বছরে ৪টি রাতে ইবাদত করলে জান্নাত আবশ্যক

আল্লামা আবুল হাফছ শিহাবুদ্দিন কুরেশি ছাহরুরাদী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৬৩২ হিজরী, ইমাম ইবনে মুকাদা মাকদেছী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৬২০ হিজরী, ইমাম আবুল ফাতাহ নাছর ইবনে ইব্রাহিম মাকদেছী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৪৯০ হিজরী স্ব স্ব কিতাবে বর্ণনা করেন,
حَدَّثَنَا أَبُو الْقَاسِمِ، أَخْبَرَنَا أَبُو سَعْدٍ الْكَنْجَرُوذِيُّ، أَخْبَرَنَا أَبُو سَعِيدٍ مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ الْبَصْرِيُّ، أَخْبَرَنَا أَبُو لَبِيدٍ مُحَمَّدُ بْنُ إِدْرِيسَ، أَخْبَرَنَا سُوَيْدُ بْنُ سعيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحِيمِ بْنُ زَيْدٍ الْعَمِّيُّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَهْبِ بْنِ مُنَبِّهٍ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جبلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَحْيَا اللَّيَالِيَ الأَرْبَعَ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ: لَيْلَةَ التَّرْوِيَةِ، وَلَيْلَةَ عَرَفَةَ، وَلَيْلَةَ النَّحْرِ، وَلَيْلَةَ الْفِطْرِ
-“হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম ( ﷺ‎‎) বলেছেন: যে ব্যক্তি চারটি রাত্রে ইবাদতের মাধ্যমে জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে। সে গুলো হল, তারবিহার রাত, আরাফার রাত, কুরবানীর রাত ও ঈদুল ফিতরের রাত।”  ৯৯৯৯,  মাশিখাতু ছাহরুরাদী, হাদিস নং ৪৩, ১ম খন্ড, ১৯৯ পৃ:; ইবনে কুদামা: ফাদ্বলু ইওয়ামা তারবিয়্যা ওয়া আরাফাহ, হাদিস নং ১৫; ইমাম ইব্রাহিম মাকদেছী: মাজলিছু মিন আমালি, হাদিস নং ৩; ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৪৩ খন্ড, ৯৩ পৃ: ৪৯৮৭ নং রাবীর ব্যাখ্যায়; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ১১২৭৭; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ১২০৭৬; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ৪৫৩৬৭; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ১২১৩৭;

এই হাদিসের সনদে ‘আব্দুর রাহিম ইবনে জাইদ ইবনে হাওয়ারী আম্মীউ’ নামক রাবী নয়েছে যাকে ইমাম আবু দাউদ, নাসাঈ, আবু হাতিম, বুখারী, ইবনে শাহিন, আবুল কাশেম বলখী, ইবনে ছামআনী, ছাজী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) প্রমূখ তাকে غير ثقة বা দুর্বল বলেছেন।  ১২০০১২০০,,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩২৮৩;

ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে لَيْسَ بِشَيْءٍ তথা দুর্বল দিয়েছেন।  ১১,  ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩২৮৩; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৪০৬; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ২১১;

অতএব সার্বিক বিচারে হাদিসখানা দ্বায়িফ পর্যায়ের হবে কিন্তু মাওজু হবেনা। কারণ এর সনদের রাবী ‘আব্দুর রাহিম’ এর ব্যাপারে ইমামরা সবাই দ্বায়িফ বলেছেন কিন্তু মিথ্যাবাদী বলেননি। আল্লামা মানাভী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: واسناده ضَعِيف -“এর সনদ দ্বায়িফ ।”  ২২,  আল্লামা মানাভী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ৩৯০ পৃ:;


আল্লামা ছানআনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: 
وقال ابن حجر في تخريج أحاديث الأذكار: حديث غريب -“ইমাম ইবনে হাজার ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ‘তাখরিজে আহাদিছিল আজকার’ কিতাবে বলেন: হাদিসটি গরীব।”  ৩৩,  আল্লামা ছানআনী: আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৮৩২৩;


রজব ও শাবানে বরকত দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌছে দাও
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الرَّازِيُّ قَالَ: نا عَبْدُ السَّلَامِ بْنُ عُمَرَ الْجِنِّيُّ قَالَ: نا زَائِدَةُ بْنُ أَبِي الرُّقَادِ قَالَ: نا زِيَادٌ النُّمَيْرِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ قَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
-“হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) বলেন, যখন রজব মাস প্রবেশ করত তখন আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বলতেন: ওগো আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান কর এবং রমজান মাস পর্যন্ত পৌছে দাও।”  ৪৪,  ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ৩৯৩৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৩৪৬; ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬৯ পৃ:; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ৩৫৩৪; ইমাম তাবারানী: আদ দোয়া, হাদিস নং ৯১১; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ৬৪৯৬; ইমাম ইবনে সুন্নী: আমালু ইয়াওমি ওয়া লাইলাতি, হাদিস নং ৬৫৯; ইমাম বায়হাক্বী: দাওয়াতুল কবীর, হাদিস নং ৫২৯; ইমাম বায়হাক্বী: ফাদ্বাইলে আওকাত, হাদিস নং ১৪; মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ১৩৬৯;

এই হাদিসের সনদে (زَائِدَةُ بْنُ أَبِي الرُّقَادِ) জায়েদা ইবনে আবী রুক্বাদ নামক রাবী রয়েছে। তার ব্যাপারে একদল ইমাম সমালোচনা করেছেন তবে তারা কেউ তাকে মিথ্যাবাদী বলেননি। আরেকদল ইমাম তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন নিচে লক্ষ্য করুন:- 
ইমাম ইবনে শাহিন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: زَائِدَة بن أبي الرقاد لَيْسَ بِهِ بَأْس 
-“জায়েদা ইবনে আবী রুক্বাদের ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই।”  ৫৫,  ইমাম ইবনে শাহিন: তারিখু আসমা ওয়া সিক্বাত, রাবী নং ৪০৩;

قال القواريري: لم يكن به بأس -“ইমাম কাওয়ারিরী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: তার ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই।”  ৬৬,  ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯৪৯; ইমাম ইবনে আবী হাতেম: জারাহ ওয়া তাদিল, রাবী নং ২৭৭৮;

وقال البزار لا بأس به -“ইমাম বাজ্জার ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: তার বিষয়ে অসুবিধা নেই।”  ৭৭,  ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৫৭০;

وقال ابن عدي: له أحاديث حسان، -“ইমাম ইবনে আদী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: তার হাদিস গুলো হাছান বা উত্তম।  ৮৮,  ” ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৬৩০;


তাই সামগ্রীক বিচারে এই হাদিসটিকে মাঝামাঝি স্বরে তথা হাছান বলা যায়। কেননা উক্ত রাবী সম্পর্কে ইমামদের দুই ধরণের বক্তব্য রয়েছে। অতএব, মাঝামাঝি হিসেবে এই হাদিস হাছান।
Top