মু’মীনের ক্বাল্বে আল্লাহর গুঞ্জায়েশ হয়
مَا وَسِعَنِي أَرْضِي وَلَا سَمَائِي وَلَكِنْ وَسِعَنِي قَلْبُ عَبْدِي الْمُؤْمِنِ
-“আল্লাহ তা’আলা বলেন: আসমান ও জমীনে আমার সংকুলান হয়না মু’মিন বান্দারদের ব্যতীত।”
(আল্লামা ঈসমাঈল হাক্কী: তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ৪৪৬ পৃ:; ২য় খন্ড, ৩১৬ পৃ:; ৪র্থ খন্ড, ৫২০ পৃ:; হুজুর গাউছে: ছেররুল আছরার, ১১৪ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ৯১ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মওজুয়াতুল কোবরা, ২০৬ পৃ:; ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ৩৭৩ পৃ:; আল মাসনূ, হাদিস নং ২৯৩;) 

এই হাদিস সস্পর্কে ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), হাফিজ ইরাকী ও হাফিজ ইবনে তাইমিয়া, বলেছেন,
وَلَيْسَ لَهُ إِسْنَادٌ مَعْرُوفٌ عَنِ النَّبِيِّ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ -“এর কোন মারুফ বা পরিচিত সনদ রাসূল ( ﷺ‎‎) থেকে নেই। অত:পর তাঁরা আরো বলেছেন: قَالَ وَمَعْنَاهُ وَسِعَ قَلْبُهُ الْإِيمَانَ بِي وَبِمَحَبَّتِي 
-“এই হাদিসের অর্থ হল: মুমীনের ক্বাল্ব হল আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান ও আমার প্রতি মুহাব্বতের এবং আমার মারেফাতের স্থান।”
(ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ৩৭৩ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ১৭৫ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মওজুয়াতুল কোবরা, ২০৬ পৃ:;)  

তাই এই হাদিসের মাআনা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্য গ্রহণযোগ্য, উড়িয়ে দেওয়ার কোন রাস্তা নেই যেহেতু ইবনে তাইমিয়া এর মত লোক ও সর্বজনমান্য ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্যে এর মাআনা বা অর্থ গ্রহণ করেছেন। এই হাদিসসের মাআনাকে ‘হাদিস’ বলে সম্বোধন করেছেন হিজরী ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দেদ, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه), অন্য একটি হাদিসের আলোচনা করতে গিয়ে ইহাকে হাদিস বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন তিনি বলেন:
أَقُولُ لَكِنَّ لَهُ مَعْنًى صَحِيحٌ كَمَا سَيَأْتِي فِي الحَدِيث مَا وسعتي أَرْضِي
-“আমি বলছি এই হাদিসের মাআনা বা অর্থ ছহীহ্ যেমনিভাবে হাদিসে এসেছে “মা ওয়াছয়ানী আরদ্বী.....”(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মাওজুয়াতুল কবীর, ৮৭ পৃ:;)  

ইহাকে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ‘হাদিস’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর মাআনাকে তথা অর্থকে ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তাই ইহাকে ‘হাদিস বলে’ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্য গ্রহণ করা যেতেই পারে। যেমন এর সমর্থনে একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ، حَدَّثَنِي أبِي، أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنِي عُمَرُ بْنُ عُبَيْدٍ، أَنَّهُ سَمِعَ وَهْبَ بْنَ مُنَبِّهٍ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ فَتَحَ السَّماَوَاتِ لِحِزْقِيلَ حَتَّى نَظَرَ إِلَى الْعَرْشِ أَوْ كَمَا قَالَ فَقَالَ حِزْقِيلُ: سُبْحَانَكَ، مَا أَعْظَمَكَ، يَا رَبِّ، فَقَالَ اللَّهُ: إِنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَمْ تُطِقْ أَنْ تَحْمِلَنِي، وَضِقْنَ مِنْ أَنْ تَسَعَنِي، وَسِعَنِي قَلْبُ الْمُؤْمِنِ الْوَارِعِ اللَّيِّنِ
-“ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা হিযকীল ফেরেস্থার জন্য আসমান সমূহের দরজা খুলে দিলেন। তিনি আরশ পর্যন্ত দেখতে পেলেন এবং বললেন আল্লাহ তুমি পাক ও পবিত্র, তোমার শান কত মহান। অত:পর আল্লাহ তা’আলা বললেন: নিশ্চয় আসমান সমূহ ও আরশ দুর্বলতা প্রকাশ করেছে আমাকে স্থান দিতে কিন্তু মু’মীনের দিল বা অন্তর নম্রতা প্রকাশ করে আমাকে গ্রহণ করেছে।”
(ইমাম আহমদ : আয যুহুদ, হাদিস নং ৪২৩; ইমাম ছিয়তী : আদ দুরারুল মুনতাশিরা ফি আহাদিছিল মুশতাহিরা, ৩৬৩ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম ছাখাবী : মাকাছিদুল হাছানাহ, ৯৯০ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)  

এই হাদিসের সনদে কোন বিতর্কীত রাবী নেই। সুতরাং বিষয়টি রেওয়াতের দ্বারা সমর্থিত হল। এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়। ইমাম তাবারানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا جَعْفَرُ الْفِرْيَابِيُّ، ثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ، ثَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي عِنَبَةَ الْخَوْلَانِيِّ، يَرْفَعُهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ لِلَّهِ آنِيَةً مِنْ أَهْلِ الْأَرْضِ وَآنِيَةُ رَبِّكُمْ قُلُوبُ عِبَادِهِ الصَّالِحِينَ 
-“আবী ইনাবাহ খাওলানী (رضي الله عنه) প্রিয় নবীজির প্রতি মারফ‚ সূত্রে বর্ণনা করেনে, প্রিয় রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেছেন: জমীনবাসীর জন্য পাত্র রয়েছে, তোমার প্রভ‚র (মহব্বত ধারণের) পাত্র হল নেক বান্দাগণের ক্বাল্ব বা অন্তর। আমাকে (মহব্বতের দৃষ্টিতে) ধারণ করেছে আমার প্রিয় পূন্যবান বান্দাদের ক্বাল্ব বা অন্তর।”(ইমাম তাবারানী: মুসনাদে শামেঈন, হাদিস নং ৮৪০;)  

এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত ইমাম আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাফর খারাইতি ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৩২৭ হিজরী তদীয় কিতাবে সনদসহ এভাবে বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ الْحَسَنِ قَالَ: حَدَّثَنَا سَيَّارُ بْنُ حَاتِمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا بَشِيرُ بْنُ مَنْصُورٍ قَالَ: حَدَّثَنَا ثَوْرُ بْنُ يَزِيدَ قَالَ: وَإِنَّ آنِيَةَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْأَرْضِ قُلُوبُ عِبَادِهِ الصَّالِحِينَ
-“ছাওর ইবনে ইয়াজিদ বলেন: নিশ্চয় জমীনে আল্লাহ তা’আলার (মহব্বত ধারণের) পাত্র হল নেক বান্দাগণের ক্বাল্ব সমূহ।”(ইমাম খারাইতি: এ’তেলাউল কুলুব, হাদিস নং ৯;)  

এমনকি পবিত্র কোরআনে একটি আয়াতের সাথে এই হাদিসের অর্থটি মিল পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَة على السَّمَاوَات وَالأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَحْمِلْنَهَا وأشفقن مِنْهَا وَحملهَا الْإِنْسَان
-“আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অত:পর তারা ইহাকে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করল।”(সূরা আহযাব: ৭২ নং আয়াত;) 

অর্থাৎ মানুষের মধ্যে মু’মীনের ক্বাল্বে আল্লাহর আমানত, তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও মহব্বত ধারণ করল। সুতরাং মু’মীন বান্দার ক্বাল্ব ইহা আল্লাহর মহব্বত হাছিলের জন্য অথবা আল্লাহর মারেফত লাভের উপযুক্ত পাত্র বা স্থান।
------------------------------
Top