কিতাবঃ কোরআন  হাদিসের আলোকে শাফায়াত

মূলঃ- চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত শাহ মাওলানা আহমদ রেযা খান ফাযেলী বেরলভী (রহঃ)

অনুবাদক: মৌলনা সৈয়দ মােহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। 

Text Ready : 

মাসুম বিল্লাহ সানি, সরকার জিলানী, আব্দুল্লাহ আল কাফী

আরবি প্রুফ রিডিংঃ সালেক আহমদ



   

ভূমিকাঃ


حبيبه الكريم

نحمده ونصلی ونسلم على


বিশ্বের মুসলিম মিল্লাতের আকিদা হচ্ছে-প্রিয় নবী হুজুর করীম (ﷺ) “শফিউল মুনাবিন” বা গােনাহগারের শাফায়াতকারী। যা নিতান্তই শরীয়ত সম্মত।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, নারী, নায়ছারী, নজদী ওহাবী, তাবলীগী ও মওদুদী পন্থী সহ বিভিন্ন বাতিল সম্প্রদায়গণ প্রিয় নবী(ﷺ) এর শাফায়াতের অধিকারকে অস্বীকার করতেছে মনগড়া ফতােয়া দিচ্ছে। ফলে কলুষিত হচ্ছে মুসলিম সমাজের ঈমান-আক্বিদা , ডেকে আনছে নানা ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তি। | তবে, আনন্দের বিষয় যে, চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ ঈমামে আহলে ছুন্নাত আ’লা হযরত শাহ মৌলানা আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী  (رضي الله عنه)  কতৃক উক্ত বিষয়ের উপর লিখিত একাধিক গ্রন্থাদির মধ্যে একটা ক্ষুদ্র পরিসর রেছালাহ্ (পুস্তিকা) কিছুদিন পূর্বে আমার দৃষ্টিগােচর হয়, যার নাম হচ্ছে “এসমাউল আরবায়িন ফি শাফায়াতে সাইয়্যেদিল মাহবুবিন।”

 

এ পুস্তিকায় তিনি (লিখক) প্রথমে আয়াতে কোরআন পরে চল্লিশটি নির্ভরযােগ্য হাদিস দ্বারা প্রিয় নবীর শাফায়াতের স্বপক্ষে প্রমানিত করেছেন।

 

কাজেই, এ পুস্তকখানা বিভিন্ন বাতিল পন্থীগণ কর্তৃক এ প্রসঙ্গে নানা ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তি প্রচারের সন্ধিক্ষণে মুসলিম মিল্লাতকে সত্যের দিশা দানে একান্ত সহায়ক -এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু বইখানা একেতঃ এদেশে দুর্লভ, দ্বিতীয়তঃ উর্দু-আরবী ভাষায় লিখিত বিধায় সীমিত সংখ্যক পাঠকের নিকটই সহজপাঠ্য। তাই, বইখানা সরল বাংলা ভাষায় অনুদিত হলে এদেশের প্রিয় পাঠকবৃন্দ সাধারণ ভাবে এর সারগর্ভ বর্ণনা দ্বারা উপকৃত হবেন—এ সত্য যথাযথ ভাবে অনুধাবন করে আমার প্রিয় সংগঠন বােয়ালখালীস্থ “ঘােষখীল গাউছিয়া আধ্যাত্মিক সংঘ” এর পক্ষ হয়ে নিজে ছাপা কার্যের উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমি এর বাংলা অনুবাদের কার্যে প্রয়াসী হই। মূল বইয়ের সাথে পূর্ণ সঙ্গতি রেখে অনুবাদের চেষ্টা করেছি। অতঃপর মূল বইয়ের সাথে বিরুদ্ধবাদীদের অমূলক কতিপয় উত্থাপিত আপত্তি সমূহের জবাব সম্বলিত একটি অধ্যায় সংযােজন করেছি। পরন্তু বইখানা অনুবাদ ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার জন্য সনামধন্য লেখক শ্রদ্ধেয় মৌলানা এম, এ মন্নান সাহেব কতৃক নিরীক্ষণ করা হয়। তবুও আমার অযােগ্যতা হেতু ত্রুটি-বিচ্যুতি অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া, মুদ্রন জনিত ভুল-ত্রুটিও স্বীকার্য। 

সর্বোপরি, এসব অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতি ভ্ৰক্ষেপ না করে বইখানা দ্বারা মুসলিম সমাজ উপকৃত হলে নিজেকে ধন্য মনে করব।

বিশেষ ভাবে উল্লেখযােগ্য যে, যারা আমার এ উদ্যোগে সফলতা অর্জনে আন্তরিক সহযােগীতা করেছেন; তাদের প্রতি জানাই আন্তরিক শােকরীয়া, বিশেষ করে অনুবাদ কার্যে আন্তরিক উৎসাহ উদ্দীপনা প্রদানের জন্য বন্ধুবর মৌলানা কাজী মােহাম্মদ মঈন উদ্দিন, এবং মুদ্রন কাজে সহযােগীতা প্রদানের জন্য আন্দরকিল্লাহ। মােহাম্মদী কুতুব খানার মালিক শ্রদ্ধেয় বড় ভাই অধ্যাপক লুৎফুর রহমান সাহেবানদ্বয়ের কাছে আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ পাক আমাদের এ খেদমতকে কবুল করুন। আমিন।


[ ইতি—অনুবাদক]


কোরান-হাদিসের আলােকে শাফায়াত


প্রশ্নঃ- ইসলামী শরীয়তের ওলামায়ে কেরামের প্রতি আরজ, শাফায়াত বা নবী করীম(ﷺ)  সুপারিশকারী হওয়া সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কি? ইহা কোন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কি-না?


উত্তরঃ- সমস্ত প্রশংসা সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম সুসংবাদদাতা, সুপারিশকারী নবী করীম(ﷺ)  তাঁর বংশধর ও ছাহাবা কেরামের উপর অহরহ (বর্ষিত হােক) সােবহানাল্লাহ! এমন প্রশ্ন শুনে কতই বিস্ময় বােধ করছি যে, মুসলমান এবং সুন্নিয়াতের দাবীদারগণ এমন সমুজ্জ্বল আকায়েদ সম্পর্কেও সন্দেহ পােষণ করে ! ইহাও কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার পূর্বাভাস!

শাফায়াত সম্পর্কিত হাদিসসমুহ এমন সুস্পষ্ট, যা কি ভাবে গােপন করা যায় ? 


বিশ এর অধিক সাহাবী, শত শত তাবেঈন, হাজার হাজার মুহাদ্দিছ সেগুলাের বর্ণনাকারী। হাদিসের প্রত্যেক প্রকার গ্রন্থ যেমন সিহাহ, সুনান, মাসানীদ, মাআজিম, জাওয়ামি, মুছান্নাফাত, শাফায়াত সম্পর্কিত হাদিসসমুহ দ্বারা সমৃদ্ধ। আহলে ছুন্নাতের প্রত্যেক অনুসারী এমনকি নারী-শিশু, বরঞ্চ গ্রামীন মুখরাও এ আকিদা সম্পর্কে অবহিত। খােদার  সাক্ষাৎ, মােহাম্মদ(ﷺ) এর শাফায়াত, প্রত্যেকের মুখে মুখে মুখরিত। আমি (আলা হযরত, ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ) “সামউন ওয়াতাআহ লি-আহাদীছিশ শাফায়াহ্” নামক গ্রন্থে শাফায়াত সম্পর্কিত বহু হাদিছ সংকলন করেছি। এখানে তা থেকে সংক্ষেপে শুধু চল্লিশটা হাদিস উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি! এর পূর্বে কোরআন পাকের কতেক আয়াত উল্লেখ করলাম।


কোরআনের আলোকে শাফায়াতঃ


◾আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন -


 عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا 


অর্থাৎ :- "অতি শীঘ্রই আপনাকে আপনার প্রভু “মকামে মাহমুদ” পর্যন্ত পৌঁছাবেন।"

(আল কুরআন, সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত-৭৯)।


◾বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ বােখারী শরীফে বর্ণিত আছে, হুজুর শফীউল মুযনেবীন (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হলাে “মকামে মাহমুদ” কি জিনিষ ? এরশাদ করেন, 

অর্থাৎ : সেটা হলাে শাফায়াত।


    ولسوف يعطيك ربك فترضی


অর্থাৎ : "এবং নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক অচিরে আপনাকে এ পরিমাণ দিবেন যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।" (আল-কুরআন)


◾ঈমাম দায়লমী “মুসনদুল ফেরদৌস” নামক হাদিস-গ্রন্থে আমিরুল মােমনীন মাওলা আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যখন উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলো তখন হুজুর শাফীউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,

اذن لا أرضى و واحد من أمتي في النار


অর্থাৎ: যখন আল্লাহ তায়ালা আমাকে সন্তুষ্ট করবেন বলে ওয়াদা করেছেন, তখন আমি সন্তুষ্ট হবো না, যতক্ষণনা আমার একটি মাত্র উম্মতও দোযখে থাকবে। 

[হে আল্লাহ! তার (ﷺ) উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।]


◾ইমাম তাবরাণী, মুজামুল আওসাত এবং বাযযার ‘মুসনাদে বাযযারে" মাওলা-ই-মুসলেমীন হযরত আলী  (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণনা করেন- হুজুর শাফীউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,


اشفع لامتی حتی ينادنی ربی ارضيت يا محمد فاقول ای ربی رضيت


অর্থাৎ : আমি আমার উম্মতের জন্য ততক্ষণ সুপারিশ করবাে, যতক্ষণ না আমার প্রতিপালক আমায় ডেকে বলবেন, 'হে মােহাম্মাদ, আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর আমি আরজ করবে—হে আমার প্রতিপালক, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।


◾আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,


    واستغفر لذنبك وللمؤمنين والمٶمنات


এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আপন প্রিয় হাবীব (ﷺ)কে নির্দেশ দিচ্ছেন ‘আপনি মুসলিম নর-নারীদের গুণাহ আমার থেকে মার্জনা করিয়ে নিন। এটাইতো শাফায়াত।


وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا


আর সেসব লোক যখন নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করে, তখন যদি আপনার দরবারে আসে অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাপরবশ ও পরমদয়ালুরূপে পাবে। [ সুরা নিসা ৪:৬৪ ] 


এ আয়াতে মুসলমানদেরকে এরশাদ ফরমাচ্ছেন- যদি কোন গুণাহ হয়ে যায়, তবে এ নীয়ে পাকের (ﷺ) দুয়ারে উপস্থিত হও এবং তাঁর সমীপে শাফায়াতের দরখাস্ত কর, মাহবুব (ﷺ) যদি তোমাদের পক্ষে শাফায়াত করেন; তবে আমি আল্লাহ নিশ্চয় তােমাদের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেব।


◾আল্লাহ এরশাদ করেন,


واذا قيل لهم تعالوا يستغفرلکم رسول الله لووا رٶسهم


অর্থাৎ যখন ঐ সমস্ত মুনাফিককে বলা হয়, এসো। আল্লাহর রাসুল (ﷺ) তোমাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করেন। তখন তারা স্বীয় শিরসমুহ ফিরিয়ে নেয়। 


এ আয়াতে মুনাফিকদের অশুভ পরিণতির কথা এরশাদ হয়েছে যে, তারা হুজুর শাফীউল মুযনেবীন (ﷺ) থেকে শাফারাত" চায় না। অতঃপর যারা আজ চায়না, তারা আগামীকালও পাবে না। আর যারা আগামীকাল পাবে না; তারা কিছুই পাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে তার (ﷺ) সুপারিশদ্বারা ধন্য করুন! 

◾জনৈক কবি বলেন -


ور دیکھیں گے ۔ حشر می شم بھی

مگر اب ان سے التجا نہ کرے ۔


অর্থাৎ, হাশরে আমরাও প্রিয়নবীর দ্বারা পরিতুষ্ট হতে দেখবাে। 

(আফসোস) তাঁকে অস্বীকারকারীগণ আজ তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছেনা! আল্লহুতায়ালা গুণাহগারদের জন্য সুপারিশকারী হুজুর করীম (ﷺ) এর উপর এবং তার বংশধরগণ, সাহাবা কেরাম ও তার দলের সবার উপর রহমত বর্ষণ করুন !


হাদিসের আলোকে শাফায়াত


শাফায়াত-ই-কুবরা' (সর্বোত্তম ও চুড়ান্ত সুপারিশ) এর হাদিসসমূহ, যে গুলোতে সুস্পষ্ট ভাবে এরশাদ হয়েছে যে, হাশরের ময়দানে দিনটি এত দীর্ঘায়িত হবে যে, তা অতিবাহিত হয়েও যেন হবে না, মাথার উপর সূর্য দীপ্ত হবে, দোযখ হবে নিকটবর্তী। ঐদিন সূর্যে পূর্ণ দশ বৎসরের প্রখরতা একত্রিত করা হবে এবং মাথার কিঞ্চিত পরিমাণ দুরত্বে সেটা স্থাপন করা হবে।


এমন কঠিন পিপাসা হবে যে, খোদা তা না দেখাক। সে কিয়ামতের উত্তাপ এত বেশী হবে যে, (আল্লাহ রক্ষা করুন) কয়েক কাঠি গভীর হবে ঘর্মের স্রোত, যা জমীন শােষণ করার পর উপরের দিকে প্রবাহিত হবে। এমন কি মানুষের গলা পরিমাণ উঁচু হবে। জাহাজ ছাড়লে তা ভাসতে থাকবে। মানুষ তাতে হাবুডুবু খাবে। ভয়ে প্রাণ কষ্ট পর্যন্ত এসে যাবে। মানুষ এমন কঠিন। বিপদে প্রাণ বাঁচাতে অক্ষম হয়ে সুপারিশকারীর তালাশে এদিকে সেদিকে ছুটাছুটি করতে থাকবে। হযরত আদম, নুহ, খলিল, কলিম, মছিহ (তাঁদের উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হােক।) এর নিকট হাজির হয়ে তাদের সুস্পষ্ট জওয়াব শুনবে। সমস্ত নবী (عليه السلام) বলবেন—“আমাদের এ পদমর্যাদা নেই। আমরা এর উপযুক্ত নই। আমাদের পক্ষে এ কাজ সম্ভবপর হবে না। নফলী! নফসী। অবস্থা আমাদের। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও।” শেষ পর্যন্ত সবার পরে, হুজুরে পুরনূর সর্ব শেষ নবী পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সৃষ্টিকুলের সরদার গুনাহগারদের সুপারিশ কারী সমস্ত বিশ্ববাসীর কল্যাণ রাহমাতুললিল আলামীন ﷺ এর দরবারে হাজির হবে। হুজুর আকরাম (ﷺ) এরশাদ করবেন!

অর্থাৎ : “সুপারিশের জন্য আমি উপযুক্ত, সুপারিশ করা আমারই শান।” অতঃপর তিনি (ﷺ) আপন প্রতিপালকের দরবারে হাজির হয়ে সেজদা করবেন। তখন তার প্রতিপালক এরশাদ করবেন,


یا محمد ارفع رأسك وقل تسمع وسل تعطه واشفع تشفع


অর্থাৎ “হে মােহাম্মদ (ﷺ)! স্বীয় শির উঠান এবং আরজ করুন। আপনার ফরিয়াদ শ্রবণ করা হবে এবং প্রার্থনা করুন, আপনাকে তা দান করা হবে এবং শাফায়াত করুন, তা কবুল করা হবে।

[সহীহ্ বুখারী, অধ্যায়ঃ তাওহীদ, অনুচ্ছেদঃ কিয়ামতের দিন নবী-রাসূল ও অন্যদের সাথে আল্লাহর কথা বলার বিবরণ, হাঃ ৬৯৫৬]


এটাই হবে–“মকামে মাহমুদ যেখানে পূর্ব ও পরবর্তী সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে হুজুর (ﷺ) এর প্রশংসা, গুনগানের তােল পড়ে যাবে এবং শত্রু-মিত্র সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে- আল্লাহর দরবারে মর্যাদার যে উচ্চাসন আমাদের মুনিবের রয়েছে তা অন্য কারো জন্য নয়। মহান প্রভুর নিকট যে মহত্ব আমাদের মালার জন্য রয়েছে তা অন্য কারাে জন্য নয় (আলহামদুলিল্লাহ)।

এরই জন্যে আল্লাহতায়ালা আপন পরিপূর্ণ হিকমত মােতাবেক মানুষের অন্তর সমুহে অনুপ্রেরণা যোগাবেন যে, প্রথমে তারা অন্যান্য নবীগণের (عليه السلام) নিকট যাবে এবং সেখান থেকে বঞ্চিত হয়ে ফিরে এসে তাঁরই (ﷺ) খেদমতে উপস্থিত হবে। যাতে করে সবাই জেনে নেয় যে, শাফায়াতের মর্যাদা একমাত্র সে সরকারেরই বৈশিষ্ট্য, অন্যান্যদের জন্য অবকাশ নেই যে, এর দরজা খুলবেন।


যে হাদিসসমূহ ‘ছহীহ বােখারী' ছহীহ মুসলিম সহ সমস্ত হাদিস গ্রন্থে রয়েছে এবং বিশ্ব মুসলিম মিল্লাতের মধ্যেও বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ, সেগুলাের উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। কেননা বিবরণ দীর্ঘায়িত হবে। সন্দেহকারী যদি দুটি শব্দ পড়তে চায়, তবে যেন মিশকাত শরীফের অনুদিত উর্দু কিংবা বাংলা অনুবাদ সংগ্রহ করে দেখে নেয়। অন্যথায়, কোন শিক্ষিত মুসলমান ব্যক্তিকে বলবেন যেন একটু পড়ে শুনান। পরন্তু এ হাদিস সমূহের শেষাংশে এটা ও এরশাদ হয়েছে যে, সুপারিশ করার পর হুজুর শফিউল মুযনেবীন (ﷺ) পাপীদের পাপ-মার্জনার জন্য বারংবার শাফায়াত [ সুপারিশ ] করবেন। প্রত্যেকবার আল্লাহ তায়ালার ঐ বাক্য সমূহ এরশাদ করবেন এবং প্রত্যেক বার হুজুর (ﷺ) আল্লাহর অগণিত বান্দাদেরকে মুক্ত করবেন। আমি ঐ সব বিখ্যাত হাদিস সমুহ ব্যতীত "আরবাঈন" অর্থাৎ চল্লিশখানা হাদিস অতিরিক্ত লিপিবদ্ধ করার প্রয়াস পাচ্ছি যেগুলাে মুসলিম সাধারণের কমই কর্ণগোচর হয়েছে, যাতে মুসলমানদের ঈমান উন্নতি লাভ করে ; অস্বীকারকারীদের আত্ম হিংসার আগুণে ভস্মীভূত হয়ে যায়।


বিশেষতঃ যেগুলো দ্বারা এই বিকৃতির খণ্ডন হবে, যা কোন কোন বদ-দ্বীন, খােদাদ্রোহী, অপচেষ্টাকারী ও ভ্রান্ত পন্থী শাফায়াতের অর্থ করেছে। এবং শাফায়াতকে অস্বীকার করার কুৎসিৎ চেহারা ঢাকা দেয়ার মিথ্যা আকৃতি ও শাফায়াতের নামে তাদের মনগড়া ধারণাটুকু ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সে হাদিস সমুহ থেকে সুস্পষ্ট হবে যে, আমাদের মহান আকা (ﷺ), শাফায়াতের জন্য নির্দিষ্ট আছেন। তাঁরই দরবারে অসহায়দের আশ্রয়স্থল, তারই দরবারে নিঃসহায়দের সহায়স্থল। তেমন নয় যেমন কোন ভ্রান্তমতবাদী বলে, আল্লাহ যাকে চান কোন একজনকে আপন নির্দেশে সুপারিশকারী নিয়োগ করবেন।


এ হাদিস সমূহে আমাদেরকে খোদা এবং রাসুল (ﷺ) প্রকৃত সুপারিশকারীর প্রিয় নামটা বলে দিয়েছেন এবং পরিস্কার করে ঘোষণা করলেন যে তিনি হচ্ছেন হযরত মােহাম্মদ (ﷺ)। অতএব, এ কথা বলার কোন অবকাশ নেই যে তিনি যাকে চান, আমাদের সুপারিশকারী নির্ণয় করবেন।


_ এ হাদিস সমূহ সুসংবাদ দিচ্ছে যে, হুজুর (ﷺ) এর শাফায়াত আমাদের জন্যে নয়, যাদের থেকে ঘটনাচক্রে, গুনাহ সংগঠিত হয় এবং এর জন্য যারা সব সময় লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ভীত সন্ত্রস্ত।


যেমনঃ আব্দুল করিম পেশাগত চোর নয় এবং চুরিকে সে স্বীয় পেশা হিসেবে গ্রহণ করেনি, কিন্তু আত্মার দুর্ভাগ্যবশতঃ ত্রুটি হয়ে গেল। তাই এর জন্য সে লজ্জিত হয়েছে এবং দিন-রাত ভীত রয়েছে। তার জন্য সুপারিশের প্রয়ােজন নেই। তার শাফায়াত আমাদের ন্যায় অপরাধী, পরিপূর্ণ পাপাচারী এবং আত্মার উপর অত্যাচারীদের জন্য; যাদের প্রতিটি লোমে গুনাহ, যাদেরকে দেখে গুনাহ্ পর্যন্ত লজ্জিত হয়। 


॥ প্রথম ও দ্বিতীয় হাদিস ॥


👉ইমাম আহমদ নির্ভরযোগ্য সূত্র দ্বারা তার প্রসিদ্ধ কিতাব মুসনদে আহমদে- হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে, 

👉হযরত ইবনে মাজাহ (রহ.) হযরত আবু মূসা আল আশয়ারী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হুজুর শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,


خيرت بين الشفاعة وبين ان يدجل شطر امتی الجنة فاخترت الشفاعة لانها اعم واکفی اترونها للمٶمنين المتقين لا ولکنها للمذنبين الخطاٸين  


অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা আমাকে দু'টি বিষয়ে ইখতিয়ার প্রদান করেছেন, শাফায়াত করা অথবা অর্ধেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করান। আমি শাফায়াত করার অধিকার গ্রহণ করলাম। কেননা, সেটা সর্বাধিক ব্যাপক ও সঠিক কাজে আসার উপযােগী। (হে সাহাবীগণ! তোমরা কি এটা মনে করেছ যে, আমার শাফায়াত পরহেজগারি মুসলমানদের জন্য ? ‘না’, আমার শাফায়াত ঐ সমস্ত পাপীদের জন্যে যারা পাপে জর্জরিত। 


তৃতীয় হাদিস ॥


◾ইবনে আদী হযরত উম্মুল মােমেনীন উম্মে সালমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হুজুর শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,

شفاعتی للهالکين من امتی -

অর্থাৎ : "আমার শাফায়াত আমার ঐ সমস্ত উম্মতদের জন্যে যাদেরকে পাপ সমুহ ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত করেছে।"


চতুর্থ থেকে অষ্টম হাদিস ॥


👉আবু দাউদ, তিরমিযি, ইবনে হাব্বান, হাকেম ও বায়হাকী (রহ.) প্রমুখ হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) থেকে এবং 

👉ইমাম তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, ইবনে হাব্বান ও হাকেম (রহ.) হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে এবং

👉ইমাম তাবরানী তার মুজামুল কবীরে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে এবং 

👉খতীবে বাগদাদী (রহ.) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ফারুক (رضي الله عنه) এবং হযরত কা'ব ইবনে আজরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, 

হুজুর শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করছেন,

شفاعتی لاهل الکباٸر من امتی

"অর্থাৎ আমার শাফায়াত আমার উম্মতের মধ্যে তাদেরই জন্যে, যারা কবীরা গুনাহে অভিযুক্ত।"


নবম হাদিস ॥


◾হযরত আবু বকর, আহমদ বিন আলী বাগদাদী (রহ.) হযরত আবু দারদা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হুজুর শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,

شفاعتی لاهل الذنوب من امتی -

অর্থাৎ আমার শাফায়াত আমার পাপী উম্মতদের জন্যে। এ প্রসঙ্গে সাহাবী আবু দারদা (رضي الله عنه) আরজ করলেন,

وان زنى وإن سرق

অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসুল (ﷺ) যদি যেনা কিংবা চুরি করে ? হুজুর (ﷺ) তদুত্তরে বললেন-

وان زنی  وان سرق على رغم أنف ابي الدردا -

অর্থাৎ : যদিও সে যেনাকারী হয় কিংবা চোর হয়, আবু দারদার ইচ্ছার পরিপন্থী।


॥ দশ ও এগার ॥ 


👉তাবরানী, বায়হাকী, হযরত বুরায়দাহ এবং তাবরানী ‘মু’জামে আউসত’এ হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হুজুর শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,


انی لاشفع يوم القيامة لاکثر مما علی وجه الارض من شجر وحجر ومدر

অর্থাৎ : ভূপৃষ্ঠে যত বৃক্ষ, পাথর ও ঢিলা আছে, কিয়ামত দিবসে আমি ততােধিক ব্যক্তির জন্য শাফায়াত করবাে।


॥ বার ॥ 


👉বােখারী, মুসলিম, হাকেম, বায়হাকী হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন- হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেন,


شفاعتی لمن شهد لا اله الا الله مخلصا يصدق لسانه قلبه


অর্থাৎ আমার শাফায়াত প্রত্যেক কলেমা পাঠকারীর জন্য হবে, যে আন্তরিকভাবে কলেমা পাঠ করে, যে মুখের সত্যায়ন অন্তরই করে।


॥ তের হাদিস ॥ 


👉 ইমাম আহমদ, তাবরানী এবং বাজ্জার رحمة الله হযরত মায়াজ ইবনে জবল (رضي الله عنه) এবং হযরত আবু মুসা আশআরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হুজুর শফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,


انها اوسع لهم هی لمن مات ولا يشرك بالله شيٸا


অর্থাৎ: শাফায়াতে উম্মতদের জন্যে অধিক প্রশস্থতা রয়েছে। যা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই হবে, যার মৃত্যু ঈমানের উপর হয়েছে।


॥ চৌদ্দ হাদিস ॥ 


👉ইমাম তাবরানী মু’জামুল আওসাত-এ হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হুজুর শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,


انی جهنم فاضرب بابها فيفتح لی فادخلها فاحمد الله محامد ما حمده احد مثله ولا محمده احد بعدی مثله ثم اخرج منها من قال لا اله ال الله مخلصا


অর্থাৎ : আমি জাহান্নামের দরজা খুলিয়ে তশরীফ নিয়ে যাব এবং আল্লাহর প্রসংশা করবো এমনভাবে যে, যেমন আমার পূর্বে কেউ করেনি, না আমার পরে কেউ করবে। অতঃপর দোযখ থেকে ঐ ব্যক্তিকে বের করে আনবাে যে খাটি অন্তরে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লহু বলেছে।


॥ পনের হাদিস


👉হাকেম, তাবরানী ও বায়হাকী (রহ.) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হুযুর শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,


يوضع لانبياء منابر من ذهب فيجلسون عليها ويبقی منبری ولم اجلس ،لا ازال اقيم خشية الله ان ادخل الجنة ويبقی امتی بعدی فاقول يا رب امتی امتی فيقول الله يا محمد وما تريد ان اصفع بامتك ؟فاقول يا رب عجل حسابهم فما ازال حتی وَعُطِیَ وقد بعثت بهم الی النار وحتی ان مالکا خازن النار يقول يا محمد ما ترکت لغضب ربك فی امتك من بقية


অর্থাৎঃ(কেয়ামত দিবসে) নবীগণের জন্যে মিম্বর তৈরী হবে। তারা এগুলোর উপর অধিষ্ঠিত হবেন এবং আমার মিস্বর খালি থাকবে, তাতে আমি আরােহণ করবো না, বরঞ্চ স্বীয় প্রতিপালকের দরবারে সবিনয় দণ্ডায়মান থাকবাে। এ ভয়ে যে, যেন এমন না হয় যে, আমাকে জান্নাতে প্রেরণ করা হয় আর আমার উম্মত আমার পিছনে থেকে যাবে। অতঃপর আরজ করবো, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মত, আমার উম্মত (অর্থাৎ আপনি আমার উম্মতের প্রতি করুনা করুন)। তখন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করবেন, হে মােহাম্মদ (ﷺ) আপনার কিসে সন্তুষ্ট? আমি আপনার উম্মতের অন্য কি করবো? অতঃপর আরজ করবে, হে আমার প্রতিপালক। তাদের হিসাব নিকাশ অতিসত্বর সমাপন করুন। অতঃপর আমি শাফায়াত করতে থাকবো। শেষ পর্যন্ত দোজখের দারােগা মালেক আরজ করবেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আপনিতো আপনার উম্মতের মধ্যে আল্লাহর গযব নামে মাত্রও বাকী রাখেননি।


॥ ষোল থেকে একুশ হাদিস


👉 ইমাম বুখারী, মুসলিম এবং নাসায়ী হযরত জাবির  (رضي الله عنه)  থেকে এবং 

👉 ইমাম আহমদ উৎকৃষ্ট সনদ ধারা, বুখারী তার তারীখের মধ্যে এবং বাযযাব, তাবরাণী, বায়হাকী এবং আবু নুয়াইমঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস  (رضي الله عنه)  থেকে।

👉 এবং ইমাম তাবরানী মুয়াজমে আউসত এ হযরত আবু সাঈদ খুরদী  (رضي الله عنه)  থেকে এবং 

👉 কবীর নামক গ্রন্থে হযরত সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (رضي الله عنه) এবং ইমাম আহমদ (رضي الله عنه) উৎকৃষ্ট সনদ দ্বারা এবং 

👉 শায়বা, তাবরানী হযরত আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه)  থেকে বর্ননা করেন, বচনগুলো হযরত জাবের  (رضي الله عنه)  এরঃ 


قال رسول الله صلی الله عليه وسلم واعطيت ما لم يعطهن احد قبلی الی قوله صلی الله عليه وسلم واعطيت الشفاعة


অর্থাৎ উল্লেখিত ছয়টি হাদিস শরীফে বর্ণিত যে, হুজুর শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন, 

"আমাকে (সর্বপ্রথম) সুপারিশকারী হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং শাফায়াতের ক্ষমতা বিশেষ করে আমাকেই প্রদান করা হবে। আর আমি ব্যতিত অন্য কাউকে এ মর্যাদা দেয়া হয়নি।"


॥ বাইশ তেইশ হাদিস


👉হযরত ইবনে আনাস (رضي الله عنه) এবং আবু সায়ীদ  (رضي الله عنه), হযরত আবু মুসা (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণিত হাদিস সমূহে ঐ বিষয়বস্তুও রয়েছে যা ইমাম আহমদ, ইমাম বুখারী ও মুসলিম হযরত আনাস  (رضي الله عنه) , আবার ইমাম বুখারী ও মুসলিম হযরত আবু হুরাইরা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হুজুর শফীউল মুযনেবীন ﷺ এরশাদ করেন,


أن لكل نبي دعوة قد دعا به في أمته واستجب له (وهذا اللفظ لانس ولفظ الی سعيد) ليس من نبي الا وقد اعطی دعوة فتعجلها( ولفظ ابن عباس)لم يبق نبی الا اعطی له(رجعنا الی لفظ انس والفاظ الباقين کمثله معنی)قال وانی اخثباءت دعوتی شفاعة للامتی يوم القيامة (زاد ابو موسی)جعلتها لمن مات من امتی لا يشرك بالله شيٸا


অর্থাৎ নবীগণের (عليه السلام) যদিও হাজার হাজার দোয়া কবুল হয়ে থাকে। কিন্তু একটি খাস দোয়া মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তা লাভ করে থাকেন। এরশাদ হয়—যা চাও প্রার্থনা কর। নিশ্চয় দেয়া হবে সমস্ত নবী হযরত আদম (عليه السلام) থেকে শুরু করে হযরত ঈসা (عليه السلام) পর্যন্ত সবাই আপন আপন সেই সদায় পৃথিবীতেই করে ফেলেছেন এবং আমি পরকালের জন্যই পরক্ষন করছি। তা হচ্ছে আমার উম্মতদের জন্যে আমার শাফায়াত। এটা কেয়ামত দিবসে আমার সে সব উম্মতের জন্য রখেছি, যারা ইমানের সাথে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।


আল্লাহু আকবর। হে উম্মতের পাপিষ্টয়া, তোমরা কি তোমাদের সরদার হুজুর (ﷺ) এর অনুগ্রহ, আপন অবস্থার উপর প্রত্যক্ষ করনি? তিনি আল্লাহর দরবার থেকে তিনটি প্রার্থনার অনুমতি লাভ করেন-এরশাদ হয় যা প্রার্থনা করেন, তা পূর্ণ করা হবে।


কিন্তু, হুজুর (ﷺ) নিজ স্বার্থের জন্য কোন প্রার্থনা করেননি। সব কটি তোমাদেরই জন্য। দুটি প্রার্থনা পৃথিবীতে করেছেন। তৃতীয়টিও পরকালে তোমাদের সেই ভয়ানক চাহিদার জন্যে রেখে দিয়েছেন, যখনই সেই দয়ালু মুনিব আকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কোন হিতাকাংখী ত্রাণকর্তা থাকবেনা। 


◾যথার্থই এরশাদ ফরমান আল্লাহ তায়ালা,


عزيز عليه ما عنتم حريص عليكم بالمؤمنين رٶف رحيم -


"সেই মহান জাতের শপথ, যিনি তাকে আমাদের উপর  দয়ালু করেছেন। নিশ্চয় নিশ্চয় কোন ‘মা’ আপন স্নেহাস্পদ। একমাত্র সন্তানের উপরও তো এত বেশী দয়াশীল নয় যে পরিমাণ তিনি (ﷺ) আপন উম্মতের উপর দয়াবান।"


হে খোদা। তুমি আমাদের অক্ষমতা ও দুর্বলতা এবং তাঁর (ﷺ) মহান হকসমূহ জানো। হে ক্ষমতাবান! হে স্রষ্টা, হে মহামহিম ! আমাদের পক্ষ থেকে তার উপর। এবং তাঁর বংশধরে। উপর সেই বরকতময় দরূদ সমূহ নাযিল করুণ, যা তার এক সমূহের সমতুল্য হয় এবং তার দয়া সমুহের সমপরিমাণ হয়।


আফসোস! আল্লাহর বান্দাদের কেউ কেউ তার (ﷺ) সর্বোত্তম হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছে। কেউ কেউ তার সাথে সন্দেহ সৃষ্টি করতে চেয়েছে। কেউ তার প্রশংসাকে তার মত মনে করেছে। আবার কেউ তার মহান সম্মানিত মর্যাদা দেখে হিংসায় ফেটে পড়েছে। একি আশ্চর্য । প্রিয় নবীর প্রতি ভালবাসার কার্যাদিকে কেহ কেহ বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করে  যদিও তাহা কোরআন সুন্নাহ সম্মত আর প্রিয় নবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উপর শির্কের ফতোয়া লাগায় (নাউজুবিল্লাহ)  


॥ চব্বিশ হাদিস


👉সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত উবাই ইবুনে কা’য়াৰ  (رضي الله عنه)  থেকে বর্নিত, হুজুর শফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন, 

আল্লাহ তায়ালা আমাকে তিনটি প্রার্থনা করার ইখতিয়ার প্রদান করেছেন। আমি পৃথিবীতেই দুটো প্রার্থনা করে ফেলেছি। যথাঃ

اللهم اغفر لامتی اللهم اغفر لامتی۔


(হে খোদা আমার উম্মতের গুনাহ ক্ষমা করুন, হে খোদা আমার উম্মতের গুনাহ ক্ষমা করুন।)


واخرت الثالثة ليوم يرغب الی فيه الخلق حتی ابراهيم .


এবং তৃতীয় আরজটি সেই দিবসের জন্যে অবশিষ্ট রেখেছি। যেটার জন্য আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি আমার মুখাপেক্ষী হবে। এমন কি হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (عليه السلام)ও।


 পঁচিশ হাদিস ॥


👉ইমাম বায়হাকী হযরত আবু হুরাইরা   (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণনা করেছেন হুজুর, শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) শবে আসয়ায় (মিরাজ শরীফের রাত্রে) স্বীয় প্রতিপালকের দরবারে আরজ করলেন আপনি এ মর্যাদা সমূহ অন্যান্য নবীগণ (عليه السلام) কে প্রদান করেছেন? তখন মহান স্রষ্টা এরশাদ করেন,


أطيتك خيرا من ذالك (الی قوله ) خياعت شفاعتك ولم اخبارءھا لنبی غيرك .


অর্থাৎ আমি আপনাকে এমন মর্যাদা বা নেয়ামত প্রদান করেছি, যা সেগুলো অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আমি আপনার জন্যে শাফায়াতকে গোপন রেখেছি এবং এটা আপনি ব্যতীত অন্য কাউকে প্রদান করিনি। 


 ছাব্বিশ হাদিস ॥


👉ইবনে আবি শায়বা ও ইমাম তিরমিযী -

হাসান ও সহীহ হাদিসে বর্ননা করেন এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রহ.) সহীহ সূত্রে হযরত উবাই ইবনে কা'ব  (رضي الله عنه)  থেকে বর্ননা করেন হুজুর শাফিউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন, 


واذا كان يوم القيامة كنت امام النبيين وخطيبهم  وصاحب شفاعتهم غير فخر


অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে আমি নবীকুলের সরদার, তাদের খতীব এবং তাদের শাফায়াতকারী হবো এবং এটা কোনো অহংকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে বলছিনা। 


সাতাশ থেকে চল্লিশ হাদিস ॥


👉হযরত ইবনে মুনিয়া, হযরত সায়দ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) প্রমুখ সর্বমোট ১৪জন উল্লেখযোগ্য সাহাবা কেরাম  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন শাফীউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,


شفاعتی يوم القيامة حق فمن لم يٶمن بها لم يکن من اهلها


অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে আমার শাফায়াত সত্য, যারা এর উপর ইমান বা বিশ্বাস করবেন, তারা এ সৌভাগ্য অর্জন করবেন।"


বিরুদ্ধবাদীরা, এ মোতওয়াতের (যা সর্ব কালে সংখ্যাধিক্য সাহাবা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে সেই) হাদিসের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করুন এবং আপন আত্মার উপর সহানুভূতিশীল হয়ে শাফায়াতে মোস্তফার উপর বিশ্বাস স্থাপন করুন।


শাফায়াতের উপর আ’রী, নায়ছারী, দেউবন্দী প্রমুখ ভ্রান্ত ফেরকাদের উত্থাপিত প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ


১ম প্রশ্নঃ- 

অসংখ্য আয়াত থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তায়ালার নিকট কারাে সুপারিশ চলবে না। হুজুর (ﷺ) ধর্ম প্রচারের প্রথম ভাগে হযরত ফাতেমা যােহরা  (رضي الله عنه) কে বলেছিলেন যে, আমি তােমার থেকে আল্লাহর আযাবকে প্রতিহত করতে পারব না। (নায়ছারী ও দেওবন্দীগণ) 

উত্তরঃ-

এ ধরণের আয়াত ও হাদিস শরীফ সমুহ কাফেরদের বুঝানাে হয়েছে (অর্থাৎ ঐ সব তাদের বেলায় প্রযােজ্য)। হযরত ফাতেমা যােহরা  (رضي الله عنه) কেও একথা বলা হয়েছে যে, তুমি যদি ঈমান গ্রহণ না কর তাহলে তােমার জন্য সুপারিশ হবে না। এ কারণে কোরআনে পাকের আয়াত সমূহে (ইল্লা) শব্দ দ্বারা মাসয়ালার হুকুমের পরিবর্তন করা হয়েছে।

من ذالذي يشفع عنده الا باذنه

অর্থাৎ-- আল্লাহর অনুমতিক্রমে শাফায়াত করতে পারবে। 


২য় প্রশ্নঃ-

যদি আল্লাহ তায়ালা নবীর সুপারিশে বেহেস্ত দান করেন তাহলে বুঝা গেল আল্লাহ তরফদার বা পক্ষপাতিত্বকারী, ( ইস্তিয়ারাত পুরকাশি ১৪নং অধ্যায়)। 

উত্তরঃ-

আল্লাহ তায়ালার প্রত্যেক অনুগ্রহ একের নিকট অপরের ওসীলায় পৌঁছে থাকে এবং আল্লাহ তায়ালা নিঃসন্দেহে তার মকবুল বান্দাগণের পক্ষ অবলম্বন করেন। 

কারণ, ভালমানুষের পক্ষ অবলম্বন করাও ভাল।


৩য় প্রশ্নঃ-

আরবের কাফেরগণ মূর্তিগুলােকে নিজেদের সুপারিশ কারী মানতো। কোরআন করিম এ আকিদাকে কুফরী ঘােষণা করেছে। অসংখ্য আয়াত এর সাক্ষ্য বহন করে মুসলমানগণ নবীগণ (عليه السلام) ও আউলিয়া কেরাম (رضي الله عنه) কে সুপারিশকারী মেনে কাফের হতে চলছে। 

উত্তরঃ-

কাফেরগণ একেত অনুমতি প্রাপ্ত নয়। 

দ্বিতীয়ত: অপদার্থ মুর্তিগুলােকে সুপারিশকারী মেনেছে। আর আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করেছি। সুতরাং উভয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। কাফেরগণ মুর্তিগুলােকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে সুপারিশকারী মেনেছে। আর আমরা আল্লাহর মকবুল বান্দাগণের শাফায়াত খােদার অনুমতিক্রমে প্রাপ্ত মনে করি।


৪র্থ প্রশ্নঃ-

শাফায়াতের আকিদা দ্বারা মুসলমানের আমল খারাপ হয়ে যাবে। কেননা তারা শাফায়াতের উপর ভরসা করে পুন্য কাজ হতে বিমুখ হয়ে যাবে। (দেউবন্দী ওহাবীগণ)

উত্তরঃ-

এ প্রশ্নতো আরীয়গণের উক্তির ন্যায়, যেমন তারা বলে যে, "তওবার মাসয়ালা মানুষকে অপকর্মে লিপ্ত করে।" জনাব, শাফায়াতের দ্বারা আশা বৃদ্ধি পায় এবং আশার মাধ্যমে পুন্য কাজের উৎসাহ বৃদ্ধি হয়।


৫ম প্রশ্নঃ-

আমরাও হুজুর (ﷺ) এর জন্য আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করি, তাঁর প্রতি দরূদ প্রেরণ করি এবং হুজুর (ﷺ)ও আমাদের জন্য দোয়া করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। তাহলে বুঝা যায় যে, হুজুর (ﷺ) আমাদের সুপারিশকারী এবং আমরা হুজুর (ﷺ) এর সুপারিশকারী। 

উত্তরঃ-

এ উভয় দোয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। হুজুর(ﷺ)

এর দোয়ায় আমরা উম্মতের জাহাজ পার হবে। তার দোয়া ব্যতিত আমাদের কোন সাফল্য হতেই পারে না। উভয় দোয়ার মধ্যে পার্থক্য হলাে এ যে, আমাদের পক্ষ হতে তার জন্য দোয়া করার অর্থ হলাে তার করুনার ভিক্ষা প্রার্থনা করা। যেমন ভিক্ষুক দাতাদের জন্য বিভিন্ন রকমে দোয়া করে ভিক্ষা প্রার্থনা করে। এ কারনে, কোরআনে যেখানে করিম নবী করিম (ﷺ) এর প্রতি দরূদ প্রেরনের আদেশ দিয়েছে ঐ সব স্থানে প্রথমেই ঘােষিত হয়েছে যে, 

আমি (আল্লাহ তায়ালা) প্রিয় নবী (ﷺ) এর উপর রহমতের বারিধারা বর্ষণ করছি, তােমরাও তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করো।" (সূরা আহযাব ৫৬)

অর্থাৎ আমার রহমত তােমাদের দোয়া প্রার্থনার উপর নির্ভরশীল নয়। 

প্রথম প্রকার দোয়া অর্থাৎ হুজুর (ﷺ) এর দোয়া হলো ‘শাফায়াত’। 

আর ২য় প্রকার অর্থাৎ তার জন্য আমাদের দোয়ার অর্থ হলো—তার মহান দরবারে ভিক্ষা প্রার্থনা করা। 

সুতরাং প্রমানিত হলাে যে, হুজুর (ﷺ) হলেন—আমাদের সুপারিশকারী আর আমরা হলাম তার করুনার ভিখারী।





Next
This is the most recent post.
Previous
পুরাতন পোস্ট
ú
Top