মু’মীনের ক্বাল্ব আল্লাহর ঘর
الْقَلْبُ بَيْتُ الرَّبِّ
-“মু’মিনের ক্বাল্ব আল্লাহর ঘর।”
(আল্লামা ঈমাম ঈসমাইল হাক্কী: তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৩য় খন্ড, ১৬১ পৃ:; তাফছিরে বাহরুল মাদিদ, ৭ম খন্ড, ২৮০ পৃ:; গাউছে পাক: সেররুল আছরার; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১ম খন্ড, ৬০ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মওজুয়াতুল কোবরা, ১৭০ পৃ:; আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ৯১ পৃ:; ক্বারী: মওজুয়াতুল কবীর, ৮৭ পৃ:;)
এই হাদিসটি ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه) الْقَلْبُ بَيْتُ الرَّبِّ
-“ক্বাল্ব আল্লাহর ঘর।” হাদিসটি উল্লেখ করে বলেছেন ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম যারকাশী ( رَحْمَةُ الله عليه) ও ইবনে তাইমিয়া বলেছেন: ইহার কোন (সনদগত) ভিত্তি নেই। তবে ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন,
والقلب بيت الإيمان ومعرفته ومحبته -“ক্বাল্ব হল ঈমান, আল্লাহর প্রতি মহব্বত ও তাঁর মারেফত হাছিলের ঘর।”
(ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, হাদিস নং ৭৭৬;)
অনুরূপ বলেছেন ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় কিতাবে,
ليس له أصل في المرفوع، والقلب بيت الإيمان بالله ومعرفته ومحبته إلى غير ذلك
-“মারফূরূপে ইহার কোন ভিত্তি নেই। ক্বাল্ব হল আল্লাহর প্রতি ঈমানের ঘর, তাঁর মারেফত, তাঁর প্রতি মহব্বত অনুরূপ অন্যান্য কিছুর ঘরও ক্বাল্ব।”
(ইমাম আজলুনী, কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১৮৮৫;)
ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) এই হাদিস সম্পর্কে বলেছেন,
أَقُولُ لَكِنَّ لَهُ مَعْنًى صَحِيحٌ -“আমি বলি এই হাদিসের অর্থ ছহীহ্।”(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মওজুয়াতুল কবীর, ৮৭ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ৯১ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মওজুয়াতুল কোবরা, ১৭০ পৃ:;)
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه) আরো বলেছেন,
قلت رواه ابن ماجه عن أبي عنبسة بلفظ إن لله آنية من أهل الأرض، وآنية ربكم قلوب عباده الصالحين،
-“আমি (আজলুনী) বলি: ইমাম ইবনু মাজাহ এই শব্দে ইহা বর্ণনা করেছেন যে, জমীনবাসীর জন্য পাত্র রয়েছে, তোমার প্রভ‚র (মহব্বত ধারণের) পাত্র হল নেক বান্দাগণের ক্বাল্ব বা অন্তর। আমাকে (মহব্বতের দৃষ্টিতে) ধারণ করেছে আমার প্রিয় পূন্যবান বান্দাদের ক্বাল্ব বা অন্তর।”(মাম আজলুনী, কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১৮৮৪;)
হাদিসটি ইমাম তাবারানী ( رَحْمَةُ الله عليه) এভাবে বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا جَعْفَرُ الْفِرْيَابِيُّ، ثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ، ثَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي عِنَبَةَ الْخَوْلَانِيِّ، يَرْفَعُهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ لِلَّهِ آنِيَةً مِنْ أَهْلِ الْأَرْضِ وَآنِيَةُ رَبِّكُمْ قُلُوبُ عِبَادِهِ الصَّالِحِينَ
-“আবী ইনাবাহ খাওলানী (رضي الله عنه) প্রিয় নবীজির প্রতি মারফ‚ সূত্রে বর্ণনা করেনে, প্রিয় রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: জমীনবাসীর জন্য পাত্র রয়েছে, তোমার প্রভ‚র (মহব্বত ধারণের) পাত্র হল নেক বান্দাগণের ক্বাল্ব বা অন্তর। আমাকে (মহব্বতের দৃষ্টিতে) ধারণ করেছে আমার প্রিয় পূন্যবান বান্দাদের ক্বাল্ব বা অন্তর।”(ইমাম তাবারানী: মুসনাদে শামেঈন, হাদিস নং ৮৪০;)
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত ইমাম আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাফর খারাইতি ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৩২৭ হিজরী তদীয় কিতাবে সনদসহ এভাবে বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ الْحَسَنِ قَالَ: حَدَّثَنَا سَيَّارُ بْنُ حَاتِمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا بَشِيرُ بْنُ مَنْصُورٍ قَالَ: حَدَّثَنَا ثَوْرُ بْنُ يَزِيدَ قَالَ: وَإِنَّ آنِيَةَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْأَرْضِ قُلُوبُ عِبَادِهِ الصَّالِحِينَ
-“ছাওর ইবনে ইয়াজিদ বলেন: নিশ্চয় জমীনে আল্লাহ তা’আলার (মহব্বত ধারণের) পাত্র হল নেক বান্দাগণের ক্বাল্ব সমূহ।”(ইমাম খারাইতি: এ’তেলাউল কুলুব, হাদিস নং ৯;)
এমনকি পবিত্র কোরআনে একটি আয়াতের সাথে এই হাদিসের অর্থটি মিল পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَة على السَّمَاوَات وَالأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَحْمِلْنَهَا وأشفقن مِنْهَا وَحملهَا الْإِنْسَان
-“আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অত:পর তারা ইহাকে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করল।”(সূরা আহযাব: ৭২ নং আয়াত;)
অর্থাৎ মানুষের মধ্যে মু’মীনের ক্বাল্বে আল্লাহর আমানত, তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও মহব্বত ধারণ করল। এই অর্থে ইহাকে হাদিস হিসেবে বয়ান করা যাবে। ইহার সমর্থনে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করা যায়,
وعن ابن عباس رضى الله عنهما (ص) جبل بمكة كان عليه عرش الرحمن حين لا ليل ولا نهار أشار بالجبل الى جسد محمد صلى الله عليه وسلم. وبعرش الرحمن الى قلبه
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) হল মক্কার পাঁহাড় যাতে রয়েছে রহমানের আরশ, যেখানে কোন রাত-দিন নেই। পাঁহাড় দ্বারা নবীজি নিজের দেহকে ঈশারা করেছেন। আর ‘আরশে রহমান’ দ্বারা ঈশারা করেছেন তাঁর ক্বাল্বের প্রতি।” (তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৩য় খন্ড, ১৬১ পৃ:; ইহার সনদ সম্পর্কেও আমি অবগত নই।)
এই হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত হয়, মানব দেহে আল্লাহ পাকের আরশ রয়েছে, আর তা হল ক্বাল্ব। সুতরাং যে হাদিসের মায়ানা ছহীহ্ সে হাদিসকে হাদিস বলে বর্ণনা মোটেই দূষের কিছু নয়। আর এ ব্যাপারে চার মাজহাবের ইমামগণ ও ফকিহ্গণ সকলেই একমত।
--------------------------------