমূখ মুহাদ্দিসগণ একে মওজু তথা বানোয়াট বলে অভিহিত করেছেন।”  অথচ মুহাদ্দিসগণের চূড়ান্ত ফায়সালা ইহা নয়। দেখুন কওমীর আলেমরা ইমামদের নামে কি মিথ্যাচারিতা করে!
------------------------------
Top