মা-বাবার চেহারার দিকে তাকালে হজ্বের সওয়াব
أَخْبَرَنَا أَبُو مَنْصُورٍ أَحْمَدُ بْنُ عَلِيٍّ الدَّامِغَانِيُّ، وَأَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْبَيْهَقِيُّ قَالَا: نا أَبُو بَكْرٍ الْإِسْمَاعِيلِيُّ، نا أَبُو جَعْفَرٍ أَحْمَدُ بْنُ الْحُسَيْنِ الْحَذَّاءُ، نا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ، نا زَافِرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، نا الْمُسْتَسْلِمُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنِ الْحَكَمِ بْنِ أَبَانَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَتَبَ اللهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةً مَبْرُورَةً ، قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: যখন কোন সন্তান তার পিতা-মাতার প্রতি নেক নজরে তাকায়, তখন আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে মক্ববুল হজ্বের সওয়াব দান করেন। সাহাবীগণ বললেন: যদি সে দৈনিক ১০০ বার দৃষ্টিপাত করেন? প্রিয় নবীজি ( ﷺ) বলেছেন: হ্যাঁ আল্লাহ অতি পবিত্র।” 59৫৯, ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬৭১ পৃ: হাদিস নং ৭৪৭২; মেসকাত শরীফ, ৪৯৪৪ নং হাদিস; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৯ম খন্ড, ১৫৯ পৃ:; ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ৮৬৪৬; ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ১১৬০৮;
এই হাদিসের সনদে ‘হাকাম ইবনে আবান’ নামক একজন রাবী রয়েছে, তার ব্যাপারে ইমাম হায়ছামী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَفِيهِ الْحَكَمُ بْنُ أَبَانٍ، وَثَّقَهُ النَّسَائِيُّ وَجَمَاعَةٌ، وَضَعَّفَهُ ابْنُ الْمُبَارَكِ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ رِجَالُ الصَّحِيحِ.
-“ইমাম তাবারানী ইহা বর্ণনা করেছেন, এর মধ্যে ‘হাকাম ইবনে আবান’ রয়েছে। ইমাম নাসাঈ ও একদল তাকে বিশ্বস্ত বলেছে এবং ইবনে মুবারক তাকে দ্বায়িফ বলেছেন। বাকী সকল রাবী বিশুদ্ধ।” 60৬০, ইমাম হায়ছামী মাজমাউয জাওয়াইদ, হাদিস নং ১১০৫১;
অন্যত্র ইমাম হায়ছামী এই রাবী সম্পর্কে বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ الْحَكَمِ بْنِ أَبَانَ وَهُوَ ثِقَةٌ
-“ইমাম তাবারানী ইহা বর্ণনা করেছেন, এর সকল রাবীগণ বিশুদ্ধ তবে ‘হাকাম ইবনে আবান’ ব্যতীত, আর তিনিও বিশ্বস্ত।” 61৬১, ইমাম হায়ছামী: মাজমাউয জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৩৯২৭;
এই রাবী সম্পর্কে ইমাম মিযযী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেন,
قال إسحاق بْن منصور، عَن يحيى بْن مَعِين: ثقة. وكذلك قال النَّسَائي. وَقَال أَبُو زُرْعَة: صالح. وَقَال أَحْمَد بْن عَبد اللَّهِ العجلي: ثقة صاحب سنة.
-“ইসহাক্ব ইবনে মানছুর বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: সে বিশ্বস্ত। অনুরূপ ইমাম নাসাঈ বলেছেন। আবু যুরাআ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: সে নেক বান্দাহ। ইমাম আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইজলী বলেন: বিশ্বস্ত ও ছাহেবে সুন্নাহ।” 62৬২, ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৪২২;
অতএব, এই হাদিস নির্ভরযোগ্য কারণ বর্ণনাকারী الْحَكَمِ بْنِ أَبَانَ ‘হাকাম ইবনে আবান’ নির্ভরযোগ্য রাবী। وثَّقه ابن معين، والنسائي.
-“ইমাম ইবনে মাঈন ও ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।”63৬৩, ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৪র্থ খন্ড, ৩৮ পৃ:;
وَقَال أَبُو زُرْعَة: صالح. -“ইমাম আবু যুরাআ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: সে গ্রহণযোগ্য।” 64৬৪, ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৪২২;
وَقَال أَحْمَد بْن عَبد اللَّهِ العجلي: ثقة صاحب سنة. -“ইমাম আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইজলী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: সে বিশ্বস্ত ও ছাহেবে সুন্নাহ।” 65৬৫, ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৪২২;
وذكره بن حبان في الثقات -“ইমাম ইবনে হিব্বান ( رَحْمَةُ الله عليه) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” 66৬৬, ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৭৩৬;
وحكى بن خلفون توثيقه عن بن نمير وابن المديني وأحمد بن حنبل
-“ইমাম ইবনে খালিফুন ( رَحْمَةُ الله عليه) তার বিশ্বস্ততার কথা বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে নামির ( رَحْمَةُ الله عليه), ইবনে ইবনে মাদিনী ( رَحْمَةُ الله عليه) ও ইমাম আহমদ ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে।” 67৬৭, ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৭৩৬;
অতএব, ‘হাকাম ইবনে আবান’ এর রেওয়ায়েত ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য হবে। হাদিসটি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে ইকরিমা ও হাকাম ইবনে আবান ব্যতীত অন্য একটি সূত্রেও বর্ণিত আছে। যেমন:-
أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ فِي التَّارِيخِ، أنا مُحَمَّدُ بْنُ حَامِدٍ، حَدَّثَنِي مَكِّيُّ بنُ عَبْدَانَ، نا الْحَسَنُ بْنُ هَارُونَ، نا مَنْصُورُ بْنُ جَعْفَرٍ، نا نَهْشَلُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنِ الضَّحَّاكِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ إِلَى وَالِدَتِهِ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَانَ لَهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةٌ مَبْرُورَةٌ، قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ إِلَيْهَا كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ مَنْصُورُ بْنُ جَعْفَرٍ هُوَ وَالِدُ الْحُسَيْنِ بْنِ مَنْصُورٍ السُّلَمِيِّ النَّيْسَابُورِيِّ
-“নাহশাল ইবনে সাঈদ হযরত দ্বাহ্হাক ( رَحْمَةُ الله عليه) হতে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: যখন কোন সন্তান তার পিতা-মাতার প্রতি নেক নজরে তাকায়, তখন আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে মক্ববুল হজ্বের সওয়াব দান করেন। সাহাবীগ বললেন: যদি সে দৈনিক ১০০ বার দৃষ্টিপাত করেন? নবীজি ( ﷺ) বলেছেন: হ্যাঁ আল্লাহ অতি পবিত্র।” 68৬৮, ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬৭১ পৃ: হাদিস নং ৭৪৭৫;
এই হাদিসের সনদে نَهْشَلُ بْنُ سَعِيدٍ ‘নাহশাল ইবনে সাঈদ’ নামক একজন রাবী রয়েছে, যার উপর নির্ভর করে আলবানী হাদিসটিকে ‘জাল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অথচ ইমামগণ তার ব্যাপারে কি অভিমত পেশ করেছেন লক্ষ্য করুন:
وَقَال عَباس الدُّورِيُّ عَنْ يَحْيَى ضعيف -“আব্বাস দারুরী ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে বর্ণনা করেন: সে দুর্বল রাবী।”
وقال أبو داود ليس بشيء -“ইমাম আবু দাউদ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: তার হাদিস কিছু নয়।”
وقال الدارقطني وأبو حاتم: ضعيف -“ইমাম দারে কুতনী ও আবি হাতিম ( رَحْمَةُ الله عليه) তাকে দুর্বল বলেছেন।”
وقال الجوزجاني غير محمود في حديثه -“ইমাম যুজাযানী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: তার হাদিস প্রশংসিত নয়।”
وقال النسائي ليس بثقة -“ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: সে বিশ্বস্ত রাবী নয়।” وقال البخاري روى عنه معاوية البصري أحاديث مناكير -“ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: মুয়াবিয়া বছরী তার থেকে অনেক মুনকার হাদিস বর্ণনা করেছেন।” বিস্তারিত দেখুন: তাহজিবুত তাহজিব, ৭ম খন্ড, ২৫০ পৃষ্টা।
উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, نَهْشَلُ بْنُ سَعِيدٍ ‘নাহশাল ইবনে সাঈদ’ নামক রাবীকে ইমামগণ বলেছেন: বিশ্বস্ত নয়, দূর্বল রাবী, তার হাদিস প্রশংসিত নয়, মুনকার রাবী ইত্যাদি। আর এরূপ মন্তব্য থাকলে উছুলে হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী তাকে ‘দ্বায়িফ’ হাদিস বলা যায়। আশ্চর্য হল, আলবানী হাদিসটি ‘জাল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه)ও তাকে জাল রেওয়ায়েত কারী বলেননি, বরং মুনকার রাবী বলেছেন। এতেই বুঝা যায়, আলবানী জাল হাদিস ও দ্বায়িফ হাদিসের পার্থক্য জানতনা। অথচ জাল হাদিস ও দ্বায়িফ হাদিসের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে।
-------------------------------