নবীজিকে না বানাইলে কোন কিছুই বানাইতেন না।
لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ
-“আল্লাহ তা’আলা বলেন: হে নবী! আপনাকে না বানাইলে কোন কিছুই বানাইতাম না।”
(আল্লামা ইমাম ইসমাইল হাক্কী: তাফছিরে রুহুল বয়ান, ২য় খন্ড, ৩২৯ পৃ:; ও ৪৩০ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মাওজুয়াতুল কবীর, ১০১ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ১৪৮ পৃ:; মুজাদ্দেদ আলফেছানী: মাকতুবাত ৯ম খন্ড, ১৫৫ পৃ:; মাকতুবাত নং ১২২-এ উল্লেখ করেছেন; হুজুর গাউছে: ছেররুল আছরার, ১০২ পৃ:; মাওলানা হুছাইন আহমদ মাদানী: আশ শিহাবুছ ছাকিব, ৫০ পৃ:;) 

ইমাম ছাগানী ইহাকে মওজু বলেছেন। তবে হিজরী ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দেদ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটি উল্লেখ করেই বলেছেন لَكِنَّ مَعْنَاهُ صَحِيحٌ -“আমি বলছি: কিন্তু ইহার মাআনা ছহীহ্।”(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মাওজুয়াতুল কবীর, ১০১ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ২য় খন্ড, ১৪৮ পৃ:;)  

অনুরূপ ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় কিতাবে বলেছেন,
وأقول لكن معناه صحيح وإن لم يكن حديثا. -“আমি (আজলুনী) বলি: কিন্তু ইহার অর্থ ছহীহ্, যদিও ইহা (সনদগত) হাদিস নয়।”(ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদস নং ২১২৩;)  

যেমন একটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا مَرْفُوعًا أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ 
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, জিব্রাইল (عليه السلام) এসে বললেন: হে মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) আল্লাহ তা’আলা আপনাকে না বানাইলে জান্নাত ও জাহান্নাম বানাইতেন না।”
(ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ৩৩৮; দায়লামী শরিফ, হাদিস নং ৮০৩১; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, ১১তম খন্ড, ৪৩১ পৃ: হাদিস নং ৩২০২৫; সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খন্ড, ৭৫ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মওজুয়াতুল কবীর, ১০১ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, হাদিস নং ৫১; আব্দুল হাই লাখনভী: ‘আছারুল মারফূয়া, ১ম জি: ৪৪ পৃ:;)  

এজন্যই হয়ত মহান আল্লাহ হযরত আদম (عليه السلام) কে বলেছেন:-
وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُكَ -“হে আদম! আমি মুহাম্মদ কে না বানাইলে তোমাকেও বানাইতাম না।”
(ইমাম বায়হাক্বী: দালাইলুন্নবুয়াত, ৫ম খন্ড, ৪৮৮ পৃ:; আল্লামা ছামহুদী: অফাউল অফা, ২য় জি: ২২২ পৃ:; মুস্তাদরাকে হাকেম, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮৩ পৃ: ছহীহ্ সনদে;)  

এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনায় আছে,
عَن عَليّ بن أبي طَالب، رَضِي الله تَعَالَى عَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنَّهُ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ أَرْضِي، وَلَا سَمَائِي
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) হযরত রাসূল ( ﷺ‎‎) থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি ( ﷺ‎‎) মহান আল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন: ওহে মুহাম্মদ! আমার ইজ্জত ও জালালের কসম! আপনাকে না বানাইলে আসমান জমীন কিছুই বানাইতাম না।”
(ইবনে সাবা র: এর ‘শিফাউছ ছুদুর’ গ্রন্থে; নজহাতুল মাজালিস, ২য় খন্ড, ১১৯ পৃ:; ইনসানুল উয়ূন, ১ম খন্ড, ৩১৭ পৃ:; সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খন্ড, ৭৫ পৃ:; হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩২০২৫;)  

এ বিষয়ে অন্য হাদিসে আছে,
أخبرنا أبو يعقوب يوسف بن أيوب بن يوسف بن الحسين بن وهرة الهمذاني بمرو نا السيد أبو المعالي محمد بن محمد بن زيد الحسيني إملاء بأصبهان وأخبرنا أبو محمد بن طاووس أنا أبو القاسم بن أبي العلاء قالا أنا أبو القاسم عبد الرحمن بن عبيد الله بن عبد الله السمسار أنا حمزة بن محمد الدهقان نا محمد بن عيسى بن حبان المدائني نا محمد بن الصباح أنا علي بن الحسين الكوفي عن إبراهيم بن اليسع عن أبي العباس الضرير عن الخليل بن مرة عن يحيى عن زاذان عَنْ سَلْمَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عن الله تعالى لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الدُّنْيَا
-“হযরত ছালমান ফারছী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) আল্লাহ তা’আলা হতে বলেছেন: হে নবী! আপনাকে না বানাইলে দুনিয়া বানাইতাম না।”
(তারিখে ইবনে আসাকির, ৩য় খন্ড, ৫১৭ পৃ:, হাদিস নং ৮০১; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ৩৩০ পৃ:; কাজী আয়্যায: শিফা শরীফ, ২য় খন্ড, ১০৫ পৃ:; শরফুল মুস্তফা, ৪র্থ খন্ড, ৩৩১ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খন্ড, ৭৫ পৃ:; ইমাম যুরকানী: শরহে মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, ১৮২ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মওজুয়াতুল কবির, ১০১ পৃ: মারফূ সনদে; সনদ ওয়াহী।)  

এ বিষয়ে আরেক রেওয়ায়েতে আছে,
هذا نور نبى من ذريتك اسمه فى السماء أحمد، وفى الأرض محمد، لولاه ما خلقتك
-“আদম (عليه السلام) কে আল্লাহ বললেন ইহা নূরে মুহাম্মদী যে তোমার বংশধরদের মধ্যে একজন। আসমানে তাঁর নাম আহমাদ, জমীনে তাঁর নাম মুহাম্মদ। যদি তিনি না হতেন আমি আসমান-জমীন এমনকি তোমাকেও বানাইতাম না।”(ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৭০ পৃ:;)  এ সম্পর্কে আরেক হাদিসে আছে,
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَمْشَاذَ الْعَدْلُ، إِمْلَاءً، ثنا هَارُونُ بْنُ الْعَبَّاسِ الْهَاشِمِيُّ، ثنا جَنْدَلُ بْنُ وَالِقٍ، ثنا عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ الْأَنْصَارِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ وَلَقَدْ خَلَقْتُ الْعَرْشَ عَلَى الْمَاءِ فَاضْطَرَبَ فَكَتَبْتُ عَلَيْهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولٌ اللَّهِ فَسَكَنَ 
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহ তা’আলা ঈসা (عليه السلام) এর প্রতি ওহী করলেন। হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ ( ﷺ‎‎) এর প্রতি ঈমান আন ও তোমার উম্মতদেরকে আদেশ দাও তারা যেন আমার নবীকে দেখা মাত্র ঈমান আনে। কেননা যদি মুহাম্মদ ( ﷺ‎‎) কে না বানাইতাম তাহলে আদম (عليه السلام) কেও বানাইতাম না। আমি যদি মুহাম্মদ ( ﷺ‎‎) কে না বানাইতাম তাহলে জান্নাত ও জাহান্নাম বানাইতাম না। আর অবশ্যই পানির উপরে আমার আরশ সৃষ্টি করেছিলাম ফলে ইহা নড়াচড়া করছিল, অত:পর ইহার উপর লিখে দিলাম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” ফলে আরশ থেমে গেল।”
(ইমাম হাকেম আল-মুস্তাদরাক, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮৩ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: খাছায়েছুল কোবরা, ১ম খন্ড, ২৯ পৃ:; আবু বকর ইবনে খিলাল তাঁর ‘আস সুন্নাহ’ গ্রন্থে, ১ম খন্ড, ২৬১ পৃ:, হাদিস নং ৩১৬; শিফাউছ ছিকাম; ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, ৪র্থ খন্ড, ৩০৭ পৃ:; ইমাম আসকালানী: লিছানুল মিযান, ৫ম খন্ড, ৩৪৩ পৃ:; আলবানী: সিলসিলায়ে আহাদিছুদ দ্বায়িফা, ১ম খন্ড, ৪৪৮ পৃ:;)  

এই হাদিস উল্লেখ করে ইমাম হাকেম নিছাপুরী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: 
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ -“এই হাদিসের সনদ ছহীহ্।”(মুস্তাদরাকে হাকেম, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮৩ পৃ:;)  

ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) ও আল্লামা নূরুদ্দিন আলী ইবনে আহমদ ছামহুদী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তদীয় কিতাবে হাদিসটি ছহীহ্ হওয়ার কথা এভাবে লিখেছেন: وَأخرج الْحَاكِم وَصَححهُ -“হাকেম হাদিসখানা বের করেছেন ও ইহাকে ছহীহ্ বলেছেন।” 
(ইমাম ছিয়তী: খাছায়েছুল কোবরা, ১ম খন্ড, ২৯ পৃ:; আল্লামা ছামহুদী: অফাউল অফা, ৪র্থ জি: ২২৪ পৃ:;) 

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ ( ﷺ‎‎)কে সৃষ্টি করেছেন। এমনকি হযরত আদম (عليه السلام) কে বানাইবার পূর্বেই আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ ( ﷺ‎‎) কে সৃষ্টি করেছেন। এরূপ অনেক হাদিস রয়েছে। সর্বোপরি প্রমাণিত হল যে, রাসূল ( ﷺ‎‎) এর উছিলায় আল্লাহ সব কিছু তৈরী করেছেন। অর্থাৎ, রাসূল ( ﷺ‎‎) কে না বানাইলে আল্লাহ আসমান জমীন, জান্নাত জাহান্নাম, দুনিয়া এক কথায় কোন কিছুই বানাইতেন না। আর এই কথাটাকেই বলা হয়: لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ  -“আপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।”
---------------------------
Top