নবীজিকে আওয়াল আখেরের ইলিম দেওয়া হয়েছে
وفي رواية فعلمت علم الأولين والآخرين
-“আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেন: আওয়াল থেকে আখের পর্যন্ত সকল এলেম আমি জেনে গেছি।” (আল্লামা ঈসমাইল হাক্বী: তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৫ম খন্ড, ৫০০ পৃ:; তাফছিরে ইবনে রজব হাম্বলী, ২য় খন্ড, ৫৫৫ পৃ:; সিরাতে হালভিয়া, ১ম খন্ড, ৩৭১ পৃ:; খুলাছাতুল আছার, ৩য় খন্ড, ২১৭ পৃ:; কাশেম নানুতবী: তাহজিরুন নাছ;)
ইমাম কুরতবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এভাবে উল্লেখ করেন: 
كَمَا أَنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلِمَ عِلْمَ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ -“যেমনিভাবে আল্লাহর নবী ( ﷺ‎‎) আওয়াল ও আখেরের ইলিম অর্জন করেছেন।”(তাফছিরে কুরতুবী, ১৩তম খন্ড, ৩৫২ পৃ:;)  ইমাম মহিউদ্দিন তাবারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৬৯৪ হিজরী,
وَكَانَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم خَاتم النَّبِيين وَسيد الْمُرْسلين وَأَتَاهُ الله علم الْأَوَّلين والآخرين
-“আল্লাহর নবী ( ﷺ‎‎) ছিলেন শেষ নবী, সকল রাসূলগণের সর্দার। আল্লাহ পাক তাঁকে আওয়াল ও আখেরের ইলিম দান করেছেন।”(সিরাতে সায়্যেদুল বাশার, ১ম খন্ড, ১০৫ পৃ:;)  এ বিষয়ে একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
حَدَّثَنَا أَبُو خَلِيفَةَ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، ثنا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: مَنْ أَرَادَ الْعِلْمَ فَلْيُثَوِّرِ الْقُرْآنَ، فَإِنَّ فِيهِ عَلْمَ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহ যাকে ইলিম দেওয়ার ইচ্ছা করেন তাকে কোরআনের বাহক বানিয়ে দেন, কারণ কোরআনের মধ্যে আওয়াল ও আখেরের ইলিম রয়েছে।”(ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীরে, হাদিস নং ৮৬৬৬; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ১৮০৮; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ৩০০১৮; ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১১৬৬৭;)  
এই হাদিস সম্পকের্ত ইমাম হায়ছামী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ بِأَسَانِيدَ، وَرِجَالُ أَحَدِهَا رِجَالُ الصَّحِيحِ. -“ইমাম তাবারানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) একাধিক সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন, এর একটি সনদের রাবীগণ বিশুদ্ধ।”(ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১১৬৬৭;)  এ ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়, 
عبد الله بن عباس رضي الله عنهما قال: جَمَعَ الله في هذا الكتاب عِلْمَ الأوَّلين والآخرين، وعلم ما كان، وعلم ما يكون، 
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, মহান আল্লাহ পাক এই কোরআনের আওয়াল ও আখেরের ইলিম একত্রিত করেছেন। ঐ ইলিম যা ইতিপূর্বে হয়েছে এবং যা পরবর্তীতে হবে।”(জামেউল উছুল, ৮ম খন্ড, ৪৬৪ পৃ: হাদিস নং ৬২৩৩; রজিন;)  
অতএব, পবিত্র কোরআনের সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল ইলিম বিদ্যমান, আর সেই কোরআনের ধারক ও বাহক হলেন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা ( ﷺ‎‎)। স্বয়ং আল্লাহ পাক প্রিয় নবীজি ( ﷺ‎‎) এর কোরআনের ইলিম সম্পর্কে বলেন,
الرَّحْمَنُ عَلَّمَ الْقُرْآنَ -“দয়াময় আল্লাহ যিনি আপনাকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আর রহমান, ১-২ নং আয়াত)
সুতরাং আওয়াল ও আখেরের ইলিম সমৃদ্ধ পবিত্র কোরআন প্রিয় নবীজি জানতেন তাই তিনি ইলমুল আওয়াল ওয়াল আখেরের অধিকারী ছিলেন। ইমাম আবু ফাতাহ শাফেয়ী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৪৯০ হিজরী আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেন,
وَأَخْبَرَنِي أَبُو الْحَسَنِ السُّلَمِيُّ أنبا أَبُو الْقَاسِمِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ الإِمَامُ، ثنا أبو مُحَمَّدٍ الْوَرْدُ ثنا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، ثنا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ يَقُولُ: كُنْتُ حَاجًّا فِي بَعْضِ السِّنِينَ فَأَتَيْتُ مَسْجِدَ رَسُولِ اللِّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.. فَلَمَّا نَظَرَ إِلَى قَبْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: السَّلامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي لَقَدْ بَعَثَكَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَأَنْزَلَ عَلَيْكَ كِتَابًا مُسْتَقِيمًا أَعْلَمَكَ فِيهِ عِلْمَ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ
-“ইবনে আবী মারইয়াম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, যখন কোন বছরে আমাদের কোন হাজত দেখা দিত ফলে আমরা আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) এর মসজিদে আসতাম। যখন আল্লাহর নবী ( ﷺ‎‎) এর রওজা মোবারক নজরে পড়ত তখন বলতাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কদমে আমার পিতা-মাতা কুরবানী হোক। অবশ্যই আল্লাহ আপনাকে সু-সংবাদ দাতা ও ভীতিপ্রদর্শন কারী রূপে প্রেরণ করেছেন। আপনার উপর আল্লাহ পাক সঠিক পথের দিশা হিসেবে কোরআন নাজিল করেছেন। আর আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন ইহাতে আওয়াল ও আখেরের ইলিম।”(আবু ফাতাহ মাকদেছী: আল আমালী, ১ম খন্ড, ৫ পৃ:;)  
এই রেওয়ায়েত দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) আওয়াল ও আখেরের ইলিম জানতেন আর স্বয়ং আল্লাহ পাক তাকে সেই ইলিম দান করেছেন। যেমন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন: وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ -“হাবীব আমি আপনার যা কিছু অজানা ছিল সব কিছু জানিয়ে দিয়েছি।” (সূরা নিসা: ১১৩ নং আয়াত)
--------------------------------
Top